খুবই ক্লান্ত আর অবসন্ন...সকাল সকাল যা ঘটলো তার জীবনে...এই রকম অভিজ্ঞতার সম্মুখীন অনেক কম হতে হয়েছে তাকে..
শ্যালক ও তার স্ত্রী দুপুর বেলা তার যথেষ্ট আপ্পায়ন করলেন..
ওই দিনই সন্ধেবেলা ছেলে আর ছেলের বাবা আসবে বলেছে...দুপুর বেলা খাওয়া দাওয়ার পর একলা চেয়ার এ বসে বসে ভাবতে লাগলেন.
শুধু মধুমিতার কথা...এখন এই মুহূর্তে তাকে একটা কঠোর নির্ণয় নিতে হবে...জীবনে পদে পদে অনেক ভুল করে গেছেন তিনি..
আর নয়.
মধুমিতা কেও তার জীবন থেকে চির তরে ভুলে যেতে হবে..তাতে তার যতই কষ্ট হোকনা কেন..মধুমিতার মা ঠিকই বলেছেন ওনার মেয়ের অনেক বয়স কম ওর ভবিষ্যৎ পড়ে আছে...ওনার আর মধুমিতার মধ্যে যা হয়েছে সেগুলো কে তিনি আর বদলাতে পারবেন না...সুতরাং তাদের দুজনের সম্পর্ক এখানেই ইতি..
ভাবতে ভাবতে আবার তার মন ভারী হয়ে আসছিলো..
তখনি একজনের আসার শব্দ পেলেন তিনি...দেখলেন তার বৃদ্ধা শাশুড়ি..
খুবই বৃদ্ধ হয়ে গেছেন পরিতোষ বাবুর শশুর শাশুড়ি...ঠিক মতো হাঁটা চলা করতে পারেন না.
“বাবা পরিতোষ... এমন করে বসে আছো কেন...?? “ প্রশ্ন শাশুড়ি মায়ের..
“আমি জানি তোমার জীবনে প্রচুর কষ্ট...তুমি আমার মেয়ে মারা যাবার পর দ্বিতীয় বিয়ে করোনি...যেটা তুমি অনায়াসে করতে পারতে...আর এখন তোমারই মেয়ের বিয়ে সমীপে...আসলে জানো কি বাবা...আমি সবই বুঝি..তোমার মেয়ের বিয়ের ব্যাপার টা শুনে তুমি দুঃখ পেয়েছো...সেটাও আমি শুনেছি...কিন্তু কি আর করা যাবে...ওকেও বিদায় দিতে হবে তাইনা...পরের ঘরের মেয়ে...” কাঁপা কাঁপা গলায় শাশুড়ি তাকে বললেন..
উনি চুপ করে তার কথা গুলো শুনছিলেন.
মনে মনে ভাবলেন হয়তো তিনি ঠিকই বলছেন...এই দ্রুতগামী জীবনে করোর জন্য মন খারাপ করে বসে থাকার সময় নেই..
এদিকে এনাদের মধ্যে তড়িঘড়ি রব উঠে গেলো...অতিথি আপ্পায়ন করতে হবে..
কিছক্ষন পর একটা কার এসে তাদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো.
পরিতোষ বাবু ডাইনিং রুমে বসে জানালা দিয়ে দেখতে পেলেন একজন বৃদ্ধ লোক পরনে সাদা ধুতি পাঞ্জাবী আর মাথায় টাক....সাথে আরেক জন জোয়ান ছেলে বেশ লম্বা আর ফর্সা.
তাকে বুঝে নিতে অসুবিধা হলোনা...যে কে ছেলে আর কে বাপ্.
ওনারা ভেতরে ঢুকেই তাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন পরিতোষ বাবুর শ্যালক.
ছেলের নাম অনির্বান...!!!
পরিতোষ বাবু ছেলে টার দিকে চেয়ে দেখলেন খুবই সুদর্শন আর মিষ্ট ভাষী..
মনে মনে ভাবলেন তাহলে এই সৌভাগবান সুপুরুষ ই তার মেয়ের ভাবি স্বামী....এই পুরুষের দ্বারা তার অতীব সুন্দরী মেয়ের যোনি আর পায়ু মন্থিত হবে..
ভাবতে ভাবতে সারা শরীরে শিহরণ তৈরী হতে লাগলো তার..
ছেলের বাবা তার থেকে বয়সে বেশ বড়োই হবেন....ওনার সাথে অনেক ভক্তি স্বরূপ কথা বললেন
“পরিতোষ বাবু...আপনার মেয়ে মধুরিমা কে আমাদের ভীষণ পছন্দ...তাছাড়া মধুরিমা সুশ্রীর সাথে সাথে মেধাবী ও সেকারণে ও আমাদের কুলবধূ হয়ে বংশের মান বাড়াবে....আপনি একদম চিন্তা করবেন না ওকে আমরা আপনার মতো নিজের মেয়ে করেই রাখবো..”
পরিতোষ বাবু হাসলেন...বললেন সেতো নিশ্চই...!!!
তিনি একবার চাইছিলেন ছেলের সাথে কথা বলতে...সে সুযোগ ও হয়ে গেলো তার...ছেলে যথেষ্ট স্মার্ট আর বুদ্ধিমান..
বড়ো ব্যাপার হলো মধুরিমা যখন পছন্দ করে রেখেছে সে হেতু তার বাধা দেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না.
ছেলের বাবা আবার পরিতোষ বাবুর সাথে কথা বলতে এলেন..বললেন “হ্যাঁ পরিতোষ বাবু...তাহলে শুভ দিনটা তাড়াতাড়ি ঠিক করে ফেলুন...”
পরিতোষ বাবু বললেন হ্যাঁ নিশ্চই...আমি মধুমিতার মামা মামীর সাথে কথা বলি...!!
সেদিন রাতের বেলা ওনারা চলে যাবার পর পরিতোষ বাবু, শ্যালক মশাই আর তার স্ত্রী তিন জন মিলে বসে আলোচনা করছিলেন..
শ্যালকের স্ত্রী বললেন, “কি দাদা মশাই...লোকজন কেমন...??? আমাদের মধুর জন্য উপযুক্ত পরিবার হবে তো...??”
পরিতোষ বাবু একটু ভেবে বললেন..”হ্যাঁ ছেলের বাবা যথেষ্ট অমায়িক আর ভদ্র মানুষ...পাত্র ও বেশ ভালো মনের মনে হলো আমার...এবার দিন ক্ষণের ব্যাপারটা তোমাদের উপর ছেড়ে দিলাম..অতঃপর মধুরিমা কে ছোট থেকে লালন পালন তো তোমরাই করেছো...”
শ্যালক আর তার স্ত্রী পরিতোষ বাবুর কথা শোনার পর একে ওপরের দিকে চেয়ে দেখলেন...তারপর শ্যালক মশাই তাকে বললেন...”দাদা আমি তো আপনাকে আগেই বলে ছিলাম ছেলে কে আমার বেশ পছন্দ...আপনি নির্দ্বিধায় মধুরিমা কে ওর হাতে তুলে দিতে পারেন...আর দিন ক্ষণের ব্যাপার টা আগামী তিন মাসের মধ্যেই মধুরিমা র কলেজ কমপ্লিট হয়ে যাচ্ছে...আর বিয়ের সময় ক্ষণ নিয়ে ওর কাছে একবার পরামর্শ করে নেওয়া ভালো..”
কথাটা বলার পর শ্যালক মশাই নিজের ফোনটা বের করে মধুরিমা কে ফোন করেন
কিছুক্ষনের মধ্যেই “হ্যালো” বলে মধুরিমার মধুর গলার আওয়াজ পরিতোষ বাবুর কানে এলো....বহুদিন পর..মেয়ে গলার স্বর তিনি শুনতে পেলেন...মনটা বেশ ভারী হয়ে আসছিলো তার....চোখ ছলছল করছিলো...একটা যুগ পেরিয়ে গেছে মেয়ের সাথে তার কথা বলার..
“হ্যাঁ মামা...বল...” ওপারে মধুরিমা বলে ওঠে...
পরিতোষ বাবু মেয়ের গলার আওয়াজেই ভেসে গেলেন...ও কি বলছিলো সেটা তিনি বুঝতেই পারলেন না.
অবশেষে শ্যালক মশাইয়ের ডাকে সম্বিৎ ফিরে পেলেন...
“দাদা আপনি কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলেন...?” প্রশ্ন করেন শ্যালক.
“না সারা দিনের ধকল গায়ে...একটু নিদ্রাচ্ছন হয়ে পড়ে ছিলাম..”তিনি বললেন..
“বেশ তো অনেক রাত হয়েছে...আপনার শোবার ব্যবস্থা করে দিতে হবে..” বলতে বলতে শ্যালক মশাই আবার ঘুরে আর একটা কথা বলা শুরু করলেন..”ও হ্যাঁ...মধুরিমা বললো যে ওর ফাইনাল এক্সাম শেষ হলেই ও কলকাতা ফিরে যাবে...”
“ওর সাথে তখনি বিয়ের দিন ঠিক করে নেওয়া হবে...শুভ কাজ ফেলে রাখা উচিৎ নয়...কি বলেন..?”
পরিতোষ বাবু শুধু হ্যাঁ বলেই শরীরের অলসতা প্রকাশ করলেন.
পরদিন সকাল বেলা আবার কথার ছলে পরিতোষ বাবু শ্যালক কে বললেন মেয়ের বিয়ের এই দিকের ব্যবস্থা টা ওনাকে করে নিতে আর বাকি টা উনি শিলিগুড়ি থেকে ফিরে এসে সামলে নেবেন..
এদিকে একবার ফাঁকা সময় করে তিনি মধুমিতা কে ফোন করার চেষ্টা করলেন কিন্তু ওর ফোন সুইচ অফ ছিলো.
তিনি তাতে একপ্রকার চিন্তিত হয়ে পড়লেন....শুধু মনে মনে ভাবলেন মধুমিতা ভালোই থাকবে নিশ্চই..আর ওকে নিয়ে কোনো রকম চিন্তা ভাবনা করবেন না..
পরেরদিন আবার তিনি কলকাতা থেকে প্রস্থান করলেন নিজের কর্মভূমির উদ্দেশে..শেষ বারের মতো সব কিছু নিপতে আসবেন...!!!
পরেরদিন ব্যাংকে নিজের কেবিনে নৃপেন বাবুকে ডেকে পাঠালেন...
নৃপেন বাবু আজকেও যথারীতি পুরোনো ভঙ্গিমায় এসে উপস্থিত হলেন...বললেন “স্যার ভেতরে আসতে পারি...”
এবারে পরিতোষ তাকে স্যার বলায় তিনি কোনো আপত্তি করলেন না.
কারণ তিনি জানেন যে তিনি এই চাকরি ছেড়ে চলে চাইছেন আর সেকথা বলার জন্যই নৃপেন বাবুকে ডাকা.
এবার তিনি বলা শুরু করলেন..”নৃপেন বাবু...কেমন আছেন বলুন...”
“আজ্ঞে আমি তো একদম ভালো আছি মশাই...তা হঠাৎ এমন ভালো মন্দর খবর কেন নিচ্ছেন মশাই...”
নৃপেন বাবু একটু আশ্চর্য চকিত হয়ে প্রশ্ন করলেন..
এবার কিন্তু পরিতোষ বাবু সরাসরি নিজের মনের কথা জানালেন...বললেন “নৃপেন বাবু...আমি চাকরি ছাড়তে চলেছি...”
নৃপেন আবার অবাক হয়ে উঠলেন হকচকিত ভাব নিয়ে প্রশ্ন করলেন...”চাকরি ছেড়ে দেবেন মানে...কি যে বলেন না মশাই..”
“না এবারে আমি সত্যিই ডিসিশন নিয়ে ফেলেছি...আর তো দুবছর...ওটা না করলেও হয়...মেয়ের ও বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, তাছাড়া কে আছে আমার জীবনে...এই একলা জীবনে অনেক টাকা উপার্জন করে নিয়েছি...সে রকম হলে আমার যা অভিজ্ঞতা আছে তাতে কলকাতার মতো শহরের প্রাইভেট ব্যাংকে অনায়াসে একটা চাকরি জুটে যাবে..” বললেন পরিতোষ বাবু.
নৃপেন তার কথায় একটু ভাবুক হয়ে উঠলেন...গলার আওয়াজ বসে গিয়েছিল..শুধু বললেন “আপনার যা ইচ্ছা মশাই...আপনার নির্ণয় কে সম্মান করি..”
পরিতোষ বাবু সেদিন নিজের কোয়ার্টার এ এসে একাকিত্বের মধ্যে শুধুই মধুমিতার কথা চিন্তা করে যাচ্ছিলেন..
একবার মনে করলেন ফোন করবেন...কিন্তু আর করলেন না....ফেলে আশা রাস্তা দিয়ে তিনি দ্বিতীয় বার হাঁটতে চাননা..তাবলে কি আর কোনো দিন মধুমিতার সাথে তার দেখা হবে না..??
চিরতরে মুছে যাবে তার জীবন থেকে..
ফেয়ারঅয়েল এর দিন ব্যাংকে তাকে খুবই সম্মান আর সম্বর্ধনা জানানো হলো..নৃপেন বাবু তো একপ্রকার কেঁদেই ফেলেছিলেন...
পরিতোষ বাবু অনেক ভাবুক হয়ে নিজের কিছু কথা রাখলেন... “হ্যাঁ এই ব্যাংক এই শহর এই সমাজ আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে...আপনাদের মতো ভাই বন্ধুদের মতো কলিগ পেয়ে আমি খুব ধন্য...তাদের আচার তাদের ব্যবহার আমি সারাজীবন হৃদয়ে আঁকড়ে রাখবো...”
একেবারের মতো তিনি ব্যাংকে ইস্তফা দিয়ে কলকাতা ফিরে এলেন বুকে এক রাশ দুঃখ ও বেদনা নিয়ে...বিশেষ করে মধুমিতার জন্য.
শুধু এই ভেবেই মনকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন যে মধুমিতা তার জন্য নয় সে একটা সুন্দর স্বপ্ন বা অভিজ্ঞতার মতো.
কলকাতায় এসে আগামী তিন মাস পর মেয়ের বিয়ে আর মধুরিমা ও সামনে মাসে শহরে ফিরছে...তারজন্য তিনি নিজেকে ব্যাস্ত রাখবেন..
কারণ পরিতোষ বাবু নিজের মেয়ের বিয়েটা বেশ ধুমধাম করেই দিতে চান..
ওদিকে শ্যালক মশাই শহরের নামী ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর সাথে কথা বলে রেখেছেন অগ্রিম টাকাও দিয়ে রেখেছেন বিয়ের জন্য...মধুরিমা এলেই দিন পাকাপাকি করে নিতে হবে.
পরিতোষ বাবু প্রায় একযুগ পর নিজের ভিটে বাড়িতে ফিরে এলেন...কেমন একটা ঘর ফেরত মনে হচ্ছিলো নিজেকে..এই ঘর তিনি যখন ছেড়ে ছিলেন তখন অনেক জন ছিল তার সাথে...এখন আর কেউ নেই...ভগবান হয়তো তাকে একলা থাকার অভিশাপ দিয়েছেন...
ঘরের মধ্যে ঝুল ধুলো ময়লা সাফ করতে একটা দিন লেগে গেলো...একবার মেয়ের শোবার ঘরে ঢুঁ মারলেন...আজও তার পা কাঁপছিলো...সে ঘরে প্রবেশ করতে.
বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখলেন...মনে হলো যেন মধুরিমা এখনো সেখানে শুয়ে আছে...
তার এই বিশাল ঘর এখন খাঁ খাঁ করছে..
তিনি চেয়েছিলেন এখানেই মেয়ের বিয়ে দেবেন...কিন্তু মধুরিমার মামা সামনের একটা ম্যারেজ হল বুক করে রেখে দিয়েছে.
সেহেতু বিয়ে ওখানে হলেও কন্যা দান এখান থেকেই হবে.
নিজের ওহীল চেয়ার এ বসে বসে পরিতোষ বাবু...ফেলে আসা দিন গুলো মনে করতে লাগলেন..
মধুমিতার কথাও তার মাঝে মাঝে মনে আসছিলো...কিন্তু তিনি শুধু “মধুমিতা তুমি ভালো থেকো....শেষ বিদায় টুকুও তোমাকে জানানো হলোনা”..মনে মনে বলে নিজেকে আশ্বস্ত করছিলেন.
সেদিন নিজের শশুরবাড়িতে সবার সাথে খেতে খেতে তিনি, শ্যালক মশাই আর ওনার স্ত্রী কে বললেন “মধুরিমা কি বলছে...কবে আসছে ও..?? বিয়ের কেনা কাটা এখন ঢের বাকি আছে...”
শ্যালকের স্ত্রী বললেন “না দাদা মশাই ওর সাথে তো সেরকম কোনো কথা হয়নি...তবে এবারে ফোন করে জেনে নেবো..”
পরদিন পরিতোষ বাবুর কাছে খবর এলো, মধুরিমার আসতে এখনো একমাস লেগে যেতে পারে..সুতরাং কেনা কাটা তাদেরকেই করে নিতে হবে..
কয়েকদিন পর পরিতোষ বাবু এবং সস্ত্রীক শ্যালক মশাই কলকাতার একটা নামী ফ্যাশন হাউসে মধুরিমার বিয়ের বেনারসি শাড়ি কিনতে চলে গেলেন..
মেয়ে মধুরিমা সুন্দরী...সেহেতু ওর সৌন্দর্যতার কথা মাথায় রেখেই পঁয়ত্রিশ হাজার টাকার বেনারসি শাড়ি কেনা হলো...
আর সেটা মধুরিমা হোয়াটস্যাপ এর মাধ্যমে নির্বাচন করে দিয়েছিল.
আর বাকি পড়ে রইলো নামী ফটোগ্রাফার আর মেকআপ আর্টিস্ট...
পরিতোষ বাবু শুধু দিন গুনছিলেন...কবে মেয়ে ফিরবে...”কি জানি মেয়ে কি তাকে ক্ষমা করে দিতে পারবে কিনা”...এই বিরহ যন্ত্রনা অসহ্য হয়ে উঠে ছিলো...
মনে মনে ভাবলেন মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেবেন পিতৃঋণ চুকিয়ে দেবেন...এতেই তার শান্তি...আর তার এই জীবনে কোনো কিছু পাওয়ার আশা রাখবেন না।
পরেরদিন শ্যালকের কাছে থেকে খবর পেলেন মেয়ে আগামী সপ্তাহে ফিরছে...।
তাতে পরিতোষ বাবুর একটা ভয় মিশ্রিত আনন্দের অনুভূতি পেলেন। এবার শুধু দাঁত চেপে রেখে শুধু দিন গোনার পালা। যে মেয়ের কাছে সুযোগ পেলে অন্তত একবার তিনি ক্ষমা চেয়ে নিতে পারেন।
ঘরের বারান্দায় আরাম কেদারায় বসে শুধু বাকি দিন গুলো পার করতে লাগলেন...।
এক এক করে অবশেষে জলের মতো দিনগুলো পেরিয়ে গেল...মেয়ের আগমন হতে শুধু মাত্র দুইটি দিন পড়ে আছে।
পরিতোষ বাবু শ্যালক মশাই কে আগে থেকে বলেই দিয়েছেন, মেয়ে কে যেন মামায় এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করে। তিনি আর যেতে পারছেন না...।
শ্যালক মশাই কোনো প্রশ্ন করলেন না, তিনি হয়তো অন্য কারণ মনে করে থাকবেন, আসল কারণ তো পিতা আর পুত্রীর মধ্যে সীমা বদ্ধ রয়েছে।
সেদিন সস্ত্রীক শ্যালক মশাই মধুরিমা কে এয়ারপোর্ট থেকে আনতে চলে গেলেন..। আর নিজের ঘরের মধ্যে পরিতোষ বাবুর মেয়ের আসার প্রহর গুনছিলেন। অনেকটা স্নায়ুবিক চাপ অনুভব করছিলেন। প্রথম বার দেখা হলে মেয়ের সাথে চোখে চোখ মেলাবেন কি করে।
মধুরিমা অবশ্যই ওর মামার বাড়িতেই থাকবে বিয়ে হয়ে যাওয়া অবধি। কিন্তু পরিতোষ বাবু, এই কই দিনে কি নিজের বাড়ি গৃহ বন্দি থাকবেন...। শশুড়বাড়ির লোক জনের সন্দেহ হবে। আদরের মেয়ে এতো দিন পর ফিরছে আর উনি ঘরের মধ্যে লুকিয়ে লুকিয়ে রয়েছেন।
না না এটা করলে চলবে না তিনি বরং ওখানেই থাকবেন। মধুরিমার যা অভিব্যাক্তি তিনি মেনে নেবেন।
মধুরিমা দুপুর বেলা পৌঁছে মামার বাড়িতেই চলে গেলো আর এদিকে পরিতোষ বাবু মনে ভয় আর উত্তেজনা নিয়ে শশুর বাড়ি ফিরে গেলেন।
সেখানে তো প্রচুর হৈচৈ... মধুরিমা এসেছে...মামা মামি, দাদু দিদিমার খুশির ঠিক ঠিকানা নেয়।
পরিতোষ বাবু গিয়ে সেখানে ড্রইং রুমে চুপটি করে বসে পড়লেন...। খানিক বাদে ওনার বৃদ্ধা শাশুড়ি তার কাছে এসে বললেন, “বাবা পরিতোষ অনেকদিন বাদে তোমার মেয়ে এসেছে...ওর সাথে একবার দেখা করো কিন্তু...আর আমাদের আদরের নাতনি কত যে সুন্দরী হয়েছে... বাবাঃ কি যে বলবো....আসলে এটাই তো মেয়ের বিয়ে দেবার সময়...আকাশে বাতাসে এখন ওরই বিয়ের সুগন্ধ পাচ্ছি...”
পরিতোষ বাবু ওনার শাশুড়ির কথা গুলো মন দিয়ে শুনছিলেন...ওনার বর্ণনায় নিজেকে ভাসিয়ে নিয়েছিলেন...মেয়েকে একবার দেখতে তারও মন ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলো।
দেখতে দেখতে বিকেল থেকে সন্ধ্যা হয়ে গেলো, পরিতোষ বাবু ওখানেই বসে রইলেন...এমন মুহূর্তে মধুরিমার মধুর গলার আওয়াজ তার কানে ভেসে এলো....বহুদিন পর যেন তার কান ওই গলার আওয়াজ শোনার জন্য প্রতীক্ষা করছিলো. মেয়ে মধুরিমা...তার চোখের সামনে ক্রমশ আবির্ভাব হতে লাগলো।
পরিতোষ বাবুর হৃদস্পন্দন তীব্র হতে শুরু করে দিয়েছে...মধুরিমা তার কাছে এসে কি বলবে, কি বা হবে তাদের প্রতিক্রিয়া।
নানান চিন্তা তার মাথার মধ্যে ঘোরপাক খাচ্ছিলো।
অবশেষে মেয়ে মধুরিমা তার সমীপে চলে এলো...কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার এটা হলো যে, মেয়ে তার বাবার অস্তিত্বই অনুভব করল না. মেয়ে বাবার সামনে বাবা কে না দেখে অগ্রাহ্য করে বাইরে বেরিয়ে গেলো।
মধুরিমার এমন ভাব যেন সে ওর বাবা পরিতোষ বাবুকেই চেনেনা অথবা উনি এমন একজন ব্যাক্তি যার অস্তিত্ব ওর কাছে কোনো গুরুত্ব রাখে না।
পরিতোষ বাবু শুধু মাথা নিচু করেই মেয়ের বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখলেন। মনে মনে কষ্ট পেলেন, মেয়ে অন্তত একবার তার এই বৃদ্ধ বাবার দিকে চেয়ে দেখতে পারত।
সে কথা বলা বা সম্মান করা দূরেই থাক।
পরিতোষ বাবু ভালো ভাবেই বুঝতে পারলেন যে মেয়ে তাকে এখনো ক্ষমা করেনি।
তিনি একটু হাফ ছাড়লেন !!!
পরেরদিন সকালবেলা আবার তিনি সেখানেই বসে রইলেন...। বাড়িতে মধুরিমা আসায় ওনার প্রতি বাড়ির অন্য সব সদস্যের ধ্যান কমে গেছে। স্বাভাবিক ব্যাপার।
আজও তাই মধুরিমা তার পাস দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে কিন্তু তাকে কোনো গ্রাহ্য করছে না।
এবারে তিনি মেয়ের দিকে চেয়ে দেখলেন। আশ্চর্য হলেন এই মধুরিমা সেই মধুরিমা নয় অন্তত শারীরিক দিক থেকে নয়....। সে এখন অনেকটাই আলাদা। বলা চলে আরও সুন্দরী। আরও মাধুর্য। গতকাল রাতে তিনি মেয়ে কে ওতো স্পষ্ট ভাবে দেখতে পাননি। আজ দিনের আলোয় সম্পূর্ণ পরিষ্কার দেখছেন তিনি। শরীর আরও পরিপক্ব রূপ নিয়েছে মেয়ে মধুরিমার। আরও বৃহৎ স্তনদ্বয়। মেয়ের কলসি নিতম্বটা আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে. আরও উঁচু সুতরাং আরও টাইট সুতরাং আরও আনন্দ প্রদান কারী।
মেয়ের সরু থুতনি পাতলা ঠোঁট আর টিকালো না আর ফর্সা গায়ের রং এ এক আলাদাই মধুরিমাকে দেখছেন তিনি।
ক্ষনিকের জন্য তার মনের মধ্যে মেয়ের প্রতি পুরোনো কাম ভাব জেগে উঠে ছিল। কিন্তু নিজেকে ধিক্কার দিলেন। কারণ এই জন্যই তার এই দুর্দশা। নিজের আত্মগ্লানি হওয়া উচিৎ। মনে মনে ভাবলেন। যে মেয়ের কিছু দিনের মধ্যেই বিয়ে হয়ে যাবে সে মেয়ের প্রতি এমন দৃষ্টি না দেওয়ায় উচিত।
রাতের বেলা খাবার সময় শ্যালক মশাই পরিতোষ বাবুকে বললেন, মধুরিমার বিয়ের সমস্ত রকম আয়োজন রেডি হয়ে গেছে এবার শুধু দিন ঠিক করবার পালা।
পরিতোষ বাবু বললেন “বেশ তো মধুরিমাকে জিজ্ঞাসা করে পুরোহিত ডেকে দিনটা পাকাপাকি করে দাও...”
শ্যালক বললেন “হ্যাঁ ওর মামীর সাথে আগামী কাল কথা হবে এই বিষয় নিয়ে”
এর কয়েকদিন পরেই মধুরিমা অনুমতি দেয় যে আমাগী মাসের যে কোনো একটা দিন ঠিক করে নিতে কারণ বিয়ে হয়ে গেলেই আবার ও দিল্লী ফিরে যাবে।
সে কথা মতো পরিতোষ বাবু পুরোহিতের সাথে পরামর্শ করে আগামী মাসের উনিশ তারিখে মেয়ের বিয়ের দিন ধার্য করলেন।
সাথে আর বেশি দিন নেই আত্মীয় স্বজন দের আমন্ত্রণ আর কেনা কাটা এই কদিনেই করে নিতে হবে।
মধুরিমার এখানে আসা প্রায় একমাসের উপর হয়ে গেলো কিন্তু সে না বাবার দিকে একবার চেয়ে দেখেছে না বাবার সাথে কথা বলেছে। এতো অভিমানিনী মেয়ে পরিতোষ বাবু ভেবেই আশ্চর্য হচ্ছেন ।
তিনি যে এই মেয়ের বিয়েতে একটা সহকারী চরিত্রের ভূমিকা পালন করছেন সেটা ভালো ভাবেই বুঝতে পারছিলেন।
আসতে আসতে মধুরিমার বিয়ের দিন চলেই এলো। সেই বহু প্রতীক্ষিত। যেটা একজন পিতার জীবনে একটা স্বপ্নময় অধ্যায়। পরিতোষ বাবুর জীবনের তীরে সেটা এসে আগাত করেছে।
সামনের ম্যারেজ হলে আত্মীয় স্বজন ও মানুষ জনের ভিড়ে গমগম করছে। মধুরিমার গায়ে হলুদ। পীতবর্ণ ওর গায়ে ছোওয়া পেয়ে ওর উজ্জ্বল রং আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। দিদা, মামি, মামা ও দাদু মিলে সবাই ওকে হলুদ মাখাচ্ছে। মধুরিমার মুখে মুক্ত ঝরা হাঁসি দেখে পরিতোষ বাবু পাশ থেকেই অনেক আনন্দিত আর ভাবুক হয়ে উঠছিলেন। তারও ইচ্ছা জাগছিল মেয়ের কোমল গালে আর শরীরে হলুদ বাটা লাগিয়ে দিতে কিন্তু তিনি পারবেন না।
ওদের বংশের নিয়ম সেটা করতে বাধা দেয়। তা ছাড়া ভালোই হয়েছে এটা, মেয়ের সমীপে যেতে হবেনা তাকে। দূরে থেকেই তিনি মেয়ের খুশিতে নিজেকে খুশি করছিলেন।
ঠিক হলো বিয়ের সময় ও তিনি পাশে থেকেই সব কার্য করবেন, কন্যাদান ওর মামা করবেন, কারণ মধুরিমার যাবতীয় দায়িত্ব তিনিই পালন করে এসেছেন। পরিতোষ বাবু একজন উপলক্ষ মাত্র।
পরেরদিন যথারীতি লগ্ন ধরেই মধুরিমার বিয়ের কার্য সম্পন্ন হচ্ছে।
আজ মধুরিমাকে খুবই সুন্দরী লাগছে, কলকাতার নামী মেকআপ আর্টিস্ট এর মেকওভার এ ওকে কোনো এক অপ্সরা তুল্য করে তুলেছিল। আর ওই বেনারসি.....ওতে তো কিছু বলার নেই। স্বয়ং রাজরানী যেন বিরাজমান হয়েছে তাদের ঘরে।
পরিতোষ বাবু হলের একটা কোনে চেয়ার এ বসে মেয়ের এই সৌন্দর্যতা গোচর করছিলেন। সোনা গয়না পুষ্প শাড়ি, মধুরিমার মাধুর্য এ একাকার হয়ে গেছে। মনে হয় যেন স্বয়ং দেবরাজ ও ওকে দেখে হয়তো বিয়ে করতে চাইবে।
ঘরের এক কোনে বসে সানায়ের শব্দ আর উলুধ্বনি শুনতে শুনতে কোথায় যেন হারিয়ে পড়েছিলেন পরিতোষ বাবু।
একবার অন্যমনস্কতায় নিজের মোবাইল ফোন বের করে দেখে নিতেই অবাক হয়ে গেলেন এগারোটা মিসড কল !!!
এতো মধুমিতার ফোন....!!! বহুদিন পর .....
দেখেই পরিতোষ বাবুর বুক ধড়ফড় করে উঠল। ভাবছিলেন কি কিরবেন। ক্ষনিকের মধ্যে বাইরে বেরিয়ে গেলেন ।মধুমিতা কে ফোন করলেন। ওপাশে মধুমিতা কাঁপা কাঁপা গলায় উত্তর দেয়।
মধুমিতার গলায় বাবা শুনে পরিতোষ বাবু আপ্লুত হয়ে উঠলেন, বললেন ভালো আছি মা তুমি কেমন আছো..। বহু দিন পর তোমার ফোন পেয়ে আমি খুশি। শিলিগুড়ি চিরতরে ছেড়ে এসেছি আমি। শুধু শেষ দেখা তোমার সাথে হলোনা।
পরিতোষ বাবুর কথা শুনে মধুমিতা অনেক ভেঙে পড়লো। বলল এতো কিছু এতো তাড়াতাড়ি হয়ে গেলো আর আমি কিছুই জানতে পারলাম না।
আপনি ফিরে আসুন আপনার ছাড়া আমার কি হবে...?
মধুমিতার কথা শুনে পরিতোষ বাবু শুধুই বললেন “এ আর হবেনা মধুমিতা...তোমার মা সেদিন ঠিকই বলেছিলেন এই সম্পর্ক অন্যায়”
মধুমিতা বিনতীর স্বরে বলল আর আপনাকে আমি একটা উপহার দেবো বলেছিলাম ওটার কি হবে...?
পরিতোষ বাবু বললেন “ওটা তোমার স্বামীর জন্য রেখে দিও...আমি হতভাগা যে তোমার ওই পথ দিয়ে প্রবেশ করতে পারলাম না”
তখনি কেউ একজন পরিতোষ বাবুকে ডাকলেন, মেয়ের সিঁদুর দানের সময় এসে গেছে...।
পরিতোষ বাবু আর মধুমিতার সাথে কথা বলতে পারলেন না। শুধু এটাই বললেন আজ তার নিজের মেয়ের বিয়ে।
অগত্যা তাকে মেয়ের বিয়ের ওখানে গিয়ে হাজির হতে হলো।
দেখলেন সবাই ওখানে মধুরিমার সিঁদুর দান দেখার জন্য ভিড় করে রেখেছে।
পরিতোষ বাবু সাইড থেকে মেয়ের বিবাহ দেখে সন্তুষ্ট হচ্ছিলেন।
পরিতোষ বাবু সব কিছুই দেখছিলেন। তারও মন উদাস হয়ে উঠল। মেয়ে এখন সম্পূর্ণ রূপে তার থেকে পর হয়ে গেলো।
কিন্তু এবার একটা আশ্চর্য জিনিস তিনি লক্ষ করলেন। মধুরিমা এবার তার দিকে চেয়ে আছে। চোখ ছলছল। যেমন এক কন্যা বিয়ের সময় ওর পিতার দিকে চেয়ে থাকে ঠিক সেই রকম। হয়তো সেও এর আভাস পেয়েছে যে সে ওর বাবার থেকে পর হয়ে গেলো।
ক্ষনিকের জন্য পরিতোষ বাবুও মেয়ের চোখ থেকে নিজের চোখ সরাতে পারলেন না। তিনিও ভাবুক হয়ে উঠলেন। বুকে এক আশ্চর্য ব্যথা অনুভব করছিলেন। কিছু বলতে চাই কি মেয়ে মধুরিমা। সেটা মনে মনে ভাবতে লাগলেন।
অবশেষে আশীর্বাদের পালা প্রথমে ছেলের বাবার কাছে। তিনি খুব উত্তেজিত। ওনাদের আত্মীয় বৃন্দ দের মধুরিমাকে ডেকে ডেকে দেখাচ্ছিলেন। “দেখুন দেখুন আমার কুলবধূ কেমন মিষ্টি মেয়ে”
মধুরিমা ও সৌজন্যে বোধের জন্য ওর শশুরের পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে লাগলো। তৎক্ষণাৎ ওর শশুর মশাই মধুরিমা কে বলে উঠল “আহঃ না বৌমা তুমি পা ছুঁয়ে প্রণাম করছো কেন ? তুমি আমার মেয়ের সমতুল্য এসে আমার বুকে এসো তোমাকে আদর করে দি” বলে তিনি মধুরিমা কে নিজের বুকে টেনে জড়িয়ে নিলেন।
মধুরিমা নিজের দুহাত সামনে রেখে নিজের ভরাট স্তন জোড়া শশুরের বুকে না ঠেকে যায় সে জন্য সামনে করে দিলো।
পরিতোষ বাবুর এই দৃশ্য হজম হলোনা একপ্রকার রেগে গেলেন। পরক্ষনেই নিজের শান্ত করে, চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলেন।
অবশেষে মধুরিমা এবং ওর বর পরিতোষ বাবুর কাছে এসে পা ছুঁয়ে প্রণাম করল। পরিতোষ বাবু লক্ষ করলেন মধুরিমা ওনার পা স্পর্শ করল। তিনি মনে প্রাণে অনেক তৃপ্ত হলেন। উজাড় করে আশীর্বাদ করলেন।
এরপর আসতে আসতে সব আত্মীয় স্বজন রাত্রি ভোজনের উদ্দেশে সেখান থেকে যেতে লাগলো। ভিড় কমতে লাগলো।
সেখানে শুধু পরিতোষ বাবু , মধুরিমা ওর বর শশুর আর মামার বাড়ির লোকজন ছিলো।
ওরা হয়তো শেষে একসাথে ভোজন করবেন।
মধুরিমার মামা, মধুরিমা আর ওর বর কে খেতে যাবার জন্য অনুরোধ করল।
মধুরিমা ওর মামাকে জানালো, “তোমরা যাও আমি একটু পরে আসছি”। তাতে পরিতোষ বাবুর শ্যালক মশাই ওনার জামাই কে সঙ্গে করে সেখান থেকে চলে গেলেন।
এবার শুধু ওখানে বাকি রইলো মধুরিমা আর ওর দাদু দিদা, মামি এবং বাবা পরিতোষ।
মধুরিমা সে মুহূর্তে ওর বাবার দিকে চেয়ে তাকালো। পরিতোষ বাবু সদ্য কন্যা দায় মুক্ত পিতা। করুন তার অভিব্যাক্তি।
মধুরিমা ওর বাবার হাত চেপে ধরে।
পরিতোষ বাবুর কাছে সেটা বিশ্বজয়ের আনন্দের চেয়ে কম নয়। চোখ ছলছল করে আসছিলো। চোখ বন্ধ করে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছিলেন।
মধুরিমা ওর মামি দিদিমাকে বলল “তোমরা এখানে একটু অপেক্ষা করো, আমার বাবার সাথে কিছু কথা আছে”।
ওনারা খুশি মনে সাই দিলেন।
এবার মধুরিমা ওর বাবার হাত ধরে ওনাকে নিয়ে সামনের একটা রুমের মধ্যে গিয়ে ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে দিল।