থানা থেকে আমরা বাড়ীতে ফিরে আসি।
মেহমানদের বসার ঘরে ঢুকতে দেখি হানিয়া খালা খুব ছেনালী কণ্ঠে কার সাথে আলাপ করছিলো ফোনে, আর এক হাতে নিজের একটা মাই টিপছিলো ফোনে কথা বলতে বলতে। আমাদের ঢুকতে দেখেই সোজা হয়ে উঠে বসে খালাজান, পোষাক ঠিক করে নেয়। আর “গুরূজী, বাদমে বাত করবো” বলে ফোনটা কেটে দেয়।
আমযাদ খালু তার বিবিকে সংক্ষেপে থানার ব্যাপারে ব্যাখ্যা করে।
আব্বুজানের মুখটা কালো হয়ে ছিলো।
তাকে খুশি করার জন্য হানিয়া খালা নিশ্চিহ্ণ স্বরে বলে, “ফিকর করবেন না, ভাইজান। আপনারা থানায় যাবার পরে বসে না থেকে আমিও খোঁজ লাগিয়েছি। সানিয়াকে শহরের বাইরে একটা হিন্দু আশ্রমে তুলে নিয়ে গেছে সঙ্ঘীরা। সানিয়া এখন বহাল তবিয়তেই আছে। ওকে আশ্রমের ম্লেচ্ছ সেবাদাসী বানানো হয়েছে।”
“সেবাদাসী?” আব্বুজান প্রশ্ন করে।
“হ্যাঁ, ভাইজান। আপনার সেদিনকার অপরাধের, সাম্প্রদায়িকতার সাজা ভোগ করতে হচ্ছে আমার ছোটী বহেনকে। আপনি তো সবই জানতেন, পাশ্মীরে লোদী প্রশাসনের আন্তঃধর্মীয় ঐক্যতার বিশেষ আইন বলবত আছে যে কোনও মুসলিম পরিবারের সদস্য ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার পরিচয় দিলে স্থানীয় হিন্দু লওণ্ডারা সে খানদানের মাযহাবী আওরতদের উঠিয়ে নিয়ে যাবে, আন্তঃধর্মীয় সম্পর্ক জোড়া লাগানোর জন্য হিন্দু মরদরা মুসলমান লড়কীদের অন্তরঙ্গ সামাজিক শিষ্টাচারের শিক্ষা দেবে। লোদী সরকার আমাদের উভয় মাযহাবের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতির বন্ধন জোরালো করবার জন্যই এই উদ্যোগ নিয়েছে। সনাতন সম্প্রদায়ের মরদরা মুসলিম মাযহাবের আওরতদের সাথে নিয়ে এই হিন্দু-মুসলিম ঐক্যতার অগ্রদূত হিসেবে কাজ করছে সারা পাশ্মীরে। এসবই জানবার পর আপনি হিন্দুদের সাথে পাঙ্গা নিতে গেলেন কেন?”
“হ্যাঁ ভাই হামীদ”, আমযাদ খালুও তার বিবির কথায় সায় দিয়ে বলে, “হানিয়া তো ঠিকই বলেছে। বলাৎকারী হারামী হিন্দুরা আমাদের পাশ্মীরী মুসলমানদের ঘরে ঘরে ঢুকে মুসলিমা আলীমাদের গাভীন করে দিচ্ছে। এই অবস্থায় তুমিই বা কোন যুক্তিতে হিন্দুদের উসকানী দিতে গেলে? এই যে আজকে বলাৎকারী হিন্দু গুণ্ডারা দল বেঁধে এসে তোমার বিবিজানকে তুলে নিয়ে গেলো, তার দায়ভার কিন্তু তোমার ওপরই বর্তায়!”
রিশতেদারদের ভর্ৎসনায় আব্বুজান একটু ম্রিয়মান হয়ে পড়ে, মাথা নত করে বসে থাকে।
“কিন্তু খালাজান”, আমি এ ফাঁকে বলি, “আমার আম্মিজান তো মুসলমান মাযহাবী আওরত। আর যতদূর জানি, কট্টর সংস্কারী হিন্দুরা আমাদের মুসলমানদের দিল থেকে নফরত করে। আম্মির মতো মুসলমান আওরতকে ওরা তাদের মন্দিরের পবিত্র সেবাদাসী বানাবে?”
শুনে হানিয়া খালা স্মিত হেসে বলে, “নারে জুনেদ, ওরা কেবল আমাদের উগ্রবাদীদের নফরত করে, সবাইকে নয়। উল্টো কট্টর হিন্দুরা তো আমাদের মুসলমান মাযহাবের আওরতদের দিল থেকে কামনা করে। আমাদের পাশ্মীরী মুসলমান জেনানাদের সাথে মেলামেশার ব্যাপারে হিন্দুদের কোনও ছুৎমার্গ নেই। বরং যত বেশি কট্টর ধার্মিক হিন্দু, ততই আমাদের মাযহাবী মুসলিমা লড়কীদের জন্য বেশি বেশি দিওয়ানা।”
“তবে তুই ঠিকই বলেছিস, তোর আম্মিজানকে সরাসরি আশ্রমে তুলে নেবে না ওরা”, হানিয়া খালা একটু হেঁয়ালী করে বলে, “যেহেতু মুসলমান মাযহাবের আওরত, সানিয়াকে হিন্দুদের সেবাদাসী হবার জন্য কিছু রীতি রেওয়াজ পালন করতে হবে। তাদের সংস্কার অনুযায়ী, আশ্রমের সকল পূজারীরা মিলে তোর আম্মিকে শুদ্ধীকরণ করাচ্ছে। পূজারীদের খতম হলে সকল হিন্দু সেবায়েতরাও সানিয়াকে শুদ্ধীকরণ করবে। তারওপর HSS-এর সঙ্ঘীরা তো আছেই।”
“বলো কি হানিয়া?!” আমযাদ খালু বলে, “বলাৎকারী হিন্দুরা সবাই মিলে করবে সানিয়াকে... ওই মানে... শুদ্ধীকরণ না কি যেন বলে?”
“শুধুই কি শুদ্ধীকরণ?” হানিয়া খালা হেসে বলে, “মাশাল্লা, সানিয়া যা সুন্দরী। এই বয়সেও আমার ছোটী বহেনটার মতো এতো আকর্ষক পাশ্মীরী MILF এ শহরে কমই আছে। আমি শুনলাম, HSS-এর বিভিন্ন হোমড়াচোমড়া নেতাদের দাওয়াত দিয়ে আশ্রমে ডেকে আনা হচ্ছে। সঙ্ঘের হিন্দু নেতারা সবাই মিলে তোমার মুসলমান শালীকে ধর্মীয় সম্প্রীতির সবক শেখাবে।”
“কিন্তু হানিয়া আপা, এক বাত বাতাও”, আব্বুজান হঠাৎ অদ্ভূত প্রশ্ন করে, “এতো সব তুমি জানলে কিভাবে?”
হানিয়া খালা একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায়। আড়ষ্ট হাসি হেসে বলে, “না মানে... ওদের সম্প্রদায়ে আমার কিছু জানপেহচান লোক আছে তো, তাদের কাছ থেকেই খবর নিলাম আর কী...”
“হায়াল্লা, তোমার আবার হিন্দু মরদদের সাথে জানপেহচান কিভাবে হলো?” আমযাদ খালু এবার চোখ সরু করে বলে, “হিন্দুদের সাথে ক্যায়সা জানপেহচান তোমার? আজকে থানায় হিন্দু হাবিলদারটাও কি যেন ইঙ্গিত করছিলো....”
“আরে না না, ও তেমন কিছু না”, হানিয়া খালাজান হেসে উড়িয়ে দেবার ভঙ্গীতে তাড়াতাড়ি বলে, “আসলে হিন্দুরা আমাদের এ রাজ্যটা জবরদখলে নেবার পর থেকে আমার মতো মুসলমান আওরতদের জন্য শান্তিতে বাজারসদাই করা সংকটময় হয়ে গেছে। তোমার তো হররোজ বীফ গোশতের কারী ছাড়া চলেই না। জানোই তো, এখন বাজার থেকে গাইয়ের গোশত খরিদ করা খুব খতরনাক কাজ হয়ে গেছে। মাংসের থলে হাতে কোনও মুসলমান আওরতকে রাস্তায় পেলেই হলো, হিন্দু গোরক্ষকরা পাশ্মীরী মেয়েদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে তাদের ডেরায়। ব্যাগে আদৌ বীফ আছে কিনা, নাকি মাটন বা মুরগার গোশত তাও পরখ করে দেখছে না কেউ। আর এসব কারণে বাজারে গেলে হিন্দুদের সাথে একটু জানপেহচান তো রাখতেই হয়...”
“হ্যাঁ বিবিজান, তুমি বিলকুল সহী করেছো”, আমযাদ খালু মাথা চুলকে বলে, “ভাগ্যিস গোমূত্রপায়ী হারামী হিন্দুরা আমাদের পাশ্মীরেও বীফ বন্ধ করে দেয় নি...”
“তার কৃতিত্ব আমার মতো পাশ্মীরী মুসলমান আওরতদের”, এবার হানিয়া খালা একটু জোর গলায় বলে, “শুধু মুসলমান লড়কীদের সাথে জবরদস্তী করবার লোভেই কট্টর হিন্দুরা বীফ গোশত বিক্রি নিষিদ্ধ করছে না। বীফ গোশত বিক্রি বন্ধ হয়ে গেলে গোরক্ষকরা যে বেকার হয়ে পড়বে।”
বেলা গড়িয়ে গেছে। সবারই ক্ষিদে পেয়ে গেছে। ওদিকে হানিয়া খালার নোকর আবু টেবিলে খানা লাগিয়ে ডাক দিলো। আজকের অঘটনের খবর শুনেই বুদ্ধিমতী হানিয়া খালাজান আবুকে দিয়ে ওর বাড়ীতে রান্না করে খাবার নিয়ে এসেছিলো। এ বাড়ীর মুসলমান মালকিন হিন্দুদের সেবায় দিনভর ব্যস্ত থাকবে, চটপটে হানিয়া খালা বুঝতে পেরেছিলো আগেভাগে।
আব্বুজানের খাবার রূচি ছিলো না। কিন্তু সবাই মিলে জোরজার করে তাকে খানার টেবিলে নিয়ে গেলো।
টেবিলে গিয়ে দেখি চাওল পরোটার সাথে পাঁচমেশালী সব্জী, ডাল তড়কা ইত্যাদি। আরও ছিলো একটা থালিতে বীফ কাবাব আর একটা বড় বাটীতে বীফ আচারী গোশত।
“ওয়াহ ওয়াহ!” আমযাদ খালুজান খুশি হয়ে টেবিলে বসে প্লেট টেনে তাতে মাংস বাড়তে বাড়তে বললো, “গাইয়ের গোশতের তরকারীর তুলনা হয় না!”
“গাইয়ের গোশত” শুনে আবু আর আমি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বৃহৎবক্ষা হানিয়া খালার বুকের দিকে তাকালাম। আবু আর আমি তো ঠিক জানি, হিন্দু গোরক্ষকরা আমযাদ খালুজানের বিবি বেগম হানিয়া শেয়খকে তুলে নিয়ে গিয়ে কি করেছিলো!