আমাদের ভারত-বাংলাদেশ তথা ভারত উপমহাদেশে এক সময় গ্রীষ্ম কাল ছাড়া আমের দেখা খুব একটা পাওয়া যেতো না। ঘটনাটা সে সময়ের। যদিও এখন ভারত-বাংলাদেশের অনেক জায়গায়ই বারোমাসি আম পাওয়া যায়।
ঐ আমলে ইবনে বতুতা ভারত সফরে এসেছিলেন। এসেই এই এলাকার বিখ্যাত ফল আম সন্মন্ধে জানতে পারলেন। আম খুব সুস্বাদু ফল জানার পরই ওনার আম খেতে খুব ইচ্ছে হলো। তখন শীতকাল চলছিলো। শীতে তো আমের দেখা পাওয়া কোনো মতেই সম্ভব না। ওনাকে অনেক করে বুঝানোর চেস্টা করা হলো যে এখন আম পাওয়া যাবে না। এটা আমের মৌসুম নয়। কিন্তু বতুতা নাছোড় বান্দার মতো একই কথা বলে যাচ্ছেন, ওনার আম চাই... ভারতবর্ষে এসে উনি আমের স্বাদ গ্রহণ না করে কিছুতেই নিজ দেশে ফিরে যাবেন না। সবাই খুব বিপাকে পড়ে গেলো বিশ্ববিখ্যাত এই লোকের আবদারে। শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা বাদশার কান পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছালো। ওনি মন্ত্রীকে নির্দেশ দিলেন এর একটা বিহিত করার জন্য। মন্ত্রী অনেক ভেবে-চিন্তে একটা উপায় বের করলেন...
পরদিন সকালেই ইবনে বতুতাকে শাহী দরবারে দাওয়াত করে আনা হলো। শাহী মেহমানখানায় যখন ইবনে বতুতা বিশ্রাম করছিলেন তখন মন্ত্রী উনার সাক্ষাৎ প্রার্থী হলেন। ইবনে বতুতার অনুমতিক্রমে মন্ত্রী যখন বতুতার ঘরে গিয়ে পৌঁছলেন তখন বতুতা আধশোয়া অবস্থায় বিছানায় ছিলেন। মন্ত্রী বতুতার পাশে বসে আস্তে করে বললেন, "হে মহান অতিথী, আপনি আমাদের এলাকার সব থেকে সুস্বাদু আর বিখ্যাত ফল আমের স্বাদ নিতে চেয়েছেন। নিশ্চয়ই আপনি তার স্বাদ গ্রহণ করতে পারবেন, তবে আমাদের পক্ষ থেকে একটা আরজ ছিলো। "
মন্ত্রীর কথায় ইবনে বতুতা বললেন, "আপনি নি:সঙ্কোচে সে আরজ পেশ করতে পারেন। "
ইবনে বতুতার কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে মন্ত্রী বললো, "আপনি আমের স্বাদ গ্রহণ করতে পারবেন, কিন্তু সেটি দেখতে পাবেন না। কারন এটা আমের মৌসুম না "
মন্ত্রীর কথায় ইবনে বতুতা রাজি হয়ে গেলেন। ওনার এক কথা, স্বাদ পাওয়া নিয়ে কথা। আম দেখলেও এর স্বাদ যা থাকবে না দেখলেও এর স্বাদ তো আর পাল্টে যাচ্ছে না ! "
মন্ত্রীর সাথে ইবনে বতুতার আরো কিছুক্ষণ আলাপ হলো আর শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো ইবনে বতুতা যখন আমের স্বাদ গ্রহণ করবেন তখন উনার চোখ দুটো বেধে দেয়া হবে। ওনি শুধু আমের স্বাদ চাখবেন কিন্তু সেটি দেখবেন না।
পেয়াদাদের মাঝে এক বয়স্ক পাকা দাঁড়িওয়ালা লোক ছিলো, মন্ত্রী তাকে ডেকে পাঠালেন আর তারপর তার সেই পাকা দাঁড়িতে ভালো করে তেঁতুল আর গুড় মাখিয়ে চোখ বাঁধা ইবনে বতুতার সামনে উপস্থিত করা হলো। ইবনে বতুতা বয়স্ক সেই পেয়াদার দাঁড়ি হাত দিয়ে ধরে মুখে নিয়ে চুষে এর থেকে স্বাদ গ্রহণ করতে থাকলেন।
ইবনে বতুতা বললেন, আম কি আঁশ আঁশ ?
উপস্থিত সবাই বলে উঠলো, জ্বি, জনাব। আমে প্রচুর আঁশ আছে।
এরপর ইবনে বতুতা বললেন, আম কি কিছুটা টক টক ?
সবাই বলে উঠলো, জ্বি, জনাব কিছু কিছু আম বেশ টক হয়।
এবার ইবনে বতুতা বললেন, আম তো বেশ মিস্টি !
এবারো সবাই বলে উঠলো, জ্বি, জনাব। ভালো জাতের আম বেশ মিস্টি হয়ে থাকে।
ইবনে বতুতা বেশ কিছুক্ষণ ধরে ঐ বয়স্ক পেয়াদার দাঁড়ি চুষে ক্ষান্ত দিলেন আর বললেন,
"ভারত বর্ষ ভ্রমণ আজ আমার স্বার্থক হলো। আমি এমনই একটা ফলের স্বাদ গ্রহণ করলাম যেটি আমার অঞ্চলে একেবারে অনুপস্থিত... "