What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

সত্তা (1 Viewer)

পানিতে ভিজতে ভিজতে দুজনেরই হাত পা প্রায় শিঁটকে আসার উপক্রম হচ্ছিল। তারা নিজেদের শরীর মুছে নিতে লাগল খড় দিয়ে।
"সবকিছুই দেখি পুর্বপরিকল্পিত।" খড় দিয়ে গা মুছতে মুছতে বলে কবির।
"নিখুঁত প্ল্যান ছাড়া এতো রিস্কের কাজ করা যায় না।" তুহিন বলে।
"আমি কি এই প্ল্যানের ভেতরে ছিলাম? নাকি হঠাত করে ঢুকে পড়েছি?" কবির বলে।
"আপনি তো প্রথম থেকেই ছিলেন, কবির ভাই।"
"আমরা এখন যাচ্ছি কোথায়?"
"এই ট্রাক যাচ্ছে খুলনার দিকে।" তুহিন বলে।
হঠাত ট্রাকটা থেমে যায়।
"কি হল মনসুর ভাই? ট্রাক থামাইলা কেন?" ট্রাকের দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে তুহিন।
"স্যার ফোন দিছে, এই নাও।" ট্রাক ড্রাইভার একটি ফোন আর সাথে একটি কাপড়ের পোঁটলা ও পানির বোতল ট্রাকের জানালা দিয়ে বাড়িয়ে দেয়।
"হ্যালো বস। আমরা একেবারে ঠিক আছি, কোন চিন্তা করবেন না। এখন পর্যন্ত সবকিছু একেবারে প্ল্যান মোতাবেক হয়েছে।"
একটু থেমে তুহিন বলে "ঠিক আছে বস, রাখি।"
ফোন কেটে দিয়ে তুহিন পোঁটলাটা খোলে। পোঁটলার ভেতরে দুটো হাফ হাতা শার্ট আর দুটি লুঙ্গি আর একটি পলিথিন ব্যাগে মুড়ি ও গুড় ছিল।
"শার্ট আর লুঙ্গিটা পইরা নেন, কতোক্ষন আর কয়েদিদের পোশাকে থাকবেন।" বলে একটি শার্ট ও লুঙ্গি এগিয়ে দেয় কবিরের দিকে।
দুজন গুড় মুড়িটুকু খেয়ে নিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে। কবিরের মনে অনেক প্রশ্ন খেলে যাচ্ছিল, কিন্তু এখন আর সেসব নিয়ে ভাবতে ইচ্ছা করছিল না।
কবিরের ঘুম ভাঙে যখন ততোক্ষনে রোদ উঠে গেছে। তুহিন ঘুম থেকে উঠেছে আগেই, হেলান দিয়ে বসে সিগারেট টানছিল, কবিরকে দেখে বাড়িয়ে দেয়।
"নো, থ্যাংক্স। আর কত দুর?"
"এই তো আইসাই গেছি। আর ঘন্টা খানেক।"
দেড় ঘন্টা পর ট্রাকটা থেমে যায় খুলনার একটি মফস্বল এলাকায়। শহর থেকে খানিকটা দুরে, তবে একেবারে অজ পাড়াগাঁ নয়। ট্রাক থেকে নেমে আরো পনেরো মিনিট হাঁটতে হল ওদেরকে। একটি বাড়ির সামনে এসে তুহিন থেমে যায়, মোবাইল বের করে ফোন দেয়।
"হ্যালো বস, আমরা এসে গেছি।"
অন্যপাশ থেকে কিছু একটা বলে যা কবির শুনতে পায় না। তুহিন সিকিউরিটি গার্ডদের দিকে এগিয়ে গিয়ে কিছু একটা বলে, তারপর কবিরকে ইশারা করে আসার জন্য।
বাইরে থেকে যেটাকে একটি বাড়ি বলে মনে হচ্ছে, গেট পেরিয়ে সেটাকে বড়সড় গুদাম বলেই মনে হল। গুদামটির একপাশে একটি দোতলা রেস্টহাউস, তুহিন সেদিকে এগিয়ে যায়। সিঁড়ি পেরিয়ে দোতলায় উঠে এসে কলিংবেল চাপে এবং সাথে সাথে দরজা খুলে যায়।
ভেতরে লম্বা চওড়া একজন ব্যাক্তি হাসিমুখ নিয়ে দাড়িয়ে ছিল।
"যাক, তোরা পেরেছিস তাহলে। আমি তো খুব চিন্তায় ছিলাম।"
"আগে ভেতরে আসতে দাও, বস। বাইরে প্রচুর গরম।" বলে প্রায় ঠেলে ঢুকে যায় তুহিন।
লোকটাকে চিনতে কবিরের একটুও কষ্ট হয় না।
"সোয়েব স্যার! আপনি?" কবির বিষ্মিত কন্ঠে বলে।
"কবির, ভেতরে এসো। একেবারে ঘেমে গেছ যে।" সোয়েব বলে।
"তার মানে তুহিন আপনার লোক?" সোফায় বসতে বসতে বলে কবির।
"তোমার এই প্রশ্নটির উত্তর একইসাথে হ্যাঁ এবং না। তুহিনকে আমি চিনি অনেকদিন ধরে। ছয় বছর আগে একটি জুয়েলারি দোকান চুরির ঘটনায় তুহিন ও তার দলের তিনজনকে হাতে নাতে ধরেছিলাম। তুহিনের পাঁচ বছরের জেল হয়েছিল। কিন্তু ছয়মাস পরই ও পালিয়ে যায়। ওকে ধরার দায়িত্ব আবারও আমার ঘাড়েই পড়েছিল। দুই মাস লেগেছিল ওকে ধরতে। যখন তোমার ফাঁসির রায় দেয় আদালত তখন তুহিনেরও সাত বছরের জেল হয়েছিল। এবং তোমরা দুজনকেই কাশেমপুর জেলে পাঠানো হয়েছে, এটা একটা কো ইন্সিডেন্স। আমি তুহিনের সাথে যোগাযোগ করে একটি ডিল করে ফেলি।"
"ভাল কথা মনে করে দিলে, বস। আমার পেমেন্ট এখনো অর্ধেক বাকি।" তুহিন বলে ওঠে।
"তোর পেমেন্ট রেডিই আছে।" বলে সোয়েব উঠে যায় পাশের রুমে। একটি ব্রিফকেস এনে টেবিলের ওপর রাখে।
"পুরো পাঁচ লাখ আছে। গুনে নে।" সোয়েব বলে।
"এতো টাকা....."
"আমি দেইনি। ডক্টর শাফাকাত হোসেনকে তুমি চেন?" কবিরকে কথা শেষ করতে না দিয়ে বলে সোয়েব।
"শাফাকাত আংকেল?"
"তিনি আমার সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। তোমাকে যে করেই হোক ছাড়িয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেছিলেন। তুহিনকে পেমেন্ট তিনিই করেছেন, আর এই যায়গাটাও ওনারই।" একটু থেমে আবার বলে সোয়েব "তোমরা যে ঠিক ঠাক পৌঁছিয়েছ তা স্যারকে জানাতে ভুলে গেছি।"
সোয়েব তার ফোন বের করে শাফাকাত সাহেবকে ফোন করে, দ্বিতীয়বার রিং হওয়ার সাথে সাথে রিসিভ হয়।
"স্যার, ওরা ঠিকঠাকভাবে এসে গেছে। সবকিছু প্ল্যান মোতাবেক হয়েছে।" সোয়েব বলে।
"থ্যাংকস গড! কবির ঠিক আছে তো?" জীর্ণ কন্ঠে বলে শাফাকাত।
"নিন কথা বলুন।" বলে সোয়েব ফোনটি কবিরকে দেয়।
"কবির, তুমি ঠিক আছ তো?"
"জি আংকেল।"
"কবির, সবসময় তোমাকে আমি নিজের ছেলের মতো ভেবেছি, কিন্তু তুমি হয়তো আমাকে কখনো আপন ভাবতে পারনি। এতো কিছু হয়ে গেল আর আমাকে কখনো কিছু জানানোর চেষ্টা করলে না! আমি যখন তোমার বিপদের বিষয়ে শুনি তখন আমি মেলবোর্নে আর আদালতে তোমার ফাঁসির আদেশ দিয়ে দিয়েছে। আগে জানলে হয়তো তোমাকে আইনত ছাড়িয়ে আনতে পারতাম। যাই হোক, এখন তোমাকে কিছুদিন লুকিয়ে থাকতে হবে, যতদিন না স্নিগ্ধাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে এবং মামলা নিস্পত্তি হচ্ছে। সোয়েব একজন দায়িত্ববান পুলিশ অফিসার, সবসময় ওর কথামতো চলবে।"
"জি আংকেল।" বলে ফোনটি কেটে দেয় কবির।
"স্যার, স্নিগ্ধার কোন খবর পেলেন?" কবির বলে।
"আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করছি স্নিগ্ধাকে খুঁজে বের করার জন্য।"

স্নিগ্ধা বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে ছিল, শরৎচন্দ্রের একটি উপন্যাস পড়ছিল। গল্প পড়ছিল বললে হয়তো কিঞ্চিত ভুল হয়, গল্প পড়ার চেষ্টা করছিল, কিন্তু বারবার মন অন্য কোথাও হারিয়ে যাচ্ছিল। স্নিগ্ধার দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে এভাবেই, শুয়ে বসে। গর্ভে সন্তানের বয়স প্রায় ছয় মাস হতে চলল, এ অবস্থায় খুব সাবধানে চলা ফেরা করতে হবে, কোন রকম ভারী কাজ করা যাবে না, কোনরকম টেনশন করা চলবে না - তার শাহেদা আন্টির কড়া নির্দেশ। সন্তানের কথা ভেবে টেনশন থেকে দুরে থাকতে কখনো কখনো বই পড়ার চেষ্টা করে, কিন্তু কিছুতেই টেনশন থেকে দুরে থাকতে পারে না। প্রায় দেড় মাস হল স্নিগ্ধা এই বাড়িতে আছে। বাড়িটি শাহেদা বেগমের। তিনি স্থানীয় গার্লস স্কুলের প্রিন্সিপাল, পঞ্চাশোর্ধ ব্যাক্তিত্বময়ী একজন নারী।
থানা থেকে ফিরে আসার পর স্নিগ্ধা চেয়েছিল তার বাবা মার সাথে যোগাযোগ করতে। তার বাবা মা দুজনার মোবাইল নাম্বারই বন্ধ পেয়েছে সে। তখন সে মজিদকে সাথে নিয়ে তার বাড়িতে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু শাহেদা মানা করে, সেই অবস্থায় স্নিগ্ধার লং জার্নি করা একেবারেই উচিত হতো না। মজিদ একাই রওনা দেয় বগুড়ার উদ্দেশ্যে, স্নিগ্ধাদের বাড়িটি তালাবদ্ধ পায় সে। প্রতিবেশীদের কাছে থেকে জানতে পারে স্নিগ্ধার মা বাবা চিকিৎসার জন্য ভারতে গেছে, তিন মাস পরে ফিরবে তারা। এরপর প্রায় দেড় মাস কেটে গেছে কবিরের কোন খবর পায়নি, আর না মা বাবার কোন খবর। কখনো কখনো ভাবে সেখান থেকেও পালিয়ে যাবে সে, আর কবিরের খোঁজ করবে, কিন্তু সন্তানের জীবন ঝুঁকির মাঝে ফেলে দিতে চায় না স্নিগ্ধা।
হঠাত কলিংবেলের শব্দে ভাবনার জগত থেকে ফিরে আসে স্নিগ্ধা।

"শিমলী, এই শিমলী দেখতো কে এল।" স্নিগ্ধা উচ্চস্বরে বলে
শিমলী তেরো চোদ্দ বছর বয়সী মেয়ে, শাহেদার দুর সম্পর্কের আত্মীয়।
শীমলীর সারা শব্দ না পেয়ে স্নিগ্ধা নিজেই উঠে দরজা খুলে দেয়।
"মজিদ কাকা যে। ভেতরে আসুন।" মিষ্টি করে হেসে বলে স্নিগ্ধা। মজিদ ব্যাগভর্তি বাজার টেনে আনে।
"ভাল আছ তো, মা?" মজিদ বলে।
"জি ভাল আছি। আপনি ভাল আছেন? বসুন কাকা।"
"আল্লার দয়ায় ভালই আছি। আজ আর বসমু না। আপা বাজার পাঠাইছে। এখন আসি, কাইল আসমুনি একবার।" বলে মজিদ বেরিয়ে যায়।
স্নিগ্ধা উঠে মসলার খালি কৌটাগুলো এনে তাতে মসলা ঢালতে শুরু করে।
"আরে আপা, কর কি! খালায় আপনারে কাজ করতে মানা করছে না?" শিমলী ছুটে আসতে আসতে বলে।
"সারাদিন তো বসেই আছি, এইটুকু কাজ করলে কিচ্ছু হবে না।" কাজ না থামিয়ে বলে স্নিগ্ধা।
কাগজে মোড়ানো গরম মসলা কৌটায় ভরে কাগজটি ফেলে দিতে গিয়ে হঠাত থেমে যায় স্নিগ্ধা। কাগজটি ছিল একটি পত্রিকার টুকরো, যাতে কবিরের ছবি। উস্কোখুস্কো বাবড়ি চুল আর মুখ ভর্তি দাড়ি সত্তেও কবিরকে চিনতে স্নিগ্ধার একটুও অসুবিধা হয় না। ছবিতে কবিরের হাতে হাতকড়া ও তার আসেপাশে পুলিশ, প্রিজন ভ্যানে তোলার আগের মুহুর্তের ছবি। নিচে হেডলাইন লেখা "চাঞ্চল্যকর মামলা সাদিয়া ধর্ষন এবং সাইমন হত্যা মামলার আসামী শাহরিয়ার কবিরের ফাঁসির রায়"।
মুহুর্তের মাঝে স্নিগ্ধার জগতটি যেন আঁধারে ছেয়ে গেল। এক মুহুর্ত নিশ্চুপ থেকে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে স্নিগ্ধা।
"কি হইছে আপা? কি হইছে?" শিমলী বলে।
শিমলীর কথার কোন জবাব দেয় না, ছুটে যায় তার রুমের দিকে।
বিকেলবেলা যখন শাহেদা ফিরে আসে তখন শিমলী তাকে দুপুরের ঘটনাটি খুলে বলে। শাহেদা স্নিগ্ধার রুমে যায়।
স্নিগ্ধা বিছানায় বসে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিল, তার গাল বেয়ে শুকিয়ে যাওয়া অশ্রুর দাগ। শাহেদা যে তার পাশে বসেছে তা সে লক্ষ করেনি।
"কি হয়েছে মা? শিমলীর কাছে শুনলাম তুমি দুপুরে কিছু খাওনি, শুধু কাঁদছ।"
স্নিগ্ধা আবারো ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। শাহেদা ওকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলে "কিছু না বললে কি করে বুঝব? কি হয়েছে মা?"
স্নিগ্ধা খবরের কাগজের টুকরোটি শাহেদার হাতে দেয়। স্নিগ্ধা কথা বলতে পারছিল না, বাচ্চা মেয়ের মতো ফুঁপিয়ে কাঁদছিল।
"খবরটা তো আগেও পড়েছি। কিন্তু কি হয়েছে তা তো..." বলতে গিয়ে থেমে যায় শাহেদা। সে যেন একটু একটু বুঝতে পারছে।
"এই কি সেই কবির যার কথা তুমি বলেছিলে? যাকে তুমি ভালবাস?" শাহেদা বলে।
"স্নিগ্ধা হ্যাঁ বোধক ভাবে মাথা নাড়ে।
"যে মেয়েটিকে ধর্ষিতা বলা হচ্ছে, সে আমি। আমার পুরো নাম সাদিয়া আক্তার স্নিগ্ধা।" কোনরকম বলে ফেলে স্নিগ্ধা।
শাহেদা খবরটির দিকে একবার চোখ বুলায়।
"আর এই সায়মন?" শাহেদা জিজ্ঞাসা করে।
স্নিগ্ধা শাহেদা আর মজিদের কাছে সায়মনের বিষয়টা চেপে গিয়েছিল, এবার স্নিগ্ধা পুরো ঘটনাটাই খুলে বলে।
"এতোদিন শুনেছি যে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অনেক অপরাধীরা বেরিয়ে যায়। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি অপরাধীদের সাহস এতো বেড়ে গেছে যে আইনকেই ব্যাবহার করে রাতকে দিন আর দিনকে রাত করছে।"
"কি করব আমি, বুঝতে পারছি না। আন্টি সত্যি সত্যি বলুনতো ও কি বেঁচে আছে? নাকি ওরা ওকে..." বলতে গিয়ে কথা আটকে যায় স্নিগ্ধার।
"কয়েকদিন আগে খবর শুনেছিলাম যে কবির জেল থেকে পালিয়েছে। আশা করি বেঁচে আছে এখনো। তবে আমাদের যা করার তা যতোটা সম্ভব তাড়াতাড়ি করতে হবে। আমার মনে হয় সবাইকে সত্যটা জানানো উচিত। এ জন্য সোশাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারি আমরা।" শাহেদা বলে।
 
"আপা ওঠেন, সকাল নয়টা বাজে। নাস্তা করবেন না?" শিমলীর ডাকে ঘুম ভেঙে যায় স্নিগ্ধার।
"এই রে, দেরি হয়ে গেল!" দ্রুত উঠে বসতে চায় স্নিগ্ধা। নির্ঘুম রাতের শেষে ভোর পাঁচটার দিকে ঘুম নেমে আসে তার চোখে।
পাশের ঘর থেকে শাহেদা এসে বলে "ওকে ডাকলি কেন শিমলী? তুমি আরেকটু ঘুমোও মা। রাতে মনে হয় ঘুমোও নি।"
"না আন্টি, আর ঘুমাবো না। দেরি হয়ে যাচ্ছে আমাদের।" স্নিগ্ধা বলে।
"ঠিক আছে মা, তুমি গোসল করে এস। আমি খাবার বাড়ছি। ব্রেকফাস্ট করেই আমরা বেরবো।" শাহেদা বলে।
আজ স্নিগ্ধা, শাহেদা এবং মজিদ কুড়িগ্রাম জেলা শহরের দিকে যাবে, সেখানে একটি সাইবার ক্যাফে থেকে ফেসবুকে এবং ইউটিউবে একটি ভিডিও আপলোড করবে তারা। ভিডিওটিতে স্নিগ্ধা পুরো ঘটনাটিই খুলে বলবে। কি বলবে সে তা স্নিগ্ধা আর শাহেদা মিলে আগের রাতেই লিখে রেখেছে।
হঠাত কলিং বেল বেজে উঠল।
"দেখত শিমলী, তোর মজিদ কাকা এল বোধ হয়।" ভাত বাড়তে বাড়তে বলে শাহেদা। শিমলী দরজা খুলে দিতে যায় এবং কয়েক সেকেন্ড পর শাহেদার কাছে ছুটে আসে।
"খালা, পুলিশ। আপনারে ডাকে।"
"স্নিগ্ধা গোসল সেরে বের হলে ওকে বলিস ও যেন ওর ঘরের ছিটকিনি লাগিয়ে থাকে, এদিকে যেন না আসে", শিমলীকে ফিসফিস করে বলে শাহেদা দরজার দিকে এগিয়ে যায়। দরজার বাইরে একজন ত্রিশ পঁয়ত্রিশ বছর বয়সী পুলিশের পোশাক পরিহিত যুবক দাড়িয়ে আছে। লোকটি শাহেদাকে দেখে মুখে হাসি টেনে এনে বলে "গুড মর্নিং ম্যাম, এই সকাল সকাল আপনাকে বিরক্ত করছি বলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত। একটি মিসিং কেসের বিষয়ে আপনার একটু সাহায্য প্রয়োজন।"
"ভেতরে আসুন।" কন্ঠ যতোটা সম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলে শাহেদা।
"আমি ফিরোজ কালামদার, সিনিয়র ইন্সপেক্টর ভুরুঙ্গামারী থানা। এই মেয়েটি এক মাস হল নিখোঁজ, মেয়েটিকে কোথাও দেখেছেন কিনা।" বলে শাহেদার হাতে একটি ছবি তুলে দেয় ফিরোজ।
শাহেদা ছবিটি এক নজর দেখে বলে "এখানে আসার আগে নিশ্চয়ই আমার প্রতিবেশিদের জিজ্ঞাসা করেই এসেছেন, তাহলে এতো ভুমিকার কি আছে? স্নিগ্ধা স্বেচ্ছায় আমার বাসায় আছে, আর তাতে আমারও কোন আপত্তি নেই।"
"আমি কিন্তু কখনোই এটা বলার চেষ্টা করিনি যে আপনি মেয়েটিকে কিডন্যাপ করেছেন। মেয়েটি মানসিকভাবে অসুস্থ। মেয়েটির বাড়ির লোকেরা ওকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। আপনি তো নিশ্চয়ই জানেন যে সন্তানকে হারানো কতটা কষ্টের।" ফিরোজ বলে।
"স্নিগ্ধার কোন মানসিক সমস্যা নেই, ও পুরোপুরি স্বাভাবিক। আমি পঁচিশ বছর ধরে শিক্ষকতা করি, মানুষ গড়াই আমার কাজ, আমি খুব ভালভাবে বুঝতে পারি কে অসুস্থ আর কে স্বাভাবিক।" একটু থেমে শাহেদা আবার বলে "আপনাদের হিসাবে তো স্নিগ্ধা ঢাকায় একটি ক্লিনিক থেকে হারিয়ে গেছে, সে এই কুড়িগ্রামে এল কিভাবে?"
"সাদিয়া ক্লিনিক থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর নারী পাচার চক্রের হাতে পড়ে যায়। তারা তাকে কুড়িগ্রাম বর্ডার দিয়ে ভারতে পাচার করতে গিয়ে বিজিবির কাছে ধরা পড়ে। সাদিয়া সেখান থেকেও পালিয়ে যায়, তারপর থেকে আমরা সাদিয়াকে এই অঞ্চলে খুঁজছি।"
"বাহ! কি অসাধারন গল্প! গল্পটা নিশ্চয়ই স্নিগ্ধার স্বামীর সাজানো। মেয়েটি একটুও বাড়িয়ে বলেনি ওর সম্পর্কে। কিন্তু গল্পের একটি জায়গায় একটু অসংগতি আছে, একজন পাঁচ মাসের প্রেগন্যান্ট মেয়ের পক্ষে কি সম্ভব বিজিবি ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসা?" শাহেদা বলে।
"আপনি কি বলতে চাইছেন, একটু স্পষ্ট করে বলবেন প্লীজ।"
"অবশ্যই বলব, যদি আপনি সত্যিটা জানতে চান।"
এরপর শাহেদা পুরো ঘটনা খুলে বলে, যতোটা সে স্নিগ্ধার কাছে থেকে শুনেছে।
"আপনি যা বলছেন যদি তা সত্যি হয়, আমি কথা দিচ্ছি আমিই সত্যটা সবার সামনে তুলে আনব আর কবিরকেও মুক্ত করার ব্যবস্থা করব। আমার ওপর ভরসা রাখতে পারেন। কিন্তু এখন আমাকে আমার কাজ করতে দিন।"
শাহেদা একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোফা থেকে উঠে স্নিগ্ধার রুমের দিকে এগোয়। দুইবার নক করার পর স্নিগ্ধা দরজা খুলে দেয়।
"লোকটাকে কতোটা বিশ্বাস করা যায় আমি জানি না। কিন্তু বিশ্বাস না করে উপায়ও নেই, এখন মিষ্টি কথায় বোঝানোর চেষ্টা করছে। তাতে কাজ না হলে শক্তি প্রয়োগ করবে।"
"আমি বুঝতে পারছি, আন্টি।" স্নিগ্ধা বলে।
"তোমার সবচেয়ে বড় শক্তি কি জান মা? তোমার এই মনোবল। পরিস্থিতি যত খারাপই হোক না কেন কখনো ভেঙে পড়বে না।" শাহেদা বলে।

সবার কাছে বিদায় নিয়ে স্নিগ্ধা পুলিশ জিপটাতে ওঠে। পেছনের সিটে দুজন মেয়ে কনস্টেবল বসে ছিল তারা স্নিগ্ধাকে নিজেদের মাঝখানে বসিয়ে নেয়। ফিরোজ বসে ড্রাইভারের পাশের সিটে। জীপ কিছুদুর চলার পরই ফিরোজ মহিলা কনস্টেবল দুজনকে কিছু একটা ইশারা করে। তাদের একজন হঠাত স্নিগ্ধার দুটি হাত চেপে ধরে, অন্যজন একটি ইনজেকশন বের করে হাতের পেশীতে ইনজেক্ট করে দেয়। স্নিগ্ধা জোরে চিৎকার দিতে চায়, তখন একজন তার মুখ চেপে ধরে। ধিরে ধিরে তার জগত অন্ধকারে ছেয়ে যায়।

উত্তরবঙ্গে মাদক কারখানাগুলো পুলিশের কাছে ধরা পড়ার পর মজনু বাধ্য হয় তার কার্যক্রম উত্তরবঙ্গ থেকে গুটিয়ে নিতে। সজলের সহায়তায় মজনু তার কার্যক্রম দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে সরিয়ে আনে। তবে আপাতত ড্রাগ বিজনেস বন্ধ রয়েছে। পুলিশের রেইডের কারনে বিশাল ক্ষতি হয়ে গেছে মজনুর বিজনেসে, সেই ক্ষতি পূরনের জন্য ভিন্ন পথে চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। সকাল নয়টা বাজে, সজল এবং মজনু একটি গুরত্বপুর্ণ মিটিংয়ে বসেছে কুষ্টিয়ায় তাদের আস্তানায়। তবে মিটিংয়ে তাদের দুজনের সাথে আরেকজন ব্যাক্তি উপস্থিত ছিল। কায়সার শেখ একজন ভারতীয় নাগরিক। সে জিহাদে হিন্দ নামক একটি টেরোরিস্ট দলের সদস্য। ভারতীয় নাগরিক হলেও তার জন্ম দিনাজপুরের একটি বিহারী পাড়ায়। পনের বছর বয়সে ভারতে পাড়ি জমায়, সেখানেই পরবর্তীতে জঙ্গি দলের সাথে জড়িয়ে পড়ে। সারা মুখভর্তি দাড়ি, চোখ দুটি ঘোলা, গায়ের রং কালো, পরনে পাগড়ি এবং আলখাল্লা।

"আপনার মালামাল তিনটি ট্রাকে আজকে দুপুরেই বর্ডার ক্রস করবে, আশা করি বিকেলের মধ্যে এখানে পৌঁছে যাবে।" সোফায় হেলান দিতে দিতে সজল বলে।
"কোই রোকেগা নেহি? বর্ডারে কেউ আটকাবে না?" দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে খসখসে গলায় বলে কায়সার।
"জেনারেটরের কাভারে অস্ত্র শস্ত্র, আর ট্রান্সফরমারের কাভারে আরডিএক্স আসছে, ট্রাকগুলো ইলেক্ট্রিক্যাল ইকুইপমেন্ট পরিবহন করছে বলে এনাউন্স করা আছে। আর তাছাড়া বিএসএফ আর বিজিবি দুই চেকপোস্টেই ম্যানেজ করা আছে, কেউ গাড়ি আটকাবে না।" সজল ব্যাখ্যা করে।
"বহত আচ্ছা, অর হামারা আদমী? আমাদের লোকজন কবে এবং কিভাবে আসবে?"
"আপনার লোকদের দশজন বেনোপোল, দশজন হিলি আর দশজন সিলেট বর্ডার দিয়া আইজ আর কাইলকার মধ্যে আইব।" মজনু বলে।
"কিন্তু আমাদের পেমেন্ট পাব কখন আর কিভাবে?" সজল জিজ্ঞাসা করে।
"যেভাবে অর্ধেকটা পেয়েছেন। কাজ হয়ে গেলে বাকিটা আপনার ব্যাংক একাউন্টে পৌঁছে যাবে।" একটু থেমে কায়সার আবারও বলতে থাকে "আপনাদের কাজ কিন্তু এখানেই খতম নয়, আমাদের দশটা ট্রাক, আর একশ আদমী পৌঁছিয়ে দিতে হবে। তিনটি লটে আসবে তারা।"
"এতো অস্ত্র আর লোক দিয়ে কি করবেন আপনারা? আমি তো ভেবেছি দু' একটা এটাক করতে চান।" সজল বলে।
"সেটা জেনে যদিও আপনাদের কাজ নেই। তবু যেহেতু আপনারা আমাদের পার্টনার তাই বলছি, আমরা দুটি শহর কব্জা করতে চাই। যশোর আর খুলনা। তার জন্য একশ ট্রেইনড আদমী আর দশ ট্রাক অস্ত্র তো লাগবেই। আর এদেশেই হাজার খানেক মাদ্রাসার ছাত্র তৈরী আছে জিহাদে শহীদ হবার জন্য।" শীতল কন্ঠে বলে কায়সার শেখ।
সজলের মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে যায় সে উঠে যায় রুম ছেড়ে, পিছে পিছে উঠে আসে মজনুও।
"আরে ভাইগ্না, করটা কি? উইঠা যাচ্ছ কেন?" মজনু বলে।
"আমি এসবের মধ্যে আর নাই, যা করার তুমি করো। মামা তুমি কি জানতা ওদের প্ল্যানের ব্যাপারে?" সজল বলে।
"না, জানতাম না। তবে অরা যে দশ ট্রাক অস্ত্র চায় সেইটা জানতাম।"
"আমাকে জানাওনি কেন? এই কাজে কতো রিস্ক আছে জানো? যদি বুঝে যায় টেরোরিস্টদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক আছে তাহলে আমি একেবারে শেষ।"
"তুমি আছ কি জইন্যে। এমনভাবে প্লান করবা যাতে ধরা পড়ার কোন চান্সই না থাকে। আর জানইতো ব্যাবসায় কতো বড় লসের মধ্যে আছি। মাত্র কয়েকটা বাস পৌঁছায় দিলে পঞ্চাশ কোটি টাকা। এই চান্স কি ছাড়া যায়।" মজনু বলে।
সজল আর মজনু ফিরে আসে রুমটিতে। কায়সার শেখ ওদের দেখে মিটিমিটি হাসছে, সেই হাসিতে বিদ্রুপ মেশানো।
"এটুকুতেই ভয় পেয়ে গেলেন সজল বাবু? এখনো কিছুই শোনেন নি।" কন্ঠে বিদ্রুপ ফুটিয়ে তুলে বলে কায়সার।
"বাকিটা আমিই বলে দিচ্ছি। আপনারা যশোর, খুলনা দখল করতে চান মুলত মংলা বন্দরের জন্য, মঙলা বন্দর হাতে পেয়ে গেলে আপনাদের অস্ত্র আসবে জাহাজে। তখন আপনাদের টার্গেট হবে পুরো দেশ দখল।" সজল বলে।
"বাহ! লাজওয়াব। আপনার বুদ্ধির তারিফ করতে হয়।" কায়সার বলে।
"কিন্তু আসলে আপনারা কি চান? "
"আল্লাহর হুকুম আর ইনসাফ কায়েম করাই আমাদের লক্ষ। তার জন্য শহীদ হতে হামেশা তৈয়ার।"
"এসব সস্তা লেকচার কোন মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্রকে দিলে কাজে দিবে। আমিও জানি আপনারাও জানেন এ দেশ দখল করে আপনারা বেশিদিন টিঁকবেন না, কয়েক বছর, তারপর সিরিয়া ইরাকের মতো লেজ গুটিয়ে পালাবেন। কিন্তু এর মাঝে আপনারা যে মুল উদ্দেশ্যে এসেছেন তা পুরণ করে ফেলবেন। হয়তো প্রতিবেশী কোন দেশের ফায়দা তুলে দেবেন নয়তো কোন পরাক্রমশালী দেশের দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের রুট করে দিবেন।" সজল বলে।
"আপনি আসলেই খুব বুদ্ধিমান। কিন্তু অত্যাধিক বুদ্ধি কখনো কখনো মানুষকে বিপদে ফেলে দেয়। আমি চাইনা আপনি বিপদে পড়েন। তাই আসল কথায় ফেরা যাক। আপনারা কি আমাদের সাথে আছেন।" কায়সার বলে।
"আপনাদের লক্ষ্যের তুলনায় পঞ্চাশ কোটি খুব ছোট ছোট লাগছে। পুরো একশ কোটি করা যায় না?" সজল বলে।
"ঠিক হ্যায়, আমি হুজুরদের সাথে কথা বলে দেখব। কিন্তু মনে রাখবেন, আমরা বেইমানি বর্দাস্ত করি না।" কায়সার বলে।
সজল আর মজনু উঠে যায় মিটিং থেকে, তাদের এখন অনেক কাজ।

স্নিগ্ধার যখন জ্ঞান ফেরে তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে। সে নিজেকে অপরিচিত একটি ঘরে খুঁজে পায়। স্নিগ্ধা উঠে বসে। তার মাথাটা ভীষণ ব্যাথা করছিল। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে, আবারও সে বন্দিনী।
যদিও জানে যে কোন কাজ হবে না তবু গিয়ে দরজাতে আঘাত করতে করতে বলে "কে আছ, দরজাটা খোল।"
কয়েকবার বলার পর স্নিগ্ধা বিছানায় গিয়ে বসে। হঠাত দরজাটা খুলে যায় একটি পঁচিশ ছাব্বিশ বছর বয়সী যুবক হাতে খাবারের প্লেট।
"ম্যাডাম, খাইয়া লন, স্যার আইতে ঘন্টা খানেক লাগবে।"
স্নিগ্ধা কোন ভ্রুক্ষেপ করে না। যুবকটি প্লেটটা টেবিলে রেখে বের হয়ে যেতে চাইলে হঠাত কায়সার রুমে ঢুকে পড়ে।
"হুজুর আপনে এখানে কেন। নিচে চলেন।" যুবকটি বলে।
"লাড়কিটা কে রে? বহত খুবসুরত আছে।"
"সজল স্যারের ওয়াইফ, চলেন তো হুজুর।" বলে ছেলেটি কায়সারকে ঠেলে নিতে চায়।
হঠাত করে সপাটে একটি চড় বসিয়ে দেয় কায়সার যুবকটির গালে।
"যা ভাগ, জানে মেরে ফেলব যদি ডিস্টার্ব করিস।"
ছেলেটি রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই কায়সার দরজার ছিটকি লাগিয়ে দেয়।
"কি করছেন? দরজা লাগাচ্ছেন কেন?" ভয়ার্ত কন্ঠে বলে স্নিগ্ধা। কায়সারের দৃষ্টি তার বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছিল।
 
"প্লীজ চলে যান এখান থেকে। আমি একজন মা, আমার গর্ভে সন্তান। প্লীজ আমার সর্বনাশ করবেন না।" কায়সারকে এগিয়ে আসতে দেখে অনুনয় করে বলে স্নিগ্ধা।
"অতো ঘাবড়াচ্ছেন কেন ম্যাডাম? আমি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক?" বিছানার একপাশে চেপে বসে কায়সার আবার তার ঘরঘরে কন্ঠে বলে "একা একা বোরিং লাগছিল, তাই ভাবলাম আপনার মতো সুন্দরীর সাথে সময় ভাল কাটবে, মানে গল্প করে আর কি।"
"আমার একটুও গল্প করতে ইচ্ছে করছে না।" স্নিগ্ধা বলে।
স্নিগ্ধার কথা শুনতেই পায়নি এমন ভান করে কায়সার বলতে থাকে, "বিশ্বাস করুন ম্যাডাম, বহু দেশ ঘুরেছি কিন্তু তোমার মতো এমন সুন্দরী আমি কখনোই দেখিনি। আমি তোমাকে ভালবাসি, তোমার সাথে নিকাহ করতে চাই। তুমি যা চাইবে সব এনে দেব, বুর্জ খলিফার কামরায় আমাদের সুহাগ রাত হবে।"
হঠাত করেই স্নিগ্ধা লক্ষ করে লোকটাকে আর ততোটা ভয়ংকর লাগছে না, বরং একধরনের কৌতুক অনুভব করে।
"আর আমার সন্তান?" হালকা করে হেসে বলে স্নিগ্ধা।
"তোমার সন্তান মানে আমারও সন্তান, ওকে আমি নিজের সন্তান মনে করে বড় করব।" কায়সার বলে।
"কিন্তু আমাকে পেতে হলে একজনকে খুন করতে হবে। পারবে?"
"কাকে? সজল? ঐ সালাকে আমি আজ রাতে খুন করব।" কায়সার বলতে বলতে পকেট থেকে পিস্তল বের করে।
স্নিগ্ধার চোখে একটি দৃশ্য ভেসে আসে- ঘোলাটে চোখের লোকটি আর সজল একে অপরের দিকে পিস্তল তাক করে আছে, একসাথে দুজনই ট্রিগার টিপে দেয়, আর মুহুর্তে দুজনই রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়ে।
হঠাত খিল খিল করে হেসে ওঠে স্নিগ্ধা, মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কায়সার।
স্নিগ্ধা হাসি থামিয়ে বলে "না আমি তোমার হতে পারব, না সজলের। আমি অন্য একজনকে ভালবাসি, এই সন্তানও তার। তবে তুমি কি চাও তা আমি জানি। কয়েক ঘন্টার জন্য পাবে আমাকে। একটাই অনুরোধ আমার সন্তানের যেন কোন ক্ষতি না হয়।" বলে স্নিগ্ধা নিজের অঙ্গ এলিয়ে দেয় বিছানায়, চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়। আরেকবার ধর্ষণ সহ্য করার জন্য মনকে প্রস্তুত করে সে।
মিনিটখানেক পর চোখ খোলে স্নিগ্ধা, কায়সার এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, তার গাল বেয়ে অশ্রু ধারা নেমে আসছে।
"কবির!" প্রায় অস্ফুট স্বরে বলে স্নিগ্ধা!
"চিনতে পারলি তবে!" কায়সারের খসখসে কন্ঠ নয় বরং কবিরের কোমল কন্ঠ ভেসে আসে।
স্নিগ্ধা হঠাত কবিরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর বুকে মুখ গুঁজে দিয়ে হুহু করে কাঁদতে শুরু করে।
"পাগলি কাঁদছিস কেন? এই তো আমি আছি। আর তোকে কখনো কাঁদতে দেব না।" স্নিগ্ধাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলে কবির।
"তুই এখানে কেন? আর তোর চোখে কি হয়েছে?" স্নিগ্ধা কান্না থামিয়ে কবিরের মুখপানে চেয়ে বলে।
"চোখে লেন্স পরেছি। দাড়া, খুলছি।" বলে দু চোখের লেন্স খুলে নেয়। তারপর নকল মোটা ভ্রু ও খুলে ফেলে। তবে মুখ ভর্তি চাপা দাড়ি আর মোছ নকল নয়।
"কিন্তু তুই এখানে কেন? ওরা জানতে পারলে তোকে মেরে ফেলবে।" স্নিগ্ধা বলে।
"তুই পর্যন্ত চিনতে পারিস নি আর ওরা চিনবে আমাকে? দুই সপ্তাহ ধরে ওদের বোকা বানিয়ে এখানে আছি।" কবির বলে।
চিনতে পারেনি বলে স্নিগ্ধা একটু যেন লজ্জা পায়।
"তুই খাবারটুকু খেয়ে নে, আমি তোকে সব খুলে বলছি।"
"না, আমার খিদে পায়নি।"
"তোর খিদে না পেলেও আমাদের বাবুটির খিদে পেয়েছে, ওর জন্য হলেও একটু খা, এই নে আমি খাইয়ে দিচ্ছি।" বলে নিজ হাতে খাইয়ে দিতে থাকে স্নিগ্ধাকে।
স্নিগ্ধাকে খাওয়াতে খাওয়াতে কবির গল্প বলতে থাকে- কবিরের গ্রেফতার হওয়া, রিমান্ডে টর্চার তারপর সোয়েব ভাইয়ের সাথে পরিচয়, আইনি লড়াই, ফাঁসির আদেশ, জেল থেকে পালানো পর্যন্ত। ততক্ষনে স্নিগ্ধার খাওয়া হয়ে গেছে। স্নিগ্ধাকে পানি খাইয়ে নিজে হাত ধুয়ে আসে কবির।
"তারপর কি হল?" স্নিগ্ধা জিজ্ঞাসা করে।
"যদিও শাফাকাত আংকেলের সেই আস্তানাটিতে বেশ সেফই ছিলাম, কিন্তু খুব মানসিক কষ্টের মধ্যে ছিলাম। তোর কোন খোঁজ পাচ্ছিলাম না, নিজে নিজে যে খুঁজব তারও উপায় ছিল না। দেশের প্রত্যেকটি থানায় আমার ছবি পাঠিয়ে দিয়েছিল, শ্যুট এট সাইটের অর্ডার দেয়া ছিল পুলিশকে। শোয়েব ভাইও তোকে খুঁজতে পুরোপুরি মনোনিবেশ করতে পারছিল না, কারণ তিনি একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ইনভেস্টিগেশনের দায়িত্বে ছিলেন। ইন্টিলিজেন্স দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে বড় ধরনের টেরোরিস্ট এটাকের আশংকা করেছিল, তারই ইনভেস্টিগেশনের জন্য যশোরে বদলি করা হয়েছিল সোয়েব ভাইকে। ভারত এবং পাকিস্তানের একটি জঙ্গি সংগঠন জিহাদ ই হিন্দ বাংলাদেশের দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলে বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ কাজে সাহায্যের জন্য তারা যোগাযোগ করছিল মজনু গ্রুপের সাথে। মজনুকে তুই হয়তো দেখেছিস, কালো বেঁটে মোটা করে লোকটা।"
স্নিগ্ধা হ্যাঁ বোধক ভাবে মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দেয় যে সে চিনেছে লোকটাকে।
"কায়সার শেখ নামক একজনকে টেরোরিস্টরা পাঠিয়েছিল মজনু গ্রুপের সাথে যোগাযোগের জন্য। সোয়েব ভাই ওকে ধরে ফেলে তবে অফিসিয়ালি আটক না দেখিয়ে শাফাকাত আংকেলের সেই ওষুধের গুদামে নিয়ে এসে গোপনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। কিন্তু কায়সার ছিল দলের একজন নবীন সদস্য, ভাল বাংলা বলে এজন্য তাকে পাঠিয়েছিল। তবে তার কাছে তেমন তথ্য নেই। তাই তাকে ধরায় তেমন একটা লাভ হয়নি। তখন আমার মাথায় একটা আইডিয়া এল, সোয়েব ভাইকে প্রস্তাব দিলাম যে আমি কায়সার শেখ সেজে মজনুর আস্তানায় যাব এবং দুই পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে ধসিয়ে দেব। যদিও সোয়েব ভাইকে রাজি করানো সহজ ছিল না। আরেকটি ব্যাপার ছিল কন্ঠস্বর অনুকরন, কায়সার তার দলের সাথে যোগাযোগ রাখত তাদের নিজস্ব গোপন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে, কখনো টেক্সট, কখনো কলের মাধ্যমে। তাতে অবশ্য তেমন একটা সমস্যা হয়নি, মাত্র তিন ঘন্টায় রপ্ত করে ফেলেছি। তবে বিহারী টান রপ্ত করা একটু কঠিণ ছিল। তারপর দুই সপ্তাহ এই জানোয়ারদের সাথে জানোয়ার সেজে থেকেছি, আর সোয়েব ভাইয়ের কাছে গুরুত্বপুর্ন তথ্য লিক করেছি। এখন পর্যন্ত সবকিছু ঠিক ঠাক চলেছে। তবে আজকে একটি গুরুত্বপুর্ন দিন, তিন ট্রাক অস্ত্র আর ত্রিশ জন জঙ্গি এদেশে প্রবেশ করবে, তাদের আটক করলেই সোয়েব ভাই এখানে হামলা করবে।"
"আমার খুব ভয় করছে।" স্নিগ্ধা বাচ্চা মেয়ের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে বলে।
"ভয় কিসের সোনা? কোন ভয় নেই।" বলে স্নিগ্ধাকে জড়িয়ে নেয়।
হঠাত কেউ একজন দরজায় নক করে। কবির জলদি আই লেন্স আর নকল ভ্রু পরে নেয়। দরজাটা খোলার আগে আলখাল্লাটা খুলে ফেলে, পাজামার পকেটে পিস্তলটা তুলে নিয়ে শুধু স্যান্ডো গেন্জি আর পায়জামা পরে হাত দুটি উপরে তুলে মুচড়িয়ে হাই তুলতে তুলতে বের হয়। বাইরে সজল, মজনুসহ পুরো গ্যাং দাড়িয়ে। সজলের চোখ দুটি লাল টকটকে, যেন খ্যাপা ষাঁড় হয়ে আছে, এক্ষুনি তেড়ে এসে ঢুঁস দিবে। কবির মনে মনে খুশি হয়, সবকিছু প্ল্যানমাফিক হয়েছে। নিশ্চয়ই কেউ খবর দিয়েছে যে কায়সার জোরপুর্বক স্নিগ্ধার রুমে ঢুকেছে, তাতে ট্রাকগুলো পৌঁছানোর আগেই মজনু গ্যাং ফিরে এসেছে, এখন ট্রাকগুলো আটকানো সোয়েবের জন্য কিছুই না।
কিছুই হয়নি এমন ভান করে কবির খরখরে স্বরে বলে "কি খবর মজনু মিয়া আর সজল বাবু, ট্রাকগুলা যায়গামতো পৌঁছায়ছে?
"ট্রাক তোর পোঁদে ভরব শুয়োরের বাচ্চা। বেশ্যা মাগির পো, তোর সাহস হয় কি করে আমার বউকে ছোঁয়ার?" বলতে বলতে পিস্তল বের করার জন্য পকেটে হাত ঢুকায়, কিন্তু তার আগেই কবির পিস্তল তাক করে সজলের দিকে।
"মজনু মিয়া, আপনার ভাইগনাকে বলেন, তার মতো আমার মুখ চলে না, হাত কিন্তু অনেক ভাল চলে। গালতি মেরা হ্যায়। অনেক দিন ভুখা ছিলাম, এমন খুবসুরত চিজ দেখে সামলাতে পারিনি। সেই জন্য মাফি চাচ্ছি।" পিস্তল তাক করে রেখেই বলে কবির।
মজনু সজলের কানে কানে কিছু একটা বলে যা শুনে কিছুটা শান্ত হয় সজল, পকেট থেকে খালি হাত বের করে সে।
"কায়সার ভাই, পিস্তল নামান।" মজনু বলে। কবির পিস্তল পকেটে ঢোকায়।
"সজল, তোমার বউরে নিয়া যাও এখান থেইকা।" মজনু বলে।
সজল স্নিগ্ধার রুমের দিকে এগোতে থাকে, কবিরের পাশ দিয়ে যাবার সময় কবির বলে "সামান্য প্রমোশনের জন্যও তো বউকে অন্যের বিছানায় দিতে পারিস। একশ কোটি টাকার জন্য তিন মাসের হানিমুন ট্রিপে নিতে দিবি না?"
শুনে সজল নিজের রাগ চেপে রাখতে পারল না এক হাতে কবিরের গলা চেপে ধরে অন্য হাতে কবিরের মুখে ঘুষি দিতে শুরু করল, চতুর্থ ঘুষি দেবার আগেই সজলের হাত ধরে ফেলে অন্য হাত দিয়ে গায়ের সমস্ত জোর এক করে সজলের মুখে ঘুষি বসিয়ে দেয়। সজল টলতে টলতে পড়ে যাচ্ছিল, মজনুর লোকেরা ওকে ধরে ফেলে।
"তাল পাতার সেপাই এসেছে আমার সাথে লড়তে!" ঠোঁট কেটে বেরোন রক্ত মুছতে মুছতে বলে কবির।
আগে কখনোই কাউকে এক ঘুষিতে অজ্ঞান করতে পারেনি কবির। কিন্তু আজ যেন বারো বছর ধরে জমতে থাকা সমস্ত রাগ এসে ওর হাতে পুঞ্জিভূত হয়েছিল।
সজলকে ধরাধরি করে যখন সোফাতে শোয়াচ্ছিল তখন মজনুর একজন লোক এসে বলল "স্যার পুলিশের একটা জিপ আমাদের প্লটের সামনে থেমেছে।"
"এই অসময়ে পুলিশ!" চিন্তিত কন্ঠে বলে মজনু।
"নির্ঘাত এই শুওরটাই পুলিশকে ডেকেছে, আমাকে ধরিয়ে দিতে।" দাঁতে দাঁত ঘষে বলে কবির।
"ফাতাউল দারোগা হইতে পারে। টাকা নিতে আসছে হয়তো। চল দেখি।" মজনু বলে।
দুজনকে সজলের কাছে রেখে বাকি সবাই মজনুর সাথে গেল। মজনু চলে যেতেই কবির স্নিগ্ধার রুমের দিকে যায়, স্নিগ্ধা দরজার সামনেই কান পেতে দাড়িয়েছিল, বাইরে কি হচ্ছে বোঝার চেষ্টা করছিল। কবিরকে দরজা খুলতে দেখে জড়িয়ে নিয়ে ওর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল। সেই অবস্থাতেই দরজা লাগিয়ে দেয় কবির। কোন দিকেই যেন কোন খেয়াল নেই ওদের, কখনো একে অন্যের ঠোঁট চুষছে কখনো বা চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে একে অন্যের মুখ। হঠাত দুজন থমকে যায় একটি গুলির শব্দে।
"কিসের শব্দ?" স্নিগ্ধা বলে।
"চিন্তা করিস না, সোয়েব ভাইদের স্কোয়াড এসে গেছে।" কবির বলে।
"ওনারা পারবেন তো?"
"মজনু গ্যাং ওনাদের সামনে পাঁচ মিনিটও টিঁকবে না।" কবির বলে।
স্নিগ্ধাকে বিছানায় শুইয়ে দেয় কবির, ওর পেটের কাছ থেকে শাড়ির আঁচল সরিয়ে দেয়। ওর মসৃণ পেট অনেকটাই ফুলে উঠে ভেতরের সত্তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে।
"নাম রেখেছিস?" কবির জিজ্ঞাসা করে।
"না, ভেবেছিলাম দুজন মিলে রাখব।"
কবির স্নিগ্ধার পেটে চুমু দেয়। স্নিগ্ধা খিল খিল করে হেসে ওঠে।
"ইশ! শুরশুরি লাগে। তোর কতো বড়বড় দাড়ি।" স্নিগ্ধা বলে।
কবির চুমু দিতেই থাকে, আর স্নিগ্ধাও হাসতে থাকে।
হঠাত দরজায় কেউ নক করে। কবির উঠে পিস্তলটি হাতে নিয়ে লোড করে দরজার কাছে যায়। দরজা খুলতেই সোয়েবকে দেখতে পায়। সোয়েব কবিরকে হালকা জড়িয়ে নেয়।
"বাইরের কি অবস্থা?" কবির বলে।
"অল ক্লিয়ার। তোমরা ঠিক আছ?"
"একদম।"
 
স্নিগ্ধা রিক্সাটি বাড়ির সামনে দাঁড় করায়, ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে কলিং বেল চাপে। সন্ধা ঘনিয়ে এসেছে, আকাশে হালকা মেঘের পরত কেমন যেন হলদেটে আলো ছড়িয়ে দিয়েছে চারিদিকে। স্নিগ্ধা স্থানীয় হাই স্কুলে ফিজিক্স ও ম্যাথ পড়ায়। যে স্কুলে ও আর কবির একসাথে পড়তো সেখানেই চাকরী নিয়েছে চারমাস আগে। সকাল নয়টা থেকে স্কুল তিনটে পর্যন্ত, তারপর দুই ব্যাচ টিউশনি করিয়ে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা বেজে গেছে।
দ্বিতীয়বার কলিংবেল চাপতেই দরজা খুলে যায়, ওর মা দরজা খুলে দেয়।
"এতো দেরি হল যে?" শিরিন জিজ্ঞাসা করে।
"দুটো ব্যাচ পড়ালাম।" ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে স্নিগ্ধা।
"মুমু কোথায় মা?" স্নিগ্ধা জিজ্ঞাসা করে।
"ওর আব্বুর সাথে দোকানে গেছে।" শিরিন বলে।
"ওকে নিয়ে যেতে দিলে!"
"না দিয়ে উপায় আছে? ওর আব্বু দুপুর বেলা খেতে এল, আর অমনি জিদ করে বসে আব্বুর সাথে যাবে। একদম তোর মতো হয়েছে, একবার কিছু জিদ করে বসলে আর রক্ষা নাই।"
স্নিগ্ধা তাদের বেডরুমে যায়। দেয়ালে একটি বেশ বড় বাঁধাই করা ছবি, সেটি খুলে এনে শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছতে থাকে স্নিগ্ধা। ছবিতে ওরা হাসিমুখে পাশাপাশি দাড়িয়ে আছে, স্নিগ্ধার কোলে ছোট্ট ফুটফুটে একটি শিশু। তখন মুমুর বয়স একমাস। সাতটি মাস কিভাবে চোখের পলকেই কেটে গেল- মনে মনে ভাবে স্নিগ্ধা। সে ছবিটা রেখে গোসল করতে যায় বাথরুমে।
মুমুর যখন জন্ম হয় তখন কবির জেলে ছিল। যদিও স্নিগ্ধার সাক্ষ্য এবং সায়মনের দুই সহযোগী স্বীকারোক্তি দেয়াতে কবিরের ছাড়া পাওয়া নিশ্চিতই ছিল, কিন্তু বিভিন্ন আইনী জটিলতার কারনে কবিরের ছাড়া পেতে সাড়ে তিন মাস লেগে গেল। অন্যদিকে জিল্লুর রহমান হত্যা মামলা, ষড়যন্ত্র, কিডন্যাপিং, মাদক স্মাগলিং আর দেশদ্রোহিতার অপরাধে মজনুর ফাঁসি আর সজলের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের রায় দেয় আদালত। বেশ ধুমধাম করে ওদের বিয়ে হয়। যদিও মানুষের অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে ওদের। যেমন কয়েকদিন আগেই স্নিগ্ধার একজন কলিগ জিজ্ঞাসা করে বসে যে ওর মেয়ে কি আগের পক্ষের নাকি নতুন পক্ষের। স্নিগ্ধা কোন জবাব দেয়নি, শুনতেই পায়নি এমন ভঙ্গিতে এড়িয়ে যায়। সে জানে যে কিছুদিন মানুষ এসব বিষয় নিয়ে কানাঘুষা করবে, তারপর ভুলে যাবে।
গোসল সেরে স্নিগ্ধা পড়তে বসে। তিনদিন পরই বিসিএস পরীক্ষা, কালকেই ও ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। যদিও প্রিপারেশনের জন্য তেমন একটা সময় পায়নি তারপরও নিজের সবটা দিয়ে চেষ্টা করছে সে।
আমিনুজ্জামান অফিস থেকে ফেরে আটটায়। অফিস থেকে ফিরেই মেয়ের ঘরে চলে আসে।
"আমার মুমু পাখি কই? মুমু পাখি" চারিদিকে চোখ বুলিয়ে বলে জামান। ওনার হাতে একটি প্যাকেটে মোড়ানো পুতুল।
"ওর আব্বুর সাথে দোকানে গেছে।" বলে একটু থেমে আবার বলে "আব্বু, তুমি আবার পুতুল কিনেছ? দেখনা শোকেস একেবারে ভরে গেছে।"
"ওসব তো তোমার পুতুল। আমার মুমু পাখির জন্য কি আমি পুতুল কিনতে পারব না? দরকার হলে আমি আরেকটা শোকেস বানিয়ে নেব।" একটু থেমে আবার বলে "মামনি, কি পড়?"
"ম্যাথ করছি, আব্বু।"
"মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অধ্যায়টা ভাল করে পড়, ওখান থেকেই প্রিলিমিনারির টুয়েন্টি ফাইভ পার্সেন্ট প্রশ্ন হয়।" স্নিগ্ধার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে জামান।
"আচ্ছা।" একটু থেমে আবার বলে স্নিগ্ধা "আব্বু তুমি ছুটি পেয়েছ?"
"হ্যাঁ, তবে মাত্র একদিন। তোমাকে রেখেই চলে আসতে হবে।" জামান বলে।
"ঠিক আছে আব্বু।"
জামান মেয়ের কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে অন্য ঘরে চলে যায়।
কয়েক মিনিট পরই কবির আসে, মুমুকে কোলে নিয়ে। মুমুর মুখে একটি ললিপপ। নিজের মুখ থেকে ললিপপ বের করে কবিরের মুখে গুঁজে দেয়ার চেষ্টা করে, কবির মুখ সরিয়ে নিয়ে বলে "আমি খাবনা মামনি, তুমি খাও।" কথা শেষ না করতে দিয়েই মুমু তার ললিপপ ওর বাবার মুখে ঢুকিয়ে দেয়, আবার টেনে বের করে নিজের মুখে নেয়। বাবা মেয়ের কান্ড দেখে ফিক করে হেসে ওঠে স্নিগ্ধা। কোনমতে হাসি থামিয়ে বলে "মেয়েকে তো খুব ললিপপ খাওয়াচ্ছিস, দাঁতে পোকা হলে আবার আমাকে বলতে আসিস না।"
"এক্ষুনি দাঁত ব্রাশ করিয়ে দেব, তাই না মামনি?"
আনন্দবাচক একটি শব্দ করে মুমু।
"এই যে তোর মেয়ের পুতুল, আব্বু এনেছে।" স্নিগ্ধা বলে।
"দেখেছ মামনি, নানু কতো সুন্দর পুতুল এনেছে। চল নানুকে থ্যাংস বলতে হবে।" বলে কবির মুমুকে নিয়ে অন্য ঘরে চলে যায়। স্নিগ্ধা আবারও পড়াতে মন দেয়।
রাত দশটা বাজে, কবির আর শিরিন মিলে মুমুকে ফিডারে দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু ব্যার্থ হয়। মুমু বার বার বলে- আম্মু দুদু। এই একটি কথা বেশ স্পষ্টভাবেই বলে মুমু। কবির ওকে স্নিগ্ধার কাছে নিয়ে যায়।
"ওকে একটু দুধ খাওয়া" কবির বলে। স্নিগ্ধা চেয়ার ছেড়ে বিছানায় গিয়ে বসে মুমুকে চিত করে কোলে নেয়।
"সারা দিন আব্বু আর নানা, নানির কাছে থাকিস, আমি কোলে নিতে চাইলেও আসিস না। শুধু দুদু খাবার সময় হলেই আম্মুর কথা মনে পড়ে তাইনা?" স্নিগ্ধা বলে।
মার কথা শুনে মুমু মাড়ি বের করে করে হাসে।
"দেখেছিস, কি দুষ্টু! আবার হাসে!" বলতে বলতে মুমুর মুখ ভরে চুমু দেয়। তারপর ব্লাউজ উপরে তুলে মুমুকে স্তনপান করাতে থাকে।
কবির টিভিতে খবর দেখতে দেখতে আড় চোখে দেখছিল স্ত্রী কণ্যাকে।
মুমুর দুধ খাওয়া হয়ে গেলে শিরিন এসে ওকে নিয়ে যায় ঘুম পাড়ানোর জন্য। দুই মাস হল মুমু ওর নানির সাথেই ঘুমায়।
কবির টিভি বন্ধ করে, হাত মুখ ধুয়ে এসে শুয়ে পড়ে। স্নিগ্ধা রুমের লাইট অফ করে টেবিল ল্যাম্প অন করে পড়তে বসে।
কবিরের মন খুব উতলা হয়ে আছে, খুব করে কাছে পেতে চাইছিল স্নিগ্ধাকে, কিন্তু ও তো আবার পড়তে বসল। রাতে এই সময়ই তো সুযোগ থাকে ওকে একটু কাছে পাবার, কিন্তু বিগত দুইমাস হল প্রায় প্রতিদিনই স্নিগ্ধা রাত জেগে পড়ছে। এই দুই মাস ওদের যৌন মিলন সপ্তাহে এক দুইবারের বেশি হয়নি। আর এই সপ্তাহে তো স্নিগ্ধা তো ঢাকাতেই থাকবে। কবির একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে অন্যদিকে কাত হয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু সহজে ঘুম আসে না ওর।
এক ঘন্টা পর স্নিগ্ধা এসে ওর পাশে শোয়, "কিরে, ঘুমিয়ে গেলি?"
"নাহ, তোর জন্য অপেক্ষা করছি। প্রিপারেশন কেমন হল তোর?"
"প্রিপারেশন তো ভালই হল, বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।"
"আমার তোর ওপর পুরো বিশ্বাস আছে, তুই ঠিকই চান্স পাবি।" কবির বলে।
"বাসের টিকেট কেটেছিস?" স্নিগ্ধা জিজ্ঞাসা করে।
"হম। সকাল সাড়ে দশটার বাস। আর সোয়েব ভাইকেও কল দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি। বনানীতে নেমে পড়িস। উনি রিসিভ করবেন।" কবির বলে।
"বনানীতে কেন? সোয়েব ভাইয়ের কি আবার পোস্টিং হয়েছে?"
"হ্যাঁ, তিনি এখন বনানী থানায়। আর প্রোমোশনও হয়েছে, তিনি এখন এসপি।" কবির বলে।
"তা জানি, সোমা ভাবির সাথে কিছুদিন আগে ফোনে কথা হয়েছে।" স্নিগ্ধা বলে।
"তোকে ছেড়ে এ কটা দিন কিভাবে কাটবে কে জানে।" স্নিগ্ধার দিকে আরো এগিয়ে আসতে আসতে বলে কবির।
"মাত্র তো এক সপ্তাহই। মুমুর দিকে খেয়াল রাখিস।"
কবির স্নিগ্ধাকে আলতো করে জড়িয়ে নিয়ে বলে "তুই বিসিএস করবি, কোন পাবলিক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর হবি, পিএইচডি করবি, কতো নামিদামি লোকের সাথে ওঠাবসা হবে তোর, তাদের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিতে লজ্জা করবে না তোর? যদি কেউ জিজ্ঞেস করে যে তোর স্বামী কি করে, কি বলবি? বইয়ের স্টলের দোকানদার।"
"কি বললি! লজ্জা করবে কেন? আমাকে তুই এই চিনিস? আচ্ছা আমি পরীক্ষাই দেব না, চাকরীটাও ছেড়ে দেব।" আহত স্বরে বলে স্নিগ্ধা।
"আমি তা বলতে চাইনি সোনা। তোর স্বপ্নই তো আমার স্বপ্ন। কিন্তু কখনো কখনো একটু হীনমন্যতা চলে আসে, মনে হয় আমি তোর যোগ্য নই। আর কখনো অমন করে বলব না, ক্ষমা করে দে।" অনুনয় করে বলে কবির।
"কক্ষনো ওভাবে বলবি না। কি করে ভাবিস তুই আমার যোগ্য না? আমার জীবন তো নষ্ট হয়েই গিয়েছিল, তুই তো নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছিস। আমার যা আছে তা তোর দেয়া, যা কিছু পাব সবই তোর।" একটু থেমে আবার বলে "যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে যে আমার স্বামী কি করে, তবে আমি গর্বের সাথে বলব - আমার স্বামী এদেশের একজন জনপ্রিয় কথা-সাহিত্যিক।"
"কথা-সাহিত্যিক?"
"তোর লেখা সেই উপন্যাস 'রুপকথার দেশে' অসাধারণ হয়েছে। এবার একুশে বই মেলায় উপন্যাসটা বই আকারে প্রকাশ করলে খুব চলবে।"
"যাহ, মিছে প্রশংসা করছিস। আনাড়ী ধরনের লেখা ছিল ওটা।" কবির বলে।
"আমি একটুও বাড়িয়ে বলছি না। আমি সাহিত্যের ছাত্রী নই, কিন্তু সাহিত্যের ভাল মন্দ বোঝার ক্ষমতা আছে আমার। সোমা ভাবির কাছে শুনেছিলাম সোয়েব ভাইয়ের এক বন্ধু আলো প্রকাশনীর মালিক, তোর উপন্যাসটা তাকে দিব। আমি নিশ্চিত তোর উপন্যাস ছাপাতে রাজি হবেই।" স্নিগ্ধা বলে।
কবিরের দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে তার বইয়ের দোকানে বসে থেকে। কাজের ফাঁকে সে একটু একটু করে তার যাযাবর জীবনের অভিজ্ঞতা আর কল্পনার মিশ্রনে একটি উপন্যাস লিখেছিল ডায়েরিতে। স্নিগ্ধাকে দেখিয়েছিল সেটা।
তারপর কিছুক্ষন নিস্তব্ধতায় কেটে যায়।
"প্লীজ সোনা, একটু আদর করতে দে।" ফিস ফিস করে বলে কবির।
"অনেক রাত হয়েছে যে? কাল সকাল সকাল উঠতে হবে না?"
"এই সপ্তাহে তো তোকে আর পাব না। একটিবার করতে দে। "
স্নিগ্ধা কোন আপত্তি করে না। কবির ওর ওপর উঠে এসে ওর ঠোঁটে গভীর চুমু দেয়, তারপর গলায় ঠোঁট ঘসতে থাকে। হাত দুটো দিয়ে ওর মসৃন পেটের নরম ত্বক অনুভব করতে থাকে।
মুমুর জন্মের পর থেকে স্নিগ্ধা ওর বুকে হাত দিতে দেয়নি। কিন্তু কবিরের ভীষণ লোভ হয় ওর হৃষ্টপুষ্ট ফর্সা স্তনজোড়ার প্রতি।
"ও সোনা একটু দুধ খাওয়াবি।" ফিসফিস করে বলে কবির। এর আগেও একবার কবির প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু স্নিগ্ধা না করে দেয়। তখন মুমুর বয়স তিন মাস, দিনে চার পাঁচবার বুকের দুধ খেত ও।
"ফ্রিজে দুধ আছে, গরম করে দেই?" বুঝেও না বোঝার ভান করে বলে স্নিগ্ধা।
"ওই দুধ নয়, এগুলো।" বলে স্নিগ্ধার স্তনগুলোকে ব্লাউজের ওপর দিয়ে আলতো করে টিপে দেয়।
"যাহ, ছি! কেউ নিজের বউয়ের দুধ খায়?"
"কেউ খায় বা না খায়, তুই দিবি কিনা বল।"
"ঠিক আছে, আয়। কামড়ে দিবি না কিন্তু!"
অনুমতি পেয়েই কবির তড়াক করে উঠে পড়ে বিছানা থেকে, লাইট অন করে।
"লাইট অন করলি কেন?" স্নিগ্ধা জিজ্ঞাসা করে।
"তোকে আজ ভালভাবে দেখব।"
স্নিগ্ধা ওর ব্লাউজ খুলে ওকে ইশারা করে।
"এভাবে নয়। যেভাবে মুমুকে খাওয়াস।" কবির বলে।
স্নিগ্ধা উঠে বসে, আর কবির ওর কোলে মাথা রেখে চিত হয়ে শোয়, ওর চোখের সামনে স্নিগ্ধার শুভ্র হৃষ্টপুষ্ট স্তনজোড়া, মা হবার পরও একটুও ঝুলে যায়নি, আগের মতোই ঔদ্ধত্য রয়েছে সে দুটোর। স্নিগ্ধা ওর স্বামীকে স্তনপান করাতে থাকে। কবির যেন সুখের সমুদ্রে ভেসে যেতে থাকে। খয়েরি বোঁটা আর গোলাপি এরিয়েল সহ মুখে নিয়ে চুষতেই মুখ ভরে ওঠে মিষ্টি দুধে। সেই দুধ গলাধঃকরন করতে করতে এক হাতে অন্য স্তনটি আস্তে আস্তে টিপতে থাকে।
স্নিগ্ধার শরীরেও এক অন্যরকম শিহরণ বয়ে যায় কবিরকে স্তনপান করাতে করাতে। বারবার ওর কপালে ও চোখে চুমু দিতে থাকে।
"মন ভরল তো। এবার তাড়াতাড়ি কর। অনেক রাত হয়েছে।"
কবিরের ইচ্ছে করছিল ওর যোনিতে মুখ দিতে, কিন্তু সকাল সকাল উঠতে হবে বলে তা করল না। স্নিগ্ধাকে বিছানার কিনারায় টেনে এনে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সেক্স করতে শরু করে। দশ মিনিটের মাঝে দুজনই একই সাথে অর্গাজমে পৌঁছে যায়। একইসাথে লোডশেডিংও হয়। মাথার ওপর ফ্যান থাকার পরও দুজনই ঘেমে ধুয়ে গেছে। তার মাঝে আবার লোডশেডিং। কোন রকম ধাতস্থ হয়েই কবির বলে "চল ছাদে যাই।"
স্নিগ্ধা একটি মেক্সি পরে নিয়ে পাশের ঘরে উঁকি দেয় মুমুকে দেখতে। মুমু ঘুমিয়েই আছে আর ওর নানি বসে বসে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছিল।
ওরা ছাদে এসে দোলনাটায় বসে। ফুরফুরে পুবালী বাতাস বইছিল, আকাশে মস্তবড় চাঁদ- তার জোছনা যেন চারিদিক ভাসিয়ে দিচ্ছে, নিকষ কালো রাতের আকাশে অযুত নিযুত তারা উঁকি দিচ্ছে।
"লোডশেডিং না হলে এই মুহুর্তটা মিস হতো।" স্নিগ্ধা বলে।
"মনে হচ্ছে যেন এক স্বপ্ন, স্বপ্নের জগত!" একটু থেমে কবির আবার বলে "জানিস, মাঝে মাঝে আমার খুব ভয় হয়। মনে হয় সবকিছু যেন স্বপ্ন, হঠাত ঘুম ভেঙে দেখব কোন নোংরা ফুটপাতে নিঃসঙ্গ পড়ে আছি।"
"এমনটা কক্ষনো হবে না সোনা, আমি সবসময় তোর পাশে আছি, কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না।" বলে স্নিগ্ধা জড়িয়ে নেয় কবিরকে, ওর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।

(সমাপ্ত)
 
শব্দ দিয়ে ভাল লাগাটা প্রকাশ করার জন্য শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না!
তারপরও বলব অসাধারন...
অনেক দিন পর একটা সম্পূর্ন গল্প পড়তে পারলাম...
 
অসাধারন একটা গল্প। মন ছুঁয়ে যায়। আরও চাই
 
Oshadharon !..oshadharon!..oshadharon.
Really enjoyed and could not stop reading till the end.
Please keep on writing..amazingly readable.
 
পর পর তিন বার পড়ে তবে প্রশংসা করার ফুরসত পেলাম
অসাধারণ!!
 
অসাধারন.......! ভাষা হারিয়ে ফেলেছি ধন্যবাদ দেওয়ার মতো..অনেকদিন পর দুপুরের ঘুম মিস দিলাম
 
একটা গফ দরকার। একটা বৌ দরকার। যার জন্য যুদ্ধ করব। এইটুক ইচ্ছা ঢুকিয়ে দিয়েছেন অন্তত গল্পটার মাধ্যমে!
 

Users who are viewing this thread

Back
Top