৯৩তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসে সবার আলাদা চোখ থাকে আন্তর্জাতিক বিভাগের দিকে। হলিউডের সিনেমার বাইরে এই বিভাগে থাকে জমজমাট লড়াই। এবার বিভাগটিতে সেরার মুকুটটি পরেছে ডেনমার্কের ছবি থমাস ভিন্টারবার্গের ‘অ্যানাদার রাউন্ড’।
এবার অস্কারে ৯৩টি দেশের মধ্যে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছিল বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, আর্মেনিয়া, তিউনিসিয়া, হংকং ও ডেনমার্কের সিনেমা। যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ডলবি থিয়েটার ও ইউনিয়ন স্টেশনে বাংলাদেশ সময় ২৬ এপ্রিল ভোর ছয়টায় বসে অস্কারের ৯৩তম আসর। অস্কারজয়ী এই সিনেমার গল্প জীবনের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানো চার শিক্ষককে নিয়ে।
‘অ্যানাদার রাউন্ড’ ছবির দৃশ্য, সংগৃহীত
চার বন্ধু। ৪০ পেরিয়ে তাঁদের বয়স। পেশায় সবাই শিক্ষক। তাঁদের কাছে ‘জীবন’ একঘেয়েমিতে পূর্ণ একটা ব্যাপার। বেঁচে থাকাই তাঁদের কাছে মনে হয় নিরর্থক। স্কুলে ও ব্যক্তিগত জীবনে তাঁদের আচরণ মনে করিয়ে দেয়, মহৎ পেশায় যুক্ত থাকলেও তাঁরা এখন জীবনের খেই হারানো মানুষের দলে। হঠাৎ তাঁরা ইন্টারনেট ঘেঁটে জানতে পারেন, জীবনকে সজীব ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ করা যায়। এ জন্য রক্তে অ্যালকোহলের মাত্রা বাড়াতে হবে। অ্যালকোহল পান করে তাঁরা জীবনের ছন্দ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেন।
ছবির পরিচালক ডেনমার্কের নির্মাতা থমাস ভিন্টারবার্গ এই ছবি নিয়ে হেঁটেছেন বিশ্বের দামি সব চলচ্চিত্র উৎসবে। অধরা ছিল কেবল অস্কারের সোনালি মূর্তি। সেটিও ঝুলিতে ভরেছেন তিনি। সিনেমাটি গোল্ডেন গ্লোব, বাফটা, কান, বিএফআই লন্ডন, স্যান সেবাস্তিয়ান চলচ্চিত্র উৎসবসহ বিশ্বের জমজমাট সব সিনেমার আসরে অংশগ্রহণ করেছে। নির্মাতার ধারণা ছিল, গল্পের বৈচিত্র্য দিয়ে বিচারকদের মন জয় করবে ছবিটি। অবশেষে সেটাই প্রমাণিত হলো। কারণ, বিশ্বের প্রায় সব জায়গায়ই মানুষের হতাশা ও বিষণ্নতায় ভোগার খবর শোনা যায়। জীবনের প্রতি তৈরি হচ্ছে বিতৃষ্ণা। এই চিত্র তুলে ধরতে চেয়েছেন ভিন্টারবার্গ।
নির্মাতাকে এই গল্প নির্মাণে উৎসাহ দেন তাঁর মেয়ে আইডা। তিনি শুটিংয়ের চার দিনের মাথায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। মেয়ের শোকে ভিন্টারবার্গ ছবিটি তৈরি থেকে একেবারে সরে আসতে চেয়েছিলেন। তাঁর নিজেরই তখন জীবনের ওপর নিয়ন্ত্রণ ছিল না। পরে মেয়েকে স্মরণীয় করে রাখতেই তিনি আবার শুটিং শুরু করেন। মেয়ের শোকে ভিন্টারবার্গের নিয়ন্ত্রণহীন জীবনের অভিজ্ঞতা চিত্রনাট্যকে করেছে আরও বেশি জীবন্ত।
নির্মাতা পুরস্কারটি তাঁর মেয়ে আইডাকে উৎসর্গ করেছেন। অস্কারের রাতে মেয়েকে নিয়ে তাঁর আবেগঘন বক্তব্য ছিল। ভিন্টারবার্গ অস্কার পুরস্কার হাতে বলেন, ‘আমরা তাঁকে (আইডা) মিস করি। আমরা তাঁকে ভালোবাসি। আজ আইডা এখানে থাকলে হাততালি দিয়ে চিৎকার করত। আইডা, এই অলৌকিক ঘটনার তুমিও অংশ। তুমি আমাদের মধ্যে আছ। এই পুরস্কার তোমার জন্য।’
সিনেমার প্রধান চার চরিত্র মার্টিন, টমি, নিকোলাস ও পিটার। তাঁদের চরিত্রের অভিনয় ছিল জুৎসই। বিস্তৃত ক্যানভাসে ক্যামেরার শট নজর কাড়ে। করোনার সময়ে সিনেমাটি হলে মুক্তি পেয়েছিল।