মাঘ মাসের আবহাওয়ায় ত্বক হয়ে ওঠে শুষ্ক, খসখসে ও নিষ্প্রাণ হয়ে। শুষ্কতা রোধে বাজারে পাওয়া যায় নানা ধরনের প্রসাধনসামগ্রী ও প্যাক। তবে কেবল প্রসাধনসামগ্রীতেই তো আর ত্বকের সব সমস্যার সমাধান হয় না। ত্বককে সুস্থ এবং ভেতর থেকে সুন্দর রাখতে প্রয়োজন সঠিক খাদ্যাভ্যাস। পরামর্শ দিলেন গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শম্পা শারমিন খান।
খালি পেটে ১-২ ঢোঁক পানি পান দিয়ে শুরু করুন
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। সকালে খালি পেটে পানি খেতে হবে। ২২০ মিলি কুসুম গরম পানিতে এক টুকরা লেবুর রস আর এক চা-চামচ খাঁটি মধু মিশিয়ে নিয়ে সকালে খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। ত্বকে আসবে উজ্জ্বল আভা।
অনেকেই সকালে পানি পানের অভ্যাসটা রপ্ত করতে পারেন না। তবে পানি খেতেই হবে। অল্প অল্প করেই না হয় শুরু করুন। খালি পেটে অন্তত ১-২ ঢোঁক পানি খেয়ে নিন। খানিকটা হাঁটাহাঁটি করুন। কিছুক্ষণ পর আস্তে আস্তে বাকি পানিটুকু খান। ধীরে ধীরে পানি পানের পরিমাণটা বাড়াতে হবে। একজন সুস্থ, প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক আড়াই থেকে তিন লিটার পানি খাওয়া প্রয়োজন। ঘাম বেশি হলে সেই অনুপাতে বাড়াতে হবে পানির পরিমাণ; অর্থাৎ শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পানির পরিমাণ কমবেশি হবে। শীতকালে এই পরিমাণ দুই থেকে আড়াই লিটার হলেই যথেষ্ট।
ত্বককে বাঁচানোর প্রথম ‘ঢাল’
রান্না করলে খাবারের কিছু পুষ্টি উপাদান নষ্ট হয়ে যায়। তাই কাঁচা সবজির সালাদ ও ফলমূল খান। শসা, গাজর, টমেটো, লেটুসপাতা, বাঁধাকপি প্রভৃতি ত্বকের সুস্থতায় প্রয়োজন। মিশ্র সবজির সালাদ খেতে হবে দৈনিক ৫০ গ্রাম। লাউ, ঝিঙে, চিচিঙ্গাতে পানি থাকে। এগুলোর তরকারি খেতে পারেন। কমলা, বাতাবিলেবু, আনারসেও পানি আছে বেশ। পাকা পেঁপে, পেয়ারা, পানিফল আর আমলকীও খেতে পারেন। আবার রস করেও ফল খেতে পারেন। কমলা, পেঁপে বা যেকোনো ফলের রস ত্বককে রাখবে আর্দ্র।
ফল রাখুন খাবার তালিকায়
রোজ অন্তত একটি ফল খাবেন। বড় আকারের ফল (যেমন বড় পেয়ারা) হলে অর্ধেকটাও যথেষ্ট। মৌসুমি ফল বেছে নিতে পারেন। যেসব ফল খোসাসহ খাওয়া যায়, সেগুলো সেভাবেই খেতে চেষ্টা করুন। টক ফল খেতে হবে ভিটামিন সি পেতে। ভুট্টায় পাবেন ভিটামিন ই। বাঁধাকপি, লাল ক্যাপসিকাম, কাঠবাদাম, চীনাবাদাম, অ্যাভোকাডো, মাছ প্রভৃতিতেও ই আছে। ভিটামিন ই-সমৃদ্ধ প্রসাধনী ব্যবহারের চাইতে ভিটামিন ই-সমৃদ্ধ খাবার খেলে বেশি উপকার পাবেন। বলিরেখা ও ব্রণ এড়াতে ভিটামিন ই কাজে দেবে। ত্বককে নানা সমস্যা থেকে বাঁচানোর প্রথম ‘ঢাল’ এই ভিটামিন।
সব তেল মন্দ নয়
ত্বকের জন্য তেল ভালো
প্রয়োজনীয়; অর্থাৎ ‘ভালো’ তেলও গ্রহণ করতে হবে। মোটামুটিভাবে দেড় কেজি পর্যন্ত ওজনের ছোট ও মাঝারি আকারের মাছের তেল ত্বকের জন্য ভালো। রোজ আধা চা-চামচ কালিজিরার তেল খেতে পারেন। শুধু কালিজিরার তেল খেতে না পারলে সঙ্গে যোগ করুন সমপরিমাণ মধু। জলপাই তেলও ভালো। খাবারের তালিকায় বাদাম রাখুন। তরল বা গুঁড়া যেটাই হোক, রোজ খেতে হবে দুধ কিংবা টক দই। ত্বক থাকবে মসৃণ, টানটান ও উজ্জ্বল। ডিমও খেতে হবে। এড়াতে হবে কোষ্ঠকাঠিন্য। শাকসবজিতে থাকে পর্যাপ্ত আঁশ, যা কোষ্ঠকাঠিন্য এড়ানোর জন্য খুব প্রয়োজনীয়। মেয়োনেজ, ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলুন। ঘুমও চাই ঠিকঠাক। তবেই শরীর থাকবে সুস্থ, ত্বক হবে কোমল।
[FA]pen[/FA] লেখক: রাফিয়া আলম