কাটা নয়, জুড়ে দেয়াই আমার কাজ আর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এ প্রসঙ্গে অনেক আগের একটা ঘটনা মনে পড়লো। ইন্টার্নশীপ করছি তখন। সার্জারী ডিপার্টমেন্টে নাইট ডিউটি করছি, একা। রাত প্রায় ২টা। এক ২২-২৪ বছরের তরুণ এলো হাতে কাটা কান নিয়ে। ওয়ার্ডবয়কে সাথে নিয়ে একলাই ঢুকে গেলাম ওটিতে। কিন্তু কিছুতেই জোড়া লাগাতে পারছিনা। কারণ যতবার যতভাবেই চেষ্টা করি সেলাই করে সুতায় গিঁট দিলেই কান কেটে ছুটে যাচ্ছিল বার বার। কারণ কানের চামড়া ও হাড় এতই নরম আর পিছলা যে ওই সুতার ওজনটুকুই নিতে পারছিলো না। জিদ চেপে গেল। ছেলেটিকে বল্লাম তুই বাবা ভরসা রাখ আর একটু কষ্ট সহ্য কর। বাইরে এসে একটা বিড়ি ধরালাম। নিজেকে শান্ত করে আবার আরো মনোযোগে কাজে লেগে গেলাম। শেষে কিভাবে কিভাবে যেন হয়ে গেল প্রায় ৩ ঘন্টার চেষ্টায়। সকালে রাউন্ডে এসে সার্জারীর প্রফেসর আর ইএনটির প্রফেসর সেই ঝাড়ি আমাকে। আজাইরা কেন সেলাই দিতে গেলাম, কারণ কানে সেলাই টিকে না, তাও আবার লতির ওখানে। বলে ওই কান জোড়া লাগার নয়, জোড়া লাগাতে নেই। কিন্তু তারা ব্যান্ডেজ না খুলে ৭ দিন পর দেখবে বলল। তো ৭ দিন পর তারা খুলে চেক করে আমাকে খুঁজে। আমি তো হসপিটালের ত্রিসীমানায় নাই। মোড়ে বসে বিড়ি ফুঁকছি। ধরে নেয়া হলো। দুই স্যার জড়িয়ে ধরলেন, কি করেছিস তুই! এত ভালো রিপেয়ার আমরাও করতে পারতাম না! আমার দুচোখে তখন জলের ধারা। বলাবাহুল্য, দুই মাস পর ফাইনাল ফলোআপে ওর কান দেখে বুঝাই যায়নি যে ওখানে কিছু হয়েছে। ওই ছেলের দুচোখে যেই ভালোবাসা দেখেছি, পৃথিবীর কোন কিছুই তার কাছে মূল্যহীন। আফসোস, এখন আর প্র্যাকটিস করি না। এত কিছু বলে নিজেকে জাহির করছি না, শুধু এটাই বলতে চেয়েছি মানুষ চাইলে সব করতে পারে। প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস আর একাগ্রতা। সাথে ভাগ্যের সহায়তা। আমি আসলেই ভয়ংকর মামা, নিজেকে নিজেই ভয় পাই...