গর্ভধারণের শুরুতে ডায়াবেটিস ছিল না। কিন্তু গর্ভকালীন ২৪-২৮ সপ্তাহ থেকে দেখা দেয় জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস (গর্ভকালীন ডায়াবেটিস)। বিশ্বজুড়ে প্রতি ছয়জন গর্ভবতী মায়ের একজনের ডায়াবেটিস হয়। এই ডায়াবেটিস মা ও গর্ভের শিশুর চরম ক্ষতি করতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত চিনির মাত্রা গর্ভধারণের শেষ ৪-৮ সপ্তাহে শিশুর মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুণ। শিশুর ওজন অনেক বেড়ে যায়। একে ম্যাক্রোসোমিয়া বলা হয়। এমনটি হলে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার জরুরি হয়ে পড়ে। এ ছাড়া জন্মের পরই শিশুর শ্বাসকষ্ট, জন্ডিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। রক্তে গ্লুকোজ কমে হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় আক্রান্ত হয় শিশুরা। এ ছাড়া এ রকম শিশুদের রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমে যেতে পারে এবং কখনো লোহিত কণিকার পরিমাণ মারাত্মক পর্যায়ে বেড়ে যেতে পারে। এতে ভবিষ্যতে এই শিশুদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
ডায়াবেটিসের কারণে মায়েদের গর্ভাশয়ে পানির পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। গর্ভপাতের আশঙ্কা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এ ছাড়া মায়েদের উচ্চ রক্তচাপ এবং একলাম্পশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। তাই মা ও শিশুর নিরাপত্তার জন্য এর সঠিক চিকিৎসা জরুরি।
গর্ভকালে খালি পেটে চিনির মাত্রা ৫.১ মিলিমোল/লিটারের ওপরে থাকলে ডায়াবেটিস ধরা হয়।
জেস্টেশনাল ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মায়েদের সন্তান প্রসবের পর সাধারণত চিনির মাত্রা স্বাভাবিকে ফিরে আসে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, এসব মায়ের অর্ধেকেরই ছয় বছরের মধ্যে স্থায়ী ডায়াবেটিস দেখা দেয়।
ঝুঁকি যাঁদের বেশি
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস যেকোনো মায়েরই হতে পারে। ওজন বেশি, বয়স পঁচিশোর্ধ্ব, ডায়াবেটিসের ইতিহাস রয়েছে, আগের বাচ্চার জন্মকালীন ওজন ৯ পাউন্ডের বেশি, আগে থেকেই চিনির মাত্রা ডায়াবেটিসের সীমা ছুঁই ছুঁই, পলিসিস্টিক ওভারি ডিজিজ, এশিয়ান-আফ্রিকান-আমেরিকান বংশোদ্ভূত, আগের সন্তান গর্ভে ধারণের সময়ও ডায়াবেটিস ছিল, এমন নারীদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেশি।
কীভাবে নির্ণয় করবেন
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস আর সাধারণ ডায়াবেটিস নির্ণয়ের মাপকাঠি এক নয়। গর্ভকালে খালি পেটে চিনির মাত্রা ৫.১ মিলিমোল/লিটারের ওপরে থাকলে ডায়াবেটিস ধরা হয়। ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়ার এক এবং দুই ঘণ্টা পর চিনির মাত্রার যেকোনো একটি যথাক্রমে ১০ এবং ৭.৮-এর বেশি হলে তাকে বলা হয় জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস।
চিকিৎসা নিন
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস আর অন্যান্য ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় বেশ কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। এ সময় ডায়াবেটিসের অনেক ওষুধ গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি করতে পারে। সে জন্য সবচেয়ে ভালো হলো ইনসুলিন নেওয়া। তবে সব ধরনের ইনসুলিন নিরাপদ নয়। আর এ সময় রক্তে শর্করা রাখতে হবে খালি পেটে ৫.৩ আর খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর ৬.৭ মিলিমোল/লিটারের নিচে। জীবনযাপনে নিয়ম-শৃঙ্খলা আনতে হবে। চিনি ও চিনির তৈরি খাবার, মিষ্টি, ময়দার তৈরি খাবার, কলে ভাঙানো চালের ভাত যতটুকু সম্ভব কম খেতে হবে। প্রতিদিন শরীরচর্চা করতে হবে। প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা না থাকলে কিংবা জটিল কোনো রোগ না থাকলে নিয়মিত হাঁটতে হবে।
* লে. কর্নেল নাসির উদ্দিন আহমদ, সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন, সিএমএইচ, ঢাকা