What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

অভিশপ্ত ডায়েরী (Completed) (2 Viewers)

[HIDE]পর্ব ১০-অনুরাধার মুক্তিঃ [/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
সুবীর বাবুঃ আপনি তো জমিয়ে দিলেন মশাই। এবার গল্পটায় মজা আসছে। মৃত্যুঞ্জয়ের উপাসনা। বাহ কি দারুন পরিকল্পনা নিয়েছে সত্যেন্দ্র।
সত্য বাবুঃ তাহলে আপনি অজথাই তো অধৈর্য হয়ে উঠছিলেন। এবার দেখুন কেমন লাগে গল্পটা।
সত্য বাবু আবার নিজের গল্প শুরু করলেন।
দেবেন্দ্রঃ তোমার কোনও কথাই আমি বুঝতে পারছিনা। তুমি আমায় ঠিক করে বুঝিয়ে বল।
সত্যেন্দ্রঃ মহারাজ, মৃত্যুঞ্জয় মহাকালের উপাসক। ও এই মুহূর্তে এক গভীর তপস্যায় নিমগ্ন। কোনও এক ঋষির থেকে ও বর পেয়েছে, ঠিক বিবাহের ১ বৎসরের মাথায় ওর স্ত্রীর সাথে ওর সঙ্গম হবে আর সেই সঙ্গমে নিঃসৃত কুমারী যোনীর রক্ত ওকে মহাকালের পায়ে নিক্ষেপ করতে হবে। আর তারপরেই ও সেই বর লাভ করবে। এই বর লাভ করলে ওর মৃত্যু কোনও ক্ষত্রিয়ের হাতে হবেনা এবং ও রাজা হবে।
তিনকড়িঃ মহারাজ ও দুষ্ট। নিজের স্ত্রীকে মন্ত্রবলে বশ করে রেখেছে। ও এক অদ্ভুত ঔষধ প্রয়োগ করে ওর স্ত্রীর ওপর। স্নান করার পরের ২-৩ ঘণ্টা ওর স্ত্রী অনুরাধা চরম ভাবে যৌন কামনার বশবর্তী হয়। কিন্তু স্বামীর আদেশে অনুরাধা নিজের রিপুকে সম্বরন করেন। এটাই ওদের উপাসনা।
সত্যেন্দ্রঃ মহারাজ আমাদের জমিদারবাড়ির সামনে আসন্ন বিপদ। আর এই বিপদ হতে আপনি ই আমাদের রক্ষা করতে পারেন। মহারাজ যেকোনো উপায়ে হোক ওর উপাসনা ভঙ্গ করতে হবে।
দেবেন্দ্রঃ তুমি ঠিক কি বলছ সত্যেন্দ্র। আর এইসব অলৌকিক ব্যাপার কি সম্ভব।
সত্যেন্দ্রঃ মহারাজ জানি একদিনে এটা বিশ্বাস করা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু ধীরে ধীরে সব আপনার বোধগম্য হবে। ওদের উপাসনা ভঙ্গ হওয়ার উপায় হোল কুমারী অনুরাধার কুমারিত্ব গ্রহন। আর আমি চাই একাজ টি আপনি করুন।
দেবেন্দ্রঃ তোমার এতো বড় স্পর্ধা কি করে হয় তা ভেবে আমি অবাক হচ্ছি। তুমি জাননা আমি শিবের উপাসক, আমি কোনও নারীকে জোর করতে পারিনা। আর ক্ষত্রিয় ব্যাতিক অন্য কোনও নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক আমাদের শোভা দেয়না।
সত্যেন্দ্রঃ ক্ষমা চাইছি মহারাজ। কিন্তু একবার ভেবে দেখুন, সে কেমন মহামারী যা আমাদের কলকাতার কোনও বদ্যি নিবারন করতে পারলো না। সুদুর মেদিনিপুরের এক বদ্যি এলেন দেখলেন আর চলে গেলেন।
দেবেন্দ্রঃ সত্যেন্দ্র, তুমি আমার ছোট ভাই। তোমার অপমান সে তো আমার ও অপমান। কিন্তু বিনা প্রমানে কাউকে দোষারোপ করা হোল রাজধর্মের বিরোধী। এখনো অবধি তুমি যা যা বললে তার সপক্ষে কোনও প্রমান দেখাতে পারনি। তুমি প্রমান জোগাড় কর আমি তারপর ই তোমার কথায় গুরুত্ব দেব।
সত্যেন্দ্রঃ মহারাজ, প্রমান জোগাড় করব বলেই তো এতদিন আপনার সাথে শলাপরামর্শ করিনি এব্যাপারে। কিন্তু মহারাজ বিশ্বাস করুন এই মুহূর্তে রাজপরিবার ও জমিদারবাড়ির সামনে সমুহ বিপদ। আশা করি আপনি নিজের ছোট ভাইএর এই কথাগুলো খুব গভীর ভাবে ভাববেন।
তিনকড়িঃ মহারাজ আমি সাক্ষী। অন্তত আমার কথায় বিশ্বাস করুন। আর আপনি যে আশঙ্কা করছেন তা সঠিক নয়। অনুরাধা রাজকন্যা। ও ব্রাহ্মনের পত্নী এখনো হয়ে অথেনি, কারন ওদের মধ্যে চিরাচরিত স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। ঠিক ১০ ঘটিকার পর অনুরাধার শরীরে যৌন কামনার মোহ উদ্রেককারী ঔষধ প্রয়োগ করা হয়। অনুরাধা এই সময় টুকু নিজের শরীরকে জাতনা দিয়ে আরাধনা করেন এবং ইহা মৃত্যুঞ্জয়ের নির্দেশে। মহারাজ আমিও বদ্যি ব্রাহ্মণ, আমি আপনারে বলছি এটা পাপ নয়। রাজধর্ম পালনের জন্য সব ই সঠিক।
সত্যেন্দ্রঃ মহারাজ একটিবার ভাবুন, যদি আমাদের রাজকুলের ওপর চরম সর্বনাশ নেমে আসে আপনি কি পারবেন নিজেকে ক্ষমা করতে। যদি ম্রিত্তুঞ্জয় নিজের দাদার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে সক্ষম হয়ে যায় তাহলে আমিও নিজেকে ক্ষমা করবনা।
দেবেন্দ্রঃ (বেশ কিছুক্ষন ভাবার পর) ঠিক আছে আমি রাজধর্ম পালনে রাজি।
তিনকড়িঃ মহারাজের জয় হোক। মহারাজ আপনি দ্রুত স্নান করে পবিত্র হয়ে নিন। আপনার সামনে আজ বিরাট পরীক্ষা। ঠিক ১০ ঘটিকা হয়ার আগে আমি আপনাকে এখান থেকে ডেকে নিয়ে যাবো। এখন আমাদের বিদায়ের অনুমতি দিন।
সত্যেন্দ্র ও তিনকড়ি অত্যন্ত হাসিমুখে বাইরে আসে। এদিকে তিনকড়ি ও দাসি দের সাথে একবার কথা বলে নেয়। দাসি রা প্রস্তুত সমস্ত কাজকে সঠিক ভাবে সম্পূর্ণ করতে।
সুবীর বাবুঃ এতো মশাই, চরম ষড়যন্ত্র। সত্যি এই সত্যেন্দ্র লোকটি ভীষণ পরিমান বদ।
সত্য বাবুঃ বদ কি বলছেন মশাই, ওই তো নায়ক। আচ্ছা ভাবুন তো এরকম এক কামুক লোক শুধু জমিদারীর আনন্দে অনুরাধার মত এক অপ্সরাকে ভোগ করার ইচ্ছে কি বর্জন করতে পারে কখনো। একবার ভেবে দেখুন সত্যেন্দ্রের আত্মত্যাগের ব্যাপারে।
এবার সুবীর বাবু হা হা করে হেসে ফেলেন।
সুবীর বাবুঃ আপনার সাথে পারবনা। ঠিক আছে আপনি বাকি গল্প তা শুরু করুন।
দেবেন্দ্র মুখে যতই ধর্মের কথা বলে থাকুক, যেদিন ই প্রথমবার এর জন্য উনি অনুরাধাকে দেখেছিলেন সেদিন ই অন্তরের কাম রিপু ভীষণ ভাবে নাড়া দিয়েছিল এবং নিজেকে পরাজিত মনে হয়েছিল। আজ সত্যেন্দ্র ও তিনকড়ির কথা গুলো ওনার শরীরে নতুন করে সেই কাম বিষ কে উদ্রেগ করে দিল। দেবেন্দ্র প্রস্তুত। ওদিকে অনুরাধা স্নানাগারে প্রবেশ করা মাত্র দাসিদের কাছ থেকে তিনকড়ির কাছে খবর চলে যায়। স্নানের পর অনুরাধা সাধারনত কিছুক্ষন অন্তর্বাস এই থাকেন। পুজা শেষ করে তারপর নতুন কাপড় গায়ে চড়াতেন। সেই যুগে তো আজকের মত আধুনিক অন্তর্বাস ছিলনা, পরনে ঘাগরা ধরনের এক সায়া আর বুকের ওপর চাদর, ব্যাস এতটুকুই। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তিনকড়ি দেবেন্দ্রর কাছে এসে উপস্থিত। সত্যেন্দ্র তখনও নিজের ই ঘরে। সত্যেন্দ্র শুধু অপেক্ষায় ছিল দেবেন্দ্রর অনুরাধার ঘরে প্রবেশ করার। তারপর নতুন কোনও পরিকল্পনা শুরু হয়ে যাবে।
তিনকড়িঃ মহারাজ চলুন। সেই শুভ লগ্ন এসে গেছে। আপনাকে সজাগ থাকতে হবে আর মনে রাখতে হবে ওই নারীর সতিত্ব গ্রহন করলেই এই জমিদার বাড়ী সুরক্ষিত থাকবে।
দেবেন্দ্র তিনকড়ির সাথে অনুরাধার ঘরের দিকে যেতে শুরু করে। অনুরাধার ঘরের বাইরেই এক বিস্বস্ত দাসি দাঁড়িয়ে ছিল।
দাসিঃ (দেবেন্দ্রর দিকে তাকিয়ে) মহারাজ, আমরা সব ই জানি। রাজ পরিবারের কলঙ্ক দূর করতে আমরা নিজের জান দিতেও প্রস্তুত।
দেবেন্দ্রঃ আমি তোমাদের আনুগত্যে প্রবল ভাবে বিগলিত। জমিদার বারীর মাথার ওপর থেকে কালো মেঘ সরে গেলে তোমাদের জন্য লোভনীয় পুরস্কার অপেক্ষা করে আছে।
দাসিঃ পুরস্কার চাই না মহারাজ। শুধু চাই জমিদার বাড়ী সুরক্ষিত থাক। আপনার জয় হোক মহারাজ। আপনি কোনও আশঙ্কা করবেন না। আমরা আপনার সাথেই থাকবো। আপনি দয়া করে এখানে অপেক্ষা করুন, আমরা সঠিক সময়ে আপনাকে ভেতরে ডেকে নেব।
দেবেন্দ্রর শরীরে তখন কামনার তীব্র আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। বেশ কিছুক্ষন ওখানে দাঁড়ানোর পর দেবেন্দ্র লক্ষ্য করে যে এই ঘরে একটি জানালা আছে এবং তা একটু হলেও খোলা। দেবেন্দ্র আসতে আসতে জানালার দিকে এগিয়ে যায়। জানালাটা একটু ফাঁক করে এবং ভেতরে উঁকি মারে। ভেতরে তখন অনুরাধা স্নানাগার থেকে বেড়িয়ে এসেছে। পরনে তার ঘাগরার মত এক সায়া। আর দাসিরা লাল রঙের কারুকার্য করা এক চাদর ওনার শরীরে জড়িয়ে দিচ্ছে। অনুরাধা জানালার দিকে পেছন করে আছেন তাই সম্পূর্ণ শরীর দৃশ্যমান হচ্ছেনা, কিন্তু অনুরাধার খোলা পিঠ বেশ কয়েক সেকেন্ডের জন্য দেবেন্দ্রর দ্রিশ্যগোচর হয়। এই ত্বক যেন ঈশ্বর নিজের সমস্ত কাজ কে ফেলে রেখে অতি যত্নের সাথে অল্প অল্প করে বুনেছেন। কি মসৃণ কি নরম ওর ত্বক। দেবেন্দ্র নিজের হুঁশ হারিয়ে ফেলে, জানালা থেকে সরে আসে। দেবেন্দ্রের শরীরে কামনার তীব্র আগুন চরম শিখায় পৌছায় এখন এটাই দেখার যে এই আগুন কখন অনুরাধার শরীরকে দহন করে। এদিকে তিনকড়ি ও সত্যেন্দ্র ও দূর থেকে দেবেন্দ্রের এই উত্তেজিত অবস্থার সাক্ষী হতে থাকে। সত্যেন্দ্রের পরবর্তী পরিকল্পনা ও তৈরি রয়েছে। দেবেন্দ্র অনুরাধার ঘরে প্রবেশ করার ঠিক পরেই তিনকড়ি যাবে গ্রামে মৃত্যুঞ্জয়ের কাছে। এবং ম্রিত্তুঞ্জয় কে ঠিক কি গল্প বলা হবে তাও তৈরি রয়েছে।
সুবীর বাবুঃ আপনি বড্ড বেশি ভনিতা করেন সত্য বাবু। পরবর্তী পরিকল্পনার কথা না হয় পরেই বললেন। আপাতত অনুরাধার ঘরে ঠিক কি হতে চলেছে সে দিকেই মনোনিবেশ করাই শ্রেয়।
সত্য বাবুঃ (কিছুটা মুচকি হেসে) মশাই আপনি তো দেবেন্দ্রর থেকেও বেশি উত্তেজিত হয়ে পরেছেন দেখছি। আপনার শরীরি ভাষা অন্তত সে কথাই বলছে। যাই হোক আপনাকে আর বেশি কষ্ট আমি দেবনা। চলুন একদম অনুরাধার ঘরেই যাওয়া যাক।
দাসি দের দেওয়া অন্তর্বাস পরার পর থেকেই অনুরাধার শরীরে শিহরন শুরু হয়। অনুরাধা প্রথমে মনে করতে থাকেন তার শরীরে কোনও রোগ হয়েছে, কিন্তু ধীরে ধীরে উনি বুঝতে পারেন না ওনার মন এই সময় কাউকে চাইছে খুব সম্ভবত তিনি আর কেউ নয় মৃত্যুঞ্জয়।
অনুরাধাঃ (দাসিদের দিকে তাকিয়ে) তোমাদের বদ্যিঠাকুর কোথায় আছেন তোমরা কি জানো? ওনাকে কিছু সময়ের জন্য তোমরা ডেকে আনতে পারো, আমার ওনাকে ভীশন প্রয়োজন।
দাসিরা নিজেদের মধ্যে বেশ কিছুক্ষন হাসাহাসি করে এবং ওনারা বুঝতে পারে যে অনুরাধার শরীরে বিষক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। কোনও এক বিচক্ষন দাসি অনুরাধার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে
দাসিঃ দেবী ঠাকুর তো ভিন গাঁয়ে গেছেন, ওনার এখানে ফিরে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। আপনার কি দরকার আমাদের বলুন। আমরা আপনার সেবা করতে সর্বক্ষণ প্রস্তুত।
অনুরাধা ওদের কোথায় কোনও উত্তর দেয়না, শুধু চোখ দুটোকে বন্ধ করে পুজা স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করেন। উনি মাটিতে বসে পুজা করতে শুরু করেন। তিনকড়ি ঠিক এই কথাটাই সত্যেন্দ্রকে বলেছিল, অনুরাধা প্রাজ্ঞী, ওনার মনের সাথে যুদ্ধ করা এতো সহজ নয়, সময় লাগবে। পুজাস্থানে বসে থাকলেও অনুরাধার মন সেদিকে ছিলনা। শরীরের মধ্যে যেন হাজার কীট ওনাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। অনুরাধা ওখান থেকে উঠে দাঁড়ান এবং দাসিদের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন
অনুরাধাঃ তোমরা কেউ বলতে পারো এরকম কেন হচ্ছে, পুজাকালে এর আগে কনদিন আমার মনে পাপ প্রবেশ করেনি, আজ আমার সাথে এরকম কেন হচ্ছে।
দাসিঃ দেবী আমার মনে হয় আজ আপনার দেবতার পুজা নয় অন্য কোনও পুজা করার দরকার।
অনুরাধাঃ (অনুরাধা ওখান থেকে উঠে যায়) তোমরাও তো নারী। নিশ্চয়ই আমার শরীরের এই আকুতি মিনতি তোমরা অনুধাবন করতে পারছ। অনুগ্রহ করে বল আমি কি করে মুক্তি পাবো।
[/HIDE]
 
[HIDE]পর্ব ১১- সত্যবাবু আসলে কে? [/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
দাসিঃ দেবী আপনি অনুগ্রহ করে কিছুক্ষন অপেক্ষা করুন। আমরা আপনার শয্যা সাজিয়ে তুলছি। দেখবেন ওই সজ্জায় একবার শুলে আপনার সমস্ত যন্ত্রণা আপনার সমস্ত ইচ্ছা পুরন হয়ে যাবে।
অনুরাধাঃ না দাসি আমি শুতে নয় একটি বার তোমাদের ঠাকুর কে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে উথছি। অনুগ্রহ করে তোমরা কেউ গিয়ে ওনাকে নিয়ে আসো।
দাসিঃ দেবী আপনিও জানেন, ঠাকুর নিজ ধর্ম পরিত্যাগ করে কখনই আপনার কাছে আসবেনা। আমরাই পারি আপনার যন্ত্রণা লাঘব করতে।
কিছুক্ষনের মধ্যেই অনুরাধার জন্যে ফুল দিয়ে বিছানো এক সুগন্ধি শয্যা প্রস্তুত হয়ে গেল। দেখে ঠিক মনে হচ্ছিল আজ অনুরাধার ফুলসজ্জা। এই সুরভী শয্যা অনুরাধার কামনা আরও শতাধিক পরিমান বাড়িয়ে দেয়। অনুরাধা আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ টুকুও দেন না। সোজা গিয়ে সজ্জায় শুয়ে পড়েন। এটা দেখে দুই দাসি ও বিছানার ওপর যায়। ওরা জানে এই মুহূর্তে অনুরাধার শরীরে এতো শিহরন আনতে হবে যে ওনার কামনা মৃত্যুঞ্জয় নয় যেকোনো পুরুষের দিকে ধাবিত হয়। সে পুরুষ রাজমহলের যে কেউ হতে পারে, দেবেন্দ্র, সত্যেন্দ্র বা অন্য যেকেউ।
দুই দাসির একজন অতি কোমল ভাবে নিজের হাত অনুরাধার চাদরের ভেতরে ঢুকিয়ে ওপরের দিকে নিয়ে যায়। এদিকে জানলার বাইরে দাঁড়িয়ে দেবেন্দ্র সব কিছু পর্যবেক্ষণ করে ও কামনার আগুনে থরথর করে কাঁপতে শুরু করে। দেবেন্দ্র বুঝতে পারে দাসির হাত ধীরে ধীরে অনুরাধার স্তন যুগলকে ওলট পালট করছে। আর অনুরাধা প্রায় ক্রন্দন রত অবস্থায় বলে চলেছে “তোমরা পারবেনা, একটি বার শুধু তোমাদের ঠাকুর কে ডাকো উনি ই পারবেন। উনি ই এই শরীরের মালিক। উনি ই আমার প্রভু। তোমরা যা করছ তা অন্যায়” দাসিরা ওনার কথার সামান্য ভ্রুক্ষেপ করেন না। যে দাসি ক্রমাগত ওনার স্তন জুগল কে ওলট পালট করে চলেছে সে ধীরে ধীরে নিজের মুখ অনুরাধার নিকটে নিয়ে যায়। অনুরাধার মুখের কাছে নিজের মুখ স্থির রাখে। দাসির উষ্ণ নিশ্বাস অনুরাধার মুখের ওপর পড়তে থাকে। এই নিশ্বাস অনুরাধাকে আরও পাগল করে তোলে। অনুরাধার দুই চোখ ঘোলাটে হয়ে আসে, কণ্ঠ ও অনেক নিস্প্রভ হয়ে ওঠে। প্রায় ক্রন্দনরত আওয়াজ ধীরে ধীরে দুর্বল কাকুতি মিনতি তে রুপান্তরিত হয়। “দুই নারীর সম্ভোগ এতো অন্যায়, ঠাকুর কে ডাকো, উনি ই এই কাজের যোগ্য” ধীরে ধীরে দাসি নিজের ওষ্ঠ যুগল অনুরাধার ওষ্ঠর ওপর রাখেন। পাতলা দুই ওষ্ঠের আদ্র স্পর্শে অনুরাধার শরীরে বিদ্যুৎ ধাবিত হয়। অনুরাধার শরীর সাপের মত কিলবিল করে এদিক ওদিক হতে থাকে এবং মুখ দিয়ে উম্ম উম্ম করে শীৎকার নিঃসৃত হয়।
সুবীর বাবুঃ মশাই আপনি তো ফাটিয়ে দিচ্ছেন। আমার ই শরীরে কামনার আগুন জ্বলতে শুরু করেছে। সত্যি ডায়েরি তা পড়লে আমি এতো আনন্দ হয়ত পেতাম না। আপনাকে সালাম সত্যবাবু।
সত্য বাবুঃ আমি সামান্য গল্পকার মশাই। হাঁ এটা সত্যি যে গল্প টা আমি ভালই বলতে পারি। কিন্তু ধন্যবাদ কাউকে দিতে হলে এই ডায়েরি কে এবং অবশ্যই এই জমিদারবাড়ি কে দিন।
সুবীর বাবুঃ সে তো অবশ্যই। এখানে এসেছিলাম সিপাহী বিদ্রোহের ইতিহাস খুঁজতে। আমি বুঝে গেছি খালি হাতেই যেতে হবে।
সত্য বাবুঃ না খালি হাতে কেন যাবেন সাথে এই ডায়েরি টা যাবে। এতে আপনার গল্প লেখা হবে, এবং সেই গল্প শেষ হলে ডায়েরি আবার এই টেবিলেই ফেরত আসবে।
সুবীর বাবুঃ (প্রচণ্ড জোরে হেসে) আপনাকে নিয়ে আর পারবনা মশাই। আপনি বারবার এই ডায়েরি টাকে অভিশপ্ত প্রমান করার চেষ্টা করছেন, কি ব্যাপার বলুন তো গল্পের শেষে কি কোনও অলৌকিক ব্যাপার ট্যাপার আছে নাকি।
সত্য বাবুঃ সে কি অলৌকিক কিছু যে হতে চলেছে তা কি আপনি এখনো বুঝে উঠতে পারছেন না। ঠিক আছে একবার পেছন ঘুরে দেখুন দেখি।
সুবীর বাবু একবার পেছন ঘুরে দেখেন। উনি প্রায় আঁতকে ওঠেন। ঠিক দরজার বাইরে দুজন ষণ্ডামার্কা লোক হাতে দুটো বল্লম নিয়ে একটা এক্স বানিয়ে দরজার বাইরে পাহারা দিচ্ছে। (ঠিক যেমন সিনেমা তে দেখা যায়)। আর বাইরের বারান্দা তা ঝাড়বাতিতে খুব সুন্দর ভাবে সাজান হয়েছে। যে জায়গায় অন্তত ২-৩ ইঞ্চি ধুলো জমে ছিল এখন সেই জায়গা টাই এখন কাঁচের মত পরিস্কার। বারান্দার ওই পাশের দেওয়ালে কাদের যেন ছবি টাঙ্গানো আছে। সুবীর বাবু হাঁ করে তাকিয়েই থাকলেন।
সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু আপনি কিন্তু জমিদার বাড়ীতে রয়েছেন ভুলে যাবেন না। যখন ই কেউ এই জমিদার বাড়ীতে আসেন এই ডায়েরি তা পড়তে আমরা তখন ই এই বাড়ী টাকে আগের মত করে সাজিয়ে তুলি। হয়ত খুব একটা ভালো করে পারিনা তাও চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখিনা।
সুবীর বাবু এখনো নিজের চোখ কে বিশ্বাস করাতে পারছিলেন না। উনি হাঁ করে সত্য বাবুর কথা শুনে চলছিলেন এবং তার সাথে আশেপাশের পরিবেশ তা ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন।
সত্য বাবুঃ আরে মশাই এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা বাঘ বা ভাল্লুক কিছুই নয়। তবে যেহেতু আপনি একবার ডায়েরি তা পড়তে শুরু করে দিয়েছেন তাই আপনাকে দুটো কথা বলা উচিত।
সুবীর বাবুঃ (এতক্ষনে সুবীর বাবুর মুখ দিয়ে কথা বেরল) কি কথা বলুন।
সত্য বাবুঃ একবার যখন ডায়েরি তা পড়া শুরু করেছেন তখন আপনাকে সম্পূর্ণ ডায়েরি তাই পড়তে হবে। এবং পড়া হয়ে গেলে এই ডায়েরি তা আপনার বাড়ীতে নিয়ে যেতে হবে। ওটায় রূপসা, তিলোত্তমা, মালতী আপনি ও আরও কিছু মানুষের গল্প লেখা হবে। তারপর ডায়েরি তা আবার এখানেই ফেরত আসবে।
সুবীর বাবু প্রায় ভুত দেখার মত চমকে উঠলেন।
সুবীর বাবুঃ আপনি কে সত্য বাবু। এগুলো কি সব সাজানো ঘটনা। আপনি আমার পরিচয়, আমার পরিবার সম্পর্কে জানলেন কি করে?
সত্য বাবুঃ (অত্যন্ত নম্রভাবে) সুবীর বাবু দয়া করে শান্ত হন। আমি অতি সামান্য এক লোক। আমি আপনার কোনও ক্ষতি করবনা আর করতে পারব ও না।
সুবীর বাবুঃ (প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে) না, আমার প্রথম থেকেই আপনার ওপর সন্দেহ হচ্ছিল। আপনার পোশাক আজকের যুগে চলেনা। আমি জানি আপনি কোনও বদ মতলবে রয়েছেন। একটা কথা মনে রাখবেন আমি যে এখানে এসেছি তা কিন্তু অনেক বড় বড় মাপের মানুষ ই জানেন। রামকিঙ্কর বাবু কিন্তু পৃথিবী খ্যাত এক গবেষক। আপনি জানেন না আমার কিছু হয়ে গেলে আপনাদের সব মতলব ঘুচে যাবে।
সত্য বাবুঃ (আরও নম্র হয়ে) সুবীর বাবু আপনি পণ্ডিত মানুষ। আপনি না চাইলে আমি চলে যাচ্ছি, এরাও চলে যাবে। দয়া করে একটু বোঝার চেষ্টা করুন আমি অতি সামান্য কথাকার। আমি শুধু নিজের কর্তব্য পালন করে চলেছি আর কিছু নয়।
সুবীর বাবুঃ (এবার একটু নম্র হয়ে) না সত্য বাবু আপনার এই হেঁয়ালি গুলো আমার পছন্দ নয়, একেবারেই পছন্দ নয়। আপনি তো মশাই গল্প বলছিলেন হথাত করে আমার পরিবার কোথা থেকে এসে গেল, ওদের সাথে এই গল্পের কি সম্পর্ক?
সত্য বাবুঃ না ওদের সাথে এই গল্পের কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু এই ডায়েরির সাথে ওদের এক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। আপনি আধুনিক মানুষ তাই আমার কথা গুলো আপনার হেঁয়ালি মনে হচ্ছে। দয়া করে একটু বুঝুন। আপনি যে এখানে এসেছেন এই ডায়েরি তা পড়েছেন তার একটা কারন আছে। আর সেই কারন তা বুঝিয়ে দেওয়াই আমার কর্তব্য। আপনি তো নিজেই ডায়েরি তা পড়তে পারতেন, কেন অযথা আমি আপনাকে গল্পের মত করে শোনাতে যাবো।
সুবীর বাবুঃ (প্রচণ্ড বিরক্তির সাথে) আপনি কেন এইসব বলছেন। আমি এসব বিশ্বাস করিনা।
সত্য বাবুঃ আপনি যে বিশ্বাস করেন না তা আমিও জানি। আপনি তো পণ্ডিত ব্যাক্তি, এটা তো মানেন প্রত্যেকের ই নিজ কর্মের প্রতি দায়বদ্ধ হওয়া উচিত। ধরে নিন আপনাকে এই অনুরাধা, সত্যেন্দ্র, দেবেন্দ্র ও তিনকড়ির পর্ব টুকু বলা ও এর সাথে আপনার জীবনের কি সম্পর্ক তা বুঝিয়ে দেওয়া এটা আমার কাজ। আমি শুধু আমার কাজটুকু করে চলেছি ব্যাস আর কিছু নয়।
সুবীর বাবু কোনও উত্তর দিলেন না শুধু নিজের বিরক্তি প্রকাশ করলেন।
সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু, আপনি উচ্চশিক্ষিত। আপনার থেকে আমি এতটুকুই আশা কড়ি যে আপনি ধৈর্য ধরবেন ও আমার প্রতি সহনশীল হবেন। (সত্য বাবু আসতে করে সুবীর বাবুর দু হাত স্পর্শ করলেন)
এতক্ষনে সুবীর বাবুর মাথা একটু ঠাণ্ডা হয়েছে। উনি মনে মনে ভাবলেন, হয়ত সত্য বাবু ওনাকে চেনেন, ওনার সম্বন্ধে সত্য বাবুর কাছে যথেষ্ট তথ্য রয়েছে, হয়ত লোক তার মাথা খারাপ হয়ত গল্প টাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে এই ফন্দি তা উনি নিচ্ছেন, ঠিক যেমন অ্যাডভেঞ্চার সিরিয়াল গুলোতে নেওয়া হয়। মনে মনে ভাবলেন লোক টা যা বলার বলুক, আমার কাজ এই ডায়েরি টা থেকে ইতিহাসের কোনও উপকরন খুঁজে বার করা অন্য কিছুই নয়। সত্য বাবু তখনও সুবীর বাবুর হাত দুটো ধরে আছেন। এতক্ষনে সুবীর বাবু বুঝতে পারলেন যে সত্য বাবুর হাত দুটো বরফের মত ঠাণ্ডা।
সুবীর বাবুঃ একি সত্য বাবু আপনার হাত দুটো এরকম বরফের মত ঠাণ্ডা কেন?
সত্য বাবুঃ আর বলবেন না। তিন দিন ধরে লাগাতার জ্বরে ভুগেছি। সকাল থেকে আপনাকে গল্প টা বলব বলে বসে আছি, কিছুই খাওয়া হয়নি। গল্প টা শেষ করে আমি উঠবো এখান থেকে। তারপর একটু খাওয়া দাওয়া করা যাবে। আর আপনি এতো শিক্ষিত মানুষ হয়ে যা রেগে জাচ্ছেন কি বলব বলুন তো। আমার ওপর আদেশ আছে যতক্ষণ না আমি আমার পর্ব টুকু বলা শেষ করছি এখান থেকে উঠতে পারবনা।
সুবীর বাবুঃ (প্রচণ্ড লজ্জার সাথে) আরে ছি ছি। আপনি প্লিজ আগে কিছু খেয়ে নিন। আমি বাকিটা পড়ে নিচ্ছি। প্লিজ আপনি যান কিছু খেয়ে আসুন।
সত্য বাবুঃ কি করব বলুন, আমার পর্ব টা শেষ না করে আমি যে কিছুতেই এখান থেকে উঠতে পারিনা। এবার দয়া করে আমায় বাকি অংশ টুকু বলার সুযোগ দিন।
সুবীর বাবু চুপ করে গেলেন আর সত্য বাবু নিজের গল্প আবার শুরু করলেন।
[/HIDE]
 
[HIDE]পর্ব ১২- অনুরাধা ও দেবেন্দ্রঃ [/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
এদিকে অনুরাধার শীৎকার বাড়তেই থাকে। দাসীরাও সেই একি অনুপাতে অনুরাধার শরীরের উত্তেজনাও বাড়িয়ে তোলে। ততক্ষনে বাকি দুই দাসি ও সজ্জাস্থলে উপস্থিত হয়ে যায়। দুই দাসি অনুরাধার সায়ার নিচ থেকে ধীরে ধীরে নিজেদের কোমল হাত প্রবেশ করিয়ে অনুরাধার যন্ত্রণা লাঘব করতে শুরু করে। অনুরাধা ক্রমাগত বলে চলে “না তোমরা নয়, এটা অন্যায়। কোনও পুরুষ এর স্পর্শ চাই। আমার শরীরে আগুন জ্বলছে” দাসিরা এবার বিরত হয়। এক দাসি ধীরে ধীরে অনুরাধার কানের কাছে গিয়ে বলে “দেবী আপনি ভাগ্যবতী, আপনার জন্য রাজার ঔরস অপেক্ষায় রয়েছে” আপনি শুধু অনুমতি দিন আমরা আপনার সমস্ত যন্ত্রণার ঔষধ নিয়ে আসছি। এই কথা শোনা মাত্র সত্যেন্দ্র তিনকড়িকে ইশারা করে। তিনকড়ি ও বুঝে যায় ওর এই মুহূর্তে একবার গ্রামে যাওয়া দরকার এবং যেকোনো ছলেবলে মৃত্যুঞ্জয় কে নিজের স্থানে ফিরিয়ে আনা দরকার। মৃত্যুঞ্জয় সঙ্গমরত অবস্থায় নিজের স্ত্রী কে দেখে মহারাজের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে এবং তারপর ঠিক কি হবে তা ওর অবগত নয়, সব ই সত্যেন্দ্র জানে। তিনকড়ি মুহূর্তের মধ্যে জমিদার বাড়ী ত্যাগ করে। এদিকে দাসি দরজা খুলে বাইরে যায়। বাইরে অত্যন্ত উৎকণ্ঠা আর উত্তেজনায় কম্পনরত অবস্থায় দেবেন্দ্র কে দেখে দাসি বলে ওঠে
দাসিঃ মহারাজ কোনও চিন্তা করবেন না। জমিদার বাড়ীর ওপর কোনও অজাচার আমরা হতে দিতে পারিনা। আপনি ঘরে প্রবেশ করুন ও নিজ রাজধর্ম পালন করুন।
দেবেন্দ্রঃ কিন্তু দাসি, আমি যে লজ্জা বোধ করছি। এর আগে আমি কভু নারী সঙ্গম করিনি। তোমরা জানো আমি নারী হতে বহুদুরে থাকা এক পুরুষ।
দাসিঃ মহারাজ লজ্জা পেয়ে আমাদের সঙ্কোচে ফেলবেন না। আমরা সবাই ঘরের বাহিরে আপনার জন্য অপেক্ষারত থাকবো।
দেবেন্দ্রঃ কিন্তু দাসি, পরস্ত্রীর সাথে কি করে আমি সঙ্গম করব। এযে রাজধর্মের চরম বিরোধী।
দাসিঃ মহারাজ, অনুরাধা পরস্ত্রী এখনো হয়ে ওঠেনি। আর এই মুহূর্তে ও এক কামাতুর জড় পদার্থ। ওর কাছে আপনি ও যা পৃথিবীর যেকোনো পুরুষ ই তাই। আপনি কোনও সঙ্কোচ বোধ না করে ভেতরে প্রবেশ করুন।
দাসি আবার ভেতরে প্রবেশ করে ও বাকি দাসিদের বাইরে বেড়িয়ে যেতে অনুরোধ করে। সমস্ত দাসিকে বাইরে যেতে দেখে অনুরাধা বিচলিত হয়ে বলে ওঠে
অনুরাধাঃ দাসিরা তোমরা আমায় এরকম যন্ত্রণাদায়ক অবস্থায় ফেলে কোথায় যাচ্ছ। কামনার আগুনে তো আমার সমস্ত শরীর দাহ্য হয়ে যাচ্ছে। আমায় তোমরা মুক্তি দাও।
অনুরাধার দুই চোখ প্রায় বুজে আসার জোগাড়। কোনরকমে উনি বিছানায় শুয়ে একবার এদিক আর একবার ওদিক করতে লাগলেন।
দাসিঃ দেবী কোনও চিন্তা করবেন না। আপনাকে মুক্তি দিতে ও আমাদের জমিদার বাড়ীর পতন রোধ করতে এক সুপুরুষ আপনার কক্ষে প্রবেশ করবেন। তিনি ই আপনাকে মুক্তি দেবেন।
দাসিরা সবাই বেড়িয়ে চলে গেলো। এদিকে সত্যেন্দ্র ও নিজের সেনা বাহিনীকে খবর দিয়ে রেখেছিল। ওরাও জমিদার বাড়ীতে প্রস্তুত ছিল, শুধু সত্যেন্দ্রর একটা আদেশের অপেক্ষায় ছিল। দাসিরা বাইরে বেড়িয়ে দেবেন্দ্রকে ভেতরে যাওয়ার ইশারা করে। দেবেন্দ্র প্রথমে কিছুটা ইতস্তত করলেও দাসী দের কথায় আস্বস্ত হয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। এদিকে সত্যেন্দ্র ও আর লুকিয়ে না থেকে দাসীদের সামনে উপস্থিত হয়।
সত্যেন্দ্রঃ তোমরা এই জমিদার বাড়ীর মঙ্গলের জন্য যা করেছ তা এই বাড়ীর নিজের মেয়েরাও করতনা। আমি তোমাদের আনুগত্যে মুগ্ধ।
দাসিরা মাথা নিচু করে নিজেদের আনুগত্য ও লজ্জা প্রকাশ করে। সত্যেন্দ্রের নির্দেশে দাসীরা ওখান থেকে চলে যায়। এদিকে দেবেন্দ্র ভেতরে প্রবেশ করে একবার দাসিদের তৈরি সজ্জার দিকে তাকায়। সেখানে অপরুপ সুন্দরী অনুরাধা শুধুমাত্র অন্তর্বাসে কামের আগুনে জর্জরিত হয়ে ছটপট করছিল। অনুরাধা কে দেখা মাত্র দেবেন্দ্রর সমস্ত লাজলজ্জা সঙ্কোচ এক মুহূর্তের মধ্যেই কোথায় যেন মিলিয়ে যায়। দেবেন্দ্র এর আগেও এই সুন্দরী অপ্সরাকে দেখেছেন, কিন্তু অন্তর্বাসে কামদহনে জর্জরিত অনুরাধা বোধহয় যেকোনো পুরুষকেই পাগল করে দিতে পারে। অনুরাধা তখন আর সজ্ঞানে নেই, ওনার চোখ বুজে এসেছে, মুখ দিয়ে নির্গত শব্দ গুলো ও বড্ড বেশি অস্পষ্ট। দেবেন্দ্র আর কোনও পিছুটানের কথা ভাবেনা। নিজের শরীরের ঊর্ধ্বাঙ্গের পোশাক পরিত্যাগ করে সামনে এগিয়ে যায়। একদম সজ্জাস্থলে গিয়ে শুধু অর্ধনগ্ন অপ্সরার দেহর দিকে তাকিয়ে থাকে। শরীরটা তখন সাপের মত কিলবিল করে একবার এদিক একবার ওদিক করছে। এরফলে বুকের চাদর তা মাঝেমধ্যেই একটু ওপরে উঠে যাচ্ছে। প্রায় ই অনুরাধার শুভ্র গোলাকার কিছুটা বেলফলের সদৃশ স্তন যুগল কিঞ্চিত ভাবে দেবেন্দ্রর দ্রিশ্যমান হচ্ছে। দেবেন্দ্র স্থির হয়ে ওই স্থানেই দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে অনুরাধার শরীর হথাত ই একবার দাঁড়িয়ে থাকা দেবেন্দ্রর কোমর কে স্পর্শ করে। কামনাময়ী অনুরাধার বুঝতে অসুবিধা হয়না এ দেহ কোনও পুরুষ দেহ। সঙ্গে সঙ্গে তার শরীরে বিদ্যুৎ ধাবিত হয়। অনুরাধা কিছুটা ফণা তোলা সাপের মত করে নিজের শরীর তা বাঁকিয়ে ওপরের দিকে তুলে দেবেন্দ্রর বুক তা জাপটে ধরে। বিশধর সাপের মত জিভ বার করে দেবেন্দ্রর বুকে নিজের জিভ ও আদ্র দুই ওষ্ঠ যুগল দিয়ে কামনার ফুলঝুরি জালিয়ে দেয়। চিরকুমার দেবেন্দ্রর পক্ষেও আর স্থির থাকা সম্ভব ছিলনা। দেবেন্দ্রর শরীরের ঘন নিশ্বাস গুলো যেন বারেবারে এটাই বলতে চাইছিল যে ও নিজেকে এবার অনুরাধার কাছে হারিয়ে ফেলতে চলেছে।
দেবেন্দ্র এক হাত দিয়ে অনুরাধার দুই থাইএর তলায় হাত দিয়ে ও আরেক হাত দিয়ে অনুরাধার পিঠের নিচে রেখে ওকে শুন্যে তুলে ফেলে। অনুরাধা তখন ও পাগলের মত করে দেবেন্দ্রর বুকে আদর করে চলেছে। দেবেন্দ্র নিজের সমস্ত হুঁশ খুইয়ে দিয়ে অনুরাধাকে সজ্জার ওপর ভালো করে শায়িত করে। এরপর নিজে ধীরে ধীরে ওর ওপর শুয়ে পড়ে। একটা মুহূর্তের জন্য একবার কম্পনরত অনুরাধার দুই ওষ্ঠর দিকে তাকায়। তারপর ধীরে ধীরে নিজের দুই ওষ্ঠ নিয়ে গিয়ে অনুরাধাকে সম্পূর্ণ ভাবে চুম্বন রত করে আলিঙ্গন করা শুরু করে। এদিকে এতো সামান্য আলিঙ্গনে অনুরাধার মন ভরার কথা নয়। অনুরাধা নিজের দুই হাত ওপরে নিয়ে গিয়ে নিজের নখ দিয়ে দেবেন্দ্রর পিঠে আঁচড়াতে শুরু করে। দেবেন্দ্র যন্ত্রণায় নিজের চুম্বন বাঁধন থেকে অনুরাধাকে মুক্ত করে। দেবেন্দ্র বুঝতে পারে, এরকম কামুক দেহকে শুধু ভালোবাসা দিয়ে জন্ত্রনামুক্ত করা সম্ভব নয় এতে যন্ত্রণা আরও বাড়বে। দেবেন্দ্র নিজের দুহাত দিয়ে শক্ত করে অনুরাধার দুহাতকে দুপাশে ধরে রাখে। একবার অনুরাধার দিকে তাকায়। দেখে মনে হচ্ছে অনুরাধা পারলে বিশাক্ত কামড় দিয়ে দেবেন্দ্রকে যন্ত্রণা দেবেন। দেবেন্দ্র আর দেরি না করে নিজের সমস্ত পৌরুষ দিয়ে অনুরাধাকে আলীঙ্গন করতে শুরু করেন। অনুরাধার শরীরে ঠিক যতটা অংশ অনাবৃত ছিল অর্থাৎ মুখ গলা কাঁধ পেট বুকের কিছুটা অংশ সেই সব জায়গায় প্রচণ্ড বেগে নিজের ওষ্ঠ আর জিভ দিয়ে চুম্বন করতে শুরু করেন। অনুরাধার শরীরে কম্পন আরও দ্রুত বেগে শুরু হয়। দেবেন্দ্র রীতিমত হিমসিম খেয়ে যেতে শুরু করে এই মহীয়সী কে নিয়ন্ত্রন করতে। এদিকে দেবেন্দ্র ও তো পুরুষ তার ও শরীরে কামনার আগুন বিশাল ভাবে জ্বলে ওঠে। এক টানে দেবেন্দ্র অনুরাধার বুক থেকে লাল চাদর তা মুক্ত করে ও ছুঁড়ে তা নিচে ফেলে দেয়। ঠিক বিশাল আকারের বেলফলের মত অনুরাধার দুই স্তন যুগল। এবং তারচেয়েও আকর্ষণীয় ঠিক এই কারনে যে সামান্য কোনও ঝোঁক বা ভার নেই তাতে। একদম সোজা হয়ে সেই দুই বক্ষ যুগল মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। দেবেন্দ্র অবাক দৃষ্টি তে সেদিকেই তাকিয়ে থাকে। কিন্তু দেবেন্দ্রর স্থিরতা কামনাময়ী অনুরাধাকে পাগল করে তোলে। অনুরাধা নিজের শরীর দিয়ে দেবেন্দ্রকে আঘাত করতে থাকে। দেবেন্দ্র নিজের ভুল বুঝতে পারে। মুহূর্তের মধ্যে অনুরাধার দুই স্তনকে দেবেন্দ্র প্রচণ্ড রাজকীয় পৌরুষের সাথে ডলতে শুরু করে। অনুরাধার মুখ দিয়ে উম উম করে আদরে ভেজানো শব্দ বাহির হয়। দেবেন্দ্র নিজের মুখটা নিচের দিকে এনে একটি স্তনকে সম্পূর্ণ ভাবে নিজের মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে নেয় ও নিজের আদ্র মুখ দিয়ে অনুরাধাকে চরম সুখ দিতে শুরু করে। অন্য হাত টি দিয়ে আরেকটি স্তনকে আদর করতে শুরু করে। শুধুমাত্র স্তনের ব্যাপারে বললে অনুরাধাকে ছোট করা হয়ে যায়। আরও একটি জিনিস রয়েছে যা অনুরাধাকে অন্য যেকোনো রমনীর থেকে অনেক অনেক বেশি সুন্দরী করে তুলেছে। তা হোল অনুরাধার স্তনের বৃন্ত যুগল। স্তনের সামনের দিকে কালো ঘন হয়ে তৈরি হয়েছে এক গোলাকার বলয় আর তার ঠিক কেন্দ্র বিন্দুতে মিনারের মত করে দাঁড়িয়ে রয়েছে দুটো বৃন্ত। অন্য কোনও দিন এই সুযোগ পেলে দেবেন্দ্র শুধু চোখ মেলে এই মনরম দৃশ্য দেখে নিজেকে বিগলিত করতেন। কিন্তু অ্যাজ সেই সুযোগ টুকু ওনার কাছে নেই। তাই নিজের সমস্ত পৌরুষ দিয়ে উনি অনুরাধা কে মুক্ত করার কাজেই ব্যস্ত থাকলেন।
এদিকে ততক্ষনে তিনকড়ি ও মৃত্যুঞ্জয়ের কাছে পৌঁছে গেছে। তিনকড়ির কাছে সমস্ত পরিকল্পনা তৈরি। মৃত্যুঞ্জয় তিনকড়িকে দেখে কিছুটা চমকেই যায় এছারা ওনার তিনকড়িকে খুব একটা পছন্দ ও নয়। উনি জানেন তিনকড়ি সত্যেন্দ্রের খুব ই কাছের মানুষ। তাও উনি তিনকড়িকে দেখে জিগ্যেস করেন
ম্রিত্তুঞ্জয়ঃ একি তিনকড়ি তুমি এখানে? কোনও সংবাদ আছে নাকি?
তিনকড়িঃ ঠাকুর সংবাদ নয়, দুঃসংবাদ। আপনি যদি অনুগ্রহ করে একটি বার এদিকে আসেন আমি তাহলে আপনাকে সব বুঝিয়ে বলতে পারি।
তিনকড়ির মুখে দুঃসংবাদের কথা শুনে মৃত্যুঞ্জয় কিছুটা বিচলিতই হয়ে যান। উনি তিনকড়ির সাথে সমস্ত লোকজনের থেকে একটু দূরে সরে যান।
ম্রিত্তুঞ্জয়ঃ কি হয়েছে তিনকড়ি, আমায় বল তুমি কি বলতে চাও।
তিনকড়িঃ ঠাকুর তাড়াতাড়ি চলুন। দেবীর সামনে সমুহ বিপদ। আমি আর কিছুই বলতে পারবনা। ছোট মুখে বড় কথা হয়ে যাবে।
মৃত্যুঞ্জয় যে অনুরাধাকে ঠিক কতটা ভালবাসেন তা মোটামুটি প্রত্যেকের ই অবগত। উনি প্রচণ্ড বিগলিত হয়ে তিনকড়ির পোশাক তা জোর করে ধরে বলে ওঠেন
ম্রিত্তুঞ্জয়ঃ বল তিনকড়ি, কি হয়েছে অনুরাধার। তুমি কি জাননা যে ও আমার নিজের জীবনের চেয়েও প্রিয়। ওর কোনও বিপদ হলে আমি তোমায় ছাড়বো না।
তিনকড়িঃ (কিছুটা কাঁচুমাচু মুখ করে) আমি কি অপরাধ করলাম ঠাকুর আমি তো সামান্য ভৃত্য। দাসীরা আমাকে পাঠাল আপনার কাছে তাই এলাম।
ম্রিত্তুঞ্জয়ঃ দেখো তিনকড়ি অতিরিক্ত ভনিতা করোনা। আমি ভনিতা একদম পছন্দ করিনা। আমায় সব খুলে বল কি হয়েছে।
তিনকড়িঃ ঠাকুর, ছোট মুখে বড় কথা হয়ে যাবে তাও বলছি। মহারাজ অ্যাজ অনর্থ করে ফেলেছেন। আমি কখনো মহারাজ কে মদ্যপান করতে দেখিনি। অ্যাজ সকাল থেকেই উনি মদ্যপান করে চলেছেন।
ম্রিত্তুঞ্জয়ঃ আরও জোরে তিনকড়িকে জাপটে ধরে। আসল কথা বল তিনকড়ি, কি হয়েছে অনুরাধার। বড়বাবু কি করেছেন?
তিনকড়িঃ ঠাকুর, দেবী স্নান করতে স্নানাগারে ঢুকেছেন এমন সময় মহারাজ জোর করে ভেতরে প্রবেশ করে ও সমস্ত দাসিদের বার করে দেন। উনি ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে দেন। দাসিরাই আমায় বললে যে আপনাকে খবর দিতে।
মৃত্যুঞ্জয় পাগলের মত করে গ্রামের ভেতর দিয়ে ছুটতে শুরু করে।
এদিকে সত্যেন্দ্রের ও সমস্ত পরিকল্পনা তৈরি। সৈন্যকে খবর দেওয়া আছে, শুধু সত্যেন্দ্রের এক আওয়াজেই ওরা চলে আসবে। সত্যেন্দ্র একটু তরবারি ঠিক অনুরাধার দরজার সামনে রেখে নিজে এক গোপন স্থানে গা ঢাকা দেয়।
[/HIDE]
 
[HIDE]পর্ব ১৩- ঠাকুর ডাকাতঃ [/HIDE][HIDE][/hide]​
[HIDE]
এদিকে দেবেন্দ্রর অবস্থা কাহিল হওয়ার জোগাড়। ভালবাসার তীব্রতায় সামান্য কোনও ঘাটতি দেখা দিলেই অনুরাধা নিজের সর্বশক্তি দিয়ে দেবেন্দ্রকে আঘাত করে চলেছে। শৈশবে গুরুকুলে দেবেন্দ্র নারীকে সম্পূর্ণভাবে বশ করার শিক্ষা যথাযথ ভাবেই পেয়েছিলেন। উনি জানেন নারীর দুর্বলতম জায়গা হোল নারীর যোনি। এই জায়গায় নারী সামান্য কোনও স্পর্শ পেলেই উন্মাদনায় কাতর হয়ে যায়, নারীর শরীরের সমস্ত আক্রোশ তখন আবেদন নিবেদনে পরিনত হয়ে যায়। সত্যি ই দেবেন্দ্রের পক্ষে এভাবে আর সম্ভব ছিলনা। দেবেন্দ্রর মনে আকাঙ্খা তৈরি হয়েছিল নিজের জীবনে প্রথম যে নারীর সাথে উনি সঙ্গমরত তার সাথে তাড়াহুড়ো কিছু করবেন না। খুব সাবধানে ফলের খোসা ছারিয়ে সমস্ত রস চুষে নেওয়ার মত করে টাকে আনন্দ দেবেন। কিন্তু দেবেন্দ্রর এই বাসনা অনুরাধার তীব্র কাম জিঘাংসা ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিল। দেবেন্দ্র তখন ও মন প্রান থেকে এটাই চাইছিলেন যে অনুরাধার সুমিষ্ট দুই স্তন কে চুষে ও আঙুল দিয়ে উদ্দিপ্ত করে ওনাকে নিজের ভালোবাসা নিবেদন করবেন। কিন্তু অনুরাধার অজাচিত আক্রমনে তা আর সম্ভব হলনা। দেবেন্দ্র ধীরে ধীরে স্তন যুগল থেকে নিজের হাত সরিয়ে কোমরের কাছে সায়ার কাছে নিয়ে গিয়ে দরির বাঁধন মুক্ত করলেন। অনুরাধাও হয়ত এটাই চেয়েছিলেন তাই নিজেই কোমর তা ওপরে তুলে দেবেন্দ্রকে সহায়তা করলেন। দেবেন্দ্র এক টানে সায়া তা খুলে মাটিতে ফেলে দিলেন।
আশ্চর্য চিত্তে দেবেন্দ্র তাকিয়ে থাকলেন সেই অতি আকর্ষণীয় বিবাহিত মহিলার কুমারি যোনির দিকে। পবিত্রতা যেন অনুরাধার শরীর থেকে ঠিকরে ঠিকরে পড়ছে। যোনির চারপাশে সামান্য কোনও চুল তো দূর একটা রোমের ও কোনও আভাস নেই। পিচ্ছিল রসে যোনিদ্বার চকচক করছে। দেবেন্দ্র অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে এই মহামুল্যবান প্রতিকের দিকে। কিন্তু মুগ্ধ হয়ে নিজের ভালোবাসা ফেরত দেওয়ার সময় টুকুও নেই দেবেন্দ্রর কাছে। অনুরাধা নিজের দুই হাত দিয়ে দেবেন্দ্রর বুকে আচর কাটতে থাকে। ভীত, সন্ত্রস্ত দেবেন্দ্র বুঝতে পারে অ্যাজ নয় অন্য কোনোদিন এই রুপসি কে মন ভরে আদর করা যাবে। দেবেন্দ্র নিজের কোমরের কাছের কাপড় আলগা করে নিজের রাজকীয় যৌনাঙ্গ বাইরে বার করে। অনুরাধা বুকে আচর কাটা বন্ধ করে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে ওই বিশালাকার পুরু লম্বা পুরুষাঙ্গের দিকে। দেবেন্দ্র আর দের করেনা। অনুরাধার দুই পাকে কিছুটা জোর করেই অনেক তা ফাঁক করে দেয়, যাতে সহজে উনি অনুরাধার শরীরে প্রবেশ করতে পারেন। এরপর নিজের যৌনাঙ্গ তা অনুরাধার পবিত্র কুমারি যোনির ওপর রেখে আলতো আলতো করে ওই অঞ্চল টায় ঘষতে থাকেন। অনুরাধা প্রবল উত্তেজনায় উম উম করে চিৎকার করতে থাকেন ও নিজের ঠোঁট ও জিভ দিয়ে পাগলের মত দেবেন্দ্রর শরীরে আদর করতে থাকেন।
দেবেন্দ্র জানেন যেকোনো সময় ই এই আদর অত্যাচারে পরিনত হয়ে যেতে পারে। তাই দেবেন্দ্র আর দেরি না করে একবার কামাসিক্ত অনুরাধার কপালে ভালবাসার চুম্বন দেন ও খুব জোরে ভেতর দিকে একটা চাপ দেন, এতো জোর চাপ দেওয়া সত্ত্বেও ওনার পুরুশাঙ্গ খুব অল্প পরিমান ই ভেতরে প্রবেশ করে। অনুরাধা আহ অম করে প্রচণ্ড জোরে একটা শব্দ করে যন্ত্রণায় নিজের মাথাটা দেবেন্দ্রর বুকে গুঁজে দেয়। দেবেন্দ্র আবার একটা প্রচণ্ড জোরে চাপ দেন এবার দেবেন্দ্র সম্পূর্ণ ভাবে অনুরাধার শরীরে প্রবেশ করেন। এবং যথারীতি এটা বলার কোনও অপেক্ষা রাখেনা যে কুমারি অনুরাধা স্ত্রী অনুরাধাতে রুপান্তরিত হন। এতক্ষন যা ছিল অত্যাচার এখন তাই ভালবাসায় পরিনত হয়। অনুরাধা দেবেন্দ্রর বুকে মাথা দিয়ে খুব ধীরে ধীরে দেবেন্দ্রকে আদর করতে শুরু করেন। নিজের জিভ আর ওষ্ঠ দিয়ে দেবেন্দ্রর বুক কে সিক্ত করতে শুরু করেন। এদিকে মৃত্যুঞ্জয় কে পাগলের মত করে ছুটতে দেখে আশেপাশের গ্রামবাসীও ওনার সাথে ছুটতে শুরু করেন। ঠিক কি কারনে উনি ছুটছেন তা কারুর ই বোধগম্য হয়না। সবাই শুধু এটাই বঝেন ঠাকুর নিশ্চয়ই কোনও বিপদে পড়েছেন। এদিকে অনুরাধা সম্পূর্ণ শান্ত হয়ে যায়, এবং কিছুটা বাধ্য দাসির মত দেবেন্দ্রর বুকে মাথা দিয়ে পড়ে থাকে। দেবেন্দ্র ও নিজ পৌরুষের প্রতি সন্তোষ বোধ করে। উনি এটা উপলব্ধি করেন যে ওনার পৌরুষ ধীরে ধীরে অনুরাধার শরীরের সমস্ত বিষ কে বাইরে নিক্ষেপ করেছে। ওনার মনে এবার স্বাদ হয়, নিজের অনুরাধাকে একদম নিজের মত করে আদর করে করে সঙ্গম ঘটানোর। উনি অনুরাধার দুই হাত ওপরে দিকে তুলে শক্ত করে ধরে থাকেন, নিজের মুখ অনুরাধার একটি স্তনের ওপর রেখে শরীর তা ক্রমাগত ভেতরে ও বাহিরে করতে থাকেন। অনুরাধার মুখ দিয়া আহ ওহ শব্দ নিঃসৃত হয়। কিন্তু এই শব্দ জন্ত্রনার নয় এই শব্দ আমোদের। দেবেন্দ্র সম্পূর্ণ স্তনকে নিজের মুখমণ্ডলে ঢুকিয়ে আসতে আসতে তাকে বাইরে বার করেন ও গোলাকার অঞ্চল যেখানে পর্বত শৃঙ্গের মত দুই বোঁটা উচু হয়ে আছে সেখানে আলতো করে দাঁত দিয়ে একটা চাপ দেন। অনুরাধা প্রত্তুত্তরে আহ বলে ভালোবাসা ফেরত দেন। দুজনেই ভালবাসার গভীর সাগরে সম্পূর্ণ ভাবে তলিয়ে যেতে থাকেন।
এদিকে মৃত্যুঞ্জয় জমিদার বাড়ীর মুল ফটকে এসে উপস্থিত হন। তার পেছনে অন্তত ৫০০ জন সাধারন গ্রামবাসী। সৈন্যদের কাছে তখন ও সত্যেন্দ্রের নির্দেশ যায়নি। কিন্তু এতজন গ্রামবাসী কে একসাথে দেখে সৈন্যরা দৌড়ে আসে ও বাধা দেয়। মৃত্যুঞ্জয় ততক্ষনে জমিদার বাড়ীর ভেতরে প্রবেশ করে যান। গ্রামবাসীরা অত্যন্ত সরল, তারা শুধু এটাই জানেন যে ঠাকুর, সেই ঠাকুর যে তাদের মহামারীর থেকে বাঁচিয়েছিলেন তিনি কোনও বিপদে পড়েছেন। তাদের আনুগত্যে কখনো কোনও প্রশ্ন করা যায়না। সৈন্যরা এতজনকে আটকাতে অক্ষম হয়। সবাই ঠাকুরের পেছন পেছন জমিদার বাড়ীতে প্রবেশ করে। এদিকে দেবেন্দ্র ও অনুরাধা তখন প্রাচীন ভালবাসার আনন্দে মত্ত। দেবেন্দ্রর মুখ অনুরাধার তরমুজসম স্তনের ওপরে, রাজকীয় ভঙ্গীতে উনি অনুরাধার স্তন সেবন করে ও প্রচণ্ড জোরে নিজের শরীর কে ভেতর বাহির করে অনুরাধা কে আনন্দ দিয়ে চলেছেন। আর অনুরাধা কখনো দেবেন্দ্রের ঠোঁটে কখনো ঘাড়ে কখনো বুকে নিজের আদ্র ওষ্ঠ ও জিভ দিয়ে প্রত্তুত্তর দিয়ে চলেছেন।
মৃত্যুঞ্জয় একদম নিজের কক্ষের সামনে এসে উপস্থিত হন। ভেতর থেকে তখন আহ ওহ অমা এইসব শব্দ আসতে শুরু করে। মৃত্যুঞ্জয় দেখেন সামনেই একটা তরবারি পরে আছে, আর কিছুটা দূরে সত্যেন্দ্র দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে খুব বিশ্রি ভাবে হাসছে। এই হাসিটা দেখে মৃত্যুঞ্জয়ের বুকে কাঁপন শুরু হোল ওনার এটা বুঝতে আর বাকি রইলনা যে হয়ত সব শেষ হয়ে গেছে। ভেতর থেকে অনুরাধার চিৎকার আহ আহ আহ আরও তীব্রতর হয়ে উঠল। মৃত্যুঞ্জয়ের মাথায় তখন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছে। নিচ থেকে তরয়ারি কুড়িয়ে নিয়ে প্রচণ্ড জোরে একটা লাথি মারলেন দরজায়। দরজা নিজের থেকেই খুলে গেলো। কিন্তু ভেতরে অনুরাধা ও দেবেন্দ্র এতটাই তীব্রতার সাথে ভালবাসায় মত্ত যে তাদের পক্ষে এটা বোঝাও সম্ভব ছিলনা। মৃত্যুঞ্জয় তার পেছনে ৫০০ গ্রামবাসী সবার চোখের সামনে অনুরাধার স্তনে মুখ ঢুকিয়ে দেবেন্দ্র নিজের উলঙ্গ শরীর ওপর নিচ করে চলেছে। মৃত্যুঞ্জয়ের চোখ আগুনের মত লাল হয়ে যায়। যে সুন্দরী দেহকে উনি এতদিন অভুক্ত রেখে নিজের তপস্যা জারী রেখেছেন সেই শরীর অ্যাজ পরপুরুষের সম্ভোগে ভীষণ ভাবে আদ্র। অনুরাধার আহ আহ চিৎকার মৃত্যুঞ্জয় কে আরও পাগল করে তোলে। মৃত্যুঞ্জয় দৌড়ে ভেতরে ঢুকে সঙ্গমরত নারী পুরুষের শরীরে এলোমেলো ভাবে তরবারি চালাতে শুরু করেন।
সবাই স্তম্ভিত হয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে দেবেন্দ্র ও অনুরাধার মৃত্যু হয়। সত্যেন্দ্রের নির্দেশে সৈন্যরা মৃত্যুঞ্জয় কে বন্দি করে। মৃত্যুঞ্জয় কোনও প্রতিবাদ করেনা।
সুবীর বাবু এই যৌনতা ও রোমাঞ্চ ভরপুর গল্প এক নিঃশ্বাসে শুনছিলেন, হথাত সত্যবাবু থেমে যাওয়ায় সুবীর বাবু একটু বিরক্তি প্রকাশ করেন।
সত্য বাবুঃ বুঝলেন সুবীর বাবু সব আমার ই ভুল আমার ই পরিকল্পনায় খামতি ছিল।
সুবীর বাবু হথাত ই চমকে যান। এতক্ষন উনি সম্পূর্ণ এক ভিন্ন জগতে ছিলেন। হথাত করে সত্য বাবু কথা বলায় উনি চমকে উঠলেন।
সুবীর বাবুঃ আপনার ভুল মানে?
সত্য বাবু প্রচণ্ড জোরে অট্টহাস্য করতে শুরু করেন। ওনার হাসির আওয়াজে গোটা ঘর তা কাঁপতে শুরু করে দেয়। এতক্ষনে সত্যি ই সুবীর বাবুর ভয় লাগতে শুরু করে।
সত্য বাবুঃ মশাই সব ই বলব। আপনার কোনও চিন্তা নেই। পরের গল্প আর আপনাকে শুনতে হবেনা। আমার তাই শুনুন। এই ডায়েরি তো এবার আপনার ই কাছে থাকবে। দেখবেন মালতী, রূপসা বা তিলোত্তমা যেন এই ডায়েরি দেখতে না পায়।
সুবীর বাবু প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়ে কাঁপতে থাকেন।
সত্য বাবুঃ আরে চিন্তা করবেন না। আমি সব বুঝিয়ে বলে দেবো আপনাকে। কোনও চিন্তা নেই। কেন এই ডায়েরি তা পরার জন্য আপনি এখানে এলেন, কেন এটা আপনার কাছে যাবে সব ই আপনাকে আমি জানাব। আপাতত বাকি গল্প তা বলতে শুরু করি।
সত্য বাবু আবার নিজের গল্প শুরু করলেন।
ওই যে বললাম না গ্রামবাসীরা প্রচণ্ড সহজ সরল ও ঠাকুরের প্রতি অতিরিক্ত অনুগত। ঠাকুরের এই আটক হওয়া কিছুতেই গ্রামবাসীরা মেনে নিতে পারেনা। গ্রামবাসী রা ছুটে যায় সত্যেন্দ্রের কাছে। তাদের দাবী “ছোটবাবু ঠাকুর কোনও অন্যায় করেনি। পরস্ত্রীর সাথে সম্ভোগ করা চরম অন্যায়, ওই জায়গায় আমরা কেউ থাকলে ওটাই করতাম যা ঠাকুর করেছেন” সত্যেন্দ্র সামান্য কোনও উৎসাহ দেখায় না ওদের কথায়। এদিকে মৃত্যুঞ্জয় ও নিরুত্তাপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সত্যেন্দ্র আদেশ করে মৃত্যুঞ্জয়কে জোর করে এখান থেকে নিয়ে গিয়ে কারাবন্দি করতে। সৈন্যরা মৃত্যুঞ্জয়ের পোশাক ধরে তাকে নিয়ে যেতে থাকে। ঠাকুরের এই অপমান কিছুতেই গ্রামবাসীদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিলনা। ওরা গিয়ে সত্যেন্দ্রের কাছে কাকুতি মিনতি করে “ছোট বাবু দয়া করে থাকুরকে ছেড়ে দিন তার বদলে আমাদের কাউকে গ্রেফতার করুন” কিন্তু সিংহাসনের লোভে লোভাতুর সত্যেন্দ্র এইসব কথার কোনও ভ্রুক্ষেপ করেনা। হথাত এক কমবয়সী ছেলে চিৎকার করে বলে ওঠে
ছেলেঃ আমরা সব ই জানি ছোটবাবু। মহারাজ জীবনে কখনো কোনও মেয়ের প্রতি দুর্বল হয়নি। এর পেছনে আপনার কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে।
সত্যেন্দ্রের মাথায় রক্ত উঠে যায়। এদিকে এতকিছুর পর ও মৃত্যুঞ্জয় নিরুত্তাপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মৃত্যুঞ্জয় যেন বাকরুদ্ধ। সত্যেন্দ্র তরয়ার নিয়ে ছেলেটির দিকে ছুটে যায়। কিন্তু এতো বড় অবিচার বাকিদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিলনা। প্রত্যেকেই মোটামুটি ওই ছেলেটির সাথেই একমত। এর পেছনে ছোট বাবুর ই ষড়যন্ত্র আছে। বাকি গ্রাম বাসিরা সত্যেন্দ্রর দিকে চড়াও হয় ও তার হাত থেকে তরয়ার ছারিয়ে নেয়। এতক্ষনে সত্যেন্দ্র প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায়। সত্যেন্দ্রের ওপর আক্রমন দেখে সৈন্যরা মৃত্যুঞ্জয়কে ছেড়ে ওদিকেই এগিয়ে আসে। গ্রামবাসী রাও পাগল হয়ে ওঠে। শুরু হয় সইন্য আর গ্রামবাসীদের মল্লযুদ্ধ। কিন্তু মাত্র ২০-২৫ জন সৈন্য ৫০০ জন গ্রামবাসীর সাথে পেরে কি করে ওঠে। অল্প সময়ের মধ্যেই সৈন্যরা পরাস্ত হয়। গ্রামবাসীরা সাথে নিজেদের ঠাকুরকে নিয়ে ওখান থেকে পালিয়ে যায়।
এদিকে সত্যেন্দ্রের মাথা খারাপ হয়ে যায়। প্রতিশোধের আগুনে সত্যেন্দ্র জ্বলতে থাকে। আশেপাশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে কয়েক হাজার সৈন্য মোতায়েন করা হয়। যে গ্রামে মৃত্যুঞ্জয় রুগি দেখতে গেছিলেন, সেখানেই আশ্রয় নেন। গ্রামের গুরুজন রা ওনাকে মানসিক ভাবে আস্বস্ত করে স্বাভাবিক করে তোলে। মৃত্যুঞ্জয়ের ও মনে প্রতিশোধের আগুন জ্বলতে থাকে। এদিকে সত্যেন্দ্র ও বিশাল সৈন্য বাহিনী নিয়ে ওই গ্রাম টি আক্রমন করে। গ্রামের সকলের অনুরোধে মৃত্যুঞ্জয় পেছন দিক দিয়ে পলায়ন করে। সাথে থাকে সেই বিশ্বস্ত ৫০০ জন। তাদের পেছনে সৈন্যরা ধাওয়া করে। অবশেষে এক জঙ্গলে ঢুকে ওরা প্রানে বাচে।
প্রতিশোধের আগুন আর নিরুপায় অবস্থা এই দুই মিলে জন্ম দেয় এক নতুন যোদ্ধার যার নাম হয় ঠাকুর ডাকাত। এবং এখান থেকেই সত্যেন্দ্রের পতন শুরু।
[/HIDE]
 
[HIDE][/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
পর্ব ১৪- ভৌতিক পর্বঃ

সত্যেন্দ্রের হাতে অত্যাচারিত নারীর সংখ্যা টা নেহাত কম ছিলনা। সত্যেন্দ্রের নারী দুর্বলতা ও চরিত্রহীন জীবনযাপনের ব্যাপারে মোটামুটি ভাবে সমস্ত প্রজাই অবগত ছিলেন। এই প্রজাদের মানে বিক্ষুব্ধ প্রজাদের একটা বিশাল অংশ ধীরে ধীরে যুক্ত হয় ঠাকুর ডাকাতের দলে, কেউ বা রাতের অন্ধকারে কেউ বা প্রকাশ্যে। শুরু হয় এক অসম লড়াই। এদিকে লড়াই আরও একটা চলছিল, তা হোল জমিদার বাড়ীর অন্দরে অনুরাধা ও দেবেন্দ্রের আত্মার মুক্তি পাওয়ার লড়াই। অতৃপ্ত আত্মার অভিশাপে জমিদার বাড়ী কলঙ্কিত হয়ে পড়ে। আচ্ছা সুবীর বাবু আপনি তো ইতিহাসের গবেষক। আপনি কি বলতে পারেন বাঙালি ঠিক কবে থেকে ডায়েরি লেখা শুরু করেছেন?
সুবীর বাবু এতক্ষন একমনে জমিদার বাড়ী ও ঠাকুর ডাকাতের গল্প শুনে যাচ্ছিলেন, হথাত একটা প্রশ্ন তার দিকে ধেয়ে আসায় সুবীর বাবু কিছুটা বিব্রত বোধ করেন।
সুবীর বাবুঃ না এই প্রশ্নের উত্তর তা তো আমার ঠিক জানা নেই।
সত্য বাবুঃ আপনি খালি হাতে এখান থেকে যাবেন না সুবীর বাবু। এই জমিদার বাড়ীর সাথে সিপাহী বিদ্রোহের কোনও সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক আছে ডায়েরীর ইতিহাসের।
সুবীর বাবুঃ (কিছুটা অবাক ই হয়ে) কিরকম।
সত্য বাবুঃ ভারতবর্ষে ডায়েরি লেখার কোনও চল ই কোনও কালে ছিলনা। প্রথম ডায়েরি লেখা শুরু করেন অনুরাধা। নিজের একাকিত্ব কাটাতে উনি, প্রতিটা মুহূর্তের অনুভুতি তারিখ ও সময় উল্লেখ করে এই ডায়েরি তেই লিখে রাখতেন। অদ্ভুতভাবে এই ডায়েরি তা শুধু হাত বদলেছে। কিন্তু এর সূচনা করে গেছেন অনুরাধা।
সুবীর বাবু অবাক দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকেন।
সত্য বাবুঃ এই ডায়েরি কেন অভিশপ্ত জানেন? ঠাকুর ডাকাতের তরোয়ালের আঘাতে নিঃসৃত রক্ত সবার আগে এই ডায়েরীর ওপর পড়ে যায়। তারপর থেকে এই ডায়েরীর রঙ লাল।
সুবীর বাবুর মাথাটা কেমন ঝিম ঝিম করতে শুরু করে।
সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু, যেহেতু এতক্ষন আমি আপনার সাথে থেকেছি তাই একটা কথা আপনাকে বলা আমার কর্তব্য।
সুবীর বাবুঃ কি কথা আপনি বলছেন?
সত্য বাবুঃ আপনি আধুনিক মানুষ আমি জানি। আপনার পক্ষে এতো সহজে হয়ত আমার সব কথা বিশ্বাস করা সম্ভব নয়। কিন্তু এটা আপনাকে মানতেই হবে যে এই ডায়েরি তা এবার আপনার সাথে যাচ্ছে।
সুবীর বাবুঃ হ্যাঁ নিশ্চয়ই, আপনার অনুমতি নিয়ে এই ডায়েরি তা আমি নিজের সাথে নিয়ে যেতে চাই। এতে যে লেখা গুলো আছে তার ফরেন্সিক পরীক্ষা করে দেখতে হবে লেখাগুলো ঠিক কোন সময়ের। যদি সত্যি ই এটা বহু পুরনো কোনও লেখা হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ ও ...
সুবীর বাবু নিজের কথা সম্পূর্ণ করার আগেই সমস্ত জমিদার বাড়ী অট্টহাস্যে ফেটে পড়ল। অজস্র মানুষের হাসি ভেসে আসছে। সুবীর বাবু একবার পেছন ঘুরে দেখেন বাইরের বারান্দাটায় প্রচুর মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং প্রত্যেকেই হেসে প্রায় লুটিয়ে পড়ছেন। সুবীর বাবুর গা ছম ছম করতে শুরু করল। তাহলে কি সত্যি ই কোনও অশরীরি আত্মা রয়েছে এখানে।
সত্য বাবুঃ ডায়েরীর কোন লেখা গুলো আপনি পরীক্ষা করবেন যদি একটু আমায় দেখান?
সুবীর বাবু ডায়েরি তা হাতে নিয়ে দেখেন ডায়েরিতে কিছুই লেখা নেই। সম্পূর্ণ ফাঁকা ডায়েরিটা। সুবীর বাবু ভয়ে কাঁপতে থাকেন।
সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু এবার ওই ডায়েরিতে একটা নতুন গল্প লেখা হবে, যার নাম হবে অভিশপ্ত ডায়েরি। এই ডায়েরি তা যে অভিশপ্ত তা তো প্রমান করতে হবে আমাদের। জানেন এই গল্পের মুখ্য চরিত্র কে হবে?
সুবীর বাবুর মাথা ঝিম ঝিম অনেকক্ষণ ই করছিল, এবার বুক তাও ধড়াস ধড়াস করে কাঁপতে শুরু করে।
সত্য বাবুঃ এই গল্পের মুখ্য চরিত্র হবে মানব অর্থাৎ মানব মিত্র। এছাড়াও রয়েছে মালতী দেবী, তিলোত্তমা, রূপসা, রাজু, সাইদুল ও সুবীর বাবু অর্থাৎ আপনি। সুবীর বাবু আপনি কি জানেন গল্প টা লেখা শুরু হয়ে গেছে। আরও একবার দেখবেন নাকি ডায়েরি টা।
সুবীর বাবু ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলতে থাকেন। ওনার কণ্ঠনালী জড়িয়ে এসেছে। মুখ দিয়ে একটাও শব্দ বেরোচ্ছে না। হথাত পেছন থেকে এক কোমল নারীর হাত ওনাকে স্পর্শ করল। এক অতি মায়াবী গলায় এক মোহময়ী নারী বলে উঠলেন “পড়ুন না সুবীর বাবু এতো আপনার ই গল্প। এতো সেই রাতের গল্প। খাটিয়ায় বসে মদ্যপান। মানবের চালাকি। মালতীর উলঙ্গ দেহটা মানবের তৃপ্তি করে ভোগ করা এতো তার ই গল্প। পড়ুন না একবার” সুবীর বাবু একবার ও পেছন ফিরে তাকালেন না। যে নারীর গল্প এতক্ষন উনি শুনে এসেছেন ওনার পেছনে যে সেই দাঁড়িয়ে আছে সে ব্যাপারে ওনার মনে ধীরে ধীরে বিশ্বাস বদ্ধমুল হয়ে চলেছে। সুবীর বাবু একবার ডায়েরি টা নিয়ে উলতে পালটে দেখেন। প্রথম পাতায় খুব মার্জিত এক নাম অভিশপ্ত ডায়েরি। তারপর দুটো পাতা একদম খালি। তারপর আবার একটা মার্জিত নাম প্রথম খণ্ড। তারপর মোট ২০ টি পর্বে প্রথম পর্ব শেষ। সাইদুলের নজর থেকে পর্ব ২০ বিদায় বেলা অবধি পুরোটাই উনি একবার চোখ বুলিয়ে নেন।
সত্য বাবুঃ মোট ৩ টি খণ্ডে গল্প তা লেখা হবে। সবে প্রথম খণ্ড শেষ হয়েছে। এই জমিদার বাড়ীতে আসা, ডায়েরি পড়া আমাদের সাথে দেখা হওয়া ও আবার ফেরত যাওয়া এই নিয়ে হবে দ্বিতীয় পর্ব। আর বাড়ী ফিরে জাওয়ার পর আপনার জীবনে যে পরিবর্তন গুলো হবে তা নিয়ে হবে তৃতীয় পর্ব।
সুবীর বাবু চোখ বন্ধ করে ওখানে বসে থাকেন। মনেমনে একবার নিজেকে বলেন আমি দুই মেয়ের পিতা, আমার অনেক দায়িত্ব রয়েছে, আমায় এখান থেকে বেঁচে ফিরতেই হবে।
সত্য বাবুঃ আরে আপনি জীবিতই থাকবেন সুস্থ স্বাভাবিক ই থাকবেন। দেখো অনুরাধা সুবীর বাবু কি ভাবছেন।
“অনুরাধা” এই শব্দ তা সুবীর বাবুর কানে বিদ্যুতের ঝলকের মত মনে হয়। সুবীর বাবু চোখ বন্ধ করে বসে থাকেন।
সত্য বাবুঃ অনুরাধা তুমি চলে যাও, সুবীর বাবু তোমাকে ভয় পাচ্ছেন।
একটা প্রচণ্ড জোরে অট্টহাস্য নুপুরের ঝুম ঝুম শব্দ। ধীরে ধীরে আওয়াজ তা মিলিয়ে যায়।
সত্য বাবুঃ চোখ খুলুন সুবীর বাবু। এখনো তো পুরো গল্প তা বলাই হয়নি। অনুগ্রহ করে চোখ খুলুন।
সুবীর বাবু ধীরে ধীরে আবার নিজের দুচোখ খোলেন।
সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু, সত্য বলে আমাকে শুধু আমার মাই ডাকতেন। মায়ের মৃত্যুর পর কেউ আমায় আর সত্য বলে ডাকে নি। তারপর থেকে আমায় সবাই ছোট বাবু বলেই ডাকতে শুরু করেন। আপনি নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন আমার হাত তা কেন আপনার বরফের মত ঠাণ্ডা লেগেছিল।
সুবীর বাবু টেবিলের দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে থাকেন। ওনার শরীর ম্যালেরিয়ার রোগীর মত থর থর করে কাঁপতে শুরু করে।
সত্য বাবুঃ আমি জানি আপনি প্রচুর ভয় পেয়েছেন। আমি আর বেশি সময় আপনার নেবনা। সত্যেন্দ্রের গল্প তা সম্পূর্ণ করি আর তারপর ডায়েরি নিয়ে আপনাকে কিছু কথা বলব যা আপনার ব্যক্তিগত জীবনের সাথে জড়িত। ব্যাস আমার কাজ শেষ। আপনি অনুগ্রহ করে শান্ত হন। আমিও আমার কাজ শুরু করি। এভাবে বেশিক্ষন শরীর ধারন করে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
সুবীর বাবু নিজেকে বারবার বলেন, কিছুই হবেনা, সব ঠিক হয়ে যাবে। সত্য বাবু আবার নিজের গল্প শুরু করেন।
সত্য বাবুঃ অনুরাধা ও দেবেন্দ্রর মৃত্যুর পর সত্যেন্দ্রের জীবনের মোট দুটি ই কাজ অবশিষ্ট রইল। এক ঠাকুর ডাকাত ও তাদের সাঙ্গোপাঙ্গ কে খুঁজে বার করা ও খতম করা। দুই নিত্য নতুন কুমারী মেয়েদের সর্বনাশ করা। সত্যেন্দ্রের এই রাজকীয় শখ তখন ও পুরদমে বজায় ছিল। যে কুমারি মেয়ের সতীত্ব সত্যেন্দ্রের হাতে নষ্ট হয় তার সমস্ত পরিবারের ই সমর্থন ঠাকুর ডাকাতের দিকে চলে যায়। এইভাবে সত্যেন্দ্রের কুকর্মের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে, ঠাকুর ডাকাতের ক্ষমতাবৃদ্ধি। এমন ই একদিন সত্যেন্দ্রের নজর পড়ে গ্রামের ই এক অপরুপ সুন্দরী কন্যা উর্বশীর দিকে। এদিকে দেবেন্দ্রর পারদর্শিতার ছিটেফোঁটাও সত্যেন্দ্রের মধ্যে ছিলনা। রাজকার্য পরিচালনার জন্য কর্মচারীদের কাছে প্রচণ্ড প্রিয় হয়ে উঠতে হয়। যা কখনই সত্যেন্দ্র হতে পারেনি বা হওয়ার চেষ্টাও করেনি। এরফলে জমিদার বাড়ীর ই অন্দরে জ্বলে ওঠে সুপ্ত বিদ্রোহের আগুন। ঠাকুর ডাকাত এই বিদ্রোহের ব্যাপারে ভীষণ ভাবেই অবগত ছিলেন। কয়েকদিনের মধ্যেই উনি জমিদার বাড়ীর ই কিছু কর্মচারীকে নিজের অনুগত করে তোলেন। এবং অনাদের ই কারুর থেকে খবর পান যে বলরামগড় গ্রামের সুন্দরী মেয়ে উর্বশীর দিকে সত্যেন্দ্রের নজর পড়েছে। প্রতিশোধের আগুনে জর্জরিত মৃত্যুঞ্জয় সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চান নি।
উর্বশীর বাড়ীর চারপাশে প্রায় সমস্ত গ্রামবাসীর সাথেই মৃত্যুঞ্জয় নিজে গিয়ে কথা বলেন। গ্রামের ই মেয়ের সম্মান রক্ষার্থে প্রায় সবাই একযোগে ঠাকুর ডাকাত কে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। ঠাকুর ডাকাত ও তার অসংখ্য সাথীরা বলরামগড় এই বিভিন্ন গ্রামে ছদ্মবেশে ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকে। শুরু হয় কঠিন প্রতীক্ষা।
এই অপেক্ষার অবসান ঘটে ঠিক তার দুদিন বাদে। সত্যেন্দ্র হয়ত ভাবতেও পারেননি যে এই গ্রামেই লুকিয়ে রয়েছে তার চরম প্রতিদ্বন্দ্বী ঠাকুর ডাকাত ওরফে মৃত্যুঞ্জয়। মাত্র ১০ জন সৈন্য নিয়ে উনি আসেন সুন্দরী উর্বশীর শরীরের দখল নিতে। উর্বশীর বাড়ীর সামনে শুরু হয় সত্যেন্দ্রের হুঙ্কার। কিন্তু এই হুঙ্কার ই কয়েক মুহূর্তের মধ্যে আকুতি মিনতি তে পরিনত হয়। ঠাকুর ডাকাত তার বিশাল দলবল নিয়ে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলেন সত্যেন্দ্র কে। ঠিক হয় এই চরম অত্যাচারী রাজাকে প্রানে ঠাকুর ডাকাত মারবেন না। মারবেন তার ই অত্যাচারিত প্রজারা। এরপর ঘোড়া থেকে ফেলে দিয়ে সাধারন গ্রামবাসীরা সত্যেন্দ্র কে প্রহার করতে শুরু করেন। প্রায় আধ ঘণ্টা পর সত্যেন্দ্রের দেহ থেকে শেষ নিশ্বাস টুকুও শেষ হয়। এভাবে সমাপ্তি ঘটে এক অত্যাচারের বেইমানির ইতিহাসের।
গ্রামবাসী রা অনুরধ করেন মৃত্যুঞ্জয় কে রাজার মর্যাদা গ্রহন করতে। কিন্তু মৃত্যুঞ্জয় সেই অনুরধ ফিরিয়ে দিয়ে ঠাকুর ডাকাত হিসেবেই থেকে যান। মৃত্যুঞ্জয়ের ইচ্ছায় ও গ্রামবাসী দের ইচ্ছায় দেবেন্দ্রর খুড়তুতো ভ্রাতা রাজেন্দ্র কে সিংহাসনে বসানো হয়।
কিন্তু এখানেই সব শেষ নয়। রাজেন্দ্রর শরীরেও জ্বলতে থাকে প্রতিশোধের আগুন। এবং তার ই ফল স্বরুপ একদিন রাজেন্দ্রর ই ছকে মৃত্যুঞ্জয় পরাস্ত হন ও মৃত্যু বরন করেন। এদিকে ঠাকুর ডাকাতের অনুগামী রা এটা মেনে নিতে পারেন না। তারাও প্রতিশোধ নেন। এভাবে জমিদার বাড়ী ও ঠাকুর ডাকাতের শত্রুতা বিদ্যমান থাকে, যদিও তা কোনওদিন ই ইতিহাসে জায়গা পায়নি।
[/HIDE]
 
পর্ব ১৫- বাসা বদলঃ
[HIDE]সত্য বাবুঃ কেমন লাগলো সুবীর বাবু। [/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
সুবীর বাবুর মুখ দিয়ে একটি শব্দ ও বেড়িয়ে আসছেনা। বহুক্ষন আগেই ওনার কণ্ঠনালী বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। কি করে এই ভৌতিক স্থান হতে পরিত্রান পাবেন তাই ভেবে চলেছেন। সত্য বাবুর গল্পের শেষ অংশ টুকু কতটা সুবীর বাবুর মাথায় ঢুকল সে নিয়ে একটা বিতর্ক থেকেই যেতে পারে।
সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু আপনি আশেপাশে যাদের দেখছেন তারা প্রত্যেকেই মৃতদেহ। আমিও একটি মৃতদেহ। কিন্তু আমরা কারুর অনিষ্ট করিনা। আত্মা ঠিক তখন ই কারুর অনিষ্ট করে যখন তার মধ্যে প্রতিশোধের জিঘাংসা বেঁচে থাকে। আমাদের প্রত্যেকের ই মধ্যে সেই জিঘাংসা শেষ হয়ে গেছে। আপনি একবার চারপাশ তা দেখুন। হয়ত আপনার ভয় লাগবে কিন্তু দেখবেন কেউ ই ক্ষতিকর নয়।
সুবীর বাবু মাথা তুলে সোজা সত্য বাবুর দিকে তাকান। এতক্ষন সত্য বাবু ছিলেন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মত। হথাত ই ওনার শরীর তা হাজার হাজার ক্ষতে ভর্তি হয়ে সুবীর বাবুর সামনে আসে। সুবীর বাবু প্রচণ্ড জোরে ওমা বলে চিৎকার করে ওঠেন।
সত্য বাবুঃ অনুগ্রহ করে আপনি ভয় পাবেন না সুবীর বাবু। আমরা সত্যি ই আপনার কোনও ক্ষতি করবনা। আপনি একটি বার দেখে নিন এখানে অনুরাধা, মৃত্যুঞ্জয় দেবেন্দ্র সবাই রয়েছে। আর আমি সত্যেন্দ্র। মৃত্যুঞ্জয়ের আদেশে গ্রামবাসীরা গনপ্রহার দিয়ে আমার এই অবস্থা করেছে।
সুবীর বাবু একবার চারপাশ তা তাকিয়ে দেখেন। সত্যি ই বীভৎস এক অবস্থা। অনুরাধার গলার কাছে এক গভীর ক্ষত সেখান থেকে রক্তের দাগ গোটা শরীরে বিদ্যমান। সুবীর বাবু ভয়ে আবার মুখ তা নিচে নামিয়ে নেন। এবার সুবীর বাবু বলে ওঠেন
সুবীর বাবুঃ আমি অতি সামান্য এক মানুষ। আপনাদের সাথে আমার কোনও যোগ নেই। আমি কস্মিনকালেও আপনাদের কারুর কোনও ক্ষতি করিনি। আমাকে আপনারা ছেড়ে দিন। আমার স্ত্রী কন্যা আছে, সংসার আছে।
সত্য বাবুঃ আপনি অযথাই চিন্তা করছেন সুবীর বাবু। আমরা কেউ আপনার কোনও ক্ষতি করবনা। আর আপনার কোনও ক্ষতি হবেওনা, আমরা তা হতে দেবো ও না।
এবার সুবীর বাবু কিছুটা সস্তি পান। ভেজা গলায় বলে ওঠেন “তাহলে আমায় যেতে দিন আপনারা”
সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু এই জমিদার বাড়ীতে আপনার কাজ মোটামুটি ভাবে শেষ। শুধু আপনাকে কিছু কথা বলে রাখতে চাই। আমরা কেউ অভিশপ্ত আত্মা নই। আমাদের অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য আমাদের আত্মা মুক্তি পায়নি। কিন্তু আমাদের কোনও সুপ্ত বাসনা নেই তাই আমরা কারুর কোনও ক্ষতিও করিনা। কিন্তু এই ডায়েরীর একটা সুপ্ত বাসনা রয়েছে। এই ডায়েরি অভিশপ্ত। কেউ যেন এই ডায়েরি তে রোজ নতুন নতুন গল্প লেখে। সেই গল্প আবার অন্য কেউ পড়ে, আবার নতুন এক গল্প লেখা হয়। এভাবেই ডায়েরি তা হাত বদলে বদলে এই জমিদারবাড়ি তেই ফিরে আসে। যারাই এই ডায়েরি তা না নিয়ে এখান থেকে পালানোর চেষ্টা করেছে তারা প্রত্যেকেই এই জমিদারবাড়ি তে অপঘাতে মারা গেছে। আপনিও এই ভুল তা করবেন না। এই ডায়েরি তা নিজের ঘরে নিয়ে যান, এতে আপনার গল্প লেখা শুরু হবে। শুরু যদিও হয়ে গেছে। আমি আপনাকে সংক্ষেপে যতটুকু লেখা হয়েছে সে ব্যাপারে বলে দিচ্ছি। এবার গল্পের নাম ই অভিশপ্ত ডায়েরি। এই গল্প তা মোট ৩ তে খণ্ডে লেখা হবে। যার প্রথম খণ্ড টি সমাপ্ত হয়ে গেছে। এই জমিদারবাড়ি তে যা যা ঘটলো সেটা নিয়ে হবে দ্বিতীয় খণ্ড। কিছুদিনের মধ্যে এই দ্বিতীয় খণ্ড ও সমাপ্ত হয়ে যাবে। বাড়ী ফিরে যাওয়ার পর আপনার জীবনে কিছু পরিবর্তন হবে কিছু ঘটনা ঘটবে এগুলো নিয়ে লেখা হবে তৃতীয় খণ্ড। যেহেতু প্রথম খণ্ড তা লেখা হয়ে গেছে তাই আমি এর ব্যাপারে আপনাকে সংক্ষেপে বলে রাখি।
প্রথম খণ্ড মোট ২০ টি পর্বে লেখা হয়েছে। যার প্রথম পর্ব সাইদুলের নজর। সাইদুল এর আপনার স্ত্রী মালতীর ওপর এক কামাতুর দৃষ্টি রয়েছে তা নিয়েই এই পর্ব। এর পরের পর্ব গুলি হোল সুব্রতর আগমন ও সুব্রতর স্বর্গলাভ। আপনার ই সহকর্মী সুব্রত আপনাদের বাড়ীতে তিলোত্তমা কে পড়াতে আসেন এবং কালক্রমে উনি মালতী দেবীর অর্ধনগ্ন শরীর দেখতে পান। এর পর রাজুর প্রাপ্তি, রাজু ও সাইদুল। পাড়ার ছেলে রাজুর আপনার স্ত্রীর ওপর কুনজর রয়েছে এবং রাজু ও সাইদুল দুজনেই নিয়মিত স্নানরত অবস্থায় আপনার স্ত্রীর শরীর কে উপভোগ করে। এরপর রাজু ও তিলোত্তমা। রাজুর সাথে তিলত্তমার এক আত্মিক ঘনিষ্ঠতা হয়। তারপর শুধুই মানব বাবু আপনি ও মালতী দেবী। এই ঘটনা টি পুরোটাই আপনি জানেন। শুধু একটি জিনিস ই আপনি জানেন না। তা হোল সেদিন রাতে মানব মালতীর দেহকে ভোগ করার সুযোগ পেয়েছিল। দুজনের ঠোঁট একে অপরকে স্পর্শ ও করেছিল। মালতী দেবীর স্তনের ও স্পর্শ ও আস্বাদন মানবের কপালে জোটে। কিন্তু মালতী দেবী বুঝে যান, যে উনি আপনি নয় মানব বাবু। তাই ওনাদের ও মিলন অসম্পূর্ণ থেকে যায়, ঠিক দেবেন্দ্র ও অনুরাধার ই মত। তারপর তো আপনি সব ই জানেন। আপনার বাসাবদল ও এই জমিদারবাড়ি তে আগমন।
আমাদের দায়িত্ব মোটামুটি শেষ সুবীর বাবু। আমাকে আপনি বিশ্বাস করতে পারেন সুবীর বাবু। আমি আজ প্রায় ৪০০ বছর ধরে এই ডায়েরি কে হাত বদল হতে দেখেছি। সাধারনত কিছু ভুল মানুষ করে থাকে তাই ডায়েরি তার নাম হয়ে গেছে অভিশপ্ত ডায়েরি। দুটি কথা মনে রাখবেন, প্রথমত ডায়েরি কখনো খুলে দেখবেন না। এই ডায়েরীর লেখক কে তা আমার জানা নেই, তবে পাঠক আপনি ই হবেন। তৃতীয় পর্ব লেখা শেষ হলে আপনাকে জানানো হবে তখন আপনি ডায়েরি পড়বেন তার আগে নয়। আর দ্বিতিয়ত এই ডায়েরীর কোনও চরিত্র যেমন মালতী দেবী বা অন্য কাউকে বা কোনও ঘটনাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবেন না। তাহলে আপনার সংসারে চরম অভিশাপ নেমে আসবে।
এবার আপনি মুক্ত সুবীর বাবু।
সুবীর বাবু কোনরকমে উঠে দাঁড়ান। ওনার ঠিক পেছনেই বীভৎস রকম দেখতে কিছু শরীর দাঁড়িয়ে ছিল। পেছন থেকে সত্য বাবু আবার বলে ওঠেন
সত্য বাবুঃ তৃতীয় পর্বে অনেক বেশি রোমাঞ্চ থাকবে সুবীর বাবু। ডায়েরি পরার পর আপনি নিজের ওপর ই বিশ্বাস রাখতে পারবেন না।
কোনরকমে ডায়েরি তাকে বগলে চেপে সুবীর বাবু ঘরের বাইরে বেড়িয়ে পড়েন। বারান্দায় তখন বহু দাসি ঘর পরিস্কারে ব্যস্ত। সুবীর বাবু ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামেন। যে বাড়ী তা কয়েক ঘণ্টা আগে একটা পোড়ো বাড়ী মনে হচ্ছিল সেটাই এখন সাঁঝবাতি আর আসবাবে চকমক করছে। সুবীর বাবু নিচে নেমে দৌড় শুরু করেন, পেছন থেকে ছুটে আসতে থাকে অট্টহাস্যের আওয়াজ। কতদুর অবধি ওই অট্টহাস্য ছুটে এসেছিল তা ওনার খেয়াল নেই। সুবীর বাবু সামনেই দেখেন সেই চায়ের দোকান টা। ওর সামনে বিশাল ভিড় জমে আছে। কোনরকমে ভিড় ঠেলে সুবীর বাবু সামনে এগিয়ে আসেন। একটা মৃতদেহ আর সেই মৃতদেহ কে ঘিরে বেশ কিছু মানুষ। সুবীর বাবু একজন কে জিগ্যেস করেন
সুবীর বাবুঃ কি হয়েছে? কে মারা গেছে?
ভদ্রলোকঃ আর বলবেন না মশাই। এই লোকটার একটা চা দোকান ছিল এখানে। কাল রাতে ওই পোড়ো বাড়ীতে কি করতে গেছিল কি জানি, আজ ওর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে, কারখানার মাঠ থেকে।
সুবীর বাবু সামনে এগিয়ে গিয়ে মৃতদেহর দিকে তাকাতেই ওনার মাথা ঘুরাতে শুরু করে, উনি মাথা ঘুরিয়ে ওখানেই পড়ে যান। কিছুক্ষন পর জল টল দেওয়ার পর ওনার হুঁশ ফেরে। সবাই ওনাকে ঘিরে ধরে জিগ্যেস করে “কি হয়েছে মশাই, এতো ভয় কেন পেয়ে গেলেন?” সুবীর বাবু বিড়বিড় করে বলে ওঠেন “আজ সকালে ঠিক সাড়ে ৭ তার সময় আমি এর থেকে চা খেয়েছিলাম” সবাই প্রচণ্ড জোরে হাঁসতে শুরু করেন। সুবীর বাবু আর কোনও দিকে না তাকিয়ে সোজা বাসের উদ্দেশ্যে হাঁটা দেন। বাস ধরে সোজা বালিগঞ্জ ও সেখান থেকে নিজের ফ্ল্যাট।
কলিং বেল টা দু তিন বার একনাগাড়ে বাজিয়ে দিলেন সুবীর বাবু। সঙ্গে সঙ্গে রূপসা এসে দরজা টা খুলে দিল।
রূপসাঃ ওহ বাবা তুমি এসে গেছো খুব ভালো হয়েছে। দেখনা মা কিরকম পাগলামি করছে।
সুবীর বাবু কিছুটা জোর করে ধাক্কা দিয়েই রূপসাকে সরিয়ে দেন। রূপসা সুবীর বাবুর এই আচরনে প্রচণ্ড অবাক হয়ে যান। সোজা নিজের ঘরের দিকে যেতে যেতে উনি বলে ওঠেন
সুবীর বাবুঃ আমার জন্য এক গ্লাস জল নিয়ে আয়। আমার শরীর ভালো নেই।
রূপসা রান্নাঘরে যায় জল আনতে। এদিকে সুবীর বাবু নিজের রুম টায় ঢুকে সবার আগে বইয়ের শেডে সবার নিচে ডায়েরি টা রেখে দেন। এদিকে সুবীর বাবুর শরীর খারাপ শুনে ওই ঘর থেকে তিলোত্তমা ও ছুটে আসে।
তিলত্তমাঃ কি হয়েছে বাবা। শরীর খারাপ লাগছে?
সুবীর বাবুঃ (রুপ্সার হাত থেকে জলের গ্লাস টা নিয়ে) আমায় আধ ঘণ্টা একা থাকতে দে।
রূপসা ও তিলোত্তমা নিজেদের রুমে চলে যায়। সুবীর বাবু চোখ বন্ধ করে সমস্ত কথা চিন্তা করতে শুরু করেন। উনি জানেন যা ঘটেছে সব ই সত্যি। সত্য বাবুর শেষ দুটো উপদেশ স্মরন করেন। মনে মনে বলেন এই পরিবারের আমি কর্তা। পরিবারের কল্যান সাধনে আমায় অনেক কঠিন সময়ের মোকাবিলা করতে হবে। নিজের মন কে শক্ত করেন। এতক্ষনে ওনার মনে হয় মালতী দেবী একবার ও ওনাকে দেখতে এখানে আসেন নি। কোথায় মালতী? আর রূপসা কিসব বলছিল, মালতী পাগলামি করছে এর মানে কি? সুবীর বাবু উঠে বসেন। মালতী দেবী, রূপসা ও তিলোত্তমা ভেতরের ঘরে ছিল। সুবীর বাবু সেদিকেই এগিয়ে যান। মালতী দেবীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন
সুবীর বাবুঃ (কিছুটা গম্ভীর হয়ে) মালতী কি হয়েছে তোমার? রূপসা কি বলছে আমায়?
সুবীর বাবু যে বাড়ীতে এসেছেন তা হয়ত মালতী দেবী জানতেন না। মালতী দেবীর চোখের তলায় কালি পড়ে গেছে। চোখ মুখ ফুলে গেছে। মালতী দেবী দৌড়ে এসে সুবীর বাবুর দুপা জড়িয়ে ধরে
মালতী দেবীঃ ওগো তুমি আমায় বাঁচাও। ওরা কেউ আমার কথা বিশ্বাস করছে না। এ ঘরে ভুত আছে। আমি একা থাকলেই কে যেন আমায় জড়িয়ে ধরে। আমি এখানে থাকতে পারছি না। সারাক্ষন বাড়িতে একা থাকি। আমি সেলিমতলার ওই পুরনো বাড়ী তেই ফিরে যাবো। দরকার হলে আমি নিজেই মানব দার সাথে কথা বলব। আমি এখানে থাকতে পারবনা।
সুবীর বাবুর কপালে চিন্তার গভীর ভাঁজ পড়ে যায়। মনে মনে নিজেকে শান্ত করেন। মনে পড়ে যায় সত্য বাবুর সেই শেষ উপদেশের কথা। “এই গল্পের কোনও চরিত্র বা ঘটনা কে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবেন না। তাহলে আপনার সংসারে চরম অভিশাপ নেবে আসবে” সুবীর বাবু বোঝেন ডায়েরীর দ্বিতীয় খণ্ড শেষ এবং তৃতীয় খণ্ড লেখার কাজ শুরু হচ্ছে। কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পর সুবীর বাবু মালতী দেবীর মাথায় হাত রেখে বলেন
সুবীর বাবুঃ মালতি কোনও চিন্তা করোনা। আমরা পুরনো বাড়ী তেই ফিরে যাবো।
সুবীর বাবুর এই কথা শুনে রূপসা ও তিলোত্তমা দুজনেই চমকে ওঠে।
[/HIDE]
(দ্বিতীয় খণ্ড শেষ)
 
তৃতীয় খণ্ডঃ
পর্ব ১- অশরীরীঃ
[HIDE][/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
সুবীর বাবুঃ (কিছুটা গম্ভীর ভাবে) কিরে মানব কেমন আছিস?
মানব বাবুঃ (ফোনের ওপর প্রান্ত হতে) আমি ভালো আছি, তোরা ভালো আছিস তো?
সুবীর বাবুঃ মানব আমাদের এই ফ্ল্যাট টায় খুব অসুবিধা হচ্ছে। রূপসা আর তিলোত্তমা খুব মন খারাপ করছে। ওরা আর ১০-১৫ দিনের ই মধ্যে চলে যাবে। ততদিন যদি তুই...
মানব বাবুঃ ওটা তোর ই বাড়ী সুবীর। আমি চিরকাল ওটাকে তোদের ই বাড়ী ভেবে এসেছি। আমি চাবি নিইনি, ঘরটা খুলে দেখিও নি একবার ও। তোরা আজ ই চলে আয়। আর চিন্তা করিস না, আমি এখন অনেক অনেক দূরে। আমার সাথে হয়ত তোদের কারুর ই আর দেখা হবেনা।
সুবীর বাবুঃ তুই বিশাল উপকার...
ওপাশ থেকে পিপ পিপ করে শব্দ ভেসে আসলো। অর্থাৎ মানব ফোন তা কেটে দিল। সুবীর বাবু চরম হতাশায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলেন। মালতী দেবী কিছুটা দূর থেকে সব ই দেখছিলেন, উনি এগিয়ে এলেন। সুবীর বাবুর কাঁধে হাত রেখে বললেন
মালতী দেবীঃ সব আমার ই জন্য হোল। জানি তুমি আমার কথা বিশ্বাস করবে না। কিন্তু সত্যি কেউ আছে যে সবসময় আমার পাশে পাশে ঘোরে। কখনো আমার কোমর টা জড়িয়ে ধরে কখনো আমার গালে চুমু খায়।
সুবীর বাবু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলেন মালতী দেবীর দিকে। উনি কি বলবেন মালতী দেবীকে উনি নিজেই তো কিছুক্ষন আগে এরকম ই একটা ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন। হয়ত ডায়েরি টা চায় যে ওনারা সেলিমতলার সেই পুরনো বাড়ীটায় আবার ফিরে যান। মনে মনে ঠিক করলেন মালতী দেবীকে কিছুই বলবেন না। যা হচ্ছে তা হোক, ঠিক ই একদিন এই অভিশপ্ত অবস্থার বাইরে ওনারা বেড়িয়ে আসবেন। সুবীর বাবু আবার একটা ফোন করেন। মালপত্র সব নিয়ে যেতে হবে, অন্তত ৩ টে গাড়ী চাই। সুবীর বাবু সবার দিকে তাকিয়ে রেডি হয়ে যেতে বলেন। আজ ই ওনারা বাড়ী তা চেঞ্জ করবেন। সময়মত গাড়ী চলে আসে, ওনারা খাওয়া দাওয়া সেরে সমস্ত মালপত্র নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন। সেলিমতলার বাড়ীতে পৌছাতে প্রায় বিকেল ৫ টা বেজে যায়। মনিশ বাবুর থেকে বাড়ীর চাবিটা আনতে যান। মনিশ বাবু বলেন
মনিশ বাবুঃ আরে সুবীর বাবু যে। আচ্ছা মানব বাবুর কোনও খবর জানেন? বহুদিন হয়ে গেলো দেখা সাক্ষাত নেই। ফোন করলেও সুইচ অফ বলে।
সুবীর বাবুঃ হ্যাঁ মনিশ বাবু আমাদের নতুন ফ্লাট টা ভালো লাগছিল না। ওটা ভাড়া দেবো ঠিক করলাম। এখানে অনেক ভালো ভাবে থাকা যায়। না আমার তো মানবের সাথে এই কিছুক্ষন আগেই কথা হোল। ও বলল যে অনেক দূরে আছে।
সুবীর বাবু চাবি টা নিয়ে আবার বাড়ীর দিকে আসতে শুরু করেন। রাস্তায় সাইদুলের সাথে মুখোমুখি। প্রচণ্ড ঘেন্না লাগে ছেলেটার প্রতি। গরিবের ছেলে ভেবে ওকে কতই না মায়া দয়া করেছে আর ওই কিনা ওনার স্ত্রী এর দিকে নোংরা চোখে তাকিয়েছে।
সাইদুলঃ আরে দাদা, কবে এলেন। কাল থেকে দুধ দিচ্ছি তাহলে।
সুবীর বাবু শুধু “হ্যাঁ” এই শব্দ টা করে চলে গেলেন। সাইদুল অতকিছু বুঝলনা। ও শুধু এটাই জানল যে সুবীর বাবুরা ফিরে এসেছেন সুতরাং এই মুহূর্তেই রাজুকে খবর টা দেওয়া উচিত। ১-২ মিনিটের মধ্যেই রাজুর কাছে সমস্ত খবর চলে গেলো। রাজু আর সাইদুল আবার সেই দেওয়ালের পেছনের ফাঁক টা দিয়ে ভেতরে উঁকি মেরে দেখতে শুরু করল। হ্যাঁ মালতী, রূপসা ও তিলোত্তমা তিন জনেই এসেছে। রাজুরা ওখান থেকে উঠে যায়, ওদের এই মুহূর্তেই নতুন কোনও প্লান বানাতে হবে। এবার আর ব্যর্থ হলে চলবে না।
এক দু ঘণ্টার মধ্যেই বাড়ীতে সব মালপত্র ঢোকানো হয়ে যায়। লেবার রাও টাকা নিয়ে চলে যায়। রূপসা ও তিলোত্তমা যে যার নিজের নিজের রুমে চলে যায়। সুবীর বাবু পরিশ্রান্ত হয়ে উঠোনে দাঁড়িয়ে থাকেন। মাত্র ১২ টা ঘণ্টার মধ্যে ওনার জীবনের প্রতিটি সাজানো গোছানো জিনিস কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যায়। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখেন কালো মেঘ করেছে আকাশে। এক্ষুনি হয়ত ঝড় আসবে। কিন্তু যে ঝড় ওনার জীবনে ও সংসারে আসতে চলেছে তা উনি কি করে মোকাবিলা করবেন। সংসারের অনেক ঘটনাই ওনার অজানা ছিল কিন্তু আজ সত্য বাবুর মুখ থেকে সেই প্রতিটি ঘটনাই উনি জানতে পারেন। যে সুব্রত কে উনি নিজের ছোট ভাইএর মত স্নেহ করতেন সেও কিনা মালতীর শরীরের দিকে কুনজর দিয়েছে। সাইদুল রাজু এদের ও বা সুবীর বাবু কিকরে ভুলে যাবেন। আর মানব, যে কিনা এই পরিবারের ই একটা অঙ্গ ছিল সেই মালতী কে একবার ছোঁয়ার জন্য এতো বড় একটা চক্রান্ত করেছিল। সুবীর বাবুর আসতে আসতে সেই রাতের প্রতিটা কথা মনে পড়ে যায়। মালতী দেবীর উলঙ্গ শরীর তা সুবীর বাবুর সামনেই লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা থেকে সুবীর বাবুর সাথে নিজের পোশাক পরিবর্তন করা। কিন্তু মালতী... একবার মনে মনে বলে ওঠেন মালতী কেন সমস্ত ব্যাপারটা আমার থেকে লুকিয়ে গেলো। সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ে মালতী দেবীর ই ওপর। এই রাগ সঙ্গত ছিল। কত কষ্ট করে সুবীর বাবু ও মালতী দেবী এই সংসার তা গড়ে তুলেছেন, দুজনের কেউ ই নিজেকে কখনো অসহায় মনে করেনি। কিন্তু আজ সুবীর বাবু প্রচণ্ড অসহায়। কেন মালতী এতটা দূরে সরে গেলো? এই একটাই প্রশ্ন ওনার মনে বারবার করে আসতে লাগলো। পেছন থেকে এসে হথাত মালতী দেবী ওনাকে জাপটে ধরলেন। এই স্পর্শ তা আজ আর সুবীর বাবুর মনে কোনও তৃপ্তি ই দিচ্ছেনা। উনি একবার ও ঘুরে দেখলেন না।
মালতী দেবীঃ কি গো আমার ওপর রাগ করেছ না? আমি জানি আমার ওপর রাগ করেছ। আমি একটাও মিথ্যে কথা বলিনি, আমায় বিশ্বাস কর। সত্যি ওই ফ্ল্যাট টায় ভুত আছে। কেউ আমায় পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে, আমার গালে চুমু খায়। সবসময় যেন একটা গভীর ঘন নিশ্বাস আমার কাঁধের ওপর পড়ে।
সুবীর বাবুঃ (প্রচণ্ড গম্ভীর ভাবে) ভুত তুমি দেখনি মালতী। ভুত কি হয় তার আতঙ্ক কি হয় তুমি জাননা।
মালতী দেবীঃ (কিছুটা ইয়ার্কির ছলে) এমনভাবে বলছ যেন তুমি কত ভুত দেখেছ। আমি জানি তুমি বিশ্বাস করতে পারছনা।
সুবীর বাবুঃ (প্রচণ্ড অবজ্ঞ্যার ছলে) বিশ্বাস করতেও চাইনা। তুমি জানো আজ আমায় ঠিক কতটা অপমানিত হতে হোল। মানব আমার ফোন তা কেটে দিল, পুরো কথাটা শুনল ও না। আর কতদিন, আর কতদিন আমি এভাবে অন্যের দয়ায় বাঁচব। লোক আমায় দেখে হাসে মজা করে।
মালতী দেবি কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান। উনি আশাও করেননি যে ওনার স্বামী এরকম ভাবে ওনাকে প্রত্তুত্তরে জবাব দেবেন।
মালতী দেবীঃ ঠিক আছে তুমি বিশ্বাস করোনা। আমিও তোমায় বিশ্বাস করাতে যাবনা। তুমি বাবা হিসেবে একজন গবেষক হিসেবে যতটা ভালো একজন স্বামী হিসেবে ঠিক ততটাই উদাসীন।
সুবীর বাবুর মাথা গরম হয়ে যায়। মাথায় আগুন জ্বলতে থাকে। এক তো মালতী দেবী ওনার থেকে সব ই লুকিয়েছে তার ওপর আবার স্বামী হিসেবে ওনার কর্তব্য বোধ নিয়ে ওনাকে কটাক্ষ করছেন।
সুবীর বাবুঃ স্বামী হিসেবে আমি কেমন তা তোমার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। যে চিরকাল শুধু কিকরে একটু সুখ পাওয়া যায় সে কথা ভেবে গেলো, সে কি করে দায়িত্ব কর্তব্য নিয়ে বুঝবে।
কথাটা তো রাগের মাথায় সুবীর বাবু বলে ফেললেন, কিন্তু পরমুহুরতেই বুঝতে পারলেন, বিশাল এক ভুল হয়ে গেছে। এটা বলা সত্যি ই উচিত হয়নি। আজ উনি ও ওনার পরিবার যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন তার পেছনে মালতী দেবীর আত্মত্যাগ উনি কিছুতেই অস্বীকার করতে পারেন না। মুহূর্তের মধ্যে বুঝতে পারেন, ভুল করে ফেলেছেন, বিশাল একটা ভুল। পেছন ঘুরে দেখেন মালতী দেবীর চোখ দিয়ে জল পড়ছে টপ টপ করে। সুবীর বাবু আর নিজেকে শান্ত রাখতে পারেন না, মালতী দেবীর দুহাত জড়িয়ে ধরেন।
সুবীর বাবুঃ ভুল হয়ে গেছে মালতী, বিশাল একটা ভুল। আমি কেন এরকম বলে ফেললাম নিজেও জানিনা। আমায় ক্ষমা করে দাও। এটা আমার মনের কথা নয়। আমি আমার কথা ফিরিয়ে নিচ্ছি।
কিন্তু হয়ত অনেক অনেক দেরি হয়ে গেছে। মালতী দেবীর কানে তখন আর কোনও কথাই ঢুকছে না। চোখের সামনে ভেসে উঠছে বিয়ের পর থেকে আজ অবধি ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনা। মাথাটা কেমন ঝিম ঝিম করছে। এদিকে সুবীর বাবু নিজের ভুল স্বীকার করেই চলেছেন আর বুঝিয়েই চলেছেন যে ওনার ভুল হয়েছে এটা মনের কথা নয়। বহুকষ্টে মালতী দেবী নিজের চোখের জল মোছেন ও স্বাভাবিক হন।
মালতী দেবীঃ না কোনও ব্যাপার নয়। তুমি ভেতরে গিয়ে বস। এখানে ঠাণ্ডা লেগে যাবে।
সুবীর বাবুঃ ঠিক আছে আমি ভেতরে যাচ্ছি। কিন্তু মালতী তুমি আমায় ভুল বুঝবে না। তুমি আমায় চেন। তুমি জানো এরকম কথা কখনই আমার মুখ দিয়ে বেরতে পারেনা। ভুল মানুষ মাত্রেই হয়, আমার ও হয়েছে।
মালতী দেবী চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকেন ওখানে। নারীর অভিমান বড্ড কঠিন ও অনমনীয়। যতই হোক মালতী দেবীও একজন নারী। সুবীর বাবু আসতে আসতে ভেতরের দিকে যেতে থাকেন।
হথাত মালতী দেবী “ওমা” বলে চিৎকার করে ওঠেন। সুবীরবাবু পেছন ফিরে দৌড়ে যান মালতী দেবীর কাছে। মালতী দেবী চোখ বন্ধ করে আছেন। আসতে আসতে উনি আবার চোখ খোলেন
সুবীর বাবুঃ কি হয়েছে মালতী? শরীর খারাপ লাগছে? চলো ভেতরে চলো। আর এখানে দাঁড়াবে না। চলো ভেতরে চলো।
সুবীর বাবু কিছুটা জোর করেই ওনাকে ভেতরে নিয়ে গেলেন। মালতী দেবী নিজেকে শান্ত করে রান্না ঘরে ঢুকলেন। ঠিক কি ঘটে চলেছে ওনার সাথে তা উনি কাউকেই বোঝাতে পারবেন না। সত্যি ই কি কোনও অলৌকিক ঘটনা কোনও আত্মা নাকি শুধুই ওনার মনের ভুল। উনি নিজেও জানেন মানসিক ধাক্কা একটা ওনার লেগেছে, কিন্তু তার জন্যই কি এতকিছু। ফ্ল্যাটে যখন স্নান করার সময় ঘন নিশ্বাস খোলা পিঠের ওপর পড়ছিল উনি একবার পেছন ঘুরে তাকালেন, কিন্তু কেউ ছিলনা। তারপর হথাত করেই পুরো বাথরুম জুড়ে মদের তীব্র গন্ধ ছেয়ে গেলো। এই গন্ধটা ওনার অতি পরিচিত, ঠিক সেই রাতে মানব বাবুর মুখ থেকে বা তার জাস্ট আগেরদিন সুবীর বাবুর মুখ থেকে যে গন্ধটা পেয়েছিলেন ঠিক সেটাই। মালতী দেবীর মনে পড়ে গেলো গতকাল সুবীর বাবুর সাথে সঙ্গমের কথা, হথাত ই সুবীর বাবুকে মানব বাবু মনে করে এক কল্পনা করে ফেলা। তাহলে কি এগুলো শুধুই ওনার মনের ভ্রম, উনি কি শুধু এসব কল্পনা করে চলেছেন। মালতী দেবী গভীর ভাবে ভাবতে শুরু করলেন।
হথাত ই আবার কেউ ওনাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। সেই উগ্র মদের গন্ধটা আবার ওনার চারপাশে ভনভন করতে লাগলো। প্রথমে একটু চমকে গেলেও ঠিক করেন এবার আর কোনও আওয়াজ করবেন না। চুপ করে সব সহ্য করবেন আর লক্ষ্য করবেন। একটা কোমল শীতল হাত পেছন থেকে ওনার কোমর টা জড়িয়ে ধরে, আঙুল গুলো আসতে আসতে নাভির কাছে গিয়ে লাট্টুর মত ঘুরতে থাকে। দুটো শুষ্ক কড়া ঠোঁট ঘাড়ের ওপর ক্রমাগত উষ্ণ চুম্বন করতে থাকে। মালতী দেবীর ও শরীরে স্পন্দন শুরু হয়, এই স্পন্দন তীব্র কাম আকাঙ্খার। ঠোঁট গুলো ঘাড় পেরিয়ে ক্রমাগত গালের দিকে ও হাত দুটো ক্রমাগত নাভি ছাড়িয়ে বুকের দিকে হাঁটতে শুরু করে। একটা হাত মালতী দেবীর মুখটা পেছন দিকে আলতো করে ঘোরাতে শুরু করে। মালতী দেবীও সজাগ হয়ে চোখ দুটো খুলে রাখেন, ভয়ে হৃৎপিণ্ডতে কম্পন শুরু হয়। চোখের সামনে ভাসমান হয় সেই অশরীরী, হয়ত মালতী দেবী জোরে চেঁচিয়ে বলতে চেয়েছিলেন “একি মানব দা তুমি” কিন্তু সেই সুযোগ উনি পেলেন না। দুটো ঠোঁট ভীষণ ভাবে ওনার দুই ঠোঁটের ওপর অধিকার গ্রহন করে। যখন ছাড়া পেলেন চোখের সামনে কেউ নেই। শুধু মিষ্টি উগ্র মদের গন্ধ টা সামনে থেকে আসতে আসতে সরে যাচ্ছে। মালতী দেবী নিজেকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, সত্যি ই কি উনি মানব দা কেই দেখলেন নাকি অন্য কেউ নাকি এটা ওনার মনের ভুল। ওখানে দাঁড়িয়ে উনি ভয়ে কাঁপতে লাগলেন। না সুবীর বাবুকে এব্যাপারে কিছুই বলবেন না, কাউকেই কিছু বলবেন না।
[/HIDE]
 
[HIDE]পর্ব ২- কে সেই অশরীরীঃ [/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
রান্নাঘরে বেশ কিছুক্ষন চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকার পর মালতী দেবী নিজের মনে বলে ওঠেন, আমার কোনও মানসিক দুর্বলতা হয়েছে। নিজের থেকেই আমায় এটা কাটিয়ে উঠতে হবে। মানব দার সেই রাতের ওই ঘটনা টা আমাকে ভীষণভাবে মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছে তাই হয়ত। কিন্তু বেশিক্ষন মালতী দেবী মানসিক স্থিরতা ভোগ করতে পারেন না। আবার সেই উগ্র মিষ্টি গন্ধটা চারপাশে ভনভন করতে শুরু করে। ধীরে ধীরে এটা মালতী দেবীর কাছে অভ্যাসে পরিনত হয়ে যায়। উনি যেন বুঝতে পারেন প্রতি মুহূর্তে এই অশরীরী ওনাকে স্পর্শ করবে, কিন্তু ওনার কিছুই করার থাকবেনা। এতকিছু সত্বেও উনি একবারও সুবীর বাবু বা মেয়েদের কাছে সবকথা খুলে বলেন না। এক চাপা অভিমান সুবীর বাবুর কথায় ওনার মনে চেপে বসে। এদিকে সুবীর বাবু এইসব ঘটনা সম্বন্ধে একদম ই ওয়াকিবহাল থাকেন না। ওনার মন জুড়ে শুধু একটাই কথা ঘুরতে থাকে, কখন এই অভিশপ্ত ডায়েরি হতে উনি মুক্তি পাবেন। এবং সেই মুক্তির ক্ষন আসবে একবার ডায়েরি টা উনি পড়ার অনুমতি পেলে। কবে ও কিভাবে সেই অনুমতি আসবে, সুবীর বাবু তার ই জন্যে অপেক্ষায় থাকেন।
এভাবে একটা একটা করে দিন অতিবাহিত হয়ে যায়। রূপসা ইঞ্জিনিয়ারিং ও তিলোত্তমা মেডিক্যাল কলেজ এ ভর্তি হয়ে যায়। ঘরে পরে থাকেন শুধু একা মালতী দেবী। অফিস থেকে এসে এক কাপ চা চাওয়া, দুবেলা খেতে চাওয়া এই হয়ে দাঁড়ায় মালতী দেবী ও সুবীর বাবুর দাম্পত্য। আশ্চর্যজনক ভাবে সেই গভীর ভালোবাসা অন্ধ বিশ্বাস হথাত ই পরিনত হয়ে যায় উদাসীন সম্পর্ক ও অবহেলিত বন্ধনে। এভাবে যে কি করে ৩ মাস কেটে গেলো। তা মালতী দেবী ও সুবীর বাবু কেউ ই বুঝতে পারেন না। সুবীর বাবু অপেক্ষায় থাকেন কবে তিনি আবার ডায়েরি তা পড়তে পারবেন তার জন্য, মালতী দেবী ঠিক কি চান তা কেউ জানেনা। এরমধ্যে একবার ও সুবীর বাবু ও মানব বাবুর কথা হয়নি। সুবীর বাবু যে মানবের কথা ভাবেন নি তা নয় কিন্তু কোনও এক ইগো ও আত্মসম্মান বোধ তাকে আটকে দিয়েছে। মালতী দেবী ও একবারের জন্য মানব বাবুর কথা ওথান নি। স্বাভাবিক ভাবেই সাইদুল রোজ দুধ দিতে আসে। রাজুও এই পাড়াতেই থাকে, কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারনে এদের নাম এই বাড়ীতে উচ্চারিত হয়না। বেশ কিছুদিন ধরে সুবীর বাবুর মন বলছিল ডায়েরি তা পড়ার সময় হয়ত এসে গেছে।
ঠিক ৩ মাস পর কোনও একদিনঃ------------------------------------------------
সুবীর বাবু তখন কলেজ এ। প্রায় বিকেল ৬ টা বাজে। মোবাইল এ তিলোত্তমার একটা ফোন। সুবীর বাবু রিসিভ করেন।
তিলোত্তমাঃ বাবা আজ আমি আর মা রূপসার কলেজ এ যাচ্ছি। আমি তো কিছুদিনের মধ্যেই চলে যাবো আবার তাই ভাবলাম যাই রূপসার সাথে একবার দেখা করে আসি। মাও আমার সাথেই যাচ্ছে। তুমি কোনও চিন্তা করোনা। আমাদের আসতে একটু দেরি হবে। তুমি জলখাবার টা বাইরে থেকে খেয়ে এসো।
সুবীর বাবু শুধু আচ্ছা বলে ফোন টা রেখে দেন। আসলে অভিমান টা তিলোত্তমার ওপর নয়, অভিমান টা গিয়ে পড়ে মালতী দেবীর ওপর। মনে মনে ভাবেন মালতী কত চেঞ্জ হয়ে গেছে। এই ৩ টে মাস তো বাড়ীতে ওনারা দুজন প্রায় একাই ছিলেন অথচ একটাও কোনও ভালবাসার কথা নেই। শুধুই যেন পাশাপাশি থাকা, নিজের ই প্রানের মালতী হথাত ই কেমন যেন অচেনা হয়ে ওঠে। এরকম ও নয় যে মালতী খুব মানসিক কষ্টে রয়েছে। দিব্যি রয়েছে, আগের ই মত গুনগুন করে গান করে, খুব হাসিখুশি থাকে। সুবীর বাবুর সবসময় এটাই মনে হয় যে মালতী দেবী যেন ওনাকে ছাড়া প্রচণ্ড সুখি রয়েছেন, প্রচণ্ড খুশি রয়েছেন। আর ঠিক এটাই কঠোর হৃদয়ের মানুষ সুবীর বাবুর পৌরুষে ভীষণ ভাবে আঘাত করে। সুবীর বাবুও নিজেকে গুটিয়ে রাখেন। আর আজ রূপসা কে দেখতে যাওয়ার কথা একবার ও না বলে যে চরম অবজ্ঞার পরিচয় মালতী দেবী দিলেন তা যেন ওনাকে আরও বেশি করে অভিমানি করে তুলল। কলেজ এ আরও অনেক কাজ ছিল কিন্তু সুবীর বাবুর আর ভালো লাগলো না। কলেজ থেকে ব্যাগ গুছিয়ে বেড়িয়ে এলেন। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে শুধু মালতী দেবীর ই কথা চিন্তা করছিলেন। সামনেই বাস, কলেজ থেকে বালিগঞ্জ যেতে বেশি সময় লাগেনা। ১০ মিনিটের মধ্যেই বাড়ীর কাছাকাছি পৌঁছে গেলেন। খুব ক্ষিদে পাচ্ছিল ওনার, কিন্তু না অভিমান উনিও করতে জানেন। সোজা বাড়ীর পথে হাঁটা দিলেন। একদম বাড়ীর কাছাকাছি এসে একবার পকেট টায় হাত দিলেন। পকেট এ চাবি নেই, মনে মনে ভাবলেন কলেজ এ ফেলে চলে এলেন না তো। পেছন থেকে একটা অতি পরিচিত গলা
“সুবীর বাবু চাবিটা বোধ হয় আপনার ব্যাগেই আছে, ভালো করে দেখুন তো একবার”
সুবীর বাবু বোধ হয় নিজেকে জোর করে অবিস্বাস করতে চাইছিলেন, নিজেকেই বলতে চাইছিলেন না এ সে নয়। উনি একবার ও পেছন ফিরে দেখলেন না। আবার পেছন থেকে সেই পরিচিত কণ্ঠ ভেসে এলো।
“কই ব্যাগ টা একবার দেখুন”
সুবীর বাবু এবার পেছন ফিরে দেখলেন এবং যথারীতি আঁতকে উঠলেন।
সত্য বাবুঃ একি সুবীর বাবু আমাকে দেখে এতো ভয় পাওয়ার কি আছে। আপনি তো সত্যেন্দ্র, দেবেন্দ্র, অনুরাধা, তিনকড়ি, ঠাকুর ডাকাত প্রত্যেক কেই চেনেন। অভিশপ্ত ডায়েরি যে লেখা হচ্ছে তাও আপনি জানেন। খালি এটা জানেন না অভিশপ্ত ডায়েরি লেখা শেষ হয়ে গেছে।
সুবীর বাবুর কণ্ঠ আবার জড়িয়ে গেলো, মুখ দিয়ে কোনও কথা বেরলনা। কোনরকমে ব্যাগ হাতড়ে চাবিটা পেলেন ও ভেতরে ঢুকে গেলেন সাথে সত্যেন্দ্র ওরফে সত্য বাবুও।
সত্য বাবুঃ আমি পারলেই কোনও সঙ্কেতের মাধ্যমে আপনাকে বলতে পারতাম যে ডায়েরি লেখা শেষ। কিন্তু কি করি বলুন তো। নিজের মুখে গল্প বলার লোভ টা তো কিছুতেই সামলাতে পারলাম না। আপনি জানেন গল্প বলতে আমি ঠিক কি পরিমান ভালোবাসি।
সুবীর বাবু দাঁড়িয়ে ঠক ঠক করে কাঁপতে শুরু করলেন।
সত্য বাবুঃ একি এরকম কাঁপছেন কেন। লোকে ভুত দেখে কাঁপে আমি জানি। কিন্তু আপনি তো আমাদের ব্যাপারে সব ই জানেন, আমাদের আত্মা অভিশপ্ত নয়, অভিশপ্ত শুধুই ডায়েরি টা। সুবীর বাবু শরীর বেশিক্ষন ধরে রাখা যায়না। আপনি যদি অনুগ্রহ করে ডায়েরি টা আনেন আমি তাহলে গল্প টা শুরু করে দিতে পারি।
সুবীর বাবু একবার নিজের মনে মনে বলেন যে যাই হয়ে যাক আর কয়েকটা ঘণ্টা মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করতে পারলেই এই অবস্থার থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। সুবীর বাবু নিজেকে শান্ত করেন। সত্যবাবুর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন
সুবীর বাবুঃ সত্য বাবু আমি তো কারুর কোনও ক্ষতি করিনি তাহলে আমার সাথেই এরকম কেন হচ্ছে। আমার কি অপরাধ একটাই যে আমি ডায়েরি টা কারুর কোনও অনুমতি ছাড়াই পড়ে ফেলেছি।
সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু আমি আপনাকে সব ই বুঝিয়ে বলেছি। আমরা কেউ ক্ষতিকর নই। আমরা শুধুই এই ডায়েরি তার দাস। না সুবীর বাবু আপনি ডায়েরি টা পড়ে কোনও অন্যায় করেন নি। আসলে একটা ষড়যন্ত্রের মধ্যে আপনি ফেঁসে গেছেন। কে এই ষড়যন্ত্র করেছে কেন করেছে তা আপনি সবশেষে বুঝতে পারবেন। আপনাকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে। যান ডায়েরি তা নিয়ে আসুন।
সুবীর বাবু ঘরের দিকে হেঁটে হেঁটে যেতে শুরু করলেন। ডায়েরি তা সস্থানেই ছিল। একদম নিচ থেকে ডায়েরি তা বার করে উনি আবার বাইরে সত্য বাবুর কাছে যেতে শুরু করলেন। সত্য বাবু ততক্ষনে খাটিয়ার ওপর বসে গেছেন।
সত্য বাবুঃ হ্যাঁ সুবীর বাবু, ডায়েরি তা আমায় দিন। আমিও আমার গল্পটা শুরু করে দি।
সুবীর বাবু কোনও উত্তর দিলেন না।
সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু এতটা তো আপনিও জানেন যে এই গল্পের চরিত্র গুলো হোল আপনি নিজে, মালতী দেবী, মানব বাবু, রাজু, সাইদুল, রূপসা ও তিলোত্তমা। যে ৩ মাস আপনি কিছুই বোঝেন নি, কোনও সাংসারিক ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন নি এটা সেই ৩ মাসের ই গল্প। তাই ডায়েরি তা যে ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর তা ভাববেন না। এই ডায়েরি তা পড়েই আপনি জানতে পারবেন আপনার চোখের আড়ালে আপনার ই সংসারে ঠিক কি ঘটে গেছে। এর প্রথম পর্বের নাম অশরীরী। এর সম্বন্ধে আপনি কিছুটা হলেও অবগত। সুবীর বাবু তাহলে আমি আমার গল্প শুরু করি।
সুবীর বাবু শুধুই একটা হাল্কা মাথার ঝাঁকুনি দিয়ে সত্য বাবুকে জবাব দিলেন।
সত্য বাবুঃ আপনি লক্ষ্য করেছেন জমিদারবাড়ি থেকে আপনার ফেরার পর, মালতী দেবী অদ্ভুতভাবেই কোনও এক আতঙ্কের মধ্যে থাকেন, ওনার মনে হয় ওনার চারপাশে কোনও এক অশরীরী ঘুরঘুর করে। ওনাকে জড়িয়ে ধরে, ওনার দুই ওষ্ঠকে নিজের শুষ্ক, কঠোর ঠোঁট দিয়ে স্পর্শ করে। এতটা আপনি জানেন। এবার যা বলব তা আপনি জানেন না। ওই অশরীরীর উপস্থিতিতে পুরো ঘরটা একটা অদ্ভুত উগ্র মিষ্টি গন্ধে ভরে যায়। ঠিক জেন সেই রাতের বিভীষিকা তা মালতী দেবীর জীবনে নিজের থেকেই ফিরে আসতে চায়। সেইরাতের মানে যেদিন মানব বাবু আপনার বাড়ীতে এসেছিলেন আপনারা মদ্যপান করেছিলেন। তারপর আপনাকে ঠকিয়ে মানব বাবুর মালতী দেবীর উলঙ্গ দেহটা দর্শন করা ও আপনার ই ঘরে আপনার স্ত্রী কে প্রায় ৫-১০ মিনিট ধরে যৌন নিপীড়ন করা। মালতী দেবী সেই অশরীরীকে অল্প হলেও দেখতে পান। উনি নিজের চোখে দেখেছেন এই অশরীরী আসলে মানব বাবু।
সুবীর বাবু আঁতকে ওঠেন, বড় বড় চোখে তাকিয়ে থাকেন সত্য বাবুর দিকে।
সত্য বাবুঃ না সুবীর বাবু আপনি ভুল ভাবছেন। মানব বাবু জীবিত, ভীষণভাবেই জীবিত। তাহলে এই অশরীরী কে? এর উত্তর একদম শেষ পর্বে গিয়ে আপনি পাবেন। অনেক গুলো প্রশ্নই এই মুহূর্তে আপনার মাথায় ঘুরঘুর করছে, তা আমি জানি। প্রথম প্রশ্ন এই অশরীরী কেন মানব বাবুর শরীর ই ধারন করে? দ্বিতীয় প্রশ্ন, মালতী দেবী হথাত ই ৩-৪ দিন পর থেকে স্বাভাবিক কি করে হয়ে যান? সব উত্তর ই আপনি পেয়ে যাবেন। আপনার আর মালতী দেবীর মধ্যে একটা মানসিক দুরত্ব তৈরি হয় আর তার সাথেসাথে মালতী দেবীর মনে এক চাপা আতঙ্ক গ্রাস করে নেয়। কে ওনাকে প্রতি মুহূর্তে স্পর্শ করছে অথচ উনি কিছুই করতে পারছেন না। মানব বাবুর মত দেখতে হলেও কেন উনি তাকে দেখতে পাচ্ছেন না, সেইসব ই।
ঠিক এই ঘটনার পরের রাতের ঘটনা। ততক্ষনে মালতী দেবী কোনও এক অশরীরীর উপস্থিতি সম্পূর্ণ ভাবে বুঝে গেছেন। আপনি তখন বিছানায় গভীর নিদ্রায় মগ্ন। মালতী দেবীও আপনার পাশেই সবে চোখ গুলো বন্ধ করেছেন। হথাত ই একটা তীব্র মিষ্টি গন্ধ। উনি বুঝতে পারেন সেই অশরীরী এসে গেছে। কিন্তু মনে মনে উনি ঠিক করে রেখেছিলেন যে আজ উনি কোনও শঙ্কা করবেন না শুধুই লক্ষ্য করবেন যে কে এই অশরীরী। যথারীতি উনিও চোখ বন্ধ করে পড়ে থাকেন। আসতে আসতে ওনার শরীরের এক এক করে সব কাপড় খুলে যেতে শুরু করে। উনি শুধু চোখ বন্ধ করে পড়ে থাকেন। সেই দুটো শুষ্ক ঠোঁট ও তীব্র ঠাণ্ডা দুটো হাত ওনাকে স্পর্শ করতে থাকে। উনি শুধু চোখ তা বন্ধ করেই পড়ে থাকেন। এরপর পুরো ৫ তা মিনিট ওনার দুই স্তন কে সেই অশরীরী নিজের দুই হাত দিয়ে ডলতে থাকে ও শুষ্ক দুই ঠোঁট দিয়ে উত্তেজিত করতে থাকে। কিন্তু হথাত ই সেই স্পর্শ শান্ত হয় ও সেই উগ্র গন্ধটা বিলীন হয়ে যায়। মালতী দেবী উঠে বসেন ও চোখ খোলেন। ওনার শরীরে প্রতিটি কাপড় সস্থানেই ছিল। কেউ যে এতক্ষন ওনার শরীর তা ভোগ করছিল এতক্ষন তার কোনও প্রমান ই নেই। এই একি ঘটনা, ঠিক ১০ মিনিটের জন্য যৌনতা ওনার কাছে দৈনিক অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায়, আর তার ই সাথে সাথে ওনার মনেও একটা ধারনা বদ্ধমূল হতে শুরু করে। তা হোল সেই রাতে মানব বাবুর ওই নিষিদ্ধ যৌনতা কোথাও না কোথাও ওনার মনে এক তীব্র যৌন আকাঙ্ক্ষার জন্ম দিয়েছে। উনি শুধুই অনুভব করছেন, কোনও অশরীরী বা আত্মা নেই।
কিন্তু সুবীর বাবু এটা প্রচণ্ড সত্যি যে এক অশরীরী আছে, ভীষণ ভাবেই আছে। আর সেই মালতী দেবীর শরীর তা এরকম অসম্পূর্ণ ভাবে ভোগ করে চলেছে। কিন্তু কে সেই অশরীরী? জানতে গেলে গল্পের শেষ অবধি আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে।
[/HIDE]
 
[HIDE]পর্ব ৩- রূপসার হৃদয়ঃ [/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু গল্পটা শুরু হয়ে গেছে। আপনার জন্য আমার খুব ই খারাপ লাগছে সুবীর বাবু। এই গল্পটার সাথে আপনার ব্যাক্তিগত জীবন ও আপনার স্বজনরা জড়িয়ে আছে। কিন্তু কি করব বলুন গল্পটা বলা যে আমার দায়িত্ব। এতক্ষন মালতী দেবীর ব্যাপারেই আপনাকে বলছিলাম। কিন্তু আপনার দুই মেয়ে রূপসা ও তিলোত্তমা ও এই গল্পের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। অর্থাৎ যৌন সঙ্গম যে শুধু মালতী দেবীর ই হয়েছে তা নয়, রূপসা ও তিলত্তমাও এই অভিশপ্ত ডায়েরীর শিকার। প্রথমেই আপনাকে রূপসার ব্যাপারে বলতে চাই। এই ঘটনা তা ঘটে আজ থেকে ঠিক ১০ দিন আগে। রূপসা তখন কলেজ থেকে বাড়ী ফিরেছিল। রূপসা নিজেকে যতই চালাক ও পটু মনে করুক না কেন ফাঁদে রূপসাও পড়েছিল।
সুবীর বাবুঃ সত্য বাবু প্লিজ চুপ করে যান। আমি আর শুনতে চাইনা।
সুবীর বাবু মাথায় হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে থাকলেন। সত্য বাবু কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পর আবার শুরু করলেন।
সত্য বাবুঃ বহুদিন ধরেই সাইদুলের নজর ছিল রূপসার ওপর। সাইদুল প্রায় ই রূপসার কলেজ এর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো। রূপসা ও বহুবার তা লক্ষ্য করেছিল। সাইদুল কখনো রূপসার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেনি, শুধুই দাঁড়িয়ে থাকতো আর রূপসা কে দেখত। রূপসার মধ্যে ধৈর্যের প্রচণ্ড অভাব। রূপসা একদিন অধৈর্য হয়ে পড়ে নিজের থেকেই সাইদুলের কাছে যায়, এবং কিছুটা ভয় দেখানোর ভঙ্গীতে বলে ওঠে।
রূপসাঃ সাইদুল দা তুমি এরকম ভাবে আমায় ফলো করা বন্ধ কর। নয়ত আমি সবকথা বাবাকে বলে দেবো। বাবা জানলে ঠিক কি হতে পারে তা তুমি খুব ভালো করেই জানো। আজকের পর থেকে তোমায় যেন আর কখনোই আমায় ফলো করতে না দেখি।
রূপসা ফিরে চলে যাচ্ছিল হথাত ই সাইদুল বলে ওঠে
সাইদুলঃ তোমার বাবা জানলে আমার তোমাদের বাড়ীতে দুধ দেওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। হয়ত আশেপাশের সমস্ত বাড়ীতেও উনি কথা বলে আমার দুধ দেওয়া বন্ধ করিয়ে দিতে পারেন। এরচেয়েও বেশি আমার অন্য কোনও ক্ষতি করতে পারেন। হয়ত আমার পরিবার টা ভেসে যাবে। হয়ত পাড়ায় আমার বাড়ীর কেউ মুখ দেখাতেও পারবেনা। কিন্তু তারমানে এটা নয় যে আমি আমার মনের কথা টা চেপে রাখব। আজ এতো বছর ধরে তো চেপেই রেখেছি।
রূপসা এটা হয়ত আশা করেনি। যতই নিজেকে আধুনিক ও স্মার্ট দেখানোর চেষ্টা ও করুক আসলে তো ও একজন নারী। সদ্য আঠেরো তে পা দেওয়া একটা তরুণীর মন যতটা আবেগপ্রবন হওয়া উচিত ওর ও তো ঠিক ততটাই। রূপসা পেছন ঘুরে আবার সাইদুলের দিকে দেখে। এদিকে সাইদুল ও বুঝে যায়, রাজুর সমস্ত প্ল্যান ই সাকসেসফুল হয়ে যাচ্ছে। রাজুও তাই ধীরে ধীরে নিজের সংলাপগুলো মনে করতে শুরু করে।
সাইদুলঃ তোমায় প্রথম দেখেছিলাম আজ থেকে প্রায় ৫ বছর আগে। সেদিন ই আমি প্রথম তোমাদের বাড়ী তে দুধ দিতে গেছিলাম। তার আগে আমার বাবা তোমাদের বাড়ীতে দুধ দিতেন। আগের দিন আমার বাবা মারা গেছিলেন। মন প্রচণ্ড খারাপ ছিল। যখন প্রথম ঢুকলাম, দেখি একটা লাল ফ্রক পড়ে তুমি ব্রাশ করছ। ব্যাস প্রথম দেখাতেই প্রেম। আমি সেদিন থেকেই তোমায় ভালোবাসি রূপসা। জানি আমরা দুজন সম্পূর্ণ আলাদা। আমাদের মানায় না। তোমায় পাওয়ার কোনও আশাই আমি করিনা। শুধু তোমায় ভালোবাসি।
রূপসা সাইদুলের ই দিকে তাকিয়ে থাকল। সাইদুল একটু হেসে, ওকে একটু হাত নেড়ে ওখান থেকে চলে এলো। রূপসার পুরো ব্যাপারটা কেমন যেন একটা ফেয়ারি টেল এর মত লাগলো। একজন ওকে ভালবাসে আর সহজ সরল ভাবে ওকে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করে চলে গেলো। এর আগে যে কেউ রূপসা কে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করেনি তা নয়, কিন্তু এতটা সহজ সরল ভাবে কেউই করেনি কখনো। রূপসা ধীরে ধীরে কলেজ এ ফিরে গেলো। কিন্তু ক্লাস এ কিছুতেই মন লাগলো না। কানের সামনে শুধু সাইদুলের ওই কথাগুলো ভাসতে লাগলো। কেউ যেন কানে কানে বলে গেলো আরে রূপসা এটাই তো সত্যিকারের ভালোবাসা, একে আর ঠোক্কর মারিস না। রূপসা একবার নিচের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠল।
এদিকে সাইদুল বাড়ী গিয়ে সবকথা রাজুকে খুলে বলে। অভিজ্ঞ রাজু জানে যে সাইদুলের রূপসাকে ভোগ করা পৃথিবীর কোনও শক্তি ই আর রুখতে পারবে না। শুধু কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।
রাজুঃ ভাই তোর জন্য এতটা করলাম, তুই আমার জন্য কিছু করবি তো।
সাইদুলঃ আরে ভাই তুই তো আমার জিগ্রি দোস্ত রে, তোকে না দিয়ে আমি কি একা কিছু খেতে পারি। যা খাব তোর সাথে ভাগ করেই খাব, কোনও চিন্তা করিস না।
রাজুঃ ঠিক আছে ভাই। কিন্তু একটা কথা মনে রাখবি সবসময় যে এখনো কিছুই হয়নি আরও অনেক অনেক চেষ্টা তোকে করতে হবে তবেই তুই রূপসা কে পাবি। তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া সেরে নিয়ে বেড়িয়ে যা। ওদের কলেজ তো ৫ টায় ছুটি হয়। কলেজ থেকে হোস্টেল অবধি রাস্তা তা খুব একটা কম নয়।
সাইদুল রাজুর ইশারা ভালই বুঝতে পারে। সাইদুল তাড়াতাড়ি খেয়ে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। কলেজ এর সামনে পৌছাতে পৌছাতে পউনে ৫ টা হয়ে যায়। সাইদুল চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। ঠিক ৫ তার সময় কলেজ থেকে এক এক করে সব ছেলে মেয়েরা বের হতে শুরু করে। রূপসা ও বেরোয় আর সোজা রাস্তা বরাবর হাঁটতে শুরু করে। সাইদুল জানে রূপসা যতদূর ই যাক, একটা বার তো পেছন ঘুরে দেখবেই, ও জানে সাইদুল ওর জন্য ওকে একবার দেখার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। সাইদুলের কথাই ঠিক হয়, রূপসা কিছুদুর গিয়ে দাঁড়িয়ে যায় আর বন্ধুদের কিছু বলে। সম্ভবত বন্ধুদের এগিয়ে যেতে বলে, যা সাইদুল শুনতে পায়নি। বন্ধুরা কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পর রূপসা একবার পেছন ঘুরে দেখে। দেখে বেশ কিছুটা দূরে গাছের নিচে সাইদুল দাঁড়িয়ে আছে। রূপসা দ্রুত মুখটা ঘুরিয়ে নেয়। কিন্তু ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। সাইদুল বুঝতে পারে, এটাই গ্রিন সিগন্যাল। রূপসা ওকে দাকছে। সাইদুল সাইকেল নিয়ে রূপসার দিকে এগিয়ে যায়।
রুপ্সাঃ তুমি তো খুব সাহসী। সকালে এতো কিছু বললাম তাও আমার পিছু করছ। আর একদম কলেজ এর মধ্যেই ঢুকে গেছো। জানো এটা হাই সিকিউরিটি এরিয়া, আমি চাইলে তোমায় পুলিসের কাছে ধরিয়ে দিতে পারি।
সাইদুল কিছুই বলল না। রূপসা খুব ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে চলল। রূপসা যে এতো ধীরে হাঁটে না তা সাইদুল খুব ভালো করেই জানে। ওর এই হাঁটার ভঙ্গী যেন এটাই বলছে আসো সাইদুল আমাকে হোস্টেল অবধি ছেড়ে দাও। সাইদুলের সাহস আরও বেড়ে যায়। সাইদুল সাইকেল তা নিয়ে একটু জোরেই হেঁটে রূপসা কে ধরে ফেলে। রূপসা একবার আড় চোখে দেখে ওর দিকে, একবার নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে, কিন্তু কিছুই বলেনা।
সাইদুলঃ আসলে কলেজ থেকে হোস্টেল এতটা দুরত্ব, তুমি একা একা যাবে। তাই ভাবলাম তোমার সাথে যাই।
রূপসাঃ কই এমন কিছু তো দুরত্ব নয়। আর একা কোথায় আমার সাথে তো বন্ধুরা ছিল। আমি তো বেশ ভালোভাবেই যাচ্ছিলাম।
সাইদুল এবার কিছুটা চুপ করে যায়। সাইদুল ভাবতে থাকে কি বলা যায়।
সাইদুলঃ রূপসা তোমার একটা ফটো দেবে আমায়।
রূপসাঃ কেন তোমায় হথাত করে আমার ফটো কেন দিতে যাবো?
সাইদুলঃ তোমায় এক মুহূর্ত না দেখলে আমার ঠিক করে ঘুম আসেনা। তাইতো আমি তোমাকে দেখার জন্য সাইকেলে করে এতো দূর থেকে ছুটে আসি।
রূপসাঃ (রূপসার বেশ ভালই লাগছিল সহজ সরল একটা ছেলেকে এভাবে টিজ করতে) কেন আমায় না দেখলে ঘুম কেন আসেনা? আমি কি কোনও দেবী নাকি?
সাইদুল চুপ করে থাকে বেশ কিছুক্ষন।
সাইদুলঃ রূপসা আমি তোমায় আগেই বলেছি যে আমি তোমায় ভালোবাসি, কিন্তু রূপসা আমি এর চেয়ে বেশি কিছুই চাইনা। তুমি জানো যে আমাদের মধ্যে সামাজিকভাবে দুরত্ব অনেকটাই। আর তুমি অনেক অনেক বেশি ভালো ছেলে পেয়ে যাবে, তারসাথে তুমি সুখি ও হবে।
রূপসা কোনও উত্তর দেয়না। তবে এটা প্রচণ্ড সত্যি যে এই সহজ সরল কথাগুলো রূপসার হৃদয়কে প্রচণ্ড ভাবে বিদ্ধ করছিল। রূপসা তাও চুপ করে থাকে। রূপসা চাইছিল একবার সাইদুল কে বাজিয়ে দেখতে।
সাইদুলঃ রূপসা, আমাকে নিজের পরিবার তা চালাতে হয়। বাড়ীতে কাজ করার মত ছেলে আমি একাই। আমি যে এভাবে তোমায় দেখার জন্য পাগলের মত এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছি এতে সত্যি আমার পরিবারের খুব ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।
রূপসাঃ তাতে আমার কি? আমি তো তোমায় বলিনি আমার পেছন পেছন ঘুরতে। তুমি আর আমার পেছন পেছন ঘুরনা। ব্যাস তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
রুপ্সা কথাগুলো একটু রাফ হয়েই বলেছিল। সাইদুল এতটাও এক্সপেক্ট করেনি। সাইদুল চুপ করে দাঁড়িয়ে পড়ে। আর রুপ্সা সামনের দিকে এগিয়ে চলে।
সাইদুলঃ আমি তোমাকে ভালোবাসি রূপসা। তাই আমি এরকম পাগলের মত তোমার পেছনে ঘুরে বেড়াই। তুমি প্লিজ আমার অবস্থাটা একবার বোঝার চেষ্টা কর।
রূপসা এবার দাঁড়িয়ে পড়ে। রূপসা ও সাইদুলের মধ্যে ৩-৪ হাতের দুরত্ব। রূপসা পেছন ঘুরে সাইদুলের দিকে ফিরে আসে। সাইদুলের সাইকেল এর হ্যান্দেল টা একহাতে ধরে বলে ওঠে
রূপসাঃ দেখো সাইদুল এভাবে কারুর ভালোবাসা পাওয়া যায়না। আর যদি তুমি ভাবো আমার পেছনে দিনরাত ঘুরলেই আমার মন দুর্বল হয়ে যাবে তাহলে তুমি ভুল করছ। আমি সেই মেয়েদের মধ্যে নয় যারা খালি একটা ছেলেকে খোঁজে। আমি সেরকম নই। তুমি যতই আমার পেছনে ঘোর তোমার তাতে কোনও লাভ ই নেই।
সাইদুল কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। রূপসা সাইকেল থেকে হাত টা সরিয়ে নিয়ে এবার নিজের স্বাভাবিক ছন্দে, হনহন করে হেঁটে হোস্টেলের দিকে যেতে শুরু করে। সাইদুল নিচের দিকে হতাশায় তাকিয়ে থাকে। বেশ কিছুক্ষন পর “সাইদুল” বলে একটা শব্দ হয়। সাইদুল ওপর দিকে তাকিয়ে দেখে রূপসা আবার ওর কাছে এসেছে।
রূপসাঃ সাইদুল তুমি গরিবের ছেলে, আমার খুব খারাপ লাগলো তোমায় এরকম ভাবে বলে। আমাকে সবাই ভুল বোঝে। আমি এরকম ছেলেদের মত ড্রেস পড়ি, এতো রাফ তাই সবাই আমায় খারাপ ভাবে। কিন্তু তোমায় একটা সত্যি কথা বলি সাইদুল। আমার ও মধ্যে একটা মেয়ে লুকিয়ে আছে। সেই মেয়েটার মন জয় করার চেষ্টা কর। তুমি গরিব না বড়লোক সেটা আমি কখনোই দেখবনা। সত্যি ই দেখবনা। প্রমিস রইল।
রূপসা আবার গটগট করে হেঁটে চলে গেলো। সাইদুল ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকল।
[/HIDE]
 
[HIDE]পর্ব ৪- সাইদুলের দ্বন্দ্বঃ [/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
রূপসা চলে যাওয়ার পর ও সাইদুল ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। সাইদুল একটা ধন্দের মধ্যে পড়ে যায়। সত্যি ই কি রূপসার মত একটা রাফ মেয়েকে বিছানায় শোয়ানো যায়। কি দরকার ওর এতো সময় নষ্ট করার। সাইদুল যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি তে যা করে ঠিক তাই করল। সাইদুল রাজুকে ফোন করে।
সাইদুলঃ ভাই, মনে হয়না এই মাল টা পটবে। এর হেবি ঘ্যাম। এই বয়সে কি আর পাগলের মত মেয়েদের পেছন পেছন ঘোরা যায়। এতো দেখছি তাই চায়।
সাইদুল রাজুকে সবকথা খুলে বলে।
রাজুঃ তুই সত্যি ই মূর্খ রে সাইদুল। আরে এতো পুরো পটেই গেছে রে। এতো কেন ভাবছিস তুই। আজ এমন একটা কিছু কর যাতে ও পুরোপুরি তোর ওপর ফিদা হয়ে যায়। অন্য কিছু ভাবিস না।
রাজুর কথায় সাইদুলের মনে একটু সাহস আসে। সাইদুল ভাবতে থাকে কি করা উচিত সেব্যাপারে। আপাতত একটাই লক্ষ্য, গার্লস হোস্টেল। সাইদুল গার্লস হোস্টেল টা চেনে। সাইদুল সোজা চলে যায় গার্লস হোস্টেলের কাছে। উল্টো দিকেই একটা বিশাল বট গাছ আর তারপাশেই একটা চায়ের দোকান। সাধারনত কলেজ এর ই ছেলেমেয়েদের জন্য ওই দোকান টা। সাইদুল গিয়ে দোকান থেকে এক কাপ চা নেয় ও আবার গাছের তলায় এসে দাঁড়ায়। চায়ে একটা কি দুটো চুমুক দিয়েছে ওমনি দেখে ভেতর থেকে এক ঝাঁক মেয়ে বাইরে আসছে। সাইদুলের চোখ এটাও এড়িয়ে যায়নি যে ওদের মধ্যে রূপসা ও আছে। বট গাছ টা একদম হোস্টেলের গেটের সোজা। হথাত একটা মেয়ে চেঁচিয়ে বলে
“এই ছেলেটা কে রে? আগে তো দেখিনি। দেখে তো কলেজ এর স্টুডেন্ট বলে মনে হচ্ছেনা। ঠিক ঝাড়ি মারার জন্য বাইরে থেকে এসেছে। দাঁড়া সিকিউরিটি কে বলে এর মজা দেখাচ্ছি”
কথাটা সাইদুলের ও কানে এসেছে। সাইদুল এই মুহূর্তে একটা দ্বৈত সঙ্কটের মধ্যে। ভয় পেয়ে পালিয়ে যাবে নাকি দাঁড়িয়ে থাকবে। রূপসা ওর ই দিকে তাকিয়ে আছে। সম্ভবত রূপসা ও ওকে পরীক্ষা করতে চাইছে। সাইদুল একবার চোখ টা বন্ধ করে ভেবে নেয়। মনে মনে বলে না এতটা যখন এগিয়েই গেছি, তখন শেষ দেখেই ছাড়বো। ওদিকে একটা মেয়ে ততক্ষনে হোস্টেলের ভেতরে ঢুকে সিকিউরিটির কাছে চলে গেছে। ভেতরের সব আওয়াজ বাইরে আসছে।
“দাদা ওই গাছের তলায় দেখুন একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের কলেজ এর নয়। এভাবে গার্লস হোস্টেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তো ঠিক নয়”
এতক্ষন রূপসা শুধুই সাইদুলকে পরীক্ষা করার ছলে পুরো ব্যাপারটা দেখে যাচ্ছিল। এবার রূপসার ও ভয় লাগতে শুরু করে। রূপসা একটু পিছিয়ে এসে সাইদুলের দিকে ইশারা করে ওকে ওখান থেকে চলে যেতে বলে। কিন্তু সাইদুল মুখ ঘুরিয়ে নেয়। ও জানে এটাই ওর ফাইনাল পরীক্ষা, এটায় উতরে যেতে পারলে আর কোনও চিন্তা থাকবেনা। ভেতর থেকে দুজন সিকিউরিটি সাইদুলের দিকে এগিয়ে আসে। সাইদুল মাথা তুলে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকে।
সিকিউরিটিঃ তুমি কে ভাই? কোন ইয়ারের স্টুডেন্ট? আগে তো তোমায় কখনো কলেজ এ দেখিনি। এখানে কি করছ?
সাইদুলঃ না আমি কোনও স্টুডেন্ট নই। আমি এমনি ই দাঁড়িয়ে আছি। আমি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো।
সাইদুলের স্পর্ধা দেখে সমস্ত মেয়েরা এমনকি রূপসা ও স্তম্ভিত হয়ে যায়।
সিকিউরিটিঃ দেখো ভাই, তোমার ভালোর জন্যই বলছি। এখানে বাইরের ছেলেদের দাঁড়িয়ে থাকার অনুমতি নেই। তুমি এখান থেকে এক্ষুনি চলে যাও।
সাইদুলঃ না আমি যাবনা।
এবার রূপসার ও ভয় করতে থাকে। ওরা সাইদুল কে মারবেনা তো। নিজেকে দোষী মনে হয়। ও চাইলেই ওই মেয়েটাকে সিকিউরিটির কাছে যাওয়ার থেকে আটকাতে পারতো। এইসব ভাবতে ভাবতেই হথাত এক সিকিউরিটি জোরে একটা চড় মারে সাইদুলের গালে। সাইদুল মাটিতে পড়ে যায়। আবার উঠে দাঁড়ায়।
সাইদুলঃ যত ইচ্ছে মারো। আমি এখান থেকে যাবনা।
সাইদুলের এই স্পর্ধা দেখে, সিকিউরিটি দের পক্ষে আর চুপ করে থাকা সম্ভব ছিলনা। দুজন সিকিউরিটি নিজের নিজের লাঠি দুটো দিয়ে সাইদুল কে বেধড়ক মার মারতে লাগলো। সাইদুল মাটিতে পড়ে যন্ত্রণায় ছটপট করতে লাগলো। এবার যে মেয়েরা ওখানে দাঁড়িয়ে ছিল তাদের ও খুব মায়া হতে লাগলো। রূপসার চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পড়তে লাগলো। রূপসা আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলনা। রূপসা দৌড়ে ওখানে চলে গেলো।
রূপসাঃ প্লিজ ওকে মারবেন না। ও আমার পরিচিত, ও আমার ই কাছে এসেছিলো।
সিকিউরিটি রা সবাই দাঁড়িয়ে যায়। সাইদুল ও উঠে দাঁড়ায়। রুপ্সা সাইদুলের হাত ধরে ওকে কিছুটা দূরে নিয়ে যায়। একজন সিকিউরিটি বলে ওঠে
সিকিউরিটিঃ এই যে মিস, এটা রোমান্স করার জায়গা নয়। আপনি ওকে আগে থেকে যদি চিনে থাকেন তো আমাদের বলেন নি কেন?
রূপসা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। যে মেয়েটা সিকিউরিটি কে নালিশ করেছিল সে এগিয়ে আসে
“রূপসা তুই যদি ছেলেটাকে চিনতিস তাহলে আমায় আটকালি না কেন? এ তুই ভীষণ বাজে কাজ করেছিস। এভাবে একজন কে মার খাওয়ালি”
রূপসা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। রূপসার চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পড়তে থাকে। সাইদুল সেটা লক্ষ্য ও করে। সাইদুল এটা বুঝেও যায় যে এতো মার ও খেলো এর ওষুধ ও পেয়ে যাবে। আবার একজন সিকিউরিটি বলে ওঠে
“আপনার রোমান্স করার ইচ্ছে যদি হয়ে থাকে তাহলে আপনি কলেজ এর দিকে যান। গার্লস হোস্টেল এর সামনে ছেলেদের দাঁড়িয়ে থাকার অনুমতি নেই”
রূপসা বুঝতে পারে যে কথাটা ওর ই উদ্দেশে বলা হয়েছে। রূপসা সাইদুলের হাত টা ধরে ওখান থেকে কিছুটা জোর করেই ওকে নিয়ে যায়। গার্লস হোস্টেল ছাড়িয়ে ওরা অনেক টা দূর অবধি চলে যায়। না তো রূপসা না তো সাইদুল কারুর ই মুখে কোনও কথা নেই। বেশ কিছুটা যাওয়ার পর বাদিকে একটা ফাঁকা মাঠ আর ওখানে কিছু কমবয়সী ছেলে মেয়ে বসে আছে। রূপসা এবার বলে
রূপসাঃ চলো আমরা ভেতরে গিয়ে বসি।
সাইদুল কোনও উত্তর দেয়না, শুধু রূপসার সাথে যেতে শুরু করে। ওরা মাঠের মধ্যে একটা ফাঁকা জায়গা দেখে বসে পড়ে। এবার সাইদুল এতক্ষন পর কথা বলে
সাইদুলঃ কি রূপসা এতক্ষনে নিশ্চয়ই এই গরিবের ছেলেটার ওপর বিশ্বাস হচ্ছে তোমার। আমি চাইলেই কিন্তু পালিয়ে যেতে পারতাম কিন্তু আমি পালিয়ে যাইনি।
রূপসা কোনও উত্তর না দিয়ে শুধু নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে আর রূপসার চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পড়তে থাকে। সাইদুল ও চুপ করে যায়। রূপসা, সাইদুলের হাত টা আলতো করে ধরে বলে ওঠে
রূপসাঃ সাইদুল, আমি অসহায়। আমার বাবা মা আমায় অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছে। আজ আমাদের অবস্থা দেখে তুমি তা বুঝবেনা, কিন্তু আমার বাবা মার অনেক আত্মত্যাগ রয়েছে, আমার আর তিলোত্তমার জন্য।
সাইদুলঃ আমি তো তোমার থেকে কিছুই চাইনি। তুমি এতো কেন ভাবছ? আমি জানি আমার তোমার মধ্যে বিশাল দুরত্ব রয়েছে। আমি তো তোমায় একবারের ও জন্য বলিনি যে তুমি আমায় ভালোবাসো বা আমায় বিয়ে কর।
রুপ্সা আবার চুপ করে যায়। বেশ কিছুক্ষন দুজনেই চুপ করে থাকে।
রূপসাঃ তুমি হয়ত সত্যি ই বুঝবেনা। কিন্তু আমার সত্যি ই কিছু প্রবলেম আছে। আর যে সম্পর্ক টিকবেই না তাকে আগে বাড়িয়ে কি লাভ বলতো।
সাইদুলঃ লাভ ক্ষতি আমি খুব একটা বুঝিনা। আমি সামান্য একটা ছেলে। আমি তো আমার মনের ই কথা মেনে চলেছে ব্যাস এতটুকুই।
রূপসাঃ তুমি ই বলে দাও আমার কি করা উচিত?
সাইদুল কিছুক্ষন চুপ করে থাকে। তারপর কিছুটা অস্ফুট কণ্ঠে বলে ওঠে
সাইদুলঃ তোমায় কবে থেকে দেখি জানিনা। আমার জীবনে প্রচুর যন্ত্রণা দুঃখ কষ্ট আছে। তোমায় দেখলে সব মিলিয়ে যেত। মন তা ঠিক হয়ে যেত। তুমি বাড়ী তে থাকনা, তোমায় চোখের সামনে দেখতে পাইনা আমার তাই আর কিছুই ভালো লাগেনা।
রূপসা কোনও উত্তর দেয়না।
রূপসাঃ সাইদুল এর আগে আমায় কেউ এরকম ভাবে বলেনি। সাইদুল মেয়েদের হৃদয় প্রচণ্ড কমজোর হয়। একটা মেয়ে যখন নিজের মনের কথাগুলো অন্যের মুখ থেকে শুনে নেয় তখন আর তার নিজের হৃদয়ের ওপর কন্ট্রোল থাকেনা। আমি আমার বাবা মাকে ঠকাতে চাইনা।
সাইদুলঃ আমার দোষ তা কি, শুধু কি এটাই যে আমি গরিব। আমি তোমায় ভালোবাসি রূপসা। প্লিজ একটু আমার কথাগুলো বোঝো। আমি নিজেও জানিনা আমি কি করে তোমায় বোঝাবো।
রূপসাঃ তুমি এতটাও হতাশ কেন হয়ে যাচ্ছ। আমার তোমাকে খুব খুব খুব ভালো লাগে। কিন্তু এটাও তো সত্যি যে আমি একজন মেয়ে। প্লিজ একটু ধৈর্য ধর আর আমাকে একটু সময় দাও। আমরা আজ ফোন এ কথা বলব। তুমি আমার ফোন নাম্বার তা রেখে দাও।
সাইদুল রূপসার ফোন নাম্বার তা সেভ করে নেয়।
রূপসাঃ সাইদুল, আমার এবার লেট হচ্ছে। তুমি সাবধানে বাড়ী যাও। আমি তোমায় ১-২ ঘণ্টা পর ফোন করছি।
সাইদুল সাইকেল তা নিয়ে উঠে পড়ে। সাইদুল জানে ওর প্ল্যান সুপারহিট। সাইদুল আসতে আসতে সামনের দিকে এগোতে থাকে। রুপ্সা হোস্টেলের দিকে চলতে শুরু করে। সাইদুল দাঁড়িয়ে পড়ে, একবার পেছন ঘুরে দেখে, রুপ্সা ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসির সাথে সুন্দর ভাবে হাত তা নাড়ছে। হথাত ই সাইদুলের বুক তা কেমন করে ওঠে। সাইদুল সামনের দিকে এগিয়ে চলে আর নিজেকে প্রশ্ন করে “আমি কি সত্যি ই ওকে ভালবেসে ফেললাম। সত্যি ই কি আমার জীবনে এরকম ই একজনকে চাই। আমিও কি মানুষের মত বাঁচতে পারি” সাইদুলের মন তা খুব খারাপ হয়ে গেলো। গাঁজা মদের জীবনে মরুদ্যানের মত করে ফিরে এলো রূপসা। সত্যি ই কি সাইদুল এতক্ষন রূপসার সাথে অভিনয় করছিল। সাইদুল কাকে বেছে নেবে রূপসা না রাজু।
[/HIDE]
 

Users who are viewing this thread

Back
Top