What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ওয়াহ্হাবী আন্দোলন : উৎপত্তি, ক্রমবিকাশ এবং মুসলিম বিশ্বে এর প্রভাব (1 Viewer)

(৫) অর্থব্যবস্থা :
অর্থব্যবস্থার ক্ষেত্রেও পুরোপুরিভাবে রাসূল (ছাঃ)-এর যুগকে অনুসরণ করা হ’ত। বায়তুল মাল ছিল এই ওয়াহ্হাবী রাজ্যের প্রধান অর্থ তহবিল। এই তহবিলের মূল উৎস ছিল যাকাত এবং ওশর। গণীমতের এক-পঞ্চমাংশও ছিল এর অন্যতম উৎস। জনগণের উপর বাড়তি কোন করারোপ করা হ’ত না। (ইবনে বিশর, প্রাগুক্ত, ১/২৭৩-২৭৪ পৃঃ।) সূদী কারবারকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। কর্য হিসাবে অর্থ প্রদান কেবলমাত্র মুযারাবা ও মুশারাকার ক্ষেত্রে অনুমোদিত ছিল। (John Lewis Burchhardt, Ibid, P.304. ) আর কুরআনে বর্ণিত খাতসমূহেই বায়তুল মালের অর্থ ব্যয়িত হ’ত এবং এখান থেকেই রাষ্ট্রীয় সকল ব্যয় নির্বাহ করা হ’ত। (ইবনে বিশর, প্রাগুক্ত, ১/২৭৫ পৃঃ।) সামাজিক শান্তি ও শৃংখলার অসাধারণ উন্নতি আরবদেরকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করেছিল। বাজারে খাদ্যদ্রব্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ ছিল এবং দ্রব্যমূল্য হ্রাস পেয়েছিল। (মাস‘ঊদ আলম নদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১১৯।) চাষাবাদ ও পশুপালন ছিল জনগণের জীবিকা নির্বাহের মূল উপাদান। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য তো ছিল তাদের প্রাচীন ঐতিহ্য। দূর-দূরান্তে ব্যবসার উদ্দেশ্যে গমন করা ছিল তাদের নিয়মিত অভ্যাস। পার্শ্ববর্তী বছরা, জেদ্দা, ছানআ‘, বাহরাইন, কুয়েত, দেমাশক ছাড়াও সুদূর দিল্লী পর্যন্ত তাদের ব্যবসায়িক যোগাযোগ ছিল। এসব ব্যবসায়িক কাফেলা একই সাথে ইসলামের বিশুদ্ধ দাওয়াতও দেশে দেশে বহন করে নিয়ে যেত। (আল-মাওসূ‘আতুল আরাবিয়াহ আল-আলামিয়াহ।)
 
(৬) শিক্ষাব্যবস্থা :
শিক্ষাগার হিসাবে তখন মসজিদ এবং মক্তব সমূহই ব্যবহৃত হ’ত। যেখানে প্রথম স্তরের দ্বীনী জ্ঞান অর্জনের ব্যবস্থা ছিল। রিয়াযুছছালেহীন, তাফসীরে ত্বাবারী, তাফসীরে ইবনে কাছীর, ইবনু তায়মিয়াহর গ্রন্থসমূহ এবং শায়খ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাবের গ্রন্থসমূহ সেখানে অবশ্যপাঠ্য ছিল। এছাড়া আরবী সাহিত্য, উলূমুল কুরআন ও হাদীছ এবং গণিতও শিক্ষা দেয়া হত। শায়খ নিজে এবং তাঁর সন্তানাদি ও ছাত্ররা রাজ্যের সর্বত্র শিক্ষকতার দায়িত্বগ্রহণ করেন। ছাত্রদের শিক্ষা ব্যয় এবং শিক্ষকদের বেতন-ভাতা রাষ্ট্রীয়ভাবেই বহন করা হ’ত। (আল-মাওসূ‘আতুল আরাবিয়াহ আল-আলামিয়াহ।) সেখানে জ্ঞানচর্চার হার এমনই বৃদ্ধি পায় যে, কোন কোন ঐতিহাসিক দিরঈইয়াকে মধ্যযুগের রোমের সাথে তুলনা করেছেন। (আমীন আর-রায়হানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৩২।)
 
(৭) বহির্বিশ্বের সাথে সম্পর্ক :
প্রতাপশালী তুর্কী সালতানাতের নিয়ন্ত্রণমুক্ত থেকে গোটা আরব উপদ্বীপের বিশাল এলাকা জুড়ে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠন করে তাক লাগিয়ে দেয় ওয়াহ্হাবীরা। তাদের এই উত্থানকে পার্শ্ববর্তী তুর্কী সালতানাতের অনুগত মুসলিম অঞ্চলসমূহ মোটেও ভাল চোখে নেয়নি; বরং ওয়াহ্হাবীদের শিরক ও বিদ‘আত বিরোধী কঠোর সংস্কারবাদী মনোভাবের কারণে তারা মনেপ্রাণে তাদের পতন কামনা করছিল। ফলে আরবের বাইরে ওয়াহ্হাবীদের কোন মিত্র ছিল না। তবে আরবের সর্বত্র সঊদীদের ক্রমবর্ধমান প্রভাব লক্ষ্য করে বৃটিশরা তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রাখতে সঊদীদের সাথে মিত্রতার সম্পর্ক স্থাপনের পরিকল্পনা করে। এলক্ষ্যে ১৭৯৯ সালে ঈস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কুয়েত প্রতিনিধি রেনল্ডের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল দিরঈইয়া সফর করে। এ সময় ইমাম আব্দুল আযীয বিন মুহাম্মাদ বিন সঊদ তাঁদেরকে উষ্ণ সংবর্ধনা জানান। এটাই ছিল দিরঈইয়ার সাথে কোন বহির্দেশের প্রথম সম্পর্ক স্থাপনের প্রয়াস। কিন্তু এ আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। সঊদীরা বৃটিশদের সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনা সম্পর্কে সচেতন থাকায় এসম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী ছিলেন না। ফলে পরবর্তীতে যদিও বৃটিশরা ওয়াহ্হাবীদের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছিল কিন্তু দিরঈইয়ার পতনের সাথে সাথে মিসরীয় সেনাপতি ইবরাহীম পাশাকে সংবর্ধনা প্রদান এবং ওয়াহ্হাবীদের বিরুদ্ধে অপবাদমূলক প্রপাগান্ডা চালানোর মাধ্যমে তাদের শঠতায় অাঁটা মুখোশ উন্মোচিত হয়। (আল-মাওসূ‘আতুল আরাবিয়াহ আল-আলামিয়াহ; মাসউদ আলম নদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৪৬।)
পরিশেষে বলা যায়, ১ম সঊদী রাষ্ট্রটি ছিল ওয়াহ্হাবী আন্দোলনের জন্য দর্পণস্বরূপ। নজদের বুকে যে সংস্কারের আহবান নিয়ে ওয়াহ্হাবী আন্দোলনের আবির্ভাব ঘটেছিল, তার হাতে-কলমে বাস্তবায়ন ক্ষেত্র ছিল এই রাষ্ট্রটি। একটি প্রতিকূল পরিবেশে ‘মানহাজুন নবুওয়াত’ তথা রাসূল (ছাঃ) ও খুলাফায়ে রাশেদীনের নীতিমালা অনুযায়ী সমাজ পরিচালনার যে দুঃসাধ্য চ্যালেঞ্জ নিয়েওয়াহ্হাবীরা ময়দানে নেমেছিল এবং আরব উপদ্বীপ থেকে শিরক ও বিদ‘আতকে সম্পূর্ণভাবে উৎখাত করতে সক্ষম হয়েছিল, তা সত্যিই তাদের অসামান্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর বহন করে। আল্লাহর অসীম রহমত যে, শায়খ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব ও তাঁর যোগ্য উত্তরসূরীরা এই মহান দায়িত্ব পালন করে আধুনিক মুসলিম বিশ্বকে পথভ্রষ্টতার অতল তলে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা করেছেন। (যার ধারাবাহিকতা পরবর্তীরাও কম-বেশী অনুসরণ করার ফলে আজও পর্যন্ত সঊদীআরবের মাটিতে ইসলামের মূল রূহটা বহুলাংশেই টিকে রয়েছে এবং শিরক ও বিদ‘আতের উপস্থিতি সেখানে প্রায় নেই বললেই চলে।-লেখক।)
 
এই আন্দোলনের ফলশ্রুতিতেই সম্ভব হয়েছিল সুদীর্ঘকাল পর বিশৃংখল, দাঙ্গাবাজ আরব বেদুঈনদেরকে একক নেতৃত্বের অধীনে ঐক্যবদ্ধ করে একটি সুশৃংখল ও শক্তিশালী আরব রাষ্ট্রগঠনের এই বিস্ময়কর পর্বটিও। (মুনীর আল-আজলানী, তারীখুদ দাওলাহ আস-সঊদিয়াহ (রিয়াদ : দারুস সুনবুল, ১৪১৩ হিঃ), ২/১৯ পৃঃ; Madawi Al-Rasheed, A history of Saudi Arabia (Cambridge : Cambridge University Press, 2002), P. 21-22.) এর মাধ্যমে স্বর্ণযুগের পর অহিভিত্তিক সমাজব্যবস্থার অনন্য নযীর হিসাবে আরো একবার সারাবিশ্বের নযর কাড়তে সক্ষম হয় আরব ভূখন্ড। ফলে কয়েক শত বছর ধরে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বহীন হয়ে পড়া এবং ধর্মীয় অধঃপতনে নিমজ্জিত থাকা আরবভূমি আবারো তাওহীদী ঐশ্বর্যে সুষমামন্ডিত হয়ে উঠে। রাজনৈতিক পতন ওয়াহ্হাবী আন্দোলনের দুর্দমনীয় অগ্রগতিতে ছেদ টেনে দিল বটে; কিন্তু এর ধর্মীয় প্রভাবকে কখনই স্তিমিত করতে পারেনি। ফলে পূর্বদিকে সুদূর ইন্দোনেশিয়া থেকে পশ্চিমে নাইজেরিয়া পর্যন্ত মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র এআন্দোলনের দাওয়াত ছড়িয়ে পড়েছিল। পি. কে. হিট্টি বলেন, Wahhabi tenets, however, continued to spread, and their influence was felt from Sumatra in the east to Nigeria in the west. অর্থাৎ ‘ওয়াহ্হাবীদের পতন সত্ত্বেও ওয়াহ্হাবী মতবাদের প্রসার অব্যাহত থাকে এবং তাদের প্রভাব পূর্বে সুমাত্রা থেকে শুরু করে পশ্চিমে নাইজেরিয়া পর্যন্ত অনুভূত হতে থাকে। (Philip K. Hitti, Ibid, P. 741. ) লোথরোপ স্টোডার্ড বলেন, However, wahhabism's spritual role had just begun, The Nejd remained a focus of puritan zeal whence the new spirit rediated in all directions অর্থাৎ ‘ওয়াহ্হাবী আন্দোলনের ধর্মীয় দিকটির প্রসার বরং তখনই শুরু হয়েছিল। বিশুদ্ধতাবাদী দাওয়াতের উদ্দীপনা কেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠেছিল যে নজদ, তা আগের মতই মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে রইল; যখন নবপ্রেরণা নিয়ে নানা দিকে নানামাত্রায় তার বিকিরণ ঘটতে থাকল’। (Lothrop Stodderd, The new world of Islam (London : Chapman and Hall Ltd, 1922) P. 22. )

চলবে...
 
পুরো পোষ্ট এখনো পডিনি তবে যতটুকু পডেছি তাতে আরন মামার শেয়ারের কারনে এই আন্দোলন সম্পর্কে আরো বেশি ইনফরমেশন জানলাম,মামার এই রকম পোষ্ট সব মুসলিম দের পডা দরকার কারন আমাদের দেশের অধিকাংশ মুসলিম এটা সম্পর্কে কিছুই জানেনা এবং যারা ইসলাম কে পুরোপুরি মানতে চায় তদের বরং ওয়াহাবী বলে গালি দেয়,হায় আফসোস তাদের জন্য,যারা গালি দেয়,এই রকম পোষ্ট আরো দিন মামা, ধন্যবাদ

Sent from my GT-S7580 using Tapatalk
 
আমরা অনেকেই এমন কিছু বিষয়ে ভুল করে থাকি, যার স্বরূপ জানার পর অবাক লাগে... আপনি এখানে ওহাবী বলে গালি দেয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। এটা শুধু মাত্র অজ্ঞতার কারনেই হয়নি। বরং এটা যাতে গালি হিসাবে প্রতিষ্ঠা পায় সে জন্য একটা শ্রেনী নিরন্তর কাজ করে গেছে/ যাচ্ছে। লেখা-লেখি থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের এই হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার এই প্রয়াসে অনেক নামী-দামী লোকও জড়িত আছেন।
বিষাদ সিন্ধু লেখক খ্যাত মীর মোশারফ হোসেনের কথাই ধরুন- ওনার লেখায় ইয়াজিদের যে চরিত্র বর্ণনা ওনি করেছেন, তাতে করে আমাদের অনেকেরই ধারনা জন্মে গেছে ইয়াজিদ কোনো মুসলমানের নাম না। কিংবা ইয়াজিদ মুসলমান হইলেও অত্যান্ত পাপী এক বান্দা। অথচ ইয়াজিদ একজন সাহাবী। ওনার বর্ণনায় বেশ কিছু হাদিস রয়েছে। কারবালার ঐ ঘটনার সাথে ধর্মীয় কোনো বিষয় জড়িত ছিলো কিনা সে বিষয়ে অনেক মতপার্থক্য থাকলেও বিষাদ সিন্ধুতে উল্লেখ করা বিষয়ের সাথে আসল ঘটনার যে বিস্তর পার্থক্য ছিলো সে বিষয়ে কোনো মতানৈক্য নেই...
সুন্দর আর গঠনমুলক মন্তব্য করার জন্য মামাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
 
Thanks for the information. ONek kisu janlam.

পোস্টটি সম্পর্কে মন্তব্য করায় আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ, মামা।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top