What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে কতিপয় ভ্রান্ত আক্বীদা (1 Viewer)

arn43

Co-Admin
Staff member
Co-Admin
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,615
Messages
121,990
Credits
324,673
DVD
Whiskey
SanDisk Sansa
SanDisk Sansa
Computer
Glasses sunglasses
আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে কতিপয় ভ্রান্ত আক্বীদা

ভূমিকা :
আল্লাহ মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদত করার জন্য (যারিয়াত ৫৬) আর ইবাদত কবুল হওয়ার অন্যতম দু’টি শর্ত হ’ল-
(১) যাবতীয় ইবাদত শুধুমাত্র তাঁর জন্যই নিবেদিত হ’তে হবে। যেমন-ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ-যাকাত, নযর-নিয়ায, যবেহ, কুরবানী, ভয়-ভীতি, সাহায্য, চাওয়া-পাওয়া ইত্যাদি।
(২) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অনুকরণ, অনুসরণ করতে হবে এবং তিনি যেভাবে ইবাদত করতে বলেছেন সেভাবেই তা সম্পাদন করতে হবে। উপরোক্ত শর্ত দু’টির সাথে আক্বীদা-বিশ্বাস বিশুদ্ধ হওয়া অতীব যরূরী। অত্র প্রবন্ধে আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কিত কয়েকটি ভ্রান্ত আক্বীদা আলোচনা করা হ’ল-
অনেকের বিশ্বাস আছে যে,

(১)আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান। অথচ মহান আল্লাহ বলছেন, তিনি আরশের উপর সমাসীন। এ মর্মে পবিত্র কুরআনে ৭টি আয়াত বর্ণিত হয়েছে।
(ইমাম ইবনু তায়মিয়া, মাজমূউ ফাতাওয়া ৩/১৩৫।) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও বলেছেন যে, আল্লাহ আসমানে আছেন। ছাহাবী (রাঃ) এবং তাবেঈগণ সকলেই বলেছেন আল্লাহ আসমানে আছেন। তাছাড়া সকল ইমামই বলেছেন, আল্লাহ আসমানে আছেন। এরপরেও যদি বলা হয়, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান তাহ’লে কি ঈমান থাকবে এবং আমল কবুল হবে?
আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান- একথা ঠিক নয়, বরং পবিত্র কুরআন বলছে, আল্লাহ আরশে সমাসীন। এ মর্মে বর্ণিত দলীলগুলো নিম্নরূপ-
(১) আল্লাহ বলেন, إِنَّرَبَّكُمُاللهُالَّذِيْخَلَقَالسَّمَاوَاتِوَالْأَرْضَفِيْسِتَّةِأَيَّامٍثُمَّاسْتَوَىعَلَىالْعَرْشِ. ‘নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক হচ্ছেন সেই আল্লাহ যিনি আসমান ও যমীনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন’
(আ‘রাফ ৭/৫৪)
(২) ‘নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন’
(ইউনুস১০/৩)
(৩) ‘আল্লাহই ঊর্ধ্বদেশে আকাশমন্ডলী স্থাপন করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত- তোমরা এটা দেখছ। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হ’লেন’
(রা‘দ ১৩/২)
 
(৪) ‘দয়াময় (আল্লাহ) আরশে সমাসীন’ (ত্ব-হা ২০/৫)
(৫) ‘তিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেন; অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন। তিনিই রহমান, তাঁর সম্বন্ধে যে অবগত আছে তাকে জিজ্ঞেস করে দেখ’
(ফুরক্বান ২৫/৫৯)
(৬) ‘আল্লাহ তিনি, যিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও এতদুভয়ের অন্তর্বর্তী সবকিছু সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন’
(সাজদাহ ৩২/৪)
(৭) ‘তিনিই ছয় দিনে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর আরশে সমাসীন হয়েছেন’
(হাদীদ ৫৭/৪)
উল্লেখিত আয়াতগুলো দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা আরশে সমাসীন আছেন। কিভাবে সমাসীন আছেন, একথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন,الاستواءمعلوموالكيفمجهولوالإيمانبهواجبوالسؤالعنهبدعة. ‘ইসতেওয়া বা সমাসীন হওয়া বোধগম্য, এর প্রকৃতি অজ্ঞাত, এর প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব এবং এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা বিদ‘আত’।
(শায়খুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া, আর-রিসালাআত-তাদাম্মুরিয়্যাহ, পৃঃ ২০।)
আল্লাহ তা‘আলা আসমানের উপর আছেন। এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন,
أَأَمِنْتُمْمَنْفِيالسَّمَاءِأَنْيَّخْسِفَبِكُمُالْأَرْضَفَإِذَاهِيَتَمُوْرُ،أَمْأَمِنْتُمْمَنْفِيالسَّمَاءِأَنْيُّرْسِلَعَلَيْكُمْحَاصِبًافَسَتَعْلَمُوْنَكَيْفَنَذِيْرِ-
‘তোমরা কি (এ বিষয়ে) নিরাপদ হয়ে গেছ যে, যিনি আকাশের উপর রয়েছেন তিনি তোমাদের সহ ভূমিকে ধসিয়ে দিবেন না? আর তখন ওটা আকস্মিকভাবে থরথর করে কাঁপতে থাকবে। অথবা তোমরা কি নিরাপদ হয়ে গেছ যে, আকাশের উপর যিনি রয়েছেন তিনি তোমাদের উপর পাথর বর্ষণকারী বঞ্ঝাবায়ু প্রেরণ করবেন না? তখন তোমরা জানতে পারবে কিরূপ ছিল আমার সতর্কবাণী’?
(মুলক ৬৭/ ১৬-১৭)
 
২. আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিছু সৃষ্টিকে উপরে উঠিয়ে নিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, بَلرَّفَعَهُاللهُإِلَيْهِ ‘বরং আল্লাহ তাকে (ঈসাকে) নিজের দিকে উঠিয়ে নিয়েছেন’ (নিসা ৪/১৫৮) আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন, إِذْقَالَاللهُيَاعِيْسَىإِنِّيْمُتَوَفِّيْكَوَرَافِعُكَإِلَيَّ. ‘স্মরণ কর, যখন আল্লাহ বললেন, হে ঈসা! আমি তোমার কাল পূর্ণ করছি এবং আমার নিকট তোমাকে তুলে নিচ্ছি’ (আলে ইমরান ৩/৫৫)
৩. আল্লাহ তা‘আলা আরশের উপরে আছেন, এর প্রমাণে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ-
عَنْأَبِيْهُرَيْرَةَرَضِيَاللهُعَنْهُقَالَقَالَرَسُوْلُاللهِصَلَّىاللهُعَلَيْهِوَسَلَّمَلَمَّاقَضَىاللهُالْخَلْقَكَتَبَفِيْكِتَابِهِ،فَهُوَعِنْدَهُفَوْقَالْعَرْشِ : إِنَّرَحْمَتِيْغَلَبَتْغَضَبِيْ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন আল্লাহ মাখলূক সৃষ্টির ইচ্ছা পোষণ করলেন, তখন তাঁর কাছে আরশের উপর রক্ষিত এক কিতাবে লিপিবদ্ধ করেন- অবশ্যই আমার করুণা আমার ক্রোধের উপর জয়লাভ করেছে’।
(বুখারী হা/৩১৯৪ ‘সৃষ্টির সূচনা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১; মিশকাত হা/২৩৬৪ ‘দো‘আ’ অধ্যায়, ‘আল্লাহর রহমতের প্রশস্ততা’ অনুচ্ছেদ।)
৪. আমরা দো‘আ করার সময় দু’হাত উত্তোলন করে আল্লাহর নিকট চাই। এতে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ আরশের উপর আছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)বলেন,
عَنْسَلْمَانَالْفَارِسِيِّعَنِالنَّبِيِّصَلَّىاللهُعَلَيْهِوَسَلَّمَقَالَإِنَّاللهَحَيِيٌّكَرِيْمٌيَسْتَحْيِيْإِذَارَفَعَالرَّجُلُإِلَيْهِيَدَيْهِأَنْيَرُدَّهُمَاصِفْرًاخَائِبَتَيْنِ-
সালমান ফারেসী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ লজ্জাশীল ও মহানুভব। যখন কোন ব্যক্তি তাঁর নিকট দু’হাত উত্তোলন করে দো‘আ করে, তখন তাকে শূন্য হাতে ব্যর্থ মনোরথ করে ফেরত দিতে তিনি লজ্জাবোধ করেন’।
(তিরমিযী হা/৩৫৫৬, ইবনু মাজাহ হা/৩৮৬৫, হাদীছ ছহীহ।)
 
৫. প্রত্যেক রাতে আল্লাহ তা‘আলার দুনিয়ার আসমানে নেমে আসা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, তিনি আরশের উপর সমাসীন। এর প্রমাণ রাসূল (ছাঃ)-এর নিম্নোক্ত হাদীছ :
عَنْأَبِيْهُرَيْرَةَأَنَّرَسُوْلَاللهِصَلَّىاللهُعَلَيْهِوَسَلَّمَقَالَيَنْزِلُرَبُّنَاتَبَارَكَوَتَعَالَىكُلَّلَيْلَةٍإِلَىالسَّمَاءِالدُّنْيَاحِيْنَيَبْقَىثُلُثُاللَّيْلِالْآخِرُيَقُوْلُ : مَنْيَّدْعُوْنِيْفَأَسْتَجِيْبَلَهُ،مَنْيَسْأَلُنِيْفَأُعْطِيَهُ،مَنْيَسْتَغْفِرُنِيْفَأَغْفِرَلَهُ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে মহান আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন, কে আছ যে আমাকে ডাকবে আর আমি তার ডাকে সাড়া দিব? কে আছ যে আমার কাছে কিছু চাইবে আর আমি তাকে তা দান করব। কে আছ যে আমার কাছে ক্ষমা চাবে আর আমি তাকে ক্ষমা করে দিব’।
(বুখারী হা/১১৪৫; মুসলিম হা/৭৫৮; আবুদাঊদ হা/১৩১৫; ইবনু মাজাহ হা/১৩৬৬; মিশকাত হা/১২২৩ ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘তাহাজ্জুদের প্রতি উৎসাহিত করণ’ অনুচ্ছেদ।)
৬. মু‘আবিয়া বিন আল-হাকাম আস-সুলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كَانَتْلِيْجَارِيَةٌتَرْعَىغَنَمًالِىْقِبَلَأُحُدٍوَالْجَوَّانِيَّةِفَاطَّلَعْتُذَاتَيَوْمٍفَإِذَاالذِّئْبُقَدْذَهَبَبِشَاةٍمِنْغَنَمِهَاوَأَنَارَجُلٌمِنْبَنِىْآدَمَآسَفُكَمَايَأْسَفُوْنَلَكِنِّىْصَكَكْتُهَاصَكَّةًفَأَتَيْتُرَسُوْلَاللهِصَلَّىاللهُعَلَيْهِوَسَلَّمَفَعَظَّمَذَلِكَعَلَيَّ. قُلْتُيَارَسُوْلَاللهِأَفَلاَأُعْتِقُهَا؟قَالَائْتِنِيْبِهَافَأَتَيْتُهُبِهَا. فَقَالَلَهَا : أَيْنَاللهُ؟قَالَتْفِيالسَّمَاءِ. قَالَمَنْأَنَا؟قَالَتْأَنْتَرَسُوْلُاللهِ. قَالَأَعْتِقْهَافَإِنَّهَامُؤْمِنَةٌ-
‘আমার একজন দাসী ছিল। ওহুদ ও জাওয়ানিয়্যাহ (ওহুদের নিকটবর্তী একটি স্থান) নামক স্থানে সে আমার ছাগল চরাত। একদিন দেখি, নেকড়ে আমাদের একটি ছাগল ধরে নিয়ে গেছে। আমি একজন আদম সন্তান (সাধারণ মানুষ)। তারা যেভাবে ক্রদ্ধ হয় আমিও সেভাবে ক্রদ্ধ হই। কিন্তু আমি তাকে এক থাপ্পড় মারি। অতঃপর রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট আসলে একে আমি সাংঘাতিক (অন্যায়) কাজ বলে গণ্য করি। তাই আমি বলি যে, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি কি তাকে আযাদ করব না? তিনি বললেন, তাকে আমার নিকট নিয়ে আস। আমি তাকে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট নিয়ে আসলাম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহ কোথায়? সে বলল, আসমানে। তিনি (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি কে? তখন সে বলল, আপনি আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)। তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তাকে মুক্তি দিয়ে দাও, কারণ সে একজন ঈমানদার নারী’।
(ছহীহ মুসলিম হা/৫৩৭ ‘মসজিদ সমূহ ও ছালাতের স্থান সমূহ’ অনুচ্ছেদ।)
 
৭. বিদায় হজ্জের ভাষণে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ছাহাবীগণকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, তোমরা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে, তখন কি বলবে? ঐ সময় উপস্থিত ছাহাবীগণ বলেছিলেন, আমরা সাক্ষ্য দিব যে, আপনি আপনার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছেন। একথা শুনার পর আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তাঁর হাতের আঙ্গুল আসমানের দিকে উত্তোলন করে বলেছিলেন, হে আল্লাহ! তাদের কথার উপর সাক্ষি থাক’। (ছহীহ মুসলিম হা/১২১৮ ‘হজ্জ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৯।)
৮. আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন,
كَانَتْزَيْنَبُتَفْخَرُعَلَىأَزْوَاجِالنَّبِيِّصَلَّىاللهُعَلَيْهِوَسَلَّمَتَقُوْلُ: زَوَّجَكُنَّأَهَالِيْكُنَّوَزَوَّجَنِياللهُتَعَالَىمِنْفَوْقِسَبْعِسَمَاوَاتٍ.
‘যয়নব (রাঃ) নবী করীম (ছাঃ)-এর অন্যান্য স্ত্রীগণের উপর গর্ব করে বলতেন যে, তাঁদের বিয়ে তাঁদের পরিবার দিয়েছে, আর আমার বিয়ে আল্লাহ সপ্ত আসমানের উপর থেকে সম্পাদন করেছেন’।
(বুখারী হা/৭৪২০ ‘তাওহীদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২০।)
৯. ইসরা ও মি‘রাজ-এর ঘটনায় আমরা লক্ষ্য করি যে, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-কে যখন একের পর এক সপ্ত আসমানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তখন তাঁর সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল নবী-রাসূলগণের এবং আল্লাহর সান্নিধ্যের জন্য সপ্ত আসমানের উপর নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এরপর যখন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) পঞ্চাশ ওয়াক্ত ছালাত নিয়ে মূসা (আঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করেন, তখন মূসা (আঃ) রাসূল (ছাঃ)-কে বলেছিলেন, তোমার উম্মত ৫০ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করতে সক্ষম হবে না। যাও আল্লাহর নিকট ছালাত কমিয়ে নাও। এরপর কমাতে কমাতে পাঁচ ওয়াক্ত হয়। এরপর মূসা (আঃ) আরও কমাতে বলেছিলেন, কিন্তু রাসূল (ছাঃ) লজ্জাবোধ করেছিলেন। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ; মিশকাত হা/৫৮৬২।) এসময় আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ছালাত কমানোর জন্য সপ্ত আকাশের উপর উঠতেন। আবার ফিরে আসতেন মূসা (আঃ)-এর নিকট ষষ্ঠ আসমানে। এ দ্বারা বুঝা যায় যে, আল্লাহ তা‘আলা আরশের উপরে আছেন।
 
১০. ফেরাঊন নিজেকে আল্লাহ দাবী করেছিল। সে কাফের হওয়া সত্ত্বেও তার বিশ্বাস ছিল যে, আল্লাহ আরশের উপর আছেন। ফেরাঊন বলল, ‘হে হামান! তুমি আমার জন্য এক সুউচ্চ প্রাসাদ তৈরী কর, যাতে আমি অবলম্বন পাই আসমানে আরোহণের, যেন আমি দেখতে পাই মূসা (আঃ)-এর মা‘বূদকে (মুমিন ৪০/৩৭-৩৮)
সালাফে ছালেহীন থেকে আমরা যা পাই তা হচ্ছে, আল্লাহ আসমানের উপর আরশে অবস্থান করছেন। আবুবকর (রাঃ) থেকে আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যখন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর ওফাত হয়, আবু বকর (রাঃ) এসে তাঁর (ছাঃ) কপালে চুমু খেয়ে বলেন, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আপনি জীবনে ও মরণে উত্তম ছিলেন। এরপর আবু বকর (রাঃ) বলেন, হে মানব জাতি! তোমাদের মধ্যে যারা মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর ইবাদত করতে, তারা জেনে রাখ যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) মৃত্যুবরণ করেছেন। আর তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহর ইবাদত কর তারা জেনে রাখ যে, আল্লাহ আকাশের উপর (আরশে)। তিনি চিরঞ্জীব।
(বুখারী, আত-তারীখ, ১ম খন্ড, পৃঃ ২০২; ইবনুল ক্বাইয়িম, ইজতিমাউল জুয়ূশিল ইসলামিয়্যাহ, পৃঃ ৮৩-৮৪; আর-রাহীকুল মাখতূম, পৃঃ ৪৭০।)
ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) বলেন, منقاللاأعرفربيفيالسماءأمفيالأرضفقدكفرلأناللهتعالىيقولالرحمنعلىالعرشاستوىوعرشهفوقسبعسموات. ‘যে বলবে যে, আল্লাহ আসমানে আছেন, না যমীনে তা আমি জানি না, সে কুফরী করবে। কেননা আল্লাহ বলেন, রহমান আরশে সমাসীন। আর তার আরশ সপ্ত আকাশের উপর। (ইজতিমাউল জুয়ূশিল ইসলামিয়্যাহ, পৃঃ ৯৯।)
ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন, اللهفيالسماءوعلمهفيكلمكانلايخلومنهمكان- ‘আল্লাহ আকাশের উপর এবং তাঁর জ্ঞানের পরিধি সর্বব্যাপী বিস্তৃত। কোন স্থানই তাঁর জ্ঞানের আওতার বহির্ভূত নয়’। (ইজতিমাউল জুয়ূশিল ইসলামিয়্যাহ, পৃঃ ১০১।)
 
ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেন,
القولفيالسنةالتيأناعليهاورأيتأصحابناعليهاأهلالحديثالذينرأيتهموأخذتعنهممثلسفيانومالكوغيرهماالاقراربشهادةأنلاإلهإلااللهوأنمحمدارسولاللهوأناللهتعالىعلىعرشهفيسمائهيقربمنخلقهكيفشاءوأناللهتعالىينزلإلىسماءالدنياكيفشاء-
‘সুন্নাহ সম্পর্কে আমার ও আমি যেসকল আহলেহাদীছ বিদ্বানকে দেখেছি এবং তাদের নিকট থেকে গ্রহণ করেছি যেমন সুফিয়ান, মালেক ও অন্যান্যরা, তাদের মত হল এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা যে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ছাড়া কোন (হক্ব) উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ) আললাহর রাসূল। আর আল্লাহ আকাশের উপর তাঁর আরশে সমাসীন। তিনি যেমন ইচ্ছা তাঁর সৃষ্টির নিকটবর্তী হন এবং যেমন ইচ্ছা তেমন নীচের আকাশে অবতরণ করেন’।
(ইজতিমাউল জুয়ূল শিইসলামিয়্যাহ, পৃঃ ১২২।)
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ)-এর পুত্র আব্দুল্লাহ বলেন,
قيللأبيربناتباركوتعالىفوقالسماءالسابعةعلىعرشهبائنمنخلقهوقدرتهوعلمهبكلمكانقالنعملايخلوشيءمنعلمه.
‘আমার বাবাকে জিজ্ঞেস করা হ’ল যে, আল্লাহ তাঁর সৃষ্টি থেকে দূরে সপ্তম আকাশের উপরে তাঁর আরশে সমাসীন। তাঁর ক্ষমতা ও জ্ঞানের পরিধি সর্বত্র বিস্তৃত। এর উত্তরে তিনি (ইমাম আহমাদ) বলেন, হ্যাঁ! তিনি (আল্লাহ) আরশের উপর সমাসীন এবং তাঁর জ্ঞানের বহির্ভূত কিছুই নেই।
(ইজতিমাউল জুয়ূশিল ইসলামিয়্যাহ, পৃঃ ১৫২-৫৩।)
 
আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান নন : যুক্তির নিরিখে

ইতিপূর্বে পেশকৃত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয়েছে যে, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান নন। এ বিষয়ে নিম্নে যুক্তিভিত্তিক আলোচনা পেশ করা হ’ল-
(১) মানুষ যখন ছালাতের মধ্যে সিজদাবনত থাকে তখন তার মন-প্রাণ কোথায় যায়? অবশ্যই উপরের দিকে; নীচের দিকে নয়।
(২) মানুষ যখন দু’হাত উত্তোলন করে দো‘আ করে, তখন কেন উপরের দিকে হাত উত্তোলন করে? এক্ষেত্রে মানুষের বিবেক বলবে, আল্লাহ উপরেই আছেন; সর্বত্র নন।
(৩) মানুষ যখন টয়লেটে যায়, তখন কি সাথে মহান আল্লাহ থাকেন? আল্লাহর শানে এমন কথা বলা চরম ধৃষ্টতা ছাড়া কিছুই নয়।
(৪) মানুষ যেমন তার নির্মিত বাড়ী সম্পর্কে সবই বলতে পারে যে, বাড়ীতে কয়টা ঘর আছে, কয়টা স্তম্ভ আছে। এককথায় সবই তার জানা। তেমনি বিশ্ব জাহানের স্রষ্টা আরশের উপর সমাসীন থেকে বিশ্বজাহানের সব খবর রাখেন। আল্লাহ আরশের উপরে থাকলেও তাঁর জ্ঞান ও ক্ষমতা সর্বব্যাপী।
(৫) মানুষ যেখানেই যায় সেখানেই চন্দ্র-সূর্য দেখতে পায়। মনে হয় সেগুলো তার সাথেই আছে। চন্দ্রটা বাংলাদেশ, ভারত, সঊদী সব জায়গা থেকে মানুষ দেখতে পায়। চন্দ্র আল্লাহরই সৃষ্টি, তাকে সবজায়গা থেকে মানুষ দেখতে পাচ্ছে। অথচ সেটা আসমানেই আছে। অনুরূপ সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ আরশের উপর থেকে সকল সৃষ্টির সব কাজ দেখাশুনা করেন- এটাই বিশ্বাস করতে হবে।
(৬) ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) বলেন,
من قال لا أعرف ربي في السماء أو في الأرض فقد كفر وكذا من قال إنه على العرش ولا أدري العرش أفي السماء أو في الأرض والله تعالى يدعى من أعلى لا من أسفل ليس من وصف الربوبية والألوهية في شيء.
‘যে বলবে যে, আল্লাহ আসমানে আছেন, না যমীনে আছেন আমি তা জানি না, সে কুফরীকরবে। অনুরূপভাবে যে বলবে যে, তিনি আরশে আছেন। কিন্তু আরশ আকাশে, না যমীনে অবস্থিত আমি তা জানি না। সেও কুফরী করবে। কেননা উপরে থাকার জন্যই আল্লাহকে ডাকা হয়; নীচে থাকার জন্য নয়। আর নীচে থাকাটা আল্লাহর রুবূবিয়্যাত এবং উলূহিয়্যাতের গুণের কিছুই নয়’।
(ইমাম আবু হানীফা, আল-ফিক্বহুল আবসাত, পৃঃ ৫১। ) তাই আমরা বলতে পারি যে, আল্লাহ তা‘আলার আরশের উপর থাকাটাই শোভা পায়, নীচে নয়। কেননা আল্লাহ সৃষ্টিকর্তা, প্রতিপালক, রিযিকদাতা, জীবন-মৃত্যু সবকিছুরই মালিক ও হক উপাস্য। তাঁর জন্য সৃষ্টির গুণের কোন কিছুই শোভা পায়না। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা আরশের উপর সমাসীন; সর্বত্র বিরাজমান নন।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top