অঘটনঘটন পটিয়সী by কাদের
আপডেট এক
অনেকক্ষণ ধরে আমরা বসে আছি। কেউ কথা বলছে না। অবশেষে সিনথিয়া কথা বলল- দেখ, আমাদের কোন ভবিষ্যত আমি দেখতে পারছি না। আমি জানতাম এই ধরনের কথা আসছে তাই হাতের কফির কাপটা নিয়ে পরের কথা শুনার জন্য অপেক্ষা করছি। বাসায় কেউ তোমার কথা মেনে নিবে না। আমার বাসা সম্পর্কে তো জান সবাই নাক উচু। এটা বলে সিনথিয়া অন্যদিকে তাকালো। সিনথিয়ার চোখ ভিজে আসছে বলে মনে হল। একটা নিরবতা আমারদের চারপাশে। কফিশপের চারপাশের শব্দ আমাদের স্পর্শ করতে পারছে না। ভবিষ্যত নিয়ে এইরকম একটা দোলাচালে কথা হারিয়ে ফেলেছি দুইজন। তিন বছরের সম্পর্ক। সংখ্যার হিসেবে মাত্র তিন বছর হলেও এর মাত্রা যে কত গভীর আমার জীবনে সেটা বোঝানো যাবে না। সিনথিয়ার চোখের পানি এখন আর স্পষ্ট। আমার চোখ শুকনো কিন্তু গলা ধরে আসছে। আমরা দুই জনেই জানি সম্পর্কের ইতি টানার কোন ইচ্ছা আমাদের দুইজনের নেই কিন্তু এর মাঝে পাহাড় প্রমান বাধা হয়ে আছে সিনথিয়ার পরিবার।
সিনথিয়া করিম। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে ইকোনমিক্সে অনার্স শেষ করেছে কয়দিন আগে। ভাল ছাত্রী, সুন্দরী । বাবা কর্পোরেটের বড় অফিসার আর মা একটা সরকারী কলেজের এসোসিয়েট প্রফেসর। ঢাকায় বনেদি পরিবার বলতে যা বোঝায় ঠিক সেটাই ওদের পরিবার। কয়েক পুরুষ ধরে ঢাকায় ভাল চাকরি করছে পরিবারের লোকেরা। মামা চাচা খালারা সব ভাল ভাল জায়গায় জব করে না হয় ভাল জায়গায় বিয়ে করেছে। এই ধরনের পরিবারের সন্তানরা বড় হয় দেশের ভাল স্কুল কলেজে পড়ে আর স্বপ্ন দেখে বিদেশে যাওয়ার নাহয় কর্পোরেটের বড় অফিসার বা সরকারি ক্যাডার সার্ভিসের বড় কোন পদে যাওয়ার। সিনথিয়াও এর ব্যতিক্রম ছিল না। ঢাকার হাই ক্লাস ফ্যামিলির ট্রাডিশনাল বাচ্চাদের মত সব ক্রাইটেরিয়া পূরন করেই জীবনের একেক ধাপ সামনে আগাচ্ছিল সিনথিয়া। এর মধ্যে একটাই ব্যতিক্রম ছিল সিনথিয়ার জীবনে। আমার সাথে দেখা হওয়া।
আমি সৈয়দ মাহফুজ। সিনথিয়ার সাথে আমার ব্যাকগ্রাউন্ড যতটুকু পার্থক্য হওয়া সম্ভব সেটাই হয়েছে। আমরাও কয়েক পুরুষধরে ঢাকার বাসিন্দা তবে আমাদের পরিবারের ইতিহাস একটু অন্যরকম। পরিবারের মধ্যে প্রথম ইন্টার পাশ করা মানুষটাই আমি। সিনথিয়ার পরিবারের লোকেরা যখন স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি মাতিয়ে কর্পোরেট বা সরকারি অফিসের গদি দখল করে বসছে, আমার পরিবারের লোকেরা তখন ঢাকায় ছোটখাট ব্যবসা করছে কেউ কেউ। ব্যতিক্রম ছিল আমার বাবা। এইসব ছোটখাট ব্যবসার সাথে সাথে রাজনীতির খাতায় নাম লিখিয়েছিল সৈয়দ মারুফ। ঢাকার ওয়ার্ড পর্যায়ের জটিল রাজনীতির হিসাব কিতাবে ত্রিশ বছর রাজনীতি করে একটা ওয়ার্ডের সরকারী দলের সেক্রেটারি এখন সৈয়দ মারুফ, আমার বাবা। মায়ের সাথে বাবার বিয়েও এই রাজনীতির পরিচয় সূত্রে। আমার নানার সাথে একই গ্রুপ করত বাবা, সেখান থেকে মেয়ের জন্য পছন্দ করে বাবার হাতে মায়ের হাত তুলে দেন নানা। ঢাকার এই ওয়ার্ড পর্যায়ের পলিটিক্সে বছরের পর বছর বিভিন্ন দলের রাজনীতি জিইয়ে রাখে শতশত রাজনৈতিক কর্মী। এদের বেশিরভাগ জীবনে টাকা বা ক্ষমতার সেভাবে স্বাদ পায় না। আমার বাবা বা নানা কেউ এর ব্যতিক্রম নয়। তাই আমাদের পরিবার স্বচ্ছল হলেও টাকাওয়ালা না, আর কোন ভাবেই শিক্ষিত সমাজে দাম পাওয়ার মত এডুকেশন সার্টিফিকেট নেই। কয়েক দশক ধরে চাকরি আর আত্মীয়তার জোরে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা সিনথিয়ার পরিবারের লোকদের কাছে আমি তাই নিন্মস্তরের ক্যাডার পলিটিক্স করা একজনের ছেলে। এমন কার সাথে আত্মীয়তার বন্ধনে জড়ানো ওদের জন্য তাই বহুত দূর কি বাত।
সিনথিয়ার সামনে কফি ঠান্ডা হচ্ছে। সিনথিয়ার মনে কি হচ্ছে সেটাই বোঝার চেষ্টা করছি। এই ব্রেকাপ আলাপের সম্ভাবনায় এমনিতে মন ভার হয়ে আছে কিন্তু সিনথিয়ার কাতর মুখটা দেখে বুকের ভিতরটা ভেংগে যাচ্ছে। ঠিক এমন সময় মনের ভিতর বাস করা শত সহস্র বছরের প্রেমিক পুরুষ যেন ডাক দিয়ে উঠল। এমন ডাকে শত বিপদের সম্ভাবনা জেনেও প্যারিস, হেলেন কে চুরি করে ট্রয়ে নিয়ে যায়। আমার কাছে তখন বাকি সব বাধা তুচ্ছ মনে হয়। তাই আমি সিনথিয়ার হাতটা ধরি। সিনথি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকায়। এই পুরোটা সময় সিনথি বলেছে আমি চুপ করে শুনেছি, কোন ইমোশন শো না করে। তাই এবার ওর হাতটা নিয়ে গাড় গলায় জিজ্ঞেস করলাম আমাকে ভালবাস? সিনথিয়া উত্তর দিল তুমি জান এর উত্তর। আমি জিজ্ঞেস করলাম আমাকে বিশ্বাস কর। সিনথিয়া বলল এটাও জান তুমি। আমি বললাম তাহলে এটা জেনে রাখ যে কোন মূল্যে আমি তোমাকে চাই। যেভাবেই হোক আমি তোমার ফ্যামিলিকে রাজি করাবো। সিনথিয়ার চোখ যেন অনেকক্ষণ পর ঝকমক করে উঠল। একটা তিলের জন্য সামারখন্দ বোখরা এনে দিতে চাওয়া কবি এই ঝকমকে চোখের জন্য পুরো পৃথিবীটা এনেদিত। আমি তো অবশ্যই কিছু লোককে রাজি করাতে পারব, যে কোন মূল্যেই।
[HIDE]
আপডেট ২
সিনথি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। একটু আগে ভার হয়ে থাকা চোখে একটু আলোর আভাস। আমার মাথার ভিতর তখন সুপার কম্পিউটার চলছে। গাদা গাদা হিসেব নিকেশ। কীভাবে এই অসম্ভব কে সম্ভব করা যায়। সিনথিয়ার বনেদি নাক উচু পরিবারের কাছে কিভাবে এই সম্পর্কের একটা গ্রহনযোগ্যতা পাওয়া যায়। সিনথিয়ার সাথে এতদিনের কথা থেকে বোঝা গেছে ওদের পরিবারের বিভিন্ন ডিসিশনের মূল চাবিকাঠি আসলে তিনজনের কাছে। সিনথিয়ার বোন, সাবরিনা করিম। সিনথিয়ার ফুফু, নুসাইবা করিম এবং সবচেয়ে গূরুত্বপূর্ন সিনথিয়ার মা, সাফিনা করিম। সিনথিয়ার বাবা পরিবারের বড় ভাই তাই তার উপর কার কথা বলার সাহস নেই তবে তিনি চলেন সিনথিয়ার মায়ের কথায়। সুন্দরী বউয়ের একদম অনুগত মিজবাহ করিম, সিনথিয়ার বাবা। বাড়ির বড় বউ হিসেবে অন্যদের কাছেও সিনথিয়ার মায়ের গ্রহণযোগ্যতা অনেক। সিনথিয়ার কথা শুনে মনে হয় যথেষ্ট বুদ্ধি রাখেন ওর মা। কোথায় কিভাবে কথা বলতে হবে বা কাকে কি বলে শান্ত রাখতে হবে এই কায়দা ভাল বুঝেন। সৌন্দর্য আর বুদ্ধির সম্মিলন। মিজবাহ করিমের তাই বউয়ের কথায় না চলে উপায় নেই। দাদা দাদী বেচে নেই সিনথিয়ার তাই ওদের এক্সটেন্ডেড পরিবারের মেইন দুই অভিভাবক সিনথিয়ার বাবা মা।
বংশের বড় নাতী হিসেব বেশ দাপট সিনথিয়ার বড় বোনের, সাবরিনা করিম। বয়স সাতাশ। চাচা ফুফুদের ভীষণ আদরের। সিনথিয়ার কথা শুনে মনে হয় খানিকটা বিচি, ডমেনেটিং। ছোটবেলা থেকে সব কিছুতে হ্যা শুনে শুনে না শোনার অভ্যাস নাই। সিনথিয়া প্রথম আমাদের প্রেমের কথা বলেছিল সাবরিনার কাছে। বোন প্রেম করছে শুনে প্রথম প্রশ্ন ছিল ছেলে কি করে, এমন কি নাম জানতে চায় নি। ব্যবসা করে সাথে পলিটিক্স এটা শুনে বলেছিল গুন্ডা বদমাশ ক্যাডারের সাথে বোনের সম্পর্ক কোনভাবেই মেনে নিতে পারবে না। আমার সম্পর্কে কোন কথা না শুনেই গুন্ডা, বদমাশ তকমা জুড়ে দিয়েছিল। তার এক কথা এমন কাউকে যদি বোন বিয়ে করে তাহলে মুখ দেখাবে কীভাবে সবার কাছে। সিনথিয়া যখন বলেছিল আমার সাথে ওর আন্ডারস্ট্যান্ডিং তখন নাকি বলেছিল মানুষ যে বাজে কথা বলবে সে তুলনায় এই আন্ডারস্টান্ডিং কিছু না। আর আমার সম্পর্কে প্রসংসা করার চেষ্টা করা মাত্র নাকি বলেছিল রাস্তায় ঘুরলে এমন ভুরি ভুরি ছেলে পাওয়া যাবে। শুনেই আমার রাগ হয়েছিল। চোখে মুখে সেটার ছায়া পড়েছিল তাই সিনথিয়া তখন বলেছিল রাগ করো না। আপু এরকম। রাগলে কাকে কি বলে হিসাব নেই। বাসার প্রথম বাচ্চা তো সবাই খুব আদর করে। আমি রাগ চেপে খালি বলেছিলাম ২৫ বছর বয়সে কেউ বাচ্চা থাকে না।
[/HIDE]
আপডেট এক
অনেকক্ষণ ধরে আমরা বসে আছি। কেউ কথা বলছে না। অবশেষে সিনথিয়া কথা বলল- দেখ, আমাদের কোন ভবিষ্যত আমি দেখতে পারছি না। আমি জানতাম এই ধরনের কথা আসছে তাই হাতের কফির কাপটা নিয়ে পরের কথা শুনার জন্য অপেক্ষা করছি। বাসায় কেউ তোমার কথা মেনে নিবে না। আমার বাসা সম্পর্কে তো জান সবাই নাক উচু। এটা বলে সিনথিয়া অন্যদিকে তাকালো। সিনথিয়ার চোখ ভিজে আসছে বলে মনে হল। একটা নিরবতা আমারদের চারপাশে। কফিশপের চারপাশের শব্দ আমাদের স্পর্শ করতে পারছে না। ভবিষ্যত নিয়ে এইরকম একটা দোলাচালে কথা হারিয়ে ফেলেছি দুইজন। তিন বছরের সম্পর্ক। সংখ্যার হিসেবে মাত্র তিন বছর হলেও এর মাত্রা যে কত গভীর আমার জীবনে সেটা বোঝানো যাবে না। সিনথিয়ার চোখের পানি এখন আর স্পষ্ট। আমার চোখ শুকনো কিন্তু গলা ধরে আসছে। আমরা দুই জনেই জানি সম্পর্কের ইতি টানার কোন ইচ্ছা আমাদের দুইজনের নেই কিন্তু এর মাঝে পাহাড় প্রমান বাধা হয়ে আছে সিনথিয়ার পরিবার।
সিনথিয়া করিম। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে ইকোনমিক্সে অনার্স শেষ করেছে কয়দিন আগে। ভাল ছাত্রী, সুন্দরী । বাবা কর্পোরেটের বড় অফিসার আর মা একটা সরকারী কলেজের এসোসিয়েট প্রফেসর। ঢাকায় বনেদি পরিবার বলতে যা বোঝায় ঠিক সেটাই ওদের পরিবার। কয়েক পুরুষ ধরে ঢাকায় ভাল চাকরি করছে পরিবারের লোকেরা। মামা চাচা খালারা সব ভাল ভাল জায়গায় জব করে না হয় ভাল জায়গায় বিয়ে করেছে। এই ধরনের পরিবারের সন্তানরা বড় হয় দেশের ভাল স্কুল কলেজে পড়ে আর স্বপ্ন দেখে বিদেশে যাওয়ার নাহয় কর্পোরেটের বড় অফিসার বা সরকারি ক্যাডার সার্ভিসের বড় কোন পদে যাওয়ার। সিনথিয়াও এর ব্যতিক্রম ছিল না। ঢাকার হাই ক্লাস ফ্যামিলির ট্রাডিশনাল বাচ্চাদের মত সব ক্রাইটেরিয়া পূরন করেই জীবনের একেক ধাপ সামনে আগাচ্ছিল সিনথিয়া। এর মধ্যে একটাই ব্যতিক্রম ছিল সিনথিয়ার জীবনে। আমার সাথে দেখা হওয়া।
আমি সৈয়দ মাহফুজ। সিনথিয়ার সাথে আমার ব্যাকগ্রাউন্ড যতটুকু পার্থক্য হওয়া সম্ভব সেটাই হয়েছে। আমরাও কয়েক পুরুষধরে ঢাকার বাসিন্দা তবে আমাদের পরিবারের ইতিহাস একটু অন্যরকম। পরিবারের মধ্যে প্রথম ইন্টার পাশ করা মানুষটাই আমি। সিনথিয়ার পরিবারের লোকেরা যখন স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি মাতিয়ে কর্পোরেট বা সরকারি অফিসের গদি দখল করে বসছে, আমার পরিবারের লোকেরা তখন ঢাকায় ছোটখাট ব্যবসা করছে কেউ কেউ। ব্যতিক্রম ছিল আমার বাবা। এইসব ছোটখাট ব্যবসার সাথে সাথে রাজনীতির খাতায় নাম লিখিয়েছিল সৈয়দ মারুফ। ঢাকার ওয়ার্ড পর্যায়ের জটিল রাজনীতির হিসাব কিতাবে ত্রিশ বছর রাজনীতি করে একটা ওয়ার্ডের সরকারী দলের সেক্রেটারি এখন সৈয়দ মারুফ, আমার বাবা। মায়ের সাথে বাবার বিয়েও এই রাজনীতির পরিচয় সূত্রে। আমার নানার সাথে একই গ্রুপ করত বাবা, সেখান থেকে মেয়ের জন্য পছন্দ করে বাবার হাতে মায়ের হাত তুলে দেন নানা। ঢাকার এই ওয়ার্ড পর্যায়ের পলিটিক্সে বছরের পর বছর বিভিন্ন দলের রাজনীতি জিইয়ে রাখে শতশত রাজনৈতিক কর্মী। এদের বেশিরভাগ জীবনে টাকা বা ক্ষমতার সেভাবে স্বাদ পায় না। আমার বাবা বা নানা কেউ এর ব্যতিক্রম নয়। তাই আমাদের পরিবার স্বচ্ছল হলেও টাকাওয়ালা না, আর কোন ভাবেই শিক্ষিত সমাজে দাম পাওয়ার মত এডুকেশন সার্টিফিকেট নেই। কয়েক দশক ধরে চাকরি আর আত্মীয়তার জোরে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা সিনথিয়ার পরিবারের লোকদের কাছে আমি তাই নিন্মস্তরের ক্যাডার পলিটিক্স করা একজনের ছেলে। এমন কার সাথে আত্মীয়তার বন্ধনে জড়ানো ওদের জন্য তাই বহুত দূর কি বাত।
সিনথিয়ার সামনে কফি ঠান্ডা হচ্ছে। সিনথিয়ার মনে কি হচ্ছে সেটাই বোঝার চেষ্টা করছি। এই ব্রেকাপ আলাপের সম্ভাবনায় এমনিতে মন ভার হয়ে আছে কিন্তু সিনথিয়ার কাতর মুখটা দেখে বুকের ভিতরটা ভেংগে যাচ্ছে। ঠিক এমন সময় মনের ভিতর বাস করা শত সহস্র বছরের প্রেমিক পুরুষ যেন ডাক দিয়ে উঠল। এমন ডাকে শত বিপদের সম্ভাবনা জেনেও প্যারিস, হেলেন কে চুরি করে ট্রয়ে নিয়ে যায়। আমার কাছে তখন বাকি সব বাধা তুচ্ছ মনে হয়। তাই আমি সিনথিয়ার হাতটা ধরি। সিনথি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকায়। এই পুরোটা সময় সিনথি বলেছে আমি চুপ করে শুনেছি, কোন ইমোশন শো না করে। তাই এবার ওর হাতটা নিয়ে গাড় গলায় জিজ্ঞেস করলাম আমাকে ভালবাস? সিনথিয়া উত্তর দিল তুমি জান এর উত্তর। আমি জিজ্ঞেস করলাম আমাকে বিশ্বাস কর। সিনথিয়া বলল এটাও জান তুমি। আমি বললাম তাহলে এটা জেনে রাখ যে কোন মূল্যে আমি তোমাকে চাই। যেভাবেই হোক আমি তোমার ফ্যামিলিকে রাজি করাবো। সিনথিয়ার চোখ যেন অনেকক্ষণ পর ঝকমক করে উঠল। একটা তিলের জন্য সামারখন্দ বোখরা এনে দিতে চাওয়া কবি এই ঝকমকে চোখের জন্য পুরো পৃথিবীটা এনেদিত। আমি তো অবশ্যই কিছু লোককে রাজি করাতে পারব, যে কোন মূল্যেই।
[HIDE]
আপডেট ২
সিনথি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। একটু আগে ভার হয়ে থাকা চোখে একটু আলোর আভাস। আমার মাথার ভিতর তখন সুপার কম্পিউটার চলছে। গাদা গাদা হিসেব নিকেশ। কীভাবে এই অসম্ভব কে সম্ভব করা যায়। সিনথিয়ার বনেদি নাক উচু পরিবারের কাছে কিভাবে এই সম্পর্কের একটা গ্রহনযোগ্যতা পাওয়া যায়। সিনথিয়ার সাথে এতদিনের কথা থেকে বোঝা গেছে ওদের পরিবারের বিভিন্ন ডিসিশনের মূল চাবিকাঠি আসলে তিনজনের কাছে। সিনথিয়ার বোন, সাবরিনা করিম। সিনথিয়ার ফুফু, নুসাইবা করিম এবং সবচেয়ে গূরুত্বপূর্ন সিনথিয়ার মা, সাফিনা করিম। সিনথিয়ার বাবা পরিবারের বড় ভাই তাই তার উপর কার কথা বলার সাহস নেই তবে তিনি চলেন সিনথিয়ার মায়ের কথায়। সুন্দরী বউয়ের একদম অনুগত মিজবাহ করিম, সিনথিয়ার বাবা। বাড়ির বড় বউ হিসেবে অন্যদের কাছেও সিনথিয়ার মায়ের গ্রহণযোগ্যতা অনেক। সিনথিয়ার কথা শুনে মনে হয় যথেষ্ট বুদ্ধি রাখেন ওর মা। কোথায় কিভাবে কথা বলতে হবে বা কাকে কি বলে শান্ত রাখতে হবে এই কায়দা ভাল বুঝেন। সৌন্দর্য আর বুদ্ধির সম্মিলন। মিজবাহ করিমের তাই বউয়ের কথায় না চলে উপায় নেই। দাদা দাদী বেচে নেই সিনথিয়ার তাই ওদের এক্সটেন্ডেড পরিবারের মেইন দুই অভিভাবক সিনথিয়ার বাবা মা।
বংশের বড় নাতী হিসেব বেশ দাপট সিনথিয়ার বড় বোনের, সাবরিনা করিম। বয়স সাতাশ। চাচা ফুফুদের ভীষণ আদরের। সিনথিয়ার কথা শুনে মনে হয় খানিকটা বিচি, ডমেনেটিং। ছোটবেলা থেকে সব কিছুতে হ্যা শুনে শুনে না শোনার অভ্যাস নাই। সিনথিয়া প্রথম আমাদের প্রেমের কথা বলেছিল সাবরিনার কাছে। বোন প্রেম করছে শুনে প্রথম প্রশ্ন ছিল ছেলে কি করে, এমন কি নাম জানতে চায় নি। ব্যবসা করে সাথে পলিটিক্স এটা শুনে বলেছিল গুন্ডা বদমাশ ক্যাডারের সাথে বোনের সম্পর্ক কোনভাবেই মেনে নিতে পারবে না। আমার সম্পর্কে কোন কথা না শুনেই গুন্ডা, বদমাশ তকমা জুড়ে দিয়েছিল। তার এক কথা এমন কাউকে যদি বোন বিয়ে করে তাহলে মুখ দেখাবে কীভাবে সবার কাছে। সিনথিয়া যখন বলেছিল আমার সাথে ওর আন্ডারস্ট্যান্ডিং তখন নাকি বলেছিল মানুষ যে বাজে কথা বলবে সে তুলনায় এই আন্ডারস্টান্ডিং কিছু না। আর আমার সম্পর্কে প্রসংসা করার চেষ্টা করা মাত্র নাকি বলেছিল রাস্তায় ঘুরলে এমন ভুরি ভুরি ছেলে পাওয়া যাবে। শুনেই আমার রাগ হয়েছিল। চোখে মুখে সেটার ছায়া পড়েছিল তাই সিনথিয়া তখন বলেছিল রাগ করো না। আপু এরকম। রাগলে কাকে কি বলে হিসাব নেই। বাসার প্রথম বাচ্চা তো সবাই খুব আদর করে। আমি রাগ চেপে খালি বলেছিলাম ২৫ বছর বয়সে কেউ বাচ্চা থাকে না।
[/HIDE]
Last edited: