শুরু হলো পবিত্র রমজান। স্বাভাবিকভাবেই যাঁরা রোজা রাখবেন, তাঁদের খাবারের অভ্যাসে আসবে কিছুটা পরিবর্তন। ভোরে সাহ্রি খেয়ে রোজা রেখে সন্ধ্যায় ইফতারি খাওয়া। ঐতিহ্যগতভাবেই এ দেশে ইফতারের সময় খেজুরের সঙ্গে পানি, শরবত, দুধ বা ফলের রস পানের চল রয়েছে। এ ছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো ইফতারের জন্য বিভিন্ন ধরনের চমৎকার সব খাবার প্রস্তুত করা হয় এখানেও। রমজান মাসের খাবারদাবার নিয়ে তাই শুরু থেকেই আমাদের ভাবতে হবে। শরীরের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারে, এমন সাধারণ খাবার দিয়ে ইফতার করতে হবে। সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য উপকরণ দিয়ে ঘরে বানানো ইফতার সব বয়সের জন্য উপযুক্ত।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য যেহেতু বাইরে যাওয়া মানা, তাই ইফতারের আয়োজন করতে প্রতিদিন বাজারে যাওয়া কোনোভাবে ঠিক হবে না। আবার পুষ্টি চাহিদা যাতে পূরণ হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। ইফতারি খাওয়ার সময়কে দুই ভাগে ভাগ করে খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত। ইফতারের সময় হলে কিছু খেয়ে রোজা ভেঙে আবার মাগরিবের নামাজের পর খেতে পারেন। কারণ, একসঙ্গে খেলে বেশি খাবার খাওয়া হয়ে যাবে। এতে নানা রকম জটিলতা তৈরি হয়ে আপনার শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারে।
ইফতারের শুরুটা হোক স্বাস্থ্যকর পানীয়, যেমন লেবুর শরবত, তোকমার শরবত, ইসবগুল ও চিয়া বীজের শরবত বা ঘরে তৈরি ফলের রস পান করে। তবে মনে রাখবেন, ফলের রস করার সময় ছেঁকে শুধু পানিটা না নিয়ে আশসহ রস খেতে হবে। এতে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হবে না। মনে রাখবেন, সারা দিন রোজা রাখার পর শরীর যাতে কোনোভাবেই পানিশূন্য (ডিহাইড্রেটেড) না হয়, এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। তাই ইফতার থেকে সাহ্রি পর্যন্ত অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
ইফতার আয়োজনে ডুবোতেলে ভাজা খাবার খাওয়া যাবে না। খুব খেতে মন চাইলে বরং শ্যালোফ্রাই বা অল্প তেলে রকমারি ভাজাভুজি তৈরি করে খেতে পারেন। এখন তো তেলছাড়া এয়ার ফ্রাইয়ারে ভাজা খাবারও খেতে দেখা যায় অনেক বাড়িতে। ইফতারে এমন কিছু খাবার তৈরি করুন, যা শরীরের জন্যও উপকারী।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। তাই ইফতারিতে একটি সবজি সালাদ ও কালারফুল ফলমূল রাখতে হবে। দিনভর রোজার পর যে কারও শরীরের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায়। সে জন্য ইফতারের সময় শরীর, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুকোষ খাবারের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক শক্তির জোগান চায়। তাই ইফতারির খাবারটা হতে হবে ঠান্ডা ও সহজপাচ্য। তেহারি, বিরিয়ানি, হালিম না খাওয়াই ভালো। কারণ, এতে বদহজম হতে পারে। রুচি পরিবর্তনের জন্য মাঝেমধ্যে জিলাপি খেতে পারেন, তবে খুব কম।
খেয়াল রাখবেন, দ্রুত খাবার শেষ করার জন্য তাড়াহুড়া করবেন না। সারা দিন রোজা রাখার পর যদি একসঙ্গে অনেক বেশি খাবার খেয়ে ফেলেন, তাহলে বদহজম ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। ইফতারের শুরুতে ফল, দই, শরবত বা স্মুদির মতো তরল খাবার গ্রহণ করুন। এর বেশ কিছুক্ষণ পরে মূল খাবার খান। এতে আপনার পাকস্থলী কিছুটা সময় পাবে নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য। ফলে সে ঠিকভাবে কাজ করতে পারবে।