What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

টাঙ্গুয়ার হাওরে বিদেশি অতিথি (1 Viewer)

গতকাল প্রথমআলোতে পড়লাম কারা নাকি রাতে এই অতিথি পাখি শিকার করে, আমরা জীবনেও সভ্য হবো না।
 
এই ক্যাটাগরির থ্রেডগুলোর ফ্যান হয়ে যাচ্ছি
 
কালিম পাখির বিষয় টি পড়তে বেশ ভালো লাগলো।
 
RMDoE7o.jpg


সকাল ঠিক ৯টা ১৮ মিনিট। আমাদের ছোট নৌকা টাঙ্গুয়ার হাওরে ঢুকল। কোত্থাও কোনো কাকপক্ষী নেই। মাঝি বলল, হাঁসেরা এখনো আসেনি। বললাম, আরেকটু সামনে এগোন।

এ হাওর জলজ উদ্ভিদের এক প্রাকৃতিক ভান্ডার। আছে ঝাঙ্গি, ভ্যালেসনেরিয়া, শালুক, কাঁটা শেওলা আর শেওলা। এগুলো আবার পরিযায়ী হাঁস ও জলজ পাখিদের খাবারের উৎস। প্রায় আধঘণ্টা চলার পর চোখে পড়ল নলখাগড়ার খণ্ড বন। নৌকার ইঞ্জিনের শব্দে হঠাৎ উড়াল দিল একটা কালিম। তার ডানার শব্দে আরও কয়েকটা।

বুঝতে পারলাম, হাঁস না এলেও অন্য পরিযায়ীরা বিলে-হাওরে নেমেছে। টাঙ্গুয়ার হাওর আসলে অনেকগুলো বিলের সমাহার। অদূরে মেঘালয়ের পর্বতমালা থেকে বৃষ্টির স্রোতোধারা ছোট নদী হয়ে এই হাওর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এর দুই ধারেই ছোট–বড় বিলের সমাহার।

MZkWG9k.jpg


কালিম পাখি

আস্তে আস্তে পাতিহাঁস, পানকৌড়ি, ডুবুরি, কয়েক প্রজাতির বক আর জলমুরগির দেখা পাওয়া গেল। আমার সঙ্গে অনুজপ্রতিম পাখিপ্রেমী মেজবা মিসু। সামনে এগোতে নলখাগড়া আর ঘাসবন থেকে দলে দলে বেরিয়ে আসতে শুরু করল কালিম। শ দেড়েক বা তার চেয়ে বেশি। ছোট পানকৌড়ি প্রায় আড়াই শ।

আরেকটা বাঁকে পৌঁছাতেই অপ্রত্যাশিতভাবে দেখা পেলাম খাওয়ায় ব্যস্ত দুটি কালোকুট বা জলকুক্কুট বা ইউরেশিয়ান কুট। ভাবলাম, পরিযায়ীরা অবশ্যই এসেছে। কালোকুট ঝাঁকে চলা পাখি। নিজেদের বা মিশ্রিত পাখির মস্ত ঝাঁকে ওরা আসে। ওদের সঙ্গে অন্য পরিযায়ী, বিশেষ করে হাঁস তো থাকবেই।

বেলা প্রায় ১১টা। চায়ের বিরতি না নিলেই নয়। তাহিরপুর বাজার ছাড়ার আগে দোকান থেকে চা নিতে ভুলিনি। নিয়েছি স্থানীয় মিষ্টি আর মুড়ির মোয়াও।

চলতে চলতে সামনে পড়ল বড় হিজলবাগান। মোড় ঘোরার সময় হঠাৎ কানে এল পরিযায়ী হাঁসের শব্দ। মাঝিকে ইঞ্জিন বন্ধ করতে বলে ক্যামেরা তাক করলাম। গতিজড়তায় নৌকা অনেকটা পথ এগিয়ে গেল। ২০০ মিটার দূরেই উদ্ভাসিত হলো পরিযায়ী হাঁসের বিরাট ঝাঁক।

YL481XA.jpg


কুড়া ঈগল

বহু পাখির কলরবেও 'কুই-কুই-কুইও' ডাক কানে এল। মুহূর্তে চারপাশ ভরে উঠল ভূঁতিহাঁসের কলরবে। ওদের সঙ্গে পিয়ং হাঁস বা গ্যাডওয়াল, নীলশির বা ম্যালারড ও লেঞ্জা হাঁস বা নরদার্ন পিনটেইলর। একক বা মিশ্র ঝাঁকে শত শত কালোকুট। পাশাপাশি কিছু জলমুরগি আর কালিম পাখি।

হঠাৎই মধ্যগগনে উড়ে এল মস্ত এক কুড়া ইগল বা প্যালাসেস ফিস ইগল। হাঁসসহ সব পাখি দিল ভোঁ-ছুট। সে সুযোগে গুনে দেখলাম, পাখির সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। ৬০ শতাংশই ভূঁতিহাঁস। এরপর পিয়ং হাঁস ও রাঙামুড়ি বা রেড-ক্রেস্টেড পোচারড।

আরও ঘণ্টা দুয়েক হাওর মন্থন করে নৌকা ঘুরিয়ে চললাম গোলাবাড়ি। টাঙ্গুয়ার হাওরের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তের সর্বশেষ এক চিমটি গ্রাম। এখানে পর্যটকদের জন্য আছে 'হাওর বিলাস' নামে দুই কামরার থাকা-খাওয়ার সুবন্দোবস্ত। এ ছাড়া আছে রাতযাপন ও হাওর দেখার জন্য বজরা আকারের তিন-চারটি বড় নৌকা।

পড়ন্ত বেলায় গোলাবাড়ির কাছাকাছি এসে শুনতে পেলাম কুড়ার ডাক। ওদের বিরক্ত না করে নৌকা ছেড়ে হাঁটা দিলাম। ঘণ্টাখানেক কাটালাম স্থানীয় আর ছোট্ট ছোট্ট গায়ক পরিযায়ী পাখি শুমারি করে ও ছবি তুলে।

এর মধ্যে কাক-শালিক-ফিঙের তাড়ায় উদয় হলো একটি পুরুষ কুড়া। নেমেই গগনবিদারী ডাকে আকাশ-বাতাস মাতিয়ে তুলল। এতক্ষণে আমাদের টাঙ্গুয়ার হাওরে যাওয়া সার্থক হলো।

* লেখক: রেজা খান | দুবাই সাফারির প্রধান বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ
অতিথি পাখি আমাদের অতিথি। আমরা তাদের শিকার করব না
 
সত্যিই নিঝনমেলা থেকে অনেক কিছু জানলাম যা আগে জানা ছিল না।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top