শায়খের সহযোগীবৃন্দ ও ছাত্রবৃন্দ : শায়খ এক দিক দিয়ে খুব ভাগ্যবান ছিলেন এই জন্য যে, তিনি তাঁর দাওয়াত প্রসারে যোগ্য সাথী পেয়েছিলেন, যা পৃথিবীর অধিকাংশ সংস্কারকের ভাগ্যে জুটেনি। দিরঈইয়ার আমীরের সাথে বায়‘আতবদ্ধ হওয়ার পর আমীরসহ আমীরের তিন ভ্রাতা মুশারী, ছুনিইয়ান ও ফারহান তাঁকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেন। দিরঈইয়ার ওলামায়ে কেরামের মধ্যে যারা তাঁর অন্তরঙ্গ সহযোগী ছিলেন তাদের মধ্যে মুহাম্মাদ আল-হুযাইমী, আব্দুল্লাহ বিন দুগায়ছীর, সুলায়মান আল-উশায়ক্বারী ও মুহাম্মাদ বিন হুসায়েনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বৃটিশ কুটনৈতিক ফিলবী লিখেছেন, ‘এঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন ওয়াহ্হাবী আন্দোলনের এক এক জন বীর যোদ্ধা, যাদের নাম আজও পর্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারিত হয়। এঁদের উত্তরাধিকারীরাও ওয়াহ্হাবী রাজত্বের কেন্দ্রস্থলে বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী বিবেচিত হ’তেন। (প্রাগুক্ত, ৫৫ পৃঃ।) শায়খের ছাত্ররাও তাঁর জন্য বিরাট সম্পদে পরিণত হয়েছিলেন। তাঁর অগণিত ছাত্রের মধ্যে শতাধিকই নবগঠিত ওয়াহ্হাবী রাজ্যের বিশিষ্ট আলেম ও বিচারক হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। ওয়াহ্হাবী আন্দোলনের শ্রেষ্ঠ দিকপালদের মধ্যে আমীর মুহাম্মাদ বিন সঊদের পুত্র আব্দুল আযীয ও তদীয় পুত্র সঊদ বিন আব্দুল আযীয ছিলেন তাঁরই ছাত্র । (Jamaal Al-Din M. Zarabozo, Ibid, P.154. )এছাড়া শায়খের ছাত্র হিসাবে তাঁর চারজন সন্তান এবং তাঁদের সন্তানেরাও এ আন্দোলনের প্রচার ও প্রসারে বিরাট ভূমিকা পালন করেন। জেষ্ঠ্য সন্তান হুসাইন দৃষ্টিহীন হওয়া সত্ত্বেও যোগ্য আলেমে দ্বীন হিসাবে প্রসিদ্ধি অর্জন করেন এবং দিরঈয়ার বিচারক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তদীয়পুত্র আলী, হাসান, আব্দুর রহমান প্রত্যেকেই রাষ্ট্রীয় বড় বড় দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। দ্বিতীয় সন্তান আব্দুল্লাহ খ্যাতনামা আলেম ও লেখক ছিলেন। তিনি সঊদ বিন আব্দুল আযীযের সাথে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং বীরবিক্রমে যুদ্ধের পর শত্রুসৈন্যদের হাতে বন্দী হন। পরে যুদ্ধবন্দী হিসাবে মিসরে নীত হন এবং সেখানেই কারারুদ্ধ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তৃতীয় সন্তান আলীও খুব মুত্তাকী ও পরহেযগার আলেম ছিলেন। তাঁকে বিচারক পদের জন্য নির্বাচন করা হ’লেও তাক্বওয়াশীলতার কারণে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। কনিষ্ঠ সন্তান ইবরাহীমও একজন শিক্ষাগুরু ছিলেন। ঐতিহাসিক ওছমান বিন আব্দুল্লাহ বিন বিশর ছিলেন তাঁরই ছাত্র। তিনিও বিচারকের দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। শায়খের পৌত্রদের মধ্যে সবচেয়ে খ্যাতিলাভ করেছিলেন শায়খ আব্দুরর হমান বিন হাসান যিনি একাধারে রিয়ায নগরীর বিচারক ও খ্যাতনামা লেখক ছিলেন। তাঁর সন্তানরাও আপন আপন ক্ষেত্রে খ্যাতির অধিকারী হয়েছিলেন।(মাসঊদ আলম নদভী, প্রাগুক্ত, ৭২ পৃঃ; Jamaal Al-Din M. Zarabozo, Ibid, P.154. )অন্যান্য খ্যাতনামা ছাত্রদের মধ্যে আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ আল-হুসাইন, হামাদ বিন নাছির বিন ওছমান বিন মু‘আম্মার, মুহাম্মাদ বিন সুওয়াইলিম, আব্দুর রহমান বিন খুমাইয়িস, হুসায়েন বিন গান্নাম প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ যোগ্য।
ওয়াহ্হাবী আন্দোলনের রাজনৈতিক পথপরিক্রমা : শায়খ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাবের সংস্কার আন্দোলন কেবল নজদবাসীর আক্বীদা ও আমল-আখলাকেরই বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেনি; বরং নজদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনেও আমূল পরিবর্তনের সূচনা করেছিল। যার প্রত্যক্ষ ভূমিকায় যেমন ছিলেন তাঁর অনুসারী আলেম-ওলামা এবং ছাত্র-মুবাল্লিগবৃন্দ, তেমনি দ্বীনের যোগ্য মুজাহিদ হিসাবে অগ্রবর্তী তালিকায় ছিলেন ইমাম মুহাম্মাদ বিন সঊদ (১৭২৬-১৭৬৫ খৃঃ) ও তাঁর পরবর্তী বংশধরগণ। ওয়াহ্হাবী আন্দোলনের সাথে এই পরিবারের আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক যুথবদ্ধতা(এমনকি এসম্পর্ক পারিবারিক সম্পর্কে পরিণত হয়েছিল বলে কোন কোন ঐতিহাসিক উল্লেখ করেছেন। তাদের মতে, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সঊদের সাথে শায়খের এক কন্যার বিবাহ হয়। যদিও বিষয়টি হুসায়েন বিন গান্নাম বা ইবনে বিশর উল্লেখ করেননি বলে এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। দ্রঃ মাস‘ঊদ আলম নদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৯১। )এ আন্দোলন প্রসারে যে এক ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছিল তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। বিশেষতঃ শায়খের মৃত্যুর পর ওয়াহ্হাবী আন্দোলনের পরবর্তী ইতিহাস এই পরিবারকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। ফলে অনিবার্যভাবেই ওয়াহ্হাবী আন্দোলনের বিস্তারের ধারাবাহিকতা পর্যালোচনায় ‘সঊদী আরব’ নামক রাষ্ট্রটির প্রতিষ্ঠা লাভের ইতিহাস এসে যায়। যার প্রতিটি শিরা-উপশিরায় বেগবান শোণিত ধারার মত মিশে আছে ওয়াহ্হাবী আন্দোলনের আদর্শিক বিপ্লবের তপ্ত মন্ত্র।(James Wynbrant, A brief history of Saudi Arabia (New York : Facts on file. inc, 2004), P. 119. )নিম্নে এই ইতিহাসকে তিনটি স্তরে বিভক্ত করে আলোচনা করা হল।
১ম সঊদী আরব রাষ্ট্র (১৭৪৪-১৮১৮ খৃঃ/১১৫৭-১২৩৪ হিঃ) : নজদে সঊদ বংশের উত্থানের পূর্বে আরব উপদ্বীপ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত ছিল। পশ্চিম আরবে লোহিত সাগরের পূর্বাঞ্চল জুড়ে ছিল মক্কা কেন্দ্রিক শরীফদের(মক্কা-মদীনা তথা হেজাযের শাসকদের উপাধি ছিল ‘শরীফ’। আরবে মূলতঃ রাসূল (ছাঃ)-এর বংশধর তথা বনু হাশেমের বংশধরদের চিহ্নিত করার জন্য উপাধিটি ব্যবহৃত হ’ত। ১২০১ খৃষ্টাব্দে আববাসীয় শাসনামলে বনু হাশিমের জনৈক উত্তরাধিকারী শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে ‘শরীফ’ উপাধি ধারণ করেন। হাসান বিন আলী (রাঃ)-এর বংশধারা থেকে আগত এই শরীফের মাধ্যমেই শরীফী শাসন প্রতিষ্ঠা লাভ করে হেজাযে। তখন থেকে তাঁর বংশধরগণ মক্কা-মদীনার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিরবচ্ছিন্নভাবে পালন করে এসেছে। স্থানীয়ভাবে এই শরীফরা স্বায়ত্তশাসন ভোগ করলেও মুসলিম সালতানাতের ক্ষমতাসীন শাসকদের আনুগত্যে থেকেই তাঁরা শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। আববাসীয়, আইয়ূবী ও মামলূক শাসকদের পর তারা যথারীতি ওছমানীয় সালতানাতেরও আনুগত্য স্বীকার করে নেন। ১৯০৮ সালে হোসেন (রাঃ)-এর বংশধরের সর্বশেষ ‘শরীফ’ আলী আব্দুল্লাহ পাশা ক্ষমতাচ্যুত হন। অতঃপর হোসাইন (রাঃ)-এর বংশধর থেকে পরপর কয়েকজন শরীফ ক্ষমতায় আসেন। ১৯২৫ সালে সর্বশেষ শরীফ আলী বিন হুসাইনের পতনের মাধ্যমে হেজাযে শরীফী শাসনের অবসান ঘটে (উইকিপিডিয়া)।)শাসনভুক্ত স্বাধীন অঞ্চল হেজায। মধ্য আরবে ছিল আলে সঊদ, দাহ্হাম বিন দাওয়াস, বনু যায়েদ প্রভৃতি গোত্র ভিত্তিক শাসকদের অধিকারভুক্ত তিনটি নগরী দিরঈইয়া, উয়ায়না ও হুফূফ সহ বৃহত্তর নজদ অঞ্চল। আর পূর্বে আরব সাগরের বিস্তীর্ণ অববাহিকা জুড়ে ছিল ওছমানীয় সালতানাতের অনুগত যামেল আল-জাবারী বংশও বনু খালেদ বংশের শাসনাধীন উর্বর ফসলী অঞ্চল আল-আহসা।(James Wynbrant, Ibid, P. 104-106; উইকিপিডিয়া।)১৭২৬ খৃষ্টাব্দে নজদের ছোট্ট নগরী দিরঈইয়াতে মুহাম্মাদ বিন সঊদের ক্ষমতারোহনের মাধ্যমে আরবের সবচেয়ে প্রভাবশালী বংশ হিসাবে আবির্ভাব ঘটে সঊদ বংশের। যার পিছনে একমাত্র অনুঘটক হিসাবে কাজ করছিল ওয়াহ্হাবী আন্দোলন। অনধিক ৭৫ বছরের মধ্যে এ আন্দোলনের অনুসারীরা সমগ্র আরব ভূমিকে নিজেদের করায়ত্ত করতে সক্ষম হয় এবং অহির বিশুদ্ধ দাওয়াতকে সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়। এজন্য ১ম সঊদী আরবকে ইতিহাসে ‘ওয়াহ্হাবী রাষ্ট্র’ হিসাবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। নিম্নে সঊদ বংশের উত্থান ও ১ম সঊদী আরব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পটভূমি আলোচিত হল।
মুহাম্মাদ বিন সঊদ (১৭২৬-১৭৬৫ খৃঃ): ১৭২৬ খৃষ্টাব্দে নজদের দিরঈইয়া নগরীর অধিকর্তা নিযুক্ত হন সঊদ বংশের কৃতি সন্তান মুহাম্মাদ বিন সঊদ বিন মুক্বরিন। যাকে বর্তমান সঊদী আরবের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে মর্যাদা দেয়া হয়। ১৭৪৪ খৃষ্টাব্দে শায়খ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাবের সাথে ইমাম মুহাম্মাদের ঐতিহাসিক সন্ধি পরবর্তীতে আরব উপদ্বীপে বৃহত্তর সঊদী আরব রাষ্ট্র গঠনের ভিত্তি রচনা করে। অপরপক্ষে তাঁর ঐকান্তিক সহযোগিতায় মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাবও নির্বিঘ্নে নির্ভেজাল তাওহীদ ও সুন্নাতের দাওয়াতকে প্রথমে নজদ এবংপরবর্তীতে সমগ্র সঊদী আরব সহ মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হন। শায়খের দাওয়াত চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে ছোট্ট ইসলামী রাষ্ট্র দিরঈইয়ার পরিচিতি বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং দিন দিন তা রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ফলে শীঘ্রই পার্শ্ববর্তী ক্ষুদ্র অঞ্চলগুলো দিরঈইয়ার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে। শুধু তাই নয় তাওহীদ ও সুন্নাতের উপর ভিত্তিশীল এবং ‘ইমাম’ লকবধারী শাসকের অধীনে পরিচালিত রাষ্ট্রটির আবির্ভাব নজদসহ সমগ্র সঊদী আরব জুড়ে শাসকদের টনক নড়িয়ে দেয়। (আব্দুল্লাহ ছালেহ আল-উছায়মীন, বুহুছ ওয়া তা‘লীক্বাত ফি তারীখিল মামলাকাহ আল-আরাবিয়াহ আস-সঊদিয়াহ (রিয়াদ : মাকতাবাতুত তাওবাহ, ২য় প্রকাশ :১৯৯০ ইং ), পৃঃ ২২-২৫।)১৭৪৯ সালে ইমাম মুহাম্মাদ বিন সঊদ হেজাযের আলেম-ওলামার সাথে মতবিনিময়ের জন্য মুবাল্লিগদের একটি প্রতিনিধিদলকে মক্কায় প্রেরণ করেন। কিন্তু সেখানকার আলেমগণ তাদের সাথে খুব খারাপ আচরণ করেন এবং তাদের অধিকাংশকেই কারাবন্দী করা হয়।(ইবনু বিশর, প্রাগুক্ত, ১/৫৯ পৃঃ, মাস‘ঊদ আলম নদভী, প্রাগুক্ত, ৯২ পৃঃ।)এমনকি পরবর্তীতে বিশেষ অনুমতি ব্যতীত নজদবাসীদের জন্য হজ্জ আদায়ও নিষিদ্ধ করা হয়।(মাস‘ঊদ আলম নদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৯২।)যাইহোক ওয়াহ্হাবী আন্দোলনের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের উত্থান পর্বে এক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন ইমাম মুহাম্মাদ বিন সঊদ। ইসলামের বিশুদ্ধ দাওয়াতকে ছড়িয়ে দেয়াই ছিল তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ ও ন্যায়পরায়ণ শাসক। তাঁর মহত্ত্বের প্রশংসা জনগণের মুখে মুখে ছড়িয়ে ছিল।(ইবনু বিশর, প্রাগুক্ত, ১/৯৯ পৃঃ, হায়কাল, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৬৯-৭১।)১৭৬৫ খৃষ্টাব্দে এই মুজাহিদ শাসক সঊদী রাষ্ট্রের উত্থান পর্বের মাঝামাঝি সময় মৃত্যুমুখে পতিত হন।
আব্দুল আযীয বিন সঊদ (১৭৬৫-১৮০৩ খৃঃ) : ইমাম মুহাম্মাদ বিন সঊদের মৃত্যুর পর দিরঈইয়ার শাসনভার গ্রহণ করেন তদীয় পুত্র আব্দুল আযীয। দায়িত্ব নিয়েই তিনি ওয়াহ্হাবী রাষ্ট্রটির সীমানা বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ১৭৭৩ সালে তিনি দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে চলমান যুদ্ধে রিয়াদের শাসক দাহ্হাম বিন দাওয়াসকে পরাজিত করে রিয়াদ দখল করেন। এই বিজয় ওয়াহ্হাবীদের জন্য আরব উপদ্বীপের অন্যান্য অঞ্চল সমূহের দিকে নজর দেয়ার সুযোগ করে দেয়। ফলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই নজদের সৈন্যরা বড় বড় অভিযান পরিচালনা করা শুরু করল এবং নতুন নতুন স্থান বিজিত হতে লাগল। ১৭৭৫ খৃষ্টাব্দে হেজাযের শরীফের একটি কাফেলার সাথে ওয়াহ্হাবীদের সংঘর্ষ বাঁধে এবং কাফেলার নেতা মানছূরকে বন্দী করা হয়। ইমাম আব্দুল আযীয তাকে কোনরূপ মুক্তিপণ ছাড়াই মুক্ত করে দিলে শরীফদের সাথে ওয়াহ্হাবীদের দীর্ঘদিনের শীতল সম্পর্কের বরফ গলা শুরু হয়।(মাস‘ঊদ আলম নদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৯৪।)সেই সূত্রে ১৭৭৭ খৃষ্টাব্দে ইমাম আব্দুল আযীয তৎকালীন শরীফের জন্য উপঢৌকন সহ মক্কায় একটি বিশেষ মুবাল্লিগ দল প্রেরণ করেন। তারা মক্কার মাযহাবপন্থী ওলামাদের বুঝাতে সক্ষম হন যে, ওয়াহ্হাবীদের আক্বীদা-আমল আহলেসুন্নাত ওয়াল-জামা‘আত থেকে পৃথক নয়; বরং তা পুরোপুরি কুরআন ও সুন্নাহর উপর ভিত্তিশীল।(মাস‘ঊদ আলম নদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৯৫।)কিন্তু তারপরও অচলাবস্থা কাটল না। অতঃপর ১৭৯০ সালে নতুন শরীফ গালিব বিন মুসাঈদ ওয়াহ্হাবীদের সাথে সম্পর্কোন্নয়ন ঘটাতে চাইলেন। তাঁর আগ্রহের প্রেক্ষিতে ইমাম আব্দুল আযীয শায়খ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাবের একটি চিঠিসহ আব্দুল আযীয বিন হুসাইনকে মক্কায় প্রেরণ করলেন। শরীফ তাঁর সাথে দীর্ঘ আলোচনার পর খুব সন্তুষ্ট হন এবং ওয়াহ্হাবী দাওয়াতের দলীল-প্রমাণের সাথে ঐক্যমত পোষণ করেন। কিন্তু মক্কার আলেমগণ ওয়াহ্হাবীদের সাথে শরীফের এই সমঝোতার সম্ভাবনা লক্ষ্য করে আতংকিত হয়ে উঠলেন এবং শরীফকে এই বলে প্ররোচনা দিলেন যে, هؤلاءالجماعةليسعندهمبضاعةإلاإزالةنهجآبائكوأجدادكورفعيدكعمايصلإليكمنخيربلادك. ‘এই দলটির একমাত্র উদ্দেশ্য আপনাকে আপনার পূর্বপুরুষদের পথ থেকে বিচ্যুত করা এবং আপনার রাষ্ট্রক্ষমতা হাতছাড়া করানো।’ স্বভাবতই তাদের এই প্ররোচনায় শরীফ বিভ্রান্ত হলেন। ফলে সন্ধি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলএবং ওয়াহ্হাবীদের সাথে শরীফদের বৈরিতার সম্পর্ক অব্যাহত রইল। (ইবনে গান্নাম, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৭৩-৭৫।)পরের বছর ১৭৯২ সালে ৮৯ বছর বয়সে ওয়াহ্হাবী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা শায়খ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব মৃত্যুবরণ করলেন এবং তাঁর ভাই সুলায়মান তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেন। ততদিনে ওয়াহ্হাবী আন্দোলন আরবের বুকে সুদৃঢ় ভিত্তি লাভ করেছে।
ফলে শায়খের মৃত্যুতে তাঁর আন্দোলন মোটেই বাধাগ্রস্ত বা স্তিমিত হয়নি।(James Wynbrant, Ibid, P. 132. )রিয়াদ বিজয়ের পর ইমাম আব্দুল আযীয পূর্বাঞ্চল তথা আল- আহসার শক্তিশালী বনু খালেদ বংশের শাসকের নিকট ওয়াহ্হাবী আন্দোলনের দাওয়াত পৌঁছে দেন। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং এ আন্দোলনকে প্রতিরোধ করার জন্য সুযোগমত ওয়াহ্হাবীদের উপর আক্রমণ চালাতে থাকেন। অবশেষে দীর্ঘ কয়েক বছরের প্রতিরোধ যুদ্ধের পর ১৭৯৩ সালে আল-আহসা অঞ্চল পুরোপুরিভাবে ওয়াহ্হাবীদের দখলে চলে আসে। সেখানে প্রচলিত কবর ও মাযারকেন্দ্রিক যাবতীয় শিরক ও বিদ‘আতী রসম-রেওয়াযের অবসান ঘটানো হয়।(ইবনে গান্নাম, প্রাগুক্ত, ১৭২ পৃঃ; ইবনে বিশর, প্রাগুক্ত, ১/২০২ পৃঃ; সম্পাদনা পরিষদ, আল মাওসূ‘আতুল আরাবিয়াহ আল-আলামিয়াহ (রিয়াদ : ww. intaaj.net থেকে প্রকাশিত ই-বুক, ১৪২৫ হিঃ/২০০৪ইং), নিবন্ধ শিরোনাম : ‘আদ-দাওলাহ আস-সঊদিয়াহ আল ঊলা’।) অতঃপর উপসাগরীয় অঞ্চল কুয়েত, বাহরায়েন, কাতার থেকে ওমান পর্যন্ত এক বিস্তৃত ভূখন্ড ওয়াহ্হাবীদের দখলে আসে। এভাবে সালাফী দাওয়াত ক্রমেই ব্যাপকাকারে ছড়িয়ে যেতে থাকল। এদিকে সম্পর্কোন্নয়ন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবার পর মক্কার শরীফ গালিব বিন মুসাঈদ ওয়াহ্হাবীদেরকে সশস্ত্রভাবে মুকাবিলার পরিকল্পনা নেন।(John Lewis Burchhardt, Notes on Bedouins and Wahabys (London : Henry Colburn and Richard Bentley, 1830) P. 322. (সুইস পর্যটক John Lewis Burchhardt ছিলেন মিসরের খেদিভ মুহাম্মাদ আলী পাশার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। মুহাম্মাদ আলী পাশা মক্কায় অবস্থানকালে তিনি ১৮১৪ সালের আগস্ট মাসে হেজাযে আগমন করেন এবং ১৮১৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় বছরখানেক আরব ভূখন্ডে পরিভ্রমণ করে সেখানকার সমাজ ও রাজনীতির উপর ৪৩৯ পৃষ্ঠার একটি মূল্যবান ভ্রমণ বৃত্তান্ত রচনা করেন। আরব ঐতিহাসিক ইবনে গান্নাম ও ইবনে বিশরের গ্রন্থদ্বয়ের বাইরে এই গ্রন্থটিও ওয়াহ্হাবী আন্দোলনের উপর রচিত একটি বিশ্বস্ত দলীল হিসাবে বিবেচিত হয়)। )প্রথমদিকে তার বাহিনী ওয়াহ্হাবীদের মিত্র গোত্রসমূহের উপর চোরাগোপ্তা হামলা শুরু করে। (আল-মাওসূ‘আতুল আরাবিয়াহ আল-আলামিয়াহ।)অতঃপর ১৭৯৭ সালে তিনি ওয়াহ্হাবীদের বিরুদ্ধে এক বড় যুদ্ধে পরাজিত হন এবং সন্ধি করতে বাধ্য হন। চুক্তি অনুযায়ী উভয় পক্ষের রাষ্ট্রীয় সীমানা নির্ধারিত হল এবং নজদবাসীদের জন্য আরোপিত হজ্জ আদায়ের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হল। ফলে দীর্ঘ কয়েক যুগ পর ১৮০০ সালে সঊদ বিন আব্দুল আযীযের নেতৃত্বে ওয়াহ্হাবীরা নজদ ও আল-আহসা অঞ্চলের হাজীদের এক বিরাট কাফেলা নিয়ে মক্কায় আগমন করেন এবং আবার নিরাপদেই দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। পরের বছর ইমাম আব্দুল আযীযও বিরাট কাফেলা নিয়ে হজ্জব্রত পালন করেন। এর মাধ্যমে ওয়াহ্হাবীদের ব্যাপারে স্থানীয় অধিবাসীদের ভ্রান্ত ধারণা দূর হয়ে যায় এবং এক প্রকার হৃদ্যতার সম্পর্ক তৈরী হয়।(ইবনে বিশর, প্রাগুক্ত, পৃঃ ২৪৪; মাস‘ঊদ আলম নদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১০৪।)
১৮০২ সালে এক ওয়াহ্হাবী কাফেলার উপর একটি শী‘আ গোত্র হামলা চালায়। এরই জের ধরে সঊদ বিন আব্দুল আযীযের নেতৃত্বে ওয়াহ্হাবীরা দক্ষিণ ইরাকের কারবালা নগরীতে এক দুঃসাহসিক অভিযান চালায় এবং হোসায়েন (রাঃ)-এর মাযার সহ কারবালার সকল কবর-মাযার-গম্বুজ সম্পূর্ণ ধূলিসাৎ করে দেয়।(ইবনে বিশর, প্রাগুক্ত, ১/২৫৭-৫৮পৃঃ; ওয়াহ্হাবীদের এই আক্রমণে দুই হাযারের বেশী শী‘আ নিহত হয় এবং ধন-সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি সাধিত হয়। ফলে সামগ্রিকভাবে মুসলিম সমাজে এবং বিশেষতঃ ইরানী শী‘আদের মধ্যে ওয়াহ্হাবী বিরোধী এক প্রবল সেন্টিমেন্ট তৈরী হয়। দ্রঃ মাস‘ঊদ আলম নদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১০৬।)এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ, ক্রদ্ধ ওছমানীয় সুলতান তৎক্ষণাৎ ইরাকের শাসক ইবরাহীম পাশাকে সঊদী বাহিনীর উপর আক্রমণ পরিচালনার নির্দেশ দেন। কিন্তু ইরাকী বাহিনী কুর্দী বিদ্রোহ দমনে ব্যস্ত থাকায় এদিকে আর নযর দিতে পারেনি।(মাস‘ঊদ আলম নদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১০৬-৭; আল-মাওসূ‘আতুল আরাবিয়াহ আল-আলামিয়াহ।) এদিকে মক্কার শরীফের সাথে কৃত সন্ধি চুক্তি বেশীদিন বলবৎ রইল না। শরীফ গালিব সঊদী বাহিনীর প্রতি চুক্তি ভঙ্গ ও শত্রুতামূলক কার্যকলাপের অভিযোগ তুললেন এবং সমঝোতার জন্য স্বীয় উযীর ওছমান আল-মুযায়েফীকে নজদে পাঠালেন। কিন্তু উযীর ওছমান সঊদী বাহিনীর সাথে সাক্ষাত করার পর ওয়াহ্হাবীদেরই পক্ষাবলম্বনের সিদ্ধান্ত নেন। এমনকি মক্কায় ফিরে এসে ওয়াহ্হাবীদের পক্ষ থেকে নিজেই শরীফের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। একই সময়ে শরীফ গালিবের সাথে তার ভাই আব্দুল মঈনের সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছিল। তাদের মধ্যে ত্বায়েফের নিকটে এক সংঘর্ষও বাঁধে। যেখানে শরীফ গালিব পরাজিত হন। এই সুযোগে ১৮০৩ সালে সঊদী বাহিনী ত্বায়েফ দখল করে নেয় এবং চারিদিক থেকে মক্কা নগরীর দিকে অগ্রসর হয়। অতঃপর হজ্জের মৌসুম শেষে ১২১৮ হিজরীর ৮ই মুহাররম মোতাবেক ১৮০৩ খৃষ্টাব্দের ৩০শে এপ্রিল শনিবার সঊদ বিন আব্দুল আযীযের নেতৃত্বে সঊদী বাহিনী বিজয়ীর বেশে মক্কা মুকাররামায় প্রবেশ করেন।(ইবনে বিশর, প্রাগুক্ত, পৃঃ ২৫৯-৬১; মাস‘ঊদ আলম নদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১০৮।)শরীফ গালিব আগেই মক্কা ছেড়ে জেদ্দায় পালিয়ে গিয়েছিলেন। ফলে বিনা বাধায় ওয়াহহাবী বাহিনী মক্কা মুকাররামা দখল করে। গালিবের স্থলাভিষিক্ত শরীফ আব্দুল মঈন মক্কার শরীফ হিসাবে দায়িত্ব পালন করে যাবেন-এই শর্তসাপেক্ষে সঊদ বিন আব্দুল আযীযের আনুগত্য স্বীকার করে নেন।
অতঃপর সঊদ বিন আব্দুল আযীয মক্কার মসজিদে হারামের মিম্বরে দাঁড়িয়ে অধিবাসীদের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তা দানের ঘোষণা দিয়ে বললেন-‘আপনারা হলেন বায়তুল্লাহর প্রতিবেশী, হারামের অধিবাসী, হারামের নিরাপত্তায় নিরাপত্তা প্রাপ্ত জনগণ। আপনাদেরকে আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর দ্বীনের দিকে আহবান জানাচ্ছি। আলেইমরানের ৬৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আপনি বলুন! হে আহলে কিতাবগণ এস সেই কথার দিকে যা আমাদের মাঝে এবং তোমাদের মাঝে সমান; তা এই যে, ‘আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করব না এবং তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক করব না, আর আমরা একে অপরকে আল্লাহর পরিবর্তে ‘রব’ হিসাবে গ্রহণ করব না। এরপরও যদি তোমরা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করো, তাহলে তোমরা বল, তোমরাই সাক্ষী যে আমরা মুসলিম।’ তোমরা আজ আল্লাহ, আমীরুল মুসলিমীন সঊদ বিন আব্দুল আযীয এবং তোমাদের ইমাম আব্দুল মুঈনের মুখোমুখি দন্ডায়মান। অতএব তোমরা তোমাদের শাসকের কথা শ্রবণ কর এবং তাঁর আনুগত্য কর, যতক্ষণ তিনি আল্লাহর আনুগত্যে থাকেন’।(আল-মাওসূ‘আতুল আরাবিয়াহ আল-আলামিয়াহ।) মক্কা মুকাররামায় এক তাৎপর্যপূর্ণ ভাষণে তিনি জনগণের সামনে সংস্কারপন্থী সালাফী দাওয়াতের মূলনীতি ও কর্মসূচীগুলো ব্যাখ্যা করেন এবং কবরের উপর প্রতিষ্ঠিত গম্বুজগুলো উৎসাদনের আহবান জানান। তাছাড়া মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব রচিত ‘কাশফুশ শুবহাত’ বইটি মসজিদে হারামের ইলমী হালকা সমূহে আলেম-ওলামা ও সাধারণ জনগণের উপস্থিতিতে পঠন-পাঠনের নির্দেশ দেন।(প্রাগুক্ত।)
অতঃপর তিনি তুর্কী সুলতান ৩য় সেলিমের নিকট পত্র লিখলেন-‘আমি মক্কা শহরে প্রবেশ করেছি এবং পৌত্তলিকতার চিহ্নবাহী সবকিছু ধ্বংস ও অনাবশ্যক সকল প্রকার কর রহিত করত: এখানকার অধিবাসীদের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। আপনার নিযুক্ত বিচারককে ইসলামী শরী‘আত অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছি। অতএব আপনি দামেশক ও কায়রোর গভর্ণরদের এই পবিত্র শহরে ঢাক-ঢোল-ঝুমুর নিয়ে আসতে নিষেধ করে দিন। কেননা এতে দ্বীনের কোন অংশ নেই।’(প্রাগুক্ত।) ইবনে বিশর বর্ণনা করেন, ‘মক্কার সর্বত্র তখন শিরকের জয় জয়কার ছিল। সঊদী বাহিনী ২০ দিনের মত মক্কায় অবস্থান করে এবং সকল কবরের উপর থেকে গম্বুজগুলো ধ্বংস করে দেয়। ফলে মক্কার বুকে কবর-মাযার কেন্দ্রিক শিরকের এমন একটি নিদর্শনও অবশিষ্ট রইল না যা নিশ্চিহ্ন করে ধূলায় মিশিয়ে দেয়া হয়নি।’(ইবনে বিশর, প্রাগুক্ত, ১/২৬৩ পৃঃ; মাস‘ঊদ আলম নদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১০৯।)ফিলবী (Philby) বলেন, ইমাম সঊদ শরীফ আব্দুল মঈনের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করেই মাসজিদুল হারামকে পৌত্তলিকতার আবর্জনা থেকে পরিষ্কার করার কাজে মনোযোগ দিলেন। কা‘বার ভিতর থেকে উদ্ধারকৃত ধন-সম্পদ ও সোনা-দানা তিনি মানুষের মাঝে বিতরণ করে দিলেন ও কবরের উপর নির্মিত সকল গম্বুজ ধ্বংস করলেন।(মাস‘ঊদ আলম নদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১০৯।)
T.P. Huges বলেন, মক্কা অধিকারের পর এই সংস্কার আন্দোলনের মূলনীতিগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করা হল। মাদকদ্রব্য, পারসিক চুরুট, তাসবীহ-তাবীয, সিল্কের তৈরী পোষাকাদি প্রভৃতি যাবতীয় শরী‘আত বিরোধী বস্ত্তসমূহ জনগণের কাছ থেকে সংগ্রহ করে পুড়িয়ে দেয়া হল। মসজিদগুলো এমনভাবে আবাদ করা হল যে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতে শহরের কোন লোককে অনুপস্থিত পাওয়া যেতনা। ফলে ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতি ও ইবাদতের এমনই পবিত্র দৃশ্য পরিস্ফূট হল এই নিরাপদ শহরে, যার নযীর স্বর্ণযুগের পর আর কখনো দেখা যায়নি।(Thomas Patrick Hughes, A Dictionary of Islam (London: W.H. Allen & Co., 13 Waterloo palace, Pall Mall S.W. 1895) P. 660. )অনুরূপভাবে পর্যটক বারখার্ট (Burchhardt) তাঁর আরব ভ্রমণ বৃত্তান্তে লিখেছেন, মক্কার অধিবাসীরা আজও পর্যন্ত ইমাম সঊদের নাম কৃতজ্ঞতা ও ভক্তির সাথে স্মরণ করেন। এখনও পর্যন্ত তাঁর পবিত্র বাহিনীর পদক্ষেপসমূহ বিশেষতঃ হজ্জ ও যিয়ারতের সময়কালে তাদের খেদমতের কথা সর্বত্র প্রশংসার সাথে উচ্চারিত হয়। যে ন্যায়ানুগ আচরণ তারা সেদিন প্রদর্শন করেছিলেন তা মক্কাবাসী আজও ভুলেনি।(John Lewis Burchhardt, Ibid, P. 329.)মক্কা বিজয়ের পর সঊদীবাহিনী জেদ্দা নগরীও অবরোধ করে। কিন্তু নানা প্রতিকূলতায় তারা দিরঈইয়ায় ফিরে যেতে বাধ্য হন। এই সুযোগে শরীফ গালিব পুনরায় মক্কায় প্রত্যাবর্তন করেন এবং সঊদী দখল থেকে মক্কা পুনরুদ্ধার করেন।(আল মাওসূ‘আতুল আরাবিয়াহ আল-আলামিয়াহ।)ঠিক ঐ সময়ই সঊদী আরবের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ইমাম আব্দুল আযীয মসজিদে আছরের ছালাতে সিজদারত অবস্থায় জনৈক শী‘আ অথবা কুর্দী আততায়ীর বর্শার আঘাতে শাহাদাত বরণ করেন।(ইবনে বিশর, প্রাগুক্ত, ১/২৬৪ পৃঃ।)