Please follow forum rules and posting guidelines for protecting your account!

ছুঁয়ে থাক মন by Neelsomudra (1 Viewer)

Welcome to Nirjonmela Desi Forum !

Talk about the things that matter to you!! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today!

Ochena_Manush

Special Member
Elite Leader
Joined
Aug 12, 2022
Threads
451
Messages
27,270
Visit site
Credits
533,221
LittleRed Car
Automobile
Strawberry
Audio speakers
শিমুলপুর স্টেশনে শুভ যখন নামলো তখন সূর্যদেব মাথার ওপরে বিরাজমান। সেই সকাল ছটায় হাওড়া থেকে প্যাসেঞ্জার ট্রেন ধরে এই দুপুর 12 টা নাগাদ নামলো। সকালে ট্রেনে তুলে দিতে এসেছিল শুভর বাবা। শুভর এটাই প্রথম একা একা ট্রেন যাত্রা। তাও আবার এতটা রাস্তা। মা বাবার একটু চিন্তা হয়েছিল বইকি। তাও শুভ এবার বড় হয়েছে। একা একা বাইরে তো যেতেই হবে এবার থেকে। তাই অনেক অনুরোধের পর বাড়ি থেকে ওকে ছাড়তে রাজি হয়েছে। তাও গন্তব্য মাসির বাড়ি সেই জন্যেই। নাহলে শুভর বাবা সুবীর বাবু ওর সাথেই আসতো।
শুভর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা এক সপ্তাহ আগে শেষ হয়েছে। কথা ছিলো পরীক্ষা হলেই এবার অনু মাসির বাড়ি শিমুলপুর বেড়াতে যাবে। আজ পর্যন্ত একবারও মাসির বাড়ি যাওয়া হয়নি। তার কারন পড়াশোনার চাপ। এবার মাসীও বার বার করে বলেছে শুভকে যাওয়ার জন্যে। অনু মাসী ওর নিজের মাসী না। শুভর মা পাপিয়া দেবীর খুড়তুত বোন। নিজের কোনো মাসি না থাকায় অনু মাসিকেই ছোট থেকে নিজের মাসির মত জেনে এসেছে শুভ। তবে অনুর বিয়ের পর থেকে ও খুব বেশি আর আসতে পারেনি শুভ দের বাড়িতে। এত গুলো বছরে হাতে গোনা কয়েকবার ই নানা অনুষ্ঠানে শুভর দেখা হয়েছে অনু মাসির সঙ্গে। তবে ফোনে যোগাযোগ বরাবরই আছে।
শুভকে একা না ছাড়তে চাওয়ার একটা কারণও অবশ্য আছে। তা হলো, ছোট থেকেই শুভর বোর্ডিং থেকে পড়াশোনা। এর কারণ, সুবীর বাবু আর পাপিয়া দেবীর একমাত্র সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা। ছেলে এমনি স্কুলে পড়লে কুসঙ্গে পড়ে খারাপ হয়ে যাবে। তাছাড়া সুবীর বাবু আর পাপিয়া দেবী দুজনেই চাকরি করেন। বাড়িতে শশুর শাশুড়ির ভরসায় রাখলে ছেলে মানুষ হবে না। তাই এই ব্যবস্থা। ক্লাস ফাইভ থেকে এই টুয়েলভ অব্দি শুভ বোর্ডিং এই কাটিয়েছে। এত গুলো বছর বোর্ডিং এর কড়া শাসনে কাটানোর ফলে শুভর আর পাঁচটা ছেলের মত সামাজিক দক্ষতা গড়ে ওঠেনি। একদম শান্ত শিষ্ট গোবেচারাটি হয়েই রয়ে গেছে। এই বোর্ডিং স্কুলের চাপেই কথাও বেড়াতে যেতে পারেনি শুভ। যদিও এতদিনে সুবীর বাবু আর পাপিয়া দেবী বোর্ডিং এ পড়ার এই খারাপ দিকটি সম্বন্ধে অবগত হয়েছেন। এবং নিজেদের ভুল কিছুটা হলেও অনুধাবন করতে পেরেছেন। তাই শুভ যখন একা মাসির বাড়ি যাবার জন্যে এবার জেদ ধরলো তখন তারা প্রথমে কিছু আপত্তি করলেও এর গুরুত্ব উপলদ্ধি করে শেষে মত দিলেন।


স্টেশনে নেমেই কথা মত মেসোমশাই কে ফোন করলো শুভ। মেসো বিভাস পাল স্টেশনের বাইরে অপেক্ষা করছিল। খুব তাড়াতাড়িই শুভর সাথে তার দেখা হয়ে গেলো। বিভাস শুভকে নিয়ে বাইকে করে যখন বাড়িতে এসে পৌঁছল তখন ঘড়িতে সাড়ে বারোটা। শিমুলপুর জঙ্গলে ঘেরা একটা ছোট ব্লক টাউন। যদিও সবই এখন পাকা বাড়ি, তবুও যেহেতু পঞ্চায়েত এর অধীনে আছে তাই এটাকে গ্রাম বলা চলে। আসার পথে শুভ রাস্তার দুদিকে শাল, সেগুনের সারি আর কৃষ্ণচূড়া গাছের আগুন রাঙা রূপ দেখে মোহিত হয়ে যাচ্ছিল বার বার। আজ রবিবার বলে রাস্তা ঘাটও বেশ ফাঁকা। তাই বেশি সময় লাগলো না মাসির বাড়ি পৌঁছতে।



[HIDE]
অনুপমা শুভর পথ চেয়েই বসেছিল। প্রায় পাঁচ বছর পর বোনপো কে দেখবে সে। এটা সেই সময়কার কথা যখন ইন্টারনেট এর এত রমরমা থাকেনি। সোশ্যাল মিডিয়া সবে গজাতে শুরু করেছে। তবে বেশিরভাগ মানুষই তার খবর জানতো না। যোগাযোগ যা ছিল টা শুধু ভয়েস কলের মাধ্যমেই। ফোন গুলোও এত স্মার্ট হয়নি। শুভ এসে পৌঁছতেই খুশিতে সীমা দেবীর মনটা ভরে উঠলো। শুভ এসেই মাসীকে একটা প্রণাম ঠুকে দিলো। মেসো কে প্রণাম টা সে স্টেশনেই সেরে নিয়েছে। অনু খুশির আবেগে শুভকে জড়িয়ে ধরল। বলল -
-কতো বড় হয়েছিস রে বাবু। একেবারে লোক হয়ে গেছিস তো। গোঁফের রেখা দেখা দিয়েছে দেখছি। লম্বায় তো আমার সমান হয়ে গেছিস।
শুভ লজ্জা পেয়ে বললো - কই আর বড় হলাম মাসী, তোমার কাছে তো সেই ছোটটাই আছি।
-তা বটে। এই বলে অনু হেসে শুভর কপালে একটা চুমু খেয়ে নিল।
এরপর কুশল বিনিময় আর নানা খবরাখবর আদান প্রদানের পালা চলতে লাগলো বেশ কিছুক্ষন। বিভাস বলল - আরে ওকে এবার একটু ফ্রেশ হতে দাও। গল্প করার জন্যে তো অনেক দিন পড়ে আছে। সব গল্প কি এখনই শেষ করে ফেলবে নাকি। ও সেই সকালে কখন বেরিয়েছে। খিদেও তো পেয়েছে।
অনু জিভ কাটল। - ইস, দেখেছিস আমার কেমন আক্কেল। তুই যা স্নান করে নে। আমি ততক্ষন খাবার গুলো রেডি করি। তেল সাবান গামছা সব বাথরুমেই আছে।


দুপুরে খাওয়া দাওয়া বেশ ভালই হলো। খাসির মাংস, সাথে রকমারি পদ। সব অনু নিজে হাতে রান্না করেছে। তার সাথে চাটনি মিষ্টি দই। শুভ পেট ভরে খেলো। খাওয়া দাওয়া হলে অনু বলল - এবার একটু ঘুমিয়ে নে। এতটা জার্নি করে এলি। ক্লান্ত লাগছে নিশ্চই।
ক্লান্ত অবশ্য লাগছিল শুভর। জার্নি তো বটেই, তার সাথে পেট ভর্তি করে খেয়ে নিয়েছে। বেশ ঘুম ঘুম পেলো শুভর। নিজের রুমে গিয়ে ও বিছানায় টান টান হয়ে শুয়ে পড়ল। নিদ্রা দেবীর আগমন ঘটতেও বেশি বিলম্ব হলনা।
অনু আর বিভাস এর পাঁচিল দিয়ে ঘেরা দুই কামরার একতলা ছোট্ট বাড়ি। সামনে বাগান। তাতে নানা রকম ফুল আর সবজি চাষও করেছে। পাঁচিলের ভেতরে দুটো বড় বড় আম গাছ পুরো জায়গাটাকে ছায়ায় ঢেকে রেখেছে। চারপাশে একটু দূরে দূরে বাড়ি ঘর। বাড়ির এসে পাশেও সোনাঝুরি আর ইউক্যালিপটাস গেছে ভরা। মনোরম পরিবেশ। দুটো রুমের একটা তে অনু আর বিভাস থাকে। আর একটা তে শুভ কে থাকতে দিয়েছে। বড় বাড়ির অবশ্য দরকার পড়েনি ওদের। কারণ বিয়ের এত বছর পরেও ওদের কোনো সন্তান হয়নি। যে ঘরটায় এখন শুভ আছে সেটায় থাকে মিনতি মাসী। এখন সে নেই। মিনতি মাসী অনুর সারা সপ্তাহের সঙ্গী। ঠিক কাজের লোক বলতে যা বোঝায় তেমন নয়। অনেকটা হেল্পিং হ্যান্ড এর মত। তাছাড়া বাড়িতে অনুর একা থাকাটা ঠিক না। যদিও গ্রামের কোনো বদনাম আজ পর্যন্ত কেউ শোনেনি। তবে কখন কি দরকার পড়ে, বা হটাৎ যদি শরীর খারাপ হয়, এইসব কারণেই মিনতি মাসীকে রাখা। মিনতি মাসী এই গ্রামেতেই থাকে। সারা সপ্তাহ এখানে থেকে শনিবার বাড়ি যায়। আবার সোম বার ফিরে আসে। হাতে হাতে অনুকে সাহায্য করে। শুভ আসবে বলেই এই কদিন মিনতি মাসির ছুটি। মিনতি মাসিও বেশ কদিনের ছুটি পেয়ে মেয়ের বাড়ি বেড়াতে চলে গেছে।
বিভাস সদর শহরে একটা বেসরকারি অফিসে চাকরি করে। রোজ যাতায়াত করা সম্ভব হয়না বলে ওখানেই একটা মেসে ভাড়া থাকে। শনি বার অফিস করে রাতে বাড়ি ফেরে, রবিবার থেকে সোমবার ভোরে বেরিয়ে যায়। বিভাস বাবুর যা মাইনে তাতে দুজনে শহরে বাড়ি ভাড়া করে থাকা সম্ভব। তবে সমস্যা হলো অনু এখানে একটা ছোটদের নার্সারি স্কুলে পড়ায়। তাই অনু ওখানে চলে গেলে এই চাকরিটা ছাড়তে হবে। এই নিঃসন্তান নিঃশঙ্গ জীবনে এই স্কুলটা অনুর কাছে অনেক কিছু। বিভাসও কোনোদিন সেভাবে বলেননি অনুকে ওখানে যাওয়ার জন্য।




[/HIDE]
 

Users who are viewing this thread

Back
Top