What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

হাদীছের অনুবাদ ও ভাষ্য প্রণয়নে ভারতীয় উপমহাদেশের আহলেহাদীছ আলেমগণের অগ্রণী ভূমিকা (2 Viewers)

এরপর মদীনাবাসীরা পুনরায় বিচারকের নিকট যান এবং জোরালোভাবে শায়খের মুক্তি দাবি করেন। বিচারক কসম করে বলেন, আমি যদি তাকে ছালাতে বুকের উপর হাত বাঁধতে দেখি তাহলে আবার জেলে পুরব। মদীনাবাসীরা শায়খের কাছে আরয করেন যে, পিঠের উপর একটি কাপড় দিয়ে তার দুই পার্শ্ব দুই কাঁধে ঝুলিয়ে দিন। এর নীচে বুকের উপর হাত বাঁধুন এবং রাফ'উল ইয়াদায়েন করুন। শায়খ এ প্রস্তাব মেনে নেন। এই ঘটনার কিছুদিন পরেই বিচারক মৃত্যুবরণ করেন এবং শায়খ পুনরায় পূর্বের মতো উন্মুক্ত বক্ষে হাত বাঁধা ও রাফ'উল ইয়াদায়েন করা শুরু করেন।

মোদ্দাকথা, শায়খ আবুল হাসান সিন্ধী কাবীর অনেক বড় মুহাদ্দিছ এবং হাদীছের প্রতি আমলকারী আলেম ছিলেন। মসজিদে নববীতে তাঁর দরসে হাদীছের পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক ছিল। অসংখ্য শিক্ষক-ছাত্র তাঁর নিকট থেকে উপকৃত হয়েছেন। ঘটনা সমূহের আলোকে অনুমিত হয় যে, তিনি কোন পুত্র সন্তান রেখে যাননি। তাঁর অছিয়ত মোতাবেক তাঁর যোগ্য ছাত্র মুহাম্মাদ হায়াত সিন্ধী তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। যিনি তাক্বলীদে শাখছীর বিরোধী এবং কুরআন-সুন্নাহর অনুসারী ছিলেন।

জীবনী গ্রন্থগুলোতে সিন্ধুর এই খ্যাতিমান মুহাদ্দিছকে শায়খ আবুল হাসান সিন্ধী কাবীর বলে এজন্য লেখা হত যে, শায়খ আবুল হাসান নামে দু'জন ব্যক্তি ছিলেন এবং দু'জনই সিন্ধী ছিলেন। দু'জনেই মদীনা মুনাউওয়ারায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন। পার্থক্য করার জন্য একজনকে শায়খ আবুল হাসান সিন্ধী ছাগীর বলা হত। তাঁর মৃত্যু তারিখ ২৫শে রামাযান ১১৮৭ হিজরী (১০ই ডিসেম্বর ১৭৭৩ খ্রিঃ)। মৃত্যুস্থান মদীনা মুনাউওয়ারাহ। দ্বিতীয়জন হলেন শায়খ আবুল হাসান বিন মুহাম্মাদ ছাদেক সিন্ধী কাবীর। তাঁর পুরা নাম ছিল শায়খ আবুল হাসান মুহাম্মাদ বিন আব্দুল হাদী। উপাধি ছিল নূরুদ্দীন। ইনিই সেই শায়খ আবুল হাসান সিন্ধী কাবীর, যার সম্পর্কে সম্মানিত পাঠক অবগত হলেন। তাঁর মৃত্যু তারিখ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। এক বর্ণনা মতে, তিনি ১১৪১ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। এক বর্ণনা অনুযায়ী ১১৩৯ হিজরী এবং অন্য আরেক বর্ণনায় ১১৩৮ হিজরীর ১২ই শাওয়ালের কথা বর্ণিত আছে। ১১৩৬ হিজরীরও একটি বর্ণনা পাওয়া যায়।

এই খ্যাতিমান আলেম ও উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন মুহাদ্দিছের মৃত্যুতে মদীনা মুনাউওয়ারা শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে। জানাযার ছালাতে বহু লোক অংশগ্রহণ করে। তাঁর ধার্মিকতা, তাক্বওয়া-পরহেযগারিতা এবং হাদীছের অপরিসীম খিদমতের দ্বারা সর্বশ্রেণীর মানুষ অত্যন্ত প্রভাবিত ছিল। তাঁর মৃত্যুতে মহিলারাও অত্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করে এবং জানাযার খাটিয়া নিয়ে যাওয়ার সময় এক নযর দেখার জন্য বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে যায়। দোকানদাররা শোকে দোকান বন্ধ করে দেয়। সরকারী লোকজন ও গভর্ণররা তাঁর খাটিয়া কাঁধে নেন। মাইয়েতকে মসজিদে নববীতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে জানাযার ছালাত পড়ানো হয়। অতঃপর সিন্ধু বংশোদ্ভূত এই মহান মুহাদ্দিছকে বাকী কবরস্থানে দাফন করা হয়। আলেম-ওলামা, ছাত্র এবং সর্বশ্রেণীর জনগণ তাঁর মৃত্যুকে এক বিশাল মর্মান্তিক ঘটনা বলে আখ্যায়িত করে এবং এজন্য অত্যন্ত দুঃখ ও শোক প্রকাশ করে।
 
মাওলানা দ্বীন মুহাম্মাদ ওফায়ী :

সিন্ধু প্রদেশের এক খ্যাতিমান আলেম ছিলেন মাওলানা দ্বীন মুহাম্মাদ ওফায়ী। যিনি সেখানকার ভাট্টি বংশের লোক ছিলেন। কয়েক প্রজন্মব্যাপী তাঁর বংশে ইলম ও আমলের সিলসিলা চলে আসছিল। মাওলানা দ্বীন মুহাম্মাদ ওফায়ী ১৩১১ হিজরীর ২৭শে রামাযান (১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ৩রা এপ্রিল) সিখর (সিন্ধু) যেলার খেতী ওরফে নবীয়াবাদ, গড়ী ইয়াসীন এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ঐ সময় ও এলাকার আলেমদের কাছ থেকে তিনি প্রভূত জ্ঞান অর্জন করেন।

তাঁর যুগটা উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনের সময় ছিল এবং ইংরেজদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল। মাওলানা দ্বীন মুহাম্মাদ ওফায়ীও স্বাধীনতা আন্দোলন সমূহে অংশগ্রহণ করেন এবং বন্দী হন।

মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী, মাওলানা সাইয়িদ মুহাম্মাদ দাঊদ গযনভী, মাওলানা ওবাইদুল্লাহ সিন্ধী, মাওলানা মুহাম্মাদ আলী কাসূরী (এম.এ ক্যান্টব), মাওলানা ইসমাঈল গযনভী এবং অন্যান্য অসংখ্য রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সাথে তাঁর সম্পর্ক অটুট ছিল। তিনি গ্রন্থ রচনার খিদমতও আঞ্জাম দিয়েছেন। সিন্ধীতে ছহীহ বুখারীর অনুবাদ করেছেন। সিন্ধী ভাষায় এটাই ছহীহ বুখারীর প্রথম অনুবাদ ছিল। সিন্ধী গদ্য ও পদ্যে কুরআন মাজীদ ও কিছু ধর্মীয় গ্রন্থের অনুবাদ হয়েছে। কিন্তু আমাদের জানা মতে ছহীহ বুখারীর এই অনুবাদটিই হয়েছে, যেটি মাওলানা দ্বীন মুহাম্মাদ ওফায়ী করেছেন।

তিনি ১৩৬৯ হিজরীর ২২শে জুমাদাল উখরা (১৯৫০ সালের ১১ই এপ্রিল) মৃত্যুবরণ করেন। তিনি অতুলনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। ইনশাআল্লাহ 'চামানিস্তানে হাদীছ' গ্রন্থে তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত প্রবন্ধ লেখা হবে।
 
ধন্যবাদ। আহলে হাদিস সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম।।।
 
ভারত একটি হিন্দুরাষ্ট্র হলেও বহু বুজুর্গ আলেম ভারতের মাটিতে জন্ম নিয়েছে।
 
ধন্যবাদ। আহলে হাদিস সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম।।।

অনেক ধন্যবাদ, মামা।
আপনাকে জানাতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি...
 
ভারত একটি হিন্দুরাষ্ট্র হলেও বহু বুজুর্গ আলেম ভারতের মাটিতে জন্ম নিয়েছে।

একেবারে খাঁটি কথা বলেছেন, মামা।
রিপ্লাইয়ের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ !
 
সাইয়িদ মুহিববুল্লাহ শাহ রাশেদী :

সাইয়িদ মুহিববুল্লাহ শাহ রাশেদী এবং তাঁর পিতৃপুরুষের গ্রন্থ রচনা, পাঠদান ও ধর্মীয় খিদমত পরিমাপ করা খুব কঠিন। এই বংশের আলেমদের সম্পর্কে অনেক মানুষ বহু কিছু লিখেছেন এবং লিখছেন। তাদের মধ্যে এই গ্রন্থের লেখকের নামও শামিল রয়েছে। এই উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন বংশের আলেম সাইয়িদ মুহিববুল্লাহ শাহ রাশেদী ১৩৪০ হিজরীর ২৯শে মুহাররম (১৯২১ সালের ২রা অক্টোবর) জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৪১৫ হিজরীর ১৯শে শা'বান (১৯৯৫ সালের ২১শে জানুয়ারী) মৃত্যুবরণ করেন।

সাইয়িদ মুহিববুল্লাহ শাহ রাশেদী (যাকে ঝান্ডার পীর বলা হয়) আরবী, উর্দূ, সিন্ধী তিন ভাষাতেই বইপত্র রচনা করেছেন। ১১টি গ্রন্থ আরবী ভাষায়, ২৭টি উর্দূতে এবং ১৯টি সিন্ধীতে। হাদীছ বিষয়ে আরবীতে রচিত তাঁর একটি গ্রন্থের নাম হল 'আত-তা'লীকুন নাজীহ আলাল জামে আছ-ছহীহ' (التعليق النجيح على الجامع الصحيح) এটি ৯ খন্ডে ছহীহ বুখারীর শরাহ। এখনো মুদ্রিত হয়নি। 'ফাতাওয়া রশীদিয়াহ' নামে সিন্ধী ভাষায় তাঁর একটি গ্রন্থ রয়েছে। এটিও অপ্রকাশিত। সিন্ধু প্রদেশে দ্বীনের প্রচার ও গ্রন্থ রচনায় তাঁর অগ্রগণ্যতার পরিসর অনেক বিস্তৃত।
 
সাইয়িদ বাদীউদ্দীন রাশেদী :

কুরআন মাজীদের অগ্রগণ্য খিদমতের আলোচনায় সাইয়িদ বাদীউদ্দীন রাশেদীর নাম উল্লিখিত হয়েছে। তিনি আরবী, উর্দূ ও সিন্ধী তিন ভাষাতেই লিখেছেন। সর্বসাকুল্যে তাঁর গ্রন্থের সংখ্যা ১০৮টি। কুরআনের মতো হাদীছ বিষয়েও তিনি যা কিছু লিপিবদ্ধ করেছেন এবং যেই পদ্ধতিতে লিখেছেন, তার দ্বারা তাঁকে এর অগ্রগণ্য খাদেমদের মধ্যে গণনা করা যায়। বক্তব্য, দরস-তাদরীস ও গ্রন্থ রচনায় এই বংশের আলেমরা উপমহাদেশে (বিশেষত সিন্ধু প্রদেশে) যে খিদমত আঞ্জাম দিয়েছেন, তা অত্যন্ত গুরুত্ববহ। সাইয়িদ বাদীউদ্দীন রাশেদীর জন্ম তারিখ ১৯শে যিলহজ্জ ১৩৪৩ হিজরী (১০ই জুলাই ১৯২৫) এবং মৃত্যু তারিখ ১৭ই শা'বান ১৪১৬ হিজরী (৮ই জানুয়ারী ১৯৯৬)।

সিন্ধুতে কবরপূজা ও পীরপূজার প্রভাব ছিল। লোকজন শরী'আত বিরোধী রসম-রেওয়াজে এমনভাবে জড়িয়ে ছিল যে, তা শিরক পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছিল। এই বংশের আলেমগণ বিশেষ করে সাইয়িদ মুহিববুল্লাহ শাহ এবং সাইয়িদ বাদীউদ্দীন রাশেদী এই অগ্রগণ্য কৃতিত্বের অধিকারী হন যে, তাঁরা গোটা সিন্ধুতে ঘুরে ঘুরে বক্তব্যের মাধ্যমে মানুষদের নিকট আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ)-এর বিধান পৌঁছিয়ে দেন এবং তাদের সংস্কার প্রচেষ্টায় মানুষ ইসলামের সরল পথের যাত্রী হয়। বক্তব্য ছাড়া লোকজন তাদের বইপত্রও পড়েছেন। যা তাদের জন্য হেদায়াতের মাধ্যম সাব্যস্ত হয়েছে।
 
মাওলানা ইমামুদ্দীন জূনীজূ :

সিন্ধু প্রদেশের বর্তমান আলেমদের মধ্যে একজন আলেমে দ্বীন হলেন মাওলানা ইমামুদ্দীন জূনীজূ, যিনি ডুনজ (যেলা থারপারকার)-এর বাসিন্দা। তিনি মাওলানা হাফেয আব্দুস সাত্তার দেহলভী (রহঃ) কৃত উর্দূ অনূদিত কুরআনের সিন্ধী ভাষায় অনুবাদ করেছেন। হাদীছ সম্পর্কে তাঁর খিদমত হল মিশকাতের সিন্ধী ভাষায় অনুবাদকরণ। এছাড়া তিনি ইমাম ইবনু তাইমিয়ার ইত্তিবাউর রাসূল, ইবনু সুলাইমান তামীমীর উছূলুদ্দীন, শায়খুল ইসলাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব-এর কিতাবুত তাওহীদ, মাওলানা ইসমাঈল শহীদ দেহলভীর তাকভিয়াতুল ঈমান, মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরীর কালিমা তাইয়িবা, মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী দেহলভীর নামাযে মুহাম্মাদী এবং অন্যান্য অসংখ্য আরবী ও উর্দূ গ্রন্থ সিন্ধী ভাষায় অনুবাদ করেন। ইনিই প্রথম আলেম যিনি এই খিদমত আঞ্জাম দেন।

যেই পরিবেশে তিনি থাকছেন সেই পরিবেশে খাঁটি দ্বীনের প্রচার খুব কঠিন কাজ। আল্লাহ তা'আলা তাঁকে তৌফিক দিয়েছেন এবং তিনি এই কঠিনতম দায়িত্ব পালন করেছেন। যার শেষ ফলাফল ভাল হয়েছে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top