ঘরে পুরো অন্ধকার কিছু দেখার উপায় নেই শুধু একজন নারী ও একজন পুরুষের কথাবার্তার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে
নারী: কি যে বলো, কিভাবে করবো উনি আমার দাদা
পুরুষ: তোমার নিজের দাদা নাকি? কোথায় কোন দূর সম্পর্কের দাদা
নারী: তাহলেও, দাদা তো
পুরুষ: তো সারাজীবন এইভাবেই থাকবে নাকি? আর তাছাড়া এতগুলো টাকাও হাতছাড়া হয়ে যাবে না করলে আমাদের ছেলের কথাটাও তো ভাবতে হবে ওরো তো একটা ভবিষ্যত আছে, না না মণি এই কাজটা করতেই হবে।
নারী: কত টাকা?
পুরুষ: অনেক, সেইসঙ্গে একটা ফ্ল্যাটও পাওয়া যাবে।
নারী: সত্যি বলছো?
পুরুষ: একদম সত্যি, দাদা তো বললেন, তুমি খালি জিনিসটা খাবারের সাথে মিশিয়ে ওদের তিনজনকে খাইয়ে দেবে বাকিটা দাদা বুঝে নেবে।
নারী: কোনো ঝামেলা হবে না তো?
পুরুষ: কিচ্ছু হবে না।
পুরুষের একটু হাসির আওয়াজ এলো সাথে নারীর আওয়াজ: উহ কি করছো ছাড়ো ছেলে জেগে যাবে
পুরুষ:এখন তোমাকে ছাড়তে ইচ্ছা করছে না, চলো আজ একটু করি। একটু পরে নারীটার আঃ করে একটু আওয়াজের সাথে একটু হাসির আওয়াজ এলো তারপর পুরুষ নারী দুজনের ঘনঘন কিন্তু মৃদু শিৎকারের আওয়াজ আসতে লাগলো তারপর আবার চুপচাপ।
**----------**
শহরের এক বিলাসবহুল বাড়ি জুড়ে এখন চরম ব্যাস্ততা দেখা যাচ্ছে, চাকরদের দম ফেলবার ফুরসত নেই, দরজা সাজানো, ঘর ডেকোরেট করা, কোথায় কোথায় নোংরা জমে আছে সেটা চেক করা এবং পরিষ্কার করা ইত্যাদি আর সবকিছুর উপর কড়া দৃষ্টি রেখেছেন এক ষাটোর্ধ্ব মহিলা।
ইনি বৈশালী দেবী, আর এই বিলাসবহুল বাড়িটি শহরর দোর্দণ্ডপ্রতাপ রাজনৈতিক নেতা বীরেন ভট্টাচার্যের, যিনি সম্পর্কে বৈশালী দেবীর ভাই, জামাইবাবু মারা যাওয়ার পরে বীরেন ভট্টাচার্য দিদি ও তার একমাত্র ভাগ্নেকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন, সেই থেকে বৈশালী দেবী ও তার ছেলে এখানেই থাকেন। বীরেন ভট্টাচার্য শুধু যে একজন রাজনৈতিক নেতা তাই নয় পুরো শহর জুড়ে তার আধিপত্য, প্রথম জীবনে একজন প্রোমোটার ছিলেন বীরেন বাবু তারপর ধীরে ধীরে উন্নতি করে আজকে এই ক্ষমতা অর্জন করেছেন, নিজের ব্যাবসা যেমন বাড়িয়েছেন তেমনি রাজনীতিতে যোগ দিয়ে ভোটে জিতে নেতা হয়েছেন অবশ্য লোকমুখে এও শোনা যায় যে এই ক্ষমতা অর্জন টা সৎ উপায়ে করেননি বীরেন বাবু এর জন্য নাকি বহু লোককে খুন করেছেন কিন্তু কখনো কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি তাই পুলিশ তার গায়ে হাত দিতে পারেনি আর এখন তো পুরো পুলিশ ডিপার্টমেন্ট তার হাতের মুঠোয়, এখন তার লক্ষ্য নিজের শহর ছেড়ে অন্য শহরে তার ব্যাবসা আর ক্ষমতার প্রসার করা, বিশেষত বাণিজ্যনগরীতে পা জমানো কিন্তু সেখানে অন্য ক্ষমতাধর ব্যাবসায়ীদের ভিড় তাই তিনি ঠিক পাত্তা পাচ্ছেন না তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই নিজের শহরেই আরও বেশি করে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন,আর তার সবকাজে তার সাথে থাকে তার বিশ্বস্ত অনুগত ভাই ধীরেন ভট্টাচার্য, দাদার মতো এনাকেও শহরের লোক কম ভয় পায় না, দাদার হুকুমে করতে পারেন না এমন কাজ নেই দাদা অন্ত প্রাণ ধীরেন বাবুর।
এই ভট্টাচার্য বাড়িতে এই যে এত আয়োজন তার কারণ আজ বাড়ির সবার প্রিয় ছোটো মেয়ে তাথৈ তার পড়াশোনা শেষ করে বাড়ি ফিরছে, এই তাথৈ ধীরেন বাবুর একমাত্র মেয়ে আর বীরেন বাবুরও এক মেয়ে আছে নাম বৃষ্টি, কিছু বছর আগে দুই বোনকেই পড়াশোনা করার জন্য অন্য শহরে নিজের এক আত্মীয়ের কাছে পাঠিয়ে দেন বীরেন বাবু, বৃষ্টি কিছুদিন আগে ফিরে এসেছে আর আজ আসছে তাথৈ।
প্লেনে ফার্স্ট ক্লাসে জানালার ধারের একটি সিটে বসে বাইরের দিকে দেখছে এক যুবতী, যুবতীটি ফর্সা গায়ে একটা সাদা শার্ট, আর নীল জিন্স, চোখে মাথায় চুলটা হাল্কা লাল রঙ করা পনিটেল করে বাধা, মুখে সবসময় একটা গাম্ভীর্য, অনেকদিন পরে নিজের শহরে নিজের বাড়িতে ফিরছে সে তবুও তার মুখে হাসি নেই।
বিমানবন্দরে প্লেন ল্যাণ্ড করলে পরে যুবতীটি চেকিংএর ফর্মালিটি শেষ করে বাইরে বেরিয়ে এল যেখানে তার জন্য নীল গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির ড্রাইভার তাকে দেখে বললো: ওয়েলকাম ম্যাডাম
যুবতী: থ্যাংক ইউ
ড্রাইভার লাগেজগুলো গাড়ির পিছনে ঢুকিয়ে দিল আর যুবতীটি গাড়ির ব্যাকসিটে উঠলো, তারপর ড্রাইভার সামনে স্টিয়ারিং এ বসে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করলো "বাড়ি তো ম্যাডাম?"
যুবতীটি: হুম।
ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট করলো।
একটু ভুল হলেই চাকরদের কড়া বকুনি দিচ্ছেন বৈশালী দেবী, মাঝে মাঝে কিচেনে গিয়ে দেখছেন রান্না ঠিক ঠাক হচ্ছে কি না, আজ যে তার মেয়ে আসছে, কত বছর পরে ,মেয়ের প্লেন ল্যাণ্ড করে গেছে অনেকক্ষণ আগেই বাড়ির ড্রাইভার ফোন করে জানিয়েছিল, যখন তখন চলে আসবে, হটাৎ হাক পাড়লেন "বৌমা"
এক যুবতী তার সামনে এসে নতমস্তকে দাঁড়ালো, বৈশালী দেবী বললেন: সব ব্যবস্থা হয়েছে? ও কিন্তু এক্ষুনি চলে আসবে, নাকি নিজের কোনো পার্টিতে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত?
যুবতী: হয়েছে মা, আপনি একটু দেখে নিন। ইনি বৈশালী দেবীর ছেলে রকির বউ বিদিশা, ব্যবস্থা দেখে বৈশালী দেবী খুশী হলেও মুখে প্রকাশ করলেন না, বললেন: আরতির থালা সাজানো হয়েছে?
বিদিশা: হয়েছে মা।
[HIDE]
এমন সময় কলিং বেল বাজার আওয়াজ, বৈশালী দেবী বিদিশাকে বলেন: যাও আরতির থালা নিয়ে এসো, একজন চাকর দরজা খোলে এবং দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন তিনিই তাথৈ তার জন্যই এত আয়োজন তাথৈ ঘরে তিনি ঢুকতে গিয়েই বাধা পায় সামনে বৈশালী দেবী দাঁড়িয়ে আছেন হাতে একটা থালায় জ্বলন্ত প্রদীপ আর কিছু ধান-দুব্বো নিয়ে।
বৈশালী দেবী তাথৈএর আরতি করেন তারপর বলেন : আয় এবার ভিতরে আয় মা।
তাথৈ ঘরে ঢুকে মহিলার পা ছুঁয়ে প্রণাম করেন, মহিলা আশীর্বাদ করেন "সুখে থাক মা, দীর্ঘজীবী হ"
তাথৈ: তুমি কেমন আছো পিসি?
বৈশালী দেবী: আমার মেয়ে চলে এসেছে, আর কিভাবে খারাপ থাকবো?
বলে তাথৈকে বুকে জড়িয়ে আদর করতে থাকেন। তারপর খোশগল্প চলতে থাকে
তাথৈ: বাপি কোথায়? আর মা? আর জ্যেঠুমণি-বড়মা?
বৈশালী দেবী উত্তর দেবার আগেই দরজার বাইরে থেকে সমবেত কণ্ঠস্বর ভেসে আসে এইতো আমরা, আমাদের তাথৈ মার জন্য গিফ্ট নিতে গিয়েছিলাম। তাথৈ এবার একে একে সবাইকে প্রণাম করে তারপর বলে কি গিফ্ট?
দুজন পুরুষেরই গলায় মোটা সোনার চেন, পুরুষ্ট গোঁফ হাতের আঙ্গুল জুড়ে সোনার আংটি মাথায় কাচাপাকা মেশানো চুল, যিনি বয়সে বড়ো তার মুখ ঔদ্ধত্য ফুটে বেরোচ্ছে তিনিই যে বীরেন ভট্টাচার্য সেটা আর বলে দিতে হয় না, তিনি বলেন: তার জন্য তো বাইরে আসতে হবে, এসো বাইরে এসো।
সবাই বাইরে যায় গিয়ে দেখে বাড়ির গেটের বাইরে আরো একটা নতুন কেনা সিলভার রঙের গাড়ি দাঁড়িয়ে
তাথৈ: এটা আমার জন্য?
বীরেন বাবু: একদম, এটা শুধু আমার তাথৈ মার জন্য।
তাথৈ আনন্দে লোকটির গলা জড়িয়ে ধরে "থ্যাংক ইউ জ্যেঠুমণি"।
সন্ধ্যাবেলায় তাথৈ একটা ফোন করে "হ্যালো, মিস্টার গুপ্ত?
ফোনের অপর প্রান্তে: বলুন ম্যাডাম
তাথৈ: আপনার সাথে দেখা করতে চাই, আধঘন্টার মধ্যে আপনার অফিসে আসছি
ফোনের অপর প্রান্তে:ঠিক আছে ম্যাডাম
মিস্টার গুপ্ত নামক ভদ্রলোকের অফিসে টেবিলের একদিকের চেয়ারে স্যুট-বুট পড়া ব্যাক্তি অর্থাৎ মিস্টার গুপ্ত বসে আছেন আর অপর দিকের একটা চেয়ারে তাথৈ বসে আছে।
মিস্টার গুপ্ত: এবার বলুন ম্যাডাম?
তাথৈ: আপনাকে যে কাজটা দিয়েছিলাম করেছেন?
মিস্টার গুপ্ত: হ্যাঁ
তাথৈ: খোঁজ পেয়েছেন?
মিস্টার গুপ্ত: না, ম্যাডাম, ওদের এক আত্মীয় থাকে আপনার জ্যেঠুর খুব পরিচিত তারা তাদের কাছেও গিয়েছিলাম কিন্তু তারা তো শুনে আকাশ থেকে পড়লেন বললেন ওরা তো বহুবছর আগে এক দুর্ঘটনায় সবাই মারা গেছে।
তাথৈ হতভম্ব হয়ে গেল বললো: সবাই মারা গেছে? কিভাবে?
মিস্টার গুপ্ত: বললাম যে একটা দুর্ঘটনায়, কি দুর্ঘটনা সেটা অবশ্যি বললেন না তারা।
তাথৈ: ওই আত্মীয়ের কাছে ছেলেটির কোনো ছবি আছে?
মিস্টার গুপ্ত: সেই ছোটোবেলার একটা ছবি পেয়েছি
তাথৈ: দিন
মিস্টার গুপ্ত তাথৈকে একটা ছবিটা দিল
তাথৈ: ধন্যবাদ, আপনার পেমেন্ট আপনি পেয়ে যাবেন আর এই ব্যাপারে যেন আর কেউ না জানে
মিস্টার গুপ্ত: ঠিক আছে ম্যাডাম, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ম্যাডাম?
তাথৈ: কি?
মিস্টার গুপ্ত: ছেলেটি কি বিশেষ কেউ?
এবারে জ্বলে উঠলো তাথৈ: সে কৈফিয়ত আপনাকে দিতে আমি বাধ্য নই, আপনার অ্যাকাউন্টে টাকা চলে যাবে আর এই সম্বন্ধে কেউ যেন কিছু না জানে।
[/HIDE]
নারী: কি যে বলো, কিভাবে করবো উনি আমার দাদা
পুরুষ: তোমার নিজের দাদা নাকি? কোথায় কোন দূর সম্পর্কের দাদা
নারী: তাহলেও, দাদা তো
পুরুষ: তো সারাজীবন এইভাবেই থাকবে নাকি? আর তাছাড়া এতগুলো টাকাও হাতছাড়া হয়ে যাবে না করলে আমাদের ছেলের কথাটাও তো ভাবতে হবে ওরো তো একটা ভবিষ্যত আছে, না না মণি এই কাজটা করতেই হবে।
নারী: কত টাকা?
পুরুষ: অনেক, সেইসঙ্গে একটা ফ্ল্যাটও পাওয়া যাবে।
নারী: সত্যি বলছো?
পুরুষ: একদম সত্যি, দাদা তো বললেন, তুমি খালি জিনিসটা খাবারের সাথে মিশিয়ে ওদের তিনজনকে খাইয়ে দেবে বাকিটা দাদা বুঝে নেবে।
নারী: কোনো ঝামেলা হবে না তো?
পুরুষ: কিচ্ছু হবে না।
পুরুষের একটু হাসির আওয়াজ এলো সাথে নারীর আওয়াজ: উহ কি করছো ছাড়ো ছেলে জেগে যাবে
পুরুষ:এখন তোমাকে ছাড়তে ইচ্ছা করছে না, চলো আজ একটু করি। একটু পরে নারীটার আঃ করে একটু আওয়াজের সাথে একটু হাসির আওয়াজ এলো তারপর পুরুষ নারী দুজনের ঘনঘন কিন্তু মৃদু শিৎকারের আওয়াজ আসতে লাগলো তারপর আবার চুপচাপ।
**----------**
শহরের এক বিলাসবহুল বাড়ি জুড়ে এখন চরম ব্যাস্ততা দেখা যাচ্ছে, চাকরদের দম ফেলবার ফুরসত নেই, দরজা সাজানো, ঘর ডেকোরেট করা, কোথায় কোথায় নোংরা জমে আছে সেটা চেক করা এবং পরিষ্কার করা ইত্যাদি আর সবকিছুর উপর কড়া দৃষ্টি রেখেছেন এক ষাটোর্ধ্ব মহিলা।
ইনি বৈশালী দেবী, আর এই বিলাসবহুল বাড়িটি শহরর দোর্দণ্ডপ্রতাপ রাজনৈতিক নেতা বীরেন ভট্টাচার্যের, যিনি সম্পর্কে বৈশালী দেবীর ভাই, জামাইবাবু মারা যাওয়ার পরে বীরেন ভট্টাচার্য দিদি ও তার একমাত্র ভাগ্নেকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন, সেই থেকে বৈশালী দেবী ও তার ছেলে এখানেই থাকেন। বীরেন ভট্টাচার্য শুধু যে একজন রাজনৈতিক নেতা তাই নয় পুরো শহর জুড়ে তার আধিপত্য, প্রথম জীবনে একজন প্রোমোটার ছিলেন বীরেন বাবু তারপর ধীরে ধীরে উন্নতি করে আজকে এই ক্ষমতা অর্জন করেছেন, নিজের ব্যাবসা যেমন বাড়িয়েছেন তেমনি রাজনীতিতে যোগ দিয়ে ভোটে জিতে নেতা হয়েছেন অবশ্য লোকমুখে এও শোনা যায় যে এই ক্ষমতা অর্জন টা সৎ উপায়ে করেননি বীরেন বাবু এর জন্য নাকি বহু লোককে খুন করেছেন কিন্তু কখনো কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি তাই পুলিশ তার গায়ে হাত দিতে পারেনি আর এখন তো পুরো পুলিশ ডিপার্টমেন্ট তার হাতের মুঠোয়, এখন তার লক্ষ্য নিজের শহর ছেড়ে অন্য শহরে তার ব্যাবসা আর ক্ষমতার প্রসার করা, বিশেষত বাণিজ্যনগরীতে পা জমানো কিন্তু সেখানে অন্য ক্ষমতাধর ব্যাবসায়ীদের ভিড় তাই তিনি ঠিক পাত্তা পাচ্ছেন না তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই নিজের শহরেই আরও বেশি করে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন,আর তার সবকাজে তার সাথে থাকে তার বিশ্বস্ত অনুগত ভাই ধীরেন ভট্টাচার্য, দাদার মতো এনাকেও শহরের লোক কম ভয় পায় না, দাদার হুকুমে করতে পারেন না এমন কাজ নেই দাদা অন্ত প্রাণ ধীরেন বাবুর।
এই ভট্টাচার্য বাড়িতে এই যে এত আয়োজন তার কারণ আজ বাড়ির সবার প্রিয় ছোটো মেয়ে তাথৈ তার পড়াশোনা শেষ করে বাড়ি ফিরছে, এই তাথৈ ধীরেন বাবুর একমাত্র মেয়ে আর বীরেন বাবুরও এক মেয়ে আছে নাম বৃষ্টি, কিছু বছর আগে দুই বোনকেই পড়াশোনা করার জন্য অন্য শহরে নিজের এক আত্মীয়ের কাছে পাঠিয়ে দেন বীরেন বাবু, বৃষ্টি কিছুদিন আগে ফিরে এসেছে আর আজ আসছে তাথৈ।
প্লেনে ফার্স্ট ক্লাসে জানালার ধারের একটি সিটে বসে বাইরের দিকে দেখছে এক যুবতী, যুবতীটি ফর্সা গায়ে একটা সাদা শার্ট, আর নীল জিন্স, চোখে মাথায় চুলটা হাল্কা লাল রঙ করা পনিটেল করে বাধা, মুখে সবসময় একটা গাম্ভীর্য, অনেকদিন পরে নিজের শহরে নিজের বাড়িতে ফিরছে সে তবুও তার মুখে হাসি নেই।
বিমানবন্দরে প্লেন ল্যাণ্ড করলে পরে যুবতীটি চেকিংএর ফর্মালিটি শেষ করে বাইরে বেরিয়ে এল যেখানে তার জন্য নীল গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির ড্রাইভার তাকে দেখে বললো: ওয়েলকাম ম্যাডাম
যুবতী: থ্যাংক ইউ
ড্রাইভার লাগেজগুলো গাড়ির পিছনে ঢুকিয়ে দিল আর যুবতীটি গাড়ির ব্যাকসিটে উঠলো, তারপর ড্রাইভার সামনে স্টিয়ারিং এ বসে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করলো "বাড়ি তো ম্যাডাম?"
যুবতীটি: হুম।
ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট করলো।
একটু ভুল হলেই চাকরদের কড়া বকুনি দিচ্ছেন বৈশালী দেবী, মাঝে মাঝে কিচেনে গিয়ে দেখছেন রান্না ঠিক ঠাক হচ্ছে কি না, আজ যে তার মেয়ে আসছে, কত বছর পরে ,মেয়ের প্লেন ল্যাণ্ড করে গেছে অনেকক্ষণ আগেই বাড়ির ড্রাইভার ফোন করে জানিয়েছিল, যখন তখন চলে আসবে, হটাৎ হাক পাড়লেন "বৌমা"
এক যুবতী তার সামনে এসে নতমস্তকে দাঁড়ালো, বৈশালী দেবী বললেন: সব ব্যবস্থা হয়েছে? ও কিন্তু এক্ষুনি চলে আসবে, নাকি নিজের কোনো পার্টিতে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত?
যুবতী: হয়েছে মা, আপনি একটু দেখে নিন। ইনি বৈশালী দেবীর ছেলে রকির বউ বিদিশা, ব্যবস্থা দেখে বৈশালী দেবী খুশী হলেও মুখে প্রকাশ করলেন না, বললেন: আরতির থালা সাজানো হয়েছে?
বিদিশা: হয়েছে মা।
[HIDE]
এমন সময় কলিং বেল বাজার আওয়াজ, বৈশালী দেবী বিদিশাকে বলেন: যাও আরতির থালা নিয়ে এসো, একজন চাকর দরজা খোলে এবং দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন তিনিই তাথৈ তার জন্যই এত আয়োজন তাথৈ ঘরে তিনি ঢুকতে গিয়েই বাধা পায় সামনে বৈশালী দেবী দাঁড়িয়ে আছেন হাতে একটা থালায় জ্বলন্ত প্রদীপ আর কিছু ধান-দুব্বো নিয়ে।
বৈশালী দেবী তাথৈএর আরতি করেন তারপর বলেন : আয় এবার ভিতরে আয় মা।
তাথৈ ঘরে ঢুকে মহিলার পা ছুঁয়ে প্রণাম করেন, মহিলা আশীর্বাদ করেন "সুখে থাক মা, দীর্ঘজীবী হ"
তাথৈ: তুমি কেমন আছো পিসি?
বৈশালী দেবী: আমার মেয়ে চলে এসেছে, আর কিভাবে খারাপ থাকবো?
বলে তাথৈকে বুকে জড়িয়ে আদর করতে থাকেন। তারপর খোশগল্প চলতে থাকে
তাথৈ: বাপি কোথায়? আর মা? আর জ্যেঠুমণি-বড়মা?
বৈশালী দেবী উত্তর দেবার আগেই দরজার বাইরে থেকে সমবেত কণ্ঠস্বর ভেসে আসে এইতো আমরা, আমাদের তাথৈ মার জন্য গিফ্ট নিতে গিয়েছিলাম। তাথৈ এবার একে একে সবাইকে প্রণাম করে তারপর বলে কি গিফ্ট?
দুজন পুরুষেরই গলায় মোটা সোনার চেন, পুরুষ্ট গোঁফ হাতের আঙ্গুল জুড়ে সোনার আংটি মাথায় কাচাপাকা মেশানো চুল, যিনি বয়সে বড়ো তার মুখ ঔদ্ধত্য ফুটে বেরোচ্ছে তিনিই যে বীরেন ভট্টাচার্য সেটা আর বলে দিতে হয় না, তিনি বলেন: তার জন্য তো বাইরে আসতে হবে, এসো বাইরে এসো।
সবাই বাইরে যায় গিয়ে দেখে বাড়ির গেটের বাইরে আরো একটা নতুন কেনা সিলভার রঙের গাড়ি দাঁড়িয়ে
তাথৈ: এটা আমার জন্য?
বীরেন বাবু: একদম, এটা শুধু আমার তাথৈ মার জন্য।
তাথৈ আনন্দে লোকটির গলা জড়িয়ে ধরে "থ্যাংক ইউ জ্যেঠুমণি"।
সন্ধ্যাবেলায় তাথৈ একটা ফোন করে "হ্যালো, মিস্টার গুপ্ত?
ফোনের অপর প্রান্তে: বলুন ম্যাডাম
তাথৈ: আপনার সাথে দেখা করতে চাই, আধঘন্টার মধ্যে আপনার অফিসে আসছি
ফোনের অপর প্রান্তে:ঠিক আছে ম্যাডাম
মিস্টার গুপ্ত নামক ভদ্রলোকের অফিসে টেবিলের একদিকের চেয়ারে স্যুট-বুট পড়া ব্যাক্তি অর্থাৎ মিস্টার গুপ্ত বসে আছেন আর অপর দিকের একটা চেয়ারে তাথৈ বসে আছে।
মিস্টার গুপ্ত: এবার বলুন ম্যাডাম?
তাথৈ: আপনাকে যে কাজটা দিয়েছিলাম করেছেন?
মিস্টার গুপ্ত: হ্যাঁ
তাথৈ: খোঁজ পেয়েছেন?
মিস্টার গুপ্ত: না, ম্যাডাম, ওদের এক আত্মীয় থাকে আপনার জ্যেঠুর খুব পরিচিত তারা তাদের কাছেও গিয়েছিলাম কিন্তু তারা তো শুনে আকাশ থেকে পড়লেন বললেন ওরা তো বহুবছর আগে এক দুর্ঘটনায় সবাই মারা গেছে।
তাথৈ হতভম্ব হয়ে গেল বললো: সবাই মারা গেছে? কিভাবে?
মিস্টার গুপ্ত: বললাম যে একটা দুর্ঘটনায়, কি দুর্ঘটনা সেটা অবশ্যি বললেন না তারা।
তাথৈ: ওই আত্মীয়ের কাছে ছেলেটির কোনো ছবি আছে?
মিস্টার গুপ্ত: সেই ছোটোবেলার একটা ছবি পেয়েছি
তাথৈ: দিন
মিস্টার গুপ্ত তাথৈকে একটা ছবিটা দিল
তাথৈ: ধন্যবাদ, আপনার পেমেন্ট আপনি পেয়ে যাবেন আর এই ব্যাপারে যেন আর কেউ না জানে
মিস্টার গুপ্ত: ঠিক আছে ম্যাডাম, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ম্যাডাম?
তাথৈ: কি?
মিস্টার গুপ্ত: ছেলেটি কি বিশেষ কেউ?
এবারে জ্বলে উঠলো তাথৈ: সে কৈফিয়ত আপনাকে দিতে আমি বাধ্য নই, আপনার অ্যাকাউন্টে টাকা চলে যাবে আর এই সম্বন্ধে কেউ যেন কিছু না জানে।
[/HIDE]