সেদিন রাতের বেলা বেশ দেরী করে ঘরে ফিরলো আম্মিজান। বেচারীকে বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছিলো। সকালে মেকাপ করে খুব সেজেগুজে শিবাজী হোটেলে বিক্রম কাকুর সাথে দেখা করতে গেলেও এখন ঘরে ফেরত আসা আম্মির মেকাপ বিহীন পরিশ্রান্ত চেহারা, জটপাকানো চুলের গোছা আর ক্লান্ত চলাফেরার ভঙ্গি দেখে মনে হলো অনেক ঝড় গেছে বেচারীর ওপর দিয়ে। এছাড়া, বাইরে গেলে সবসময় খেয়াল করে মাথায় ওড়না দেবেই আম্মি, এখন মাথায় কোনও চাদর নেই, বিধর্মী নারীর মত অনাবৃত মাথা। আরও একটা অদ্ভূত ব্যাপার, মাথায় ওড়না না ঢাকায় খুব খেয়াল করলে মনে হবে আম্মিজানের সিঁথিতে আবছা লাল রং লাগানো হয়েছিলো, পরে তা আবার মুছে নেয়া হয়েছে। দেখে মনে হলো বিবাহিতা হিন্দু মহিলারা যেমন সিঁদুর পরে, ঠিক তেমনি করে আমার শাদীশুদা মুসলমান আওরত দুই বাচ্চার আম্মি সামিনা পাঠানের সিঁথিতেও চওড়া লাল সিন্দুর দাগিয়ে দিয়েছিলো শিবাজী হোটেলে। কিন্তু কে করতে পারে এ কাজ? আম্মিজান সেই সকাল থেকে রাত অব্ধি টানা কয়েক ঘন্টা হিন্দু ব্যবসায়ী বিক্রম লাখোটিয়ার সাথে শিবাজী হোটেলের এক কামরায় সময় কাটিয়েছে, তারওপর নাকি বিক্রম বাবুর সাথে দামী হোটেলে ডিনারও করেছে। তাই মনে হলো, বিক্রম লাখোটিয়াই আমার আম্মিজান সামিনার মাথায় হিন্দুয়ানী সিন্দুর পরিয়ে দিয়েছিলো। পরে নিশ্চয় শিবাজী হোটেল থেকে বের হবার সময় খেয়াল করে আম্মিজান সিঁদুরটা মুছে নিয়েছিলো। কিন্তু পুরোটা মুছতে পারে নি, আম্মির চুলের মধ্যে এখনো ফিকে লাল গুঁড়ো লেগে আছে তা খেয়াল করলে ধরা যায়।
আব্বু সারাদিন একটু গম্ভীর হয়ে ছিলো। আম্মি ঘরে ফিরলে ওর পিছেপিছে আব্বুও বেডরূমে ঢুকে দরজা লক করে দেয়। সবকিছুই কেমন অদ্ভূত লাগছিলো। আম্মি আগে কখনোই এত ঘন ঘন বাড়ীর বাইরে কাটায় নি। তাই আমি মোবাইল নাড়াচাড়া করার ভঙিতে আব্বু-আম্মির বেডরূমের সামনে কয়েকবার পায়চারী করতে লাগলাম।
ভেতর থেকে উত্তপ্ত কথা শোনা যাচ্ছিলো আবছা। মনে হচ্ছিলো আব্বু আর আম্মিজান ঝগড়া করছে। কি নিয়ে ঝগড়া?
আমি সাবধানে দরজায় কান ঠেকালাম। চড়া গলায় আব্বুর আওয়াজ কানে আসছিলো, কিন্তু দরজা লক থাকায় বোঝা যাচ্ছিলো না ঠিক কি বলছে। ওদিকে আম্মিজানও চেঁচিয়ে কি যেন বলে উত্তর দিলো। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না কেন ঝগড়া?
সেদিন দিনের বেলায় আব্বু বলেছিলো খুশির খবরটা, আম্মি এক বড়ো ফ্যাশন ব্যবসায়ীর সঙ্গে আব্বুর মোলাকাত করিয়ে দিয়েছে। এই ফ্যাশন হাউজের হরেক ডিজাইনের কাপড় এখন আমাদের আল-হিলালে বিক্রি হবে, তাতে অনেক কামাই হবে। এটা নিয়েই কি ঝগড়া? কিন্তু এ তো খুশির খবর। তাতে রাগারাগির কি আছে?
একটু পরেই ঝগড়ার আওয়াজ থেমে গেলো। ঠাস ঠাস করে থাপ্পড় মারার আওয়াজ শুনলাম, আম্মির ফোঁপানোর আওয়াজও হলো যেন। ভেতর থেকে ধস্তাধস্তির শব্দ। তারপর ধপাস করে শব্দ, বিছানার ওপর চিৎ হয়ে পড়ে গেলে যেমন আওয়াজ অনেকটা তেমনই।
তারপর মনে হলো যেন আব্বুজান গালাগালি করছে, আর হাঁপাচ্ছে। “গাশতী ছিনাল”, “তাওয়াইফ”, “বেওয়াফা” এসব অশ্লীল শব্দ আব্বুজানের মুখে শুনলাম মনে হলো যেন।
ওদিকে আম্মিজানও মনে হলো “আহঃ! আহঃ!” করে কাঁদছে... না, ভুল বললাম, ঠিক কান্নাও না, করুণ কণ্ঠে গোঙাচ্ছে যেন।
পরমূহুর্তেই আব্বুজানের গর্জন শুনলাম। গর্জন করে নিস্তব্ধ হয়ে গেলো সবকিছু।
আর সে নিস্তব্ধতার কারণে আম্মির মন্তব্য কানে এলো। তাচ্ছিল্য করে আম্মি বললো, “বাস! এতেই হয়ে গেলো তোমার? বিক্রমজী কতক্ষণ দম রাখতে পারে জানো সেটা?”
আব্বু উত্তর দিলো না সঙ্গে সঙ্গে। কিছুক্ষণ পরে আম্মির কণ্ঠ শুনলাম আবারও। স্পষ্ট না বুঝলেও মোটামুটি ধরতে পারলাম, আম্মি আব্বুকে বোঝাচ্ছে, হিন্দুরা সবকিছু বেদখল করে নিচ্ছে আমাদের মুসলমানদের কাছ থেকে। তাই তারা যা চায়, তাদের দাবী পূরণ করে ওদের খুশ রাখতে হবে, যেন ব্যবসা চালু থাকে এবং লাভও বেশি হয়। তাতে করে আমাদের খানদানের সবারই ফায়দা।
একটু পরে আব্বুজান উত্তর দিলো, “ঠিক আছে, সামিনা। তুমি বিক্রমজীকে খুশ রাখো। তুমি মালাউনটার সকল খায়েশ মেটাও, আমি বাধা দেবো না। তবে ব্যবসা যেন ঠিকঠাক চলে সেটা খেয়াল রাখবে।”
“আলবৎ!” আম্মি উত্তর দেয়, “এবার সরো আমার ওপর থেকে... সারা শরীর গান্ধা হয়ে আছে... যাই, গোসল নিয়ে আসি... সারাদিনে অনেক ওয়াক্তের নামাজ কাযা হয়ে গেছে...”
এটা শুনে আমি সরে গেলাম। কয়েক মূহুর্ত পরে দেখি দরজা খুলে পাজামার নাড়া বাঁধতে বাঁধতে আব্বুজান বেরিয়ে এলো।
আব্বু সারাদিন একটু গম্ভীর হয়ে ছিলো। আম্মি ঘরে ফিরলে ওর পিছেপিছে আব্বুও বেডরূমে ঢুকে দরজা লক করে দেয়। সবকিছুই কেমন অদ্ভূত লাগছিলো। আম্মি আগে কখনোই এত ঘন ঘন বাড়ীর বাইরে কাটায় নি। তাই আমি মোবাইল নাড়াচাড়া করার ভঙিতে আব্বু-আম্মির বেডরূমের সামনে কয়েকবার পায়চারী করতে লাগলাম।
ভেতর থেকে উত্তপ্ত কথা শোনা যাচ্ছিলো আবছা। মনে হচ্ছিলো আব্বু আর আম্মিজান ঝগড়া করছে। কি নিয়ে ঝগড়া?
আমি সাবধানে দরজায় কান ঠেকালাম। চড়া গলায় আব্বুর আওয়াজ কানে আসছিলো, কিন্তু দরজা লক থাকায় বোঝা যাচ্ছিলো না ঠিক কি বলছে। ওদিকে আম্মিজানও চেঁচিয়ে কি যেন বলে উত্তর দিলো। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না কেন ঝগড়া?
সেদিন দিনের বেলায় আব্বু বলেছিলো খুশির খবরটা, আম্মি এক বড়ো ফ্যাশন ব্যবসায়ীর সঙ্গে আব্বুর মোলাকাত করিয়ে দিয়েছে। এই ফ্যাশন হাউজের হরেক ডিজাইনের কাপড় এখন আমাদের আল-হিলালে বিক্রি হবে, তাতে অনেক কামাই হবে। এটা নিয়েই কি ঝগড়া? কিন্তু এ তো খুশির খবর। তাতে রাগারাগির কি আছে?
একটু পরেই ঝগড়ার আওয়াজ থেমে গেলো। ঠাস ঠাস করে থাপ্পড় মারার আওয়াজ শুনলাম, আম্মির ফোঁপানোর আওয়াজও হলো যেন। ভেতর থেকে ধস্তাধস্তির শব্দ। তারপর ধপাস করে শব্দ, বিছানার ওপর চিৎ হয়ে পড়ে গেলে যেমন আওয়াজ অনেকটা তেমনই।
তারপর মনে হলো যেন আব্বুজান গালাগালি করছে, আর হাঁপাচ্ছে। “গাশতী ছিনাল”, “তাওয়াইফ”, “বেওয়াফা” এসব অশ্লীল শব্দ আব্বুজানের মুখে শুনলাম মনে হলো যেন।
ওদিকে আম্মিজানও মনে হলো “আহঃ! আহঃ!” করে কাঁদছে... না, ভুল বললাম, ঠিক কান্নাও না, করুণ কণ্ঠে গোঙাচ্ছে যেন।
পরমূহুর্তেই আব্বুজানের গর্জন শুনলাম। গর্জন করে নিস্তব্ধ হয়ে গেলো সবকিছু।
আর সে নিস্তব্ধতার কারণে আম্মির মন্তব্য কানে এলো। তাচ্ছিল্য করে আম্মি বললো, “বাস! এতেই হয়ে গেলো তোমার? বিক্রমজী কতক্ষণ দম রাখতে পারে জানো সেটা?”
আব্বু উত্তর দিলো না সঙ্গে সঙ্গে। কিছুক্ষণ পরে আম্মির কণ্ঠ শুনলাম আবারও। স্পষ্ট না বুঝলেও মোটামুটি ধরতে পারলাম, আম্মি আব্বুকে বোঝাচ্ছে, হিন্দুরা সবকিছু বেদখল করে নিচ্ছে আমাদের মুসলমানদের কাছ থেকে। তাই তারা যা চায়, তাদের দাবী পূরণ করে ওদের খুশ রাখতে হবে, যেন ব্যবসা চালু থাকে এবং লাভও বেশি হয়। তাতে করে আমাদের খানদানের সবারই ফায়দা।
একটু পরে আব্বুজান উত্তর দিলো, “ঠিক আছে, সামিনা। তুমি বিক্রমজীকে খুশ রাখো। তুমি মালাউনটার সকল খায়েশ মেটাও, আমি বাধা দেবো না। তবে ব্যবসা যেন ঠিকঠাক চলে সেটা খেয়াল রাখবে।”
“আলবৎ!” আম্মি উত্তর দেয়, “এবার সরো আমার ওপর থেকে... সারা শরীর গান্ধা হয়ে আছে... যাই, গোসল নিয়ে আসি... সারাদিনে অনেক ওয়াক্তের নামাজ কাযা হয়ে গেছে...”
এটা শুনে আমি সরে গেলাম। কয়েক মূহুর্ত পরে দেখি দরজা খুলে পাজামার নাড়া বাঁধতে বাঁধতে আব্বুজান বেরিয়ে এলো।