What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

হাদীছের অনুবাদ ও ভাষ্য প্রণয়নে ভারতীয় উপমহাদেশের আহলেহাদীছ আলেমগণের অগ্রণী ভূমিকা (1 Viewer)

arn43

Co-Admin
Staff member
Co-Admin
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,630
Messages
123,480
Credits
300,172
SanDisk Sansa
DVD
Whiskey
SanDisk Sansa
SanDisk Sansa
Computer
হাদীছের অনুবাদ ও ভাষ্য প্রণয়নে ভারতীয় উপমহাদেশের আহলেহাদীছ আলেমগণের অগ্রণী ভূমিকা

মাওলানা শামসুল হক আযীমাবাদী :

ভারতের বিহার প্রদেশে অসংখ্য আলেম জন্মগ্রহণ করেছেন এবং তাঁরা পাঠদান ও গ্রন্থ রচনায় অপরিসীম খিদমত আঞ্জাম দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এক বিশাল ব্যক্তিত্ব ছিলেন মাওলানা শামসুল হক আযীমাবাদী। (শামসুল হক আযীমাবাদী সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন : অনুবাদক প্রণীত মনীষী চরিত, মাসিক আত-তাহরীক, অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০০৫। ) তিনি ১২৭৩ হিজরীর ২৭শে যিলকদ (১৮৫৭ সালের ১৯শে জুলাই) জন্মগ্রহণ করেন। স্বীয় যুগের উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন আলেমদের নিকট থেকে জ্ঞানার্জন করেন। শেষে ১২৯৬ হিজরীর মুহাররম (জানুয়ারী ১৮৭৯ খ্রিঃ) মাসে মিয়াঁ সাইয়িদ নাযীর হুসাইনের কাছ থেকে হাদীছের সনদ গ্রহণ করেন। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে দুই বার মিয়াঁ ছাহেবের নিকটে যান এবং সর্বমোট আড়াই বৎসর তাঁর দরসের মজলিসে শামিল থাকেন। জ্ঞানার্জনের পর পাঠদানের খিদমত আঞ্জাম দেন এবং গ্রন্থ রচনার সাথেও যোগসূত্র বিদ্যমান থাকে। হাদীছ সম্পর্কে তাঁর রচনাবলীর মধ্যে নিম্নোক্ত গ্রন্থগুলো শামিল রয়েছে।
 
১. গায়াতুল মাকছূদ ফী হাল্লি সুনানি আবীদাঊদ :
এই নামে সুনানে আবুদাঊদের এমন বিস্তারিত ব্যাখ্যা লেখার পরিকল্পনা তাঁর ছিল, যা বেশ কয়েক খন্ডে সমাপ্ত হবে। কিন্তু এর শুধুমাত্র এক খন্ড দিল্লীর আনছারী প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়েছে। (সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, করাচীর হাদীছ একাডেমী থেকে এর মোট ৩ খন্ড প্রকাশিত হয়েছে। ) সুনিশ্চিতভাবে জানা যায় না যে, এই ব্যাখ্যাগ্রন্থটি কতদূর পর্যন্ত লেখা হয়েছিল। বলা হয়ে থাকে যে, একুশ পারার ব্যাখ্যা সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু এর মাত্র দুই খন্ডের পান্ডুলিপি খোদাবখশ পাটনা লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত রয়েছে। অন্যান্য খন্ডগুলোর কোন হদিস পাওয়া যায় না।
 
২. আওনুল মা‘বূদ আলা সুনানি আবীদাঊদ :
এটিও চারটি বৃহৎ খন্ডে বিভক্ত (আল-মাকতাবাতুস সালাফিয়্যাহ, মদীনা মুনাউওয়ারাহ থেকে এটি ১৪ খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে।) সুনানে আবুদাঊদের শরাহ বা ব্যাখ্যাগ্রন্থ। এটিকে ‘গায়াতুল মাকছূদ’-এর সারসংক্ষেপ আখ্যায়িত করা হয়। ৭ বছরে এটির রচনা সমাপ্ত হয় এবং প্রথমবার ১৩১৮-১৩২৩ হিজরী পর্যন্ত ৫ বছরে প্রকাশিত হয়। আল্লাহ আলেমদের মধ্যে এই গ্রন্থের অপরিসীম গ্রহণযোগ্যতা দান করেছেন। উপমহাদেশে এ বিষয়ে এটিই প্রথম হাদীছের খিদমত, যা আঞ্জাম দেয়ার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে মাওলানা শামসুল হক আযীমাবাদী তৌফিক লাভ করেন।
 
৩. আত-তা‘লীকুল মুগনী আলা সুনানিদ দারাকুতনী :
মাওলানা আযীমাবাদী স্বীয় গবেষণালব্ধ টীকা সহ প্রথমবার হাদীছের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ দারাকুতনীর ‘মতন’ (Text) প্রকাশ করেন। ১৩১০ হিজরীতে দিল্লীর ফারূকী প্রেস থেকে এই গ্রন্থটি প্রথম দু’খন্ডে প্রকাশিত হয়। এর ফটোকপি পাকিস্তানেও মুদ্রিত হয়েছে। তিনি হাদীছ বিষয়ে অনেক খিদমত আঞ্জাম দিয়েছেন, আমি আমার ‘দাবিস্তানে হাদীছ’ গ্রন্থে যার বিস্তারিত বিবরণ পেশ করেছি। এতে তাঁর কিছু খ্যাতিমান ছাত্রের নাম লিপিবদ্ধ করেছি এবং এটাও লিখেছি যে, তাঁর পরামর্শে কোন আলেম কোন গ্রন্থ লিপিবদ্ধ করেছেন এবং তাহকীকী দৃষ্টিকোণ থেকে সেগুলো কতটা গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে।

মাওলানা শামসুল হক আযীমাবাদী মাত্র ৫৬ বছর আয়ু পান এবং ১৩২৯ হিজরীর ১৯শে রবীউল আওয়ালে তিনি (১৯১১ সালের ২০শে মার্চ) পরপারে পাড়ি জমান।
 
মাওলানা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী :

মাওলানা আব্দুর রহমান মুবারকপুরীর (আব্দুর রহমান মুবারকপুরী সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন: অনুবাদক প্রণীত মনীষী চরিত, মাসিক আত-তাহরীক, জুন-আগস্ট ২০০৫।) জন্মস্থান আযমগড় যেলার (ইউপি) মুবারকপুর গ্রাম এবং জন্মসন ১২৮২ হিঃ (১৮৬৫ খ্রিঃ)। তিনি অত্যন্ত নরম মনের অধিকারী, আপাদমস্তক বিনয়ী ও নম্রতার মূর্তপ্রতীক আলেমে দ্বীন ছিলেন। অসংখ্য শিক্ষকের নিকট থেকে তিনি জ্ঞানার্জন করেন। কিছুদিন হাফেয আব্দুল্লাহ গাযীপুরীর দরসের মজলিসে অংশগ্রহণ করেন। হাফেয ছাহেব নিজের এই ছাত্রের যোগ্যতায় বিমুগ্ধ ছিলেন এবং তাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। প্রিয় শিক্ষকের পরামর্শে তিনি মিয়াঁ সাইয়িদ নাযীর হুসাইন দেহলভীর খিদমতে হাজির হন এবং তাঁর কাছ থেকে জ্ঞানার্জন করেন। এটি ১৩০৬ হিজরীর (১৮৮৯ খ্রিঃ) ঘটনা। ঐ সময় মাওলানা মুবারকপুরী ২৩ বছরের যুবক ছিলেন এবং মিয়াঁ ছাহেবের বয়স ৮৬ বছর অতিক্রম করেছিল। তিনি মিয়াঁ ছাহেবের কাছ থেকে ছহীহ মুসলিম, জামে তিরমিযী এবং সুনানে আবুদাঊদ পুরাপুরি পড়েন। এসব গ্রন্থ ছাড়াও তাফসীর, হাদীছ ও ফিকহের কতিপয় গ্রন্থ তাঁর নিকট পড়েন এবং সনদ গ্রহণ করেন।

মাওলানা মুবারকপুরী বিভিন্ন মাদরাসায় শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেন এবং অনেক গ্রন্থও লিখেন। তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হল তিরমিযীর শরাহ ‘তুহফাতুল আহওয়াযী’ (تحفة الأحوذى)। উপমহাদেশে তিনিই প্রথম তিরমিযীর ব্যাখ্যা লিপিবদ্ধ করেন। এটি চারটি বৃহৎ খন্ডে বিভক্ত। ৩৪৪ পৃষ্ঠাব্যাপী এ গ্রন্থের উপর তাঁর ভূমিকা রয়েছে। যেটি স্বতন্ত্র খন্ডে মুদ্রিত হয়েছে। ভূমিকা সহ তুহফাতুল আহওয়াযী মোট পাঁচ খন্ড। (বৈরূতের দারুল ফিকর থেকে এটি ১২ খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে। ) এটি মাওলানা মুবারকপুরীর হাদীছের এমন খিদমত, যার কারণে তিনি উপমহাদেশের আলেমদের মাঝে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে অধিষ্ঠিত রয়েছেন।

মাওলানা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী ১৩৫৩ হিজরীর ১৬ই শাওয়াল (১৯৩৫ সালের ২২শে জানুয়ারী) মৃত্যুবরণ করেন।
 
মাওলানা ওবাইদুল্লাহ রহমানী :

মাওলানা ওবাইদুল্লাহ রহমানী মুবারকপুরী (ওবাইদুল্লাহ মুবারকপুরী সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন : অনুবাদক প্রণীত মনীষী চরিত, মাসিক আত-তাহরীক, জুন-সেপ্টেম্বর ও নভেম্বর ২০১০। ) উপমহাদেশের প্রসিদ্ধ ও খ্যাতিমান আলেম ছিলেন। মাওলানা আব্দুর রহমান মুবারকপুরীর নিকটাত্মীয় ছিলেন। ১৩২৭ হিজরীর মুহাররম মাসে (ফেব্রুয়ারী ১৯০৯ খ্রিঃ) মুবারকপুর নামক স্থানে (যেলা আযমগড়) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিভিন্ন মাদরাসার অসংখ্য যোগ্য শিক্ষকের নিকট থেকে জ্ঞানার্জন করেন। ১৩৪৫ হিজরীতে (১৯২৭ খ্রিঃ) ‘দারুল হাদীছ রহমানিয়া’ (দিল্লী) থেকে শিক্ষা সমাপনী সনদ গ্রহণ করেন। সেই সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। সকল পরীক্ষায় সবর্দা প্রথম হতেন। ফারেগ হওয়ার পর দারুল হাদীছ রহমানিয়ার পরিচালক শায়খ আতাউর রহমান সেখানেই তাঁকে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দিয়েছিলেন এবং তিনি এই দায়িত্ব পালন করতে শুরু করেছিলেন। অতঃপর অসংখ্য আলেম ও ছাত্র তাঁর নিকট থেকে জ্ঞানার্জন করেন।

পাঠদানের পাশাপাশি গ্রন্থ রচনাও করেন। এর সূচনা এভাবে হয়েছিল যে, ‘তুহফাতুল আহওয়াযী’ রচনার সময় মাওলানা আব্দুর রহমান মুবারকপুরীর সাহায্যকারীর প্রয়োজন দেখা দিলে মাওলানা ওবাইদুল্লাহ রহমানীকেই তাঁর সাহায্যকারী নিযুক্ত করা হয়। অল্পবয়স্ক হওয়া সত্ত্বেও অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ খিদমত আঞ্জাম দেন।

হাদীছের গবেষণালব্ধ খিদমতের ব্যাপারে মাওলানা রহমানীর এক বিশাল বড় কীর্তি হল মিশকাত শরীফের শরাহ। যার পুরা নাম ‘মির‘আতুল মাফাতীহ শারহু মিশকাতিল মাছাবীহ’ (مرعاة المفاتيح شرح مشكاة المصابيح)। এই শরাহটি সমাপ্ত না হলেও যতটুকু হয়েছে তা অত্যন্ত গুরুত্বের দাবীদার। প্রথমে এই গ্রন্থটি মাওলানা আতাউল্লাহ হানীফ ভূজিয়ানীর তত্ত্বাবধানে মাকতাবা সালাফিয়া (লাহোর) থেকে লিথো প্রেসে মুদ্রিত হয়েছিল। সেই সময় ছাপার এটিই প্রচলন ছিল। অতঃপর এই গ্রন্থটি জামে‘আ সালাফিয়া (বেনারস) কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত চমৎকার টাইপে ৯ খন্ডে প্রকাশ করে। ভারত, পাকিস্তান ও আরব দেশসমূহের ইলমী পরিমন্ডলে এটি সীমাহীন গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। উপমহাদেশে ইলমী ও তাহকীকী দৃষ্টিকোণ থেকে এই গ্রন্থটি প্রথম হওয়ার গৌরবের দাবীদার। এর পূর্বে এই ভূখন্ডে মিশকাতের এ ধরনের শরাহ কোন ভাষাতেই প্রকাশিত হয়নি।
মাওলানা ওবাইদুল্লাহ রহমানী কিছুদিন অসুস্থ থাকার পর ৮৫ বছর বয়সে ১৯৯৪ সালের ৬ই জানুয়ারী (১৪১৪ হিজরীর
২৩শে রজব ) নিজ জন্মভূমি মুবারকপুরে (যেলা আযমগড়) মৃত্যুবরণ করেন।
 
মাওলানা আব্দুস সালাম মুবারকপুরী :

এখন মাওলানা ওবাইদুল্লাহ রহমানী মুবারকপুরীর পিতা মাওলানা আব্দুস সালাম মুবারকপুরীর অনেক বড় অগ্রগণ্য ইলমী অবদান লক্ষ করুন! তিনি যেসব মুহাদ্দিছের নিকট থেকে জ্ঞানার্জন করেন তাঁদের মধ্যে মাওলানা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী, হাফেয আব্দুল্লাহ গাযীপুরী, মিয়াঁ সাইয়িদ নাযীর হুসাইন দেহলভী ও শায়খ হুসাইন আরব ইয়ামানীর নাম উল্লেখযোগ্য।

মাওলানা আব্দুস সালাম মুবারকপুরী অধিক অধ্যয়নকারী আলেম ছিলেন। তাঁর জ্ঞানের পরিধি ছিল অত্যন্ত ব্যাপক। পাঠদানের পাশাপাশি তাঁর রচনার সিলসিলাও জারি থাকত। ওলামায়ে কেরামের জীবনী সম্পর্কে তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল। মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরীর ‘আখবারে আহলেহাদীছ’ (অমৃতসর) পত্রিকায় ১৯১৮ সালের ৩০শে আগস্ট আহলেহাদীছ আলেমদের জীবনী প্রকাশের একটা সিলসিলা শুরু হয়েছিল। ১৯২২ সালের ১৭ আগস্ট পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে চার বছর যেটা অব্যাহত ছিল। এই সময়ে উপমহাদেশের ৮২ জন আহলেহাদীছ আলেমের জীবনী প্রকাশিত হয়েছিল। এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ মাওলানা আব্দুস সালাম মুবারকপুরীর শুভ প্রচেষ্টার ফলশ্রুতি ছিল।

মাওলানা মুবারকপুরী উপমহাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় অসংখ্য প্রবন্ধ লিখেছেন। এগুলো ছাড়া তিনি ‘সীরাতুল বুখারী’ নামে যে গ্রন্থ রচনা করেছেন, পুরো উপমহাদেশে তার দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। উর্দূ ভাষায় এটিই প্রথম গ্রন্থ যাতে বিস্তারিতভাবে ইমাম বুখারী (রহঃ)-এর জীবনী আলোচনা করা হয়েছে এবং মুহাদ্দিছ হিসাবে তাঁর মর্যাদার সকল দিক ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বিদ্বান মহলে এই গ্রন্থটি দারুণ গ্রহণযাগ্যতা অর্জন করেছে। এ বিষয়ে আরবী ভাষায় রচিত কোন গ্রন্থও এর মুকাবিলা করতে সক্ষম নয়। ১৩২৯ হিজরীতে (১৯১১ খ্রিঃ) প্রথমবার ‘সীরাতুল বুখারী’ প্রকাশিত হয়েছিল। এর পরে ভারতেও প্রকাশিত হয় এবং পাকিস্তানের কতিপয় প্রকাশনীও প্রকাশ করে।

ভারতের একজন বিজ্ঞ গ্রন্থকার ও অনুবাদক ড. আব্দুল আলীম আব্দুল আযীম বাস্তাবী মাওলানা আব্দুস সালাম মুবারকপুরীর এই উর্দূ গ্রন্থের (সীরাতুল বুখারী) আরবী অনুবাদ করেন। যেটি তাহকীক ও তাখরীজ সহ প্রকাশিত হয়েছে এবং আরব বিশ্বের আলেমগণ এর দ্বারা উপকৃত হচ্ছেন।

এটা পরম সৌভাগ্যের কথা যে, উর্দূ ভাষাতে ইমাম বুখারীর প্রথম জীবনী লেখার মর্যাদা একজন ভারতীয় আলেম লাভ করেন এবং তার প্রথম আরবী অনুবাদ, তাহকীক ও তাখরীজের মুকুটও একজন ভারতীয় আলেমের মাথায় শোভা পায়।

মাওলানা আব্দুস সালাম মুবারকপুরী গ্রন্থ পাঠে অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। কোন ব্যবসায়ীর নিকট নতুন কোন গ্রন্থ আসলে এবং তিনি সেটা অবগত হলে যেকোন মূল্যে তা ক্রয় করার চেষ্টা করতেন। গ্রন্থের প্রতি এই আকর্ষণ ও ভালবাসাই তাঁর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একদিন তিনি দিল্লীর জামে মসজিদ এলাকায় দারুল হাদীছ রহমানিয়া থেকে একটি গ্রন্থ ক্রয়ের জন্য যান। বই ক্রয় করে চাঁদনী চকে ঘণ্টাঘরের নিকটে রাস্তা পার হওয়ার সময় হঠাৎ একটি দ্রুতগামী ঘোড়ার গাড়ি এসে পড়ে। যার উপর কোন আরোহী ও চালক ছিল না। দ্রুত ধাবমান ঘোড়াটি মাওলানা আব্দুস সালাম মুবারকপুরীকে পিষ্ট করে চলে যায় এবং তিনি তৎক্ষণাৎ মৃত্যুবরণ করেন। সদ্য ক্রীত গ্রন্থটি তাঁর হাতেই ছিল, যার সবুজ রংয়ের টাইটেল তাঁর রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল। শোনা যায়, এই গ্রন্থটি নিজ সবুজ (এবং রক্তের লাল) রং সহ তাঁর গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত আছে। ১৯২৪ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারী (১৩৪২ হিজরীর ১৮ই রজব) এই দুর্ঘটনা ঘটে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজে‘ঊন।
 
ড. যিয়াউর রহমান আযমী :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বরকতময় হাদীছের প্রচার-প্রসার নবুঅতের যুগ থেকে অব্যাহত আছে এবং ইনশাআল্লাহ সর্বদা অব্যাহত থাকবে। মানুষেরা নিজেদের জ্ঞান ও অবস্থার চাহিদা অনুযায়ী কিয়ামত পর্যন্ত এই কল্যাণকর কাজে নিমগ্ন থাকবে। বর্তমান যুগে হাদীছের খাদেমদের দীর্ঘ তালিকায় আযমগড় যেলার ড. যিয়াউর রহমান আ‘যমীর নাম অত্যন্ত গুরুত্ববহ। ড. ছাহেব ১৯৪৩ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের আযমগড় যেলার একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বংশ হিন্দুদের আর্য সমাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। ড. ছাহেব মাধ্যমিক পর্যন্ত নিজ গ্রামে শিক্ষার্জন করেন। অতঃপর আযমগড়ের শিবলী কলেজে ভর্তি হন। যেখানে মাধ্যমিক ক্লাসেরও ব্যবস্থা ছিল। ১৯৫৯ সালে তিনি এই কলেজের হাইস্কুল (শাখা) থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। তিনি স্কুল পাশ করে কলেজে ভর্তির জন্য প্রস্ত্তত ছিলেন। ইত্যবসরে এক বিশাল বড় বিপ্লব তাঁর জীবনের দুয়ারে কড়া নাড়ে। অধ্যয়নের প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল। এই আগ্রহই তাঁকে ইসলাম সম্পর্কিত গ্রন্থগুলো পড়তে উদ্বুদ্ধ করে এবং তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

এরপরে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয় যে, তিনি মদীনা মুনাউওয়ারায় পৌঁছে যান এবং মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ফারেগ হওয়ার পর সেখানেই অধ্যাপনা শুরু করেন। ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে আমার সাথে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল। তিনি তাঁর বাড়িতে আমাকে দাওয়াত দিয়েছিলেন। আরো অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আমরা সেখানে রাতের খাবার গ্রহণ করি এবং অনেক রাত পর্যন্ত আলোচনা চলতে থাকে। আমার মনে পড়ছে ঐ সময় তিনি মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষদের ডীন ছিলেন। এর ৮ বছর পর ২০০৮ সালের ২৯শে জুন মদীনা মুনাউওয়ারাতেই তাঁর সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়। এবারও রাতের খাবার তাঁর বাড়িতেই খাই। ড. আব্দুর রহমান ফিরিওয়াঈ ও মাওলানা আব্দুল মালেক মুজাহিদও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এই দু’জন ব্যক্তি এই অকিঞ্চনের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য রিয়াদ থেকে এসেছিলেন। এঁরা দু’জন রিয়াদে প্রত্যাবর্তন করেন। কিন্তু আমি রাতে ড. আ‘যমীর বাসায় থাকি এবং আমরা দু’জন অনেক রাত পর্যন্ত আলোচনা করতে থাকি।

ঐ সময় ড. যিয়াউর রহমান আ‘যমী হাদীছ সম্পর্কে এমন কাজ করছিলেন, যা আজ পর্যন্ত কেউ করেনি। তিনি এমন একটি হাদীছের গ্রন্থ সংকলন করছিলেন, যেটি সকল ছহীহ হাদীছকে শামিল করবে। তিনি এই সংকলনের নাম নির্ধারণ করেছিলেন ‘আল-জামে আল-কামেল ফিল হাদীছ আছ-ছহীহ আশ-শামেল’ (الجامع الكامل في الحديث الصحيح الشامل)। ২০০১ সালের জুনের শেষাবধি এর ৯টি বৃহৎ খন্ড সংকলিত হয়েছিল। যাতে ঈমান, ইলম ও ইবাদত অর্থাৎ ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ ও যাকাত সম্পর্কিত ছহীহ হাদীছ সমূহ সকল হাদীছ গ্রন্থ থেকে যাচাই-বাছাই করে একত্রিত করা হয়েছিল। এ সকল তথ্য-উপাত্ত সুবিন্যস্ত অবস্থায় তিনি আমাকে দেখিয়েছিলেন। ড. ছাহেবের ধারণা এমনটা ছিল যে, অবশিষ্ট খন্ডগুলো সমাপ্ত হলে সকল ছহীহ হাদীছের সংখ্যা দাঁড়াবে ১২/১৫ হাযার। তিনি ২০০০ সালের দিকে এই কাজ শুরু করেছিলেন এবং ২০১৩ সালে তা সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল।

এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ এবং এমন কাজ যেটা কোন আলেম অদ্যাবধি করেননি। কেবল ড. যিয়াউর রহমান আ‘যমী সেদিকে মনোযোগ দেন এবং ইনশাআল্লাহ বর্তমানে তা সমাপ্তের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে থাকবে।

আমি ‘গুলিস্তানে হাদীছ’ গ্রন্থে হাদীছের খাদেমদের আলোচনায় ড. ছাহেবের উপর বিস্তারিত প্রবন্ধ লিখতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু লিখতে পারিনি। বর্তমানে ঐ ধরনের গ্রন্থ ‘চামানিস্তানে হাদীছ’ গবেষণাধীন রয়েছে। ইনশাআল্লাহ এ গ্রন্থে তাঁর সম্পর্কে আলোচনা আসবে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top