[HIDE]
কিছুক্ষণের ভিতরেই ভদ্রলোক শালপাতার থালায় করে গরম গরম হাতেগড়া রুটি, আলুর তরকারি আর চারপিস করে বেগুনভাজা নিয়ে এলো। বললো, আপনারা শহুরে মানুষ বাবু, এই খাবার কিভাবে খাবেন, তাই ক'টা বেগুন ভেজে দিলাম। আমি বললাম, দাদা, শহরের কোনো দোকান এই মহাভোজ খাওয়াতে পারবে না। তাদের দোকানে অনেক রকমের খাবার আছে, আলো আছে, পাখা আছে, চেয়ার টেবিল, লোকজন সব আছে, কিন্তু এই আন্তরিকতা নেই। এখানে শুধু পেট ভরে না, মন ও ভরে যায়। দোকানির মুখটা হাসিতে ভরে গেলো কথাগুলো শুনে। শুভশ্রী খেতে খেতে বললো, অপূর্ব! সেটা শুনে দোকানি তাড়াতাড়ি বললো, আর দুটো বেগুনভাজা দি মা? শুভশ্রী বললো, না দাদা, আর পারবো না।
পেটপুরে খেলাম আমরা দুজনে। খাওয়া শেষে আরও এক রাউন্ড চা খেলাম। দাম জিজ্ঞেস করতে ভদ্রলোক বললেন, চুয়াল্লিশ টাকা। আমি যেন নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না!বললাম, কতো?? দোকানি হয়তো ভাবলো, বেশি বলে ফেলেছে, তাই তাড়াতাড়ি বললো, আটটা রুটি তিনটাকা করে চব্বিশ টাকা, আর চার কাপ চা, কুড়ি টাকা। আমি কিছুক্ষন অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম তার দিকে। গাড়ি নিয়ে বাইরের লোক এলে যেখানে দোকানদার গলা কাটায় ব্যস্ত হয়, সেখানে এই গরীব গ্রাম্য দোকানদার এক টাকা বেশি তো চাইলোই না, উলটে বেগুনভাজার দামই নিলো না। এখনো এরা বেঁচে আছে পৃথিবীতে, তাই পৃথিবী এতো সুন্দর। তার হাতে বেশি টাকা দেওয়া তাকে এবং তার আন্তরিকতাকে অপমান করা হবে ভেবে সঠিক দাম মিটিয়ে দিলাম। তারপর বাচ্চাটাকে বললাম চলো আমাদের সাথে। সে লাফাতে লাফাতে আমাদের সাথে গাড়ি পর্যন্ত এলো। জিজ্ঞেস করলাম তোমার নাম কি? সে বললো, বুধাই। স্কুলে পড়ো? সে মাথা নাড়লো। বললাম, জামা পরোনি কেন? শীত করেনা? সে বললো, নেই.. একটা আছে, মা পরতে দেয়না। বুঝলাম কোন বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য তুলে রাখা আছে সে জামা। বাবা কি করে? সে উত্তর দিলো, নেই, ঝড়ে মাছ ধরতে গিয়ে আর আসেনি। চোখে জল চলে এলো আমার। আমি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মানিব্যাগ থেকে দুটো পাঁচশ টাকা তার হাতে দিলাম। ছেলেটা হাত সরিয়ে নিয়ে জোরে জোরে মাথা নাড়লো, বললো, মা মারবে। আমি তার হাতে টাকাটা গুঁজে দিয়ে বললাম, মা কে বোলো এক কাকু দিয়েছে জামা কিনতে। ছেলেটা আবার লাফাতে লাফাতে দোকানের দিকে চললো, আমরা হোটেলের দিকে।
ফেরার পথে শুভশ্রী বললো, থ্যাংক ইউ তমাল, জীবনের একটা সেরা সকাল কাটালাম। তারপরে বললো, তমাল, এতোক্ষণ একা কাটালাম তোমার সাথে, সুযোগ নিলে না তো? আমি বললাম, সময় হলেই নেবো, তাড়াহুড়ো কিসের? সে বললো, তাড়াহুড়োই তো করতে দেখলাম সবাইকে একা মেয়ে পেলেই। মুচকি হেসে বললাম, তারা পাকা খেলোয়াড় না, আমি ছোটখাটো সুযোগ নেই না। শুভশ্রী মুচকি হেসে বললো, তাই বুঝি? কেমন খেলোয়াড় তুমি? বললাম, সময় হলেই বুঝতে পারবে। মনে আছে তো, স্নানের সময় শাড়ি পরে আসবে না? শুভশ্রী লজ্জা পেয়ে বললো, পরবো না? আমি বললাম,কিছু না পরে এলে আমার কোনো অসুবিধা নেই, কিন্তু তোমার বন্ধুরা আর ছাত্রীরা অজ্ঞান হয়ে গেলে মুশকিলে পড়ে যাবে। আমার হাতে চিমটি কেটে শুভশ্রী হাসতে হাসতে বললো, অসভ্য! তারপর বললো, কোনটা পরবো বলো? বললাম, কালো লেগিংস আর হলুদ কুর্তিটা। সে মাথা নেড়ে বললো, আচ্ছা।
একমাত্র পুরুষ হিসাবে কলেজ ট্যুরে এসেছে সরোজ। তাই তার একার জন্য একটা সিঙ্গেল রুম বরাদ্দ হয়েছে। আমি সরোজের রুমে গেলাম, সে তখন দাড়ি কাটছিলো। জিজ্ঞেস করলাম, কেমন চলছে জেনির সাথে? সে বললো, দারুণ, কিন্তু বাকীদের কি ব্যবস্থা করলি? বললাম, কাজ চলছে। সে বললো জলদি কর, জেনির সাথে তো হচ্ছে, উপরি কিছু পাবো না নাকি? বললাম, আমার সাথে না হওয়া পর্যন্ত তোকে রেকমেন্ড করি কিভাবে? সে বললো, হুম, তা ঠিক, তবে তুই এখনো কিছু করতে পারিসনি? বললাম, উপর থেকে হয়েছে, ভিতরে যাওয়া হয়নি এখনো। সরোজ জিজ্ঞেস করলো, আর জেনি? তাকে কেমন খাচ্ছিস? আমি মিথ্যা করে বললাম, তুই যা ক্লান্ত করে দিচ্ছিস তাকে, সে তো মড়ার মতো ঘুমাচ্ছে রাতে। সরোজ নিজের পুরুষত্বের এতোবড় সার্টিফিকেট পেয়ে ভয়ানক খুশি হয়ে উঠলো। বললো, আরে খেলতে জানতে হয়। এমন ভাবে খেলবি যে অপনেন্ট ক্লান্ত হয়ে যাবে, তার কোনো চাহিদাই অবশিষ্ট থাকবে না। আমার প্রচন্ড হাসি পেয়ে গেলো সরোজের কথায়। কাল রাতে জেনির বলা কথাগুলো শুনতে তার আর কখনো দাঁড়াতোই না। কিন্তু আমি কিছু না বলে বিনীত ছাত্রের মতো মাথা নাড়লাম। তারপর বললাম, স্নানে যাবি না? সে বললো, যাবো তো, তুই যাবি না? আমি বললাম, দেখি!
রুমে গিয়ে দেখলাম জেনি রেডি হয়ে গেছে সমুদ্রে যাবার জন্য। মেয়েটা সমুদ্র স্নানের ব্যাপারে দারুণ উৎসাহী। আমি ঢুকতেই বললো, চলো চলো, যাবে না স্নানে? বললাম, আজ তুমি সমুদ্রে নামলে খুব কষ্ট হবে। জেনি অবাক হয়ে বললো, কেন? কষ্ট হবে কেন? বললাম, কাল রাতে যা যুদ্ধ করেছো, নুলছাল উঠে গেছে তো, লবন জল লাগলে জ্বালা করবে। জেনি বললো, তা খারাপ বললো নি, টয়লেট করতে গিয়েও জ্বালা করছিলো কাল! তারপর বললো, নুনজলে শুনেছি তাড়াতাড়ি ক্ষত শুকিয়েও যায়, জলদি সারিয়ে না নিলে যুদ্ধে লড়াই করা যাবে না সমানে সমানে। আমি হাসতে হাসতে বললাম, তুমি যাও, আমি একটু পরে আসছি। জেনি চোখ ছোট করে বললো, শুভশ্রীদিকে নিয়ে যাবে বুঝি? আমি বললাম, বুদ্ধিমতি মেয়েদের কাছ থেকে কিছুই লুকানো যায় না। জেনি চোখ মেরে বুড়ো আঙুল উঁচিয়ে থামস্ আপ দেখিয়ে বেরিয়ে গেলো। আমি মোবাইল অন করে দেখি আরুশী অনেক মেসেজ করেছে। সবই কাল সন্ধ্যের প্রসঙ্গ। কতোটা অস্থির হয়ে আছে তার বিভিন্ন বর্ননা।
আমি লিখলাম, দুপুরের পরে মোবাইলে নজর রেখো। আমি বললেই চারতলায় রুম নম্বর ৪১১ তে চলে আসবে। সামনের লিফট ব্যবহার করবে না, পিছনের লিফটে উঠে ডান দিকের প্রথম ঘর। নজর রাখার কথা বলার দরকার ছিলো না। এখন ছেলেমেয়েদের একটা চোখ থাকে মোবাইলে অন্যটা জগতে। পনেরো সেকেন্ডের ভিতর উত্তর এলো..... আচ্ছা, উমমমমাহ্!
নীচে এসে দেখি অনেকেই ব্যস্ততার সাথে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে চলেছে সমুদ্রে। মেয়েদের হাসি আর গল্পগাছায় মুখরিত চারদিক। কিন্তু শুভশ্রীকে কোথাও দেখতে পেলাম না। আমার চোখ তাকেই খুঁজছে। এমন সময় দেখলাম শাওলী আর রেখা ম্যাডাম নেমে আসছে। সোজা আমার সামনে এসে রেখা ম্যাম জিজ্ঞেস করলো, কি ব্যাপার? আপনি যাননি? বললাম, বাথরুমে ছিলাম, জেনি নীচে চলে এসেছে। কিন্তু তাকে দেখতে পাচ্ছি না। পাশ থেকে একটা মেয়ে বললো, জেনি ম্যাডাম তো অদিতি ম্যাডামের সাথে অনেক্ষন হলো চলে গেছে। রেখা বললো, নিন, সে আগেই চলে গেছে, আগের জন্মে বোধহয় মেয়েটা সামুদ্রিক প্রাণী ছিলো, জল থেকে উঠতেই চায় না। যান, যান, খুঁজে দেখুন, হারিয়ে না যায়। আমি বললাম, সামুদ্রিক প্রাণী সমুদ্রে হারাবে না, হারালে এই কচ্ছপ ঠিক খুঁজে বের করবে।
[/HIDE]