মন দিয়ে পড়ুন : -----বছর দেড়েক ধরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। কেউ জিতছে না, কেউ হারছে না, কিন্তু অদ্ভুত এই যুদ্ধ চলছে। রোজ কোটি কোটি ডলার খরচ হচ্ছে কিন্তু তাতে কারোর কিছুই যাচ্ছে-আসছে না। এই "নিউ নরমাল" এতটাই সহ্য হয়ে গেছিলো যে রাশিয়ার যুদ্ধের খবর পড়া ছেড়েই দিয়েছিলাম।
গোল বাঁধালো দুটো নাম - "প্রিগোঝিন" ও তার আর্মি "ওয়াগনার" ! এই প্রিগোঝিন ও তার অধীনস্ত আর্মি নাকি এতদিন পুতিনের হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়ছিলেন হঠাৎ বিদ্রোহ করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন। এমন কী প্রিগোঝিন মস্কোর থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটার দূরে দাঁড়িয়ে পুতিনকে ক্ষমতাচ্যুত করে মস্কো দখল করে নেবার হুমকি দেন !
সব গোলমাল হয়ে গেলো। তাহলে কি প্রিগোঝিন রাশিয়ান আর্মির এক হোমরা-চোমরা যিনি বিদ্রোহ করে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে নিতে চাইছেন ? ঠিক যেমনটা পাকিস্তানে হয়। পারভেজ মুশারফ যেমন করে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে, আদ্রিয়েলকে মেসেজ করলাম। ম্যাঞ্চেস্টারে আদ্রিয়েল আমার এক বছরের সিনিয়র ছিল। ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্সের দুর্দান্ত ছাত্রী। আদ্রিয়েল দুটি শব্দে জবাব দিলো - "ওয়ার আউটসোর্সড" ! কিছুই বুঝলাম না ! উত্তরে লিখলাম - "বুঝিয়ে বলো" !
আদ্রিয়েল যা লিখলো তা পড়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। এতদিন জানতাম যেকোনো দেশের হয়ে যুদ্ধ করে সেই দেশের আর্মি। আদ্রিয়েল বললো সে সব নাকি পুরোনো কনসেপ্ট। দেশের আর্মি যুদ্ধ লড়তে গেলে অনেক মুশকিল - যুদ্ধবন্দীকে মেরে ফেলা যাবে না, তার উপর অত্যাচার করা যাবে না, সিভিলিয়ান ক্ষয়-ক্ষতি এড়িয়ে চলতে হবে। তাছাড়া দেশের আর্মির লোক বিপুল সংখ্যায় মারা গেলেও, সারা দেশে হৈ-হট্টগোল শুরু হয়ে যাবে - এতো সৈন্য মারা যাচ্ছে কেন, অমুক সাহেব জবাব দাও ! তাই, শক্তশালী দেশগুলো আর নিজে যুদ্ধ করে না। এখন যুদ্ধ করার কর্পোরেট কোম্পানি তৈরী হয়েছে যারা টাকা নিয়ে যে কোনো দেশের হয়ে লড়াই করে। আগে যাদের মার্সিনারি বা ভাড়াটে সৈন্য বলা হতো এখন সেটাই কর্পোরেট ফর্মে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। ওয়াগনার এমনি একটি যুদ্ধ করার কোম্পানি যার মালিক হলেন প্রিগোঝিন !
মাত্র ৫ বছর আগেও প্রিগোঝিনের বাহিনীতে ৫০০০ সৈন্যও ছিল না, এখন সেটাই নাকি ৫০,০০০ ! কোথায় পাচ্ছেন প্রিগোঝিন এই ভাড়াটে সৈন্য ? ওয়াগনারারের ৫০ হাজার সৈন্যের, বেশ কয়েক হাজার নাকি নেপাল থেকে রিক্রুট করা - গোর্খা ! এছাড়া আছে আলবেনিয়ান, রোমানিয়ান ইত্যাদি। মানে গরিব দেশের থেকে লোক নিয়ে আসা হয়েছে বড়লোকদের যুদ্ধ করার জন্য ! এতদিন জানতাম কার্গিল যুদ্ধ করার জন্য পাকিস্তান আফগান মার্সিনারিদের নিয়ে এসেছিলো কিন্তু তারা কোনো কোম্পানির লোক ছিল না। এখন ব্যাপারটা সংগঠিত হয়ে কর্পোরেট স্ট্রাকচারে চলে গেছে। আর ওয়াগনার প্রথম কোম্পানি নয়। "ব্ল্যাকওয়াটার" নামে একটি যুদ্ধ করার কোম্পানি ইরাকে আমেরিকার হয়ে যুদ্ধ করেছিল। আমেরিকান আর্মির ক্ষয়ক্ষতি ঠেকানো গেছিলো এই ভাড়াটে সৈন্যদের এগিয়ে দিয়ে।
"স্যাপিয়েন্স" নামের বিখ্যাত বইটির লেখক ইউভাল হারারি আরেকটি দুর্দান্ত বই লিখেছিলেন - স্যাপিয়েন্সের জনপ্রিয়তায় যে বইটি হয়তো বেশি লোক পড়েননি। বইটির নাম "21 লেসন্স ফর দি 21st সেঞ্চুরি"। এই বইটিতে তিনি ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যে খুব শিগগিরই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলেজেন্স বহু মানুষকে কর্মহীন করে দেবে - তখন সেই পৃথিবীর বিপুল সংখ্যক হতাশ, কর্মহীন তরুণ-তরুণীদের কিভাবে মিনিংফুলি এনগেজ করে রাখা যাবে সেটাই সারা পৃথিবীর ভবিষ্যতের রাজনৈতিক নেতাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
ইউভাল হারারির ভবিষ্যৎবাণী অক্ষরে অক্ষরে ফলে গেছে - আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এখন সত্যি সত্যি অন্য লেভেলে চলে গেছে আর এক দশক পরে হয়তো ৮০% মানুষকে আর কাজ করার প্রয়োজনে দরকার-ই হবে না। তারা কি করবেন ? এসে গেছেন প্রিগোঝিনরা ! যুদ্ধ করার কোম্পানিগুলো অতি সস্তায় এদের ভাড়া করবেন। "হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী" তখন কর্পোরেট রূপ নেবে ! ওয়াগনারারের সঙ্গে ব্ল্যাকওয়াটারের যুদ্ধে হয়তো আইপিলের মতো বেটিং হবে !
তখন কোনো এক মন্দার বোস হয়তো মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করবেন - "কোন পক্ষে লড়ছেন ? মোগল না রাজপুত ?"
গোল বাঁধালো দুটো নাম - "প্রিগোঝিন" ও তার আর্মি "ওয়াগনার" ! এই প্রিগোঝিন ও তার অধীনস্ত আর্মি নাকি এতদিন পুতিনের হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়ছিলেন হঠাৎ বিদ্রোহ করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন। এমন কী প্রিগোঝিন মস্কোর থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটার দূরে দাঁড়িয়ে পুতিনকে ক্ষমতাচ্যুত করে মস্কো দখল করে নেবার হুমকি দেন !
সব গোলমাল হয়ে গেলো। তাহলে কি প্রিগোঝিন রাশিয়ান আর্মির এক হোমরা-চোমরা যিনি বিদ্রোহ করে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে নিতে চাইছেন ? ঠিক যেমনটা পাকিস্তানে হয়। পারভেজ মুশারফ যেমন করে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে, আদ্রিয়েলকে মেসেজ করলাম। ম্যাঞ্চেস্টারে আদ্রিয়েল আমার এক বছরের সিনিয়র ছিল। ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্সের দুর্দান্ত ছাত্রী। আদ্রিয়েল দুটি শব্দে জবাব দিলো - "ওয়ার আউটসোর্সড" ! কিছুই বুঝলাম না ! উত্তরে লিখলাম - "বুঝিয়ে বলো" !
আদ্রিয়েল যা লিখলো তা পড়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। এতদিন জানতাম যেকোনো দেশের হয়ে যুদ্ধ করে সেই দেশের আর্মি। আদ্রিয়েল বললো সে সব নাকি পুরোনো কনসেপ্ট। দেশের আর্মি যুদ্ধ লড়তে গেলে অনেক মুশকিল - যুদ্ধবন্দীকে মেরে ফেলা যাবে না, তার উপর অত্যাচার করা যাবে না, সিভিলিয়ান ক্ষয়-ক্ষতি এড়িয়ে চলতে হবে। তাছাড়া দেশের আর্মির লোক বিপুল সংখ্যায় মারা গেলেও, সারা দেশে হৈ-হট্টগোল শুরু হয়ে যাবে - এতো সৈন্য মারা যাচ্ছে কেন, অমুক সাহেব জবাব দাও ! তাই, শক্তশালী দেশগুলো আর নিজে যুদ্ধ করে না। এখন যুদ্ধ করার কর্পোরেট কোম্পানি তৈরী হয়েছে যারা টাকা নিয়ে যে কোনো দেশের হয়ে লড়াই করে। আগে যাদের মার্সিনারি বা ভাড়াটে সৈন্য বলা হতো এখন সেটাই কর্পোরেট ফর্মে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। ওয়াগনার এমনি একটি যুদ্ধ করার কোম্পানি যার মালিক হলেন প্রিগোঝিন !
মাত্র ৫ বছর আগেও প্রিগোঝিনের বাহিনীতে ৫০০০ সৈন্যও ছিল না, এখন সেটাই নাকি ৫০,০০০ ! কোথায় পাচ্ছেন প্রিগোঝিন এই ভাড়াটে সৈন্য ? ওয়াগনারারের ৫০ হাজার সৈন্যের, বেশ কয়েক হাজার নাকি নেপাল থেকে রিক্রুট করা - গোর্খা ! এছাড়া আছে আলবেনিয়ান, রোমানিয়ান ইত্যাদি। মানে গরিব দেশের থেকে লোক নিয়ে আসা হয়েছে বড়লোকদের যুদ্ধ করার জন্য ! এতদিন জানতাম কার্গিল যুদ্ধ করার জন্য পাকিস্তান আফগান মার্সিনারিদের নিয়ে এসেছিলো কিন্তু তারা কোনো কোম্পানির লোক ছিল না। এখন ব্যাপারটা সংগঠিত হয়ে কর্পোরেট স্ট্রাকচারে চলে গেছে। আর ওয়াগনার প্রথম কোম্পানি নয়। "ব্ল্যাকওয়াটার" নামে একটি যুদ্ধ করার কোম্পানি ইরাকে আমেরিকার হয়ে যুদ্ধ করেছিল। আমেরিকান আর্মির ক্ষয়ক্ষতি ঠেকানো গেছিলো এই ভাড়াটে সৈন্যদের এগিয়ে দিয়ে।
"স্যাপিয়েন্স" নামের বিখ্যাত বইটির লেখক ইউভাল হারারি আরেকটি দুর্দান্ত বই লিখেছিলেন - স্যাপিয়েন্সের জনপ্রিয়তায় যে বইটি হয়তো বেশি লোক পড়েননি। বইটির নাম "21 লেসন্স ফর দি 21st সেঞ্চুরি"। এই বইটিতে তিনি ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যে খুব শিগগিরই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলেজেন্স বহু মানুষকে কর্মহীন করে দেবে - তখন সেই পৃথিবীর বিপুল সংখ্যক হতাশ, কর্মহীন তরুণ-তরুণীদের কিভাবে মিনিংফুলি এনগেজ করে রাখা যাবে সেটাই সারা পৃথিবীর ভবিষ্যতের রাজনৈতিক নেতাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
ইউভাল হারারির ভবিষ্যৎবাণী অক্ষরে অক্ষরে ফলে গেছে - আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এখন সত্যি সত্যি অন্য লেভেলে চলে গেছে আর এক দশক পরে হয়তো ৮০% মানুষকে আর কাজ করার প্রয়োজনে দরকার-ই হবে না। তারা কি করবেন ? এসে গেছেন প্রিগোঝিনরা ! যুদ্ধ করার কোম্পানিগুলো অতি সস্তায় এদের ভাড়া করবেন। "হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী" তখন কর্পোরেট রূপ নেবে ! ওয়াগনারারের সঙ্গে ব্ল্যাকওয়াটারের যুদ্ধে হয়তো আইপিলের মতো বেটিং হবে !
তখন কোনো এক মন্দার বোস হয়তো মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করবেন - "কোন পক্ষে লড়ছেন ? মোগল না রাজপুত ?"