What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

অঘটনঘটন পটিয়সী by কাদের (2 Viewers)

[HIDE]

সিনথিয়া যদিও বলেছিল নুসাইবা আর আরশাদ দুইজনেই ট্রিকি আছে তখনো মাহফুজ আন্দাজ করতে পারে নি কতটা ট্রিকি আসলে এই দুইজন। তাই অনুষ্ঠান শেষ হবার পর মাহফুজ একটু হালকা মুডে ছিল। কিন্তু দুই দিন পর দুই ঘন্টার ব্যবধানে দুইটা ভিন্ন ভিন্ন ফোন পেয়ে মাহফুজ বুঝতে পারল এই দুইজন আসলেই বেশ ধুরন্দর বান্দা। প্রথম ফোন আসে তাপস’দার কাছ থেকে। তাপস দা একসময় ছাত্র রাজনীতি করতেন এখন মূল দলের একটা উপ কমিটির যৌথ আহবায়ক। পার্টি অফিসে গেলে মাঝে মধ্যে দেখা হয়। মূলত খালেদ চাচার সাথে ঘোরাঘুরি করার জন্য তাপস’দার সাথে পরিচয় হয়েছে। খালেদ চাচা কে খুব শ্রদ্ধা করেন তাপস’দা। তাপস দা ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করেন কিরে মাহফুজ তোর কি বিয়ের কথা চলছে নাকি। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে কেন দাদা? বলে আজকে এক অফিসে গিয়েছিলাম কাজ। সেখানে এক ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় আছে আমার। উনি প্রথমে জানতে চাইল এক জনের খোজ বের করে দিতে পারব কিনা। আমি জিজ্ঞেস করলাম কে? উনি বলল আমাদের দলের রাজনীতি করে। আমি বললাম ট্রাই করে দেখতে পারি। উনি তখন তোর নাম বলল মাহফুজ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুগ সংগঠনের অর্গানাইজিং সেক্রেটারি। আমি চিনি বলার পর উনি তোর ফ্যামিলি, তোর পড়াশুনা, রাজনীতিতে ভবিষ্যত এইসব নিয়ে বহু বহু প্রশ্ন করল। কি জন্য এইসব প্রশ্ন করছে জিজ্ঞেস করলে এড়িয়ে গেল মনে হয়। মাহফুজ বুঝতে পারল কার কথা হচ্ছে। তাও নিশ্চিত হওয়ার জন্য জিজ্ঞেস করল দাদা কোন অফিসে বসে ভদ্রলোক আর উনার নাম কি। তাপস দা উত্তর দিল ঢাকা কর অঞ্চল ৭ এর কমিশনার, আরশাদ সাহেব। তবে ভদ্রলোক যে সব প্রশ্ন করলেন সাধারণত বিয়ের পাত্র পাত্রীদের খোজ নেবার জন্য মানুষ এইসব প্রশ্ন করে। সত্যি করে বল কি কারণে জিজ্ঞেস করল তোর এই খবর। মাহফুজ এইবার একটু হেসে উত্তর দিল আপনি যেটা ভাবছেন খানিকটা ব্যাপার সেটাই তবে কিছু ফাইনাল হয় নায়। তাপস’দা উত্তর দিল তাহলে তো ঠিক আছে। আমি যত পারা যায় ভাল কথা বলে আসছি তোর নামে। অবশ্য এমনিতেই তোর ভবিষ্যত উজ্জ্বল আমার খুব বেশি বাড়িয়ে বলতে হয় নি। মাহফুজ ধন্যবাদ দিল। রাজনীতি হল ফেভার আর পালটা ফেভারের খেলা। তাপসদা জানিয়ে দিল উনি মাহফুজের একটা উপকার করেছেন ফলে মাহফুজের কাছ থেকে উনার ভবিষ্যতে একটা উপকার পাওনা রইল। মাহফুজ তাই কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কথা শেষ করল।


এরপরের ফোনটা আসল এর ঘন্টা এক পরে। ট্যাক্সের কাজে হেল্প করার জন্য ট্যাক্স অফিসের এক সেকশন অফিসারে সাথে মাহফুজের খাতির আছে। মাঝে মাঝে দেখা হলে মিষ্টি খাবার নাম করে কিছু টাকা প্রতিবার ঘুষ দেয়। মাহফুজের সাথে তার মূলত ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেবার মৌসুমে কথা হয় বেশি। তাই এখন ফোন দেখে অবাক হল। ভদ্রতা সূচক আলাপ পরিচয় বিনিময় হবার পর সেই লোক জানালো তার ট্যাক্স ফাইল নাকি বড় স্যার তলব করেছে। মাহফুজ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল কেন? ভদ্রলোক জানালো এমনিতে প্রতিবছর র‍্যান্ডমলি কিছু ইনকাম ট্যাক্স ফাইল চেক করা হয় তবে এটা সেরকম কিছু না। কারণ সেরকম কিছু হলে একসাথে অনেক গুলো ফাইল একসাথে কল করা হয়। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে তাহলে এটা কি? ঐ ভদ্রলোক বলে আমার তো জানা নাই। আমি ভাবলাম আপনি জানেন নাকি কিছু। কোন বড় কার সাথে আপনার শত্রুতা আছে যে আপনার ইনকাম ট্যাক্সের ফাইল ঘাটতে পারে। মাহফুজ বলে ইনকাম ট্যাক্সের কাগজ ঘাটবে এমন শত্রু তো কেউ নেই। মাহফুজের সাথে সাথে মনে পড়ে এটা কর অঞ্চল ৭ আর এখানকার ট্যাক্স কমিশনার আরশাদ সাহেব। আপনার কাছে কাগছ কে চেয়েছে। ভদ্রলোক বলে আমার বড় সাহেব। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে উনার নাম কি আরশাদ সাহেব। ভদ্রলোক বলেন না, আরশাদ সাহেব আমার বড় সাহেবের বস। তবে ফাইল চেক করছে আমার বড় সাহেব। মাহফুজ বুঝে আরশাদ আরেক জনকে দ্বায়িত্ব দিয়েছে ওর ট্যাক্স ফাইল চেক করার। মাহফুজ বুঝে সিনথিয়ার কথা ঠিক। খেলা শুরু হয়ে গেছে। পিছিয়ে যাবার পাত্র মাহফুজ না। তাই ভদ্রলোক কে বলে এই সম্পর্কে আর কিছু জানলে আমাকে জানাবেন। ফোন কাটার পর পরবর্তী পদক্ষেপ কি হতে পারে ভাবতে থাকে মাহফুজ। এখন আর চুপ করে দেখার সময় নেই। গেম ইজ অন। রাজনীতির ভাষায় বললে, খেলা হবে।


[/HIDE]
 
[HIDE]

সারপ্রাইজিং দুইটা কলের পর মাহফুজ গত একদিন ধরে চিন্তা করছে কি করা যায়। মাহফুজ বুঝতে পারছে নুসাইবা আর আরশাদ সাহেব ওর সম্পর্কে বিভিন্ন ভাবে খোজখবর নেওয়ার চেষ্টা করছে। এটা কী ভাল না খারাপ ইংগিত এটা নিয়ে পুরোপুরো নিশ্চিত হতে পারছে না। মাহফুজের মনে হচ্ছে একদিকে সিনথিয়ার বিয়ের পটেনশিয়াল পাত্র হিসেবে হয়ত ওর ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে খোজ নিচ্ছে। আবার অন্যদিকে কোন পাত্রের ট্যাক্স ফাইলের তথ্য কোন বিয়ের সময় খোজা হয় সেটা মাহফুজের জানা ছিল না। এতদিন রাজনীতি করে অন্তত এইটুকু বুদ্ধি হয়েছে যে মানুষকে আটকানোর জন্য বরং ট্যাক্স ফাইল বেশি গূরুত্বপূর্ণ। মাহফুজ ট্যাক্স ফাইল করে গত চার বছর ধরে। ওর এক ট্যাক্স ল’ইয়ার বন্ধু এই কাজটা করে দেয়। সামান্য কিছু টাকা মাত্র চার্জ করে ওকে ট্যাক্স ফাইল করে দেবার জন্য। মাহফুজ আজকে সকাল সকাল বন্ধুর অফিসে চলে এসেছে। মাহফুজ বন্ধু কে ঘটনা খুলে বলল, মানে যতটুকু খুলে বলা যায়। ওর বন্ধু সিনথিয়া কে চিনে, ওর সাথেই দেখেছে অনেকখানে। এখন সিনথিয়ার উচ্চপদস্থ আত্মীয় স্বজন ওর ট্যাক্সের কাগজ খুজে ওর সম্পর্কে কি কি জানতে পারে সেটা জানতে চাইল মাহফুজ।

মাহফুজের প্রশ্নের উত্তরে ওর বন্ধু উত্তর দিল ট্যাক্স ফাইল ঘেটে অনেক কিছু জানা যায় যার ফাইল তার সম্পর্কে। আবার কিছুই জানা যায় না। মাহফুজ বলল হেয়ালি না করে ব্যাখ্যা করে বল। বন্ধু বলল, শোন, ট্যাক্স ফাইলে প্রত্যেক ব্যক্তি তার বৈধ আয় ব্যায়ের সব হিসাব শো করে সাধারণত। তার মানে কয়েক বছরের ট্যাক্স ফাইল ঘাটলে একজন ব্যক্তির মোটামুটি বৈধ সব ইনকাম সোর্স আর খরচের সোর্স সহজে আইন্ডেটিফাই করা সম্ভব অতিরিক্ত কোন পরিশ্রম না করেই। এই তথ্য কাজে লাগিয়ে ঐ ব্যক্তির জীবন যাত্রা কে ফলো করতে পারলে জানা সম্ভব তার অবৈধ ইনকাম আছে কিনা। থাকলে সেটা কীভাবে বের করা যাবে এইসব। আর এই ফাইল ঘেটে আসলে তেমন কিছু জানা সম্ভব না একজন ব্যক্তি সম্পর্কে। আমি ট্যাক্স লইয়ার। আমি দেখেছি মানুষজন কিভাবে সুন্দর করে ট্যাক্সের ফাইলে মিথ্যা বলে। তাই সেই ফাইল ঘেটে মানুষ কে যাচাই করা বই পড়ে এভারেস্টের চূড়ায় উঠার স্বাদ নেবার মত ব্যাপার। কারণ ট্যাক্স ফাইলের মিথ্যা ধরতে গেলে তোকে আর রিসোর্স ব্যয় করতে হবে। তোর ব্যাংক একাউন্ট, জমির দলির এইসবের খোজ বের করতে হবে এবং সেটা দিয়ে ট্যাক্স রিটার্নের ফাক ফোকর বের করতে হবে। এ ধরণের কাজ করতে পারে সরকারি দূর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ বা কোন গোয়েন্দা সংস্থা। তুই বেশ বড় যুব নেতা কিন্তু এখনো এমন বড় কোন নেতা না যে তোর পিছনে রাষ্টীয় সংস্থা গুলো লাগবে। তাই নিশ্চিন্তে থাক।

বন্ধুর কথায় মাহফুজ পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারল না। জিজ্ঞেস করল যদি কার পক্ষে এইসব দূর্নীতি দমন কমিশন বা পুলিশের সাহায্য ছাড়া ব্যাংকের হিসাব বের করা সম্ভব হয় তাহলে কি ট্যাক্স ফাইলের মাঝে ঘাপলা বের করতে পারবে? বন্ধু উত্তর দিল, হ্যা তাহলে সম্ভব। মাহফুজের মনে হল এই একটা জায়গায় নুসাইবা আর আরশাদ ডেডলি কম্বিনেশন। আরশাদ ওর ট্যাক্স ফাইল ঘাটলে আর যদি নুসাইবা বাংলাদেশ ব্যাংকের থ্রুতে ওর ব্যাংক হিসাব চেক করে তাহলে কি হতে পারে? প্রায় ত্রিশ লাখ টাকা ট্যাক্স ফাইলে শো না করে ব্যাংকে রাখা আছে বড়জোর এই হিসাব বের করতে পারবে। মাহফুজ ট্যাক্স একদম শত পার্সেন্ট দেয় এটা ঠিক না তবে যে টাকা টা দেয় না সেটার জন্য এই ল’ইয়ার বন্ধুর সাহায্যে ফাক ফোকর বের করে সেটা আইনত বৈধ করে রাখে। খালি এই ত্রিশ লক্ষ টাকা কনটেনজেনসি ফান্ড হিসেবে রাখা। যখন তখন দরকার হতে পারে ওর ব্যবসায় ক্যাশ টাকার। তাই এই টাকা এভেইলেভল রাখার জন্য একটা ব্যাংকে রাখা কোন খানে ইনভেস্টমেন্ট না করে। আর ইনভেস্টমেন্ট ছাড়া খালি পড়ে থাকা টাকা করের হিসাবে বড় ঝামেলার। তাই এটাকে আর শো করা হয়নি ট্যাক্স ফাইলে। ওর বন্ধু বলল এইটা নিয়ে বেশি চিন্তা না করতে কারণ খুব বেশি বড় কোন ক্ষমতাশালী ওর পিছনে না লাগলে এটা নিয়ে ভাবার কিছু নেই। আরশাদ সাহেব ক্ষমতাশালী তবে খালি উনার দপ্তর কাজে লাগিয়ে এই কাজ উনি করতে পারবেন না। আর তিন চারটা দপ্তর কে কাজে লাগাতে হবে। আর কে না জানে, সরকারী অফিসে সমন্বয়হীনতা বড় জিনিস। সবচেয়ে বড় কথা এটার পিছনে যত সময় আর শ্রম ব্যয় করতে হবে আরশাদ সাহেব সে সময় আর শ্রম ব্যয় করবেন কিনা সেটাই আসল ব্যাপার।

বন্ধুর অফিস থেকে বের হয়ে বাইকে চড়ে নিজের কাজে যেতে যেতে মাহফুজ নিজের ইনকাম সোর্স গুলো নিয়ে ভাবে। ওর সমসাময়িক ছাত্র বা যুব নেতাদের থেকে অর্থনৈতিক ভাবে মাহফুজ অনেক গোছানো। সাধারণত ফিন্যান্সিয়ালি স্টেবল ওর বয়েসী নেতাদের বেশির ভাগের হয় বড়লোক ফ্যামিলের ছেলে অথবা চাদাবাজির সাথে জড়িত। মাহফুজ এর কোনটাতেই নেই। ওর বাবার ছোট একটা ব্যবসা আছে। মধ্যবিত্ত ফ্যামিলি। রাজনীতির সাথে জড়িত লোকজন ব্যবসায় নামলে রাজনৈতিক কানেকশন কে ইউজ করে টাকা কামাই করে। ওর বাবা সেই জায়গায় ব্যর্থ। বলা যায় আগের আমলের আদর্শিক রাজনীতি করা লোক। দল কে ভালবাসে তাই দলের সাথে আছে। মাহফুজ এইসব দেখে অনেক কিছু শিখেছে। আজকালকার রাজনীতিতে খালি সময়, শ্রম আর লয়ালটি দিলে হয় না সাথে লাগে টাকা। ওর বাবার সম সাময়িক সময়ে রাজনীতি শুরু করা লোকজন এখন বেশ উপরে উঠে গেছে সেই জায়গায় ওর বাবা এখনো একটা ওয়ার্ডের সেক্রেটারি। মাহফুজ দেখেছে প্রতিবার কমিটি তৈরি হবার সময় টাকার খেলা হয়, এছাড়া দলের কর্মীদের নিয়ে নিজস্ব একটা বলয় তৈরি করতে গেলে যে খরচ করার দরকার সেই খরচের টাকা ওর বাবার নেই। একে তো দলের পরিচয় ব্যবহার করে ব্যবসা বা চাদাবাজি কোনটাতেই ওর বাবা নেই তাই দলের ভিতরের রাজনীতিতে উপরে উঠার বড় শক্তি টাকাও ওর বাবার নেই। মাহফুজ দেখেছে ওর বাবা কে ওয়ার্ডের ভিতর থেকে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা কি রকম পছন্দ করে, সম্মান দেয় কিন্তু দিন শেষে সেই সম্মান আর ভাল পদ দেয় না। পদ দেয় লবিং আর টাকার জোর সাথে কত বড় বলয় মেইনটেইন করতে পার সেটার উপর। মাহফুজ তাই ব্যবসায় ঢুকেছে। ওর বাবার কাছ থেকে পাচ লাখ টাকা নিয়েছিল সেটাই ওর মূলধন ছিল। সেখান থেকে সব শুরু। তবে সিনথিয়ার এতে অবদান ছিল।


[/HIDE]
 
[HIDE]


মাহফুজ তখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দলের সভাপতি কিন্তু ঠিক এর পরের ধাপে ছাত্র রাজনীতি থেকে যুব রাজনীতিতে ঢুকার উপায় খুজে পাচ্ছিল না। হয়ত ছোটখাট কিছু পদ পাবে কিন্তু ভাল পদ পেতে গেলে লাগবে টাকা সাথে দল কে দেখানো যে ওর আন্ডারে অনেক ছেলেমেয়ে আছে। সেই জন্যেও চাই টাকা। সিনথিয়ার সাথে এইসব হতাশা নিয়ে কথা বলার সময় সিনথিয়া বলেছিল তুমি ব্যবসা শুরু কর না কেন। সেখান থেকে শুরু। প্রথম কাজটা নিয়েছিল নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোটখাট একটা টেন্ডারে। এরপর আস্তে আস্তে নানা সরকারি অফিসে আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মূলত ও ব্যবসা করছে। ওর মূল কাজ যেসব টেন্ডারের মাধ্যমে সরকারি অফিস বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন রকম স্টেশনারি জিনিস থেকে শুরু করে অফিস সাপ্লাইয়ের জিনিস কিনে সেগুলো বাগানো। এইজন্য রাজনৈতিক কানেকশন কাজে লাগানো, টুপাইস জায়গামত সাপ্লাই দেওয়া সব অলিগলি চিনে গেছে মাহফুজ। তবে বাবার একটা আদর্শ মাহফুজ কড়া ভাবে মাথায় রেখেছে। কোন চাদাবাজি না। এই টেন্ডারের ব্যবসা করতে করতে মাহফুজ ওর দ্বিতীয় ব্যবসায় জড়িয়েছে। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট। ওর কলেজ লাইফের দুই বন্ধুর একটা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি আছে। কাস্টমার ফার্স্ট নামে। ওদের ব্যবসার কনসেপ্ট টা ভাল, সার্ভিস ভাল। তবে ওরা ঠিকমত কাজ বাগিয়ে উঠতে পারছিল না। সেখানে ওরা দুইজনে প্রস্তাব নিয়ে আসে মাহফুজের কাছে পার্টনার হওয়ার। দশ পার্সেন্ট ক্যাপিটাল পার্টনার আর বাকি দশ পার্সেন্ট ওয়ার্কিং পার্টনার। অর্থাৎ মাহফুজের শেয়ার হবে ২০% এবং বাকি দুই জনের ৪০% করে আশি পার্সেন্ট মোট ১০০ পার্সেন্ট। মাহফুজ পাচ লাখ টাকা দিয়ে ১০% ক্যাপিটাল শেয়ার কিনে নিল। আর বাকি দশ পার্সেন্ট ওয়ার্কিং শেয়ারের মূল কাজ হিসেবে সরকারি অফিসে দৌড়াদৌডি করে কাজ যোগাড় করা। অনেক সময় কোন অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গেলে কোন অফিসের হয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা নানা ঝামেলা করে এইসব সামলানো হল মাহফুজের কাজ। তবে মেইন ডে টু ডে ফাংশন দেখে ওর দুই বন্ধু। এটাও ওর ভাল লাভের উৎস। মাহফুজ ভেবে দেখে ওর দুই ব্যবসায় কিছু ফাকিঝুকি থাকে, সরকার কে ট্যাক্স কম দেওয়ার জন্য কিছু ভুয়া কাগজ পত্র থাকে। এর বাইরে ওর ব্যবসায় অবৈধ কিছু নেই। তাই আরশাদ সাহেব তার পিছনে লাগলে একটু ভোগান্তি হয়ত হবে তবে এর বেশি কিছু করতে পারবে না। আর মাহফুজ জানে কিভাবে এইসব সামলাতে হয়। অনেক সময় প্রতিপক্ষ বুঝার আগে তাকে পিছন থেকে হামলা করতে হয় যাতে সে এমন ব্যস্ত হয়ে পড়ে যে তার দিকে মনযোগ দেবার সময় না পায়। মাহফুজ সোলায়মান শেখ কে ফোন দেয়। একটা ফেস টু ফেস মিটিং করা দরকার।



[/HIDE]


[HIDE]
সকাল সকাল আরশাদের কাছ থেকে ফোন পেয়ে অবাক হয়ে গেল মাহফুজ। ফোন নাম্বার সেভ করা ছিল তাই বুঝতে পারছে কে করেছে। কয়েকবার রিং হয়ে ফোন কেটে গেল। মাহফুজ বুঝতে পারছে না ফোন ধরবে কিনা। একটু পর একটা মেসেজ আসল। দিস ইজ আরশাদ, সিনথিয়া’স ফুফা। প্লিজ কল মি হোয়েন ইউ আর ফ্রি। মাহফুজ ভেবে পায় না ঠিক কি কারণে কল করতে পারে লোকটা। ওর ট্যাক্স ফাইল চেক করছে শোনার পর থেকেই আরশাদ সম্পর্কে অনেক সচেতন হয়ে গেছে মাহফুজ। এই লোক কে দেখতে যতটা সহজ সরল মনে হয় অত সহজ সরল না এটা মাহফুজ এখন নিশ্চিত। আজকে অবশ্য সন্ধ্যার সময় সোলায়মান শেখের সাথে দেখা করার কথা। সোলায়মান শেখ বলেছে বেশ কিছু খবর আছে। কি খবর জিজ্ঞেস করতেই বলল, ফোন বলবে না এইসব কথা। সামনা সামনি হওয়াই ভাল। আর যেন বাকি টাকা সাথে রাখে। মাহফুজ সেটা টাকা তোলার জন্য সকাল সকাল ব্যাংকে এসেছিল। এর মধ্যেই ফোন। টাকা তোলা শেষে মাহফুজ রিং ব্যাক করল আরশাদ সাহেব কে।


হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম। আমি মাহফুজ বলছিলাম। সিনথিয়ার বন্ধু।
হ্যা, হ্যালো। মাহফুজ কেমন আছ? (গলায় আন্তরিকতার সুর)
জ্বি, ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন স্যার? ম্যাডাম?
তুমি সিনথিয়ার বন্ধু। আমাদের স্যার ম্যাডাম বলো না। খারাপ দেখায়। আংকেল আন্টি বলো।
জ্বি, আংকেল (আরশাদের আন্তরিকতায় একটু অবাক মাহফুজ)
ঐদিনের প্রোগ্রামটা ভাল হয়েছিল। তোমাকে থ্যাংক্স। এতগুলো ইয়াং মাইন্ডসের সাথে আমাদের ইন্টারেক্ট করার সুযোগ করে দেবার জন্য।
থ্যাংক্স তো আমার দেবার কথা আংকেল। আপনি আর আন্টি কষ্ট করে এসে আমাদের ভার্সিটির ছেলে মেয়েদের উৎসাহ দিয়ে গেলেন। সিনথিয়া এই অনুষ্ঠানের কথা শুনে বলেছিল আপনারা এটার জন্য পারফেক্ট হবেন।
সিনথিয়ার সাথে তোমার নিয়মিত কথা হয়? (মাহফুজ টের পায় তথ্য অনুসন্ধান চলছে ছদ্মবেশে, তাই সতর্ক হয়)
অত বেশি না, মাঝে মধ্যে একটু কথা হয়। বিদেশে পড়তে গিয়ে ও একটু লোনলি থাকে তো। তাই ফ্রেন্ড হিসেবে মাঝে মধ্যে একটু ফোন দেয়।
আচ্ছা, আচ্ছা। কত দিনের বন্ধু তোমরা।
জ্বি, চার বছরের মত (সতর্ক উত্তর দেয় মাহফুজ)
তোমরা তো এক ভার্সিটিতে পড় নি তাহলে ফ্রেন্ডশিপ হল কিভবে?
আমাদের কিছু কমন ফ্রেন্ড আছে সেই সূত্রে বন্ধুত্ব।
কিছু মনে করছ না তো এত প্রশ্ন করছি দেখে।
না না, আপনি মুরব্বী মানুষ। সিনথিয়ার ফুফা, প্রশ্ন করতেই পারেন।
হাহা, তুমি ভাল ছেলে। আজকালকার অনেকে একটু প্রশ্ন করলেই বিরক্ত হয়। ভাবে প্রাইভেসির উপর হস্তক্ষেপ হচ্ছে।
না না, আপনারা ভাল এর জন্য তো প্রশ্ন করেন (মাহফুজ একটু তেল দেওয়ার চেষ্টা করে)
হ্যা, সেটাই অনেকে বুঝে উঠতে পারে না।
জ্বি, জ্বি
আচ্ছা শোন, তোমাকে একটা দরকারে ফোন দিয়েছি। আগে সেই কথাটা সেরে নেই।
জ্বি, আংকেল বলেন।
তোমার একটা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি আছে না?
জ্বি আংকেল। তবে ঠিক ঐটা আমার না। আমি এটার পার্টনার। আর দুই জন বন্ধু আছে আমার সাথে এই কোম্পানির পার্টনার হিসেবে (মাহফুজ সতর্ক হয়ে তথ্য দিচ্ছে, জানে একটা মিথ্যা বললে বা ভুল বললে পরে সেটা ওর উপর দিয়ে চাপানো হতে পারে)
আচ্ছা, গুড গুড। এই বয়সেই ব্যবসা দাড় করিয়ে ফেলেছে।
নাহ আংকেল তেম কিছু না, চেষ্টা করছি আরকি।
আচ্ছা, মেইন কথা হল। আমি একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছি সেটার দ্বায়িত্ব আমি কাউকে দিতে চাই। ঐদিন তুমি তোমার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কথা বলেছিলে আজকে সেটার কথা মনে আসল। ভাবলাম তোমার সাথে কথা বলে দেখি। (মাহফুজ এবার আর সতর্ক। পরিচিত কার অনুষ্ঠান আয়োজন করা অনেক ঝামেলার। অন্তত ওর দুই বন্ধু যেসব গল্প বলেছে তাতে মাহফুজ নিশ্চিত)
আচ্ছা আংকেল বলেন
তোমার কোম্পানি কি এই অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারবে?
আংকেল আমি তো একা না কোম্পনিতে তাই ঠিক এখনি কথা দিতে পারছি না। তবে আপনি যদি একটু আর ডিটেইলস দিতেন। আপনাদের কি অনুষ্ঠান, কতজন আসবে, বাজেট কত, কিভাবে অনুষ্ঠান করতে চান। এইসব তাহলে আমরা একটা প্রপোজাল আপনাকে দিতে পারব অনুষ্ঠানের এবং মোট খরচের। (পুরো প্রফেশনাল থাকার চেষ্টা করে মাহফুজ)
থ্যাংক্স মাহফুজ
আরেকটা প্রশ্ন আংকেল, অনুষ্ঠানটা কবে হবে?
১৪ তারিখ (মাহফুজ মনে মনে হিসাব করে)
আংকেল মাত্রতো আর ১৫ দিন আছে তাহলে, এত তাড়াতাড়ি কিভাবে করব
একটা সমস্যায় পড়লাম বলেই তো তোমাকে ফোন দিলাম। তুমি করিতকর্মা ছেলে তুমি পারবে। আমাদের ডিপার্টমেন্টের এলমনাই এসোশিয়েশনের আমি এখন সেক্রেটারি। এনুয়াল পিকনিক আমার দ্বায়িত্বে। আগে যাদের সাথে কথা বলছিলাম এরা অনেক অদক্ষ। তাই এই সময়ে এসে সব বাদ দিতে হল। সবার কাছ থেকে চাদাও আদায় করা হয়ে গেছে। ঝামেলায় পড়ে গেছি তাই তোমাকে ফোন দিলাম।


[/HIDE]
 
[HIDE]
মাহফুজ বুঝে এটা একটা ফাদ। এত অল্প সময়ে একটা অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গেলে সফল না হবার সম্ভাবনা বেশি। সেক্ষেত্রে সব দোষ মাহফুজের উপর দিয়ে যাবে। আবার অনুষ্ঠান আয়োজন করতে না চাইলে সিনথিয়ার ফুফা ফুফু কে সারাজীবনের জন্য ক্ষেপিয়ে দেওয়া হবে। কোন দিকে যাবার রাস্তা নেই। মাহফুজ মনে মনে ভাবে ডর কি আগে জিত হ্যায়। কয়েক সেকেন্ড হিসাব করে বলে ঠিকাছে আংকেল। আপনাদের সব ডিটেইলস আমি একটা ইমেইল দিচ্ছি সেখানে পাঠিয়ে দিন। আমি দেখি কি করতে পারি। আমার পার্টনাররা রাজি হলে আপনার প্রোগ্রাম আমরা করব। আরশাদ বলে তোমাকে এই দ্বায়িত্বটা নিতেই হবে। নাহলে এত গুলো লোকের সামনে আমার মুখ রক্ষা হয় না। মাহফুজ বলে, ওকে আংকেল দেখি কি করতে পারি।

[/HIDE]
[HIDE]

সেই রাতে সিনথিয়ার ফোন ধরা মাত্র সিনথিয়া বলল শোন আজকে একটা আজব ব্যাপার হয়েছে। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে। আজকে ফুফু ফোন দিয়েছিল। মাহফুজ বলে, নুসাইবা ফুফু? সিনথিয়া বলে আমার কয়টা ফুফু আছে বল। মাহফুজ বলে ফুফু ফোন দিয়েছে এটা কে আজব বলছ কেন? সিনথিয়া বলে ফুফু ফোন দিয়েছে সেটা আজব না তবে ফোন দিয়ে তোমার কথা জিজ্ঞেস করল এবং বেশ প্রশংসা করল। এইবার মাহফুজের কৌতুহল উসকে উঠে। বলে, প্রশংসা? সিনথিয়া বলে, হ্যা। ঐদিন নাকি খুব দারুণ একটা প্রোগ্রাম হয়েছে। ফুফা ফুফু একটু এটেনশন পেলেই কেমন ফুলে উঠে। তোমার প্রোগ্রামে ছেলে মেয়েদের এটেনশন পেয়েছে। আবার ডেইলিস্টারের ক্যারিয়ার পাতায় নাকি ফুফুর ছবি সহ রিপোর্ট এসেছে প্রোগ্রামের। এতে দারুণ খুশি ফুফু। মাহফুজ অবশ্য এটা জানত না। সিনথিয়া বলছে, তোমাদের ক্যারিয়ার ক্লাবের প্রেসিডেন্ট নাকি ফোন করে ফুফু কে খবরটা দিয়েছে। মাহফুজ ভাবে আরিফ ছেলেটা ভাল লাইন ঘাট বুঝে, কাকে কি তেল খাওয়াতে হবে। আর তুমি নাকি আজকে ফুফা কে কি একটা ঝামেলা থেকে উদ্ধার করেছ। মাহফুজ বুঝে এই হল তাহলে আসল কারণ। মাহফুজ জোরে জোরে হাসে। বলে তোমার ফুফার এলমানাই এসোশিয়েশনের পিকনিক যাদের করার কথা তারা মাঝপথে হাওয়া হয়ে গেছে এখন আমাকে ধরেছে অনুষ্ঠানের দ্বায়িত্ব নিতে। আছে মাত্র সময় ১৫ দিন, এর মাঝে আজকে চলে গেছে মানে আর ১৪ দিন। এই জন্য এত প্রশংসা। সিনথিয়া হেসে দেয়। বলে, বাবা বলে ফুফা মোটিভ ছাড়া কিছু করে না। সত্য কথা একদম। মাহফুজ বলে হ্যা, এরকম লোকেরা সাধারণত সফল হয়। দেখ না তোমার সুন্দরী ফুফু কে কেমন পটিয়ে রেখেছে। সিনথিয়া বলে যাই বল না কেন, ফুফার আর যাই দোষ গুণ থাকুক ফুফু কে দারুণ ভালবাসে। এই দেশে বাচ্চা না হলে সব মেয়েদের দোষ, আর এখানে তো ফুফুর প্রব্লেম মেইনলি। তাই কনসিভ করতে পারছে না। কিন্তু ফুফা এটা নিয়ে টু শব্দ করে না। আর এই জন্য আমাদের ফ্যামিলিতে সবাই ফুফা কে খুব ভাল চোখে দেখে। আর ফুফু তো ফুফার জন্য পাগল।

মাহফুজ বলে তোমার ফুফু তাহলে তো বিশাল স্বামী ভক্ত। সিনথিয়া বলে হ্যা। ফুফু এমনিতে ফুফার উপর খুব চোটপাট করে কিন্তু ভালবাসে খুব ভিতরে ভিতরে। কেউ তার স্বামী কে নিয়ে কিছু বললে ভীষণ ক্ষেপে যায়। একবার মেঝ চাচী কি যেন একটা বলেছিল ফুফা কে নিয়ে। সেটা নিয়ে ফুফু তুলকালাম কান্ড বাধিয়েছিল। এমনিতে ফুফু দারুণ বুদ্ধিমান তবে এই এক জায়গায় ফুপু আবেগ দিয়ে চলে। আর ফুফাও দারুণ ভালবাসে ফুপু কে। মাহফুজ বলে এমন সুন্দরী পেলে কে না ভালবাসবে। তোমার ফুপা কে দেখ। এভারেজ বাংগালী। এখন ভুড়ি হয়েছে, চুল কমে গেছে, প্রায় টাক। সেখানে তোমার ফুপু এখনো ডাকসাইটে সুন্দরী। আমি যেমন তোমার রূপে পাগল তেমনি তোমার ফুপাও পাগল নুসাইবা ফুপুর রূপে। সিনথিয়া বলে তুমি কথা জান বটে। মাহফুজ বলে একটা মজার কথা শুনবা? সিনথিয়া বলে কী? ঐদিন অনুষ্ঠান শেষে আমি সিগারেট খাওয়ার জন্য আলাদা হয়ে একটা জায়গায় দাঁড়ায় ছিলাম। অনুষ্ঠানে আসা কয়েকটা ছেলে আলোচনা করছিল যে আজকের ফিমেল গেস্ট কতটা হট। সিনথিয়া বলে আসলেই? সত্যি বলছ? মাহফুজ সত্যি, কসম। সিনথিয়া একটু চুপ করে থাকে। ভাবে, তারপর বলে নুসাইবা ফুপু আসলেই হট। কম বয়সে সুন্দরী ছিল কিন্তু ফুপু অনেকটা মদের মত। বয়সের সাথে সাথে যেন সৌন্দর্য বেড়েছে। মাহফুজ বলে বাহ, তুমি যোগ্য ভাতিজি। ফুপু কে একদম মদের সাথে তুলনা করে ফেলেছ। সিনথিয়া হাসতে হাসতে বলে ফুপু তো মদ। দেখনা ফুপা কেমন সেই মদে মজে আছে। মাঝে মাঝে ফুপু রেগে গেলে যা বকাঝকা করে, তখন একদম টু শব্দ পর্যন্ত করে না ফুপা। মদ না খেলে এমন মজে থাকা যায়। মাহফুজ বলে একদিন তুমি না বলেছিলে তোমার ফুপু জিজ্ঞেস করেছিল তোমাকে উনার পাছা বড় নাকি? সিনথিয়া বলে হ্যা, তবে উনার ভাষায় পাছা ছিল না। উনি বলেছিল পিছন দিক। মাহফুজ বলে ঐদিন আমার মনে হল উনার পাছা একদম বিশাল না ঠিক মাপের উনার শরীর অনুযায়ী। সিনথিয়া বলে ইউ ডার্টি ডগ। বউয়ের বোনের পর এবার ফুপুর দিকেও নজর দিয়েছ। মাহফুজ হাসতে হাসতে বলে কই নজর দিলাম। খালি মতামত জানালাম। এমন সুন্দর পাছা খুব বেশি হয় না। বেশির ভাগ পাছা হয় খুব বেশি বড় নাহলে বেশি ছোট। পাছা হতে হয় শরীরের মাপে। সিনথিয়া জিজ্ঞেস করে আমারটা কেমন? মাহফুজ বলে তুমি উত্তরটা জান বেবি। সিনথিয়া হাসে। মাহফুজ যে ওর পাছার জন্য পাগল এটা সে জানে। দুষ্টমি করে তাই বলে আপুরটা কেমন? মাহফুজ বলে সাবরিনার পাছা হালকা বড় তবে পাগল করা। সিনথিয়া বলে শয়তান, আপু কে নিয়ে বাজে কথা। মাহফুজ বলে আমি বাজে কথা কই বললাম, তুমি জিজ্ঞেস করলে তাই উত্তর দিলাম। সিনথিয়া বলে কার পাছা সবচেয়ে সুন্দর? মাহফুজ বলে নুসাইবা ফুফু ফার্স্ট আর তুমি আর সাবরিনা যৌথভাবে সেকেন্ড। সিনথিয়া কপট রাগের ভংগী করে, বলে যাও আপু আর নুসাইবা ফুপুর পেছনে পড়ে থাক গিয়ে আমার কাছে আসা লাগবে না। মাহফুজ বলে, উহু, ভুল বললে। তোমার পিছনে থাকতে চাই বলেই তো সাবরিনা আর নুসাইবা ফুপুর পিছনে পড়ার প্ল্যান। হো হো করে হেসে দেয় সিনথিয়া। বলে, ইউ ডার্টি ডগ। সুযোগ পেলে কাউকে ছাড়বে না তুমি। মাহফুজ বলে, সুযোগ পেলে কি সেটা ছাড়া উচিত। আর তোমার ফ্যামিলিতে সব হটি হটি মেয়ে সেখানে আমার কি দোষ। এই হটি মেয়েদের মন গলাতে যদি তাদের পেছনে পেছনে ঘুরতে হয় তাহলে তাতেই সই। হাসতে থাকে সিনথিয়া। ওর অবশ্য জানা নেই মাহফুজের কথাটা আর কথার কথা নেই। সত্য হয়ে গেছে।

[/HIDE]
 
[HIDE]
সাবরিনা আয়নায় নিজেকে দেখছে। সাধারণত খুব একটা মেকাপ করে না সাবরিনা। প্রতিদিন সকালে অফিস আসার আগে হালকা একটু লিপস্টিক, কখনো কখনো ফেস পাওডার। একমাত্র বড় কোন প্রোগ্রাম থাকলে সেদিন একটু সেজে আসে। আজকে প্রতিদিনের মত নরমালি অফিসে এসেছে। এখন বিকাল চারটা বাজে। অফিসের ওয়াশরুমের আয়নায় নিজেকে চেক করছে কেমন লাগছে। সারাদিনের অফিসের ক্লান্তি চোখে মুখে ভর করে আছে। আজলা ভরে পানি নিয়ে চোখে মুখে ছিটিয়ে ক্লান্তি দূর করতে চায়। সারাদিন মিটিং এর পর মিটিং আর ল্যাপটপে মাথা গুজে কাজ করার কারণে মাথাটা কেমন ভার ভার লাগছে। তবে আয়নায় নিজেকে দেখে মনে হচ্ছে একটু হলেও সাজটা ঠিক করা দরকার। অফিসের ড্রয়ারে ওর কিছু সাজার জিনিস থাকে ইমার্জন্সি দরকারের জন্য। সেগুলা কাজে লাগাতে হবে আজকে। এই শেষ বিকালে কোন গূরুত্বপূর্ণ মিটিং নেই বা অফিস থেকে বের হয়ে কোন বিয়ে বাড়িতেও যাচ্ছে না। তাও কেন এই সাজ? চোখে কাজল লাগাতে লাগাতে নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে সাবরিনা।


মাহফুজ ফোন দিয়েছিল সকাল বেলা। বলল, আজকে একটা গানের আয়োজন আছে রবীন্দ্র সরোবরে। নতুন কয়েকটা গানের দল গাইবে সেখানে। সব শেষে জলের গান। সাবরিনা জলের গান দলটা কে পছন্দ করে। জলের গানের গান গুলোয় কথা, সুর আর ছন্দ তিনের একটা মিল আছে। একটু পাগলাটে গোছের লিরিক কিন্তু মিষ্টি সুরে সেই লিরিক গুলো মনের মধ্যে একটা অনুভূতির সৃষ্টি করে। কখনো সেটা হাহাকারের কখনো মিষ্টি একটা ভালবাসার। মাহফুজের সাথে একদিন ফিল্ড ভিজিটে যাওয়ার সময় গাড়ির রেডিওতে জলের গানের একটা গান বাজছিল। সাবরিনা ড্রাইভার কে রেডিওর সাউন্ড বাড়াতে বললে মাহফুজ জিজ্ঞেস করেছিল জলের গান ভাল লাগে কিনা। তখন বেশ কথা হয়েছিল জলের গান নিয়ে। মাহফুজ সেটা মনে রেখেছে। আজকে এই অনুষ্ঠানের খোজ পেয়ে তাই সাবরিনা কে সকাল বেলা ফোন দিয়েছে। বিকাল বেলা ফ্রি থাকলে এই অনুষ্ঠানে যেতে পারে। ভাল লাগবে। সাবরিনা ফোনে প্রশ্ন করেছিল, তোমার সাথে যাওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছ? মাহফুজ উত্তর দিল আমার সাথে যাওয়ার কথা বলছি না। তুমি যার সাথে খুশি যেতে পার। সাদমান, তোমার অন্য কোন ফ্রেন্ড বা একা। আমি জানি তুমি জলের গান পছন্দ কর। ওরা অনেকদিন কোন খানে গাইছে না। আজকে এই প্রোগ্রামে গাইবে, সেটা শুনে তোমাকে জানালাম। সামনা সামনি ওদের গান শুনতে আর ভাল লাগে। রাহুল দা যেভাবে ঘুরে ঘুরে, নেচে নেচে গান গায় সেটা দর্শক শ্রোতাদের মাতিয়ে দেয়। তুমি ওদের গান পছন্দ কর তাই তোমাকে বললাম। আমার ওদের গান ভাল লাগে আমি থাকব ওখানে। তুমি যদি চাও তাহলে আমরা একসাথে যেতে পারি। আবার যদি অন্য কার সাথে আস তাহলে দেখা করতে পারি। আসল কথা হল, তুমি তোমার পছন্দের দলের গান শুন। সেটা যে কার সাথেই হোক।

এতদিন আগে একদিক গাড়িয়ে হওয়া সামান্য কিছু কথা থেকে সাবরিনার গানের পছন্দ মনে রেখেছে এটা সাবরিনা কে অবাক করে। সবাই বলে ভালবাসি কিন্তু এই ভালবাসা টা আসলে কী? এক্সপেন্সিভ গিফট? বিদেশে কোথায় ঘুড়তে যাওয়া? মিষ্টি মিষ্টি কথা বলা? নাকি পছন্দের মানুষের এইসব ছোট ছোট ডিটেইলস মনে রাখা? সাবরিনা আবার আয়নার দিকে তাকায়। চোখে কাজল, আই লাইনার, লিপ গ্লস আর গালে হালকা ব্লাশার। সারা দিন অফিসের যে ক্লান্তি চেহারায় ভর করেছিল সেটা কই যেন হাওয়া হয়ে গেছে। আয়নায় এখন প্রাণবন্ত একটা মুখ। নিজেকে নিজে দেখেই সাবরিনার মন ভাল হয়ে গেছে। ও জানে সাদমানের এইসব গানের অনুষ্ঠান, কনসার্টে কোন আগ্রহ নেই। আজকেও হয়ত রাত নয়টা দশটার আগে বাসায় আসবে না। আয়নার প্রাণবন্ত চেহারাটা সাবরিনা কে যেন বলে একা একা এইসব গান শোনা কি ঠিক? সাবরিনা মেসেজ পাঠায় মাহফুজের মোবাইলে, আমি যাচ্ছি গানের প্রোগ্রামে। তুমি কখন যাচ্ছ?


মাহফুজ সাবরিনার টেক্সট পেয়ে হেসে উঠে। সাবরিনা তাহলে আসছে আজকে। মাহফুজ জানে সাবরিনা জলের গান পছন্দ করে। ওদের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এই অনুষ্ঠানের দ্বায়িত্ব পেয়েছে। সকালে ওর দুই পার্টনারের এক জন ফোন দিয়ে জানালো একটা হালকা ঝামেলা করছে স্থানীয় কিছু পলিটিক্যাল ছেলেপেলে, একটু সামাল দিতে হবে। মাহফুজ সাধারণত ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ডে টু ডে অপারেশনে থাকে না, এরকম উটকো ঝামেলা বা কোন সরকারী অফিসে কাজের লবিং এ সময় দেয় শুধু। সমস্যা সমাধান করতে বেশিক্ষণ লাগল না। স্থানীয় ওয়ার্ডের ছাত্র শাখার সভাপতি কে ফোন দিতেই সমাধান হয়ে গেল। বিনিময়ে সেই নেতা কে গানের অনুষ্ঠানের একদম সামনের রো তে বসার ব্যবস্থা করা হবে এবং পরে গ্রীন রুমে শিল্পীদের সাথে ছবি তোলার সুযোগ দেওয়া হবে এই আশ্বাস দেওয়া হল। এইসব করতে গিয়ে গানের শিল্পীদের মাঝে জলের গানের নাম দেখল মাহফুজ। সাবরিনা জলের গান পছন্দ করে মনে পড়ল মাহফুজের সাথে সাথে। বেশ কয়েকদিন সাবরিনার সাথে দেখা হচ্ছে না, প্রায় এক সাপ্তাহের বেশি হয়ে গেছে। তাই এই সুযোগটা কাজে লাগানোর কথা মাথায় আসল। সাবরিনা কে ফোন দিয়ে জলের গানের অনুষ্ঠানের কথা জানাল। সাবরিনা তখন নানা প্রশ্নের পর ভেবে দেখবে বলে ফোন রেখে দিয়েছিল। মাহফুজ বেশি জোরাজুরি করে নি। মাহফুজ জানে মেয়েদের ক্ষেত্রে একটা অমোঘ নিয়ম আছে। ফর্সা, কাল, ধনী, গরীব, মেজাজি, ঠান্ডা সব রকম মেয়েদের জন্য একটা কমন নিয়ম। কখনো খুব বেশি আগ্রহ দেখাতে নেই, আর এমন ভাবে আগাতে হয় যাতে মেয়ের মনে হয় সে নিজেই সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তাহলে আখেরে লাভ হয়, মেয়ে আর বেশি করে সামনে এগিয়ে আসে। তাই মাহফুজ ফোনে বেশি জোরাজুরি করে নি। এখন সাবরিনার টেক্সট দেখে মনে হল ঠিক আছে। সাবরিনা নিজেই আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মাহফুজ তাই ওর পার্টনারদের একজন কে ফোন দেয়। বল, দোস্ত আমার একজন স্পেশাল গেস্ট আসতেছে। উনাকে একটু জলের গানের রাহুল দা আর কনক আদিত্য দা এর সাথে কথা বলানো আর ছবি তুলার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। পার্টনার বলে ওকে। অনুষ্ঠানের শেষে গ্রীন রুমে নিয়ে আসিস আমি দেখব ব্যাপারটা।

অফিস থেকে বের হয়ে জ্যাম ঠেলে ধানমন্ডিতে রবীন্দ্র সরোবরে পৌছাতে পৌছাতে সাবরিনার প্রায় ছয়টা বেজে যায়। অফিস থেকে সোয়া চারটার মাঝে বের হবে ভাবলেও পারে নি। একটা কাজে আটকে গিয়েছিল। তাই পাচটা বাজার দশ মিনিট আগে বের হয়ে উবার নিয়ে রওনা দিয়েছিল। অফিস ফেরত জ্যামে আসতে আসতে এক ঘন্টার মত লেগেছে। এই সময়টুকু সাবরিনা মাহফুজ কে নিয়ে ভাবছিল। মাহফুজ আর ওর মাঝে সম্পর্ক টা আসলে কী? কি ভাবে এই সম্পর্কে কে সংজ্ঞায়িত করা যায়? এটা প্রথাগত কোন সম্পর্ক না। সাবরিনা ওর ২৫/২৬ বছরের জীবনে কখনো এমন সম্পর্কে জড়াবে ভাবে নি। সাবরিনা ভাবে ও কি আস্তে আস্তে সামিরার মত হয়ে যাচ্ছে।

[/HIDE]
 
[HIDE]
সামিরা ওর সমবয়েসী। এখনো কোন স্থায়ী সম্পর্কে জড়ায় নি, বিয়ে করার কথা বললে বলে আর পাচ বছরের আগে না। লাইফ টা একটু এঞ্জয় করে নি। নিয়মিত বিভিন্ন ছেলের সাথে ডেটে যায়। সাহসী। টিন্ডার থেকে প্রায় বিভিন্ন ছেলের সাথে দেখা করে। ঢাকায় যে এখন ছেলে মেয়েরা ডেটিং এপ ইউজ করে হুকাপের জন্য এই জিনিসটা সামিরার কাছ থেকে প্রথম শুনেছে। সামিরা কে এইসব নিয়ে জিজ্ঞেস করলে একটাই উত্তর দেয়। নাথিং সিরিয়াস এইসব রিলেশনে। কার সাথে ডেটিং এ গিয়ে যদি দেখে ফিজিক্যাল এট্রাকশন ফিল করছে তাহলে পরের ধাপে যায়। সেক্স। আর সেক্সে সেই ছেলের সাথে যদি সামিরার মনে হয় ম্যাচ আপ হচ্ছে তাহলে নিয়মিত হুকাপ হয়। সামিরার ভাষায় এরা সবাই ফাকবাডি। চোদন সংগী। সামিরার এমনিতেও মুখ খারাপ। আর সাবরিনা ওর মুখে অস্বস্তিকর কথা শুনলে আর লাল হয়ে যায়, অস্বস্তিতে চুপ মেরে যায় এইসব টের পেলে সামিরা আর বেশি করে খারাপ কথা বলে। প্রথম দিন ফাকবাডি শব্দটা শুনে সাবরিনা যখন লজ্জায় লাল হয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে ছিল তখন সামিরা মুচকি হাসি দিয়ে বলেছিল ইংরেজি শুনতে খারাপ লাগে? তাহলে কি বলব বল? মাতৃভাষায় শুনবি? চোদন সংগী? এদের সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক নেই। কেউ কেউ হয়ত ভাল বন্ধু হয় কিন্তু আর কোন কিছু নেই। এরা স্রেফ আমার ফাকবাডি, চোদন সংগী। ঢাকার মত এত বড় একটা শহরে এত কনজারভেটিভ পরিবেশে কোথায় যাব বল? ছেলেদের যেমন শরীরের জ্বালা আছে মেয়েদেরও আছে। তাই পরষ্পরের জ্বালা মেটাই আমরা। কেউ কার কাছে আর বেশি কিছু দাবি করি না শারীরিক সুখ ছাড়া। মাহফুজ কি ওর ফাকবাডি? চোদন সংগী? ওর মনের যে গোপন ইচ্ছা গুলো এতদিন চাপা পড়ে ছিল। যে ইচ্ছা গুলো ও ভেবেছিল ওর স্বামীর সাথে পূরণ করবে কিন্তু সাদমান সে ইচ্ছা গুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। মাহফুজ কি ওর সেই ইচ্ছা গুলো পূরণ করার সাথী। ফাকবাডি। চোদনসংগী। উবারে বসে ভাবতে ভাবতে নিজেই লজ্জায় লাল হয়ে যায়। মনে মনে ফাকবাডি আর চোদন সংগী উচ্চারণ করছে ভাবতেই সাবরিনা ভাবে এই কয় মাসে ওর কত পরিবর্তন হয়েছে। নিজে নিজে এমন কিছু মনে মনে উচ্চারণ করছে কয় মাসে এটা নিজেই ভাবতে পারত না। সামিরা যেমন ওর শরীরের চাহিদা মেটানোর জন্য ফাকবাডি খুজে নেয় সাবরিনা কি সেভাবেই মাহফুজ কে খুজে নিয়েছে? সাবরিনার মনে হয় মাহফুজ কে তো ও খুজে নেয় নি। ঘটনা প্রবাহে ওদের মিল হয়েছে। ওর অফিস পলিটিক্সে ঢাকা দক্ষিণ নিয়ে প্রজেক্টটা পাওয়া, ঘটনাক্রমে মাহফুজের সেখানে উপস্থিতি, সোয়ারিঘাটের সেই দূর্ঘটনা। সাবরিনা মনে মনে কনভিন্স হয় যে এতে ওর বা মাহফুজের কোন হাত নেই। কাকতালীয় ভাবে ওদের এই মিলন। ওর মনের ভিতর যে স্বপ্ন পুরুষ ছিল যে সুদর্শন, স্মার্ট, কনফিডেন্ট আর জানে কিভাবে সংগীর উপর অধিকার আদায় করে নিতে হয়। মাহফুজ যেন ঠিক ওর স্বপ্ন থেকে নেমে বাস্তেবে চলে এসেছে। সাবরিনা ভাবে এই একটা কারণেই হয়ত মাহফুজ যখন ওর উপর নিয়ন্ত্রণ নেয় তখন ও কিছু বলতে পারে না। ওর মনে হয় এটা স্বপ্ন দৃশ্য আর মাহফুজ বুঝি সেখানে ওর সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে, ঠিক যেভাবে সাবরিনা ভেবে এসেছে এতদিন। এসব ভাবতে ভাবতে ধানমন্ডিতে রাশান কালচারাল সেন্টারের কাছে চলে আসে। সামনে একটা লম্বা জ্যাম। উবারের ভাড়া মিটিয়ে সামনে হাটতে থাকে। আর অল্প একটু এগুলেই রবীন্দ্র সরোবর। গানের শব্দ আসছে।




[/HIDE]
[HIDE]

মাহফুজ অপেক্ষা করছিল সাবরিনার। অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে চারটা থেকে। সাতটার মাঝে অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশ থেকে যে অনুমতি নেওয়া হয়েছে সেটায় সাতটার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করার কথা বলা আছে। জলের গানের নাম ঘোষণা হয়ে গেছে। মঞ্চে জলের গানের ইন্সট্রুমেন্ট তোলা হচ্ছে। এই সময় সাবরিনার ফোন আসল। মাহফুজ ঘড়ি দেখল। ছয়টা দশ বাজে। মাহফুজ সামনে এগিয়ে গিয়ে সাবরিনা কে রিসিভ করল। সাবরিনা কে দেখে মাহফুজের বুক কেপে উঠল। সারাদিন অফিস করে, জ্যাম ঠেলে এতদূর আসার পরেও একটা মেয়ে কিভাবে এত সুন্দর থাকে। মুখটা চোখে পড়লেই যেন বুকে একটা চাপ পড়ে। এত সুন্দর! তাকিয়ে দেখে ভাল করে সাবরিনার দিকে। একটা সালোয়ার কামিজ পড়া। নানা রকম নকশা করা ডিজাইনার কামিজ আর সাথে সাদা সালোয়ার। শরীরের সাথে একদম লেগে আছে। যেন শরীরের সব ভাজ, খাজ স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিচ্ছে। মাহফুজ টের পায় ওর প্যান্টের ভিতর যেন জেগে উঠছে আরেকটা স্বত্তা। এই মেয়েটার এমন কিছু আছে দেখা মাত্র ওর ভিতরের অন্য একটা সত্তা জাগিয়ে তুলে। মাহফুজ সাবরিনার হাত ধরে বলে এত দেরি করলে কেন, জলের গান, গান গাওয়া শুরু করে দিয়েছে।

সন্ধ্যার পর ভীড় বেড়েছে রবীন্দ্র সরোবরে। এটা ঠিক ট্রেডিশনাল কনসার্ট ভেন্যু না। একটা ওপেন এয়ার থিয়েটার। চারপাশে মানুষ। ঠিক কোন বাউন্ডারী দেওয়া নেই। একটা টেলিকম কোম্পানির স্পন্সরশীপে সমাজসেবা মন্ত্রণালয় মাদক বিরোধী এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। জলের গান শেষ দল যারা গান গাইবে এবং আজকে যারা গাইছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে নামকরা। তাই এখন ভীড় অনেক বেশি। ধানমন্ডি লেকের এই অংশটাতে এমনিতেই অফিস শেষে সন্ধ্যায় ভীড় বাড়ে আজকে সেখানে ভীড় আর বেশি। মাহফুজ সাবরিনার হাত ধরে ভীড় ঠেলে সামনে এগুতে থাকে। সাবরিনা সব সময় ভীড় এগিয়ে চলতে পছন্দ করে। আজকে এত লোকের ভীড়ে তাই সামনে এগুতে ওর অস্বস্তি হয়। মাহফুজের কাধে টোকা দিলে মাহফুজ ফিরে তাকায়। সাবরিনা বলে এত ভীড় ঠেলে কি সামনে এগুনো ঠিক হবে? গান তো এখান থেকেই শোনা যাচ্ছে। এখানেই কোথায় দাঁড়িয়ে গান শুনে নেই? মাহফুজ ফিরে তাকিয়ে বলে, ভীড় হয়েছে তো কি হয়েছে। কনসার্টে তো একটু ভীড় হবেই। আর মানুষের মাঝে দাঁড়িয়ে গান শোনার, সবার সাথে একসাথে নাচার যে মজা সেটা ভিয়াইপি সিটে বসে কনসার্ট দেখার মাঝে কখনো পাবে না। সাবরিনা বুঝে মাহফুজ ওকে জেমসের সেই কনসার্টের কথা বলছে। সাবরিনা বলে, তারপরেও। আমার কেমন জানি অস্বস্তি লাগছে। মাহফুজ বলে, কাম অন সাবরিনা। লিভ ইউর লাইফ। সারাদিন এত ভয়ে থাকলে কি জীবন উপভোগ করা যায়। চল তো আজকে। প্রাণ খুলে বাচ। আর আমি তো সাথে আছিই। একসাথে এনজয় করব আজকে জলের গান।


[/HIDE]
 
[HIDE]
মাহফুজ বুঝে সাবরিনা আসলে এমন ভাবে জন মানুষে মিশে কখনো গান উপভোগ করে নি। কনসার্টে গেলেও হয়ত ভিয়াইপি টিকেটে সবার সামনে ছিল। আর ভীড় কে আমাদের দেশের মেয়েরা এমনিতেই একটু ভয় পায়, ছেলেদের হাতের অনাকাংখিত চলাফেরা নিজের শরীরে এড়ানোর জন্য। মাহফুজ তাই সাবরিনা কে ওর সামনে দিয়ে সাবরিনার পিছন দিকটা কভার করে। আর সাইড প্লিজ, সাইড প্লিজ করে সামনে এগুতে থাকে। তবে অনুষ্ঠান হচ্ছে ধানমন্ডি এলাকায়। ভদ্র এলাকা আর প্রচুর কলেজ ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে মেয়ে আছে। সাধারণত কনসার্টে যত মেয়ে দেখা যায় আজকে সেখানে মেয়ের সংখ্যা প্রচুর। সাবরিনাও তাই হালকা স্বস্তি বোধ করে চারপাশে তাকিয়ে। চারপাশে এত ভীড়ের কারণে মাহফুজের গায়ের সাথে লেগে থাকে। মাহফুজের শরীরের বর্ম যেন সাবরিনার মনে একটা নিরাপত্তার চাদর বিছিয়ে দেয়। এদিকে সাবরিনা যত মাহফুজের শরীরের সাথে লেগে থাকে মাহফুজের প্যান্টের ভিতরের ভদ্রলোক তত উতলা হয়ে উঠতে থাকে। সাবরিনার পারফিউম বরাবরের মত মাতাল করা। সাথে সাবরিনার শরীর যে ওর গায়ে একদম সেদিয়ে আছে। সাবরিনার নরম পাছা ঠিক ওর শরীরের ঘষা খাচ্ছে। ওর হাত তখন সাবরিনার কোমড়ে। গানের সাথে সাথে অনুষ্ঠানের লোকজন হাত নাড়াচ্ছে, চিতকার করছে, নড়াচড়া করছে, কেউ নাচছে। এর মাঝে ঠেলে ঠেলে সামনে যাওয়া কষ্টকর। মানুষের ধাক্কায় সাবরিনা মাহফুজের শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। মাহফুজে সাবরিনা কে একহাতে জড়িয়ে রেখেছে। অন্য হাতে ভীড় ঠেলছে। সাবরিনার মনে হয় এত ভীড় ঠেলে এই লোকটা সামনে যাবে কিভাবে কিন্তু ঠিক ঠিক মাহফুজ রাস্তা বের করে নিচ্ছে। ঠিক সেই সেময় সাবরিনা ওর বাম দুধে একটা হাতের অস্তিত্ব টের পায়। সাবরিনার প্রথমে মনে হয় এটা বুঝি মাহফুজের হাত। কিন্তু সংগে সংগে টের পায় মাহফুজের একটা হাত ওর কোমড়ের কাছে আর আরকেটা হাত দিয়ে ভীড় ঠেলছে। তাই ওর দুধ এই মূহুর্তে যে হাতের মুঠোয় সেটা অবশ্যই মাহফুজের না। সাবরিনার গা দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায়। বাংলাদেশের অন্য অনেক মেয়ের মত সাবরিনা এই মূহুর্ত গুলো কে একদম ঘৃণা করে। অযাচিত অনাকাংখিত হাত শরীরে। কিন্তু অনেক মেয়ের মত সাবরিনাও এই সময় গুলো কে এড়িয়ে চলতে চায়, মুখোমুখি হয়ে গেলে প্রতিবাদ করার জায়গায় দ্রুত সরে পড়তে চায়। সমাজের সবচেয়ে দৃঢ়চেতা মেয়েরাও সাধারণত প্রতিবাদহীন থাকে এই সময়ে কারণ আশেপাশের লোকেরা এই সময় সাহায্য তো করেই না বরং মেয়েটার ঘাড়ে দোষ চাপায়। আর এই এত ভীড়ে কনসার্টে কে বা কি করতে পারে। সাবরিনা তাই আশা করে মাহফুজ আর সামনে এগিয়ে যাবে ওকে নিয়ে আর এই অনাকাংখিত হাতের থেকে সাবরিনা মুক্তি পাবে। কিন্তু সাবরিনা টের পায় ওর দুধের উপর প্রেশার বাড়ছে। যেন খামচে ধরেছে ওর নরম মাংসপিন্ডটা। ব্যাথায় ককিয়ে উঠে সাবরিনা। ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তাকাতেই দেখে একটা কম বয়সি ছেলে দাত বের করে হাসছে। বড়জোর ক্লাস টেনে পড়ে হয়ত। কি সাহস ছেলেটার? এত ভীড়ে, এত লোকের মাঝে কোন ভয়ডর নেই বুঝি। সাবরিনা কোন কথা বলে না, একটানে হাতটা সরিয়ে দেয়। ছেলেটার হাসি যেন আর বাড়ছে। সাবরিনা টের পায় ওর পাছার উপর ঠাস করে যেন একটা হাত পড়ল। আউউ। উফ। অসভ্য। এত বছরের অভ্যাস আর সমাজের চাপিয়ে দেওয়া অনুশাসন যেন সাবরিনার মুখে প্রতিবাদের ভাষা ফুটিয়ে তুলতে দেয় না। ছেলেটার হাত আবার সাবরিনার দুধে এসে পড়ে। সাবরিনা মুখ দিয়ে আহ শব্দ বের হয়। সাবরিনা আর কিছু বলবে ঠিক তার আগে যেন ওর পাশে একটা ছোটখাট ঝড় বয়ে যায়।

[/HIDE]
[HIDE]

মাহফুজ যখন সাবরিনা কে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন মাহফুজের মনে ছিল খালি দুইটা জিনিস। কীভাবে ভীড় ঠেলে সামনে আগানো যায় আর সাবরিনার শরীরের নরম স্পর্শ। তখন সাবরিনা যখন ওর শরীরের ভিতর একবার কেপে উঠল তখন মাহফুজ বুঝে উঠতে পারে না কি হল হঠাত। ওর বাড়া কি বেশি ক্ষেপে গিয়ে সাবরিনার পাছায় গুতা মারছে। নিজের কোমড় এডজাস্ট করে মাহফুজ ঠিক করার চেষ্টা করে বাড়ার পজিশন। কিন্তু তারপরেও দশ সেকেন্ড পর সাবরিনা আবার কেপে উঠে। মাহফুজ বুঝার চেষ্টা করে কি হল। তখন ঠিক ওর মাথার ভিতর যেন খেলা করে যায় কি হচ্ছে। ভাল ভাবে তাকিয়ে মাহফুজ বুঝে ওর সন্দেহ সঠিক। ওর মাথায় যেন রক্ত চেপে যায়। মাথার রক্ত উঠে গেলে কি করে মাহফুজ সব সময় নিজেও জানে না। তাই এরপর কি হল মাহফুজের ঠিক খেয়াল নেই।


সাবরিনা হঠাত দেখে যে ছেলেটা ওর শরীরে হাত দিচ্ছিল সেই ছেলেটা প্রায় শূন্যে ভাসছে আর মাহফুজে একহাতে ছেলেটার কলার ধরে আছে। অন্য হাতে ক্রমাগত চড় মেরে যাচ্ছে ছেলেটার মুখে। ছেলেটা এক হাতে নিজের মুখ বাচানোর চেষ্টা করছে। আশেপাশের লোকজন গন্ডগোল টের পেয়ে সরে গেছে এবং চারপাশে গোল হয়ে দেখছে। কেউ সামনে আগানোর চেষ্টা করছে না। মাহফুজ এমনিতেও গড় বাংলাদেশি ছেলেদের থেকে এক মাথা সমান উচু। তারপর ভাল স্বাস্থ্য। আর এখন যেভাবে পাগলের মত ছেলেটাকে মারছে তাতে কেউ সামনে আগানোর কথা ভাবতে পারছে না। মাহফুজ বলছে মাদারচোত, হাত নামা, বাইনচোত হাত নামা মুখের সামনে থেকে। নাইলে মেরে এই সামনের লেকের পানির মাছ কে খাইয়ে দিব। ছেলেটা বাবাগো মাগো বলে চিৎকার করছে। মাহফুজ বলে আর মেয়েদের গায়ে হাত দেবার চেষ্টা করবি মাদারচোত। পুটকি দিয়া বাশ ঢুকায়ে দিমু একদম। খানকির পোলা তোর হাত কাইটা কুত্তারে খাওয়ায়ে দিমু। করবি শালা ক? আর সাথে সাথে একেকটা রাম থাপ্পড় চলছে ছেলেটার গালে। হারামজাদা তোরে ল্যাংটা কইরা বান্দর নাচ নাচামু। তোর সোনা কাইটা তোর মুখে ভইরা দিমু। মাহফুজের মুখ আর হাত দুইটাই তখন সমান তালে চলছে। ছেলেটা এমনিতে কম বয়েসি তার উপর চ্যাংড়া, পাতলা একটা ছেলে। মাহফুজের সামনে এই ছেলের কোন চান্স নেই টিকার। মেয়েদের গায়ে হাত দেওয়া ছেলেরা এমনিতেই ভীতু হয় তারপর আজকের হঠাত এই আক্রমণে ছেলে দিশেহারা। গন্ডগোল টের পেয়ে অনুষ্ঠানের ভলান্টিয়াররা হাজির হয়েছে। অনুষ্ঠানের মাঝে মাঝে বিভিন্ন জায়গায় দুই বা তিন জন করে ভলান্টিয়ার সেট করে রাখা ছিল মাহফুজদের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির। এরকম তিন জন এসে হাজির হয়ে মাহফুজ কে আলাদা করল সেই ছেলের কাছ থেকে। মাহফুজ কে চিনে সব ভলান্টিয়াররা। তাই একজন জিজ্ঞেস করল কি হইছে ভাই। মাহফুজ বলল ইভ টিজার, মেয়েদের গায়ে হাত দিয়ে বেড়াচ্ছে। ভলান্টিয়ারদের একজন বলল চিন্তা করবেন না ভাই, আমরা এরে সামনে পুলিশের বুথে নিয়ে যাচ্ছি।


সাবরিনার হঠাত করে টের পেল ওর পাশে যেন একটা ঝড় শুরু হয়ে গেছে। কালবৈশালখী ঝড়ের মত হঠাত শুরু হওয়া সেই ঝড়ের তান্ডবে ইভ টিজার ছেলেটা এক রকম হাওয়ায় ভাসছে। কয়েক সেকেন্ড লাগল সাবরিনার মাহফুজ কেন এমন করছে বুঝতে। যত স্ট্রং ক্যারেকটার হোক না কেন বাংলাদেশে মেয়েরা তাদের পারিবারিক শিক্ষা আর সামাজিক বাস্তবতার কারণে বেশির ভাগ সময় রাস্তাঘাটে বা ভীড়ের মাঝে নিজেদের গায়ে অযাচিত হাত পড়লে সেটা কে এড়িয়ে যায় ঝামেলা এড়ানোর জন্য সাবরিনাও সে কারণে আজকে চুপ করে ছিল। ভেবেছিল একটু পরেই চলে যাবে ছোকড়া। তবে কোন দিন এমন ভাবে কোন ইভটিজার কে ধোলাই হতে দেখে নি সাবরিনা। মনের ভিতর যেন একটা স্বস্তির হাওয়া বয়ে গেল সাবরিনার। সারাজীবন যে কোন রকম গালি বা সামান্য খারাপ কথা বলা কে এড়িয়ে গেছে সাবরিনা। পারিবারিক শিক্ষার কারণে মনে হয়েছে এগুলো কখনো ভাল ছেলে মেয়েরা বলে না। তবে আজকে মাহফুজের এই গালির বন্যা যেন ওর কানে মধু হয়ে ভাসছে। আর শূণ্যে ভাসমান এই ইভটিজার যেন ওর এত বছরের জীবনে সব ইভটিজারের প্রতিনিধিত্ব করছে। মাহফুজের প্রতিটা চড় যেন তাই গিয়ে পড়ছে প্রতিটা ইভটিজারের গায়ে। সাবরিনার মনে মাহফুজের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ যেন নতুন করে জাগ্রত হয়। ওর দেখা বেশির ভাগ ছেলে এইসব ক্ষেত্রে সাবরিনা কে নিয়ে সরে পড়ত যাতে ঝামেলা না বাড়ে। মাহফুজ সেখানে ঝামেলা কে মোকাবেলা করছে যাতে সাবরিনা কে আর ডিস্টার্ব করতে না পারে। মাহফুজের এই আক্রমণাত্মক আচরণ, মুখে গালির তুবড়ি সব সাবরিনার ভাল ছেলেদের থেকে যোজন যোজন দূরে কিন্তু ঠিক এই আচরণ যেন আবার সাবরিনার হৃদয়ে আবেগের বন্যা বইয়ে দিচ্ছে।




[/HIDE]
 
[HIDE]

ভলান্টিয়াররা ইভটিজার ছেলেটাকে কলার ধরে টানতে টানতে সরিয়ে নিয়ে গেলে মাহফুজ সাবরিনা কে প্রায় জড়িয়ে ধরে সামনে নিয়ে যেতে থাকে। একজন ভলান্টিয়ার সামনে ভিড় ঠেলে ওদের রাস্তা করে দিতে থাকে। মাহফুজ এমন ভাবে এখন সাবরিনা কে জড়িয়ে আছে যাতে আর কেউ সাবরিনার কাছে ঘেষতে না পারে এই ভীড়ে। ভলান্টিয়ারের সহায়তায় ওরা বেশ সামনে এগিয়ে যায়। মাহফুজ ভলান্টিয়ার কে বলে থাক আমরা এখানেই দাড়াচ্ছি। অনুষ্ঠানের আর বেশি বাকি নেই এমনিতেও। এখানেই দাঁড়িয়ে গান শুনি। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। অন্ধকার নামছে। চারপাশে মানুষের ভীড়। হাওয়া চলাচল করতে পারছে না তেমন। তারপর সেই ছেলেটাকে পেটানোর সময় পরিশ্রমে মাহফুজ ঘামছে প্রচন্ড। কপালের ঘাম মুছতে মুছতে মাহফুজ টের পায় সাবরিনা হালকা কাপছে। অলওয়েজ গুড গার্ল সাবরিনা সব রকম মারামারি থেকে শতহাত দূরে থেকেছে সব সময়। আজকে চোখের সামনে দেখা এই মারামারি, ইভটিজারের অনাকাংখিত হাত সব মিলিয়ে সাবরিনার শরীরে তখন এড্রোলিনের ছোটাছুটি। জলের গান ওর খুব পছন্দের দল হলেও, ওদের কোন গান যেন এখন মাথায় ঢুকছে না। এই ভীড়ের মাঝে একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে আশেপাশের আর কেউ সচেতন নয়। সবাই গানের তালে তালে দুলছে। সাবরিনার শরীর দুলছে তবে গানের তালে নয় ভিতরের উত্তেজনায়। মাহফুজ সাবরিনার এই কাপুনি টের পেয়ে জড়িয়ে ধরে। জলের গান তখন গাইছে “এমন যদি হত, আমি পাখির মত”। বেশ স্লো একটা গান। পিনিক তুলে দেয়। আশে পাশে অনেকেই তাদের গার্ল ফ্রেন্ডদের সাথে এসেছে। কেউ হাত ধরে রেখেছে, কেউ জড়িয়ে ধরেছে। গানের তালে তালে একটা আবেশ তৈরি হয়েছে চারপাশে। মাহফুজ সাবরিনা কে জড়িয়ে ধরে। কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে ভয় পেও না, সব ঠিক হয়ে গেছে। আমি থাকতে কাউকে ঘেষতে দিব না তোমার কাছে। মাহফুজের আশ্বাস সাবরিনার মনে যেন আস্থার তৈরি করে। এমন করে কেউ ওর জন্য লড়ে নি এর আগে। কল্পনার রাজপুত্ররা কল্পনায় ওর অন্য রাজ্য জয় করে কিন্তু বাস্তবের কোন রক্তমাংসের মানুষ ওর জন্য এভাবে লড়ে নি। তাই মাহফুজের কথা সাবরিনার শরীরের কাপুনি কমায়। কিন্তু সাথে সাথে সাবরিনা যেন অন্য একটা অনুভূতি টের পায় শরীর জুড়ে। গত কিছুদিন ধরে এই অনুভূতি যেন বড় পরিচিত হয়ে উঠছে। শরীর জুড়ে একটা উষ্ণ অনুভূতি আর তলপেটে একটা শিরশিরানি। মাহফুজের দুই হাত পেছন থেকে ওর বগলের নিচ দিয়ে পেটের উপর বেড় দিয়ে ওকে আকড়ে রেখেছে, আর থুতনি ওর এক কাধে রাখা। সাবরিনা বাকা চোখে মাহফুজ কে দেখার চেষ্টা করে। ওর কাধে থুতনি রেখে সামনে তাকিয়ে আছে। গান শুনছে যেন তন্ময় হয়ে। সাবরিনা শরীরে উষ্ণতা যেন বাড়তে থাকে। মাহফুজের শরীরের যেন তুষের কাজ করে। কাছে আসলেই ওর শরীরের ভিতর এতদিনের ছাইচাপা আগুন উসকে দেয়। আর একবার সেই আগুন ভালভাবে জ্বলে উঠলে সাবরিনার আর কিছুই করার থাকে না। সাবরিনা যেন উসখুস করতে থাকে। একদিনে মনে হয় মাহফুজ ওকে ভালভাবে জড়িয়ে ধরুক, ভিতরের আগুন আর উস্কে দিক আরকেবার মনে হয় এত লোকের মাঝে আগুন উসকে দিলে ওর কি হবে। কারণ তখন আর কিছুই ওর নিয়ন্ত্রণে থাকবে না।

সাবরিনার কাধে মাথা রেখে গান শুনতে শুনতে মাহফুজের নাকে আবার সাবরিনার চিরচেনা ঘ্রাণটা এসে লাগে। এটা শুধু সাবরিনার সেই মাথা গরম করা পারফিউমের ঘ্রাণ না। এটা পারফিউমের ঘ্রাণের সাথে সাবরিনার শরীরের ঘামের গন্ধ মিশে তৈরি হওয়া এক দারুণ গন্ধ। মাহফুজ জানে এই ঘ্রাণ ওর কি করতে পারে। সিনথিয়া আর সাবরিনা দুই বোনের ঘামের গন্ধ দুই রকম কিন্তু মাহফুজের উপর দুইজনের ঘামের গন্ধের প্রভাব এক। পাগল করার মত উত্তেজনা তৈরি হয় ওর মাথায়। মাহফুজ টের পায় প্যান্টের ভিতর ওর বাড়া আবার ফুলছে। একটু আগে মারামারির সময় ওর বাড়া চুপ মেরে গিয়েছিল। এখন নাকে আসা ঘাম আর পারফিউমের ঘ্রাণে সেই বাড়া আবার জেগে উঠেছে। মাহফুজ ওর কোমড়টা সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়। কি নরম পাছা। সাবরিনা পিছন দিকটা এত নরম। মাহফুজ পেটের কাছে থাকা হাত দিয়ে আর ভাল করে নিজের শরীরের সাথে সাবরিনা কে মিশিয়ে দেয়। আর কোমড় হালকা আগুপিছু করে নরম পাছার স্পর্শ নিতে থাকে। সাবরিনা টের পায় মাহফুজের হাত ওকে মাহফুজের শরীরের ভিতরে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে। ওর পিছন দিকটায় মাহফুজের স্পর্শ টের পায়। মাহফুজ ওর এস কে নিয়ে যেভাবে খেলে সেটা চিন্তা করে সাবরিনার কান গরম হয়ে যায়। বান্ধবীদের কাছে চিরকাল শুনে এসেছে ছেলেরা কিভাবে মেয়েদের পিছন দিকটার প্রতি পাগল হয়। সাদমান ওর বুবস নিয়ে খেললেও এসের দিকে তেমন একটা নজর দেয় না কখনো। মাহফুজ যেভাবে প্রতিবার ওর এসের যত্ন করে তাতে ওর মনে হয় ওর বান্ধবীদের কাছে শোনা কথা গুলা ঠিক। তবে সাবরিনার লজ্জা লাগে। এত লোকের মাঝে ওকে এভাবে আদর করছে। এর আগে যত বার আদর করেছে মাহফুজ ততবার ওদের কোন না কোন আড়াল ছিল। আজকে সব আড়ালের বাইরে মাহফুজ ওকে যেভাবে জড়িয়ে ধরছে সেটাতে ওর অস্বস্তি হয়। কিন্তু এক সাথে শরীরে বাড়তে থাকা গরম আর তলপেটের শিরশিরানি যেন ভিতরের অস্বস্তিকে দমিয়ে রাখে। সাবরিনা শান্ত হয়ে ওর এসে মাহফুজের প্যান্টের ঘর্ষণ অনুভব করতে থাকে।


জলের গান ওদের শেষ গান গাইবে। মঞ্চে অনুষ্ঠান শেষ করার আগে মাদক বিরোধী কিছু কথা বলছে রাহুল দা। সাবরিনা কথা শুনছে আর সাথে সাথে শরীরে মাহফুজের উষ্ণ স্পর্শ অনুভব করছে। রাহুল দা বললেন, মাদক কে না বলুন। আপনার জীবনের সব শেষ হয়ে যেতে পারে এই মাদকের কারণে। মাদকের বদলে প্রিয় জনের হাত ধরুন। মাদক কে স্পর্শ না করে প্রিয়তমার ঠোট স্পর্শ করুন। বিপুল করতালির সাথে দর্শকরা শেষ লাইনটাতে স্বাগত জানাল। রাহুল দা তাই আবার বলল, আজকে উপস্থিত সবাই প্রতিজ্ঞা করুন মাদক কে নয় বরং প্রিয়জন কে জড়িয়ে ধরবেন। সাবরিনা টের পায় মাহফুজ যেন এই কথার সাথে ওকে আর শক্ত করে শরীরে জড়িয়ে ধরেছে। রাহুল দা আবার বলল, মাদক কে নয় স্পর্শ করুন প্রিয়তমার ঠোট। সন্ধ্যার আলো আধারিতে উপস্থিত অনেকেই প্রেমিকার ঠোটে চুমু খাচ্ছে। আশেপাশে সবাই যেন ব্যস্ত। যাদের সাথে কেউ নেই তারা জোরে হাত তালি দিচ্ছে। মাহফুজ সাবরিনা কে ঘুরিয়ে দাড় করায় ওর মুখোমুখি। মাথাটা নামিয়ে আনে। সাবরিনা ওর ঠোটে ভেজা একটা স্পর্শ টের পায়। গত কয়েকদিন এই স্পর্শের জন্য ভিতরে ভিতরে কাতরে মরেছে সাবরিনা। চোখ বন্ধ করে যেন শুষে নিতে থাকে মাহফুজের ঠোট। মাথার ভিতর জমা করে নিতে থাকে স্পর্শের স্মৃতি। হঠাত করে ওর ঠোট যেন মুক্ত হয়ে যায় মায়ার বাধন থেকে। আশে পাশে তাকায়। কয়েক সেকেন্ড না কয়েক মিনিট গেছে বুঝে উঠতে পারে না সাবরিনা। কেউ কেউ ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। মঞ্চে আবার গান শুরু হয়ে গেছে। জলের গান গাইছে, বকুল ফুল, বকুল ফুল। সোনা দিয়া হাত কেন বান্ধাইলি। মাহফুজ ওর হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। সাবরিনা আড় চোখে মাহফুজ কে দেখে। শক্ত করে ওর হাত ধরে মঞ্চের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আর গানের সাথে গলা মিলিয়ে গাইছে “শালুক ফুলের লাজ নাই, রাইতে শালুক ফুটে লো, রাইতে শালুক ফুটে”। সাবরিনার দৃষ্টি টের পেয়ে মাহফুজ ওর দিকে তাকায়, একটা হাসি দেয়। সেই হাসিতে যেন অনেক কিছু বলে। সাবরিনার মনে হয় কী গভীর দৃষ্টি লোকটার। যেন ওর মনের ভিতরে গিয়ে হানা দিচ্ছে সেই দৃষ্টি।



[/HIDE]
 
[HIDE]


গান শেষ হয়। অনুষ্ঠান শেষ হয়। চারপাশের লোকজন আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে। সবার বাড়ি ফেরার তাড়া। মাহফুজ সাবরিনা কে জিজ্ঞেস করে জলের গানের সাথে কথা বলবে কিনা। সাবরিনা মানা করে। ওর মনে এই গান, সন্ধ্যা আর মাহফুজের স্পর্শ একটা আবেশ তৈরি করেছে। কার সাথে কথা বলে সেই আবেশ নষ্ট করতে চায় না সাবরিনা। হোক না সেটা ওর প্রিয় গানের দল। আরেকদিন নাহয় কথা বলা যাবে অন্য কোন সুযোগে। আজকের এই সন্ধ্যাটা খালি ওদের হোক, আর কার নয়। সাবরিনা তাই বলে আজকে নয় অন্য কোন দিন। আজকে চল কোথাও বসি। সাবরিনা ওর প্রিয় জলের গানের সাথে কথা বলার সুযোগ পেয়েও নিচ্ছে না দেখে একটু অবাক হয় মাহফুজ। তবে ও জানে কিছু কিছু সময় মেয়েদের মুডের সাথে মানিয়ে নেওয়া ভাল। তাই বলে চল কোথায় বসবে বল। সাবরিনা বলে তুমি ঠিক কর। মাহফুজ টের পায় ওর উপর সবারিনার ভরসা আগের থেকেও বাড়ছে। দুই জনে মিলে সামনে হাটতে থাকে। ভীড় কমে এসেছে তবু অনেক লোক আশেপাশে। ধানমন্ডি লেকের পাশের হাটার জায়গা জুড়ে সন্ধ্যার সময় হাটতে আসা মধ্যবয়সী লোক, প্রেমিক প্রেমিকার জুটি আর গান শুনতে আসা মানুষে ভরপুর। একটুও জায়গা যেন খালি নেই ওদের দুইজনের জন্য। মাহফুজ সাবরিনা কে বলে চল আমার সাথে। এখানে না, একটু আরাম করে অন্য কোথাও বসি।


সাবরিনা মাথা নেড়ে সায় দেয়। আজকে এই সন্ধ্যা মাহফুজ ওকে যেখানে নিয়ে যেতে চাইবে যাবে সাবরিনা। দুই জনে হেটে হেটে একটু সামনে আগায়। কিছুদূরে একটা জায়গায় মাহফুজের বাইকটা পার্ক করা। মাহফুজ বাইকে উঠে বসে। সাবরিনা কে কিছু বলা লাগে না। সাবরিনা বাইকের দুই দিকে পা দিয়ে মাহফুজ কে জড়িয়ে ধরে বসে। জলের গানের গান, মাহফুজের ওর জন্য করা প্রতিবাদ, মাহফুজের পুরুষালী ঘ্রাণ আর স্পর্শ। এইসব মিলে সাবরিনার চিন্তা তখন মাহফুজের নিয়ন্ত্রণে। সাবরিনা জানে না মাহফুজ ওকে কই নিয়ে যাচ্ছে। বাইকটা ধানমন্ডির ভিতরের রিক্সার জ্যাম ঠেলে, এই গলি, ঐ গলি করে সাত মসজিদ রোডে উঠে আসে। নাভানা টাওয়ারসের সামনে এসে থামে। ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডে নাভানা টাওয়ারে অফিস, শো রুম আর অনেক গুলো রেস্টুরেন্ট আছে। মাহফুজ বাইক পার্ক করতে করতে বলে চল উপরে গিয়ে একটা রেস্টুরুন্টে বসি, চুপ চাপ ঠান্ডা বাতাসে গল্প করি। ভিতরে লিফটের সামনে লম্বা লাইন। মাহফুজ সাবরিনার হাত ধরে আছে। দুইবারের চেষ্টায় লিফটে উঠতে পারে সাবরিনা আর মাহফুজ। গ্লোরিয়া জিনসের তলায় গিয়ে লিফট থেকে নামে দুইজন। গ্লোরিয়া জিনস পশ কফির দোকান। সন্ধ্যার পর পর এই সময়টাতে দারুণ ভীড় ভিতরে। বসার জায়গা নেই। অফিস ফেরত লোক আর কাপলদের দখলে পুরো জায়গাটা। ভিতরে গম গম করছে। আজকে মাহফুজ আর সাবরিনা দুইজনেই একটু নীরবতা চায়। তাই সাবরিনা বলে এখানে অনেক ভীড় চল অন্য কোন খানে যাই। মাহফুজ বলে একটু ভাবে। বলে চল আর উপরে যাই। সাবরিনা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। মাহফুজ বলে আর চল, দেখবে। লিফট দিয়ে আর উপরে উঠে আসে ওরা। রেস্টুরেন্ট থার্টি থ্রি। এটাও বেশ পশ তবে ভিতরে অত ভীড় নেই। লাইভ মিউজিক চলছে ভিতরে। মাহফুজ মাঝে মাঝে এখানে আসে খেতে তাই ভাল করে জানে এই জায়গায় কফি শপের মত ভীড় হবে না এইসময়। ওয়েটার ওদের নিয়ে ভিতরের দিকে একটা বুথে বসায়। পুরো রেস্ট্ররেন্টে অত বেশি লোক নেই। ছাড়া ছাড়া ভাবে বিভিন্ন টেবিলে বা বুথে কিছু কাস্টমার বসা। সাবরিনারা যে বুথে বসেছে তার আশেপাশে মানুষ নেই। ওদের অপজিটের কোণাকুণি আরেকটা বুথে কম বয়সী একটা কাপল বসে আছে। ছেলেটা কিছু বলছে সাথে সাথে মেয়েটা হেসে গড়িয়ে পড়ছে। সাবরিনা ভাল করে তাকায় কাপলটার দিকে। একদম কম বয়েসি ছেলে মেয়ে। হয়ত ভার্সিটির ফার্স্ট বা সেকেন্ড ইয়ার। নতুন প্রেমে যে অস্বস্তি আর লজ্জা থাকে সেটা নেই এদের মাঝে। অনেক সাবলীল। হাসতে হাসতে মেয়েটা ছেলেটার হাত ধরছে। দুই জনে বুথে দুইপাশে না বসে পাশাপাশি বসেছে ছেলে মেয়ে দুটো। সাবরিনা দেখে মাহফুজ টেবিলের উপর হাত বাড়িয়ে ওর হাত ধরেছে। সাবরিনার মাথায় প্রশ্ন আসে ওরা কি সাবলীল অপজিটের ঐ কাপলদের মত? সংগে সংগে আবার প্রশ্ন আসে, ওর কি কোন কাপল? এই প্রশ্নের সাথে সাথে সাদমান যেন ওর চিন্তায় হানা দেয়। হঠাত করে একটা গিল্ট ফিলিংস মনের ভিতর নাড়া দেয়। এতক্ষণ জলের দলের গান আর মাহফুজের স্পর্শ যে কল্পনার জগত তৈরি করেছিল হঠাত করে যেন সব ভেংগে যায়। বাস্তবের পৃথিবীতে সামনে তাকিয়ে দেখে মাহফুজ ওর হাত ধরে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। সাবরিনা হাত সরিয়ে নেয়। মাহফুজ অবাক হয় তবে কিছু বলে না।

উলটো দিকে ছেলেটার তার প্রেমিকার গালে একটা চুমু খায়। মাহফুজ তার বসার অবস্থানের কারণে কাপলটা কে দেখে না। ওদির দিকে পিঠ দিয়ে বসে আছে মাহফুজ। সাবরিনার চোখে বড় করে চুমুটা দেখে। কি সাহস ছেলেটার। রেস্টুরেন্টে সবার মাঝে বসে চুমু খাচ্ছে প্রেমিকা কে। সাবরিনার কত শখ ছিল ওর প্রেমিক হবে দূর্দান্ত। সবার সামনে ওকে জড়িয়ে ধরে আদর করবে। অবশ্য সে সব ওর স্বপ্ন। সাদমান কখনো সেরকম হতে পারে নি আর পারবেও না। আবার মাহফুজ তো ওর প্রেমিক হতে পারে না। ও বিবাহিত। তাই মাহফুজের কাছে এমন পাগল করা আচরণ প্রত্যাশা করতে পারে না। এইসব ভাবতে ভাবতে সাদমান আর মাহফুজ দুইজনের উপর একসাথে রাগ হয়। আর নিজের ভিতর গিল্ট ফিলিংস। এ এক অদ্ভুত সম্মিলন। সাদমান কি কখনো ওর মনের কথা বুঝার চেষ্টা করেছে? মাহফুজকে কে বলেছে ওর স্বপ্নের রাজকুমার হয়ে বাস্তবে আসতে? সারাজীবন সততার গুণগাণ গেয়ে আজকে এইভাবে পরপুরুষের সাথে এক রেস্টুরেন্টে বসে থাকা কি ওর নীতির বরখেলাপ নয়? আবার নিজেই ভাবে গত এক মাসে এত কিছু হয়ে যাবার পর রেস্টুরেন্টে বসে থাকা নিয়ে নীতি নৈতিকতার প্রশ্ন তুলা হাস্যকর। নিজের কাছে নিজের অসহায় লাগে। এ যেন এক অসম্ভব সমস্যার সমাধান নিয়ে বসেছে ও। ও যা চায় জীবন ওকে তা দিতে পারছে না, আর মাহফুজ ওকে যা দিতে চায় সারাজীবন সে উপায়ে কোন কিছু নেওয়া কে ও ঘৃণা করে এসেছে। যেভাবেই হোক এ খেলায় যেন সাবরিনার জেতার কোন সম্ভাবনা নেই। তাই অনেকটা মরিয়া হয়ে মাহফুজ কে সাবরিনা জিজ্ঞেস করে, আমরা যা করছি সেটা কি ঠিক করছি?


মাহফুজের বিকাল থেকে সময়টা ভাল যাচ্ছিল খালি মাঝখানে ঐ ইভটিজার ছেলের ঘটনা টা ছাড়া। সাবরিনা যেন অন্য যে কোন দিনের থেকে আর বেশি সাবলীল আজকে ওর সাথে। মনটা ফুরফুরে হয়ে উঠছিল তাই ওর। সিনথিয়া বিদেশ যাবার পর থেকে ওর মনের ভিতর একটা হাহাকার ছিল সংগ পাবার। এটা খালি কোন শারীরিক চাহিদা নয়, মানুষের সংগ পাবার একটা আকাঙ্ক্ষা সব মানুষের ভিতর থাকে। সিনথিয়ার মত স্মার্ট, সুন্দরী, বুদ্ধিমতী মেয়ের সংগের অভাব পূরণ করতে পারে খালি সাবরিনার মত মেয়ে। সুন্দরী, স্মার্ট, রুচিশীল। সিনথিয়া যেখানে সহজাত, সাবরিনা সেখানে রিজার্ভ। কিন্তু তারপরেও সাবরিনা যেন সিনথিয়ার সবচেয়ে ভাল বিকল্প। সিনথিয়ার আপন বোনের সাথে ওর সম্পর্ক টা আসলে কি সেটা নিয়ে মাহফুজের মনে দ্বিধা আছে। তবে মাহফুজ সেই দ্বিধা মনের ভিতর চাপা দিয়ে রেখেছে। মাহফুজ জানে সময় আসলে সব কিছুর সমাধান করে দিবে। কি সেই সমাধান সেটা ওর জানা নেই কিন্তু সব সময় এমন কোন কঠিন সমস্যায় মাহফুজ সময়ের উপর আস্থা রেখেছে। এবারো ওর আস্থা সময়ের উপর, ওর দ্বায়িত্ব খালি অপেক্ষা করে আর সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার। তাই আজকে সাবরিনা যখন হঠাত করে জিজ্ঞেস করল, আমরা যা করছি সেটা কি ঠিক। তখন মাহফুজ কে ওর মনের ভিতরের দ্বন্দ্ব আর সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার তাড়া দুইটাই একসাথে তাড়া করল। মাহফুজ জানে ওর সাথে সাবরিনার যাই হোক, যত দূর পর্যন্ত ওদের সম্পর্ক গড়াক, তবু সাবরিনার মনে দ্বিধা আছে। সেই দ্বিধা যে ভালভাবে সাবরিনা প্রকাশ করতে পেরেছে তা না। বরং মাহফুজ টের পায় সাবরিনার মনের ভিতর একটা দ্বিধা আছে, পাপবোধ আছে। ওর সাথে সাবরিনার আচরণ, কথোপকথনে সেটা টের পায়। আবার এটাও টের পায় মাহফুজ, যে যখন ও আদর করা শুরু করে তখন সাবরিনার ভিতরের সব দ্বিধা, পাপবোধ ভেসে চলে যায়। মাহফুজ তাই জানে আজকে আবার সাবরিনার ভিতরের দ্বিধা দূর করার সময় এসেছে।
[/HIDE]
[HIDE]




[/HIDE]
 

Users who are viewing this thread

Back
Top