What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ছিন্নমূল /কামদেব (4 Viewers)



পঞ্চত্রিংশৎ অধ্যায়



সি
ধু সাইকেল চালাচ্ছে আমি পিছনে বসে।খোকনদা এখন আর মাংসের দোকানে বসে না।কর্মচারী দিয়ে দোকান চালায়।এখন একেবারে বদলে গেছে।সিধু বকে যাচ্ছে আমি কোনো কথা বলছি না।মায়ের সঙ্গে দেখা হলেও এভাবে দেখব ভাবিনি।প্রতিটা দিন যেন এক-একটা বইয়ের পাতা।একটা পৃষ্ঠা পড়ি আর জীবন সম্পর্কে কতকিছু জানতে পারি।বরেনদা একটা কবিতা শুনিয়েছিলেন নদী পাহাড় সাগর সমগ্র প্রকৃতি আমাদের শিক্ষা দেয়।কেউ গ্রহণ করতে পারে কেউ পারে না।খোকনদা মাকে ধরিত্রীর সঙ্গে তুলনা করেছে।সত্যি শেখার শেষ নেই।
সিধুর দোকানের কাছে আসতে আমি নেমে পড়ি।বললাম,এটুকু আমি হেটে চলে যাব।তোকে আর যেতে হবে না।
কাল সকাল নটার মধ্যে চলে যাস।
বাসায় ফিরে আবার রান্না করা তার চেয়ে বরং বাজার থেকে রুটি তরকারি কিনে নিয়ে যাই।গোটা চারেক রুটি আর আলুর দম কিনে বাসায় ফিরে আসলাম।দরজা খুলে ঘরে ঢূকে পোশাক বদলে খাটে শুয়ে পড়লাম।হাসপাতালের দৃশ্যটা ভেসে উঠল।স্বাভাবিকভাবে খেতে পারছে না তাই স্যালাইন দিতে হয়েছে।ভূপেন শেঠের বাড়ী রান্না করতে করতে মা জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায়।তখন চিৎকার চেচামেচি হতে লোক জড়ো হয়।খোকনদা খবর পেয়ে মাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়।চিকিৎসায় মায়ের জ্ঞান ফিরলেও পুরোপুরি সুস্থ হন নি।
এই বয়সে পরিশ্রমের ধকল নিতে পারেনি।নিজেকে অপরাধী মনে হতে লাগল।আমার জন্যই তো মায়ের এত খাটাখাটনী।
সমস্ত রকম শিক্ষার আলাদা মূল্য আছে।পরীক্ষা দিলে আমি হয়তো গ্রাজুয়েট হয়ে যাব।কিন্তু একজন ছুতোর মিস্ত্রী কাঠ খোদাই করে যেমন নক্সা প্রস্তুত করে আমি কি তা পারব? অথচ এদেশে একজন ভাল মাইনের কেরাণি একজন ছুতোর মিস্ত্রীকে নীচু নজরে দেখে।বাইরে কে যেন ডাকছে মনে হল।বেরিয়ে দেখলাম গিরিদি দাঁড়িয়ে আছে।বললাম এসো গিরিদি।
বারান্দায় বসতে বসতে গিরিদি বলল,মনু আমি তোমার রান্না করে দিয়ে যাব?
আমি রুটি কিনে এনেছি।আজ থাক।
হাসপাতালে গেছিলাম তোমারে দেখলাম নাতো?
আমি একটু দেরী করে গেছিলাম।
মনু কোনো দরকার হলি বলবা লজ্জা করবা না।
গিরিদি তুমি কেমন আছো?
কেমনে ভাল থাকি বলো।সারাক্ষন ভগবানরে ডাকতিছি ভগবান তাড়াতাড়ি বৌদিরে বাড়ীতে ফিরোয় এনি দাও।আজ নিয়ে দুইদিন হয়ে গেল এখনো সালান দেচ্ছে।তুমার মামা আসতিছে আমি আসি।কোনো দরকার হলি বলবা।
সুবীরমামা সাইকেল নিয়ে হাজির হল।গিরিদি ঠিক নজর করেছে।মামা বসতে বসতে বলল,ওই মেয়েছেলেটা কি বলছিল?
মায়ের কাছে আসতো।জিজ্ঞেস করল রাতে রান্না করে দিয়ে যাবে কিনা?
খবরদার এদের একদম প্রশ্রয় দিবি না।জল খাওয়া তো।
জল এনে দিতে গেলাসে চুমুক দেবার আগে জিজ্ঞেস করল,কখন এসেছিস?
লালগোলা ধরে সন্ধ্যে নাগাদ।
ঢক ঢক করে জল খেয়ে বলল,হাসপাতালে গেছিলি?
হ্যা এইমাত্র ফিরলাম।
কাতান খোকন কিছু বলছিল?
বলল কাল সকাল নটার মধ্যে হাসপাতালে পৌছাতে এমআরআই করাতে হবে।
মামা ফোলিও ব্যাগ খুলতে খুলতে বলল,এই বয়সে এত ধকল পোষায়।ব্যাগ থেকে একগোছা টাকা বের করে এগিয়ে দিয়ে বলল,দেখতো কত আছে?
টাকা গুনতে গুনতে কাকুর কথা মনে পড়ল।মামা সম্পর্কে কাকুর ধারণা ঠিক নয়।গুনে বললাম, সাড়ে-চার হাজার।
তোর কাছে রেখে দে কাল লাগবে।
খোকনদা বলছিল চার হাজারের কথা।
ওকী ডাক্তার নাকি?কিযে লেখাপড়া করিস।রেখে দে কোথায় কি লাগে।কাল নটার মধ্যে চলে যাবি আমার একটু দেরী হবে।
মামা চা খাবে?
চা করেছিস?
খেলে করতাম।
দরকার নেই।তোর পরীক্ষা তো এসে গেল।
পরীক্ষা এসে গেলেও কিছু করার নেই। মামা চলে গেল।রাত হয়েছে সকাল সকাল খেয়ে শুয়ে পড়া যাক।কাল সকালে অনেক কাজ।কলকাতায় এখন যাওয়ার প্রশ্নই নেই।মাকে ভালোয় ভালোয় সুস্থ করে বাড়ীতে এনে ওসব ভাবা যাবে। রুটিগুলো চামড়ার মত শক্ত হয়ে গেছে।ঝোলে ভিজিয়ে নরম করে চিবোতে থাকে।এম আর আই কথাটা শুনেছে কিন্তু সেটা কি ঠিক জানা নেই।এই পরীক্ষা করে কি জন্য তাও জানে না।এক্স-রে যেমন বাইরে থেকে ভিতরে ছবি তুলে ভেতরের অবস্থা বোঝে ওই রকম এম আর আই করে সেরকম কিছু জানা যায় হয়তো।
রাতে শুয়ে সকালের অপেক্ষায়,ঘুম আসে না চোখে।হাসপাতাল হতে সুস্থ হয়ে ফিরলে বিশ্রাম দরকার।লোকের বাড়ী কাজ করতে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।পড়াশোনা নিয়ে ভাবছে না।কত মানুষ কত রকম স্বপ্ন দেখে সব স্বপ্ন কি বাস্তবায়িত হয়?মামাকে বলে কোনো একটা কাজ জুটিয়ে নেবে।শুভ নন্দিতারা ভাববে কলেজে আসছে না গেল কোথায়?একদিন ওরা বুঝতে পারবে সুখদারঞ্জন আর ক্লাসে আসবে না। সিদ্ধেশ্বর পাস করে দোকানে বসে আর পড়ল না।তারও আর পড়া হল না।বছর দুয়েকের মত কলেজে ক্লাস করলেও দুজনেই উচ্চ মাধ্যমিক পাস। এই রকম ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে এক সময়।
ভালভাবে আলো ফোটার আগেই ঘুম ভেঙ্গে গেল।তাড়াতাড়ি স্নান সেরে নিল।কত দেরী হবে কে জানে।স্নান করে তৈরী হয়ে হাসপাতলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল।অফিসে গিয়ে দেখা করে নিজের পরিচয় দিতে ওরা কাগজ পত্র দিয়ে Diagnostic Centre-এ যেতে বলল।কাছেই সেণ্টার।গিয়ে কাগজ দেখাতে চার হাজার টাকার বিল ধরিয়ে দিল।টাকা জমা দিয়ে অপেক্ষা করছি একটু পরেই স্ট্রেচারে করে মাকে নিয়ে ভিতরে চলে গেল।
বাইরে একটা বেঞ্চে বসে অপেক্ষা করছি।মাকে কোথায় নিয়ে গেল।অস্থির অস্থির লাগছে।মিনিট পনেরো হয়ে গেল।এয়াপ্রোন পরা একজনকে দেখে উঠে গিয়ে জিজ্ঞেস করে জানা গেল।এম আর আই করার আগে একটা ওষুধ খাওয়ানো হয় তাতে ভিতরটা রঙীন হয়।মা ওষুধ খেতে পারছে না।সেজন্য ডাক্তারকে খবর দেওয়া হয়েছে।একটা ফিয়াট গাড়ী এসে দাড়াতে একজন মহিলা নামলেন।জানা গেল উনি ডাক্তার।কিছুক্ষন পর ক্যাশ কাউণ্টার হতে আমাকে ডেকে জানালো,ওষুধ ছাড়াই করা হচ্ছে।আমাকে এক হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হল।
কি হচ্ছে না হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না।দরজা দিয়ে সুবিমামাকে ঢুকতে দেখে এগিয়ে গেলাম।
হয়ে গেছে?
না এখন হবে।মামাকে ব্যাপারটা বললাম।
তোকে অত ভাবতে হবে না।ডাক্তারবাবুরা যা করছে জেনে বুঝেই করছে।ওই তো দিদি।
দেখলাম স্ট্রেচারে শুইয়ে মাকে গাড়ীতে তুলে হাসপাতালে নিয়ে গেল।নিঃসাড়ে শুয়ে আছে নড়াচড়া করছে না।কলকাতা থেকে এসে অবধি মার সঙ্গে কথা বলতে পারিনি।
মামা এসে বলল,তুই খেয়েছিস?
না গিয়ে খাবো।
এম আর আই হয়ে গেছে।বেডে দিয়েছে একবার গিয়ে দেখে যা বাড়ী যা।
আমি একটু ইতস্তত করি।মামা বলল,তুই থেকে কি করবি যা করার ডাক্তারবাবুরা করছে।
মাকে ছাড়বে কবে?
আমি ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলবো তুই বাড়ী গিয়ে খাওয়া দাওয়া কর।কটা বাজে দেখেছিস?

 
ষষ্ঠত্রিংশৎ অধ্যায়।



গভীর রাত সারা গোপালনগর ঘুমে অচেতন।কয়েকটা ধেড়ে ইদুর গোফ নাড়তে নাড়তে বগানে ঘোরাঘুরি করছে।সাদা সাদা ছেড়া মেঘ আকাশে ভাসতে ভাসতে চলেছে নিরুদ্দেশে।মাঝে মাঝে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে চাঁদ। রাত চরা পাখিরা বেরিয়ে পড়েছে শিকারের সন্ধানে।গাছের পাতায় জমাট বেধে আছে গাঢ় অন্ধকার।সুখদার চোখে ঘুম নেই। এলোমেলো নানা চিন্তা ভীড় করে আসছে মনে।ডিসচার্জের ব্যাপারে মামা ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলবে বলেছিল তাকে কিছু জানায় নি।কলকাতা থেকে মনু ফিরে এসেছে মা কি জানে?সকালে উঠে লোকের বাড়ি রান্না করতে চলে যায়।ফিরে এসে নিজেদের রান্না,এই বয়সে এত ধকল সহ্য হয়।পাশ ফিরে শুয়ে ঘুমোবার চেষ্টা করে।বাবার সময় ডাক্তার মিত্র অনেক করেছিলেন।এখন বয়স হয়ে গেছে বাইরে কল এয়াটেণ্ড করেন না।ড মিত্রর মেয়েকে বাবা পড়াতো।এমনিতে বাবা প্রাইভেট ট্যুইশন করে না। প্রায় প্রতি সপ্তাহে গ্রামে এসেছে পাঞ্চালীর সঙ্গে দেখা হয় নি।কোথায় উধাও হল কে জানে। সিধুরা হয়তো জানতে পারে।তার উপর কেন রাগ কে জানে।
স্বপ্ন তো মানুষ সবাই দেখে।সব স্বপ্ন কি বাস্তবায়িত হয়।সত্যকে অস্বীকার করতে যাওয়া এক বিড়ম্বনা।কবি বলেছেন,ভাল মন্দ যাহাই আসুক সত্যরে লও সহজে। বাবা একদিন সাজানো ঘর বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিল এপারে।তার জন্য কোনো হা-হুতাশ করতে দেখেনি। এলো মেলো ভাবতে ভাবতে সুখ একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল।মাকে আর কিছুতেই কাজ করতে দেবে না।অনেক হয়েছে পড়াশুনা। সুবিমামাকে বলে একটা কাজ জুটিয়ে নেবে তাতে দুটি প্রাণির চলে যাবে অনায়াসে।মামা তো বলেইছিল কাজের কথা।অনেক করছে সুবিমামা।মামীটা যেন কি রকম।ভেবেছিল হাসপাতালে দেখতে আসবে,আসেনি।ভাবতে ভাবতে শেষরাতের দিকে ঘুমিয়ে পড়ল সুখদা রঞ্জন।
ভোরের আলো ফুটতে শুরু হয় পাখির কলরব।বাইরে কাদের ডাকাডাকিতে ঘুম ভেঙ্গে উঠে বসল সুখ।দরজা খুলে বাইরে এসে দেখল বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে একটা ছেলে।ছেলেটি খোকনদার দলের মনে হল।
কমরেড খোকন দা আপনাকে ডাকছে।
ছেলেটির চোখ মুখ দেখে বুকের মধ্যে ছ্যৎ করে উঠল।সুখ বলল,মা নেই?
ছেলেটি কোনো উত্তর দিল না।সুখ ঘরে ঢুকে দ্রুত পোশাক বদলে বাইরে এসে দেখল সুবিমামাও এসেছে।তাকে দেখে মনুরে দিদি নেই বলে হাউ হাউ করে কাদতে শুরু করল।বাইক নিয়ে দাঁড়ানো ছেলেটি বিব্রত বোধ করে।সুখ বলল,আঃ মামা কি হচ্ছে?কাদলে কি যে গেছে ফিরে আসবে।
দাদা তো আগেই গেছে দিদিও চলে গেল রে-এ-এ--।
সুখ বাইকের পিছনে চাপতে ছেলেটি বাইকে স্টার্ট করল।সুখ জিজ্ঞেস করে,কখন মারা গেছে?
এই রাত তিনটের কাছাকাছি হবে।
সুখ মনে মনে হিসেব করল যখন সে ঘুমিয়ে পড়েছিল তখনই মা চলে গেছে।দুটো কথা বলার সুযোগ পেল না এই আফশোস চিরকাল থেকে যাবে।পৃথিবীটা বড় শূণ্য মনে হয়।কলকাতায় ছিল জানতো গোপাল্পুরে ফিরলেই মায়ের সঙ্গে দেখা হবে।এখন সারা দেশ তন্ন তন্ন করে খুজলেও কোথাও পাওয়া যাবে না মাকে।
হাসপাতালে পৌছে দেখল সিধু সহ স্কুলের কয়েকজন বন্ধু এসেছে।এক্টু দূরে দাঁড়িয়ে খোকন মণ্ডল।একটা খাটিয়া ফুল দিয়ে সাজানো।সিধু এসে বলল,মাইরি মাসীমা এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে ভাবতে পারিনি।
সুখর কথা বলতে ভালো লাগছে না।শূণ্য খাটিয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,মা কোথায়?
বেডেই আছে,আটটার আগে বডি ছাড়বে না।
সুবীর রায় হাসপাতালে পৌছে ভাগ্নেকে দেখে অবাক হয়।কে বলবে ওর মা মারা গেছে।কাছে গিয়ে ভাগ্নের কাধে হাত রাখতে সুখ বলল,আচ্ছা মামা মায়ের ঠিক কি হয়েছিল?
বলব সব বলব।
কয়েকজন স্ট্রেচারে করে সুমনাদেবীর মৃতদেহ নামিয়ে নিয়ে এল।খোকন মণ্ডল এগিয়ে এসে বলল,সাবধানে সাবধানে।
মৃতদেহ খাটিয়ার উপর শুইয়ে দিতে একটা সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিল।কাধের দুপাশে ফুলের তোড়া দিয়ে সাজানো হল।সুগন্ধি ধুপ জ্বেলে দিল।ছিটিয়ে দিল অগরুর গন্ধ।নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে থাকে সুখ রঞ্জন।দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। সামনে শায়িত তার মায়ের মৃতদেহ।কোনোদিন চোখ মেলে তাকাবে না।এত লোকজন এক সময় সবাই চলে যাবে নিজ নিজ কাজে।সুখদা তখন একা একেবারে একা।তার আর কেউ থাকল না।
দলবল শ্মশানে গেলেও খোকনদা নিজে যায় নি।স্কুলের কিছু বন্ধুও ছিল।দাহ কার্য সেরে ধুতি কাছা গলায় বাড়ী ফিরল। মামা পরে আসবে বলে পাইকপাড়া চলে গেল।মায়ের ঘরে ঢুকে দেওয়ালে হাত বোলাতে থাকে সুখ।সারা বাড়ীতে এখন সে একা।দেওয়ালে হাত বোলাতে বোলাতে খাটের দিকে নজর পড়তে নিজেকে সামলাতে পারে না,বালিশের উপর আছড়ে পড়ে হাউ-হাউ করে কাদতে থাকে।আটকে থাকা জোয়ারের জল যেন বাধ ভেঙ্গে বেরিয়ে আসে।বাড়ী ফিরে তার জন্য অপেক্ষারত উদবিগ্ন মুখটা আর দেখতে পাবে না।যে মুখটা শত প্রতিকূলতায় তাকে বল ভরসা যোগাতো।এক সময় হুশ হয় বাইরে কে যেন ডাকছে।সুখ উঠে চোখ মুছে বাইরে এসে দেখল গিরিদি।
সারাদিন তো কিছু খাওনি।এগুলো রাখো,ফল খেলি দোষ নেই।
একটা ঠোঙা এগিয়ে দিল।সুখ দেখল দুটো কমলা আর কিছু আঙুর।সুখ বলল তুমি আবার এসব আনতে গেলে কেন?
যা সামিথ্য তাই এনিছি।ভাল মানুষরে ভগবান বেশীদিন রাখে না।আমি আসি অন্ধকার হয়ে আসতিছে।
একটা বাটিতে আঙুরগুলো ধুয়ে সুখ ঘরে এসে বসল।বেশ ক্ষিধে পেয়েছিল।একটা একটা করে আঙুর মুখে দিয়ে ভাবতে থাকে।গিরিবালা লেখাপড়া জানে না মায়ের কাছে মাঝে মাঝে আসত।এমনি আর কোনো সম্পর্ক নেই।সে সারাদিন কিছু খায়নি গিরিবালার কি দায় ছিল।কোন সময়ে কতটুকু করা উচিত যে বোঝে তাকে কি অশিক্ষিত বলা যায়?এইজন্যই মেয়েদের প্রতি সুখর সম্ভ্রমবোধ।গভীর অন্ধকারে এইসব ঘটনা যেন জোনাকির আলো।সকালে কাকু এসে কয়েক কিলো চাল আর সবজি দিয়ে গেলেন।দাড়ালেন না সম্ভবত অফিসে যাবেন।বেলা হল সুখ স্নান করে বারান্দায় ইট পেতে কাঠকুটো জ্বেলে মালসায় দু-মুঠো চাল চাপিয়ে দিল।মালসাগুলো মামা পাঠিয়েছে।কাঠের ধোয়ায় সম্ভবত সুখর চোখে জল এসে যায়।
একটা শালপাতায় অল্প ভাত দিয়ে সামনে বাগানে রেখে অপেক্ষা করে কখন কাক এসে খায়।এইভাবে পার হয় একেকটা দিন।মাঝে মাঝে বিকেলে তাপস সিধু পল্লবরা আসে।পাড়ার খবরা খবর পুরানো দিনের কথায় সময় কাটে।গল্প করতে করতে পল্লব উঠে দাঁড়িয়ে বলল,যাই রে পরীক্ষা এসে গেল।
সীমা বলছিল সুখর ভাগ্যটাই খারাপ পরীক্ষার আগেই যত ঝামেলা।তাপস বলল।
তুই বুদ্ধি করে বইগুলো আনলে ভাল করতিস।
সুখ পরিক্ষা দেবেনা সেসব কথা ওদের বলে না।
ন'দিনের মাথায় শ্রাদ্ধশান্তি মিটে গেল।কাকু এসেছিল বরেনদা খোকন মণ্ডল তার দলবল অনেকেই এসেছিল।গোটা তিনেক জামা পেয়েছে।মামাই সব কিছুর ব্যবস্থা করলেও মামী আসেনি।সুখ সুযোগ খুজছে কখন মামাকে কথাটা বলা যায়।নিমন্ত্রতরা একে একে চলে যায়।সুখ নিজের ঘরে বসে আছে।সুবীরবাবু ঢুকে বলল,মনু এবার তুই খেয়ে নে।
মামা তুমি বলেছিলে আমাকে একটা কাজের কথা--।
মানে?আগে কলকাতায় গিয়ে পরীক্ষাটা দে তারপর ওসব ভাবা যাবে। এমনিতে অনেক দিন নষ্ট হল--।
আমি আর পড়ব না।
পড়বি না মানে?গ্রাজুয়েশনটা কমপ্লিট করবি না?
কি হবে?এইতো সিধু গ্রাজুয়েট হয়নি--।
সিধুর সঙ্গে তোর তুলনা! ভুলে যাবি না তুই বিআরবির ছেলে।
বিআরবির ছেলে ত কি হয়েছে?আচ্ছা মামা তুমি আমাকে কলকাতা পাঠানোর জন্য এত মরীয়া কেন বলতো?
কি বললি?ঠিক আছে তোর যা মন চায় কর।গলার স্বর বদলে সুবীরবাবু বলতে থাকে,জামাইবাবু মারা যাবার পর আমি চাকরির কথা বলেছিলাম।দিদি রাজি হল না মনু পড়বে।আজ দিদি নেই সব দেখছে আমি তার ছেলের জন্য কি করছি--।মনুর পড়ার জন্য কি প্রাণপাতটাই না করেছে--।
মায়ের কথা উঠতে সুখর জিদের বাধন ঢিলে হয়ে যায়।আমতা আমতা করে বলল,কলকাতায় গিয়ে পড়া অনেক ঝামেলা?
কিসের ঝামেলা?
দু-মাসের বেতন বাকী পরীক্ষা ফি মেসের ভাড়া--।
এই নে টাকা।সুবীরবাবু পকেট হতে একগোছা টাকা এগিয়ে দিল।
সুখ গুনে দেখল নশো টাকা।
কিরে এতে হবে না?
এত লাগবে না।
তোর কাছে রেখে দে।মেসের ঠিকানা লিখে দে দরকার হলে আরও পাঠাবো।
আবার তাকে কলকাতা যেতে হবে।এতদিন ধরে মনে মনে সাজানো পরিকল্পনা ভেঙ্গে চুর চুর হয়ে যায়।মা নেই কিসের জন্য সপ্তাহে সপ্তাহে গোপাল নগর আসা।কাকুকে কথা বলা দরকার।
পরেরদিন সকালবেলা অনেক দ্বিধা দন্দ্ব নিয়ে দেবেন বিশ্বাসের বাড়ী গেল।কাকু দেখে এগিয়ে এসে বললেন,সব ভালয় ভালয় মিটেছে?
কাকু আজ আমি কলকাতায় যাচ্ছি।
হ্যা অনেকদিন হয়ে গেল।
না মানে বলছিলাম কি মিলি--।
ব্যাস ব্যাস।কাকু হাত তুলে থামিয়ে দিয়ে বললেন,দেখো রঞ্জন খুটো উপড়ে গেছে। কিসের বাধনে তুমি গোপাল নগরে আসবে?মিলি মাধ্যমিক দেবে আর আমি তো বাড়ীতেই থাকি।
কাকু কিছু মনে করলেন নাতো?
দেবেন বিশ্বাস হেসে বললেন,আমাকে কি এত স্বার্থপর মনে হয়?
সুখ জিভ কেটে নীচু হয়ে দেবেনবাবুর পায়ের ধূলো নিল।দেবেনবাবু জড়িয়ে ধরে বললেন,এতদিন খুটো ছিল ভয় ছিল না।খুটো আলগা হলেই বিচ্যুতির ভয় থাকে।সাবধানে থেকো।
 
সপ্তত্রিংশৎ অধ্যায়।


সকালে লরিতে মালপত্তর চলে গেছে।হিমিরা আজ কলকাতায় চলে যাবে।পেটটা একটু ফুলেছে দেমাগে মাটিতে পা পড়েনা। মাগী পিছনে বেকে পেট উচু করে দাঁড়িয়ে আছে।নাদিয়া আহমেদ দূর থেকে দেখে,আগের মত সম্পর্ক নেই।বেইমান আর কাকে বলে। পেটে নাকি মিঞার ব্যাটা।বললি হল এতকাল খুচিয়ে কিছু হল না রাতারাতি পেট বেধে গেল। যদি সব ফাস করে দেয় কোথায় থাকবে তোর গুমর।বাজানের কথা ভেবে নাদিয়া আহমেদ উচ্চবাচ্য করে না।
বাড়ীর সামনে একটা অটো এসে দাড়ালো।ভিতরে মনে হয় আনিস মিঞা।সাদিয়া এদিক-ওদিক দেখে নীচু হয়ে অটোর মধ্যে সেধিয়ে গেল।মনে হয় স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে কলকাতায় যাবে।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নাদিয়া আহমেদ বাড়ীর দিকে এগোতে থাকে।আপু তুমি ছাড়া হিন্দুস্থানে আমার কেউ নাই--ন্যাকামো।কাজ হাশিল হয়ে গেছে এখন আর আপুর কথা মনে নাই। যাক সন্তান নিয়ে সুখে থাকুক কাউকে শাপমণ্যি করতে চায় না।
উপেনবাবু বেরিয়ে গেছেন।সীতেশ আর সুধীন ধাড়া বেরোবার জন্য প্রস্তুত এমন সময় সুখদা ঢুকল।ওরা অবাক হয়ে দেখে মুণ্ডিত মস্তক রঞ্জনবাবু।ধাড়া জিজ্ঞেস করল,কি ব্যাপার?
মা চলে গেল।
ভেরি স্যাড।কি হয়েছিল?
বয়স হয়েছে--।
সীতেশবাবু বলল,মা কি জিনিস যার যায় সেই বোঝে।
কেউ চিরকাল থাকে না।ইয়াং ম্যান নিজেকে নিজের কব্জির জোরে এগোতে হবে।সুধীন ধাড়া বিজ্ঞের মত বলল।
ওরা বেরিয়ে যেতে সুখ জিনিসপত্র রেখে কলেজে যাবার জন্য প্রস্তুত হতে থাকে।তার মাথা ন্যাড়া দেখে আয়ুষী হয়তো জিজ্ঞেস করবে তারপর সহানুভূতি জানাবে ভেবে অস্বস্তি বোধ করে।সহানুভূতি ব্যাপারটা সুখর ভাল লাগে না।মামা বলছিল দিদির স্বপ্ন কথাটা মনে পড়তে চোখ ঝাপসা হয়ে ওঠে।জিনিসপত্র গোছাতে গোছাতে নজরে পড়ে জানলার ফাক দিয়ে কেউ দেখছে।বুঝতে পারে বাসুদি।দরজা ঠেলে বসুমতী ঢুকে বলল,কি হয়েছিল?
আমার মা মারা গেছে।
বহুৎ দুখ কি বাত।
লাজোকে অনেকদিন পড়াতে যাইনি।
তোমাকে আর যেতে হবে না।ওরা মেল টিচার রাখবে না।
মিলিকে পড়াবে না বলে এসেছে লাজোকেও পড়াতে হবে না।ভালই হয়েছে মেয়েটা দিন দিন যা শুরু করেছিল।মামা টাকা পাঠাবে তাতেই চলে যাবে।
কলেজ কম্পাউণ্ডে একটা গাছের নীচে দাঁড়িয়ে সত্যম আর আয়ুষী গল্প করছিল।সুখ ওদের দেখেনি ভাব করে চলে যাচ্ছিল আয়ুষী বলল,হরে রাম হরে কৃষ্ণ।সত্যম বলল,যা কি হচ্ছে।কি ব্যাপার রঞ্জন?
আমার মা মারা গেলেন।
ভেরি স্যরি।এইজন্য তুমি কলেজে আসছিলে না?
মা মারা গেছে?আমি ভাবলাম বুঝি মাথা মুড়িয়ে সন্ন্যাসী হয়ে গেছিস।আয়ুষী মজা করে বলে।
অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত করে সুখদা,বড়লোকের বাচাল মেয়ে। মানুষ এত ইতর কিভাবে হয়।কোনো কথা না বলে অফিসের দিকে চলে গেল।
তোর এভাবে বলা উচিত হয়নি।সত্যম বলল।
কি করে বুঝবো বল? মা মারা গেলেই শুধু নেড়া হয়? ওকে দেখে নদের নিমাইয়ের কথা মনে হল হি-হি-হি।
কিরে হাসছিস?নন্দিতা এসে জিজ্ঞেস করল।
রঞ্জনকে দেখেছিস?
অফিসে ফিজ জমা দিচ্ছে।ওর মা মারা গেছে জানিস?
আমি আসি রে,তোরা গল্প কর।সত্যম চলে গেল।
আয়ূষীর মুখটা বিবর্ণ হয় বলে,ওর নেড়া মাথা দেখে মায়ের মৃত্যুর কথা মনে আসেনি।খুব খারাপ লাগছে।
ভাবছি কাল থেকে কলেজে আসব না।অর্ধেক ক্লাসই হয় না ফালতু আসা।
আমিও আসতাম না কিন্তু যদি সাজেশন টাজেশন দেয়।
ধুস ভাঙ্গা হাটে দেয় নাকি?পিনাকীকে চিনিস তো?
চিনবো না কেন?ফাটুশ ছেলেটা?
ও একবার নেড়া হয়েছিল মাথার চুল উঠে যাবার জন্য।
আর ক্লাস নেই দীপশিখা বই-পত্তর গুছিয়ে বেরোবার জন্য তৈরী হতে থাকেন।শুক্লা এসে বলল,তোমার ক্লাস শেষ?
আজকের মতো।
এখনই চলে যাবে?বাড়িতে কেউ তো অপেক্ষা করছে না।
কথাটা কানে বাজে দীপশিখা উষ্ণতা মিশিয়ে বললেন,এখানে বসে বসে গ্যাজাতে ভাল লাগে না।
শিখাদি রেগে গেছে শুক্লা আর কথা বাড়ায় না।
দীপশিখা রাস্তায় এসে বাস স্ট্যাণ্ডে অপেক্ষা করতে থাকেন।শুধু সহকর্মীরাই নয় দীপশিখা নিজেও বুঝতে পারেন দিন দিন কেমন হয়ে যাচ্ছেন।কোনো কথা মনে থাকে না।অল্পেতে রেগে যান।মেজাজ হারিয়ে ফেলেন।বাস এসে দাড়াতে উঠে পড়লেন।ভিতরে ঢুকে নজরে পড়ে লেডিজ সিটে একটি ছেলে বসে।তাকে দেখে দাঁড়িয়ে বলল,বসুন ম্যাডাম।
দীপশিখা বসতে বসতে ভাবেন লেডিজ সিটে বসেছো উঠে যাবে।কে বসবে না বসবে তুমি ঠিক করার কে? সিটে বসে ব্যাগ থেকে নতুন কেনা ফোন বের করে সুডোকু মেলাতে থাকেন।কথা বলা ছাড়াও নানা রকম সুযোগ আছে এই ফোনে।বাস ফ্লাই ওভারের উপর দিয়ে ছুটে চলেছে।এটা হবার পর আগের মত জ্যাম হয় না।
কণ্ডাক্টরের মৌলালী-মৌলালী হাক কানে যেতেই দীপশিখা উঠে দরজার দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন।বাস থেকে নেমে সি আই টি রোডে দীপশিখার ফ্লাট।সিড়ি বেয়ে তিনতলায় উঠে নিজের ফ্লাটের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ব্যাগ হাতড়ে চাবি বের করে লক খুললেন।ভিতরে ঢুকে নিজেকে ভীষণ নিঃসঙ্গ বোধ হয়।ডাইনিং কাম সিটিং রুম পাশে ছোটো একটা ঘরে দেওয়াল জোড়া বুক সেলফ তারপরে একটা বড় ঘর।ঘরের বাইরে বারান্দা। পাখা চালিয়ে নিজেকে সোফায় এলিয়ে দিলেন।বসে থাকলে হবে না।দীপশিখা উঠে শাড়ী বদলে নাইটি গায়ে দিলেন।সুইচ টিপে আলো জ্বাললেন।চোখে মুখে জল দিয়ে রান্না ঘরে গিয়ে চায়ের জল চাপিয়ে গ্যাস জ্বালিয়ে দিলেন।জল ফুটতে শুরু করেছে।কানে এল ফোন বাজছে।কোথায় বাজছে অনুমান করা চেষ্টা করেন।জলে চায়ের পাতা দিয়ে চাপা দিলেন।গ্যাস বন্ধ করে বেড রুমে এসে আওয়াজটা কোথা থেকে আসছে চারদিকে লক্ষ্য করেন।বাথরুম হতে নয়তো?বাথরুমে যেতে যেতে আওয়াজ থেমে গেল।এটা তার পুরানো ফোনের আওয়াজ।ফোনটা তাহলে ঘরেই আছে পিক পকেট হয়নি।রাণ্ণা ঘরে এসে চা করে একটা কাপে নিয়ে বাকীটা ফ্লাক্সে ঢেলে রাখলেন।আবার ফোন বাজছে। মনে হচ্ছে লাইব্রেরী ঘর থেকে আসছে।চায়ের কাপ হাতে যেতে যেতে বন্ধ হয়ে গেল আওয়াজ।চা-টা খেয়ে নিজেই রিং করবেন।এই বুদ্ধিটা তার মাথায় আসেনি আগে। মনে হচ্ছে ফোনটা এতদিনে পাওয়া গেল।ফিরে আসছেন আবার বেজে উঠোল।লাইব্রেরীতে ঢুকে ভাল করে লক্ষ্য করেন।ঐতো উপরের তাকে বইয়ের ফাকে আলো ঝিলিক দিচ্ছে।দ্রুত ফোনটা বের করে বাটন টিপে কানে লাগিয়ে বললেন,হ্যালো?
মোমো ফোন ধরছো না কেন।
আবার মোমো, পিসি বলতে কি হয়েছে--।
হি-হি-হি ছোটোবেলার অভ্যেস কি করব?ফোন ধরছো না কেন?কালকেও কতবার করেছি--
ফোন ধরব কি এই ফোনটা হারিয়ে গেছিল।ইদানীং কি যে হয়েছে কোনো কিছু মনে রাখতে পারি না।ফোনটা না পেয়ে নতুন ফোন কিনেছি--।
ভাল করেছো নম্বরটা টেক্সট করে দিও।
ঠিক আছে তারপর বল ফোন করেছিস কেন?
কাল ফোন করেছি কয়েকবার বেজে বেজে কেটে যাচ্ছে ভীষণ চিন্তা হচ্ছিল।আজ না ধরলে আমি চলে যেতাম।
চলে আয় মানা করেছে কে?
যাব পরীক্ষাটা হয়ে গেলেই যাব।
দিবুর খবর কি?
জানি না।
শোন এত রাগ ভাল নয়।
তুমি জানো ও আর দেশে ফিরবে না?তোমাকে ফোন করেনা?
অনেককাল আগে করেছিল।আমার নতুন নম্বর ওকে দেওয়া হয়নি।
তোমার শরীর কেমন আছে?একটু ভাল বোধ হচ্ছে?
ঐ একরকম।দাদা-বৌদি কেমন আছে?
ভালই।ছেলের প্রতি মামণি একটু সিম্প্যাথেটিক বাপির ভয়ে কিছু বলে না।
বৌদির ব্যাপারটা বুঝতে পারি।যাক তোর প্রিপারেশন কেমন হল?
অতি ভাগ্যবান ছাড়া ডাক্তারীতে কেউ ফেল করতে পারে না।হি-হি-হি।
কাউকে নজরে পড়েছে?
ছাড়ো তো ফালতু কথা।আচ্ছা রাখছি?ওহ হ্যা নম্বরটা টেক্সট করে দিও।
আচ্ছা।আমার আবার রান্না করতে হবে।
ফোনটা খুলে সিমটা উলটে দিয়ে আবার বইয়ের তাকে রেখে দিলেন।
রাতের খাওয়া শেষ হলে বই নিয়ে সুখদা ছাদে উঠে গেল।শতরঞ্চি পেতে বসে আকাশের দিকে তাকালো।চাদ তারায় শোভিত বিশাল আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে পড়ল মায়ের কথা।মায়ের কথা ভাবতে ভাবতে মনের মধ্যে একটা জিদ চেপে বসে।
 


অষ্টত্রিংশৎ অধ্যায়




পরীক্ষা দিয়ে ফিরে শুয়ে পড়ল।আজ ছিল পরীক্ষার শেষ দিন।প্রায় দু-মাসের উপর নাওয়া খাওয়ার হিসেব ছিল না কিভাবে কেটে গেল বুঝতেই পারেনি।গ্রামের কথা মনে পড়ল।সেই যে এসেছে তারপর যাওয়া হয়নি।বারান্দায় মা তার পথ চেয়ে বসে থাকতো।চোখের কোল ঝাপসা হয়ে এল।রেজাল্ট বেরোলে কাকে দেখাবে। এতদিন বন্ধ অবস্থায় পড়ে থেকে ঘরগুলো কি হাল হয়েছে কে জানে।
উপেনবাবু অফিস হতে ফিরে শায়িত সুখকে এক পলক দেখে রান্না ঘরের উদ্দেশ্যে বললেন,পুতুল চা হয়েছে?
হ্যা দিচ্ছি।
ফ্লাক্সে চা করা ছিল।পুতুল এক কাপ চা নিয়ে ঢুকতে উপেনবাবু ইশারায় রঞ্জনকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,ও চা খেয়েছে?
না।এসে দেখতিছি ঘুমোচ্ছে আমি আর ডাকিনি।
ভাল করেছো।
উপেনবাবু চায়ে চুমুক দিতে দিতে ভাবেন কয়েক মাস বেচারির খুব ধকল গেছে।মা মারা যাবার পর থেকে আর দেশে যায় না।বিশ্বাসবাবুর কাছে শুনেছিলেন ছেলেটি খুব মেধাবী।অল্প বয়সেই লড়াইয়ের ময়দানে নামতে হল।
একটু রাত করে সীতেশ আর সুধীন উত্তেজিত ভাবে ঢুকল।অফিসে সম্ভবত কিছু গোলমাল হয়ে থাকবে।সুধীন বলল,টি এল বলে কি মাথা কিনে নিয়েছে?আমি তোর থেকে কম কিসে?
মাথা গরম করিস না--।
শালা বৌ-বাচ্চা ফেলে এখানে কি গাবাতে এসেছি।আমরাও তো পাস করেছি--।
মেয়েদের সঙ্গে তর্ক করে কি লাভ ছাড় তো।নিজেকে দেখাতে হবে না টিএল?
শায়িত সুখকে দেখে সুধীন বলল,রঞ্জন বাবু এই অবেলায় ঘুমোচ্ছেন?
সীতেশ মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করতে বলল।কটা দিন পরীক্ষায় খাটাখাটনি হয়েছে--।
রাত হল খাবে তো।
ঠিক আছে এখনি ডাকার দরকার নেই।পুতুলদি চা হবে?
ফ্লাক্সে আছে একটু ঢেলে নেন।
সুধীন রান্না ঘরে গিয়ে দু-কাপ চা নিয়ে এসে এককাপ সীতেশের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,উপেনবাবু চা খেয়েছেন।
হ্যা একটু আগে খেয়েছি।
সুখর ঘুম ভেঙ্গে গেল।আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসে দেখল সবাই এসে গেছে।
কেমন হল পরীক্ষা?সুধীন জিজ্ঞেস করে।
মোটামুটি।সুখ স্মিত হেসে বলল।
অনেককাল তো বাড়ী যাওয়া হয়নি।
সুখ ভেবে রেখেছে এ মাস পরে মেস ছেড়ে দেবে।আর এখানে থাকার আবশ্যক কি?সুখ বলল,হ্যা এবার এখানকার পাট চুকিয়ে দেব।
মেস ছেড়ে দেবেন?বন্ধুর দিকে তাকিয়ে বলল, মুখার্জীদা ঘর খুজছিল না?
কাল যাব ফিরে এসে মিস শেখোয়াতকে জানিয়ে দেব এই মাসের পর থাকছি না।
হ্যা মিছিমিছি ভাড়া গোনার কি দরকার।উৎসাহিত গলায় বলল সুধীন।
পুতুলদি বলল,আপনাদের খেতে দিই?আমার হয়ে গেছে।
চারজনে মাটিতে আসন পেতে বসে পড়ল।পুতুলদি পরিবেশন করতে থাকে।
মুখার্জিদা সল্টলেকের আশেপাশে খুজছিল।
বলে দেখো তাহলে তিনজনের এক অফিস হবে।আড়চোখে উপেনবাবুর দিকে দেখল।
পাস করার পর কি করবে,পড়বে?উপেনবাবু এতক্ষন পর কথা বললেন।
কাকু এখনো কিছু ঠিক করিনি।বাড়ী গিয়ে মামার সঙ্গে কথা বলি।
খাওয়া দাওয়ার পর চারজনে শোবার উদ্যোগ করে, অন্যদিন সুখ ছাদে চলে যায়।এখন আর সে প্রয়োজন নেই। পরীক্ষা খারাপ হয়নি মনে হচ্ছে।রেজাল্ট বেরোলে বোঝা যাবে।কলকাতা ছেড়ে আবার গোপাল নগর পুরানো বন্ধু বান্ধব।সীমাও তো পরীক্ষা দিয়েছে।
রাত বাড়তে থাকে।বসুমতী নিজের ঘরে দরজা বন্ধ করে খাটে হেলান দিয়ে বসে মোবাইলে পর্ণ সাইট খুলে গভীর আগ্রহে দেখতে থাকে।
বছর পঞ্চাশের উপর এক মহিলা একজন যোয়ান ছেলে নিয়ে বাইরে থেকে ঘরে এল।কোথা থেকে নিয়ে এল কে জানে। রুদ্ধশ্বাসে দেখতে থাকে বসুমতী।নাইটী কোমর অবধি তুলে নিজের যোনীতে হাত বোলাতে থাকে।
লড়কা তো বহুৎ বাচ্চা ও কেয়া চুদাই করেগা।বসুমতী অবাক হয়ে দেখতে থাকে।
লেড়কা কো পেণ্ট উতারকে লৌণ্ড নিকালা ছিলকে মুহুমে লিয়া।বসুমতী উত্তেজিত বালিশের নীচ থেকে আট ইঞ্চি লম্বা ডিল্ডো(কৃত্রিম লিঙ্গ) বের করে মুখে নিয়ে চুষতে থাকে।কষ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে লালা।
মুহু সে নিকালা লৌণ্ড একদম খাড়া।লৌণ্ড জাদা বড়া নেহি।আউরত খাটিয়া পাকাড় কে গাড় উচা কিয়া লেড়কা পিছে সে ঘুষায়া লৌণ্ড।
বসুমতী উত্তেজিত স্থির থাকতে পারে না। মুখ থেকে ডিল্ডো বের করে নিজের গুদে ভরে দিয়ে অন্দার বাহার করতে থাকে ছবিতে ঠাপের তালে তালে।ইয়াম--ইয়াম--ইয়াম--ইয়াম শব্দ করতে থাকে।এইভাবে করতে করতে এক সময় জল খসিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লেন বসুমতী।ধাড়ার কথা ভাবেন।লোকটা সাদি শুধা লেপটপে পর্ণ দেখে।ওর লৌণ্ড কেমন দেখে নাই।ওর চোখে দেখেছে লালসার দৃষ্টি।উমর দশ-বারো বরস কম হবে।তাতে বসুমতীর অসুবিধে নেই।ডিলডো সে মজা নেই,ধাত গিরে না।চুতের কাছে সব শালা বশ। এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লেন বসুমতী।
ভোর হতে না হতেই সুখর ঘুম ভেঙ্গে যায়।খাট থেকে নেমে বিছানা গোছাতে থাকে।গ্রাম থেকে ঘুরে এসে সব নিয়ে যাবে।চলে যাবার কথা মিস শেখয়াতকে এখনি বলার দরকার নেই,ফিরে এসে বললেই হবে।তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে চলে গেল।ঐবাড়ীতে তাকে থাকতে হবে একা।মা বিহীন বাড়ীর কথা ভাবতে চোখে জল এসে গেল।কিছু একটা করতে হবে না হলে চলবে কি করে।মামার সঙ্গে কথা বলে দেখা যাক।বাবা মারা যাবার পর একটা কাজের কথা বলেছিল মামা।সেদিন মা বাধা না দিলে আজ তার পরীক্ষা দেওয়া হতো না। হাতে যা টাকা আছে একমাসের মেস ভাড়া হয়ে যাবে।অবশ্য চলে গেলে আর ভাড়া দিতে হবে না।
স্নান করে বেরোবার জন্য তৈরি হতে থাকে।
এত তাড়াতাড়ি স্নান করলেন?ও আপনি তো আজ দেশে যাবেন।সুধীন বলল।
সীতেশও উঠে পড়েছে।পুতুলদি এসে গেছে।সুখ ভাবে চা-টা খেয়েই বেরোবে।
ইতি মধ্যে উপেনবাবুও উঠে পড়েছে।পুতুলদি চা দিয়ে গেল।উপেনবাবু চায়ের কাপ নিয়ে বললেন,রঞ্জন তুমি কি এখনই রওনা হচ্ছো?
হ্যা কাকু।কিছু বলবেন?
এখন তো মা নেই খেয়ে দেয়ে গেলে ভাল করতে না?
সুখ এদিকটা ভেবে দেখেনি।কাকু ঠিকই বলেছেন।
সুধীন বলল,এত তাড়া কিসের চলুন একসঙ্গেই বের হবো।
সুখ মৃদু হাসল।ঠিকই আর ঘণ্টাখানেক পরে বেরোলেই ভাল।
আপনি তাহলে এমাসেই মেস ছেড়ে দিচ্ছেন?
এখনও সেই রকম ইচ্ছে।
হ্যা মিছি মিছি ভাড়া দিতে যাবেন কেন?
সবাই একে একে বাথরুম সেরে বেরোবার জন্য তৈরী হতে থাকে।উপেনবাবু বললেন,তুমি যদি ইউনিভার্সিটি ভর্তি হও তাহলে ত সেই কলকাতায় এসে থাকতে হবে।
মেস ছেড়ে দেব নিশ্চিত কিছু ঠিক করিনি।মামার সঙ্গে কথা বলে দেখি।
সুধীন বিরক্ত হয় মেস ছাড়লে মুখার্জিদাকে এখানে আনার ইচ্ছে।উপেনবাবু হেসে বললেন,তুমি খুব অস্থিরমতি।পাল ছেড়া নাওয়ের মত।
সুখর মুখে ছায়া পড়ে।ঠিকই কাকুও বলছিল খুটো উপড়ে গেছে।প্রতি মুহূর্তে মায়ের অভাব বুঝতে পারে।এতকাল যা করেছে মায়ের ইচ্ছে মত।একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল। কাকু তার অবস্থা জানেন না তাহলে বুঝতে পারতেন কেন অস্থিরমতি।মামা কি এম এ পড়াবে?গ্রামে না গেলে কোনো কিছুই সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।বাবার মত অধ্যাপনা করি মায়ের খুব ইচ্ছে ছিল।
 

উনচত্বারিংশৎ অধ্যায়



মাথায় একরাশ চিন্তা নিয়ে খেয়ে দেয়ে বেরিয়ে পড়ল সুখদা।দুই-আড়াই মাস ধরে পড়ে আছে ঘর দোরের কি অবস্থা কে জানে।হ্যারিসন রোড ধরে হন হন করে হাটতে থাকে।মনে হচ্ছে যেন কতকাল পরে গোপাল নগর যাচ্ছে।স্টেশনে ঢুকেই দেখল এক নম্বরে দাঁড়িয়ে কৃষ্ণনগর সিটি।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে পল্লবের সঙ্গে দেখা।চোখাচুখি হতে ভদ্রতার খাতিরে সীমা হাসল।পল্লব জিজ্ঞেস করল,কেমন হল পরীক্ষা?
মোটামুটি।তোর কেমন হয়েছে?
যা পেরেছি লিখেছি কোনো প্রশ্ন ছাড়িনি।দেখি কি হয়।
তোর সঙ্গে সুখর দেখা হয় না?।নারে শ্রাদ্ধের পর আর দেখা হয়নি।
এবার পরীক্ষা দেবার কথা ছিল,দিয়েছে কিনা কে জানে।
সত্যি মানুষের জীবন বড় অনিশ্চিত।ওর এক মামা পাকপাড়ায় থাকে সেখানে নেই জানি।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে সীমা বলল,আসিরে।
কমরেডকে দেখলাম বটতলায়।
সীমা হাসল,বুঝতে পারে পল্লব কি বলতে চাইছে।তপু কাতান খোকনদের দলে ভীড়েছে সে খবর পেয়েছে।দেখা হলে বলতে হবে। বটতলার দিকে হাটতে থাকে।কেন যে এমন হল।পাপ করলে ভগবান শাস্তি দেয় শুনেছে।সুখ পাপ করতে পারে বিশ্বাস হয় না।কতদিন ওর সঙ্গে একা একা ঘুরেছে একেবারে নির্বিকার।এক্টু নির্জনে পেলেই তপু গায়ে হাত দেবে।একদিন নদীর পাড়ে চকাম করে চুমু খেয়েছিল।ভীষণ রাগ হয়েছিল ঠোট মুছে বলেছিল,একী অসভ্যতা?
নিজেই নিজের কান মলে তপু বলেছিল,স্যরি।
শোনো বিয়ের আগে এসব আমার পছন্দ নয়।
বলছি তো বাবা স্যরি।
বটলায় আড্ডা জমে উঠেছে।হঠাৎ তাপস উঠে বলল,অনেক বেলা হল আমি আসি।
দূরে সীমাকে দেখে ওরা চোখাচুখি করে হাসল।তাপস দ্রুত হাটত হাটতে সীমার কাছাকাছি গিয়ে বলল,এদিকে এসো।
তাপস বা-দিকে মোড় ঘুরল,সীমাও তাকে অনুসরন করে।
এত দেরী করলে আমি তো ভাবলাম তুমি আসবে না।
মেয়েদের অনেক কাজ থাকে।
পরীক্ষা কেমন হল?
খারাপ না,তোমার?
মনে হয় পাস করে যাব।
আসবার সময় পল্লবের সঙ্গে দেখা।
কি বলছিল বেটা?
ওই সুখর কথা নিয়ে আলোচনা করছিলাম।বেচারীর ভাগ্যটাই খারাপ--।
এখনো ওকে ভুলতে পারোনি?
কি বলতে চাইছো বলতো?ও তোমার বন্ধু না?
বন্ধু কিন্তু তোমার মুখে ওর নাম শুনলে আমি সহ্য করতে পারি না।
তুমি কাতান খোকনের দলে ভীড়েছো সেটা যে আমার পছন্দ নয়--।
এই কি হচ্ছে কাতান খোকন কারো নাম হয়? এদিক ওদিক তাকিয়ে তাপস বলল,খোকনদা বলতে পারো না।
ঐ হল তুমি ওর দলে কেন ভীড়তে গেলে বলো?
তোমার জন্য।
আমার জন্য?আমি তোমাকে বলেছি--।
আগে সবটা শোনো।যেদিন কালীবাড়ির দিকে গেছিলাম কয়েকটা ছেলে আওয়াজ দিয়েছিল তোমার মনে আছে?পার্টির সাপোর্টে থাকলে আর ওরা সাহস পাবে না।
গোপাল নগর স্টেশনে যখন ট্রেন ঢুকল তখন বেলা প্রায় একটা।সুখ ট্রেন থেকে নেমে বাড়ীর পথ ধরল।রাস্তায় লোকজন তেমন নেই।
কলকাতা ছেড়ে আবার সেই গোপাল নগর।পুরানো পথ ঘাট পুরানো বন্ধু বান্ধব।মামা রাজী হলে অবশ্য পোস্ট গ্রাজুয়েশনের জন্য কলকাতায় যেতে হবে।দূর থেকে বাড়ীটা নজরে পড়তে ভুরু কুচকে তাকাল ঠোটে এক চিলতে হাসি ফুটল।মনে হচ্ছে মামা বাড়ীটা রঙ করিয়েছে।অবহেলায় পড়ে নেই মামা দেখভাল করে।ঘরদোর ঝাড়পোছ করতে হবে চিন্তা ছিল স্বস্তি বোধ করে সুখ।রাস্তায় কাউকে নজরে পড়ল না।বাড়ীর সামনে এসে অবাক সামনে ফাকা জায়গায় আগাছা হয়েছিল একেবারে পরিস্কার।গেট খুলে ঢুকতে যাবে কানে এল মহিলা কণ্ঠ,কাকে চান?
থতমত খেয়ে তাকিয়ে দেখল জানলায় মামীর বয়সী এক মহিলা কিন্তু মামী নয়।মামার জ্ঞাতি গুষ্ঠীর কেউ নয়তো?সুখ অবাক হয়ে বলল,আপনি?
আমরা এখানে থাকি।আপনি কাকে চান?
না মানে আপনি সুবীর রায়ের কেউ--।
হ্যা ওর কাছ থেকে কিনেছি।গত মাসে রঙটং করে গৃহ প্রবেশ করলাম।
নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না, সম্বিত হারাবার মত অবস্থা অনেক কষ্টে নিজেকে সামলায় সুখ।
আচ্ছা আপনি এত কথা জিজ্ঞেস করছেন কেন বলুন তো?
না মানে আমি বোধ হয় ভুল জায়গায় এসেছি।স্যরি কিছু মনে করবেন না।
দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।আশপাশে চেনা কাউকে দেখা গেলনা।রাগে জ্বলছে সারা শরীর।মনে পড়ল কাকুর কথা,ঠিকই চিনেছিল কাকু।স্থির করল এখনি পাকপাড়ায় যাবে।পাশে একটা ভ্যান রিক্সা এসে গতি মন্থর করে জিজ্ঞেস করল,যাবেন নাকি?
পাকপাড়ায় যাবেন?
উঠেন।
সুখ ভ্যানে চেপে বসল। পাশে বসা ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করল,আপনিও কি পাইকপাড়া?
না আমি নেতাজি নগর।
সুখ মনে মনে ভাবতে থাকে কি বলবে মামাকে।অনুমান করার চেষ্টা করে মামা কি জবাব দিতে পারে।মায়ের চিকিৎসার জন্য যা যা করেছে সেই কৃতজ্ঞতাবোধ মুহূর্তে ধুয়ে মুছে গেল।প্রায়ই অভিযোগ করত বড়মামা কিভাবে তাকে ঠকিয়েছে।কিন্তু মারা যাবার পর মুসলমানরা নাকি সব ভোগ করছে।মাথার উপর ভগবান আছে সব নাকি তিনি দেখছেন।
পাইকপাড়া আসতে ভাড়া মিটিয়ে নেমে পড়ল।রাস্তায় একজনকে দেখে সুবীর রায়ের নাম বলতে দূর থেকে বাড়ি দেখিয়ে দিলেন।
সুখ হাটতে থাকে।এখন মামা বাড়ি আছে তো?না থাকলে অপেক্ষা করবে।বাড়ীর কাছে গিয়ে দরজায় কড়া নাড়ে।দরজা খুলে মামা উচ্ছ্বসিত গলায় বলল,আরে মনু! পরীক্ষা কেমন হল?ওগো দেখ কে এসেছে।
সুখর মাথা গোলমাল হয়ে যায়।ভেবেছিল তাকে দেখে মামা চমকে যাবে।
কিরে দাঁড়িয়ে রইলি ভিতরে আয়।
সুখ ভিতরে ঢুকে বলল,তুমি বাড়ীটা বিক্রী করে দিলে?
কি করব বল?দিদি বলল--।
হাসপাতালে মা তো কথা বলতেই পারছিল না তোমাকে বলল?
হাসপাতালে কেন?তার আগেই আমাকে পাওয়ার অফ এটর্নি দিয়ে বলেছিল--।
আমাকে একবার বলার প্রয়োজন মনে হল না?
মামী ঢুকে বলল,তোমাকে বলেছিলাম না যেচে কারো উপগার করতে যেওনা।
সুবীর রায় হাত তুলে বউকে থামিয়ে বলল,তোকে বললে তুই কি করতিস?সব টাকা শোধ করে দিতিস?
ঠাকুরঝির চিকিৎসায় ছেরাদ্দে কত খরচ হয়েছে তার হিসেব রাখো?
আমি আপনার সঙ্গে কথা বলছি না।
তা বলবে কেন?স্পষ্ট কথায় কষ্ট হয় জানি তো।
বউকে থামিয়ে সুবীর রায় বলল,শোন মনু মাথা গরম করিস না।দীপার বিয়ের জন্য জমানো টাকা প্রায় শেষ।কিছুক্ষন ভেবে মনুর হাত ধরে বলল এক গোছা টাকা এগিয়ে দিয়ে বলল,এই টাকা কটা রাখ--।
সুখ হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,থাক মামা আমি আর তোমার ঋণ বাড়াতে চাই না।
তারপর দ্রুত বেরিয়ে যায়।পিছন থেকে সুবীর রায় বলল,এই মনু এই অবেলায় কোথায় যাচ্ছিস।শোন-শোন--।
সুখ পিছন ফিরে তাকায় না,হন হন করে হাটতে থাকে।
সুবীর রায়ের হাত থেকে তার বউ টাকাগুলো ছিনিয়ে নিয়ে বলল,ভাল মানুষী দেখাও,এবার শিক্ষে হল তো?
 


চত্বারিংশৎ অধ্যায়




সুখ উপুড় হয়ে শুয়ে আছে,ঘুমোচ্ছে না।কাকু তখন অফিসে না হলে দেখা করে আসতো।এখন মনে হচ্ছে টাকাটা নিয়ে নিলেই ভাল করতো।মামীর ব্যবহারে মাথাটা গরম হয়ে গেছিল।কি করে চলবে ভেবে দিশা পায় না।হাতের পুজি একমাসেই শেষ হয়ে যাবে।খোকনদা বলেছিল কোনো সমস্যা হলে জানাতে।মামার কথাটা একবার মনে হয়েছিল খোকনদাকে বলবে।পরে মনে হল পারিবারিক ব্যাপার খোকনদা হয়তো মামাকে ধরে হেনস্থা করবে ভেবে আর বলেনি।খোকনদা তার কোনো কাজের ব্যবস্থা করে দিতে পারে না?পার্টির লোকের শুনেছে অনেক ক্ষমতা। গ্রামে ফিরে যাবার কথা ভাবে।
উপেনবাবু অফিস থেকে ফিরে চৌকিতে রঞ্জনকে দেখে একটু অবাক হলেন।আজকেই ফিরে এল?পোশাক বদলে তোয়ালে দিয়ে গা মুছতে মুছতে বললেন,কি ব্যাপার আজকেই ফিরে এলে?
উপেনবাবুর গলা পেয়ে পালটি খেয়ে উঠে বসে সুখ। ফ্যাকাসে হাসল।
মেস ছেড়ে দেবে এটা ফাইন্যাল?
ভাবছি রেজাল্ট বেরনো অবধি থেকে যাই।
রাইট।আমি তো সেই কথাই বলছি।তুমি কি করবে আগে থেকে ঘোষণা করার দরকার কি?গলা নামিয়ে বললেন,শোনো তোমায় একটা কথা বলি।ঐ আইটিরা তোমাকে নানাভাবে বোঝাবে আসলে ওদের কলিগকে এই মেসে আনার মতলব।
কাকু আড়ালে ওদের বলেন আইটি।কাকু জানেন না বোঝালেও কোনো লাভ হবে না।এই মুহূর্তে মেস ছাড়া সুখর পক্ষে অসম্ভব।তার কোথাও যাবার জায়গা নেই।সেতো আর একমাস তারপর কি হবে ভেবে গায়ে জ্বর আসার উপক্রম।
সুধীনরা ঢুকতে উপেনবাবু চুপ হয়ে যান।পুতুলদি এসে গেছে।সুখকে দেখে সুধীন বলল,আরে আপনি?
সুখ হাসল।
কালই চলে যাবেন নাকি?
এখনো ঠিক করিনি।
মাস শেষ হতে আরও কদিন বাকী আছে।তাড়াহুড়র কিছু নেই।সুধীন বলল।
পুতুলদি চা দিয়ে গেল।সুখ চায়ে চুমুক দেয়।
সীতেশ বলল,ঘরবাড়ি ছেড়ে কেউ মেসে পড়ে থাকে।চাকরি করতে হয় তাই দায়ে পড়ে এখানে থাকা।
আমি তো শনিবারের জন্য মুখিয়ে থাকি।সুধীন তাল দেয়।
তাকে শুনিয়ে বলছে সুখ বুঝতে পারে।ওরা জানে না কেন মেসে পড়ে আছে।শনিবারের জন্য অপেক্ষা করে বাড়ী যাবার জন্য।সেও এক সময় শনিবারের জন্য অপেক্ষা করত।চা শেষ করে সুখ বেরিয়ে পড়ল।কলেজ স্ট্রিট বই পাড়ায় বিভিন্ন দোকানের সামনে ঘোরাঘুরি করে।এক একটা দোকানে তিন-চারজন কর্মচারী।কর্মচারীদের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে।এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করে রাতে ফিরে এল।
রবিবারে পুতুলদি আসে না।মেস ফাকা এমন অবস্থায় আগে পড়েনি।বেরিয়ে একটা পাউরুটি দিয়ে মধ্যাহ্ন ভোজ সারে।কদিন পর মাস শেষ হতে সবাই উপেনবাবুকে টাকা দেয় সুখকে টাকা দিতে দেখে সুধীন বিরক্ত হয়ে বলল,আপনি টাকা দিচ্ছেন?
ভাড়া দিতে হবে না?
আপনি যে বললেন মেস ছেড়ে দেবেন?
উপেনবাবু বললেন,মেস ছেড়ে দিলে দেখতেই পেতেন।
সুধীন আর কথা বাড়ায় না।সুখ বুঝতে পারে ওরা তার উপর খুব রেগে গেছে কিন্তু তার কিছু করার নেই।সে ভাবছে এইমাসের পর কি হবে।একবার গ্রামে গিয়ে খোকনদাকে গিয়ে ধরবে?রেজাল্ট না বেরনো অবধি সুখ উচ্চ মাধ্যমিক পাস।এভাবে দিন কাটতে থাকে।সবাই অফিস বেরিয়ে গেলে সুখও বেরিয়ে পড়ে।কোনোদিন হাটতে হাটতে সেন্ট্রাল এভেনিউ ধরে শ্যাম বাজার পর্যন্ত গিয়ে বিধান সরণী ধরে ফিরে আসে আবার কোনোদিন গঙ্গার ধার দিয়ে বাগ বাজার তারপর সার্কুলার রোড ধরে ফিরে আসে মেসে।রাস্তার দুপাশে সারি সারি দোকান।দোকানে কর্মচারীরা ব্যস্ত খদ্দের নিয়ে।যতক্ষন বাইরে থাকে ভাল থাকে মেসে ফিরলেই একরাশ চিন্তা মাথা চেপে ধরে।একজন ঘনিষ্ঠ কেউ নেই যাকে মনের কথা বলে একটু সান্ত্বনা পেতে পারে।
মাসের শেষ দিকে এক রবিবার।সবাই দেশে চলে গেছে।মেস একেবারে ফাকা, পুতুলদিও আসবে না।সুখ স্নানে যাবার তোড়জোড় করছে। সেদিনের পর থেকে আইটিরা তার সঙ্গে কথা বলে না।
গোবরডাঙ্গা থেকে সুদীপাকে দেখতে আসার কথা।সুবীর রায় বনগাঁ স্টেশনে গিয়ে পাত্র পক্ষের জন্য অপেক্ষা করছে।এই সময় মনু থাকলে ভাল হতো।ছেলেটা বড় গোয়ার।তেজ করে টাকা নিল না।কোথায় আছে কে জানে।সুদীপাকে ঘুমোতে বলেছে ওর মা।ঘুমোলে মুখটা বেশ ফোলা ফোলা লাগে।মাঝে মাঝে জানলায় দাঁড়িয়ে দেখছে পাত্রপক্ষ আসছে কিনা।চারজন আসার কথা সেই মত মিষ্টি আনিয়ে রেখেছে।
স্নান সেরে সুখ বেরোবার জন্য তৈরী হতে থাকে।সকালে চা-ও খাওয়া হয়নি।জানলায় চোখ রেখে বসুমতী দেখছে সুখ বুঝতে পারে।এক্টু পরেই দরজা দিয়ে ঢুকে জিজ্ঞেস করলেন,রঞ্জন তুমি দেশে গেলে না?
মা নেই কি জন্য যাব।
ওতো সহি বাত।এখুন তুমি একেলি।বসুমতী চলে গেলেন।
সুখ তৈরী হয়ে বেরিয়ে পড়ল।কলকাতার পথে ঘুরতে ঘুরতে সব কিছু ভুলে থাকা যায়।হ্যারিসন রোড ধরে শিয়ালদার দিকে হাটতে থাকে।
অনেকে ফুটপাথে পশরা সাজিয়ে বসেছে।দেখতে দেখতে মনের মধ্যে ঝিলিক দিয়ে উঠল।পরমুহূর্তে চুপষে যায়।পশরা নিয়ে বসতে গেলেও পুজি লাগে।এখন মনে হচ্ছে মামার দেওয়া টাকাটা ফিরিয়ে দিয়ে ভুল করেছে।শিয়ালদা পৌছে ফুটের একটা দোকানে চারটে কচুরীর ফরমাস করে।কচুরি খেয়ে ঢক ঢক করে অনেকটা জল খেল।ব্যাস লাঞ্চ শেষ।এবার কি করবে?সার্কুলার রোড ধরে দক্ষিন দিকে হাটতে শুরু করল।
বনগাঁয় ট্রেন ঢুকতে সুবীররায়ের তীক্ষ্ণ নজর যাত্রীদের দিকে।বাবা মা ছেলেকে নামতে দেখে সুবীর রায় দ্রুত এগিয়ে গেলেন।সঙ্গে আরেকজন মহিলা।
জোর হস্তে হেসে সুবীর রায় বলল,আসুন।
স্টেশন হতে বেরিয়ে একটা ভ্যান রিক্সায় ওদের তুলে দিয়ে আগে আগে সুবীর রায় সাইকেলে চলেছে।
জানলা দিয়ে ওদের আসতে দেখে আশালতা মেয়েকে ঘুম থেকে তুলে তৈরী হতে বলল।দরজা খুলে হেসে অভ্যর্থনা করে ভিতরে নিয়ে বাসাল।পরস্পর আলাপে জানা গেল সঙ্গে মহিলা প্রতিবেশিনী।আশালতা কিছুটা বিরক্ত এই প্রতিবেশীরাই ব্যাগড়া দেয়।আশালতা চারটে প্লেটে মিষ্টি সাজিয়ে নিয়ে ওদের সামনে রাখল।
আবার এসব কেন?
এটুকু তো করতেই হয়।
মিষ্টি খেতে খেতে আলাপ চলতে থাকে।
মৌলালীতে এসে এদিক ওদিক দেখে তারপর ডান দিকে বাক নিয়ে ধর্মতলার ফুটপাথ ধরে হাটতে থাকে।এদিকটায় দোকানপাট কম।ফুটপাথ দিয়ে লোকজন হেটে চলেছে।সকলেই কিছু না কিছু চিন্তা করতে করতে চলেছে।কারো সঙ্গে কারো চিন্তার মিল নেই।সুখ ভাবে তার মত অবস্থা কারো নয়।এসপ্লানেডে এসে কার্জন পার্কে ঢোকার মুখে দেখল একটা লোক সামনে কাপড় বিছিয়ে ভিক্ষে করছে।সুখ হাসল এই একটা পেশা কোনো পুজি লাগে না।পার্কে ঢুকে পশ্চিমদিকে একটা খালি বেঞ্চ দেখে বসল।এখানে ওখানে দু-একজন ঘুমোচ্ছে।সুখ আন্দাজ করার চেষ্টা করে এদের কিভাবে চলে?এদের পেশা কি?
পার্কের দক্ষিন দিকে রাস্তা মুখো রাণী রাসমণির মূর্তি।রাস্তার বিপরীত দিকে শেষ প্রান্তে একটা টয়লেট।লোকে ঢূকছে বেরোচ্ছে।সূর্য রাজভবনের দিকে হেলে পড়েছে।অনেক বেলা হল।এবার ওঠা যাক।তলপেটের নীচে মৃদু বেদনা অনুভব করে।পার্ক থেকে বেরিয়ে টয়লেটের দিকে এগিয়ে যায়।ভিতরে ঢুকে একটায় ঢুকে জিপার খুলে পেচ্ছাপ করতে থাকে।নজরে পড়ল পাশের লোকটি উচু হয়ে উকি দিয়ে দেখছে।বেশ ধোপ দুরস্ত পোশাক।পেচ্ছাপ করছি না অন্য কিছু দেখছে হয়তো।ইচ্ছে করল চোয়ালে টেনে এক ঘুষি কষায়।লোকটি চলে গেল।দেখে তো ভদ্রলোক বলে মনে হল একী অসভ্যতা।পেচ্ছাপ হয়ে গেলে ঝাকিয়ে ভিতরে ঢুকিয়ে বেরিয়ে এল।রাস্তার উলটো দিকে একটা গাড়ীতে হেলান দিয়ে সেই লোকটা দাড়িয়ে।চোখাচুখি ইশারায় ডাকলেন।আশপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারে তাকেই ডাকছেন।
দ্বিধা হলেও রাস্তা পেরিয়ে সুখ লোকটার কাছে যেতে জিজ্ঞেস করল,কি করো?
চেনে না জানে না এ প্রশ্ন কেন?সুখ বলল,কিছু করিনা।
পড়াশুনা কতদূর?
সুখ যেন ক্ষীন আলোর দেখা পেল উৎসাহের সঙ্গে বলল,এবার ইংরেজী অনার্স নিয়ে বিএ পরীক্ষা দিয়েছি।
বাড়ী কোথায়?
মুখে এসে গেছিল গোপাল নগর বলল,হ্যারিসন রোড।রেজাল্ট বেরোলে আমি সিয়োর পাস করে যাবো।
ভদ্রলোক একটা কার্ড এগিয়ে দিয়ে বললেন,কাজ করার ইচ্ছে থাকলে কাল দশটার মধ্যে দেখা কোরো।
দরজা খুলে উঠে পড়তেই গাড়ী চলতে শুরু করে।ইস ভদ্রলোকের নামটা জিজ্ঞেস করা হল না।কার্ডটা চোখের সামনে তুলে ধরতে দেখল, ইংরেজীতে লেখা Pleasure Poly Clinic.
পলি ক্লিনিক--এই ভদ্রলোক কি তাহলে ডাক্তার?তাহলে গাড়ীতে লাল ক্রশ চিহ্ন থাকার কথা।ভাল করে খেয়াল করেনি। কার্ডটা পকেটে রেখে হাটতে শুরু করল।এক্টু আগে যা ঘটল তাকি সত্যি?বিশ্বাস করতে পারছে না।মনে মনে স্থির করে চাকরি হোক না হোক কাল সে যাবেই।গিয়ে দেখবে এই ঠিকানায় এরকম কোনো প্রতিষ্ঠান নেই।তাহলেও গিয়ে দেখতে কি হয়েছে।একটা কথা মনে হতে ঠোটে হাসি ফোটে,ন্যাংটার নেই বাটপাড়ের ভয়।তার কি এমন ক্ষতি হতে পারে।কাকু কাল বাড়ি থেকে সরাসরি অফিস গিয়ে সন্ধ্যেবেলা ফিরবে।না হলে কাকুর সঙ্গে আলোচনা করা যেতো।
মেসে ঢোকার মুখে ভাবে রাতে হোটেলে খাবে কিনা?পর মুহূর্তে মনে হল চাকরি যদি হয়ও বেতন হবে একমাস পরে।দুটো আটার রুটি তরকারি পাচ টাকা খরচ করে কিনে মেসে ঢুকলো।লাইট জ্বেলে পকেট হতে কার্ডটা বের করে ভাল করে দেখতে থাকে।আবার যত্ন করে রেখে দিল।কাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে যেতে হবে।সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্টটা আর বিএ-র এ্যাডমিট কার্ডটাও নিতে হবে।
 


একচত্বারিংশৎ অধ্যায়



স্বপ্নের মতো কেটে গেল রাত।ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে গেল।চোখে মুখে জল দিয়ে ফিরে এসে দেখল পুতুলদি এসে গেছে।চা খেয়ে স্নানে যাবে।পলি ক্লিনিক বলতে ডাক্তার কম্পাউণ্ডার নার্সের কথা মনে আসে।এর একটাতেও তার সম্ভাবনা নেই।পিয়ন বেয়ারা হলেও হতে পারে।যাইহোক আপাতত চালাবার মতো কিছু একটা হলেই হল।
পুতুলদি চা দিয়ে গেল।চায়ে চুমক দিয়ে ভাবে রেজাল্ট বেরোলে ভাল চাকরির জন্য ফাকে ফাকে চেষ্টা করতে হবে।সারা জীবন পিয়নগিরি করে কাটাবে নাকি?রান্না ঘরে গিয়ে বলল,পুতুলদি আমি নটার সময় বের হবো।
পুতুলদি চোখ তুলে একবার তাকিয়ে আবার রান্নায় মন দিল।পুতুলদি শোনে কথা বলে খুব কম।পুতুলদিকে দেখে মায়ের কথা মনে পড়ল।
মা অবশ্য মেসে নয় লোকের বাড়ীতে কাজ করতো। চা শেষ করে স্নানে চলে গেল।ভাল করে গামছা দিয়ে সারা শরীর রগড়ে স্নান করে।একটা ধন্দ্ব কিছুতে কাটেনা।পলি ক্লিনিকে কি চাকরি হতে পারে।ঠগবাজের পাল্লায় পড়ল নাতো?ঠগবাজের একটা উদ্দেশ্য থাকে।এ ক্ষেত্রে কিইবা উদ্দেশ্য থাকতে পারে?স্নান সেরে ঘরে এসে বাক্স খুলে সার্টিফিকেট গুলো বের করল।একটা নতুন জামাও বের করে।শ্রাদ্ধের সময় পাওয়া একদিনও পরেনি।
পুতুলদি বলল,খেতে দিয়েছি।
এর মধ্যে সব হয়ে গেল।সুখর ভাল লাগে।রান্না ঘরে আসন পেতে খেতে বসে গেল।খুব ক্ষিধে পেয়েছিল কাল থেকে কিছুই তেমন খাওয়া হয়নি।খেতে খেতে সুখ বলল,তুমি চলে যাও।থালা আমি ধুয়ে রাখব।
পুতুলদি চলে গেল।সুখ নিজেকে বোঝায় কোনো কিছু আশা না করাই ভাল।আশা করলেই হতাশ হতে হয়।চাকরি না হোক একটা অভিজ্ঞতা হবে।খাওয়া দাওয়া সেরে সাজগোজ করে হাত আয়নায় নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে।কার্ডটা বের করে আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিল।অন্যদিনের কথা আলাদা আজ বাসেই যাবে।হেটে ঘর্মাক্ত হয়ে যাওয়া ঠিক হবে না।ফেরার সময় নাহয় হেটেই ফিরবে।হেটে কলেজ স্ট্রীট অবধি গিয়ে নির্দিষ্ট বাসে চেপে বসল।কাকুর কথা মনে পড়ল।কাকু বলেছিলেন,বিদেশে কোনো কাজকে ছোটো ভাবা হয় না।কোনো রেস্টরেণ্টে যে তোমাকে চা এগিয়ে দিচ্ছে তাকে কোনো ইউনিভার্সিটিতে দেখলে অবাক হয়োনা।বাপের ঘাড়ে বসে বেকার দিনের পর দিন খেতে এদেশে লজ্জা করে না কিন্তু বাজারে সবজি বিক্রী করতে লজ্জা পায়।কত কথা মনে পড়ছে।সুখ কোনো কাজে লজ্জা পায় না।কাজের বদলে পারিশ্রমিক পাবে এতে লজ্জা কিসের?
বাস থেকে নেমে ঠিকানা খুজে খুজে পার্ক এভেনিউয়ের(নাম পরিবর্তিত) নির্দিষ্ট নম্বরে পৌছে কোথাও প্লেজারের নাম গন্ধ পেল না।গেটে একজন দারোয়ান দাঁড়িয়ে গেটের ওপাশে বিশাল চত্বর সারি সারি গাড়ী দাঁড়িয়ে তার পিছনে বিল্ডিং।সুখ সসংকোচে এগিয়ে দারোয়ানকে কার্ড দেখিয়ে কিছু বলার আগে দারোয়ান হাত দিয়ে একটা সিড়ি দেখিয়ে বলল,উপার চলা যাইয়ে।
সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে থাকে দোতলার ল্যাণ্ডিং-এ পৌছে দেখল দরজা বন্ধ।আবার সিড়ি দিয়ে আর উপরে উঠে দেখল করিডোরের দুপাশে ঘরে বেডে পেশেণ্টরা শুয়ে আছে।এতক্ষনে মনে হচ্ছে এটা চিকিৎসালয়।এবার কি করবে সুখ ইতস্তত করে।একজন নার্সকে আসতে দেখে সুখ সব কথা বলতে মহিলা তাকে একটি ঘরে ঢুকিয়ে দিল।সেই ঘরে দুজন মহিলা তার ওজন নিল প্রেশার দেখল তারপর বাধা দেবার আগেই সুচ ফুটিয়ে রক্ত নিয়ে বলল,ওই ঘরে গিয়ে বসুন।
সুখ একটা সোফায় গিয়ে বসল।আরও দু-তিনজন তারই মত বসে আছে।সুখ হতবাক চাকরির জন্য এসেছে সে ব্যাপারে কেউ কিছু বলল না,রক্ত নিল কেন?এর সঙ্গে চাকরির কি সম্পর্ক?
পাশে বসা একজন বলল,ভেনেরাল টেস্ট।
ভেনেরাল টেস্ট মানে আমার কোনো যৌন রোগ আছে কিনা তার পরীক্ষা।যৌন রোগ কিভাবে হবে?মনে পড়ল বৈচিমাসীর কথা আর সেই মহিলার কথা।ওদের শরীরে কোনো যৌন রোগ ছিল নাতো?সময় কেটে যাচ্ছে এখান থেকে চলে যাবে কিনা ভাবতে থাকে।কতক্ষন এখানে অপেক্ষা করবে।হঠাৎ নজরে উগ্র সাজের এক মহিলা শর্ট ঝুলের জামা গায়ে হাই হিল পরে হেটে দক্ষিন দিকে চলেছে।চলার তালে তালে পাছার বল দুটো নাচছে।এই মহিলা তো সাধারণ নয়।ওদিকে যাচ্ছেই বা কোথায়? সুখ দেখল শেষ প্রান্তে একটা দরজা খুলে মহিলা ভিতরে মিলিয়ে গেল।ওদিকে আরেকটা সিড়ি আছে নাকি?একজন মহিলা এসে তার পাশের লোকটিকে ডেকে নিয়ে গেল। এই লোকটিও কি তারই মত চাকরির জন্য এসেছে?
একজন মহিলা এসে বলল,আপনি আসুন।
সুখ উঠে তার সঙ্গে একটা ঘরে গেল।একটা লোক টেবিল চেয়ার সাজিয়ে বসে আছে।সেই মহিলা তাকে বসতে বলে চলে গেল।
টেবিলের উলটো দিকের ভদ্রলোক ফাইল থেকে মুখ সরিয়ে বললেন,আপনি সিলেকটেড।শুনুন পনেরো দিন ট্রেনিং হবে।ট্রেনিং পিরিয়ডে পার ডে ভাতা একশো টাকা।নিন এখানে সই করুন।ভদ্রলোক খাতা এগিয়ে দিল।
সুখ স্বাক্ষর করতে ভদ্রলোক তার হাতে একশো টাকা ধরিয়ে দিল।
টাকাটা নিয়ে বলল,আমি তাহলে যেতে পারি?
হ্যা কাল বেলা তিনটে থেকে ট্রেনিং।সময় মত আসবেন।
কোথায় ট্রেনিং হবে?
এখানে আসবেন আমি নিয়ে যাব।
সুখর ধোয়াশা কাটে না।তাকে সিলেক্ট করা হয়েছে।কিন্তু কাজটা কি?মনে হচ্ছে ট্রেনিং দিয়ে কাজ শিখিয়ে নেওয়া হবে।মনে মনে হিসেব করে পনেরো দিনে দেড় হাজার টাকা।একটা দুশ্চিন্তা কাটলো।টাকাটা পকেটে রাখতে গিয়ে সার্টিফিকেটগুলো হাতে ঠেকল।
কেউ তার শিক্ষাগত যোগ্যতা জানতে চাইল না।ট্রেনিং হলে বুঝতে পারবে কোন বিষয়ে শিক্ষা দিতে চায়।ওদিকের সিড়ি দিয়ে নামবে ভেবে সুখ দক্ষিন দিকে এগিয়ে গেল।দরজা খুলে ঢুকতে যাবে একটা ষণ্ডা গোছের লোক এসে বলল,এদিকে কোথায় যাচ্ছেন?
নীচে যাবো।
উত্তর দিকের সিড়ি দেখিয়ে বলল,সিড়ি ওদিকে।
ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগে এই সিড়ি দিয়ে নামলে আপত্তি কেন?আবার ঘুরে উত্তর দিকে সিড়ির দিকে গেল। লিফট আছে তবু সুখ সিড়ি দিয়ে নামতে থাকে। তিনতলা থেকে দোতলায় নেমে দেখল আসার সময় দরজা বন্ধ ছিল এখন দরজা খুলেছে।সুখর কৌতূহল হল দক্ষিন দিকে সিড়ি দিয়ে নামতে বাধা দিল কেন। ভিতরে গিয়ে দেখল বা-দিকে একটা লম্বা মত ঘরে লোকজন অপেক্ষা করছে।আর ডানদিকে বিভিন্ন ডাক্তারের চেম্বার।অপেক্ষমান লোকজন মনে হয় ডাক্তার দেখাতে এসেছে। একপাশে টেলিফোন অপারেটার দু-কানে ফোন লাগিয়ে অনর্গল বকে যাচ্ছে।
ডাক্তার বাগচী? না এ সপ্তাহে হবে না।আপনি মুখার্জিকে দেখাতে পারেন--তা হলে নেক্সট উইক?...হ্যা নামটা বলুন...সকাল এগারোটা।
কেউ সম্ভবত ডাক্তারের এ্যাপয়ণ্টমেণ্ট চাইছে।দক্ষিন দিকে কিছুটা এগিয়ে যেতে দেখল দেওয়াল।তিনতলার থেকে দোতলা বেশ ছোট মনে হল। কিছুক্ষন এদিক ওদিক দেখে সিড়ি দিয়ে একতলায় নেমে এল।এদিক ওদিক ঘুরে দেখল অন্য কোনো দিকে সিড়ি নেই।তিনতলার থেকে সিড়ি নীচে নেমে এসেছে ।তাহলে কি সে ভুল দেখল?হুউম... ট্রেনিং-এ তো আসছে রহস্যটা বের করতে হবে।
রাস্তায় এসে বুঝতে পারে অনেক বেলা হয়ে গেছে।বাসে উঠতে ইচ্ছে করল না হাটতে থাকে।
আজকের মত ক্লাস শেষে ইচ্ছে করলে চলে যেতে পারেন।কিন্তু কোথায় যাবেন?স্টাফ রুমের একদিকে কয়েকজন কি নিয়ে যেন কথা বলছে।শুক্লাও ওদের মধ্যে আছে।ননদ ভাইওলেণ্ট ছেড়া ছেড়া কিছু শব্দ কানে আসছে।ছুটির ঘণ্টার জন্য অপেক্ষা করছেন দীপশিখা।কলেজ সার্ভিস থেকে বছর কয়েক আগে এসেছে শুক্লা।বিয়ে হয়নি বয়স বেশী নয়। দীপাদির সঙ্গে ওর খুব ভাব।
পার্কের কাছে এসে ফেবারিট কেবিনে ঢুকে সুখ দুটো টোস্ট আর চায়ের ফরমাস করল।পকেটে পয়সা থাকলে ভাবনা-চিন্তাগুলোও বেশ হালকা মেজাজের হয়।
বাসে উঠে জানলা ঘেষে বসল দীপশিখা।এম সি মানে মিতা চ্যাটার্জির ননদ ভাইওলেণ্ট হয়ে গেছে।শ্বশুর বাড়ী হতে বাপের বাড়ী রেখে গেছে শুক্লার কাছে শুনল।যেখানে যা শুনবে দীপাদিকে এসে বলা চাই।দীপশিখা মজা করে বলেছিলেন,চাকরি করছো এবার একটা বিয়ে করে ফেলো।
চারদিকে যা শুনছি বিয়ে করতে ভয় হয়।
যা শুনছো সেটাই সব নয়।চব্বিশ ঘণ্টায় দিন-রাত্রি দুই আছে।
শুনেছো মিসেস চ্যাটার্জির ননদের কথা।ওর হাজব্যাণ্ড নাকি আগের প্রেমিকার সঙ্গে বিয়ের পরও যোগাযোগ রাখে।
দীপশিখা বিরক্ত হন বলেন,আমি শুনতে চাই না।
মৌলালী আসতেই নেমে পড়লেন দীপশিখা।সিড়ি ভেঙ্গে তিনতলায় উঠে ল্যাচ ঘুরিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে চেঞ্জ করে পাখা ফুল স্পীডে দিয়ে বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে পড়লেন।মনে হল এই সময় কেউ যদি এককাপ চা এগিয়ে দিত।ফোন বাজছে। এখন আবার কে?ব্যাগ থেকে ফোন বের করে স্ক্রিনে চোখ যেতে মৃদু হেসে বললেন,পরীক্ষার খবর কি?
ভাল।মোমো তুমি কেমন আছো?
আর কেমন আছি।ডাক্তার চেঞ্জ করেও কিছু হল না।জানিস শনিবার একটা মজা হয়েছে।কলেজে গিয়ে মনে হল গ্যাস বন্ধ করেছি কি?একবার ভাবলাম বাড়ী ফিরে আসি আবার মনে হল শনিবার তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে যাবে।ক্লাসে মন দিতে পারছি না।দুশ্চিন্তা মাথায় জমাট বেধে আছে।বাড়ি ফিরে দরজা খুলে পাখা চালায় নি যদি কিছু হয়ে যায়। রান্না ঘরে গিয়ে নীচু হয়ে রেগুলাটরে হাত দিয়ে দেখলাম বন্ধ।ঊঃস যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো।
মোমো তোমায় একটা কথা বলবো?
কি কথা?এত ভণিতা করছিস কেন?
তুমি একজন সাইক্রিয়াটিস্টকে দেখাও--।
তুই কি আমাকে পাগল ভেবেছিস--।
মোমো শোনো--।
চুপ কর লঘু গুরু সব ভুলে গেলি?দীপশিখা ফোন কেটে দিলেন।
ঐটুকু মেয়ে যাকে সেদিন জন্মাতে দেখলাম--এদের মুখের কোনো আগল নেই।এখনো তো পাস করেনি--।
দীপশিখা রান্নাঘরে গিয়ে চায়ের জল চাপিয়ে দিলেন।চায়ের জল ফুটছে দীপশিখার মেজাজ ক্রমশ শান্ত হতে থাকে।মেয়েটাকে এভাবে বলা ঠিক হয় নি।এই হয়েছে মুষ্কিল আজকাল কি যে হয়েছে এমন মাথা গরম হয়ে যায়।
সুখ মেসে ঢুকে দেখল সবাই এসে গেছে।উপেনবাবু বললেন,আজ কোথায় কোথায় যাওয়া হয়েছিল?
ঐ একটু পার্ক এভেনিউয়ের দিকে গেছিলাম।প্লেজারের কথা চেপে গেল।এখনই কিছু বলা ঠিক হবে না। তার মনে নানা রকম প্রশ্ন উকি ঝুকি দিচ্ছে।ফ্রক পরা মেয়েটা তারপর সিড়ি দিয়ে নামতে যাওয়ায় বাধা দিল তাতেই সন্দেহটা দৃঢ়ীভুত হয়।
 
দ্বাচত্বারিংশৎ অধ্যায়



এক পক্ষ কালের শিক্ষন পর্ব।অনেক কথা অনেক ইতিহাস যুক্তি যার অনেক কিছুই সবার জানা পুনরাবৃত্তি করে দীর্ঘায়ত করতে চাইনা।যতদূর সম্ভব সংক্ষেপে ট্রেনিং পিরিয়ডের কথা বলে শেষ করতে চাই।
যথাসময় সুখ উপস্থিত।তিনতলায় উঠে জিজ্ঞেস করতে দক্ষিন দিকের সিড়ি দেখিয়ে বলল,এমার্জেন্সি দরজা দিয়ে চলে যান।
দেখল দরজার উপরে লেখা emargency. কাল খেয়াল করেনি।সিড়ি দিয়ে নীচে নেমে বুঝতে পারে দোতলার একটা অংশ দেওয়াল দিয়ে আলাদা করা।এদিকে আসতে হলে তিনতলা হয়ে আসতে হবে।এতেই সুখর সন্দেহ ঘনীভূত হয়।জিজ্ঞেস করে একটা ঘরে গিয়ে দেখল।ঘরের একদিকে উচু প্লাটফর্ম পিছনে একটা বড় স্ক্রিন। নীচে কয়েকজন বসে তার মধ্যে একজন মহিলা।মনে হয় এরা তারই মত ট্রেনী। সুখ ভিতরে ঢুকে এক পাশে বসল।তারপরেই ঢুকল আরেকজন মহিলা।একবার এদিক ওদিক দেখে সুখর পাশে গিয়ে বসল।মহিলা বসে বলল,আয় এ্যাম রেবেকা।রঞ্জন ইয়োর রিয়েল নেম?
তা জেনে তোমার কি হবে। মহিলার গায়ে পড়া আলাপ সুখর ভাল না লাগলেও ঠোটে হাসি টেনে ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানাল।
মহিলা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে বলল,তোমার কনট্যাক্ট নম্বরটা পেতে পারি?
আলাপ হতে না হতেই কনট্যাক্ট নম্বর সুখ বলল,আমার ফোন নেই।
দরজা দিয়ে একজন মহিলা ঢুকে প্লাটফর্মে উঠে গেলেন।বয় কাট চুল পরনে সাদা স্কার্ট বেশ স্মার্ট।মনে হল উনিই টিচার। সবাই উঠে দাড়ালো।
বি সিটেড প্লীজ।
সবাই বসে পড়তে একবার সবার দিকে চোখ বুলিয়ে বললেন,লেট আস স্টার্ট ফ্রম দা বিগিনিং অফ দা বিগিনিং--।
ম্যাম বাংলায় বলুন।একজন বলল।
ওকে আমরা শুরুর শুরুতে চলে যেতে চাই।দেওয়ালের স্ক্রিন নির্দেশ করে বললেন,এদিকে দেখো।
পর্দায় ভেসে উঠল জঙ্গলের মধ্যে কয়েকজন নারী পুরুষ।প্রত্যেকেই উলঙ্গ পুরুষদের মুখ দাড়ি গোফে ঢাকা।
এই হচ্ছে আমাদের পূর্ব পুরুষ।জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায় ক্ষিধে পেলে গাছের ফল মূল খায় তেষ্টা পেলে নদীর জল পান করে কামোত্তজিত হলে রমণ করে।অবাধ স্বাধীন জীবন--।
ম্যাম চুদলে বাচ্চা হতো না?
গুড কোশ্চেন।তখন অত বিধি বিধান ছিল না সতর্কতার কোন ব্যাপার ছিল না অবাধ খোলা মেলা জীবন।সন্তানের জন্ম হলে তাকে পালনের দায়িত্ব নিতে হত তার জন্মদাত্রীকে।জানোয়ারদের মধ্যে যেমন হয়।বাবা বলে কিছু ছিল না।এক নারী বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে মিলিত হত বাবা কে নির্ণয় সব সময় সম্ভবও হত না।
একজন দাঁড়িয়ে বলল,একটা কথা বলব?
অবশ্যই বলবে।
আচ্ছা ম্যাম ওরা কি জোর করে চুদতো?
ম্যাডাম হাসলেন বললেন,অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন। তখন এত নিয়ম কানুন ছিল না, ধর্ষণ বলেও কোনো কথা ছিল না।উভয়ের সম্মতিতে মিলিত হতো।অনেক সময় মেয়েরা পুরুষদের অনুরোধ করত।মিলন আর পাচটা স্বাভাবিক ইচ্ছের মত বিষয় ছিল। আর কিছু বলবে?
ম্যাম আপনি বলছেন নিয়ম কানুন ছিলনা তাই ধর্ষণ হতো না?
বোসো।সে কথায় পরে আসছি।হিংস্র জানোয়ার হতে বাচতে গুহায় বাস করত।আগুন আবিষ্কার করল।লোহা আবিষ্কার করল।জীবন যাপনের রীতি বদলাতে থাকে।সমাজ গঠিত হল।সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য তৈরী হল বিধি বিধান।শৃংখলার স্বার্থে তাদের মধ্যে একটা নতুন অভ্যাস এল যাকে বলা যায় সংযম। যাকে আত্মনিয়ন্ত্রনও বলা যেতে পারে।বিবাহ প্রথা এল যার ফলে এক নারীকে এক পুরুষেই সন্তুষ্ট থাকতে হত।শারীরিক গঠণের ফলে পুরুষদের কিছু সুবিধে ছিল তার সুযোগ নিয়ে বিধি বিধান তৈরী হল পুরুষদের স্বার্থ সাপেক্ষে।এক কথায় পুরুষতান্ত্রিক সমাজ।সতীত্বের নামে বেড়ি পরিয়ে নারী স্বাধীনতা খর্ব করেছি।পুরুষ যা ইচ্ছে করতে পারবে কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে পদে পদে বাধা।
এবার আমরা প্লেজারের কথায় আসি।প্লেজার একটি সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান।সমাজে বিধি বিধান থাকলেও রোগব্যাধি সেই বিধানের অধীন নয়।একজন পিপাসার্ত তোমার কাছে জল চাইলে তুমি কি তাকে জল দেবে না?মানুষ এখানে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসে।কারো দাতের সমস্যা কারো চোখের সমস্যা কারো বা হার্টের সমস্যা।এখানে অনেক অভিজ্ঞ চিকিৎসক আছেন।ডাক্তারের কাছে সব কথা খুলে বলতে হবে কোনো কথা গোপন করলে যথাযথ চিকিৎসা হবে না।আবার সেসব কথা গোপন রাখতে হবে।আমাদের এখানে সিক্রেসির মূল্য অপরিসীম।বলা যায় সিক্রেসি আমাদের মূলধন।এখানে যারা আসে বিভিন্ন রকম তাদের চাহিদা।আমাদের কাজ যথাসাধ্যে সেই চাহিদা নিরসন করা।সংযম দিয়ে সব কিছু নিয়ন্ত্রন করা যায় না।এতে অনেক সময় বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।প্রাকৃতিক নিয়মকে বিধান দিয়ে সব সময় নিয়ন্ত্রন করা যায় কি?নদীতে বাধ দিয়ে জলকে নিয়ন্ত্রন করা হয় অনেক সময় বাধ ভেঙ্গেও যায়।আমরা বিধান গড়েছি আবার স্বার্থের কথা ভেবে বিধান ভাঙ্গতেও বাধ্য হয়েছি। একটা কথা আছে পুত্রার্থে ক্রিয়তে ভার্যা। মহাভারতে সত্যবতীর দুই বধূ অম্বিকা অম্বালিকারর সন্তান না হওয়ার রাণী সত্যবতীর অনুরোধে তার জ্যেষ্ঠ পুত্র ব্যসদেবের সহায়তায় পুত্রলাভ করেছিল।কুমারী অবস্থায় কুন্তী সূর্যকে কামনা করেছিল। পরবর্তীকালে তোমরা শুনে থাকবে টেস্ট টিউব বেবির কথা।
সুখ কোনো কথা না বললেও মন দিয়ে শুনছিল বুঝতে চেষ্টা করছিল ম্যাডাম ঠিক কি বলতে চায়।অবৈধ মিলনকে বৈধতা দিতে চাইছেন।প্লেজারে কি ধরণের কাজ করতে হবে অল্প অল্প বুঝতে পারে।মনে পড়ল ধর্মতলার কথা।সেই ভদ্রলোক উচু হয়ে কি দেখতে চাইছিলেন।
উপযাচক হয়ে তাকে কেন কার্ড দিয়েছিলেন জলের মত পরিষ্কার।মনে মনে স্থির করে আর এখানে নয়।
পেশেণ্টের গুরুত্ব আমাদের কাছে সর্বাধিক।কোনো ভাবে ভেনের‍্যাল ডিজিসে আক্রান্ত না হয় সেদিকে আমরা যত্নবান।
আর বলতে হবে না একেবারে পরিষ্কার কেন রক্ত পরীক্ষা করেছিল।
আজ এই অবধি থাক।সবাই প্লেজারের যোগ্য সেবক হয়ে ওঠো এই কামনা করি।
ম্যাডাম পাছা দুলিয়ে হাই হিলের খট খট শব্দ তুলে বেরিয়ে গেলেন।
ক্লাস শেষ সুখ উঠে পড়ল।রেবেকা উঠে পাশের ছেলেগুলোর সঙ্গে গল্প করতে থাকে। এরা সাধারণ মেয়ে নয়।কন্ট্যাক্ট নম্বর চাইছিল থাকলেও দিত না।সিড়ি দিয়ে তিনতলায় উঠে লিফট দিয়ে নীচে নেমে গেল।হাটতে হাটতে কলেজ স্ট্রিটে এসে খেয়াল হয় তাড়াতাড়িতে আজকের এ্যালাউন্সটা নেওয়া হয়নি।
সুখদা স্থির করল আর প্লেজারে যাবেনা।আবার শুরু হল কলকাতা পরিভ্রমণ।এইভাবে ঘুরতে ঘুরতে একদিন একটা ল্যাম্প পোস্টে সাটা কাজের বিজ্ঞাপন।চোখের সামনে দেখতে পেল আশার আলো।ঠিকানা লিখে নিয়ে পরদিনই খুজতে খুজতে গিয়ে পৌছালো।কথাবার্তা বলে সুখকে তাদের পছন্দ হলেও গোল বাধল পরিচিতি নিয়ে।পাচ হাজার টাকা সিকিউরিটি রাখতে হবে।
মেয়েটা অনেকদিন ফোন করে না।দীপশিখা কলেজ থেকে ফিরে ফোন করল।
কিরে আমার উপর রাগ করেছিস?
রাগ করব কেন?আসলে পরীক্ষা নিয়ে একটু ব্যস্ত আছি তাই।কেমন আছো পিসিমণি?
পিসিমণি?রাগ তাহলে পড়েনি?
না না মোমো আমি তোমাকে হার্ট করতে চাইনি।তোমাকে মোমো বললেও তুমি আমার শ্রদ্ধেয় বাপি-মামণির মত।
থাক থাক হয়েছে।ভাল করে পরীক্ষা দে,এখন রাখছি।
 
ত্রয়োশ্চত্বারিংশৎ অধ্যায়



মাথার নীচে হাত রেখে সুখ চিত হয়ে শুয়ে আছে।মাথার মধ্যে আকাশ পাতাল চিন্তা।সীতেশ সুধীনের সকাল সকাল বেরতে হবে।ওরা পুতুলদিকে বলে গেল ভাত ঢাকা দিয়ে রাখতে এসে খাবে।কাকু স্নানে গেছেন।মাস গেলে মেস ভাড়া অথচ পকেটে পয়সা নেই।শেষে কি ফুটপাথে গিয়ে থাকতে হবে।উপেনবাবু তোয়ালতে মাথা ঘষতে ঘষতে ঢুকলেন।সুখকে শুয়ে থাকতে দেখে বললেন,কি ব্যাপার আজ বেরোবে না?উপেনবাবুর দিকে তাকিয়ে সুখ বলল,হ্যা বেরোতে তো হবেই।একা একা মেসে কি করব?
রেজাল্ট বেরোলে কি করবে ভেবেছো?
সুখ উঠে বসে বলল,না এখনো তেমন কিছু ঠিক করিনি।
তোমাকে দুটো কথা বলি শোনো।জীবনে একটা লক্ষ্য ঠিক করতে হয়,এলোমেলো ছোটাছুটি করলে পরিশ্রমই সার কোনো কিছু করা যায় না।আর দ্বিতীয় সুযোগ বার বার আসে না।যে সুযোগকে কাজে লাগাতে পারে সাফল্য তার পায়ে চুমু খায়।হে-হে-হে।
কি বলবে সুখ। কাকু তার অবস্থা জানেন না,কাকুর দোষ নেই।লক্ষ্য সাফল্য নিয়ে ভাবার অবকাশ নেই তার এখন চিন্তা কালকে কি করে চলবে।সুখ তোয়ালে নিয়ে স্নানে গেল।
উপেনবাবু খেতে বসে গেছেন।রঞ্জনের জন্য অপেক্ষা করতে গেলে অফিসের দেরী হয়ে যাবে।বিশ্বাসদা বলছিলেন ছেলেটি বেশ মেধাবী।বেশি কথা বলে না তবু দেখলে বোঝা যায় বেশ সমস্যার মধ্যে আছে।
সুখ বাথরুম থেকে ফিরে আসতে উপেনবাবু বললেন,ভাই বসে পড়েছি।
ঠিক আছে আপনাকে তো আবার অফিসে যেতে হবে।পুতুলদি আমাকেও দিয়ে দাও।
কাকু অফিস চলে গেলেন।পুতুলদিও চলে গেল।মেসে এখন সুখ একা।নিরিবিলিতে একলা হলেই দুশ্চিন্তা দাত নখ বের করে সামনে এসে দাড়ায়।এক্টু গড়িয়ে নেওয়া যাক ভেবে চৌকিতে গা এলিয়ে দিল।না তাকিয়েও বুঝতে পারে জানলার ফাক দিয়ে বাসুদির চোখ উকি দিচ্ছে।সে দেখতে পায়নি এমন ভাব করে শুয়ে থাকে।চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে।সুখ উঠে বসল,ঘুমিয়ে পড়লে রাতে ঘুমোতে অসুবিধে হবে। তৈরী হয়ে বেরিয়ে পড়ল।অনির্দেশ হাটতে থাকে।গোপালনগর ছেড়ে আসার পর কাকুর সঙ্গে আর দেখা হয়নি।এ সময় কাকুর সঙ্গে কথা বলতে পারলে ভাল হত।বেশ সুন্দর কথা বলেন।কাকুর সঙ্গে কথা বললে মনে জোর পাওয়া যায়।রাস্তার দুপাশে সারি সারি দোকান,দোকানে কর্মচারিরা খদ্দের সামলাচ্ছে।এরকম একটা কাজও যদি পেতো।বইয়ের দোকানের কাজ ভাল লাগে।সারাদিন বই ঘাটাঘাটি করতে ভাল লাগে।সীমা তাপসরা পাস করলে কি আরো পড়বে?নাকি ওরা বিয়ে করবে?ছেড়া ছেড়া চিন্তা মাথার মধ্যে ঘোট পাকায়।সিধুর বাবার বয়স হয়েছে ওই একাই হয়তো এখন দোকান সামলাবে।উপেনকাকা বলছিলেন সুযোগ বার বার আসেনা।তার জীবনে সুযোগ এল কই?বরং একের পর এক দুর্যোগ।বাবা মারা গেল মাও মারা গেল ছিল একটা মাথা গোজার মত ঠাই।মামা তাও বেচে দিল।
দীপার বিয়ের কথা শুনেছিল।দীপার কি বিয়ে হয়ে গেছে?
পকেট থেকে রুমাল বের করে ঘাম মুছলো।কোনো কোনো রাস্তার দুধারে গাছ থাকে।সুখর বেশ ভাল লাগে সেইসব রাস্তা।আরে এ কোথায় এল পার্ক এভেনিউ এসে পড়েছে।ওই তো প্লেজার সামনে।যাক ভালই হল একশো টাকা সেদিন নেওয়া হয়নি।টাকার খুব দরকার।লিফটে উঠে একেবারে তিনতলায়।টাকার মায়া ছেড়েই দিয়েছিল এসেছে যখন নিয়ে নেওয়া যাক।উকি দিয়ে দেখল উনি একাই বসে কি লেখালিখির কাজ করছেন।সুখ কাছে গিয়ে বলল,দ্বিতীয় দিনের এ্যালাউন্স নিতে ভুলে গেছি।
ভদ্রলোক এমনভাবে তাকালেন যেন চিনতেই পারছেন না।নাক কুচকে বললেন,কি ব্যাপার বলুন তো?
মনে হচ্ছে চিনতেই পারছেন না।
আপনার মত হাজারো লোক এখানে আসছে যাচ্ছে কজনকে চিনব?
আপনি টাকা দেবেন না?
কিসের টাকা?
উত্তপ্ত কথাবার্তা হতে একজন ঢুকলেন।ভদ্রলোক উঠে দাড়ালেন।তাকিয়ে দেখলাম সেই ভদ্রলোক ধর্মতলায় ইনিই আমাকে কার্ড দিয়েছিলেন।সুখকে দেখে ভদ্রলোক বললেন,আরে মি বসু?কি ব্যাপার?
সুখ বিষয়টা খুলে বলল।ভদ্রলোক কাকে ডাকলেন,এই কালুয়া।
একটা ষণ্ডা মত লোক এসে বলল,বলুন স্যার।
ভদ্রলোক বললেন,সেদিনের আর আজকের দুদিনের টাকা দিয়ে দেবেন।কালুয়া বাসুকে ক্লাসে পৌছে দিয়ে আমার কথা বলবি।
সুখ কালুয়ার পিছে পিছে গিয়ে সিড়ি দিয়ে দোতলায় নেমে গেল।ক্লাসে ঢুকে ম্যামকে বলল,বাসু স্যারের লোক এখানে ক্লাস করবে।যান বাসুজী।
কালুয়া চলে গেল।সুখ ভিতরে গিয়ে বসল।
ম্যাম বললেন কি বলছিলাম?
জেনিট্যাল অরগ্যান।
হ্যা দেখুন দুটো জেনিট্যাল অরগ্যান দু রকমের।
পর্দায় ভেসে উঠল বিশাল পুরুষাঙ্গ এবং যোনী।ম্যাম সেদিকে দেখিয়ে বললেন,একটি আরেকটি পরিপুরক।এগুলোর আলাদা ফাংশন আছে।বিধাতা নিষ্ক্রিয় রাখার জন্য দেয় নি।একটি যত শক্তিশালী হোক এককভাবে কিছুই করতে পারবে না।একটি অপরটির উপর নির্ভরশীল।এটি বিভিন্ন নামে পরিচিত কেউ বলে ডিক কেউ কক কেউ মাকু বাড়া ইত্যাদি এটিরও তেমনি পুসি চুত গাব্বু খোন্দল উত্তেজনা বসে কত রকম বলা হয়।এই দুইয়ের মিলনে হয় সৃষ্টি।ভূমিতে বীজ পড়লে যেমন অঙ্কুর বের হয় তেমনি পুসিতে বীর্লেয পড়লে গর্ভ ধারন করে।সমাজ পরিবার হবার পর এগুলোর ব্যবহারে রেস্ট্রিকশন ফলে আমাদের সংযত আচরন করতে হয়।অনেকে বিকল্প পথ কলা মূলো দিয়ে কিম্বা হস্ত মৈথুন ইত্যাদি করে উত্তেজনা প্রশমিত করে। এর কারসামাজিক বিধি বিধানের মধ্যেই আছে কন্ট্রাডিকশন। উত্তেজনা কোনো দোষনীয় কিছু নয় প্রাকৃতিক ব্যাপার।যেমন ক্ষিধে পায় তেষ্টা পায়।
পুরুষের লিঙ্গ প্রস্রাব নির্গমনের পথ হলেও লিঙ্গ প্রধানত সঙ্গম যন্ত্র এবং এটি প্রকৃতি সঙ্গমের উপযোগী করেই গড়েছে।স্বাভাবিক অবস্থায় দুই-তিন ইঞ্চি লম্বা এক থেকে সওয়া ইঞ্চির মত মোটা হয়।তলপেটের নীচ থেকে শিথিলভাবে ঝুলতে থাকে।এর মধ্যে কোনো অস্থি না থাকায় স্পঞ্জের মত নরম।অসংখ শিরা উপশিরা তন্তু স্নায়ুর দ্বারা গঠিত।
ধান ভাঙ্গতে শিবের গাজন সুখ বিরক্ত হয়।মনে মনে ভাবে আবার সে এখানে ট্রেনিং নিচ্ছে।উপেনকাকু বলছিলেন,সুযোগ বার বার আসেনা।এই কি সেই সুযোগ?ঠিক আছে সুযোগ হাতছাড়া করবে না।এখান থেকে কিছু টাকা জমলে তারপর না হয় এখানে আসবে না।
হ্যালো বাসু--।
পাশের একটি ছেলে খোচা দিয়ে ইশারা করে ম্যাম তাকে ডাকছেন।সে আবার বাসু হল কবে?সুখ ম্যামের দিকে তাকাল।
কি ব্যাপার,কোনো সমস্যা?
শুনছি ম্যাম।
শুধূ শুনলে হবে,ছবির দিকে দেখো।হ্যা কি বলছিলাম লিঙ্গ হ্যা লিঙ্গের অভ্যন্তর ভাগ তিন ভাগে বিভক্ত।মধ্যস্থলে যে ছিদ্রটি দেখছেন এটিকে বলে মূত্রনালী।শুক্রও এই পথ দিয়ে নির্গত হয়।উত্তেজিত অবস্থায় শিরা উপশিরা দিয়ে রক্ত প্রবাহের ফলে ইহার আয়তন বৃদ্ধি হয়।উত্তেজিত অবস্থা চার থেকে ছয়-সাত ইঞ্চি লম্বা হয়--।
একটি ছেলে দাড়াতে ম্যাম বললেন,কিছু বলবেন?
ম্যাম কৃত্রিম উপায়ে আয়তন বাড়ানো যায় না?
অবশ্যই যায়।সেই আলোচনায় আমরা পরে আসছি।প্রাকৃতিক কিছু উপায় আছে তাছাড়া বিভিন্ন মেডিসিন আছে।তবে মেডিসিন ব্যবহার না করাই ভাল।এতে বিপরীত ফল হবার সম্ভাবনা।যাক এবার আমরা ভ্যাজাইনা নিয়ে কয়েকটি কথা বলব।ভ্যাজাইনা একটা জটিল যন্ত্র। পেটের নিচে দুই উরু যেখানে মিশেছে সেখানে ত্রিভুজাকার অঞ্চলকে বলে যোনী প্রদেশ।উপর থেকে নীচে ক্রমশ সরু হয়ে মলদ্বার অবধি চলে গেছে।যোনি প্রদেশের উপর দিককে বলে কামাদ্রি।কামাদ্রিতে কৈশোরে লোম উৎপত্তি হয়।অনেকের লোম পছন্দ নয় তারা সেভ করে পরিস্কার করে দেয়।কামাদ্রির নীচে লক্ষ্য করো দুইটি ঠোটের মত নীচের দিকে নেমে গেছে একে বলে বৃহদোষ্ঠ।এখানে তৈল নিঃসারক গ্রন্থি আছে উত্তেজনা কালে যোনিপথ তৈলাক্ত করে দেয়।মেয়েরা স্বাভাবিকভাবে দাড়ালে এই বৃহদোষ্ঠের জন্য যোনীপথ দেখা জয়ায় না।অবশ্য কয়েকটি সন্তান হবার পর বৃহদোষ্ঠ ফাক হয়ে যায়।বৃহদোষ্ঠের ভিতরে ওইরকম আরও দুটি ঠোটের মত আছে তাকে ক্ষুদ্রোষ্ঠ বলে।ক্ষুদ্রোষ্ঠের উপরের দিকে ভিতরে ছোটো মটর দানার মত থাকে ভগাঙ্কুর।ভগাঙ্কুর অত্যন্ত স্পর্শকাতর।সামান্য স্পর্শে সারা শরীর শিহরিত হয়ে ওঠে,পশম দাঁড়িয়ে যায়।তার নীচে ক্ষুদ্র ছিদ্র হচ্ছে মূত্রনালী তার নীচে যোনীপথ।যোনীপথে শেষে জরায়ূ।জরায়ু একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।
ম্যাম লক্ষ্য করলেন ক্লাসে একটা শিথিল্ভাব এসেছে।বাকীটা কাল আরও ইণ্টারেস্টিং করে বোঝালে হবে।তিনি ক্লাস ডিসমিস ঘোষণা করলেন।
সুখ বেরিয়ে আগে পেমেণ্টের ওখানে গেল।ভদ্রলোকের ব্যবহার একেবারে বদলে গেছে জিজ্ঞেস করলেন,আপনি মুনাব্বার সাহেবের লোক?
সুখ কোনো জবাব দেয়না।খাতা এগিয়ে দিতে সই করলে দুশো টাকা তাকে দেওয়া হল।




 

চতুশ্চত্বারিংশৎ অধ্যায়



আজ ট্রেনিং-র শেষ দিন।এ-কদিনে যা আলোচনা হল তা তার কি কাজে লাগবে।দত্তক বাভ্রব্য কোকা পণ্ডিত বাৎসায়ন অনেক ঋষি মুনির কথা শোনা হল।কামশাস্ত্র এত বিশাল জানা ছিলনা।মুনি ঋষিরা বিষয়টি নিয়ে এত ভেবেছেন যখন নিশ্চয়ই বিষয়টির গুরুত্ব আছে।যারা দাম্পত্য জীবন যাপন করে তাদের কজন এইসব তত্ত্বকথা জানেন।তবু তারা সুখে জীবনাতিপাত করে।যত জানছে নিজেকে তত ছোটো মনে হয়।কবি বলেছেন,"বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি।" যথার্থ্যই বলেছেন জানার শেষ নেই।মেসের সবাই বেরিয়ে গেছে সুখ বেরোবার জন্য তৈরী হতে থাকে।বালিশের নীচ থেকে টাকাগুলো বের করে গুনলো। মোটামুটি শ-পাচেক টাকা জমেছে।মেসের টাকার ব্যবস্থা হয়ে গেছে। সুখর চিন্তা ট্রেনিং-এর পর কি হয়।বিশেষ করে বেতন কতটাকা হবে।কিছু টাকা জমলেই আর এখানে নয়।পাঁচ-ছ হাজারও যদি মাস গেলে পাওয়া যায় সুখর আপত্তি নেই।মায়ের ইচ্ছে ছিল তার মনু বাবার মত অধ্যাপনা করুক।হাতের তালুর পিছন দিয়ে চোখ মুছলো।
তাকে পড়াবার জন্য মা লোকের বাড়ী কাজ নিয়েছিল।মাগো মনুকে তুমি ক্ষমা কোরো।মায়ের কথা ভাবলে মেয়েদের প্রতি শ্রদ্ধায় মনটা আনত হয়।সত্যি সংসারে মেয়েদের অবদানের হিসেব কজনই বা রাখে।
একটা কথা ঠিক পুরুষদের জন্য নানা উপায় আছে কিন্তু মেয়েরা বড় অসহায়।কোনো কিছু জোর করে দমন করলে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।বিদ্যাসাগর মশায় বিধবা বিয়ে চালু করে একটা বড় কাজ করে গেছেন।মনে মনে বিদ্যাসাগরকে প্রণাম করল সুখ।যতদিন বেচে ছিলেন মানুষের সেবা করে গেছেন।সেবা কথাটা বৈচিমাসীর মুখেও আগে শুনেছে।হঠাৎ খেয়াল হয় মায়ের কথা কি বৈচিমাসী জেনেছে।জানলে খুব কষ্ট পাবেন।মাকে খুব ভালবাসতেন।একজন মুসলিম মহিলার সঙ্গে মায়ের এই সখ্যতা সুখকে খুব অবাক করে।বৈদ্যবাটির ঐ মহিলার কি হল কে জানে। ওর স্বামী কি ওকে তালাক দিয়েছে? সেই মহিলার কাকতি ভরা করুণ মুখটা এখনও চোখে ভাসছে।
রেবেকার সঙ্গে কদিন দেখা হয় নি।মেয়েদের আলাদা ক্লাস হয়।মেয়েরা এই কাজে আসে মনে হয় অভাবের তাড়নায় বাধ্য হয়ে।অথচ রেবেকার কথাবার্তা শুনলে মনে হয় না ওদের অবস্থা খুব হারাপ।ওর আবার মোবাইল ফোন আছে।কলেজ স্ট্রিটে আসতেই কানে এল কে যেন তার নাম ধরে ডাকছে।ঘাড় ফিরিয়ে তাকাতেই দেখল আয়ুষী।কেলো করেছে একেই দেরী হয়ে গেছে।
কিরে কোথায় যাচ্ছিস?কাছে এসে বলল আয়ুষী।
এই একটু বেরিয়েছি,তুই এখানে?
কলেজে এসেছিলাম কোনো খবর আছে কিনা?
খবর পেলি?
শুনলাম মাস খানেকের মধ্যে বেরোবে।অনেকদিন পরে দেখা হল চল কোথাও গিয়ে বসি।
নারে আয়ুষী আজ হবে না--।
আচ্ছা তুই কি আমাকে এড়িয়ে যেতে চাস?সেকথা সোজাসুজি বললেই পারিস।
মেয়েরা রেগে গেলে খারাপ লাগে।তার ব্যবহারে কোনো মেয়ে অসন্তুষ্ট হোক সুখর ভাল লাগে না।বলল,এড়িয়ে যাব কেন?বরং তোর সঙ্গে কথা বলতে আমার ভাল লাগে।
থাক মন রাখা কথা বলতে হবে না।যেখানে যাচ্ছিস যা।আয়ুষী কলেজের দিকে চলে গেল।
সুখ স্বাস্তির শ্বাস ফেলে দ্রুত হাটতে থাকে।আজ তাকে যেতেই হবে।আজই জানা যাবে তার চাকরির ব্যাপারে।
ট্রেনিং শুরু হয়ে গেছে।লেকচার করছেন লিজা ম্যাম।
ইতিপূর্বে অনেক তত্ত্বের কথা হয়েছে।বাৎসায়নের চৌষট্টি কলার কথাও বলা হয়েছে।এখন আমরা কেবল প্রচলিত--।
আসবো ম্যাম?
কি ব্যাপার?
ম্যাম ট্রাফিক জ্যামের জন্য--।
ট্রাফিক জ্যাম হতে পারে হাতে এটা নতুন কোনো কথা নয়।
আর হবে না ম্যাম।
ফ্রম দা ভেরি বিগিনিং ইউ আর ইরেগুলার।যাও জায়গায় গিয়ে বোসো।লুক এ্যাট দা স্ক্রিন।
ম্যামের পিছনের পর্দায় ভেসে উঠল একটি মহিলা এবং পুরুষ পরস্পর চুম্বন করছে।
দেখো জিভটা অন্যের মুখে প্রবিষ্ট করে--দেখছো?
তারপর মহিলাটি পুরুষটির জিপার খুলে বাড়াটা বের করে হাত দিয়ে চামড়াটা খোলে বন্ধ করে তারপর মুখে নিয়ে ভিতর বাহির করতে থাকে।ম্যাম বললেন,দিস ইজ হ্যাণ্ড জব।পেনিসটিকে উত্তেজিত করা হচ্ছে।এদিকে দেখো পুসি লিকিং।
পর্দায় ভেসে ওঠে মহলা চিত হয়ে শুয়ে পুরুষটি নীচু হয়ে যোনীতে মুখ ডুবিয়ে আছে।
ক্লায়েণ্টরা পুসি লিকিং খুব প্রেফার করে।দে এনজয় ভেরি মাচ। কামিং রিতা।
সবাই তাকিয়ে দেখল একটি বছর পচিশের মেয়ে ঢূকে সোজা প্লাট ফর্মে চলে গেল।
ম্যাম সামনের দিকে তাকিয়ে হাই ইউ ইউ এ্যাণ্ড ইউ কাম হেয়ার।তিন জন উঠে মঞ্চে চলে গেল।সুখ আর একজন বসে লক্ষ্য করে কি হতে চলেছে।ম্যাম মেয়েটির বুকের বোতাম খুলে স্তন বের করে দিয়ে একজনকে বললেন,লিক ইট।
একজন নীচু হয়ে স্তনের বোটা চুষতে লাগল।
ওহ নো।হচ্ছে না,দুগ্ধ পান করছো?দেখো।ম্যাম জিভটা বের করে কাপাতে থাকেন।তারপর বললেন,দিস ইজ লিকিং।ইউ ট্রাই ইট।আরেকজনকে বললেন।সে জিভ দিয়ে স্তন চাটতে লাগল।
ম্যাম বললেন,ওগ গড!হচ্ছে না হচ্ছে ।আমাকে দেখো ম্যাম এবার নিজে মেয়েটির স্তনের বোটার উপর জিভটা বোলাতে লাগলেন।
আণ্ডারস্টাণ্ড?
সবাই বলল, ইয়েস ম্যাম।
সুখ দেখল মেয়েটি নির্বিকার কোনো অনুভুতি নেই চুপ করে দাঁড়িয়ে।
পুসির উপরও এভাবে বোলাতে হয়।মেয়েদের এটা খুবই পছন্দ।হাই বসু কাম হেয়ার।
সুখ মঞ্চের দিকে এগিয়ে গেল।ম্যাম জিজ্ঞেস করলেন,কিভাবে লিক করে বুঝছো?
হ্যা ম্যাম।ঘাড় নেড়ে সুখ বলল।
তারপর যা হল সুখ তার জন্য প্রস্তুত ছিল না।লিজা ম্যাম বসে মেয়েটির ফ্রক তুলে প্যাণ্টি নামিয়ে দিয়ে বললেন,লিক ইট।
পেচ্ছাপের জায়গায় মুখ দিতে প্রবৃত্তি হচ্ছিল না আবার মুখের উপর না বলতে পারে না।সুখ দম বন্ধ করে মেয়েটির পায়ের কাছে বসে দুই আঙুলে বৃহদোষ্ঠ সরিয়ে জিভটা ভগাঙ্কুরে বোলাতে মেয়েটি ই-হি-ই-ই করে দু-পা ঈষৎ ফাক করে দিল।
লিজা ম্যাম বললেন,ভেরি গুড। নাউ গো টু ইয়োর সিট।
সবাই এসে নিজের জায়গায় বসতে ম্যাম বললেন,নাউ লুক এ্যাট দা স্ক্রিন।
স্ক্রিনে দেখা গেল ছেলেটি শুয়ে আর মেয়েটী উপরে উঠে বাড়াটা নিজের গুদে ভরে নিয়েছে।
ম্যাম বললেন,এখানে মেয়েটি সক্রিয় তুলনায় ছেলেটি নিষ্ক্রিয়।একে বলে কাউ গার্ল।
একজন দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,ম্যাম এভাবে চোদালে আরাম হয়?
লিজা ম্যাম কিছুক্ষন তাকিয়ে বললেন,আরাম বা সুখ নয়,উদ্দেশ্য আনন্দ।নাউ লুক দিস ইজ ডগি স্টাইল।
মেয়েটি খাতে হাতের ভর দিয়ে পাছা উচু করে আছে আর লোকটি পাছার ফাক দিয়ে ঢুকিয়ে কোমর নাড়িয়ে পিছন থেকে ঠাপিয়ে চলেছে।মেয়েটি মুখ বিকৃত করে উম-আ..উম-আ শব্দ করছে।সুখর দেখে খুব কষ্ট হয় লোকটি জানোয়ার নাকি?এক্টু পরেই দেখল মেয়েটি পিছন ফিরে হাসছে।সুখ আশ্বস্থ হয়।
লিজা ম্যাম বলতে থাকেন,ডগিতে কেউ কারো মুখ দেখতে পায় না কেবল অনুভব করে।এরপর দেখুন মিশনারি।
পর্দায় ভেসে উঠল মেয়েটি চিত হয়ে হাটু ভাজ করে বুকে চেপে ধরেছে।লোকটি সামনে থেকে ঠাপিয়ে চলেছে।
লিজা ম্যাম বলেন,এই অবস্থায় একে অপরকে দেখতে পায় চুম্বন করতে পারে।এটি মেয়েদের বেশ পছন্দ।আমাদের সময় হয়ে আসছে।আপনারা কাল ঠিক দশটার সময় উপস্থিত হবেন।আপনাদের চাকরি সংক্রান্ত সব জানানো হবে আর কিছু এ্যাডভাইস করা হবে যা প্লেজারের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।আপনাদের জন্য রইল আমার শুভ কামনা।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top