What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

অভিশপ্ত ডায়েরী (Completed) (2 Viewers)

[HIDE]পর্ব ১৫- নীলকুঠীর অত্যাচারঃ [/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই মালার ক্লান্তির অবসান হতে শুরু হয়। মালার চোখের দৃপ্ত নজর ও ঠোঁটের দুষ্টুমি ভরা ভাসি যেন তাই প্রমান করে। সুপ্রতীক কিছুটা মালার মুখের ওপর ঝুঁকে পড়ে। সুপ্রতীকের শরীরে যে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত হচ্ছিল তার থেকে কিছুটা গরম লার্ভা মালার গালের ওপর পড়ে। পৌরুষ মেশানো উত্তপ্ত নিঃশ্বাসে মালা ধীরে ধীরে আবার প্রান ফিরে পায়। সুপ্রতীক দ্রুত নিজের দুই ঠোঁটের আড়ালে মালার কোমল ফুলের মত রসালো ঠোঁটকে লুকিয়ে নেয়। দুই কপোত কপতির ঠোঁট ও আদ্র জিভ একে অপরকে আন্দোলিত করতে শুরু করে। মালার বন্ধ মুখ দিয়ে উম উম করে শব্দ নিঃসৃত হয়। সুপ্রতীক জানে কামের উত্তেজনায় মালা আবার টগবগ করে ফুটতে শুরু করেছে। যে উল্লাস ও মালাকে উপহার দিয়েছে ঠিক সমপরিমান উল্লাস ও মালার থেকে ফেরত নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে। নিজের বন্ধন থেকে মালাকে মুক্ত করে, মালার মাথাটা দুই হাত দিয়ে ধরে নিজের কোলের কাছে নিয়ে যায়। মালাও কোনকিছুই না বুঝে নিজের মাথাটা সুপ্রতীকের কোলের ওপর রেখে বিশ্রাম নিতে শুরু করে। চরম কামত্তেজনায় সুপ্রতীকের যৌনাঙ্গ তখন শক্ত হয়ে ফণা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। কোলে মাথা রাখার সাথে সাথেই মালার গালে পাথরের মত শক্ত সেই দণ্ডর ঘষা লাগে। নিজের যোনী ব্যাতীত অন্য কোনও অঞ্চলে কখনোই মালা পুরুষাঙ্গের স্পর্শ অনুভব করেনি। জীবনে প্রথমবারের পাওয়া এই অমুল্য উপহারে মালার শরীরে শিহরন শুরু হয়, মালার দুই গাল লজ্জায় লাল হয়ে যায়। সুপ্রতীক ও তা বুঝতে পারে। সুপ্রতীক জানে সেই সময় উপস্থিত যার জন্য ও এতদিন অপেক্ষা করেছিল।
সুপ্রতীকঃ প্রিয়তমা এতক্ষন যে সুখ আমি তোমায় দিয়েছি আজ এই মুহূর্তে তোমার থেকে আমি সমপরিমান সুখের কামনা করি।
মালা লাজুক হলেও বুদ্ধিমতি, মালা জানে সুপ্রতীক ঠিক কি চায়। লজ্জায় মালা লজ্জাবতি পাতার মত নিজেকে আরও লুকিয়ে নেয়। মালার এই লজ্জা ও নীরবতা সুপ্রতীকের আবদার মিটিয়ে দেওয়ার ই ইঙ্গিত ছিল। সুপ্রতীক কোমরের কাছে হাত নিয়ে গিয়ে নিজের ধুতির বাঁধনটা আলগা করে। একহাতে মালার মাথায় স্নেহের স্পর্শ করতে করতে ধুতিটা খুলে অনেকটাই নিচে নামিয়ে দেয়। মালার মুখের সামনে বেরিয়ে আসে প্রকাণ্ড আকারের প্যাঁচালো সাপের মত যৌনাঙ্গ। এর আগে এতো সামনে থেকে কোনও পুরুষের যৌনাঙ্গ দেখার সুযোগ মালার হয়নি। চোখের সামনে বিপরীত লিঙ্গের সুচক কে দেখা মাত্র মালার শরীরে কম্পন শুরু হয়, মালার কপাল বেয়ে টপটপ করে ঘাম নিচের দিকে পড়তে থাকে। সুপ্রতীক একহাতে মালার মাথাটা একটু ওপরের দিকে উঠিয়ে নিজের শরীরটা সামনের দিকে বাঁকায়। সুপুরুষ দণ্ডটা মালার ঠোঁটকে স্পর্শ করে। পুরুষের বীর্যের সুগন্ধ এর আগেও মালা বহুবার আস্বাদন করেছে, কিন্তু এবারের অনুভূতিটা অনেকটাই আলাদা। নিজের ই অজান্তে মালার ঠোঁটদুটো ফাঁক হয়ে যায়। সুপ্রতীকের লিঙ্গ মালার মুখের ভেতর প্রবেশ করে। চোখের সামনে এই দৃশ্য দেখে বংশীর তলপেট চিনচিন করে ওঠে। বংশী নিজের লিঙ্গকে উদ্বেলিত করা সাময়িক ভাবে বন্ধ করে। কারন ও জানে ওর লিঙ্গর পক্ষে এই অসম্ভবরকম উত্তেজনা সহ্য করা সম্ভব নয়। বংশী বহুবার বেশ্যাগৃহে গেছে কিন্তু যৌনতার এই চরম উত্তেজনা কখনোই ভোগ করেনি। বংশী বাগানের মধ্যে দাঁড়িয়েই পন করে ফেলে ওর সুদাম দণ্ডটি একদিন মালার মুখের ভেতরে ও প্রবেশ করাবে। সুপ্রতীক জানে মালা অনভিজ্ঞ, তাই মালাকে শেখানোর জন্য সুপ্রতীক নিজেই শরীরটা ভেতরে ও বাইরে করতে শুরু করে দেয়। সুপ্রতীকের শরীরের প্রতিটি দোলার সাথে মালাও নিজের আদ্র জিভ ও ঠোঁটকে নাড়াতে শুরু করে। চরম কামনার আনন্দে সুপ্রতীকের চোখ বুজে আসে। বংশী অবাকচিত্তে সুপ্রতীকের সেই উত্তেজিত শরীরের দিকে তাকিয়ে থাকে।
সব কিছু ঠিকঠাক ই ছিল, কিন্তু হথাত ই জমিদারবাড়ির বাইরে বিশাল জোর কলরব শুরু হয়। বহু লোকের জমায়েতে ঠিক যেরকম শোরগোল হয় খানিকটা সেরকম ই আওয়াজ ভেসে আসে। যৌনতার খেলায় মত্ত মালা ও সুপ্রতীকের কাছে হয়ত সেই শব্দ পৌঁছায়নি কিন্তু সুচারু বংশীর কানে খুব দ্রুত সেই শব্দ পৌঁছে যায়। বংশী বোঝে এই মুহূর্তে আর ওই বাগানের মধ্যে থাকা ওর পক্ষে নিরাপদ নয় খুব দ্রুত ওকে আবার স্বস্থানে ফিরে যেতে হবে। বংশী খুব সন্তর্পণে বাগান হতে বাইরে বেরিয়ে আসে। বাহিরমহলে গিয়ে দেখে জমিদারবাড়ির ঠিক সামনে অন্তত ১০০০ মানুষ জমা হয়েছেন।
বংশী ওদের সামনে এগিয়ে যায়। নায়েবমশাই তখন ওদের সাথে কিছু কথা বলছিলেন। বংশী গিয়ে নায়েব মশাইএর পাশে দাঁড়ায়। নায়েবমশাই অনবরত একি কথা বলে চলেছেন
“অনুগ্রহ করে আপনারা শান্ত হন। জমিদারবাবু এখন বিশ্রাম নিচ্ছেন। এক দুই ঘণ্টা পড়ে আপনারা আসবেন। জমিদারবাবু তখন কথা বলবেন”
অন্তত ২-৩ টে আলাদা আলাদা গ্রাম থেকে প্রজারা এসেছেন। ওনারা কিছুতেই নায়েব মশাইএর কথা শুনতে রাজি নন। প্রায় প্রত্যেকেই প্রচণ্ড জোরে নিজের নিজের কথা চিৎকার করে বলে চলেছেন। বংশীর হৃদয় নতুন কোনও বিপদের গন্ধে ব্যাকুল হয়ে উঠছে। বংশী নায়েবমসাই এর দিকে তাকিয়ে ম্রিদু কণ্ঠে বলে ওঠে
বংশীঃ নায়েবমশাই আপনি এদের শান্ত করতে পারবেন না। আমায় কথা বলার অনুমতি দিন।
নায়েবমশাই ও জানেন, লাঠিয়াল বংশীর একটা ইতিহাস আছে আর তা হোল দুর্ধর্ষ ডাকাত বংশীরাজ। এই বংশীরাজের এক হুঙ্কারে আজও বাঘে গরুতে জল খায়। নায়েবমশাই কিছুটা পিছিয়ে এলেন। বংশী নিজের লাঠিটা বুকের কাছে ধরে হুঙ্কার ছেড়ে বলে ওঠে
বংশীঃ সাবধান, জমিদারবাড়ির সামনে এরকম ব্যাবহার করার অনুমতি নেই। আপনাদের কারুর যদি কিছু বলার থাকে তো যেকোনো একজন সামনে এগিয়ে আসুন, আমরা তার কথা মন দিয়ে শুনবো।
বংশীর এক হুঙ্কারে শ্মশানের নিস্তব্ধতা ছেয়ে যায় চারপাশে। মিনিট ১-২ পর ভিড়ের মধ্যে থেকে এক সুদর্শন যুবক এগিয়ে আসে। কিছুটা ভীত কণ্ঠে সে বলতে শুরু করে
“হুজুর আমাদের চরম বিপদ। আজ সকালে আমরা জমিদারবাবুর কথায় আশ্বস্ত হয়ে গ্রামে ফিরে যাই। তার কিছুক্ষন পরেই সিলিং সাহেব বিশাল সৈন্য নিয়ে আমাদের গ্রামে আসেন। আমরা কেন নীলচাষ বন্ধ করে দিয়েছি সে ব্যাপারে আমাদের হুঙ্কার দিতে থাকেন। আমরা বলি জমিদার আমাদের মাই বাপ। চাষ করে আমরা জমিদারকে খাজনা দি। আমাদের সেই জমিদার ই আমাদের নীলচাষ করতে নিষেধ করেছেন। তাই আমরা নীলচাষ করবোনা। আমাদের কথা শুনে সিলিং সাহেব ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ৩-৪ টে গ্রামে প্রায় ৫০০ বাড়ীতে আগুন ধরিয়ে দেন। সাধারন গ্রামবাসীদের বেধড়ক মারধর করেন। ওনার ঘোড়ার পায়ের আঘাতে গ্রামের দুজন সাধারন মানুষ মারা গেছেন”
কথা শেষ করেই সেই যুবক হাউহাউ করে কাঁদতে শুরু করে দেন। আবার বলেন
“শুধু তাই নয় যাওয়ার সময় আমার দুই বোনকে জোর করে নীলকুঠিতে ধরে নিয়ে গেছে। ওদের ১ মাস বাদে বিবাহ ঠিক হয়েছিল”
দুই মহিলার সাথে যৌনসংগম করার যে প্রবল মানসিক দ্বিচারিতা সিলিং সাহেবের মধ্যে রয়েছে তা বংশী আগে থেকেই জানত। বংশী মনে মনে একবার বলে ওঠে “বাবা সিলিং কেন ওই গ্রামের কালো মেয়েদের দিকে চোখ দাও। দুই রমনীর সাথে যৌনতা চাও তো জমিদারের বোনের দিকে তাকাওনা। জমজের সাথে যৌনতা এ তোমার ওই সাত সাগরপাড়েও হয়না” ওদের মধ্যে থেকে একটু বয়স্ক এক ভদ্রলোক এগিয়ে আসেন। বংশী খুব ভালো করে জানে এটাই সেই মোক্ষম সময়, আজ এই মুহূর্ত থেকেই সম্পূর্ণ ইতিহাস ওর ই হাতে চলে যেতে পারে। সেই ভদ্রলোক এগিয়ে এসে একটু উত্তেজিত হয়ে বলে ওঠেন
“জমিদার বাবু নিজের কথা রাখেন নি। আমাদের উনি কথা দিয়েছিলেন যে ইংরেজরা আমাদের ওপরে আর কোনও অত্যাচার করবেনা। আমরা জানি এই অঞ্চলে ইংরেজদের জমিদারবাবুই ডেকে নিয়ে এসেছেন। উনি চাইলেই ইংরেজরা এখান থেকে চলে যাবে। জমিদারবাবু ঠিক কি চান তা আমরা জানতে চাই। আমরা জমিদারবাবুর হুকুম মেনে চলি তাই সিপাহীদের এই অঞ্চলে ঘাঁটি গাড়তে দিইনি। কিন্তু আজ তো মনে হচ্ছে জমিদারবাবুকে সিলিং সাহেব পরোয়াই করেন না”
ঠিক এরকম ই একটা পরিস্থিতি বংশী চেয়েছিল। বংশী প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে বলে ওঠে
বংশীঃ সাবধান। জমিদারবাবু সর্বেসর্বা। ওনার হুকুম ই এই অঞ্চলের শেষ হুকুম। এখানে না তো সিলিং সাহেবের আর না বিদ্রোহীদের হুকুম চলবে। সিলিং সাহেবের মোকাবিলা জমিদার বাবুই করবেন।
বংশীর এই হুঙ্কারে সমবেত সমস্ত মানুষ চুপ করে যায়। বংশী বুঝে যায় পাশা খেলার নিয়ন্ত্রন প্রায় ওর ই হাতে চলে এসেছে। কম বয়সী যে যুবক কিছুক্ষন আগে কথা বলছিল সে আবার এগিয়ে আসে
“হুজুর, আমার দুই বোনের সম্মান এখন জমিদার বাবুর হাতে। ওনাকে অনুগ্রহ করে সব খুলে বলুন”
বংশী কিছুটা আশ্বস্ত করার ভঙ্গীতে উত্তর দেয়
বংশীঃ আপনারা কোনও চিন্তা করবেন না। আপনাদের নিরাপত্তা দেওয়া জমিদারবাবুর কর্তব্য। আপনার বোনের ইজ্জত জমিদার বাবুই রক্ষা করবেন। আপনারা শান্ত হয়ে বাড়ী ফিরুন আমি জমিদার বাবুর সাথে কথা বলছি।
বংশীর এই আশ্বাসে কয়েক মুহূর্তের মধ্যে সমস্ত সমবেত মানুষ ধীরেধীরে জমিদার বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে শুরু করে। বংশীর এই অতিভাষণে নায়েব মশাই কিছুটা স্তম্ভিত হয়ে গেলেও আশ্চর্য হন না। কারন উনি এটাকে বংশীর আনুগত্য ভেবেই ভুল করে ফেলেছিলেন। বংশী নায়েবমশাইএর দিকে তাকিয়ে বলে
বংশীঃ জমিদার বাবুকে তো এক্ষুনি খবর পাঠানো দরকার। (একজন দাসীর দিকে তাকিয়ে) তুমি ভেতরে গিয়ে জমিদার বাবুকে বল যে বিশাল একটা বিপদ ঘটেছে। ওনাকে এক্ষুনি একবার বাহিরমহলে আসতে হবে।
বংশীর কথা শুনে দাসী ভেতরে চলে যায়। নায়েবমশাই ও বংশী বাহিরমহলে কেদারায় বসে জমিদারবাবুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। বংশীর শরীরে তখনও মালা ও সুপ্রতীকের সদ্য দেখা যৌনলীলার উত্তেজনা রয়েছে। কিন্তু বংশী জানে ঠিক কি করে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে হয়। সমস্ত কিছু বংশীর ই পক্ষে চলছে। আজ ই বর্ধমানের মামাবাড়ি থেকে গার্গী ও প্রিয়ার ফিরে আসার কথা। ওরা এতক্ষনে রওনা হয়ে গেছে। সুপ্রতীক নিজেই যাবে ওদের গঙ্গাপাড় থেকে নিয়ে আসতে, সুতরাং সিলিং সাহেবের কাছে গিয়ে কথা বলা সুপ্রতীকের পক্ষে সম্ভব নয়। এছাড়া এই কাজ জমিদারের রক্তেও নেই তা যতই ওরা প্রবলপরাক্রমী ইংরেজ জাত হয়ে থাকুক না কেন। সুতরাং বংশীর ই সিলিং সাহেবের কাছে যাওয়ার সম্ভবনা প্রবল। সুপ্রতীক ও জানে ওর এই লাঠিয়াল শুধুই একজন লাঠিয়াল নয় একজন বীর সৈনিক কিছুটা সেনাপতির মত। সুপ্রতীক জানে সিলিং সাহেবের কাছে নিজের দাবী রাখার দৃঢ়তা বংশীর মধ্যে রয়েছে। আর সুপ্রতীকের এই বিশ্বাস ই বংশীর সবচেয়ে বড় শক্তি।
কিছুক্ষনের মধ্যেই হন্তদন্ত করে সুপ্রতীক বাইরে বেরিয়ে আসে, বংশী কিছুটা আড় চোখে ভেতরের দিকে তাকায়। ও জানত মালাও জমিদার বাড়ীর এই আসন্ন বিপদের কথা জেনে বসে থাকবেনা। মালা বাগানের কিছুটা পাশে দাঁড়িয়ে উদগ্রীব হয়ে ওদের কথা শুনতে থাকে। বংশী ও নায়েবমশাই অল্প সময়ের মধ্যেই সুপ্রতীককে সমস্ত ঘটনার বিবরন দেয়।
সুপ্রতীকঃ তুমি খুব বুদ্ধিমানের কাজ করেছ বংশী। সত্যি এরকম অবস্থায় যদি আমরা প্রজাদের আশ্বস্ত করতে না পারতাম তাহলে ওদের আমার ওপর থেকে সমস্ত আনুগত্য চলে যেত। আর ঠিক এই জিনিসটার জন্যই ইংরেজরা আর বিদ্রোহীরা অপেক্ষা করে আছে। কিন্তু আজ তো প্রিয়া আর গার্গীর আসার কথা। আচ্ছা বংশী তুমি তো এর আগেও ইংরেজদের কাছে আমার হয়ে কথা বলেছ, তুমি পারবেনা এই কঠিন কাজটা সম্পন্ন করতে?
বংশীঃ আমি আপনার আজ্ঞাবহ দাস প্রভু। আপনি অনুমতি দিলে আমি এক্ষুনি নীলকুঠিতে রওনা দি। আপনার সম্মান আমি রক্ষা করবই।
সুপ্রতীকঃ আমার নয় ওই দুই নিরীহ মেয়ের সম্মান যেন রক্ষা পায় বংশী, এটা আমার আদেশ ই ভেবে নাও।
[/HIDE]
 
[HIDE]পর্ব ১৬-গুপ্তধনঃ [/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
সুপ্রতীকের আদেশ পেয়ে বংশী নিজের হাতের মোটা লাঠিটা উঁচু করে কাঁধের ওপর রাখে, বুকের কাছে একটা হাত রেখে নিচের দিকে ঝুঁকে সুপ্রতীক ও নায়েবমশাইকে প্রনাম জানায়। বংশী রওনা হওয়ার জন্য উদ্যত হয়। কিন্তু পেছন থেকে সুপ্রতীক ওর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে
সুপ্রতীকঃ না বংশী এই বেশে নয়, তুমি যাবে আমার সেনাপতি হিসেবে। এইভাবে গেলে সিলিং সাহেব তোমার সাথে ভৃত্যের ন্যায় আচরন করবে। (দাসিদের দিকে তাকিয়ে) বংশীকে ভেতরে নিয়ে যাও ও আমার পোশাকগুলোর থেকে কোনোএকটি বার করে ওকে দাও। যাও বংশী তুমি দাসীদের সাথে অন্দরমহলে যাও।
বংশীর হৃদয়ে প্রবল রক্তপ্রবাহ শুরু হয়ে যায়। যে জমিদারবাড়ির অন্দরমহলে একবার প্রবেশ করার জন্য রাজার পোশাক একবার গায়ে চাপানোর জন্য ওর এই লড়াই এই ছলনা সব ই আজ পূর্ণ হতে চলেছে। অন্দরমহলের ভেতর থেকে নুপুরের ঝুমঝুম শব্দ ক্রমশ ভেসে আসতে লাগলো। বংশী জানে এতক্ষন মালা আড়ালে দাঁড়িয়ে সব শুনে যাচ্ছিল, বংশীর ভেতরে প্রবেশ করার খবরে মালা দ্রুত অন্দরমহলে চলে যাচ্ছে। বংশী নিশ্চিত যে মালা ওকে অন্দরমহলে একা পেয়ে নিশ্চয়ই সিলিং সাহেব ও গ্রামবাসীদের মধ্যে যে সংঘাত ঘটেছে তার ব্যাপারে সব কিছু জানতে চাইবে। অন্দরমহলে মালার সাথে একান্তে কথা বলার যে কি আনন্দ তা বংশী এর আগে কখনো উপলব্ধি করেনি এই প্রথম করবে। দাসীদের অনুসরন করে বংশী অন্দরমহলে প্রবেশ করে। বাগান বরাবর হেঁটে বাসগৃহে প্রবেশের পূর্বে একবার থমকে দাঁড়ায়। সামনে একটা লম্বা বারান্দা, তার ডান দিকে বৈঠকখানা ও আহারের ব্যাবস্থা এবং বাঁ দিকে জমিদারবাবুর বিশ্রাম নেওয়ার জন্য দুটো বিশাল কক্ষ। কিছুক্ষন আগে এখানেই মালা ও সুপ্রতীক উদ্দাম যৌনতায় মত্ত হয়েছিল এবং বাইরের বাগানে লুকিয়ে বংশী সেই মদ্যতা উপভোগ করছিল। বাসগৃহের চৌকাঠ পার করার আগে বংশী একবার নিজমনে বলে ওঠে “জীবিত থাকলে এই মহল ও মহলের ওই রানী দুই ই আমার হবে”।
দাসীরা ততক্ষনে বারান্দা দিয়ে সোজা অনেকটাই এগিয়ে গেছে। সোজা বারান্দা দিয়ে চলে গেলে উঠোনের মত কিছুটা ফাঁকা জায়গা। তার দুদিকে মোট ৪ টে ঘর। বংশী জমিদারবাড়ির এই দিকটায় কখনো আসেনি। দাসীদের পেছন পেছন ও ওদিকেই যেতে শুরু করল। দাসীরা হথাত একটা ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে দরজাটা খুলে দিয়ে বংশীর দিকে তাকিয়ে ইশারা করল। বংশী বুঝে গেলো যে এখানেই ওকে নতুন পোশাক পড়তে হবে। বংশী ভেতরে ঢুকে দেখে ঘর ভর্তি শুধু রাজকীয় পোশাক। একজন দাসী দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখা রাজকীয় কারুকার্য করা এক পাঞ্জাবী ও পাজামা বার করে দেয় বংশীর উদ্দেশে। দাসীরা বেরিয়ে যায় ঘরের দরজা বাইরে থেকে ভিজিয়ে দিয়ে। বংশী বিছানার কাছে গিয়ে একবার ওই কাপড়কে স্পর্শ করে। এর আগে এরকম পোশাক পড়া তো দুরের কথা বংশী জীবনে কখনো এতো মুল্যবান পোশাক দেখেওনি। জমিদারবাড়ির অন্দরমহলে প্রবেশ করার পর থেকেই বংশীর সমগ্র শরীরে রাজা হওয়ার যে তীব্র বাসনা শুরু হয়েছিল এতক্ষনে বংশী সেই কামনাকে সম্পূর্ণভাবে নিবারন করে। বংশী জানে এই মুহূর্তে ওকে ধৈর্যশীল হতে হবে, ওর সামনে প্রচণ্ড কঠিন এক লড়াই। দ্রুত পোশাক পড়ে নিয়ে আয়নার সামনে নিজেকে একবার দেখে নিয়ে বংশী ঘর থেকে বাইরে বেরোয়।
বাইরে বেরতেই একজন দাসী বংশীর কাছে এগিয়ে এসে বলে “আপনি এখানেই দাঁড়ান, রানীমা আসছেন, উনি আপনাকে কিছু কথা বলতে চান” বংশীর হৃদয়ে আবার নতুন করে রক্তচালনা শুরু হয়ে যায়। জমিদারবাড়ির অন্দরমহলে মালার সাথে একান্তে কথা বলার অভিপ্রায় ওর বহুদিন ধরেই ছিল আজ তা পরিপূর্ণ হতে চলেছে। দাসীরা একেএকে ওখান থেকে চলে যায়। নুপুরের ঝুমঝুম শব্দ বংশীর দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করে। কিছুক্ষনের মধ্যেই বংশী দেখতে পায় নীল রঙের এক অতি কারুকাজ করা সাড়ি পড়ে ওর দিকে এগিয়ে আসছে মালা। মালার লোভনীয় শরীরটা দূর থেকে আড় চোখে দেখলেও বংশী নিজেকে বোঝায় এখন নয়, সময় এখনো রয়েছে। মালা একেবারে বংশীর সোজাসুজি এসে দাঁড়ায়, বংশীর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে
মালাঃ বংশী তোমার জন্য আমি পুরস্কার এনেছি। (মালা নিজের হাতটা শাড়ির আঁচলে নিয়ে গিয়ে কিছু একটা বার করে। হাত সামনের দিকে প্রশস্ত করে) এই নাও।
বংশী দেখে মালার হাতে রয়েছে একটা সোনার মুদ্রা। বংশী মনে মনে হেঁসে ওঠে ও বলে ওঠে তোমার শরীরের কাছে সহস্র সোনার মুদ্রা নগন্য। যখন পুরস্কার আমার লাগবে আমি তোমার থেকে চেয়ে নেবো। হাত বাড়িয়ে থেকেই মালা বলে ওঠে
মালাঃ বংশী, আমি জমিদারবাবু ও ইংরেজদের এই লড়াই নিয়ে খুব ই চিন্তিত। আমি জমিদারির ব্যাপারে একদম ই অবগত নই। উনি চান না আমি এসব নিয়ে চিন্তা করি। কিন্তু আমার সমস্ত কিছু জানা অত্যন্ত জরুরি। তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি ঠিক কি পরিমান ব্যাকুল হয়ে আছি বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে। আমার তরফ থেকে যৎসামান্য এই পুরস্কার তুমি গ্রহন কর এবং আমার কাছে প্রতিজ্ঞা কর ঠিক কি হচ্ছে বাহিরমহলে তা তুমি আমায় জানাবে।
বংশী মনেমনে বলে এই তো পাখি নিজের থেকেই খাঁচায় চলে আসছে। বংশী কোনও উত্তর না দিয়ে সোজা মালার দিকে তাকিয়ে থাকে। যৌনতায় ভরপুর এই শরীরটা কিছুক্ষন আগেই বস্ত্রহীন অবস্থায় ও দেখেছে, এই মোটা কাপড়টা বংশীর চোখে বিষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বংশী চায়না ওর যৌনতার আকাঙ্ক্ষা ওর মালা শরীরে সামান্য কোনও কাপড় জড়িয়ে থাকুক। ওর এই নীরবতা দেখে মালা আবার বলে ওঠে
মালাঃ আমি জানি বংশী, উনি তোমাদের প্রবলভাবে সতর্ক করেছেন আমায় কিছু না বলার জন্য। কিন্তু তুমি আমায় বিশ্বাস করতে পারো, তুমি যে আমায় সবকিছু জানাও তা উনি কোনোদিন জানতে পারবেন না। আমায় তুমি বিশ্বাস কর বংশী।
মালার চোখের এই কাকুতি মিনতি দেখে বংশীও বুঝে যায় মালাকে ভোগ করতে গেলে সুপ্রতীককে চরমভাবে বিপদে ফেলতে হবে, নিজের প্রাণপুরুষের প্রান ভিক্ষা করতে করতে মালা ওর সামনে স্বেচ্ছায় নগ্ন হয়ে দাঁড়াবে। বংশী বলে ওঠে
বংশীঃ রানীমা, আমি আপনার আজ্ঞাবহ দাস, আমার কোনও উপঢৌকন চাইনা। আমি আপনার মনের ব্যাকুলতা বুঝি। তাই আজ আপনাকে কিছু সত্য কথা বলছি। জমিদারবাবুর সমূহ বিপদ, প্রানভয় ও রয়েছে। সিলিং সাহেব অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও বিপজ্জনক এক ব্যাক্তি। প্রজাদের কথা শুনে জমিদারবাবু ওনার সাথে সম্মুখসমরে অবতীর্ণ হয়েছেন। ওদের কাছে বন্দুক, টোটা, বারুদ রয়েছে যা আমাদের লাঠি ও তরোয়ালের সৈন্যকে নিমেষের মধ্যে ধুলিস্যাত করে দিতে পারে। আমার এক বাল্যবন্ধু ইংরেজ সেনার কর্মচারী, ওই আমাকে সিলিং সাহেবের সাথে দেখা করিয়ে দেবে। আমি বন্ধুর মুখ হতে বহুবার শুনেছি সিলিং সাহেব জমিদারবাবুকে হত্যা করার ছক কষছেন।
বংশীর কথা শুনে ভয়ে ও আশঙ্কায় মালা হাত দিয়ে নিজের মুখ চাপা দেয়।
বংশীঃ রানীমা, তাহলে এবার আমায় আজ্ঞা করুন আমি যাই।
বংশী আড় চোখে মালার দিকে তাকায়। আশঙ্কায় ও ভয়ে মালা তখন অন্য এক জগতে হারিয়ে গেছে। কোমর থেকে সাড়ী সরে গিয়ে মালার সুস্বাদু নাভী বাইরে বেরিয়ে এসেছে। বংশী সেদিকেই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। বংশীর ও আর ধৈর্য থাকেনা, যত দ্রুত বংশী এই কামনাময়ী রমনীর সাথে সহবাস করতে পারে বংশীর পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য তা ততই মঙ্গলময় হবে। বেশ কিছুক্ষন পর মালা উদ্বিগ্ন হয়ে বংশীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে
মালাঃ এই স্বর্ণমুদ্রা উপহার হিসেবে নয় জমিদারবাড়ির স্মৃতি হিসেবে তুমি রেখে দাও। (বংশী সামনের দিকে হাত না বাড়ানোয়, মালা এক পা এগিয়ে এসে প্রায় বংশীর গা ঘেঁষে দাঁড়ায় ও বংশীর দুই হাত ধরে স্বর্ণমুদ্রাটি বংশীর হাতে দিয়ে দেয়)
মালার হাতের স্পর্শ অনুভব করে বংশীর সমস্ত শরীরে বিদ্যুতের ঝলকানি শুরু হয়। কোনরকমে নিজেকে শান্ত করে বংশী মালার থেকে অনুমতি নিয়ে জমিদারবাড়ি ছেড়ে নীলকুঠীর দিকে রওনা দেয়। জমিদার বাড়ী থেকে নীলকুঠি যেতে আধ ঘণ্টা মতন সময় লাগে। এই আধ ঘণ্টা রাস্তাটা বংশী শুধু মালার কোমল হাতের স্পর্শ ও মালার নগ্ন শরীরটা কিভাবে জঙ্গলের মধ্যে ভোগ করবে সেব্যাপারে চিন্তা করতে করতে কাটিয়ে দেয়। জঙ্গলের সর্দার থাকাকালীন বংশী নিজের সহচরদের সাহায্যে বেশকিছু ঝুপড়ি বানিয়েছিল জঙ্গলের মধ্যে। বংশীর আগে ডাকাতরা রাতে শোয়ার জন্য গ্রামের নিরাপদ আশ্রয়কেই বেছে নিত। কিন্তু ধূর্ত বংশীর ডাকাত দলে অন্তর্ভুক্তির পর এই ধারনাও পরিবর্তন হয়। জমিদারবাড়ির কাজ হতে সামান্য কিছু অব্যাহতি পেলে বংশী চলে যায় বেশ্যাপাড়ায়। সেখান থেকে মনের মতন বেশ্যাকে পছন্দ করে সোজা চলে যায় জঙ্গলে, নিজের হাতে বানানো ওইসব কাঠের কুটীরে আদিম যৌনলীলায় মত্ত হয়ে ওঠে। খেয়াল ও শখের দিক থেকে তো বংশী যেকোনো রাজা মহারাজাকেও হার মানায়। নিজের শয্যাসঙ্গিনীকে জঙ্গলের মধ্যে তাড়া করতে করতে কিছুটা লুকোচুরি খেলার ধরনে বংশী যৌনতায় মেতে উঠতে পছন্দ করে। মালার সাথেও যে এরকম ভাবেই ও কামলীলা করতে চায় সেব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। এইসব ভাবতে ভাবতেই বংশী নীলকুঠীর একদম সামনে এসে পৌছায়। ইংরেজ সৈন্যে ১০-১২ জন ফিরিঙ্গী থাকলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশটাই ছিল ভারতীয়। সিলিং সাহেবের পাশাপাশি এদেরকেও বংশী যথেষ্ট হাত করে রেখেছিল। মুল ফটকের একদম সামনে ছিল ৪-৫ জন দারোয়ান গোছের সৈন্য, এরা প্রত্যেকেই ছিল ভারতীয় এবং যথারীতি বংশীর সাথে এদের সদ্ভাব ছিল। বংশীকে দেখে ওরা মুচকি হেঁসে চোখের অঙ্গভঙ্গিতে বুঝিয়ে দেয় ভেতরে দারুন এক দৃশ্য চলছে, যাও গিয়ে সব নিজের চোখেই দেখে নাও। ওরা দরজাটা বেশ কিছুটা ফাঁক করে, বংশী ভেতরে ঢুকে যায়।
ভেতরে ঢুকে দুদিকে প্রশস্ত বাগিচা, সেখানে বিভিন্নরকম ফুলের গাছ লাগানো আছে। আর একদম সোজা রাস্তা বরাবর ছোট অট্টালিকার মত একটা কুটির। বংশী দূর থেকেই দেখতে পায়, জানলার পাল্লাটা সামান্য ফাঁক করে টমাস ভেতরে তাকিয়ে আছে। টমাস সিলিং সাহেবের দূরসম্পর্কের ভাই হয়, বয়স ও খুব কম এই ২০-২১ ই হবে। টমাস একদম ই বাংলা বলতে পারেনা। বংশী ইংরেজিটা শিখে রাখায় ও কিছুটা অঙ্গভঙ্গি করে বহুবার টমাসের সাথে কথা বলেছে। এই ছেলেটা সিলিং সাহেবের মত নয়, ওর নারীর প্রতি লোভ নেই। ইতিহাসের বইতে পড়েছে, ভারতের রাজাদের কাছে প্রচুর অর্থ রয়েছে। সেইসবের ই লোভে সিলিং সাহেবকে অনেক আবদার করে ও ভারতে এসেছে। কয়েকমাসের মধ্যেই আবার দেশে ফিরে যাবে। টমাসের অর্থ লোভ ও পকেটে থাকা সোনার মুদ্রাটা থেকে কুটিল বংশীর মগজে নতুন এক পরিকল্পনা চলে আসে। বংশী সিলিং সাহেবের ঘরের প্রায় কাছাকাছি চলে আসে। ভেতর থেকে তখন “আহ আহ ওমা ওহ ছেড়ে দাও ছেড়ে দাও” এইসব শীৎকারের আওয়াজ ভেসে আসে। বংশী খুব ভালো করেই জানে এই শীৎকার কোনও এক রমনীর নয় দুই রমনীর একত্রিত। সিলিং সাহেবের এই একসাথে দুই নারীর সাথে যৌন খেলায় মত্ত হওয়ার গল্প বংশী এর আগে অনেকবার শুনেছে, কিন্তু আজ প্রথমবার চাক্ষুষ তা লক্ষ্য করবে। কিন্তু তার আগে এই টমাস ছেলেটিকে নতুন পরিকল্পনার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। বংশী ফিসফিস করে একবার ডাকে “টমাস” টমাস প্রায় ভুত দেখার মত চমকে উঠে পেছনে তাকায়। বংশীকে দেখে টমাস যে এরকমভাবে ঘাবড়ে যাবে তা বংশী ভ্রুনাক্ষরেও ভাবেনি। বংশীর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে টমাস নিজের হাতটা রাখে সোজা পরনের প্যান্টের ওপর। বহুবার হাত বোলানোর পর ওখানেই দাঁড়িয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। টমাসের এইসব কার্যকলাপ দেখে বংশী হেঁসে ফেলে। সিলিং সাহেবের ঘরের ভেতর থেকে শীৎকারের শব্দ আরও বেড়ে যেতে শুরু করে। বংশীর হাসি শুনে টমাস ও পেছন ফিরে তাকিয়ে চোখ টিপে ইশারা করে। টমাস ওখান থেকে নেমে বংশীর দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করে।
এই টমাস ছেলেটি ফিরিঙ্গী হলেও একদম ই নিষ্পাপ। এর আগেও বহুবার ও বংশীর সাথে কথা বলেছে। বংশীকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে ভারতে প্রচুর গুপ্তধন রয়েছে ও এরকম ই গুপ্তধনের সন্ধানে সাতসাগর পাড়ি দিয়ে এখানে এসেছে। বংশীও ইয়ার্কির ছলে ওকে বলেছে যে বংশী যদি এরকম কোনও গুপ্তধনের সন্ধান পায় তো ওকে নিশ্চয়ই জানাবে। টমাস বংশীর কথায় কতটা বিশ্বাস করেছে তার ই ওপর নির্ভর করছে বংশীর পরবর্তী পরিকল্পনা। টমাস বংশীর সামনে এসে দাঁড়ায়। বংশী একটাও শব্দ ব্যয় না করে ওর হাতে স্বর্ণমুদ্রাটি দেয়। চকচকে চোখে টমাস বলে ওঠে “গুপ্তধন” এরকম কিছু বাংলা শব্দের ইংরিজি মানে বংশী আগেই শিখে রেখেছিল, ওকে যে রাজা হতে হবে। ভাঙা ভাঙা ইংরিজিতে বংশী উত্তর দেয়
বংশীঃ এটা কিছু নয়, আরও অনেক আছে। তুমি যদি ইংল্যান্ডে এগুলো নিয়ে যেতে চাও তো আজ রাত ৮ টায় জমিদারবাড়ির পেছনের মাঠে চলে আসো। আর হ্যাঁ কাউকে জানাবেনা আমি তোমায় বলেছি বলে।
টমাসের মাথা নাড়া দেখে বংশী আশ্বস্ত হয়ে যায় যে টমাস কাউকে বলবে না। বংশী কিছুটা অঙ্গভঙ্গি করে টমাসকে বুঝিয়ে বলে “ভাই তুমি তো এতক্ষন দেখলে আর তো ১০-১৫ মিনিট বাকি হয়ত। আমায় একটু দেখতে দাও। এতটুকু তো তুমি করতেই পারো আমি তোমায় গুপ্তধন দিচ্ছি তার বদলে” বংশীর কথা শুনে হাঁসতে হাঁসতে টমাস ওই জায়গা ছেড়ে অন্য দিকে চলে যায়। ভেতর থেকে নারীর চরম শীৎকার ভেসে আসতে থাকে। বংশী সামনের জানলার দিকে অগ্রসর হয় এক বিদেশি সাহেবের পাশবিক যৌনতাকে উপভোগ করার জন্য।
[/HIDE]
 
[HIDE]পর্ব ১৭- দ্বিতীয় পরিকল্পনাঃ [/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
টমাস বাগানের ভেতর দিয়ে বাইরের দিকে যেতে শুরু করে, বংশীর হাত থেকে সদ্য পাওয়া সোনার মুদ্রাটি বংশীকে উন্মত্ত যৌনতার আনন্দ ও ভুলিয়ে দিয়েছে। বংশী একবার চারপাশটা দেখে নেয়, না আশেপাশে কেউ ই ছিলনা। বংশী ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করে। জানলাটা তখনও ফাঁক করাই ছিল। ঘরের ভেতর থেকে আগত শীৎকারের তীব্রতা ক্রমশ বেড়েই চলতে থাকে। বংশী সন্তর্পণে জানলা দিয়ে ভেতরে চোখ রাখে। ভেতরের দৃশ্য দেখার পর বংশীর শরীর থরথর করে কাঁপতে শুরু করে। ঘরের ভেতরে সুন্দরী দুই রমনী, সম্পূর্ণ নগ্ন। দুজনের ই হাত চাদর দিয়ে খাটের সাথে বাঁধা। সিলিং সাহেব দুজনকেই একদম কাছাকাছি রেখেছেন। নিজের বিশাল আকারের লিঙ্গটা একজনের যোনীতে প্রবেশ করিয়ে বিশাল জোরে জোরে শরীরটা ভেতরে ও বাইরে করতে থাকে। সেইসময় সিলিং সাহেব অপর নারীর দুই বক্ষকে নিজের হাত ও মুখ দিয়ে প্রায় চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে শুরু করেন। একিসাথে দুই নারীর সাথে যৌন সঙ্গমের যে কি আনন্দ তা বংশী আজকের আগে কখনোই বোঝেনি। মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যেই সিলিং সাহেব নিজের লিঙ্গটা বার করে নেন। শরীরটা আবার একটু বাঁদিকে করে অপর নারীর যোনীতে লিঙ্গটা প্রবেশ করান ও প্রচণ্ড জোরে জোরে থাপ দিতে শুরু করেন। সেইসময় অপর যুবতীর সাময়িক স্বস্তি হলেও তার গলা থেকে স্তন অবধি হাত ও জিভ দিয়ে আদর করে নিজের কামক্ষুদা তার শরীরেও বিদ্যমান রাখলেন। সিলিং সাহেবের মুখ দেখেই মনে হচ্ছিল যে উনি আর বেশিক্ষন ধরে রাখতে সক্ষম হবেন না। আর ঠিক তাই হোল, কিছুক্ষনের মধ্যেই সিলিং সাহেব উম করে বিশাল জোরে গর্জন করে উঠলেন। তার শরীরটা বেশ কিছুক্ষন জোরে জোরে সামনে ও বাইরে হতে লাগলো। ধীরে ধীরে দানবীয় শরীরটা শান্ত হয়ে পাথরের মত পড়ে রইল। এই জানবিক অত্যাচারে ততক্ষনে গ্রামের ওই দুই যুবতী ও জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।
বংশীর পুরুষাঙ্গ সোজা তালগাছের মত লম্বা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। বংশী বহুকষ্টে নিজেকে শান্ত করে বাইরে বেরিয়ে আসে। বাগানের কাছে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। ও জানে যেকোনো সময় ই সিলিং সাহেব বাইরে বেরিয়ে আসবে। এতক্ষন যে যৌনলীলা ও দেখেছে মাথা থেকে সম্পূর্ণভাবে তা বার করে দেয়। স্মৃতিচারণ করা শুরু করে নিজের সেই পরিকল্পনাগুলোর ব্যাপারে, যার জন্য ও এখানে এসেছে। বেশ কিছুক্ষন পড়ে প্রায় টলতে টলতে নিজের জামাটা একহাতে ধরে অর্ধনগ্ন অবস্থায় বাইরে বেরিয়ে আসেন সিলিং সাহেব। সোজা সামনের দিকে তাকিয়েই বংশীকে দেখতে পান। বংশীকে দেখা মাত্র “হেই বাংশী” বলে চেঁচিয়ে ওঠেন। ও মুখ বেঁকিয়ে এতক্ষন ঠিক কি পরিমান মজা লুটেছেন তা অঙ্গভঙ্গি করে বুঝিয়ে বলেন। বংশী সামনের দিকে ঝুঁকে সিলিং সাহেবকে সেলাম করে। বংশীর সেলামে সিলিং সাহেব খুব খুশি হয়ে বংশীর দিকে এগিয়ে আসেন।
সিলিং সাহেবঃ (ভাঙা ভাঙা বাংলায়) কি হয়েছে বংশী তোমার পোশাকে এতো পরিবর্তন? আর এইসময়ে নীলকুঠিতে তুমি। আমি যে গ্রাম থেকে মেয়েদের উঠিয়ে এনেছি তা কি জমিদার জানে। জমিদার এখনো বোঝেনি ইংরেজরা ওদের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী। দেখলে তো চাষিরা ওর কাছে গেলো, ওকি কিছু করতে পারলো।
সিলিং সাহেবের মুখ দিয়ে আত্মবিশ্বাস ও অহঙ্কার ঝরে পড়ে। সুচারু বংশী জানে ওকে এই অহংবোধেই আক্রমন করতে হবে। সিলিং সাহেবের কাছে সুপ্রতীককে মুল শত্রু বানিয়ে তুলতে হবে তবেই ওর সব পরিকল্পনা সফল হবে।
বংশীঃ আপনি কাজটা ঠিক করেননি সিলিং সাহেব। আপনি আগুনে হাত দিয়ে দিয়েছেন। আপনি নিজেই নিজের বিপদকে ডেকে এনেছেন।
সিলিং সাহেব বংশীর কথায় কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে বলে ওঠেন
সিলিং সাহেবঃ আমি ইংরেজ। গোটা পৃথিবী আমাদের দখলে। আমরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাত। আমরা যা করি তা ঠিক ই করি। ভুল আমরা করতে পারিনা। ভুল তো তোমাদের মত অসভ্যরা করে।
সিলিং সাহেবের মুখের ওই অবজ্ঞাসুচক বাঁকা হাসি ও জাত তুলে অপমান অন্য যেকোনো মানুষের রক্ত গরম করে দিত। কিন্তু বংশী তো আর মানুষ নয়, ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশ করার অন্ধ নেশায় ও প্রায় জানোয়ার হয়ে গেছে। বংশী একটু হেঁসে বলে ওঠে
বংশীঃ আজ আমাকে এখানে জমিদারবাবুই পাঠিয়েছেন। আপনি খুব ভালো করেই জানেন, এক সময়ে আমি কুখ্যাত ডাকাত ছিলাম। আজ জমিদারবাড়ির লাঠিয়াল হলেও জমিদারির প্রতি রাগ আমার আজ ও যায়নি। আপনার ভালো চাই বলে কিছু কথা বলতে চাই আপনাকে।
এতক্ষনে সিলিং সাহেব ও শান্ত হয়ে যান। উনি জানেন বিদ্রোহীরা ওনার স্বঘোষিত শত্রু। গ্রামবাসীরা ওনার বিরুদ্ধে চলে গেছেন। আজকের পর জমিদার ও শত্রুতার পথেই হাঁটতে শুরু করবে। এই সম্মিলিত তিন শক্তির সাথে লড়াই করার সামর্থ্য এই মুহূর্তে ওনার নেই। বড়লাট ওনার এই নারীসক্তির জন্য ওনাকে একদম ই পছন্দ করেন না। যুদ্ধ না বাঁধলে বড়লাট ও খুব একটা সৈন্য সামন্ত দিয়ে ওকে সাহায্য করবেনা। সিলিং সাহেব দুশ্চরিত্র হলেও যথেষ্ট বিচক্ষন। উনি জানেন এই মুহূর্তে বংশীর উপদেশ মত চলা ছাড়া ওনার কাছে দ্বিতীয় কোনও উপায় ও নেই। ওনার এই স্থিরতা ধূর্ত বংশীর মনেও আশার আলো ফুটিয়ে তোলে। বংশী বুঝতে পারে সিলিং সাহেব ওনার অপর বিশ্বাস করতে বাধ্য। বংশীর এখন একমাত্র কর্তব্য এটাই যে এই বিশ্বাসটা বজায় রাখা।
সিলিং সাহেবঃ তুমি কি বলতে চাও বংশী। তুমি বল আমি শুনছি।
বংশীঃ শিলিং সাহেব আপনার সামনে এই মুহূর্তে চরম বিপদ। আপনি একটু সাবধানে থাকবেন। জমিদারবাবু আপনাকে হত্যা করার ছক কষছে। আজ আপনি যা করলেন, জমিদার যদি বদলা না নিতে পারেন তাহলে প্রজাদের কাছে নিজের আনুগত্য হারিয়ে ফেলবেন। আর আপনি তো খুব ভালো করেই জানেই প্রজা আনুগত্য ছাড়া জমিদারী টেকেনা।
বংশীর কথা শুনে সিলিং সাহেব চমকে ওঠেন। সিলিং সাহেবের কপালের চিন্তার ভাঁজ বংশীকে আশ্বস্ত করে। বংশী বুঝতে পারে সুপ্রতীক, মালার পর এবার সিলিং সাহেব ও ওর তৈরি ফাঁদে পা দিচ্ছে। সিলিং সাহেব বেশ কিছুক্ষন চিন্তা করে বলে ওঠেন
সিলিং সাহেবঃ তুমি সত্যি বলছ বংশী? এক সামান্য জমিদারের কি সত্যি ই এতো বড় দুঃসাহস হবে। ও ঠিক কি করতে চায়। ও কি যুদ্ধ ঘোষণা করবে। সিপাহীদের সাথে এক হয়ে আমার বিরুদ্ধে লড়াই করবে? কি চায় ও?
বংশীঃ হয়ত আর ৪-৫ ঘণ্টা আগেও এই কথা জমিদার ভাবতেও পারতেন না। আপনি গ্রাম থেকে এই দুই মেয়েকে উঠিয়ে নিয়ে আসার পর জমিদারবাড়ীর সামনে প্রচুর মানুষ উঠে আসেন। ওরা প্রায় বিদ্রোহের সুরেই জমিদারবাবুর সাথে কথা বলছিলেন। জমিদারবাবু বাধ্য হয়েই ওদের কথা দেয় যে গ্রামের দুই যুবতীর সম্মান উনি দায়িত্ব নিয়ে রক্ষা করবেন। সম্মান তো আপনি রাখতে দিলেন না। গ্রামের মানুষ তো এবার জমিদারবাড়ি ঘিরে ধরবে, জমিদারকে বিদ্রোহীদের সাথে মিলে আক্রমন করবে। আপনি তো জানেন বিদ্রোহীরা জমিদারকেও নিজেদের বন্ধু মনে করেনা, শুধুই একটা আপোষ হয়ে গেছে এতটুকুই। আমি যখন এই দুই মেয়েকে নিয়ে গ্রামে ফিরে যাবো কি অবস্থা হবে ভেবে দেখেছেন?
সিলিং সাহেব গভীর চিন্তায় পড়ে গেলেন। বেশ কিছুক্ষন নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে উনি বলে উঠলেন
সিলিং সাহেবঃ তুমি এতকিছু যখন জানতে তাহলে আমায় আটকালে না কেন? আর তোমায় তো জমিদার ই এখানে পাঠিয়েছে, কি কারনে তোমায় পাঠানো হয়েছে?
বংশীঃ আমি যখন এসেছিলাম তখন তো সব শেষ। আর জমিদার আমাকে মিত্রতার জন্য পাঠিয়েছিলেন। উনি আপনাকে এই দুই মেয়েকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করতে পাঠিয়েছিলেন। আমি আপনাকে সব ই বললাম, এবার আমায় হুকুম করুন, আমি এদেরকে গ্রামে ছেড়ে দিয়ে আসি।
সিলিং সাহেবঃ বংশী, আমি কিন্তু তোমায় বিশ্বাস করি। জমিদারবাড়িতে কি হচ্ছে সব আমায় জানিও।
বংশীঃ আমি কাল সকালে আবার আসব, কিন্তু এখন আগে এদেরকে আমি গ্রামে ছেড়ে দিয়ে আসি। আপনি অনুগ্রহ করে এখান থেকে চলে যান।
বংশীর কথা শুনে সিলিং সাহেব ওখান থেকে আসতে আসতে বাইরের দিকে যেতে শুরু করেন। বংশী ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে। বিছানার ওপর সদ্যযুবতী হওয়া দুই নারীর নগ্ন দেহ দেখে বংশীর তলপেটটা চিনচিন করে ওঠে। বংশী মনে মনে বলে আমার কপালটাই ফুটো, হাতের সামনে নগ্ন নারীর দেহ দেখেও কিছুই করতে পারলাম না। ঘণ্টা কয়েক আগে মালার যে নগ্নতা বংশী লক্ষ্য করেছিল তা আরও একবার চিন্তা করে নিজেকে সংবরন করে নেয়। ঘর থেকে দুটো বেশ বড় আকারের চাদর দিয়ে ওদের দেহকে ঢেকে ফেলে। কোনরকমে ওদেরকে দুহাতে চেপে ধরে বাইরে বেরোয়। ইজ্জত হারিয়ে দুই হতভাগী ধীর কদমে বংশীর সাথে চলতে শুরু করে। নীলকুঠি পেরোনোর পর থেকেই পেছন পেছন আরও লোক সমাগম হতে শুরু করে। যখন বংশী ওই দুই মেয়েকে নিয়ে গ্রামে পৌছায় ততক্ষন কয়েক সহস্র লোক চারপাশ থেকে এসে জড় হয়ে গেছে। বংশী জানে ওর তৃতীয় পরিকল্পনা অর্থাৎ গ্রামবাসী ও বিদ্রোহীদের খেপিয়ে তোলার কাজ ঠিক এই মুহূর্ত থেকেই শুরু করে ফেলতে হবে। “একি সর্বনাশ হোল আমাদের, আমাদের মা বোনের ইজ্জতের কি কোনও দাম নেই” এই ক্রন্দনরোল ও হাহাকার শুরু হয়ে যায় চারপাশে। বংশীকে ঘিরে ধরে সবাই। সেই যুবকটি যে কিছুক্ষন আগে জমিদারবাড়িতে এসেছিলো সে এগিয়ে আসে। “আপনি কথা দিয়েছিলেন, জমিদার কথা দিয়েছিলেন, তাও কেন এরকম হোল? জবাব দিন আমাদের? কেন আমার বোনের ইজ্জত গেল?” বংশী নিচের দিকে মাথা করে দাঁড়িয়ে থাকে। ক্ষুব্ধ সেই ছেলেটি প্রচণ্ড রেগে গিয়ে বংশীর গালে সপাটে একটা চড় মেরে দেয়। বংশী হাঁটু গেড়ে বসে যায় ওখানে সামনের দিকে দুহাত জড় করে বংশী বলে ওঠে
বংশীঃ আপনারা আমায় যে শাস্তি দেবেন আমি তা মাথা পেতে নেবো। আমি তো জমিদারবাড়ির সামান্য ভৃত্য একজন। জমিদারবাবু লড়াই করতে চাননি, ইংরেজদের সাথে, উনি আমায় কথা বলতে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সিলিং সাহেব আমায় নীলকুঠিতে ঢুকতেই দেননি। আমি বহুকষ্টে ওদের এখানে নিয়ে এসেছি। আমি তো জমিদারের আজ্ঞাবহ দাস। তবুও একটাই কথা আপনাদের বলব এই বংশীর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ডাকাত দল ত্যাগ করে জমিদারের সেবা করা। আমি ভেবেছিলাম এই জমিদার আগের জমিদারদের মত নয় উনি গরীবের সেবা করেন। আমি বিশাল ভুল করেছি। জমিদার কখনো গরিবের বন্ধু হয়না। আপনারা যা শাস্তি দেবেন আমি মাথা পেতে নেবো।
পেছন থেকে কেউ একজন চেঁচিয়ে বলে ওঠে আমাদের জমিদারের কাছে যাওয়া উচিত হয়নি, বিদ্রোহীদের কাছে যাওয়া উচিত ছিল। ওদেরকে বিশ্বাস করা উচিত ছিল, ওরা আমাদের ই মত গরীব মানুষ। এখন এই দুঃসময়ে আমাদের পাশে ওরাই থাকবে, জমিদার নয়। আমরা প্রতিশোধ চাই। জমিদারকে আজ থেকে আমরা আর মানিনা। ওখানে সমবেত প্রায় সকলে চিৎকার করে নিজেদের সহমত পোষণ করে। বংশী বুঝে যায় ওর দ্বিতীয় পরিকল্পনা ভীষণভাবেই সফল। এই সুযোগে বংশীও পাশ কাটিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে আসে। বংশী আবার জমিদারবাড়ির দিকে যাত্রা করতে শুরু করে।
নিজের মনে মনে বংশী বলে ওঠে “এই বংশীর মস্তিষ্ক এতো ক্ষুরধার যে, আমি চাইলে আজ রাতেই জমিদারবাড়ি দখল করতে পারতাম। কিন্তু না, ওভাবে নয়। মালাকে ছাড়া জমিদারী আমার কাছে মুল্যহীন। রানি ছাড়া রাজমহলে আমার মন টিকবে না” মালার কথা ভাবতেই বংশীর তলপেটটা আবার চিনচিন করে ওঠে। মনে মনে বলে বংশী “মালা আর বেশিদিন তোমায় বা আমায় দূরে থাকতে হবেনা। আমার এই প্রকাণ্ড দণ্ড তোমার শরীরকে অচিরেই আনন্দ দিতে ব্যাস্ত হয়ে যাবে। তারপর থেকে বংশীরাজ ও মালা, ব্যাস আর কেউ নয়”
বংশীর মাথায় এই মুহূর্তে মোট ৩ জন সুপ্রতীক, মালা ও টমাস। ব্যাস এই পরিকল্পনাগুলো সফল হলেই পুরো রাজ্যটা শুধুই ওর। হথাত ই বংশীর খেয়াল আসে আজ জমিদারের দুই যমজ বোন প্রিয়া ও গার্গীর জমিদারবাড়িতে আসার কথা। জমিদারবাড়িতে কাজ করছে প্রায় ২ বছর হয়ে গেলেও বংশী এই দুই রুপসীকে একবারের জন্য ও দেখেনি। ওদেরকে একবার দেখার জন্য বংশীর মনটা আনচান করতে শুরু করল। বংশী আরও দ্রুত জমিদারবাড়ির দিকে যেতে শুরু করল।
[/HIDE]
 
[HIDE]পর্ব ১৮- মহামুল্যবান গুটিঃ [/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
নিজের সমস্ত পরিকল্পনা সঠিকভাবে প্রয়োগ করার আনন্দ যে কি হয় তা এর আগে বংশী কোনোদিন ই বোঝেনি। বংশীর আজ খালিগলায় চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে “হ্যাঁ আমি বংশী, আমি রাজা, আমি ই এই অঞ্চলের সবচেয়ে যোগ্য প্রশাসক আমার চেয়ে বিচক্ষন এই রাজ্যে দ্বিতীয় আর কেউ ই নেই” এইসব ভাবতে ভাবতেই বংশী দ্রুত জমিদারবাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে যায়। দূর থেকে লক্ষ্য করে জমিদারবাড়ির সামনে সার দিয়ে দাসীরা দাঁড়িয়ে আছে। প্রত্যেকের ই হাতে ফুলের মালা। বংশী বোঝে বহুদিন বাদে জমিদারবাড়িতে বাড়ির মেয়েরা ফিরছে, এগুলো তার ই জন্য। মনে মনে বলে ওঠে বংশী “এই আনন্দ এই ফুর্তি ক্ষণস্থায়ী জমিদারবাবু। আজ রাতের পরিকল্পনার ওপর ই নির্ভর করছে আপনার ভাগ্য। জমিদারবাড়ির একেবারে সামনে এসে গেলেও ওর দিকে কেউ তাকায়না। বংশীর খুব খারাপ লাগে, হয়ত ও ভেবেছিল সবাই ওকেও সম্বর্ধনা দেবে। বংশী ভেতরের দিকে এগিয়ে যায়, অন্দরমহলের বাইরে যেখানে ও প্রহরায় থাকে সেখানে বসে পড়ে। বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে একদৃষ্টিতে, দুই কন্যা গার্গী ও প্রিয়ার ব্যাপারে বহুকথাই ও শুনেছে। আশেপাশের কোনও রাজ্যেই নাকি ওদের মত সুন্দরী কন্যা নেই। যমজ হলেও দুজনে নাকি দুধরনের, একজন যদি গোলাপ হয় তো অপরজন রজনিগন্ধা। এসব ই ভেবে চলছিল বংশী, হথাত ই ভেতর থেকে “বংশী” বলে একটা মৃদুস্বর ভেসে এলো। এই সুমিষ্ট আওয়াজ বংশী খুব ভালো করেই চেনে, এই আওয়াজ আর কারুর নয়, ওর প্রানের চেয়েও প্রিয় মালার। বংশী ভেতর দিকে তাকায়। মালা ওর দিকে তাকিয়ে ভেতরে আসার জন্য ইশারা করে চলেছে। বংশী এক মুহূর্ত ও সময় নষ্ট করেনা। গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায় ভেতরে। মালা দুকদম সামনে এসে প্রায় ওর গা ঘেঁসে দাঁড়ায়। মালার শরীর থেকে সুমিষ্ট আতরের গন্ধ ভনভন করে বংশীর নাকে আসে। সারাদিনের ক্লান্তি হথাত ই এই সুমিষ্ট গন্ধে কোথায় যেন হারিয়ে যায়। বংশী একবার মাথা তুলে মালার দিকে তাকায়। ও জানে মালা প্রচণ্ড চিন্তার মধ্যে রয়েছে। অদ্ভুতভাবেই এই এতো চিন্তার মধ্যেও ওর মুখে একটা মনহর হাসি লেগেই আছে। বংশীর চোখ নামিয়ে আনতে ইচ্ছে করেনা, কিন্তু কি করবে এখনো তো ও সামান্য লাঠিয়াল ই হয়ে আছে, রাজা এখনো ও হতে পারেনি। মালা খুব ধীরে ধীরে বলে ওঠে
মালাঃ কি খবর বংশী, সব কুশল তো। তুমি নীলকুঠিতে গেলে তারপর কি হোল। ওই দুই গ্রামের মেয়ের কোনও বিপদ হয়নি তো। চুপ করে আছো কেন বংশী, তুমি জাননা আমার হৃদয় চিন্তায় ব্যাকুল হয়ে যাচ্ছে। কি হয়েছে বংশী জবাব দাও আমায়।
বংশী বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থাকে তারপর বলে ওঠে
বংশীঃ রানীমা, খবর ভীষণ ই খারাপ। জমিদারবাড়ির ওপর ঘোর অমঙ্গল নেমে আসছে।
বংশীর কথা শুনে মালার মুখের হাসিটা হারিয়ে যায়, চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়ে যায়।
মালাঃ কি হয়েছে বংশী, তুমি কি ওই দুই মেয়ের সম্মান বাঁচাতে পারনি। কি হয়েছে আমায় সব খুলে বল।
বংশীঃ রানীমা, বলার তো অনেককিছুই আছে। আমি এখনো জমিদারবাবুকে কিছু জানাইনি। উনি যদি জানতে পারেন আমি আপনাকে সব কথা জানিয়ে দিচ্ছি, তাহলে আর এই ধরে প্রান থাকবে না।
মালা বেশ কিছুক্ষন নিচের দিকে গভীরভাবে চিন্তা করে, তারপর বলে ওঠে
মালাঃ ওনার আসতে এখনো অনেক দেরি। তুমি আমার সাথে ভেতরে চলো। তুমি কোনও চিন্তা করোনা, তোমার কোনও বিপদ হবেনা। উনি আসার আগে তুমি আমায় সব জানিয়ে দাও।
মালা হাত দিয়ে ইশারা করে বংশীকে ওর সাথে ভেতরে যেতে ইশারা করে। বংশী মালাকে অনুসরন করতে থাকে। অন্দরমহলের ভেতরে ঢুকে মালা বাঁ দিকে বেঁকে যায় ও পেছন ফিরে বংশীকে ওর সাথে আসার জন্য হাত নেড়ে ইশারা করে। কয়েক ঘণ্টা আগে এই অন্দরমহলে ও প্রবেশ করেছিল। কিন্তু সুপ্রতীক ও মালার শোয়ার ঘরে যায়নি, বংশী জানে মালা ওকে এবার শোয়ার ঘরেই নিয়ে যাচ্ছে। বংশীর শরীরের ভেতর হাজার হাজার কেউটে ছোবল মারতে শুরু করল। প্রথমে নিজের দুই চোখের ওপর নিয়ন্ত্রন রাখলেও বংশী খুব দ্রুত হেরে গেলো। মালার দদুল্যমান দুই নিতম্ব ও সরু কোমরটা বংশীর ভেতর থেকে এক অচেনা জানোয়ারকে জাগিয়ে দিতে শুরু করে। উত্তপ্ত ও কামুক নিঃশ্বাসে সম্পূর্ণ ঘরটাই উত্তপ্ত হয়ে যায়। ঘরের ভেতরে গিয়ে মালা দাঁড়িয়ে যায়। বিছানার ওপর বসে বংশীকেও ওর ই পাশে বসার জন্য আমন্ত্রন জানায়। অন্য সময় হলে বংশী হয়ত আনুগত্য দেখিয়ে নাটক করে নিচে বসে পড়ত। আজ সারাদিনে একবার মালা ও সুপ্রতীককে ও একবার সিলিং সাহেবকে দুই যুবতীর সাথে উদ্দাম যৌনখেলায় মত্ত হতে দেখেছে বংশী। আজ হথাত করেই মানুষ বংশীর কাছে সুচারু কূটনীতিক বংশী হেরে যাচ্ছে। মালা মুখে আবার স্নিগ্ধ একটা হাসি এনে বংশীর দিকে তাকায়। বংশী কিছুতেই নিজের নজর মালার দুই কাজলহরিন নয়ন থেকে সরাতে পারেনা। মালা ধীরে ধীরে নিজের ডান হাত বংশীর দিকে নিয়ে যায়। পায়ের ওপর রাখা বংশীর হাতটা আলতো করে ধরে। এতক্ষন যে কেউটেগুলো শুধুই ভেতর থেকে ফোঁসফোঁস করছিল সেগুলো যেন কিলবিল করে একসাথে সবাই বাইরে বেড়িয়ে চলে আসে। বংশী আবার একবার মালার পুরু ও সুস্বাদু দুই ঠোঁটের দিকে তাকায়। বংশীর দ্রুত হৃৎস্পন্দন ও গভীর ঘন কামুকি নিশ্বাস যেন একটাই কথা বারবার করে বলতে চায় “বংশী এই লাস্যময়ী শরীরটা দুহাতে জাপটে ধরে ওই দুই ঠোঁটে নিজের ঠোঁটটা গুঁজে দে, কামনাময়ী শরীরটা থেকে বিন্দু বিন্দু সব রস শুষে খেয়ে নে” বংশী একবার নিজের দুই চোখ বন্ধ করে আর মনেমনে বলে ওঠে “না বংশী কোনও তাড়াহুড়ো নয়, সব ই তোর ইচ্ছে মত হচ্ছে। আর তো একটাই খেলা। ওটাতে জিতে গেলে রাজত্ব ও রানি দুই ই তোর” বংশীর দিকে তাকিয়ে মালা বলে ওঠে
মালাঃ বংশী তুমি আমায় বিশ্বাস কর। তোমাদের জমিদারবাবু কখনোই কিছু জানতে পারবেনা। তুমি আমায় সব কথা বল। তুমি তো গিয়েছিলে নীলকুঠিতে কি হোল ওখানে? আমায় সব বল বংশী।
বংশী মনের সমস্ত জোর দিয়ে নিজের কামনাকে নিয়ন্ত্রন করে ও ধীরে ধীরে মালার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে
বংশীঃ রানিমা, এই মুহূর্তে আমাদের সামনে চরম বিপদ। আমি নীলকুঠিতে গেলেও আমায় ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার পর, সিলিং সাহেব বাইরে এসে আমার দিকে ওই দুই নিষ্পাপ মেয়েকে ছুঁড়ে দেয়। সংজ্ঞাহীন ওই দুই মেয়েকে আমি বহুকষ্টে গ্রামে পৌঁছে দি।
“ইস” বলে একটা শব্দ করে মালা নিজের কপালে হাত দেয়। বংশীও মালার দিকে তাকিয়ে চুপ করে যায়। বংশী আবার বলে ওঠে
বংশীঃ রানীমা, আমি না গিয়ে জমিদারবাবু নিজে যদি জেতেন তাহলে বিপদ আরও বাড়ত। জমিদারবাবু এতোবড় অনাচার সহ্য করতেন না। আমি কিছুই করতে পারলাম না রানিমা।
মালাঃ মানুষ এরকম জানোয়ার কি করে হয় বংশী। মেয়েদুটোর সম্মান আমরা রাখতে পারলাম না। আমরা কি সত্যি ই পরাধীন হয়ে গেছি বংশী। নিজের রাজ্যে আমরা এরকম আশঙ্কার মধ্যে থাকবো? ভিনরাজ্য থেকে সাত সাগর পার করে এসে এক ম্লেচ্ছ জাতি এভাবে আমাদের ওপর অত্যাচার করে যাবে।
বংশীঃ রানিমা, সমস্ত গ্রামবাসী জমিদারবাবুকে নীচ নজরে দেখতে শুরু করেছে। ওরা অনেক আশা নিয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ করতে এসেছিলো। ওরা ভাবতেও পারেনি যে জমিদারবাবু ওদের বাড়ীর মেয়ের সম্মান রক্ষা করতে পারবেন না। জমিদারবাবুর এই মুহূর্তে চরম বিপদ।
মালা বংশীর হাতটা আরও শক্ত করে ধরে বলে ওঠে
মালাঃ কি বলছ তুমি? বিপদ মানে কি?
বংশীঃ প্রজারা বিরুদ্ধে চলে গেছে। ওরা যেভাবে হোক সিলিং সাহেবের কোনও ক্ষতি করবেই। গ্রামে গিয়ে আমি তাই বুঝেছি। আর ওরা কোনও ক্ষতি করলে তার সমস্ত দায় গিয়ে পড়বে জমিদারবাবুর ওপর। রানিমা, ইংরেজদের কাছে কামান আছে, বন্দুক আছে, গুলিগোলা আছে। আমাদের কাছে তো লাঠি আর তরোয়াল ছাড়া কিছুই নেই। জমিদারবাবু প্রথমে ইংরেজদের সাথে বন্ধুত্ব নিয়ে চলছিলেন সেটাই ভালো ছিল। এখন সব কেমন জটিল হয়ে যাচ্ছে।
মালাঃ তাহলে এখন কি হবে বংশী? কোনও উপায় কি নেই এই যুদ্ধকে থামানোর।
বেশ কিছুক্ষন চিন্তা করার ভান করে বংশী উত্তর দেয়
বংশীঃ রানিমা, আমাদের এই মুহূর্তে অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই করার নেই। আমি আপনাকে আগেই বলেছিলাম আমার এক দূরসম্পর্কের ভাই নীলকুঠীর সৈন্য, আমি ওর থেকে কিছু তথ্য জোগাড় করার চেষ্টা করব। এবার আপনি আমায় আজ্ঞা করুন রানিমা, আমি প্রস্থান করি। জমিদারবাবুর আসার সময় হয়ে গেছে, আমায় তো এবার প্রহরায় যেতে হবে।
মালা উদাসীন মনে বংশীর দিকে তাকিয়ে থাকে ও ওকে যাওয়ার অনুমতি দেয়। শেষবারের মত মালার শরীরটা একবার নীচ থেকে ওপর অবধি দেখে নিয়ে বংশী বেড়িয়ে যায়।
বাহিরমহলের কাছে আসতেই বাইরে থেকে প্রচণ্ড কোলাহলের শব্দ ভেসে আসে। বংশী নিজের লাঠিটা হাতে নিয়ে বাইরে বেড়িয়ে আসে। বাইরে এসে সবার আগে বংশীর নজরে যা পড়ে তা হোল অপরুপ সুন্দরী দুই অপ্সরা, দুজনকেই দেখতে হুবহু এক অর্থাৎ যমজ। চোখে ঘন করে কাজল, গোলাপি রঙের সাড়ী ও সবুজ ব্লাউজে দুজনকেই দেখে মনে হচ্ছে স্বর্গ হতে কোনও ডানাকাটা পরী নেমে এসেছে মর্তে। সাজপোশাক থেকে শুরু করে চোখের দুষ্টুমি প্রায় সব ই অনুরুপ। এক্ষুনি যদি দুজনে দৌড়ে ভেতরে প্রবেশ করে যায় তাহলে এদের মধ্যে কে গার্গী আর কে প্রিয়া তা স্বয়ং ভগবানের পক্ষেও বলা সম্ভব নয়। দাসীরা উলু দিয়ে হাতে ফুলের ডালি নিয়ে ওদের বরন করছে। বংশী একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ওই দুই অপ্সরার দিকে। মুখের মিষ্টতা ওদের শরীরের পরিপূর্ণতাকে ঢেকে দেয়নি, একটু ভালো করে নজর দিলেই বোঝা যায় খানিকটা শক্ত বেলের মত স্তনগুলো যেন আঠা দিয়ে ব্লাউজের খাঁজে খাঁজে চিটে আছে। সাড়ীর ফাঁক দিয়ে সুন্দর দুই নাভী মাঝেমধ্যেই উঁকি দিচ্ছে। গভীর কামনায় বংশীর শরীরে আবার উত্তাপ শুরু হয়। নিজেকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য বংশী দুচোখ বুজে দেয়। বন্ধ দুই চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক নতুন পরিকল্পনা। প্রিয়া ও গার্গী উলঙ্গ হয়ে নীলকুঠীর মধ্যে খাটের সাথে বাঁধা, আর এই দুই শরীরের সাথে লালমুখো সাহেব খেলা করে চলেছে। প্রচণ্ড উত্তেজনার সাথে বংশী চোখ খোলে। মনে মনে ভাবে “সত্যি বংশী তুমি ই রাজা হওয়ার যোগ্য। এতো বুদ্ধি রাজা ছাড়া কি আর অন্য কেউ নিজের মাথায় ধরে”
জমিদারবাড়ির মাথায় আজ সকাল থেকেই অভিশাপের কালো মেঘ ছেয়ে এসেছে। রাজকুমারীদের অভিষেক ও তাই নিস্কলঙ্ক হলনা। হথাত করে সেই যুবক, যে দুপুরে জমিদারবাড়িতে এসে সিলিং সাহেবকে অভিযোগ করেছিল সে দৌড়ে সামনে এগিয়ে এলো। ওই স্থানে তখন হাজার হাজার মানুষের ভিড়, কেউ হয়ত ভাবেওনি এই ভিড় রাজকুমারিদের স্বাগত জানাতে নয় জমিদারির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতেই এখানে এসেছে। সেই যুবক অতর্কিতে সুপ্রতীকের পরনের কাপড় খুব জোরে চেপে ধরে বলে ওঠে “অত্যাচারী জমিদার, আজ যে অনাচার আমার বোনেদের সাথে হয়েছে, আমি তোকে অভিশাপ দিলাম সেই অনাচার একদিন তোর বোনেদের সাথেও হবে। তোর এই সুন্দরী বোনরা একদিন নিজেদের ইজ্জত হারাবে” গ্রাম্য এক যুবকের এই অতর্কিত আক্রমনে ওখানে উপস্থিত সকলেই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। দাসীরা সামনে এগিয়ে এসে গার্গী ও প্রিয়াকে ভেতরে নিয়ে যেতে উদ্যত হয়। লাঠিয়ালদের মধ্যে একজন লাঠি নিয়ে সেই যুবককে মারতে উদ্যত হয়। শান্ত মাথার সুপ্রতীক তাকে বিরত করে। এক মুহূর্ত ওখানে না দাঁড়িয়ে থেকে সুপ্রতীক ও ভেতরে প্রবেশ করে। বাইরে থেকে গ্রামের সমবেত মানুষ সুপ্রতীককে অভিশাপ দিতে থাকে।
অন্দরমহলে প্রবেশ করেই সুপ্রতীক বংশীকে ডেকে পাঠায়। বংশী সুপ্রতীকের কাছে গিয়ে সমস্ত ঘটনা ব্যাখ্যা করে। চিন্তায় ও আশঙ্কায় সুপ্রতীকের কপালে ভাঁজ পড়ে যায়। বংশী আবার বাইরে বেড়িয়ে আসে।
বংশী জানে, এখনো অবধি ও সফল। কিন্তু ও জানে ওকে সজাগ হতে হবে কারন ওর শেষ পরিকল্পনা এখনো বাকি। আর সেই পরিকল্পনা ওর এই পাশাখেলার সবচেয়ে মুল্যবান ঘুঁটি, সিলিং সাহেবের ভাই, টমাস। এই ঘুঁটিটা বংশী যতটা পারদর্শিতার সাথে ব্যাবহার করতে পারবে, জমিদারী তত দ্রুতই ওর হাতে চলে আসবে।
[/HIDE]
 
[HIDE]পর্ব ১৯- বর্বরতাঃ [/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
সুপ্রতীকের ইশারায় প্রিয়া ও গার্গী দ্রুত ভেতরে প্রবেশ করে যায়, বাহিরমহলের মুখে দাঁড়িয়ে ছিল মালা। কোনরকমে মুখে একটু হাসি হাসি ভাব করে মালা ওদেরকে কাছে টেনে নিয়ে অন্দরমহলে প্রবেশ করে। এতক্ষন বংশী একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল এই দুই সদ্যআগত রুপসীর দিকে। এক গ্রাম্য যুবকের আকস্মিক আক্রমনে তারা ভীষণভাবে বিচলিত হয়ে পড়েছে। বংশী তাকায় সুপ্রতীকের দিকে, সুপ্রতীক বংশীর ই দিকে তাকিয়ে ইশারা করছে। বংশী বুঝে যায়, সুপ্রতীক ঠিক কি বোঝাতে চেয়েছে ওকে। সুপ্রতীক একটু পেছনে চলে আসে। বংশী সামনে এগিয়ে গিয়ে সমবেত সমস্ত মানুষের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে
বংশীঃ জমিদারবাড়ি যুগে যুগে আমাদের শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করে এসেছে আজ ও এই সংকটময় মুহূর্তে আমাদের জমিদারবাড়ির ওপর ই নির্ভরশীল হতে হবে।
বংশী হয়ত আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু সেই সুযোগ বংশী পেলনা। ওদের মধ্যে থেকে একজন মাঝবয়সী ভদ্রলোক এগিয়ে এসে বলে উঠলেন
“তাই নাকি। জমিদারবাড়ি চিরকাল আমাদের কল্যান করে এসেছে। তাহলে তুমি নিজের গ্রাম, ঘরবাড়ি ছেড়ে দিয়ে হথাত ই ডাকাত হতে কেন গিয়েছিলে”
নিজের ইতিহাস নিয়ে যে হথাত ই এরকম অপ্রস্তুত অবস্থার মধ্যে বংশীকে পড়তে হবে তা ও ভ্রুনাক্ষরেও ভাবেনি। সেই ভদ্রলোক আবার ও বলে উঠলেন
“ঠাকুর ডাকাত মানে মৃত্যুঞ্জয়ের ইতিহাসটা কি বানানো? জমিদারবাড়িকে আমরা কখনোই শ্রদ্ধার চোখে দেখিনি। শুধু শ্রদ্ধা করেছিলাম এই মানুষটাকে”
সুপ্রতীক লজ্জায় মাথা হেঁট করে নেয় কারন ও জানে ইঙ্গিতটা ওর ই দিকে। বংশী হয়ত কিছু একটা বলতে চাইছিল, কিন্তু সেই সুযোগ ও পেলনা। ওদের মধ্যে থেকে কেউ একজন বলে উঠল
“আর নয় অনেক হয়েছে, এবার আমরা নিজেরাই নিজের ভালটা বুঝে নেবো”
ওরা আর একমুহূর্ত ওখানে অপেক্ষা না করে এক এক করে সকলেই প্রস্থান করল। জমিদার হিসেবে অভিষেক হওয়ার পর এতো বড় অপমান ও অবজ্ঞা হয়ত সত্যি ই সুপ্রতীকের সাথে কখনোই হয়নি। বেশ কিছুক্ষনের জন্য বাকরুদ্ধ অবস্থায় প্রত্যেকে নিজের ই স্থানে দাঁড়িয়ে থাকলেন। বংশী জানে এই অবস্থায় সুপ্রতীক আরও বেশি করে ওর ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাবে। আর ঠিক তাই হোল
সুপ্রতীকঃ বংশী, তুমি এক্ষুনি ভেতরে আসো, তোমার সাথে আমার কিছু জরুরি আলোচনা আছে। নায়েব মশাই আপনিও আসুন।
নিজের কথা শেষ করে সুপ্রতীক ভেতরে প্রবেশ করে গেলো, বংশী আর নায়েব মশাই একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। নায়েব মশাই ই প্রথম ভেতরে প্রবেশ করলেন। ওনার দেখাদেখি বংশীও ওনার পেছন পেছন ভেতরে প্রবেশ করে গেলো। বাইরে বাগানের কাছ দেখে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে প্রিয়া ও গার্গী প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন হয়ে মালাকে কিছু জিজ্ঞেস করে চলেছে, মালাও নিজের সাধ্যমত ওদেরকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছে। জমিদারবাড়ির এই চরম উদ্বেগ দেখে বংশীর হৃদয়ে লুকিয়ে থাকা প্রতীক্ষার চরম যন্ত্রণা যেন কোথায় হারিয়ে গেলো। মনে মনে একবার বলে ওঠে বংশী “সব ই আমার পক্ষে, সময় ও আমার ই পক্ষে, বংশী রাজা হওয়ার জন্য তৈরি হয়ে যাও” নায়েবমশাই ভেতরে প্রবেশ করে সোজা যেতে শুরু করলেন। বংশী বুঝে গেলো আর কয়েক ঘণ্টা আগে যে স্থানে ও মালার সাথে কথা বলেছে সেখানেই ওকে আবার যেতে হবে। নায়েব মশাই ওর থেকে অনেকটাই এগিয়ে ছিল তাই নায়েব মশাই হয়ত খেয়াল করেন নি, কিন্তু বংশী খেয়াল করেছে যে শোয়ার ঘরের ওখান থেকে বারান্দার দিকে নুপুরের ঝুম ঝুম শব্দ ভেসে আসছে। বংশী জানে ওদের কথা শোনার জন্য মালা এদিকেই আসছে। বংশী, আরও একবার মালার শরীরটা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে বারান্দার কাছেই দাঁড়িয়ে গেলো। মালা প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে আসছিল তাই হয়ত খেয়াল করেনি, হথাত করেই সামনে বংশীকে দেখে ও কিছুটা থমকে যায়। তারপর হাত নেড়ে নেড়ে অনেকক্ষণ ধরে ওকে ইশারা করে কিছু বোঝাতে চায়। কিন্তু কামত্তেজনায় পাগল বংশীর মাথায় তখন সত্যি ই সেসব কিছু নেই। ওর নজর সোজা শাড়ির ফাঁক দিয়ে বেড়িয়ে আসা গোল নাভির দিকে। বংশীর অভিপ্রায়টা খানিকটা এরকম যে যদি সামনেই নায়েবমশাই না থাকতো ও হয়ত হাঁটু গেড়ে বসে নিজের মুখটা ওই নরম সুস্বাদু স্থানে গুঁজে দিয়ে, মালার শরীর থেকে সমস্ত রস শুষে নিত। দুহাত দিয়ে স্ফীত দুই নিতম্বকে জড়িয়ে ধরত আর মালার শীৎকারে সমস্ত জমিদারবাড়িতে এক অদ্ভুত প্রতিধ্বনির সৃষ্টি হত। হথাত ই নায়েব মশাই এর গলা ভেসে আসে
“বংশী, জমিদারবাবু এখানে আছেন। তাড়াতাড়ি এখানে আসো, উনি তোমায় ডাকছেন”
দ্রুত বংশী স্বপ্ন থেকে বাইরে বেড়িয়ে আসে। সামনের দিকে তাকায়, নায়েব মশাই ওর ই দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। নিজের ই অজান্তে বংশী আরও একবার মালার দিকে তাকায়, মালা নিজের তর্জনী দুই ঠোঁটের কাছে এনে ওকে চুপ করে যাওয়ার ইশারা করে। বংশী আর দাঁড়ায় না ওখানে, সোজা নায়েব মশাইএর দিকে এগিয়ে যায়। নায়েব মশাইকে অনুসরন করে ও সোজা একটা বড় ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে। সেখানে একটা আরাম কেদারায় অনেক আগে থেকেই সুপ্রতীক বসে ছিল। বংশীর দিকে তাকিয়ে সুপ্রতীক বলে ওঠে
সুপ্রতীকঃ ভেতরে এসে বস বংশী, কিছু জরুরি কথা আছে। (নায়েব মশাই এর দিকে তাকিয়ে) নায়েব মশাই এই মুহূর্তে রাজকোষের অবস্থা কিরকম।
সুপ্রতীকের মুখে রাজকোষের ব্যাপারে প্রশ্ন শুনে বংশী বুঝে যায় যে সুপ্রতীক চরমতম সিদ্ধান্তটা নিতে চলেছে। হয়ত বংশীর পরিকল্পনা এই সিদ্ধান্তটা কে কেন্দ্র করেই রচিত হয়েছিল।
নায়েব মশাইঃ ভালো নয় জমিদারবাবু। এই মাসে এখনো খাজনা আদায় করা হয়নি, আর মনে হয় এমাসে খাজনা আদায় করা খুব ই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
সুপ্রতীকঃ দেখুন নায়েব মশাই, আপনাকে সব কথা খুলে বলি। প্রজাদের ছাড়া জমিদারী চলেনা, আমি আমাদের পূর্বপুরুষদের মানসিকতা নিয়ে চলিনা। এই মুহূর্তে প্রজাদের মনে ইংরেজদের নিয়ে বিদ্রোহ দেখা দিয়েছে। এতক্ষন বাইরে যা দেখলেন তা শুধুই ওদের হতাশার বহিঃপ্রকাশ।
হয়ত নায়েব মশাই ও কিছুটা আঁচ করে উঠতে পেরেছেন। উনি কোনও উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকলেন।
সুপ্রতীকঃ আমি নিজে কাল সকালে বিদ্রোহীদের সাথে সাক্ষাত করব। আমি নিশ্চিত যে ওরা আমায় বিশ্বাস করবে। এই মুহূর্তে এদেশে ইংরেজদের অবস্থা ভালো নয়। ওদের নিজেদের সেনারাই বিদ্রোহ ঘোষণা করে দিয়েছে। আমি বাংলার সমস্ত জমিদার ও রাজাদের একত্রিত করতে চাই।
বংশী বুঝল ওর পরিকল্পনা ১০০ শতাংশ সফল। আগুনে একটু ঘি ঢেলে দেওয়ার জন্য ও বলে উঠল
বংশীঃ জমিদারবাবু ইংরেজদের সাথে লড়াই করা দুঃসাহসিকতার পরিচয় হবেনা? ওরা প্রচণ্ড শক্তিশালী, মুঘলদের, নবাবদের পরাস্ত করেছে। আমরা কি পারব ওদের সাথে লড়তে?
সুপ্রতীকঃ কেন পারবোনা বংশী, এই মুহূর্তে যদি আমরা সবাই একত্রিত হতে পারি তাহলে ওরা পরাস্ত হবেই। সৈন্যবলটা কিন্তু বিদ্রোহীদের হাতেও আছে। আমাদের এখন একটাই কাজ যেভাবে হোক বিদ্রোহীদের কাছে নিজেদের গ্রহনযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমান করা। নায়েব মশাই, অন্তত ৪০-৫০ টা বন্দুক ও তার কার্তুজ কেনার উপযুক্ত অর্থ কি আমাদের কাছে রয়েছে?
কিছুটা আমতা আমতা করে নায়েব মশাই উত্তর দেন
নায়েব মশাইঃ আজ্ঞে চেষ্টা করলে হয়ে যাবে, কিন্তু কোষাগারে একটা বেশ বড় ধরনের শুন্যতা সৃষ্টি হবে এতে। এরপর শুধুই আমাদের প্রজাদের দেওয়া খাজনার ওপর নির্ভর করে থাকতে হবে। এই অবস্থায় মেদিনীপুরের ও বর্ধমানের ওই জমিগুলো বিক্রি করাও তো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। অন্তত যতদিন না চারপাশটা একটু শান্ত হচ্ছে।
সুপ্রতীকঃ আপনি কোনও চিন্তা করবেন না। আপনি অর্থের ব্যাবস্থা করুন কাল ই আমি লোক পাঠাচ্ছি, বন্দুক ক্রয় করার জন্য। ঠিক আছে আপনারা উঠুন এবার রাত অনেক হোল।
বংশী ওখান থেকে উঠে পড়ে। সুপ্রতীকের মুখে রাত অনেক হোল শুনে ওর মনে পড়ে যায় আজ ঠিক ৯ টায় ও টমাসকে জমিদারবাড়ির পেছনের মাঠে ডেকেছে এবং টমাস ই হতে চলেছে ওর সেই সিঁড়ি যা ওকে ক্ষমতার রাজপ্রাসাদে পৌঁছে দেবে। বংশী সোজা হাঁটতে থাকে, বারান্দার কাছে এসে একবার বাঁদিকে তাকায়, না মালা ওখানে নেই। বংশী জানে মালা এতক্ষন ওখানেই ছিল আর সব কথাই মালা শুনেছে। বংশী আর দোনোমনা না করে সোজা বাহিরমহলের কাছে চলে যায়। একবার তাকায় বাইরের দিকে। অদ্ভুতভাবেই বাইরেটা তখন একদম ফাঁকা। বংশী জানে ও যে বাইরে যাচ্ছে একথা কেউ না জানলেই বেশি ভালো হয়। হন্তদন্ত করে বংশী ওখান থেকে বেড়িয়ে যায়। জমিদারবাড়ি থেকে বেড়িয়ে যে রাস্তায় নীলকুঠি যেতে হয়, সেখানেই ডান দিকে একটা বিশাল মাঠ পড়ে। জমিদারবাড়ি সংলগ্ন বলে এলাকার লোকের কাছে এটা জমিদারবাড়ির মাঠ নামেই পরিচিত। হাতে মোটা লাঠিটা শক্ত করে ধরে বংশী সেদিকেই এগিয়ে চলে। ছোট থেকে এই লাঠির খেলায় ওর গ্রামের মধ্যে এক বিশাল সুনাম ছিল। সেই সুনাম ই ওকে একদিন ডাকাত দলের সর্দার ও পড়ে জমিদার বাড়ির লাঠিয়াল বাহিনির প্রধান বানায়। আজ ও নিজের সমস্ত পরিকল্পনাকে সফল করে তুলতে ওর ভরসা ওই লাঠি। বংশী মাঠের একদম সামনে এসে পৌছায়। চারপাশটা ঘুটঘুটে অন্ধকার, দূর থেকে কিছু কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ ভেসে আসছিল। এই মাঠটা বংশীর কাছে নিজের বাড়ির চেয়েও বেশি পরিচিত। এই মাঠের ই অন্ধকারে যে বংশী ডাকাত থাকা অবস্থায় কত মানুষের প্রান নিয়েছে তার কোনও হিসেব স্বয়ং ভগবানের কাছেও নেই।
সন্তর্পণে বংশী ভেতরে প্রবেশ করে যায়। বেশ কিছুটা চলার পর একটু নিচু হয়ে হাত দিয়ে নিচেটা একবার দেখে নেয়। এইসব জায়গায় সাপ ও শেয়াল এই দুই জীবের প্রচণ্ড উৎপাত। বসার জায়গার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর বংশী ওখানে বসে পড়ে। ও জানে টমাস আসবেই, ভারতবর্ষের গুপ্তধনের সম্বন্ধে যে রুপকথা ও শুনেছে, তার লোভ ওকে এখানে টেনে আনবেই। কিন্তু ঠিক কখন যে টমাস ওখানে আসবে তা সত্যি ই বংশী জানেনা। মনে মনে ভাবতে থাকে এতো কিছু নাটকীয় ঘটনার পর কি সিলিং সাহেবের নীলকুঠি থেকে টমাস বাইরে বেরতে পারবে? এইসব ভাবতে ভাবতেই ওর মনে পড়ে যায়, মালার সেই আঙুল ঠোঁটের কাছে ছুঁইয়ে ইশারা করার কথা। মনে মনে বলে “মালা, তুমি ঠিক ই বুঝবে আমি শুধু যৌনতা মেটাবার জন্য এতকিছু করছিনা। আমি তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি। তোমার শরীরের প্রতিটা কম্পন, সৌন্দর্য এ শুধুই আমার মত কোনও ক্ষুরধার পুরুষের জন্য। দেখো আমি তোমায় যে সুখ দেবো তা তুমি স্বর্গে গিয়েও কখনো লাভ করতে পারবেনা। আমার বহুদিনের ইচ্ছে আমার রাজপ্রাসাদে অর্থাৎ জঙ্গলের সেই ঝুপড়ি ঘরে তোমার সাথে যৌনলীলায় আমি মেতে উঠবো। জঙ্গলের সমস্ত জীবজন্তু সাক্ষী থাকবে আমাদের ভালোবাসার” এইসব ভাবতে ভাবতেই বংশীর কাঁধের ওপর একটা নরম হাতের ছোঁয়া। কিছুটা চমকে গিয়েই বংশী পেছন ফিরে দেখে টমাস। পূর্ণিমার আলোয় টমাসের মুখটা বংশীর কাছে এক টুকরো পরশ পাথরের মতই ছিল। বংশী জানে এই পাথরের টুকরো ও যেখানে ছোঁয়াবে তাই সোনা হয়ে যাবে। বংশীর মুখে ফুটে ওঠে প্রচণ্ড তৃপ্তির এক হাসি। ওর এই হাসির জবাবে নির্মল কৈশোরে ভেজা এক নিষ্পাপ হাসি ওকে পুরস্কার দেয় টমাস।
বংশীর এই হাস্যময় মুখটার দিকে তাকিয়ে হয়ত টমাস এটাই বলতে চেয়েছিল “কোথায় আমার গুপ্তধন?” কিন্তু বংশী ওকে সেই সুযোগ দিলনা। ততক্ষনে বংশী নিজের কোমরে গোঁজা কালো কাপড়টা বার করে ফেলেছে। টমাস কিছু বোঝার আগেই বংশী, টমাসের মুখটা পেছন থেকে ভালো করে বেঁধে দেয়, ও নিজের পা দিয়ে জড়িয়ে ওকে মাটিতে ফেলে দেয়। এরপরের কাজটার জন্যই হয়ত বংশী এই অঞ্চলে এতো কুখ্যাত।
....................................
বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পর বংশী মাটির দিকে ঝুঁকে নিজের দুই আঙুল টমাসের নাকের কাছে নিয়ে যায়, না ওর নাক দিয়ে এক ফোটাও নিশ্বাস ও অনুভব করলনা। মাঠের শেষপ্রান্তে একটা পুকুর আছে। নিজের কাজ শেষ করে এর আগেও ও এই পুকুরের জলেই নিজেকে পরিস্কার করত। বংশী পুকুর থেকে জল নিয়ে ভালো করে নিজের মুখে ঝাপটা দিল তারপর লাঠিটা ভালো করে ধুয়ে নিয়ে আবার জমিদারবাড়ির দিকে রওনা হোল।
একটা তাজা প্রান, নিষ্পাপ জীব অকালে এই পৃথিবী থেকে ঝরে গেলো। শুধুই পড়ে থাকল বিশ্বাসঘাতকতা আর ষড়যন্ত্র। কিন্তু ইতিহাস বার বার এটাই শেখায় যে বেইমানদের ও একটা সমাপ্তি ঘটে, প্রচণ্ড নিষ্ঠুর একটা সমাপ্তি।
[/HIDE]
 
[HIDE]পর্ব ২০- যুদ্ধের দামামাঃ [/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
নিজের কাজ সম্পন্ন করে বংশী আবার জমিদারবাড়ির দিকে যেতে শুরু করে। ভাগ্য বংশীর যথেষ্ট সুপ্রসন্ন ছিল, সেই সময় ও জমিদারবাড়ির সামনে প্রহরায় কেউ ছিলনা। যদিও প্রহারায় কেউ থাকলেও বংশীর কিছুই অস্বস্তি হতনা। কারন এই মুহূর্তে জমিদারবাড়ির সমস্ত নিরাপত্তার দায়িত্বে বংশী ও বংশীর ই হাতে তৈরি ওর সাধের ডাকাত দল। দু একজন পুরনো লোক অবশ্য আছে কিন্তু তারা বংশীর পারদর্শিতার কাছে নেহাত ই নগন্য। বংশী সন্তর্পণে ভেতরে প্রবেশ করে। বাহিরমহলের কিছুটা ভেতরের দিকে কেউ একজন দাঁড়িয়ে। বংশীর বুকটা ধুকপুক করতে থাকে। আপছা আলোতে সেই মানুষের মুখটা কিছুতেই বোঝা যাচ্ছেনা। মনে মনে একবার ভাবে বংশী ওর পরিকল্পনার ব্যাপারে কেউ কিছু বুঝে যাইনি তো। সমস্ত আশঙ্কাকে দূরে সরিয়ে রেখে বংশী সামনে এগিয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে ওর ভুল ভেঙে যায়। সামনে দাঁড়িয়ে রবি। রবি বংশীর ই এক অতি বিশ্বস্ত অনুচর। বংশীকে এতো রাতে বাইরে থেকে আসতে দেখে রবি ও কিছুটা বিস্মিত হয়ে যায়।
রবিঃ এতো রাতে কথা থেকে আসছ সর্দার।
ঠোঁটের কাছে আঙুল নিয়ে গিয়ে ওকে চুপ করে যেতে ইশারা করে বংশী। হাত নেড়ে ইশারা করে ওকে বাইরে আসতে বলে বংশী। বংশীর কথামতো রবি ওকে অনুসরন করে জমিদারবাড়ির বাইরে যায়। ফিসফিস করে বলে ওঠে বংশী।
বংশীঃ রবি আজ একটা সত্যি কথা বল আমায়। আমি জানি জমিদার বাড়ির ওপর তোদের খুব রাগ। আমি জানি জমিদারবাড়ির সাথে আমি যখন সখ্যতা করে চলব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তখন তোরা অনেকেই আমায় ভুল বুঝেছিলি। কিন্তু মনে আছে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে সভ্য সমাজে আসার আগে আমি তোদের কি বলেছিলাম?
কিছুক্ষন চুপ করে থাকে রবি। রবির বুকের ভেতরে যে প্রতিশোধের আগুনটা এতদিন কেউ ছাই চাপা দিয়ে রেখেছিল হথাত ই তা যেন আবার জ্বলে ওঠে। বংশীর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে রবি
রবিঃ না ভুলিনি। তুমি বলেছিলে শত্রুকে খতম করতে হলে আগে শত্রুর বন্ধু হতে হবে। তুমি হয়ত বন্ধু হয়ে গেছো, কিন্তু আমরা আজও নিজেদের জমিদারবাড়ির ভৃত্য বলে মানিনা। কম অত্যাচার কি এই জমিদারবাড়ি আমাদের ওপর করেছে নাকি। না আমরা কেউ এটা ভুলতে পারিনি।
রবির গালে আলতো করে একটা চড় মেরে মুচকি হেঁসে বংশী বলে ওঠে
বংশীঃ ওরে রবি আমার কথাটা মন দিয়ে শোন। শত্রুকে চেনা আমাদের হয়ে গেছে। এবার শত্রুকে আক্রমন করার সময়। কিন্তু আমাদের মাথা একদম ঠাণ্ডা রাখতে হবে। তুই বাকি সাথিদের ভালো করে বুঝিয়ে বলে দে। সময় এসে গেছে।
বংশীর মুখের দিকে কিছুক্ষন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে রবি বলে ওঠে
রবিঃ আমরা তো তৈরি আছি সর্দার। কিন্তু কিছুই তো বুঝলাম না।
বংশীঃ অতকিছু বুঝতেও হবেনা। রবি এই জমিদারবাড়ি আমি শেষ করে দেবো। তোর মত আমার ও জমিদারী রক্তের ওপর প্রচণ্ড রাগ। কাল সকাল থেকে সব কিছু পালটে যাবে। আজ রাতে আমি ভীষণ শান্তিতে ঘুমাব। তোরা তৈরি থাকিস। আজ রাতের মধ্যেই সবাইকে খবর দিয়ে দে।
রবি শুধু মাথা নেড়ে সায় জানালো। রবিকে বাইরেই রেখে বংশী অন্দরমহলের ভেতরে প্রবেশ করল। বাগানের কাছটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। লন্ঠনের আলোয় জমিদারবাড়ির ভেতরটা বেশ স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে। প্রিয়া ও গার্গী হয়ত পেছনের দিকের ঘরে রয়েছে তাই ওদের দেখা যাচ্ছেনা। কিন্তু জানলার ভেতর দিয়ে বংশীর প্রানপাখি মালাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। লাল সাড়িটার ভেতরে যে এসময় ব্লাউজ থাকেনা তা বংশী খুব ভালো করেই জানে। হাত ও বুকের মাঝের খাঁজ দিয়ে বগলের কালো চুল গুলো বেশ ভালোই বোঝা যাচ্ছে। দুদিক দিয়ে তরমুজ আকারের দুই স্তনের অনেকটাই বাইরে বেরিয়ে এসেছে। সুপ্রতীক খাটের ওপর কিছুটা দুরেই বসে আছে। লক্ষণীয়ভাবে সুপ্রতীকের চোখে মালার প্রতি সেই কামুক নজরটা কোথায় যেন উড়ে গেছে। ওকে দেখেই মনে হচ্ছে এই একটা দিনের অনভিপ্রেত সব ঘটনায় ও প্রচণ্ড উদগ্রীব হয়ে পড়েছে। মালা সেটা লক্ষ্য করে চুপ করে একপ্রান্তে বসে আছে। বংশী মনে মনে চিন্তা করে সুপ্রতীক যথেষ্ট বিচক্ষন মানুষ, ও কি বংশীকে সন্দেহ করছে? বংশীর এই অতি সক্রিয়তা, সিলিং সাহেবের সাথে দেখা করতে যাওয়া এই ব্যাপারগুলো কি সুপ্রতীক স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছে? সুপ্রতীকের চরম সর্বনাশ চাইলেও বংশী, সুপ্রতীককে যথেষ্ট সমীহ করেই চলে। সেইকারনেই হয়ত মনে মনে একবার চিন্তা করে যে আজ রাতে আর এতো বাড়াবাড়ি করার দরকার নেই। বংশী ওখান থেকে বেরিয়ে আবার বাহিরমহলে আসে। ওখানে ততক্ষনে বাকি লাঠিয়ালরা জড় হয়ে গেছে এবং রবি বাকিদের সমস্ত ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলে দিয়েছে। বংশী ওদের দিকে তাকিয়ে চোখ নেড়ে একবার আশ্বস্ত করে দেয়। ধীরে ধীরে ওরা সবাই যে যার কক্ষে শোয়ার জন্য চলে যায়। ওদের মধ্যে দুজনের আজ পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে, সেই দুজন ই খালি ওখানে দাঁড়িয়ে থাকে। বংশীও ভেতরে ঢুকে যায়। অন্দরমহলের মুখে বারান্দায় ওর শোয়ার ব্যাবস্থা রয়েছে। তাড়াতাড়ি বিছানা পেতে বংশী শুয়ে পড়ে। বংশী জানে আজ রাতটা ওকে প্রচণ্ড সচেতন হয়ে থাকতে হবে। তাই আজ ও স্বপ্ন দেখতে চায়না আর স্বপ্নে মালাকে নিয়েও আসতে চায়না। বংশী ধীরে ধীরে চোখদুটো বন্ধ করে দেয়।
........................
ঘুম ভাঙ্গে একটা রে রে শব্দে। কোথা থেকে যে এরকম বিকট শব্দ আসছে তা বংশীর মাথায় ঢোকে না। বহুদিন বাদে রাতে একটু স্বস্তির ঘুম পেয়েছিল বংশী। ঘুম চোখে কালরাতের কথা বংশী প্রায় ভুলেই যেতে বসেছিল। হথাত ই সমস্ত ঘটনা মনে পড়ে যায়। প্রচণ্ড উত্তেজনার সাথে বংশী উঠে বসে। এক লাফে বাইরে বেরোয়। পাহারায় থাকা দুই লাঠিয়াল যে এতক্ষন ঘুমাচ্ছিল তা ওদের চোখ দেখলেই বোঝা যায়। ওরাও অবাক হয়ে বংশীর দিকে তাকায়। বংশীর বুঝতে আর কোনও অসুবিধা থাকেনা যে সিলিং সাহেব ও তার সৈন্যরা সারারাত ধরে টমাসের খোঁজ করেছে আর ওরা টমাসের মৃতদেহটা খুজেও পেয়ে গেছে। দু হাত দিয়ে চোখ দুটোকে ভালো করে কচলে নিয়ে বংশী সামনের দিকে এগিয়ে যায়। দুই লাঠিয়ালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে
বংশীঃ এই আওয়াজ কোথা থেকে আসছে? তোমরা এগিয়ে গিয়ে দেখে আসো।
বংশীর কথা মত ওরাও লাঠি নিয়ে দেখতে যায় এই আওয়াজ কোথা থেকে আসছে। বংশী খুব ভালোই বুঝতে পারছে যে এই আওয়াজ জমিদারবাড়ির মাঠের দিক থেকেই আসছে। হাত দুটো ওপরের দিকে তুলে শরীরে একটা ভালো করে মোচর দিয়ে বংশী ক্লান্তি ভাবটা কাটিয়ে তোলে। বংশী বাইরে দাঁড়িয়েই অপেক্ষা করতে থাকে ওর বাকি দুজন সাথীর জন্য। বেশ কিছুক্ষন পর ওরা দুজন হাঁপাতে হাঁপাতে ফিরে আসে। ওদের মধ্যে একজন বংশীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে
“সর্দার ভয়ঙ্কর একটা ব্যাপার ঘটে গেছে। সিলিং সাহেবের কুঠিতে একটা বাচ্চা ছেলে থাকতো না, কে ওকে মেরে মাঠে ফেলে দিয়েছে। সিলিং সাহেব ও দেখলাম নিজেই এসেছে। ওহ চোখগুলো দিয়ে যেন আগুন ঝরছিল। ইংরিজিতে কিসব বলে চেঁচাচ্ছিল। আকারে ইঙ্গিতে এটাই বুঝলাম যে জমিদারবাবুর ব্যাপারেই কিছু বলছিল”
বংশী মুচকি হেঁসে ওদের দিকে তাকায়, ওদের মধ্যে একজনের কাঁধে হাত দিয়ে বলে ওঠে
বংশীঃ জমিদারের ওপর তোদের এখনো রাগ আছে নারে? কোনও চিন্তা করিস না, সব শোধ নেওয়ার সময় এসে গেছে।
ওরা দুজন অবাক হয়ে বংশীর দিকে তাকিয়ে থাকে। এতোবড় একটা নিষ্ঠুর কাজ যে ওদের সর্দার করতে পারে তা ওরা ভ্রুনাক্ষরেও ভাবতে পারেনি। ওরা বুঝে যায় যে ওদের সর্দার বংশীরাজ এই দু বছর ধরে জমিদারবাড়িতে পড়ে রয়েছে শুধু জমিদারিকে শেষ করার জন্য। বংশী ওদের দিকে তাকিয়ে বলে
বংশীঃ আমি যাচ্ছি জমিদারবাবুকে খবর দিতে। জমিদার এলে তোরা ভীষণ ভয় পেয়ে যাওয়ার ভান করবি। আমাদের এতদিনের সব পরিকল্পনা আজ সফল হতে চলেছে।
অবাক দৃষ্টিতে ওরা দুজন তাকিয়ে থাকে বংশীর দিকে। বংশী, অন্দরমহলে প্রবেশ করে। ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যেও বংশী জানালা দিয়ে মালার খোলা পিঠটা দেখতে পায়। নিজের মাথাটা সুপ্রতীকের বুকে গুঁজে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে ওর প্রানের শখি মালা। একবার মনে মনে বলে ওঠে বংশী। মালা এই তোমার সুপ্রতিকের সাথে শেষ শোয়া। কাল রাতটা তুমি আমার সাথে জঙ্গলেই কাটাবে। বংশী একবার আকাশের দিকে তাকায়। পুব আকাশটা তখন অল্প অল্প লাল হয়ে উঠছে। বংশী বুঝতে পারে ভোর হয়ে উঠেছে। বংশী আরও কিছুটা এগিয়ে যায় তারপর তারস্বরে চিৎকার করে বলতে থাকে
“জমিদারবাবু উঠে পড়ুন। বিশাল বিপদ হয়েছে, উঠে পড়ুন জমিদার বাবু”
হয়ত রাতে খুব একটা শান্তিতে ঘুমাতে পারেননি সুপ্রতীক, তাই বংশীর অল্প ডাকাডাকিতেই ওর ঘুম ভেঙে যায়। খাট থেকে নেমে খালি গায়েই সুপ্রতীক দরজার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। দরজার সামনেই বংশীকে দেখে কিছুটা আশঙ্কিত হয়ে পড়ে সুপ্রতীক
সুপ্রতীকঃ কি হয়েছে বংশী। এই মাঝরাতে তুমি এতো চিন্তিত কেন?
বংশীঃ জমিদার বাবু আপনি হয়ত জানেন হয়ত দেখেওছেন, সিলিং সাহেবের কুঠিতে ওনার এক ভাই থাকতো। কেউ তাকে হত্যা করে আমাদের জমিদারবাড়ির পাশের মাঠে ফেলে দিয়ে গেছে। সারারাত হন্যে হয়ে খোঁজার পর ব্রিটিশ সৈন্যরা ওর মৃতদেহ খুঁজে পেয়েছে। আমরা ওদের চিৎকার শুনতে পেয়ে ওদিকে দেখতে গেছিলাম। ওদের কথাবার্তা শুনে আমার এটাই মনে হোল আজ গ্রামের মানুষের কপালে দুঃখ আছে।
বংশীর এই কথাগুলো শুনে সুপ্রতীকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে যায়। সুপ্রতীক মাটির দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবতে থাকে।
সুপ্রতীকঃ এতো বড় পাপ কে করল বংশী? আমি ছেলেটাকে দেখেছি বংশী। সত্যি ই বাচ্চা ছেলে। ও তো কারুর কোনও ক্ষতি করেনি বংশী। ওর সাথে কেন এরকম হোল।
বেশ কিছুক্ষন মাটির দিকে তাকিয়ে থাকে সুপ্রতীক। বংশীও কোনও উত্তর দেয়না। আসলে বংশীর ও মনে একটা ভয় কাজ করছিল, তা হোল বংশীর ইতিহাস সুপ্রতীকের জানা, কোনভাবে বংশীকে সুপ্রতীক সন্দেহ করছেনা তো। রাতের অন্ধকারে হয়ত বংশীর কথাগুলো শোয়ার ঘরে থাকা মালার কানেও স্পষ্টভাবে পৌঁছেছিল। প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন হয়ে মালাও এগিয়ে আসে দরজার কাছে। মালা হয়ত এতো কিছুর মধ্যে এটা ভুলেই গিয়েছিল ওর পরনে শুধুই সাড়ী, তার তলায় কোনও ব্লাউজ নেই। এই চরম সংকটময় অবস্থায় ও বংশীর নজর তা এড়িয়ে যায়না। হলুদ সাড়িটার সামনে উঁচু হয়ে স্তনদুটো প্রায় সম্পূর্ণভাবেই অনুমান করা যাচ্ছে। দুদিকে নগ্ন বাহুদ্বয় ও তার সাথে লাগোয়া স্তনের কিছুটা অংশ স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু চতুর বংশী এই মুহূর্তে নিজের মনকে দুর্বল করতে চায়না। বংশী নিজের নজর ফিরিয়ে নেয় ও সুপ্রতীকের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে
বংশীঃ জমিদার বাবু, আমি কি গ্রামের গরীব মানুষদের রক্ষা করতে লাঠিয়ালদের ওখানে পাঠাবো? আমার মনে হয় এতক্ষনে ওরা গ্রামে অত্যাচার করাও শুরু করে দিয়েছে।
কথা শেষ হওয়ার আগেই বংশীর অনুচর বাহিরমহলের কাছ থেকে বলে ওঠে “জমিদার বাবু, ইংরেজ সেনারা গ্রামে একের পর এক বাড়ি পুড়িয়ে ফেলছে। এই মুহূর্তেই একটা যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার মত অবস্থা। গ্রামের মানুষ ও তীর ধনুক নিয়ে ইংরেজদের সাথে যুদ্ধ করবে বলে প্রস্তুতি নিচ্ছে” সুপ্রতীক প্রচণ্ড উদ্বেগের মধ্যে পড়ে যায়। দৃপ্তকণ্ঠে বংশীর দিকে তাকিয়ে সুপ্রতীক বলে ওঠে
সুপ্রতীকঃ বংশী, আমার এই মুহূর্তে একবার সিলিং সাহেবের সাথে কথা বলা দরকার, নয়ত বহু গরীব মানুষ অকারনে প্রান হারাবে। আমি ভেতর থেকে তৈরি হয়ে আসছি।
হনহন করে সুপ্রতীক ভেতরে প্রবেশ করে, ওর পেছনে মালাও ভেতরে প্রবেশ করে যায়। আরেকবার বংশী নিজের লোভী দুই চোখ দিয়ে মালার কামনাময়ী শরীরটার দিকে তাকায়। মালা চোখের আড়ালে চলে গেলে বংশী ইশারা করে রবিকে ওর সাথে বাইরে যেতে বলে। বংশী ও রবি দুজনেই বাইরে আসে।
বংশীঃ তোর এই মুহূর্তে একটাই কাজ, সমস্ত লাঠিয়ালদের বলে দে, জমিদারকে শেষ করার সময় এসে গেছে। শুধু সঠিক সময়ের জন্য আমাদের অপেক্ষা করে যেতে হবে। যুদ্ধের দামামা বেজে গিয়েছে।
[/HIDE]
 
[HIDE]পর্ব ২১- সুড়ঙ্গঃ[/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
বেশকিছুক্ষন বাহিরমহলে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে বংশী। এক রাজকীয় পোশাক ও খড়ম পড়ে গটগট শব্দ করতে করতে এগিয়ে আসে সুপ্রতীক। সুপ্রতীকের ওই বেশ দেখেই বংশী বুঝে যায়, সুপ্রতীক্ আজ সিলিং সাহেবের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। বংশী সুপ্রতীকের দিকে এগিয়ে যায়।
সুপ্রতীকঃ বংশী, তুমি জমিদারবাড়িতেই থাকো। আমি একবার গ্রাম থেকে ঘুরে আসছি। সাথে ২-৩ জনকে নিয়ে যাচ্ছি, চিন্তার কোনও কারন নেই। এই মুহূর্তে জমিদারবাড়িতে কড়া নিরাপত্তার দরকার, আমি নিজেই নিজেকে নিরাপদে রাখতে পারি।
সুপ্রতীকের কথা শুনে বংশী একটু থমকে দাঁড়ায়। পেছন থেকে আতরের সুমিষ্ট গন্ধ ভেসে আসছে, বংশী এই গন্ধ খুব ভালো করে চেনে। ও জানে মালা অন্দরমহলের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে বংশী ভগবানের কাছে প্রার্থনা করে “ভগবান এই চরম সঙ্কটে ও যেন ব্লাউজটা পড়তে ভুলে যায়” বংশী, সুপ্রতীকের দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়
বংশীঃ আপনি নিশ্চিন্তে যান জমিদারবাবু। জমিদারবাড়ির নিরাপত্তায় আমি নিজের প্রান অর্পণ করেছি। আপনি নিশ্চিন্তে যান।
বংশীর মুখে এই কথা শুনে, সুপ্রতীক আবার একবার পেছনে ঘুরে এসে বংশীর মুখোমুখি দাঁড়ায়।
সুপ্রতীকঃ বংশী, রণকৌশল ও যুদ্ধের পারদর্শিতায় তোমার কোনও তুলনা হয়না। জঙ্গলের ওই অন্ধকার জীবন থেকে নিয়ে এসে আমি তোমাকে তোমার সাথীদের সুস্থ জীবন উপহার দিয়েছি। তোমাকে যোগ্য সম্মান দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আজ তোমাদের সব কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার সময় বংশী।
সুপ্রতীক বংশীর দুই হাত শক্ত করে চেপে ধরে। প্রত্তুত্তরে বংশীও মাথা ঝুকিয়ে নিজের আনুগত্য প্রকাশ করে। হন্তদন্ত করে সুপ্রতীক নিজের ঘোড়ার গাড়ি চেপে সাথে আরও ৩ জন লাঠিয়ালকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। বংশীর মন এখন কয়েক হাত পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা মালার দিকে রয়েছে। বংশী আর কোনও চিন্তা না করে সোজা অন্দরমহলে প্রবেশ করে। মালা হয়ত ভাবতেও পারেনি, বংশী এতো দ্রুত অন্দরমহলে প্রবেশ করে যাবে। বংশীর নজর সোজা মালার উন্নত দুই বক্ষের দিকে। বংশী মনেমনে একবার ভগবানকে ধন্যবাদ জানায়। পাতলা ফিনফিনে শাড়িটায় মিঠে নতুন ভোরের আলো পড়ে বুকের কালো বোঁটা গুলো অনেক বেশি সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মালা যে বংশীর এই নজরটা লক্ষ্য করেনা তা নয়, তবে যেহেতু ও সামান্য লাঠিয়াল তাই নিজের মনের ভুল ভেবে উপেক্ষা করে যায়। বংশীর দিকে তাকিয়ে মালা বলে ওঠে
মালাঃ বংশী আমার সাথে ভেতরে চল তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
নিজের কথা শেষ করে মালা হেঁটে ভেতরে যেতে শুরু করে। বংশী মালাকে অনুসরন করে। আজ এতদিন বাদে বারবার করে মালার মনে এই ধারনা বদ্ধমূল হচ্ছে যে বংশীর নজরটা সত্যি ই ওর শরীরের দিকে রয়েছে। জমিদারের এই চরম সংকটময় মুহূর্তে বংশী আসলে এতটাই আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে যে ওর খেয়াল ই নেই, ওর এই শকুনের মত তীব্র কুনজরের ব্যাপারে মালাও ধীরে ধীরে জ্ঞাত হচ্ছেন। চোখের সামনে দুদিকে দোদুল্যমান দুই ভারী নিতম্ব ও প্রায় নগ্ন মসৃণ পিঠ দেখতে পেলে কোন পুরুষ ই বা নিজেকে সংবরন করতে পারে। বারান্দায় এসে মালা বংশীর দিকে ফিরে বলে ওঠে “তুমি ওই দিকটায় গিয়ে দাঁড়াও, আমি একটু ভেতর থেকে আসছি” মালার এই সামান্য ইশারাই বংশীর কাছে এটা বোঝার জন্য যথেষ্ট ছিল যে মালা ওর নজরের ব্যাপারে জ্ঞাত হয়েছে ও ভেতরে গিয়ে একটা ব্লাউজ পড়ে তবেই আসবে। বংশী সোজা এগিয়ে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। বেশ কিছুক্ষন পর একটা সবুজ রঙের ব্লাউজ পড়ে মালা বেরিয়ে আসে ও বংশীর কাছে এসে দাঁড়ায়।
মালাঃ যা যা হয়েছে সব আমায় বল বংশী। কিছু লুকাবেনা আমার কাছে। তার জন্য যা উপঢৌকন দরকার তা আমি তোমায় দেবো।
মালার হৃদয়ের এই ব্যাকুলতা দেখে বংশী বুঝে যায়, মালাকে এবার নিজের ফাঁদে ফেলার ব্যাবস্থা করে ফেলতে হবে। বেশ কিছুক্ষন চিন্তা করে বংশী বলে ওঠে
বংশীঃ রানীমা, সমস্ত ব্যাপারটা খুব জটিল হয়ে গেছে। সিলিং সাহেবের ভাই খুন হয়েছে আর লাশ পাওয়া গেছে জমিদারবাড়ি লাগোয়া মাঠে। অর্থাৎ সমস্ত অভিযোগের তীর এই মুহূর্তে আমাদের দিকে। এদিকে আমরা না তো বিদ্রোহীদের না তো গ্রামের মানুষের কোনও সাহায্য পাবো। এই মুহূর্তে আমাদের সামনে খুব বিপদ। জানিনা কি করে এই অবস্থা থেকে আমরা বেরিয়ে আসব। আমাদের কাছে লড়াই করার মত সেরকম অস্ত্র ও নেই।
বংশীকে কথা শেষ করতে না দিয়েই মালা বলে ওঠে
মালাঃ বংশী, এতো বড় নীচ কাজটা করল কে? কিকরে মানুষ একটা বাচ্চাকে হত্যা করতে পারে?
বংশীঃ রানীমা, আমাদের কাছে এই মুহূর্তে একটাই উপায়, প্রকৃত দোষীকে খুঁজে বার করে সিলিং সাহেবের হাতে তুলে দেওয়া অথবা হত্যার দায় নিজের মাথায় নিয়ে নেওয়া।
বংশীর কথা শেষ হওয়ার আগেই পেছন থেকে কেউ ডেকে ওঠে “রানীমা আমায় ডেকেছেন?” বংশী পিছন ঘুরে দেখে নায়েবমশাই দাঁড়িয়ে আছেন। মালা ইশারা করে বংশীকে ওখান থেকে চলে যেতে বলেন। বংশীও দ্রুত প্রস্থান করে ওখান থেকে।
ওদিকে ঘোড়ার গাড়ি চেপে ততক্ষনে সুপ্রতীক গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করে গেছে। সুপ্রতীক নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছেনা, চারিদিকে শুধুই আগুন আর পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্রের ছাই। একটাও বাড়ি, একটাও ধানের গোলা বেঁচে নেই। চারপাশ থেকে শুধুই কান্না আর হাহাকারের কলরব ভেসে আসছে। গাড়িটা যতই গ্রামের মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে ততই মানুষের অভিশাপ ভেসে আসছে। “অত্যাচারী জমিদার আজ তোর জন্যই আমাদের এই অবস্থা। একদিন তোর অবস্থা আমাদের চেয়েও শোচনীয় হবে” এই কথাগুলো সুপ্রতীক সত্যি ই সহ্য করতে পারছিলনা। কতগুলো গ্রাম যে ও অতিক্রম করে চলে এসেছে তা ওর খেয়াল ও নেই। বহুদুরে দেখা যাচ্ছে প্রচুর মানুষের জটলা ও বেশকিছু লাল পোশাক পরিহিত সৈন্য। সুপ্রতীক বুঝে যায়, সিলিং সাহেব ওখানেই আছে। দ্রুত গাড়িটা চালিয়ে ওইদিকে যাওয়ার নির্দেশ দেয় সুপ্রতীক। চালক প্রচণ্ড জোরে জোরে ঘোড়ার গায়ে চাবুক মারতে শুরু করে। সুপ্রতীকের মনে হচ্ছিল কেউ যেন চাবুক টা ওর ই পিঠে মারছে। জটলার কাছে গিয়ে গাড়িটা দাঁড়ায়, গাড়ি থেকে নেমে আসে সুপ্রতীক। ওর অনুমান সঠিক ছিল, ওখানে দাঁড়িয়েই সিলিং সাহেব নিজের সৈন্যদের আদেশ দিচ্ছেন সমস্ত বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিতে। দ্রুত সুপ্রতীক এগিয়ে যায় সিলিং সাহেবের কাছে। সুপ্রতীক কে দেখে প্রথমে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও প্রচণ্ড জোরে গর্জন করে কিছুটা ইংরেজি ও কিছুটা বাংলা মিশিয়ে সিলিং সাহেব বলে ওঠে
সিলিং সাহেবঃ একটা বাচ্চা ছেলেকে মেরে ফেললে? ও কার কি ক্ষতি করেছিল? তোমার একজন প্রজাও বাচবেনা। যাদের জন্য তুমি আমার ভাইকে হত্যা করেছ তাদের আগে আমি শেষ করব তারপর তোমায়।
সুপ্রতীক জানে এই মুহূর্তে সিলিং সাহেবকে বুঝিয়ে কোনও লাভ নেই। যেভাবে হোক গ্রামের মানুষগুলোকে বাঁচাতে হবে। সুপ্রতীক ও প্রচণ্ড চিৎকার করে বলে ওঠে
সুপ্রতীকঃ আপনার শত্রুতা আমার সাথে, এদের সাথে নয়। ক্ষতি করার হলে আমার করুন, এদের নয়।
সুপ্রতীকের এই ঔদ্ধত্যে সিলিং সাহেব রাগে ফুঁসতে থাকেন। বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর উনি উত্তর দেন
সিলিং সাহেবঃ ঠিক ই বলেছ তুমি। বড়লাটের কাছে খবর গেছে। উনি অনুমতি দিলেই যুদ্ধ হবে। যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও তুমি।
নিজের কথা শেষ করেই সিলিং সাহেব নিজের সমস্ত সৈন্য নিয়ে ওখান থেকে প্রস্থান করেন। সুপ্রতীক বুঝে যায় এইমুহূর্তে ওর সামনে চরম সঙ্কট। যেভাবে হোক এই সংকটময় অবস্থা থেকে ওকে বেরিয়ে আসতে হবে। সুপ্রতীক ও দ্রুত জমিদারবাড়িতে ফেরার জন্য আদেশ দেন। অল্প কিছুসময়ের মধ্যেই সুপ্রতীক জমিদারবাড়িতে ফিরে আসেন।
সুপ্রতীক কে দেখে বংশী সামনে এগিয়ে যায়। সুপ্রতীক শুধু “বংশী ভেতরে এসো, আর নায়েবমশাইকেও ডেকে নাও” বলে ভেতরে প্রবেশ করেন। নায়েবমশাই ভেতরেই ছিলেন, বংশী সুপ্রতীককে অনুসরন করে ভেতরে প্রবেশ করে। ভেতরে বৈঠকখানায় বংশী, নায়েবমশাই ও সুপ্রতীক প্রবেশ করে।
সুপ্রতীকঃ সিলিং সাহেব যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে চলেছেন। আমাদের ও প্রস্তুতি নিতে হবে। হয়ত উনি আজ ই জমিদারবাড়ি আক্রমন করতে পারে। নায়েবমশাই আমি আপনাকে যে বন্দুক ও কার্তুজ কেনার কথা বলেছিলাম তার কি হোল।
নায়েবমশাইঃ জমিদারবাবু আমার তো সবকিছু জোগাড় করতে প্রায় সন্ধে হয়ে যাবে। আজ যদি না পাই তো কাল সকালে অবশ্যই পেয়ে যাবো। কিন্তু জমিদার বাবু, বন্দুকটা ধরবে কে? (বংশীর দিকে ইঙ্গিত করে) এরা তো সব লাঠি ই ধরতে জানে।
সুপ্রতীকঃ আমি জানি বন্দুক চালাতে। ওরা বীর, ওদের শেখাতে সময় লাগবেনা। যদি কোনওরকমে বিদ্রোহী সৈন্যদের সাহায্যটা পেয়ে যেতাম, খুব ভালো হত। বংশী তোমায় এই যুদ্ধে সেনাপতির দায়িত্ব নিতে হবে। তোমার চেয়ে পারদর্শী এব্যাপারে দ্বিতীয় কেউ নেই। তুমি তোমার মতামত আমায় জানাও।
বংশীঃ আমি লড়তে বা মরতে ভয় পাইনা। আর এটা আপনার ভুল ধারনা নায়েবমশাই, আমরাও বন্দুক চালাতে শিখেছি। টাকার অভাবে কখনো বন্দুক ব্যাবহার করতে পারিনি। কিন্তু আমি চিন্তা করছি অন্য একটা ব্যাপার নিয়ে। ছোট মুখে বড় কথা হয়ে যাবে, কিন্তু আপনি যদি অভয় দেন তো আমি তাহলে নিজের কিছু মতামত আপনাকে জানাতে চাই।
সুপ্রতীকঃ তুমি নিশ্চিন্তে তোমার মত ব্যাক্ত কর বংশী। আমি মন দিয়ে শুনছি।
বংশীঃ জমিদারবাবু, যুদ্ধে যাওয়ার আগে আমাদের প্রতিপক্ষের লক্ষ্য কি তা বুঝতে হবে। সিলিং সাহেব আপনাকে তো যেকোনো মুহূর্তেই যুদ্ধে পরাস্ত করতে পারেন। ওরা ব্রিটিশ, পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী জাত, ওরা আমাদেরকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিতে পারে। তাহলে কেন সিলিং সাহেব আমাদের মত দুর্বলদের সাথে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। (বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে) আপনাকে হত্যা করা বা জমিদারী শেষ করা এর কোনটাই ওর উদ্দেশ্য নয়। ও প্রতিশোধ চায়। ওর নিজের ভাই খুন হয়েছে, এবং ওর প্রধান সন্দেহ আপনাকেই। সিলিং সাহেবের যুদ্ধে যাওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য এটাই। উনি চান আপনার ই কোনও প্রিয়জনের সর্বনাশ করতে।
বংশীর কথা সুপ্রতীক প্রচণ্ড মন দিয়ে শোনে। নায়েবমশাইএর দিকে একবার তাকিয়ে সুপ্রতীক বলে ওঠে
সুপ্রতীকঃ তুমি নিঃসঙ্কোচে বলতে পারো বংশী। সিলিং সাহেব কি আসলে মালার কোনও ক্ষতি করতে চায়। কোনও সঙ্কোচ মনে রেখনা, মন খুলে আমায় সব বল।
বংশীঃ রানীমা একাই কেন? গার্গী দিদি, প্রিয়া দিদিও তো আছেন। আপনি সিলিং সাহেবকে ভালো করেই চেনেন। প্রতিশোধ নিতে চাইলে উনি কি করতে চাইবেন তা আপনিও বোঝেন।
সুপ্রতীকঃ হ্যাঁ বংশী আমি তোমার ইঙ্গিত বুঝতে পেরেছি। কিন্তু এর উপায় কি রয়েছে। কি করে আমি আমার ধর্ম পালন করব?
বংশীঃ গার্গী দিদি ও প্রিয়া দিদিকে নিয়ে কোনও চিন্তা নেই। ওরা বহুদিন এখানে ছিলনা, ওদের কেউ চেনেনা। নায়েবমশাইএর বাড়ি ওদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়।
বংশীর কথা শুনে নায়েবমশাই ও চরম স্বস্তিতে মাথা নাড়ান ও বলেন “জমিদারবাবু ওরা আমার বাড়িতে আমার নিজের মেয়ের মতই থাকবে, ভ্রুনাক্ষরেও কেউ জানবেনা যে ওরা আমাদের বাড়িতে আছে”
বংশীঃ মুশকিল একটাই জায়গায়, তা হোল রানীমা। রানীমাকে প্রায় সবাই চেনে। রানীমাকে লুকিয়ে রাখা এতো সহজ নয়। (কিছুক্ষন চুপ করে থেকে) আপনি যদি আমায় বিশ্বাস করেন তো আমায় এই দায়িত্বটা দিন। আমি রানীমাকে এক গোপনস্থানে লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করব। রানীমার কোনও বিপদ হবেনা, সমস্ত দায়িত্ব আমি নিজে নিতে চাই।
সুপ্রতীকঃ তোমার ওপর আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে। কিন্তু তোমাদের রানীমা যা জেদি প্রকৃতির ও কি রাজী হবে। আমি ওকে বোঝানোর চেষ্টা করব। আর একটা কথা বংশী, এটা তুমি জাননা, নায়েবমশাই জানেন। তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছো তার সোজাসুজি একটা তুলসিমঞ্চ আছে। ওর পেছনে ৪-৫ টা বিশাল আকারের পাথর রাখা আছে। যাও গিয়ে পাথরগুলো একবার সরিয়ে দেখো।
অবাক হয়ে বংশী সোজা এগিয়ে যায়, পাথর গুলো একএক করে সরাতে থাকে। সামনের দিকে তাকিয়ে বংশীর চোখ বড় বড় হয়ে যায়। সামনেই একটা বিশাল বড় গর্ত এবং তার ভেতর দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে একটা সুরঙ্গ তৈরি হয়েছে। পেছন থেকে সুপ্রতীক বলে ওঠে
“এই সুরঙ্গটা একদম জঙ্গলের ভেতর অবধি চলে গেছে। এই রাস্তাটা তোমার জেনে রাখা দরকার ছিল”
[/HIDE]
 
[HIDE]পর্ব ২২- সুরঙ্গের অন্তরালেঃ [/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
বংশীঃ আমি একবার এই সুরঙ্গের ব্যাপারে শুনেছিলাম, কিন্তু এটা যে একদম জমিদারবাড়ির ভেতরেই রয়েছে তা আমার জানা ছিলনা। যাই হোক, এই মুহূর্তে আমাদের লোকবলের বিশাল প্রয়োজন। এবং তারসাথে সিপাহীদের সাহায্যর ও খুব দরকার। সিলিং সাহেব আপনাকে আক্রমন করলে সিপাহীরা নিজের থেকেই এগিয়ে আসবে। ওরাও তো একটা যুদ্ধের জন্য অপেক্ষা করে আছে। আপনি কোনও চিন্তা করবেন না, আমি আমার তরফ থেকে সেরা প্রচেষ্টাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।
সুপ্রতীকঃ মুশকিল একটাই জায়গায় তা হোল লোকবল। এই এতো কমসময়ে আমরা কি করে যুদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় লোক জোগাড় করব।
বংশীঃ জমিদারবাবু এই দায়িত্বটাও আপনি আমায় দিতে পারেন। একসময় আমি জঙ্গলের একচ্ছত্র সম্রাট ছিলাম। সেই দরুন আমার দলে এমন অনেক যোদ্ধাই ছিল যারা লড়াই করতে পিছপা হবেনা। আমায় আপনি একটা ঘণ্টা সময় দিন, আমি আবার নিজের সেই পুরনো দলটা ঐক্যবদ্ধ করতে চাই। আপনি অনুমতি দিলে আমি এখনি বেরিয়ে যাবো।
সুপ্রতীক মাথা নেড়ে নিজের সম্মতি ব্যাক্ত করে। বংশীও আর দেরি না করে বেরিয়ে যায়। বংশী বুঝে গেছে আগুন জ্বলার সমস্ত উপকরন ই মজুদ রয়েছে। শুধু একটা মাচিসের খস করে শব্দ হওয়া বাকি আছে। আর বংশী সেই মাচিসের কাঠিটা নীলকুঠিতেই ফেলতে চায়, আগুনটা ওখানেই আগে জ্বলুক আর তারপর সেই আগুনের রোষে সুপ্রতীক জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। বংশী প্রচণ্ড জোরে হাঁটতে হাঁটতে নীলকুঠীর দিকেই এগিয়ে যায়। নীলকুঠিতে তখন টমাসের শবকে সমাধিস্থ করার বন্দবস্ত করা হচ্ছে। সবাই থাকলেও ওই স্থানে সিলিং সাহেব উপস্থিত ছিলনা। বংশী ভেতরে প্রবেশ করে সোজা ঘরের দিকে চলে যায়। দূর থেকে দেখা যাচ্ছিল টেবিলের ওপর মাথা রেখে সিলিং সাহেব বসে আছেন। হয়ত উনি কাঁদছেন। বংশীর কিছুটা ভয় ই করছিল, তবুও সাহস করে বংশী দরজার বাইরে থেকে মৃদুগলায় বলে ওঠে “সিলিং সাহেব আমি বংশী” টেবিল থেকে মাথাটা উঠিয়ে সিলিং সাহেব বংশীর দিকে তাকান। সিলিং সাহেব যে ওকে দেখে এরকম রুদ্রমূর্তি ধারন করবে তা ও বুঝতেও পারেনি। প্রায় ঝড়ের বেগে ছুটে এসে সিলিং সাহেব বংশীর জামাটা ধরে একটানে ওকে নিচে ফেলে দেয়। বংশী কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু সেই সুযোগ ও পায়না, বংশীর টুঁটিটা প্রচণ্ড জোরে টিপে ধরে সিলিং সাহেব বলে ওঠেন
সিলিং সাহেবঃ বল শুয়ারের বাচ্চা, কে মেরেছে আমার ভাইকে। বল নয়ত তোকে এখানেই মেরে ফেলব।
কোনওরকমে বংশী নিজেকে সিলিং সাহেবের কবল থেকে মুক্ত করে বলে ওঠে
বংশীঃ আপনি আমায় সন্দেহ করছেন সাহেব, এতদিন ধরে আমি আপনাকে কত ভেতরের কথা জানিয়ে এলাম। আজ ও তো আমি আপনাকে সবকথা খুলে বলতেই এখানে এসেছি। আমার হাতে বেশি সময় নেই। কেউ যদি জানতে পারে আমি নীলকুঠিতে এসেছি তাহলে আর আমার শরীরে প্রান থাকবে না। আপনি আমায় ছারলে আমি সব খুলে বলব আপনাকে।
বংশীর কথায় সিলিং সাহেবের মেজাজ একটু পরিবর্তন হয়। ওকে ছেড়ে দিয়ে উনি আবার চেয়ারের ওপর গিয়ে বসেন।
বংশীঃ জমিদারবাড়ির ই একদাসি টমাসকে একটা সোনার মুদ্রা দেখিয়ে বলেছিল এটা গুপ্তধন। সেই গুপ্তধনের লোভেই টমাস কাল রাতে ওখানে গেছিল। জমিদারবাড়ির ই কোনও এক লাঠিয়াল এরপর এই ঘটনাটা ঘটিয়েছে। সমস্ত পরিকল্পনাই সুপ্রতীকের। এইভাবে ও প্রজাদের কাছে নিজের সম্মানটা আবার ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করেছে। আমি কিছুই জানতাম না, আমি তো কাল গ্রামে ছিলাম। আমি জানলে কি আর এতো বড় সর্বনাশ হতে দিতাম। (দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে একটা মেকি কান্নার চেষ্টা করে বংশী)
সিলিং সাহেবঃ (প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে) আমি জমিদারের মাথা শরীর থেকে আলাদা করে দেবো। ওই জানোয়ারটাকে আমি সবার সামনে হত্যা করব।
বংশীঃ সাহেব, আপনার সামনে একটা সামান্য জমিদার কি আর জিনিস। ওকে হত্যা করলেই কি আপনার সব শোধ মিটে যাবে। আপনার জন্য দারুন একটা খাবার আছে। আজ্ঞা করলে বলব আপনাকে। (চোখের ইশারায় কিছুটা অশ্লীলতা প্রকাশ করে)
সিলিং সাহেব নিজেকে শান্ত করে বংশীর দিকে তাকায়।
বংশীঃ কাল বিকেলে জমিদারের দুই বোন এখানে এসেছে। প্রিয়া ও গার্গী, যমজ দুই বোন। ওদের দেখলে আপনি বলতেই পারবেন না যে ওরা এদেশের মেয়ে। মনে হবে আপনাদের ই জাতের কোনও মেম সাহেব বুঝি। আপনি কি চান তা তো আমি বুঝি, তাই বলছিলাম নীলকুঠিতে ওই দুই অপ্সরাকে নিয়ে আসুন। সমস্ত রাগ জ্বালা জুড়িয়ে যাবে। পরিবারের সম্মানে জমিদার ও কখনো প্রকাশ্যে বলতে পারবেনা যে ওর দুই বোন আপনার কব্জায় রয়েছে।
সিলিং সাহেবের মুখে কামুক শয়তানি হাসি ফুটে ওঠে। বংশীর ও এটা বুঝতে আর কোনও অসুবিধা থাকেনা যে ওর শেষ পরিকল্পনাটা ১০০ শতাংশ সফল। বংশীও কিছুটা বাঁকা হাসি হেঁসে বলে ওঠে
বংশীঃ আমি ও আমার লাঠিয়ালরা শুধুই একটা লড়াই করার অভিনয় করব। আপনি জমিদারবাড়ি আক্রমন করুন, এবং দুই অপ্সরাকে নীলকুঠিতে এনে ভোগ করুন। আমার তাতে কোনও মাথাব্যাথা নেই। এবার আমায় যেতে আজ্ঞা করুন।
সিলিং সাহেবের মাথা নাড়ার ভঙ্গী দেখে বংশী উঠে পড়ে ও প্রস্থান করার জন্য দরজার দিকে এগিয়ে যায়। পেছন থেকে সিলিং সাহেব বলে ওঠে
সিলিং সাহেবঃ বংশী, টমাসকে খুনটা কে করেছে?
সিলিং সাহেবের কথা শুনে বংশী কিছুটা চমকেই যায়। বংশী পেছন ঘুরে দেখে একবার। সিলিং সাহেব ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
সিলিং সাহেবঃ তুমি যে এতকিছু করছ, মানে জমিদারের সাথে বেইমানি করে আমার অনুগত হচ্ছ, এতে তোমার কি লাভ?
সিলিং সাহেবের প্রশ্নগুলো বংশীকে একদম ভেতর থেকে নাড়িয়ে দেয়। কোনরকমে নিজেকে শান্ত করে বংশী বলে ওঠে
বংশীঃ আজ্ঞে, আমি তো আপনাকে বহুবার বলেছি যে জমিদারির অত্যাচার আমরা অনেকেই ভুলতে পারিনি। তাইতো ডাকাত হওয়া, তারপর আপনার সাথে সাক্ষাত হওয়া। আপনার ই আদেশে তো আমি নিজেকে জমিদারবাড়ির অনুগত প্রমান করেছি।
সিলিং সাহেব প্রচণ্ড জোরে হা হা করে হেঁসে ওঠেন আর ইশারা করে বংশীকে চলে যেতে নির্দেশ দেন। বংশীর সেই আত্মবিশ্বাস কোথায় যেন হারিয়ে যায়। বারবার করে ভাবতে থাকে ওর পরিকল্পনায় কোনও ত্রুটি রয়ে গেছে কিনা। টমাসকে যে বংশী নিজের হাতে হত্যা করেছে এব্যাপারে তো কেউ কিছুই জানেনা। সিলিং সাহেবের সন্দেহের তীর যে বংশীর ও দিকে রয়েছে তা বংশীও খুব ভালো করে বুঝেছে। বহুকষ্টে বংশী সব ভুলে গ্রামের দিকে এগিয়ে যায়। ওর ডাকাত দলের বহু সাথী রয়েছে যারা বংশীর এক কথায় লড়াই করতে রাজি হয়ে যাবে। তাদের প্রায় সকলেই এখন ডাকাত দল ছেড়ে সুখি সংসার জীবন পালন করছে। প্রায় আধঘণ্টা ধরে বংশী নিজের সমস্ত পুরনো সাথীকে একত্রিত করে তোলে। ওদের নিজের পরিকল্পনা ও জমিদারের বিরুদ্ধে কিভাবে প্রতিশোধ নিতে হবে সব বুঝিয়ে বলে। বংশী সবাইকে নিয়ে আবার জমিদারবাড়ির দিকে চলতে শুরু করে।
অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই বংশী নিজের সাথীদের নিয়ে জমিদারবাড়িতে প্রবেশ করে। বাইরে তখন সার দিয়ে লাঠিয়ালরা দাঁড়িয়ে ছিল। সবাইকে ওখানে রেখেই বংশী অন্দরমহলে প্রবেশ করে। অন্দরমহলে সুপ্রতীক, নায়েবমশাই ও মালা কোনও ব্যাপারে গভীরভাবে আলোচনা করে যাচ্ছিল। দূর থেকে বংশীর মনে হয় সুপ্রতীক ও নায়েবমশাই মালাকে কিছু বোঝানোর জন্য আকুতি মিনতি করে চলেছেন। মালা ছলছল চোখে মাথা নাড়িয়ে না বলে চলেছে। বংশী ধীরে ধীরে ওদের কাছে এগিয়ে যায়।
সুপ্রতীকঃ এই তো বংশী এসে গেছে। বংশী, কতজন লোক জোগাড় করতে পারলে?
বংশীঃ আজ্ঞে, জমিদারবাবু তা শ দেড়েক লোক হবে। ওরা একসময় আমার সাথী ছিল, ওদের আপনি চোখ বন্ধ করে ভরসা করতে পারেন।
সুপ্রতীকঃ (বংশীর দিকে চোখ টিপে, মিথ্যে বলার অভিনয় করে) দেখো বংশী, যুদ্ধ কোনমতেই হবেনা। যতই হোক দেশে একটা আইন কানুন রয়েছে। এইসময় সিপাহীদের বিদ্রোহে ইংরেজরা যথেষ্ট বিপদে পড়েছে। তাই ওরা কোনমতেই যুদ্ধ করতে চাইবেনা। তবুও আমি চাইনা, এই বিপদের মধ্যে বাড়ির মেয়েদের রাখতে। গার্গী আর প্রিয়াকে আমি নায়েবমশাই এর বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। আচ্ছা বংশী, তুমি আমায় একবার বলেছিলে না যে জঙ্গলের মধ্যে তোমার কিছু কুঠির রয়েছে। আমি সেখানেই সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে মালাকে রাখতে চাই। এদিকটা একটু শান্ত হয়ে গেলে আবার ওকে নিয়ে আসব। তুমি সাথে আরও ২-৩ জনকে নিয়ে ওর দেখভাল করবে। দেখো মালার সামান্য কোনও অসুবিধা হলে আমি কিন্তু তোমার গর্দান কেটে নেবো।
সুপ্রতীকের কথার জবাবে বংশী কিছু হয়ত বলতে যাচ্ছিল কিন্তু মালা বাধা দেয়। মালা বলে ওঠে
মালাঃ আমি আপনাকে বিপদে ফেলে কোথাও যাবনা। আপনি আমার প্রান নিয়ে নিন, তাও আমি যাবনা।
সুপ্রতীক ও নায়েবমশাই এর মুখের হতাশা দেখে বংশী বুঝতে পারে মালাকে বোঝানোর কাজটা অনেকক্ষণ ধরেই চলে আসছে। মালার দিকে তাকিয়ে বংশী বলে ওঠে
বংশীঃ রানিমা, আপনি এখানে থাকুন। কিন্তু যদি যুদ্ধ শুরু হয় তখন সত্যি ই আপনার জমিদারবাড়ি ত্যাগ করা উচিত। আপনি একটু বুঝে দেখুন, আমরা জমিদারবাবুর সাথে সাথে যদি আপনাকে নিয়েও চিন্তা করি তাহলে কাজটা আমাদের জন্য প্রচণ্ড কঠিন হয়ে যাবে। আপনি এখন থাকুন আমাদের কোনও অসুবিধা নেই। দয়া করে আমার কথাগুলো একটু বুঝুন। আপনি কি মনে করেন আমরা জমিদারবাবুকে যুদ্ধ করতে দেবো। যদি বুঝি আমরা কোনমতেই পেরে উঠছি না তাহলে আপনার মত জমিদারবাবুকেও সুরঙ্গপথ দিয়ে জঙ্গলে পাঠিয়ে দেবো। আমাদের শরীরে প্রান থাকতে উনি নিরাপদ থাকবেন। আমি আপনাকে কথা দিলাম রানিমা।
সুপ্রতীক ও নায়েবমশাই দুজনেই অবাক হয়ে গেলেন, কারন এতক্ষন ধরে যে অসাধ্যসাধনের চেষ্টা ওনারা অক্রে চলেছেন, বংশী সে ব্যাপারে অনেকটাই সফল। বংশীর কথা শুনে মালা একটু শান্ত হয় এবং ভেতরে প্রবেশ করে। মালাকে ভেতরে যেতে দেখে সুপ্রতীক একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ে।
সুপ্রতীকঃ চল বংশী, বৈঠকখানায় বসা যাক। আমাদের তৈরি হতে হবে।
বংশী, নায়েবমশাই ও সুপ্রতীক প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে বৈঠকখানায় বসে ইংরেজদের সাথে যুদ্ধ করার ও সিপাহিদের মনোযোগ আকর্ষণ করার পরিকল্পনা করেন। হথাত করে বাইরে থেকে গুলি চলার একটা আওয়াজ ভেসে আসে। ওনারা ৩ জন ই সজাগ হয়ে বৈঠকখানা থেকে বাইরে বেরিয়ে আসেন। বাইরে ততক্ষনে মালাও বেরিয়ে চলে এসেছে। সুপ্রতীক মালাকে দেখে বলে ওঠে
সুপ্রতীকঃ মালা তুমি দয়া করে বংশীর সাথে যাও। আমার কোনও বিপদ হবেনা। সেরকম কোনও বিপদের আঁচ পেলে আমিও সুরঙ্গ পথে তোমার কাছে চলে আসব। তুমি এখানে থাকলে কাজটা আরও কঠিন হয়ে যাবে।
মালা কিছু না বুঝে চুপ করে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকে। বংশী সামনে এগিয়ে আসে, মালার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে
বংশীঃ রানীমা, আমাদের বিশ্বাস করুন, জমিদার বাবুর কোনও বিপদ হবেনা। সামান্য কোনও বিপদের আঁচ পেলে আমি নিজে সুরঙ্গ পথে জমিদার বাবুকে আপনার কাছে নিয়ে আসব। কিন্তু আপনি থাকলে আমাদের ওনাকে রক্ষা করা অনেক কঠিন হয়ে যাবে।
সুপ্রতীক ও বংশীকে সমর্থন করে বলে ওঠে “আমার হুকুম মালা তুমি এখান থেকে চলে যাবে” কিছুটা অসহায়ভাবে মালা একবার সুপ্রতীকের দিকে তাকায়। মালার হৃদয়ের এই যন্ত্রণা, সুপ্রতীকের ও নজর এড়িয়ে যায়নি। স্বামীর আদেশ মত মালা বংশীকে অনুসরন করে। সুপ্রতীক ও নায়েবমশাই পাথরগুলো সরিয়ে দিয়ে ওদের ভেতরে যেতে সাহায্য করে। ওরা ভেতরে প্রবেশ করলে পাথরগুলো আবার সস্থানে রেখে দেওয়া হয়। শেষবারের মত মালা তাকায় নিজের প্রিয়তমর দিকে। সুপ্রতীক ও করুনদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মালার দিকে। সুরঙ্গের অন্ধকারে হারিয়ে যায় মালা। সুপ্রতীকের হৃদয় কেঁদে ওঠে। ও জানেনা সত্যি ও আর নিজের মনের সখাকে কোনোদিন দেখতে পাবে কিনা।
[/HIDE]
 
[HIDE]পর্ব ২৩- মালার বনবাসঃ [/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
সুরঙ্গের ভেতরে নেমে মালা ঠিক ততক্ষন ই ওপরের দিকে তাকিয়ে থাকে যতক্ষণ ওপরের সামান্য একটা আলোর বিন্দুও ওর চোখে পড়ছিল। নায়েবমশাই ও সুপ্রতীক সুরঙ্গের মুখটায় ভারী পাথরগুলো চাপা দেওয়া অবধি ওপরের দিকে তাকিয়ে থাকে মালা। হথাত চারপাশে ঘন অন্ধকার নেমে আসে, মালার ভীষণ ভয় লাগতে শুরু করে। সামনের দিকে সামান্য কিছু দেখা যাচ্ছিলোনা। ভয়ে মালা বংশীর হাতটা চেপে ধরে। মালাকে একা পাওয়ার আনন্দে যে দাবানল বংশীর শরীরে জ্বলেছিল মালার কোমল স্পর্শে তা চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। বংশী নিজের ডান হাতটা দিয়ে মালার কাঁধটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। দুজনেই ভেতরের দিকে খুব সন্তর্পণে যেতে শুরু করে। একটার পর একটা সিঁড়ি বেয়ে ওরা যে কতটা নিচে নেমে গেছে তা নিজেরাও বুঝতে পারেনি। হথাত ই সিঁড়ি অদৃশ্য হয়ে যায় তার বদলে আসে মসৃণ সমতল। যদিও অন্ধকারের বিভীষিকা ওদের পিছু ছারেনা। অস্ফুট স্বরে মালা বলে ওঠে “আমার খুব ভয় করছে বংশী” নিজের মুখটা বংশী, মালার কানের কাছে নিয়ে যায়। বংশীর নাকে মালার শরীরের সুগন্ধি আতরের গন্ধ ভনভন করে ভেসে আসে। আর সেই সুগন্ধে পাগল হয়ে গিয়ে বংশী ততধিক অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে “ভয়ের কি আছে, আমি আছি তো” কোনও উত্তর দেয়না মালা। ওরা দুজনেই সোজা হাঁটতে থাকে। বেশ কিছুটা যাওয়ার পর দূর থেকে অস্পষ্ট আলোর ছটা ভেসে আসে। ওরা দুজনেই বুঝে যায় ওরা সুরঙ্গের শেষ অংশে এসে উপস্থিত হয়েছে। ধীরে ধীরে এই আলোর ছটা স্পষ্ট আলোকে পরিনত হয়। মালা ও বংশী দুজনেই দেখতে পায় সামনে ধাপে ধাপে সিঁড়ি ওপরের দিকে উঠে গেছে। ওরা সিঁড়ি দিয়ে ওপরের দিকে উঠতে থাকে। বেশ কিছুটা ওঠার পর বংশী লক্ষ্য করে ওদের ঠিক মাথার ই ওপর নারকেল গাছের শুকনো পাতার একটা ঢিবি। ও বুঝতে পারে, জঙ্গলের মধ্যে যে জায়গায় সুরঙ্গের মুখ রয়েছে তা এইভাবে ঢেকে রাখার ব্যাবস্থা করা হয়েছে।
আশ্চর্য হয়ে যায় বংশী। এই জঙ্গল প্রায় ৫ বছর ধরে ওর রাজত্ব ছিল। অথচ ওর ই রাজত্বের মধ্যে যে এরকম একটা সুরঙ্গ ছিল তা ও কোনোদিন ই জানত না। ওরা দুজনেই সুরঙ্গটার ঠিক মুখে এসে ওঠে। বংশী দুহাত দিয়ে মুখ থেকে পাতার ঢিবিটা ঠেলে সরিয়ে দেয়। সূর্যের তীব্র রোদের তেজে মালা এক হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢাকা দেয়। বংশী আগে ওপরে ওঠে। তারপর নিজের একটা হাত দিয়ে মালার হাত ও আরেক হাত দিয়ে মালার কোমরটা জড়িয়ে ধরে মালাকে টেনে ওপরে তোলে। ওপরে উঠে মালাও একদম আশ্চর্য হয়ে যায়। ওরা ঠিক জঙ্গলের মাঝে এসে পৌঁছেছে, চারপাশে শুধু শাল আর সেগুনের বিশাল বিশাল গাছের সমারোহ। বংশী চারপাশটা একবার ভালো করে দেখে নেয়। এই জঙ্গলকে ও নিজের হাতের তেলোর মত করে চেনে। ও বুঝতে পারে লালডোবার দীঘি থেকে ও খুব একটা দূরে নেই। এই লালডোবার দীঘি ই ছিল একসময়ের ঠাকুর ডাকাতের আস্তানা। গ্রামের গরীব মানুষ জমিদারের ব্যাপারে নিজেদের সমস্ত অভিযোগ নিয়ে এখানেই আসত, মৃত্যুঞ্জয়ের কোনও অনুগামী তাদের ঠাকুর ডাকাতের কাছে নিয়ে যেত। সেই ২০০ বছর আগে থেকেই এই অঞ্চলে মানুষ কোনও বিপদে না পড়লে পা মাড়াত না। হয়ত সেই কারনেই এই লালডোবা দীঘির আস্তানায় কোনও বন্য জানোয়ার ও আসতে ভয় পায়।
বংশী খেয়াল করে আতঙ্কে মালা এখনো ওর হাতটা শক্ত করে ধরে আছে আর ভয়ের সাথে চারপাশে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। বংশী মালার দিকে তাকায়, মালার বুক থেকে শারিটা অনেকটাই সরে গেছে, নীল ব্লাউজটার হুকগুলোকে হার মানিয়ে সাদা মসৃণ স্তনদুটো অনেকটাই বাইরে বেরিয়ে এসেছে। বংশীর নাক দিয়ে গরম লার্ভার মত উত্তপ্ত নিশ্বাস বাইরে বেরতে লাগলো। ওর হৃদয় একটাই কথা বলছে, এই মুহূর্তে বুনো হাতির মত এই জঙ্গলে মালাকে তাড়া করতে ও খানিকটা লুকোচুরি খেলার ছলে ওর শরীর থেকে একের পর এক পোশাক খুলে নিতে। কিন্তু না, এখনো একটা কাজ বাকি, সিলিং সাহেবকে গার্গী ও প্রিয়ার সন্ধান দিয়ে ওর থেকে জমিদারিটা হাতিয়ে নেওয়া। তারপর বনের এই রাজপ্রাসাদ থেকে মালাকে ও একদম শহুরে রাজপ্রাসাদে নিয়ে গিয়ে তুলবে। মালাকে ছাড়া জমিদারী ও জমিদারী ছাড়া মালা সম্পূর্ণ অর্থহীন। এতক্ষন অবধি যা হয়েছে তা সব ই বংশীর ইচ্ছে মতই হয়েছে। কথায় আছে যার শেষ ভালো তার সব ভালো। ইচ্ছে না থাকলেও বংশী মালার ওপর থেকে চোখ সরিয়ে নেয়। মালা চারপাশে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। ওরা দুজন সোজা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। মালার হাত তখনও বংশীর হাতের মুঠোয়। এতক্ষন দুজনের মুখ দিয়েই কোনও কথা বেরয়নি। এতক্ষন পর মালা কিছুটা ভয়ার্তকণ্ঠে বলে ওঠে
মালাঃ বংশী, আমার একা এখানে থাকতে ভয় করবে। এই জঙ্গলে আমি একা কি করে থাকবো বংশী?
বংশীঃ আপনাকে আমি একা রাখবনা। আমি থাকবো আপনার সাথে। আমি থাকতে আপনার কোনও বিপদ ই হবেনা। আপনি আমার ওপর ভরসা রাখুন।
ওরা দুজনেই সামনের দিকে হাঁটতে থাকে। আবার মালা বলে ওঠে
মালাঃ না জানি উনি কেমন আছেন, কি করছেন। আসার আগে জমিদারবাড়িতে গুলির শব্দ পেয়েছিলাম। ওনার কোনও বিপদ হয়নি তো বংশী।
বংশীঃ আমার সাথীরা থাকতে ওনার কোনও বিপদ হবেনা রানিমা। যদি ওরা বুঝতে পারে, জমিদারবাবুর কোনও বিপদ হয়েছে তাহলে ওনাকে সুরঙ্গ দিয়ে এখানে পাঠিয়ে দেবে।
মালাঃ তাহলে চলনা আমরা সুরঙ্গের সামনেই গিয়ে দাড়াই। উনি তো জঙ্গলে এসে পথ হারিয়ে ফেলবেন।
মালার এই ক্রমাগত আকুতি মিনতিতে বংশী কিছুটা বিরক্তি বোধ করে। বংশী ওখানে দাঁড়িয়ে পড়ে। মালার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে
বংশীঃ আমার ওপর বিশ্বাস রাখুন রানিমা, আগে আমি আপনাকে নিরাপদ আশ্রয়ে রেখে আসি তারপর জমিদার বাবুকে রক্ষা করতে যাবো।
মালা আর কোনও কথা বলেনা। বংশী ও মালা দুজনেই নিশ্চুপ হয়ে সোজা হাঁটতে থাকে। বেশ কিছুটা যাওয়ার পর দেখা যায়, জঙ্গলের মধ্যে একটা ফাঁকা জায়গা। বংশী অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে “রানীমা এই দেখুন এটা আমার রাজ্য, জীবনের অনেকগুলো বছর আমি এখানে কাটিয়েছি” মালা সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে। চোখের সামনে যেন একটা স্বপ্ন ভেসে উঠেছে। এতক্ষন জঙ্গলের যে বিভীষিকাকে মালা ভয় পাচ্ছিল এখন যেন ও তার ই প্রেমে পড়ে গিয়েছে। সামনে একটা বৃত্তাকার অঞ্চল, চারপাশ দিয়ে কাঁটাগাছের মোটা বেড়া। এই বেড়ার প্রশস্তি এতো বেশি যে একে অতিক্রম করে একটা সাপ ও ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেনা। ভেতরেই একটা দীঘি দেখা যাচ্ছে, দুধের মত পরিস্কার ও স্বচ্ছ তার জল। আর দিঘিটাকে বৃত্তাকারে ঘিরে সার দিয়ে একেকটা কুটীর। ভেতরে একটা সামান্য পাতাও পড়ে নেই। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মালা। মালার মনে এই মুহূর্তে ঠিক কি কি প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে তা বংশী বোঝে। মালার মনের দ্বিধাদ্বন্দ্বগুলোকে পরিস্কার করার জন্য বংশী বলে ওঠে
বংশীঃ রানিমা, একসময় এই ছিল আমার ঘর। আপনি চোখের সামনে যা দেখছেন তা সব ই আমার নিজের হাতে তৈরি। আজ সভ্যসমাজে চলে আসলেও আমি আমার পুরনো আস্তানাকে ভুলতে পারিনি। তাই আমার ই নির্দেশে আমার ২-৩ জন সাথী রোজ সকালে এসে এই স্থানটা পরিস্কার করে, দেখভাল করে। আপনার পছন্দ হয়েছে রানিমা?
মালাঃ অসাধারন বংশী, জঙ্গলের মধ্যে এতো সুন্দর এক জায়গা যে থাকতে পারে তা আমি ভ্রুনাক্ষরেও ভাবতে পারিনি। ইস, যদি তুমি আগে আমায় বলতে তাহলে আমি ওনার সাথে এখানে একবার ঘুরতে আসতাম।
হথাত ই মালার মুখটা শুকিয়ে যায়। মালার যে এই মুহূর্তে আবার সুপ্রতীকের কথা মনে পড়ে গেছে তা বংশীও বুঝতে পারে। বংশীর বুকের মধ্যে আগুন জ্বলতে থাকে। মনে মনে বলে ওঠে বংশী “এই সুপ্রতীক আমার পথের কাঁটা। আমার রাজপ্রাসদে রানীকে আনলাম, কিন্তু তাও কোথাও না কোথাও ও আমার পিছু ছাড়ল না”
মালাঃ বংশী, আমার খুব চিন্তা হচ্ছে, ওনার জন্য। তুমি তাড়াতাড়ি আমাকে এখানে রেখে ওনার কাছে যাও। যদি সামান্য কোনও বিপদের গন্ধ পাও তাহলে ওনাকে সুরঙ্গ দিয়ে সোজা এখানেই নিয়ে চলে আসবে।
বংশীর একদম ইচ্ছে করছিল না, মালাকে এখানে ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে। অগত্যা ওকে তাই করতে হোল। বাঁশের তৈরি দরজা ঠেলে ওরা ভেতরে এগিয়ে গেলো। ভেতরে ঢুকে মালা বুঝতে পারলো দীঘির চারপাশে মোট কুটিরের সংখ্যা ৭। বংশী তারমধ্যে একটি কুটিরের দরজা ঠেলে খুলে দিল। মালা বুঝল ওর বনবাস জীবনে আশ্রয় এই ছোট্ট কুটিরটি।
বংশীঃ রানিমা, এখানে একটা পিঁপড়ের ও সাহস হবেনা আপনার সামান্য কোনও ক্ষতি করার। মনে রাখবেন আমি এই জঙ্গলের প্রভু, মালিক। এখানে সব কিছু...
মালা, বংশীকে ওর কথা শেষ করতে দিলনা, মালা বলে উঠল
মালাঃ আমাকে নিয়ে চিন্তা করোনা বংশী, আমি ভালোই থাকবো এখানে। তুমি এখন ওনার পাশে গিয়ে দাঁড়াও। আমার মন বলছে ওনার খুব বিপদ। তুমি যেভাবে হোক ওনাকে রক্ষা করে এখানে নিয়ে আসো।
বংশী শুধু মাথা নাড়িয়ে মালাকে আশ্বস্ত করে, ও ওখান থেকে বেরিয়ে যায়। বাইরে বেরিয়ে একবার পেছনঘুরে দেখে বংশী। মালা উদাস দৃষ্টিতে ওর ই দিকে তাকিয়ে আছে। কতকিছু ভেবে এসেছিল বংশী। একসাথে এই দীঘিতে দুজনমিলে স্নান করবে, তারপর জঙ্গলের মধ্যে দৌড়াতে দৌড়াতে মালার শরীর থেকে ভিজে কাপড়গুলো এক এক করে টেনে খুলে নেবে। ওদের মিলনের শব্দে বনের সমস্ত পশুপাখি জেগে উঠবে। সবাইকে সাক্ষী রেখে বংশী মালাকে নিজের পৌরুষ উপহার দেবে। বংশীর ও মনটা ভেঙে গেলো, ও নিজেও জানেনা, কিছুক্ষন পর যখন ও জমিদারবাড়ি থেকে ফিরে আসবে, কি করে মালাকে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করবে। ওর মন কিছুতেই চাইছিল না নিজের রানীকে এভাবে রাজপ্রাসাদে একা ফেলে দিয়ে বাইরে চলে যেতে। অগত্যা ওকে যেতেই হোল। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে দ্রুত যেতে যেতে বংশী প্রায় গ্রামের কাছাকাছি এসে গেলো।
গ্রামের মধ্যে তখন চারপাশে কিছু একটা ব্যাপার নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। বংশীকে দেখেই সবাই কিরকম চুপ করে যাচ্ছে। বংশী বুঝতে পারে কিছু একটা অঘটন ঘটে গেছে এর মধ্যে। বংশী দ্রুত সোজা এগিয়ে যেতে থাকে। কখন যে ও ২ খানা গ্রাম পার করে ফেলেছে তা ওর খেয়াল ও নেই। দূর থেকে লক্ষ্য করে একটা ঘোড়ার গাড়ি ছুটে আসছে। এই গাড়ি বংশী চেনে। বংশী জানে এটা জমিদারবাড়ির ই গাড়ি। বেশ কিছুক্ষন পর বংশী বুঝতে পারে যে গাড়িতে সুপ্রতীক নয় নায়েবমশাই বসে আছে। একদম বংশীর সামনে এসে গাড়িটা দাঁড়ায়। নায়েবমশাই হন্তদন্ত করে গাড়ি থেকে নিচে নেমে আসেন।
নায়েবমশাইঃ বংশী সর্বনাশ হয়ে গেছে। সিলিং সাহেব, জমিদার বাবুকে তুলে নিয়ে গেছেন। উনি জমিদার বাবুকে টমাসের খুনের দায়ে আদালতে তুলবেন। ওনার নাকি ফাঁসি হবে। আমরা কিছুই করতে পারলাম না বংশী। সিলিং সাহেব প্রথমে ভেতরে ঢুকে তন্নতন্ন করে খুঁজে দেখেন। বারবার করে বলছিলেন বাড়ির মহিলারা কোথায়। ভাগ্যিস আমরা তোমার উপদেশ মেনেছিলাম। নয়ত আরও বড় একটা অনটন হয়ে যেত। কোনও মেয়েকে না পেয়ে উনি জমিদারবাবুকেই উঠিয়ে নিয়ে গেলেন। আমি যাচ্ছি লক্ষিকান্তপুরে, বিদ্রোহীদের সাথে দেখা করতে। ওদের হাতে পায়ে ধরে বোঝাবো, ওরা যুদ্ধ করতে রাজি হলেই উনি রক্ষা পাবেন।
প্রায় এক নিঃশ্বাসে নায়েবমশাই নিজের কথা শেষ করলেন। বংশীর সমস্ত শরীরে মাদকতা ছেয়ে গেছে। যদিও মালার ওই বন্য শরীরটা ভোগ করতে এই এতটুকু মাদকীয়তা যথেষ্ট নয়। এই মুহূর্তে বংশীর দরকার এক হাঁড়ী মহুয়া। কোনরকমে নায়েব মশাই এর দিকে বংশী বলে ওঠে
বংশীঃ নায়েবমশাই, আপনি সিপাহীদের সাথে কথা বলুন, আমিও আমার লাঠিয়ালদের তৈরি করি। এদিকে রানিমার ও নিরাপত্তা দিতে হবে। আপনি ফিরে আসুন, তারপর আপনার সাথে আবার কথা হবে।
নায়েবমশাই আর সময় নষ্ট না করে সোজা গাড়িতে চেপে বেরিয়ে যান। এদিকে বংশীও জানে, জমিদারবাড়িতে গিয়ে সময় নষ্ট করে কোনও লাভ নেই। ওর চোখের সামনে ভেসে ওঠে মালার নীল ব্লাউজ চিরে বেরিয়ে আসা সাদা মসৃণ স্তন ও কোমল সুস্বাদু নাভী। বংশীর শরীরের আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়ে যায়। এই মুহূর্তে দরকার একটু মহুয়া, প্রায় ৫ বছর নিজেকে এই মহুয়ার থেকে ও দূরে সরিয়ে রেখেছিল। বংশী জানে গ্রামের কোন জায়গায় মহুয়া পাওয়া যায়। বংশী উত্তেজনায় দৌড়াতে শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যে পৌঁছে যায় একটা মাটির বাড়ির সামনে। জামার মধ্যে থেকে ২ কড়ি বার করে ছুঁড়ে দেয়, সামনে বসে থাকা লোকটার দিকে। মুহূর্তের মধ্যে ওর হাতের সামনে চলে আসে মহুয়া ভর্তি একটা হাঁড়ী। দুচোখ বন্ধ করে বংশী এক চুমুকে গোগ্রাসে পুরো হাড়িটা শেষ করে দেয়। পরম তৃপ্তিতে চোখ খুলতেই সামনে দেখে। সামনে তখন একটাই জিনিস, পাতলা ফিনফিনে একটা সাড়ি পড়ে অর্ধনগ্ন মালা। গ্রামের ভেতর দিয়ে সাপের মতন কিলবিল করতে করতে এঁকে বেঁকে সামনে এগিয়ে চলে বংশী। ওর রাজপ্রাসাদে যে ওর প্রিয়তমা ওর জন্য অপেক্ষা করে আছে।
[/HIDE]
 
[HIDE][/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
পর্ব ২৪- উল্টোপুরাণঃ

মহুয়া পানের অভ্যাস যে বহুদিন চলে গেছে তা বংশী প্রতি পদে পদে অনুভব করতে থাকে। বংশী নিজেও বোঝে যে ওর চলন মোটেও সরলরেখায় হচ্ছেনা। কোনরকমে ৩ টে গ্রাম এঁকে বেঁকে পার করে বংশী জঙ্গলে প্রবেশ করে। এই জঙ্গল ওর, ও এখানের একচ্ছত্র রাজা। চারপাশে একটা খসখস করে শব্দ ভেসে আসছে। বংশী জানে ওর ভয়াল রূপটা এই জঙ্গলের প্রতিটি হিংস্র জানোয়ার ই চেনে। এই জঙ্গলের সবচেয়ে হিংস্র জানোয়ার ও নিজেই, এবং এই মুহূর্তে ও নিজের শিকারের খোঁজে চলেছে। চোখের সামনে একটাই লক্ষ্য, একটাই ছবি নীল ব্লাউজ আর হলুদ সাড়ি পরিহিত মালা। কিছুক্ষন আগেই ব্লাউজের ফাঁক দিয়ে সাদা নিটোল স্তনজোড়া ও লক্ষ্য করেছিল, ওর শরীরে যে আগুন জ্বলেনি তা নয়, দাউদাউ করে আগুন জ্বলেছিল। কিন্তু সেই আগুনে ও নিজেই জল ঢেলে দিয়েছে। আসলে মালাকে ও গায়ের জোরে পেতে চায়না। একটা বারের জন্য মালার শরীরটা ভোগ করা ওর উদ্যেশ্য নয়। ও চায় রাজা হতে আর মালা হবে ওর রানী। রাজকাজ সম্পন্ন করে যখন বংশী রাজপ্রাসাদে ফিরে যাবে তখন মালা ছোট একটা কাপড় দিয়ে নিজের শরীরটা কোনরকমে জড়িয়ে ওর জন্য বাগানের সামনে অপেক্ষা করে থাকবে। স্বল্পবসনা মালাকে দেখতে পেয়েই বংশী ছুটে যাবে, এক টানে ওর শরীর থেকে কাপড়টা খুলে বাগানের ভেতর ছুঁড়ে ফেলে দেবে। লজ্জায় মালার দুই কান লাল হয়ে যাবে, কোনরকমে দুই হাত দিয়ে নিজের লজ্জা নিবারন করে মালা ছুটে যাবে বাড়ীর ভেতরে। মালাকে স্পর্শ করার জন্য বংশীও ওর পেছনে ছুটতে শুরু করবে। এই সমস্ত রাজকীয় চিন্তা মাথায় ঘুরতে ঘুরতে কখন যে ওর হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেছে, নাক দিয়ে গরম লার্ভার মত উত্তপ্ত নিশ্বাস বাইরে বেরিয়ে বনে দাবানল লাগিয়ে দিচ্ছে তা বংশী ভাবতেও পারেনি। অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই বংশী নিজের রাজপ্রাসাদের সামনে পৌঁছে যায়। বাঁদিকের চন্দ্রচুড়া গাছটার তলায় দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষন জিরিয়ে নেয়। ও জানে এখন ওর একটাই কাজ নিজের শরীরের সমস্ত উত্তাপ দিয়ে মালার শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া। আর মালা সেই আগুনে ঝাঁপ দিলেই ওর মুক্তি।
বংশী নিজেকে শান্ত করে সামনে এগিয়ে যায়। বাঁশের বেড়ার দরজাটা টেনে খুলে সামনে ঢুকতেই ও অবাক। যে কুটীরে ও মালাকে থাকতে বলে এসেছিল তার দরজা সম্পূর্ণ খোলা। বাইরে থেকেই দেখা যাচ্ছে ভেতরটা সম্পূর্ণ ফাঁকা। বংশীর মনের চঞ্চলতা বেড়ে দ্বিগুন হয়ে যায়। মনে মনে ভাবতে থাকে মালার কোনও বিপদ হয়নি তো। মালা কৌতূহলের বশে এসে জঙ্গলে বেরিয়ে যায়নি তো। এই জঙ্গলে তো বহু হিংস্র জানোয়ার রয়েছে। সত্যি ই যদি মালার কোনও বিপদ হয়ে যায় তাহলে ও কোনোদিন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না। হথাত ই একটা টুং টুং করে শব্দ ভেসে আসে। এই শব্দ ওর অতি পরিচিত, মালার দুই হাতের চুড়ি ও শাখাপলাগুলো ধাক্কা খেলে এরকম শব্দ হয়। প্রায় নিশ্বাস বন্ধ করে দিয়ে বংশী ওখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। মালা কুটিরের পেছন থেকে বেরিয়ে এসে দীঘির দিকে যেতে শুরু করে। মালার শরীরের আলগা শাড়ির বাঁধন দেখে বংশীর বুঝতে কোনও অসুবিধা রইলনা যে মালা এই মুহূর্তে স্নান করতে যাচ্ছে। লুকিয়ে মালার শরীরটা উপভোগ করার যে অভ্যাস বংশীর মধ্যে রয়েছে তাকে বংশী কিছুতেই ছাড়তে পারেনি। অতি সন্তর্পণে ভেতরে প্রবেশ করে, একপাশ দিয়ে বংশী হেঁটে হেঁটে সোজা দীঘির কাছে পৌছায়। সামনেই একটা মোটা গাছে ছিল, ওর পেছনে নিজেকে লুকিয়ে শুধু মুখটা বাড়িয়ে মালাকে দেখতে থাকে।
প্রায় বংশীর ই সাথে সাথে মালাও ওইখানে গিয়ে পৌছায়। বংশীও লক্ষ্য করেছে মালা আজ একটু অতিরিক্তই উদাসীন। বংশী এটা চায়না, বংশী চায় ওর কাছে সেই হাসিখুশি প্রাণোচ্ছল মালা ধরা দিক। মালার ব্যাপারে সামান্য কোনও সমঝোতা ও করতে চায়না। আসলে শুধুই তো শরীরের খিদে নয় একটা সুপ্ত ভালোবাসাও রয়েছে বংশীর মালার প্রতি। আর সেই ভালোবাসা না থাকলে এতক্ষনে যে কতবার ও মালার এই সুস্বাদু শরীরটা হিংস্র সিংহের মত করে খেয়ে নিত তার কোনও ইয়ত্তা নেই। মালা একবার পেছন ঘুরে দরজার দিকে তাকায়। বংশী মুখটা লুকিয়ে নেয়। মনে মনে বংশী ভাবে, মেয়েদের এই লজ্জাশীলতা বড়ই অদ্ভুত, মালা জানে এই নির্জন স্থানে ওর শরীরটা দেখার মত কেউ ই নেই তাও শুধুই নিজের মনকে সন্তুষ্ট করতে পেছন ফিরে দেখা। বংশী সন্তর্পণে আবার নিজের মাথাটা বাইরে বার করে ও সামনের দিকে তাকায়। ততক্ষনে মালার দুই হাত শাড়ির মধ্যে ঢুকে বুকের দুপাশে চলে গেছে। বংশীর শরীর থেকে আগুনের ছলকা চারপাশে ছিটকে ছিটকে পড়তে থাকে। মুহূর্তের মধ্যে হাতের দুই পাশ দিয়ে টেনে মালা নিজের ব্লাউজটা খুলে ফেলে। হয়ত নির্জন স্থানের ওপর অতিরিক্ত ভরসা থাকার জন্যই মালার শাড়িটা অতিরিক্ত ঢিলে হয়ে থাকে। হাত ও পেটের ফাঁক দিয়ে বিশাল তরমুজের মত গোল শুভ্র স্তনযুগল ঠিকরে বাইরে বেরিয়ে চলে আসে। দীঘির জলে পা ডুবিয়ে মালা নিজের পা দুটোকে নাড়াতে থাকে। দুই হাত মুঠো করে আঁচলা করে জল নিয়ে নিজের গায়ে ছিটোতে থাকে। ধীরে ধীরে মালার বসনের সাড়ী সিক্ত হয়ে ওঠে, বুকের হলুদ কাপড়ের ওপর দিয়ে সুচাগ্র স্তনের বোঁটা দ্রিশ্যমান হয়। প্রায় ভিজে শালিকের মত কাঁপতে কাঁপতে বংশী মালার সৌন্দর্য ভোগ করতে থাকে। হথাত “আ আ ওমা বাঁচাও” বলে মালা প্রচণ্ড জোরে একটা আর্তনাদ করে ওঠে।
মালার এই আর্তনাদে বংশীর ও সম্বিত ফিরে আসে। বংশী গাছের অন্তরাল থেকে বেরিয়ে আসে। মালা প্রায় দিঘীর জল থেকে পা উঠিয়ে নিয়ে লাফ দিয়ে পাড়ের ওপর পড়ে। বংশী কিছুই বুঝতে পারেনা, মালার সাড়িটা বুক থেকে সরে গিয়ে কোমরের কাছে গিয়ে পড়ে। বংশী আর ওখানে থাকতে পারেনা। দৌড়ে দীঘির দিকে যেতে শুরু করে। মালা ওখানে মাটিতে পড়েই যন্ত্রণায় কাতরাতে শুরু করে। দ্রুত বংশী মালার কাছে গিয়ে পৌছায়। বংশীকে দেখতে পেয়ে যন্ত্রণাক্লিষ্ট অবস্থাতেই মালা কোনরকমে নিজের সাড়িটা বুকে জড়িয়ে নেয়। বংশীর নজরে পড়ে মালার ডান পায়ের পাতা থেকে প্রচুর রক্ত পড়ছে। বংশীর আর বুঝতে কোনও অসুবিধা থাকেনা যে মালাকে সাপে কামড়েছে। যদিও জলের সাপ বিষাক্ত হয়না, তাও বংশী নিজেকে সংবরন করতে পারেনা। মালার পায়ের কাছে বসে মালার পাটা নিজের মুখের কাছে নিয়ে যায়। ভিজে কাপড়টা পা থেকে থাইএর কাছে পৌঁছে যায়। একনজর সেই শুভ্র মাংসল শরীরটার দিকে তাকিয়ে বংশী ক্ষত হওয়া অংশটায় নিজের মুখটা রাখে। প্রচণ্ড জোরে চুষে কিছুটা বদ রক্ত নিজের মুখে টেনে নেয় ও বাইরে ফেলে দেয়। বংশীর এই প্রচণ্ড জোরে চোষার কষ্টে মালা দুহাত দিয়ে বংশীর কোমরটা শক্ত করে ধরে, বংশী একবার মুখটা উঠিয়ে মালার দিকে তাকায়, যন্ত্রণায় মালা দুচোখ বন্ধ করে নিয়েছে। বংশী মালার থেকে নিজের নজরটা সরিয়ে ওর পা থেকে বদ রক্ত চুষে চুষে বাইরে ফেলতে থাকে। এরকম বেশ কিছুক্ষন চলার পর বংশীও শান্ত হয়। বংশী জানে মালা এখন নিরাপদ। বংশী আবার তাকায় মালার দিকে, মালা নিজের দুই চোখ বুজে দিয়েছে, প্রচণ্ড ক্লান্তিতে মালার শরীরটা অবশ হয়ে গেছে। শরীরের ভিজে স্বল্পবসন ওই অবস্থায় যেকোনো পুরুষের ই শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু বংশী যে নিজের লক্ষ্যে অবিচল। মালাকে ও একটা ভোগ্যসামগ্রী হিসেবে নয় নিজের প্রিয়তমা হিসেবে চায়। মালার শরীরের এই কষ্ট বংশীর ও পক্ষে সহ্য করা সম্ভবপর ছিলনা। বংশী একটা হাত মালার দুই নিতম্বের কাছে রেখে আরেকটা হাত কাঁধের নিচে রেখে ওকে নিজের কোলে উঠিয়ে নেয়। মালাকে নিজের শরীরে তুলে ও চলতে থাকে কুটিরের দিকে। মালা একবার চোখ খুলে দেখে বংশীর দিকে, কিন্তু সত্যি ই তো ওর কিছুই বলার ছিলনা। এই জীর্ণ শরীর নিয়ে ওর পক্ষেও কুটির অবধি যাওয়া সম্ভবপর ছিলনা। বংশী খুব সন্তর্পণে কুটিরের মধ্যে ঢুকে আগে মালার শরীরটা মাটিতে রাখে তারপর নিজে বসে ওর মাথাটা নিজের কোলের ওপর রাখে। মালা কোনও প্রতিবাদ করেনা। হয়ত ওর প্রতিবাদ করার মত শারীরিক অবস্থাও ছিলনা। বংশী নিজের হাতটা দিয়ে মালার কপালে হাত বোলাতে শুরু করে। পুরুষ হাতের উষ্ণ স্পর্শে মালার ও সমস্ত জন্ত্রনা ধীরে ধীরে অবসান হতে শুরু করে। কোনরকমে চোখ হুলে বংশীর দিকে তাকিয়ে মালা বলে ওঠে
মালাঃ বংশী, তুমি তো জমিদারবাড়ি থেকে ঘুরে এলে, উনি কেমন আছেন? উনি নিরাপদ আছেন তো?
বংশীঃ আপনি এখন বিশ্রাম করুন রানিমা, আপনার শরীর ভালো নেই।
গায়ের জোরে মালা, বংশীর কোল থেকে মাথাটা তোলে, বংশীর দিকে তাকিয়ে প্রচণ্ড চিৎকার করে বলে ওঠে
মালাঃ বংশী, আমি তোমার রানীমা। আমার কথার উত্তর দাও। উনি কোথায় আছেন? কেমন আছেন?
বেশ কিছুক্ষন বংশী নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর মালার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে
বংশীঃ রানীমা, সর্বনাশ হয়ে গেছে। সিলিং সাহেব জমিদারবাবুকে তুলে নিয়ে গেছেন। টমাসকে হত্যার দায়ে ওনার বিচার হবে। হয়ত ওনার ফাঁসি হয়ে যেতে পারে।
মালার চোখদুটো বাইরে ঠিকরে বেরিয়ে আসে। বংশী হয়ত কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল তার আগেই নিজের কোমল হাতটা উঠিয়ে মালা সপাটে একটা চড় মারে বংশীর গালে। বংশী হতবম্ব হয়ে যায়। বংশীর দিকে তাকিয়ে রাগে কাঁপতে কাঁপতে মালা বলে ওঠে
মালাঃ তোমরা সবাই একেকটা কাপুরুষ। ওনাকে সিলিং সাহেবের হাতে তুলে দিয়ে তুমি এখানে পালিয়ে এলে। এই বীরত্বের বড়াই তুমি করতে বংশী। তোমাকে দেখে আমার লজ্জা হয় বংশী, তুমি কাপুরুষ।
কাপুরুষ শব্দটা যে একজন বীরের কাছে ঠিক কতটা অপমানজনক হয় তা এর আগে সত্যি ই বংশী কখনোই বোঝেনি। রাগে ঘৃণায় বংশীর সমস্ত শরীরে আগুন জ্বলতে শুরু করে। অপমান আর প্রতিশোধের আগুনে বংশীর শরীরের হৃৎস্পন্দন প্রচণ্ড জোরে হতে শুরু করে। বংশীর এই রাগ হয়ত মালা বুঝতেও পারেনি। মালা সেই আগুনে ঘি ঢালার জন্য বলে ওঠে
মালাঃ তোমাদের কিছুই করতে হবেনা। আমি নিজে যাচ্ছি। জমিদারির দায়িত্ব আমি সামলাবো। ইংরেজদের সাথে যুদ্ধ করে নিজের স্বামীকে আমি মুক্ত করব।
রাগের বশে মালা প্রচণ্ড জোরে ওখান থেকে উঠে চলে যেতে উদ্যত হয়, কিন্তু মালা পারেনা। মালা খেয়াল করে ওর একটা হাত প্রচণ্ড জোরে বংশী ধরে আছে। মালা এতক্ষনে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায়। মালা সোজা বংশীর দিকে তাকায়। বংশীর দুই চোখ দিয়ে তখন আগুন ঝরে পড়ছে। অত্যন্ত গম্ভীরভাবে বংশী বলে ওঠে
বংশীঃ আপনি কোথাও যাবেন না রানীমা। আপনি এখানেই থাকবেন। আমি আপনাকে স্পর্শ করে আছি। আপনাকে স্পর্শ করে আমি কথা দিলাম, যেকোনো মুল্যে আমি একটা সুখবর নিয়েই ফিরব। আর যদি আমি আপনাকে আশ্বস্ত না করতে পারি তাহলে নিজের মুণ্ডুটা কেটে আপনার পায়ের সামনে রাখবো। কিন্তু আপনি এই কুটিরের বাইরে পা রাখবেন না। কারন একমাত্র এই কুটীরেই আপনি নিরাপদ।
বংশীর চোখে পৌরুষের যে আগুন মালা পেয়েছিল তাকে অস্বীকার করার সাধ্য সামান্য এক নারীর মধ্যে ছিলনা। মালা ওখানেই বসে থাকে, বংশী উঠে দাঁড়ায়, মালার দিকে একবার তাকিয়ে মনে মনে পন করে- “আমি যদি সুপ্রতীককে মুক্ত করার ব্যাবস্থা না করে তোমায় স্পর্শ করি তাহলে আমি পুরুষ নই। আর এটাও আমার প্রতিজ্ঞা রইল, একবার আমি যদি ওকে ছাড়ানোর কোনও ব্যাবস্থা করতে পারি তাহলে তুমি চিরকালের জন্য আমার দাসী হয়ে যাবে। জীবনে কখনো কোনও পুরুষকে দেখলেই তুমি শুধু আমায় ই কল্পনা করবে” মালাও একদৃষ্টিতে ওই দুচোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। বংশী আর ওখানে দাঁড়ায় না। সোজা হনহন করে হাঁটতে হাঁটতে জমিদার বাড়ির দিকে চলতে শুরু করে।
জঙ্গল থেকে জমিদারবাড়ি অবধি এই লম্বা রাস্তায় ওর মাথায় শুধুই একটা কথা বারবার ঘুরছিল, যেভাবে হোক একটা ফন্দি এঁটে প্রিয়া ও গার্গীকে সিলিং সাহেবের হাতে তুলে দেওয়া আর তার বদলে সুপ্রতীককে মুক্ত করা। তারপর হবে মালার সাথে ওর ফুলসজ্জা। আধ ঘণ্টার মধ্যে বংশী জমিদারবাড়িতে পৌঁছে যায়। জমিদারবাড়ির বাহিরমহলে তখন অজস্র লোকের ভিড়। প্রত্যেকেই যে সৈন্য তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। সবারমাঝে দাঁড়িয়ে আছেন নায়েবমশাই। বংশীকে দেখামাত্র নায়েবমশাই বলে ওঠেন
নায়েবমশাইঃ এই তো বংশী এখানে। আরে বংশী, চল ভেতরে চল অনেক কথা আছে।
এই দীর্ঘ পথের ধকলে বংশী যথেষ্ট ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল তাই কথা বলার মত অবস্থায় ও ছিলনা। নায়েবমশাইকে অনুসরন করে বংশী অন্দরমহলে প্রবেশ করে।
নায়েবমশাইঃ বংশী, আজি আমরা নীলকুঠি আক্রমন করব। জমিদারবাবুকে যেভাবে হোক আমাদের মুক্ত করতে হবে। অনেক কষ্টে আমি সিপাহীদের মন জয় করতে পেরেছি। ওরা আমাদের সৈন্য জোগান দিয়েছে, ওদের কাছে রাইফেল আছে, পিস্তল আছে। আর কোনও চিন্তা নেই বংশী। আমরা যুদ্ধে জিতবই। আর জানো এই যুদ্ধের সেনাপতি কে হবে? তুমি। জমিদারবাবু জঙ্গলের মধ্যে থেকে এনে তোমাদের সম্মান দিয়েছেন, আজ সব ফিরিয়ে দেওয়ার সময় বংশী।
বংশীর সম্বিত ফিরে আসে। নায়েবমশাই এর দিকে তাকিয়ে বলে
বংশীঃ প্রিয়া দিদি, গার্গী দিদি নিরাপদে আছেন তো?
কথাটা শুনে নায়েবমশাই কিছুটা গম্ভীর হয়ে যান। বংশীর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর হয়ে বলে ওঠেন
নায়েবমশাইঃ বংশী, প্রিয়া গার্গীমা আমার বাড়িতে নেই। জমিদারবাবু ওদের কোনও গুপ্তস্থানে লুকিয়েছেন। ১০ জন পুরনো পেয়াদা ওদের দায়িত্বে আছে। ওরা কোথায় আছে তা কেউ জানেনা, আমিও না।
বংশীর মাথা বনবন করে ঘুরতে শুরু করে। শুধু মালাকে পাওয়ার জন্য নয়, জমিদারিকে পেতে গেলেও ওকে প্রিয়া আর গার্গীকে সিলিং সাহেবের হাতে তুলে দিতে হত। চেঁচিয়ে বলে ওঠে বংশী “জমিদারবাবু কি আমাদের অবিশ্বাস করেন?” ওপাশ থেকে একটা বুদ্ধিমান হাসির সাথে উত্তর আসে “হয়ত করেন” আগামিকাল সিলিং সাহেবের মুখের ওই সন্দেহের হাসি আর নায়েবমশাই এর হাসি কেমন যেন অনুরুপ লাগে বংশীর। মানুষের ৫ টা ইন্দ্রিয় বাদ দিয়ে আরেকটা ইন্দ্রিয় থাকে তা হোল ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়, সে যেন বলে ওঠে “সাবধান বংশী, খেলা ঘুরছে, যা দেখছিস যা ভাবছিস হয়ত সেটা একটা অলীক কল্পনা। পাশা খেলায় সেই যেতে যে সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিমান হয়। আর বুদ্ধিমান কখনো আত্মবিশ্বাসী হয়না।” বংশীর মাথা বনবন করে ঘুরতে শুরু করে। সমস্ত হিসেবনিকেশ ওলটপালট হয়ে যেতে থাকে।
[/HIDE]
 

Users who are viewing this thread

Back
Top