What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

সালাত আদায়ের পদ্ধতি – রসূলের সালাত (ধারাবাহিক) (1 Viewer)

২০. তাকবির বলে দ্বিতীয় সেজদা করবে, যেমন প্রথম সেজদাতে করেছিল।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, সালাতে ভুলকারীর হাদিসে রয়েছে: "অতঃপর তুমি সেজদা কর, সেজদা রত অবস্থায় স্থির হও, অতঃপর মাথা উঠিয়ে স্থির চিত্তে বস, অতঃপর সেজদা কর এবং স্থির হও। অতঃপর তোমার অবশিষ্ট সালাতে অনুরূপ করতে থাক"।– 132

তার থেকে অপর হাদিসে আছে: "অতঃপর যখন সেজদায় ঝুকবে তাকবির বলবে, অতঃপর সেজদা থেকে মাথা উঠিয়ে তাকবির বলবে। অতঃপর সেজদার সময় তাকবির বলবে। অতঃপর মাথা উঠানোর সময় তাকবির বলবে, অতঃপর অনুরূপ করতে থাকবে অবশিষ্ট সালাতে এবং যখন দু'রাকাত শেষে বৈঠকের পর দাঁড়াবে তাকবির বলবে"।– 133
 
২১. তাকবির বলে মাথা উঠাবে এবং সামান্য সময় বসবে, যেটাকে জালসায়ে ইস্তেরাহা বলে।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, সালাতে ভুলকারীর হাদিসে রয়েছে:

«ثم اسجدْ حتى تطمئنَّ ساجدًا، ثم ارفع حتى تطمئن جالسًا، ثم اسجد حتى تطمئن ساجدًا، ثم ارفع حتى تطمئن جالسًا، ثم افعل ذلك في صلاتك كلها»، قال أبو أسامة في الأخير: «حتى تستوي قائمًا»؛

"অতঃপর স্থির হয়ে সেজদা কর, অতঃপর স্থির হয়ে বস, অতঃপর স্থির হয়ে সেজদা কর, অতঃপর মাথা উঠিয়ে স্থির হয়ে বস, তোমার অবশিষ্ট সালাতে অনুরূপ করতে থাক"। আবু উসামা বলেন: "অতঃপর মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াও"।– 134 তার থেকে আরেকটি হাদিসে আছে:

«ثم يكبر حين يرفع رأسه ثم يفعل ذلك في الصلاة كلها حتى يقضيها، ويكبر حين يقوم من الثنتين بعد الجلوس»،

"অতঃপর মাথা উঠানোর সময় তাকবির বলবে, অতঃপর অবশিষ্ট সালাতে অনুরূপ করতে থাকবে এবং দু'রাকাত পর যখন উঠবে তাকবির বলবে"।– 135 জালছায়ে ইস্তেরাহার ব্যাপারে মালেক ইব্‌ন হুয়াইরিসের হাদিসে রয়েছে:

«أنه رأى النبي ﷺ يصلّي فإذا كان في وتر من صلاته لم ينهض حتى يستويَ قاعدًا» ،

"তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাত আদায় করতে দেখেছেন, যখন তিনি বেজোড় রাকাতে থাকতেন, উঠতেন না যতক্ষণ না সোজা হয়ে বসতেন"।– 136 অন্য শব্দে মালেকের হাদিসেও জালসায়ে ইস্তেরাহার কথা এসেছে:

«أنه صلى بأصحابه، فكان يجلس إذا رفع رأسه من السجود قبل أن ينهض في الركعة الأولى».

"তিনি সাহাবিদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন, তিনি সেজদা থেকে বসতেন, প্রথম রাকাতের জন্য উঠে দাঁড়ানোর আগে"।– 137 সালাতে ভুলকারীর হাদিসেও এ বসার কথা রয়েছে:

«ثم اسجدْ حتى تطمئنَّ ساجدًا، ثم ارفعْ حتى تطمئنَّ جالسًا، ثم اسجدْ حتى تطمئنَّ ساجدًا، ثم ارفعْ حتى تطمئنَّ جالسًا، ثم افعلْ ذلك في صلاتك كلها»،

"অতঃপর সেজদা কর, যতক্ষণ না সেজদায় গিয়ে স্থির হও, অতঃপর মাথা উঠাও, স্থির হয়ে বস, অতঃপর সেজদা কর, সেজদায় গিয়ে স্থির হও, অতঃপর মাথা উঠাও, স্থির হয়ে দাঁড়াও অতঃপর তোমার অবশিষ্ট সালাতে অনুরূপ করতে থাক"।– 138 আবু হুমাইদের হাদিসেও এ জলসার কথা এসেছে:

«ثم يهوي إلى الأرض فيجافي يديه عن جنبيه، ثم يرفع رأسه ويثني رجله اليسرى فيقعد عليها ويفتح أصابع رجليه إذا سجد، ثم يسجد، ثم يقول: الله أكبر، ويرفع رأسه ويثني رجله اليسرى فيقعد عليها حتى يرجع كل عظم إلى موضعه، ثم يصنع في الأخرى مثل ذلك».

"অতঃপর যমীনের দিকে ঝুকবে এবং উভয় হাত পার্শ্ব থেকে আলাদা রাখবে, অতঃপর মাথা উঠাবে এবং বাম পা নরম করে তার উপর বসবে, সেজদার সময় পায়ের আঙ্গুলগুলো খোলা রাখবে, অতঃপর সেজদা করবে। অতঃপর বলবে: 'আল্লাহু আকবার' এবং মাথা উঠাবে ও বাম পা নরম করে তার উপর বসবে, যেন প্রত্যেক হাড্ডি তার জায়গায় এসে পৌঁছে।– 139 অতঃপর দ্বিতীয় রাকাতেও অনুরূপ করবে"।– 140
 
২২. যদি সম্ভব হয়, তাহলে পা, হাটু ও রানের উপর ভর দিয়ে দ্বিতীয় রাকা'তের জন্য দাঁড়াবে।

কারণ ওয়ায়েলের হাদিসে আছে: "যখন উঠবে হাটুর পূর্বে হাত উঠাবে"।– 141 আর যদি কষ্ট হয়, তাহলে যমীনের উপর ভর দিবে। কারণ মালেক ইব্‌ন হুয়াইরিসের হাদিসে আছে: "যখন দ্বিতীয় সেজদা থেকে মাথা উঠাবে, তখন বসবে ও যমীনের উপর ভর দিয়ে দাঁড়াবে"।– 142
 
২৩. দ্বিতীয় রাকাত প্রথম রাকাতের ন্যায় পড়বে। কারণ সালাতে ভুলকারীর হাদিসে আছে: "অতঃপর এসব কাজ তোমার পুরো সালাতে কর"।– 143 তবে পাঁচটি কাজ করবে না:

এক. তাকবিরে তাহরিমা। কারণ তাকবিরে তাহরিমা হচ্ছে সালাতে প্রবেশ করার জন্য।

দু্ই. তাকবিরে তাহরিমার পর চুপ থাকা। দ্বিতীয় রাকাতে তাকবিরে তাহরিমার পর চুপ থাকবে না। কারণ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: "নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দ্বিতীয় রাকাতের জন্য উঠতেন, তিনি সূরা ফাতেহা দ্বারা আরম্ভ করতেন, চুপ থাকতেন না"।– 144

তিন. তাকবিরে তাহরিমার পর দোয়া পড়া। কারণ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: "নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দ্বিতীয় রাকাতের জন্য উঠতেন, তিনি সূরা ফাতেহা দ্বারা আরম্ভ করতেন"।– 145

চার. প্রথম রাকাতের ন্যায় লম্বা করবে না। বরং প্রত্যেক সালাতে দ্বিতীয় রাকাত প্রথম রাকাত থেকে ছোট হবে। কারণ আবু কাতাদা থেকে বর্ণিত আছে: "প্রথম রাকাত লম্বা করবে ও দ্বিতীয় রাকাত ছোট করবে"।– 146 "নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক সালাতে প্রথম দু'রাকাত লম্বা করতেন ও শেষের দু'রাকাত ছোট করতেন"।– 147

পাঁচ. নতুন করে নিয়ত বাঁধবে না, কারণ পূর্বের নিয়ত যথেষ্ট। দ্বিতীয়ত নতুন করে নিয়ত করলে প্রথম রাকাত বাতিল হয়ে যাবে।– 148

দ্বিতীয় রাকাতে 'আউযুবিল্লাহ' সম্পর্কে কেউ বলেছেন: প্রত্যেক রাকাতেই তা বৈধ। কারণ দুই কিরাতের মাঝখানে কিছু আজকার ও কর্মের ফলে বিচ্ছেদ সৃষ্টি হয়েছে, তাই প্রত্যেক রাকাতে শয়তান থেকে পানাহ চাইবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:

فَإِذَا قَرَأۡتَ ٱلۡقُرۡءَانَ فَٱسۡتَعِذۡ بِٱللَّهِ مِنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ ٱلرَّجِيمِ ٩٨- النحل:98

"সুতরাং যখন তুমি কুরআন পড়বে তখন আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তান হতে পানাহ চাও"।– 149 তাই আউযুবিল্লাহ পড়া উত্তম। কেউ বলেছেন: শুধু প্রথম রাকাতেই আউযুবিল্লাহ পড়বে। কারণ পুরো সালাত মিলে একটি কর্ম, দুই কিরাতের মাঝখানে কোন নিরবতা বিচ্ছেদ সৃষ্টি করেনি, বরং পুরোটা ছিল জিকির। অতএব এতে প্রত্যেক কিরাত এক কিরাতের মত, সুতরাং সেখানে এক আউযুবিল্লাহ যথেষ্ট হবে। হ্যাঁ, যদি প্রথম রাকাতে আউযুবিল্লাহ পড়ে না থাকে, তাহলে দ্বিতীয় রাকাতে পড়বে।– 150

আর প্রত্যেক রাকাতেই বিসমিল্লাহ পড়া মুস্তাহাব, কারণ এর মাধ্যমে সূরা আরম্ভ করা হয়।– 151
 
২৪. যদি দুই রাকাত বিশিষ্ট সালাত হয়, যেমন ফজর, জুমা ও দুই ঈদের সালাত, তাহলে দ্বিতীয় রাকাতের দ্বিতীয় সেজদা থেকে ফারেগ হয়ে বসবে, ডান পা খাড়া রাখবে ও বাম পা বিছিয়ে দেবে।

কারণ আবু হুমাইদের হাদিসে আছে: "যখন দু'রাকাতের মধ্যে বসবে, তখন বাম পায়ের উপর বসবে ও ডান পা খাড়া রাখবে"।– 152 এখানে ও দুই সেজদার মাঝখানে বসার নিয়ম এক।– 153 অর্থাৎ বাম হাত বাম রানের উপর রাখবে অথবা বাম হাটুর উপর রাখবে, আর ডান হাত ডান রানের উপর রাখবে। ডান হাতের সব আঙ্গুলগুলো মুষ্টি বদ্ধ করে রাখবে শুধু শাহাদাত আঙ্গুলি ব্যতীত, তার মাধ্যমে তাওহিদের প্রতি ইশারা করবে। কারণ আব্দুল্লাহ ইব্‌ন ওমরের হাদিসে আছে: "নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে বসতেন, তখন তিনি ডান হাতের কব্জি ডান রানের উপর রাখতেন। সকল আঙ্গুল মুষ্টিবদ্ধ করে রাখতেন এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি সংলগ্ন আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন, আর বাম হাতের কব্জি বাম রানের উপর রাখতেন"।– 154 অথবা বৃদ্ধাঙ্গুলি ও মধ্যমা আঙ্গুল দ্বারা হালকা বানাবে এবং কনিষ্ঠা ও অনামিকা আঙ্গুল মুষ্টি বদ্ধ রেখে শাহাদাত আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করবে। কারণ ওয়ায়েল ইব্‌ন হুজরের হাদিসে আছে: "আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি তিনি বৃদ্ধা ও মধ্যমা আঙ্গুলি দ্বারা হালকা বানিয়েছেন এবং শাহাদাত আঙ্গুলি উপরে উঠিয়েছেন, এর দ্বারা তিনি তাশাহুদে দোয়া করতেন"।– 155 অথবা তিপ্পান্ন গণনার ন্যায় হাতের মুষ্টি বানাবে এবং শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করবে। কারণ ইব্‌ন ওমরের হাদিসে আছে: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাশাহুদে বসতেন বাম হাত বাম রানের উপর ও ডান হাত ডান রানের উপর রাখতেন, তিপ্পান্ন গণনার ন্যায় হাতের মুষ্টি বানাতেন ও শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন।– 156

এভাবে ডান হাতের তিনটি অবস্থা প্রকাশ পায়।

এক. সকল আঙ্গুল মুষ্টি বদ্ধ করে রেখে শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করা।

দুই. বৃদ্ধা ও মধ্যমা আঙ্গুলি দ্বারা হালকা বানানো এবং কনিষ্ঠা ও অনামিকা আঙ্গুলি মুষ্টিবদ্ধ করে শাহাদাত আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করা।

তিন. তিপ্পান্ন গণনার মত হাত মুষ্টি বদ্ধ করা ও শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করা। এসব পদ্ধতিই বৈধ। বসার সময় শাহাদাত আঙ্গুলির ইশারার দিকে দৃষ্টি রাখবে। কারণ আব্দুল্লাহ ইব্‌ন জুবায়ের থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে: "নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাশাহুদে বসতেন বাম হাত বাম রানের উপর রাখতেন ও শাহাদাত আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করতেন। তার দৃষ্টি ইশারা অতিক্রম করত না"।– 157 আব্দুল্লাহ ইব্‌ন ওমরের হাদিসে আছে: "তিনি ডান হাত ডান রানের উপর রাখেন ও বৃদ্ধাঙ্গুলি সংলগ্ন আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করেন, তার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখেন। অতঃপর তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এরূপ করতে দেখেছি"।– 158

দোয়ার সময় আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করা সুন্নত, কিবলার দিকে নাড়াবে ও তার দ্বারা দোয়া করবে, তবে দোয়া ও জিকরের স্থান ব্যতীত কোথাও নাড়াবে না, বরং স্থির রাখবে"। দো'আর সময় আঙ্গুলি নাড়ানোর দলিল ওয়ায়েল ইব্‌ন হুজরের হাদিস, তাতে আছে: "অতঃপর তিনি বসেন ও বাম পা বিছিয়ে রাখেন, তার বাম হাতের কব্জি বাম হাটুর উপর রাখেন এবং ডান হাতের কব্জি ডান রানের উপর রাখেন, অতঃপর দু'টি আঙ্গুল ধরে হালকা বানান, অতঃপর তার আঙ্গুলি উঠান, আমি তাকে তা নাড়াতে দেখেছি।– 159 আব্দুল্লাহ ইব্‌ন জুবায়ের থেকে বর্ণিত হাদিস দ্বারা বুঝা যায়, তিনি সর্বদা আঙ্গুলি নাড়াতেন না, যেমন: "নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়ার সময় তার আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করতেন কিন্তু তা নাড়াতেন না"।– 160 দুই হাদিসের মধ্যে কোন বৈপরিত্ব নেই। কারণ না নাড়ানোর অর্থ হচ্ছে সর্বদা নাড়াতেন না, আবার নাড়ানোর অর্থ হচ্ছে দো'আর সময় নাড়াতেন।– 161

ইশারা হবে শুধু ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুলি দ্বারা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি দুই আঙ্গুলি দ্বারা দো'আ করতে ছিল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন এক আঙ্গুলি দ্বারা দো'আ কর।– 162 সাদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমার কাছ দিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতিক্রম করেন, আমি তখন আমার আঙ্গুলিসমূহ দ্বারা দো'আ করতে ছিলাম, তিনি বলেন এক আঙ্গুল দ্বারা, এক আঙ্গুল দ্বারা, তিনি শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করলেন। শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করার হিকমত হচ্ছে আল্লাহ এক, ইশারার সময় তাওহিদ ও তার ইখলাসের নিয়ত করবে, তাহলে কথা, কর্ম ও বিশ্বাসে তাওহিদের বর্হিঃপ্রকাশ ঘটবে।– 163 অতএব প্রমাণিত হল যে, শাহাদাত আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করবে এবং তার মাধ্যমেই দো'আ করবে।
 
২৫. এ বৈঠকে তাশাহুদ পড়বে,

যেমন বলবে– 164:

«التحيات لله، والصلوات، والطيبات، السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته، السلام علينا وعلى عباد الله الصالحين، أشهد أن لا إله إلا الله – وحده لا شريك له وأشهد أن محمدًا عبده ورسوله»،

এটা সবচেয়ে বিশুদ্ধ তাশাহুদ।– 165 অতঃপর পড়বে– 166:

«اللهم صلِّ على محمد وعلى آل محمد، كما صليت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد، اللهم بارك على محمد وعلى آل محمد كما باركت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد»،

এটা সবচেয়ে পরিপূর্ণ দরুদ।– 167 অতঃপর আল্লাহর নিকট চারটি বস্তু থেকে পানাহ চাইবে:

«اللهم إني أعوذ بك من عذاب جهنم، ومن عذاب القبر، ومن فتنة المحيا والممات، ومن شر فتنة المسيح الدجال»؛

কারণ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে: "যখন তোমাদের কেউ তাশাহুদ পড়ে, সে যেন চারটি জিনিস থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চায়, যেমন বলে:

اللهم إني أعوذ بك من عذاب جهنم.. الحديث».

ইমাম মুসলিম এভাবে বর্ণনা করেন, "যখন তোমাদের কেউ দ্বিতীয় তাশাহুদ থেকে ফারেগ হয়, সে যেন চারটি বস্তু থেকে পানাহ চায়।– 168 এবং যা ইচ্ছা দো'আ করবে, যেমন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে বলতেন:

এক.

«اللهم إني أعوذ بك من عذاب القبر، وأعوذ بك من فتنة المسيح الدجال، وأعوذ بك من فتنة المحيا والممات، اللهم إني أعوذ بك من المأثَم والمغرَم»

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: কেউ তাকে বলল: হে আল্লাহর রাসূল, আপনি মাগরাম তথা ঋণ থেকে খুব পানাহ চান! তিনি বললেন:

:«إن الرجل إذا غرم حدَّث فكذَب ووعدَ فأخلَف».

"নিশ্চয় ব্যক্তি যখন ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে, তখন সে মিথ্যা বলে ও ওয়াদা ভঙ্গ করে"।– 169

দুই. আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল আমাকে একটি দোয়া শিক্ষা দেন, যা দিয়ে আমি সালাতে দোয়া করব, তিনি বলেন, তুমি বল:– 170

«اللهم إني ظلمت نفسي ظلمًا كثيرًا، ولا يغفر الذنوب إلا أنت، فاغفر لي مغفرة من عندك، وارحمني إنك أنت الغفور الرحيم»؛

মুসলিমের বর্ণনায় আছে, আমাকে একটি দো'আ শিক্ষা দেন, যা দিয়ে আমি আমার ঘরে ও সালাতে দোয়া করব।– 171

তিন. আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশাহুদ ও সালামের মাঝখানে বলতেন– 172:

«اللهم اغفر لي ما قدَّمْتُ، وما أخَّرتُ، وما أسررْتُ، وما أعلنتُ، وما أنت أعلمُ به مني، أنت المقدِّم، وأنت المؤخِّر، لا إله إلا أنت»؛

চার.

«اللهم إني أعوذ بك من البخل، وأعوذ بك من الجبن، وأعوذ بك – من أن أُردّ إلى أرذل العمر، وأعوذ بك من فتنة الدنيا، وأعوذ بك من عذاب القبر»؛

সাদ ইব্‌ন আবু ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নিজ বাচ্চাদের উপরোক্ত শব্দগুলো শিক্ষা দিতেন, যেমন তাদেরকে লেখা পড়া শিখানো হয় এবং তিনি বলতেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের পর এসব জিনিস থেকে পানাহ চাইতেন।– 173

পাঁচ. মু'য়ায রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত ধরে বলেন, "হে মু'য়ায আল্লাহর শপথ আমি তোমাকে মহব্বত করি, আল্লাহর শপথ আমি তোমাকে মহব্বত করি"। তিনি বলেন : "আমি তোমাকে ওসিয়ত করছি, তুমি প্রত্যেক সালাতের শেষে এ দো'আ পড়া ত্যাগ করবে না:

«اللهم أعني على ذكرك، وشكرك، وحسن عبادتك»

ছয়.

«اللهم إني أسألك الجنة وأعوذ بك من النار»؛

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: "তুমি সালাতে কি বল?" সে বলল: আমি তাশাহুদ পড়ি, অতঃপর আল্লাহর নিকট জান্নাতের প্রার্থনা করি ও জাহান্নাম থেকে পানাহ চাই। তিনি বললেন: তোমার দো'আ খুব সুন্দর। আমরাও অনুরূপ দোয়া করব।– 174

সাত.

«اللهم إني أسألك يا الله بأنك الواحد،الأحد، الصمد،الذي لم يلد ولم يولد،ولم يكن له كفوًا أحد،أن تغفر لي ذنوبي إنك أنت الغفور الرحيم»؛

মিহজান ইব্‌ন আদরা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করেন, অতঃপর এক ব্যক্তিকে দেখেন যে সালাত শেষ করে তাশাহুদ পড়তে ছিল এবং উপরোক্ত দো'আ বলেছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: "তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে", তিনবার বলেন।– 175

আট.

«اللهم إني أسألك بأن لك الحمد، لا إله إلا أنت وحدك لا شريك لك، المنان، بديع السموات والأرض، يا ذا الجلال والإكرام، يا حي يا قيوم إني أسألك…؛

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বসা ছিলেন আর অপর এক ব্যক্তি সালাত পড়তে ছিল, অতঃপর সে উপরোক্ত দোয়া করে। ফলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: "সে আল্লাহর ইসমে আজমের মাধ্যমে দোয়া করেছে, যে নামের মাধ্যমে দো'আ করলে কবুল করা হয়, যার প্রার্থনা করলে ডাকে সাড়া দেয়া হয়"।– 176

নয়.

«اللهم إني أسألك بأني أشهد أنك أنت الله لا إله إلا أنت، الأحد، الصمد، الذي لم يلد ولم يولد، ولم يكن له كفوًا أحد»؛

বুরাইদাহ থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে উপরোক্ত দোয়া বলতে শোনেন, অতঃপর তিনি বলেন: "যার হাতে আমার নফস তার শপথ, সে আল্লাহর ইসমে আজমের মাধ্যমে দো'আ করেছে, যে নামের মাধ্যমে দো'আ করলে কবুল করা হয় এবং যে নামের মাধ্যমে প্রার্থনা করলে প্রদান করা হয়"।– 177

দশ.

«اللهم بعلمك الغيب، وقدرتك على الخلق، أحيني ما علمت الحياة خيرًا لي، وتوفني إذا علمت الوفاة خيرًا لي، اللهم إني أسألك خشيتك في الغيب والشهادة، وأسألك كلمة الحق في الرضى والغضب، وأسألك القصد في الغنى والفقر، وأسألك نعيمًا لا ينفدُ، وأسألك قرة عين لا تنقطع، وأسألك الرضا بعد القضاء، وأسألك بَرْدَ العيش بعد الموت، وأسألك لذة النظر إلى وجهك، والشوق إلى لقائك في غير ضراء مُضرَّة ولا فتنة مُضلَّة، اللهم زيِّنا بزينة الإيمان، واجعلنا هداةً مهتدين»؛

আম্মারের হাদিসে আছে, তিনি তার সাথীদের সাথে খুব সংক্ষেপে সালাত আদায় করেন। উপস্থিত কেউ তাকে বলল: আপনি সালাত খুব সংক্ষেপ করলেন অথবা হালকা সালাত আদায় করলেন। তিনি বললেন: কিন্তু আমি এখানে এমন শব্দ দ্বারা দোয়া করেছি, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শ্রবণ করেছি, অতঃপর তিনি উপরোক্ত দো'আ বলেন।

এখানে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ চেয়ে যা ইচ্ছা দো'আ করবে। যদি কেউ পিতা-মাতা ও অন্যান্য মুসলিমদের জন্য দো'আ করে, তাতেও কোন সমস্যা নেই, হোক সালাত ফরয কিংবা নফল। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইব্‌ন মাসউদকে তাশাহুদ শিক্ষা দিয়ে বলেন: "অতঃপর পছন্দ মত দো'আ করবে"।– 178 এর দ্বারা বুঝা যায়, দুনিয়া ও আখেরাতের সকল কল্যাণ সালাতে প্রার্থনা করা যায়।– 179
 
২৬. অতঃপর ডান দিকে ও বাম দিকে সালাম ফিরাবে এ বলে:

«السلام عليكم ورحمة الله، السلام عليكم ورحمة الله»؛

জাবের ইব্‌ন সামুরা থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, তিনি বলেন: আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সালাত আদায় করতাম বলতাম:

السلام عليكم ورحمة الله، السلام عليكم ورحمة الله

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: "চতুর ঘোড়ার লেজের ন্যায় তোমরা হাত দ্বারা কিসের দিকে ইশারা কর, রানের উপর হাত রেখে ডানে ও বামে তোমাদের ভাইদের সালাম দেয়াই যথেষ্ট"।– 180

আমের ইব্‌ন সাদ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: "আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখতাম, তিনি ডানে ও বামে সালাম ফিরাতেন, এমন কি আমি তার গালের শুভ্রতা দেখতে পেতাম"।– 181 অতঃপর সে ডানে অথবা বামে যে কোন দিকেই ঘুরতে পারে।– 182
 
২৭. সালাত যদি তিন রাকাত বিশিষ্ট হয় যেমন মাগরিব অথবা চার রাকাত বিশিষ্ট হয় যেমন জোহর, আসর ও এশা। তাহলে শুধু প্রথম তাশাহুদ পড়বে, তবে উত্তম হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দুরূদ পড়া, যেমন ইতিপূর্বে বর্ণনা করেছি।

অতঃপর পা ও হাটুর সম্মুখভাগ এবং রানের উপর ভর দিয়ে তাকবির বলে দাঁড়াবে, উভয় হাত কান অথবা কাঁধ পর্যন্ত উঠাবে, যেমন পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে।– 183 দ্বিতীয়ত আব্দুল্লাহ ইব্‌ন ওমরের হাদিসে আছে: "যখন দু'রাকাত থেকে উঠবে উভয় হাত উঠাবে"।– 184 আবু হুমাইদ থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে: "অতঃপর যখন দু'রাকাত থেকে উঠবে তাকবির বলবে ও উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাবে যেমন সালাতের শুরুতে উঠিয়েছিল, অতঃপর অবশিষ্ট সালাতে অনুরূপ করতে থাকবে"।– 185 এবং উভয় হাত বুকের উপর রাখবে। কারণ ওয়ায়েল ইব্‌ন হুজরের হাদিসে আছে: "আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, যখন তিনি সালাতে দাঁড়ানো অবস্থায় থাকতেন ডান হাত দ্বারা বাম হাত পাকড়াও করতেন"।– 186 অতঃপর আস্তে সূরা ফাতেহা পড়বে। যদি জোহরের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে কখনো ফাতের চেয়ে অতিরিক্ত পড়ে তবে কোন সমস্যা নেই।– 187 মাগরিবের তৃতীয় রাকাত এবং জোহর, আসর ও এশার তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাত পূর্বে বর্ণিত দ্বিতীয় রাকাতের ন্যায় পড়বে। কারণ সালাতে ভুলকারী ব্যক্তিকে প্রথম রাকাত শিক্ষা দিয়ে বলেন: "অতঃপর তুমি পূর্ণ সালাতে অনুরূপ কর"।– 188
 
২৮. দ্বিতীয় তাশাহুদে তাওয়াররুক করে বসবে।

আবু হুমাইদ সায়েদির হাদিসে আছে: "যখন দ্বিতীয় রাকাতে বসবে, তখন বাম পায়ের উপর বসবে ও ডান পা খাড়া রাখবে। যখন শেষ রাকাতে বসবে, বাম পা আগে বাড়িয়ে দিয়ে ডান পা খাড়া রাখবে ও নিতম্বের উপর বসবে"।– 189 এটাই তাওয়াররুক বসা।
 
২৯. মাগরিবের তৃতীয় রাকাতে এবং জোহর, আসর ও এশার চতুর্থ রাকাতে তাশাহুদের সাথে দরূদ পড়বে, যেমন পূর্বে বিস্তারিত বলা হয়েছে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top