What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

সত্তা (2 Viewers)

"কিরে কয়েকদিন ধরে তুই ভার্সিটি যাচ্ছিস না কেন?" চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলে কবির।
স্নিগ্ধাদের এপার্টমেন্টের সামনে চায়ের দোকানে বসে স্নিগ্ধা ও কবির চা খাচ্ছিল।
"কিরে উত্তর দিলি না। শরীর খারাপ নাকি?"
"নারে ঠিকই আছি। এমনিই যাইনি।"
"সামনে সেমিস্টার ফাইনাল, এসময় এমনি এমনি ক্লাস মিস করলে চলে?" বলে স্নিগ্ধার দিকে তাকায় কবির। কিন্তু স্নিগ্ধা ওর কথা শুনতে পেল বলে মনে হলোনা, অন্যমনস্কভাবে এক দিকে তাকিয়ে আছে।
হাত দিয়ে তুড়ি মারে কবির স্নিগ্ধার সম্বিত ফিরিয়ে আনার জন্য।
"কিরে ঝিম মেরে গেলি কেন? কি ভাবছিস এতো? আবার ঝগড়া করেছিস নাকি বয়ফ্রেন্ডের সাথে।" কবির বলে।
"ধুর, আর রিলেশনই রাখব না।" দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে স্নিগ্ধা।
"কেন কি হল আবার?"
"ওকে আমি যেমনটা ভাবতাম তেমন নয় ও। এতোদিন আমার সাথে ভালমানুষের অভিনয় করে গেছে। আমার আর প্রেমপ্রীতির ভেতর যাবার ইচ্ছা নেই, প্রেম মানেই অভিনয়।" স্নিগ্ধা বলে।
"একজনকে দিয়ে সবাইকে বিবেচনা করে নিলি?"
"আমার আর বিবেচনা করে কাজ নেই, মা বাবা যার সাথে বিয়ে ঠিক করবে তাকেই বিয়ে করব। ওহো আম্মু তো জামাই পছন্দ করেই রেখেছে, তাকেই বিয়ে করে নেই?" বলে মিটিমিটি হাসে স্নিগ্ধা।
"বিয়ে করলে কর, সমস্যা কোথায়?" কবিরও মিটিমিটি হেসে বলে।
"সমস্যা তো আছেই, ঘুমালো নাক ডাকে। রাতে ঘুমাতেই দিবেনা।"
"কি বললি? আমি নাক ডাকি?"
"ডাকিস না আবার?" বলে নাক ডাকার অনুকরন করে দেখায় স্নিগ্ধা।
"মিথ্যা বলছিস তুই। তুই কিভাবে জানিস?"
"জানব না কেন? তুই আর আমি কি একসাথে ঘুমাইনি?"
"সে তো ছেলেবেলায়। এখন কি আর নাক ডাকি নাকি?"
"এখন আর নাক ডাকিস না?"
"আরে নাহ।"
"আরো সমস্যা আছে। তুই খুব বেশিই চিকন। গলার হাড় দেখা যায় তোর।"
"তুইও তো চিকন।"
"আমাকে তো আর বাহাদুরি দেখাতে হবেনা। গায়ে জোর না থাকলে স্ত্রীকে রক্ষা করবি কিভাবে? বেশি খেয়ে গায়ে শক্তি বাড়া, নিয়মিত জিম কর, আর মার্শাল আর্ট শিখে নে। তারপর দেখা যাবে।"
"হয়েছে হয়েছে, আমাকে আর তোর বিয়ে করতে হবেনা।" নিরাশ হওয়ার ভঙ্গিতে বলে কবির।
খিল খিল করে হাসতে থাকে স্নিগ্ধা কবিরের কথা শুনে। ইদানিং স্নিগ্ধার এই মিষ্টি হাসিতে কবির কেন যেন বুকের ভেতর ব্যাথা অনুভব করে।
সারাদিন মন খারাপ ছিল স্নিগ্ধার, কিন্তু কবিরের সাথে কথা বলে মনটা ভাল হয়ে গেছে। আগেও লক্ষ করেছে স্নিগ্ধা মন যতই খারাপ থাকুক, ওর সাথে কথা বললেই ভাল হয়ে যায়, কি জাদু আছে কে জানে?
হঠাত রিংটোন বেজে ওঠে স্নিগ্ধার মোবাইলে। সজল কল দিয়েছে, দুইবার রিং হওয়ার পর রিসিভ করে স্নিগ্ধা।
"হ্যালো স্নিগ্ধা, তুমি কালকে একটু আসতে পারবে বাসায়? আম্মা তোমাকে খুব দেখতে চাচ্ছেন।" সজল বলে।
"কালকে আমার ক্লাস আছে। পরীক্ষার আগে ক্লাস মিস করা উচিত হবেনা।" স্নিগ্ধা বলে।
"অন্তত বিকেলের দিকে এসো।"
"ঠিক আছে। কিন্তু আমার দুটি শর্ত আছে। প্রথমতো আমাকে নিতে আসবে না, দ্বিতীয়ত তখন তুমি বাসায় থাকবে না।" স্নিগ্ধা বলে।
"ঠিক আছে, তবুও এসো।" দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে সজল।
স্নিগ্ধা কল কেটে দেয়।
"তুই না বললি রিলেশন রাখবি না?" কবির বলে।
"কি করব বল, পাঁচ বছরের রিলেশন। মাকড়শার জালের মতো আষ্টেপিস্টে আটকে গেছি, যতো ছাড়াতে চাই ততো আটকে যাচ্ছি। আর তাছাড়া ওর মা বেশ সহজ সরল মানুষ, ওর মতো না। তুইও চল না, তোরও ভাল লাগবে।"
"আরে না, বিকেলে আমার টিউশনি আছে।"
"একদিন টিউশনি মিস দিলে কিছু হবে না।" স্নিগ্ধা বলে।

বিকেল চারটের সময় স্নিগ্ধা কবিরকে কল করে। কয়েকবার রিং হওয়ার পর রিসিভ হয়।
"হ্যালো কবির, কোথায় তুই?"
"আমি বাসে। ধানমন্ডি যাচ্ছি, টিউশনি আছে।" কবির বলে।
"তোর না আমার সাথে এক যায়গায় যাওয়ার কথা? " স্নিগ্ধা বলে।
"আমি বললাম না যে আমি যেতে পারবনা, টিউশনি আছে?" কবির বলে।
"আমি কোন কথা শুনবনা, তোকে আমার সাথে যেতেই হবে। তুই পান্থপথে অপেক্ষা কর, আমি আসছি।"
"সামনে ছাত্রের পরীক্ষা, এসময় টিউশনি ফাঁকি দেয়া ঠিক হবে?"
"আমি ওসব কথা শুনব না, আমি এখন রওনা দিচ্ছি, যদি পান্থপথ মোড়ে তোকে না পাই তো তোর খবর আছে।" বলে ফোন কেটে দেয়।
স্নিগ্ধা তারপর এপার্টমেন্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসে।
স্নিগ্ধা পান্থপথ মোড়ে এসে কবিরকে আবারও কল দেয়।
"কোথায় তুই?" স্নিগ্ধা বলে।
"পান্থপথ মোড়ে, যেমনটা হুকুম করেছেন আমায়।"
"ও, তোকে দেখতে পেয়েছি, রাস্তা পার হয়ে আয়।"
"আপনার হুকুম শিরোধার্য শাহাজাদী।"
"চুপ।" বলে কেটে দেয় স্নিগ্ধা।
"চা খাবি? দারুন চা বানায় ওই চাচা।" ফুটপাতে একটি চায়ের দোকানে দেখিয়ে বলে কবির।
"না, পরে খাব, এখন চল, বনানি যেতে হবে।"
"তুই তোর হবু শাশুড়ির সাথে দেখা করতে যা না, আমাকে টানছিস কেন?"
"চুপ, তুই খুব বেশি কথা বলিস। চুপচাপ চল আমার সাথে।"
"আপনার হুকুম শিরোধার্য, রাজকুমারী।"
"তুই এরকম করে কথা বলছিস কেন?" স্নিগ্ধা বলে।
"তুই যেভাবে হুকুম জারী করছিস তাতে মনে হচ্ছে তুই রাজকুমারী আর আমি তোর ভৃত্য।"
"ও তাই! ঠিক আছে আমি আর কোন হুকুম করব না। তুই তোর টিউশনিতেই যা, লাগবেনা আর তোকে।" অভিমানের সুরে বলে স্নিগ্ধা।
"আরে রাগ করিস কেন? আমি তো ইয়ার্কি করলাম। আই এম সরি। এই নে কানে ধরছি।"
"তার দরকার নেই, চুপচাপ চল।" স্নিগ্ধা বলে।
 
বনানী পৌঁছাতে আরো একঘন্টার মতো লাগে ওদের। সজলের ফ্ল্যাটের সামনে এসে কলিংবেল টেপে স্নিগ্ধা, প্রায় সাথে সাথেই দরজা খুলে যায়, অন্যপাশে হাসিমুখে দাড়িয়ে আছে জাহিদা।
"এসো মা, ভেতরে এসো।" হাসি মুখে বলে জাহিদা।
"ভাল আছেন, আন্টি?" স্নিগ্ধা ভেতরে আসতে আসতে বলে।
"এইতো ভালই আছি।" জাহিদা বলে।
"আরে তুই বাইরে দাড়িয়ে কেন? ভেতরে আয়।" কবিরকে বাইরে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বলে স্নিগ্ধা।
"ও কবির, আমার বন্ধু। আর উনি জাহিদা আন্টি, সজলের মা।" স্নিগ্ধা পরিচয় করিয়ে দেয়।
"ও, তোমরা দাঁড়িয়ে কেন? বসো। আমি চা বানিয়ে আনি।"
"ডাক্তার আপনাকে বিছানা থেকে উঠতেই মানা করেছে। আপনি বসুন, আমি চা আনি, তোমরা গল্প কর।" বলে স্নিগ্ধা উঠে কিচেনের দিকে যায়।
"তুমি আর স্নিগ্ধা একই ক্লাসে পড়?" কবিরকে জিজ্ঞাসা করে জাহেদা।
"না, তবে একই ইউনিভার্সিটিতে। ও ফিজিক্সে আর আমি ম্যানেজমেন্টে।" কবির উত্তর দেয়।
"ও আচ্ছা। তুমি সজলকে চেন?"
"তেমন একটা না, কয়েকবার দেখা হয়েছে।"
"তোমার বাড়ি কোথায়?"
"বগুড়া।"
"স্নিগ্ধাদেরও বাড়ি তো বগুড়ায়, তাই না?"
"হ্যাঁ।"
"তুমি স্নিগ্ধাকে আগে থেইকাই চেনো?"
"হ্যাঁ, ও আর আমি তো একই কলেজে পড়তাম, স্কুলেও একই ক্লাসে ছিলাম।" কবির বলে।
"ও তাই বল। তোমরা তাহলে অনেক দিনের পরিচিত।" জাহিদা বলে।
কবির মাথা নেড়ে সায় দেয়। ততোক্ষনে স্নিগ্ধা ট্রেতে করে তিন কাপ চা নিয়ে চলে এসেছে।
"সেদিন না কি সুন্দর মা বলে ডাকছিলে, আজকে পর করে দিলে?" চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলে জাহিদা।
"না মানে আসলে ভুল করে বলেছি।" স্নিগ্ধা বলে।
"মা বলেই ডাকো না, শুনে মনটা জুড়িয়ে যায়।"
"ঠিক আছে মা।"
"তোমার আর সজলের মধ্যে কি ঝগড়া হয়েছে নাকি? ছেলেটা ইদানিং কেমন যেন উদাস উদাস থাকে, জিজ্ঞাসা করলেও কিছু বলে না।"
"না মা, তেমন কিছু হয় নি।" স্নিগ্ধা বলে।
ঠিক তখন কলিংবেল বেজে ওঠে।
"সজল এসেছে মনে হয়।" জাহিদা বলে।
"আপনি বসুন, আমি খুলে দিচ্ছি।" বলে স্নিগ্ধা দরজাটা খুলে দেয়।
"সরি, আমি ভেবেছি তুমি চলে গেছ। আমি নাহয় পরে আসি" বলে সজল চলে যেতে উদ্যত হয়।
"যেও না, প্লিজ ভেতরে এস। আর তাছাড়া আমি এক্ষুনি চলে যাব।"
"তুমি এখনি যাবে কেন? আমি এসেছি বলে?" সজল বলে।
"তুমি না এলেও আমি চলে যেতাম, পড়তে হবে, সামনে পরীক্ষা আছে।" স্নিগ্ধা বলে।
সজল ঢুকে সোজা নিজের রুমে ঢুকে গেল।
"মা, আমরা যাই, সামনে পরীক্ষা তো।"
"এখনই যাবে?"
"হ্যাঁ মা, সন্ধ্যা হয়ে এল।"
"ঠিক আছে, তাহলে যাওয়ার আগে সজলকে ডাকো তো।"
স্নিগ্ধা গিয়ে সজলকে ডেকে আনে।
"তোর মোবাইলটা দে তো।" সজলের উদ্দেশ্যে বলে। হাত বাড়িয়ে মোবাইলটা নিয়ে কবিরের দিকে দিয়ে বলে "তুমি ছবি তোলো তো কয়েকটা।" তারপর স্নিগ্ধাকে নিজের একপাশে ও সজলকে অন্যপাশে দাঁড় করায়। কবির দুটি ছবি তোলে। তারপর সজল ও স্নিগ্ধাকে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে আবার ছবি তোলায় কবিরকে দিয়ে।
"দেখি দেখি, কেমন হয়েছে।" বলে কবিরের হাত থেকে মোবাইলটা নেয়।
"বাহ! এই ছবিটা খুব সুন্দর হয়েছে। দুজনকে কি সুন্দর মানায়! এই ছবিটা বড় করে বাঁধাই করে দিস তো।" সজলকে উদ্দেশ্য করে বলে জাহিদা।

সোহরাব তার অফিসের চেম্বারে বসে মনেযোগ দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। গত মাসের মোট সেলস ও আয় ব্যায়ের হিসাব এখন অব্দি এন্ট্রি করা হয়নি, অথচ শনিবারই অডিট আসবে। যদিও কাজটা তার নয় বরং ম্যানেজারের। নতুন ম্যানেজার ভীষণ অলস, নিজের কাজ সোহরাবের কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে বাড়ি চলে গেল। এরকম অলস মানুষ প্রাইভেট কোম্পানিতে কিভাবে টিঁকে আছে কে জানে? উত্তরটা অবশ্য সোহরাব নিজেও জানে, নিশ্চয়ই তার মতো কলুর বলদদের কাঁধে ভর দিয়েই টিঁকে আছে ওরা। সোহরাবের মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে চাকরীটা ছেড়ে দিয়ে গ্রামে গিয়ে চাষাবাদ করে খেতে।
হঠাত রিংটোন বেজে ওঠে সোহরাবের মোবাইলে।
রিসিভ করতেই শারমিনের মধুর কন্ঠে ভেসে আসে "কিগো কতোদুর?"
"আমি এখন অফিসেই।"
"এখনো রওনা দেওনি? তবে কি কালকে আসবে?"
"এ সপ্তাহে আর যাওয়া হবে না গো। শনিবার এমডি স্যার আসবেন অডিটে।" সোহরাব বলে।
"তুমি আসবেনা? ওদিকে ছেলেমেয়েরা না খেয়ে বসে আছে বাবার সাথে খাবে বলে।" শারমিন বলে।
"ওদেরকে বোঝাও, আমি সামনে সপ্তাহেই যাব।"
"আমি পারবনা, তুমি বোঝাও। ওরা আমার কোন কথা শোনে?" বলে নিজের ছেলের কাছে মোবাইল দেয়।
"আব্বু তুমি এখনো খাওনি?" সোহরাব বলে।
"তোমার সাথে খাব। আব্বু তুমি আসবে না?" রনি বলে।
"আসলে তুমি যে রিমোট কন্ট্রোল উড়তে পারা প্লেইন আনতে বলেছিলে সেটা তো এখনো খুঁজে পাইনি আব্বু। ওটা পেলেই নিয়ে আসব, ঠিক আছে?"
"রিমোট কন্ট্রোল প্লেইন লাগবে না। তুমি এসো আব্বু।" রনি বলে।
"আমি আসব আব্বু, সামনে মঙ্গল বারেই আসব। আর তোমার জন্য রিমোট কন্ট্রোল এরোপ্লেন নিয়ে আসব। এখন খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো, ঠিক আছে?"
"ঠিক আছে আব্বু" রনি বলে।
"তোমার মেয়ের সাথে কথা বল।" বলে লাউড স্পীকারে দেয় শারমিন।
"আব্বু তুমি আথবে না?" বিথী বলে।
"আসব মামনি, কয়েকদিন পর আসব।"
"কথা বলা পুতুল এনো আমার জন্য।" বিথী বলে।
"ঠিক আছে আম্মু, তুমি খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়।"
"ঠিক আছে আব্বু।" বিথী বলে।
"তাহলে রাখি, নিজের যত্ন নিও।" শারমিনের কন্ঠ ভেসে আসে।
"শোন, বেতন পেয়েছি, কালকে টাকা পাঠিয়ে দেব। তুমি মনে করে রনির স্কুলের বেতন আর বিদ্যুতবিল দিয়ে দিও।"
"ঠিক আছে" বলে কেটে দেয় শারমিন।
সোহরাব মোবাইলটা টেবিলের উপর রাখে, ওয়াল পেপারে ওর পরিবারের ছবি। স্ত্রী ও দুই সন্তান, এ নিয়েই জগত যেন ওর। ছেলের বয়স আট বছর, মেয়ের ছয়। প্রতি মাসে দ্বিতীয় সপ্তাহে সোহরাব বাড়ি যায়, স্ত্রী সন্তানরা ওর আশায় পথ চেয়ে থাকে। কিন্তু এ সপ্তাহে যেতে পারবে না বাড়িতে।
হঠাত ঘড়ির দিকে দৃষ্টি পড়ে সোহরাবের, সাড়ে দশটা বাজে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোহরাব, শুক্রবারেও অফিসে আসতে হবে তাকে বাকি কাজ সারতে।
ল্যাপটপটা বন্ধ করে ফাইলপত্র গোছাতে থাকে সোহরাব। ফাইল গোছাতে গোছাতে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় সে। এই সপ্তাহেই রেজিগনিশন দিবে সে। অযথা এতোদুর পড়ে থেকে নিজেকে কষ্ট দিয়ে স্ত্রী সন্তানদের ভালবাসা বঞ্চিত করছে কেন সে? জীবিকার জন্য? সে তো গ্রামে গিয়েও কোনভাবে জোগাড় করা যাবে। গঞ্জে বেশ কিছু নতুন স্কুল মাদ্রাসা হয়েছে কিন্তু একটাও স্টেশনারীর দোকান নেই সেখানে। যদি কিছু টাকা যোগাড় করে একটি স্টেশনারির দোকান দেয়া যায় তো ভালই চলবে। তবে রেজিগনেশন সাবমিট করার আগে শারমিনের সাথে কথা বলতে হবে। মনে মনে পরিকল্পনা করে সোহরাব। সিদ্ধান্ত নেয়ার পর মনটা হালকা ও ফুরফুরে লাগে সোহরাবের।
অফিস থেকে বেরিয়ে সোহরাব তার মোটর সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। মোটর সাইকেলটি কোম্পানির দেয়া, চাকরিটা ছেড়ে দিলে এই বাইকটাকে খুব মিস করবে সে। আরো মিস করবে কলিগ রফিক ভাই আর সুব্রতদাকে। আরো মিস করবে মেসে কবির, তপু, প্রদীপ, স্বপনদেরকে, বিশেষ করে কবিরকে। অল্প কিছুদিনের ভেতরেই ছেলেটা খুব আপন হয়ে গেছে।
রাত এগারোটা বাজে, রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা। সোহরাব মতিঝিল, ঢাকা ইউনিভার্সিটি পেরিয়ে মিরপুর রোডে উঠতেই একটি বালির ট্রাক নজরে পড়ে। রাস্তার মাঝখান দিয়ে ত্রিশ কিলোমিটার বেগে চলছে।
সোহরাব তিন চারবার হর্ন দেয়ার পর সাইড দেয়, ওভারটেক করার পর পরই ট্রাকটা গতি বাড়িয়ে দেয় এবং সোহরাবের বাইকের পিছে সমান গতিতে আসতে থাকে। ঢাকা কলেজের সামনে স্পিডব্রেকার দেখে সোহরাব গতি কমিয়ে দেয়, তখনই পেছনের ট্রাকটি সজোরে ধাক্কা দেয় বাইকের পেছনে। ট্রাকের ও স্পিডব্রেকারের ধাক্কা খেয়ে সোহরাব বাইকসহ শুন্যে লাফিয়ে ওঠে। তারপর ট্রাকের গ্লাসের সাথে সজোরে বাড়ি খেয়ে রাস্তার পাশে ছিটকে যায় সোহরাব।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইমার্জেন্সি বিভাগের সামনে কবির, স্বপন, তপু, প্রদীপসহ মেসের সকলেই। প্রত্যেকেই প্রার্থনারত ইশ্বরের কাছে, যেন তিনি সোহরাব ভাইকে বাঁচিয়ে দেন। প্রায় দেড় ঘন্টা পর ডাক্তার বের হয়ে আসে। ডাক্তারকে বেরিয়ে আসতে দেখেই ওরা ঘিরে ধরে।
"দু:খিত অনেক চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারিনি।" ডাক্তার জবাব দিল।
"সোহরাব ভাই! ভাইরে!" বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে কবির।
 
কবিরের যখন ঘুম ভেঙে গেল তখন সকাল সাড়ে দশটা। পাশের বিছানাটার দিকে তাকাতেই মনটা ব্যাথায় ভরে গেল কবিরের। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে এই বিছানাতেই ঘুমিয়ে পড়তেন সোহরাব ভাই। বিছানাটা এখনো আছে কিন্তু মানুষটি আর নেই। সোহরাবের মৃত্যু হয়েছে এক সপ্তাহ হল। কবর হয়েছে গ্রামে। কবির সহ মেসের সাত আট জন গিয়েছিল কুষ্টিয়ায়, গত পরশু ফিরেছে তারা। কবির বিছানা ছেড়ে উঠে হাতমুখ ধুয়ে বেরিয়ে যায়। এপার্টমেন্টের সামনে একটি মোবাইলের দোকানে গিয়ে ছাব্বিশ হাজার টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দেয় সোহরাবের স্ত্রী শারমিনের নাম্বারে, তারপর নিজের মোবাইল থেকে কল করে শারমিনকে। কয়েকবার রিং হওয়ার পর রিসিভ হয়।
"হ্যালো ভাবি, আমি কবির।" কবির বলে।
"হ্যাঁ কবির, বল।" ভারাক্রান্ত কন্ঠে বলে শারমিন।
"ভাবি, আমি আপনার নাম্বারে ছাব্বিশ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। পেয়েছেন?"
"হ্যাঁ পেয়েছি, কিন্তু এটা কিসের টাকা?"
"এটা সোহরাব ভাইয়ের বেতনের টাকা। গতকাল ম্যানেজার ডেকে এনে টাকাটা পাঠিয়ে দিতে বললেন।" কবির বলে।
"মিথ্যা কথা বলছ কেন কবির? সোহরাব সেইদিনই বেতনের টাকা তুলেছিল। আমি এ টাকা নিতে পারিনা। আমি তোমার টাকা ফেরত পাঠিয়ে দেব।"
"প্লিজ ভাবি টাকাটা রাখুন। আমি যদি সোহরাব ভাইয়ের আপন ভাই হতাম তবে কি টাকাটা নিতেন না? সোহরাব ভাই আমার আপন ভাইয়ের চেয়েও আপন।"
হঠাত ফুঁপিয়ে কেদে ওঠে শারমিন।
"প্লিজ ভাবি কাঁদবেন না। আপনার এখন ভেঙে পড়া যাবে না, আপনাকে শক্ত হতে হবে। আপনার কাঁধে এখন অনেক দায়িত্ব, ছেলে মেয়েদেরকে মানুষ করতে হবে। প্লিজ টাকাটা উঠিয়ে নিবেন। ছেলে মেয়েদের যত্ন নিবেন, ওদের স্কুলে যাওয়া যেন বন্ধ না হয়। আর যেকোন সমস্যায় আমাকে জানাবেন।"
"ঠিক আছে, কবির, রাখি।" বলে শারমিন ফোনটা কেটে দেয়।
মোবাইলটা পকেটে রেখে কবির আবার মেসের দিকে ফিরে যায়।
সোহরাব সেদিন বেতনের টাকা তুলেই বের হয়েছিল। এক্সিডেন্টের পর সোহরাবের মানিব্যাগ আর অফিস ব্যাগ খুঁজে পাওয়া যায়নি। কবির টাকাটা নিজের ব্যাংক একাউন্ট থেকে তুলেছে। বহুদিন পর মা বাবার রেখে যাওয়া তার নামের একাউন্ট থেকে টাকা তুলল সে। ইন্টারেস্ট জমা হতে হতে চৌদ্দ থেকে বিশ লাখ টাকায় পরিনত হয়েছে তাতে।
কবির তার মেসে ফিরে আসতেই মোবাইলের রিংটোন বেজে ওঠে। রিসিভ করতেই স্নিগ্ধার মিষ্টি কন্ঠ ভেসে আসে "কবির, কোথায় তুই?"
"মেসেই আছি।" কবির বলে।
"আমার এপার্টমেন্টের নিচে চায়ের দোকানে চলে আয়। একসাথে চা খাব।"
"ঠিক আছে। আসছি।" বলে ফোন কেটে দেয় কবির, তারপর আবারও বেরিয়ে যায় মেস থেকে। চায়ের দোকানে এসে দেখে স্নিগ্ধা বসে আছে। কবিরকে দেখে পাশে বসতে বলে দুটো চায়ের অর্ডার দিয়ে দেয় স্নিগ্ধা।
"কিরে ব্রেকফাস্ট করেছিস?" স্নিগ্ধা জিজ্ঞাসা করে।
"না রে, কিছু খেতে ইচ্ছা করছে না।" কবির বলে।
"তোর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে, রাতেও কিছু খাসনি তাই না?"
কবির কোন জবাব দেয়না।
"ওঠ, চল এক্ষুনি" বলে হাত ধরে টেনে তোলে কবিরকে।
"কোথায় যাব আবার? এখানেই কলা পাঁউরুটি দিয়েই নাস্তা সেরে নেই।" কবির বলে।
"না চল বলছি" বলে কবিরকে প্রায় টেনে নিয়ে যায়। কাছে একটি রেস্টুরেন্টে যায় ওরা।
একটি টেবিলে বসে স্নিগ্ধা কবিরকে জিজ্ঞাসা করে "কি খাবি? খিচুড়ি নাকি পরোটা?"
"পরোটা।"
স্নিগ্ধা পরোটার অর্ডার দিয়ে দেয়।
"তুইও খা" কবির বলে।
"না, আমি মেসেই খেয়ে এসেছি।" স্নিগ্ধা বলে।
"জানিস, প্রতিদিন এই রেস্টুরেন্টে বসেই সোহরাব ভাই আর আমি নাস্তা করতাম? আর আজ মানুষটা নেই।" দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে কবির।
"ট্রাকটাকে কি ধরতে পেরেছে পুলিশ?" স্নিগ্ধা জিজ্ঞাসা করে।
"না, এখনো ধরতে পারেনি, ধরতে পারবে বলে মনেও হয়না।" কবির জবাব দেয়।
"খুব ভাল মানুষ ছিল গো, একেবারে ফেরেস্তার মতো মানুষ" স্নিগ্ধা আরো যোগ করে, "জানিস আমার নানি কি বলতো?" জবাবের অপেক্ষা না করে বলে "যারা খুব ভাল মানুষ তাদেরকে আল্লাহ নিজের কাছে নিয়ে নেয় আর তাদের ফেরেস্তা বানিয়ে দেয়। তাদের আলোর তৈরী পাখা থাকে, তারা যেখানে খুশি উড়ে বেড়ায় আর ভাল মানুষদের বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করে।"
"আমার চিন্তা হচ্ছে ভাবি আর ছেলেমেয়েদের জন্য। একেবারে ছোট ছোট দুটো বাচ্চা, এই বয়সে এতিম হয়ে গেল।" দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে কবির।
"ওদের তো তাও মা আছে। তোর তো তাও নেই।" স্নিগ্ধা বলে।
"তাতে কি? আন্টি তো আছে। আন্টি আছে, আঙ্কেল আছে, তুই আছিস।"
"তা অবশ্য ঠিকই বলেছিস। মাঝে মাঝে তো মনে হয় আম্মু আমার চেয়েও তোকে বেশি ভালবাসে।" একটু থেমে আবার বলে "ওহো বলতে ভুলেই গেছি, আম্মু তো তোকে নিয়ে যেতে বলেছে।"
"কোথায়?" কবির জিজ্ঞাসা করে।
"কোথায় আবার, বাড়িতে। আমার পরীক্ষা তো কালকেই শেষ। তোর পরীক্ষা শেষ হবে কবে?"
"আমার পরীক্ষা তো শেষ। কিন্তু শেষ দুটো পরীক্ষা দিতে পারিনি।"
"ওতে সমস্যা নেই, রিটেক দিয়ে দিস। তাহলে চল কালকেই বাড়ি যাই।" স্নিগ্ধা বলে।
"না রে। টিউশনি আছে। এমনিতেই অনেকদিন মিস দিয়েছি।" কবির বলে।
"ওসব টিউশনি বাদ দিয়ে দে, তিন মাস হল বাড়ি যাস না। বাড়ি থেকে ঘুরে আয় ভাল লাগবে।"
"ঠিক আছে, ভেবে দেখছি।"
"ভাবাভাবির কিছু নেই, যেতেই হবে।"
ততক্ষনে কবিরের নাস্তা শেষ। ওরা বিল মিটিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যায়।

পরের দিন কবির ও স্নিগ্ধা ঢাকা থেকে রওনা দেয় বাড়ির উদ্দেশ্যে। ওরা বাসে রওনা দেয় বিকেল পাঁচটায়। কিন্তু পথে ভীষন জ্যামে পড়ে যায় ওরা, ওদের পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত এগারোটা বেজে যায়। বাস স্ট্যান্ডে নেমে রিক্সা নিয়ে নেয় ওরা।

"যাক বাবা, অবশেষে পৌঁছাতে পারলাম। যেরকম জ্যাম পড়েছিল তাতে তো মনে হচ্ছিল আজকে আর পৌঁছাতেই পারবোনা।" একটু থেমে আবার জিজ্ঞাসা করে "আচ্ছা, এতো জ্যাম ছিল কেন?"
"দেখলি না টাঙ্গাইলে এক্সিডেন্ট হয়েছে, দুটি ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষ।" কবির জবাব দেয়।
"এদেশে এতোই রোড এক্সিডেন্ট হয়। প্রতিদিন খবরের কাগজে কমপক্ষে একটি রোড এক্সিডেন্টের খবর থাকেই।" দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে স্নিগ্ধা।
তখনই কল আসে স্নিগ্ধার মোবাইলে।
"স্নিগ্ধা, কোথায় তোরা" মায়ের কন্ঠ ভেসে আসে।
"এখন রিক্সায়, প্রায় পৌঁছে গেছি।" স্নিগ্ধা বলে।
"কবিরকে কিন্তু যেতে দিবিনা এতরাতে।" শিরিন বলে।
"সে তোমাকে বলে দিতে হতো না মা। এইতো এসেই গেছি।" বলে স্নিগ্ধা কেটে দেয়।
"মামা, বাঁয়ে থামান" রিক্সাওলার উদ্দেশ্যে বলে কবির। রিক্সা থামতেই স্নিগ্ধা নেমে যায়।
"তুই এখনো বসে আছিস কেন? নাম", কবিরকে রিক্সায় বসে থাকতে দেখে বলে স্নিগ্ধা।
"আমি বাড়ি যাই।"
"এখন বাড়ি গিয়ে কি করবি? কালকে যাস, আজ রাত আমাদের বাড়িতেই থাক।" স্নিগ্ধা বলে। কবির আর আপত্তি করেনা, রিক্সা থেকে নেমে রিক্সাভাড়া মিটিয়ে দেয়।
দোতলায় উঠে কলিংবেল টিপতেই খুলে যায় দরজা। ওপাশে মুখে হাসি নিয়ে দাড়িয়ে আছে জামান। স্নিগ্ধা প্রায় ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে তার বাবাকে।
"এতো দেরি হল কেন মামনি?" মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে জিজ্ঞাসা করে জামান।
"রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিল আব্বু।"
"কোন সমস্যা হয়নি তো মামনি?"
"না আব্বু।"
"তোমরা সরোতো", স্বামী ও মেয়ের উদ্দেশ্য বলে শিরিন; তারপর মুখে হাসি টেনে এনে কবিরের উদ্দেশ্যে বলে "এসো বাবা ভেতরে এসো।"
কবির তার সাইড ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে ভেতরে যায়।
"তোমরা ওয়াসরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসো, আমি খাবার দিচ্ছি।" শিরিন বলে।
"না মা, আমরা হাইওয়ে রেস্টুরেন্টে খেয়ে এসেছি।" স্নিগ্ধা বলে।
"তাহলে তোমরা হাতমুখ ধুয়ে ঘুমোতে যাও। অনেক রাত হয়েছে।" শিরিন বলে।
স্নিগ্ধা তার নিজের রুমে আর কবির গেস্টরুমে ঘুমোতে যায়।
কবির রুমের লাইট অফ করে শুয়ে থাকে, কিন্তু সহজে ঘুম আসে না। যদিও বেশ ক্লান্ত, শোওয়ার সাথে সাথে ঘুম চলে আসার কথা কিন্তু কেন যেন ঘুম আসে না।
ঠিক রাত একটার দিকে দরজার ক্যাঁচ ক্যাঁচ আওয়াজ পায় কবির, দরজার কাছে ছায়ামুর্তি দেখতে পায় কবির। শিরিন কখনো কখনো রাতের বেলা স্নিগ্ধা ও কবিরের রুমে এসে দেখে যায় ছেলেমেয়েরা ঘুমিয়েছে কিনা কিংবা গায়ের চাদর সরে গেছে কিনা। কবির চোখ বুজে ঘুমের ভান করে থাকে।
 
"কবির, তুই ঘুমিয়ে গেছিস?" স্নিগ্ধার মিষ্টি কন্ঠ ভেসে আসে।
কবির উঠে লাইটটা জ্বালিয়ে দেয়, স্নিগ্ধা দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। ওকে ভীষন চিন্তিত দেখাচ্ছে।
"কিরে এতো রাতে তুই হঠাত?"
"ঘুম আসছিল না কিছুতেই, খুব টেনশনে আছি।"
"কিসের টেনশন? আয় বস।" কবির বলে। স্নিগ্ধা ওর পাশে এসে বসে।
"সজল কল দিয়েছিল কিছুক্ষন আগে। কালকে ও বগুড়া আসবে। ও চায় যে আমি যেন ওকে আব্বু আম্মুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।"
"আর তুই কি চাস?"
"কি চাই মানে?"
"প্রেম যখন করিসই কোন না কোনদিন তো বাবা মাকে জানাতেই হতো। তাতে প্রবলেম কোথায়?"
"অনেক প্রবলেম। প্রথমতো আমি চাই না যে এখনই আব্বু আম্মু ওর ব্যাপারে জানুক। দ্বিতীয়ত লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করি জানতে পারলে আম্মু আমাকে বকবে। তৃতীয়ত ওকে আব্বু আম্মুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলে ও বিয়ের প্রসঙ্গ তুলবে, আমি এখনই বিয়ে করতে চাইনা। আর তাছাড়া ওকে বিয়ে করা উচিত হবে কিনা সে নিয়ে কমপক্ষে হাজার বার ভেবে দেখা উচিত।"
"আমি বুঝতে পারি যে তোর আর তোর বয়ফ্রেন্ডের মধ্যে কিছু একটা সমস্যা চলছে, কিন্তু কি সমস্যা আমাকে তো তা কখনো খুলে বলিস নি।"
"তুই তো জানিসই যে ওর সাথে আমার রিলেশন অনেক দিনের। কিন্তু রিসেন্টলি জানতে পারি যে ও একটা চরিত্রহীন, বদমাইশ, ও নাকি অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে।" দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে স্নিগ্ধা।
"জানতে পারলি কিভাবে? এটা জানার পরও তুই ওর সাথে রিলেশন রাখলি কেন?" কবির বলে।
"সোহরাব ভাই বলেছিলেন। উনি সজলকে খুব ভাল করে চিনতেন। কিন্তু সজল বলে ও শুধরে গেছে।" একটু থেমে আরো যোগ করে স্নিগ্ধা, "আমি ঠিক করেছিলাম ওর সাথে রিলেশন রাখব না, কিন্তু ও আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে। বলে আমি যদি ওর সাথে সম্পর্ক না রাখি ও আত্মহত্যা করবে।"
"এতোটার পরও যখন তোর ওর প্রতি দুর্বলতা কাজ করে তখন তুই নিশ্চিতভাবেই ওকে ভালবাসিস। কিন্তু ও কি তোকে এতোটা ভালবাসে যতোটা তুই ওকে ভালবাসিস?"
"জানিনা আমি। কখনো মনে হয় ও আমাকে ভালবাসে, কখনো মনে হয় ও শুধু ছলচাতুরি করে।" স্নিগ্ধা বলে।
"তোর অবস্থা দেখি আমারই মতো। কখনো মনে হতো তুই আমাকে ভালবাসিস, কখনো মনে হয় তুই শুধু আমাকে নিয়ে ঠাট্টাই করিস, মজা নিস। কিন্তু সেটা যাই হোক আমি তোকে ভীষন ভালবাসি।"
"কি বলছিস এসব? একদম ফাইজলামি করবি না।" অবাক হয়ে বলে স্নিগ্ধা।
"আমার চোখের দিকে তাকা। তোর কি মনে হচ্ছে আমি ঠাট্টা করছি?" কবির বলে।
"আমি তোকে ভালবাসি ঠিকই কিন্তু শুধু বন্ধু হিসাবে। তুই তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।" স্নিগ্ধা বলে।
"জানিরে তুই আমাকে ভালবাসিস ঠিকই, কিন্তু জীবনসাথি হিসাবে ভাবতে পারিস না। কিন্তু জানিস তোর বিয়ে হয়ে গেলে আমার খুব কষ্ট হবে। এক তুই তো আছিস এ জীবনে, যদি তোকে আরো আপন করে চাই সে কি খুব বেশী চাওয়া হবে?"
স্নিগ্ধা কিছু বলে না, অপলক চেয়ে থাকে কবিরের দিকে।
"বন্ধুদের মাঝে কিছুই গোপন রাখতে নেই। কিন্তু এই ভাবনাগুলো গোপন রেখে বয়ে বেড়াচ্ছি অনেকদিন হল। আজ বলতে পেরে নিজেকে হালকা লাগছে অনেকটাই।" একটু থেমে বলে "যা তোর ঘরে যা, শুয়ে পড়। রাত জাগিস না, শরীর খারাপ হবে। অনেক রাত হয়েছে।"
স্নিগ্ধা উঠে চলে যায় নিজের রুমে। কবির চাদর মুড়ে নিয়ে শুয়ে পড়ে এবং কয়েক মিনিটেই ঘুমিয়ে পড়ে।

কবিরের ঘুম ভেঙে যায় যখন ততক্ষনে ঝলমলে রোদ উঠে গেছে। জানালা দিয়ে একফালি রোদ এসে পড়েছে কবিরে মুখে, সম্ভবত সে কারনেই ঘুম ভেঙে গেছে ওর। কবির উঠে দাঁত ব্রাস করে হাতমুখ ধুয়ে ডাইনিং স্পেসে এসে তার আংকেল আন্টিকে দেখতে পায়।
"বাবা ঠিক মতো ঘুম হল তো?" শিরিন জিজ্ঞাসা করে।
"হ্যাঁ আন্টি।" কবির জবাব দেয়।
"এসো বসো কবির, নাস্তা করো।" জামান বলে।
ততোক্ষনে জামানের নাস্তা শেষ, উঠে যায় সে।
"আন্টি, স্নিগ্ধা কোথায়?"
"এখনো ঘুমাচ্ছে। আমি ডেকে তুলেছিলাম, আবার শুয়ে পড়ল।"
কবির স্নিগ্ধার রুমে যায়। টেডিবেয়ার কোলে নিয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে স্নিগ্ধা, নিশ্চয়ই অনেক রাত অব্দি জেগে আছে।
কবির শিয়রে বসে দেখতে থাকে স্নিগ্ধার মিষ্টি নিষ্পাপ মুখখানি। বাচ্চা মেয়ের মতো পুতুল কোলে নিয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। কবিরের মনটা ভালবাসায় ভরে ওঠে, ইচ্ছে করে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিতে সুন্দর মুখখানি। স্নিগ্ধার কপালে আলতো করে একটি চুমু দিয়ে উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় কবির।
ডাইনিং রুমে এসে সিদ্ধ রুটি ও সবজি দিয়ে নাস্তা সেরে নেয় কবির। তারপর নিজের সাইড ব্যাগ থেকে একটি শাড়ি বের করে শিরিনকে দেয়।
"আন্টি, এটা আপনার জন্য" কবির বলে।
"তুমি অযথা এতো খরচ করতে গেলে কেন?" হাসি মুখে বলে শিরিন।
"আন্টি, পছন্দ হয়েছে?" কবির জিজ্ঞাসা করে।
"হুম, খুব পছন্দ হয়েছে।" শিরিন বলে। রুপালী পাড়ের গাড় নীল রংয়ের শাড়ি, শিরিনের সত্যিই খুব পছন্দ হয়।
কবির সাইড ব্যাগ থেকে শার্ট ও প্যান্ট পিসের প্যাকেট বের করে বলে "এটা আংকেলের জন্য।"
"রাতে তোমার আংকেল ফিরলে তুমি নিজ হাত দিয়ে দিও, এখন তোমার কাছেই রেখে দাও।"
"ঠিক আছে আন্টি। আমি এখন তাহলে বাড়িতে যাই।"
"বাড়িতে যাবে? ঠিক আছে যাও। আমি সুলতানাকে কল করে বলে দিয়েছি। ও বাড়িঘর পরিস্কার করবে ও বাজার করে রান্না করে রাখবে। দুপুরে ওখানেই খেও, তবে রাতে কিন্তু আমাদের সাথে খাবে।" শিরিন বলে।
"ঠিক আছে। তাহলে আসি আন্টি" বলে কবির সাইডব্যাগ কাঁধে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। স্নিগ্ধাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে রিক্সা নিয়ে নেয় কবির, কাঁধে ব্যাগটা না থাকলে কবির হেঁটেই যেতো।
রিক্সায় উঠে বসতেই কবিরের মোবাইলে রিংটোন বেজে ওঠে। ডক্টর শাফাকাত হোসেন কল দিয়েছে। কবির রিসিভ করে।
"হ্যালো, কবির, কেমন আছ?" শাফাকাত বলে।
"ভাল আছি। আপনি কি দেশে ফিরেছেন?"
"হ্যাঁ কবির, আমি তিন দিনের জন্য ঢাকায় এসেছি। তুমি কি ঢাকাতে আছ?"
"না আঙ্কেল, আমি তো বগুড়ায় এসেছি।"
"ও। তা তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে? কোন ইয়ারে এখন তুমি?"
"সেকেন্ড ইয়ারে।" কবির জবাব দেয়।
"তুমি তো জাহাঙ্গিরনগর ইউনিভার্সিটিতে ম্যানেজমেন্টে পড়, তাই না?"
"হ্যাঁ।"
"ভেরি গুড। মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা কর, আর যেকোন সমস্যায় আমাকে জানাবে। যদি আমার সাথে যোগাযোগ করতে নাও পারো রিজিওনাল হেড শরীফুদ্দিন সাহেবের সাথে যোগাযোগ করবে। ওনার যে কার্ডটা দিয়েছিলাম তোমাকে সেটা আছে তো?"
"হ্যাঁ, আছে।"
"আমি তোমার কথা ওনাকে জানিয়েছি, উনি অবশ্যই তোমাকে প্রায়োরিটি দিবেন।"
"ঠিক আছে আঙ্কেল।"
"রাখি কবির, টেক কেয়ার" বলে শাফাকাত কল কেটে দেয়। ডক্টর শাফাকাত হোসেন বিগত পাঁচ বছর ধরে কোম্পানির হেড অফিস মেলবোর্নে আছেন। মাঝে মাঝে অবশ্য দেশে আসেন কয়েকদিনের ট্যুরে।

ততোক্ষনে কবিরের বাড়ি চলে এসেছে। কবির রিক্সা থেকে নেমে যায়। কবির বাড়িতে এসে গেইট খোলা পায়, নিশ্চয়ই সুলতানা খালা এসেছে।
বাড়িতে ঢুকে পাঁচ ছয় বছরের একটি ছেলেকে দেখতে পায়। কবির চিনতে পারে, সুলতানার ছেলে টুটুল। টুটুল মেঝেতে বসে তার খেলনা গাড়ি নিয়ে খেলছিল। কবিরকে দেখে খেলা থামিয়ে চেয়ে থাকে।
"কিরে টুটুল, তোর আম্মু কই?" কবির জিজ্ঞাসা করে।
টুটুল রান্নাঘরের দিকে দেখিয়ে দেয়।
কবির রান্নাঘরের সামনে এসে দাড়ায়, সুলতানা তখন রান্না করছিল। কবিরের পায়ের আওয়াজ শুনে ঘুরে তাকায়।
"কবির বাবু, আইছ? আমি তো টেনশনে আছিলাম।" হাসিমুখে বলে সুলতানা।
"গতকাল রাতে এসেছি, অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল তাই ওই বাড়িতেই ছিলাম।"
"স্নিগ্ধার আম্মা কল দিয়া বলছে অবশ্য। কিন্তু তুমি তো একেবারে শুকাইয়া গেছ, ঠিকমত খাওয়া দাওয়া কর না মনে হয়?"
"কি করব খালা ওখানে তো আর তোমার হাতের রান্না পাই না। যদি মেসের খালা তোমার মতো রান্না করতে পারত তাহলে খেয়ে খেয়ে আরো মোটা হতাম।"
"কি যে বল না" হেসে বলে সুলতানা।
"কি রান্না করছো খালা? অনেকদিন তোমার হাতের রান্না খাই না।"
"হাঁসের মাংস, আর পাবদা মাছ চচ্চড়ি।"
"ওহ! আমার ফেভারিট।"
"গোসল করে আইসো, ততক্ষনে হয়ে যাবে।"
"ঠিক আছে খালা।" বলে কবির নিজের রুমের দিকে যায়। তারপর কাপড় বদলিয়ে লুঙ্গি ও গামছা নিয়ে বাথরুমের দিকে যায়।

খাওয়া দাওয়া শেষে কবির বিছানায় শুয়ে ছিল। মনের ভেতর চাপা টেনশন কাজ করছে ওর। গতকাল রাতে ওভাবে সরাসরি বলে দেয়া কি ঠিক হল? এরপর স্নিগ্ধার সাথে ওর সম্পর্ক কি থাকবে? বা কেমন থাকবে। হঠাত ওর মোবাইলের রিংটোন বেজে ওঠে। স্নিগ্ধার কল এসেছে। কবির রিসিভ করে।

"কবির, আমার সাথে দেখা করতে পারবি? এক্ষুনি।" চিন্তিত কন্ঠে বলে স্নিগ্ধা।
"তোদের বাড়িতে আসব?"
"না না, বাড়িতে নয়। ঐ যায়গায়।"
"ঠিক আছে।" বলে কেটে দেয় কবির।
 
কবির যখন সুজাবাদের প্রান্তরে চলে এল তখন স্নিগ্ধা খালের ধারে সবুজ ঘাসে বসে আনমনে ঢিল ছুঁড়ছে পানিতে। কবির ওর পাশে বসে পড়ে।
"একাই চলে এলি? আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারলি না?" কবির বলে।
স্নিগ্ধা কোন জবাব দেয়না আনমনে ঢিল ছুঁড়তে থাকে খালে। কয়েক মুহুর্ত কেটে যায় নিরবে।
"কিছু বলছিস না যে?" কবির আবার প্রশ্ন করে।
"কি বলব, বুঝতে পারছি না। জানিস আমি সারারাত ঘুমাতে পারিনি, টেনশনে।"
"তোর এতো টেনশন কিসের?" অবাক হওয়ার ভান করে বলে কবির।
"জেনেও না জানার ভান করবি না। একে তো আমি নিজের টেনশনে বাঁচি না তার মধ্যে তুই আরেক টেনশন যোগ করে দিলি।" অভিযোগের সুরে বলে স্নিগ্ধা।
"আমাকে নিয়ে তোর টেনশন করতে হবেনা। যে টেনশন ঢাকা থেকে ছুটে আসছে তার ব্যাপারে কি করবি সেটা আগে ঠিক করে নে।" কবির বলে।
"আমি ঠিক করে রেখেছিই, না করে দিব। এই মুহুর্তে আমি বিয়ের জন্য একেবারেই প্রস্তুত না।" স্নিগ্ধা বলে।
ঠিক সেই সময় রিংটোন বেজে ওঠে স্নিগ্ধার মোবাইলে। সজলের ফোন, স্নিগ্ধা রিসিভ করে।
"হ্যালো স্নিগ্ধা, আমি বগুড়া পৌঁছে গেছি।"
"তোমাকে না আমি আসতে মানা করেছি?" স্নিগ্ধা বলে।
"আমি তোমাকে সবকিছু খুলে বলছি, এখনি দেখা করতে চাই। আমি তোমাদের বাড়িতে আসছি।"
"আমি বাড়িতে নেই, একটু বাইরে আছি।" স্নিগ্ধা বলে।
"তাহলে আমার সাথে দেখা করো কিংবা তুমি কোথায় আছ আমাকে বল আমি চলে আসছি।" সজল বলে।
কয়েক সেকেন্ড পর জবাব আসে "ঠিক আছ এসো।" তারপর স্নিগ্ধা ঠিকানা দিয়ে দেয়।
"এখানে আসতে বললি? অন্য কোথাও আসতে বলতে পারতি।" স্নিগ্ধাকে ফোন কেটে দিতে দেখে কবির বলে।
"কেন? এখানে দেখা করলে সমস্যা কি?"
"কিছু না" কবির বলে।

সজলের আসতে আরো প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট লেগে যায়।
সজল ওদের থেকে কয়েক মিটার দুরে দাড়িয়ে থাকে।
"যা গিয়ে কথা বল", স্নিগ্ধার উদ্দেশ্যে বলে কবির।
স্নিগ্ধা উঠে সজলের সামনে গিয়ে বলে "কি বলতে চাও বল।"
"কিছু দিন আগে তোমাকে বলেছিলাম না যে আম্মার শরীর একটু খারাপ? আসলে আম্মার হার্ট এটাক হয়েছিল। সোহরাব ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে আম্মা খুব কষ্ট পেয়েছেন। সম্ভবত সে কারনেই" সজল বলে।
"কি বলছ তুমি? আমাকে বলনি কেন?"
"তোমার তখন পরীক্ষা চলছিল। আম্মা নিজেই মানা করেছিল, এখন অবশ্য কিছুটা সুস্থ্য। তবে ডাক্তার বলেছেন পনেরো বিশ দিনের ভেতর অপারেশন না করতে পারলে রিস্ক হয়ে যাবে।"
"তো অপারেশন করাও। টাকা যোগাড় করতে পারোনি?"
"টাকাটা সমস্যা না। বাড়ি বিক্রি করেছি, হাতে পঁচিশ লাখ টাকা আছে। কিন্তু আম্মা কিছুতেই রাজি হচ্ছে না। উনি জিদ করছেন যে আমাদের বিয়ে না দেখে উনি অপারেশন করাবেন না।"
"তুমি ওনাকে বোঝাও। আমি অনার্স কম্প্লিটের আগে বিয়ে করতে চাই না।" স্নিগ্ধা বলে।
"আম্মাকে আমি বোঝানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু উনি জিদ ধরে আছেন। ডাক্তার বলেছেন আম্মার অবস্থা ক্রিটিক্যাল, ওনার প্রতি যেন কোন রকম মানসিক চাপ বা আঘাত না দেয়া হয়।"
"আমি বিয়ে করব যখন আমার ইচ্ছা হবে, কোন কিছুতে বাধ্য হয়ে আমি বিয়ে করতে চাই না। আর তাছাড়া..." বলতে গিয়ে থেমে যায় স্নিগ্ধা।
"তাছাড়া কি?" সজল জিজ্ঞাসা করে।
"তোমাকে বিয়ে করা উচিত হবে কিনা সে বিষয়ে আমাকে আরো ভেবে দেখতে হবে।" স্নিগ্ধা বলে।
"তাহলে এটাই আসল সমস্যা। আমাকে তুমি বিয়ে করতেই চাও না?"
"হ্যাঁ সেটাই।" স্নিগ্ধা ঝট করে বলে ফেলে।
"কারনটা জানতে পারি?"
"তুমি তা খুব ভাল করেই জান।"
"না আমি জানি না, তুমি কি শুধু আমার অতীত জীবনের জন্য আমাকে বিয়ে করতে চাওনা নাকি এখন অন্য কাউকে মনে ধরেছে।"
"তুমি যা খুশি ভেবে নিতে পার, আমার তাতে কিছু যায় আসে না।" হাল ছেড়ে দেবার ভঙ্গিতে বলে স্নিগ্ধা।
"আমার কোন কিছুতেই তোমার কিছু যায় আসেনা তাই না? আমার মা মারা গেল না বেঁচে থাকল, আমি মরে গেলাম নাকি বেঁচে থাকলাম। তুমি কখনো আমাকে ভালবাসোনি, চিরদিন শুধু ছলনা করে গেছ।" অভিযোগের সুরে বলে সজল। তারপর বুক পকেট থেকে ব্লেড বের কর বা হাতের কব্জিতে ফ্যাঁস দেয় সজল, সাথে সাথে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। সজল বিধ্বস্তভাবে মাটিতে বসে পড়ে।
"এ কি করলে তুমি?" আঁতকে ওঠে স্নিগ্ধা!
"আমি যখন বলতাম তোমার জন্য আমি জীবন দিয়ে দিতে পারি, তখন তোমার মনে হতো আমি ফ্লার্ট করছি?" সজল বলে।
স্নিগ্ধা ছুটে এসে নিজের ওড়না দিয়ে সজলের হাতটি পেঁচিয়ে নিতে চায়। কিন্তু সজল ঝটকা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নেয়। ততক্ষনে কবিরও চলে এসেছে।
"এ কি করলেন সজল ভাই? প্লিজ হাসপাতালে চলুন" বলে কবির সজলকে তুলতে চেষ্টা করে।
"তোমরা ছাড় আমাকে। এখান থেকে চলে যাও তোমরা, কাল সকালে এসো লাশ নিতে। মাই লাইফ এন্ডস হেয়ার।" বলে ঝটকা দিয়ে সরিয়ে নেয় নিজেকে।
"কি পাগলামী করছো সজল? তোমার কিছু হলে তোমার মা'র কি হবে।" প্রায় কাঁদোকাঁদো হয়ে বলে স্নিগ্ধা।
"শুধু আমার মৃত্যুর খবর দিও, তারপর মাকে নিয়ে আর চিন্তা করতে হবেনা। আর তাছাড়া আমার কিংবা আমার মার কি হল না হল তাতে তো তোমার কিছু যায় আসে না।" সজল বলে
"প্লিজ সজল, হসপিটালে চল। তুমি যা বলো তাই হবে।" কাঁদোকাঁদো হয়ে বলে স্নিগ্ধা।
"তাহলে কথা দাও, আমাকে ছেড়ে যাবে না। আমাকে বিয়ে করবে।"
"কথা দিলাম।" নিজের বুকের ওড়না সজলের হাতে চেপে ধরে বলে স্নিগ্ধা।

সজলকে ওরা ধরাধরি করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সজলের রক্ত অনেকটা বেরিয়ে যাওয়ায় এক ব্যাগ রক্ত দেয়ার প্রয়োজন পড়ে। কবিরের সাথে সজলের রক্তের গ্রুপ মিলে যাওয়ায় রক্তটা কবিরই দেয়। প্রাথমিক চিকিৎসা ও ব্যান্ডেজ করে দিয়ে রাতেই রিলিজ করে দেয়া হয় সজলকে। সজলকে তার বন্ধু রাসেলের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে কবির ও স্নিগ্ধা যখন বাসায় ফিরে আসে ততোক্ষনে রাত এগারোটা বেজে গেছে। আগে কল করে বাসায় বলে দিয়েছে যে ওরা ওদের এক স্কুল ফ্রেন্ডের জন্মদিনের পার্টিতে গিয়েছে।

"এত রাত হল কেন?" রাগত কন্ঠে বলে শিরিন।
"আসলে অনেক পুরনো বন্ধু তো, সহজে ছাড়তে চাইল না।" কবির জবাব দেয়।
"ছাড়তে না চাইলেও জোর করে আসতে হবে। দিনকাল ভাল না, কত টেনশন হচ্ছিল জানো?"
"সরি আন্টি।"
"তোমরা খেয়ে এসেছ?"
"হ্যাঁ আন্টি।" আবারও কবির জবাব দেয়।
"তাহলে হাতমুখ ধুয়ে ঘুমোতে যাও" শিরিন বলে।
কবির ও স্নিগ্ধা ঘুমোতে যায়, কিন্তু দুজনার কারো ঘুম আসে না সহজে।

পরেরদিন যখন কবিরের ঘুম ভেঙে যায় তখন প্রায় দুপুর হয়ে এসেছে, ঘড়িতে তখন সাড়ে এগারোটা বাজে। কবির দাঁত ব্রাশ করে হাতমুখ ধুয়ে বেরিয়ে এসে ড্রয়িংরুমে সজলকে দেখতে পায়। সেখানে স্নিগ্ধা ও জামান আঙ্কেলও আছে। সজল ও জামান কথা বলছিল, স্নিগ্ধা ওর বাবার পাশে বসে ছিল। ওকে কেন যেন মনমরা দেখাচ্ছিল।
"আরে কবির, ওখানে দাড়িয়ে কেন? ভেতরে এসো, বসো।" কবিরকে উদ্দেশ্য করে জামান বলে।
কবির এসে সোফায় বসে।
"তোমরা একে অপরকে চেনো?" কবির ও সজলের উদ্দেশ্যে বলে জামান।
"স্নিগ্ধার বেস্ট ফ্রেন্ডকে আমি চিনব না সে কি হয়? স্নিগ্ধা আমাকে ওর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে অনেক আগেই।" সজল জবাব দেয়।
"তোমরা গল্প করো, আমি একটু আসি।" বলে স্নিগ্ধা উঠে যায় সেখান থেকে।
"সজল, তোমার হাতে কি হয়েছে?" বাঁ হাতের ব্যান্ডেজের উদ্দেশ্য করে বলে জামান।
"বাইক থেকে পড়ে গিয়ে সামান্য ছিলে গেছে।" সজল বলে।
"খুব সাবধানে চালাবে বাইক। আমার মতে বাইক ছেড়েই দাও, তারচেয়ে বরং বাসে যাতায়াত করাই ভাল।" জামান বলে।
"জি, চেষ্টা করব।" সজল জবাব দেয়।
"তুমি তো বুয়েট থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছ, তাই না?"
"জি।"
"কোন সাবজেক্ট যেন?"
"সিভিল।"
"ভেরি গুড। এখন কি করছো?"
"চাকরি করছি। রোয়ান রিয়েল এস্টেটে এসিসট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে।" সজল জবাব দেয়।
"এটি কি রোয়ান গ্রুপের একটি সেক্টর?"
"জি।"
 
"তাহলে তো বেশ ভাল কোম্পানি। কিন্তু তুমি তো সরকারি চাকরিতে ট্রাই করতে পারতে।"
"আসলে আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই সরকারি চাকরীর প্রতি।"
জামান আরো কিছু জিজ্ঞাসা করছিলেন সজলকে কিন্তু সে পর্যায়ে কবির উঠে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। শিরিন আন্টিকে খুঁজে পায় রান্নাঘরে, শিরিন তখন ব্লেন্ডারে কমলার জুস করছিল।
কবিরকে আসতে দেখে ওর দিকে না তাকিয়েই জিজ্ঞাসা করে "ছেলেটাকে তুমি চেন কবির?"
"হ্যাঁ, মানে স্নিগ্ধা আগেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। তবে তেমন একটা পরিচয় নেই।" কবির বলে।
"কত আগে?"
"পাঁচ বছর আগে।"
"এতোদিন ধরে ছেলেটার সাথে মেলামেশা করছে স্নিগ্ধা আর তুমি তা আমাকে কখনো জানালে না?"
"আমি বলে দিলে ও কষ্ট পেত। আমি চাইনা ও আমার জন্য কষ্ট পাক।" কবির বলে।
"কি মনে হয়? তোমার আঙ্কেলের ছেলেটিকে পছন্দ হয়েছে?" শিরিন প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলে।
কবির হ্যাঁবোধকভাবে মাথা নাড়ায়।
"বাবা মেয়ে একইরকম, মানুষের উপরের চাকচিক্য দেখে গলে যায়। ভেতরের রুপটাকে বোঝার চেষ্টা করে না।"
"কেন আন্টি?"
"কিছু না কবির।"
"স্নিগ্ধা কোথায় আন্টি?" কবির জিজ্ঞাসা করে।
"সম্ভবত ও ওর নিজের রুমে গিয়েছে।"
কবির রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে স্নিগ্ধার রুমের সামনে চলে আসে, ঢুকতে গিয়ে থেমে যায় কবির। স্নিগ্ধাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় সে।

স্নিগ্ধা কবিরের বাড়ির দরজার সামনে দাড়িয়ে কলিংবেল টেপে। কিন্তু কয়েক মিনিট পরও দরজা খোলে না। আবার কলিংবেল চাপে, দুই তিনবার কলিংবেল চাপার পরও কেউ দরজা খোলে না। সকাল সাড়ে দশটা বাজে, এখনো কি ঘুমিয়ে আছে কবির। আলতো করে ছুঁতেই দরজাটা খুলে যায়, দরজাটা খোলাই ছিল। "কি দায়িত্বজ্ঞানহীন ছেলে, দরজাটাও লাগায় নি!" মনে মনে বলে স্নিগ্ধা। স্নিগ্ধা ভেতরে ঢুকে কবিরের বেডরুমে যায়, কিন্তু সেখানে কবির নেই। অন্য রুমগুলো খুঁজে দেখে কিন্তু কোথাও কবিরকে পায় না। ভীষন টেনশন হয় স্নিগ্ধার। ঘর দরজা খোলা রেখে কোথায় চলে গেল কবির। রাত থেকে ওর মোবাইল বন্ধ পেয়েছে স্নিগ্ধা।
স্নিগ্ধা কবিরের বাড়ির ছাদে উঠে আসে, সেখানে কবিরকে দেখে আঁতকে ওঠে স্নিগ্ধা। কবির ছাদের মেঝেতে চিত হয়ে শুয়ে আছে। স্নিগ্ধা ছুটে এসে কবিরের মাথাটা নিজের কোলে তুলে নিয়ে কবিরকে ডাকতে থাকে। কবিরের ঘুম ভেঙে যায়, চোখ খুলে স্নিগ্ধার দিকে চেয়ে থাকে।
"তুই এখানে শুয়ে আছিস কেন?" স্নিগ্ধা উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে।
"এখানে শুয়ে শুয়ে আকাশের তারা দেখছিলাম। কাল রাতে পরিস্কার আকাশে লক্ষ লক্ষ তারা আর একফালি চাঁদ, শুয়ে শুয়ে দেখতে দারুন লাগছিল। কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম বুঝতে পারিনি।" উদাস কন্ঠে বলে কবির।
"ও তাই বল, আমি ভেবেছিলাম..." বলতে গিয়ে থেমে যায় স্নিগ্ধা।
"কি ভেবেছিলি? আমি মরে গেছি?" কবির বলে।
"ওঠ এবার, চল নিচে যাই।" স্নিগ্ধা বলে।
"তোর কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে থাকতে দারুন লাগছে। আরেকটু থাকি না, আর হয়তো কখনো এ সুযোগ পাবনা।" আবদার করে বলে কবির।
"শখ কতো! ওঠ" বলে ঠেলে বসিয়ে দেয় কবিরকে। কবির উঠে দাড়ায়।
"তোর মোবাইল বন্ধ কেন? রাত থেকে এ পর্যন্ত কতোবার কল করেছি জানিস? আম্মু কতো টেনশন করছে জানিস?", অভিযোগের সুরে বলে স্নিগ্ধা।
কবির পকেট থেকে মোবাইল বের করে বলে "ওহ, খেয়াল করিনি, মোবাইল বন্ধ হয়ে আছে। সম্ভবত চার্জ শেষ।"
স্নিগ্ধা ও কবির নিচে নেমে আসে।
"কালকে তুই কাউকে কিছু না বলে হুট করে চলে এলি কেন?" ড্রইং রুমে বসে স্নিগ্ধা জিজ্ঞাসা করে।
কবির উত্তর দেয়না, একমনে দাঁত ব্রাশ করতে থাকে। কিছুক্ষন পর মুখ ধুয়ে ফিরে আসে কবির।
"কিরে, জবাব দিলি না?" স্নিগ্ধা বলে।
"জবাব দেইনি কারন তার প্রয়োজন নেই, তুই খুব ভাল করেই জানিস যে আমি কেন চলে এসেছি।" কবির বলে।
"আমি হয়তো জানি। কিন্তু তুই আম্মুকে বলে আসতে পারতি।"
"আন্টিকে আমি কল করে বলেছিই তো। ঐ প্রসঙ্গ বাদ দে। আচ্ছা বল ঐদিকের পরিস্থিতি কেমন? তোর বিয়ের ডেট কি ফিক্স হয়েছে?" কবির বলে।
প্রশ্নটি শুনে স্নিগ্ধার মুখে দুঃখের ছাপ পড়ে যায়।
"সামনের সপ্তাহে বুধবার সজলের মায়ের অপারেশন। সজল চাইছে এই শুক্রবার কিংবা শনিবার বিয়ে রেজিস্ট্রি হোক।" স্নিগ্ধা বলে।
"আঙ্কেল আন্টি রাজি?" কবির প্রশ্ন করে।
"আব্বু আম্মু বিয়ের ব্যাপারে এতো তড়িঘড়ি পছন্দ করছেন না, আবার সজলের পরিস্থিতি বিবেচনা করে না-ও করে দিতে পারছেন না। আব্বু চারদিন সময় নিয়েছে, এর মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাবে। কালকে আব্বু কুষ্টিয়া যাবে খোঁজ নিতে, তারপরের দিন ঢাকায়।" স্নিগ্ধা বলে।
"আঙ্কেল আন্টি তোর সম্মতি জানতে চাননি?" কবির জিজ্ঞাসা করে।
"চেয়েছেন।"
"তুই হ্যাঁ বলেছিস?"
স্নিগ্ধা হ্যাঁবোধক ভাবে মাথা নাড়ে।
"তাহলে আর চিন্তা নেই। আঙ্কেল, আন্টি তোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাবেন না কখনোই।" বলতে বলতে কবিরের চোখে পানি চলে আসে।
চোখ কচলাতে কচলাতে বলে "এই রে চোখে পোকা পড়ে গেল।" তারপর উঠে এসে ডাইনিং স্পেসের বেসিনে গিয়ে চোখ মুখে পানির ঝাপটা দেয় কবির। ঠিক তখন ওর পিঠে উষ্ণ নরম স্পর্শ অনুভব করে, স্নিগ্ধা ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে নিয়েছে।
"আমি জানি তোর চোখে পোকা পড়েনি, তুই কাঁদছিস। আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে বলে তুই কষ্ট পাচ্ছিস। কিন্তু তুই কি জানিস, তোর যতোটা কষ্ট হচ্ছে আমারও ততোটাই কষ্ট হচ্ছে। তুই আমার পরিস্থিতি বুঝিস?" কবিরকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে স্নিগ্ধা।
"আমি জানি এবং বুঝি।" স্নিগ্ধার উষ্ণ ও নরম স্পর্শ মন ভরে অনুভব করতে করতে বলে কবির।
"জানিস, তুই আমার প্রাণের বন্ধু। তুই আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ, কাউকে কখনোই আমার এতো কাছে আসতে দেইনি যতোটা কাছে তুই এসেছিস। আমি তোকে ভীষন ভালোবাসি, এতোটা আমি সজলকেও ভালোবাসি না এমনকি আম্মু আব্বুকেও না। কিন্তু তুই জানিস তো আমার পরিস্থিতি?" স্নিগ্ধা বলে।
কবির নিজেকে স্নিগ্ধার বাহুডোর থেকে মুক্ত করে নেয়। তারপর স্নিগ্ধার চোখে চোখ রেখে বলে "হ্যাঁ আমি জানি এবং বুঝি।"
"কথা দে, আমার বিয়ে হয়ে গেলেও কিন্তু তুই সুইসাইডের কথা ভুলেও ভাববি না। তোর কিছু হয়ে গেলে আমিও বাঁচব না।" বলতে বলতে স্নিগ্ধার চোখে পানি চলে আসে।
কবিরের হাত ধরে আবারও বলতে শুরু করে "কথা দে, তুই কখনো নেশা জাতীয় দ্রব্যের ধারে কাছেও যাবিনা। আর আমার সাথে যোগাযোগ রাখবি, আগের মতোই।"
"কথা দিচ্ছি, তোকে ছাড়া বেঁচে থাকা যতো কষ্টেরই হোক না কেন আমি কখনো নিজে জীবন শেষ করার চেষ্টা করব না কিংবা নেশার মাঝে সেই কষ্টের উপশম খোঁজার চেষ্টা করব না। কিন্তু তোর একটি অনুরোধ রাখা আমার পক্ষে সম্ভব না। বিয়ের পর তোর সাথে যোগাযোগ রাখা উচিত হবে না।" কবির বলে।
"কিন্তু কেন?"
"কোন স্বামীই এটা সহ্য করবে না যে তার স্ত্রী অন্য পুরুষকে তার চেয়েও বেশী ভালবাসে। আমার সাথে যোগাযোগ রাখলে তা তোর সংসারে অশান্তির কারণ হয়ে দাড়াতে পারে। আমি তোর সংসারে অশান্তির কারন হতে চাই না।" বলে স্নিগ্ধার অশ্রু মুছে দেয়। তারপর ওর কপালে ও গালে আলতো চুমু দেয়। তারপর স্নিগ্ধাকে জড়িয়ে ধরে ওর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। আবেগঘন প্রগাঢ় একটি চুমু।
"কি করছিস?" ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলে স্নিগ্ধা।
"সারা জীবনের বেঁচে থাকার রসদ নিয়ে নিলাম। এই মুহুর্তটির কথা মনে করে সুখ অনুভব করব সারা জীবনভর।" কবির বলে।

সেদিন সন্ধ্যাবেলা কবির তার সাইডব্যাগটা কাঁধে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। একটি রিক্সা নিয়ে স্নিগ্ধাদের বাড়িতে পৌঁছায় কবির। কলিং বেল টিপতেই শিরিন দরজাটা খুলে দেয়।
"কবির, ভেতরে এস। তোমার কাঁধে ব্যাগ কেন?" শিরিন বলে।
"আন্টি, আমি ঢাকায় যাচ্ছি।" ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে কবির।
"এতো তাড়াতাড়ি চলে যাবে? আর কয়েকদিন থেকে যেতে পারতে।" শিরিন বলে।
"আসলে ছাত্রদের পরীক্ষা সামনেই, এখন টিউশনি মিস দেয়া ঠিক হবে না।" কবির বলে।
"তোমাকে না বললাম টিউশনি ছেড়ে দিতে? তুমি তো আমার কোন কথাই শুনছ না।" শিরিন বলে।
"ওদের এসএসসি পরীক্ষা তো সামনেই, এখন টিউশনি ছেড়ে দেয়া ঠিক হবেনা। পরীক্ষার পর ছেড়ে দিব।" কবির বলে।
"ঠিক আছে। কিন্তু পড়াশোনায় আরো মনোযোগ দাও, আর নিজের প্রতি যত্নবান হও।" শিরিন বলে।
"ঠিক আছে, আন্টি। আঙ্কেল ফিরেছেন?" কবির জিজ্ঞাসা করে।
"না, এখনো ফেরেনি।" শিরিন বলে।
কবির তার সাইড ব্যাগ থেকে ওর আঙ্কেলের জন্য কেনা শার্ট ও প্যান্ট পিস বের করে শিরিনের হাতে দিয়ে বলে "এগুলো আঙ্কেলকে দিয়ে দিবেন।"
তারপর জিজ্ঞাসা করে "স্নিগ্ধা কোথায়?"
"সম্ভবত ওর ঘরে।" শিরিন বলে।
কবির ব্যাগটা রেখে স্নিগ্ধার ঘরের দিকে যায়। দরজার সামনে দাড়িয়ে নক করে। এর আগে কখনোই স্নিগ্ধার রুমের ঢোকার আগে নক করেনি কবির।
"কে?" স্নিগ্ধা বলে।
"আমি, কবির।" কবির বলে।
"ভেতরে আয়না।" স্নিগ্ধা বলে।
কবির স্নিগ্ধার রুমে ঢোকে। স্নিগ্ধা ওর বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে ছিল, ওর হাতে রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছ বই।
"আয় বস। তুই এমন আলগা ভদ্রতা শুরু করলি কবে থেকে?" স্নিগ্ধা বলে।
"আজকে থেকেই। আমি ঢাকায় চলে যাচ্ছি।"
"এতো তাড়াতাড়ি। আর কয়েকদিন থেকে যেতে পারতি।"
"কেন রে, তোর বিয়েতে থাকতে বলবি?" কবির বলে।
"না, বলব না। তুই চলেই যা, কিন্তু আমার কথাগুলো মনে রাখবি। আর নিজের দিকে খেয়াল রাখিস।" স্নিগ্ধা বলে।
"ঠিক আছে। তুই আমার জন্য টেনশন করবি না। নিজের আর স্বামীর প্রতি যত্ন নিবি। আর পড়াশোনা কিন্তু বন্ধ করবি না। আমি আসি।" বলে কবির উঠে বের হয়ে আসে দুচোখে টলমল করা অশ্রুকে মুছতে মুছতে।
কবির ড্রয়িংরুমে এসে নিজের ব্যাগটা কাঁধে তুলে নেয়।
 
"আজকে রাতটা এখানেই থাকো, কালকে সকালে যেও।" শিরিন বলে।
"সাড়ে সাতটার বাসের টিকিট কেটেছি, এখনি যেতে হবে।" কবির বলে।
"তাহলে এই টাকাগুলো রাখো।" বলে শিরিন কবিরের হাতে হাজার টাকার দশটি নোট তুলে দেয়।
"এর দরকার নেই আন্টি। আমার কাছে যথেষ্ট টাকা আছে।" কবির বলে।
"তবুও রাখ। আর পৌঁছে কল দিও কিন্তু।"
"ঠিক আছে আন্টি, তাহলে আসি।" বলে বেরিয়ে যায় কবির।
কবির যখন তার মিরপুরের মেসটিতে পৌঁছায় তখন রাত বারোটা বাজে। কবির তার রুমে ঢুকতে গিয়ে দেখে রুমটা ভেতর থেকে লক করা এবং রুম থেকে উৎকট মিউজিকের আওয়াজ আসছে। কবির কয়েকবার নক করে কিন্তু খোলেনা কেউ। কবির পাশের রুমে চলে আসে। সেখানে তপু বসে বসে পিসিতে মুভি দেখছিল।
"কবির ভাই, চলে এসেছ?" তপু বলে।
"তুমি এই রুমে কেন? ঐ রুমে কে এতো জোরে গান বাজাচ্ছে?" কবির জিজ্ঞাসা করে।
"আমি ঐ রুম ছেড়ে দিয়েছি। তুমি তো চলে গেলে, আমার একা একা ভয় করতো। শুনেছি মৃত মানুষের আত্মা চল্লিশ দিন পর্যন্ত নিজের ঘরে ঘোরাফেরা করে।" তপু বলে।
"যত্তোসব আজে বাজে কথা। তো এখন কি সোহরাব ভাইয়ের আত্মা এসে রুমে জোরে জোর র‍্যাপ সঙ্গীত গাইছে? রুমে কে?" কবির বলে।
"তোমার নতুন রুমমেট। সারাদিন র‍্যাপ শোনে, র‍্যাপ করেও ভালই।"
"কানে সমস্যা আছে নাকি র‍্যাপারের? কতোবার নক করলাম দরজা খোলে না" কবির বলে।
"দাঁড়াও দেখছি," বলে তপু তার মোবাইল বের করে কল দেয়। দুইবার রিং হওয়ার পর রিসিভ হয়।
"হ্যালো সবুজ ভাই। দরজা খোল, তোমার রুমমেট এসেছে।" বলে তপু তারপর কবিরকে ইশারা করে।
কবির তার ব্যাগ কাঁধে নিয়ে তার রুমে চলে যায়। রুমে ঢুকে লম্বা চওড়া ফর্সা কুলডুড টাইপের একটি ছেলেকে দেখতে পায়।
"হ্যালো বস, আমি সবুজ।" বলে হাত বাড়িয়ে দেয় ছেলেটি। কবির কাঁধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে হাত মিলিয়ে বলে "আমি কবির।"
"নাইস নেম ব্রো" সবুজ বলে।
"থ্যাংকস।" বলে প্রতিউত্তর দেয় কবির। ছেলেটার উপর থেকে নিচ অব্দি একবার চোখ বুলিয়ে নেয় কবির। উচ্চতা প্রায় সাড়ে ছয় ফুট হবে, হ্যাংলা পাতলা নয়, খুব বেশি মোটাও না, মধ্যম গড়নের। ছোটখাট দানব বললে খুব একটা ভুল হবে না। চোখ দুটো কোটরাগত, লম্বা চিপ আর ছোট করে ছাঁটা ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি গোঁফ।
কবির কাপড় ছেড়ে লুংগি ও গেঞ্জি পরে ওয়াশরুম থেকে হাতমুখ ধুয়ে এসে শুয়ে পড়ে।
সবুজ আবারও ইংরেজি র‍্যাপ গান চালিয়ে দেয় সাউন্ড বক্সে।
"ভাই, প্লিজ গান বন্ধ করেন। আমি জার্নি করে এসেছি, একটু ঘুমানো দরকার।" কবির বলে।
"ঠিক আছে বস, নো প্রবলেম। আমারো ঘুম পাচ্ছে, অনেক রাত হয়েছে। যাস্ট একটা গান।" সবুজ বলে।

সজল লিফ্টে করে হসপিটালের পাঁচতলায় উঠে আসে। গতকাল রাতে সে বগুড়া থেকে ফিরেছে। ওদিকের পরিস্থিতিটা প্রায় পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনে। কিন্তু ওর মায়ের শরীরটা বেশ খারাপ। এজন্যে বেশ টেনশনে সে। লিফ্ট থেকে বেরিয়ে বাঁ পাশে চুয়ান্ন নাম্বার কেবিনে ঢোকে সজল। তখন জাহিদা বিছানায় শুয়েছিল, ছেলেকে দেখে উঠতে চায়।
"উঠো না আম্মা শুয়েই থাকো।" শিওরে বসে সজল বলে।
"শুয়েই তো আছি রাত দিন, উঠতে আর পারি কই?" জাহিদা বলে।
"আগে অপারেশনটা হতে দাও তারপর দৌড়াতেও পারবে।" সজল বলে।
জাহিদা একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে, তারপর বলে "জানিস কাল রাতে স্বপ্নে তোর আব্বাকে দেখছিলাম। আইসা কয়, নতুন জমি কিনছে বাড়ি করবে। আমাকে সেই জমি দেখাতে নিয়া যাইতে চায়। আমি সাথে গেলাম, যাইয়া দেখি উত্তরপাড়া কবরস্থান। যেখানে তোর আব্বাকে কবর দিছিলাম। তখনই ঘুম ভাইঙা গেল।" আরেকবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে "আমি মনে হয় আর বাঁচমুনারে আব্বা।"
"কিসব বল আম্মা। তুমি খুব বেশী চিন্তা কর। তাই এসব উল্টাপাল্টা স্বপ্ন দেখতাছ।" সজল বলে।
"হ্যাঁরে তুই স্নিগ্ধাদের বাড়িতে গিয়েছিলি?" জিজ্ঞাসা করে জাহেদা।
"হ্যাঁ। ওর বাবা মার সাথে কথা হয়েছে।" সজল বলে।
"কাজ হয়েছে?" চোখমুখ উজ্জল হয়ে ওঠে জাহেদার।
"স্নিগ্ধার বাবা আসবেন কালকে, তোমার সাথে দেখা করতে।" সজল বলে।
"তাই? তাহলে সাথে স্নিগ্ধাকেও আসতে বলিস। কতোদিন মেয়েটাকে দেখি না।"
"ঠিক আছে, বলব। বুবু কোথায়?"
"বাথরুমে, গোসল করতে ঢুকেছে। ঐতো বেরিয়েছে।" জাহিদা বলে।
"ফিরলি কখন?" সজলকে উদ্দেশ্য করে বলে ফাতেমা।
সজল উঠে বোনের সামনে যায়, "রাতেই ফিরেছি।"
ফিসফিস করে বলে "ইকো করিয়েছ বুবু? রিপোর্ট কেমন? ডাক্তার কি বলেছে?"
"তেমন একটা ভাল না। অপারেশন করাতেই হবে, উপায় নাই।" ফাতেমা বলে।
"বুবু তুমি আম্মার কাছে থাকো, আমি তোমাদের জন্য খাবার আনি।"
"শক্ত খাবার দিতে মানা করেছে ডাক্তার। ফ্যাটবিহীন তরল খাবার।" ফাতেমা বলে।
"ঠিক আছে বুবু।" বলে সজল বেরিয়ে যায়। একটি রেস্টুরেন্ট থেকে বোন ও মায়ের জন্য খাবার কিনে আবার বেরিয়ে আসে সজল। একটি গুরুত্বপুর্ন মিটিং আছে তার।
সজল তার বাইকে করে উত্তরার একটি নির্মানাধীন বিল্ডিংয়ের সামনে দাঁড় করায়। এটি তাদের কম্পানিরই একটি প্রজেক্ট, সাতমাস হল কাজ বন্ধ আছে।
"কেউ আমার খোঁজ করতে এলে ফিফ্থ ফ্লোরে পাঠিয়ে দেবে।" গেটে দারোয়ানের উদ্দেশ্যে বলে।
সজল সিঁড়ি দিয়ে ছয় তলায় ওঠে। সেখানে একটি টেবিল আর তিনটে চেয়ার পাতানো রয়েছে। চেয়ারে বসে গভির চিন্তায় মগ্ন হয়ে যায় সজল।
এখন পর্যন্ত সজলের প্ল্যানগুলো পারফেক্টভাবে কাজে লেগেছে। তবে ফাঁক ফোকর আছে তার প্ল্যানে, সেগুলোকে নিশ্ছিদ্র করে ফেলবে সে। স্নিগ্ধাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ের পিঁড়ি পর্যন্ত আনা যাবে নিশ্চয়ই, কিন্তু ওর মনে কবিরের প্রতি যে দুর্বলতা আছে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই সজলের। এই দুর্বলতাটি ভবিষ্যতে ওদের জীবনে কাঁটা হয়ে দাড়াতে পারে। কিছু একটা তো করতেই হবে। কি করা যায় ভাবতে থাকে সজল। ঠিক তখন রিং বেজে ওঠে, পারভেজের নাম্বার।
"মাদারচোদ, কই তুই? আমি কখন থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছি জানিস?" কল রিসিভ করেই খেঁকিয়ে ওঠে সজল।
"রাগ করিস ক্যা দোস্ত, রাস্তায় জ্যাম ছিল প্রচুর। যেখানে আসতে বলেছিস, এসে গেছি।" পারভেজ বলে।
"দারোয়ানকে আমার নাম বললেই ঢুকতে দেবে। ছয়তলায় চলে আয়।" সজল বলে।
পারভেজ ও সজল বুয়েটে একই ক্লাসে পড়ত। পারভেজ একসময় বেশ ভাল ছাত্র ছিল। কিন্তু মাদকাসক্তিতে ক্যারিয়ার প্রায় শেষ। বুয়েট থেকে ড্রপআউট হয়েছে। ছয়মাস মাদক পুনর্বাসন কেন্দ্রে ছিল। তাতে খুব একটা কাজ হয়নি। বাবা মা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। ইদানিং রাস্তাঘাটে ছিনতাই করে বেড়ায়।

"আয় বোস।" পারভেজের উদ্দেশ্যে বলে সজল।
"ইয়ে মানে, তুই যেটা বলেছিলি আমি ভেবে দেখেছি কিন্তু সেটা....." পারভেজ কথা শেষ করতে দেয়না সজল; "সবজি খাবি? ভাল সবজি আছে।" বলে পকেট থেকে কাগজে মোড়ানো গাঁজার পোঁটলা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে "নে বানা। বহুদিন টান দেই না।"
পারভেজ শুকনো পাতাগুলো হাতে নিয়ে ডলতে ডলতে বলে "মালটা তো ভালই। কই পেলি? নাকালপাড়ার মুচির কাছে?"
"না, এইটা কুষ্টিয়ার। নে সিগারেটে ভর।"
পারভেজ সিগারেটের তামাক ফেলে দিয়ে তাতে গাঁজা ভরে।
"দে, আগে আমি দুই টান দেই।" বলে সজল হাত বাড়িয়ে নেয়। তারপর লাইটার বের করে ধরিয়ে দুই টান দিয়ে পারভেজকে দেয়।
"মেসে ঢুকে গেছিস?" সজল জিজ্ঞাসা করে।
পারভেজ ওরফে সবুজ গাঁজায় টান দিয়ে মাথা ঝাঁকায়।
"কোন রুমে আছিস? কবিরের রুমে?"
আবারও মাথা ঝোঁকায় সবুজ।
"ভেরি গুড। এপার্টমেন্টটা কতো তলা যেন?"
"ছয় তলা" গাঁজায় টান দিতে দিতে বলে সবুজ।
"ছয়তলার ছাদে থাকে। কম করে হলেও পঁয়ষট্টি ফুট হবে। সুযোগ বুঝে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবি, পারবি না?"
"বস আমার ভয় করে, ধরা পড়ে যাব। আমি পারবনা।" কাঁচুমাচু হয়ে বলে সবুজ।
সজল তার পকেট থেকে তিনটা একশ টাকার বান্ডিল বের করে টেবিলে রেখে বলে "কাজ হয়ে গেলে আরো চারটা পাবি।"
সবুজ বান্ডিলগুলো হাতে তুলে নিয়ে বলে "কিন্তু ধরা পড়ে যাব তো বস।"
"তুই ধরা পড়লে তো আমিও ধরা পড়ব। সে কি হতে পারে? আমার প্ল্যান মোতাবেক কাজ করলে ধরা পড়ার কোন চান্সই নেই।" সজল বলে।
"না দোস্ত আমি পারব না। এমনিতে রাতের বেলা চাকু দিয়ে ভয় দেখিয়ে টাকা কেড়ে নেয়া এক জিনিস, আর কাউকে সত্যি সত্যি খুন করে ফেলা সে অন্য জিনিস।"
"এমনি এমনি আমি তোকে এতোগুলো টাকা দিচ্ছি? আর তুই খুন করবি কেন? কবির নিজেই আত্মহত্যা করবে।"
"মানে?"
"তোর লিজাকে মনে আছে?"
"কোন লিজা?"
"তুই আগে টিউশনি করাতি। পরে তোর সাথে বেট ধরে আমি টিউশনিটা নিলাম। বেটটা কি ছিল মনে আছে। একমাসের মধ্যে বিছানায় তোলা। আমি কিন্তু এক হাজার টাকা জিতেছিলাম।"
"হুম, মনে পড়েছে। খুব হট ছিল নারে?" সবুজ বলে।
 
"হট ছিল, সেক্সি ছিল। বেশ ভালই চলছিল টিউশনি। কিন্তু প্রেগন্যান্ট হয়ে গেল। আমি বলেছিলাম এবর্শন করার কথা, কিন্তু ও করবে না। বিয়ে করতে বলতো। প্রথমে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে লাগল, তারপর ভয় দেখাতে শুরু করল। আমি তখন পাল্টি খেলাম। তখন সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল আমার। বললাম পরীক্ষার পর ওকে বিয়ে করব। ওদিকে আমি ঠান্ডা মাথায় প্ল্যান করছিলাম। একদিন পড়াতে এসে প্রথমে আয়েশ করে চুদলাম। তারপর চা বানানোর কথা বলে চায়ে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিলাম। যখন ঘুমে ঢুলুঢুলু অবস্থা তখন ওড়না পেঁচিয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দিলাম। সাথে একটি সুইসাইড নোট রেখে এসেছি। এর জন্য আমাকে বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছে। একদিন ভরা প্র্যাকটিস করেছি লিজার হাতের লেখা কপি করার জন্য। এমন ঘুমের ওষুধ খুঁজে বের করতে হয়েছে দুই ঘন্টা পর যার আর কোন নাম নিশান খুঁজে পাওয়া যায় না দেহে।" সজল বলে।
"তু তু তুই লিজাকে খুন করেছিস?" তোতলাতে তোতলাতে বলে সবুজ।
"না, একেবারেই না। কোন প্রমান আছে?" হাসতে হাসতে বলে সজল।
"অমন সুইট মেয়েটাকে তুই এভাবে খুন করতে পারলি? তুই কি মানুষ নাকি পশু নাকি ইবলিশ?" সবুজ বলে।
"ইবলিশেরও আব্বা আমি। এসব আমার কাছে নতুন কিছু না। এইতো মাস খানেক আগে একজনকে টপকে দিয়েছি। আমার গার্লফ্রেন্ডের কাছে আমার বিরুদ্ধে চোগলখোরি করে। কোম্পানির এক ট্রাক ড্রাইভারকে কন্টাক্ট করে ট্রাকচাপা দিয়েছি।"
"কিন্তু ঐ ছেলেটার কেসটা বুঝলাম না।"
"ঐটা তোর না বুঝলেও চলবে। বল আর কত হলে কাজ করবি?"
"লাখ মিল করে দিও, বস।" সবুজ বলে।
সজল মিটিমিটি হেসে পকেট থেকে আরো একটা একশোর নোটের বান্ডিল বের করে দেয়। "বাকিটা কাজের পর পাবি। এখন তাহলে প্ল্যানটা শোন। আগামী দশ তারিখ মিরপুর সন্ধ্যা সিনেমা হলে 'প্রেম পরশ' সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। যেমন হইচই হচ্ছে তাতে ওটা হিট হবেই। আমি আগেই টিকিট যোগাড় করে রাখব। তুই নিজের জন্মদিনের সেলিব্রেট করার নামে মেসের সবাইকে সাথে নিয়ে সিনেমা হলে আসবি, কবির আসতে চাইবে না, একা মেসে থেকে যাবে।"
"কিন্ত কেন?" সবুজ জিজ্ঞাসা করে।
"কারন ঐদিন ওর প্রেমিকার বিয়ে, এরকম সময় কেউ প্রেমের সিনেমা দেখতে চাইবে না। তারপর শোন, বাকি সবার সিট হবে পাশাপাশি, তোর সিট হবে আলাদা। সিনেমা শুরুর দশ মিনিট পর তুই হল থেকে বের হয়ে একটি সিএনজি নিয়ে মেসে ফিরে আসবি। কোল্ড ড্রিংক, চা কিংবা পানিতে এই ওষুধটা মিশিয়ে খাওয়াবি।" বলে এক পাতা ট্যাবলেট বের করে দেয় সজল।
"এরপর দুটো প্ল্যান। প্ল্যান সি আর প্ল্যান এল। সি ফর কংক্রিট। ঘুমে ঢুলুঢুলু অবস্থায় কবিরকে নিয়ে গিয়ে ছাদ থেকে ফেলে দিবি। অথবা প্ল্যান এল, এল ফর লিজা। বিছানার চাদর দিয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দিবি ছেলেটাকে। বল কোনটা তোর সুবিধা হয়?" সজল বলে।
"ছাদ থেকে ফেলে দিতে গেলে আশেপাশে বিল্ডিং থেকে কেউ দেখে ফেলতে পারে।"
"ভাল পয়েন্ট ধরেছিস। তাহলে এল। আর সাথে একটা সুইসাইড নোট দিতে হবে। তুই কবির কোন খাতা বা লেখা আমাকে দিস আমি সুইসাইড নোট লিখে দিব। সুইসাইড নোট টেবিলে রেখে আর ঘরটাকে এমনভাবে সাজাবি যেন সুইসাইড বলে মনে হয়। সিনেমা শেষ হওয়ার আগে ফিরে আসবি সিনেমা হলে।"

"আগে যদি জানতাম
তবে মন ফিরে চাইতাম,
এই জ্বালা আর প্রাণে সহে না..."

এয়ারফোনে গানটা শুনতে শুনতে বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়েছিল স্নিগ্ধা। চলন্ত বাসের জানালার ফাঁক দিয়ে হুহু করে বাতাস এসে স্নিগ্ধার কপালের চুল এলোমেলো করে দিচ্ছে বার বার, স্বাধীন চুলগুলো ওর সুন্দর মুখটিকে ছোঁয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ওর অবাধ্য চুলগুলোর প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ নেই স্নিগ্ধার, গান শুনতে শুনতে উদাস দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। বাইরে রৌদ্রোজ্জল চৈতালি দিন, কিন্তু স্নিগ্ধার মনের আকাশটি শ্রাবনের মেঘে আচ্ছন্ন, কখনো কখনো বৃষ্টি ঝরে, কখনো বা কালবৈশাখী ঝড় বহে।
"আম্মু, এতো কি চিন্তা করো?" জামান বলে।
কিন্তু স্নিগ্ধা ওর বাবার কথা শুনতে পায়না, জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়েই থাকে। জামান মেয়ের কাঁধে হাত রাখে, তখন ঘুরে তাকায় স্নিগ্ধা।
"আব্বু, কিছু বলো?" ইয়ারফোন খুলতে খুলতে জিজ্ঞাসা করে স্নিগ্ধা।
"এতো কি চিন্তা কর, আম্মু?" জামান বলে।
কই, নাতো। ইয়ারফোনে গান শুনছি তো।" স্নিগ্ধা বলে।
"কিছু দিন হল দেখছি কেমন যেন মনমরা হয়ে থাকো, খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করছো না।"
"কই, নাতো।" মুখে হাসি টেনে এনে বলে স্নিগ্ধা। কিন্তু হাসিটাও মলিন দেখায়।
"আমি জানি, টেনশন করছো তুমি। টেনশনের কিছু নেই, ছেলেটা আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। নম্র, ভদ্র, স্মার্ট, মেধাবি ছাত্র, বুয়েট থেকে পাশ করা ইঞ্জিনিয়ার, ভাল চাকরি করে, আর বেশ হ্যান্ডসামও।" জামান মুখে হাসি টেনে এনে বলে "দশ বছর আগে আমিও ওরকম হ্যান্ডসাম ছিলাম।"
"তুমি এখনো ওর চেয়ে বেশি হ্যান্ডসাম আছো।" বাবার ডান হাতটা জড়িয়ে নিয়ে হাসিমুখে বলে স্নিগ্ধা।
"তোমার আম্মু তো বলে দিন দিন মোটা হয়ে যাচ্ছি।"
"নাহ, ঠিকই আছো। আমার বান্ধবীরা কি বলে জানো? বলে তোর আব্বুকে একদম সালমান খানের মতো লাগে।"
"তোমার বান্ধবীরা আবার কবে দেখল আমাকে?"
"ছবিতে দেখেছে।" স্নিগ্ধা বলে।
"ও তাই বলো।"
"আচ্ছা আব্বু। আম্মুর পছন্দ হয়নি ওকে, তাই না?"
"তোমার আম্মু কি বোঝে, কে জানে? তোমার আম্মুকে আমি ম্যানেজ করে নেব। চিন্তা কোরো না।"
স্নিগ্ধা তার দীর্ঘশ্বাসকে গোপন করে, ওর বাবা খুবই সহজ সরল মানুষ, প্রেমের এতো জটিল সমীকরণ উনি বুঝবেন না। তবে ওর মা হয়তো কিছুটা বোঝে কিংবা হয়তো ওকে অনেকটাই বোঝে।
"কোনদিন তোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কিছু করিনি, আজও করব না। কিন্তু সত্যিই কি তুই যা করছিস তা মন থেকে করছিস?" চুলে তেল মালিশ করে দিতে দিতে বলা ওর আম্মুর কথাটা হঠাত মনে পড়ে গেল স্নিগ্ধার।
হঠাত স্নিগ্ধার সেলফোনে রিংটোন বেজে ওঠে, সজলের ফোন এসেছে।
"হ্যালো স্নিগ্ধা, তোমরা কতদুর?"
"এইতো সবে সিরাজগঞ্জ..."
"ও, সাবধানে এসো।" বলে কেটে দেয় সজল।
স্নিগ্ধা ওর ফোনটা থেকে কবিরকে কল দেয়। চার পাঁচবার রিং হওয়ার পরও রিসিভ করেনা। কবির চলে যাওয়ার পর থেকে আর স্নিগ্ধার কল রিসিভ করেনি। মনটা কষ্টে ভরে ওঠে স্নিগ্ধার। শৈশব, কৈশোরের প্রায় পুরোটা কাটিয়েছে যার সাথে তাকে কি এতো সহজে ভোলা যায়। কতো স্মৃতি ওকে নিয়ে, এতো সহজে কি ভোলা যায়?
ততোক্ষণে বাসটি একটি হাইওয়ে রেস্টুরেন্টে থেমেছে। ওরা বাস থেকে নেমে রেস্টুরেন্টের ওয়াসরুম থেকে হাতমুখ ধুয়ে বের হয়ে আসে।
"কিছু খাবে, আম্মু?"
"না আব্বু, কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।" স্নিগ্ধা বলে।
"তাহলে অন্তত চা কিংবা কফি?"
"না আব্বু। তুমি খাও। তোমার মোবাইলটা একটু দেবে? আমার ব্যালেন্স শেষ।" স্নিগ্ধা বলে।
জামান ওর মোবাইলটা স্নিগ্ধার হাতে দেয়। মোবাইলটা নিয়ে স্নিগ্ধা একটু আড়ালে যায়। তারপর কবিরকে কল করে। দ্বিতীয়বার রিং হওয়ার পর রিসিভ হয়।
"হ্যালো আঙ্কেল ভাল আছেন?" কবিরের কন্ঠে ভেসে আসে।
"আমি স্নিগ্ধা।" স্নিগ্ধা বলে।
"ও স্নিগ্ধা। কিরে কেমন আছিস?" কবির বলে।
"আমি বেঁচে আছি না মরে গেছি একটিবার খোঁজ নিয়েছিস? এখন জিজ্ঞাসা করছিস কেমন আছি?" ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে স্নিগ্ধা।
"কালকে রাতেই তো খবর নিলাম আন্টির কাছে।" কবির বলে।
"আমার কল ধরছিস না কেন?''
"মোবাইল সাইলেন্ট করে রেখেছিলাম। ছাত্রকে পড়াচ্ছিলাম তো তাই। টিউশনি করে কেবলই ফিরছি।"
"মিথ্যা কথা বলবি না। বিগত তিন দিন ধরে তোকে কল করছি কিন্তু তুই ধরছিস না।" অভিমানের সুরে বলে স্নিগ্ধা।
"আমি না বললাম, আমার সাথে আর তোর যোগাযোগ রাখা উচিত হবে না?"
"সে বিয়ের পর যোগাযোগ নাই বা রাখলি এখন ফোন ধরছিস না কেন? আমি ঢাকায় আসছি। দেখা করবি না?" স্নিগ্ধা বলে।
"সে হয়না স্নিগ্ধা। আর মায়া বাড়াস না, শেষে আমার বাঁচা কঠিন হয়ে যাবে।" কবির বলে।
"যা আর তোকে কষ্ট দিব না। আর তোর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করব না। একবার অন্তত দেখা কর।"
"সে হয়না। প্লিজ তুই রাগ করিস না। যেখানেই থাকি যেভাবেই থাকি চিরদিন চাইব তুই সুখে থাক, শান্তিতে থাক।" বলে কবির ফোনটা কেটে দেয় তারপর সুইচ অফ করে রাখে। ধানমন্ডি বাস স্টপেজে দাড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল কবির তখন স্নিগ্ধার কল এসেছিল। কবিরের মনটা বিষন্নতায় ভরে রয়েছে। স্বাভাবিক জীবনে প্রবেশের চেষ্টা করছে কবির। একটি টিউশনি শেষ করে দ্বিতীয়টির উদ্দেশ্যে যেতে হবে কবিরকে। কবির বাসের আশায় না থেকে হেঁটেই রওনা দিয়ে দেয়। ভীড়ের শহরে নিঃসঙ্গ পথচারী সে, একেবারেই নিঃসঙ্গ।
 
কবির ছাদের মেঝেতে শুয়ে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। আকাশে চাঁদ নেই, আকাশ ভরা তারার মেলা। আজ কবিরের মনটা খুব বিক্ষিপ্ত, বারবার কষ্টে ভরে উঠছে বুকটা। বিগত কিছু দিন ধরে কবির চেষ্টা করছে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে। অনেকটা ফিরেও গেছে, টিউশনি পড়াচ্ছিল নিয়মিত, ক্লাসও করছিল, পড়াশোনার দিকেও মন দিচ্ছিল। গতকাল সন্ধায় ওর শিরিন আন্টির সাথে ফোনে কথা বলে জানতে পেরেছে যে কালকে স্নিগ্ধার বিয়ে হবে, আপাতত রেজিস্ট্রি করে রাখবে, পরে অনুষ্ঠান। এরপর থেকেই ওর দিনকাল ওলটপালট হয়ে গেছে। আজকে ও ক্লাসেও যায়নি, টিউশনি পড়াতেও যায়নি, সারাটা দিন মেসেই কাটিয়েছে। কবির ওর পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখে, রাত দুইটা বাজে।
কবির হঠাত কি মনে করে স্নিগ্ধাকে কল করে। একবার রিং হয়েই রিসিভ হয়।
"হ্যালো কবির। কেমন আছিস তুই?" স্নিগ্ধার মিষ্টি কন্ঠে ভেসে আসে।
"হ্যালো কবির, কথা বলছিস না কেন?"
কবির কোন জবাব দেয়না, মন ভরে ওর মিষ্টি কন্ঠ শুনতে চায়।
"কিরে, এতো রাত পর্যন্ত জেগে আছিস কেন?" কয়েক সেকেন্ড পর বলে কবির।
"ঘুম আসছিল না রে।" স্নিগ্ধা বলে।
"আন্টির কাছে শুনলাম তোর বিয়ে কালকে?"
"হ্যাঁ।"
"আমার খুব কষ্ট হচ্ছে রে। তোকে ছাড়া আমি বাঁচব না। আমি কালকে চলে আসব, তুই সবার সামনে বিয়ের আসর ছেড়ে আমার হাত ধরবি। আমরা কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করে নেব।"
"কিসব বলছিস এসব? তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?" স্নিগ্ধা বলে।
"হ্যাঁ রে, আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। বাকিটা জীবন হয়তো পাগলাগারদে কাটাতে হবে।"
"প্লিজ কবির, কোন পাগলামী করিস না। আমার পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা কর।"
"আমি বুঝি রে। একটু ইয়ার্কি করছিলাম, কিছু মনে করিস না। আসলে তোর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছিল খুব, কি নিয়ে কথা বলব বুঝতে পারছিলাম না।" কবির বলে।
"যখন মন চায় কল দিবি, কোনরকম ইতস্তত করবি না। আর আমার কল কেটে দিবিনা।" স্নিগ্ধা বলে।
"যদি এই মুহুর্তে তোর পাশে তোর স্বামী শুয়ে থাকতো, পারতি আমার সাথে এভাবে ফোনে কথা বলতে?" কবির প্রশ্ন করে।
"অবশ্যই কথা বলতাম। কেন পারতাম না?" স্নিগ্ধা বলে।
"তোর স্বামী হিংসা করতো না?"
"হয়তো করতো, কিন্তু তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। ওকে আমাদের বন্ধুত্বের সাথে মানিয়ে নিতে হবে। তুই যখন ইচ্ছা ফোন করবি, যখন খুশি বাসায় চলে আসবি। আমি ডাকলে চলে আসবি, মানা করবি না।"
"আর যদি তোকে চুমু খেতে ইচ্ছে করে? তোকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে আদর করতে ইচ্ছে করে?" কবির বলে।
এক সেকেন্ড নিরবতায় কেটে যায়।
"কিসব উল্টাপাল্টা বলছি আমি। আমি আসলেই পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমায় ক্ষমা কর। রাত জাগিস না, এখনই ঘুমিয়ে পড়। রাখি" বলে ফোন কেটে দেয় কবির।
সাথে সাথে আবার ফোন আসে কবিরের মোবাইলে। কবির কেটে দেয়, তারপর ফোন সুইচ অফ করে রাখে। আবারও মনোযোগ দেয় আকাশের দিকে। কিন্তু অবাক হয়ে লক্ষ করে আকাশে একফালি চাঁদ। কবিরের স্পষ্ট মনে আছে আকাশে কোন চাঁদ ছিলনা, আর আকাশে একবিন্দুও মেঘও নেই। আর তাছাড়া আজ অমাবস্যা, আকাশে চাঁদ থাকার কথা না। আরো আশ্চর্যের ব্যাপার চাঁদটা ধিরে ধিরে আরো বড় হচ্ছে। আরো বড় হওয়ার পর বোঝা গেল যে ওটি চাঁদ নয়, উজ্জল কিছু ধিরে ধিরে নিচে নেমে আসছে। খানিকটা নিচে আসার পর মানুষের আকৃতি স্পষ্ট বোঝা গেল। উজ্জল রুপালী মানুষের মতো আকৃতির বস্তুটি তার রুপালী ডানা মেলে একটা চক্কর দিয়ে ছাদে নেমে আসে।
"কবির, কেমন আছ?"
কবির হতবিহ্বল হয়ে যায়।
"চিনতে পারছো না? আমি সোহরাব।"
"সোহরাব ভাই, তুমি!" অবাক হয়ে বলে কবির।
"কেমন লাগছে আমাকে ফেরেস্তার গেটআপে?"
"ভালই। কিন্তু একটু বেশিই ঝকমকে।" কবির বলে।
সোহরাব তার বুকের কাছে বোতাম স্পর্শ করতেই পোশাক বদলে গেল। শার্ট প্যান্ট কোট টাই বুট দিয়ে একেবারে অফিসিয়াল লুক।
"এখন ঠিক আছে?" সোহরাব বলে।
"তা ঠিক আছে। কিন্তু তুমি...."
"আমি কি? মরে গেছি? মৃত্যুর পরের জীবন নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। পরে বুঝলাম দুশ্চিন্তার কিছু নেই। তা তোমার কি খবর? কেমন আছ?"
"এইতো ভালই আছি" দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে কবির, "আপনি কেমন আছেন?"
"ভালই আছি, তবে খুব ব্যাস্ত। চাঁদের গতিপথ নিয়ন্ত্রনের ভার পড়েছে আমার কাঁধে। কাজটা সহজ না, অনেক সুক্ষ হিসাব নিকাশের ব্যাপার রয়েছে। আমার এখনো ট্রেইনিং পিরিয়ড চলছে, ট্রেইনিং শেষে নিহিলিন নক্ষত্রে পোস্টিং হবে। ওটা পৃথিবী থেকে আট হাজার আলোকবর্ষ দুরে।"
একটু থেমে সোহরাব আবার বলে "কিন্তু আমি জানি তুমি মিথ্যা বলছ। তুমি ভাল নেই বরং কষ্টে আছো। কেন কষ্টে আছ তাও আমি জানি। প্রথম প্রথম আমিও কষ্টে ছিলাম, স্ত্রী সন্তানদের কথা ভেবে। কিন্তু এই মহাবিশ্ব অনেক বিশাল, সেই বিশালতার তুলনায় নিজের ব্যক্তিগত কষ্টও তুচ্ছ।"
কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজে গটগট করে কথা বলে যাওয়া সোহরাব ভাইয়ের চিরায়ত স্বভাব, এখনো বদলায় নি, মনে মনে ভাবে কবির।
"কি ভাবছো কবির? আমি চাইলে তোমার মাইন্ড রিড করতে পারি। কিন্তু তা করব না। যাই হোক আমি এসেছি তোমাকে একটি প্রস্তাব দিতে।"
"প্রস্তাব?!" অবাক হয়ে বলে কবির।
"হ্যাঁ প্রস্তাব। ইউজিএর পক্ষ থেকে ফেরেস্তা পদে নিয়োজিত হওয়ার প্রস্তাব। তুমি রাজি হলে তোমার ট্রেনিং আর পোস্টিং দুটোই এই পৃথিবীতেই হবে। তোমার কাজ হবে বিপদগ্রস্ত ভাল মানুষ খুঁজে বের করা ও তাদের উদ্ধার করা। খুব ইন্টারেস্টিং কাজ।"
"কিন্তু সোহরাব ভাই...." কবিরকে কথা শেষ করতে দেয়না সোহরাব, "তুমি ভেবে দেখ। একদিন সময় পেলে। আমি কাল এই সময় আসব। এখন যাই, আমার হাতে আর সময় নেই। চাঁদকে অটোড্রাইভে দিয়ে এসেছি। একঘন্টার বেশি অটোড্রাইভে রাখা নিষেধ।" বলে সোহরাব বুকের কাছে বোতামে স্পর্শ করে এবং সাথে সাথে ফেরেস্তা গেটআপে ফিরে যায়। একবার ডানা ঝাপটাতেই কয়েক মিটার উপরে উঠে যায় সোহরাব। আরকবার ডানা ঝাপটাতেই তীব্র আলোক ঝলকানি দিয়ে শুন্যে মিলিয়ে যায় সে।
কবিরের ঘুম ভেঙে যায় যখন ততক্ষনে ঝলমলে সকাল। ওর মুখে সোনালী রোদ পড়েছে, সম্ভবত সে কারনেই ঘুম ভেঙে গেছে। কবির ওর মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে সাড়ে আটটা বাজে। কবির উঠে দাঁড়ায়, রাতের স্বপ্নটির কথা মনে পড়তেই ওর ঠোঁটে মৃদু হাসি খেলে যায়। খুব আজব ও হাস্যকর স্বপ্ন ছিল। একটু পরই চিন্তার ভাঁজ পড়ে ওর কপালে। ওটা নিশ্চয়ই কোন সাধারন স্বপ্ন ছিল না। কারন স্বপ্নে দেখা রং মনে থাকে না। কিন্তু সোহরাবের রুপালি পোশাক আর খয়েরি টাইয়ের রং মনে করতে পারছে সে। তবে কি আবারও সিজোফ্রেনিয়া ফিরে আসছে?
কবিরের মা বাবার মৃত্যুর পর সে তাদেরকে দেখতে পেত। একদিন সে স্নিগ্ধাকে সেকথা জানিয়েছিল। স্নিগ্ধা তার মা বাবাকে বিষয়টা জানায়। শিরিন ও জামান কবিরকে স্থানীয় এক সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে কবিরকে নিয়ে যায়। তার ধারনা এটি অদ্ভুত ধরনের সিজোফ্রেনিয়া। ছয়মাস চিকিতসার পর কবির সুস্থ হয়েছিল। অসুখটা কি আবার ফিরে এল? আজকে স্নিগ্ধার বিয়ে সে কথা মনে পড়তেই ওর মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেল। "আমি মরে গেলেও কারো কিছু যায় আসেনা, পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ালেও কারো কিছু আসবে যাবে না। তাই এ নিয়ে এতো চিন্তার কি আছে।" মনে মনে বলে কবির। কবির হেঁটে হেঁটে তার রুমে ঢোকে, সেখানে সবুজ নামের সেই বিশালদেহী মানুষটা তখনও নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।

দশ তারিখ বিকেল পাঁচটা বাজে। সবুজ তার রুমে একা বসে আছে, কবির টিউশনিতে গেছে, ফিরতে ফিরতে সন্ধা হয়ে যাবে। সবুজ রুমটা লক করে দিয়ে এসে সাইডব্যাগের পকেট থেকে একটি ভাঁজ করা কাগজ বের করে নেয়। কবিরের সুইসাইড নোট, গত পরশুদিন সজল ওর হাতে দিয়েছে। কবিরের টেবিল থেকে ওর একটা খাতা খুলে চিঠিটার সাথে মিলিয়ে দেখে। একেবারে হুবহু কবিরের লেখা। শয়তানটার শয়তানি প্রতিভা অঢেল।" মনে মনে ভাবে সবুজ। ছোট একটি সুইসাইড নোট, পুরোটা একবার পড়ে নেয় সবুজ।

"প্রিয় স্নিগ্ধা,
পত্রের শুরুতেই তোকে জানাচ্ছি বিয়ের আন্তরিক শুভেচ্ছা। দোয়া করি তোর বৈবাহিক জীবন সুখের হোক। ভেবেছি তোকে ভুলে যেয়ে নতুন করে জীবন শুরু করব। কিন্তু তোকে ছাড়া বেঁচে থাকা যে এতো কষ্টের হবে তা আমি ভাবতে পারিনি। অনেক ভেবেও এতো কষ্ট সাথে নিয়ে বেঁচে থাকার কোন কারন খুঁজে পাইনি। ভাল থাকিস। পারলে আমাকে ক্ষমা করিস।
ইতি
তোর প্রিয় বন্ধু
কবির"

চিঠিটা পড়ে ভাঁজ করে পকেটে রেখে দেয় সবুজ। কিন্তু বিষয়টা পুরোপুরি তার মাথায় ঢোকেনা। কেন সজল ছেলেটাকে খুন করতে চায়? আর তার প্রেমিকার ব্যাপারটাই বা সজল কিভাবে জানে? তবে কি মেয়েটাই এ দুজনের মাঝের কানেকশন, মেয়েটিই কি এর কারন? সবুজ এ নিয়ে আর মাথা খাটায় না। কাজটা সেরে দিতে পারলে হাতে কিছু টাকা আসবে সে নিয়েই তার চিন্তা। সবুজ রুম থেকে বেরিয়ে পাশের রুমে যায় সেখানে রায়হান জানালার পাশে বসে সিগারেট টানছে।
"কি খবর সবুজ, কেমন আছ?" বলে রায়হান সিগারেটটা বাড়িয়ে দেয়।
"এইতো বস, ভালই আছি। তপু কোথায়?" সিগারেটে টান দিতে দিতে বলে সবুজ।
"বাইরে গেছে, কিছুক্ষনের মধ্যে ফিরবে।"
"আসলে বস, আজকে আমার জন্মদিন।"
"তাই নাকি! কংগ্রেচুলেশন। ম্যানি ম্যানি রিটার্ন অফ দা ডে।"
"সেই উপলক্ষে ভাবছি মেসের সবাইকে নিয়ে সিনেমা দেখতে যাব। টিকিটও কেটে রেখেছি। নতুন সিনেমা, 'প্রেম পরশ', আজকেই রিলিজ হচ্ছে।"
"তাই নাকি। তুমি টিকিট পেলে কোথায়? আমি অনেক চেষ্টা করেও পাইনি।" রায়হান বলে।
"আমার এক ফ্রেন্ডের মাধ্যমে যোগাড় করেছি।" সবুজ বলে। তারপর দুটি সিনেমার টিকিট তুলে দেয়।
"সাতটায় মুভি, রেডি হন। একটা আপনার অন্যটা তপুর।"
মেসের সবার কাছে টিকিট বিতরন করে সবুজ তার রুমে ফিরে আসে। ততক্ষনে কবির ফিরে এসেছে। কবির বিছানায় বসে উদাস দৃষ্টিতে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।
"আরে কবির, কখন ফিরলে?" সবুজ বলে।
"এইতো এখনই।"
"আমরা মেসের সবাই মিলে সিনেমা দেখতে যাচ্ছি। তুমি যাবে নাকি?"
"না ভাই। আপনারা যান।"
সবুজ আর জোরাজুরি করেনা। রাজি হয়ে গেলে প্ল্যান ভেস্তে যেতে পারে।
সোয়া ছয়টার ভেতরে ওরা সিনেমাহলের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় এবং পৌনে সাতটার মধ্যে ওরা সিনেমাহলে পৌঁছে যায়। বাকি সবার টিকিট ফাস্ট ক্লাস আর সবুজেরটা সেকেন্ড ক্লাস। সিনেমা শুরুর দশ মিনিট পর সবুজ হল থেকে বের হয়ে একটি সিএনজি নিয়ে ফিরে আসে মেসে। ফেরার পথে সে দুটো এনারজি ড্রিংক কেনে। সিঁড়িতে বসে একটি এনারজিড্রিংকে ঘুমের ওষুধের গুঁড়া মিশিয়ে দেয়। আগেই গুঁড়া করে রেখেছিল সে। এখন পর্যন্ত সবকিছু প্লান মোতাবেক হয়েছে, শুধু এই এনার্জি ড্রিংকটা খাওয়াতে পারলেই হয়। সবুজ লিফ্টে করে উপরে উঠে আসে। কিন্তু রুমে কবিরকে খুঁজে পায়না সে। রুম থেকে বেরিয়ে ছাদে কবিরকে দেখতে পায় সবুজ। কবির ছাদের রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে। সবুজ চারিদিক চোখ বুলিয়ে নেয়, কেউ নেই। তারপর পা টিপে টিপে যতোটা সম্ভব নিঃশব্দে এগোতে থাকে। অর্ধেকটা পথ এগোগেই কবির ফিরে তাকায়।
"সবুজ ভাই, সিনেমা দেখতে যান নাই? " কবির জিজ্ঞাসা করে।
"তোমাকে একা রেখে সিনেমা দেখতে ভাল লাগছিল না। তাই ফিরে এলাম। তা তুমি এখানে কি কর? ঘরে চলো।" সবুজ বলে।
কবির ঘরে ফিরে আসে। সবুজ ওর হাতে একটি এনার্জি ড্রিংকের বোতল তুলে দেয়।
"না ভাই, আমি খাব না। খুব ঠান্ডা লেগেছে।" কবির বলে।
"এক চুমুক খাও, কিছু হবেনা।"
"না ভাই।"
"তাহলে চা খাও।" সবুজ বলে।
"ঠিক আছে, চলেন যাই।" কবির বলে।
"আমার চা স্টলের পরিবেশ ভাল লাগেনা। তার চেয়ে বরং আমি চা এনে দেই।" সবুজ বলে।
"সে কি করে হয়?"
"কোন সমস্যা নেই। তুমি কি খাবে, দুধ চা নাকি রং চা?"
"আদা দিয়ে রং চা, কড়া লিকার।" কবির বলে।
সবুজ রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
 
রাত দশটা বাজে। সজল হোটেলের বারান্দায় পায়চারি করছিল। আজকে তার আর স্নিগ্ধার বিয়েটা হয়ে গেল। তবে এদেশে বিয়ে বলতে যেমন অনুষ্ঠানকে বোঝায় তার কিছুই হয়নি। স্নিগ্ধাদের বাড়িতেই কাজি ডেকে বিয়ে পড়ানো হয়। স্নিগ্ধাদের কিছু আত্মীয় স্বজন ও কয়েকজন প্রতিবেশী, সজলের কয়েকজন আত্মীয় ও কয়েকজন বন্ধু উপস্থিত ছিল। হোটেল নাজ গার্ডেনের তিনটি রুম বুক করেছে সে। নতুন বউকে নিয়ে সেখানেই উঠেছে সে। আগামীকাল ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবে তারা। সজল কিছুটা নার্ভাস, তবে সেটা বিয়ে কিংবা বাসরের জন্য নয়। কবিরকে খুনের কন্ট্রাক্টটা পারভেজকে দিয়েছে, এতক্ষনে কাজটা হয়ে যাওয়ার কথা। হিরোইনখোরটা কাজটা ঠিকমতো সারতে পারল তো? আজকে কোনরকম যোগাযোগ করতে নিষেধ করে দিয়েছে সজল, পরেরদিন সকালে কল করে জানাবে পারভেজ।
সোহরাব বেঁচে থাকলে এই বিয়েটা কখনোই হতে দিতো না, তাকে পথ থেকে সরিয়ে দেয়াটা যুক্তিসঙ্গতই ছিল। কিন্তু কবিরকে সরিয়ে দেয়া আসলেই কি খুব প্রয়োজন? এতগুলো টাকা অযথা নষ্ট হচ্ছে না তো? সজল ভাবতে থাকে। এই মুহুর্তে সমস্যা না হলেও ভবিষ্যতে সমস্যা করতে পারে। কিন্তু এখন যদি হিরোইনখোরটা ধরা পড়ে যায় সমস্যা হবে সেক্ষেত্রে। তবে সজল সব প্ল্যানেরই একটি ব্যাকাপ প্ল্যান রাখে, এক্ষেত্রেও আছে।
ঠোঁটে সিগারেট নিয়ে লাইটার দিয়ে ধরাতে গিয়ে থেমে যায় সজল, গায়ে সিগারেটের গন্ধ নিয়ে বাসর ঘরে যেতে চায়না সজল। ঠিক তখন সজলের বোনের স্বামী হেলাল এসে ওর পাশে দাঁড়ায়।

"কি সজল মিয়া, এইখানে কেন? রুমে যাও। শরম পাও?" হেলাল বলে।
"আরে না দুলাভাই। রুমে বুবু আর ভাইগ্না ভাগ্নিরা তো ওর সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে।" সজল বলে।
"আচ্ছা, আমি দেখতাছি।" বলে হেলাল সজলের রুমের দিকে যায়। কয়েক মিনিট পর ফিরে আসে।
"এখন যাও, রুম কিলিয়ার। বেশি রাইত কইরো না, তাড়াতাড়ি ঘুমাইয়া পইরো।" মিটিমিটি হেসে বলে হেলাল।
সজল নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যায়। রুমটা ফুল দিয়ে বেশ সুন্দর করে সাজানো। বিছানায় বসে স্নিগ্ধা উদাস দৃষ্টিতে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। খয়েরি বেনারসী শাড়ি ও হালকা মেকআপে অপূর্ব লাগছে স্নিগ্ধাকে। সজল যে রুমে এসেছে স্নিগ্ধার সে দিকে খেয়াল নেই। সজল নিঃশব্দে এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে ওর গালে চুমু দিতে থাকে।
"ছাড়ো, ছাড়ো আমায়।" সজলের বাহুডোর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করে স্নিগ্ধা।
সজল ছেড়ে দেয় স্নিগ্ধাকে।
"আমি বুঝি স্নিগ্ধা, তোমার এই বিয়েতে মত নেই। মার অপারেশনটা হতে দাও, তারপর তুমি চাইলে তালাক দিয়ে দেব।" বলে সজল বিছানা ছেড়ে উঠে যাওয়ার ভঙ্গি করে।
স্নিগ্ধা ওর হাতটা ধরে বলে "তুমি যা ভাবছো তা নয়। আসলে আমি খুব ক্লান্ত, আর তাছাড়া মনটাও খুব খারাপ। মা বাবাকে ছেড়ে যাচ্ছি তো।"
"তা তো তুমি এমনিতেই পড়াশোনার জন্য ঢাকায় থাকো। যখন ইচ্ছে হয় বাড়িতে চলে এসো। বিয়ের পর দেখো কিছুই বদলাবে না।" সজল বলে।
"আজ আর নয় জান, আমি খুব ক্লান্ত। ঘুম পাচ্ছে।" স্নিগ্ধা বলে।
"আমিও খুব ক্লান্ত। কিন্তু জানো আমি এই রাতটির জন্য কতকাল ধরে অপেক্ষা করছি? ছয় বছর ধরে। আজকে প্লিজ মানা কোরো না জান। জাস্ট একবার, প্লিজ।" বলে সজল স্নিগ্ধাকে জড়িয়ে নেয় বাহুডোরে। স্নিগ্ধা আর বাধা দেয় না। স্নিগ্ধার গোলাপী ঠোঁট গুলোতে ঠোঁট চেপে ধরে সজল।
"যখনই তোমার ঠোঁটে চুমু দিতে চাই তখনই তুমি ঠোঁটগুলো চেপে রাখো কেন? একটু ভাল করে চুমু দিতে দাওনা জান!" সজল আবদারের সুরে বলে।
স্নিগ্ধার মনে পড়ে যখন কবির চুমু দিয়েছে তখন আপনা আপনি ওর ঠোঁট জোড়া খুলে গিয়েছিল, প্রিয় বন্ধুর চুমুতে সাড়া দিতে একটুও কার্পন্য করেনি। সেই মিষ্টি চুমুর কথা মনে করতেই ওর ঠোঁট একটুখানি খুলে যায় ওর। সেই সুযোগে সজল ওর ঠোঁটটি চেপে ধরে, স্নিগ্ধার মিষ্টি ঠোঁটগুলোকে একে একে চুষতে থাকে। তারপর বিছানার সাথে চেপে ধরে নববধুর ঠোঁট তীব্রবেগে চুষতে থাকে, যেন সবকিছু চুষে নিতে চায় ওর। একটি হাত নিয়ে যায় বুকে, আঁচল সরিয়ে ব্লাউজের উপর দিয়ে টিপতে থাকে বাঁ স্তনটি। তিন থেকে চার মিনিটের তীব্র চুম্বন শেষে সজল ছেড়ে দেয় স্নিগ্ধার ঠোঁটদুটি। আরেকটু থাকলে হয়তো দম বন্ধ হয়ে যেতো, ভীষন হাঁপাতে থাকে সে। সজল ঠোঁট ছেড়ে নেমে আসে গলায়, ঠোঁট ঘষতে ঘষতে নেমে আসে বুকে। একটা একটা করে ব্লাউজের বোতাম খুলে ব্লাউজটা ছুঁড়ে দেয় বিছানার পাশে। সজল ওর উপর থেকে উঠে পড়ে এবার। কোমরের কাছে গোটানো সাড়ি ও সায়াটাও খুলে নেয় সে। স্নিগ্ধা এখন শুধু ব্রা ও প্যান্টি পরে আছে। সজলের অনেকদিনের সখ ওকে শুধু ব্রা প্যান্টিতে দেখবে, আজ তা পুরন হল। ওর ফর্সা দেহের সাথে কালো রংয়ের ব্রা পেন্টি অসাধারন লাগছে ওকে। সজল প্রায় মিনিট খানেক মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
"তোমার ব্রার সাইজ কত?" সজল জিজ্ঞাসা করে।
"জানি না।" স্নিগ্ধা বলে।
"বলো না জান, বলো প্লিজ।" বলে একটা হাত বাড়িয়ে ব্রার ওপর দিয়ে বাঁ স্তনটা টিপে ধরে।
"ইস, ছাড়ো।" স্নিগ্ধা বলে।
"আজ আর ছাড়ছি না তোমাকে।" বলে ওর বুকে হামলে পড়ে সজল, ব্রার উপর দিয়ে মুখ চেপে ধরে কামড়ে ধরে ডান স্তনটি।
"আউ কি করছো? কামড়াচ্ছ কেন।" কঁকিয়ে ওঠে স্নিগ্ধা।
"তাহলে বল তোমার বুকের সাইজ কত?"
"চৌত্রিশ ডি।" স্নিগ্ধা বলে।
সাথে সাথে সজল ব্রাটা টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেলে ছুঁড়ে দেয়।
"এই, কি করলে!"
"ওয়াও! কি অপুর্ব।" মুগ্ধ দৃষ্টিতে ওর বুকের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে সজল। ভরাট গোলাকার স্তনদুটোর মাঝ বরাবর গোলাপি এরিয়েল ও বোঁটা। এতো সুন্দর বুক কখনোই দেখেনি সজল। কিছুক্ষন মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আবার ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর বুকে। বোঁটা ও এরিয়েল সহ স্তনের যতখানি সম্ভব মুখের ভেতর নিয়ে হালকা হালকা কামড়াতে কামড়াতে এক হাত দিয়ে অন্য স্তন মোচড়াতে থাকে।
"আউ ইস, কি কর? কামড়াও কেন?" আবারও কঁকিয়ে ওঠে স্নিগ্ধা।
"তোমার এ দুটো জিনিস আমাকে ছয় বছর ধরে জ্বালিয়েছে। আজ এদেরকে শায়েস্তা না করে আমি ছাড়ছি না।" বলে সজল আবারও স্তনভোজনে মগ্ন হয়।
প্রায় দশ মিনিট ধরে ওর স্তন কামড়ে, চুষে, মুচড়িয়ে নানাভাবে নিপীড়নের পর থামে সে। স্নিগ্ধার স্লিম পেটের হালকা মেয়েলি তুলতুলে মেদে হালকা হালকা কামড় দিয়ে দিয়ে ওর নাভীতে নেমে আসে। নাভীর কুপে জিভ দিয়ে চেটে দেয় সজল। স্নিগ্ধা আবেশে গুঙিয়ে ওঠে।
মিনিট খানেক ওর নাভি চুষে চেটে সজল আরো নিচে নেমে আসো। পেন্টির উপর দিয়ে মুখ ঘসতে থাকে ওর যোনী প্রদেশে। পেন্টিটা টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেলে সজল, স্নিগ্ধা দুই পা জড়ো করে লুকাতে চায় নিজের গুপ্তাঙ্গ। কিন্তু সজল পা দুটি ধরে ছড়িয়ে নেয় তারপর দেখতে থাকে। নির্লোম কিশোরী মেয়েদের মতো বোজানো যোনি চেরা, একটুও কালিমা নেই সেখানে। সজল মুখ ডুবিয়ে দেয় সেখানে।
"এই ছি! কি কর! ইস উহ" গুঙিয়ে ওঠে স্নিগ্ধা, সজলের চুলের মুঠি ধরে সরে দিতে চায়, পরের মুহুর্তেই যৌন সুখে সজলের মাথাটা চেপে ধরে।
স্নিগ্ধা আর থাকতে পারে না, কয়েক মিনিটের মাঝে অর্গাজমে পৌঁছে যায়। কোন পুরুষের স্পর্শে প্রথম অরগাজম ওর। সজল ওর ওপর থেকে উঠে নিজের পাঞ্জাবী, প্যান্ট ও জাইংগা খুলে ফেলে। ওর বড়সড় ধোনটি স্নিগ্ধার যোনীতে ঘষতে থাকে। চুষে দিতে বলবে কিনা ভাবে, না ওটা পরে হবে, মনে মনে ভাবে সজল। তারপর যোনীছিদ্র বরাবর চাপ দেয়, তাতে শুধু ওর ধোনের মুন্ডিটা ঢোকে।
"ইস আউ।" কঁকিয়ে ওঠে স্নিগ্ধা।
এরপর বেশ জোরে একটি ঠাপ দিয়ে ধোনের দুই তৃতীয়াংশ ঢুকিয়ে দেয় স্ত্রীর যোনীছিদ্রে।
"উ মাগো" বলে চেঁচিয়ে ওঠে স্নিগ্ধা। সজল ওর মুখ চেপে ধরে।
"খুব ব্যাথা করছে। ওটা বের করে নাও প্লিজ।" কাতর কন্ঠে বলে স্নিগ্ধা।
"লক্ষিটি একটু সহ্য করো প্লিজ। দেখবে ভাল লাগবে।" বলে সজল ওর ঠোঁটে আর গালে চুমু দিতে দিতে ওর সংক্ষিপ্ত যোনীপথে ধোনটি ধিরে ধিরে আগুপিছু করে। এভাবে কিছুক্ষন চলার পর সজল ওর ওপর থেকে উঠে আসে, এরকম স্লো মোশনে সেক্স ওর ভাল লাগেনা। সতীচ্ছেদের রক্তে মাখানো বাড়া দেখে মনে মনে সজল তৃপ্তির ঢেঁকুর দেয়, যদিওবা গুদ চোষার সময়ই এ ব্যাপারে নিশ্চিত ছিল যে ও এখনো ভার্জিন। যদিও আগে ওর সবসময়ই সন্দেহ ছিল কবির ও স্নিগ্ধার রিলেশন নিয়ে।
সজল স্নিগ্ধার কোমর ধরে টেনে খাটের কিনারায় নিয়ে আসে, স্নিগ্ধার চোখে প্রশ্ন। সজল ওর পা দুটোকে দু কাঁধে তুলে নিয়ে বাড়াটা যোনিছিদ্রে সেট করে প্রবল এক ঠাপে পুরোটা গেঁথে দেয়। আবারও ব্যাথায় চিৎকার করে ওঠে স্নিগ্ধা, কিন্তু সজল তাতে ভ্রুক্ষেপ করেনা। স্তন দুটোকে মুঠো পাকিয়ে ধরে প্রচন্ড বেগে ঠাপাতে থাকে সে। কিন্তু স্নিগ্ধার অতিসংকীর্ন যোনিপথে বেশিক্ষন টিঁকতে পারে না সে, দশ মিনিটের মাঝে বীর্যপাত করে বিছানায় লুটিয়ে পড়ে সে। প্রায় সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়ে সজল। স্নিগ্ধার গাল বেয়ে বয়ে যাওয়া অশ্রুধারা তার চোখে পড়েছে, কিন্তু তার কতোটা শারিরিক ব্যাথায় আর কতোটা মনের ব্যাথায় তা সজল জানেনা।
পরদিন সকাল আটটায় সজলের ঘুম ভেঙে যায়। তার মোবাইলে রিংটোন বেজে যাচ্ছে অনবরত। সবুজের নাম্বার থেকে কল এসেছে। দেখেই ওর ঘুম একেবারে ছুটে যায়। ধরতে ধরতেই কেটে যায় কল। পুরোপুরি ন্যাংটো সে, ওর পাশে চাদর মুড়ে নিয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে স্নিগ্ধা। সজল উঠে ওর আন্ডার ওয়ারটা পরে নিয়ে এটাচ ব্যালকনিতে গিয়ে কল দেয়। সাথে সাথে রিসিভ হয়।
কিরে, কাজটা হল?"
"না বস, পাখি তো উড়ে গেছে।"
"মানে? ধরা পড়ে গেছিস?"
"না বস, আমি বলছি শোনো।"
সবুজ প্রথম থেকে শুরু করে বলতে থাকে। সে যখন চায়ে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ফিরে আসছিল তখন সিঁড়িতে কবিরকে দেখতে পায়। ডাক দেয় সে, কিন্তু কবির শোনে না, অন্যমনষ্কভাবে নেমে যায়। তারপর রাতে আর ফিরে আসেনি কবির, মোবাইল রুমেই রেখে গেছে।

রাতের মহানগরী, রাস্তার সোডিয়াম লাইটের আলোয় চারিদিক অপার্থিব সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে। সড়কের বুক বেয়ে সাঁই সাঁই শব্দ তুলে গাড়ি ছুটে যাচ্ছে। দিনের বেলা এখানে যতটা কোলাহল ও ভীড় থাকে, এখন তার ছিটে ফোঁটাও নেই। মহাসড়কের একপাশে ফুটপাত দিয়ে অপ্রকৃতিস্থের মতো হেঁটে যাচ্ছে কবির। কোথায় আছে সে, কোথায় যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানেনা কবির, শুধু জানে তাকে যেতে হবে, দুরে কোথাও চলে যেতে হবে। আজকে দিনটা ও যতোটা সম্ভব স্বাভাবিকভাবে কাটিয়েছে। সকালে ইউনিভার্সিটি গিয়েছিল, ক্লাসে মন দেয়ার চেষ্টা করেছে। ক্লাসের পর দুটি টিউশনি করে ক্লান্ত অবস্থায় মেসে ফেরে কবির। মেসের সকলে সিনেমা দেখতে চলে গেল, প্রেমের সিনেমা না হলে ও দেখতে যেত। কবির ছাদের রেলিং ধরে দাড়িয়ে দুরে স্নিগ্ধাদের ফ্লাটটার ব্যালকনির দিকে তাকিয়েছিল। আগে এখানে দাড়িয়ে কখনো কখনো স্নিগ্ধাকে দেখতে পেত, এখানে দাড়িয়ে কখনো ইশারায় কথা বলতো ওরা, কখনো বা দুর থেকে একে অপরকে দেখতে দেখতে ফোনে কথা বলতো। কিন্তু আর এখান থেকে ওকে দেখতে পাবেনা, মেসটা সম্ভবত ছেড়ে দিয়েছে স্নিগ্ধা। ভাবতেই মন ব্যাথায় ভরে উঠল ওর। ঠিক তখন সবুজ ফিরে আসে। কবিরকে রুমে একা রেখে যখন সবুজ চা আনতে যায়, কবির আবার একা হয়ে যায়। রাত হয়ে গেছে, আজ কি ওদের বাসর হবে? ফুল দিয়ে সাজানো বিছানায় দুটি নগ্ন দেহ একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে, কিছুটা ঝাপসা একটি দৃশ্য কবিরের চোখে ভেসে আসে। সাথে সাথে যেন ওর সমস্ত লোমকুপ থেকে আগুন বের হতে লাগল, সমস্ত দেহ যেন সেই আগুনে জ্বলে পুড়ে যাচ্ছিল, আর এই বদ্ধ ঘরে যেন ওর দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। কবির রুম থেকে বের হয়ে যায়, সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় সবুজ ওকে দেখতে পায়। কিন্তু কবিরের কোনদিকেই কোন খেয়াল নেই। এপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে কবির ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে থাকে। কতোক্ষন ধরে হাঁটছে সে জানেনা, কোথায় যাচ্ছে জানেনা, সেই দৃশ্যটি এখনো কবিরকে ধাওয়া করে বেড়াচ্ছে ।
কবির মুল সড়ক ছেড়ে একটি অপেক্ষাকৃত সরু রাস্তায় ঢুকে হাঁটতে থাকে। রাস্তাটা একেবারে নির্জন। কিছুদুর হাঁটার পর এক আততায়ী পথ আগলে দাঁড়ায়, তার হাতে একটি ছুরি।
"যা আছে বাইর কইরা দে, না হলে এইটা দিয়া বাইর কইরা নেব।" বলে হাতের ছুরির দিকে ইশারা করে।
কবির ছুরির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
"কিরে কথা কানে যায় না? দিব নাকি শ্বাসনালী কাইটা?" যুবকটি আবার খেঁকিয়ে ওঠে।
কবির কিছু বলেনা, অবাক দৃষ্টিতে ছুরির ফলার দিকে তাকিয়ে থাকে, রাস্তার আলোয় সেটি চকচক করছে। এই ফলা দিয়ে যদি ওর শ্বাসনালী কেটে দেয় তবে কেমন হবে? খুব ব্যাথা করবে? নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে? ওর বুকে যে কষ্ট তার চেয়েও কি বেশী কষ্ট হবে? কিন্তু কতক্ষন? পাঁচ মিনিট নাকি দশ মিনিট? রাস্তায় পড়ে থাকা একটি লাশের দৃশ্য ভেসে আসে ওর দৃষ্টিতে যার গলার ফাটল দিয়ে রক্তের স্রোত বয়ে চলছে।
কবিরকে অপ্রকৃতিস্থর মতো ওর ছুরির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভীষন ঘাবড়ে যায় যুবকটি।
"কিরে, পাগল নাকি? সত্যি সত্যি মেরে দিব কিন্তু।" নার্ভাস কন্ঠে বলে যুবকটি, তারপর এক হাত বাড়িয়ে কবিরের প্যান্টের পকেটগুলো চেক করে। কিছুই নেই তাতে, না মানিব্যাগ, না মোবাইল।
"যা ভাগ। নাহলে মেরে দেব।" বলে যুবকটি কবিরকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। তারপর নিজে ছুটে একটি গলির ভেতর ঢুকে যায়।
কবির আবারও হাঁটতে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে কখন সে কমলাপুর রেলস্টেশনের সামনে চলে আসে নিজেও জানেনা। রেলস্টেশনে ঢোকে কবির। প্লাটফর্মে বহুমানুষ বিছানা পেতে শুয়ে আছে। কবির তাদের এড়িয়ে এগিয়ে যায়। সামনে একটি ট্রেন ছাড়ার হুইসেল দিচ্ছে। কবির সেদিকে যেতে থাকে। কবির পৌঁছাতে পৌঁছাতেই ছেড়ে দেয় ট্রেনটা, কবির দৌড়ে গিয়ে ট্রেনে উঠে পড়ে। একটি বেঞ্চে বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে কবির। ট্রেনটি কোথায় যাচ্ছে জানেনা সে, টিকেটও নেই তার কাছে। অনিশ্চিত তার ঠিকানা, অনিশ্চিত জীবন।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top