What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ইসলামে ভ্রাতৃত্ব (1 Viewer)

arn43

Co-Admin
Staff member
Co-Admin
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,615
Messages
121,990
Credits
324,673
DVD
Whiskey
SanDisk Sansa
SanDisk Sansa
Computer
Glasses sunglasses
ইসলামে ভ্রাতৃত্ব

ভূমিকা :
সুবিশাল সৃষ্টিজগতের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হ'ল মানুষ। পৃথিবীর সকল মানুষ এক আদমের সন্তান। মহান আল্লাহ বলেন,يَا أََيُّهَا النَّاسُ اتَّقُواْ رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالاً كَثِيْراً وَّنِسَاءً. 'হে মানবমন্ডলী! তোমরা তোমাদের সেই প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে একজন ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে তার স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন। এ দু'জন থেকে অসংখ্য নারী-পুরুষ ছড়িয়ে দিয়েছেন' (নিসা ৪/১)। সেই সুবাদে জাতি-ধর্ম-ভাষা-বর্ণ নির্বিশেষে পৃথিবীর সকল মানুষ আদম-হাওয়া পরিবারের সদস্য এবং পরস্পর ভাই ভাই।
প্রত্যেক মানুষ স্বভাবধর্মের উপর জন্মগ্রহণ করে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
مَا مِنْ مَوْلُوْدٍ إِلاَّ يُوْلَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ،ِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُمَجِّسَانِهِ كَمَا تُنْتَجُ الْبَهِيْمَةُ بَهِيْمَةً جَمْعَاءَ، هَلْ تُحِسُّوْنَ فِيْهَا مِنْ جَدْعَاءَ؟ ثُمَّ يَقُوْلُ : فِطْرَةَ اللهِ الَّتِيْ فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لاَ تَبْدِيْلَ لِخَلْقِ اللهِ ذَلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ.

'প্রত্যেক সন্তান ফিতরাত (স্বভাবধর্ম)-এর উপর জন্মগ্রহণ করে থাকে। অতঃপর তার বাবা-মা তাকে ইহুদী, খৃষ্টান অথবা অগ্নিপূজক বানায়। যেভাবে পশু পূর্ণাঙ্গ পশুই প্রসব করে, তাতে তোমরা কোন কানকাটা দেখ কি? (দেখ না। অতঃপর মানুষ তার কান কেটে, নাক ছিদ্র করে বিকলাংগ করে দেয়)। অতঃপর তিনি (এর প্রমাণে এই আয়াতটি) পাঠ করলেন, আল্লাহর ফিতরাত যার উপর তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটিই সরলসোজা মযবূত দ্বীন'। (মুত্তাফাক আলাইহ; মিশকাত হা/৯০।) আর মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হ'ল সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করা। শরীরের একটি অঙ্গ যেমন পৃথকভাবে কল্পনা করা যায় না, তেমনি সমাজে বসবাসকারী লোকদেরকেও পৃথকভাবে ভাবার কোন অবকাশ নেই। মানবজাতির আদি পিতা আদম (আঃ)-এর নিঃসঙ্গতা দূর করার জন্যই সঙ্গী হিসাবে বিবি হাওয়া (আঃ)-এর সৃষ্টি এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ বহন করে। সহজাত প্রবৃত্তির তাড়না এবং বহুমুখী প্রয়োজন পূরণের তাগিদে মানুষকে সামাজিক পরিবেশে বসবাস করতে হয়। মানব জীবনে সমাজের প্রয়োজনীয়তার কথা বলতে গিয়ে সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার বলেন, Man is dependent on society for protection, comfort, nurture, education, equipment, opportunity and the multitude of definite services which society provides. His birth in socicty brings with it the absolute need of society itself. 'মানুষ তার নিরাপত্তা, সুখ, পরিচর্যা, শিক্ষা, উপকরণ, সুযোগ-সুবিধা এবং সমাজের দেয়া বহুমুখী সেবাকার্যের জন্য সমাজের উপর নির্ভরশীল। সমাজে মানুষের জন্মগ্রহণই সমাজের প্রয়োজনীয়তার কথা সূচিত করে'।
 
শান্তির ধর্ম ইসলাম। মহান আল্লাহ সবাইকে হেদায়েত দান করুক।
 
আমি যতটুকু বুঝি ইসলামি জীবন, ইসলামি সমাজ, ইসলামি রাস্ট এমনকি ইসলাম কি তাই বেশীরভাগ মানুষ বুঝে না। সবচে দুঃখজনক হলেও সত্যি - মুসলিমরাও ইসলাম বুঝে না। আমাদের নবী ও রাসূল মুহাম্মদ (সাঃ) বিধর্মীদের কোনো কটু কথা বলেননি; তাদের দেব দেবী নিয়ে বাজে কথা বলেননি; অমুসলিমদের জন্যও নিরাপত্তা দিয়েছেন। আমাদের বর্তমান মুসলিমদের কথা, কাজ ও আচরণ এর দিকে একটু লক্ষ করলেই স্পষ্ট করে বুঝা যায় - এরা অমুসলিমদের ঘৃণা করে। আমাদের ইসলামি বক্তাদের বক্তব্যে বার বারই ফুটে উঠে হিন্দুদের প্রতি ক্ষোভ। প্রকৃত মুসলিম হতে হলে মনকে উদার করতে হবে। ধর্মপ্রান হওয়ার আগে মানুষকে ভালোবাসতে হবে। আমি খুব করে চাই মানুষ এসেন্স আভ ইসলাম বুঝুক, জানুক ও চর্চার করুক।
 
আমি যতটুকু বুঝি ইসলামি জীবন, ইসলামি সমাজ, ইসলামি রাস্ট এমনকি ইসলাম কি তাই বেশীরভাগ মানুষ বুঝে না। সবচে দুঃখজনক হলেও সত্যি - মুসলিমরাও ইসলাম বুঝে না। আমাদের নবী ও রাসূল মুহাম্মদ (সাঃ) বিধর্মীদের কোনো কটু কথা বলেননি; তাদের দেব দেবী নিয়ে বাজে কথা বলেননি; অমুসলিমদের জন্যও নিরাপত্তা দিয়েছেন। আমাদের বর্তমান মুসলিমদের কথা, কাজ ও আচরণ এর দিকে একটু লক্ষ করলেই স্পষ্ট করে বুঝা যায় - এরা অমুসলিমদের ঘৃণা করে। আমাদের ইসলামি বক্তাদের বক্তব্যে বার বারই ফুটে উঠে হিন্দুদের প্রতি ক্ষোভ। প্রকৃত মুসলিম হতে হলে মনকে উদার করতে হবে। ধর্মপ্রান হওয়ার আগে মানুষকে ভালোবাসতে হবে। আমি খুব করে চাই মানুষ এসেন্স আভ ইসলাম বুঝুক, জানুক ও চর্চার করুক।
Bidhormider bondhu banano jabena, kintu sotruo banano jabe na. tara hobe porichito or oporichito keu. and tader sathe kharap achoron kora jabe na. kosto dea jabe na. tobe aghat asle to protibad kortei hobe
 
Bidhormider bondhu banano jabena, kintu sotruo banano jabe na. tara hobe porichito or oporichito keu. and tader sathe kharap achoron kora jabe na. kosto dea jabe na. tobe aghat asle to protibad kortei hobe
হ্যা, সেরকমটাই। ভালো আচরণ এর মাধ্যমে ইসলামের দিকে টানতে হবে। তারা যেন ন্যাচারলি আকর্ষিত হয় ইসলামের দিকে।
 
আমি যতটুকু বুঝি ইসলামি জীবন, ইসলামি সমাজ, ইসলামি রাস্ট এমনকি ইসলাম কি তাই বেশীরভাগ মানুষ বুঝে না। সবচে দুঃখজনক হলেও সত্যি - মুসলিমরাও ইসলাম বুঝে না। আমাদের নবী ও রাসূল মুহাম্মদ (সাঃ) বিধর্মীদের কোনো কটু কথা বলেননি; তাদের দেব দেবী নিয়ে বাজে কথা বলেননি; অমুসলিমদের জন্যও নিরাপত্তা দিয়েছেন। আমাদের বর্তমান মুসলিমদের কথা, কাজ ও আচরণ এর দিকে একটু লক্ষ করলেই স্পষ্ট করে বুঝা যায় - এরা অমুসলিমদের ঘৃণা করে। আমাদের ইসলামি বক্তাদের বক্তব্যে বার বারই ফুটে উঠে হিন্দুদের প্রতি ক্ষোভ। প্রকৃত মুসলিম হতে হলে মনকে উদার করতে হবে। ধর্মপ্রান হওয়ার আগে মানুষকে ভালোবাসতে হবে। আমি খুব করে চাই মানুষ এসেন্স আভ ইসলাম বুঝুক, জানুক ও চর্চার করুক।

আপনি যথার্থই বলেছেন, মামা।
মানবতার ধর্ম ইসলাম। যদি তাই হয়, তবে সর্বাগ্রে যেই গুনটা মুসলমানদের থাকতে হবে সেটি হলো মানবতা। আর মানবতা প্রকাশ পাবে তার কথা, চলা আর বলার মাঝে। যদি মনে বিদ্বেসই থাকে তবে তার আচরণ কখনো মানবিক হবে না। যেটা ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলামে পরমত সহিষ্ণুতার কথা বাল হয়েছে। যে কোনো মতবাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবার কথা বলা হয়েছে। পালনের ক্ষেত্রে ভিন্নতা থাকতে পারে, তাই বলে অন্য ধর্মকে কটাক্ষ করা কিংবা ভিন্ন মতাবলম্বীদের সাথে রূঢ় ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। যদি তা করা না হয় তবে মানবতা পরাজিত হবে যা ইসলাম সমর্থন করে না !
চমৎকার মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, মামা।
 
Bidhormider bondhu banano jabena, kintu sotruo banano jabe na. tara hobe porichito or oporichito keu. and tader sathe kharap achoron kora jabe na. kosto dea jabe na. tobe aghat asle to protibad kortei hobe

হ্যা, সেরকমটাই। ভালো আচরণ এর মাধ্যমে ইসলামের দিকে টানতে হবে। তারা যেন ন্যাচারলি আকর্ষিত হয় ইসলামের দিকে।
রিপ্লাইয়ের জন্য অনেক ধন্যবাদ, মামা।
 
মানুষ হিসাবে সমাজে সকল মানুষের মর্যাদা সমান। আলী (রাঃ) বলেন,
اَلنَّاسُ مِنْ جِهَّةِ التَّمْثِيْلِ أَكْفَاءُ * أَبُُوْهُمْ آدَمُ وَالْأُمُّ حَوَّاءُ

نَفْسٌ كَنَفْسٍ وَأَرْوَاحٌ مُشَاكَلَةٌ * وَأَعْظُمٌ خُلِقَتْ فِيْهَا وَأَعْظَاءُ.
'আকৃতির দিক দিয়ে সকল মানুষ সমান। তাদের বাবা আদম ও মা হাওয়া (আঃ)। মানুষের অন্তর এবং তাদের রূহগুলো পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ। প্রত্যেকের দেহ হাড্ডি দ্বারা তৈরী। আর তাতে রয়েছে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ'।(দীওয়ানে আলী (বৈরুত : দারুল কিতাবিল আরাবী, ২০০৫), পৃঃ ১৫।) তবে কর্মে, জ্ঞানে, পদমর্যাদায় একজন অপরজন থেকে স্বতন্ত্র্য হয়ে ওঠে। ইসলামী শরী'আতের বিধান মতে আরব-অনারব, সাদা-কালো, ধনী-গরীবের মধ্যে কোন প্রভেদ নেই। এক কথায় সকলেই আদম সন্তান, আর আদম মাটির তৈরী। তাই একজন মানুষের পক্ষে অন্য মানুষকে ঘৃণা করা, অবজ্ঞা করা, অপমান বা অসম্মান করা, হেয়জ্ঞান করার কোন সুযোগ ইসলামে নেই। বরং যে মানুষ আত্মমর্যাদার সঙ্গে পরমর্যাদার বিষয়টি সংযুক্ত করে আত্ম-পর এক করে গ্রহণ করে, সেই প্রকৃত মানুষ। আর একে অপরের প্রতি এই সহানুভূতিশীল মনোভাবকেই বলে 'ভ্রাতৃত্ব'।

আরবীতে أُخُوَّةٌ শব্দের অর্থ ভ্রাতৃত্ব, বন্ধুত্ব ইত্যাদি। তত্ত্বকথায় পরস্পরের মধ্যে হৃদ্যতা, আন্তরিকতা, সম্প্রীতি, বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ্যপূর্ণ নিবিড় সম্পর্ককে ভ্রাতৃত্ব বলা হয়। ইসলাম শান্তির ধর্ম, আর শান্তির অন্যতম নিয়ামক হ'ল ভ্রাতৃত্ব। বাস্তবতার নিরিখে বিশ্লেষণ করলে অর্থাৎ ব্যবহারিক দিক থেকে 'ভ্রাতৃত্ব' তিন প্রকার। যেমন- জন্মগত ভ্রাতৃত্ব, জাতিগত বা বিশ্বভ্রাতৃত্ব এবং ইসলামী ভ্রাতৃত্ব। এ তিনটি স্তর কমবেশী পরস্পরের পরিপূরক। ইসলামী শরী'আতে ভ্রাতৃত্বের উক্ত তিনটি স্তরই স্বীকৃত।
 
জন্মগত ভ্রাতৃত্ব :
একই ঔরসজাত পিতার সহোদর সন্তানের মধ্যে যে ভ্রাতৃত্ব তাই জন্মগত ভ্রাতৃত্ব। আর এটিই সকল ভ্রাতৃত্বের উৎসমূল।
জাতিগত বা বিশ্বভ্রাতৃত্ব :
মানুষ সৃষ্টিগতভাবে যেমন পরস্পর ভাই ভাই, তেমনি ব্যবহারিক দিক থেকে লক্ষ্য করলেও দেখা যায়, মানুষ যে দেশের, ভাষার, গোত্রের, বর্ণের, পরিবেশের হোক না কেন, সকলের মৌলিক চাহিদা, অনুভূতি ও উপলব্ধির মধ্যে মৌলিক কোন পার্থক্য নেই। শ্বসন প্রক্রিয়া, রেচনতন্ত্রের ক্রিয়া, শোণিত প্রবাহসহ বিভিন্ন প্রত্যঙ্গাদির ক্রিয়া-প্রক্রিয়া সকল মানুষের একই। তাই বিশ্বের সকল মানুষ ভাই ভাই। এটাই হ'ল জাতিগত ভ্রাতৃত্ব বা বিশ্বভ্রাতৃত্ব।
বিশ্বভ্রাতৃত্বের মূল উৎস হ'ল তাওহীদ। একজন মানুষ জীবনের সর্বক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব করবে, অন্য কারো নয়। তার উন্নত ললাট দুনিয়ার কোন মানুষের সামনে কিংবা দুর্ধর্ষ দিগ্বিজয়ী বীরের কাছেও নত হবে না। সকলে আদম সন্তান হিসাবে ভাই ভাই। সুতরাং সবাই সবার সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে থাকবে এটাই মূলত তাওহীদের অন্তর্নিহিত দাবী।

কালের বিবর্তনে বনু আদমের সংখ্যা ক্রমে বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে দূরত্ব, আবহাওয়া, ভৌগলিক পরিবেশসহ বিভিন্নমুখী প্রভাবে তারা নানা গোত্র, বর্ণ, আকার-আকৃতি, স্বভাব-প্রকৃতি ও ভাষার মানদন্ডে ভিন্ন ভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত হয়ে পড়ে। স্বতন্ত্র্য পরিচয়ে পরিচিত হয়ে ওঠার পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে তাদের আদি ভ্রাতৃত্বের বন্ধনেও ফাটল ধরে। ফলশ্রুতিতে যত দিন যায় ততই তারা সৃষ্টির প্রকৃত পরিচয় ভুলে কার্যক্ষেত্রে একে অপরের শত্রুতে পরিণত হ'তে থাকে। ধন-সম্পদ, বংশ মর্যাদা এবং ভাষা ও বর্ণের মিথ্যা আভিজাত্যের দম্ভে মদমত্ত হয়ে তারা দিন দিন অন্ধ হয়ে পড়ে। যে কারণে অতি তুচ্ছ বিষয় ও ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারি, কাটাকাটি, হিংসা-হানাহানী, খুন, রাহাজানী ইত্যাকার উচ্ছৃঙ্খল ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপে মানুষ অহরহ লিপ্ত আছে। আর এই বংশ, গোত্র, অর্থ-সম্পদ, বর্ণ-রূপ, ভাষা-অঞ্চল, আকৃতি-প্রকৃতি ইত্যাদি ভেদবুদ্ধির কারণে পৃথিবীতে একশ্রেণীর মানুষ প্রভুত্বের আসনে সমাসীন হয়ে অন্য শ্রেণীকে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রাখতে অভ্যস্থ।
 
ভারতীয়রা শুরু থেকে আজ পর্যন্ত তাদের ছাড়া সারা দুনিয়ার মানুষকে 'ম্লেচ্ছ', 'অস্পৃশ্য', 'যবন' ইত্যাদি গণ্য করেছে। একই সাথে নিজেদেরকে ব্রাহ্মন, খৈত্রীয়, শুদ্র ও বৈম্য এই চারটি বর্ণে বিভক্ত করে নিজেদের মধ্যে সম্মান ও অধিকারের তারতম্য সৃষ্টি করেছে। সেখানে শুদ্রদের ধর্ম-কর্ম করার অধিকার পর্যন্ত খর্ব করা হয়েছে। প্রাচীন ইরানীয়রাও এভাবে চারটি জাতিতে বিভক্ত ছিল। রোমানরা নিজেদেরকে প্রভুত্বের আসনে সমাসীন করে অন্যদেরকে গোলাম তুল্য জ্ঞান করত। প্রাচীন ইহুদীরা নিজেদের ব্যতীত দুনিয়ার সবাইকে পাপী ও ছোটলোক মনে করত। বনী ইসরাঈলরা নিজেদেরকে আল্লাহর সন্তান বলে গণ্য করত। আল্লাহ বলেন, وَقَالَتِ الْيَهُوْدُ وَالنَّصَارَى نَحْنُ أَبْنَاءُ اللّهِ وَأَحِبَّاؤُهُ قُلْ فَلِمَ يُعَذِّبُكُمْ بِذُنُوبِكُمْ بَلْ أَنْتُمْ بَشَرٌ مِّمَّنْ خَلَقَ يَغْفِرُ لِمَنْ يَّشَاءُ وَيُعَذِّبَ مَنْ يَّشَاءُ. 'ইহুদী ও খৃষ্টানরা বলে, আমরা আল্লাহর সন্তান ও তাঁর প্রিয়জন। আপনি বলুন, তবে তিনি তোমাদেরকে পাপের বিনিময়ে কেন শাস্তি প্রদান করবেন? বরং তোমরাও অন্যান্য সৃষ্ট মানবের অন্তর্ভুক্ত সাধারণ মানুষ। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দান করেন' (মায়েদাহ ৪/১৮)। চীনের প্রাচীন নামই 'স্বর্গরাজ্য'। সুতরাং তাদের নিকট চীন বাদে সমগ্র পৃথিবী নরক তুল্য। ইউরোপে শ্বেতাঙ্গরা সভ্যতা ও সংস্কৃতির একচ্ছত্র অধিকারী বলে দাবী করত। কৃষ্ণাঙ্গরা তাদের সমপর্যায়ের বলে বিবেচিত হ'ত না। আমেরিকার মানবদরদীদের দৃষ্টিতে সেখানকার হাবশী বা নিগ্রো বাসিন্দাদের তো বেঁচে থাকারও কোন অধিকার ছিল না। এমনকি সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে কৃষ্ণাঙ্গরা শ্বেতাঙ্গদের সাথে পড়ার অধিকার পর্যন্ত পেত না। আর দক্ষিণ ও পূর্ব আফ্রিকায় কেবল হাবশীই নয়; বরং ভারতীয় তথা এশীয়রাও মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। পার্থিব অধিকারের বিষয় শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সামাজিক পরিমন্ডলের সীমা ছাড়িয়ে এসব ভেদাভেদ উপাসনালয় পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করেছিল। সৃষ্টিকর্তার দুই বান্দা একই উপাসনালয়ে প্রার্থনা করার কোন সুযোগ নেই। শ্বেতাঙ্গদের গির্জা আলাদা, কৃষ্ণাঙ্গদের গির্জা পৃথক। অথচ মানুষ একটিবারের জন্যও চিন্তা করে না যে, বাইরের ঐ পাতলা চামড়াটুকুর নীচে যে আসল প্রাণশক্তি রক্ত-ধারা, রাসায়নিক বিশ্লেষণে তাতে কোনই পার্থক্য নেই। আর মানুষে মানুষে গোত্র, ভাষা ও বর্ণের বিভাজনে তাদের নিজেদের তো কোন হাত নেই। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়েছে, যার মূল এবং একমাত্র উদ্দেশ্য হ'ল পারস্পরিক পরিচিতি; গর্ব-অহঙ্কর বা ঘৃণা করার জন্য নয়। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِّنْ ذَكَرٍ وُّأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوْباً وَّقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوْا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيْمٌ خَبِيْرٌ. 'হে মানব জাতি! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী হ'তে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বহু সম্প্রদায় ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হ'তে পার। তবে আল্লাহর নিকটে সেই শ্রেষ্ঠ, যে সবচেয়ে বেশী আল্লাহভীরু। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছুর খবর রাখেন' (হুজুরাত ৪৯/১৩)।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top