কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করলেই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত—এমনটাই ধারণা হংকংয়ের পরিবারগুলোর। এ কারণে শিক্ষার্থীরা থাকেন প্রচুর চাপে। কলেজে পরীক্ষার ঠিক ৬০ দিন আগে থেকে শুরু ‘বেটার ডেজ’–এর গল্প। কিশোরদের মারামারি, বুলিং, প্রতিশোধ, প্রেমের গল্পকে ছাপিয়ে ভালো দিনের অপেক্ষায় থাকা কিশোরদের গল্প উঠে এসেছে সিনেমায়। এটিই ৯৩তম অস্কারে আলোচনায় আছে; মনোনয়ন পেয়েছে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র বিভাগে।
হংকংয়ের তরুণ নির্মাতা দ্রিক টোসায়। বয়সে ছোকরা। তিনি ২০১০ সালে প্রথম সিনেমা বানিয়েছেন। ৬ নম্বর সিনেমা দিয়ে অস্কারে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। এমন ভাগ্য হাতে গোনা কয়েকজন নির্মাতার। একটি উপন্যাস পড়ে দ্রিকের ভালো লেগে যায়। বাস্তবে তাঁর দেখা অনেক ঘটনাই বইটিতে রয়েছে। এভাবে হাত দেন ‘বেটার ডেজ’ চিত্রনাট্যে। সিনেমাটি ২০১৮ সালে শুটিং শেষ হয়। দ্রুত কিছু কাজ শেষ করে জমা দেন ৬৯তম বার্লিন চলচ্চিত্রে উৎসবে। তারা মনোনীত সিনেমার নাম ঘোষণা করলেও তিনি হতাশ হন। নতুন করে আবারও শুরু করেন সম্পাদনার কাজ। বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব শুরুর ঠিক তিন দিন আগে নির্মাতাকে জানানো হয় তাঁর সিনেমাটি উৎসবে প্রদর্শন করা হবে। বড় চলচ্চিত্র উৎসব থেকে এ কথা শুনে খুশিতে আত্মহারা হলেও সিনেমাটি সে সময় প্রদর্শন করা সম্ভব হয়নি। বড় সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়। কারণ, সিনেমাটি তখনো প্রস্তুত ছিল না। পরে উৎসব কর্তৃপক্ষকে এই সিনেমার চারটি শো বাতিল করতে হয়।
‘বেটার ডেজ’ সিনেমার পোষ্টার, ছবি: সংগৃহীত
এখন সব চূড়ান্ত। এবার অস্কারে সেরা আন্তর্জাতিক ভাষার সিনেমা হিসেবে পুরস্কার পেলে হংকং চলচ্চিত্র ইতিহাসে অংশ হবেন দ্রিক। সিনেমাটির গল্প বিশ্ববাসীর খুবই চেনা। স্কুলের শিক্ষার্থীদের বুলিং। কিশোরদের এসব নৃশংসতা অনেক শিক্ষার্থীকে মানসিক, শারীরিকভাবে তিলে তিলে শেষ করে দেয়। অনেকেই ছিটকে পড়ে পড়াশোনা থেকে। কেউ আবার অপমানের প্রতিশোধের পথ খোঁজে। মূল কথা, স্কুলের কিশোর ছেলেমেয়েরা বুঝতেই পারে না, তাদের কাছে যা নেহাত মজা ও আবেগ, সেটাই অন্যের জীবন শেষ করে দিতে পারে। আসলে নির্মাতা শৈশবে কিছু বন্ধুকেও দেখেছেন এমন বুলিং করতে। শৈশবের অনেক অভিজ্ঞতা সিনেমায় তুলে ধরেছেন।
সিনেমাটির মূল চরিত্রের অভিনেত্রী জুয়াও সিনেমাটির প্রযোজক, ছবি: সংগৃহীত
সিনেমাটির মূল চরিত্রের অভিনেত্রী জুয়াও সিনেমাটির প্রযোজক। তাঁর বয়স ২৯ হলেও স্কুলের শিক্ষার্থী হিসেবে দারুণ মানিয়েছে। সিনেমার অন্য অভিনেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য জ্যাকসন, ফাং ইন এবং ওয়েই ল্যাই। তাঁদের এমন কিছু মারামারির দৃশ্য আছে, যেগুলো দেখে মনে হয় ঘটনাটি আড়াল থেকে দেখছি। এসব ঘটনা ভীষণভাবে মনে দাগ কাটে। জুয়াও ও জ্যাকসন ভালো অভিনয় করেছেন। অস্কার পেলে তাঁদের দিকে নজর পড়তে পারে আন্তর্জাতিক নির্মাতা মহলের। সিনেমাটির উপস্থাপনা ছিল দারুণ। শুরু থেকেই ঘটনা কোনো দিকে যাবে, সেটা বুঝতেই দেননি পরিচালক। সিনেমার প্রথম ৩০ মিনিট আপনাকে কষ্ট দেবে। বাকি অংশ সুন্দর জীবনবোধকে আঁকা হয়েছে। এটিই সিনেমা প্রাণ।
২৭ বছর পরে তৃতীয়বারের মতো অস্কারে মনোনয়ন পেল হংকং ‘বেটার ডেজ’। সিনেমাটি ব্যবসায়িকভাবেই সুপার হিট। সিনেমা–সম্পর্কিত বিভিন্ন সাইটে ‘বেটার ডেজ’–এর রেটিং ৮–এর বেশি। সিনেমায় কিশোরদের সহিংসতা এতটাই মারাত্মকভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যা চীনা সরকার কাটছাঁট করে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির অনুমতি দিয়েছিল। সিনেমাটি রাজনৈতিক কারণেও অস্কার ঘরে তুলতে পারে। আগামী ২৫ তারিখে বসতে যাচ্ছে অস্কার আসর। এর আগেই দেখতে পারেন সিনেমাটি। বিশেষ করে যারা ড্রামা, অপরাধ ঘরানার ছবি পছন্দ করেন তাহলে আর দেরি নয় দেখতে পারেন ‘বেটার ডেজ’।
ছবিটি বক্স অফিসে ব্যাপক সফলতা পায়, ছবি: সংগৃহীত