What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

বাংলা চটি উপন্যাস – পরভৃত (1 Viewer)

কামদেবের বাংলা চটি উপন্যাস – পরভৃত – ৫১

– স্কুল হতে বাসায় ফিরে কঙ্কা নিজেকে অনাবৃত করে রান্না ঘরে গিয়ে খাবার দাবার গরম করে এককাপ চা নিয়ে সকালের কাগজে চোখ বোলায়।কিছুই খবর নেই।ভাবছে বন্ধ করে দেবে কাগজ।

সভ্যতার উপর ঘেন্না ধরে গেছে কি হবে এদের খবরে?আজ আবার বন্দনাদি আসার কথা।নিজেই যেচে বলল আসবে মুখের উপর না বলে কি করে।বন্দনাদিকে কেমন আপসেট মনে হল।নিজে কিছু বলেনি কঙ্কাও জিজ্ঞেস করেনি।কাগজ রেখে বাথরুমে ঢুকল।বন্দনাদি আসার আগেই খাওয়া দাওয়া সেরে নেবে।শাওয়ারের নীচে দাড়ায়।মাথার জল গড়িয়ে স্তনের উপর দিয়ে বুক চুইয়ে যোনী ছুয়ে নামতে থাকে।

হাত দিয়ে কুচকি রগড়ায়।বগল পাছার খাজ কচলে কচলে ধুতে থাকে।ঋষি দুধ চুষতে ভালবাসতো।কোথায় গেল ছেলেটা?হালিশহরে ওর ছোড়দি থাকে অবস্থা খুব ভাল নয় এতদিন কি করছে সেখানে? এমএ টা পড়ল না।

কোহিনূর এসেছে আদালতে।ঋষি আসতে পারেনি আর সবাই এসেছে।বেলা একটা নাগাদ বাবুলালের কেস ঊঠল।বাবুলালের নজরে পড়ল বৌদি এসেছে।এর আগে বৌদিকে আদালতে দেখেনি বাবুলাল অবাক হয়।

হরিমাধববাবু সাক্ষী হিসেবে মায়া ভট্টাচার্যকে জেরা করার আবেদন জানালো।সরকারী উকিল আপত্তি করলেও সাক্ষী যেহেতু নিহতের পত্নী জজসাহেব আপত্তি খারিজ কোরে দিলেন।

জেরায় মায়া ভট্টাচার্য যা বললেন তার সারমর্ম এইঃকে খুন করেছে তিনি দেখেন নি।গুলির শব্দ শুনে নীচে নামতে গিয়ে দেখলেন একটি ছেলে তাকে অতিক্রম করে ছাদের দিকে চলে গেল।একতলায় মেঝেতে পড়ে আছে তার স্বামী রক্তে ভেসে যাচ্ছে মেঝে।

বাবুয়া তার স্বামীর নাম ধড়ে ডাকছে বলতে বলতে কেদে ফেললেন।
সরকারী উকিল জিজ্ঞেস করল,আপনি তাহলে আসামীকে আগে থাকতে চিনতেন?


মায়া ভট্টাচার্য মুখ তুলে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা বাবুয়াকে একপলক দেখে বলল,অনেকবার আমাদের বাড়ীতে এসেছে।

হরিমাধববাবু জিজ্ঞেস করলেন,যে ছেলেটি উপরে চলে গেছিল তাকে আপনি চেনেন না?
–হ্যা তাকেও চিনি।ওর নাম মুন্না।


হরিমাধব বাবু বললেন,মে লর্ড ব্যাপারটা নোট্ করতে অনুরোধ করছি।অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের পুলিশ রিপোর্টে এইত্রকম একজন গুরুত্বপুর্ন সাক্ষীর কোনো বয়ান নেই।
হরিবাবু আবার মায়াদেবীর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,পুলিশ কি ঘটনার পর আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল?
–একদিন এসেছিল।আমি যা যা জানি সব বলেছিলাম।


হরিবাবু জজ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন,মে লার্ড এরপর আর পুলিশের উপর কি করে ভরসা রাখি?মায়াদেবীর বয়ান নেওয়া সত্বেও রিপোর্টে তার উল্লেখ নেই।এই খুনের সঙ্গে পুলিশের প্রত্যক্ষা বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে থাকার সম্ভাবনা কি উড়িয়ে দেওয়া যায়?

সরকারী উকিল মাথা নীচু করে বসে থাকে।বাবুয়া হাতের তালু দিয়ে চোখ মোছে।

জজ সাহেব রায়ে জানালেন,তদন্তভার সিআইডির হাতে দেবার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিলেন এবং সিআইডিকে পুর্ণ সহযোগিতার পরামর্শ দিলেন।

ভজারা বিমর্ষ্মুখে ফিরে গেল।তাদের আশা ছিল দোকান উদবোধনে গুরু থাকবে।

বাইরে বেল বাজতে কঙ্কা দরজা খুলে দিল।কঙ্কাকে ঐ অবস্থায় দেখে বন্দনাদি ভাবল আজ কোনো ছেলে আসবে নাকি?বন্দনাদি জিজ্ঞেস করল,কিরে আমি খুলবো?
–তুমি খুলবে কিনা আমি তার কি বলবো?
–খুলেই ফেলি যা গরম পড়েছে।বন্দনাদি শাড়ী সায়া জামা ব্রেসিয়ার সব খুলে ফেলল।


কঙ্কা বলল,চল ঐ ঘরে এসি আছে।দুজনে পাশাপাশি শুয়ে পড়ল।কিছুক্ষন পর বন্দনাদি একটা পা কঙ্কার কোমরে তুলে দিল।
কঙ্কা জিজ্ঞেস করল,তোমার মা কেমন আছে?
–কি বলবো বল?বিষন্ন গলায় বলল বন্দনা।


কঙ্কা আর কিছু জিজ্ঞেস করল না।বন্দনা নিজেই বলতে থাকে,সাধন এসেছে বউ নিয়ে পাকাপাকিভাবে থাকবে।ফ্লাট বিক্রী করে দিয়ে এসেছে।আলাদা রান্না করে একদিন সাধনের বউ এসে বলল,বড়দি আপনি এতকাল মাকে দেখলেন এবার আমাদের কিছু করতে দিন।মায়ের রান্না আপনাকে করতে হবে না।
–মানে তুমি?
–আমি আমার রান্না নিজেই করি।
–ছি-ছি-ছি।সাধন কিছু বলল না?
–ঐ ভেড়ার কথা বলিস না।আমি ভাবছি মায়ের কথা।বৌমা নাতি পেয়ে সব ভুলে গেল?
–এতদিন পর হঠাৎ মায়ের কথা মনে পড়ল?কঙ্কা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।
–বদ গন্ধ আর বদ মতলব চাপা থাকে না।ক্লাসে একদিন আমি চেপে শব্দ না করে পেদেছিলাম।মেয়েগুলো সব নাক চাপা দিয়ে ফিকফিক করে হাসছিল।
–তুমি না,দেখো আমার গায়ে আবার কিছু কোরো না।
–সাধন বাড়ীটা প্রোমোটারের হাতে দিতে চায়।মনে হচ্ছে এ বাড়ীতে আমার বেশিদিন থাকা হবে না।
— নিজের বাড়ী ছেড়ে কোথায় যাবে তুমি?
–আমার নিজের কিছু নেই রে। না বাড়ী না সংসার।বাড়ী মায়ের নামে।


কঙ্কার খুব খারাপ লাগে।হাত দিয়ে বন্দনাদির পিঠে বোলায়।
বন্দনাদি বলল,এই কঙ্কা ভাবছি আজ তোরটা চুষবো।দিবি না?
কঙ্কা আপত্তি করতে পারেনা।চিত হয়ে পা মেলে দিল।বন্দনাদি বলল,বালে ভরে গেছে।
বাল সরিয়ে মুখ ডুবিয়ে দিল।কঙ্কা ই-হি-ই-ই-ই করতে থাকে।


ইউনিভারসিটি ক্যাণ্টিনে বসে ফোনের অপেক্ষা করছে কল্পনা।পর্ণা ঢুকে জিজ্ঞেস করল,কি ব্যাপার একা?
কল্পনা বলল,ক্লাস নেই তাই বসে আছি।


কল্পনার ইতিহাস আর পর্ণা ইংরেজির ছাত্রী।ক্যাণ্টিনেই আলাপ হয়েছে।কল্পনা কোথায় থাকে শুনে জিজ্ঞেস করেছিল ঋষিকে চেনে কিনা?পর্ণার মুখে ঋষির নাম শুনে অবাক হয়েছিল কল্পনা।চিনি মানে মুখ চিনি খুব একটা আলাপ নেই।তুমি কি করে চিনলে?

পর্ণা বলল,তুমি যা ভাবছো সেসব কিছু না।আমরা একসঙ্গে পড়তাম।হাবাগোবা টাইপ কিন্তু খুব ভাল ছাত্র ছিল।ভেবেছিলাম এখানে দেখা হবে।তুমি কি জানো ওকি কি পড়াশুনা ছেড়ে দিয়েছে?কল্পনা সত্যি বলেছিল, সঠিক জানিনা।কল্পনা জানে পর্ণার বয়ফ্রেণ্ড রজত সেও ইংরেজি পড়ে।ঋষির ব্যাপারে এত ইণ্টারেস্ট কেন?সেকিছু ভাবছে তাতো বলেনি তাহলে ও কথা বলল কেন? রজত আসতে আলাপ করিয়ে দিয়ে বলেছিল এক জায়গায় পড়ি যখন মাঝে মধ্যে দেখা হবে।তারপর অনেকবার দেখা
হলেও তেমন কথা হয়নি।


পর্ণা বসে জিজ্ঞেস করল,তুমি কতক্ষন?রজতকে দেখেছো?
–বেশিক্ষন আসিনি আমি।ফোন বেজে উঠতে কানে লাগিয়ে বলল,কোথায়?…ও আসছি।
পর্ণার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,আসি?


কল্পনা ইউনিভার্সিটি হতে বেরিয়ে দেখল সন্দীপ দাড়ীয়ে আছে।দুজনকে চিনতে পারে টিনা আর শুভেন্দু।আর দুটো ছেলেকে আগে দেখেনি।টিনা জিন্সের প্যান্ট আর স্লিভ্লেস ট-শার্ট পরেছে।বয়সে তুলনায় মাইগুলো বেশ বড়।একটা ট্যাক্সিতে টিনা সন্দীপ আর কল্পনা।ড্রাইভারের পাশে বসেছে শুভেন্দু।পিছনে বাইকে আর দুজন আসছে।টিনা ফস করে সিগারেট ধরালো।দু-তিন টান দিয়ে সামনে বসা শুভেন্দুকে এগিয়ে দিল।সন্দীপ সিগারেট খেলেও গাড়ীতে সিগারেট ধরায় নি।

ঘণ্টাখানেক লাগল রেজিস্ট্রি অফিসে।ওরা চারজন সাক্ষী হিসেবে সই করল।তখন দেখল একজনের নাম পুলক আরেক জন স্বপন।
আবার ঐভাবে ট্যক্সিতে উঠল।কল্পনা ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল,কোথায় যাচ্ছি?
–ওদের কিছু আপ্যায়ণ করব না?সন্দীপ বলল।


সন্দীপ হাত দিয়ে কল্পনাকে জড়িয়ে ধরে থাকে।টিনা বলল,কিরে তর সইছে না মনে হচ্ছে?

ভাড়া মিটিয়ে ট্যক্সি থেকে নামল।একটা ছোটো নদী পাশে বেশ সাজানো ছোট্ট একটা হোটেল।সবাই মিলে ঢূকতেই চাবি এগিয়ে দিল বোঝা যায় আগেই ঠিক করা ছিল।দোতলায় উঠে দেখল ছোটোখাট সাজানো ঘর জানলা দিয়ে দেখা যাচ্ছে নদী বয়ে যাচ্ছে।নদীর চরে বক সন্ধ্যের ম্লান আলোয় ধপধপ করছে।একটা বেয়ারা এসে কিছু চীনেমাটির বাসন রেখে গেল।একটা মুখ বন্ধ মাটির হাড়ি।আর একটা বড় গামলা মত।বেয়ারা যাবার আগে সেলাম করল।টিনা বলল,কিরে নিরামিষ?
 
সন্দীপ বলল,আর একদিন হবে দিন তো পালিয়ে যাচ্ছে না?

ঘরের এককোনে ফোল্ডিং টেবিল খুলে চার পাশে চেয়ার সাজালো।টীনা মাটীর হাড়ী টেবিলে এনে রাখল।টেবিলে ছটা প্লেট সাজিয়ে বলল,চলে এসো।
সবাই গিয়ে বসল।কল্পনা বসতে গেলে টিনা বলল,তুমি না।তুমি আগে সবাইকে অন্তত একহাতা করে দাও।তারপর নাহয় সেলফ সারভিস।


কল্পনার খারাপ লাগেনা।সন্দীপের কথা মত শাড়ী পরে এসেছে।শাড়ীটা গুটিয়ে কোমরে বেধে নিয়ে হাড়ীর ঢাকনা খুলে দেখল বিরিয়ানি।হাতা দিয়ে একহাতা ভাত আর এক টুকরো মাংস তুলে দিল প্রতিটি প্লেটে।
সন্দীপ বলল,এবার তুমি বসে যাও।


সন্দীপের পাশে খালি চেয়ারে কল্পনা বসল।খেতে খেতে খালি আল্পনার কথা মনে পড়ছে।

একসময় খাওয়া শেষ হল।বাইরে ঝিঁঝীঁ ডাকছে।সবাই বলল,আসি দোস্ত।বাসররাত্রি শুভ হোক।সন্দীপ ওদের সঙ্গে বাইরে চলে গেল।কল্পনা ভাবে রাতে এখানে থাকতে হবে নাকি?
কল্পনার কান্না পেয়ে যায়।কথায় কথায় বাবা বলে এই মেয়ে বংশের নাম ডোবাবে।সত্যি কি তাই?


একটু পরে সন্দীপ এল হাতে কলা পাতায় মোড়া কি যেন।মোড়ক খুলে বের করল দুটো মোটা রজনী গন্ধার মালা।সন্দীপ একটা মালা পরিয়ে দিয়ে আর একটা হাতে দিয়ে বলল,পরিয়ে দাও।কল্পনা মালাটা পরিয়ে দিয়ে ঝরঝর করে কেদে ফেলল।সন্দীপ
মাথাটা বুকে চেপে বলল,কি হল সোনা?


বিয়ে বাড়ীতে দেখেছে কতলোক বর বউকে ঘিরে দাঁড়িয়ে।বর বউকে মালা পরিয়ে দিতে শাখ উলুধ্বনিতে গমগম করে ওঠে সারা বাড়ী।বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে কত উড়ো মন্তব্য।কল্পনা বুক থেকে মাথা তুলে বলল,কিছু না।তারপর বলল,সবাই চলে গেল
আমরাও তো যেতে পারতাম?
–সবাই আর আমরা এক?বেশি ন্যাকামো কোর না তো? বিয়ের পর একরাত থাকতে হয়।সকাল হলেই তোমাকে পৌছে দেবো।সন্দীপ বলল।


একরাতের জন্য নয় ভয় হচ্ছে দীপু কিছু করবে নাতো?জবুথবু হয়ে বসে থাকে কল্পনা।
সন্দীপ ব্যাগ খুলে প্যাণ্ট বদলে পায়জামা পরল।কল্পনাকে বলল,তুমি চেঞ্জ করবে না?
কল্পনা বলল,না ঠিক আছে।


হঠাৎ সন্দীপ বলল,তোমার আড়ষ্টতা ভেঙ্গে দিচ্ছি।মুহূর্ত সময় না দিয়ে কল্পনার দু-গাল চেপে ধরে ঠোটে ঠোট চেপে ধরল।কল্পনা অধর ওষ্ঠ চেপে রাখে।সন্দীপ বিরক্ত হয়ে বলল,কি হচ্ছে কি আমরা এখন স্বামী স্ত্রী ঠোট ফাক করে জিভটা আমার মুখে ভরে দাও।

সন্দীপ আবার কল্পনার ঠোটে ঠোট চেপে ধরল।কল্পনা জিভের সামান্য অংশ বের করে দিতে এত জোরে চুষছিল জিভটা সুড়ুৎ করে সন্দীপের মুখে ঢুকে গেল।কল্পনার জিভ মুখে নিয়ে জিভে জিভ লাগিয়ে চুষতে লাগল।কল্পনার মজা লাগে সেও জিভটা
সন্দীপের মুখের মধ্যে নাড়তে থাকে।


এইভাবে কিছুক্ষন চোষার পর সন্দীপ একসময় ছেড়ে দিয়ে জানলার কাছে গিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে।কল্পনার মুখ লালায় মাখামাখি।আঁচল দিয়ে মুখ মুছে সন্দীপের দিকে আড়চোখে তাকালো। আড়ষ্টভাব আগের
মত নেই।নিজেকে দীপুর বউ হিসেবে ভাবতে থাকে।


আশিসের তুলনায় দীপুকে অনেক বেশি যোগ্য মনে হল।শুনেছে আশিসদা এখন জেলে রয়েছে।বিয়ের আগে দীপু কিছুই করেনই অথচ আশিসদা সুযোগ পেলেই বুকে হাত দিত।একবার সিনেমা হলে এমন করছিল ভালভাবে সিনেমাটাই দেখতে পারেনি।হঠাৎ লাইট অন্ধকার হয়ে যেতে বুঝতে পারে দীপু লাইট নিভিয়ে শুতে আসছে।

কল্পনা বালিশ ঠিক করে চোখ বুজে শুয়ে পড়ল।চোখ না খুলেও বুঝতে পারে দীপু পাশে এসে শুয়েছে।একটা হাত বুকের উপর এসে পড়ল।করতলে মাইতে চাপ দিল।জামার হুক খুলছে।কল্পনা কি করবে দ্বিধায় পড়ে যায়।ইতিমধ্যে হুক খুলে মাই নিয়ে
ঘাটাঘাটি করছে।


ভাল লাগছে আবার ভয় করছে।নিজেকে বোঝায় সে এখন দীপুর বউ।একটা হাত দিয়ে কাপড় সায়া সমেত উপর দিকে তুলতে গেলেই কল্পনা হাত চেপে ধরে উঠে বসল।না দীপু না প্লীজ দীপু আজ নয় কল্পনা অনুনয় করতে থাকে।কল্পনার হাত নিয়ে সন্দীপ নিজের ঠাটানো বাড়ায় চেপে ধরে বলল,আর পারছিনা সোনা প্লীজ।

কল্পনার হাতের মুঠোয় সন্দীপের বাড়া তিড়িক তিড়িক করে লাফাচ্ছ।ছিদ্র দিয়ে কামরস বেরিয়ে কল্পনার হাতের তালুতে চটচট করছে।কল্পনা দ্বিধায় পড়ে যায়।সন্দীপের শাড়ী ধরে রাখা হাত ছেড়ে দিল।সন্দীপ চিত কোরে ফেলে বাড়াটা চেরার মধ্যে ঢূকিয়ে দিল।কল্পনা কাতরে উঠল।উ-উ-উ-মা-গো-ও-ও-ও।

সন্দীপ কর্ণপাত করেনা হাটুতে ভর দিয়ে ফ-চা-ৎ—ফ-চা-ৎ কোরে ঠাপাতে থাকে।কল্পনা দাতে দাত চেপে গুদ কেলিয়ে শুয়ে থাকে।মিনিট সাত-আট পরে সন্দীপ উঠে বাথরুম চলে গেল।সন্দীপ ফিরে আসতে কল্পনা গিয়ে মুততে বসল।নজরে পড়ল পেচ্ছাপের রঙ লালচে।ঘরে এসে ঢক-ঢোক করে জল খেলো।শরীর সম্ভবত কড়া হয়ে গেছে।শুয়ে পড়তে ঘুমে জড়িয়ে যায় চোখ।
 
কামদেবের বাংলা চটি উপন্যাস – পরভৃত – ৫২

– পাখির কিচির-মিচির শব্দে ঘুম ভাঙ্গল কল্পনার।সন্দীপ তখনো ঘুমিয়ে,ওকে ডেকে তুলে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এল।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে বেরোতে হবে।যতক্ষন বাড়ি পৌছাতে না পারছে শান্তি নেই।

দীপুকে তাগাদা দিল,কিহল বসে আছো কেন?বাথরুম গেলে যাও।সন্দীপ বাথরুমে চলে গেল।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করে।বেয়েরা চা দিয়ে গেল।কল্পনা বলল,তাড়াতাড়ি বের হও চা দিয়ে গেছে।নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে গিয়ে নজর পড়ল পাছার নীচে শাড়ীতে রক্তের দাগ।

দরজা বন্ধ করে শাড়ী খুলে অন্য রকমভাবে পরল।এখন রক্তের দাগ দেখা যাচ্ছে নাআ।কল্পনা অবাক হল তার তো সময় হয়নি এখনো? বিছানার চাদরে রক্তের দাগ দেখে কল্পনা দ্রুত বালিশ চাপা দিয়ে ঢেকে দিল।

রিসেপশনে বিল মেটাতে গেল সন্দীপ।পাশে দাঁড়িয়ে কল্পনা।বিল দেখে সন্দীপ বলল,ওয়াশিং চার্জ এত?
–হাইমেন ফ্রাকচার হয়েছে বিছানা পুরো চেঞ্জ করতে হবে।
–হাইমেন ফ্রাকচার?আমরা তো কিছুই ভাঙ্গিনি।
কল্পনা বলল,কথা বলে যা চাইছে দিয়ে দাও।


কল্পনা এতক্ষনে বুঝতে পারে শাড়িতে কিসের রক্ত?বেয়ারাটা চা দিতে এসে সম্ভবত দেখে গেছে।

সকালের কাগজে খবরটা পড়ে ঋষির ভাল লাগে।আদালত সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।পুলিশের আর কোনো ভুমিকা থাকলো না।এবার আশা করা যায় সি আই ডি প্রকৃত ঘটনা খুজে বের করবে।প্রকৃত ঘটনা সামনে এলে বাবুয়া নির্দোষ তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।বিকেলে গিয়ে কোহিনূরকে নিয়ে আসবে।আজ ওর নাম লেখানো আছে।বাবুয়া বেরিয়ে এলে তার দায়িত্ব শেষ।

ঋষির মন হঠাৎ বিষন্ন হয়।ছোড়দি কেমন আছে টুকুন কেমন পড়াশুনা করছে কঙ্কার সঙ্গে দিবুদার সম্পর্ক কোনো পরিবর্তন হল কি না কোহিনূর ফার্মেসী চালু করা বাবুয়াকে কি ভাবে বের করে আনা যায়?হাজার চিন্তা মাঝে নিজের জন্য ভাবার একটু ফাক নেই।তার লেখাপড়া এখানেই কি শেষ?খিন কিল নার্সিং হোমেই তার যাত্রা শেষ?

কিশোর বেলায় ফিরে যায় মন।শিলু ডাগর চোখ দাত ঈষৎ উচু তাদের বাড়ির কয়েকটা বাড়ীর পর শিলুদের বাড়ী।যাতায়াতের পথে দেখা হত প্রায়।ওদের বাড়ী পেরোবার সময় একপলক দেখার জন্য মনটা কেমন করতো।কারণে অকারণে দিশাদি-দিশাদি করতে করতে ঋষিদের বাড়ি আসতো।

বুঝতে পারত ওর চোখ কাকে খুজে বেড়াচ্ছে।বড়দির সঙ্গে যেদিন কলকাতায় এল ওর চোখে দেখেছিল থমকে আছে বেদনা।কলকাতার পরিবেশে ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলল শিলুর সেই ম্লান মুখ।তখন বয়স ছিল কম। উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার সময় জাহ্নবীর সঙ্গে আলাপ হল।বড়লোকের মেয়ে টিফিনে সন্দেশ আনতো।রোজ ভাগ দিত টিফিনের।

সবাই সেজন্য হিংসা করত ঋষিকে।অনেকে মুখরোচক গল্প বানালেও বুকের মধ্যে জমে থাকা কথা শেষ অবধি বলা হয়ে ওঠেনি।পরীক্ষার পর হারিয়ে গেল জাহ্নবী।কিছুদিন মনের মধ্যে জাহ্নবীর উপস্থিতি টের পেলেও কলেজে ভর্তি হবার কিছুদিন পর সেই জায়গা নিল পর্ণা।আলাপ হয়নি কেবল দেখা হত ক্লাসে।মনে হত কি যেন বলতে চায় ঋষিকে।

প্রতি মুহূর্ত অপেক্ষা করত পর্ণা বুঝি কিছু বলবে।কিন্তু বলেনি।পরীক্ষার ফিজ দিয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে বাসায় ফিরছে সামনে দেখল পর্ণাকে।ভাল লাগে মনে মনে ভাবে এই পথ যেন শেষ না হয়।পর্ণার পিছু পিছু চলবে সারা জীবন। হঠাৎ পর্ণা দাঁড়িয়ে পড়ল।

ঢিপঢিপ কোরে উঠল বুক।কাছে যেতে জিজ্ঞেস করল,কিছু বলবেন?থতমত খেয়ে বলল,কই নাতো।তারপর হারিয়ে গেল পর্ণাও।জাহ্নবী আর পর্ণাকে নিয়ে একটু অন্যরকম ভাবনা উকি দিত মনের কোনে।কিভাবে কঙ্কার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ল বুঝতেই পারেনি।বয়সে অনেক বড় বলে অন্যকিছু ভাবার কথা মনে হয়নি।

ভাল লাগলেও লায়লীর ক্ষেত্রেও তাই।ভাসতে ভাসতে এখানে এসে ড.এমাকে দেখল।ভাল লাগলেও কত বড় ডাক্তার সব সময় চেষ্টা করেছে যাতে পুষ্ট না হয়। সব ভাল লাগা সব ইচ্ছে কি প্রকাশ করা যায়?এইসব ভাল লাগা সঞ্চয় করতে করতে হয়তো একদিন হবে যাত্রাবসান।

হঠাৎ খেয়াল হয় ভজা এসে দাঁড়িয়ে আছে।ভজা জিজ্ঞেস করল,কি ভাবছো বস?মন খারাপ?
ঋষি হেসে বলল,তুমি কতক্ষন?বাইরে বিশুবাবুকে দেখে জিজ্ঞেস করল,ড্রাগ লাইসেন্স?
–হয়েছে,অনেক ফালতু টাকা দিতে হল।
ঋষি বলল,ওকে ডাকো চলো ক্যাণ্টিনে গিয়ে বসি।
–তোমার সামনে আসতে ভয় পাচ্ছে।এই বিশুবাবু বস ডাকছে।


তিন জনে ক্যাণ্টিনে গিয়ে বসল।ভজা বলল,কালকের কথা শুনেছো?
–কাগজে পড়লাম।
–বস গুরুর তো খালাস হলনা ফালতু একগাদা টাকা গেল।
–অত ব্যস্ত হচ্ছো কেন?তদন্ত হতে দাও।
–আমিও এই কথা বলছিলাম।বিশুবাবু বলল।শুনেছি সিআইডি শান্তিদার বাড়ীর আশপাশে খবরাখবর নেওয়া শুরু করেছে।


ঋষি বলল,কটা দিন যাক।তারপর বোঝা যাবে।
বিশুবাবু বলল,দোকানটা ভাল জায়গায় হয়েছে।অনেকে জিজ্ঞেস করছিল কবে চালু হবে?
–তোমরা এখন যাও।কোহিনূরকে বলবে রেডি হয়ে থাকতে।আমি বিকেলে গিয়ে নিয়ে আসব।
ঋষিকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে ভজা জিজ্ঞেস করল,বস ভাবীর খারাপ কিছু হয়েছে?
ভজার মুখ দেখে অবাক লাগে।কোহিনূরের সঙ্গে ভজার রক্তের সম্পর্ক দুরের কথা


কোনো রকম সম্পর্ক নেই।বাবুয়ার সঙ্গে একটা সম্পর্ক আছে ঠিকই।ভজার মনে কোহিনূর সম্পর্কে এই উদবেগ ঋষিকে এক নতুন শিক্ষা দিল যেন।ঋষি হেসে বলল,এখন কাউকে বলবে না।কোহিনূর মা হতে চলেছে।ভজা হুর-রে বলতে গিয়ে থেমে গিয়ে দুখী গলায় বলল,গুরুর লাকটাই খারাপ বস।

খাটে আধশোয়া হয়ে বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছিল বিদিশা।টুকুনকে নিয়ে বড়দি ঢুকতে চমকে উঠে বসে বলল,বড়দি তুই?
–ঋষিকে দেখছি না।ও কোথায়?মনীষা জিজ্ঞেস করল।
–ওতো এখনও আসেনি।দেখ হয়তো রাস্তায় ওর দেবুদার সঙ্গে দেখা হয়েছে গল্প করতে করতে আসছে।টুকুনসোনা কত বড় হয়ে গেছে।বিদিশা টুকুনকে আদর করে।বড়দি বোস দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি?
–বসতে আসিনি।ঋষির খোজে এসেছি।


বিদিশা অবাক হয়ে বলল,মানে?ঋষি তোর সঙ্গে আসেনি?
–ঋষি তোর এখানে থাকে না?মনীষা তীব্র দৃষ্টিতে বোনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল।
–তুই কিবলছিস আমি মাথামুণ্ডূ কিছুই বুঝতে পারছিনা।অসহায়ভাবে বলল বিদিশা।
মনীষা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না।চৌকিতে বসে পড়ল।বিদিশা বলল,বড়দি কি হয়েছে আমাকে সত্যি করে বল?
–আমাকে এক গেলাস জল দে।
বিদিশা দ্রুত কলসী হতে জল এনে মনীষার হাতে দিল।


ঋষি ফিরতে রাত হবে বলে বেরিয়েছে।তারপর থেকে আর ফেরেনি।ভাবলাম রেজাল্ট খারাপ হয়েছে খবর নিয়ে ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে পাস করেছে।তোর জামাইবাবুকে তো জানিস কি করব কিছু বুঝতে পারছিনা।এমন সময় একটা ছেলে এসে বলে গেল ঋষি হালিশহর গেছে।শুনে নিশ্চিন্ত হলাম।কিন্তু তোর এখানে এতদিন কি করছে?দিশারে একটা মাত্রভাই আমার কোথায় খুজি বলতো?

বিদিশা চোখের জল দমন করে বড়দিকে জড়িয়ে ধরে বলল,বড়দি কাদিস না।এখন মাথা ঠাণ্ডা করে ভাবতে হবে।ডাক্তারটা এখন কোথায় গেল?
স্কুল ছুটি হয়ে গেছে।সুবিনয় বাড়ি ফিরে চৌকির উপর মনীষাকে দেখে থমকে দাড়ায়।মনীষা জিজ্ঞেস করল,স্কুল ছুটি হয়ে গেল?এসো আমার কাছে এসো।
সুবিনয় সঙ্কুচিতভাবে কাছে যেতে ব্যাগ থেকে বের করে সন্দেশের বাক্স হাতে দিল।বিদিশা বলল,দ্যাখ তো ডাক্তার কোথায় গেল?
 
সুবিনয় সন্দেশের বাক্স মায়ের হাতে দিয়ে ছুটে বাইরে বেরিয়ে গেল।মনীষা বিছানায় শায়িত বিদিশার ছেলেকে কোলে নিয়ে বলল,ভেবেছিলাম এবার মেয়ে হবে।
–সুবিও তো বোন বোন করছিল।যা চাওয়া যায় তাই কি পাওয়া যায়?
মনীষা ব্যাগ খুলে একটা পাচশো টাকার নোট বোনের হাতে দিয়ে বলল,তোর ছেলেকে দিলাম।
সুদেব ঢুকে মনীষার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে সুবিও প্রণাম করল।বিদিশা বলল,কোথায় গেছিলে তুমি বড়দি এসে বসে আছে।
–একটা কলে গেছিলাম।মিস্টির প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলল,সুবি বলল মাসী এসেছে।


দিদির জন্য এনেছি।
বিদিশা মিস্টির প্যাকেট হাতে নিয়ে অন্য ঘরে চলে গেল।
মনীষার কাছে গিয়ে সুবি জিজ্ঞেস করল,মামু আসেনি?
–বাবা তোমার মামু রাগ করে চলে গেছে।
বিদিশা একটা প্লেটে মিস্টি নিয়ে ঢুকে বলল,বড়দি কিসব পাগলের মত বলছিস?এই শুনেছো ঋষির কথা?


সুদেব অবাক হয়ে ব্যাপারটা বুঝতে চেষ্টা করল।মনীষা বলল,গুণ্ডা বদমাশদের সঙ্গে মিশে ছেলেটা বয়ে গেছে।
–কি সব বলছেন বড়দি?সুদেব প্রতিবাদ করল্।ঋষিকে ভাই হতে পারে কিন্তু ওকে চেনেন নি।কোনো অসৎ কাজ ওর দ্বারা হবে না। কি হয়েছে আমাকে বলুন তো?
মনীষা সমস্ত ঘটনা বিস্তারিত বলল।সুদেব জিজ্ঞেস করল,ছেলেটা কি বলেছিল ছোড়দির বাড়ী গেছে?
–তাছাড়া আর কি?হালিশহরে দিশা ছাড়া ওর আর কে আছে?


সুদেব হাসল বলল,ঠিক আছে বড়দি আপনি বিশ্রাম করুন।ঋষি বাচ্চা ছেলে নয়।ও আসুক তখন সব জানা যাবে।আমি একটু বাজার ঘুরে আসি।
–আমি এখন উঠব।টুকুনের বাবার ফেরার আগেই আমাকে ফিরতে হবে।
বিদিশার কানে কথাটা যেতে ঘরে ঢুকে বলল,তাহলে তুই আসলি কেন?
সুদেব বউকে থামায়,ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করো।
–সারা জীবন ধরে বুঝেছি আর বোঝার দরকার নেই।


মনীষার চোখ ছল ছল করে উঠল।সুদেব বলল,তুমি দিদিকে কাদালে তো?
–অন্যের চোখে জল দেখতে পাও আমার চোখের জল তোমার নজরে পড়ে না?বিদিশা চলে গেল।
সুদেব বলল,বড়দি আপনি ওর কথায় কিছু মনে করবেন না।


মনীষা আঁচলের খুটে চোখ মুছে হেসে বলল,ঐ পাগলী আমাকে কত ভালবাসে আমি জানিনা?বিধাতা আমাকে যে জীবন দিয়েছে তার বাইরে যাই কি করে বলো?
সুদেব ঘড়ি দেখে বলল,রেডি হয়ে নিন এখন একটা গাড়ী আছে।
দিশা ফিরে এল মুখে হাসি নিয়ে বলল,বড়দি ঋষি ফিরলেই আমাকে খবর দিবি।
ঋষি দেখল কোহিনূর সেজেগুজে প্রস্তুত।রিক্সা নিয়ে রওনা হল।ঋষী বলল,আপনাকে নাম জিজ্ঞেস করলে বলবেন,কোহিনূর বেগম।ডাক্তার ম্যাডাম খুব ভাল মানুষ একদম ভয় পাবেন না।


কোহিনূর মনে মনে হাসে।বসের বুদ্ধি থাকলে কি হবে একেবারে ছেলে মানুষ।ভাব কোরে সব মন দিয়ে শুনছে।নার্সিং হোমের সামনে নেমে কোহিনূরকে ভিজিটরস রুমে বসিয়ে ঋষি বলল,নাম ডাকলে আপনি যাবেন।নটা নাগাদ আপনাকে ডাকবে ,কোহিনূর হাসল।

লেবুবাগান হতে আসার পর কোহিনূরের সাজপোশাক হাবভাব একেবারে বদলে গেছে।মাথায় সব সময় ঘোমটা।সাধারণ আর পাঁচজন হতে আলাদা করা যায়না।অবস্থান বদলের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ কেমন বদলে যায় দূর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল
ঋষি।কোহিনূর বেগমের নাম ডাকতে ঋষি বলতে যাবে তার আগেই কোহিনূর উঠে চারদিক দেখে ভিতরে ঢুকে গেল।


কোহিনূর ভিতরে যেতে একজন নার্স এগিয়ে এসে ওজন নিল।তারপর ড.এমার সামনে বসিয়ে দিল।মৃদু স্বরে দুজনের মধ্যে কিছু কথা হবার পর ড.এমা নোট করে সামনের টেবিলে শুয়ে পড়তে বলল।একজন নার্স শায়িত কোহিনূরের প্রেশার নিল।ড.এমা কোমরের বাধন আলগা করে হাত দিয়ে তলপেটে চাপ দিয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করে জিজ্ঞেস করল,কি করেন?
–বিজনেস।
–অসুবিধে না থাকলে বলবেন কিসের বিজনেস?
–মেডিসিন শপ।
–এইবার প্রথম?


কোহিনূর ইতস্তত করে।ড.এমা জিজ্ঞেস করে,আগে এ্যাবর্শন করিয়েছিলেন?
–জী।
–কেন?
–অসুবিধা ছিল।
–এবার সন্তান চান?হেসে জিজ্ঞেস করল ড.এমা।ঠিক আছে সঙ্গে কে এসেছে ডাকুন।


কোহিনূর বেরিয়ে বস বস করে ডাকতে থাকে।ঋষি উপায়ন্তর নেই দেখে কোহিনূরের সঙ্গে ভিতরে ঢুকল।ড.এমা ঋষিকে দেখে চমকে উঠল।মাথা নীচু ওষুধ লিখতে লিখতে বলতে থাকে ম্যাচুয়ের বেবি এ্যাবরশন করতে গেলে অপারেশন করতে হবে।ওষুধ লিখে দিলাম।নেক্সট?

ওরা বেরিয়ে যেতে ড.এমা কেমন অসুস্থ বোধ করে।নার্স এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, ম্যাডাম আর ইউ ওকে?
ড.এমা চোখ না তুলে জিজ্ঞেস করল আর কজন আছে?


ড.এমার চোখমুখ লাল নার্স বলল,দুজন ম্যাডাম।ক্যন্সেল কোরে দেবো?
ড.এমা হেসে বলল,এ্যাম ওকে।নেক্সটকে ডাকুন।


কথাটা মুহূর্তে সারা হাসপাতালে ছড়িয়ে যায়।ঋষি কোহিনূরকে পৌছে দিতে গেছে।কাঞ্চা চেম্বারে ঢুকে পড়ে জিজ্ঞেস করল,মেমসাব শরীর খারাপ লাগছে?
–তুমি আমাকে একটু চা খাওয়াও।


কাঞ্চা চা আনতে চলে গেল।রোগী দেখা শেষ করে ড.এমা বলল,আজ আর ওয়ার্ড ভিজিট করব না।কাঞ্চা চা নিয়ে আসতে ড.এমা বলল,উপরে নিয়ে চলো।
ত্রিদিবেশবাবু হন্তদন্ত হয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন,ম্যাডাম এনি প্রবলেম?
ড.এমা বলল,খাওয়া দাওয়ার গোলমাল হয়ে থাকবে।
 
কামদেবের বাংলা চটি উপন্যাস – পরভৃত – ৫৩

– সকাল হতে শুরু হয় কর্ম ব্যস্ততা।এ্যাম্বুলেন্স আসছে স্ট্রেচারে রোগী তোলা হচ্ছে উপরে।প্যাথোলজিক্যাল ডিপার্ট্মেণ্টে রক্ত নেওয়া এক্স-রে ইউএসজি নানারকম ব্যস্ততা।ঋষির ব্যস্ততা নেই।ঘুম থেকে উঠে ভেবে নিল আজ কি কি করতে হবে?তাড়াতাড়ি বেরিয়ে সবাই মিলে দক্ষিনেশ্বরে পুজো দিতে যাবার কথা।কাল কোহিনূরকে পৌছে দিয়ে ফিরে এসে শুনেছিল ম্যাডামের অসুস্থতার কথা।রাতে ডিস্টার্ব করা ঠিক হবে না ভেবে আর উপরে গিয়ে খোজ নেয়নি।রিক্সায় যেতে যেতে কোহিনূরের সঙ্গে ম্যাডামের কি কথা হয়েছিল শুনে হয়েছে ম্যাডাম হয়তো কিছুটা অনুমান কোরে থাকতে পারে কোহিনূরের পূর্বতন পেশা সম্পর্কে।সবার চিকিৎসা পাবার অধিকার আছে।

ঘর থেকে বেরিয়ে দেখল অনেকে ক্যাণ্টিনে লাঞ্চ সারতে বসেছে।ঋষি আজ কিছু খাবে না।
পুজো দিয়ে এসে কোহিনূরের ওখানেই সকলে লাঞ্চ করবে ঠিক হয়েছে।স্নানটা সেরে জামা কাপড় পরে মনে হল একবার ম্যাডামের খোজ নেওয়া উচিত।উপরে যাবে কিনা ভাবছে এমন সময় কাঞ্চাকে দেখল বাইরে থেকে আসছে।ঋষি জিজ্ঞেস করল,ম্যাডাম কি করছে?
–ম্যাডাম বাইর হয়েছে।
–কোথায় গেছে জানো?
–ম্যাডাম মিশনে গেছে।


আজ তো শনিবার নয় তাহলে মিশনে কেন?ঋষি গাল চুলকাতে ভাবতে থাকে।ম্যাডাম কি সত্যি সত্যি সন্ন্যাসিনী হয়ে যাবে?ঋষির মন বিষন্ন হয়।কি সুন্দর হাসিখুশি স্মার্ট মহিলা।

একরাশ শিউলি ফুলের মত তরতাজা হাসি।বাইরে থেকে কতটুকু বোঝা যায় মানুষকে?ঋষির সঙ্গেও কত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে।একবার জিজ্ঞেস করেছিল “আমার সম্পর্কে কতটুকু জানো” ঋষি আগ্রহ প্রকাশ করেনি।এখন মনে হচ্ছে হয়তো
কিছু বলার ইচ্ছে ছিল শুনলে ভাল হত।দেরী হয়ে যাচ্ছে ওরা এতক্ষনে এসে গিয়ে থাকবে।বেরিয়ে পড়ল ঋষি।


গাড়ি থেকে নেমেই ড.এমার নজরে পড়ল কিছুটা দূরে স্বামী আত্মমানন্দ মহারাজ তার দিকে তাকিয়ে আছেন।এমা এগিয়ে গিয়ে মহারাজকে প্রণাম করল।
–হঠাৎ আজ এলে?মহারাজ জিজ্ঞেস করলেন।
–ঠাকুরের কৃপায় বড় একটা বিপদ হতে বেচে গেছি।সেজন্য ঠাকুরকে প্রণাম করতে এলাম।


মহারাজ কিছুক্ষন এমার দিকে তাকিয়ে বললেন,যাও ঠাকুরের সামনে স্থির হয়ে বোসো।মন শান্ত হবে।

এমা হাসল তারপর মন্দিরে গিয়ে এক কোনায় আসন করে বসল।মন শান্ত হবার কথা কেন বললেন?কোনোকিছু ভেবে হয়তো বলেন নি।কিছুক্ষন পর বুঝতে পারল মনটা হয়তো অশান্ত।মন্দির হতে বেরিয়ে গঙ্গার তীরে গাছের ছায়ায় বসল।সামনে উত্তর হতে দক্ষণে বয়ে চলেছে গঙ্গা।সম্ভবত ভাটির টান।দূর দিগন্তে হারিয়ে যায় এমার দৃষ্টি।

সাপের মত আকাবাকা তিনটে লাইন।মন্দির হতে বাইরে বেরিয়ে এসেছে।তার মধ্যে তুলনায় ছোটো লাইনে কোহিনূরকে দাড় করিয়ে দেওয়া হল।ভজা ফুল মিষ্টি কিনতে গেল।ওরা তিনজন গেল গঙ্গার দিকে।লাইন ধীরে ধীরে এগোচ্ছে।কোহিনূর শাদা শাড়ী পরে এসেছে।ভজা একটা ডালা কোহিনূরের হাতে দিয়ে ঋষির কাছে এসে দাড়ালো।ভজাকে নিয়ে পঞ্চবটি গাছের নীচে বসল ঋষি।ভজা এদিক ওদিক দেখতে থাকে।

একসময় ভজা বলল,বস এখানে এলে মনটা দুরস্ত হয়ে যায়।ঋষি কোনো উত্তর দিল না।বারবার ড.এমার মুখটা মনে পড়ছে।কত বয়স হবে তার থেকে বড়জোর আট-নয় বছরের বড় হবে? এর মধ্যেই সংসারের প্রতি এত বৈরাগ্য?মানুষের মন বড়ই রহস্যময়।
–বস মায়ের দর্শন করবে না?ভজা জিজ্ঞেস করল।


ওরা উঠে মন্দিরে গেল।ঘুরে ঘুরে শিব মন্দির গুলো দেখতে লাগল।ঋষির মনে হল জীবনের গতি হারিয়ে ফেলেছে।একটা একটা করে নিষ্ফলা দিন পেরিয়ে যাচ্ছে।কিসের আশায় এখানে পড়ে থাকা?ড.এমাকে দেখতে তার কথা শুনতে তার সঙ্গে কথা বলতে ভাল লাগে ঠিকই শুধু এইজন্য এখানে পড়ে থেকে সময়ের অপচয়?বড়দির ওখানে যাওয়ার মুখ নেই।ভাবছে ছোড়দির ওখানে চলে যাবে।শুধু এই ছেলেগুলোর মায়ায় জড়িয়ে গিয়ে যেতে ইচ্ছে করে না।সন্ধ্যে হবার মুখে,কোহিনূর সিড়ি দিয়ে নেমে আসছে।মনে হয় পুজো হয়ে গেছে।
কেতোরা কোথায় গেল?


কোহিনূর ফার্মেসী আলোকমালায় সেজে উঠেছে।মৃদু শব্দে গান বাজছে।যারা ওষুধ কিনতে আসছে সবাইকে দেওয়া হচ্ছে মিষ্টির প্যাকেট।দেখে মনে হবে যেন সবাই প্রেসক্রিপশন নিয়ে বাড়িতে অপেক্ষা করছিল কবে কোহিনূর ফার্মেসী খুলবে।ঋষি লক্ষ্য করল,খিনকিল নার্সিং হোমের প্রেসক্রিপশনও আসছে।

ঘরে কোহিনূর রান্না শুরু করে দিয়েছে।ঋষির চোখে জল এসে গেল।অন্ধকার খুজে নিয়ে রুমাল দিয়ে চোখ মুছল।কতক্ষন দাঁড়িয়ে আছে খেয়াল নেই।কোহিনুর কখন পাশে এসে দাড়িয়েছে বুঝতে পারেনি।চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বলল,বস চা।
হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিল।কোহিনূরের চলে যাবার দিকে মনে হল,বাবুয়া ভাগ্যবান।জেল থেকে বেরিয়ে এসে পাবে সুন্দর সাজানো সংসার।ভজা এসে বলল,বস অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছো?


গাঙ্গার জলে চাদের ছায়া পড়েছে।ঢেউয়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাচ্ছে।ড.এমা নির্নিমেষ তাকিয়ে দেখছে জলতরঙ্গ।ক্রমশ নির্জন হয়ে আসছে জায়গাটা।খেয়াল করেনি কখন মহারাজ পাশে এসে দাড়িয়েছেন।পাশে বসে বললেন,তোমাকে মন্দিরে না পেয়ে এদিকে খুজতে এলাম।
–মন্দিরে বসেছিলাম ভাল লাগল না তাই এখানে এসে বসেছি।
–তোমাকে একটা কথা বলা দরকার তাই বলছি।আকাশে কি সুন্দর চাঁদ উঠেছে দেখেছো?


এমা আকাশের দিকে তাকালো।মহারাজ বললেন,চোখ বুজলে তুমি চাঁদ দেখতে পাবে না।তার মানে কি চাঁদ নেই? চাঁদ সেই একই জায়গায় থাকবে।সমস্যাকে এড়িয়ে নয় সাহসে ভর করে সামনা সামনি হতে হবে।স্বামীজী একবার বেনারস গেছিলেন কিছু হনুমান স্বামীজীর পিছু নেয়।স্বামীজী তাদের এড়াবার জন্য জোর কদমে হাটতে লাগলেন হনুমানের দল পিছু ছাড়ছে নাআ।তখন স্বামীজি লাঠি নিয়ে রুখে দাড়ালেন হনুমান সব পালিয়ে গেল।

এমা গঙ্গার ওপারের দূরের আলোর দিকে তাকিয়ে মহারাজের কথাটা বোঝার চেষ্টা করে।
–স্বামীজী বলেছেন যখন কোনো সমস্যায় পড়বে জানবে সমস্যার উৎস তোমার মধ্যে।উৎস খুজে বের করে মূল উৎপাটন করতে হবে।গম্ভীর স্বরে বললেন মহারাজ।
মহারাজের পা ছুয়ে প্রণাম করল ড.এমা।ইচ্ছে করছিল মহারাজের পাশে বসে আরো অনেক কথা বলে কিন্তু রাত বাড়ছে রোহন বেচারি গাড়িতে বসে আছে।এমা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,আজ আসি মহারাজ?


তখনও বিরিয়ানি নামেনি কিন্তু ঋষির পক্ষে অপেক্ষা করা আর সম্ভব নয়।অনেক পীড়াপিড়িতে চিকেন চাপ টেস্ট করে ঋষি দ্রুত হাটতে শুরু করল।মাথার উপর নক্ষত্র খচিত আকাশ।আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে হয় পৃথিবী কি বিশাল।

উজ্জ্বল চাঁদ উঠেছে যেন তার সঙ্গে সঙ্গে চলেছে। নার্সিং হোমে পৌছে দেখল ড.এমার গাড়ী।তাহলে ড.এমা ফিরে এসেছে? ধন্দ্বে পড়ে যায় একবার উপরে গিয়ে খোজ নেবে?কাঞ্চাকে দেখছে না।ঘরে ঢূকে লাইট না জ্বেলে জামা খুলে অন্ধকারে কিছুক্ষন বসে থাকে।

শরীর খুব খারাপ হলে নিশ্চয়ই বের হতনা।তাহলেও সৌজন্যের খাতিরে একবার খোজ নেওয়া উচিত।জামা গায় দিয়ে ধীর পায়ে উপরে উঠে এল ঋষি।দরজা খোলা পর্দা ঝুলছে।ভিতরে সাড়া শব্দ নেই।ফিরে যাবে কিনা ভাবছে।ড.এমার গলা পাওয়া গেল,কে ওখানে?
ঋষি ভিতরে ঢুকে জিজ্ঞেস করল,ভাল আছেন ম্যাম?


ড.এমা বুঝতে পারে না ভাল থাকার কথা আসছে কেন?ঋষি বলল,শুনলাম কাল নাকি আপনার শরীর খারাপ হয়েছিল?
ড.এমার কালকের কথা মনে পড়তে মেজাজ বিগড়ে গেল বলল,আমাকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না।বিয়ে করেছো তো?
–কেন ম্যাম?
–আবার জিজ্ঞেস করছো কেন ম্যাম?তোমাকে কিছু বলেনি মহিলা কনসিভ করেছে?
–আমি জানি।কিন্তু এর সঙ্গে আমার সম্পর্ক কি?এমার কথায় মজা পায় ঋষি বুঝতে পারে এত উত্তেজনার কারন।
–সম্পর্ক কি?এমনি এমনি হয়ে গেল?ইচ্ছে করছে এই মুহূর্তে তোমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিই।
–ঘাড় ধাক্কা দিতে হবে না আমিই চলে যাচ্ছি।ঋষি যেতে উদ্যত হয়।
–যাবে না দাঁড়াও।
 
ঋষি ঘুরে দাড়ালো।এমা সুর বদলে বলল,তোমার কোনো সম্পর্কে নেই সত্যি বলছো?
–ম্যাম আমি আপনাকে কখনো মিথ্যে বলিনি।
–তোমাকে বসতে বলেছি।


ঋষি সোফায় বসে বলল,ম্যাম আমার ডিনার হয়নি।
–ডিনার আমারও হয়নি।
–ম্যাম ক্যাণ্টিন বন্ধ হয়ে যাবে।
–হোক।আই উইল টেক ফাইন্যাল ডিসিশন টু নাইট।


ঋষি লক্ষ্য করল এমা অন্যদিকে তাকিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।তামাটে ফর্সা রঙ ছোটো কোরে ছাটা চুল চোখের উপর পড়েছে।আয়ত চোখ নেপালীদের মত নয়। ঋষির দিকে ফিরে ফিক কোরে হেসে জিজ্ঞেস করল,তোমাকে এত গালিগালাজ করলাম তোমার রাগ হলনা?
–আপনি কষ্ট পাছেন দেখে আমার কষ্ট হচ্ছিল।
–তুমি জানো আমার একবার বিয়ে হয়েছিল।ছেলেটী উপযাচক হয়ে মমকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল তার ইচ্ছে বিলেত যাবে উচ্চ শিক্ষার জন্য।রেজিস্ট্রি করে সেদিনই চলে গেল আর ফিরে আসেনি।রাজদীপ আমার বন্ধু জানিয়েছে সে আর ফিরবে না।


আমার ড্যাড হিন্দু মম বুদ্ধিষ্ট–।
–ম্যাম এসব আমাকে বলছেন কেন?
এমা দুম করে প্রশ্ন করল,আচ্ছা ঋষী তুমি কোনো মেয়েকে ভালবাসোনি?


ঋষি মাথা নীচু করে বসে থাকে।এমা অপ্রস্তুত হয়ে বলল,সরি তোমার ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রশ্ন করা ঠিক হয়নি।
ঋষি মাথা তুলে বলল,তা নয় তোমার প্রশ্নের উত্তর দেবার আগে একটা বিষয় পরিস্কার হওয়া দরকার।সরি আমি আপনাকে তুমি বলে ফেলেছি।
এমা হেসে বলল,আমাকে তুমিই বলো।


ঋষির মন অতীতে বিচরণ করতে থাকে।এক সময় বলল, তোমার প্রশ্ন ছোটো হলেও আমার ছোটো উত্তর জানা নেই।
–কত সময় লাগবে?দশ মিনিট একঘণ্টা এক রাত?তুমি বলো আমি শুনতে চাই।
–রাতে খাবে না?
খিল-খিল কোরে হেসে উঠে বলল,ঠিক আছে খেয়ে শুনবো।এমা চলে গেল।
একটু পরে ফিরে এসে একটা লুঙ্গি দিয়ে বলল,চেঞ্জ কোরে নেও।


লুঙ্গিটা সম্ভবত এমার,মুখের উপর না বলতে পারেনা ঋষি একটু ইতস্তত করে লুঙ্গিটা পরে সোফায় বসে অপেক্ষা করে।

খাওয়া দাওয়ার বসতে বলল।ঋষি সোফায় বসে ভাবতে থাকে আজ ঘুমের দফারফা।বাসনপত্র ধুয়ে এসে সোফায় হাটু অবধি লুঙ্গি হুটিয়ে এমা একগাল হেসে বলল,এবার শুরু করো।

ঋষি কিশোর জীবন থেকে শুরু করল।একের পর এক মেয়ের কথা বলতে বলতে একসময় বলল,দেখো এমা একটি মেয়েকে ভাল লাগল তাকে ছাড়া জীবন বৃথা আমি এরকম ভাবিনা।জাহ্নবী পর্ণাকে ভাল লেগেছিল ওদেরও হয়তো আমাকে ভাল লেগে থাকতে পারে কিন্তু সব কুঁড়ি ফুল হয়ে ফোটেনা।উপযুক্ত পরিবেশ পরিচর্যা চাই।আমাদের মনে অনেক সময় অনেক ইচ্ছে জাগে কিন্তু অনুকূল পরিবেশের অভাবে ইচ্ছেগুলো মনের মধ্যে দমন করে রাখি।

এমা বলল,মনের মধ্যে চেপে রেখেছো এমন একটা ইচ্ছের কথা বলো?

ঋষি বুঝতে পারে এমা কি শুনতে চায়?ঋষি হেসে বলল,আমার ছোড়দির ইচ্ছে ছিল এম.এ পড়ি আমারও ইচ্ছে ছিল অধ্যাপনা করব।কিন্তু ইচ্ছে হলেই হয়না উপায় থাকতে হবে।অতএব মনের ইচ্ছে চাপা পড়ে গেল মনের কোনে।
–আর কিছু?
–ভাসতে ভাসতে এখানে তোমার আশ্রয়ে এলাম আবার নতুন ইচ্ছে জন্ম নিল।আবার সেই বাধা বুকের ইচ্ছে মুখ ফুটে বলার সাহস হল না।
–মুখ ফুটে বলে দেখতে পারতে?
–অসম্ভবকে স্বপ্নে দেখা যায় কিন্তু বাস্তবায়িত করতে গেলে দুঃখকেই ডেকে আনা।যেচে কে দুঃখ পেতে চায় বলো?


এমা উঠে দাঁড়িয়ে দু-হাত প্রসারিত করে বলল,দেখি দুঃখ পাই কিনা? I love you Rishi. ঋষি স্তম্ভিত বুকের মধ্যে কেপে উঠল ধীরে উঠে দাঁড়িয়ে এমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, তোমাকে আমিও খুব খুব ভালবাসি।
–তাহলে বলোনি কেন?
–তোমার খোলস।এতবড় ডাক্তার বিত্ত বৈভব যেন কঠোর প্রহরীর মত পথ আগলে দাঁড়িয়ে আছে ভিতরে যাবো সাহস হয়নি।
–খোলসের মধ্যে আর কিছুই নজরে পড়েনি?
–পড়েছিল বলেই যাবো যাবো করেও যেতে পারিনি।
–আমি এখানে পাঁচজনের মত বেতনভুক ডাক্তার।এই যা সব দেখছো কিছুই আমার নয়।সমস্ত আয় মাসান্তে চালান হয়ে যায় মালকিনের কাছে।এমা দু-হাতে সবলে ঋষিকে জড়িয়ে ধরে বলল,সামনের মাসে মম আসছে।


বাহুবন্ধন মুক্ত হয়ে এমা বলল,আজ রাতটা সোফায় শুয়ে পড়ো।গুড নাইট।যেতে গিয়ে ফিরে এসে একগাল হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করল,আর কোনো ইচ্ছে নেইতো?
–চুমু খেতে ইচ্ছে করছে।


এমা হেসে ফেলে বলল, উফস নটি।ওকে কাম অন।চোখ বুজে মুখ তুলে অপেক্ষা করে।

ঋষি উঠে ঠোটের পরে ঠোট রাখতে এমা জিভটা ভিতরে ঠেলে দিল।ঋষি লজেন্সের মত চুষতে লাগল।এমা উম-উম করতে করতে ঋষির পিঠে হাত বোলায়।
 
কামদেবের বাংলা চটি উপন্যাস – পরভৃত – ৫৪

– আজ অন্য নার্সিং হোমে দুটো অপারেশন করার কথা।ড.এমা বেরোবার জন্য তৈরী।কাঞ্চাকে বলল,সোমবাবুকে ডাকোতো।কাঞ্চা নীচে গিয়ে শুনলো বাঙালীবাবু খেয়ে বেরিয়ে গেছে।

ফিরে গিয়ে মেমসাবকে বলতে ড.এমা বিরক্ত হল।একটা যায় আরেকটা নতুন সমস্যা খাড়া হয়।যাবার আগে একবার ঋষির সঙ্গে একটু কথা বলবে ভেবেছিল।নীচে নেমে দেখল রোহন গাড়ী নিয়ে রেডি।

ড.এমা গাড়ীতে উঠতে রোহন গাড়ি স্টার্ট করল।মোবাইল বেজে উঠতে কানে লাগিয়ে ড.এমা বলল,ড.এমা….মনে মনে হিসেব কোরে বলল এই আধঘণ্টা।মোবাইল রেখে হেলান দিয়ে বসল।ঋষিকে একটা মোবাইল কিনে দিলে সমস্যার মোটামুটি সুরাহা হয়।
–আচ্ছা রোহনজী বাঙালীবাবু গাড়ি চালাতে পারবে?


রোহন থাপা হেসে বলল,পাকা ড্রাইভার বনে গেছে সোমবাবু।শুধু লাইসেন্স নেই।
–লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষা দিতে হবে?ট্রেনিং সেণ্টার আমার সব ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।
–পয়সা দিলে আপনাকে যেতেও হবে না।


ড.এমা কিছুক্ষন ভেবে জিজ্ঞেস করল,ওকে না জানিয়ে আপনি ব্যবস্থা করতে পারবেন?
–ফটো লাগবে ফারম ফিলাপ করতে হবে।রোহনজী কি ভেবে জিজ্ঞেস করল,মেমসাব সোমবাবুর লাইসেন্স কেন করবেন?


ড.এমা বুঝতে পারে রোহনজী ভয় পেয়েছে বলল,আপনি বরাবর থাকবেন।যদি কখন দেশে যান তখন–।
রোহন থাপা আশ্বস্থ হয়।মওকা বুঝে রোহনজী বলল,ভাল বলেছেন।কাঞ্চার জন্য সামনের মাসে একবার যেতে হবে।
–তার আগে ওর লাইসেন্স হবে না?
–টাকা দিলে কেন হবে না?আমি ফারম এনে দেবো।


মুন্না চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছে।মুন্নাকে কেমন চিন্তিত মনে হল।দুখে জিজ্ঞেস করল, বরেনদা অন্য কোথাও যাবার কথা বলল কেন?
দুখের দিকে তাকিয়ে মুন্না বলল,শালা কাজের সময় কাজি কাজ ফুরোলে পাঁজি।


মুন্নার নজরে পড়ে দোকানের বাইরে একটা লোক কানে মোবাইল লাগিয়ে কথা বলছে।দুখেকে বলল,মালটাকে এই মহল্লায় আগে দেখেছি বলে মনে হচ্ছে না।পাত্তা লাগা তো।

দুখে হেলতে দুলতে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,তখন থেকে দেখছি এখানে খাম্বা মেরে দাঁড়িয়ে আছো।কোথায় থাকো?

লোকটি বলল,বরেনদার বাড়িটা কোথায় বলতে পারবেন?

বরেনদা?দুখে ভাল করে লোকটাকে দেখে বলল,এই মুন্না বরেনদাকে খুজছে?

মুন্না দোকান থেকে বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল,বরেনদাকে কি দরকার?
–ব্যক্তিগত ব্যাপার।


ইতিমধ্যে দু-তিনজন কৌতুহলী লোক দাঁড়িয়ে পড়ে।মুন্না জিজ্ঞেস করল,পার্টির লোক?

লোকটি দ্রুত মুন্নার কোমরে হাত দিয়ে রিভলবার চেপে ধরে বলল,পুলিশের লোক।কিছু বোঝার আগেই আরেকটা লোক পিছন থেকে কলার চেপে ধরল।দুখে বেগতিক দেখে কেটে পড়েছে।কোথা থেকে একটা জিপ চলে এল।মুন্নাকে নিয়ে মুহূর্তে উধাও হল জিপ।

ঋষি কলেজের অফিসে গিয়ে কানাইবাবুকে চিনতে পারে।কাছে গিয়ে বলল,কানাইদা আমি ঋষভ সোম।সার্টফিকেট নিতে এসেছি।

কানাইবাবু রেজিস্টার ঘেটে বলল,তুমি তো মার্কশিটও নিয়ে যাওনি কোথায় ছিলে?

এক গোছা সার্টফিকেট বের করে খুজতে খুজতে তারটা বের করে রেজিস্টার এগিয়ে দিয়ে বলল,সই করো।আর ঐটাতেও সই করো।

মার্কশিট সার্টিফিকেট নিয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে মনে হল ভজা বেশ উত্তেজিত।কাছে যেতে ভজা ফিসফিস কোরে বলল,বস মুন্না নাকি ধরা পড়েছে?

ঋষি বলল,আজ না হোক কাল ধরা পড়বে চলো।তুমি আমাকে আমতলায় নামিয়ে দেবে।

কঙ্কার ফ্লাট পেরোতে ব্যালকনির দিকে তাকালো।কেউ নেই হয়তো ঘুমোচ্চে।আমতলায় বাইক থামিয়ে ভজা জিজ্ঞেস করল,কখন আসবো?

–ঘণ্টা খানেক পর।ঋষি হাটতে শুরু করল।

বড়দির সামনা সামনি হয়ে কি বলবে ঋষি।মনে মনে সেটাই ভাবছে।কিছুই মাথায় আসছে না হঠাত উধাও হয়ে যাওয়ার পিছনে সন্তোষজনক কোনো যুক্তি।

মনীষা মেয়েকে বুকের কাছে নিয়ে ঘুমোচ্ছে।ঘুমোচ্ছে না বলে শুয়ে আছে বলাই ভাল।মনে হল দরজায় বেল বাজল।এখন আবার কে এল? ঋষি থাকলে সেই দরজা খুলতো।হালি শহর থেকে সুদেব এল নাতো?কথাটা মনে হতেই মনীষা ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে আবার বেল বেজে ওঠে।মণীষা চুলের গোছা হাতে জড়িয়ে খোপা করতে করতে বলল,হ্যা খুলছি।

দরজা খুলে ভুত দেখার মত চমকে উঠল।কয়েক মুহূর্ত মুখে কথা যোগায় না।

ঋষি নীচু হয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল। মনীষার হাত ঋষির চিবুক স্পর্শ করে।সম্বিত ফিরতে বলল,তুই কি মানুষ?
–খুব অন্যায় হয়ে গেছে বড়দি।ঋষির চোখ ভিজে গেল।
–তুই বড় হয়েছিস তোর যেখানে ইচ্ছে তুই যা।একটা খবর দিবি না?
–বড়দি বলছি তো অন্যায় হয়ে গেছে।


ঋষিকে বসিয়ে মনীষা চলে গেল।ঋষি পকেট থেকে ক্যাডবেরি বার বের করে পাশে রাখল।ঘুম চোখে উঠে এসে টুকুন দরজার কাছে এসে অবাক হয়ে মামুকে দেখছে।ঋষি হেসে বলল,এদিকে এসো।
–না তুমি ভালো না।তোমার জন্য মামণিকে বাপি বকছিল।মামণি কাদছিল।


ঋষি উঠে গিয়ে টুকুনকে ধরে নিজের পাশে বসালো।হাতে ক্যাডবেরি দিতে একবার আড়চোখে মামুকে দেখে বলল,জানো আমরা মাসীমণির বাড়ি গেছিলাম।
মনীষা চা নিয়ে ঢুকে টুকুনকে বলল,যাও ও ঘরে যাও।
ঋষি বলল,থাক না।
–কি হল মামণির কথা শুনবে না?


ঋশি বুঝতে পারে বড়দির অনেক কথা বলার আছে যা টুকুনের সামনে বলা যায়না।নিজেকে প্রস্তুত কোরে মনে মনে ঋষি,।
মনীষা চায়ের কাপ হাতে দিয়ে চৌকির একপাশে বসে জিজ্ঞেস করল,তুই কোথায় গেছিলি বলতো?


ঋষি চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলতে থাকে,তুমি তো জানো শান্তি ভট্টাচার্য খুন হয়েছে?মুন্না বলে একটা ছেলে খুন করেছে।
–তুই কি করে জানলি? তোর এসব ব্যাপারে থাকার দরকার কি বাপু?তোর কি কোনোদিন বুদ্ধি হবে না?
–হ্যা আমি নির্বোধ।ঋষি ঝোলা ব্যাগ থেকে বি এ-র সার্টিফিকেট বের করে মনীষার হাতে দিল।


মনীষা সার্টিফিকেট হাতে নিয়ে হাত বোলায়।তারপর টুকুনকে ডাকল,দেখো মামু ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে।দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,মা থাকলে আজ কত খুশি হত।দিশাকে খবর দিতে হবে।
কে জানে মেয়েটা কেদে কেটে কি করছে?তোর একবার আমাদের কথা মনে হল না?
–আমি যাবো ছোড়দির কাছে।


তুই বললি নাতো কোথায় ছিলি?

ভবি ভোলবার নয়।ঋষি আবার শুরু করল্,আমি খুন করতে দেখেছি বলে আমার নাম জড়িয়ে দিল।ভয়ে পালিয়ে গেলাম।

মনীষা শিউরে উঠে বলল,সেকী?তুই এখানে এলি কেউ দেখেনি তো?
–এখন সবাই জেনে গেছে।কে আসল খুনী।আমার আর ভয় নেই।
–ঠিক আছে জামা কাপড় ছাড়।তারপর সব শুনবো।
–বড়দি আমাকে যেতে হবে।
–কেন তুই যে বললি আর ভয় নেই?
–তা নয় আমি একটা কাজ করছি।ওখানে থাকতে হয়।


মনীষা অবাক হয়ে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।কাজ করছিস?কি কাজ?মাইনে কত?
–খাওয়া-পরা চলে যায়।
–খাওয়া-পরা চলে যায়?লেখাপড়া শিখে খাওয়া-পরা চলে যায়?ভাই তুই আমাকে মিথ্যে বলছিস নাতো?
–বড়দি আমি নির্বোধ হতে পারি তুমি ভাইকে চেনো না তোমাকে মিথ্যে বলব?


মনীষা জানে ভাইটা তার সোজা সরল তাই ওকে সবাই বোকা ভাবে।বোকা হলে কিএত ভাল রেজাল্ট করতে পারে?জিজ্ঞেস করল,এখনই চলে যাবি?
–আবার আসব।ঝামেলা মিটে গেছে–।
–ও তোকে বলিনি সামনের ফ্লাটের দিদিমণি তোকে খুজতে এসেছিল।
–টুকুন কোথায়?টুকুন টুকুন।
 
টুকুন আসতে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,আজ আসি আবার পরে আসব।

আমতলায় ভজা বসে আছে ঋষিকে দেখে বলল,আমি ভাবলাম বুঝি তুমি চলে গেছো।
–একটু দেরী হয়ে গেল।ভজা আজ আর সাধুর মোড়ে যাবো না।
–বস চা বলেছি।ভজা বলল।


ঋষি চা খেতে খেতে ভাবে বড়িদিকে মিথ্যে বলেনি আবার সব কথা বিস্তারিত বলেছে তাও বলা যায়না।নজরে পড়ল তমাল যাচ্ছে।তমাল কি ওকে দেখেনি নাকি দেখেও এড়িয়ে যাচ্ছে? ঋষি ডাকল,এই তমাল??

তমাল দাঁড়িয়ে পড়ল ঋষিকে দেখে এগিয়ে এসে বলল,কিরে তুই?এতদিন কোথায় ছিলি?
–খবর কি বল?
–অপেক্ষা করছি রেজাল্টের।ব্যাক পেয়েছিলাম তুই বোধ হয় জানিস না?
–ক সাব্জেক্ট?
–ব্যাড লাক।সামান্য কম নম্বরের জন্য দুটোতে ব্যাক হয়ে গেল।
–আর সবার খবর কি?
–ভালই আছে মনে হয়।


তমালকে চা দিয়ে গেল।ঋষি জিজ্ঞেস করল,মনে হয় মানে তোর সঙ্গে দেখা হয়না?
–মাঝে সাঝে দেখা হয়।আশিসদা এ্যারেষ্ট হবার পর রকের আড্ডা বন্ধই হয়ে গেছে।
–শুভ কি এমএ পড়ছে?
–এমবিএ নাকি পড়ছে।আমাদের কেউ এমএ পড়ছে না।তুই এমএ পড়ছিস না?


ঋষি হাসল বলল,দেখি এবার ভর্তি হব কিনা ভাবছি।
–ফালতু নষ্ট করলি একটা বছর। শুনেছিস মুন্নাকে আজ ধরে নিয়ে গেছে।শান্তি ভট্টাচার্যের আসল খুনী নাকি মুন্না?
–বস খবর তাহলে জেনুইন।ভজা বলল।


এতক্ষন খেয়াল করেনি ভজাকে দেখে তমাল ঘাবড়ে যায় বলে,আমি আসি ঋষি।শুনলাম শিগগীর রেজাল্ট বেরোবে।

ঋষি বাইকের পিছনে বসল।খিনকিল নার্সিং হোমের নীচে ঋষিকে নামিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল,বস কাল কোর্টে আসছো?

ঋষি বলল,যেতে পারি।

ঋষি ঘরে ঢুকে ভিজে গামছায় মুখ মুছে চৌকিতে এলিয়ে পড়ল।সার্টফিকেট এমাকে দেখাবে কিনা ভাবছে।আগে হলে অন্যকথা এখন দেখানো উচিত।সারাদিন একবারও দেখেনি দেখাও হয়ে যাবে।ঋষি উঠে পড়ল।

এমা সোফায় বসে কাগজ পত্র ঘাটাঘাটি করছে।ঋষি ঢুকতে বলল,সারাদিন কোথায় থাকো?
–কোনো দরকার ছিল?
–দেখতে ইচ্ছে হয়না তোমার?
–তোমার সঙ্গে সঙ্গে রাখো তাহলে।


এমা হাসল বলল,তার ব্যবস্থা করছি।ব্যাগ থেকে একটা বাক্স বের করে এগিয়ে দিয়ে বলল,এখন এটা দিয়ে কাজ চালাতে হবে।

ঋষি বাক্স খুলে দেখলো মোবাইল ফোন।ঋষী সার্টিফিকেট বের করে বলল,এটা তুমি রাখো।

চোখের সামনে মেলে ধরে এমার মুখ আলোকিত হয়ে গেল।ঋষি বলল,কলেজ গেছিলাম।নিয়ে এলাম।

উচ্ছসিত হয়ে এমা বলল,ঋষি মাই ডার্লিং আয় এ্যাম ভেরি গ্লাড।ঋষির মাথা টেনে চুমু খেলো।

পাস করার পর যেন বড় পুরস্কার পেল ঋষি।বড়দিও খুশি হয়েছে।এক-একজনের প্রকাশভঙ্গী এক-একরকম।ঋষি জিজ্ঞেস করল্ল,তুমি কোথাও বেরিয়েছিলে?
–বারাসাত গেছিলাম।একটু আগে ফিরলাম।তুমি মুখ মুছে সোজা হয়ে বোসো।


এমা মোবাইল ক্যস্মেরা অন করল্ল।ঋষি জিজ্ঞেস করল,ছবি তুলছো কেন?
–আমার সঙ্গে রাখবো।
–তাহলে আমিও একটা তুলি সামার কাছে থাকবে।ঋষি বাক্স খুলে নতুন মোবাইল বের করল।এমা বলল,এক মিনিট।


এমা উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করে কোমর বেকিয়ে দাড়ালো।ঋষি বলল,খালি মুখটা তুলবো।ক্লিক করে ছবি তুললো।

এমা হেসে জিজ্ঞেস করল যদি কেউ জিজ্ঞেস করে কার ছবি?
–বলব নামকরা ডাক্তার এমা।তুমি কি বলবে?
–যা সত্যি তাই বলবো।এমার মুখে দুষ্টু হাসি।
–সত্যটাই তো জানতে চাই।


এমা কপালের চুল সরিয়ে ফিক করে হেসে ফেলল।কাঞ্চা ঢুকতে আর কথা এগোয় না।

এমা বলল,ফোন সুইচ অফ রাখবে না।

ঋষির ফোন বেজে উঠল।নতুন ফোন এই নম্বরে কে ফোন কোরল?ঋষি ফোন ধরার আগেই কেটে গেল।এমা হেসে বলল,এই নম্বর zeya নামে সেভ করে রাখো।মম আমাকে এই নামে ডাকে।
–আমি ডাকবো?


ড.এমা হাসলো বলল,তোমার ইচ্ছে।

কাঞ্চা খাবার দিয়ে যায়।এমা দ্রুত খাবার শেষ করে চেঞ্জ করতে গেল।চা খেতে খেতে বলল,আমার সময় হয়ে গেছে।তুমি ধীরে সুস্থে খাও।যেতে গিয়ে ফিরে এসে বলল,রাতে আসবে,অনেক কথা আছে।

ঋষি হেসে বলল,তুমি ফোন করবে।

এমা হেসে নীচে নেমে গেল।
 
কামদেবের বাংলা চটি উপন্যাস – পরভৃত – ৫৫

– ভোরবেলা ঘুম হতে উঠে ড.এমা দেখল সোফায় কুকড়ে শুয়ে আছে ঋষি।হাতের পেশী ফুলে উঠেছে।মুখখানা নিষ্পাপ নিরীহ। দোতলায় দুটো গেস্ট রুম আছে।ঋষিকে তার একটায় ব্যবস্থার কথা চিন্তা করল।কাল রাতে অনেক কথা জানা গেল।

কোহিনূর পতিতা জীবন থেকে গৃহস্থ জীবনে ফিরে এসেছে।বাবুয়া তার সন্তানের পিতা।বাবুয়াকে চেনে এমা, হাসপাতাল তৈরী হবার সময় মাইতিবাবু নিয়ে এসেছিল।দাড়িয়ে থেকে বিল্ডিং তুলতে সাহায্য করেছিল।মাথার কাছে বসে চুলে হাত বোলায়।

মাইতিবাবু বলছিল একে সবাই বস বলে।ঋষি চোখ মেলে এমাকে দেখে হাসল।

ত্রিদিবেশ মাইতি সব লক্ষ্য রাখছেন।প্রতিটি খবর তিনি নিয়মিত যথাস্থানে পৌছে দিচ্ছেন।

ম্যাডাম শিঘ্রী কলকাতায় আসবেন নিজে দেখে যান মেয়ের কীর্তিকলাপ।ম্যাডাম বেশি পাত্তা দেয়না স্বামীকে কিন্তু মেয়ে অন্তপ্রাণ।ম্যাডামের নির্দেশ ত্রিদিবেশ মাইতিকে এসব খবর রাখতে হয়।

ড.এমা বলল,তুমি রেডি হয়ে নেও।আজ থেকে এখানে খাবে ক্যাণ্টিনে খেতে হবেনা।

ঋষি বুঝতে পারছে এমার আচরনে সে অন্যান্যদের থেকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।সবাই আগের মত সহজভাবে তার সঙ্গে কথা বলে না।আবার এমার মুখের উপর কিছু বলতেও পারেনা।স্নান করে দুজনে খেতে বসল।খুব হালকাভাবে এমা জিজ্ঞেস
করল,ঋষি তুমি কোনদিন আমাকে ছেড়ে যাবে নাতো?


ঋষি মুখে গ্রাস তুলতে গিয়ে থেমে যায়।এমার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল হাসি হাসি মুখ নিয়ে ঋষি কি বলে শোনার প্রতীক্ষায়।ঋষি বলল,জীবনেও তোমাকে ছেড়ে যাবো না।তোমার মন রাখতে আমি একথা বলতে পারি।
এমার হাসি মিলিয়ে গেল বলল,মন রাখতে হবে না।
–এই মুহূর্তের আমির পক্ষে কোনোদিনের আমি সম্পর্কে বলা কি সম্ভব?


এমা মাথা নীচু করে খেতে থাকে।ঋষি বলল,তুমি রাগ করলে?

এমা হাসল বলল,তুমি যা বললে শুনতে ভাল না লাগলেও তোমাকে আমার আরও ভাল লাগছে।ঠিকই ভবিষ্যতের কথা কে বলতে পারে।তুমি সাধুর মোড়ে যাবে?চলো তোমাকে নামিয়ে দিয়ে মিশনে চলে যাবো।

সবাই এক গাড়ীতে যেতে দেখবে মনটা খুত খুত করে।অনিচ্ছা সত্বেও ঋষি গাড়ীতে রোহনের পাশে বসল।ব্যাপারটা এমার নজরে পড়ে মুচকি হাসল।সাধুর মোড়ে সবাই ঋষির জন্য অপেক্ষা করছিল।গাড়ী থেকে নামতে দেখে ওরা পরস্পর মুখ চাওয়া
চাওয়ি করল।


ঋষির কিহল কে জানে জানলা দিয়ে মুখ ঢূকিয়ে বলল,এসেছো যখন একবার কোহিনূরকে দেখে যাও।

এমা হেসে বলল,তুমি বললে অবশ্যই দেখতে হবে আমাকে।এমা গাড়ি হতে নেমে ঋষির সঙ্গে গলি দিয়ে কোহিনূরের ঘরে ঢূকল।কোহিনূর শুয়ে ছিল ডাক্তার ম্যাডামকে দেখে উঠে বসতে গেল।এমা হাত তুলে উঠতে নিষেধ করে ঋষিকে বাইরে যেতে বলল।

ঋষি বাইরে আসতে ভজা জিজ্ঞেস করে,বস ভাবীর কিছু হয়েছে?
–এরকম সময় মাঝে মাঝে চেক আপ করা দরকার।
–ভাবী বলছিল আজ কোর্টে যাবে না।


এমা বেরিয়ে এসে দোকানটা ভাল করে দেখল।বিশুবাবু চিনিতে পেরেছে ড.এমাকে।বিস্ময়ের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়।এমা দোকান দেখে বলল,এবার আসি?

ঋষি দরজা খুলে দিল গাড়ী চলে গেল।তিনটে বাইকে পাচজনে রওনা হল।

ক্লাস প্রায় শেষ হয়ে এল।কদিন পর বিএ বিএসসির রেজাল্ট বের হবে,নতুন করে ভর্তি শুরু হবে।তার উপর শনিবার।একটা ঢিলেঢালা ভাব।কল্পনা ব্রততীকে নিয়ে সিড়িতে বসে আছে। ব্রততী তার সহপাঠী।সন্দীপকে ফোন করেছিল সুইচ অফ।বাড়ি চলে যাবে কিনা ভাবছে। ব্রততী বলল,তুই দিন দিন মুটিয়ে যাচ্ছিস।কল্পনা হাসল।

পর্ণাকে ক্যাণ্টিন হতে বেরোতে দেখে ব্রততী বলল,ঐ মেয়েটাকে চিনিস?
–হ্যা ইংলিশ নিয়ে পড়ছে।কেন?
–ভীষণ ফাটুশ।ইংলিশে এম এ পড়ছে ভাবে কিইনা কি?
–কেন তোর সঙ্গে কিছু হয়েছে?
–আমার সঙ্গে কি হবে?সেদিন ক্যাণ্টিনে দেবাশিসের সঙ্গে গল্প করছি এমন সময় রজত ঢুকলো।সঙ্গে ঐ মেয়েটাও ছিল।দেবাশিসের পাড়ার ছেলে রজত।পর্ণাকে ডেকে আলাপ করিয়ে দিল,আমার বন্ধু দেবাশিস।দেবাশিস কবি,অনেক প্ত্রিকায় ওর কবিতা
ছাপা হয়েছে।ফাটুশটা কি বলল জানিস?বাংলা কবিতা পড়ার সুযোগ হয়না।


কল্পনা উঠে পড়ল বলল,আসিরে?

বিয়ের পর থেকে সন্দীপ সেই আগের মত নেই।কল্পনা অনুভব করতে পারে শরীরে আরেকজনের উপস্থিতি।সন্দীপকে যখন বলে পেটে হাত বোলায় আর হাসে।ব্রততী বলছিল সে নাকি মুটিয়ে যাচ্ছে।সন্দীপকে বলতে হবে তাড়াতাড়ি কিছু একটা করতে।তার নিজেরও দোষ আছে তখন অতটা গুরুত্ব দেয়নি।তখন একটা ওষুধ খেয়ে নিলে আজ এমন হত না।

একেবারে শেষে বাবুলালের কেস উঠল।কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বাবুলালের চোখ মনে হয় কোহিনূরকে খুজছে।জজ সাহেব সিআইডি রিপোর্ট দেখে ভ্রূ কুচকে যায়।সরকারি উকিলের দিকে তাকাতে উনি মাথা নীচু করেন।জজ সাহেব বললেন,উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে।মুন্না সাউ পরপর দুটো অপরাধ করে পাড়াতেই ছিল অথচ পুলিশ রিপোর্টে তার নামই ছিলনা।

একটা মামলায় দেখানো হচ্ছে ফেরার?

হরিমাধবাবু বললেন,স্যার আমি এই মামলা খারিজ করার আবেদন করছি।

সরকারী উকিলের দিকে তাকিয়ে জজসাহেব বললেন,সিআইডি রিপোর্টে বসের কোনো অস্তিত্বই নেই।পুরানো মামলা খারিজ করে নতুন মামলা শুরুতে আপত্তি আছে?
–না স্যার।সরকারি উকিল বলল।


জজ সাহেব বাবুলালের দিকে একবার দেখে বললেন,আসামী বাবুলাল এবং বসের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস কোরে দেওয়া হল।সিআইডি কর্ত্তক অভিযোগের ভিত্তিতে শান্তি ভট্টাচার্যের খুনের অন্য মামলা শুরু হওয়ায় এই মামলা চালানো অর্থহীন।অতএব খারিজ করে দেওয়া হল।

কাগজ পত্র সই সাবুদ করতে প্রায় সন্ধ্যে হয়ে গেল বাবুয়ার খালাস হতে।ঋষী সবাইকে চুপি চুপি বলল,এখন যেন কেউ তাকে বস না বলে।

বাইরে বেরিয়ে বাবুয়া বলল,বস তুমি আমার পিছনে ওঠো।

ভজা বলল,গুরু আজ তোমার চালাবার দরকার নেই।তুমি কেতোর বাইকের পিছনে বোস।

বাইক ছুটে চলল।কিছুটা যাবার পর বাবুয়া বলল,কোথায় যাচ্ছিস বলতো?

ভজা হেসে বলল,গুরু বসের অর্ডার।

বাবুয়া কিছু বুঝতে পারেনা।তাকে কি লেবু বাগানে নিয়ে যাচ্ছে?বেগম আজ আসেনি কিছু হল নাকি?সাধুর মোড়ে বাইক থামতে ঋষি এগিয়ে এসে বলল,বাবুয়া খুব খারাপ লাগছে মিথ্যে তোমাকে এতদিন জেলে থাকতে হল।

বাবুয়া হাসল বলল,বস তুমি জানো শান্তিদাকে খুন আমি করিনি।তবু আমার মনে কোনো আফশোস নেই।অপরাধ তো কম করিনি তার প্রায়শ্চিত্ত হয়ে গেল।এখানে থামলে কেন?

ভজা দোকানের সাইন বোর্ড দেখালো।

বাবুয়া সাইনবোর্ড দেখে সবার দিকে তাকায়।সবাই মিট মিট কোরে হাসছে।ঋষি বলল,চলো ভিতরে চলো।

ভিতরে ঢুকে কোহিনূরকে দেখে বাবুয়ার মুখে কথা সরে না।জিজ্ঞেস করল,তুই কবে এসেছিস? কে তোকে আনলো?

কোহিনূর কোনো কথা বলেনা।চোখ তুলে ঋষির দিকে তাকালো।

ঋষি বলল,ওখানে থাকা আর সম্ভব হচ্ছিল না।

বাবুয়ার চোখ ঝাপসা হয়ে এল দু-হাতে ঋষিকে জড়িয়ে ধরে বলল,বস তুমি কি?

ঋষি বলল,বাবুয়া তোমার সন্তান ওর পেটে।

তড়িদাহতের মত ঋষিকে ছেড়ে কোহিনূরের দিকে ঘুরে তাকিয়ে থাকে।কোহিনূর লজ্জায় তাকাতে পারেনা। পাশে বসে কোহিনূরকে ভাল করে দেখে বলল,তুই তো আমাকে বলিস নি বেগম?
–কাউকে বলিনি।কদিন আগে বসকে বলেছি।বস ডাক্তার দেখালো।
 
ভজার দিকে তাকিয়ে বাবুয়া বলল,দেখ ভজা এই আমার বস আছে।
–গুরু তূমি দেখো।বস কি করেছে আমরা জানি।ভাবীকে আজও ডাক্তার দেখিয়েছে।


বাবুয়া হাতের তালুর উল্টোদিক দিয়ে চোখ মুছল।

গঙ্গার তীরে সন্ধ্যে নেমে এল।ভাঁটির টানে বয়ে চলেছে গঙ্গা।তার তীরে দুজন বসে আছে একজন বক্তা আরেকজন মুগ্ধ শ্রোতা।স্বামী আত্মমানন্দ মহারাজ বলে চলেছেন,একটা ইটের উপর ইট রাখো দুটো ইটে সম্পর্ক স্থাপিত হল। দুটো ইটের ফাকে সিমেণ্ট বালি দিয়ে দাও সম্পর্ক আরও মজবুত হল।তাসত্বেও নোনা ধরার আশঙ্কা।সেজন্য সম্পর্ককে লালন করতে হয় যাতে আলগা নাহয়ে যায়।

সব সম্পর্ক স্বার্থের সুতোয় বাধা।স্বার্থের রকম ফের আছে।তুমি ডাক্তার তোমার ফিজ বেশি হলে যাদের টাকা আছে তোমার কাছে আসবে।আর যদি ভাল চিকিৎসক খ্যাতি অর্জন করতে পারো তাহলে যার টাকা নেই সেও ধারদেনা করে তোমার কাছে আসবে।তোমার স্বার্থ কি?তুমি অর্থ পাচ্ছো।

আরেকটা স্বার্থ আছে একজন অসুস্থ লোককে সুস্থ করে তোলার মধ্যে আছে অনাস্বাদিত তৃপ্তি।এ এক পরম পাওয়া, এই তৃপ্তি যারা পায় তাদের খ্যাতি ফুলের গন্ধের মত ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।

ড.এমার ফেরার সময় হল।মহারাজ অনেক বিষয়ে অনেক কথা বললেন,সব কথা এমা না বুঝলেও শুনতে ভালই লাগছিল।একটা কথা মনের কোনে উসখুস করছিল কিভাবে জিজ্ঞেস করবে ভাবতে ভাবতে বলে ফেলল, মহারাজ আমার এক বন্ধু তার বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিল কোনোদিন তাকে ছেড়ে যাবে কিনা–।এই অবধি বলে এমা দেখল মহারাজ মিট্মিট করে হাসছেন।মহারাজ বললেন,তোমার কথা বিশ্বাস করেছি।

এমা লজ্জিত হয়ে বলল,মহারাজ আমাকে ক্ষমা করবেন আমি সত্য বলিনি।

মহারাজ বললেন,আমি জানি।তোমার প্রশ্নের উত্তরে বন্ধু কি বলেছিল তাই বলো?
–বলেছিল এখনকার আমি ভবিষ্যতের আমি সম্পর্কে কি করে বলব?


মহারাজ কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললেন, তোমার বন্ধুকে দেখতে ইচ্ছে করছে।
–কেন মহারাজ?
–দুধে কেউ এক-পোয়া কেউ দু-পোয়া জল মেশায় কিন্তু সবাই নিজের দুধকে বলে খাটি দুধ।স্পষ্ট কোরে সত্য উচ্চারণ করতে সাহসের দরকার।
–সম্পর্কের কোনো নিশ্চয়তা নেই?
–তোমাকে আগেই বলেছি সম্পর্ককে লালন করতে হয়।নারীর অনেক রূপ–পিশাচী কামিনী মায়াবিনী মোহিনী একাধারে সৃষ্টি এবং ধ্বংসের রূপমূর্তী নারী।সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছে মাতৃময়ী।


মায়ের বন্ধন ছিন্ন করা খুব কঠিন।
–স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মাতৃসত্তা?
–সব পুরুষ অবচেতনে নারীর মধ্যে মাতৃসত্তা অনুভব করতে চায় সে স্বামী হোক পিতা হোক বন্ধু যাই হোক।তুমি শোনোনি বাবা মেয়েকে মা বলে সম্বোধন করছে?


ড.এমার মুখে শব্দ জোগায় না।এমন কথা তার কখনো মনে হয়নি।বিশ্বাস করতে পারেনা আবার অবিশ্বাস করে উড়িয়ে দেওয়ার জোর পায়না।কেমন একটা ভাব তার মনপ্রাণ আচ্ছন্ন করে থাকে। মহারাজকে প্রণাম করে উঠে বলল,আসি মহারাজ?

গাড়িতে উঠে হেলান দিয়ে বসল।দক্ষিনেশ্বর পার হতে ফোন বেজে উঠতে মুখে হাসি ফুটল।কিন্তু স্ক্রিনে ঋষি নয় ভেসে উঠল দেবেশ মাইতির নাম।কানে লাগিয়ে বলল,হ্যা বলছি।
–ম্যাডাম আগে অনেকবার ফোন করেছিলাম সুইচ অফ।
–হ্যা বলুন হয়েছে?
–হ্যা হয়ে গেছে।
–কোনো অসুবিধে হয়নিতো?
–না না রেজাল্ট ভাল অসুবিধে হয়নি।
–থ্যাঙ্ক ইউ।রাখছি?


ফোন রেখে তৃপ্তিতে ভরে গেল মন।ঋষি এখন কোথায়?নম্বর টিপল,এখনই কিছু বলার দরকার নেই।

ঋষির ফোন বাজতে দেখল জিয়া।হ্যা বল..ঠিক আছে আসছি।

ভজা বলল,বস নতুন ফোন মনে হচ্ছে?আমাকে একটা মিস কল দাও।ভজা তার নম্বর বলল।ঋষি বলল,আজ আসছি।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top