What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

দ্বীন প্রতিষ্ঠায় যুবসমাজের ভূমিকা (4 Viewers)

arn43

Co-Admin
Staff member
Co-Admin
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,620
Messages
122,486
Credits
312,732
DVD
Whiskey
SanDisk Sansa
SanDisk Sansa
Computer
Glasses sunglasses
দ্বীন প্রতিষ্ঠায় যুবসমাজের ভূমিকা

এ পৃথিবীতে মানুষের জীবনকে মোটামুটি তিনটি স্তরে বিভক্ত করা যায়। শৈশব, কৈশোর ও বার্ধক্য। শৈশব ও কৈশোর অবস্থায় তেমন কোন সুষ্ঠু চিন্তার বিকাশ ঘটে না। পক্ষান্তরে বার্ধক্য অবস্থায় আবার চিন্তা শক্তির বিলোপ ঘটে। কিন্তু যৌবনকাল এ দুইয়ের ব্যতিক্রম। যৌবনকাল মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় বা সম্পদ। এ সময় মানুষের মাঝে বহুমুখী প্রতিভার সমাবেশ ঘটে। যৌবনকালে মানুষের চিন্তাশক্তি, ইচ্ছা শক্তি, মননশক্তি, কর্মশক্তি, প্রবলভাবে বৃদ্ধি পায়। এক কথায় এ সময় মানুষের প্রতিভা, সাহস, বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি গুণের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে। এ সময়েই মানুষ অসাধ্য সাধনে আত্মনিয়োগ করতে পারে। যৌবনের তরতাজা রক্ত ও বাহুবলে শত ঝড়-ঝাঞ্ঝা উপেক্ষা করে বীর বিক্রমে সামনে অগ্রসর হয়। এ বয়সে মানুষ সাধারণত পূর্ণ সুস্থ ও অবসর থাকে। তাই এটাই হচ্ছে আল্লাহর পথে নিজেকে কুরবানীর উপযুক্ত সময়। ডাঃ লুৎফর রহমান বলেন, ‘গৃহ এবং বিশ্রাম বার্ধক্যের আশ্রয়। যৌবনকালে পৃথিবীর সর্বত্র ছুটে বেড়াও, রত্নমাণিক্য আহরণ করে সঞ্চিত কর, যাতে বৃদ্ধকালে সুখে থাকতে পার’। জর্জ গ্রসলিভ বলেন, ‘যৌবন যার সৎ ও সুন্দর এবং কর্মময় তার বৃদ্ধ বয়সকে স্বর্ণযুগ বলা যায়’। তাই যৌবনকালকে নে‘মত বলে গণ্য করা যায়।
এই অমূল্য নে‘মতের যথাযথ সংরক্ষণ এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করা সকল মুসলিম যুবকের নৈতিক ও ঈমানী দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) মূল্যবান উপদেশ দিয়ে গেছেন। রাসূল (ছাঃ) জনৈক ব্যক্তিকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন,
اغْتَنِمْ خَمْسًا قَبْلَ خَمْسٍ : شَبَابَكَ قَبْلَ هَرَمِكَ، وَصِحَّتَكَ قَبْلَ سَقَمِكَ، وَغِنَاكَ قَبْلَ فَقْرِكَ، وَفِرَاغَكَ قَبْلَ شُغْلِكَ، وَحَيَاتَكَ قَبْلَ مَوْتِكَ-

‘পাঁচটি বস্ত্তকে পাঁচটি বস্ত্তর পূর্বে গুরুত্ব দিবে এবং মূল্যবান মনে করবে।
(১) বার্ধক্যের পূর্বে যৌবনকে
(২) অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতাকে
(৩) দরিদ্যতার পূর্বে সচ্ছলতাকে
(৪) ব্যস্ততার পূর্বে অবসরকে এবং
(৫) মৃত্যুর পূর্বে জীবনকে’।

(তিরমিযী, মিশকাত হা/৫১৭৪; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৩৩৫৫; ছহীহুল জামে‘ হা/১০৭৭।)
 
উল্লেখিত হাদীছে বার্ধক্যের পূর্বে যৌবনকালকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং যুব সম্প্রদায়কে তাদের যৌবনকালকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে এবং স্বীয় বিবেককে সদা জাগ্রত রাখতে হবে। যাতে করে কোন অন্যায়-অনাচার, পাপাচার-দুরাচার ইত্যাদি ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড যৌবনকালকে কলঙ্কিত করতে না পারে। অপরদিকে ন্যায়ের পথে, কল্যাণের পথে যৌবনের উদ্যোগ ও শক্তিকে উৎসর্গ করতে হবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
انْفِرُوْا خِفَافاً وَثِقَالاً وَجَاهِدُوْا بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِنْ كُنتُمْ تَعْلَمُوْنَ.
‘তোমরা তরুণ ও বৃদ্ধ সকল অবস্থায় বেরিয়ে পড় এবং তোমাদের মাল ও জান দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ কর। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম পন্থা, যদি তোমরা বুঝ’
(তওবা ৪১)
মানব জীবনের তিনটি কালের মধ্যে যৌবনকাল নিঃসন্দেহে সর্বশ্রেষ্ঠ। মানুষের জীবনের সকল কল্যাণের সময়, আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় হবার সময়, নিজেকে পুণ্যের আসনে সমাসীন করার সময় এ যৌবনকাল। এ কালের উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষ সকলের কাছে সম্মানের পাত্র হয়। আবার একালই মানুষের জীবনে নিয়ে আসে কলংক-কালিমা, নিয়ে আসে অভিশাপ, পৌঁছে দেয় আল্লাহর আযাবের দ্বারপ্রান্তে। তাই যৌবনকাল মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। ক্বিয়ামতের দিন এই যৌবনকাল সম্পর্কে মানুষকে জওয়াবদিহি করতে হবে। হাদীছে এসেছে,
عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لاَ تَزُوْلُ قَدَمُ ابْنِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عِنْدِ رَبِّهِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ خَمْسٍ عَنْ عُمُرِهِ فِيْمَ أَفْنَاهُ وَعَنْ شَبَابِهِ فِيْمَ أَبْلاَهُ وَمَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيْمَ أَنْفَقَهُ وَمَاذَا عَمِلَ فِيْمَا عَلِمَ-

ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন আদম সন্তানের পা তার প্রভুর সম্মুখ থেকে একটুকুও নড়াতে পারবে না, যতক্ষণ না তাকে পাঁচটি প্রশ্ন করা হবে।
(১) সে তার জীবনকাল কি কাজে শেষ করেছে,
(২) তার যৌবনকাল কোন কাজে নিয়োজিত রেখেছিল,
(৩) তার সম্পদ কোন উৎস থেকে উপার্জন করেছে,
(৪) কোন কাজে তা ব্যয় করেছে এবং
(৫) যে জ্ঞান সে অর্জন করেছে, তার উপর কতটা আমল করেছে’।

(তিরমিযী হা/২৪১৬, ‘ক্বিয়ামত’ অধ্যায়।)
 
সাত শ্রেণীর লোককে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আরশের নীচে ছায়া দান করবেন। যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না। তাদের মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণী হ’ল ঐ যুবক যে, তার যৌবনকাল আল্লাহর ইবাদতে কাটিয়েছে। যৌবনের সকল কামনা-বাসনা, সুখ-শান্তির ঊর্ধ্বে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করাকেই সে কেবলমাত্র কর্তব্য মনে করত। শরী‘আত বিরোধী কোন কর্ম যেমন- শিরক, বিদ‘আত, যেনা-ব্যভিচার, সূদ-ঘুষ, লটারী-জুয়া, চুরি-ডাকাতি, লুটতরাজ, সন্ত্রাসী কোন অপকর্মে সে কখনো অংশগ্রহণ করত না। এইরূপ দ্বীনদার চরিত্রবান আল্লাহ ভীরু যুবককেই আল্লাহ পাক আরশের নীচে ছায়া দান করবেন।
হাদীছে এসেছে,
عن أَبي هريرة رضي الله عنه، عن النَّبيّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ : سَبْعَةٌ يُّظِلُّهُمُ اللهُ فِيْ ظِلِّهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إلاَّ ظِلُّهُ : إمَامٌ عَادِلٌ، وَشَابٌّ نَشَأَ فِيْ عِبَادَةِ الله عز وجل، وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ بِالمَسَاجِدِ، وَرَجُلاَنِ تَحَابّا في اللهِ اجْتَمَعَا عَلَيهِ وتَفَرَّقَا عَلَيهِ، وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأةٌ ذَاتُ حُسْنٍ وَجَمَالٍ، فَقَالَ : إنِّي أخَافُ الله، وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ، فَأخْفَاهَا حَتَّى لاَ تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ، وَرَجُلٌ ذَكَرَ الله خَالِياً فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘সাত শ্রেণীর লোককে আল্লাহ তাঁর ছায়া দিবেন; যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না।
(১) ন্যায়পরায়ণ শাসক,
(২) সেই যুবক, যে আল্লাহর ইবাদতে বড় হয়েছে,
(৩) সে ব্যক্তি, যার অন্তর সর্বদা মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে,
(৪) এমন দুই ব্যক্তি, যারা আল্লাহর ওয়াস্তে পরস্পরকে ভালবাসে। আল্লাহর ওয়াস্তে উভয়ে মিলিত হয় এবং তাঁর জন্যই পৃথক হয়ে যায়,
(৫) এমন ব্যক্তি, যাকে কোন সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারী আহবান করে আর সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি এবং
(৬) ঐ ব্যক্তি, যে গোপনে দান করে। এমনকি তার বাম হাত জানতে পারে না, তার ডান হাত কি দান করে।
(৭) এমন ব্যক্তি, যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে আর তার দুই চক্ষু অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকে’।

(বুখারী, হা/১৪২৩, ৬৩০৮; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৭০১।)
সুতরাং যুবকদের শ্রেষ্ঠ সময়কে আল্লাহর রাস্তায় ও তাঁর দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে ব্যয় করতে হবে।
 
যুবকদের মাঝে দু’টি বৈশিষ্ট্য আছে : যেমন কোন কিছু প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুবকরা যেমন বদ্ধ পরিকর, তেমনি কোন কিছু ভাঙ্গনেও তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এদের শক্তি হচ্ছে এদের আত্মবিশ্বাস। এরা যৌবনের তেজে তেজোদ্দীপ্ত। তাই জাতীয় কল্যাণ প্রতিষ্ঠাও এদের কাছে অসম্ভব নয়। এদের দুর্দমনীয় শক্তিকে ন্যায়ের পথে চালিত করলে ন্যায় প্রতিষ্ঠা হওয়া যেমন মোটেই অসম্ভব নয়, তেমনি অন্যায়ের পথে পরিচালিত করলে অন্যায় প্রতিষ্ঠা হওয়াও মোটেই অস্বাভাবিক নয়। যুবশক্তিকে তাই ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধে কাজে লাগাতে হবে।

সংগ্রাম যৌবনের ধর্ম একথা সর্বজন বিদিত। যুবমন সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ। যুবমন সমাজে সংগ্রাম করতে চায় সকল অন্যায় ও অধর্মের বিরুদ্ধে, অসত্য ও অসুন্দরের বিরুদ্ধে। অন্যায়ের প্রতিবাদ, মযলূমের পক্ষে জিহাদ, নিপীড়িতের পক্ষে আত্মত্যাগ নবীনেরা যতটুকু করতে পারে, প্রবীণেরা ততটুকু পারে না। নির্যাতিত মানুষের ব্যথায় তরুণেরা ব্যথিত হয় বেশী। নিজেদের ব্যক্তিগত ক্ষতি স্বীকার করেও তারা সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যায়। যুবমন সংগ্রামী নেতৃত্বের পিছনে কাতারবন্দী হয় এবং নিজেরা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়। তাই দ্বীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাগ্রে যুবকদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে।
 
আজকের সমাজ এক ভয়াবহ পরিণতির দিকে ধাবমান। ব্যক্তি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের কোথাও সুনীতি নেই। যার কারণে ভ্রাতৃঘাতি যুদ্ধ, হত্যা, লুণ্ঠন, যুলুম-অত্যাচার প্রভৃতি পাপাচার বিশৃংখলায় দেশ আজ অবক্ষয়ের প্রান্তসীমায় পৌঁছে গেছে। জাতির ভাগ্যাকাশে এখন দুর্যোগের ঘনঘটা। সামাজিক অবক্ষয়, সাংস্কৃতিক দেউলিয়াত্ব, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অর্থনৈতিক সংকটে জাতীয় জীবন সংকটাপন্ন। সামাজিক জীবনে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি জাহেলিয়াতের যুগকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। বেকারত্বের অভিশাপে দেশে হতাশা ও নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিকৃত রুচির সিনেমা, রেডিও-টিভির অশালীন অনুষ্ঠান, অশ্লীল চিত্র জাতীয় যুবচরিত্রের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করছে। নারী প্রগতির নামে নানাবিধ বেহায়াপনার উৎস খুলে দেওয়া হয়েছে। দেশের এ যুগ সন্ধিক্ষণের ঘোর অমানিশায় আজকের সমাজ তাকিয়ে আছে এমন একদল যুবকের প্রতি, যারা হবে মানবতার মুক্তির দূত, শান্তি পথের দিশারী, ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠায় আপোষহীন মহামানব রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পদাংক অনুসারী এবং নির্ভেজাল তাওহীদের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় নিজেদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতে দ্বিধাহীন। ইসমাঈল হোসেন সিরাজী তাদের কথাই বলেছেন এভাবে,

আশার তপন নব যুবগণ

সমাজের ভাবী গৌরব কেতন

তোমাদের পরে জাতীয় জীবন

তোমাদের পরে উত্থান পতন

নির্ভর করিছে জানিও সবে।
 
আল্লাহর মনোনীত একমাত্র জীবন বিধান ইসলামের প্রচার-প্রসার ও প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে যুব সমাজের ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমেই। নিম্নে আমরা এ সম্পর্কিত কিছু ঘটনা তুলে ধরব যেখানে ভেসে উঠবে ইতিহাসের সেরা তরুণদের জীবন কাহিনী; যা আমাদের অনুপ্রাণিত করবে এক নতুন জীবনযাত্রায়।

পৃথিবীর ইতিহাসে সংঘটিত প্রথম হত্যাকান্ডের ঘটনা থেকে আমরা জানতে পারি যে, হাবীল সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর জীবন উৎসর্গ করল। কিন্তু হক থেকে বিচ্যুত হ’ল না। পক্ষান্তরে কাবীল শয়তানের প্ররোচনায় আপন ভাইকে হত্যা করে পাপীদের অন্তর্ভুক্ত হ’ল। মানবেতিহাসে প্রথম হত্যাকারী হিসাবে পরিচিত হ’ল।

ইবরাহীম (আঃ)-এর ৮৬ বৎসর বয়সে বিবি হাজেরার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন ইসমাঈল। ইসমাঈল (আঃ)-কে আল্লাহর রাহে কুরবানী দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘যখন সে (ইসমাঈল) তার পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হ’ল তখন তিনি (ইবরাহীম) তাকে বললেন, হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি। অতএব বল, তোমার মতামত কি? ছেলে বলল, হে আববা! আপনাকে যা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা প্রতিপালন করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন’
(ছাফফাত ১০২)। আজকের দিনে প্রতিটি যুবক যদি ইসমাঈল (আঃ)-এর মত হ’তে পারে, তাহ’লেই পৃথিবীতে আবার নেমে আসবে আল্লাহর রহমতের ফল্গুধারা।

পৃথিবীর সুন্দরতম মানুষ ইউসুফ (আঃ)-এর পবিত্র চরিত্রে কালিমা লেপন করার হীন ষড়যন্ত্র করেছিল যুলেখা। সাথে সাথে ইউসুফ (আঃ)-কে কারাগারে প্রেরণ করা হ’ল। ইউসুফ (আঃ) কারাবরণ করলেন। কিন্তু নিজের চারিত্রিক সততা-নিষ্কলুষতা অটুট রাখলেন। সুন্দরী রমণীর হাতছানি উপেক্ষা করে আল্লাহর সন্তুষ্টিই তিনি কামনা করলেন।
 
দ্বীনে হক্বের জন্য কুরআনে বর্ণিত আছহাবে উখদূদের ঐতিহাসিক ঘটনায় বনী ইসরাঈলের এক যুবক নিজের জীবন দিয়ে জাতিকে হক্বের রাস্তা প্রদর্শন করে গেলেন। ছোহায়েব রূমী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হ’তে এ বিষয়ে যে দীর্ঘ হাদীছ বর্ণনা করেছেন। সংক্ষেপে তা এই যে, প্রাক-ইসলামী যুগের জনৈক বাদশাহর একজন জাদুকর ছিল। জাদুকর বৃদ্ধ হয়ে গেলে তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য একজন বালককে তার নিকটে জাদুবিদ্যা শেখার জন্য নিযুক্ত করা হয়। বালকটির নাম আব্দুল্লাহ ইবনুছ ছামের। তার যাতায়াতের পথে একটি গীর্জায় একজন পাদ্রী ছিল। বালকটি দৈনিক তার কাছে বসত। পাদ্রীর বক্তব্য শুনে সে মুসলমান হয়ে যায়। কিন্তু তা চেপে রাখে। একদিন দেখা গেল যে, বড় একটি হিংস্র জন্তু (সিংহ) রাস্তা আটকে দিয়েছে। লোক ভয়ে সামনে যেতে পারছে না। বালকটি মনে মনে বলল, আজ আমি দেখব, পাদ্রীর দাওয়াত সত্য, না জাদুকরের দাওয়াত সত্য। সে একটি পাথরের টুকরা হাতে নিয়ে বলল, ‘হে আল্লাহ! যদি পাদ্রীর দাওয়াত তোমার নিকটে জাদুকরের বক্তব্যের চাইতে অধিক পসন্দনীয় হয়, তাহ’লে এই জন্তুটাকে মেরে ফেল, যাতে লোকেরা যাতায়াত করতে পারে’। অতঃপর সে পাথরটি নিক্ষেপ করল এবং জন্তুটি সাথে সাথে মারা পড়ল। এখবর পাদ্রীর কানে পৌঁছে গেল। তিনি বালকটিকে ডেকে বললেন, ‘হে বৎস! তুমি আমার চাইতে উত্তম। তুমি অবশ্যই সত্বর পরীক্ষায় পড়বে। যদি পড়ো, তবে আমার কথা বলো না’। বালকটির কারামত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। তার মাধ্যমে অন্ধ ব্যক্তি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেত। কুষ্ঠরোগী সুস্থ হ’ত এবং অন্যান্য বহু রোগী ভাল হয়ে যেত।

ঘটনাক্রমে বাদশাহর এক সভাসদ ঐ সময় অন্ধ হয়ে যান। তিনি বহুমূল্য উপঢৌকনাদি নিয়ে বালকটির নিকটে আগমন করেন। বালকটি তাকে বলে, ‘আমি কাউকে রোগমুক্ত করি না। এটা কেবল আল্লাহ করেন। এক্ষণে যদি আপনি আল্লাহর উপরে বিশ্বাস স্থাপন করেন, তাহ’লে আমি আল্লাহর নিকটে দো‘আ করব। অতঃপর তিনিই আপনাকে সুস্থ করবেন’। মন্ত্রী ঈমান আনলেন, বালক দো‘আ করল। অতঃপর তিনি চোখের দৃষ্টি ফিরে পেলেন। পরে রাজদরবারে গেলে বাদশাহর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে, আমার পালনকর্তা আমাকে সুস্থ করেছেন। বাদশাহ বলেন, তাহ’লে আমি কে? মন্ত্রী বললেন, ‘না। বরং আমার ও আপনার পালনকর্তা হ’লেন আল্লাহ’। তখন বাদশাহর হুকুমে তার উপর নির্যাতন শুরু হয়। এক পর্যায়ে তিনি উক্ত বালকের নাম বলে দেন। বালককে ধরে এনে একই প্রশ্নের অভিন্ন জবাব পেয়ে তার উপরেও চালানো হয় কঠোর নির্যাতন। ফলে এক পর্যায়ে সে পাদ্রীর কথা বলে দেয়। তখন বৃদ্ধ পাদ্রীকে ধরে আনলে তিনিও একই জওয়াব দেন। বাদশাহ তাদেরকে সে ধর্ম ত্যাগ করতে বললে তারা অস্বীকার করেন। তখন পাদ্রী ও মন্ত্রীকে জীবন্ত অবস্থায় করাতে চিরে তাদের মাথাসহ দেহকে দু’ভাগ করে ফেলা হয়। এরপর বালকটিকে পাহাড়ের চূড়া থেকে ফেলে দিয়ে মেরে ফেলার হুকুম দেয়া হয়। কিন্তু তাতে বাদশাহর লোকেরাই মারা পড়ে। অতঃপর তাকে নদীর মধ্যে নিয়ে নৌকা থেকে ফেলে দিয়ে পানিতে ডুবিয়ে মারার হুকুম দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও বালক বেঁচে যায় ও বাদশাহর লোকেরা ডুবে মরে। দু’বারেই বালকটি আল্লাহর নিকটে দো‘আ করেছিল, ‘হে আল্লাহ! এদের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করুন যেভাবে আপনি চান’।
 
সমাজের এসব বিসৃঙ্খলা দেখে ভাবি সব-ছেড়ে জঞ্জলে চলে যাবো। কিন্তু হায় জঞ্জল কোথায় সব-কেটে সাফ করে-ফেলেছে ৷ সালা মরেও শান্তি নেই৷
 

Users who are viewing this thread

Back
Top