What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ইখলাছ মুক্তির পাথেয় (২য় কিস্তি) (2 Viewers)

arn43

Co-Admin
Staff member
Co-Admin
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,619
Messages
122,424
Credits
312,362
DVD
Whiskey
SanDisk Sansa
SanDisk Sansa
Computer
Glasses sunglasses
ইখলাছ মুক্তির পাথেয় (২য় কিস্তি)

ইখলাছের ফলাফল :
ইখলাছের অনেক ফলাফল রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কতিপয় হ'ল-

১. জান্নাত লাভ :
আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন,
إِلَّا عِبَادَ اللَّهِ الْمُخْلَصِيْنَ، أُوْلَئِكَ لَهُمْ رِزْقٌ مَّعْلُوْمٌ، فَوَاكِهُ وَهُم مُّكْرَمُوْنَ، فِيْ جَنَّاتِ النَّعِيْمِ-
'কিন্তু তারা নয়, যারা আল্লাহর একনিষ্ঠ (ইখলাছ অবলম্বনকারী ) বান্দা। তাদের জন্য রয়েছে নির্ধারিত রিযিক, ফলমূল, তারা হবে সম্মানিত, সুখদ কাননে' (ছাফফাত ৩৭/৪০-৪৩ )।
একটি প্রসিদ্ধ বচন এই যে, সকল মানুষ ধ্বংস হয়ে যাবে, তবে জ্ঞানীরা বেঁচে যাবে। সকল জ্ঞানী ধ্বংস হয়ে যাবে, তবে যারা কাজ করেছে, তারা বেঁচে যাবে। যারা কাজ করেছে, তারাও ধ্বংস হয়ে যাবে, তবে যারা ইখলাছের সাথে (একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য ) কাজ করেছে, তারা মুক্তি পাবে (আল-মাক্বদেসী, মিনহাজুল কাছেদীন )।
 
২. আমল কবুল হওয়া :

ইখলাছ হ'ল আমল কবুলের শর্ত। ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেছেন, 'দু'টি শর্তের সন্নিবেশ ব্যতীত আল্লাহ তা'আলা আমল কবুল করবেন না। প্রথম শর্ত হ'ল আমলটি শরী'আত অনুমোদিত হ'তে হবে। দ্বিতীয় শর্ত আমলটি ইখলাছ সহকারে (একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য নিবেদিত) শিরকমুক্তভাবে আদায় করতে হবে' (তাফসীরে ইবনে কাছীর )।
আল্লামা সাজী বলেছেন, 'পাঁচটি গুণের মাধ্যমে জ্ঞানের পূর্ণতা লাভ হয়। সেগুলি হ'ল- আল্লাহর পরিচয় লাভ। হক সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া। ইখলাছ বা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সুন্নাহ মোতাবেক কাজ করা এবং হালাল খাদ্য গ্রহণ করা। যদি এর একটি অনুপস্থিত থাকে তাহ'লে তার আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না' (কুরতুবী, আল-জামে' লিআহকামিল কুরআন )।
আল্লামা নওয়াব ছিদ্দীক্ব হাসান খান বলেন, 'ইখলাছ আমলের শুদ্ধতা ও কবুলের একটি অন্যতম শর্ত, এ বিষয়ে কারো দ্বিমত নেই'। (ঐ, আদ-দ্বীনুল খালেছ )।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
إِنَّ اللهَ لاَ يَقْبَلُ مِنَ الْعَمَلِ إِلاَّ مَا كَانَ خَالِصًا وَابْتُغِى بِهِ وَجْهُهُ-
'আল্লাহ তা'আলা শুধু সে আমলই গ্রহণ করেন, যা ইখলাছের সাথে এবং আল্ললাহ্কে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে করা হয়'। (
নাসাঈ হা/৩১৪০; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৫২। )
 
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
إَذَا جَمَعَ اللهُ الْأَوَّلِيْنَ وَالْآخَرِيْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لِيَوْمٍ لاَ رَيْبَ فِيْهِ نَادَي مُنَادٍ مَّنْ كَانَ أَشْرَكَ فِيْ عَمَلٍ عَمِلَهُ لِلّهِ فَلْيَطْلُبْ ثَوَابَهُ مِنْ عِنْدِ غَيْرِ اللهِ فَإِنَّ اللهَ أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ-
'ক্বিয়ামতের দিনে- যাতে কোন সন্দেহ নেই, আল্ললাহ তা'আলা যখন সকল মানুষকে একত্র করবেন, তখন একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করবে, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদিত কাজে অন্য কিছুকে তাঁর সাথে শরীক করেছে, সে যেন আল্লাহ্কে বাদ দিয়ে সেই শরীকের কাছ থেকে প্রতিদান বুঝে নেয়। কেননা আল্ললাহ তা'আলা সকল প্রকার অংশীদার ও অংশীদারিত্ব থেকে মুক্ত'। (ইবনু মাজাহ হা/৪২০৩, সনদ হাসান। )
 
৩. আখিরাতে নবী করীম (ছাঃ)-এর শাফাআত লাভ :

বান্দা ইখলাছ অবলম্বনের ক্ষেত্রে যত বেশী অগ্রগামী হবে সে ক্বিয়ামতের দিন শাফা'আত লাভের ক্ষেত্রে ততবেশী এগিয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِيْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ خَالِصًا مِّنْ قَلْبِهِ-
'ক্বিয়ামতের দিন আমার শাফা'আত দ্বারা সবচেয়ে ভাগ্যবান হবে ঐ ব্যক্তি, যে ইখলাছের সাথে বলেছে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই'।(বুখারী হা/৯১। )
ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, 'এ হাদীছে তাওহীদের একটি সূক্ষ্ম রহস্য লুক্কায়িত আছে। তা এই যে, শাফা'আত লাভের অন্যতম শর্ত হচ্ছে তাওহীদ অবলম্বন ও তাওহীদের পরিপন্থী বিষয় হ'তে দূরে থাকা। যে ব্যক্তি তার তাওহীদকে যত বেশী উন্নত ও পূর্ণ করতে পারবে, সে তত বেশী শাফা'আত লাভের যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। যে শিরক করবে তার জন্য কোন শাফা'আত নেই'। (নওয়াব ছিদ্দীক্ব হাসান খান, আদ-দ্বীনুল খালেছ )।
 
৪. হিংসা-বিদ্বেষ থেকে অন্তর পবিত্র থাকে :

যখন কোন ব্যক্তির অন্তরে ইখলাছ স্থান পেয়ে যায় তখন সে অনেক বিপদ-আপদ, দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত থাকে। যেমন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেছেন,
ثَلاَثَةٌ لاَ يُغِلُّ عَلَيْهِنَّ قَلْبُ امْرِئٍ مُؤْمِنٍ: إِخْلاَصُ الْعَمَلِ لِلّهِ، وَالْمُنَاصَحَةُ لِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِيْنَ وَلُزُوْمُ جَمَاعَتِهِمْ-
'তিনটি বিষয়ে মুমিনের অন্তর খিয়ানত করে না। ইখলাছের সাথে আমলসমূহ আল্লাহর জন্য নিবেদন করা, মুসলিম নেতাদের কল্যাণ কামনা ও মুসলিম জামা'আতের সাথে ঐক্যবদ্ধ থাকা'। (ইবনু মাজাহ হা/২৩০, সনদ ছহীহ। )
ইবনু আব্দুল বার্র (রহঃ) বলেন, 'এ তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকবে তার অন্তর কখনো দুর্বল হবে না। কপটতা বা নিফাকী থেকে সে পবিত্র থাকবে'। (ইবনু আব্দিল বার্র, আত-তামহীদ )।
 
৫. গোনাহ মাফ ও অগণিত পুরস্কার লাভ :

যখন মুমিন ব্যক্তি ইখলাছসহ সকল আমল করবে তখন সে গোনাহ থেকে ক্ষমা পেয়ে যাবে এবং অনেকগুণ বেশী প্রতিদান লাভ করবে। যদিও কাজটি বাহ্যিক দৃষ্টিতে ছোট অথবা পরিমাণে খুবই স্বল্প হয়।
শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) বলেন, 'অনেক আমল এমন আছে, যা মানুষ পরিপূর্ণ ইখলাছের সাথে সম্পাদন করে। ফলে এ আমলটি ইখলাছের পূর্ণতার কারণে তার কবীরা গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। যেমন হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (ছাঃ) বলেছেন, 'ক্বিয়ামতের দিন আমার উম্মতের এক ব্যক্তির ব্যাপারে ঘোষণা করা হবে। তার কাছে উপস্থিত করা হবে পাপকর্মের নিরানববইটি বিশাল নথি। প্রতিটি নথির ব্যপ্তি হবে দৃষ্টির দূরত্ব পরিমাণ। তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি যে এ পাপকর্মগুলো করেছ তা কি তুমি অস্বীকার করবে? সে বলবে, হে প্রতিপালক! আমি এগুলো অস্বীকার করতে পারি না। আল্লাহ বলবেন, তোমার উপর যুলুম করা হবে না। এরপর হাতের তালু পরিমাণ একটা টিকেট বের করা হবে যাতে লেখা থাকবে 'আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু'। সে বলবে, এত বিশাল পাপের সম্মুখে এ ছোট টিকেটের কি মূল্য আছে? অতঃপর এ টিকেটটি একটি পাল্লায় রাখা হবে এবং তার পাপের বিশাল নথিগুলোকে রাখা হবে অপর পাল্লায়। টিকেটের পাল্লাই ভারী হবে। (তিরমিযী, হা/২৬৩৯, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/৫৫৫৯। )
এ ব্যক্তি ইখলাছের সাথে উক্ত সাক্ষ্য দিয়েছে বলে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়েছে। অন্যথা কবীরা গোনাহে লিপ্ত ব্যক্তি যারা 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ'র সাক্ষ্য দিয়েছে, তারাও জাহান্নামে যাবে। হয়ত তারা ইখলাছের সাথে কালেমা পড়েনি।
এমনিভাবে যে পতিতা একটি পিপাসার্ত কুকুরকে কষ্ট করে পানি পান করিয়েছিল, সে তা ইখলাছের সাথে করেছিল বলেই তার পাপগুলো ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৯০২। ) নয়তো যে কোন পতিতা এ কাজ করত, তারই ক্ষমা পাওয়ার কথা ছিল।
অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি পথের কাঁটা দূর করে দেয়ার কারণে ক্ষমা পেয়েছিল। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৯০৪। ) সে তা ইখলাছের সাথে করার কারণেই ক্ষমা পেয়েছে। নয়তো সকল কবীরা গোনাহে লিপ্ত ব্যক্তিরা এ কাজটি করে ক্ষমা আদায় করে নিতে পারত।
 
পক্ষান্তরে অনেক বড় বড় ব্যক্তি বিরাট গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে কিন্তু তাতে ইখলাছ না থাকার কারণে তা ব্যর্থ হয়ে গেছে এবং আমলকারী পুরস্কার ও প্রতিদানের পরিবর্তে শাস্তির পাত্রে পরিণত হয়েছে। যেমন হাদীছে এসেছে, 'ক্বিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যার বিচার করা হবে, সে হচ্ছে এমন ব্যক্তি যে শহীদ হয়েছিল। তাকে হাযির করা হবে এবং আল্লাহ তাঁর নে'মতের কথা তাকে বলবেন। সে তার প্রতি সকল নে'মত চিনতে পারবে। তখন আল্লাহ তাকে বলবেন, তুমি কী কাজ করে এসেছ? সে বলবে, আমি তোমার পথে যুদ্ধ করেছি, শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়েছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ, তুমি তো যুদ্ধ করেছ লোকে তোমাকে বীর বলবে এ উদ্দেশ্যে। আর তা বলাও হয়েছে। অতঃপর নির্দেশ দেয়া হবে এবং তাকে টেনে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
তারপর এমন ব্যক্তির বিচার করা হবে, যে নিজে জ্ঞান অর্জন করেছে ও অন্যকে শিক্ষা দিয়েছে এবং কুরআন তেলাওয়াত করেছে। তাকে হাযির করা হবে। আল্লাহ তাকে তার নে'মতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সে স্বীকার করবে। তাকে জিজ্ঞেস করবেন, কী কাজ করে এসেছ? সে বলবে, আমি জ্ঞান অর্জন করেছি, অন্যকে শিখিয়েছি এবং আপনার জন্য কুরআন তেলাওয়াত করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। তুমি জ্ঞান অর্জন করেছ এজন্য যে, লোকে তোমাকে জ্ঞানী বলবে। কুরআন তেলাওয়াত করেছ এ উদ্দেশ্যে যে, লোকে তোমাকে ক্বারী বলবে। আর তা বলা হয়েছে। এরপর নির্দেশ দেয়া হবে তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার জন্য'।
তারপর বিচার করা হবে এমন ব্যক্তির, যাকে আল্লাহ দুনিয়াতে সকল ধরনের সম্পদ দান করেছিলেন। তাকে হাযির করে আল্লাহ নে'মতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সে সকল নে'মত স্মরণ করবে। আল্লাহ বলবেন, কী করে এসেছ? সে বলবে, আপনি যে সকল খাতে খরচ করা পসন্দ করেন আমি তার সকল খাতে সম্পদ ব্যয় করেছি, কেবল আপনারই জন্য। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। তুমি সম্পদ এ উদ্দেশ্যে খরচ করেছ যে, লোকে তোমাকে দানশীল বলবে। আর তা বলা হয়েছে। এরপর নির্দেশ দেয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে'। (মুসলিম, মিশকাত হা/২০৫। )
 
অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন,
إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمُ الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ، قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمَا الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ؟ قَالَ : اَلرِّياَءُ، يَقُوْلُ اللهُ لَهُمْ يَوْمَ يُجَازِي الْعِبَادَ بِأَعْمَالِهِمْ: اِذْهَبُوْا إِلَى الَّذِيْنَ كُنْتُمْ تُرَاؤُوْنَ فِي الدُّنْيَا وَخَيْرًا فَانْظُرُوْا هَلْ تَجِدُوْنَ عِنْدَهُمْ جَزَاءًَ.
'আমি তোমাদের ব্যাপারে যে বিষয়ে সবচেয়ে বেশী ভয় করি, সে বিষয়ে সাবধান করতে চাই; তা হ'ল শিরকুল আছগর বা ছোট শিরক। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে রাসূল (ছাঃ)! ছোট শিরক কী? তিনি বললেন, রিয়া (লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে কাজ করা)। যেদিন আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কর্মের প্রতিদান দেবেন, সেদিন তিনি বলবেন, দুনিয়াতে তোমরা যাদের দেখানোর জন্য কাজ করেছ আজ তাদের কাছে যাও! দেখ, তাদের কাছে প্রতিদান পাও কি-না'। (আহমাদ, বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৫৩৩৪; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৯৫১ )

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অন্যত্র বলেছেন,
إِنَّ اللهَ تَباَرَكَ وَتَعاَلَى يَقُوْلُ: أَناَ أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ، مَنْ عَمِلَ عَمَلاً أَشْرَكَ فِيْهِ غَيْرِيْ فَأَناَ مِنْهُ بَرِيْءٌ، هُوَ لِلَّذِيْ عَمِلَهُ-
'আল্লাহ তা'আলা বলবেন, আমি শিরক ও অংশীদার থেকে বে-পরোয়া। যে ব্যক্তি কোন কাজে আমাকে ব্যতীত অন্য কাউকে শরীক করল আমি তার থেকে সম্পর্কমুক্ত। যার জন্য সে করেছে সেটা তারই জন্য'। (মুসলিম হা/৭৬৬৬; মিশকাত হা/৫৩১৫। )
 
৬. আল্লাহর সাহায্য ও প্রতিষ্ঠা লাভ :

ঈমানদারদের জন্য আল্লাহর সাহায্য লাভ ও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মূল উপাদান হ'ল ইখলাছ। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
إِنَّمَا يَنْصُرُ اللهُ هَذِهِ الْأُمَّةَ بِضَعِيْفِهَا : بِدَعْوَتِهِمْ وَصَلاَتِهِمْ وَإِخْلاَصِهِمْ-
'আল্লাহ রাববুল আলামীন এ উম্মতকে সাহায্য করেন তাদের দুর্বলদের কারণে; তাদের দো'আ, ছালাত ও ইখলাছের কারণে'। (নাসাঈ হা/৩১৭৮। )

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেছেন,
بَشِّرْ هَذِهِ الْأُمَّةَ بِالنَّصْرِ وَالسَّناَءِ وَالتَّمْكِيْنِ، فَمَنْ عَمِلَ مِنْهُمْ عَمَلَ الْآخِرَةِ لِلدُّنْياَ لَمْ يَكُنْ لَّهُ فِي الْآخِرَةِ نَصِيْبٌ-
'আমার উম্মতকে সাহায্য, প্রাচুর্য ও তাদের প্রতিষ্ঠা পাওয়া সম্পর্কে সুসংবাদ দাও। আর তাদের কেউ যদি আখিরাতের কাজ করে পার্থিব স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে, আখিরাতে তার কোন অংশ নেই'। (ইবনু হিববান হা/৪০৫; ছহীহুল জামে' হা/২৮২৫। )
আমাদের পূর্বসূরী সালাফে ছালেহীনের জীবনের দিকে তাকালে দেখতে পাই, তারা আল্লাহর সাহায্য লাভ করেছেন নিজেদের ঈমানী শক্তি, ইখলাছ বা অন্তরের একনিষ্ঠতা, ঈমান ও ইখলাছের আলোকে গঠিত পরিশুদ্ধ আক্বীদা-বিশবাসের মাধ্যমে।
ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, 'বান্দা যখন আল্লাহর জন্য তার নিজের নিয়ত স্থির করে নেয় এবং তার ইচ্ছা, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, জ্ঞান সবকিছু আল্লাহর জন্য হয়ে যায়, তখন আল্লাহর সাহায্য সর্বদা তার সাথে থাকে। কারণ আল্লাহ তা'আলা বলেন, যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে ও ইহসান করে আল্লাহ তাদের সাথে আছেন। তাকওয়া ও ইহসানের মূল হ'ল সত্য প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ হওয়া বা ইখলাছ অবলম্বন করা। আল্লাহর উপর জয়ী হ'তে পারে এমন কেউ নেই। যার সাথে আল্লাহ আছেন তার উপর কেউ জয় লাভ করতে পারে না, পারে না তাকে কেউ পরাজিত করতে। যার সাথে আল্লাহ আছেন তার ভয় কিসের'? (ইবনুল ক্বাইয়িম, ই'লামুল মুআক্কি'ঈন )
 
৭. মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ও ভালবাসা লাভ :

আল্লাহ তা'আলা ইখলাছ অবলম্বনকারী বান্দাদের জন্য মানুষের ভালবাসা ও গ্রহণযোগ্যতা লাভের ফায়ছালা করেন। পক্ষান্তরে যে মানুষের মন পাওয়ার জন্য মানুষের কাছে আস্থাভাজন হওয়ার নিয়তে কাজ করে, সে মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালবাসা লাভ করতে পারে না। সে যা চায় তার উল্টোটাই পায়।
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
مَنْ سَمَّعَ سَمَّعَ اللهُ بِهِ، وَمَنْ يُرَائِيْ يُرَائِي اللهُ بِهِ.
'যে মানুষকে শুনাতে চায় আল্লাহ তার কথা শুনিয়ে দেন। যে মানুষকে দেখাতে চায় আল্লাহ মানুষের কাছে তাকে দেখিয়ে দেন'। (বুখারী হা/৬৪৯৯; মিশকাত হা/৫৩১৬ )
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন,
مَنْ كَانَتِ الدُّنْياَ هَمَّهُ فَرَّقَ اللهُ عَلَيْهِ أَمْرَهُ وَجَعَلَ فَقْرَهُ بَيْنَ عَيْنَيْهِ وَلَمْ يَأْتِهِ مِنَ الدُّنْيَا إِلاَّ كُتِبَ لَهُ، وَمَنْ كَانَتِ الْآخِرَةُ نِيَّتَهُ جَمَعَ اللهُ لَهُ أَمْرَهُ، وَجَعَلَ غِنَاهُ فِيْ قَلْبِهِ وَأَتَتْهُ الدُّنْياَ وَهِيَ رَاغِمَةٌ-
'যে ব্যক্তির উদ্দেশ্য হবে পার্থিব স্বার্থ, আল্লাহ তার কাজগুলোকে এলোমেলো করে দিবেন। তার দু'চোখের সম্মুখে দরিদ্রতাকে করে দিবেন (অর্থাৎ সে সর্বদা অভাব-অনটনই দেখতে পাবে)। তার জন্য যা কিছু নির্ধারিত আছে এর বাইরে দুনিয়ার কিছুই সে লাভ করতে পারবে না। আর যার উদ্দেশ্য হবে আখেরাত, আল্লাহ তার কাজ-কর্ম গুছিয়ে দিবেন। তার অন্তরে সচ্ছলতা দান করবেন। দুনিয়ার সম্পদ অপমানিত হয়ে তার কাছে ফিরে আসবে'। (ইবনু মাজাহ হা/৪১০৫; তিরমিযী হা/২৪৬৫, সনদ ছহীহ। )
আমাদের পূর্বসূরী সালাফে ছালেহীন এ বিষয়ে কতটা সচেতন ছিলেন তা অনুমান করা যায় মুজাহিদ (রহঃ)-এর কথায়। তিনি বলেন, 'বান্দা যখন তার অন্তর নিয়ে আল্লাহর দিকে অগ্রসর হয়, আল্লাহ তখন সকল সৃষ্ট জীবের অন্তর তার দিকে ঝুঁকিয়ে দেন'।
ফুযাইল (রহঃ) বলেন, 'যে কামনা করে আলোচিত হওয়ার জন্য, যার একান্ত আকাঙ্খা এই যে, মানুষ তাকে স্মরণ করুক, তাকে কিন্তু স্মরণ করা হয় না। আর যে আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠভাবে কাজ করে এবং মানুষ তাকে স্মরণ করুক এটা কামনা করে না, আসলে তাকেই স্মরণ করা হয়। (ইবনুল ক্বাইয়িম, ই'লামুল মুআক্কি'ঈন )।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top