৯ থেকে ১৫ এপ্রিল ভার্চ্যুয়ালি আয়োজিত হলো ইউরোপিয়ান গার্লস ম্যাথমেটিক্যাল অলিম্পিয়াড (ইজিএমও) ২০২১, যেখানে প্রথমবারের মতো অংশ নেয় বাংলাদেশ দল। সেই দলের প্রস্তুতি, অর্জন আর প্রত্যাশার কথা।
রৌপ্যপদক পেয়েছে নুজহাত আহমেদ
‘আমি খুব অলস। তাই শুধু অঙ্ক করতেই ভালো লাগে!’
‘আমিও!’
‘আমিও!’
‘আমিও!’
১৮ এপ্রিল গুগল মিটে যখন একদল গণিতপ্রেমীর সঙ্গে কথা হচ্ছিল, এমন অনেক বিষয়েই তাদের মধ্যে মিল পাওয়া গেল। সম্প্রতি তারা অংশ নিয়েছিল ইউরোপিয়ান গার্লস ম্যাথমেটিক্যাল অলিম্পিয়াডে (ইজিএমও)। এ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের এবারই প্রথম অংশগ্রহণ। প্রথমবারেই অর্জন—একটি রৌপ্য ও একটি ব্রোঞ্জপদক। দলগত স্কোর ২৭ নিয়ে আমাদের অবস্থান ৩১তম, যা ভারত, নেদারল্যান্ড, ইতালির মতো দেশের চেয়ে এগিয়ে। অনলাইনের এ আলাপচারিতায় প্রশ্ন করেছিলাম, গণিত ছাড়া আর কী কী বিষয়ে আগ্রহ আছে? সে প্রশ্নেই পেলাম এমন উত্তর, যে কথা শুরুতে বলছিলাম।
রাইয়ান বিনতে মোস্তাফা পেয়েছে ব্রোঞ্জপদক
২০১২ সালে যাত্রা শুরু হয়ে ধীরে ধীরে ইজিএমও হয়ে উঠেছে মেয়েদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণিত অলিম্পিয়াড। এ বছর ইজিএমও জর্জিয়ার কুটাইসি শহরে হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারির কারণে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে নিজ নিজ দেশে বসেই অংশ নেয় প্রতিযোগীরা। বাংলাদেশ দলে ছিল ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী নুজহাত আহমেদ, টিকাটুলী কামরুন্নেসা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী আরিফা আলম, নাটোরের নাটোর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রাইয়ান বিনতে মোস্তাফা এবং রাজশাহীর সরকারি পি এন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সাফা তাসনিম। এ ছাড়া এই দলের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের একাডেমিক সমন্বয়ক ঈপ্সিতা বহ্নি উপমা। উপদলনেতার দায়িত্ব পালন করেন আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী এবং পর্যবেক্ষক হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের একাডেমিক সমন্বয়ক নিশাত আনজুম। এ বছর বিশ্বের মোট ৫৫টি দেশের ২১৩ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে এ আয়োজনে।
বাংলাদেশ দলের অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও করোনা পরিস্থিতিতে একেবারে মাঠপর্যায় থেকে দল বাছাই করে আনা কঠিন ছিল। তাই বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের জাতীয় ক্যাম্প ও বিভিন্ন জাতীয় আয়োজনের চূড়ান্ত পর্বে থাকা নারী প্রতিযোগীদের থেকে দল বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অনলাইনেই শুরু হয় বাছাইপর্বের পরীক্ষা ও ছোট ছোট ক্যাম্প। প্রাথমিক বাছাই শেষে মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয় চূড়ান্ত ক্যাম্প। এক মাস ক্যাম্পের পর আয়োজকেরা সেরাদের নিয়ে তৈরি করেন আন্তর্জাতিক দল।
সাফা তাসনিম
১১ ও ১২ এপ্রিল—দুই দিন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিদিন তিনটি করে মোট ছয়টি সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতিযোগীরা সাড়ে চার ঘণ্টা সময় পেয়েছে। ১৪ এপ্রিল প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, ১৫ নম্বর নিয়ে রৌপ্যপদক পেয়েছে নুজহাত আহমেদ। অন্যদিকে, ৮ নম্বর নিয়ে রাইয়ান বিনতে মোস্তাফা পেয়েছে ব্রোঞ্জপদক। দলের অন্য সদস্যদের প্রাপ্ত নম্বরও বেশ ভালো।
নুজহাত আহমেদ বলছিল, ‘২০১৬ সালে প্রথম গণিত অলিম্পিয়াডের ক্যাম্পে থাকার সুযোগ পাই। ২০১৮ সালেও সুযোগ পেয়েছি। ক্যাম্পে অংশগ্রহণ আমার গণিতে আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু ২০১৮ সালে আঞ্চলিক পর্বেই বাদ পড়ে যাই। পরের বছরের জন্য আবার প্রস্তুতি নিতে থাকি। ২০১৯ সালে আবার জাতীয় ক্যাম্পে থাকার সুযোগ পাই। সে সুবাদেই যুক্ত হতে পেরেছি ইজিএমওর বাংলাদেশ দলে।’ পড়াশোনায় সমান মনোযোগ রেখে গণিত অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতি চালিয়ে গেছে নুজহাত। সঙ্গে সময় কেটেছে গান শুনে কিংবা মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও রকিব হাসানের বই পড়ে। বড় হয়ে গণিত নিয়েই পড়তে চায় সে।
প্রস্তুতিতে একটু ভিন্নতা ছিল রাইয়ান বিনতে মোস্তাফার। গতানুগতিক বিশ্লেষণ না পড়ে বরং বেশি বেশি সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছে সে। ২০১৪ সালে নাটোর থেকে রাজশাহী শহরে গিয়ে আঞ্চলিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নেয় রাইয়ান। গণিত উৎসবের আগের রাতে রাজশাহী গিয়ে চাচাতো ভাইয়ের সহায়তায় যতটুকু পারত, প্রস্তুতি নিত। ২০১৯ সালে প্রথমবার জাতীয় ক্যাম্পে থাকার সুযোগ হয়। এরপর নিজে নিজেই প্রশ্নের সমাধান করতে করতে প্রস্তুতি এগিয়ে নেয় রাইয়ান।
দলের অন্য দুই সদস্য সাফা তাসনিম ও আরিফা আলম জাতীয় পর্বের ক্যাম্পে অংশগ্রহণের সুযোগ পায় ২০১৮ সালে। বাসার সবার অনুপ্রেরণায় নিজের প্রস্তুতিতে আরও জোর দেয় সাফা। আর আরিফার মায়ের ছিল বিপুল আগ্রহ। তিনিই বারবার আরিফাকে উৎসাহ দিয়েছেন।
এত স্বল্প সময়ের প্রস্তুতিতেও দলের এমন ফলাফলে বেশ খুশি দলনেতা ঈপ্সিতা বহ্নি উপমা। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মেয়েদের হাইস্কুল পর্যায়ে ওঠার পর একাডেমিক পড়াশোনার বাইরে এ ধরনের আয়োজনে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে কম। এ ছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারে বাধা, প্রয়োজনীয় রিসোর্স না থাকাও বড় সমস্যা। তবু আমরা আগামী বছরগুলোয় আরও বেশি নারী প্রতিযোগীকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খুঁজে এনে তাদের গণিত অনুশীলনে সাহায্য করতে চাই।’
এবারের আয়োজনে আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা করেছে আব্দুল মোনেম লিমিটেড। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগামী বছরের ইজিএমও আয়োজন করা হবে হাঙ্গেরির এগার শহরে। সব ঠিক থাকলে বাংলাদেশ দল অংশ নেবে সে আয়োজনেও।
আরিফা আলম
রৌপ্যপদক পেয়েছে নুজহাত আহমেদ
‘আমি খুব অলস। তাই শুধু অঙ্ক করতেই ভালো লাগে!’
‘আমিও!’
‘আমিও!’
‘আমিও!’
১৮ এপ্রিল গুগল মিটে যখন একদল গণিতপ্রেমীর সঙ্গে কথা হচ্ছিল, এমন অনেক বিষয়েই তাদের মধ্যে মিল পাওয়া গেল। সম্প্রতি তারা অংশ নিয়েছিল ইউরোপিয়ান গার্লস ম্যাথমেটিক্যাল অলিম্পিয়াডে (ইজিএমও)। এ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের এবারই প্রথম অংশগ্রহণ। প্রথমবারেই অর্জন—একটি রৌপ্য ও একটি ব্রোঞ্জপদক। দলগত স্কোর ২৭ নিয়ে আমাদের অবস্থান ৩১তম, যা ভারত, নেদারল্যান্ড, ইতালির মতো দেশের চেয়ে এগিয়ে। অনলাইনের এ আলাপচারিতায় প্রশ্ন করেছিলাম, গণিত ছাড়া আর কী কী বিষয়ে আগ্রহ আছে? সে প্রশ্নেই পেলাম এমন উত্তর, যে কথা শুরুতে বলছিলাম।
রাইয়ান বিনতে মোস্তাফা পেয়েছে ব্রোঞ্জপদক
২০১২ সালে যাত্রা শুরু হয়ে ধীরে ধীরে ইজিএমও হয়ে উঠেছে মেয়েদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণিত অলিম্পিয়াড। এ বছর ইজিএমও জর্জিয়ার কুটাইসি শহরে হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারির কারণে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে নিজ নিজ দেশে বসেই অংশ নেয় প্রতিযোগীরা। বাংলাদেশ দলে ছিল ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী নুজহাত আহমেদ, টিকাটুলী কামরুন্নেসা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী আরিফা আলম, নাটোরের নাটোর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রাইয়ান বিনতে মোস্তাফা এবং রাজশাহীর সরকারি পি এন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সাফা তাসনিম। এ ছাড়া এই দলের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের একাডেমিক সমন্বয়ক ঈপ্সিতা বহ্নি উপমা। উপদলনেতার দায়িত্ব পালন করেন আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী এবং পর্যবেক্ষক হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের একাডেমিক সমন্বয়ক নিশাত আনজুম। এ বছর বিশ্বের মোট ৫৫টি দেশের ২১৩ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে এ আয়োজনে।
বাংলাদেশ দলের অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও করোনা পরিস্থিতিতে একেবারে মাঠপর্যায় থেকে দল বাছাই করে আনা কঠিন ছিল। তাই বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের জাতীয় ক্যাম্প ও বিভিন্ন জাতীয় আয়োজনের চূড়ান্ত পর্বে থাকা নারী প্রতিযোগীদের থেকে দল বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অনলাইনেই শুরু হয় বাছাইপর্বের পরীক্ষা ও ছোট ছোট ক্যাম্প। প্রাথমিক বাছাই শেষে মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয় চূড়ান্ত ক্যাম্প। এক মাস ক্যাম্পের পর আয়োজকেরা সেরাদের নিয়ে তৈরি করেন আন্তর্জাতিক দল।
সাফা তাসনিম
১১ ও ১২ এপ্রিল—দুই দিন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিদিন তিনটি করে মোট ছয়টি সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতিযোগীরা সাড়ে চার ঘণ্টা সময় পেয়েছে। ১৪ এপ্রিল প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, ১৫ নম্বর নিয়ে রৌপ্যপদক পেয়েছে নুজহাত আহমেদ। অন্যদিকে, ৮ নম্বর নিয়ে রাইয়ান বিনতে মোস্তাফা পেয়েছে ব্রোঞ্জপদক। দলের অন্য সদস্যদের প্রাপ্ত নম্বরও বেশ ভালো।
নুজহাত আহমেদ বলছিল, ‘২০১৬ সালে প্রথম গণিত অলিম্পিয়াডের ক্যাম্পে থাকার সুযোগ পাই। ২০১৮ সালেও সুযোগ পেয়েছি। ক্যাম্পে অংশগ্রহণ আমার গণিতে আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু ২০১৮ সালে আঞ্চলিক পর্বেই বাদ পড়ে যাই। পরের বছরের জন্য আবার প্রস্তুতি নিতে থাকি। ২০১৯ সালে আবার জাতীয় ক্যাম্পে থাকার সুযোগ পাই। সে সুবাদেই যুক্ত হতে পেরেছি ইজিএমওর বাংলাদেশ দলে।’ পড়াশোনায় সমান মনোযোগ রেখে গণিত অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতি চালিয়ে গেছে নুজহাত। সঙ্গে সময় কেটেছে গান শুনে কিংবা মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও রকিব হাসানের বই পড়ে। বড় হয়ে গণিত নিয়েই পড়তে চায় সে।
প্রস্তুতিতে একটু ভিন্নতা ছিল রাইয়ান বিনতে মোস্তাফার। গতানুগতিক বিশ্লেষণ না পড়ে বরং বেশি বেশি সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছে সে। ২০১৪ সালে নাটোর থেকে রাজশাহী শহরে গিয়ে আঞ্চলিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নেয় রাইয়ান। গণিত উৎসবের আগের রাতে রাজশাহী গিয়ে চাচাতো ভাইয়ের সহায়তায় যতটুকু পারত, প্রস্তুতি নিত। ২০১৯ সালে প্রথমবার জাতীয় ক্যাম্পে থাকার সুযোগ হয়। এরপর নিজে নিজেই প্রশ্নের সমাধান করতে করতে প্রস্তুতি এগিয়ে নেয় রাইয়ান।
দলের অন্য দুই সদস্য সাফা তাসনিম ও আরিফা আলম জাতীয় পর্বের ক্যাম্পে অংশগ্রহণের সুযোগ পায় ২০১৮ সালে। বাসার সবার অনুপ্রেরণায় নিজের প্রস্তুতিতে আরও জোর দেয় সাফা। আর আরিফার মায়ের ছিল বিপুল আগ্রহ। তিনিই বারবার আরিফাকে উৎসাহ দিয়েছেন।
এত স্বল্প সময়ের প্রস্তুতিতেও দলের এমন ফলাফলে বেশ খুশি দলনেতা ঈপ্সিতা বহ্নি উপমা। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মেয়েদের হাইস্কুল পর্যায়ে ওঠার পর একাডেমিক পড়াশোনার বাইরে এ ধরনের আয়োজনে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে কম। এ ছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারে বাধা, প্রয়োজনীয় রিসোর্স না থাকাও বড় সমস্যা। তবু আমরা আগামী বছরগুলোয় আরও বেশি নারী প্রতিযোগীকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খুঁজে এনে তাদের গণিত অনুশীলনে সাহায্য করতে চাই।’
এবারের আয়োজনে আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা করেছে আব্দুল মোনেম লিমিটেড। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগামী বছরের ইজিএমও আয়োজন করা হবে হাঙ্গেরির এগার শহরে। সব ঠিক থাকলে বাংলাদেশ দল অংশ নেবে সে আয়োজনেও।
আরিফা আলম