What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

অভিশপ্ত ডায়েরী (Completed) (2 Viewers)

পর্ব ২০- বিধির বিধানঃ
[HIDE]রূপসা ও তিলোত্তমা ও অনেক ভোরে ঘুম থেকে উঠে গেছে। সকালে উঠেই তিলোত্তমা দেখে রাজুর মেসেজ। “কি তিলোত্তমা আসছ তো গরিবের বাড়ী তে” তিলোত্তমা মনে মনে একবার “পাগল একটা” বলে রিপ্লাই করে- “নিশ্চয় আসব তুমি চিন্তা করোনা”। ওরা দুজনেই বাস ধরে চলে আসে। এদিকে বাস স্ট্যান্ড এ রাজু আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিল। কিছুটা দূরে লুকিয়ে ছিল সাইদুল। তিলোত্তমা রাজুকে লক্ষ্য করে মুচকি হাসে একবার। আর কিছুটা দূর থেকে সাইদুল ও লক্ষ্য করে রূপসা কে। এর আগে ও রূপসা কে এতটা গভীর ভাবে লক্ষ্য করেনি। কাল রাতে রাজুর আশ্বাস ও পেয়েছে। ও জানে রাজু যখন একবার ওকে বলেছে তখন রূপসা ওর বিছানায় কিছুদিনের মধ্যেই এসে উথবে। আজ সাইদুল খুব ভাল করে লক্ষ্য করে রূপসা কে। সত্যি বুক, পাছা কোমর সব ই মায়ের মত। খালি ড্রেস টা আলাদা। এই জন্যই রূপসা কে তিলোত্তমা আর মালতী দেবীর চেয়ে এতটা আলাদা লাগে। সাইদুল একবার মনে মনে বলে ড্রেস এ কি আসে যায়, বিছানায় তো শুধুই শরীরটা থাকবে। রাজু আর ওদের পিছু নেয়না। রূপসা ও তিলোত্তমা আসতে আসতে বাড়ীর দিকে পৌঁছে যায়। রাজু সাইদুলের সাথে আজকের সমস্ত প্ল্যানের ব্যাপারে আলোচনা করতে থাকে। [/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
মালতী দেবী স্থির হয়ে এক জায়গায় বসে থাকেন। আর ভাবতে থাকেন ঠিক কি করে উনি তিলোত্তমা কে সব বোঝাবেন। উনি জানেন তিলোত্তমা ঠিক কতটা অভিমানি প্রকৃতির। উনি জানেন বকাঝকা করে কিছুই হবেনা। তিলোত্তমা কে শুধুই বোঝাতে হবে। আর এমন ভাবে ওকে বলতে হবে যাতে ওর মনটা ভেঙ্গে যায়। ওরা দুজনেই বাড়ীতে এসে পৌছায়।
রূপসাঃ মা আমরা কখন বেরব। আর তুমি এরকম ভাবে বসে আছ। কত কিছু গোছাতে হবে বলত।
তিলত্তমাঃ কি হয়েছে মা। দেখে মনে হচ্ছে তুমি কোন চিন্তা করছ। কি হয়েছে বল প্লিজ।
মালতী দেবীঃ তোমরা ড্রেস চেঞ্জ করে আসো। আজ তোমাদের একটা কথা বলব।
তিলত্তমাঃ কি কথা মা, প্লিজ বলনা।
মালতী দেবীঃ না আগে ড্রেস চেঞ্জ করে নাও তারপর বলব।
ওরা দুজনেই ভেতরের ঘরে চলে যায় ড্রেস চেঞ্জ করতে। কিছুক্ষন পরে ওরা আবার ফিরে আসে।
তিলত্তমাঃ হা মা এবার বল কি হয়েছে?
মালতী দেবীঃ তোমরা বস এখানে। তোমাদের আমি কিছু কথা বলব। আর রূপসা দয়া করে আজ আমার কথা গুলো মন দিয়ে শোন এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ।
রূপসাঃ ওহ তুমি আমায় কি ভাবো বলত মা। তুমি বল আমি মাঝে কোন কথা বলব না।
মালতী দেবীঃ তোমরা তো নিশ্চয় জানো যে আমরা যে বাড়ী তায় থাকি সেটা আসলে মানব দার। তোমাদের বাবা অত্যন্ত খ্যাতনামা একজন প্রফেসর। অন্যের দয়ায় আমরা থাকি এটা কি ওনার ব্যাক্তিত্ব অনুযায়ী ভাল লাগে।
রূপসাঃ মা তুমি কি এই বাড়ী টা ছেড়ে দিতে বলছ। আমাদের সমস্ত বন্ধু বান্ধব এই পাড়ায়। অন্য জায়গায় কি আমরা থাকতে পারব। প্লিজ তুমি বোঝো একটু।
তিলত্তমাঃ মা তুমি তো বাবাকে বলতে পার এই বাড়িটা বাবা যদি মানব কাকুর থেকে কিনে নেয় তাহলে তো আর কোন প্রব্লেম ই থাকবে না।
মালতী দেবীঃ তোমাদের দুজনের কথা ভেবে আমরা কখনই তাই এই পাড়া ছেড়ে যাইনি। আসলে প্রবলেম টা লোকে কি বলছে টা নয়। আর সত্যি ই আমরা এই বাড়ী টা কিনতেই পারি।
তিলত্তমাঃ তাহলে প্রবলেম টা কোথায় মা?
মালতী দেবীঃ এই পাড়া টা খুব অসামাজিক। একটা ব্যাপার আমি তোমাদের থেকে লুকিয়েছি। তোমরা এখন বড় হয়েছ। তাই তোমাদের সব খুলে বলব। কিন্তু তোমরা কখনো অন্য কাউকে এব্যাপারে কিছু বলবে না।
রূপসাঃ এমন কি আছে। যা তুমি কোনদিন আমাদের বলনি।
মালতী দেবীঃ শুধু তোমাদের কেন আমি কখন ও তোমার বাবাকেও বলিনি। কিন্তু বাধ্য হয়েই কাল রাতে বলেছি। তোমরা তো জানো আমি কিছুতেই বাথরুম এ স্নান করতে পারিনা। এই পাড়ায় একটা ছেলে আছে ভীষণ বাজে ছেলে। ওর সম্বন্ধে আমি অনেকের থেকেই বাজে কথা শুনেছি। ছেলেটা প্রায় ২-৩ বছর ধরে লুকিয়ে লুকিয়ে আমার স্নান করা দেখত। আমি অনেকবার ধরেও ফেলেছি। আমাকে দেখা মাত্র ও পালিয়ে যেত। কাল ও প্রচুর বারাবারি করেছে। আমি স্নান করছিলাম তখন ও পাঁচিল টপকে ভেতরে চলে আসে। আমি দৌড়ে ঘরে ঢুকে যেই কাপড় পরে বাইরে বেরিয়েছি দেখি ও পালিয়ে গেছে।
রূপসাঃ ওহ কি বাজে ছেলে গো। আমি সামনে পেলে জুতো খুলে ওকে মারতাম। ছেলেটার নাম কি? কেমন দেখতে ওকে?
মালতী দেবীঃ ওর নাম রাজু। পাশের ই বস্তিতে থাকে। লম্বা রোগা মত গায়ের রঙ ফরসা। একটা দোকানে কাজ করে।
তিলোত্তমার মাথা ঘুরতে শুরু করে। কিছুতেই নিজের মায়ের এই কথা গুলো ওর বিশ্বাস হচ্ছিল না। বারবার মনে হচ্ছিল ওর মা মিথ্যে বলছে। যে ওর সম্মান বাচিয়েছে সে কিনা এরকম। তিলোত্তমার চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পরতে লাগলো। মালতী দেবী তা লক্ষ্য ও করলেন।
মালতী দেবীঃ না রূপসা তুমি এসব কিছুই করতে যাবেনা। ছেলেটা খুব ই খারাপ। ব্যাবহার এমন মিষ্টি যে যেকোনো মেয়ের ই মন গলিয়ে দিতে পারে। তোমরা জানো সেদিন ই রুমিদি বলছিলেন ছেলেটার মধ্যে কি আছে কি জানি রুমিদির মেয়েকে এক সময় নিজের প্রেমে ফাঁসিয়ে দিয়েছিল। প্রমিলা কে তোমরা তো দেখেছ। বিশাল সুন্দরী আর সেরকম সুন্দরী, এখন বিয়ে হয়ে গেছে। একসময় ওই রাজু ওকেও ভুলিয়ে ভালিয়ে নিজের প্রেমে ফেলেছিল। বহু কষ্টে ওর বাবা মা সামলেছেন ব্যাপারটা। ছেলেটা একটা জানোয়ার। প্রমিলা কে ছাড়ার জন্য ওর বাবা মার থেকে ১ লাখ টাকা নিয়েছিল।
তিলোত্তমার চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পরতে শুরু করল।
মালতী দেবীঃ তোমরাই বল এতকিছুর পর কি আমাদের আর এখানে থাকা উচিত। তোমার বাবা সারাদিন বাড়ীতে থাকেন না। তোমরা ও বড় হয়ে গেছ। কিছু বিপদ হলে কে দেখবে বল তো।
তিলত্তমাঃ মা বাবাকে বল একটা ফ্ল্যাট দেখতে আমাদের এই পাড়ায় থাকা উচিত নয়।
তিলোত্তমা কথাটা শেষ করেই ভেতরে চলে গেল। মালতী দেবি জানেন তিলোত্তমা খুব কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু মালতী দেবি ও তো মিথ্যে কিছু বলেন নি। রূপসার মানতে কষ্ট হলেও ও কিছু বলল না।
কিছুক্ষনের মধ্যেই সুবীর বাবু এসে হাজির হলেন। তখন ও রূপসা ওখানেই বসে ছিল
সুবীর বাবুঃ হা একদম পাকা কথা বলে এলাম। বালিগঞ্জ এ খুব অল্প দামে ফ্ল্যাট টা পেয়ে যাচ্ছি। তোমরা রাজি হয়ে গেলে আমি আজ ই পেমেন্ট করে দেব। মা রূপসা তুই আর না বলিস না রে। এখানে আমার আর তোর মায়ের থাকতে সত্যি ই আর ভাল লাগেনা। আর তোরাও তো এখানে থাকবি না, থাকবি হোস্টেল এ। দেখবি কলেজ এ কত নতুন নতুন বন্ধু হয়ে যাবে।
রূপসা কিছুই বলল না, ভেতরে তিলোত্তমার কাছে চলে গেল।
সুবীর বাবুঃ মালতী, কি হোল ওরা কি রাজি? তুমি ঠিক করে বুঝিয়ে বলেছ তো?
মালতী দেবীঃ হা তিলোত্তমা কে এমন ভাবে বুঝিয়েছি যে ও আর জিবনে কখনো ওই ছেলেটার সাথে কথা বলবে না। জানত মেয়েটা খুব কষ্ট পেয়েছে। আমি দেখছিলাম ওর চোখ দিয়ে জল পড়ছিল।
সুবীর বাবুঃ তুমি যা করেছ তাতে ওর ভালই হবে। তুমি কোন চিন্তা করোনা, এবার থেকে আর আমাদের কোন প্রবলেম ই থাকবে না।
এদিকে তিলোত্তমার মোবাইল এ একের পর এক রাজুর মেসেজ আসছে। তিলোত্তমা ঠিক যতটা নরম ঠিক তততাই কঠোর। প্রথম টা ওর মেনে নিতে প্রচুর কষ্ট হয়েছিল কিন্তু তারপর ও নিজের মন কে শক্ত করে। ও রিপ্লাই করে “রাজুদা প্লিজ আমায় আর মেসেজ করোনা। আমি কাল রাতে অনেক ভেবেছি। আমার একটা স্ট্যাটাস আছে যার সাথে তুমি বেমানান। সত্যি আমরা কখনই বন্ধু হতে পারিনা। তুমি ভাল থেকো আর আমায় মেসেজ করোনা। আমি আমার নাম্বার চেঞ্জ করে নেব”। রাজু এই মেসেজ টা দেখে ঘাবড়ে যায়। ওর সমস্ত প্ল্যান ভেঙ্গে চৌচির হয়ে যায়। ও সাইদুলের কাছে যায় আর ওকে বলে কি হচ্ছে ভেতরে তা খেয়াল করতে। সাইদুল ও যথারীতি দুধ নিয়ে সুবীর বাবুর বাড়িতে আসে। সুবীর বাবু ওকে দেখা মাত্র বলেন
সুবীর বাবুঃ ভাল হয়েছে সাইদুল তুমি তাড়াতাড়ি এসে গেছ। আমরা এই বাড়ি তা ছেড়ে দিচ্ছি। অন্য জায়গায় চলে যাব। তুমি এই মাসের টাকা টা নিয়ে নাও।
সাইদুল কিছুই বুঝতে না পেরে রাজুকে এসে সব বলে। রাজু খুব হতাশ হয়ে যায় কিন্তু ওর পক্ষে আর কিছুই করার থাকেনা।
সুবীর বাবুদের সন্ধ্যের সময় ফ্লাইট ওনারা সবকিছু গুছিয়ে নেন। এরমধ্যেই একবার সুবীর বাবু ফ্ল্যাটের জন্য আডভান্স করে আসেন। কিছু লেবারের সাথেও কথা হয়, ওরা এই মাঝের দুদিনে বাড়ির মালপত্র ওখানে নিয়ে জাবেন আর দেখভাল করবেন বিপ্লব বাবু। রাজু ও সাইদুল উদাস দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু ওদের পক্ষে সত্যি ই কিছুই করার ছিলোনা। ওরা দুজনেই হাল ছেড়ে দেয়। সুবীর বাবুও একবার মানব বাবুকে ফোন করেন ও বলেন ঘরের চাবি বিপ্লব বাবুর থেকে নিয়ে নিতে ওরা একদম ফ্ল্যাটেই চলে যাবে। মানব বাবুও হতাশ হয়ে পড়েন।
নির্দিষ্ট সময়েই সুবীর বাবু নিজের দুই মেয়ে আর স্ত্রী কে নিয়ে প্লেন এ ওঠেন। বাড়ি টা ছাড়ার সময় ওনাদের প্রত্যেকের ই চোখে জল এসে গেছিল। কিন্তু বিধির বিধান বোধ হয় কেউ ই খণ্ডাতে পারেনা।
[/HIDE]
(প্রথম খণ্ড শেষ)
 
দ্বিতীয় খণ্ডঃ
পর্ব ১
[HIDE]নতুন ফ্ল্যাট নতুন পরিবেশ এর চেয়েও বোধ হয় কঠিন যা তা হোল পুরনো স্মৃতি গুলো ভুলে যাওয়া। আজ ই সকালে সুবীর বাবু ও ওনার পরিবার কলকাতায় ফিরে এসেছেন। বালিগঞ্জের এই ফ্ল্যাট টা খুব এলাহি একটা জায়গায়। কিন্তু সেই আনন্দ টা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। হয়ত সুবীর বাবু জীবনে এত কঠিন কোনও পদক্ষেপ এর আগে কখনই নেন নি। মনের দিক থেকে উনিও প্রচণ্ড ভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন কিন্তু কাউকেই তা বুঝতে দিচ্ছেন না। মালতী দেবী হয়ত একটু শান্তি পেয়েছেন তার স্বামী মানব বাবুর সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে দেওয়ায়, কিন্তু কোথাও যেন একটা স্বজনকে হারানোর একটা দুঃখ থেকেই গেছে। মনে মনে হয়ত উনি অনেকবার ই বলেছেন “কেন মানব দা কেন এরকম করলে তুমি?” ৪ জন মানুষ আপ্রান চেষ্টা করছে স্বাভাবিক হতে। বাড়ীর অভিভাবক হিসেবে সুবীর বাবু সেটা বোঝেন এবং উনি নিজেও চান যে ওনার বাড়ী তে একটা সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসুক, আগের মতই সবাই আনন্দে মেতে উঠুক। আর এর উপায় একটাই, নিজের নিজের কাজে প্রচণ্ড ব্যাস্ত হয়ে যাওয়া। [/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
এখন বাজে বিকেল ৪ তে। সারাদিন বাড়ীটায় খুব আনুষ্ঠানিক কিছু কথাবার্তা ছাড়া আর সেরকম কোনও কথাই হয়নি। তিলোত্তমার মেডিক্যাল কলেজ এ হয়ে গেছে, মুল বিষয় বস্তু ছিল এটাই। সুবীর বাবু ভীষণ ভাবে চাইছেন এই জায়গা তা থেকে বেরিয়ে আসতে নতুন কিছু একটা করতে। উনি ভেতরে ঢুকলেন। ভেতরের ঘর টায় রুপ্সা ও তিলত্তমা চুপ করে বসেছিল। রুপ্সার হাতে মোবাইল, আর তিলোত্তমার হাতে নিউস পেপার। সুবীর বাবু বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলেন ওদের দিকে।
সুবীর বাবুঃ শোন তিলোত্তমা, পিএমটি এক মাস পিছিয়ে গেছে, মানে তুই হাতে আরও একটা মাস পাচ্ছিস। এইসময় তা তুই যদি একটু ঠিক করে ইউটিলাইজ করতে পারিস তাহলে হয়ত হয়েও যেতে পারে।
তিলত্তমাঃ না বাবা আমার আর ভাল লাগছে না। থাক না আমার তো একটা মেডিকেল কলেজ এ হয়ে গেছে, আর অন্য কোথাও কেন ট্রাই করব।
সুবীর বাবুঃ শোন মা, এরকম ভাবিস না। স্টেট এর কলেজ আর অল ইন্ডিয়া এর কলেজ এর মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ আছে। তুই এত কষ্ট করলি দুটো বছর, আরও একটু কর না, যদি হয়ে যায়, কোথায় যাবি নিজেও জানিস না। কত সম্মান হবে। আর আমি জানি তদের দুজনের ই মন খারাপ এই নতুন বাড়ী তা নিয়ে। কি করবি বল মা, আমাদের ও কি ভাল লাগছে। ওটা আমার নিজের বাড়ী ছিলনা। কেন আমরা অন্যের দয়ায় থাকতে যাবো।
এতক্ষনে তিলোত্তমা ও রূপসার একটু মন টা চেঞ্জ হোল। ওরা সুবীর বাবুর কথা টা খুব মন দিয়ে শুনল।
তিলত্তমাঃ হাঁ বাবা তুমি ঠিক ই বলেছ। আমিও ভাবছিলাম পিএমটি টা সিরিয়াসলি দি। আর রূপসাও তো আইআইটির জন্য প্রায় দেড় মাস সময় পাচ্ছে। ভাল হবে দুজনে মিলে পড়ব।
বাড়ী টা চেঞ্জ করার ফলে রূপসার ও মন খুব খারাপ হয়ে গেছে। তিলোত্তমার এই কথাটা ওর খুব ভাল লাগলো। ও এক কথায় রাজি হয়ে গেলো।
সুবীর বাবুঃ আজ তোরা রেস্ট নিয়ে নে। আমি আজ সুব্রত কে ফোন করব। ওর সাথে কথা বলি। কাল থেকে তোরা সিরিয়াসলি পড়াশুনা শুরু করে দিস।
সুবীর বাবু জানেন ওনার কথাটা ওনার দুই মেয়ে খুব ভাল ভাবেই নিয়েছে, এবার ওনার একমাত্র কাজ মালতী দেবী ও অবশ্যই নিজেকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে যাওয়া। প্রথমেই নিজের কথা। এই মুহূর্তে ওনার দরকার খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ যেটা নিয়ে উনি ব্যস্ত থাকতে পারবেন। তিলোত্তমা কে নিয়ে যাওয়ার ঠিক আগে উনি যখন ওনার এইচওডি কে ফোন করে জানিয়েছিলেন, তখন ওনার এইচওডি অনাকে কিছু একটা গবেষণা মুলক কাজের কথা বলছিলেন, উনি অতটা সিরিয়াসলি ব্যাপারটা নিয়ে ভাবেননি। এক মুহূর্তের মধ্যেই সুবীর বাবুর মনে এটা ঢুকে গেলো যে এই প্রোজেক্ট তাই ওনাকে সমস্ত বাজে ঘটনা গুলোকে ভুলিয়ে দিতে পারে।
সুবীর বাবুর কলেজ এর এইচওডি রামকিঙ্কর বাবু খুব ভাল মানুষ এবং উনি সুবীর বাবুকে নিজের ছোট ভাইয়ের মতই স্নেহ করেন। সুবীর বাবু ঠিক করেন রামকিঙ্কর বাবুকে একটা ফোন করবেন।
সুবীর বাবুঃ স্যার কেমন আছেন? কলেজ কেমন চলছে?
রামকিঙ্কর বাবুঃ আরে সুবীর তোমার ই ফোনের অপেক্ষায় ছিলাম। বল মেয়ের অ্যাডমিসন হোল?
সুবীর বাবুঃ হাঁ স্যার, তিলোত্তমার অ্যাডমিসন হয়ে গেছে। স্যার আপনি আমাকে একটা কোনও প্রোজেক্ট এর ব্যাপারে বলছিলেন ১২ তারিখ। আমি ঠিক করে শুনতে পারিনি।
রামকিঙ্কর বাবুঃ হাঁ সুবীর একটা প্রোজেক্ট আছে। বিশাল মাপের প্রোজেক্ট। আর তুমি জানই যে এত বড় একটা প্রোজেক্ট আমি তোমায় ছাড়া অন্য কাউকেই দিতে পারিনা। আগে তুমি বল ফ্রি কবে থেকে হচ্ছ?
সুবীর বাবুঃ স্যার আমি আজ সকালে ফিরেছি। কাল থেকে একদম ফ্রি। কাল ই কলেজ জয়েন করছি।
রামকিঙ্কর বাবুঃ মানে তুমি কি কাল থেকে ২-৩ দিন টানা সময় দিতে পারবে? মাঝে কোনও কাজ থাকবে না তো? ২-৩ দিন ও হয়ত লাগবে না।
সুবীর বাবুঃ হাঁ স্যার আমি একদম ফ্রি।
রামকিঙ্কর বাবুঃ বাহ তাহলে তো দারুন ব্যাপার। সুবীর তোমায় কাল কলেজ এ জয়েন করতে হবে না। আমি তোমায় রিসার্চ লিভ দিচ্ছি। তুমি কাল থেকেই প্রোজেক্ট টায় লেগে যাও। সেন্ট্রাল গভরমেনট এর প্রোজেক্ট বুঝতেই তো পারছ।
সুবীর বাবুঃ হাঁ স্যার বুঝলাম। কিন্তু আউট অফ স্টেট কি? তাহলে একটু প্রবলেম হবে। কারন এই সবে ঘরটা চেঞ্জ করলাম তো।
রামকিঙ্কর বাবুঃ আরে না না অত চিন্তা করোনা। স্টেট তো ছেরেই দাও, একদম এই কলকাতা শহরের ওপর কাজ। শোন সুবীর তোমায় ফোন এ সব বলা সম্ভব নয়, আমিও তো বালিগঞ্জ এই থাকি, যদি পার তো সন্ধে বেলা একবার আসনা আমার বাড়ী তে ওখানেই সব কিছু তোমায় বুঝিয়ে বলছি।
সুবীর বাবুঃ ঠিক আছে স্যার আমি আর কিছুক্ষন পরেই আসছি আপনার ফ্ল্যাটে।
সুবীর বাবু ভীষণ খুশি হলেন। তার অনেক গুলো কারন আছে। এক, উনি একটা প্রোজেক্ট পাচ্ছেন। দুই প্রোজেক্ট টা কলকাতা তেই। তিন প্রোজেক্ট টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যাই হোক ওনাকে কিছুক্ষনের মধ্যেই বেরতে হবে। তাই ভাবলেন একবার মালতী দেবী কে সব বুঝিয়ে বলবেন। একবার ভেতরের ঘরটায় উকি মারলেন, রূপসা ও তিলোত্তমা মন দিয়ে পরাশুনা করতে শুরু করে দিয়েছে। সুবীর বাবু খুব খুশি হলেন। মনে মনে ভাবলেন যাক গে তাহলে মেয়ে গুলোকে নিয়ে আর চিন্তা থাকল না। এখন একজন কে নিয়েই চিন্তা তিনি হলেন মালতী দেবী।
সুবীর বাবু জানেন মালতী দেবী ড্রয়িং রুমে বসে আছেন। সুবীর বাবু আসতে আসতে ড্রয়িং রুমের দিকে এগিয়ে গেলেন। মালতী দেবী আনমনে দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে বসে আছেন। সুবীর বাবুর ও খুব খারাপ লাগলো। ওনার চেয়ে বেশি হয়ত কেউ ই জানে না মালতী দেবী এই সংসার টাকে তৈরি করতে ঠিক কি পরিমান কষ্ট করেছেন। সত্যি ই মালতী দেবী কে ওই অবস্থায় দেখে সুবীর বাবুর মন প্রচণ্ড খারাপ হয়ে গেলো। সুবীর বাবু পেছন থেকে ওনার কাঁধে একটা হাত রাখলেন।
মালতী দেবীঃ কি গো চা খাবে? চা বানিয়ে দেব?
সুবীর বাবুঃ না তোমায় এখন রান্নাঘরে যেতে হবেনা। মালতী আমি জানি তুমি আমার ওপর একটু হলেও অসন্তুষ্ট। আমি অনেক ভুল করে ফেলেছি মালতী, তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও প্লিজ।
মালতী দেবীঃ আরে এ তুমি কি বলছ? সব ভুলে যাও। আসলে এতদিন ওই বাড়ী টায় আমরা ছিলাম তো। আমি তো বিয়ে হয়ে ওখানেই উথেছিলাম। সেই ভাবে ভাবলে ওটাই আমার শশুর বাড়ী, তাই একটু মন খারাপ হচ্ছে।
সুবীর বাবুঃ আমি সব ই বুঝি। কিন্তু জানো তো মালতী, তোমার কথা মত অনেক আগেই আমার ওখান থেকে চলে আসা উচিত ছিল। সম্মান সবার আগে।
মালতী দেবীঃ আমি খুব খুশি হয়েছি গো। যতই হোক এটাই আমাদের নিজেদের বাড়ী। আমি সত্যি ই খুশি।
সুবীর বাবুঃ মালতী আমরা দুজনেই মেয়েদের জন্য অনেক কিছু ছেড়েছি। আমি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই। খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা।
মালতী দেবীঃ কি কথা বলই না আমায় প্লিজ।
সুবীর বাবুঃ আমি জানি তুমি আমার ওপর রাগ করেছ। মানবের সাথে যে ব্যবহার আমি করেছি, তা তুমি কিছুতেই মানতে পারছ না। আর এটাই তোমার মন খারাপ করার কারন।
মালতী দেবীঃ তুমি ভুল বুঝেছ আমায়। আমি এরকম কিছুই ভাবিনি। সত্যি ই এরকম কিছু ভাবিনি।
সুবীর বাবুঃ না মালতি, তোমায় কতগুলো কথা না বললে নয়। মানব ভাল লোক নয়। ওর উপকারের জন্য আমার চোখ দুটো বন্ধ ছিল। সেদিন রাতে এমন কিছু কথা ও বলেছে যা আমি কখনও তোমায় বলতে পারব না।
মালতী দেবীঃ থাক না। তুমি ই তো আমার সব। কি দরকার এইসব নিয়ে ভাবার। যা হয়েছে সব ভুলে যাও। আমরা এখন অনেক দূরে। সব ভুলে যাও।
সুবীর বাবুঃ মালতী, মানব কেন এরকম করল। আমি তো ওকে নিজের ভাইয়ের মত ভাবতাম।
মালতী দেবীঃ তুমি প্রচণ্ড সরল, তাই তোমায় সবাই ঠকায়। প্লিজ ভুলে যাও সব। এই শোন না আজ মাটন করব। রূপসা অনেকদিন বলছিল মাটন খাবে।
সুবীর বাবুঃ হাঁ হাঁ তাই কর। আমি ফেরার সময় মাটন নিয়ে আসব। ও তোমাকে তো বলতেই ভুলে গেছি, রামকিঙ্কর বাবু ফোন করেছিলেন আমায় এই মুহূর্তেই একবার যেতে হবে ওনার বাড়ী। একটা প্রোজেক্ট এর কাজ উনি আমায় দেবেন। তবে চিন্তার কিছু নেই। কলকাতা তেই।
এরপর সুবীর বাবু আসতে আসতে রেডি হয়ে রামকিঙ্কর বাবুর বাড়ীতে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে শুরু করলেন।
[/HIDE]
 
[HIDE]পর্ব ২-সুতানুটি জমিদারবাড়িঃ [/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
রামকিঙ্কর বাবুঃ সুবীর তুমি এসেছ খুব ভাল হয়েছে। আর একটা দিন দেরি হয়ে গেলেই আমায় প্রোজেক্ট টা অন্য কাউকে দিয়ে দিতে হত। কিন্তু তুমিও জানো এত গুরুত্বপূর্ণ কাজে আমি তোমার চেয়ে বেশি অন্য কাউকে ভরসা করিনা।
সুবীর বাবুঃ হাঁ স্যার, আমি জানি সেটা তাই তো এত তাড়াহুড়ো করে আমিও চলে এলাম। কাল থেকেই আমি কাজে নেমে যাবো। আমাকে ভাল করে বুঝিয়ে বলুন কি করতে হবে।
রামকিঙ্কর বাবুঃ তুমি নিশ্চয় শোভা বাজার রাজবাড়ীর নাম শুনেছ, তোমার হয়ত কিছু পরাশুনাও আছে এব্যাপারে। কিন্তু সুবীর একটা কথা কখনও ভেবে দেখেছ, যেসময় আমাদের এই কলকাতা কলকাতা হয়ে ওঠেনি, ইংরেজ রা সবে সবে আসা শুরু করেছে সেই সময় তো আমাদের এখানে রাজতন্ত্র ছিলনা।
সুবীর বাবুঃ হাঁ স্যার একদম ঠিক। সেইসময় জমিদারী প্রথা ও মহাজন দের ই রমরমা ছিল।
রামকিঙ্কর বাবুঃ এক্স্যাক্টলি আমি এটাই বলতে চাইছি। শোভা বাজার রাজবাড়ীর তথাকথিত রাজারা কেউ ই জমিদার গোছের নয়। সিপাহি বিদ্রোহ বা সমসাময়িক সমস্ত আন্দলনে এদের ভুমিকা ইতিহাসে রয়েছে। কিন্তু সেই সময়কার কলকাতার জমিদার দের ব্যাপারে ইতিহাসে কতটুকু উল্লেখ রয়েছে।
সুবীর বাবুঃ স্যার সেই অর্থে কোনও উল্লেখ ই নেই। তবে হাঁ সুতানুটি জমিদারির নাম শোনা গেছে কিছু লেখকের গ্রন্থে।
রামকিঙ্কর বাবুঃ ব্যস এটাই। সুতানুটি। তুমি কি বুঝতে পারছ এই একটা শব্দই ইতিহাসের পাতার ঠিক কত বড় মিসিং লিঙ্ক। তোমাকে এই কাজটাই করতে হবে। শ্যামবাজার অঞ্চলে একটা পোড়ো বাড়ী রয়েছে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস ওটাই জমিদার বাড়ী। ওখানে কাল ভোর বেলায় তোমায় যেতে হবে।
সুবীর বাবুঃ ঠিক আছে স্যার। কিন্তু আমার টিমে কে কে থাকছে?
রামকিঙ্কর বাবুঃ কেউ নয়, তুমি একা। এত সিক্রেট একটা প্রোজেক্ট এর সাফল্য কেন আমরা অন্যের সাথে ভাগ করে নেব। তুমি একাই যাবে। আমি এই শরীরে আর অ্যাডভেঞ্চার এ জাচ্ছিনা। আর হাঁ সুবীর তোমার ভুতে বিশ্বাস নেই তো?
সুবীর বাবুঃ আপনি কি যে বলেন আমি ওসব মানিনা।
রামকিঙ্কর বাবুঃ গুড। তবে যতটুকু আমি জানি, ওই বাড়ী টায় কেউ যায়না। সবাই বলে ওতে নাকি ভুত আছে। বহু সাহসী মানুষ অ্যাডভেঞ্চার করতে গিয়ে ওখানে অকালে প্রান দিয়েছে। যদি তুমি চাও আমি তোমার সিকিউরিটি এর ব্যবস্থা করে দিতে পারি।
সুবীর বাবুঃ না স্যার, আমি একাই যাবো। আর যাচ্ছি তো সকালে। যতদূর জানি ভুতের দেখা রাতেই মেলে।
এরপর বহুক্ষন রামকিঙ্কর বাবু ও সুবীর বাবু নিজেদের আগত গবেষণা নিয়ে আলোচনা করেন। সুবীর বাবু যখন ওখান থেকে বেরন তখন প্রায় সন্ধে ৭ টা বেজে গেছে। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে সুবীর বাবু ভাবতে থাকেন এই প্রোজেক্ট টা ওনার সমস্ত হতাশা ও অনুশোচনা কে দূর করে দেবে। সেই মুহূর্তেই ওনার মনে পরে মালতী দেবীর সেই উদাশ হয়ে বসে থাকার দৃশ্য টা। রূপসা ও তিলোত্তমা তো নিজেদের পড়াশুনা ও নতুন জীবনের হাতছানিতে সব ই ধীরে ধীরে ভুলে যাবে। কিন্তু সত্যি ই মালতী দেবীর কাছে আঁকড়ে ধরে বাঁচার মত হয়ত কিছুই নেই। সুবীর বাবু মনে মনে ভাবতে থাকেন সত্যি ই উনি নিজের স্ত্রী এর সাথে অনেক অবিচার করে ফেলেছেন। নিজের কাজ, গবেষণা এগুলো ওনার সাথে মালতী দেবীর অনেক অনেক দুরত্ব তৈরি করে দিয়েছে। আর উনি কখনও চেষ্টাও করেন নি এই দুরত্ব কে ঘুচিয়ে ফেলতে। যদিও সুবীরবাবু প্রচণ্ড অপটিমিষ্টিক। মনে মনে ভাবেন, বিশাল একটা দেরি ও হয়ে জায়নি হয়ত। ভালবাসার কি বয়স আছে নাকি। মেয়েরা তো বাইরে চলে যাচ্ছে, তারপর তো ওনারা দুজনে বাড়ীতে একাই। নিজেদের ইচ্ছে মত মন ও শরীর দুটো নিয়েই আনন্দ করা যাবে। শরীর এই কথা টা মনে পরতেই সুবীর বাবুর শরীরে একটা শিহরন ওঠে। কাল থেকে তো আবার একটা নতুন কাজ, কবে ফ্রি হবেন তা উনিও জানেন না। ক্ষতি কি আজ রাতে যদি উনি একবার মালতী দেবীর সাথে না পাওয়া ভালবাসা তা মিটিয়ে নেন। সুবীর বাবুর প্রচণ্ড ইচ্ছে হচ্ছে আজ একটু ভালবাসতে। কিন্তু কি যেন একটা জিনিষ ওনাকে ভেতর থেকে আটকে দিচ্ছে। কি একটা ভয়। সুবীর বাবু একবার ভাবেন, একটু উত্তেজনা দরকার। রাস্তায় তখন বেশ ভালই ভিড়, আশেপাশে প্রচুর লোক আর জায়গা টাও ওনার কাছে খুব অচেনা। হথাত রাস্তার পাশে একটা দোকান দেখে উনি দাঁড়িয়ে যান। কেন জানিনা ওনার মন একবার বলে ওঠে এর চেয়ে বেশি উত্তেজনা বোধ হয় আর অন্য কোনও কিছুই দিতে পারেনা। সুবীর বাবু চারপাশ তা একবার দেখে নিয়ে বারে ঢুকে পরেন। দু পেগ রামের অর্ডার করেন। রাম হাঁ ঠিক সেই ব্র্যান্ডের ই রাম তা যেটা সেই রাতে উনি মানব বাবুর সাথে খেয়েছিলেন। ওয়েটার ড্রিংক সার্ফ করে দিয়ে যায়।
এর আগে সুবীর বাবু একা কখনই ড্রিংক করেন নি। এক একটা চুমুকের সাথে ওনার শরীরে নতুন নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। মনে পরে যায় সেই রাতের প্রতিটি ঘটনা। মানব বাবুর সেই গল্প তা যে আসলে ওনাকে ফাঁদে ফেলার একটা রাস্তা ছিল এই মুহূর্তে তা বুঝতে আর কোনও অসুবিধাই ওনার হয়না। প্রতিটি ঘটনা ওনার মনে পড়তে থাকে আর তার সাথে সাথে শরীরের পঞ্চম রিপু ও ক্রমশ সতেজ হতে থাকে। এই ভাবে প্রায় ৬ পেগ কখন যে শেষ হয়ে গেছে ওনার নিজের ও কোনও খেয়াল নেই। কেবিনে বিল মিটিয়ে আসতে আসতে বাড়ীর দিকে রওনা দেন। চোখে তখন মালতী দেবীর নগ্ন দেহটা ভেসে উঠছে। একবার ভেবে নেন, হাঁ কনডম রয়েছে বাড়ীতে। মনে মনে বলেন আজ যাই হয়ে যাক মালতীকে আমি নিজের সব ভালবাসা উজাড় করে দেব।
সুবীর বাবু যখন বাড়ী পৌঁছান তখন রূপসা ও তিলোত্তমা ডাইনিং টেবিলে বসে খাচ্ছে। সুবীর বাবু একবার ভেতরের দিকে উকি মেরে সোজা শোয়ার ঘরটায় ঢুকে গেলেন। রূপসা ও তিলোত্তমার ব্যাপার তা খুব অদ্ভুত লাগলেও মালতী দেবীর কাছে ব্যাপার তা খুব চেনা। সুবীর বাবুর চোখ ও হাটার ভঙ্গি দেখেই উনি বুঝেছেন যে সুবীর বাবু ড্রিংক করে এসেছেন, কিন্তু উনি ওখান থেকে উথলেন না। রূপসা ও তিলোত্তমার খাওয়া হয়ে গেলে ওরা নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পরে। এরপর মালতী দেবী আসতে আসতে শোয়ার ঘরটায় ঢোকেন ও দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেন যাতে মেয়েরা কিছু শুনতে না পায়।
মালতী দেবীঃ (কিছুটা রাগ প্রকাশের ভঙ্গিতে) আজ কেন ড্রিংক করেছ? তুমি তো এর আগে এরকম ছিলেনা। আমায় বলছ স্বাভাবিক হতে, মেয়েদের বলছ সব ভুলে যেতে, অথচ নিজে পুরনো কথা গুলো ভুলতে পারছনা।
মালতী দেবী হয়ত আরও কিছু বলতে জাচ্ছিলেন কিন্তু সুবীর বাবু ওনাকে সেই সুযোগ দিলেন না। প্রায় দৌড়ে এসেই উনি মালতী দেবীর মুখটাকে দুহাত দিয়ে জাপটে ধরে প্রচণ্ড উদ্দিপনা নিয়ে ওনাকে কিস করতে শুরু করলেন। মালতী দেবী কিছুটা হতবাক ই হয়ে গেলেন। পাগলের মত মালতী দেবীর ঠোঁট দুটোকে জিভ আর নিজের ঠোঁট দিয়ে ওলট পালট করতে করতে উনি একদম দেওয়ালে গিয়ে মালতী দেবীর শরীর টাকে ব্যাল্যান্স করলেন। এদিকে মুহূর্তের মধ্যে মালতী দেবীর মাথাটা ঘুরে গেলো। সেই একি মুখের গন্ধ, একি স্টাইল ওনাকে সেই রাতের বিভীষিকা তা বার বার করে মনে করাতে লাগলো। কিছুটা মনের ভুলেই মনে হোল এটা সুবীর নয় মানব। খুব জোরে একটা ঠেলা দিয়ে উনি সুবীর বাবুকে সরিয়ে দিলেন। তারপর অনেকক্ষণ সুবীর বাবুর মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করলেন না এ আমার স্বামী আমি কোনও অন্যায় করছি না। কোনরকমে নিজেকে সামলে বলে উথলেন
মালতী দেবীঃ না এখন নয়। প্লিজ কিছু মনে করোনা। মেয়েরা এখনো ঘুমায়নি। আর তোমার আজ প্রচুর কষ্ট হয়েছে, আজ তুমি রেস্ট নাও, অন্য কোনদিন।
সুবীর বাবু প্রচণ্ড আহত হয়েছেন তারপর শরীরে মদের নেশা।
সুবীর বাবুঃ কি হয়েছে মালতী। তুমি আমার ওপর রাগ করে আছো না এখনো? প্লিজ আমায় ক্ষমা কর। আমি হয়ত কোনদিন তোমায় বোঝাতে পারব না, সেদিন আমি কিছুই এরকম চাইনি। আমি মানবকে তোমার বা মেয়েদের চেয়েও বেশি ভালবাসতাম। আমার ও প্রচুর কষ্ট হয়েছে।
মালতী দেবীঃ আরে প্লিজ এসব ভেবনা। আমি তো তোমার কথা ভেবেই না বললাম। আজ অবধি কখনও কি আমি তোমায় ঠকিয়েছি।
সুবীর বাবুঃ আমি সেটা বলিনি মালতী। কিন্তু বিশ্বাস কর যে মানব কে আমি বিশ্বাস করেছি, আর ভুল শুধু এটাই।
সুবীর বাবুর চোখ দুটো ছলছল করে উঠল। এবার আর মালতী দেবীর পক্ষে নিজেকে কন্ট্রোল করা সম্ভব ছিলনা। মালতী দেবি আসতে আসতে এগিয়ে গেলেন।
মালতী দেবীঃ এই কি হয়েছে? প্লিজ আমায় বল। আমি তো আছি। কেন মন খারাপ করছ বল।
সুবীর বাবু মাথা নিচু করেই দাঁড়িয়ে থাকলেন। মালতী দেবীর প্রচণ্ড মায়া হোল। যে মানুষ টাকে এত বেশি শ্রদ্ধা করেন উনি তার এই অসহায়তা কিছুতেই ওনার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। ওনার বারবার মনে হোল স্বামির ভালবাসা ভগবানের ডান, একে উপেক্ষা করে উনি বিশাল ভুল করেছেন। নিজের থেকেই মুখটা উঁচু করে সুবীর বাবুর মুখের কাছে নিয়ে গেলেন। কিন্তু মুখের সেই গন্ধ তা কেন জানিনা ওনার মনটাকে একটা চরম ঘৃণায় ভরিয়ে দিল। হয়ত মালতী দেবি বহু চেষ্টা করেও মানব বাবু ও সেই রাতের স্মৃতি তা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। বহু চেষ্টা করলেন একবার স্বামীর দুটো ঠোঁট কে স্পর্শ করতে কিন্তু পারলেন না। নিজেকে কোনরকমে সামলে নিয়ে
মালতী দেবীঃ প্লিজ আগে খেয়ে নাও, আমিও বাসন গুলো ধুয়ে নি। তারপর সব হবে। প্লিজ আর মন খারাপ করোনা।
সুবীর বাবু ডাইনিং টেবিলে গিয়ে খেতে শুরু করলেন। মালতী দেবীর খাওয়া আগেই হয়ে গেছে। উনি বাসন মাজতে শুরু করলেন। মালতী দেবীর মন পরে রইল কিছুক্ষন আগে ঘটে যাওয়া ওই ঘটনায়। কেন উনি চেষ্টা করেও সুবীর বাবুকে কিস করতে পারলেন না, কেন ওনার মনে এই অবান্তর কথা গুলো এসে যাচ্ছে। উনি এসব ই ভাবতে লাগ্লেন।
[/HIDE]
 
পর্ব ৩- মনের কলঙ্কঃ
[HIDE]সুবীর বাবুর পেট এমনিতেই ভরে ছিল। তাই বেশি কিছু না খেয়ে উনি উঠে পড়লেন। হাত ধুয়ে নিয়ে জামা কাপড় চেঞ্জ করতে শুরু করলেন। দ্রুত নিজের জামা প্যান্ট তা ছেড়ে দিয়ে গেঞ্জি আর বারমুন্দা পড়ে শোয়ার জন্য রেডি হয়ে গেলেন। আজ সুবীর বাবুর মনে আগুন জ্বলছে। যেভাবে হোক আজ মালতী দেবীর মন ঠিক করে ওনাকে আনন্দ দিতে হবে। সুবীর বাবু বাথরুম এর কাছটায় এসে দাঁড়ালেন। মালতী দেবী তখন বাসন মাজতে ব্যস্ত, ওনার হলুদ সাড়ী আর সবুজ ব্লাউজ তা হাঁটুর অনেকটাই ওপরে ওঠানো। এক দর্শনেই সুবীর বাবুর শরীর তা ভেতর থেকে গুলিয়ে উঠল, ইচ্ছে করল এক্ষুনি গিয়ে পিছন থেকে জাপটে ধরে ওই ফর্সা নধর শরীর টা চটকে লাল করে দিতে। কিন্তু না ঘরে মেয়েরা আছে। এইভেবেই উনি নিজেকে শান্ত করলেন।[/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
সুবীর বাবুঃ মালতী প্লিজ বেশি দেরি করোনা আমার তোমার সাথে অনেক কথা আছে।
মালতী দেবী পেছন ঘুরে দেখলেন একবার, সেই সাদা গেঞ্জি আর নিল বারমুন্দা টা দেখে ওনার মাথাটা হথাত করেই ঘুরে গেলো। কোনরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে উনি একটু হেসে জবাব দিলেন
মালতী দেবীঃ আমার জাস্ট ৫ টা মিনিট লাগবে। বাস বাসন গুলো একটু ধুয়ে দি আমি আসছি। তুমি গিয়ে সুয়ে পর আমি আসছি।
সুবীর বাবুঃ প্লিজ মালতী একটু তাড়াতাড়ি কর। তুমি সব ই বোঝো। প্লিজ একটু তাড়াতাড়ি করার চেষ্টা কর।
মালতী দেবি শুধু একটু হেসে সম্মতি জানালেন। সুবীর বাবু আবার ভেতরে ঢুকে গেলেন আর মালতী দেবী আবার বাসন মাজায় মন দিলেন। সুবীর বাবু ভেতরে যাওয়ার পর ওনার মাথাটা আবার ঘুরতে শুরু করল। মালতী দেবী চোখ টা বন্ধ করে নিলেন। হথাত ওনার কানের সামনে একটা দীর্ঘশ্বাস, মদের তিব্র গন্ধ... ঠিক যেন পুরুষ মানুষের শরীরের উত্তেজনা। উনি কোনরকমে চোখ টা খুললেন। মালতী দেবী নিজেও খুব ভালো করে জানেন শত চেষ্টা করেও উনি সেই রাতের কথাটা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। আসল কথাটা প্রকৃত কষ্ট টা উনি কাউকেই বোঝাতে পারছেন না। উনি নিজেকে বহুবার বুঝিয়েছেন, মানব বাবুর ব্যাপারে মনে একটা চরম ঘ্রিনা নিয়ে এসেছেন। কিন্তু উনিও জানেন না কেন ঠিক শুতে যাওয়ার আগে বা বাড়ীতে একা থাকলে বা বাথরুম এ স্নান করার সময় উনি সেই ১০ টা মিনিটের প্রতিটি স্পর্শ কে অনুভব করতে পারেন। যতবার ই এরকম হয় উনি নিজের মনের প্রতি ঘ্রিনা বোধে আর পাপ বোধে নিজেকে চরম ভাবে বিদ্ধ করেন। ওনার মনে প্রতিটি মুহূর্তে এই একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে- কেন এরকম হচ্ছে? আমার তো সমস্ত ব্যাপার টা ঘ্রিনার চোখে দেখা উচিত অথচ কেন আমার শরীরে শিহরন হয়। মালতী দেবীর ও আর বাসন মাজতে ইচ্ছে করছিলনা। উনি বাথরুম এর সামনে থেকে উঠে এসে বারান্দায় দাঁড়ালেন, জানলা দিয়ে তখন ফুরফুর করে দক্ষিনের হাওয়া আসছিল।
মালতী দেবী জানলার পাশে দাঁড়িয়ে একবার নিচের দিকে দেখলেন। ওনার মনে পড়ে গেলো সুবীর বাবুর কথা। মনে মনে একবার বললেন সত্যি ওই সরল মানুষ টা তো কারুর কোনও ক্ষতি করেনি। কেন ওই লোক টা কষ্ট পাচ্ছে। মালতী দেবীর মনটা মুহূর্তের মধ্যে কেঁদে উঠল। একদম নিচেই একটা ফুটপাথে একটা ফামিলি থাকে। মালতী দেবী একবার রাস্তার ওপর তাঁবু খাটানো ঘরটার দিকে তাকালেন। ৪ জোড়া পা তখন সাপের মত একে অপরকে জড়িয়ে ধরছে। ওই মেয়েটার সাথে মালতী দেবী একদিন কথা বলেছেন, ওর নাম চাঁপা, ওর বর রোজ মদ খেয়ে আসে, প্রথমে খুব মারে তারপর আদর করে। মালতী দেবী তা জানেন, উনি রোজ ওখান থেকে তা দেখেন। মালতী দেবীর শরীরে কাপুনি শুরু হোল। উনি জানেন এই কাপুনি শরীরের খিদে আর কিছুই নয়। জোরে শ্বাস নিতে নিতে একবার বুক থেকে কাপড় তা সরালেন আর দু তিন পাক ঘুরিয়ে কাপড় তা খুলে ওখানেই ফেলে দিলেন। নিচের দিকে তাকিয়ে হয়ত নিজের বুকটার দিকে একবার দেখে নিলেন। একটা দুটো এভাবে ব্লাউজের সব গুলো হুক খুলে কাধের দুপাশ দিয়ে ব্লাউজ তা খুলে নিচে ফেলে দিলেন। আসতে আসতে সায়ার দড়ি তা খুলে সায়া তা এক হাত দিয়ে ওপরের দিকে তুলে আলতো করে ধরে থাকলেন। মালতী দেবীর চোখ তখন ও নিচের ওই তাবুর দিকে, ভীষণ ভাবে চাঁপা ও ওর বরের শরীর তা এদিক অদিক হচ্ছে। মালতী দেবী জানেন কিছুক্ষন বাদে ঠিক চাপার বরের মত ওনার বর ও ওনাকে ওই একিভাবে আদর করবে। তাই হয়ত কিছুটা মনের ই ভুলে ফিক করে একবার হেসে ফেললেন। আর ওই জানলার সামনে না দাঁড়িয়ে থেকে উনি শোয়ার ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন। ঘরে ঢোকার মুখেই দেওয়ালে একটা আয়না। একবার নিজেকে দেখলেন। মালতী দেবী সাধারনত একটু ছোট সাইজের সায়া পরেন, ওনার দু থাই সম্পূর্ণ ভাবে দেখা যাচ্ছে। নিজের শরীর তা আয়নায় দেখে নিজেই থমকে গেলেন আর কিছুটা লজ্জাই পেয়ে গেলেন। মনে মনে একবার বলে নিলেন তোমায় আজ পাগল করে দেব।
দরজা তা ভেতর থেকে ভেজানো ছিল। মালতী দেবী দরজায় একটা আলতো করে ঠেলা দিলেন, ভেতর তা ঘুটঘুটে অন্ধকার। মনে মনে একবার বলে নিলেন তুমি সত্যি অদ্ভুত এক মানুষ, আলো টাও জালাওনি। মালতী দেবী ভেতরে ঢুকে আগে দরজা তা লক করলেন। এই ঘরটা ওনার কাছে একদম নতুন। উনি জানেন দরজার বাঁদিক টায় সুইচ বোর্ড আছে। কিন্তু এখনো ঠিক করে অভ্যস্ত না হয়ায় উনি দেওয়ালে হাতড়াতে শুরু করলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে সুবীর বাবু ওনাকে পিছন থেকে জাপটে ধরলেন, মালতী দেবীর মুখ থেকে সায়ার কাপড় তা খসে গেলো। এখন মালতী দেবীর পুরো শরীর তাই সুবীর বাবুর কন্ট্রোল এ। প্রচণ্ড উত্তেজনায় সুবীর বাবু প্রায় মালতী দেবীর ঘাড়ের ওপর ই চড়ে গেলেন। প্রচণ্ড জন্ত্রনায় মালতী দেবী একটু আওয়াজ করে বোঝাতে চাইলেন। হয়ত সুবীর বাবু তা বুঝলেন ও। উনি মালতী দেবী কে কোলে উঠিয়ে সোজা বিছানায় নিয়ে গিয়ে ফেললেন। পুরো ব্যাপার তা এক মিনিটের ও কম সময়ে ঘটে গেলো। মালতী দেবীর সায়াটা এখন কোমরের ও নিচে নেমে গেছে। প্রচণ্ড ভয়ে মালতী দেবীর বুক টা কাঁপতে লাগলো। ভয়ের কারন টা সুবীর বাবুর কাছে প্রচণ্ড অজানা, আর মালতী দেবী কখনও টা ওনাকে বুঝিয়ে বলতে পারবেন ও না। বাথরুম এর সামনে যখন মালতী দেবীর মাথাটা একটু ঘুরে গেছিল, সেই মদের গন্ধ, ঘন ঘন নিস্বাস শরীর টাকে কামড়ে ধরছিল তখন ও হয়ত উনি এতটা বুঝতে পারেন নি। এই অন্ধকার ঘরটায় উনি একবারের জন্য ও সুবীর বাবুকে ভাবতে পারছেন না। যখন ই ওনার শরীরে সেই অতি পরিচিত পৌরুষের ছোঁয়া লাগছে তখন ই মনে পড়ে যাচ্ছে সেই রাতে চিত হয়ে শুয়ে থাকা মানব দার শরীর টা। কিছুটা ঘেন্না তো রয়েইছে কিন্তু হয়ত তার চেয়েও বেশি যা রয়েছে টা হোল নিষিদ্ধ ভালবাসার উত্তেজনা। আর সেই কারনেই হয়ত সমস্ত ব্যাপার তাই মালতী দেবীর চোখে জলের মত স্পষ্ট হয়ে উঠছে। একবার চোখ টা বন্ধ করে উনি মনে মনে বলেন ভগবান আজ আমায় এতটাই শক্তি দাও যেন কোনরকমেই আমি এই এত বড় পাপ টা না করি। ভগবান হয়ত আছে বা হয়ত নেই, কিন্তু বিধির বিধান কারুর পক্ষেই ভেঙ্গে ফেলা সম্ভব নয়, না মালতী দেবী না সুবীর বাবু কেউ ই নয়। এই ২-৩ তে মিনিট মালতী দেবী বহুকষ্টে চোখ টা বন্ধ করে শুধু নিজের মন টাকে শক্ত করার চেষ্টা করেছেন। চেষ্টা করেছেন শরীর কে হারিয়ে মন যেন জয়ী হয়। আর সগ্যানে ফিরে যখন উনি আবার নিজের ই সাথে লড়াই এ অবতীর্ণ হলেন ততক্ষনে ওনার সায়া টা শরীর থেকে সরে গিয়ে মাটিতে পড়ে গেছে। একটা শরীর ততক্ষনে ওনার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মালতী দেবীর ৫ খানা রিপুকে জাগিয়ে তুলতে চেষ্টা করছে। আর মালতী দেবীর লড়াই এই রিপুর ই সাথে, দাতে দাত চিপে শুধু এটাই উনি বলে যাচ্ছেন একবার যদি আমার মন দুর্বল হয়ে যায় তাহলে আমি বিশাল একটা পাপ করে ফেলব।
এদিকে সুবীর বাবু ১ টা বছর ধরে অভুক্ত। কথায় আছে মুনি ঋষি রা যখন নিজেদের তপস্যা শেষ করে নিজ রমনীর সাথে সঙ্গম লাভ করতেন তখন ভুমিকম্প ও তুফানের জন্ম হত। সুবীর বাবুর আত্মত্যাগ ও কোনও ঋষির চেয়ে কম নয়। একটা ভয় ওনার মধ্যে সবসময় কাজ করত টা হোল এত দিন উনি যৌন জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন না, মালতী দেবী কে ঠিক করে সুখ দিতে পারবেন তো। কিন্তু ওনার নিজের এই ভুল আজ ভেঙ্গে গেছে। উনি জানেন এই মুহূর্তে ওনার শরীরে ঠিক কি পরিমান বল রয়েছে। সুবীর বাবু নিজের সমস্ত জোর দিয়ে মালতী দেবীর মুখ টা একবার এদিক একবার অদিক করে আদর করতে লাগলেন। ওনার দুহাত মালতী দেবীর সুন্দর দুটো দুধ কে প্রচণ্ড জোরে জোরে দলতে লাগলো, মালতী দেবীর একটা থাই কে ওপরের দিকে তুলে নিজের কোমরের ওপর দিয়ে আরেকপাশে রেখে দিলেন। আর বেচারা অসহায় মালতী দেবী লড়েই গেলেন নিজের সাথে। কিন্তু এই অসম লড়াই থামতেই হত। মালতী দেবী হেরে গেলেন। পারলেন না নিজের রিপুগুলোকে আটকাতে। যতই হোক ওনার শরীর ও মানুষের ই আর উনিও অভুক্ত।
মালতী দেবী শুধু চোখ টা বুজে চেষ্টা করলেন প্রতিটা স্পর্শ প্রতিটা আদর কে ভালো ভাবে অনুভব করতে। আর চোখটা বন্ধ হতেই ভেসে উঠল সেই শরীর টা, মানব দার শরীর। এদিকে কোনও এক পুরুষের উত্তপ্ত স্পর্শ ওনার শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে তার সাথে যোগ হচ্ছে সেই রাতের স্মৃতি। চোখ টা বন্ধ থাকলেই যা ভেসে উঠছে। মালতী দেবী জানেন ওনার শরীর ও সাড়া দিচ্ছে, হয়ত মনের বিরুদ্ধে গিয়েই, মালতী দেবীর দুই পা একবার ওপরে একবার নিচে ঠিক পাখার মত নড়তে লাগলো, হাত দুটো নিজের অজান্তেই পুরুষ স্পর্শ পাওয়ার জন্য সুবীর বাবুর পিথ টা জড়িয়ে ধরল। মালতী দেবীর মাথাটা তখন ও ঘুরে চলছে। এরকম কখনই হয়নি ওনার সাথে শরীর টা রয়েছে স্বামীর কেনা নতুন এই অভিজাত ফ্ল্যাট টায় কিন্তু মনটা পড়ে রয়েছে সেই সেলিমতলার ছোটো বাড়ী টায়। চোখ বন্ধ করে উনি অনুভব করতে পারছেন সেই রাতের প্রতিটি মুহূর্ত। আসতে আসতে মালতী দেবীর দুই চোখ ঢলে এলো। উনি আর এই জগতে থাকলেন না, শুধু শরীর তাই পড়ে রইল। সকালে যখন ঘুম ভাঙল ওনার উনি সুবীর বাবুর বুকে মাথা গুঁজে শুয়ে আছেন। ওনার খুব ভোরে প্রায় ৪ তের সময় ওঠা অভ্যাস। কতরাতে ঘুমিয়েছেন জানেন না, তাই বহু চেষ্টা করেও কিছুতেই উথতে পারলেন না। তখন ও ওনার শরীরে ভালবাসা পাওয়ার ইচ্ছে টা মরে জায়নি। জিভ টা বার করে সুবীর বাবুর বুকের কাছে নিয়ে গেলেন। জিভ দিয়ে আলতো করে একবার বুকটায় উষ্ণ স্পর্শ করে বলে উথলেন “ওহ মানব দা, তোমার এত কষ্ট, এত একাকিত্ব আমায় একবার বলবে তো। তুমি কি আমার পর মানব দা”। ঠোঁট ও জিভ দিয়ে ক্রমশ আদর করতে করতে আবার বলে উথলেন “কি গো মানব দা কি হয়েছে? বুঝেছি তুমি ওর কথা ভাবছ তো? আচ্ছা আমি যদি রূপসা কে একদিন বেশি ভালবাসি তিলোত্তমা কি রাগ করবে বা তিলোত্তমাকে যদি একদিন বেশি ভালবাসি তাহলে কি রূপসা রাগ করবে? ওরা কখনই রাগ করবে না। ওরা জানে আমি ওদের দুজন কেই সমান ভাবে ভালবাসি। তুমি আর ও তোমরাও তো দুই ভাই। আমি তোমাদের কেও সমান ভাবে ভালবাসি” বলে একটু নিজের অজান্তেই হেসে উথলেন। মুখটা সুবীর বাবুর মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে ভালো করে ওনাকে একটা কিস করলেন তারপর চোখ বন্ধ করেই বলে উথলেন “তোমার যখন ই আমায় ভালবাসতে ইচ্ছে করবে চলে আসবে। তোমার বন্ধু কখনও রাগ করবে না। আমি বলছি রাগ করবেনা” হাসি হাসি মুখ করে কিছুটা জোর করেই চোখ টা খুলে একবার মানব দার মুখের দিকে তাকালেন। পাশের জানলা টা দিয়ে তখন ভোরের আলো ভেতরে ঢুকে পড়েছে। মালতী দেবীর আর বুঝতে কোনও অসুবিধা রইলনা যে আজ উনি জীবনের সবচেয়ে বড় পাপ টা করে ফেলেছেন। পাপের চেয়েও বড় হয়ে যেটা ওনার মনে দেখা দিল তা হোল ভয়। বহুক্ষন ধরে উনি সুবীর বাবুর মুখটার দিকে চেয়ে থাকলেন। ভালো করে বোঝার চেষ্টা করলেন যে সত্যি উনি ঘুমাচ্ছেন কিনা, নিজের মন কে এই বলে আস্বস্ত করলেন যে সুবীর বাবু কিছুই শোনেন নি। কোনরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে টলতে টলতে বিছানা থেকে নিচে নেমে এলেন। দরজাটা আবার পেছন দিকে বন্ধ করে সোজা পাশের আয়নার সামনে দাঁড়ালেন।
মালতী দেবীর সারা মুখ জুড়ে লাল সিঁদুর ভর্তি। হয়ত কেউ জানবেনা হয়ত সুবীর বাবুও নয়, এই সিঁদুর এর দাগ এই কলঙ্ক কখনই সুবীর বাবুর করা নয় এটা মানব দার ভালবাসা। মানব দার বিশাক্ত, নোংরা একটা ভালবাসার চিহ্ন মালতী দেবীর সারা মুখ জুড়ে ভর্তি। মালতী দেবীর গাল বেয়ে টপ টপ করে চোখের জল পড়তে লাগলো। একবার শুধু ভাবার চেষ্টা করলেন, কেন এরকম হোল। ভাববার চেষ্টা করলেন ঠিক কখন থেকে ওনার মন এই পাপ কাজে লিপ্ত হোল।
[/HIDE]
 
পর্ব ৪- মালতীর স্বপ্নঃ
[HIDE][/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
অনেক চেষ্টার পর মালতী দেবীর সব কিছু মনে পড়ল। সেই অভিশপ্ত রাতের পর থেকে মালতী দেবী বাথরুম শোয়ার ঘর প্রায় প্রতিটি অন্তরঙ্গ মুহূর্তেই মানব দার সেই ছোঁয়া তা অনুভব করেছেন। নিজেকে অনেক বুঝিয়েছেন ভেবেছেন। হয়ত এটা মনে একটা বিশাল আঘাত লাগায় হয়েছে এই ভেবেই চুপ করে গেছেন। কিন্তু কাল রাতে যা হোল তা কখনই আঘাত থেকে নয়। উনি ভাববার চেষ্টা করেন। অন্ধকার ঘর, নিজের মনের সাথে শরীরের লড়াই। আসতে আসতে শরীর তা অবশ হয়ে আসে চোখ তা বুজে আসে, এমন সময় চোখের সামনে সেই রাতের ওই ১০ মিনিটের প্রতিটা ঘটনা বারবার করে ফিরে আসে। তারপর মিনিট দুয়েকের জন্য অজ্ঞান হয়ে যাওয়া আর তারপর ই ওই স্বপ্ন টা। এরকম ওনার জীবনে কখনও হয়নি, ওনার মন ছিল সেলিমতলার ওই পুরনো বাড়ী টায় অথচ শরীর ছিল বালিগঞ্জ এর এই ফ্ল্যাটে। ওনার নগ্ন শরীর টা ছিল সুবীর বাবুর হাতে কিন্তু মনে মনে উনি নিজেকে সঁপে দিলেন মানব দার হাতে। আসতে আসতে সব কিছু ওনার মনে পড়তে লাগলো। একটা স্বপ্ন স্বপ্ন না বলে বাস্তব বলাই ভালো, কারন মালতী দেবীর শরীর প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা এটাকেই বাস্তব ভেবেছে। উনি আয়নার সামনে আবার চোখ টা বন্ধ করলেন আর সমস্ত ঘটনা টা আবার ওনার চোখের সামনে ভেসে উঠল।
সুবীর আর মানব বাবু ভেতরের ঘরে ঢুকেছেন তা মালতী দেবী দেখেছেন। মালতী দেবীর ও এই মুহূর্তে সব কাজ একটু এগিয়ে রাখতে হবে নয়ত সকালে উনি সামলাতে পারেন না। মালতী দেবী কুয়োপাড়ে বসে বাসন গুলো মাজতে শুরু করলেন। খেয়াল করেন নি কেউ একজন পেছনে এসে দাঁড়িয়ে আছে। প্রথমে না বোঝার ভান করলেও, খুব অস্বস্তি হতে শুরু হোল। তাই কাজ বন্ধ করে একবার পেছন ঘুরে দেখলেন। ওনার সাড়ী তা তখন ও হাঁটুর অনেকটা ওপরে ওঠানো। পেছন ঘুরে দেখেন মানব বাবু। ওনার লাল চোখ গুলো হিংস্র বাঘের মত মালতী দেবীর শরীর তার দিকে তাকিয়ে আছে। মালতী দেবী কিছুটা অপ্রস্তুত অবস্থার মধ্যে পড়লেও সেই পরিচিত হাসি তা হেসে উত্তর দিলেন
মালতী দেবীঃ কি গো তোমার বন্ধু কোথায়? আর এখনো জেগে আছো কেন যাও শুয়ে পড়ো, আমি তো বিছানা করে দিয়েছি।
মানব বাবুঃ না এমনি ঘুম আসছে না। তুমি এখনো নিজে হাতে সব কাজ কর বউদি। এখন তো এগুলো ছেড়ে দিলেও পারো।
মালতী দেবীঃ আরে এটা আবার কি কথা। এটাই তো আমার কাজ। আমার সংসার আমি ই যদি পায়ের ওপর পা তুলে বসে থাকি তাহলে কি চলবে। তুমি যাও শুয়ে পড়ো আমি আসছি কিছুক্ষন পর।
মানব বাবুঃ না বউদি। তোমার কি ঘুম পাচ্ছে খুব তাহলে থাক।
মালতী দেবীঃ আরে ঘুম কেন পাবে। তুমি কিছু বলবে?
মানব বাবুঃ সুবীর তো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আমার একটু গল্প করতে ইচ্ছে হচ্ছে। তুমি তাড়াতাড়ি কাজ শেষ কর। আমি খাটিয়া টায় বসি। তোমার সাথে একটু গল্প করব।
মালতী দেবীঃ ঠিক আছে তুমি একটু বস আমার আর ৫ টা মিনিট লাগবে।
মানব বাবু গিয়ে খাটিয়ায় বসলেন আর এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকলেন মালতী দেবীর দিকে। এই দৃষ্টি টা কখনই মালতী দেবীর ভালো লাগেনা, কিন্তু কিছুই করার নেই শুধু একটু হেসে উপেক্ষা করা। মালতী দেবী বাসন গুলো মেজে নিয়ে বাসন গুলোকে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলেন, ওখানে সব গুলো বাসন ঠিক করে রেখে আবার উঠোনে ফিরে এসে একদম মানব বাবুর কাছে গিয়ে বসলেন।
মালতী দেবীঃ মানব দা এত মদ খেয়না। তোমার চোখ একদম লাল হয়ে আছে। আর বন্ধুকে তো খাইয়ইনা ও যে বাইরের ঘরটায় ঘুমিয়েছে এবার ওকে ওখান থেকে কে নিয়ে যাবে?
মানব বাবুঃ থাক নিয়ে যাওয়ার কি দরকার, ওখানেই শুক না।
মালতী দেবীঃ আরে ওই খাট টা খুব ছোট, আমার ওখানে শুতে অসুবিধা হবে। আর তুমি যে হারে ওকে মদ খাইয়েছ ও সারা রাত হাত পা ছুঁড়বে আমার কিছুতেই ঘুম আসবেনা। আর তোমাকেও ওখানে শুতে বলতে পারিনা। আমি ই পারব না তুমি কি করে পারবে।
মানব বাবুঃ এত চিন্তা কেন করছ? আজ তুমি আমার সাথে ভেতরের ঘর টায় শুয়ে যেও।
মালতী দেবী এই কথাটা শুনে আঁতকে উঠলেন, ওনার প্রচণ্ড রাগ হোল। কিন্তু কোনরকমে নিজেকে কন্ট্রোল করে এটা বোঝানোর চেষ্টা করলেন যে কিছুই হয়নি, ও মদ খেয়েছে তাই কিছু না বুঝেই কথা বলছে। মালতী দেবী কিছুটা জোর করেই হাসলেন
মালতী দেবীঃ তোমরা দু বন্ধু সত্যি একিরকম, মাথায় এক ফোঁটা কোনও বুদ্ধি নেই।
মানব বাবুঃ আমি ভেবে চিন্তেই বলেছি বউদি। আচ্ছা বউদি তুমি রূপসা ও তিলোত্তমার মধ্যে কাউকে কি বেশি প্রেফারেন্স দিতে পারবে, ওরা দুজনেই কি তোমার কাছে সমান নয়।
মালতী দেবীঃ হাঁ ওরা দুজনেই আমার কাছে সমান। আমি আলাদা করে কারুর কথা ভাবতে পারিনা। হথাত এই প্রশ্ন কেন করলে মানব দা?
মানব বাবুঃ (একটু মুচকি হেসে) আচ্ছা দ্রউপদী কি নিজের ৫ স্বামীর মধ্যে কাউকে কম বা বেশি ভালবাসতেন?
মালতী দেবীঃ (এবার ওনার মুখ টা লজ্জায় লাল হয়ে উঠছে) আমি ঠিক জানিনা।
মানব বাবুঃ তুমি আমায় আজ যা চাইব তাই দেবে বলেছিলে মনে আছে? আমি কিন্তু কিছুই চাইনি।
মালতী দেবী নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলেন কোনও উত্তর দিলেন না।
মানব বাবুঃ বউদি তুমি আমায় জানো। মনে আছে সেই রাতের ঘটনা টা। সেদিন আমার সাথে তুমি ও ড্রিংক করেছিলে, সুবীর আজ ও সেটা জানেনা। সেদিন তুমি এই বারান্দা তেই উলঙ্গ হয়ে স্নান করেছিলে, আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখেছিলাম। কিন্তু আমি নিজের দুরবলতা প্রকাশ করিনি।
মালতী দেবী মাটির দিকে তাকিয়ে কাঁপতে থাকলেন। মানব বাবু কথা গুলো এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলেছিলেন।
মানব বাবুঃ বউদি আমি তোমাদের জন্য অনেক করেছি। কিন্তু আমি ঠিক ভেতরে ভেতরে কি কষ্ট পাচ্ছি তা তোমরা বুঝবে না। আমি নিজে ঠিক সময়ে সংসার করলে তোমাদের দেখতে পেতাম না। তোমরা ভেসে যেতে।
মালতী দেবী একটাও কথার উত্তর দিলেন না, উনি উথেও গেলেন না। শুধু ওখানে বসে সব শুনে গেলেন।
মানব বাবুঃ সুবীর আমায় সব বলেছে। আমার মত তুমিও অভুক্ত। আগুন তোমার শরীরেও জ্বলছে। সুবীর কাল ৯-১০ তার আগে উথবে না। আমি চাই আজ ওই বাইরের ঘর টায় নয় তুমি ভেতরের ঘর টায় শোবে।
মানব বাবু উঠে দাঁড়ালেন। মালতী দেবীর গাল লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। এক দু পা গিয়ে মানব বাবু আবার ফিরে এলেন।
মানব বাবুঃ আমি বলছি বউদি কোনও ভুল নেই এতে। কোনও ভয় ও নেই।
মানব বাবু আসতে আসতে ঘরে চলে গেলেন। শোয়ার ঘরে ঢুকে একবার পেছন ঘুরে দেখলেন, মালতী দেবী ও ওদিকেই তাকিয়ে ছিলেন। মালতী দেবী টানা ১ বছর অভুক্ত। মানবের কথা গুলো ওনার মনে একটাই কথা বারবার প্রতিফলিত করছে “হোক না যা হচ্ছে তা। অনেক তো করলাম সংসারের জন্য। আজ না হয় নিজের জন্য আর ওই লোকটার জন্য কিছুটা করি” মালতী দেবী ও আসতে আসতে বারান্দায় পৌঁছে গেলেন। একবার বাইরের ঘরটায় সুবীর বাবুর দিকে তাকালেন। উনি তখন অচৈতন্য। মালতী দেবী ঘরটায় ঢুকে লাইট তা অফ করে দিলেন। দেওয়ালে পিঠ থেকিয়ে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষন ভাবলেন, তারপর বাইরে বেরিয়ে এসে দরজাটা ভিজিয়ে দিলেন। মানব বাবু ওঘর থেকে সব ই দেখছেন। উনিও তৈরি হয়ে গেছেন নতুন একটা জীবনকে উপভোগ করতে। মালতী দেবী কিছুটা নার্ভাস হয়েই ঘরের ভেতর ঢুকলেন ওনার শরীর তখন উত্তেজনায় কাঁপছে। মানব বাবুই এগিয়ে এলেন, মালতী দেবীর কোমর তা একটা হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে দরজাটা ভেতর থেকে লক করে দিলেন। মালতী দেবী চোখ দুটো বন্ধ করে নিয়েছেন। মানব বাবু কিছুটা ঝুকে মালতী দেবী কে কোমর থেকে দুহাত দিয়ে একটু ওপরে তুলে ওনার দু পা নিজের কোমরের চারপাশে ঘুরিয়ে দিলেন। মালতী দেবী কিছু বলতে জাচ্ছিলেন, কিন্তু সেই সুযোগ তা উনি পেলেন না। তার আগেই মানব বাবুর ঠোঁট আর জিভ চেটে চেটে মালতী দেবীর সারা মুখ আদরে ভিজিয়ে দিতে শুরু করল। অভুক্ত মালতী দেবীর পক্ষেও আর সম্ভব ছিলনা। ওনার মুখ দিয়ে উম উম করে আনন্দের বহিপ্রকাশ শুরু হোল। আসতে আসতে মানব বাবু সুন্দর নধর শরীর টাকে টেনে খাটের ওপর ফেললেন। মালতী দেবীর সাড়ী ততক্ষনে আর ওনার শরীরে নেই। মানব বাবু যতটুকু সাড়ী শরীরে আঁটকে ছিল সেটা কেও টেনে খুলে দিলেন। হলুদ ব্লাউজ আর নীল সায়াটায় মালতী দেবীর শরীর তা প্রচণ্ড জোরে কাঁপতে লাগলো। মানব বাবু আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না ঝাঁপিয়ে পড়লেন খাটে পড়ে থাকা সুন্দরী শরীর টার ওপর।
এরপর যা হয়েছে মালতী দেবী তা আর মনে করতেও চাইলেন না। মালতী দেবীর দু চোখ দিয়ে গড়িয়ে জল পড়তে লাগলো। আয়নায় নিজেকে দেখে বলতে লাগলেন কেন আমি এরকম করলাম? কেন আমার মনে এই পাপ এলো? হথাত পেছন থেকে সুবীর বাবু ওনাকে জড়িয়ে ধরলেন
সুবীর বাবুঃ কি গো এত তাড়াতাড়ি উঠে গেলে? অফ সত্যি মালতী তুমি এখনো সেই ১৮ এর তরুনি ই রয়ে গেছ।
মালতী দেবী কোনও উত্তর দিলেন না, শুধুই চুপ করে দাঁড়িয়ে রাইলেন। এবার সুবীর বাবু খুব ভালো করে ওনাকে লক্ষ্য করলেন।
সুবীর বাবুঃ কি হয়েছে মালতী তোমার চোখে জল কেন? আমি কি কোনও ভুল করে ফেলেছি?
মালতী দেবী হাউ হাউ করে কেঁদে উঠে সুবীর বাবুকে জড়িয়ে ধরলেন।
মালতী দেবীঃ আমায় একটু সময় দাও প্লিজ। কাল রাতে আমি চাইনি ওইসব করতে। ওই বাড়ী তা ছাড়ার পর থেকে আমার মন ঠিক নেই। আমায় একটু স্বাভাবিক হতে সময় দাও প্লিজ।
সুবীর বাবু কিছু না বলে শুধু ওনার মাথায় হাত বুলিয়ে স্বান্তনা দিতে লাগলেন।
এদিকে তিলোত্তমা নিজের সিম এখনো চেঞ্জ করেনি। রোজ প্রায় ৫০-৬০ তা করে রাজুর ম্যাসেজ আসে ওর কাছে। প্রচণ্ড ঘৃণা ভরে ও মেসেজ গুলো পড়ে কিন্তু রিপ্লাই করেনা। কাল রাতে ও একটু বেশি ই আবেগপ্রবন হয়ে পড়েছিল। হথাত করেই রিপ্লাই করে ফেলে “তুমি মোটেও ভালো ছেলে নয়। তুমি আমার সাথে অভিনয় করেছ” রাজুর হতাশ জীবনে এই একটা মেসেজ ই নতুন আলোর জন্য যথেষ্ট ছিল। সাইদুলের ও মনে নতুন আশার সঞ্চার হয়।
[/HIDE]
 
পর্ব ৫- পোড়োবাড়ী ও ডায়েরীঃ
[HIDE][/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
সুবীর বাবু অনেক ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠে গেছিলেন, তাই খুব তাড়াতাড়ি রেডি ও হয়ে গেলেন। মালতী দেবীর জন্য চিন্তা হওয়া সত্বেও ওনার মন আজ খুব ভালো আছে। প্রথমত নিজের স্ত্রী কে সন্তুষ্ট করতে পারা নিয়ে যে সংশয় ওনার মনে ছিল তা একদম কেটে গেছে। আর দ্বিতিয়ত আজ থেকে উনি একটা নতুন কাজের সাথে যুক্ত হতে শুরু করছেন। বাড়ী থেকে যখন বেরলেন তখন বাজে প্রায় ৭ তা। এই ফ্ল্যাট টার সবচেয়ে বড় সুবিধা হোল একদম ফ্ল্যাটের সামনেই মেন রোড। বাস ধরতে বেশি সময় লাগলো না। বাস থেকে নামলেন শোভাবাজার মেট্রোর সামনে। এবার আসল কাজ। দূরে একটা চা দোকান দেখা যাচ্ছে। উনি ভাবলেন শুভ কাজ করতে যাওয়ার আগে একবার চা টা খেয়ে নিলে মন্দ হয়না। চা দকানে চায়ের অর্ডার করে ভাবলেন দোকানদার কেই জিজ্ঞেস করা যাক জমিদার বাড়ী টা কোথায়। জিজ্ঞেস করেও ফেললেন
সুবীর বাবুঃ আচ্ছা দাদা আপনাকে তো বেশ পুরনো লোক মনে হচ্ছে, একটা জায়গার ব্যাপারে জিগ্যেস করার ছিল।
চাওয়ালাঃ আরে পুরনো মানে অন্তত ১০ পুরুষ ধরে আমরা এখানে বাস করছি। আমি এই অঞ্ছলে সব ই চিনি।
সুবীর বাবুঃ বাহ তাহলে তো খুব ভালো হয়। আচ্ছা দাদা জমিদারবাড়ি মানে সুতানুটি জমিদার বাড়ী টা কোথায় বলতে পারেন?
চাওয়ালা কিছুটা বড় বড় চোখ করে সুবীর বাবুর দিকে তাকিয়ে থাকলেন।
চাওয়ালাঃ জমিদার বাড়ীতে আপনার কি প্রয়োজন আছে?
সুবীর বাবুঃ (কিছুটা থতমত খেয়ে গিয়ে) মানে আমি একজন গবেষক। ওই বাড়ী টা নিয়ে গবেষণা করতে চাই। আপনি যদি বলেন কিভাবে যাবো?
চাওয়ালাঃ (কিছুটা গম্ভীর ভাবে) এই রাস্তা দিয়ে সোজা চলে যাবেন, বাঁ দিকে একটা পরিত্যক্ত কারখানা পাবেন। ওর গেটের ভেতরে ঢুকে সোজা হাঁটবেন। প্রায় ২০০ মিটার হাটার পর একটা পোড়ো ভাঙ্গাচোরা বাড়ী দেখতে পাবেন ওটাই জমিদার বাড়ী।
সুবীর বাবুঃ (পকেট থেকে ৫ টাকার কয়েন বার করে) ধন্যবাদ।
সুবীর বাবু হেঁটে সামনের দিকে যেতে শুরু করলেন হথাত পেছন থেকে লোক টি বলে উঠল
চাওয়ালাঃ আপনাকে দেখে সংসারী মানুষ মনে হয় তাই বলছি। ওখানে যাবেন না ওখান থেকে কেউ বেঁচে ফিরে আসেনি। ওই কারখানা টাও ওই কারনেই বন্ধ হয়ে গেছে। ফিরে যান।
সুবীর বাবু মুহূর্তের জন্য চমকে গেলেও কুসংস্কার ভেবে ওনাকে বেশি পাত্তা দিলেন না। প্রায় ১০ মিনিট হাটার পর উনি সেই কারখানা টার সামনে এসে দাঁড়ালেন। গেটের সামনে গিয়ে ভেতরে উকি মারলেন। ভেতর টা শ্মশানের মতই নিস্তব্ধ। সুবীর বাবু একবার মনে মনে ভাবলেন কলকাতার বুকে এটা সত্যি ই বেমানান। আর কিছু না ভেবে গেট টা জোরে ঠেলে ভেতরে ঢুকতে গেলেন। হথাত একটা বাদুর উরে এসে প্রায় ওনাকে ছোঁ মেরে চলে গেলো। সুবীর বাবুর বুক টা ছ্যাঁত করে উঠল একবার। মন টাকে শক্ত করে ভেতরে ঢুকে গেলেন। ভেতরে ছড়ান ছেটান কিছু কাঠ আর লোহার রড। দেখেই বোঝা যায় একসময় এখানে সত্যি একটা কারখানা ছিল। বিশাল বড় মাঠের মত একটা জায়গা। প্রায় হাঁটু অবধি লম্বা ঘাস আর আগাছায় ভর্তি। সুবীর বাবু বুঝতে পারলেন সত্যি ই এই জায়গাটায় কেউ আসেনি বহুবছর। সুবীর বাবু আগাছা গুলো কে ঠেলে সামনে এগোতে লাগলেন। প্রায় ২-৩ মিনিট পর উনি দেখতে পেলেন সামনে একটা পোড়ো বাড়ী। বাড়ী টার প্রায় অরধেক তাই ভেঙ্গে মাটিতে মিশে গেছে। যতটুকু পড়ে আছে টা মেরে কেটে ২ তো ২ তো মোট ৪ তে ঘর হবে। সুবীর বাবু কিছুটা হতাশ ই হয়ে গেলেন। সত্যি কি এতটুকু একটা জায়গায় ইতিহাসের এত অমুল্য একটা উপাদান লুকিয়ে আছে?
সুবীর বাবু আসতে ভেতর টায় ঢুকলেন। ভাঙ্গাচোরা ইটের সারির ওপর দাঁড়িয়ে উনি ভালো করে চারপাশ টা লক্ষ্য করলেন, ওনার মনে হোল এই জায়গাটা আরও বড় ছিল আর সম্ভবত এখানে একটা উথন মত ছিল। বাড়ীর আকার টা কখনই জমিদার বাড়ীর মত নয় বরং কিছুটা দুর্গের মত। আর এই দুর্গের মত আকার টাই সুবীর বাবুর একমাত্র আশা। এটাই প্রমান করে এর মধ্যে কোনও ঐতিহাসিক উপাদান লুকিয়ে আছে। সুবীর বাবু আসতে আসতে ভেতর টায় ঢোকেন। সামনেই একটা ভাঙ্গাচোরা ঘর। দেখেই বোঝা যায় এটা একসময় বৈঠক ঘর ছিল। কিন্তু আশে পাশে একটা সামান্য চেয়ার জাতীয় কোনও আসবাব ও চোখে পরলনা। সুবীর বাবু একবার মনে মনে ভাবেন, টা থাকবেও বাঁ কেন, কলকাতায় কি চোর ডাকাতের কোনও অভাব নাকি। আশপাশ টা ভালো করে দেখে নিয়ে সুবীর বাবু বুঝলেন এই ঘরে কিছুই নেই। এই ঘরটা পেরলেই আরেকটা ঘর, সাইজে একটু ছোট। ওটাতেও ভালো করে দেখে সুবীর বাবু বুঝলেন এটাও ওনার কোনও কাজের নয়। সুবীর বাবু কিছুটা হতাশা গ্রস্ত হয়ে পড়লেন। যাইহোক উনি ওখান থেকে বেরিয়ে এসে বাইরে দাঁড়ালেন। একটা কাঠের সিঁড়ি দেখা যাচ্ছে যা খুব বিপজ্জনক। কিন্তু সুবীর বাবুও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সাবধানে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠলেন। ওখান টা দেখে উনি একটু ভয় ই পেয়ে গেলেন। ছাদে বিশাল বড় একটা ফাটল যেকোনো সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে। সেই ফাটল টার দুদিকে দুটো ঘর। একটা সাইজে ছোট আর একটা বড়। ছোট ঘরটায় কিছুতেই যাওয়া সম্ভব নয় ওটা ফাটলের ওদিকে। ওখানে যদি কোনও ঐতিহাসিক গুপ্তধন লুকিয়েও থাকে তা ছেড়ে দেওয়াই সুবীর বাবুর জন্যে ভালো। এখন শেষ অবলম্বন হোল এই বড় ঘরটা।
সুবীর বাবু আসতে আসতে ঘরের ভেতর ঢুকলেন। এই ঘরটার ডিজাইন একদম নিচের বড় ঘরটার ই মত। চারপাশে ইট ছড়ান, মেঝেতে শাওলা হয়ে গেছে। ভালভাবে চারপাশ তা একবার সুবীর বাবু দেখে নিলেন। একটা টেবিল আর দুটো চেয়ার ব্যাস আর কিছুই নেই। সুবীর বাবু ভিশনভাবে হতাশ হয়ে গেলেন। এই টেবিল আর চেয়ার দিয়ে তো আর সিপাহি বিদ্রোহের ইতিহাস লেখা যায়না। হথাত ই ওনার চোখে পড়ল টেবিলের নিচে লাল মত একটা বই পড়ে রয়েছে। উনি লোভাতুর দৃষ্টি নিয়ে এগিয়ে গেলেন ওদিকে। বই তা হাতে তুলে একটু ধুলো ঝেড়ে উলতে পালটে একবার দেখলেন। এটা কোনও বই নয় একটা ডায়েরি। লাল রঙের একটা ডায়েরি। রামকিঙ্কর বাবুর অনুমান ভুল নয়, এই ডায়েরি তেই লুকিয়ে আছে ইতিহাসের মুল্যবান কোনও বস্তু। সুবীর বাবু একটা মিনিটের জন্য চোখ বন্ধ করে ভাবলেন ডায়েরি টা কি বাড়ী নিয়ে গিয়ে পরবেন নাকি এখানেই। উনি ভাবলেন হয়ত ডায়েরি টা শুধুই পথ প্রদর্শক। এখানে পড়াই ভালো। এখানে পড়ে নিলে হয়ত এমন কিছু জানা যেতে পারে যা এই বাড়ী তেই লুকিয়ে আছে। সুবীর বাবু চেয়ার টা রুমাল দিয়ে একটু পরিষ্কার করে নিয়ে অতেই বসে পড়লেন আর ডায়েরি টা রাখলেন টেবিলের ওপর। একদম প্রথম পেজ তাই উনি খুললেন। জেই লিখে থাক হাতের লেখা একদম পরিষ্কার। ডায়েরি হলেও এটা আসলে একটা আত্মজীবনির মত। সুবীর বাবু পড়তে শুরু করলেন।
আত্মপরিচয়ঃ
আমি সুপ্রতীক রায় চৌধুরী। সুতানুটি গ্রামের একচ্ছত্র জমিদার। ডায়েরী লেখার অভ্যাস বা অভিপ্রায় কোনকালেই আমার ছিলোনা। আমি বর্তমানে জীবন সঙ্কটে শঙ্কিত। আমার স্ত্রী মালা দুই বোন প্রিয়া ও গার্গী এবং অসংখ্য আত্মীয় পরিজন বেইমান দের ষড়যন্ত্রে আজ মৃত। জানিনা এই ডায়েরী কোনদিন কোন সজ্জনের হাতে আসবে কিনা। যদি আসে তাহলে সেদিন ই আমাদের আত্মা মুক্তি পাবে। আমাদের এই অর্থেই বললাম, কারন জমিদার বাড়ি ঘিরে রেখেছে ফিরঙ্গি দের সৈন্য ও আমার ই নিজের হাতে তৈরি লাঠিয়াল বাহিনী। জানিনা পুরো লেখাটা শেষ হবে কিনা।
প্রথমেই বলে রাখি এই জমিদার বাড়ীতে অভিশাপ আছে। পুরোহিত মশাই বহু আগেই গননা করে বলে দিয়েছিলেন ঠিক কোন ক্ষনে কোন সময় এই বংশ শেষ হবে। সেই সময় এসে উপস্থিত। আমাদের বংশে জীবিত সদস্য বলতে এই মুহূর্তে আমি একা। আমার দুই দাদা ১০ বছর আগে মহামারী তে প্রান হারিয়েছেন। তখন থেকেই বংশের একমাত্র সন্তান ও বংশের প্রদীপ আমি সুপ্রতীক রায় চৌধুরী। আজ প্রায় ২০০ বছর ধরে বাংলার বুকে আমাদের বিশাল জমিদারি। একসময় আমাদের জমিদারী পূর্বে বর্ধমান থেকে পশ্চিমে মেদিনীপুর অবধি বিস্তৃত ছিল। কিন্তু বর্তমানে এই জমিদারী কলকাতা ও কলকাতার আসে পাশের গ্রাম গুলো নিয়েই গঠিত। শেষ ১০ বছর ধরে এই বাড়ীতে আমি আমার স্ত্রী মালা ও দুই বোন প্রিয়া ও গার্গী বসবাস করছি। প্রিয়া ও গার্গী জন্মসুত্রে যমজ। আমাদের বংশের এক অভিশাপ আছে। বংশের কোন পুরুষের ই স্বাভাবিক মৃত্যু হবেনা। আমার দুই দাদা মহামারী তে বাবা ও জ্যাঠামশাই ডাকাতের আক্রমনে মারা গেছে। আমি আধুনিক হলেও এই অস্বাভাবিক মৃত্যু গুলো আমাকেও এই অভিশাপ এ বিশ্বাস করতে বাধ্য করে। এই অভিশাপ থেকে বাচতে আমি গরিব দুক্ষি কে দান ধ্যান করেছি। কিন্তু কেন জানিনা এই অভিশাপ আমার ওপর ও এসে পড়ল। আমি জানি গদ্দার দের হাতে আমার প্রান যাবেই। সেই নিয়ে আমি চিন্তিত নই। কিন্তু এই অভিশাপ কেন আমাদের ওপর ই বর্তাল। ছোট থেকে পিসীমা ও বাড়ীর অন্যান্যদের থেকে অনেক অনেক গল্প শুনেছি। একেকজনের মতে অভিশাপের কারন টা আলাদা আলাদা হলেও প্রকৃত গল্প টা বা ঘটনাটা এক ই। সেই সুন্দরী অনুরাধা, আমাদের কবিরাজ মৃত্যুঞ্জয় সেই নারকেলডাঙার জঙ্গল এগুলো ভীষণ ই সত্য। আমি জানি সত্য। নয়ত আমার সাথে একি পরিনতি কখন হতে পারত না।
জমিদারবাড়ির অভিশাপঃ
এই ঘটনা টা আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগের। তখন আজকের এই ফিরিঙ্গি রা এত সংখায় ছিলোনা। প্রায় অর্ধেক বাংলা জুড়েই আমাদের রাজত্ব ছিল। সেইসময় এই জমিদার বাড়ির দুই ছেলে ছিল। দেবেন্দ্র ও সত্যেন্দ্র। দেবেন্দ্র ছিল দক্ষ প্রশাসক। আশেপাশের সমস্ত এলাকায় ছিল তার প্রভাব প্রতিপত্তি। কিন্তু জমিদার বাড়ীর গলায় কাঁটা হয়ে আঁটকে ছিল ছোট ছেলে সত্যেন্দ্র। স্বভাব ও চরিত্রের দিক দিয়ে ঠিক যতটা বদ বলা যায়, সত্যেন্দ্র তার চেয়েও নীচ ছিল। বাল্যকাল থেকেই নারী, সুরা ও অর্থের মোহে সে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কৈশোর পেরোনোর আগেই বাইজী বাড়ীতে রাত কাটানো তার দৈনিক অভ্যাসে পরিনত হয়েছিল। প্রথমে এইসবের জন্য বাড়ীতে চরম অশান্তি শুরু হলেও সবাই ধীরে ধীরে সব মেনে নেন। দেবেন্দ্রর সুচারু নৈপুণ্যে জমিদারী তখন নিজের স্বগরিমায় বিদ্যমান। হথাত ই একদিন খবর এল আশেপাশের গ্রামে কোন এক মহামারীর আবির্ভাব হয়েছে। আর এখান থেকেই হয়ত জমিদার বাড়ীর ধ্বংসের ইতিহাস শুরু হয়। আশেপাশের সমস্ত বদ্দি হাকিম এই অজানা জ্বরের চিকিৎসায় ব্যর্থ হন। এমন ই একদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেবেন্দ্র জানতে পারেন তার বাবা রাজাবাবু ও এই অজানা জ্বরে আক্রান্ত। জমিদার বাড়ীতে হথাত এই মহামারীর আগমনে দেবেন্দ্র ভীষণ ভাবে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। সেই সময় ই কোন এক কর্মচারীর কথায় তিনি জানতে পারেন মহান চিকিৎসক মৃত্যুঞ্জয়ের কথা। মৃত্যুঞ্জয়ের খ্যাতি তখন রাজ্যের সীমানা ছাড়িয়ে গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। অজানা মহামারীর হাত থেকে নিজের জমিদারীকে রক্ষা করতে দেবেন্দ্র নিজের দুত পাঠান মৃত্যুঞ্জয়ের কাছে। কিন্তু পণ্ডিত ও জেদি মৃত্যুঞ্জয় নিজের মেদিনীপুরের আবাস ছেড়ে কলকাতায় আসতে রাজি না হওয়ায় বাধ্য হয়ে দেবেন্দ্র কেই যেতে হয় ওনার সাথে দেখা করতে। সুপুরুষ দেবেন্দ্রর অনুরোধ না ফিরিয়ে মৃত্যুঞ্জয় জমিদার বাড়ীর চিকিৎসকের চাকরি গ্রহন করেন। দেবেন্দ্রর সাথেই উনি নিজের স্ত্রী কে নিয়ে জমিদার বাড়ী তে চলে আসেন। জমিদার বাড়ী তে ওনার থাকার ব্যবস্থা করা হয়। আর এখান থেকেই আমাদের বংশের অভিশাপের কাহানী শুরু।
[/HIDE]
 
[HIDE]পর্ব ৬- সত্যবাবুর গল্পঃ [/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
অনুরাধাঃ
মৃত্যুঞ্জয়ের স্ত্রী অনুরাধা। অসম্ভব সুন্দরী। আর এই রুপের জন্যই অনুরাধার যোগ্য পাত্র পাওয়া যায়নি। অনুরাধা মেদিনীপুরের রাজবাড়ীর মেয়ে। ওনার বাবা ওনার জন্য বহু সুপুরুষ ও উচ্চ বংশের পাত্রর সন্ধান করেছিলেন। কিন্তু তারা কেউ ই অনুরাধার রুপ ও ব্যক্তিত্বর সামনে দাঁড়াতে পারেন নি। প্রত্যেকের ই একটি ই অভিযোগ ছিল “এত গুনবতি ও রূপবতী স্ত্রীর থেকে তারা কখনই স্বামীর সম্মান পাবেন না”। তাদের অভিযোগ যথার্থই ছিল। অনুরাধা নিজের সময়ের থেকে কয়েক শতাব্দী এগিয়ে ছিলেন। ওনার রুপ, গুন এইসবকে ছাপিয়ে যা বেশি নজরে পড়ত টা হোল ওনার আধুনিকতা, যা সত্যি ই সেই সময়ের কোন পুরুষের পক্ষেই মেনে নেওয়া সম্ভব ছিলোনা। বউএর দ্যুতি তে হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে কোন সুপুরুষ ই টাকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহন করতে চাননি। মেয়ের বিবাহের দুশ্চিন্তায় রাজাবাবু বহু পণ্ডিতের পরামর্শ নেন। অবশেষে ঠিক হয় যে অনুরাধার জন্য স্বয়ংবর সভার আয়জন করা হবে এবং তিনি নিজেই নিজের যোগ্য পাত্র কে বেছে নেবেন।
সেই মত পরের মাসে লগ্ন দেখে সয়ংবরের দিন স্থির হয়। রাজবাড়িতে বহু রাজকুমার ও রাজার আগমন ঘটে। সভাগৃহে প্রবেশ করেই অনুরাধা নিজের হাতে লেখা কিছু কাগজের টুকরো সমস্ত প্রতিযোগীর হাতে তুলে দেন। এই কাগজের টুকরো তে জ্যোতিষ শাস্ত্রের কিছু শক্ত প্রশ্ন লেখা ছিল। মাত্র তিন জন সথিক উত্তর দিতে পারেন বাকিদের বিদায় হয়ে যায়। এবং এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে মৃত্যুঞ্জয় বাবু ও ওই ৩ জনের একজন। এরপর অনুরাধার নির্দেশে ৩ টি সম আকৃতির লোহার থাম ওখানে রাখা হয়, এবং প্রতিযোগী দের তা তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়। একজন প্রতিযোগী ব্যর্থ হন ও তার বিদায় ঘটে। এরপর আসে শেষ পরীক্ষার ক্ষন। অনুরাধা ওনাদের দুজনকেই বলেন “আপনারা দুজনেই আমার স্বামী হওয়ার যোগ্য কিন্তু আমি দেখতে চাই আপনারা আমায় ঠিক কি উপহার দিয়ে সন্তুষ্ট করতে পারেন”। এতে অপর প্রতিযোগী খুব খুশি হন এবং ওনাকে একটি হিরের আংটি বাড়িয়ে দেন। মৃত্যুঞ্জয় বাবু ওনার সামনে গিয়ে বলেন “আমি গরিব ব্রাম্ভনের ছেলে, আমি কোন দামী উপহার দিতে পারবো না। আমি একজন চিকিৎসক তাই বলতে পারি এই মুহূর্তে আপনার খুব ঠাণ্ডা লেগেছে। আমি আপনাকে ওষুধ উপহার হিসেবে দিচ্ছি। আর আমি সারাজীবন আপনার সেবা করতে পারি”। অনুরাধা দেবী বিগলিত হয়ে যান এবং মৃত্যুঞ্জয় কেই নিজের স্বামী হিসেবে বেছে নেন।
জমিদার বাড়ীতে মৃত্যুঞ্জয় ও অনুরাধাঃ
“কি দাদা কতটা পড়লেন?” সুবীর বাবু কিছুটা চমকে গেলেন কথাটা শুনে। পেছন ঘুরে দেখেন এক অতি সুদর্শন পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে। পড়নে তার পাঞ্জাবি ও পাজামা। পাঞ্জাবি পাজামা হলেও ড্রেস টা প্রচণ্ড অভিজাত, সাধারনত এই ধরনের কারুকার্য করা কাপড় এখন আর খুব একটা পাওয়া যায়না। ভদ্রলোক কে দেখেই মনে হয় যে অত্যন্ত কেতা দুরস্ত মানুষ। কাপড়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই শরীর দিয়ে ভুর ভুর করে আতরের গন্ধ আসছে। এই গন্ধ টা সুবীর বাবুর প্রচণ্ড অচেনা। সাধারনত এখনকার যুগে আর এই ধরনের আতর ব্যবহার হয়না। যাই হোক সুবীর বাবু শুধু একদৃষ্টি তে ওই ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়েই থাকলেন।
“কি দাদা উত্তর দিলেন না যে। কতটা পড়লেন?”
সুবীর বাবুঃ আপনি কে? এখানে কিভাবে এলেন?
ভদ্রলোকঃ আপনি তো অদ্ভুত লোক মশাই, এই প্রশ্ন টা তো আমার করা উচিত। আপনি কে? কোথা থেকে এসেছেন? এখানে কেন? কখন এসেছেন?
সুবীর বাবুঃ এই মানে আমি সুবীর। ইতিহাসের গবেষক। এই বাড়িটা নিয়ে কিছু গবেষণা করতে এখানে এসেছি। এই ৫ মিনিট হোল। আপনি কে?
ভদ্রলোকঃ আমি এই বাড়ীর ই ছেলে এখানেই থাকি। আমার নাম সত্য।
সুবীর বাবুঃ তা আপনি এই বাড়ী তে থাকেন? এটা তো দেখে একবার ও মনে হলনা থাকার যোগ্য বলে।
সত্য বাবুঃ আরে না এখানে থাকিনা। এই বাড়ীর পেছনে আমরা একটা বাড়ী করেছি। সেখানেই থাকি।
সুবীর বাবুঃ ওহ। আচ্ছা এখানে কি কেউ আসে। যা অবস্থা বাড়ীটার। আমার তো ওপরে উঠতেই ভয় লাগছিল।
সত্য বাবুঃ কেন আসবেনা। সবাই আসে। ভয় পেলে কি চলবে। আপনার কতটা পড়া হোল। দেখি।
সত্য বাবু নিজের থেকেই টেবিলের কাছে এগিয়ে এসে একবার ডায়েরি তার দিকে উকি মারলেন।
সত্য বাবুঃ ও অনেকটাই তো পড়ে ফেলেছেন দেখছি। আপনি তো মশাই খুব পড়াকু লোক মশাই। এত দ্রুত এতটা কি করে পড়ে ফেললেন।
সুবীর বাবুঃ তা বলতে পারেন। আসলে একটা উদ্যেশ্য নিয়ে এসেছি তো। আর সত্যি বলতে খুব ভালো করে খুঁজে দেখলাম এই ডায়েরি তা ছাড়া আর কিছুই নেই।
সত্য বাবুঃ যা বলেছেন মশাই, এই ডায়েরি টা। এটাই তো সব। এরজন্যই তো আপনাদের মত লোক এখানে আসে। আর আমরা রোজ উকি মেরে যাই কেউ এসেছে কিনা, কেউ ডায়েরি টা পরছে কিনা টা দেখার জন্য। জানেন সুবীর বাবু আমি কিন্তু জানতাম আপনি এখানে আসবেন।
সুবীর বাবুঃ ও আপনাকে বোধ হয় রামকিঙ্কর বাবু বলে রেখেছিল না।
সত্য বাবুঃ কে রামকিঙ্কর? না না কেউ বলেনি। আপনি যে আসবেন তা এই ডায়েরি তেই লেখা রয়েছে। (গলা টাকে একটু নিচু করে) মশাই একে যা তা ডায়েরি ভাববেন না। এর নাম অভিশপ্ত ডায়েরি। আজ এত বছর ধরে এটা এই টেবিল এ পড়ে আছে। কত মানুষ এসেছে তারা পড়েছে, এবং ডায়েরি তা তাদের হাতে করে এখান থেকে চলে গেছে। কিন্তু দেখুন আবার এই টেবিল এ এসেছে, আবার অন্য কেউ পড়েছে। এর আগে এটা গেছিল কোনও এক কলেজ স্টুডেন্ট এর কাছে, যাই হোক আবার ফিরে এসেছে।
সুবীর বাবু এবার একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন। ভালো করে একবার সত্য বাবুর দিকে তাকালেন, বিশেষ করে ওনার পোশাক তার দিকে। মনে মনে ভাবলেন লোক তা উন্মাদ নয়তো। এই পোড়ো বাড়ীতে একটা পাগলের খপ্পরে পড়লে আর জ্যান্ত ফিরে যেতে হবেনা। হথাত সত্য বাবু বলে উঠলেন
সত্য বাবুঃ আপনি ভুল ভাবছেন সুবীর বাবু, আমি একদম সুস্থ। আমি পাগল নই, আমার মাথার একদম ঠিক আছে। আমার পোশাক দেখে যদি একটু অন্যরকম মনে হয় তাহলে আমার সত্যি ই কিছু বলার নেই।
সুবীর বাবুঃ আরে মশাই কি যে বলেন, আপনি আমায় লজ্জায় ফেলে দিলেন। আপনার ই বাড়ীতে বসে আপনার সম্বন্ধে আমি এরকম ভাববো।
সত্য বাবুঃ আসলে আমার শরীরে যতই হোক জমিদারি রক্ত, তাই এই পোশাক তা ছাড়তে পারিনি। হাঁ যে ব্যাপারে কথা বলছিলাম, ডায়েরি। এই ডায়েরি তা সত্যি ই অভিশপ্ত, অন্তত আমরা যারা এই বাড়ীতে বাস করি তাদের প্রত্যেকের ই তাই বিশ্বাস। আপনি একবার যখন এটা পড়তে শুরু করেছেন, আপনাকে শেষ অবধি এটা পড়েই তবে যেতে হবে।
সুবীর বাবুঃ (পরিস্থিতি তা কিছুটা স্বাভাবিক করার জন্য একটু হেসে) এব্যাপারে কিন্তু আপনি আমার ওপর ভরসা রাখতে পারেন, আমি কিন্তু খুব নামকরা পাঠক।
সত্য বাবুঃ তাহলে তো জমে ক্ষীর মশাই, আমি আবার খুব নাম করা কথাকার। গল্প বলা আমার অন্যতম শখ। এই ডায়েরি তা আমি কয়েক হাজার বার পড়েছি। এটা আমার মুখস্থ হয়ে গেছে। আমি বরং গল্প তা বলি আপনি শুনুন।
সুবীর বাবুঃ এতো মেঘ না চাইতেই জল। নিশ্চয় নিশ্চয়, আপনি গল্প শুরু করুন, আমি শুনছি।
সত্য বাবুঃ হাঁ শুরু তো করব। কিন্তু আগে একটা প্রশ্ন করি আপনাকে। মশাই আপনার সভ্যসমাজবর্জিত বাংলা সাহিত্য পড়ার অভ্যাস রয়েছে কি?
সুবীর বাবুঃ কি সভ্যসমাজবর্জিত? সে আবার কি জিনিষ?
সত্য বাবুঃ এই মরেছে এই ধরনের জিনিষ আপনার পড়া নেই। আচ্ছা বাৎস্যায়ন এর লেখা মানে কামসুত্র গোছের কিছু লেখা নিশ্চয় পড়েছেন?
সুবীর বাবুঃ (প্রচণ্ড জোরে হেসে) ওহ আপনি তাহলে যৌনতা নির্ভর বাংলা সাহিত্যর কথা বলছেন তাইতো। এতো ছোট বেলায় লুকিয়ে লুকিয়ে কত পড়েছি। কি যেন একটা বাংলা ম্যাগাজিন বেরত, তাতে ধারাবাহিক ভাবে এই লেখাগুলো আসত। স্কুল কলেজ এ পড়া কালীন প্রচুর পড়তাম।
সত্য বাবুঃ ব্যাস ব্যাস বুঝে গেছি। এতেই চলবে। আসলে এই ডায়েরি তা যৌনতা ছাড়া অসমাপ্ত। আর যে অভিশাপের কথা আপনাকে বললাম তা আসলে যৌন অভিশাপ। (আবার গলাটা একটু আসতে করে) মশাই এই বাড়ীর কোনায় কোনায় যৌনতা লুকিয়ে আছে। কান পাতুন ঠিক শুনতে পাবেন। কি পাচ্ছেন নারী পুরুষের সম্ভোগের আনন্দ, নারীর চরম শীৎকার, পাচ্ছেন কি শুনতে।
এর আগের বার সুবীর বাবুর সত্য বাবুকে পাগল মনে হলেও এবার মনে হলনা। উনি বুঝে গেছেন এটা আসলে গল্প বলার স্টাইল, এইভাবে উনি একটা যৌন পরিবেশ তৈরি করতে চাইছেন। ছোট বেলায় দাদু যখন গল্প বলতেন ঠিক এইভাবে আগে একটা আবেশ তৈরি করতেন।
সুবীর বাবুঃ এই মুহূর্তে তো পাচ্ছিনা। তবে মনে হয় আসতে আসতে ঠিক পেয়ে যাবো। আপনি বরং গল্প তা শুরু করে দিন।
সত্য বাবুঃ আপনি এই মুহূর্তে ডায়েরি তার একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে দাঁড়িয়ে আছেন, যার নাম জমিদার বাড়ী তে মৃত্যুঞ্জয় ও অনুরাধা। দক্ষ প্রশাসক দেবেন্দ্রর অনুরোধ ফেলে না দিয়ে মৃত্যুঞ্জয় ঠিক করেন যে তিনি সুতানুটি আসবেন। যতই হোক উনি তো ডাক্তার মানুষ, রোগীর সেবা করাই ওনার প্রধান ধর্ম। পরের দিন ভোর বেলা উনি ও ওনার রুপসি স্ত্রী অনুরাধা দেবেন্দ্রর সাথে সুতানুটি এর দিকে রওনা হন। প্রায় ৮ ঘণ্টা পর ওনারা সুতানুটির কাছাকাছি এক গ্রাম দেবেশ নগরে পৌঁছান। তখন সূর্য প্রায় ঢলে পড়েছে। গ্রামের অবস্থা দেখে মৃত্যুঞ্জয় অনুরাধা দুজনেই শিউরে ওঠেন। পুরো গ্রাম জুড়ে লাশের মিছিল। কেউ কেউ হয়ত বেঁচে আছেন, কিন্তু তাদের অবস্থা এতটাই করুন যে যেকোনো সময় ই তাদের মৃত্যু হতে পারে। এই অবস্থা দেখে মৃত্যুঞ্জয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নেমে পড়েন। কোনও এক মুমূর্ষু রোগীর কাছে গিয়ে ভালো করে তাকে পরীক্ষা করেন। এভাবে গোটা গ্রামেই প্রায় শতাধিক রোগীর উনি পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। ডাক্তারের চোখে রোগ আর কতক্ষন লুকিয়ে থাকে। মৃত্যুঞ্জয় বুঝে যান এই অজানা রোগ টি আসলে কি, কি এর ওষুধ। সেই মত মৃত্যুঞ্জয় আদেশ করেন হাজার রকম গাছ গাছালি, জড়িবুটি ইত্যাদি জোগাড় করতে। সঙ্গে সঙ্গে বিশাল বাহিনী কে পাঠানো হয় আশেপাশের সমস্ত গ্রামে ওইসব জোগাড় করতে। ঠিক হয় পরের দিন দুপুর থেকেই সমস্ত প্রজা ও রাজাবাবুকে মৃত্যুঞ্জয়ের হাতে তৈরি ঔষধ সেবন করানো হবে। সেই মত ২-৩ ঘণ্টার মধ্যেই সব উপাদান জোগাড় হয়ে যায় এবং মৃত্যুঞ্জয় নিজের জীবনের হয়ত শ্রেষ্ঠ আবিস্কার টি করে ফেলেন। সম্পূর্ণ ঔষধ টি বানাতে বানাতে ভোর হয়ে যায়। অনুরাধা ও দেবেন্দ্র সারারাত ওনার সাথে জেগে থাকেন। এরপর শুরু হয় ঔষধ সেবন। ভোর রাত থেকেই জমিদার বাড়ীর সামনে ভিড় হয়ে যায় শুরু হয় ১ সপ্তাহ ধরে লাগাতার চিকিৎসা।
[/HIDE]
 
[HIDE]পর্ব ৭- সত্যেন্দ্রের অপমানঃ [/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
সত্য বাবুঃ কি মশাই কি বুঝছেন? কেমন লাগছে আমার গল্প? পরে মিলিয়ে দেখবেন হুবহু এক রয়েছে।
সুবীর বাবুঃ হাঁ সব ই তো বুঝলাম। কিন্তু যৌনতা কোথায়? এতো হবার ই ছিল।
সত্য বাবুঃ আপনি তো চরম অধৈর্য লোক মশাই। শুনুন গল্প ছাড়া যৌনতার কোনও গুরুত্ব নেই। আগে প্রেক্ষাপট তা বানাতে দিন তারপর তো হবে।
সুবীর বাবুঃ আরে না না আপনি বলুন, আমি শুনছি।
সত্য বাবুঃ মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে রাজাবাবু একদম সুস্থ হয়ে ওঠেন। আর ১ মাসের মধ্যে বাকি প্রজারাও। মৃত্যুঞ্জয় বাবু হয়ত সবাইকে বাচাতে পারেন নি। কিন্তু হাজারো মানুষ কে বিনা চিকিৎসায় মরার হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। সেই থেকে ওনার নাম ই পরিবর্তন হয়ে যায়। ওনার আসল নাম টা হয়ত দেবেন্দ্র ও ভুলে গিয়েছিলেন। প্রজাদের মুখ থেকে শেষে জমিদার বাড়ী তেও উনি ঠাকুর নামেই পরিচিত হয়ে যান। আর এই এতো ভালবাসা শ্রদ্ধা কে উপেক্ষা করে উনিও সুতানুটি ছাড়তে পারেন না। জমিদার বাড়ী তে একদম পাকাপাকি বদ্দি হয়ে রয়ে যান। সুতানুটির প্রজারা ওনাকে দেবেন্দ্রর সমান আসনে হয়ত একটু ওপরের কোনও স্থানে বসিয়ে দেন।
সুবীর বাবুঃ আচ্ছা এতো বড় ঘটনা ঘটে গেলো, কিন্তু দেবেন্দ্রর ভাই সত্যেন্দ্র এখনো গল্পে এলনা।
সত্য বাবুঃ আরে মশাই ওই তো এই গল্পের নায়ক, ও না এসে কি থাকতে পারে।
সুবীর বাবুঃ (কিছুটা গম্ভীর হয়ে ভুরু কুঁচকে) নায়ক? যতটুকু ডায়েরি টা পড়েছি, সত্যেন্দ্র তো লম্পট ছিল ও নায়ক কি করে হয়ে যায়।
সত্য বাবুঃ আরে মশাই যৌন গল্পে নায়ক হতে গেলে লম্পট দের ই দরকার। এই জমিদার বাড়ীর কোনায় কোনায় যে সম্ভোগ আনন্দের আওয়াজ পাচ্ছি তা তো ওর ই হাতে তৈরি। ওকে নায়ক না বলে অন্য কিছু বলতে পারিকি?
সুবীর বাবুঃ আপনি তো মজার লোক মশাই। ঠিক আছে বাকি গল্প টা বলুন।
সত্য বাবুঃ জমিদার বাড়িতে একদম রাজাদের আদব কায়দায় একি সুখ ও বিলাসবহুল জীবন মৃত্যুঞ্জয় ও ভোগ করতে থাকেন। এবং তারচেয়েও আশ্চর্য জনক ভাবে প্রজাদের কাছে মাত্রাতিরিক্ত একটা গুরুত্ব ও উনি পেতে শুরু করেন। আর এখান থেকেই শুরু হয় যাবতীয় অসুবিধা। ধীরে ধীরে মৃত্যুঞ্জয় রাজকাজেও নিজের পরামর্শ দেওয়া শুরু করেন। সুচারু প্রশাসক দেবেন্দ্র ও এই কারনে কিছুটা রাজশঙ্কায় ভুগতে শুরু করেন। এমন ই একদিন দুপুর ১২ ঘটিকায় দেবেন্দ্র প্রজাদের অভাব অভিযোগ শোনার জন্য বসেছিলেন, ওনার পাশেই বসেছিলেন মৃত্যুঞ্জয়। হথাত এক বয়স্ক মত লোক প্রচণ্ড কাদতে কাদতে ছুটে এসে মৃত্যুঞ্জয়ের পা জড়িয়ে ধরেন। “ঠাকুর মশাই, মা বাপ মরা মেয়ে টাকে বাঁচান। ছোট বাবু আজ সকালে আমার নাতনি রত্না কে তুলে নিয়ে গেছে বাইজি বাড়িতে” পণ্ডিত মৃত্যুঞ্জয়ের পক্ষে এই চরম অন্যায় মুখ বুজে সহ্য করা সম্ভব ছিলনা। এর আগে এই ঘটনায় কেউ সোজা জমিদার বাড়ী তে এসে অভিযোগ জানানোর স্পর্ধাও আগে কখনই দেখায়নি। এর আগে যে ছোট বাবুর নজর কোনও মেয়ের ওপর পরেনি ও কোনও মেয়ের স্থান বাইজি বাড়িতে হয়নি তা নয়। কিন্তু এই নিয়ে জমিদার বাড়িতে এসে নালিশ জানানোর স্পর্ধা কেউ ই কখনই করেন নি। সমস্ত ব্যাপার টাকে হাল্কা করার জন্য দেবেন্দ্র বলে ওঠেন “তুমি এভাবে নিশ্চিত কি করে হচ্ছ। আমি না হয় লোক পাঠাচ্ছি বাইজি বাড়িতে, যদি এটা সত্যি হয় ওরাই তোমার নাতনি কে ফিরিয়ে আনবে। আর যদি সত্যি না হয় রাজবাড়ির ওপর কলঙ্ক লেপনের জন্য তুমি চরম শাস্তির জন্য অপেক্ষা করবে” পণ্ডিত মৃত্যুঞ্জয়ের পক্ষে এটা মেনে নেওয়া সম্ভব ছিলনা। উনি দৃপ্ত কণ্ঠে বলে ওঠেন “লোক নয়, আমি যাবো বাইজি বাড়ী। আমার এই ভদ্রলোকের কথা সত্যি মনে হচ্ছে” আর ঠিক এর সাথে সাথেই জমিদার বাড়িতে বিদ্রোহের প্রথম বারুদ তা মজুদ হয়। সভাস্থলে উপস্থিত সমস্ত প্রজা ও সাধারন মানুষ ই মৃত্যুঞ্জয় কে সমর্থন জানায়। সভাস্থল থেকেই আওয়াজ ওঠে ঠাকুর মশাই এর জয় হোক। আর এই বিদ্রোহের আগুন তা অনুধাবন করতে দেবেন্দ্রর খুব একটা দেরি হয়না। মৃত্যুঞ্জয় সেই মুহূর্তেই রওনা দেন বাইজি বাড়ির দিকে আর তার সাথে যায় বিশাল পরিমান গ্রামবাসী। বাইজি বাড়ির বাইরে প্রহরায় সব সময় থাকে প্রায় জনা দশেক লাঠিয়াল। তারা প্রবল ভাবে মৃত্যুঞ্জয় কে ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয়। শুরু হয়ে যায় মৃত্যুঞ্জয়ের সাথে লাঠিয়ালদের মল্লযুদ্ধ। সবাইকে অবাক করে মৃত্যুঞ্জয় খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সবাইকে পরাস্ত করেন। এরপর সবাইকে সাথে নিয়ে মৃত্যুঞ্জয় বাইজি বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেন।
“কি মশাই কেমন লাগছে আমার গল্প”
সুবীর বাবুঃ খুব ভালো। এবার একটা লড়াই এর গন্ধ পাচ্ছি।
সত্য বাবুঃ শুধু লড়াই এর ই গন্ধ পেলেন, যৌনতার কোনও গন্ধ পেলেন না। ঠিক আছে তবে এর পরের অংশ তা শুনুন।
ভেতরে ঢোকার সাহস অন্য কারুর ছিলনা। এতো কিছুর পরেও প্রজাদের মনে একটা ভয় সত্যেন্দ্রর ব্যাপারে থেকেই গেছিলো। তাই মৃত্যুঞ্জয় একাই ভেতরে প্রবেশ করলেন। ভেতরে গিয়ে উনি যা দেখলেন তাতে ওনার মাথা বনবন করে ঘুরতে শুরু করল। মূল ফটকের ভেতরেই একটা সুবিশাল ঘর। তার মাঝে একটা খাট। সেখানে চারপাশে অন্তত ৫ জন মহিলা বসে আছে প্রত্যেকেই নগ্ন। আর তাদের মাঝে শুয়ে আছে সুপুরুষ সত্যেন্দ্র, এবং উনিও সম্পূর্ণ উলঙ্গ। ওনার ঠিক পায়ের কাছে বসে কোনও এক নারী, অত্যন্ত সুন্দরি এক নারী। মৃত্যুঞ্জয় বুঝতে পারেন ইনি ই রত্না। রত্নার শরীরে তখন ও পোশাক বর্তমান। কিন্তু রত্নার হাতের মুঠোয় সত্যেন্দ্রর বিশাল আকারের যৌনাঙ্গ। এইরকম পাপাচার চোখের সামনে দেখে মৃত্যুঞ্জয় হতবম্ব হয়ে যান। উনি ওখানেই দাঁড়িয়ে যান। রত্না ধীরে ধীরে নিজের মুখটা ওনার যৌনাঙ্গের কাছে নিয়ে যান। এবং খুব সুন্দর ভাবে ওই শক্ত অঙ্গ টিকে মুখলেহন করতে শুরু করেন। যে দাসিরা এতক্ষন শুধু বসে ছিল তারা আসতে আসতে রত্নার শরীর কে স্পর্শ করতে শুরু করে, রত্না নিজের শরীর দিয়ে যৌনতার চরম অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে শুরু করে। মৃত্যুঞ্জয় খুব ভালো করে লক্ষ্য করে, এবং বোঝে রত্নার শরীরে কোনও যৌনতা উদ্রেককারী জড়ি বুটি দেওয়া হয়েছে। দাসিরা রত্নার শরীরের অনেকটাই অনাবৃত করে ফেলে এবং সত্যেন্দ্র ও নিজের হাত দিয়ে কুমারি নারীর শরীরের উত্তেজনা উপভোগ করতে শুরু করেন। মৃত্যুঞ্জয় বোঝে আর সময় নেই, উনি বিশাল জোরে হুঙ্কার ছাড়েন “সাবধান ছোট বাবু, আমার জীবিত অবস্থায় আমি এই নিষ্পাপ মেয়েটির সর্বনাশ কিছুতেই করতে দেবনা” সত্যেন্দ্র কিছুটা স্তম্ভিত হয়ে ওঠেন। সামান্য এক বদ্দির থেকে সম্ভোগ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হওয়ার ক্রোধে উনি নিজের তরোয়াল নিয়ে দৌড়ে যান। কিন্তু বিধির বিধান বোধ হয় এটাই ছিল, উনিও মৃত্যুঞ্জয়ের কাছে পরাজিত হন। সত্যেন্দ্রর দুহাত দড়ি দিয়ে বেঁধে উনি বাইরে নিয়ে আসেন এবং প্রজাদের সামনে এনে বিধান দেন “এই কুমারি মেয়ের সম্মান ও নষ্ট করেছে, আজ থেকে ও রত্নার স্বামী” পাশের মন্দির থেকে পুরোহিত মশাইকে ডেকে উনি ওই বাইজি বাড়ির সামনেই সত্যেন্দ্র ও রত্নার বিবাহ দেন। মুহূর্তের মধ্যে সমস্ত কথাই দেবেন্দ্রর কানে যায়। দেবেন্দ্র ছিলেন চতুর প্রশাসক, উনি জানতেন এই মুহূর্তে প্রজাদের মনে মৃত্যুঞ্জয় অর্থাৎ ঠাকুর মশাই বিশাল একটা জায়গা বানিয়েছেন। তাই ওর বিরুদ্ধে যাওয়া মানে বোকামি। দেবেন্দ্র তাই অনিচ্ছা স্বত্তেও সম্পূর্ণ ব্যাপার তা মেনে নেন, এবং অপেক্ষা করতে থাকেন সঠিক সময়ের। বাইজি বাড়িকে বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং রত্নার স্থান হয় জমিদার বাড়ীতে।
ঠিক আছে এবার আমার কিছু প্রশ্ন আছে আপনার কাছে। আচ্ছা বলুন তো এতকিছুর পর মৃত্যুঞ্জয় অর্থাৎ ঠাকুর মশাই এর শত্রু কারা কারা হোল?
সুবীর বাবুঃ এতো খুব সহজ ব্যাপার। সত্যেন্দ্র আর দেবেন্দ্র।
সত্য বাবুঃ না শুধু এরা দুজন নয়। আরও একজন আছে, সে হোল তিনকড়ি। মৃত্যুঞ্জয়ের আশার আগে এই তিনকড়ি ই ছিল জমিদার বাড়ির বদ্দি। ওই অজানা জ্বরে বহু প্রজার প্রান যাওয়ার পর তিনি নিজের কাজ টি হারান। সেই হিসেবে ওনার ও একটা বিশাল রাগ ছিল মৃত্যুঞ্জয়ের ওপর।
সুবীর বাবুঃ ঠিক আছে এতটা বুঝলাম। এবার বলুন আপনার যৌনতার ছোঁয়া কি ওই বাইজি বাড়ীর সাথে সাথেই শেষ হয়ে গেলো।
সত্য বাবুঃ আপনি বড্ড অধৈর্য লোক মশাই। অনুরাধার কি হবে। আপনি কি চান না সত্যেন্দ্র আর অনুরাধার মধ্যে কিছু হোক। যতই হোক ওরাই তো এই গল্পের নায়ক ও নায়িকা।
সুবীর বাবু একটু মুচকি হাসেন কারন আবার সত্যেন্দ্রকে নায়ক বলে সম্বোধন করা হয়েছে। সত্য বাবু আবার নিজের গল্প শুরু করেন।
সত্য বাবুঃ সত্যেন্দ্রর সাথে তিনকড়ির সম্পর্ক বহু বছরের। সত্যেন্দ্র জীবনে কখনই জোর করে কোনও নারীর সাথে যৌন সম্পর্ক করেনি। বাইজি বাড়ী তে নিয়ে আসা ও কিছু জড়ি বুটি খাওয়ানো এই সব কাজ ই সত্যেন্দ্রর অতি বিশ্বস্ত কিছু অনুচর করে থাকত। আর এই সমস্ত ঔষধ আসত তিনকড়ির কাছ থেকে। জমিদার বাড়ীতে চাকরি তা হারানোর পর থেকেই তিনকড়ির মনে শুধু একটাই কথা ঘুরপাক খেত তা হোল কি করে মৃত্যুঞ্জয়ের ওপর প্রতিশোধ নেওয়া যায়। সত্যেন্দ্রর সাথে মৃত্যুঞ্জয়ের সম্পর্ক চরমে পৌঁছানর পর তিনকড়ির জিঘাংসা বেড়ে ১০ গুন হয়ে যায়। এদিকে সত্যেন্দ্র ও চুপ করে বসে ছিলনা ওর ও শরীরে বইছিল আভিজাত্যের রক্ত। নিজের আভিজাত্যে এক সামান্য বদ্দির থেকে চরম আঘাত পেয়ে সত্যেন্দ্র ও প্রতিহিংশার আগুনে জ্বলতে থাকে। বাইজি বাড়িকে গ্রামবাসী রা বন্ধ করে দেয় তারফলে সত্যেন্দ্রর স্থান হয় জমিদার বাড়ীর চার দেওয়ালের মধ্যে। রত্না থাকত ছোটো একটা ঘরে, সত্যেন্দ্র ওকে নিজের স্ত্রীর সম্মান হতে বঞ্চিত করে। এমন ই একদিন সত্যেন্দ্র তখন প্রচুর পরিমান সুরা পান করেছে। টলতে টলতে কোনরকমে ওপরে উঠে নিজের ঘরের দিকে যাওয়ার পথে উলটো দিকের ঘরের থেকে গুন গুন করে একটা গানের আওয়াজ পায়। কামনার আগুনে দগ্ধ সত্যেন্দ্র বহু দিন নারী শরীরের দর্শন না পেয়ে পাগল ভ্রমরের মত ছুটে যায় ওই ঘরের দিকে। এই খানে আপনাকে বলে রাখা উচিত একটা কথা। সত্যেন্দ্রর একটা পন ছিল। সত্যেন্দ্র জীবনে কখনও সতি ছাড়া কোনও মেয়ের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহি ছিলনা। এ এক অদ্ভুত পন সে নিজের মনেই করে ফেলেছিলেন। যাই হোক যে ঘর টি থেকে এই গুন গুন করে গানের শব্দ আসছিল সেটা আসলে অনুরাধার ঘর। সত্যেন্দ্র টলতে টলতে সেদিকেই এগিয়ে যায়। ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল তাই সত্যেন্দ্র পাশের জানলা তার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। ভুল বশত অনুরাধা জানলা তা খোলাই রেখে দিয়েছিল। সত্যেন্দ্র জানলা তা সামান্য ফাঁক করে ও ভেতরে তাকানর পর তার সমস্ত শরীর কেঁপে ওঠে। বহুদিন নিষ্ক্রিয় থাকা যৌনাঙ্গ টি আবার সজাগ হয়ে ওঠে। অনুরাধা স্নান সেরে ভেজা গায়ে ধীরে ধীরে ভেতরের দিকে আসছে। সত্যেন্দ্রর নজর যায় সোজা যোনির দিকে। অভিজ্ঞ সত্যেন্দ্র চিনতে ভুল করেনা এটা কুমারি সতি। এভাবে প্রায় ১০ মিনিট ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে সত্যেন্দ্র। অনুরাধার দুধের মত সাদা গায়ের রঙ, অপ্সরার মত শরীরের গড়ন, দেবীর মত মুখের দীপ্ততা ওর শরীরে কামনার আগুন ভীষণ ভাবে জ্বালিয়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে নিজের ঘরে ফিরে যায় সত্যেন্দ্র। ততক্ষনে ওর নেশা সম্পূর্ণ কেটে গেছে, ডাক পাঠান তিনকড়িকে। সমস্ত কথা তিনকড়িকে খুলে বলেন। সুযোগ সন্ধানী তিনকড়ির ঠিক এরকম ই একটা সুযোগের প্রয়োজন ছিল। শুরু হয় তিনকড়ি ও সত্যেন্দ্রর জিঘাংসার নতুন গল্প।
[/HIDE]
 
[HIDE]পর্ব ৮- তিনকড়ির ওষুধঃ [/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
সুবীর বাবুঃ আপনার গল্প বলার কায়দার প্রশংসা না করে পারছিনা সত্যবাবু। কিন্তু গল্প টা বড্ড একঘেয়ে লাগছে। একটু যদি মশালা থাকত তাহলে জমে যেত।
সত্য বাবুঃ এবার পাবেন আপনি মশালা। আর এবার আমি গল্প টা এমন ভাবে আপনার সামনে উপস্থাপন করব যেন আপনি সব কিছু নিজের চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছেন।
সুবীর বাবুঃ তাহলে তো খুব ভালো হয়। আপনি বরং শুরু করুন।
সত্য বাবুঃ সত্যেন্দ্র তিনকড়ি কে ডেকে পাঠান। তিনকড়ি কিছুক্ষনের মধ্যেই ওখানে এসে উপস্থিত হয়।
তিনকড়িঃ ছোটবাবু আপনি আমায় ডেকেছেন?
সত্যেন্দ্রঃ আগে দরজা টা বন্ধ কর। (তিনকড়ি দরজা বন্ধ করে দেয়) তিনকড়ি তুমি আকারে ইঙ্গিতে অনেকবার মৃত্যুঞ্জয়ের প্রতি তোমার রাগের কথা আমার কাছে প্রকাশ করেছ। তিনকড়ি এমন কোনও ছক কষ যাতে এক ঢিলে দুই পাখি মরে।
তিনকড়িঃ ছোটবাবুঃ সব ই তো বুঝলাম, কিন্তু আগে আপনাকে বলতে হবে আপনার হথাত এই উদ্দীপনার কারন কি।
সত্যেন্দ্রঃ তিনকড়ি তোমায় আর কি লুকবো। জীবনে বহু নারী দেহ দেখেছি। কিন্তু কোনও নারীর স্তন, নিতম্ব, কোমর এবং তার সাথে সাথে গায়ের রঙ ও মুখশ্রী, এক শরীরে সমস্ত কিছুই বর্তমান। তিনকড়ি এই নারী কে পেলে মনে হবে একসাথে বহু নারীর সাথে সম্ভোগ করছি। এই নারীর শরীরে যে দুতি আমি দেখেছি, তা যদি আমি ভোগ করতে না পারি, আমার এ জীবন সার্থক নয়। তুমি কিছু কর তিনকড়ি।
তিনকড়িঃ কিছুক্ষন আগে আপনি মৃত্যুঞ্জয়ের নাম উল্লেখ করলেন আর এখন বলছেন এক নারীর কথা। কি ব্যাপার ছোটবাবু আপনি কি মৃত্যুঞ্জয়ের পত্নী অনুরাধার কথা বলছেন? (মুখে সেই পরিচিত দুষ্টু হাসির সাথে)
সত্যেন্দ্রঃ তোমায় কিছুই লুকাবনা তিনকড়ি। আজ আমি ওই অপ্সরার শরীরের দর্শন করেছি। আমি ওর যোনি নিজের চোখে দেখেছি, আমি নিশ্চিত ও সতী। তুমি এই মুহূর্তে গোপন কিছু খবর বার কর। দাসিদের কাজে লাগাও। এটা কি করে হয়। কি করে এক বিবাহিত নারী সতী হয়। আমার ওকে চাই তিনকড়ি, যেভাবে হোক চাই।
তিনকড়িঃ সে না হয় আমি করলাম। কিন্তু আমি কি পাবো ছোটবাবু।
সত্যেন্দ্রঃ তুমি নিজের রাজবদ্দির চাকরি তো ফিরে পাবেই সাথে আরও অনেক কিছু। তুমি কোনও চিন্তা করোনা। যে আদেশ আমি তোমায় দিলাম তা পালন কর, তোমার জন্য বিশাল পুরস্কার অপেক্ষা করে আছে।
তিনকড়িঃ জো হুকুম ছোটবাবু।
এরপর তিনকড়ি কিছু দাসিকে অর্থের লোভ দেখিয়ে অনুরাধার ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করতে বলে। বিকেলের মধ্যেই সমস্ত তথ্য তিনকড়ি জোগাড় করে ফেলে। বিকেলে হাসি হাসি মুখে তিনকড়ি আসে ছোটবাবুর কাছে।
তিনকড়িঃ ছোট বাবু একটা বিশাল খবর আছে। অনুরাধা সত্যি ই সতী। মৃত্যুঞ্জয়ের কোনও মানত রয়েছে, বিয়ের ১ বছর অবধি ও স্ত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করবেনা। খবর তা একদম সত্যি। আরও ৬ মাস ওদের মধ্যে কোনও রকম সম্পর্কই হবেনা। এমনকি ওরা একসাথে শোয় না পর্যন্ত।
সত্যেন্দ্রঃ আরে তিনকড়ি তুমি আমায় যা খবর শোনালে কি বলব তোমায়। শোন আমাদের এই মুহূর্তে দুটো কাজ করতে হবে। প্রথমত তোমায় এমন কিছু করতে হবে যাতে আমি অনুরাধাকে ভোগ করতে পারি। আর দ্বিতিয়ত এমন কিছু ভাবতে হবে যাতে মৃত্যুঞ্জয় ও অনুরাধার মধ্যে কোনও ভুল বোঝাবুঝি হয় ও আমি মৃত্যুঞ্জয়ের নামে কোনও মিথ্যে অপবাদ দিতে পারি।
তিনকড়িঃ ছোট বাবু প্রথম কাজ তা অপেক্ষাকৃত অনেক সহজ। আমি এমন এক ঔষধ এবার বানাবো যে কয়েক ঘণ্টার জন্য নয় সারা জীবনের জন্য অনুরাধা আপনার শরীরের বশবর্তী হয়ে যাবে। কিন্তু কি করে আপনি মৃত্যুঞ্জয় কে বিপদে ফেলবেন তা আমি জানিনা।
সত্যেন্দ্রঃ ওটা নিয়ে তুমি ভেবনা। তুমি খালি মন দিয়ে একটা ওষুধ তৈরি কর, পরের ব্যাপার তা পরেই দেখা যাবে। আপাতত আমি অপেক্ষা করব। তোমার যত সময় লাগে তা তুমি নিতে পারো, কিন্তু মনে রেখ ওষুধ যেন সঠিক হয়।
তিনকড়িঃ কোনও চিন্তা করবেন না ছোট বাবু আমায় ২ সপ্তাহ সময় লাগবে, আপনি ততদিন মাথা ঠাণ্ডা করে ভাবুন আপনি কি করবেন। কি করে মৃত্যুঞ্জয় কে বিপদে ফেলবেন। আমি এখন তাহলে চললাম।
তিনকড়ি সত্যেন্দ্রকে আশ্বস্ত করে জমিদার বাড়ী থেকে বিদায় নেয়। এদিকে সত্যেন্দ্র দিন রাত ভাবতে থাকে কি করে সে মৃত্যুঞ্জয় কে বিপদে ফেলবে, কি করে প্রতিশোধ নেবে। এদিকে মৃত্যুঞ্জয় ও অনুরাধা দুজনেই এই ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে অবগত ছিলনা।
কি মশাই কেমন লাগছে? এবার কি কোনও যৌনতার ছোঁয়া পাচ্ছেন?
সুবীর বাবুঃ হাঁ এবার আসতে আসতে একটা যৌন উত্তেজনা আমি অনুভব করছি। খুব ভালো হচ্ছে গল্প টা আপনি চালিয়ে যান, সত্যবাবু।
সত্যবাবুঃ দিন দশেক পর তিনকড়ি ফিরে আসে জমিদার বাড়িতে। সত্যেন্দ্র ও নিজের ই ঘরে নিজেকে আটক করে রেখেছিল। তিনকড়ি কে এতো দ্রুত ফিরে আসতে দেখে সত্যেন্দ্র বিশাল আনন্দ পায়।
সত্যেন্দ্রঃ কি ব্যাপার তিনকড়ি, এতো তাড়াতাড়ি ফিরে এলে। তোমার কাজ কি সম্পূর্ণ। আমায় উত্তর দাও, আমি আর অপেক্ষা করতে পারছিনা।
তিনকড়িঃ হাঁ ছোট বাবু আমার ঔষধ মোটামুটি ভাবে তৈরি। কিন্তু একটু অসুবিধা হয়েছে, তাই আপনার কাছে ছুটে এলাম।
সত্যেন্দ্রঃ আবার কিসের অসুবিধা তিনকড়ি। তুমি কোনও ভনিতা না করে আমায় সমস্ত কিছু স্পষ্ট ভাবে বল।
তিনকড়িঃ ছোট বাবু আপনি যে ঔষধ চেয়েছিলেন আমার চিকিৎসা শাস্ত্রে তার কোনও অস্তিত্ব নেই। কিন্তু কিছু ওঝা ও গুনিন এই ধরনের এক ঔষধের সন্ধান আমায় দিয়েছিলেন। আমি তাদের ই পরামর্শ মত ঔষধ তৈরি করি এবং ঔষধ সম্পূর্ণ প্রস্তুত। কিন্তু একটু অসুবিধা রয়েই গেছে।
সত্যেন্দ্রঃ আবার কিসের অসুবিধা। আমি আর ধৈর্য ধরতে পারছিনা, অনুগ্রহ করে আর ভনিতা না করে আমায় সবকিছু খুলে বল।
তিনকড়িঃ ছোট বাবু যেহেতু এই ঔষধ কিছু গুনিন ও ওঝার সাহায্যে বানানো তাই এর প্রয়োগে রাজবাড়ীতে অতৃপ্ত আত্মার আবির্ভাব ঘটতে পারে। আমাকে এব্যাপারে সবাই সতর্ক করে দিয়েছেন।
সত্যেন্দ্রঃ বোকার মত কথা বলনা তিনকড়ি। আমি এসবে বিশ্বাস করিনা।
তিনকড়িঃ ছোটবাবু একটু ভাবুন, অন্য কোনও পন্থা গ্রহন করলে কি বিশাল ভুল হয়ে যেত। এতে জমিদার বাড়ীর অমঙ্গল হতে পারে।
সত্যেন্দ্রঃ যা হওয়ার তা হবে। আমি আর ধৈর্য ধরতে পারছিনা। ওই অপ্সরার শরীর আমার চাই আর তারসাথে মৃত্যুঞ্জয়ের ওপর প্রতিশোধ। তিনকড়ি তুমি আমায় ঔষধের ব্যাপারে কিছু বল। কি করে এটা প্রয়োগ করতে হবে।
তিনকড়িঃ ছোট বাবু, এতদিন আমি আপনাকে জেসব ঔষধ দিয়েছি এটা তারচেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। এটা একটা আতর। বহু মৃতদেহর থেকে কিছু অংশ নিয়ে বিভিন্ন গাছ গাছালি দিয়ে বানানো হয়েছে এই আতর। এর মধ্যে বহু নারীর অতৃপ্ত যৌন খিদে লুকিয়ে আছে।
সত্যেন্দ্রঃ আবার ভনিতা করছ, ঠিক করে বুঝিয়ে বল।
তিনকড়িঃ না ছোটবাবু আমি কোনও ভনিতা করছিনা। একদম সত্যি কথা বলছি। আমি যেসমস্ত মৃতদেহ থেকে কিছু নমুনা নিয়েছি তার প্রতিটাই কুমারী নারীর দেহ, যারা যৌন সঙ্গম ঘটানোর আগেই মারা গেছে। তাই এই আতরের মধ্যে লুকিয়ে আছে চরম যৌন কামনা।
সত্যেন্দ্রঃ সে না হয় বুঝলাম, কিন্তু এই আতর অনুরাধার শরীরে যাবে কি করে। আর ও আমাকেই যে নিজের যৌনতা পুরন করার জন্য বেছে নেবে তার ও তো কোনও নিশ্চয়তা নেই।
তিনকড়িঃ মুস্কিল তা এই জায়গাতেই। স্নান করার পর যে কাপড় অনুরাধা পড়বে তাতে এই আতর ছড়িয়ে দেওয়া আমার কাছে কোনও ব্যাপার ই নয়। ওর ঘরে যে দাসিরা দায়িত্বে আছে তারাই এটা করে দেবে। কিন্তু পোশাক পরার পর অনুরাধা চোখের সামনে যে পুরুষ কেই দেখবেন তার প্রতি ই সারা জীবনের জন্য আকৃষ্ট হয়ে পরবেন। নিজের শরীর তা বিনা দ্বিধায় তার ই হাতে তুলে দেবেন।
সত্যেন্দ্রঃ তার মানে তুমি কি বলতে চাইছ? যদি এই আতর ছড়িয়ে দেওয়ার পর মুহূর্তে আমার বদলে অনুরাধা অন্য কাউকে দেখে ফেলে তাহলে আমার সমস্ত পরিকল্পনা জলে পড়ে যাবে।
তিনকড়িঃ একদম তাই। যে মুহূর্তে ওনার কাপড়ে ওই আতর যোগ করা হবে, আপনাকে এটা মাথায় রাখতে হবে যে যেন ওনার চোখে প্রথম পুরুষ আপনি ই হন।
সত্যেন্দ্র খুব গভীর ভাবে চিন্তা করতে শুরু করল। ওনার এই চিন্তা দেখে তিনকড়ি ওনাকে কিছুটা আশ্বস্ত করার জন্য বলে উঠলেন
তিনকড়িঃ ছোট বাবু আপনি এতো চিন্তা করবেন না। আমি অনুরাধার ঘরে দায়িত্বে থাকা প্রায় সব দাসিকেই হাত করে নিয়েছি ওরাই আপনাকে সাহায্য করবে। আপনি কোনও চিন্তা করবেন না, অনুরাধা আপনার ই হবে।
সত্যেন্দ্রঃ (সেই অতি পরিচিত দুষ্টু হাসির সাথে) তোমার মাথায় সত্যি বুদ্ধি আছে তিনকড়ি। আমি তো এক ঢিলে ২ পাখি মারব ভেবেছিলাম, এবার তো দেখছি এক ঢিলে ৩ পাখি।
তিনকড়িঃ আমি ঠিক বুঝলাম না ছোট বাবু। এক ঢিলে ৩ পাখি মানে কি বোঝাতে চাইছেন আপনি।
সত্যেন্দ্রঃ সময় আসলে ঠিক ই বুঝবে। আগে বল কবে এই আতর তুমি প্রয়োগ করতে চাও।
তিনকড়িঃ ছোট বাবু কাল অমাবস্যা। কাল কেই এই ঔষধ এর সঠিক প্রয়োগ সম্ভব।
[/HIDE]
 
[HIDE]পর্ব ৯- সত্যেন্দ্রের পরিকল্পনা- [/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
সুবীর বাবুঃ তিনকড়ির মত আমিও কিছুই বুঝতে পারছিনা। এক ঢিলে ৩ পাখি মানে সত্যেন্দ্র ঠিক কি বোঝাতে চেয়েছেন?
সত্য বাবুঃ আরে মশাই, সেটা জেনে গেলে আর গল্পে বাকি কি থাকবে। সেটাই তো এবার বলব আপনাকে। আপনি মন দিয়ে গল্প তা শুনুন। পর দিন একদম ভোরে উঠে যান সত্যেন্দ্র, কিছুক্ষনের মধ্যে তিনকড়ি ও দেখা করতে চলে আসে।
সত্যেন্দ্রঃ কি ব্যাপার তিনকড়ি আজ সব হচ্ছে তো? আজ ই তো অমাবস্যা।
তিনকড়িঃ হাঁ ছোটবাবু আজ ই সব কিছু হবে, আপনি কোনও চিন্তা করবেন না। শধু আমায় এতটুকু বলুন ওই এক ঢিলে ৩ পাখি মারার মানে কি।
সত্যেন্দ্রঃ সেটা বলব বলেই তো তোমায় এতো ভোরে এখানে ডেকেছি। আচ্ছা তিনকড়ি একটা সত্যি কথা আমায় বল জমিদারির দায়িত্বে তুমি বড়বাবু না ছোটবাবু কাকে দেখতে চাও মানে কে থাকলে তোমার সুবিধা হয়।
তিনকড়িঃ আজ্ঞে ছোটবাবু ছোট মুখে বড় কথা হয়ে যাবে টাও এটা প্রচণ্ড সত্যি যে আমি আপ্নাকেই চাই ওই জায়গায়।
সত্যেন্দ্রঃ সেই সময় এসে গেছে তিনকড়ি। এটাই আমার এক ঢিলে ৩ পাখি মারার মত। অনুরাধা কে আমি স্পর্শ করবনা তিনকড়ি করবে দেবেন্দ্র মানে তোমাদের বড়বাবু। তোমার কাছে এই মুহূর্তে একটা গুরু দায়িত্ব রয়েছে। প্রথম হোল এমন একটা পরিকল্পনা বানাও যাতে মৃত্যুঞ্জয় কিছুক্ষনের জন্য গ্রামে যায়। সেই সময় দেবেন্দ্র কে অনুরাধার সামনে পাঠাও মানে আতর দেওয়ার পড়ে বলছি। আর সঙ্গমরত অবস্থায় দেখার জন্য আবার মৃত্যুঞ্জয় কে ফিরিয়ে আনও।
তিনকড়িঃ (প্রথমে তো হাঁ করে তাকিয়ে থাকে) ছোটবাবু সব ই বুঝলাম। কিন্তু যদি অনুরাধা দেবেন্দ্র কে বশ করতে না পারে? বড় বাবু দক্ষ প্রশাসক, সুপুরুষ। এতো সহজে কি ও কোনও নারীর কাছে নিজেকে সঁপে দেবে?
সত্যেন্দ্রঃ ভুলে জেওনা তিনকড়ি ওর ও শরীরে আমার ই রক্ত বইছে। আর ও এখনো অবিবাহিত। অনুরাধা কোনও পুরুষ কে নিজের জালে ফেলতে পারেনা এ আমি বিশ্বাস ই করিনা। তোমার হাতে সময় খুব কম, তুমি এই মুহূর্তে নিজের কাজ শুরু করে দাও।
তিনকড়িঃ আমার কিন্তু খুব ভয় করছে ছোট বাবু, যদি কোনও ভুল হয়ে যায় আমার, তাহলে তো আমার মৃত্যুদণ্ড একদম পাকা। আপনি রাজা আপনার কিছু হবেনা হয়ত।
সত্যেন্দ্রঃ কি বলছ তিনকড়ি সম্মান চলে যাওয়া কি রাজার কাছে মৃত্যুর চেয়ে কোনও অংশে কম নাকি। ধরে নাও একবার আমার মৃত্যু হয়ে গেছে। যাই হোক তুমি কোনও চিন্তা করোনা। আমি তোমার সাথেই আছি।
সত্যেন্দ্রের আশ্বাস পেয়ে তিনকড়ি বিদায় নেয়। তিনকড়ি ২ জন দাসির সাথে কথা বলে রাখে যারা অনুরাধার ঘরে সেবার দায়িত্বে আছে। ওরাও আশ্বস্ত করে তিনকড়িকে সব রকম সাহায্য করার জন্য। আর তিনকড়ি ভাবতে শুরু করে কি করে মৃত্যুঞ্জয় কে একটু দূরে পাঠানো যায়। তিনকড়ি শুনেছিল পাশের গ্রামের মুখুজ্জে বাবু কোনও এক দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত। মুহূর্তের মধ্যে তিনকড়ির মাথায় বুদ্ধি খেলে যায়। তিনকড়ি ঠিক করে যে মৃত্যুঞ্জয় কে ওখানেই পাঠাবে। গিয়ে রোগী দেখে আসতে আসতে ওনার প্রায় ঘণ্টা দুই লেগে যাবে। দাসী দের থেকে তিনকড়ি জানতে পেরেছে যে অনুরাধা সকাল ৮-৯ ঘটিকায় স্নান করেন। অর্থাৎ সাড়ে ৯ টার মধ্যে যেভাবে হোক মৃত্যুঞ্জয় কে জমিদারবাড়ি তে ফিরিয়ে আনতেই হবে। আর কিভাবে দেবেন্দ্র কে অনুরাধার কাছে পাঠানো হবে তা পরে ভেবে দেখা যাবে।
সুবীর বাবুঃ ধুর মশাই, এতো কিছু একসাথে করে দিয়ে আপনি কেমন সব কিছুকে গুলিয়ে দিলেন। এটা বাস্তবে সম্ভব নয়। এটা সত্যি ই গল্প। আপনি এক কাজ করুন তাড়াতাড়ি করে এই পর্ব তা শেষ করে যে ডায়েরির কথক মানে সুপ্রতীক রায় চৌধুরীর গল্প টা শুরু করুন। এই গল্প টা কেমন একটা লাগছে। আর এই পর্ব টা পুরো তাই লোকের মুখ থেকে শোনা তাই বাস্তবের চেয়ে কল্পনা তাই বেশি মনে হচ্ছে।
সত্য বাবুঃ আপনি প্রচণ্ড অধৈর্য লোক মশাই। আমার দায়িত্ব শুধু সত্যেন্দ্রের গল্প টা আপনাকে বলা। বাকি গল্পটা হয় আপনি নিজে পড়বেন বা অন্য কেউ এসে আপনাকে বলে যাবে। (একটু গম্ভীর হয়ে) আমায় বিশ্বাস করুন গল্পটা সত্যি।
সুবীর বাবুর কাছে আর কোনও অপশন ছিলনা, অগত্যা উনি গল্প টা শোনা শুরু করলেন। সত্য বাবু আবার গল্প টা বলতে শুরু করলেন।
সত্য বাবুঃ তিনকড়ির লোক মুখারজি বাড়ী তে খবর পাঠাল, ঠাকুর মশাই দেখতে রাজী। এদিকে তিনকড়ির ই এক লোক ঠাকুর মশাই অর্থাৎ মৃত্যুঞ্জয়ের কাছে এসে বলেন “ঠাকুর মশাই এক্ষুনি চলুন। মুখুজ্জে মশাই এর অবস্থা আশঙ্কাজনক। আপনি ছাড়া অন্য কেউ ওকে বাঁচাতে পারবেনা” রোগীর সেবা করা মৃত্যুঞ্জয়ের রাজধর্ম। মৃত্যুঞ্জয় জীবনে কখনও কোনও রোগীকে ফিরিয়ে দেন নি। তাই ঠিক হয় একদম ৯ ঘটিকায় মৃত্যুঞ্জয় বাবু যাত্রা করবেন। এতদুর অবধি তো সব ই ঠিক ছিল। দাসিরাও অনুরাধার পোশাকে তিনকড়ির ঔষধ প্রয়োগ করতে প্রস্তুত ছিল। কিন্তু মুস্কিল টা ছিল বড় বাবু অর্থাৎ দেবেন্দ্র কে কিভাবে অনুরাধার কাছে পাঠানো যায়। তিনকড়িও এই ব্যাপারে প্রচণ্ড চিন্তিত ছিল। তিনকড়ি ঠিক করে আরও একবার ছোট বাবুর কাছে যাবে ও তার থেকে এব্যাপারে কিছু পরামর্শ নেবে।
তিনকড়িঃ ছোট বাবু আমি প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন। আমার মনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে, যদি ধরা পড়ে যাই তাহলে কি হবে সে ব্যাপারে। ছোট বাবু একটাই অনুরোধ ছিল। বড় বাবুকে অনুরাধার কাছে পাঠানোর কাজ টা যদি আপনি নিজে করতেন।
সত্যেন্দ্রঃ তোমায় দিয়ে কিছু হবেনা তিনকড়ি। এতো ভয় নিয়ে তুমি যুদ্ধ করতে নেমেছ তিনকড়ি। ঠিক আছে তুমি যখন বলছ তো এই কাজ টা আমি ই করব। আমায় একটু ভাবতে দাও।
তিনকড়িঃ আপনি আমায় বাঁচালেন ছোট বাবু। আপনি তো জানেন বড় বাবুকে দেখলেই আমার ভয়ে বুক টা কেঁপে ওঠে।
সত্যেন্দ্রঃ ঠিক আছে তুমি আর এসব চিন্তা করোনা। শোন তিনকড়ি একটা কথা মনে রেখ আমার আর দেবেন্দ্রর শরীরে একি রক্ত বইছে। সেদিন যখন দাদার আদেশ অমান্য করে মৃত্যুঞ্জয় গ্রামবাসীদের নিয়ে বাইজি বাড়ীতে গিয়েছিল এবং দাদার অনুমতি না নিয়েই আমার সাথে ওই মেয়েটার বিয়ের বিধান দিয়েছিল তুমি কি তখন একবার ও দাদার মুখ টা দেখেছিলে।
তিনকড়িঃ না ছোটবাবু আমি সেভাবে দেখিনি। তবে এতটুকু আমি জানি, বড়বাবু আপনার ওপর যতই অসন্তুষ্ট থাকুক না কেন কতগুলো গ্রামের সামান্য প্রজার সামনে আপনার এই অপমান কিছুতেই মেনে নিতে পারেন না।
সত্যেন্দ্রঃ একদম তাই। আমি জানি ও ঠিক কি পরিমান রেগে গিয়েছিল। শুধু প্রজাদের বিদ্রোহর কথা চিন্তা করে ও চুপ করে থেকেছিল। একটা কথা মনে রেখ তিনকড়ি, মৃত্যুঞ্জয় নিজেকে যাই ভাবুক না কেন ও আসলে আমাদের ভৃত্য। দাদার শরীরেও রাজার ই রক্ত বইছে। আমি এই দায়িত্ব টা নিলাম। আমি দাদার ঘরে যাচ্ছি, তুমি ভেতরে ঢুকবে না। বাইরে থেকে দাঁড়িয়ে সব কিছু শুনবে।
এরপর সত্যেন্দ্র ও তিনকড়ি দেবেন্দ্রর ঘরের দিকে যায়। তিনকড়ি বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে আর সত্যেন্দ্র ভেতরে প্রবেশ করে।
সত্যেন্দ্রঃ বড় বাবু আপনার কি এই মুহূর্তে কোনও কাজ রয়েছে? আমি আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই। অনুগ্রহ করে আমায় কিছু সময় দিন। জানি আপনার সময় অতি মুল্যবান।
দেবেন্দ্রঃ আমি তোমায় আদেশ দিয়েছিলাম যে তুমি নিজের মুখ পর্যন্ত আমায় দেখাবে না। তুমি কেন এসেছ এখানে? তোমার জন্য আমি একজন সামান্য বদ্দির কাছে এমনকি প্রজাদের কাছে মাথা নিচু করতে বাধ্য হয়েছি। পুরো রাজবাড়ীর জৌলুস তুমি মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছ।
সত্যেন্দ্রঃ মহারাজ আমি তো নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি। আপনি ভালো করে খবর নিয়ে দেখুন, বাইজি বাড়ী, সুরা, নারী আমি সব ই বর্জন করেছি। আমি তো জমিদারবাড়ির এই চার দেওয়ালের মধ্যেই নিজেকে বদ্ধ করে রাখি।
দেবেন্দ্রঃ তুমি অকাট মূর্খ সত্যেন্দ্র। নারী ও সুরা জমিদারি রক্তে রয়েছে। কিন্তু লজ্জার যা তা হোল তুমি এক সামান্য বদ্দির কাছে যুদ্ধে পরাজিত। সেই মুহূর্তে আমার ইচ্ছে হচ্ছিল এক কোপে তোমার গর্দান মাটিতে ফেলে দি। সমস্ত প্রজার সামনে তুমি ওই সামান্য বদ্দি কে ভগবান বানিয়ে দিয়েছ। এখন আমি না পারছি ওকে তাড়াতে না পারছি ওকে কোনও শাস্তি দিতে।
সত্যেন্দ্রঃ মহারাজ আপনি আমায় সত্যি কথা বলুন, আপনি কি প্রতিশোধ চান? আগে আপনি আমাকে উত্তর দিন তারপর আমি আপনাকে এক অতি গোপন খবর জানাব। অনুগ্রহ করে আগে আমার উত্তর দিন।
দেবেন্দ্রঃ প্রতিশোধের আগুন আমার প্রতিটি শিরায় শিরায় বইছে। আমি রাতে সঠিক ভাবে নিদ্রা গ্রহন করতে পারছি না। যেকোনো কিছুর বিনিময়েই আমি প্রতিশোধ চাই। এবার তুমি আমায় বল কি তোমার গোপন খবর।
সত্যেন্দ্রঃ মহারাজ আপনি মৃত্যুঞ্জয়ের তরবারি চালনা দেখেছেন, ওর মল্ল যুদ্ধ করার পারদর্শিতা দেখেছেন? আর তার চেয়েও অদ্ভুত যা তা হোল মৃত্যুঞ্জয় এই নাম কখনও ব্রাম্ভন কুলে বা কোনও বদ্দির হয় বলে কি আপনি শুনেছেন?
দেবেন্দ্রঃ তুমি কি বলতে চাও ঠিক করে বল সত্যেন্দ্র। এইরকম ভনিতা আমার একদম ই পছন্দ নয়।
সত্যেন্দ্রঃ মহারাজ ও হয়ত চিকিৎসাবিদ্যা কোনও জায়গা থেকে শিখে পারদর্শী হয়ে উঠেছে। কিন্তু ও বদ্যি বাড়ীর সন্তান নয়। ওর আসল পরিচয় বা কলকাতায় আসার আসল কারন আমি সব ই জানতে পেরেছি। কিন্তু তার আগে ও যে বদ্যি বাড়ীর সন্তান নয় তা আপনার কাছে প্রমান করতে চাই। তিনকড়ি ভেতরে আসো। তিনকড়ি তুমি তো নিজে বদ্যি, তোমার পূর্ব পুরুষ রা সবাই চিকিৎসার সাথে যুক্ত ছিল। তুমি ই বল।
তিনকড়িঃ বড় বাবু ছোটমুখে বড় কথা হয়ে যাবে কিন্তু এটা ভীষণ ভাবে সত্যি যে মৃত্যুঞ্জয় বদ্যি নয়। ও ক্ষত্রিয় বংশের। সেই কারনেই ক্ষত্রিয় কন্যাকে ও বিবাহ করেছে। বাকি আর কিছু আমি বলব না ছোট বাবুই সব বলবেন।
সত্যেন্দ্রঃ আপনার পুরঞ্জয় ডাকাতের কথা মনে আছে যাকে আপনি নিজের হাতে হত্যা করেছেন। মৃত্যুঞ্জয় হোল ওই পুরঞ্জয়ের ভাই। দাদার মৃত্যুর পর ও মেদিনিপুরে পালিয়ে গিয়ে চিকিৎসা বিদ্যা রপ্ত করে। ওর এখানে আসা পুরোটাই ওর পরিকল্পনা মাফিক। ও প্রতিশোধ নিতে এখানে এসেছে।
দেবেন্দ্রঃ তুমি এতো জোর দিয়ে কি করে বলছ?
সত্যেন্দ্রঃ মহারাজ আমি প্রমান তো দেবই কিন্তু তার আগে একটা তথ্য আপনাকে জানাতে চাই। মৃত্যুঞ্জয় মহাকালের উপাসক, এক বছর ও নিজের স্ত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করবেনা বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ও বিশাল ক্ষমতা সম্পন্ন। অলৌকিক ক্ষমতা রয়েছে ওর মধ্যে। ওকে শেষ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ওর উপাসনা কে শেষ করতে হবে। আর তার উপায় আমার জানা আছে।
[/HIDE]
 

Users who are viewing this thread

Back
Top