What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

প্রতিশোধ: দ্যা রিভেঞ্জ by Monen2000 (2 Viewers)

Ochena_Manush

Special Member
Elite Leader
Joined
Aug 12, 2022
Threads
502
Messages
28,685
Credits
547,380
LittleRed Car
Automobile
Strawberry
Audio speakers
ঘরে পুরো অন্ধকার কিছু দেখার উপায় নেই শুধু একজন নারী ও একজন পুরুষের কথাবার্তার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে

নারী: কি যে বলো, কিভাবে করবো উনি আমার দাদা
পুরুষ: তোমার নিজের দাদা নাকি? কোথায় কোন দূর সম্পর্কের দাদা
নারী: তাহলেও, দাদা তো
পুরুষ: তো সারাজীবন এইভাবেই থাকবে নাকি? আর তাছাড়া এতগুলো টাকাও হাতছাড়া হয়ে যাবে না করলে আমাদের ছেলের কথাটাও তো ভাবতে হবে ওরো তো একটা ভবিষ্যত আছে, না না মণি এই কাজটা করতেই হবে।
নারী: কত টাকা?
পুরুষ: অনেক, সেইসঙ্গে একটা ফ্ল্যাট‌ও পাওয়া যাবে।
নারী: সত্যি বলছো?
পুরুষ: একদম সত্যি, দাদা তো বললেন, তুমি খালি জিনিসটা খাবারের সাথে মিশিয়ে ওদের তিনজনকে খাইয়ে দেবে বাকিটা দাদা বুঝে নেবে।
নারী: কোনো ঝামেলা হবে না তো?
পুরুষ: কিচ্ছু হবে না।
পুরুষের একটু হাসির আওয়াজ এলো সাথে নারীর আওয়াজ: উহ কি করছো ছাড়ো ছেলে জেগে যাবে
পুরুষ:এখন তোমাকে ছাড়তে ইচ্ছা করছে না, চলো আজ একটু করি। একটু পরে নারীটার আঃ করে একটু আওয়াজের সাথে একটু হাসির আওয়াজ এলো তারপর পুরুষ নারী দুজনের ঘনঘন কিন্তু মৃদু শিৎকারের আওয়াজ আসতে লাগলো তারপর আবার চুপচাপ।

**----------**
শহরের এক বিলাসবহুল বাড়ি জুড়ে এখন চরম ব্যাস্ততা দেখা যাচ্ছে, চাকরদের দম ফেলবার ফুরসত নেই, দরজা সাজানো, ঘর ডেকোরেট করা, কোথায় কোথায় নোংরা জমে আছে সেটা চেক করা এবং পরিষ্কার করা ইত্যাদি আর সবকিছুর উপর কড়া দৃষ্টি রেখেছেন এক ষাটোর্ধ্ব মহিলা।
ইনি বৈশালী দেবী, আর এই বিলাসবহুল বাড়িটি শহরর দোর্দণ্ডপ্রতাপ রাজনৈতিক নেতা বীরেন ভট্টাচার্যের, যিনি সম্পর্কে বৈশালী দেবীর ভাই, জামাইবাবু মারা যাওয়ার পরে বীরেন ভট্টাচার্য দিদি ও তার একমাত্র ভাগ্নেকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন, সেই থেকে বৈশালী দেবী ও তার ছেলে এখানেই থাকেন। বীরেন ভট্টাচার্য শুধু যে একজন রাজনৈতিক নেতা তাই নয় পুরো শহর জুড়ে তার আধিপত্য, প্রথম জীবনে একজন প্রোমোটার ছিলেন বীরেন বাবু তারপর ধীরে ধীরে উন্নতি করে আজকে এই ক্ষমতা অর্জন করেছেন, নিজের ব্যাবসা যেমন বাড়িয়েছেন তেমনি রাজনীতিতে যোগ দিয়ে ভোটে জিতে নেতা হয়েছেন অবশ্য লোকমুখে এও শোনা যায় যে এই ক্ষমতা অর্জন টা সৎ উপায়ে করেননি বীরেন বাবু এর জন্য নাকি বহু লোককে খুন করেছেন কিন্তু কখনো কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি তাই পুলিশ তার গায়ে হাত দিতে পারেনি আর এখন তো পুরো পুলিশ ডিপার্টমেন্ট তার হাতের মুঠোয়, এখন তার লক্ষ্য নিজের শহর ছেড়ে অন্য শহরে তার ব্যাবসা আর ক্ষমতার প্রসার করা, বিশেষত বাণিজ্যনগরীতে পা জমানো কিন্তু সেখানে অন্য ক্ষমতাধর ব্যাবসায়ীদের ভিড় তাই তিনি ঠিক পাত্তা পাচ্ছেন না তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই নিজের শহরেই আরও বেশি করে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন,আর তার সবকাজে তার সাথে থাকে তার বিশ্বস্ত অনুগত ভাই ধীরেন ভট্টাচার্য, দাদার মতো এনাকেও শহরের লোক কম ভয় পায় না, দাদার হুকুমে করতে পারেন না এমন কাজ নেই দাদা অন্ত প্রাণ ধীরেন বাবুর।
এই ভট্টাচার্য বাড়িতে এই যে এত আয়োজন তার কারণ আজ বাড়ির সবার প্রিয় ছোটো মেয়ে তাথৈ তার পড়াশোনা শেষ করে বাড়ি ফিরছে, এই তাথৈ ধীরেন বাবুর একমাত্র মেয়ে আর বীরেন বাবুর‌ও এক মেয়ে আছে নাম বৃষ্টি, কিছু বছর আগে দুই বোনকেই পড়াশোনা করার জন্য অন্য শহরে নিজের এক আত্মীয়ের কাছে পাঠিয়ে দেন বীরেন বাবু, বৃষ্টি কিছুদিন আগে ফিরে এসেছে আর আজ আসছে তাথৈ।
প্লেনে ফার্স্ট ক্লাসে জানালার ধারের একটি সিটে বসে বাইরের দিকে দেখছে এক যুবতী, যুবতীটি ফর্সা গায়ে একটা সাদা শার্ট, আর নীল জিন্স, চোখে মাথায় চুলটা হাল্কা লাল রঙ করা পনিটেল করে বাধা, মুখে সবসময় একটা গাম্ভীর্য, অনেকদিন পরে নিজের শহরে নিজের বাড়িতে ফিরছে সে তবুও তার মুখে হাসি নেই।
বিমানবন্দরে প্লেন ল্যাণ্ড করলে পরে যুবতীটি চেকিংএর ফর্মালিটি শেষ করে বাইরে বেরিয়ে এল যেখানে তার জন্য নীল গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির ড্রাইভার তাকে দেখে বললো: ওয়েলকাম ম্যাডাম
যুবতী: থ্যাংক ইউ
ড্রাইভার লাগেজগুলো গাড়ির পিছনে ঢুকিয়ে দিল আর যুবতীটি গাড়ির ব্যাকসিটে উঠলো, তারপর ড্রাইভার সামনে স্টিয়ারিং এ বসে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করলো "বাড়ি তো ম্যাডাম?"
যুবতীটি: হুম।
ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট করলো।
একটু ভুল হলেই চাকরদের কড়া বকুনি দিচ্ছেন বৈশালী দেবী, মাঝে মাঝে কিচেনে গিয়ে দেখছেন রান্না ঠিক ঠাক হচ্ছে কি না, আজ যে তার মেয়ে আসছে, কত বছর পরে ,মেয়ের প্লেন ল্যাণ্ড করে গেছে অনেকক্ষণ আগেই বাড়ির ড্রাইভার ফোন করে জানিয়েছিল, যখন তখন চলে আসবে, হটাৎ হাক পাড়লেন "বৌমা"
এক যুবতী তার সামনে এসে নতমস্তকে দাঁড়ালো, বৈশালী দেবী বললেন: সব ব্যবস্থা হয়েছে? ও কিন্তু এক্ষুনি চলে আসবে, নাকি নিজের কোনো পার্টিতে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত?
যুবতী: হয়েছে মা, আপনি একটু দেখে নিন। ইনি বৈশালী দেবীর ছেলে রকির ব‌উ বিদিশা, ব্যবস্থা দেখে বৈশালী দেবী খুশী হলেও মুখে প্রকাশ করলেন না, বললেন: আরতির থালা সাজানো হয়েছে?
বিদিশা: হয়েছে মা।
[HIDE]


এমন সময় কলিং বেল বাজার আওয়াজ, বৈশালী দেবী বিদিশাকে বলেন: যাও আরতির থালা নিয়ে এসো, একজন চাকর দরজা খোলে এবং দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন তিনিই তাথৈ তার জন্যই এত আয়োজন তাথৈ ঘরে তিনি ঢুকতে গিয়েই বাধা পায় সামনে বৈশালী দেবী দাঁড়িয়ে আছেন হাতে একটা থালায় জ্বলন্ত প্রদীপ আর কিছু ধান-দুব্বো নিয়ে।
বৈশালী দেবী তাথৈএর আরতি করেন তারপর বলেন : আয় এবার ভিতরে আয় মা।
তাথৈ ঘরে ঢুকে মহিলার পা ছুঁয়ে প্রণাম করেন, মহিলা আশীর্বাদ করেন "সুখে থাক মা, দীর্ঘজীবী হ"
তাথৈ: তুমি কেমন আছো পিসি?
বৈশালী দেবী: আমার মেয়ে চলে এসেছে, আর কিভাবে খারাপ থাকবো?
বলে তাথৈকে বুকে জড়িয়ে আদর করতে থাকেন। তারপর খোশগল্প চলতে থাকে
তাথৈ: বাপি কোথায়? আর মা? আর জ্যেঠুমণি-বড়মা?
বৈশালী দেবী উত্তর দেবার আগেই দরজার বাইরে থেকে সমবেত কণ্ঠস্বর ভেসে আসে এইতো আমরা, আমাদের তাথৈ মার জন্য গিফ্ট নিতে গিয়েছিলাম। তাথৈ এবার একে একে সবাইকে প্রণাম করে তারপর বলে কি গিফ্ট?
দুজন পুরুষের‌ই গলায় মোটা সোনার চেন, পুরুষ্ট গোঁফ হাতের আঙ্গুল জুড়ে সোনার আংটি মাথায় কাচাপাকা মেশানো চুল, যিনি বয়সে বড়ো তার মুখ ঔদ্ধত্য ফুটে বেরোচ্ছে তিনিই যে বীরেন ভট্টাচার্য সেটা আর বলে দিতে হয় না, তিনি বলেন: তার জন্য তো বাইরে আসতে হবে, এসো বাইরে এসো।
সবাই বাইরে যায় গিয়ে দেখে বাড়ির গেটের বাইরে আরো একটা নতুন কেনা সিলভার রঙের গাড়ি দাঁড়িয়ে
তাথৈ: এটা আমার জন্য?
বীরেন বাবু: একদম, এটা শুধু আমার তাথৈ মার জন্য।
তাথৈ আনন্দে লোকটির গলা জড়িয়ে ধরে "থ্যাংক ইউ জ্যেঠুমণি"।
সন্ধ্যাবেলায় তাথৈ একটা ফোন করে "হ্যালো, মিস্টার গুপ্ত?
ফোনের অপর প্রান্তে: বলুন ম্যাডাম
তাথৈ: আপনার সাথে দেখা করতে চাই, আধঘন্টার মধ্যে আপনার অফিসে আসছি
ফোনের অপর প্রান্তে:ঠিক আছে ম্যাডাম
মিস্টার গুপ্ত নামক ভদ্রলোকের অফিসে টেবিলের একদিকের চেয়ারে স্যুট-বুট পড়া ব্যাক্তি অর্থাৎ মিস্টার গুপ্ত বসে আছেন আর অপর দিকের একটা চেয়ারে তাথৈ বসে আছে।
মিস্টার গুপ্ত: এবার বলুন ম্যাডাম?
তাথৈ: আপনাকে যে কাজটা দিয়েছিলাম করেছেন?
মিস্টার গুপ্ত: হ্যাঁ
তাথৈ: খোঁজ পেয়েছেন?
মিস্টার গুপ্ত: না, ম্যাডাম, ওদের এক আত্মীয় থাকে আপনার জ্যেঠুর খুব পরিচিত তারা তাদের কাছেও গিয়েছিলাম কিন্তু তারা তো শুনে আকাশ থেকে পড়লেন বললেন ওরা তো বহুবছর আগে এক দুর্ঘটনায় সবাই মারা গেছে।
তাথৈ হতভম্ব হয়ে গেল বললো: সবাই মারা গেছে? কিভাবে?
মিস্টার গুপ্ত: বললাম যে একটা দুর্ঘটনায়, কি দুর্ঘটনা সেটা অবশ্যি বললেন না তারা।
তাথৈ: ওই আত্মীয়ের কাছে ছেলেটির কোনো ছবি আছে?
মিস্টার গুপ্ত: সেই ছোটোবেলার একটা ছবি পেয়েছি
তাথৈ: দিন
মিস্টার গুপ্ত তাথৈকে একটা ছবিটা দিল
তাথৈ: ধন্যবাদ, আপনার পেমেন্ট আপনি পেয়ে যাবেন আর এই ব্যাপারে যেন আর কেউ না জানে
মিস্টার গুপ্ত: ঠিক আছে ম্যাডাম, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ম্যাডাম?
তাথৈ: কি?
মিস্টার গুপ্ত: ছেলেটি কি বিশেষ কেউ?
এবারে জ্বলে উঠলো তাথৈ: সে কৈফিয়ত আপনাকে দিতে আমি বাধ্য ন‌ই, আপনার অ্যাকাউন্টে টাকা চলে যাবে আর এই সম্বন্ধে কেউ যেন কিছু না জানে।






[/HIDE]
 
[HIDE]

কোথায় গিয়েছিলি তুই?" ঘরে ঢুকতেই প্রশ্নটা করেন বৈশালী দেবী উদ্দেশ্য তাথৈ
তাথৈ উত্তর দিল: একটু বেরিয়েছিলাম
বৈশালী দেবী: কোথায়?
তাথৈ: একটু শহর দেখতে
বৈশালী দেবী: ঠিক আছে বলবিনা যখন আর কি বলবো, আমি তো আর মা ন‌ই, যে আমাকে সব কথা বলবি
তাথৈ (একটু রাগের সাথে): পিসি, বলেছি না এসব কথা কখনো বলবে না, এসব কথা আমার পছন্দ নয়
বৈশালী দেবী: তাহলে বল কোথায় গিয়েছিলি?
তাথৈ: বললাম তো একটু ঘুরতে। বলে আর প্রশ্ন করার অবকাশ না দিয়ে উপরে চলে এল, উপরে নিজের রুমে এসে বিছানায় বসে তাথৈ ছবিটি খুলে দেখে, একজন কিশোরের ছবি, ফর্মাল শার্ট প্যান্ট পরা, শার্টের হাতা দুটো কবজির একটু উপর পর্যন্ত গোটানো, গলার কাছে শার্টের একদম উপরের একটা বোতাম খোলা, পায়ে বুট, চোখে সানগ্লাস, হাতে একটা ঘড়ি একটা ব্যাগ একটা কাঁধ থেকে পিছনে ঝুলছে, ছেলেটি হাঁটছে পাশের দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখছে, ছেলেটি হাঁটছে বা ওই ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে আছে তখনই তোলা হয়েছে ছবিটা।
তাথৈ একদৃষ্টিতে অনেকক্ষণ দেখতে থাকে ছবির কিশোরটিকে, চোখ ঝাপসা হয়ে আসে মনে মনে ভাবে "তাহলে কি সত্যিই সে হারিয়ে ফেললো অভয়কে?" ছবিটি দেখতে দেখতে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে চোখ থেকে, কিছুক্ষণের জন্য তাথৈ ফিরে গেল তার ছোটোবেলায় স্কুল জীবনে যখন একটা ছেলে রোজ‌ই দূর থেকে তাকে লক্ষ্য করতো, কাছে আসতো না কিন্তু লক্ষ্য করতো তারপর ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব হলো, নাম জানলো ছেলেটার নাম অভয়, খুব ভালো লাগতো তাথৈ এর অভয়ের সাথে থাকতে ওর সাথে ছুটির পরে ঘুরতে, একদিন ঘুরতে ঘুরতে দুজনে পাড়ার এক শিব মন্দিরের পিছনে গিয়েছিল জায়গাটা দিনের বেলাতেও অন্ধকার থাকে ঘন গাছপালার জন্য, অন্ধকারে ছোটো থেকেই ভয় তাথৈ এর সেদিন ও মন্দিরের পিছনে গাছপালার অন্ধকারেও ভয় পাচ্ছিল সেটা বুঝেছিল তার সঙ্গীটি তার হাত ধরে বললো "ভয় নেই, আমি আছি তো",..
"তাথৈ এই তাথৈ" হটাৎ সম্বিত ফিরে পেল তাথৈ বৃষ্টি এসেছে তার বন্ধু তার দিদি বৃষ্টি। তাড়াতাড়ি ছবিটা নিজের ব্যাগে লুকিয়ে রাখলো তাথৈ। ঘরে ঢুকলো আরো একজন তন্বী যুবতী বয়স তাথৈ এর মতোই তবে কথাবার্তায় তাথৈ এর উল্টো, তাথৈ এর কথাবার্তা ভদ্র মার্জিত কিন্তু এর কথার প্রতিটা স্বরে অহংকার ফুটে বেরোয় এর‌ই নাম বৃষ্টি, পরনে একটা টপ আর হট প্যান্ট, স্তনদুটো যেন টপ ফেটে বেরোতে চাইছে কিন্তু পারছে না।
দুই বোন একে অপরকে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরলো তারপর তাথৈ বললো: কি রে কোথায় ছিলি? আমাকে আনতেও যাসনি,এসেও এতক্ষণ পরে দেখা দিলি
বৃষ্টি: ওই একটু কাজ ছিল
কি কাজ?
তোর জন্য গিফ্ট আনতে গিয়েছিলাম
কি?
"এই দেখ" বলে বৃষ্টি তাথৈকে একটা প্যাকেট দিল, বললো: এটা কাল পড়বি।
কাল কি আছে?
আরে ড্যাডি তোর আসার জন্য মন্দিরে পূজো রেখেছে,
জ্যেঠুমণি সত্যিই পারে বটে
তুই ড্যাডির লাডলি আর আমি কাকাইয়ের
দুজনেই হাসতে লাগলো

গভীর রাত, কিন্তু রাতের অন্ধকার দূর হয়ে গেছে আগুনের লেলিহান শিখায়, আগুন লেগেছে, বাইরে কিছু লোকের পৈশাচিক উল্লাস তাদেরই একজন বললো "দেখিস যেন কেউ বাঁচতে না পারে, সবকটাকে একসাথে পুড়িয়ে মারবো আজ, আমার সাথে লাগতে আসা, আমাকে অপমান করা" লাগা আগুন, আগুন দাউদাউ করে জ্বলছে সাথে লোকগুলোর অট্টহাসি...
ঘুম ভেঙে চমকে উঠলো এআরসি, একটা বিশ্রী স্বপ্ন দেখেছে সে, কপালে ঘাম জমে গেছে, এই একটা দুঃস্বপ্ন বিগত ১৫ বছর ধরে নিয়মিত দেখে আসছে সে, কিছুতেই এই স্বপ্ন পিছু ছাড়ছে না, হয়তো সে নিজেই পিছু ছাড়াতে চাইছে না।
সে হাতঘড়ি দেখলো তখনও সকাল হতে কিছু দেরী আছে, সে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো, বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল তারপর ট্রেনিং রুমে ঢুকলো প্রথমে কিছু ফ্রি হ্যাণ্ড এক্সারসাইজ, তারপর কিছু যোগ-ব্যায়াম আর শেষে মার্শাল আর্ট প্র্যাকটিস, তারপর স্নান করে ব্রেকফাস্ট করে অফিস এটা তার রোজকার রুটিন, শহরের তো বটেই দেশের বড়ো ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টদের একজন এআরসি, বাণিজ্য নগরীর তো বটেই দেশের সবথেকে ইয়ং বিজনেস টাইক্যুন, টাকার অভাব তো নেই তার সাথে সমাজে বেশ কিছুটা প্রভাব প্রতিপত্তি আছে, কিন্তু তাও যেন কিছু আছে যেটা এখনো তার পাওয়া বাকি, সেটার জন্যই সে ছুটে চলেছে।
ওয়ার্ক‌আউট শেষে বাথ নিয়ে ব্রেকফাস্ট টেবিলে এসে বসলো, বাড়ির পরিচারক-পরিচারিকারা পরিবেশন করছে, খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলো: মা কোথায়?
একজন পরিচারকের উত্তর: ম্যাডাম পূজোয় বসেছেন।
এআরসি: শোনো আমি কিছুদিনের জন্য শহরের বাইরে যাচ্ছি, মায়ের খেয়াল রাখবে তোমরা আর কোনো দরকার বা অসুবিধা হলে আমাকে ফোন করবে, ঠিক আছে? আর মাকে ওষুধপত্র যেন ঠিকঠাক খাওয়ানো হয়।
"এত‌ই যদি মায়ের জন্য চিন্তা তাহলে এবার একটা ব‌উ নিয়ে আয় ঘরে" কথাটা এলো ঠাকুরঘরের দরজার দিক থেকে, এক মহিলা হাতে থালায় কিছু নিয়ে আসছেন।
এআরসি: তোমার পূজো হয়েছে? তো এবার খাবে এসো।
মা: আগে মাথাটা এদিকে আন,ঠাকুরের আরতি নে আর টিকা লাগা
"তুমি জানো আমি এসব বিশ্বাস করি না, তুমি করো তাই আমি তোমার জন্য ঠাকুরঘর বানিয়ে দিয়েছি, আমাকে এর মধ্যে জড়িও না" গম্ভীর গলায় বলে এআরসি।



মহিলা তাও ছেলের মাথায় প্রদীপের আরতি দিয়ে কপালে টিকা পড়িয়ে দেন, তারপর বলেন: কোথায় যাচ্ছিস তুই?
একটু কাজ আছে, কদিনের জন্য শহরের বাইরে যাচ্ছি ব্যাবসার জন্য তবে তোমার চিন্তা নেই কোনো দরকার পড়লেই ফোন করবে চলে আসবো।
খালি কাজ আর কাজ এবার একটু নিজের কথা ভাব কতবার বলেছি বিয়ে কর কিন্তু তুই..
মা তোমাকে বলেছি না..
কথা শেষ করতে দেন না মহিলা বলেন: তোর অফিসে তো অনেক মেয়ে কাউকে তোর পছন্দ হয়না? হলে নিয়ে আয় বাড়িতে একদিন
গুরুগম্ভীর গলায় উত্তর আসে: মা তোমাকে কতবার বলেছি না এইসব বিয়ের প্ল্যান এই মুহূর্তে আমার নেই।
তোর বাবার কত ইচ্ছা ছিল ছেলের বিয়ে দেবেন, নাতি-নাতনীদের সাথে খেলা করবেন কিন্তু.. কথা শেষ করতে পারেন না মহিলা চোখে জল চলে আস, আঁচলের খুট দিয়ে চোখ মোছেন। এআরসি নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে মায়ের কাছে গিয়ে মায়ের মাথাটা নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে, কিন্তু তার চোয়াল কঠিন হয়ে যায় যেন নিজেই কোনো কাজ সম্পন্ন করার প্রতিজ্ঞা করে। তারপর নরম গলায় মাকে বলে: তুমি সাবধানে থাকবে, ওরা সবাই থাকবে তোমার দেখাশোনা করার জন্য।
মা: আমাকেও নিয়ে চল তোর সাথে
এবার নয়,এবার আমাকে একাই যেতে হবে।
কখন বেরোবি?
কাল সকালে, আজ কয়েকটা মিটিং আছে সেগুলো সেরে নিয়ে কাল বেরোবো
কবে ফিরবি?
ঠিক নেই, চেষ্টা করবো তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে ফিরতে।
বাণিজ্য নগরীর এক বহুতল অফিস, এআরসি এর অফিস কনফারেন্স রুমে মিটিং চলছে, বেশ কিছুক্ষণ পরে মিটিং শেষে কনফারেন্স রুম খালি হলো শুধু রয়ে গেলেন এআরসি তার পিএ ও একজন এমপ্লয়ী।



[/HIDE]
 
[HIDE]

একটা ফাইল চেক করে দরকার মতো স‌ই করতে করতে এআরসি কথা বললো: শুনুন আমি কিছুদিনের জন্য বিজনেস পারপাসে শহরের বাইরে যাচ্ছি, কবে ফিরবো কিছু ঠিক নেই আমি যতদিন না আসছি কোনো ডিলের কনফার্মেশন করবেন না, আর মিটিংগুলো সব পোস্টপোন করুন নিতান্তই যদি না করা যায় তাহলে বলবেন আমি ভিডিও কলে আমি জয়েন করবো ঠিক আছে?
রুমে উপস্থিত বাকি দুজনে ঘাড় নেড়ে বললো: ঠিক আছে স্যার
আর যদি কোনো দরকার মনে করেন তো তৎক্ষণাৎ আমাকে ফোন করবেন, মনে থাকবে?
ওকে স্যার।
আর একটা কথা অফিসের সবাইকে একটা ব্রিফিংয়ে ডাকুন আমি কথা বলবো।
ব্রিফিংয়ে অফিসের সবাইকেই মোটামুটি এক‌ই কথা বললো এ‌আরসি, অফিসের সবাই জানে যে যেকোনো দরকারেই তাদের বস তাদের পাশে থাকে তারাও বসের প্রতি বিশ্বস্ত থাকে, তাই অফিস ছেড়ে কদিনের জন্য বাইরে যেতে বেশি ভাবতে হয় না এআরসিকে।

শহরের একটা ঘিঞ্জি এলাকা, যেখানে মূলত ছোটো বড়ো অপরাধীরা থাকে, গুণ্ডা-মস্তানদের এলাকা এখানেই একটা ছোটো ঘরে কয়েকজন বসে তাস পেটাচ্ছে সামনে কয়েকটা কাঁচের বোতল রাখা আর কয়েকটা গ্লাস। একমনে তাস খেলছে, কয়েকজন দেখছে আর মাঝে মাঝে টিপ্পনী কাটছে, হটাৎ একজনের মোবাইল বেজে উঠলো নাম্বারটা দেখে যেন চমকে উঠলো শহরের নামকরা মাস্তান উসমান, রিসিভ করে কানে দিল ফোন "হ্যালো, আদাব সার"
আদাব উসমান
বলুন কি হুকুম?
হুকুম এবার থেকে বস দেবেন
বস? যেন অবাক হলো উসমান
হ্যাঁ, তিনি শহরে এসে গেছেন, তোমার ওখানে আসছেন যে কোনো সময় পৌঁছে যাবেন, তৈরী হ‌ও আমরা আসছি
কি বলছেন? বস এখানে? হটাৎ?
সেটা নাহয় তাকেই জিজ্ঞেস করো,
থতমত খায় উসমান না না ঠিক আছে, কিন্তু...
কথা আর শেষ হলোনা ফোন কেটে গেছে, বাকি সাথীরা খেলা বন্ধ করে অবাক হয়ে তাদের নেতার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, নেতার মুখে এখন স্পষ্ট ভয়ের ছাপ
একজন জিজ্ঞেস করলো: কি হলো ভাইজান?
উসমান একটা ঢোঁক গিলে উত্তর দিলো: এগুলো সব সরিয়ে ফেল, বস আসছেন।
এই একটা কথাতেই ভয়টা সবার মধ্যে সঞ্চারিত হলো তারা কিছুক্ষণ একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে র‌ইলো তারপর তাড়াতাড়ি উঠে সবকিছু সরিয়ে ফেললো। খানিক পরেই ওই ছোট্ট ঘরটাতে দুজন লোক ঢুকলো তার মধ্যে যিনি লিডার গোছের তিনি বয়সে যুবক, তার পরনে কালো জ্যাকেট কালো জিন্স, পায়ে কালো বুট, চোখে কালো গগলস্, নাকের একটু উপর থেকে গলা পর্যন্ত একটা রুমাল দিয়ে বেঁধে ঢাকা আছে, উসমান তাদের দেখে বললো: সেলাম বস, সেলাম ভাইজান আসুন
আগন্তুক দুজন ভিতরে ঢুকলো, লিডার যুবকটি ঢুকে একবার সবার দিকে তাকিয়ে দেখলো তারপর নিজের সঙ্গীর উদ্দেশ্যে বললো "ইনফরমেশন জোগাড় করতে বলেছিলাম, হয়েছে আমির?"
লিডারটির সাথে যিনি এসেছিলেন তিনি বললেন: ভিতরে চলো, বলে দুজন ভিতরে ঢুকলো ছোটো ঘরটার ভিতরের দিকে আরো একটা দরজা আছে সেটা খুলে ভিতরের অন্য আরেকটা ঘরে সবাই ঢুকলো, বাইরের দরজাটা একজন বন্ধ করে দিল, এই ঘরটা আগেরটার থেকে তুলনামূলকভাবে বড়ো একদিকের দেয়ালে সাদা পর্দা আছে আর সামনে টেবিলে প্রজেক্টার, উল্টোদিকের একটা চেয়ারে লিডার যুবকটি বসলো বললো: এবার বলো কি খবর জোগাড় করেছো তোমরা?
প্রজেক্টার চালু হলো,সামনের পর্দায় ছবি ফুটে উঠলো এরপর অনেকক্ষণ ধরে পর্দায় কখনো কিছু পুরুষের, কখনো কিছু মহিলার কখনো কিছু মেয়েদের আবার কখনো কয়েকটা বাড়ির ছবি ভেসে উঠতে লাগলো আর তার সম্পর্কে জানতে লাগলো লিডার যুবকটি।


এই কজন ছাড়া কয়েকজনের সম্পর্কে জানতে বলেছিলাম
হ্যাঁ, সেটাও হয়েছে
পর্দায় এবার পরপর একজন পুরুষ একজন মহিলা আরেকজন যুবকের ছবি ভেসে উঠলো এবং আমির নামের লোকটি তাদের সম্পর্কে বলে যেতে লাগলো
এই দুজন স্বামী-স্ত্রী আর ইনি এনাদের ছেলে, স্বামী-স্ত্রী বহুবছর আগে মহিলার কোনো এক দূর সম্পর্কের দাদার আশ্রয়ে এসেছিলেন কিন্তু একটা দুর্ঘটনায় ওই দাদা আর তার পুরো পরিবার মারা যায় তারপর কিছুদিনের জন্য এনাদের অবস্থা ফিরে যায়, কিন্তু বর্তমানে লোকটির মদ আর জুয়ার অভ্যাসের জন্য আবার পুরনো অবস্থায় ফিরে এসেছে।
আর ওনাদের ওই ছেলে?
ও বাপের চেয়ে দু কাঠি উপরে মদ-জুয়ার সাথে ড্রাগস আর মেয়েদের অভ্যাস‌ও আছে, আরেকটা খবর আছে বস
বলো
শোনা যায় এই মহিলা নাকি ওই নেতার..
কি?
মানে..
রক্ষিতা?
হ্যাঁ, বস এবং সেটা এখনও
ওনার ছেলে আর স্বামী জানেন?
ছেলে জানেন কি না শিওর ন‌ই তবে স্বামী হয়তো জানেন নাহলে ওর মদ আর জুয়ার টাকা আসবে কোথা থেকে? আর ছেলেটি অবশ্য এখন ওই নেতার ভাগ্নে রকির গ্ৰুপ জয়েন করেছে, ওদের সাথেই থাকে।
গুড, তবে ইনফরমেশন জোগাড় ছাড়া আরও কিছু কাজ বলেছিলাম
এবার উসমান উত্তর দিল: হয়েছে বস, এই শহরে এই এলাকার মতো আরো এলাকা আছে যেখানে আমাদের মতো ছেলেরা থাকে যাদের ওই বড়ো বড়ো উঁচু মহলের লোকজন ব্যাবহার করে ছুঁড়ে ফেলে দেয় তারা এবার থেকে আপনার হয়ে কাজ করবে।
তারা বিশ্বস্ত? তোমার কি মনে হয়?
সেটা তো ঠিক বলা মুশকিল
আর তোমার নিজের লোকজন?
ওরা পুরো বিশ্বস্ত স্যার কেউ নেমকহারামি করবে না
আর করলে কি হতে পারে সেটাও নিশ্চয়ই বলে দিয়েছো?
দিয়েছি স্যার
আমির.. লিডার যুবকটি তার সঙ্গীকে কিছু একটা ইশারা করলো, আমির নামের লোকটি দুটো টাকার বাণ্ডিল উসমানের হাতে দিল এবার আবার লিডার যুবকটি বললো "শোনো উসমান তোমার দলের প্রতিটা লোক যেমন খবর জোগাড় করছে তেমনি করে যাবে ওই লোকগুলোর প্রতিটা পদক্ষেপের খবর আমার চাই কার সাথে দেখা করছে কি করতে চাইছে, ওদের ব্যাবসা, ওদের বাড়িতে কে কে আসছে সব বুঝেছো?
উসমান: বুঝেছি বস আর চিন্তা করবেন না ওই বাড়িতে আমাদের লোক আছে সব খবর আপনি পাবেন।
-গুড।
এবার আমির নামের লোকটি বললো: আগামীকাল মন্দিরে পূজো দিতে আসবেন সপরিবারে, যদি হুকুম করো তো ওখানেই সবকটাকে..
লিডার যুবকটি: না, এত সহজে যদি ওকে মারতে হতো তাহলে আমার এখানে আসার দরকার‌ই বা কি ছিল? তোমার কি মনে হয়? আমি এখানে না এসে ওকে খতম করাতে পারতাম না?
আমি: তা নয় বস
লিডার যুবক: ওকে আমি এত সহজে মারবো না, তিলে তিলে একটু একটু করে শেষ করবো, ওর থেকে সবকিছু কেড়ে নেবো
কিন্তু স্যার লোকটার ক্ষমতা অনেক এখন আবার মণ্ত্রীও হয়েছে, পুলিশের উঁচু কর্তারা ওর হাতের মুঠোয়
সেইজন্যই তো বলছি, ওর থেকে ওর সব ক্ষমতা অধিকার কেড়ে নেবো ওর সম্মান ধূলোয় মিশিয়ে দেবো। তারপর নিজেই রিমোট দিয়ে ছবি ঘুরিয়ে একটা ছবি পর্দায় আনে যুবকটি সামনের স্ক্রিনের উপর ওঠা প্রৌড় লোকের ছবির দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললো যুবকটি, তারপর নিজের মনে মনে বললো: বীরেন ভট্টাচার্য নিজের বাকি দিনগুলো আনন্দ করে নাও পরিবারের সাথে, তোমার অন্তিম সময় ঘনিয়ে এসেছে, তোমার অতীতের কুকীর্তির সব হিসাব নেওয়ার জন্য তোমার অতীতের অন্ধকার থেকে উঠে এসেছি আমি।


[/HIDE]
 
[HIDE]

বড়ো শিবমন্দির, পূজোর আয়োজন হচ্ছে, বাইরে লোকের ভিড় তার মাঝে সিকিউরিটি গার্ডদের কড়া নজর, শহরের নামকরা ব্যাক্তি বীরেন ভট্টাচার্য আসছেন সাথে আসছেন তার ভাই ধীরেন ,দুই ভাইয়ের দুই স্ত্রী এবং দুই ভাইয়ের বড়ো দিদি বৈশালী দেবী আর দুই ভাইয়ের দুই মেয়ে বৃষ্টি ও তাথৈ।

বীরেন ভট্টাচার্য শহরের একজন গণ্যমাণ্য ব্যাক্তি, শুধু যে একজন বড়ো বিজনেসম্যান তাই নয়, বর্তমানে ভোটে জিতে মণ্ত্রীও হয়েছেন, শহরের লোক তাকে যতটা সম্মান করে তার থেকে বেশি ভয় করে, তিনি যেখানে থাকেন সেখানে সবাই তাকে যমের মতো ভয় পায়, সবাই জানে বীরেন ভট্টাচার্যের বিরোধিতা করা মানে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনা, সহজে কেউ তাকে ঘাটায় না কারণ বীরেন ভট্টাচার্য যার পিছনে লাগেন তাকে একেবারে মাটিতে মিশিয়ে দেন।
মন্দির চত্বরে তার গাড়ি আসতেই লোকজন ভয়ে সরে যায়, জায়গা ছেড়ে দেয়, তার পিছনে আরো কয়েকটা গাড়ি প্রথমে কয়েকজন বডিগার্ড নেমে এলাকাটা ভালোভাবে পরখ করে নেয় তারপর একে একে বীরেন ভট্টাচার্য ও তার পরিবারের লোকজন নেমে আসে এবং মন্দিরের দিকে এগিয়ে যায়।
মন্দিরের ভিতরে যতক্ষণ ভট্টাচার্য পরিবার থাকবে ততক্ষণ অন্যান্য সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ, তবুও লোকজন দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে পূজো শেষে আজ বীরেন ভট্টাচার্যের ভাইঝি তাথৈ নিজে হাতে সবাইকে প্রসাদ বিতরণ করবেন। অনেক নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে তারাই ভিড় নিয়ণ্ত্রন করছে।
পূজো শুরু হয়েছে একে একে ভট্টাচার্য পরিবারের সবাই শিব লিঙ্গের উপর দুধ ঢালছে, ফুল-বেলপাতা দিচ্ছে এমন সময় নিরাপত্তারক্ষীদের টপকে এক শতছিন্ন কাপড় পরা, নোংরা উসখো-খুসকো চুল বোঝাই পাগলী গোছের মহিলা মন্দিরে উঠে এলো তারপর বিকট অট্টহাসি হাসতে লাগলো আর বলতে লাগলো "পূজো করে কিচ্ছু হবে না, তুই মরবি কেউ বাঁচাতে পারবে না" সবাই চমকে উঠলো
পাগলী আবার বলে উঠলো "যতই বাবার মাথায় জল ঢাল তোর পাপের ঘড়া পূর্ণ হয়েছে, তোর পাপের ক্ষমা নেই, তুই মরবি, তোর পরিবারের সবকটা পুরুষ মরবে" এটা এক সন্তান হারা মায়ের অভিশাপ, এইসময় নিরাপত্তারক্ষীরা দৌড়ে এল কিন্তু পাগলীকে ধরার আগেই সে দৌড়ে পালিয়ে গেল, বীরেন ভট্টাচার্য সহ উপস্থিত সবাই থতমত খেয়ে গেল।
পূজো শেষ হবার মুখে এমন সময় মন্দিরের গেটের কাছে কিছু গণ্ডগোলের আওয়াজ আসতে লাগলো, ধীরে ধীরে তা বাড়তে শুরু করে, পূজো শেষ করে উঠে দাঁড়ালেন বীরেন ভট্টাচার্য ,নিজের প্রধান বডিগার্ডকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে, বাইরে ঝামেলা কিসের?
উত্তরে বডিগার্ড বললো: বাইরে কয়েকজন সাধু গোছের লোক এসেছে, মন্দিরে ঢুকতে চায়, কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীরা বাধা দেওয়ায় তারা ঝামেলা করছে।
শুনে গেটের কাছে এগিয়ে গেলেন বীরেন ভট্টাচার্য, কিন্তু তিনি পৌঁছনোর আগেই নিরাপত্তারক্ষীর দল মারধর শুরু করেছে কয়েকজন সাধুর আঘাত লেগে রক্তপাত হচ্ছে, বীরেন ভট্টাচার্য এসে তাদের বললেন: আপনারা পরে ঢুকবেন এখন আমার পরিবার পূজো দিচ্ছে। কথার মাঝেই পুরো ভট্টাচার্য পরিবার গেটের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে, একজন সাধু ফুঁসে উঠলেন "বাবার মন্দিরে সবাই সমান আমরা এখনই ঢুকবো, আপনি পূজা সেরে নিন তারপর আমরা করবো"
বললাম তো এখন হবে না, চুপচাপ সরে যান নাহলে...
বীরেন ভট্টাচার্য... চিৎকার করে উঠলেন সেই সাধু খুব অহংকার হয়েছে না? মনে রেখো বেশি অহংকার পতনের মূল, তোমার‌ও পতনের সময় এসে গেছে সপরিবারে বিনাশ হবে, আর তোমার বিনাশ করবে যে সে আসছে... মৃত্যুর কোল থেকে মৃত্যুঞ্জয় হয়ে আসছে সে তোমার মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে, সমূলে বিনাশ হবে তুমি, আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তোমার শেষ সময় আসন্ন, আমার কথাটা মনে রেখো। এই বলে সেই সাধু তার সকল।সাধু সাথীদের নিয়ে মন্দির চত্ত্বর ছেড়ে চলে গেলেন।
বীরেন ভট্টাচার্য পরিবার সহ আবার মন্দিরের ভিতরে চলে এলেন, কিন্তু এখন আর কারো মুখে প্রসন্নতা নেই বিশেষ করে তিন মহিলার মুখে তাদের মুখে ভয়ের ছায়া স্পষ্ট, মন্দির চত্ত্বরে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।



পূজোর পরে প্রসাদ বিতরণ হচ্ছে বিতরণ করছে তাথৈ এবং বৃষ্টি দুই বোন, হঠাৎ তাথৈ দেখলো একটু দূরে সেই পাগলীটা দাঁড়িয়ে আছে যে খানিকক্ষণ আগে তার জ্যেঠুমণি কে শাপশাপান্ত করছিল, কিন্তু তাও সে কিছুটা প্রসাদ একটা শালপাতার থালায় নিয়ে এগিয়ে গেল পাগলীটার দিকে পাগলীটার কাছে গিয়ে বললো নাও খাও ঠাকুরের প্রসাদ, পাগলীটা যেন খুব খুশী হলো থালাটা হাতে নিয়ে তাথৈ এর দিকে তাকিয়ে বললো: তুই খুব ভালো, তুই খুব সুখী হবি খুউউব সুখী হবি কিন্তু তার আগে পাপীদের বিনাশ হবে
তারপর একটু থেমে আবার বললো: সে আসছে তোকে নিয়ে যেতে...
তাথৈ হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলো: কে আসছে আমাকে নিয়ে যেতে?
পাগলীটা আবার বললো: এলে চিনতে পারবি.. বলে আবার দৌড়ে পালিয়ে গেল।
তাথৈ একটু অবাক হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে র‌ইলো, কি বলে গেল পাগলীটা?
বীরেন ভট্টাচার্য ও তার পরিবার এখনো মন্দিরে আছেন সন্ধ্যা আরতি করে ফিরবেন নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন, বৈশালী দেবী বললেন: হ্যারে বীরেন তখন ওই পাগলী আর ওই সাধু কিসব বলে গেল?
বীরেন ভট্টাচার্য একটু বিরক্ত হলেন বললেন: তুমি এইসব নিয়ে বেকার চিন্তা করছো
বেকার চিন্তা নয় রে বীরেন অনেক সময় লোকের অভিশাপ লেগে যায়।
কিন্তু বীরেন ভট্টাচার্য কে ছোঁয়ার সাহস কোনো অভিশাপের হবে না বিশেষ করে এক পাগলী আর এক ভিখারী সাধুর অভিশাপ, তুমি নিশ্চিন্ত থাকো।
বৈশালী দেবী যদিও চুপ করে গেলেন কিন্তু তার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে যে চিন্তাটা যায়নি।
হটাৎ বীরেন ভট্টাচার্য বলে উঠলেন আরে তাথৈ মা কোথায় ধীরেন?
এবার সবাই খেয়াল করলো তাথৈ আশেপাশে কোথাও নেই বীরেন ভট্টাচার্য হাঁক পাড়লেন বৃষ্টি মা
বৃষ্টি তখন সেই মন্দিরে আসা তার বাবার বন্ধুদের ছেলেমেয়েদের সাথে গল্প করছিল, বাপের ডাক শুনে দৌড়ে এলো
ডাকছো ড্যাডি?
তাথৈ কোথায়?
তাথৈ তো এখানেই ছিল, আশেপাশেই আছে
মানে? কোথায় তাথৈ? এক্ষুনি ডেকে আনো আমার সামনে
আনছি ড্যাডি বলে বৃষ্টি উঠে তাথৈকে খুঁজতে চলে গেল।



[/HIDE]
 
[HIDE]

মন্দিরের পিছনে একটা বড়ো বাগান আছে আম জাম অশ্বথ্ব বট গাছে ভরা তার মধ্যে একটা বটগাছের কাছে বটগাছের গোঁড়ায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাথৈ তার দুচোখে জল, এত বছর পরেও গাছটা ঠিক চিনতে পেরেছে তাথৈ, এই গাছের তলাতেই সে আর অভয় বসে গল্প করতো তাথৈ অন্ধকারে ভয় পায় এটা বুঝতে পেরে এখানেই তার হাতদুটো ধরে বলেছিল "ভয় নেই আমি আছি তো"। তাথৈএর চোখ থেকে জল গাল বেয়ে পড়ছে "কেন চলে গেলে অভয়? কেন? কেন তোমার তাথৈকে একা রেখে চলে গেলে?"
হটাৎ তার মনে পরলো কিছুক্ষণ আগে পাগলীটার কথা "তুই সুখী হবি... সে আসছে তোকে নিয়ে যেতে"
কিন্তু তার সুখ তো অভয়ের সাথে.. তবে কি তবে কি অভয়...
হঠাৎ একটা পায়ের আওয়াজ কানে এলো তাথৈ এর, চমকিয়ে উঠলো সে চারদিকে দেখলো কিন্তু কাউকে দেখতে পারলো না কিন্তু শুনতে পারলো আওয়াজটা ক্রমেই তার দিকে এগিয়ে আসছে, এবার ভয় পেল তাথৈ বললো: কে? বৃষ্টি তুই?
কিন্তু কোনো উত্তর নেই, হটাৎ তাথৈ পিছন ফিরে দৌড়াতে গেল আর তখনই কিসে একটা হোঁচট খেল কিন্তু পরে গেল না পরে যাওয়ার আগেই একটা শক্ত হাত পিছন থেকে তার একটা হাত ধরে ফেললো.
অভয়... তাথৈ এর মুখ থেকে বেরিয়ে এল, যদিও সেটা এতটাই আস্তে যে অন্য কারো শুনতে পাওয়ার কথা নয়, সে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ঘুরে দেখলো একটা ছেলের দাঁড়িয়ে আছে তার হাতটা ধরে, ছেলেটির গায়ে কালো জ্যাকেট, জ্যাকেটের চেন খোলা এবং ভিতরে যে গেঞ্জিটা দেখা যাচ্ছে সেটাও কালো, সাথে কালো জিন্স, মাথায় টুপি, মুখটা নাকের একটু উপর থেকে গলা পর্যন্ত রুমাল দিয়ে বেঁধে ঢেকে রেখেছে, আর চোখে কালো গগলস্, তাথৈ বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে র‌ইলো ছেলেটির দিকে ছেলেটিও পাল্টা তাকিয়ে রয়েছে তার দিকে।
এবার ছেলেটা হাতটা ছেড়ে গম্ভীর স্বরে বললো "দেখে চলতে পারেন না এক্ষুনি তো পড়ে গিয়ে আঘাত পেতেন"
আপনার জন্যই তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম উত্তর দিল তাথৈ
আচ্ছা মেয়ে তো আপনি, আপনাকে পরে যাওয়া থেকে বাঁচালাম আর আপনি আমাকেই ব্লেম করছেন?
থ্যাংক ইউ
ওয়েলকাম। বলে ছেলেটি চলে যাচ্ছিল
আপনি কে? জিজ্ঞেস করলো তাথৈ
"বিপদ" দাঁড়িয়ে ঘুরে উত্তর দিল ছেলেটি
মানে?
আপনি‌ই তো বললেন যে আমার জন্য আপনি পরে যাচ্ছিলেন তার মানে আপনার জন্য তো আমি বিপদ
আসলে আপনার পায়ের আওয়াজ শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম
আপনি তো খুব স্পেশাল মেয়ে দেখছি কেউ বিপদের পায়ের আওয়াজ পায় না অথচ আপনি পেয়েছেন।
নিজেকে আমার বিপদ বলে নিজের‌ই বিপদ বাড়াচ্ছেন, আমার জ্যেঠুমণি কোনো বিপদকেই আমার কাছে পৌঁছাতে দেন না তার আগেই আমার থেকে দূরে সরিয়ে দেন।
ঠিক যেভাবে ওনার বিরুদ্ধে কথা বলা লোকেদের এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেন? ছেলেটির গলার স্বরে রাগ আর ঘৃণা ফুটে উঠলো।
তাথৈ একটা উত্তর দিতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগে মন্দিরের দিক থেকে বৃষ্টির "তাথৈ এই তাথৈ" ডাক শুনে সেদিকে তাকিয়ে দেখে বৃষ্টি আসছে, সে তাথৈ এর কাছে এসে বললো "কি রে তুই এখানে কি করছিস? ওদিকে ড্যাডি তোকে খুঁজছে"
তাথৈ বললো: এই যে দেখ না এই ছেলেটা... বলে ছেলেটাকে দেখাতে গিয়ে ফিরে তার কথা আটকে গেল, সেখানে কেউ নেই
বৃষ্টি আবার বলে: কি রে কি দেখছিস? কোন ছেলেটা?
কিছু না, চল।


শ্মশানে একটা চিতা জ্বলছে দাউদাউ করে, ইলেকট্রিক চুল্লিতে প্রচণ্ড ভিড় তাই কাঠের চুল্লিতেই জ্বালানো হয়েছে, এক পাগলী অ্যাকসিডেন্টে মারা গেছে, পাগলীটার তিনকূলে কেউ নেই তাই পুলিশ লাওয়ারিশ লাশ বলে চালিয়ে দিচ্ছিল কিন্তু হটাৎ কজন লোক এসে লাশটা দাবি করে প্রথমে দিতে না চাইলেও পরে দিতে বাধ্য হন ইনস্পেকটর সরকার কারণ উপর মহল থেকে অর্ডার এসেছিল,যদিও দিয়েও কোনো ক্ষতি হবে না তাই আর মাথা ঘামান নি, চিতা থেকে একটু দূরে কালো জ্যাকেট, কালো জিন্স পরা যুবকটি একদৃষ্টিতে চিতার লেলিহান শিখার দিকে তাকিয়ে ছিল তার চোখের কালো গগলসের কাঁচেও যেন আগুন লেগেছে, মুখে ইস্পাত কাঠিন্য।
হটাৎ তার পিছনে আরো একজন এসে দাঁড়ালো, সামনের ছেলেটা একটু ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো তারপর বললো: খোঁজ পেয়েছো আমির?
আমির: পেয়েছি, এই শ্মশানেই আপাতত আছেন কিন্তু ওনারা এখান থেকে যেতে চাইছেন না।
ঠিক আছে চলো,আমি গিয়ে কথা বলছি।
কিন্তু ওনাদের সামনে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? গতকাল‌ই ওনারা সবার সামনে বীরেন ভট্টাচার্যকে অভিশাপ দিয়েছেন।
সেইজন্যই যাওয়া দরকার আমির।

ঘাটের কাছে একটু ফাঁকা জায়গায় কয়েকজন সাধু বসে কলকে টানছিল, হটাৎ দুজন তাদের দিকে আসছিল একজন খানিকক্ষণ আগেই এসেছিল অপরজন নতুন, তাদের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে একজন সাধু বললেন: বলেছি না এখান থেকে আমরা যাবো না, শ্মশানঘাটটা তোদের একার না
নতুন আসা ছেলেটা সেই সাধুর সামনে বসে বললো: এই জায়গাটা যদি আমার হতো তবে এখান থেকে আপনাদের সরানোর ক্ষমতা কারো হতো না, কিন্তু এটা আমার নয় সেই জন্যই চলে যেতে বলছি।
ছেলেটার গলার স্বরে কিছু একটা ছিল যেটা সাধুটাকে অবাক করে, তিনি শান্ত স্বরে বললেন: এখান থেকে কেন যাবো? সবাইকেই তো এখানেই আসতে হবে।
ছেলেটা: ঠিক কিন্তু আপনাদের এখানে আসার সময় এখনো আসেনি আর আমি চাইনা সেটা এত তাড়াতাড়ি আসুক।
সাধু তাকিয়ে র‌ইলেন ছেলেটার দিকে
ছেলেটা আবার বললো: গতকাল আপনি একজনকে অভিশাপ দিয়েছেন,
সাধু: তাতে কি? ওই অহংকারী ওটার‌ই যোগ্য
ছেলেটা: আপনার একটু আগে আরো এক পাগলী তাকে এক‌ই অভিশাপ দিয়েছিল, ওই যে ওখানে তার চিতা জ্বলছে, ভেবে দেখুন সে একটা পাগলীকেও ছাড়ছে না।
সাধুজী একটু মৃদু হেসে বললেন: আমি বুঝতে পেরেছি তুই কে, তুই পারবি তুই সফল হবি ওই পাপীর পাপের সাম্রাজ্যের বিনাশ করতে
ছেলেটা: আমাকে সফল হতেই হবে, কিন্তু এবার আপনারা এখান থেকে চলে যান
সাধু: আমরা যাবো না আর তুই আমাদের চিন্তা ছেড়ে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যা
কিন্তু সাধুজী
কোনো কিন্তু না, আমাদের আশীর্বাদ তোর সাথে থাকবে কিন্তু একটা কথা মনে রাখবি রাক্ষসের বিনাশ করতে করতে নিজেই যেন ওর মতো আরেকটা রাক্ষস না হয়ে যাস।
মনে থাকবে সাধুজী। ছেলেটা উঠে চলে গেল।
পিছন থেকে ছেলেটার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দেখতে দেখতে সাধু অস্ফুটস্বরে: তোকে তো আসতেই হতো, তোর জন্যই তো সে অপেক্ষা করে আছে
পিছন থেকে আরেকটা সাধু বললো: কে গুরুদেব? কে ওই ছেলের জন্য অপেক্ষা করে আছে?
প্রধান সাধু: ভালোবাসা, যাকে উপেক্ষা করতে চাইলেও পারবে না ও, সেই ক্ষমতাই ওর নেই।
শ্মশানের বাইরে একটা কালো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে সেটার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে ছেলেটা তার সঙ্গীকে বললো: ওদের খোঁজ নিয়েছো?
আমির: নিয়েছি, ছজন ছিল ওরাই গাড়িতে পিষে গিয়েছিল ওই পাগলীকে
ওরা এখন কোথায়?
বীরেন ভট্টাচার্য একটা নতুন হোটেল তৈরী করছে তার‌ই কনস্ট্রাকশন সাইটে আছে
ঠিক আছে, বীরেন ভট্টাচার্যকে প্রথম ধাক্কা দেওয়ার সময় এসে গেছে। দুজন গাড়িতে উঠে বসতেই গাড়িটা স্টার্ট নিল।
একটা হোটেল তৈরির কাজ চলছে, তার‌ই কনস্ট্রাকশন সাইটে একটা কালো গাড়ি ঢুকলো আরো কয়েকটা গাড়িও এসে গেছে একটু আগে সেটা থেকে উসমান আর তার দলের বেশ কয়েকজন নেমে এসেছে এবার কালো গাড়িটা থেকে নামলো আমির এবং তার লিডার ছেলেটি
আমির: ওরা সব এখনো এখানেই আছে উসমান?
হ্যাঁ, ভাইজান সবকটা এখন মাতাল হয়ে আছে
"ভালো জায়গা বেছেছে ওরা" লিডার ছেলেটির মুখে একটু হাসি দেখা যায় তারপর আবার বলে "কোথায় আছে ওরা?
এইযে এইদিকে আসুন, উসমান পথ দেখিয়ে নিয়ে চলে। ততক্ষণে সন্ধ্যা পার হয়ে রাতের অন্ধকার নেমে এসেছে, হোটেলটি অনেকটা জমি জুড়ে হচ্ছে তাই আশেপাশের অনেকটা জায়গাই এখন সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ, কোথাও কোনো লোক নেই তার‌ই মাঝে অন্ধকারে কয়েকটা কালো ছায়ামূর্তি প্রেতের মতো এগিয়ে চলেছে তাদের শিকারের দিকে।
কনস্ট্রাকশন সাইটের একটা খোলা জায়গায় গোল হয়ে বসে আছে কয়েকটা লোক, মাঝে একটা এমার্জেন্সী লাইট জ্বলছে তার আলো খুব বেশি ছড়ায়নি, লোকগুলো একসাথে বসে মদ খাচ্ছে আর নিজেদের মধ্যে অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলছে, বোঝাই যাচ্ছে আজ ওদের মনে খুব ফূর্তি, ওদের‌ই একজন টলতে টলতে উঠে দাঁড়ালো
আড্ডার একজন জিজ্ঞেস করলো: কোথায় যাচ্ছিস?
উঠে যাওয়া লোকটা উত্তর দিল: একটু মুতে আসি। লোকটা টলতে টলতে চলে গেল বাকীরা আবার মদ্যপানে মজে র‌ইলো, ওদের থেকে একটু দূরে প্রস্রাব করতে গিয়ে ছিল প্যান্টের চেন সবে খুলেছে এমন সময় সামনে একটা কালো মূর্তি এসে দাঁড়ালো,



[/HIDE]
 
[HIDE]

এক‌ই সময় লোকটার পিছনেও একটা মূর্তি চলে এসেছে এবং মাতাল লোকটিকে কিছু বলার অবকাশ না দিয়েই পিছনের জন মাতাল লোকটির মুখ চেপে ধরেছে এবং সামনের জন দু-পায়ের মাঝে পুরুষাঙ্গে সজোড়ে লাথি মারে একটা। একটা গোঙানির আওয়াজ কানে আসে বাকি লোকগুলোর, মাতাল হলে কি হবে সঙ্গে সঙ্গে তারা সতর্ক হয়ে গেল, সবাই উঠে আলাদা আলাদা হয়ে নিজেদের সঙ্গীকে খুঁজতে লাগলো।
একটা একতলা বাড়ির সামনে একটা নীলরঙের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, গাড়ির নম্বর দেখে শহরের যে কেউ বলে দেবে যে এটা বীরেন ভট্টাচার্যের গাড়ি, আর বাড়িটা আসলে তার‌ই বাগানবাড়ি এখানে মাঝে মাঝেই রাতের দিকে মেয়েমানুষ নিয়ে ফূর্তি করতে আসেন বীরেন বাবু যেমন আজ এসেছেন, আজকের মেয়েমানুষটা আর কেউ নয় তার‌ই হয়ে কাজ করা একজনের ব‌উ।
বাগানবাড়ির ভিতরে একটা ঘরে বিছানায় শুয়ে আছেন মণি সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে, মণির বর্তমান বয়স ৪৫ বছরের আশেপাশে, শ্যামলা গায়ের রঙ, পেটে অল্প একটু চর্বি আছে, তিনি বিছানায় শুয়ে আছেন উপরে সিলিং থেকে ঝোলা ঘুরন্ত পাখার দিকে তাকিয়ে শরীরটা কাঁপছে কারণ তার শরীরের উপর উঠে তার যোনিতে নিজের পুরুষাঙ্গ ঢুকিয়ে রতিক্রিয়ায় ব্যস্ত বীরেন ভট্টাচার্য, বীরেন বাবুও সম্পূর্ণ নগ্ন, তার সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে তবুও তার থামার লক্ষণ নেই, বেশ কিছুক্ষণ পরে হটাৎ বীরেন বাবুর মুখ থেকে আরামদায়ক শব্দ বেরিয়ে এল এর একটু পরে তিনি মণির শরীরের উপর থেকে উঠে এলেন একটা জোড়ে নিঃশ্বাস ফেললেন তারপর নিজের পাজামা-স্যাণ্ডো গেঞ্জি পরে তার উপর একটা পাঞ্জাবী পরতে পরতে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন, মণি তখনও বিছানায় এক‌ই ভাবে হাত-পা ছড়িয়ে নগ্ন অবস্থায় শুয়ে আছে তার দু-চোখ থেকে জলের ধারা বয়ে গেল সে জানে এ তার পাপের শাস্তি, এ থেকে তার মুক্তি নেই যে পাপ সে করেছে আজ থেকে ১৫ বছর আগে, তার‌ই শাস্তি সে ভোগ করে চলেছে, মণির চোখে যেন তার অতীত জীবনের ঘটনা ভেসে উঠলো....
মদন মণিদের‌ই পাড়ার ছেলে, মণির সাথে মদনের পরিচয় ছিল ধীরে ধীরে তা প্রেমে পরিবর্তিত হয় যদিও মণির বাড়ি থেকে মদনকে মানতে চায়নি কারন এক তো মদন কি কাজ করে তা কেউ জানে না তার উপরে মদনের মদের অভ্যাস, কিন্তু মণি সেসব গ্ৰাহ্য করেনি, বাড়ির অমতে পালিয়ে বিয়ে করেছিল মদনকে, পালিয়ে এসেছিল দূর সম্পর্কের এক দাদার কাছে, আশ্রয় নেয় দাদার বাড়িতে,দাদা রুদ্র রায় চৌধুরী, বৌদি অমৃতা আর তাদের একমাত্র ছেলে অভয় এই তিনজন নিয়েই দাদার সংসার, দাদা-বৌদি দুজনেই ধার্মিক, সদাচারী এবং সাত্ত্বিক প্রকৃতির মানুষ, দাদা-বৌদি দুজনের মুখেই সবসময় হাসি লেগে থাকে কখনো অসৎ পথ হয়েছেন বা কখনো কাউকে ঠকিয়েছেন একথা তাদের অতি বড়ো নিন্দুকেও বলতে পারবে না, পরোপকারী সদা শান্ত মানুষটিকে পাড়ার সবাই পছন্দ করেন, আর পছন্দ করবেই না কেন সবাই জানে দরকারে যদি রুদ্রবাবুর কাছে যাও তো উনি সাধ্যমত সাহায্য করবেন, রুদ্রবাবু এবং ওনার স্ত্রী দুজনেই পরোপকারকে নিজেদের ধর্ম মনে করেন, এবং এই শিক্ষাই তারা তাদের একমাত্র ছেলে অভয়কেও দেন।
মা- বাবার মতো অভয়‌ও একজন সৎ চরিত্রের ছেলে, সজ্ঞানে কাউকে ঠকানোর কথা সে চিন্তাও করে না, বাবা-মার দেওয়া শিক্ষা সে সর্বদা মেনে চলতে চেষ্টা করে, অভয় যত বড়ো হতে লাগলো রুদ্রবাবু তার আচার ব্যবহার দেখে তত খুশী হতে থাকেন, তিনি বুঝতে পেরেছেন তার ছেলে মেধাবী হিসেবে অসাধারণ তো বটেই সাথে একজন মানুষের মতো মানুষ হচ্ছে।
বোনের পালিয়ে বিয়ে করা মন থেকে মেনে না নিলেও বোন আর ভগ্নিপতি কে তাড়িয়ে দেননি রুদ্র বাবু, কিছুদিন পরে দাদার বাড়ি ছেড়ে কিছুটা দূরে একটা বাড়ি ঠিক করে নিজেদের মতো থাকতে শুরু করে মণিরা, মদন একসময় এলাকার উঠতি প্রোমোটার বা গুণ্ডা বীরেন ভট্টাচার্যের সাথে কাজ করতে শুরু করে, এরপর মণির কোলে আসে তার আর মদনের ছেলে বিকি, ভালো ভাবেই দিন কাটছিল মণির, কিন্তু একসময় বীরেন বাবুর নজর পরে রুদ্রদার জমির উপর ওখানে তিনি প্রোমোটিং করে বিল্ডিং বানাতে চান, অনেক কষ্ট করে নিজের চেষ্টায় বেশ কিছুটা জমি কিনে তাতে একটা বাড়ি বানিয়ে পরিবার নিয়ে থাকতেন রুদ্রদাদা, বাড়ির চারিদিকে অনেক ফুল গাছ লাগিয়ে চমৎকার সাজিয়েছিলেন বৌদি, স্বভাবতই জমিটা বীরেন বাবুকে দিতে অস্বীকার করে রুদ্রদা ফলে বীরেন ভট্টাচার্য রেগে যায়, তারপর একরাতে মদন তাকে বলে বীরেন ভট্টাচার্য অনেক টাকা আর একটা ফ্ল্যাট দেবে বলেছে যদি তারা বীরেন ভট্টাচার্য কে সাহায্য করেন রুদ্র রায় চৌধুরী ও তার পরিবারকে খুন করতে, দু-পরিবারের মধ্যে খাবারের আদান-প্রদান ছিল‌ই, মণির কাজ ছিল এক রাতে খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে তিনজনকে খাইয়ে দেওয়া, প্রথমে রাজী না হলেও পরে টাকা আর ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে রাজী হয়ে যায় মণি, একরাতে কিছুটা পায়েস রান্না করে তাতে বিষটা মিশিয়ে দাদার বাড়িতে দিয়ে এসেছিল মণি, সেই তার শেষ দেখা দাদা-বোদি আর অভয়কে।


এরপর কথামতো টাকা আর একটা ফ্ল্যাট দিয়েছিল বীরেন ভট্টাচার্য কিন্তু সেই টাকা মদ আর জুয়ায় ওড়াতে সময় লাগেনি মদনের, একসময় ফ্ল্যাটটাও বিক্রি করে দিতে হয় এবং শেষে আবার হাত পাততে হয় বীরেন ভট্টাচার্যের কাছে তবে এবারও বিনিময়ে মদনের থেকে কিছু চেয়েছিল বীরেন ভট্টাচার্য, সে মণিকে ভোগ করতে চেয়েছিল বলাইবাহুল্য মদন রাজী হয়ে যায়, মণিকে মদন‌ই এই বাগানবাড়িতে নিয়ে এসে বীরেন ভট্টাচার্যের বিছানায় সঁপে দেয় সেই শুরু, সেই থেকে এত বছর ধরে মণিকে ভোগ করে আসছে বীরেন ভট্টাচার্য প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও ছেলে বিকির কথা ভেবে সহ্য করতো ধীরে ধীরে সয়ে যায় একবার তো পেটে বাচ্চাও চলে এসেছিল কিন্তু বীরেন বাবু শুধু যে বাচ্চাটা নষ্ট করেছিল তাই নয় ভবিষ্যতে যাতে এধরনের ঝামেলা না হয় তার পাকাপাকি ব্যাবস্থাও করেছিল, বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার কথাও ভেবেছে মণি কিন্তু ছেলে বিকির মুখটা মনে হতেই আর সাহস হয়নি, ছেলের মুখটা মন পড়তেই সম্বিত ফেরে মণির উঠে কাপড় পরে নেয়।
মণিকে ভোগ করার পরে বীরেন ভট্টাচার্য বেরিয়ে আসলেন বাইরে বসার ঘরে যেখানে এখন তার ড্রাইভার ও মদন বসে গ্লাসে মদের পেগ বানিয়ে খাচ্ছে, বীরেন বাবু ওদের পাশে বসলেনড্রাইভার কাম বিশ্বস্ত অনুচর জগা তাকেও একটা গ্লাসে পেগ বানিয়ে দিল, সেটা হাতে নিয়ে একটু চুমুক দিয়ে তৃপ্তিসূচক আওয়াজ করে বললেন: বুঝলে মদন, তোমার ভাগ্যটা ভালো এরকম একটা ব‌উ পেয়েছো আজ থেকে তো দেখছি না, কিন্তু এখনো স্বাদ একটুও কমেনি এক‌ইরকম আছে।
মদন নামের রোগা লোকটা নোংরা দাঁত বার করে যে হাসিটা দিল সেটা দেখে যে কেউ ঘেন্নায় মুখ ফিরিয়ে নেবে, মদন বললো: আজ্ঞে, আপনিই তো সব আপনি খুশি থাকলেই আমরা খুশি। এমন সময় বীরেন বাবুর মোবাইল বেজে উঠলো, ফোনটা কানে দিয়ে একটু পরেই গম্ভীর হয়ে গেলেন বীরেন বাবু ফোন রাখার আগে একটা মাত্র শব্দ বললেন তিনি "আসছি", তারপর জগাকে বললেন "এক্ষুনি বেরোতে হবে চল" জগা আর বীরেন বাবু উঠে চলে গেলেন, বীরেন বাবুর মুখ দেখে মদন আর কিছু জিজ্ঞেস করতে সাহস পেল না।


[/HIDE]
 
[HIDE]
সাধের হোটেলের কনস্ট্রাকশন সাইটে যখন পৌঁছালেন বীরেন ভট্টাচার্য তখন আর জায়গাটা ফাঁকা বা অন্ধকার কোনোটাই নেই, গাড়ি থেকে নামতেই এগিয়ে এলেন ভাই ধীরেন, তিনিই দাদাকে ফোন করে ডেকেছেন,গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই মিডিয়ায় লোকজন ঘিরে ধরলো "বীরেন বাবু আপনার সাইটে এরকম ঘটনা এবিষয়ে আপনার মতামত কি?" "বীরেন বাবু এবার কি হবে এই হোটেলের? এটা কি মাঝপথেই তৈরি হ‌ওয়া থেমে যাবে?" এরকম আরো প্রশ্নবাণ ঝেকে আসতে লাগলো কিন্তু ধীরেন বাবু কোনোমতে দাদাকে মিডিয়ায় আক্রমণ থেকে আগলিয়ে পুলিশের ঘেরাটোপের ভিতরে নিয়ে গেলেন, ভিতরে গিয়ে যা দেখলেন তাতে বীরেন বাবুর বুক একটু হলেও কেঁপে উঠলো, একটা জিপগাড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে যাওয়া অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে আর তার ভিতরে ছটা সম্পূর্ণ দগ্ধ হয়ে যাওয়া ডেডবডি, কেউ যেন প্রথমে ছটা লোককে জিপের ভিতরে বসিয়ে তারপর আগুন লাগিয়ে দিয়েছে, একটু ভালো করে লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে প্রত্যেকটা শরীরের মুখ বাধা এবং দুটো হাত পিছমোড়া করে বাধা।
মিডিয়াকে কে ডেকেছে? গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করলেন বীরেন ভট্টাচার্য
জানিনা, আমি যখন এলাম তখনই অলরেডি মিডিয়া এসে গেছে উত্তর দিলেন ধীরেন বাবু।
একজন পুলিশ অফিসার এগিয়ে এলেন বীরেন বাবুর দিকে বললেন: স্যার, পোড়ানোর আগে ছজনকে টর্চার করা হয়েছে আমরা বেশ কয়েকজায়গায় রক্তের দাগ পেয়েছি, খুব সম্ভবত প্রথমে পিটিয়ে তারপর জ্যান্ত অবস্থাতেই জিপে তুলে আগুন লাগানো হয়।
জ্যান্ত অবস্থাতেই? বললেন ধীরেন বাবু
খুব সম্ভবত তাই তানাহলে হাত-মুখ বাঁধার দরকার হতোনা উত্তর দেন পুলিশ অফিসারটি।
কিছু জানতে পারলেন কারা একাজ করেছে? জিজ্ঞেস করেন বীরেন বাবু,
না স্যার তবে আমরা তদন্ত শুরু করে দিয়েছি। নীচু স্বরে জবাব দেন পুলিশ অফিসারটি
এমন সময় ধীরেন বাবুর মোবাইলে একটা ফোন আসে তিনি একটু সরে কিছুক্ষণ কথা বলে আবার ফিরে এসে দাদাকে বলেন "যে কোম্পানি ইনভেস্ট করছিল তারা খবর পেয়েছে, এবং এখানে যে এখন কাজ বন্ধ থাকবে সেটাও তারা বুঝতে পেরেছে"
বীরেন বাবু ভাইয়ের মুখের দিকে তাকালেন কোনো কথা বললেন না
ধীরেন বাবু আবার বলা শুরু করলেন "ওরা আর ইনভেস্ট করতে চাইছে না, ডিল ক্যানসেল করতে চাইছে আর.. যে টাকা ওরা অলরেডি দিয়েছে সেটা ফেরত দিতে হবে"।
শুনে মুখ কঠিন হয়ে গেল বীরেন ভট্টাচার্যের, চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন: খোঁজ নাও কারা একাজ করেছে, এই শহরে কার বুকে এত সাহস যে আমার সাথে লাগতে আসে, আমার লোকের গায়ে হাত দেয়, আমার লোকদের পুড়িয়ে মারে খোঁজ নাও।

উসমানের ডেরার ভিতরের ঘরে মিটিং চলছে, সবার মুখেই একটা খুশীর ভাব শুধু যাকে সবাই বস বলে ডাকে তার মুখ‌ই গম্ভীর, তাই দেখে আমির বললো: তুমি খুশী হ‌ওনি?
খুশি হবার মত কিছুই হয়নি আমির।
কি বলছো? একে তো ওই ছটা জানোয়ার মরলো তার উপর খবর পেয়েছি যারা ওই হোটেলের জন্য ইনভেস্ট করছিল তারা আর ইনভেস্ট করবে না এবং যত টাকা এতদিন দিয়েছে সেটাও ফেরত চেয়েছে।
তাতে বীরেন ভট্টাচার্যের একটা ছোট চুল‌ও ছেঁড়া যাবে না, তবে হ্যাঁ পৃথিবী থেকে ছটা জানোয়ার কমলো।
এবার ঘরের একজন ছেলে বললো: স্যার, যদি কিছু মনে না করেন একটা প্রশ্ন করবো?
লিডার ছেলেটি তার দিকে তাকিয়ে বললো: বলো
সেই ছেলেটি: শুধু একটা পাগলীর জন্য শুধু যে এভাবে আপনি রেগে গেলেন তাই নয়, ওই জানোয়ারগুলোকে... বলছি স্যার ওই পাগলী মহিলাটি কি আপনার কেউ হতেন?
লিডার ছেলেটি: শুধু পাগলী বলেই কি তাকে খুন করার অধিকার জন্মে যায়?
তা নয় স্যার..কিন্তু
"বেশ বলছি শোনো, কোথা কবে জানলাম জিজ্ঞেস কোরো না আমি উত্তর দেবো না, শুধু ওই পাগলীটার কথাই বলছি, ওকে পাগলী বানিয়েছিল ওই বীরেন ভট্টাচার্য" বলে চলে লিডার ছেলেটি "ওই মহিলা একটা স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন, ওনার একটা ছোট্ট মেয়ে ছিল আর এক স্বামী যিনি একটা প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করতেন, মেয়ে-মহিলাদের প্রতি ওই বীরেন ভট্টাচার্যের লোভ বহু পুরনো, এবার ওর কুনজর পরে ওই শিক্ষিকার উপর একরাতে ওদের তিনজনকে তুলে নিয়ে যায় আর তার পরদিন ওনাদের বাড়িটা দগ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায় যার মধ্যে দুটি লাশ যার একটি একটা বাচ্চা মেয়ের, কিন্তু ওই শিক্ষিকার খোঁজ পাওয়া যায় না, পুলিশ বলে গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে আগুন লেগেছে তারপর বেশকিছুদিন পরে ওই মহিলাকে ছেঁড়া কাপড়ে রাস্তায় ঘুরতে দেখা যায়, দু-পা বেয়ে রক্ত ঝরছে তখন তিনি বদ্ধ পাগল, শুধু মুখে কটা কথা "আমার মেয়েকে খেয়েছে, আমার স্বামীকে খেয়েছে, ও মরবে" তারপর কোথাও আবার চলে যান" একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার শুরু করে লিডার ছেলেটি "কয়েকজন মিলে ওর চিকিৎসা করাতে নিয়ে যান ডাক্তার বলেন ওকে রেপ করা হয়েছে এবং তারসাথে কোনো বড়ো মানসিক আঘাত পেয়েছেন যার ফলে ওনার মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটেছে".. "আমার ধারণা যেটা সেটা হলো খুব সম্ভবত ওনার চোখের সামনেই ওনার মেয়ে আর স্বামীকে খুন করে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় আর তারপর ওনার উপর অত্যাচার চালায় বীরেন ভট্টাচার্য" এবার বুঝলে?
বুঝেছি স্যার কিন্তু উনি কি আপনার কেউ?
শুধু রক্তের সম্পর্কটাই কি সব? রক্তের সম্পর্ক ছাড়াও অনেক সম্পর্ক থাকে একজন ভালো মানুষের সাথে অন্য মানুষের। এবার উসমান বলে: স্যার আরেকটা খবর পেয়েছি, দরকারি হতে পারে।
বলো বললেন লিডার ছেলেটি।
এবার উসমান দেয়ালের পর্দায় একজন মহিলার ছবি দেখালো সাথে একটা বাচ্চা ছেলে মহিলার বয়স আন্দাজ ৪৫ কি ৪৬ হবে, শ্যামলা কিন্তু পরিষ্কার বয়সের সাথে মুখের শ্রীভাবটা নষ্ট হয়নি শরীরে এখনো একটা বাঁধুনি আছে যেটা এখনো যেকোনো পুরুষকে আকর্ষণ করার জন্য যথেষ্ট আর বাচ্চার বয়স ৮ থেকে ১০ এর মধ্যে। ছবিটা কিছুক্ষণ ভালো করে দেখলো লিডার ছেলেটি তারপর জিজ্ঞেস করলো: কে ইনি?
উসমান বলে চললো: এনার নাম শিউলী দেবী আর ওনার ছেলে রোহিত, এই শহরেই থাকেন তবে একটু বাইরের দিকে।
আমির জিজ্ঞেস করলো: কিন্তু এনার সাথে বীরেন ভট্টাচার্যের কি সম্পর্ক?
এরপর উসমান যা যা বলে গেল সেটা শুনে ঠোঁটের কোণে একটা মুচকি হাসি খেলে গেল লিডার ছেলেটির, তারপর বললো: আর এত ইম্পরট্যান্ট কথাটা এতদিন বলোনি?
উসমান একটু থতমত খেয়ে গেল "আসলে স্যার সবে খবরটা পেলাম, আর তারপর ওই জানোয়ারগুলোকে.." মাঝপথেই থামতে হলো উসমানকে কারন লিডার ছেলেটি আবার কথা বলতে শুরু করেছে "খুব ভালো কাজ করেছো উসমান, এভাবেই করতে থাকো"
ধন্যবাদ স্যার, উসমানের মুখে খুশি ফুটে ওঠে।
"শোনো উসমান" বলে লিডার ছেলেটি "তোমাদের আরো দুজনের সম্বন্ধে জানতে হবে, পুরো ডিটেইলস"
কারা স্যার? জিজ্ঞেস করে উসমান। "বৃষ্টি আর তাথৈ ভট্টাচার্য" বলে লিডার ছেলেটি, একটু চুপ থেকে আবার বলে "ওরা বাইরে পড়াশোনা করেছে সেখানে ওরা কি কি করেছে কাদের সাথে যোগাযোগ হয়েছে সব ডিটেইলস, বুঝেছো?"
"হয়ে যাবে স্যার" উসমান জবাব দেয়।




[/HIDE]
 
[HIDE]

তারপর আবার সামনের পর্দায় ভেসে ওঠা শিউলী দেবী নামক মহিলার ছবির দিকে তাকিয়ে লিডার ছেলেটি বলে "এনার ঠিকানাটা আমাকে ম্যাসেজ করে দাও, আর.." তারপর ঘরে উপস্থিত সবার দিকে তাকিয়ে বলে "কারো কোনো সমস্যা নেই তো? থাকলে বলতে পারো সবার বাড়ির লোকজন ঠিক আছে?"
সবাই একযোগে জানায় আপাতত সব ঠিক আছে, এবার লিডার ছেলেটি বলে "যখনই কোনো দরকার হবে তা সে টাকা হোক বা অন্য কোনো সমস্যা আমাকে জানাবে, আমাকে না পারলে আমিরকে জানাবে,ঠিক আছে?"
অবাক হয়ে যায় উসমান, এই লোকটাকে সে ঠিক মতো চিনতে পারে না, এতদিন তার হয়ে কাজ করছে অথচ তাও চিনতে পারে না ,লোকটার আসল নাম আজ অবধি জানেনা উসমান, লোকটা যেমন প্রয়োজনে প্রচণ্ড পরিমাণে নিষ্ঠুর, হিংস্র আর ক্রুর হতে পারে ঠিক তেমনই এক‌ই সাথে নিয়মিত দলের প্রত্যেকের খোঁজখবর নেয়, দরকারে সবার পাশে দাঁড়ায় যদি জানতে পারে কেউ ভীষণ সমস্যায় পরেছে অথচ জানায়নি তখন ধমক দিতে ছাড়ে না ঠিক বড়ো দাদার মতো, পুরো দেশেই লোকটার দলের লোকজন ছড়িয়ে আছে আর প্রত্যেকের সাথেই সমান ব্যবহার, দলের প্রত্যেকেই তাকে যেমন ভয় করে তেমনি সম্মান করে আবার ভরসাও করে, দলের সবাই জানে প্রয়োজনে তাদের পাশে এই লোকটি দাঁড়াবেই তাই তারাও লোকটার জন্য নিজেদের জান কবুল করতে দুবার ভাবে না।
বীরেন ভট্টাচার্যের অফিসে আলোচনা চলছে, টেবিলের একদিকে একটা চেয়ারে বসে বীরেন ভট্টাচার্য ,তার সামনে একটা চেয়ারে বসে ধীরেন বাবু আর বাকি দুটি চেয়ারে বসে আছেন দুইজন পুলিশ অফিসার সবার মুখ গম্ভীর ও চিন্তার ভাব প্রকট। তুলনায় জুনিয়র পুলিশ অফিসারটির নাম অসীম,তিনি বললেন: আমরা পুরো চেষ্টা করছি স্যার কারা এই কাজ করেছে, আমাদের সবকটা খবরিকে অ্যাক্টিভেট করেছি, আপনার যেকজন অপজিশন আছে তাদের প্রত্যেকের পিছনে লোক লাগানো হয়েছে।
সিনিয়র অফিসারটি বললেন: চেষ্টা নয়, রেজাল্ট চাই অসীম, যে করে হোক ধরতেই হবে। তারপর বীরেন বাবুর দিকে ফিরে বললেন: আপনি চিন্তা করবেন না স্যার, যেই করুক ধরবোই।
বীরেন ভট্টাচার্য বললেন: ঠিক আছে আপনারা আসুন এবার। অফিসার দুজন ঘর থেকে বেরিয়ে যায়, গম্ভীরমুখে বসে কিছু একটা ভাবতে থাকেন বীরেন বাবু।
কি ভাবছো দাদা? জিজ্ঞেস করলেন ধীরেন বাবু।
ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে জবাব দেন বীরেন বাবু "ভাবছি এটা যদি অপজিশন পার্টির লোকের কাজ না হয় তখন?"
মানে? কি বলতে চাইছো তুমি দাদা?
যদি নতুন কোনো শত্রু হয়?
কিন্তু এই শহরে তোমার সাথে শত্রুতা করার সাহস কারো নেই, এটাও তো হতে পারে যে ওরাই কারো সাথে ঝামেলা করেছিল তার‌ই প্রতিশোধ নিয়েছে সে।
তবুও সাবধানের মার নেই তুই সিকিউরিটি বাড়িয়ে দে, পরিবারের প্রত্যেকের জন্য এক্সট্রা বডিগার্ড লাগিয়ে দে।
ঠিক আছে দাদা আমি আজকেই ব্যবস্থা করে ফেলছি। বলে উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন ধীরেন বাবু। বীরেন বাবু বসে বসে কিছু একটা ভাবতে থাকেন।
শহরের বাইরের দিকে থাকেন শিউলী দেবী ছেলে রোহিত কে নিয়ে, সকালে ঘরের কাজ করে, ছেলের খাবার তৈরি করে ছেলেকে রেডি করে স্কুলে দিয়ে আসেন তারপর বাড়ি এসে লাঞ্চ সেরে একটু বিশ্রাম তারপর বিকেলে স্কুল থেকে ছেলেকে নিয়ে আসেন আবার খাইয়ে টিউশনিতে নিয়ে যান, ছুটির দিন পাড়ার পার্কে নিয়ে যান ছেলেকে খেলার জন্য এই তার প্রাত্যহিক রুটিন কিন্তু ইদানিং ছেলের স্কুল-টিউশনি বন্ধ আছে, ফাইনাল পরীক্ষা হয়ে গেছে রেজাল্ট না বেরোনো পর্যন্ত নতুন ক্লাস শুরু হবে না, তাই এখন স্কুল-টিউশনি বাদ গেছে রুটিন থেকে, এখন শুধু বিকেলে ছেলেকে পার্কে নিয়ে যান খেলার জন্য।

এরকমই একদিন ছেলে পার্কে খেলছে শিউলী দেবী পার্কের একধারে বসার বেঞ্চিতে বসে আছেন, আশেপাশের আরো কয়েকটা বেঞ্চে আরো কয়েকজন বসে আছে, শিউলী দেবী ছেলের দিকে নজর রেখে বসে আছেন এমন সময় "শিউলী দেবী" ডাকটা শুনে চমকে উঠলেন, দেখলেন বেঞ্চের পাশে একটা ছেলে এসে দাঁড়িয়েছে, পরনে কালো রঙের হুডি আলা জ্যাকেট, জ্যাকেটের চেন খোলাআর কালো জিন্স,হুডিটা মাথায় পরে আছে চোখে কালো গগলস্, মুখ একটা রুমাল দিয়ে বাঁধা রুমালটায় একটা মানুষের স্কালের ছবি ,ছেলেটার দুটো হাত জ্যাকেটের পকেটে ঢোকানো ,ছেলেটার হাইট সাড়ে ৫ ফুট কি তার থেকে একটু বেশি, মুখ যদিও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না ঢেকে রাখার কারনে তবে বয়স আন্দাজ ৩০ এর আশেপাশে হবে, ছিপছিপে চেহারা, খুব বেশি রোগা নয় আর মোটা তো নয়‌ই,জিম করা শরীর কিন্তু পেশীর আধিক্য নেই সেটা বোঝা যাচ্ছে।
ছেলেটা আবার বললো: শিউলী দেবী আপনার সাথে আমার একটু কথা ছিল যদি..
শিউলী দেবী: কে আপনি? আপনাকে আমি চিনি বলে তো মনে হয় না।
ছেলেটি বললো: না, আমাকে চেনেন না কিন্তু আমি একটা দরকারে আপনার কাছে এসেছি
শিউলী দেবী: কি দরকার?
ছেলেটি: এখানেই শুনবেন? এখানে অনেক লোক যদি কিছু মনে না করেন তাহলে সামনের ওই রেস্টুরেন্টে বসে কফি খেতে খেতে কথা বলা যাক?
রেগে উঠলেন শিউলী দেবী বললেন: আপনার সাহস তো কম নয়? এক্ষুনি যদি আমি চিৎকার করি তাহলে আশেপাশের লোক এসে আপনার কি অবস্থা করবে জানেন?
ছেলেটি: কিন্তু আমি তো আপনার সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করিনি, আমি শুধু আপনার সাথে কয়েকটা কথা বলতে চাই কারণ আমার আপনার সাহায্য চাই।
শিউলী দেবী: আপনাকে আমি চিনিনা জানিনা তাই সাহায্য করার প্রশ্নই বা উঠছে কেন?
ছেলেটা বললো: আমি যে কাজের দরকারে আপনার সাহায্য চাইছি সেটা আপনিও চান আর সেটা বীরেন ভট্টাচার্য সম্পর্কিত।
নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না শিউলী দেবীর, এই ছেলেটা কি বলছে এইসব? এই এলাকায় কেউ জানেনা যে তিনি বীরেন ভট্টাচার্যের পরিচিত তবে এই ছেলেটা কিভাবে জানলো?
আপনি কি বলছেন আমি কিছু বুঝতে পারছি না কোনোমতে বলেন শিউলী দেবী।
বোঝানোর জন্যই তো একটু কথা বলতে চাইছি জবাব দেয় ছেলেটি। এবারে একটু ঝাঁঝালো গলায় শিউলী দেবী বলেন: আপনি জানেন আপনি কার সাথে কথা বলছেন? জানেন আমি কে?
ছেলেটি বললো: জানি
শিউলী দেবী অবাক হন "জানেন?"
জানি বলে ছেলেটি তারপর একটু চারিদিকে দেখে নিয়ে গলার স্বরটা কমিয়ে বলে আপনার একটা লোক দেখানো পরিচয় আছে সেটা হলো আপনি বীরেন ভট্টাচার্যের শ্যালিকা এবং লোকের থেকে লুকোনো আরেকটা পরিচয় আছে সেটা হলো আপনি বীরেন বাবুর একসময়ের.. রক্ষিতা আর তার প্রমাণ আপনার ছেলে রোহিত।
স্তব্ধ হয়ে ছেলেটির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকেন শিউলী দেবী তারপর তোতলাতে তোতলাতে কোনোমতে বলেন: আপনি কিভাবে জানলেন, আপনি কে বলুন তো?
ছেলেটি: চলুন কফি খেতে খেতে বলছি, এখানে আপনার অনেক পরিচিত আছেন তাদের বলুন আপনার ছেলের দিকে কিছুক্ষণের জন্য একটু নজর রাখতে, ঘাবড়াবেন না আমি আপনার শত্রু ন‌ই।
পা কাঁপছে শিউলী দেবীর তাও কোনোমতে উঠে পাশের বেঞ্চের দিকে এগিয়ে গিয়ে সেখানে বসা একজন মহিলাকে কিছু বলেন তারপর ফিরে এসে ছেলেটিকে বলেন "আসুন"
রেস্টুরেন্টে এক কোণে একটা ফাঁকা টেবিল ছিল দুজনে সেখানে বসলেন, কফি অর্ডার দেওয়ার একটু পরেই চলে এল, কফিতে এক চুমুক দিয়ে শিউলী দেবী বলেন: এবার বলুন, আমার সম্পর্কে এত কথা কিভাবে জানলেন আপনি, আর তার আগে আপনার পরিচয় দিন।




[/HIDE]
 
[HIDE]

ছেলেটি বলে: আমি আরো অনেক কথাই জানি যেমন আপনি একবার বীরেন ভট্টাচার্য কে তার‌ই বাড়িতে গিয়ে ঝামেলা করে এসেছিলেন খুব সম্ভবত আপনাদের সম্পর্ক ফাঁস করে দিয়েছিলেন কিন্তু কেউ আপনার কথা বিশ্বাস করেনি এমনকি আপনার দিদিও না, তখন আপনি সেখান থেকে চলে আসেন কিন্তু একটা জিনিস আমি বুঝতে পারছি না সেটা হলো বীরেন ভট্টাচার্য যে ধাঁচের লোক তাতে উনি আপনাকে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছেন কেন?
শিউলী দেবী: কারণ আমাকে তখন মারলে ওর পলিটিক্যাল কেরিয়ার ঝামেলায় পড়ে যেত, একজন মহিলা ওর বাড়িতে ঝামেলা করার পরপর‌ই মারা গেল এটা..
ছেলেটা: বুঝেছি, কিন্তু তাও তারপর এত বছর রাখলেন কেন?
শিউলী দেবী: আমার দিদির জন্য, ও আমার কথা বিশ্বাস করেনি ঠিক কিন্তু আমার কোনো ক্ষতি হোক সেটা চায়না বীরেন ভট্টাচার্য আমার ক্ষতি করতে পারে তাই ও আমার প্রাণভিক্ষা চেয়েছিল।
ছেলেটি: কিন্তু আপনি তো এখনো বীরেন ভট্টাচার্যের কীর্তি ফাঁস করে দিতে পারেন ,তাহলে এখনো..
শিউলী দেবী: ও জানে যে এখন আমি ওর বিরুদ্ধে কিছু করবো না, কারণ করলে ও আমার.. আর কোনো কথা বলতে পারলেন না শিউলী দেবী।
ছেলেটা ইতিমধ্যে মুখ থেকে রুমাল আর চোখ থেকে গগলস্ খুলে ফেলেছে, মাথা থেকে হুডিটা সরিয়েছে, শিউলী দেবী দেখলেন মাথায় চুল অনেকটা লম্বা ঘাড় পর্যন্ত নেমে এসেছে আর সামনের দিকে মাঝখানে সিথি কাটা তারপর দুসাইডে আলাদা ভাবে ব্যাকব্রাশ করা কপালের উপরে চুলটা ঢেউ এর মতো উঁচু হয়ে দুদিকে নেমে পিছনে চলে গেছে, সাথে একেবারে ক্লিন শেভড মুখ ছেলেটার, একদম ফর্সা সাদা না হলেও গায়ের রঙ ফর্সাই বলা চলে বেশ সুদর্শন দেখতে, ছেলেটার মুখ এখন রাগে লাল হয়ে গেছে, ফলে তাকে আরো ধারালো এবং সুন্দর লাগছে দেখতে, শিউলী দেবী বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে র‌ইলেন ছেলেটার দিকে, ছেলেটা বললো: নিজের ছেলের প্রতি ও ওর টান নেই? লোকটার মধ্যে কি এতটুকুও মনুষ্যত্ব নেই?
মানুষ হলে তো মনুষ্যত্ব থাকবে? জবাব দেন শিউলী দেবী ,একটু থেমে আবার বললেন: ও একটা জানোয়ার এবার বুঝতে পারছেন তো যে আমি আপনার কোনো কাজে আসবো না, কোনো সাহায্য করতে পারবো না।
ছেলেটা বললো: আমি বুঝতে পারছি, কিন্তু আমি যদি বলি আপনার আর আপনার ছেলের কোনো ক্ষতি আমি হতে দেবো না, তাহলে বিশ্বাস করবেন?
শিউলী দেবী আরও অবাক হন এ ছেলেটা বলে কি? পুরো শহর জুড়ে যার আধিপত্য তার বিরুদ্ধে এই ছেলেটা যাবে? বিশ্বাস হয় না শিউলী দেবীর। ছেলেটা আবার বলে "আমি জানি এভাবে অচেনা কাউকে বিশ্বাস করা কঠিন কিন্তু চেনা লোককে বিশ্বাস করে তো ঠকেছেন এবার নাহয় অচেনা একজনকে বিশ্বাস করে দেখুন নাও ঠকতে পারেন।
শিউলী দেবী বলেন: আপনার নাম পর্যন্ত আমি জানিনা আর আপনি বলছেন আপনাকে বিশ্বাস করতে? আর আমি নিজেকে রক্ষা করতে পারি
ছেলেটা বলে: সেতো দেখতেই পাচ্ছি, যে কোনো কারনেই হোক বীরেন ভট্টাচার্য আপনাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, কিন্তু যেদিন উনি আপনার আত্মরক্ষার বর্মে ছিদ্র পাবেন সেদিন কিন্তু...
শিউলী দেবী: কিন্তু আমি আপনাকেই বা বিশ্বাস করবো কেন?
ছেলেটা: কারণ দরকারটা আমারও আর আমার নাম রয়। আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আপনার আর আপনার ছেলের ক্ষতি তো হতে দেবো‌ই না এমনকি আপনি যদি চান তাহলে আপনাদের দুজনকে বীরেন ভট্টাচার্যের কবল থেকে মুক্ত করতে পারি।
শিউলী দেবী যেন চমকে ওঠেন কাঁপতে কাঁপতে বলেন: ওর অনেক ক্ষমতা, আপনি জানেন না, ও আপনাকে মেরে ফেলবে, আর তারপর আমাদের
রয় বলে: ও আমাকে অনেক বছর আগেই মেরে ফেলেছে, আর এখন আমি ওর মৃত্যু হয়ে ফিরে এসেছি, আচ্ছা এক কাজ করা যাক আগে আমি আপনাদের ওর কবল থেকে উদ্ধার করে একটা সুরক্ষিত জায়গায় নিয়ে যাই,আপনার ছেলেকে সুরক্ষিত করি তারপর নাহয় যদি আমাকে বিশ্বাস হয় তো আমাকে সাহায্য করবেন, আপনি এক কাজ করুন আজ রাতের মধ্যেই আপনাদের দুজনের দরকারি জিনিস গুছিয়ে নিন কাল সকালেই আমি নিজে এসে আপনাদের সেফ জায়গায় নিয়ে যাবো, আপাতত তো আপনার ছেলের স্কুল ছুটি তাই অসুবিধা হবে না।
শিউলী দেবীর যেন তাও বিশ্বাস হতে চায় না তিনি একদৃষ্টিতে দেখতে থাকেন রয়কে, সেটা দেখে রয় বলে: আমি আপনার পরিচিত ন‌ই, কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি আপনার শত্রুও ন‌ই।

রাতে ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে ড্রয়িংরুমে বসে বিকেলে রয় নামের ছেলেটার কথাই ভাবছিলেন শিউলী দেবী, ছেলেটা কি সত্যিই তাদের ভালো চায়? নাকি নিজের কোনো স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা করছে, পরক্ষনেই তার মনে হয় ছেলেটা তো বলেইছে যে বীরেন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে ওর সাহায্য লাগবে, কিন্তু বীরেন যদি জানতে পারে তাহলে তাকে আর রোহিতকে মেরে ফেলবে, কাল সকালে কি ছেলেটা সত্যিই আসবে? এলে কোথায় নিয়ে যাবে? এইসব কথাই ভাবছিলেন এমন সময় দরজায় ঘনঘন কলিং বেল বেজে উঠলো, চমকে উঠলেন তিনি এতরাতে আবার কে এল?

যে খবর জোগাড় করতে বলেছিলাম হয়েছে? জিজ্ঞেস করলো রয়
হ্যাঁ, ছোট্ট উত্তর উসমানের।
ঠিক আছে আগে বৃষ্টির সম্পর্কে বলো
বীরেন ভট্টাচার্যের মেয়ে এটা তো জানেন স্যার, খুব ছোটোবেলায় একেও তাথৈ এর সাথে বাইরে পড়তে পাঠিয়ে দেন বীরেন বাবু, ওখানে ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে পড়েছে তবে কোথাও কাজ করে না, অবশ্য তার দরকারো নেই কিন্তু মাঝে মাঝে শখের বশেই কোনো কোনো কোম্পানির হয়ে কিছু কিছু কাজ করে দেয়, নাইটক্লাব, পার্টি এইসব খুব পছন্দ করে ,সবথেকে বড়ো কথা ছেলেদের খেলাতে ভালোবাসে, অনেক ছেলেই এর পিছনে ঘোরে কিন্তু সেই অর্থে কারো সাথেই রিলেশন নেই, এবং এখানে এসেও ওই নাইট ক্লাব, বারে গিয়ে পার্টি করা, ড্রিংক করা এইসব নিয়েই আছে, কথা শেষ করলো উসমান।
আর তাথৈ? প্রশ্ন করে রয়
উসমান শুরু করে: তাথৈ এর একদম উল্টো, পড়াশোনায় বৃষ্টির থেকে অনেকটাই ভালো, ইকোনমিক্স নিয়ে পড়াশোনা করেছে, বর্তমানে মাঝে মাঝে বাবা ধীরেন বাবুর সাথে অফিসে যায় ব্যাবসা বোঝার জন্য বোধহয়, ভট্টাচার্য পরিবারের বাকীদের থেকে তাথৈ অনেকটাই আলাদা, অন্যায়ের সাথে কখনো আপস করে না, অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদ করে, গরীব-দুঃখীদের অনেক সাহায্য করে, তবে এ‌ও কোনো ছেলেকেই পাত্তা দেয়না তার একটা কারন‌ও আছে অবশ্য
কি কারন? প্রশ্নটা করেন আমির
ওর সাথে পড়েছে এমন কিছু মেয়ের সাথে কথা বলেছিল আমার লোক, প্রায় প্রতিটা মেয়েই বলেছে তাথৈকে কখনো কোনো ছেলের সাথে দেখেনি এমনকি কোনোদিন কোনো ছেলের পাশেও বসেনি, তবে অনেকেই ওর মন পাওয়ার চেষ্টা করেছিল কিন্তু কাউকেই পাত্তা দেয়নি, বান্ধবীরা তাকে এ নিয়ে অনেকবার জিজ্ঞেস করেছিল প্রতিবার‌ই নাকি তাথৈ তাদের এক‌ই কথা বলেছে যে সে অন্য একজনের প্রতি কমিটেড কিন্তু কে সেটা সে কোনোদিন কাউকে বলেনি, কিন্তু আমি নিজের চেষ্টায় আরো কিছু জানতে পেরেছি
কি? জিজ্ঞেস করে আমির
উসমান উত্তর দেয়: তাথৈএর ছোটোবেলা এই শহরেই কেটেছে তারপর তাকেও বাইরে পাঠানো হয়, এখানে তাথৈএর সাথে স্কুলে পড়া কিছুজনের সাথে কথা বলেছিলাম তারা একটা খবর দিল
কি খবর? আবার প্রশ্ন করে আমির
এটা গুজব হতে পারে কিন্তু তারা বলে স্কুলে থাকতে তাথৈ একটা ছেলের প্রেমে পড়েছিল, ওর সাথেই পড়তো ছেলেটা পড়াশোনায় অসাধারণ ছিল কিন্তু আর্থিক সামর্থ্যের দিক থেকে বীরেন ভট্টাচার্যের থেকে অনেক নীচে ছিল তার পরিবার।
ছেলেটা কে? এখন কোথায় থাকে? জিজ্ঞেস করে আমির
ছেলেটার নাম অভয়, অভয় রায় চৌধুরী আর ছেলেটা এখন বেঁচে নেই বহুবছর আগে এক দুর্ঘটনায় সে ও তার পরিবার মারা যায়।
কি দুর্ঘটনা?
যতদূর জানতে পেরেছি বাড়িতে আগুন লেগে যায়,
বীরেন ভট্টাচার্যের হাত ছিল?
বলা মুশকিল ভাইজান, কেউ সে-বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছে না
ছেলেটার কোনো আত্মীয়ের খোঁজ পেয়েছো? এতক্ষন চুপচাপ সব কথা শুনছিল রয়, এবার প্রশ্নটা করে সে
আছে এক দূরসম্পর্কের পিসি আর তার পরিবার আছে ,ওই যে তিনজনের খবর নিতে বলেছিলেন বীরেন ভট্টাচার্যের পরিবার ছাড়া মনে আছে? সেই
আর কেউ?
না স্যার তবে শুনেছি এখান থেকে কিছুটা দূরে এক বস্তিতে এক বুড়ো মানুষ থাকেন তার স্ত্রী ও এক নাতনি নিয়ে, তিনি নাকি অভয়ের বাবা রুদ্রবাবুর খুব পরিচিত ছিলেন, তার সাথে এখনো কথা বলতে পারিনি কিন্তু..
দরকার নেই, ওনার সাথে আমি কথা বলবো, উসমানকে থামিয়ে কথাটা বললো রয়।
এইসময় রয়ের মোবাইল বেজে উঠলো, মোবাইলটা কানে দিয়ে শুধু একটা শব্দ করলো "হুমম" তারপর হটাৎ "তুমি ফলো করে যাও" বলে মোবাইল রেখে চেয়ার থেকে উঠে বললো "কুইক, উই হ্যাভ টু সেভ হার, তাকে বাঁচাতেই হবে'"।



[/HIDE]
 
[HIDE]
শিউলী দেবী দরজা খুলে দেখেন, দুজন গুণ্ডা প্রকৃতির লোক দাঁড়িয়ে, স্বভাবতই ভয় পেয়ে গেলেন তিনি, ভয়ার্ত গলায় জিজ্ঞেস করলেন "আপনারা কারা?"
"আমরা বীরেন ভট্টাচার্যের লোক" গুণ্ডা দুজনের একজন উত্তর দিল।
অপরজন বললো "আপনাকে আর আপনার ছেলেকে আমাদের সাথে যেতে হবে, দাদা ডেকেছেন"।
শিউলী দেবীর ভয় আরো বেড়ে গেল জিজ্ঞেস করলেন: কেন? আমি তো কিছু করিনি।
সেটা দাদা জানেন, আমরা শুধু ওনার হুকুম তামিল করছি, তাড়াতাড়ি চলুন গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। দুজন গুণ্ডা এবার রিভলবার বার করলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই গুণ্ডাদুটো শিউলী দেবী ও রোহিতকে প্রায় জোর করে একটা মারুতি গাড়িতে তুলে র‌ওনা দিল যে গাড়িতে আগে থেকেই আরো দুজন বসে ছিল, তারা লক্ষ্য‌ও করলো না যে তাদের গাড়ি থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে আরো একটা গাড়ি তাদের ফলো করছে।
শিউলী দেবী ও রোহিত কে নিয়ে চারজন গুণ্ডা দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে চলেছে, দুজন লোক গাড়ির সামনে আর দুজন পিছনে, পিছনের সিটে মাঝখানে রোহিতকে কোলে নিয়ে ভয়ার্ত মুখে বসে আছেন শিউলী দেবী।
সামনের সিটে ড্রাইভারের পাশে বসা গুণ্ডাটা ড্রাইভার কে বললো "দেখে চালা, সামনে একটা চৌমাথা আছে, তুই তো আবার.."
ড্রাইভার: ভয় নেই দাদা আজ মাল খাইনি
গাড়ি ছুটে চলেছে ,রাত একটু গভীর হয়েছে রাস্তাটা বেশ নির্জন গাড়ি চলাচল প্রায় নেই বললেই চলে, রাস্তার দুপাশে ঝোঁপঝাড় গজিয়ে আছে, ল্যাম্পপোস্টগুলো একটা অপরটার থেকে বেশ কিছুটা দূরে দূরে তাই রাস্তা জুড়েই বেশ অন্ধকার, সামনেই চৌমাথা ড্রাইভারের পাশে বসা গুণ্ডাটা বললো: সোজা চল। তারপর পিছন ফিরে শিউলী দেবীকে দেখতে থাকলো, এতে শিউলী দেবীর প্রচণ্ড অস্বস্তি হতে লাগলো এর মধ্যেই তার মনে হতে লাগলো রয়ের কথা ছেলেটা সকালে আসবে বলেছিল তাদের নিয়ে যেতে, কিন্তু সে জানতেও পারলো না যখন সে আসবে তখন হয়তো বীরেন ভট্টাচার্য শিউলী দেবী এবং রোহিতের লাশ কোথাও চাপা দিয়ে দেবেন, বুক ফেটে কান্না এল ওনার, হটাৎ ড্রাইভারটা ব্রেক কষলো এবং গাড়ির ভিতরের সবাই হুমড়ি খেয়ে কিছুটা সামনে এগিয়ে গেল ,শিউলী দেবী কোনোমতে রোহিতকে আগলে রাখলেন যাতে ওর আঘাত না লাগে।
সামনে ড্রাইভারের পাশে বসা চারটে গুণ্ডার একজন ড্রাইভারকে গালাগালি দিয়ে উঠলো "এই শূয়োরের বাচ্চা, বললাম না দেখে গাড়ি চালা, এভাবে কেউ ব্রেক লাগায়?
পিছন থেকে আরেকজন বললো: শালা হটাৎ ব্রেক মারলি কেন বে?
ড্রাইভারটা সামনের দিকে দেখিয়ে বললো: ওদিকে দেখো সবাই।
সামনের দিকে তাকালো সবাই, শিউলী দেবীও উঁকি মেরে দেখছেন যা দেখলেন তাতে তার বুক ভিতর ধপধপানি শুরু হয়ে গেল, সামনে কিছুটা দূরে রাস্তার মাঝ বরাবর যাতে অন্য গাড়ি পাশ কাটিয়ে যেতে না পারে এমনভাবে একটা কালো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে আর সেই গাড়ির সামনে কালো জ্যাকেট গায়ে দিয়ে দুজন লোক দাঁড়িয়ে আছে শিউলী দেবীও দেখেছেন লোকদুটোকে, তাথ চোখ আটকে গেল একজন লোকের উপর, লোক নয় ছেলে সে এই রাতের বেলাতেও চোখে কালো গগলস্ পরে আছে ,ছেলেটা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুহাত জ্যাকেটের পকেটে ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, শিউলী দেবী অবাক হলেন ঠিক এইভাবেই বিকেলে তিনি প্রথমবার একজনকে দেখেছিলেন যে তাকে তার অন্ধকার জীবনে একটু আশার আলো দেখিয়েছিল রয়.. পার্থক্য হলো বিকেলে রয় মাথায় হুডি পরে ছিল আর এখন পরে নেই।


ড্রাইভার সহ চারজন গুণ্ডা সামনের দিকেই দেখছিল, একজন বললো: এটা কে বে?
আরেকজন বললো: চলতো গিয়ে দেখি। চারজন‌ই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো, কোমর থেকে রিভলবার বার করে এগোতে গিয়েও থামতে হলো কারণ য়এমন সময় হটাৎ ড্রাইভার লোকটা ভয়ার্ত গলায় ডাকলো: দাদা। এবার বাকী তিনজন লক্ষ্য করলো ব্যাপারটা তারা চৌমাথার চারটে রাস্তার একেবারে মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে আর তাদের সামনে তো বটেই সেটা ছাড়াও বাকী তিনদিকেই তিনটে গাড়ি চলে এসেছে এবং নিঃশব্দে প্রায় ২৫-৩০ টা কালো মূর্তি তাদের চারিদিক থেকে ঘিরে ধরেছে আর তাদের প্রত্যেকের হাতেই পিস্তল উঁচু করা, তাদের সামনে যে দুজন দাঁড়িয়ে আছে তাদের একজন জ্যাকেটের পকেট থেকে ডানহাত বার করে তর্জনীটা দিয়ে কিছু ফেলে দেওয়ার ইশারা করলো, চারজন গুণ্ডা বুঝলো তাদের হাতের রিভলবার ফেলে দিতে বলছে, সাথে এটাও বুঝলো এই মুহূর্তে কোনো চালাকি করার চেষ্টাও করলে তাদের ঝাঁঝরা করে দেবে ওই কালো মূর্তি গুলো। একসাথে চারটে রিভলবার মাটিতে পড়ার ধাতব শব্দ হলো, এবার চোখে গগলস্ পরা ছেলেটা এগিয়ে এল, চারটে গুণ্ডাকে পার করে মারুতির পিছনের জানালায় উঁকি মেরে পিছনের সিটে বসে থাকা শিউলী দেবীকে উদ্দেশ্য করে বললো: নেমে আসুন
শিউলী দেবী কি বলবেন ভেবে পেলেন না, ছেলে রোহিতকে নামিয়ে তারপর নিজে নেমে বললেন: আমি ভাবতে পারিনি যে আপনি আসবেন।
রয়: আমি বলেছিলাম তো আমি থাকতে আপনাদের কোনো ক্ষতি হবে না, আসুন।
শিউলী দেবী আর রোহিত কে নিয়ে নিজের গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল রয়, চারজন গুণ্ডার একজন ঘড়ঘড়ে গলায় বললো: তুই জানিস না কার সাথে পাঙ্গা নিচ্ছিস? আমরা বীরেন ভট্টাচার্যের লোক।
রয় তাদেরকে সম্পূর্ণ অগ্ৰাহ্য করে এগিয়ে গেলো তারপর আমিরের পাশ থেকে যাওয়ার সময় তাকে বললো: তুমি জানো এবার কি করতে হবে। শুনে আমির বন্দুক হাতে এগিয়ে গেলো আর রয় তার গাড়ির পিছনের দরজা খুলে শিউলী দেবীকে বললো যান উঠে পড়ুন আর নিজের দুকান বন্ধ করুন ছেলেকেও বলুন কান বন্ধ করতে, এখানে এখন একটু বাজী ফাটবে।
শিউলী দেবী আর রোহিত গাড়িতে উঠে দরজা বন্ধ করার সাথে সাথেই চৌমাথার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা চারজন গুণ্ডাদের চারপাশে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা ২৫-৩০ টা কালো মূর্তির প্রত্যেকের হাতের পিস্তল গর্জে উঠলো অবিরাম গুলি বর্ষণ চললো কিছুক্ষণ তারপর কালো মূর্তি গুলো সরে গেল, একটু পরেই চৌমাথার চারপাশের গাড়িগুলো চলে গেল, শুধু আকাশের অন্ধকার তাকিয়ে র‌ইলো রাস্তার উপর বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া, রক্তমাখা চারটি মৃতদেহ ও মারুতি গাড়ির দিকে।



[/HIDE]
 

Users who are viewing this thread

Back
Top