অবদমিত মনের কথা – ৫৭
খবর ছিল,নেপাল সীমান্ত দিয়ে ঢুকতে পারে। সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে। স্থানীয় থানায় খবর দিয়েছে। বাহাদুরকে বাদ দিলে মোহন ছেত্রী সহ তারা ছ’জন। হঠাৎ নজরে পড়ে চার-পাঁচজনের একটা ছোটো দল পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসছে। তাদের দেখতে পেয়ে উল্টোদিকে হাটতে থাকে। কনস্টেবলরা ধেয়ে যায় ওরাও গতি বাড়ায়। খুশবন্তের অভিজ্ঞতা আছে ফাদে পড়লে এরা রিটালিয়েট করতে পারে। সেইমত সে অন্যদিক দিয়ে ওদের ঘিরে ফেলার চেষ্টা করে। যা ভেবেছিল তাই ওরা গুলি চালাতে শুরু করল। কিন্তু পিছন দিক থেকে গুলি আসবে ভাবতে পারেনি। একজনের গুলি লেগেছে,ধরা পড়ে চারজন। কতজন ছিল জানা যায়নি। কয়েককোটি টাকার চরস কিছু আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া গেল। একজন কনস্টেবলের পায়ে গুলি লেগেছে। ইতিমধ্যে ওসি দলবল সহ হাজির।
কনস্টেবল আর চোরাচালানকারীদের একজনকে হাসপাতালে পাঠাবার ব্যবস্থা করে থানার হাতে দায়িত্ব দিয়ে কালিম্পং-র পথ ধরল খুশবন্ত। ওসি সদানন্দ অবাক হয়ে খুশবন্তকে দেখে,এ কেয়া আউরত হ্যায়?দ্রুত জীপে উঠে জীপকে অনুসরন করেন।
মোহন ছেত্রী বলল,স্যার আকেলা ঐভাবে যাওয়া ঠিক হয়নাই।
খুশবন্ত হেসে বলল,আকেলা আয়া আকেলাই যানে হোগা।
–ওহ ত সহি বাত।
পাহাড়ী পথে জীপ ছুটে চলেছে। রতির মুখটা মনে পড়ল। মুন্নির জন্য বড় চিন্তা ওর।
আলো কমে এসেছে।
সন্ধ্যে হবার মুখে রত্নাকর লেখা থামিয়ে ভাবল আম্মী তো এলনা?রোজ হাটতে যায় আজ কি হল?
আম্মীর ঘরে উকি দিয়ে দেখল বিছানায় শুয়ে আছেন। রতি জিজ্ঞেস করে,আম্মি শুয়ে আছেন?
দলজিৎ পাশ ফিরে হাটু দেখিয়ে বলল,পুত্তর বহুৎ দর্দ হোতা–।
–ম্যাসাজ করে দেবো?ভাল লাগবে।
দলজিৎ হাসলেন। রতি একটা লুঙ্গি এগিয়ে দিয়ে বলল,পায়জামাটা খুলে ফেলুন।
–কান্তা কো বলো। দলজিৎ বললেন।
রত্নাকর বুঝতে পারে আম্মী একা পারবেন না। কান্তা কে পাঠিয়ে দিয়ে বলল,আম্মীকে দিয়ে এসে একটু রসুন তেল গরম করে দিও।
–জি সাব। কান্তা বড়ি মেমসাবের ঘরে গেল।
কান্তা ফিরে এসে তেল গরম করে। রতি ঘরে ঢূকে দেখল আম্মী লুঙ্গি পরে পা ঝুলিয়ে বসে কাতরাচ্ছেন। রতি নীচু হয়ে পা-টা ধরে বিছানায় তুলে দিয়ে বলল,পা ঝুলিয়ে বসবেন না।
এত যন্ত্রণার মধ্যেও দলজিতের মন জুড়িয়ে যায়। জিজ্ঞেস করেন,পুত্তর তুই আমাকে বহুৎ পেয়ার করিস?
–কেন করব না,আপনি আমার মা না?
দলজিৎ হেসে বললেন,জরুর পুত্তর।
কান্তা তেলের বাটি নিয়ে এল,রতি হাত থেকে তেলের বাটি নিয়ে পরীক্ষা করে উষ্ণতা।
কান্তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে সাহেবের কাজ। তেল হাত দিয়ে পরীক্ষা করে দলজিতের যে পায়ে যন্ত্রনা সেটা কোলে রেখে লুঙ্গি হাটু পর্যন্ত তুলে তেল নিয়ে মালাইচাকিতে লাগিয়ে ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করতে লাগল। প্রথমে একটু “আহা-উহু” করলেও ধীরে ধীরে দলজিতের বেশ আরাম হতে থাকে।
কালিম্পং-এ জীপ থামিয়ে অর্কিড হাউসে ঢূকল খুশবন্ত। পছন্দ মত টব সমেত একটা গাছ কিনে পয়সা দিতে গিয়ে গোলমাল। কিছুতেই পয়সা নেবে না,খুশবন্ত পয়সা ছাড়া গাছ নেবে না। মোহন ছেত্রী বোঝাতে শেষে বাধ্য হয়ে পয়সা নিল। বাংলোর কাছে আসতে খুশবন্তের মন খারাপ হয়। মোহন ছেত্রী বলল,স্যার পেপারঅলা বাতচিত করতে চায়।
বিরক্ত হয়ে খুশবন্ত বলল,সদানন্দকে কথা বলতে বলুন।
পিছন পিছন ওসি এসেছিল,খুশী হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে রোমাঞ্চকর অভিযান সম্পর্কে আলোচনা করতে থাকে।
খুশবন্ত ঘরে ঢুকে দেখল যা ভেবেছিল তাই,বাড়ী ফাকা। নিজের ঘরে গিয়ে চেঞ্জ করল।
কান্তাও নেই নাকি?দুবার কান্তা কান্তা বলতেই দরজায় দেখা গেল চা নিয়ে দাঁড়িয়ে কান্তা।
কান্তার হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে খুশবন্ত জিজ্ঞেস করল,ওরা কখন বেরিয়েছে?
–আজ বাইর হয় নাই। বড়ি মেমসাবের তবিয়ত আচ্ছা নেহি।
আম্মীর শরীর খারাপ?জিজ্ঞেস করল,সাহেব একা বেরিয়েছে?
–সাহেব দাওয়া দরু করছে।
–দাওয়া দরু?খুশবন্তের কপালে ভাজ জিজ্ঞেস করে, তুমি কি করছিলে?
–আমি দেখছিলাম।
খুশবন্ত সোফা ছেড়ে উঠে দাড়ায়। রতি চিকিৎসা করছে?ও গড একী শুনছে?ঘর থেকে বেরিয়ে আম্মীর ঘরে গিয়ে চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। রতি পিছন ফিরে বসে, কোলের উপর আম্মীর পা,পাঁচ আঙুলে মালাইচাকি ধরে নাড়ছে। চোখাচুখি হতে মুচকি হাসলেন দলজিৎ। পায়জামা নেই লুঙ্গি পরেছে উরু অবধি লুঙ্গি তোলা। মাথা ঝিম ঝিম করে উঠল। একটু হলেই চা চলকে পড়ছিল। খুশবন্ত নিজের ঘরে ফিরে এল। কান্তাও ঘরে ছিল,খুশবন্ত চায়ে চুমুক দেয়।
একটু পরে রতি ঢুকে জিজ্ঞেস করল,মুন্নি কখন এলে?
–তোমার ডাক্তারী বিদ্যে জানা আছে জানতাম না তো?
–আম্মীর খুব কষ্ট হচ্ছিল তোমার হলে বুঝতে।
–এটা কি তোমার কাজ?
রতি থতমত খায় পরে বুঝতে পেরে বলল,তুমি দশ পৃষ্ঠা বলেছিলে দাড়াও দেখাচ্ছি।
রত্নাকর নিজের লেখার ঘরে গিয়ে কাগজপত্র গোছাতে থাকে। খুশবন্ত দেখল আম্মী দরজায় এসে দাড়িয়েছে, লুঙ্গি বদলে পায়জামা পরেছেন।
–কেমন আছো?
–আভি থোড়া আরাম মেহশুস হচ্ছে।
–তোমার বহুৎ নাফা হল?
–মতলব?
–বেটা পেলে ডাক্তার ভি পেলে?
দলজিৎ খিল খিল করে হেসে উঠল। হাসি থামতে বলল,তোর বাপু বলত দলজিতে বেটার জন্য আফশোস কোরোনা। মুন্নি তোমার বেটা আছে আউর লেড়কি ভি আছে। আভি সচমুচ হামার বেটা ভি মিলে গেল।
খুশবন্ত চোখ তুলে আম্মীর দিকে তাকিয়ে থাকে,চোখে মুখে কি তৃপ্তি।
দলজিত বললেন, যাই ঘরের মধ্যে একটূ হাটি। দলজিৎ চলে গেলেন।
হন্তদন্ত হয়ে রতি ঢুকলো,হাতে একরাশ কাগজ। খুশবন্তের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, দেখো নিজের চোখে দেখো।
খুশবন্ত কাগজগুলো নিয়ে চোখের সামনে মেলে ধরে। রত্নাকর বাধ্য ছাত্রের মত পাশে দাঁড়িয়ে দেখছে। খুশবন্ত পড়তে থাকে তিস্তা নামে একটি মেয়ে কলেজ যাবার পথে কিছু বকাটে ছেলে বিরক্ত করত। বাড়ীতে দারিদ্র্য বাইরে উপদ্রব সব কিছু উপেক্ষা করে লেখাপড়া চালিয়ে যায়। মনে স্বপ্ন একদিন কোনো প্রশাসনিক পদে পৌছে—। খুশবন্ত চোখ তুলে রতিকে দেখে জিজ্ঞেস করল,তিস্তা কে?
–কে আবার একটা সাধারণ ঘরের মেয়ে।
খুশবন্ত কাগজগুলো ফিরিয়ে দিয়ে বলল,রেখে এখানে এসো।
কান্তা এসে বলল,মেমসাব আপনাকে অফিসে ডাকছে।
–আচ্ছা। তুমি সাহেব আর আমাকে টিফিন দিয়ে যাও।
খুশবন্ত লুঙ্গি পরেই অফিসে ঢুকলো। সদানন্দ স্যালুট করে বলল,আমি আসি স্যার?
–হাসপাতালে খোজ নিয়ে ফোন করে জানাবেন সেণ্ট্রি কেমন আছে?মোহন জী আপনি বিশ্রাম করুন। সকালে দেখা হবে।
রতি ঘরে ঢুকে দেখল টেবিলের উপর একটা গাছে সুন্দর ফুল ফুটেছে। নাক এগিয়ে নিয়ে সুন্দর গন্ধ পেল। খুসবন্ত দরজায় এসে দাড়িয়েছে। রতি জিজ্ঞেস করে,কি ফুল সুন্দর গন্ধ?
–একটা নাম বলেছিল মনে নেই। অর্কিড–পরগাছা। ফুল সুন্দর কিন্তু অন্য গাছে ভর করে বেচে থাকে।
রত্নাকরের মুখটা করুণ হয়ে উঠল,চোখদুটো ছলছল করে। খুশবন্ত অবাক হয়,কাছে এসে জড়িয়ে ধরে চুমুতে চুমুতে অস্থির করে তোলে। কাদছো কেন?
রত্নাকর হাসল চোখ মুছে বলল,আমিও একটা পরগাছা।
খুশবন্ত বুঝতে পেরে জড়িয়ে ধরে বলল,ইউ আর মাই পার্ট–আমার অংশ। তুমি-আমি কি আলাদা?ফুল ফোটাবার জন্য আমি জনম জনম তোমাকে ধরে রাখবো জান।
কান্তা ঢুকতেই রতিকে ছেড়ে দিল। কান্তা দুটো প্লেট নামিয়ে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
কদিন আগে উমানাথ এসেছে শুভর সঙ্গে দেখা হয়নি। একজন বলল ম্যালে যান ওখানে দেখা হতে পারে। উশ্রীর বায়নায় একদিন টাইগার হিল গেছিল কিন্তু সূর্যাস্ত দেখা হয়নি। ম্যালে অনেকক্ষন অপেক্ষা করেও শুভ্র দেখা পায়নি। ওরা অন্য কোথাও চলে যায়নি তো?
উশ্রী বিরক্ত হয়ে বলল,তুমি কি দার্জিলিং-এ শুভকে দেখতে এসেছো?জিওলজিক্যাল পার্ক বোটানিক্যাল গার্ডেন কিছুই দেখা হয়নি।
ওর সঙ্গে কথায় পারেনা উমানাথ। সব ঘুরে ঘুরে দেখতে চায়। কিন্তু কাল সকালে এসপির বাংলোয় যাবো বলতে খুব উৎসাহ।
শোবার সময় খাটে উঠতে গিয়ে খুশবন্ত কোমর চেপে ল্যাংচাতে থাকে। কোমরে আবার কি হল রত্নাকর ভাবে। এতক্ষন তো ভালই ছিল জিজ্ঞেস করল,তোমার কোমরে কি হয়েছে মুন্নি?
–কিছু না।
ধ্বন্দ্বে পড়ে যায় রতি। খুশবন্ত উপুড় হয়ে শুয়ে থাকে। রত্নাকর লুঙ্গি নামিয়ে কোমরে ম্যাসাজ করতে লাগল। বালিশে মুখ গুজে খুশী মিট্মিট করে হাসে। রতি জিজ্ঞেস করে, ভাল লাগছে?
–আরেকটু নীচে করো।
রত্নাকর বুঝতে পারে ,লুঙ্গি আরো নামিয়ে পাছার বল দুটো টিপতে টিপতে থাকে। দু পায়ের ফাকে হাত ঢুকিয়ে যোনীতে হাত বোলায়। কোমর নড়ে উঠল।
খুশবন্তের মধ্যে একটা পুরুষালী ভাব লক্ষ্য করতো। কোথাও গোলমাল হলে এগিয়ে যেতো। একবার ডায়মণ্ড হারবারে পিকনিকে কয়েকটি ছেলে আমাদের দলের মেয়েদের টিটকিরি করায় খুসবন্ত যেভাবে তাদের শায়েস্তা করেছিল ভাবলে এখনো হাসি পায়। সেই খুশবন্তের মধ্যে যে এরকম একটা নারীসত্তা লুকিয়েছিল ভেবে অবাক হয় রতি। আম্মীকে ম্যাসাজ করেছে বলে কৌশল করে তাকে দিয়ে ম্যাসাজ করাচ্ছে। সত্যিই নারীর কত রূপ।
— মুখে বললেই হত,কৌশল করার দরকার ছিল না। আমার চিন্তা হয়না বুঝি?রতি বলল।
খুশবন্ত পালটি খেয়ে হাসে। বলল,আমার শরম করেনা?
রতি লক্ষ্য করল যোনীর দুপাশে কিছু পশম রেখে সুন্দর করে সেভ করেছে। নীচু হয়ে পেটে চাপ দিতে আতকে উঠে বলল খুশী,পেটে চাপ দিও না। বুকে করো।
বিস্ময়ের সীমা থাকেনা যেন পেটে এখনই বাচ্চা এসে গেছে। রতি স্তনে মোচড়াতে লাগল। নাক কুচকে চোখ বুজে উপভোগ করে। স্তনের বোটায় মোচড় দিতে কাধ উঠে গেল।
–করলে করো। ছমাসে টাচ করতে দেবোনা। আগের মত ভয় পায়না খুশবন্ত। নিতে নিতে সয়ে গেছে।
রতি দুই হাটুর কাছে হাটুতে ভরদিয়ে বসে খুশী হাটু ভাজ করে দুহাত দিয়ে ধরে থাকে। হঠাৎ উপুড় হয়ে হাটু মুড়ে শুয়ে বলল,পিছন দিক থেকে করো,এটা সেভ।
দুই উরুর ফাক দিয়ে উকি দিচ্ছে যোনী। রতি বলল,মানে?
–পেটে চাপ পড়বে না।
রতি উপলব্ধি করে এক অঙ্গে দুই রূপ–পত্নীসত্তা এবং মাতৃসত্তা। পিছন থেকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে যোনীতে লিঙ্গ স্থাপন করে চাপ দিতে ঢুকে গেল। যতদুর সম্ভব সাবধানে ঠাপ শুরু করল। কনুইয়ে ভর দিয়ে মুন্নি পাছা উচু করে আছে। রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে ফুচুক-ফুচুক শব্দ হয়। খুশীও পাছা নাড়তে নাড়তে বলল,তোমার বেশী টাইম লাগে। জোরে করো।
রতি মিনিট কুড়ি পর বীর্যপাত করল।
উশ্রী লক্ষ্য করেছে উমা বেশি কায়দা কানুন জানে না। কতরকম চোদনের কথা শুনেছে। কিন্তু ওর একই কায়দা পাছার কাছে বসে,দু কাধ ধরে। মাই টিপতে পারে কিস করতে পারে। মেয়ে হয়ে কি করে। এসব বলে?পাঁচ-সাত মিনিট পর বেরিয়ে যায়। কোনো কোনো দিন তার বেরোয় না।
অফিস এসপির বাংলো লাগোয়া,পিছনের দরজা দিয়ে বাংলো যাবার পথ। সকাল বেলা চা টিফিন খেয়ে খুশবন্ত পোশাক পরেই অফিসে আসে। খাতা পত্তর দেখে রাউণ্ডে বের হবে।
ফোন করে খবর নিল হাসপাতালে আহত কনস্টেবল কেমন আছে। রাউণ্ডে বেরিয়ে একবার দেখতে যাবে। টেবিলে চাপা দেওয়া স্লিপে চোখ বোলায়,উমানাথ ঘোষ। চেয়ার থেকে উঠে বাইরে বেরিয়ে এল। উমানাথ উঠে দাড়ালো। উশ্রী এই প্রথম খুশবন্তকে পুলিশী পোশাকে দেখল। দারুন লাগছে দেখতে। খুশবন্ত জিজ্ঞেস করে,কতক্ষন?এটা অফিস,বাংলোয় যাবে তো।
–বেশিক্ষন না।
–এসো ভিতরে এসো। এই দরজা দিয়ে চলে যাও। রতিকে ডাকবে। আমি আসছি।
উমানাথ ভিতরে গিয়ে ইতস্তত করে,একজন মহিলা এসে জিজ্ঞেস করল,কুছু বলবেন?
উমানাথ বলল,রতি আছে?
পিছন থেকে ততক্ষনে দলজিৎ এসে কিছুক্ষন দেখে জিজ্ঞেস করেন,উমা আছে না?
উমানাথ চিনতে পারে বলল,হ্যা আণ্টি আমি।
দলজিৎ গলা চড়িয়ে ডাকলেন,পুত্তর তোমার দোস্ত এসেছে।
রতি লিখছিল,আম্মীর গলা পেয়ে বেরিয়ে এসে বলল,আরে উমাদা?এসো ভিতরে এসো।
উশ্রী স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। দুজনকে ভিতরে নিয়ে বসালো। জিজ্ঞেস করল,মুন্নি মানে খুশী জানে তোমরা এসেছো?আম্মী আপনি উমাদাকে চেনেন না?
–আণ্টী তো তোকে ডাকলেন। উমানাথ বলল।
–কান্তা একটু চা বানাও। কেমন আছেন বৌদি?
–ভাল আছি। আপনি স্থির হয়ে বসুন। উশ্রী বলল।
ইতিমধ্যে খুশবন্ত এসে পড়ে। একটা চেয়ারে বসে জিজ্ঞেস করল,কবে এসেছো?
–দিন পাঁচেক হয়ে গেল।
–কদিন আছো তো?ছোটা জিলা তোমাকে সব ঘুরে দেখাবো।
–ছুটি শেষ,কাল সন্ধ্যেবেলার ট্রেনে ফিরব।
–তাহলে আজ এখানে খাবে।
উমানাথ উশ্রীর দিকে তাকায়,উশ্রী বলল,অবশ্যই এসপির আমন্ত্রন বলে কথা।
–তোমরা গল্প করো,এসপি একটা রাউণ্ড দিয়ে আসছে।
–খুশবন্ত তুমি কেমন আছো?
রতির দিকে তাকিয়ে বিষন্ন গলায় বলল,ভাল না,বিয়ে করে খুব অশান্তিতে আছি।
উশ্রী আড়চোখে রতিকে দেখে,এমনভাব করে বসে আছে যেন এসবের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই। উমানাথ উশ্রী দুজনেই ধ্বন্দ্বে পড়ে যায়।
রতিকে ডেকে অন্য ঘরে নিয়ে গেল খুশবন্ত। মাথা ধরে চুমু খেয়ে বলল,দেখো ওদের যত্নে যেন ত্রূটি না হয়,শেষে পাড়ায় গিয়ে বদনাম করবে। ফিরে এসে বলল,আসি উমানাথ,আসি ম্যাডাম।
উমানাথ শুভ সোমলতা বঙ্কা সবার কথা একে একে বলে। চ্যারিটির সভা সেখানে ড ব্যানার্জী কি বলছেন–সব কথা। সুরঞ্জনা মুখার্জির মৃত্যুর কথাও বলতে ভোলে না। রতি চুপ করে শুনে যায়। রঞ্জনা আণ্টী বেচে নেই। নিশ্চয়ই পলি মলিরা এসেছিল। বঙ্কা এখন কম্পাউণ্ডারি করছে বাড়ি ছেড়ে বস্তিতে ভাড়া থাকে শুনে ব্যথিত হয়।
–আচ্ছা উমাদা বঙ্কা তো ওষূধের নামটাম এখন শিখেছে। একটা ওষূধের দোকান করতে পারেনা?
–ওষুধের দোকান করতে কম করে লাখ খানেক টাকার ধাক্কা।
রতি নীরবে কি যেন ভাবে।
–বেড়াতে এসে এইসব কথা বলে ঠাকুর-পোর মন খারাপ করে দিলে। উশ্রী বলল।
রত্নাকর উশ্রীর দিকে তাকিয়ে হাসল। কান্তা চা সঙ্গে স্যাণ্ড উইচ নিয়ে ঢুকে বলল, সাহেব আপনাকে শুধু চা দিলাম।
রত্নাকর উঠে দাঁড়িয়ে বলল,তোমরা চা খাও,আমি এখুনি আসছি।
রতি চলে যাবার পর উশ্রী বলল,হোটেলে খেয়ে তৃপ্তি হত না। ভালই হল কি বলো?
বউয়ের কথা উমানাথের কানে ঢোকেনা। সে খুশবন্তের কথা ভাবছে। বিয়ে করে খুব অশান্তিতে আছি তাও আবার বলল রতির সামনে?
রত্নাকর এক কপি “যে কথা বলা হয়নি” নিয়ে ঢুকল। সোফায় বসে মলাট খুলে লিখল, যার সঙ্গে কথা বলতে ভাল লাগে সেই মনীষা বৌদিকে–রতি। বইটা উমাদাকে দিয়ে বলল,বৌদিকে দিও।
উমানাথের হাত থেকে বইটা নিয়ে উশ্রী কি লিখেছে দেখল,হেসে বলল,আর কাউকে দেবেন না?
–সবই যদি বিলি করে দিই তাহলে আমার চলবে কি করে?
–শোন রতি একটু এ্যাডজাস্ট করে চলতে শেখ। গম্ভীরভাবে বলল উমাদা।
-মানে?তারপর হেসে বলল,তুমি মুন্নির কথা বলছ?ঐ পাগলের কথা আমি ধরি না। ও হল তিস্তা নদীর মত খেয়ালী। তুমি তো জানো কেমন ডাকাবুকো? যতক্ষন বাইরে থাকে খুব দুশ্চিন্তা হয়,বাসায় না ফেরা অবধি শান্তি পাইনা।
–বউকে আপনি মুন্নি বলেন?উশ্রী জিজ্ঞেস করল।
–ওর ডাক নাম মুন্নি,ওর মা ওকে এইনামে ডাকে। উমাদা তুমি ঠিকানাটা লিখে দিও। আমি পঞ্চাশ হাজার টাকা পাঠাবো,বাকীটা ম্যানেজ করে বঙ্কাকে একটা দোকান করে দিও।
–সে না হয় ব্যাঙ্ক লোন-টোন করে ম্যানেজ করা যাবে। তুই পঞ্চাশ হাজার দিবি?
–কেন দেবোনা বল?দুরবস্থা কাকে বলে জীবন দিয়ে শিখেছি। মুন্নি না থাকলে আমার যে কি অবস্থা হত।
উশ্রীর সব তালগোল পাকিয়ে যায়। এদের স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কটা কিছুতেই বুঝতে পারে না।
আত্মীয় স্বজন নয় একজন বন্ধুর জন্য এককথায় এতগুলো টাকা?উপলব্ধি করে রতি আর পাচজনের থেকে স্বতন্ত্র। মেয়ে মহলে কেন তাকে নিয়ে এত কৌতুহল?উশ্রী জিজ্ঞেস করে,পারমিতার বিয়ে ঠিক হয়েছে জানো?
–তাই?কোথায় বিয়ে হচ্ছে?
–বোম্বে থাকে ছেলে।
রত্নাকর উদাস দৃষ্টি মেলে কি যেন ভাবে। উশ্রী ভাবে পারমিতার বিয়ে শুনে হয়তো রতির মন খারাপ।
–জানো বৌদি মেয়েদের আমি কেন এত শ্রদ্ধা করি?পারু বোম্বে চলে যাবে। বাবা-মাকে ছেড়ে নতুন পরিবেশ স্বামী শ্বাশুড়ি ননদ দেওর সব আলাদা আলাদা মেজাজ সবার সঙ্গে ঠিক মানিয়ে নেবে। শিক্ষার উদ্দেশ্য বইতে পড়েছি এ্যাডজাস্টমেণ্ট বাংলায় বলে সঙ্গতি সাধন। মেয়েরা এই শিক্ষা নিয়ে জন্মায়। অথচ সংসারে তারা কোনো দাম পেল না। সব চেয়ে বড়কথা সে জন্য তাদের কোন অভিযোগ বা অভিমান নেই,এটাই তাদের মহত্ব।
রতির চোখের পাতা ভিজে যায়,চোখ মুছে লাজুক হেসে বলল,উমাদা জানে আমার কথায় কথায় চোখে জল এসে যায়।
খুশবন্ত ঢুকে বলল,অনেক দেরী হয়ে গেল। কান্তা–।
দলজিৎ এসে বললেন,কান্তা স্নানে গেছে।
–রান্না কতদুর?
–হয়ে গেছে,আমিই করেছি। দলজিৎ বললেন।
ওরা স্নান করেই বেরিয়েছিল। রতি স্নানে গেল। কান্তা টেবিল গোচ্ছাছে। উমানাথ উশ্রী টেবিলে বসে দলজিতের সঙ্গে কথা বলছে। স্বামীর কথা বলতে বলতে দলজিতের চোখে জল এসে গেল। রতি বাথ্রুম থেকে বের হল। উমা জিজ্ঞেস করে,আণ্টি আপনার জামাই কেমন হল?
দলজিৎ উঠে রতিকে বুকে চেপে ধরে বলল,আমার বেটা মানি আছে মানি।
খুশবন্ত বিরক্ত হয়। আদর করে নাম দিয়েছে মানি। মানি আগে কি করেছে জানে না তো। চেয়ার টেনে বসে বলল,আম্মী ভুখ লেগেছে।
রতিকে ছেড়ে দিতে ঘরে গিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে। মুন্নির আচরণ রতির নজর এড়ায় নি। আম্মীকে নিয়ে মুন্নির মনোভাব রোগে না দাঁড়িয়ে যায়।
–মানিকে মতলব কি জানো?শিউজী আছে। দলজিৎ আপন উচ্ছ্বাসে বললেন।
কান্তা চারটে প্লেট দিয়ে গেল। রতি এসে মুন্নির পাশে বসল। তরকারি মিশ্রিত ভাত দেখে উশ্রী জিজ্ঞেস করে,এটা কি?
রতি বলল,আলু গোবি পোলাও। আম্মী বানিয়েছে খেয়ে দেখুন। রতি বলল।
খেতে খেতে আরেকবার বঙ্কার কথা বলল,উমানাথ। খুসবন্ত বিস্ময় প্রকাশ করে। বঙ্কার এই আচরণ প্রত্যাশিত নয়। রতি বলল,অবস্থা পরিবেশ মানুষকে চালিত করে। খুশবন্ত আড়চোখে দেখল রতিকে। উমানাথ বলল,দোকান করার জন্য রতি টাকা দেবে। খুশবন্ত বলল,ও টাকা কোথায় পাবে?
উমানাথ রতির দিকে তাকালো। রতি মাথা নীচু করে খেয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি পদ খুব তৃপ্তি করে খেলো ওরা। কথা হল কাল সন্ধ্যেবেলা খুশবন্ত স্টেশনে পৌছে দেবে। উমানাথ মৃদু আপত্তি করল।
পরের দিন সন্ধ্যেবেলা জিপে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌছে দিল। মালপত্তর তুলে উমানাথ প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। নিজের জায়গায় বসে উশ্রী জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে রতির সঙ্গে কথা বলছে। খুশবন্ত মাঝে মাঝে আড়চোখে দেখে। ট্রেনের হুইশল বাজতে উমানাথ ট্রেনে উঠে পড়ল। খুশবন্ত পকেট থেকে একটা খাম বের করে উমার হাতে দিল। ট্রেন ছেড়ে দিল। প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ে। এক সময় দৃষ্টি সীমার বাইরে চলে যায় ট্রেন। খুশবন্ত মৃদু হেসে বলল,বন্ধু চলে যাচ্ছে আর তুমি সারাক্ষণ মেয়েটার সঙ্গে কি এত কথা তোমার?
–কি করব ডাকলে যাবো না?
–মেয়েরা তোমাকেই কেন ডাকে?
রত্নাকর চোখ তুলে তাকায় হেসে বলে,মুন্নি তুমি সেই মেয়েলী সীমা হতে বেরোতে পারোনি।
জায়গায় বসে উমানাথ খামটা খুলল,পঞ্চাশ হাজারের চেক তার নামে। সঙ্গে একটা চিরকুট। চিরকুট খুলে চোখের সামনে মেলে ধরল। ” উমানাথ,যখন রতি ছিল না ভাল ছিলাম কোনো চিন্তা ছিলনা। বিয়ের পর চিন্তা পয়দা হল,সারাক্ষন ভয়ে ভয়ে থাকি, হারিয়ে ফেলব নাতো? কলকাত্তা গেলে দেখা হবে। খুশবন্ত সোম কাউর। “
[সমাপ্ত]
খবর ছিল,নেপাল সীমান্ত দিয়ে ঢুকতে পারে। সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে। স্থানীয় থানায় খবর দিয়েছে। বাহাদুরকে বাদ দিলে মোহন ছেত্রী সহ তারা ছ’জন। হঠাৎ নজরে পড়ে চার-পাঁচজনের একটা ছোটো দল পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসছে। তাদের দেখতে পেয়ে উল্টোদিকে হাটতে থাকে। কনস্টেবলরা ধেয়ে যায় ওরাও গতি বাড়ায়। খুশবন্তের অভিজ্ঞতা আছে ফাদে পড়লে এরা রিটালিয়েট করতে পারে। সেইমত সে অন্যদিক দিয়ে ওদের ঘিরে ফেলার চেষ্টা করে। যা ভেবেছিল তাই ওরা গুলি চালাতে শুরু করল। কিন্তু পিছন দিক থেকে গুলি আসবে ভাবতে পারেনি। একজনের গুলি লেগেছে,ধরা পড়ে চারজন। কতজন ছিল জানা যায়নি। কয়েককোটি টাকার চরস কিছু আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া গেল। একজন কনস্টেবলের পায়ে গুলি লেগেছে। ইতিমধ্যে ওসি দলবল সহ হাজির।
কনস্টেবল আর চোরাচালানকারীদের একজনকে হাসপাতালে পাঠাবার ব্যবস্থা করে থানার হাতে দায়িত্ব দিয়ে কালিম্পং-র পথ ধরল খুশবন্ত। ওসি সদানন্দ অবাক হয়ে খুশবন্তকে দেখে,এ কেয়া আউরত হ্যায়?দ্রুত জীপে উঠে জীপকে অনুসরন করেন।
মোহন ছেত্রী বলল,স্যার আকেলা ঐভাবে যাওয়া ঠিক হয়নাই।
খুশবন্ত হেসে বলল,আকেলা আয়া আকেলাই যানে হোগা।
–ওহ ত সহি বাত।
পাহাড়ী পথে জীপ ছুটে চলেছে। রতির মুখটা মনে পড়ল। মুন্নির জন্য বড় চিন্তা ওর।
আলো কমে এসেছে।
সন্ধ্যে হবার মুখে রত্নাকর লেখা থামিয়ে ভাবল আম্মী তো এলনা?রোজ হাটতে যায় আজ কি হল?
আম্মীর ঘরে উকি দিয়ে দেখল বিছানায় শুয়ে আছেন। রতি জিজ্ঞেস করে,আম্মি শুয়ে আছেন?
দলজিৎ পাশ ফিরে হাটু দেখিয়ে বলল,পুত্তর বহুৎ দর্দ হোতা–।
–ম্যাসাজ করে দেবো?ভাল লাগবে।
দলজিৎ হাসলেন। রতি একটা লুঙ্গি এগিয়ে দিয়ে বলল,পায়জামাটা খুলে ফেলুন।
–কান্তা কো বলো। দলজিৎ বললেন।
রত্নাকর বুঝতে পারে আম্মী একা পারবেন না। কান্তা কে পাঠিয়ে দিয়ে বলল,আম্মীকে দিয়ে এসে একটু রসুন তেল গরম করে দিও।
–জি সাব। কান্তা বড়ি মেমসাবের ঘরে গেল।
কান্তা ফিরে এসে তেল গরম করে। রতি ঘরে ঢূকে দেখল আম্মী লুঙ্গি পরে পা ঝুলিয়ে বসে কাতরাচ্ছেন। রতি নীচু হয়ে পা-টা ধরে বিছানায় তুলে দিয়ে বলল,পা ঝুলিয়ে বসবেন না।
এত যন্ত্রণার মধ্যেও দলজিতের মন জুড়িয়ে যায়। জিজ্ঞেস করেন,পুত্তর তুই আমাকে বহুৎ পেয়ার করিস?
–কেন করব না,আপনি আমার মা না?
দলজিৎ হেসে বললেন,জরুর পুত্তর।
কান্তা তেলের বাটি নিয়ে এল,রতি হাত থেকে তেলের বাটি নিয়ে পরীক্ষা করে উষ্ণতা।
কান্তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে সাহেবের কাজ। তেল হাত দিয়ে পরীক্ষা করে দলজিতের যে পায়ে যন্ত্রনা সেটা কোলে রেখে লুঙ্গি হাটু পর্যন্ত তুলে তেল নিয়ে মালাইচাকিতে লাগিয়ে ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করতে লাগল। প্রথমে একটু “আহা-উহু” করলেও ধীরে ধীরে দলজিতের বেশ আরাম হতে থাকে।
কালিম্পং-এ জীপ থামিয়ে অর্কিড হাউসে ঢূকল খুশবন্ত। পছন্দ মত টব সমেত একটা গাছ কিনে পয়সা দিতে গিয়ে গোলমাল। কিছুতেই পয়সা নেবে না,খুশবন্ত পয়সা ছাড়া গাছ নেবে না। মোহন ছেত্রী বোঝাতে শেষে বাধ্য হয়ে পয়সা নিল। বাংলোর কাছে আসতে খুশবন্তের মন খারাপ হয়। মোহন ছেত্রী বলল,স্যার পেপারঅলা বাতচিত করতে চায়।
বিরক্ত হয়ে খুশবন্ত বলল,সদানন্দকে কথা বলতে বলুন।
পিছন পিছন ওসি এসেছিল,খুশী হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে রোমাঞ্চকর অভিযান সম্পর্কে আলোচনা করতে থাকে।
খুশবন্ত ঘরে ঢুকে দেখল যা ভেবেছিল তাই,বাড়ী ফাকা। নিজের ঘরে গিয়ে চেঞ্জ করল।
কান্তাও নেই নাকি?দুবার কান্তা কান্তা বলতেই দরজায় দেখা গেল চা নিয়ে দাঁড়িয়ে কান্তা।
কান্তার হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে খুশবন্ত জিজ্ঞেস করল,ওরা কখন বেরিয়েছে?
–আজ বাইর হয় নাই। বড়ি মেমসাবের তবিয়ত আচ্ছা নেহি।
আম্মীর শরীর খারাপ?জিজ্ঞেস করল,সাহেব একা বেরিয়েছে?
–সাহেব দাওয়া দরু করছে।
–দাওয়া দরু?খুশবন্তের কপালে ভাজ জিজ্ঞেস করে, তুমি কি করছিলে?
–আমি দেখছিলাম।
খুশবন্ত সোফা ছেড়ে উঠে দাড়ায়। রতি চিকিৎসা করছে?ও গড একী শুনছে?ঘর থেকে বেরিয়ে আম্মীর ঘরে গিয়ে চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। রতি পিছন ফিরে বসে, কোলের উপর আম্মীর পা,পাঁচ আঙুলে মালাইচাকি ধরে নাড়ছে। চোখাচুখি হতে মুচকি হাসলেন দলজিৎ। পায়জামা নেই লুঙ্গি পরেছে উরু অবধি লুঙ্গি তোলা। মাথা ঝিম ঝিম করে উঠল। একটু হলেই চা চলকে পড়ছিল। খুশবন্ত নিজের ঘরে ফিরে এল। কান্তাও ঘরে ছিল,খুশবন্ত চায়ে চুমুক দেয়।
একটু পরে রতি ঢুকে জিজ্ঞেস করল,মুন্নি কখন এলে?
–তোমার ডাক্তারী বিদ্যে জানা আছে জানতাম না তো?
–আম্মীর খুব কষ্ট হচ্ছিল তোমার হলে বুঝতে।
–এটা কি তোমার কাজ?
রতি থতমত খায় পরে বুঝতে পেরে বলল,তুমি দশ পৃষ্ঠা বলেছিলে দাড়াও দেখাচ্ছি।
রত্নাকর নিজের লেখার ঘরে গিয়ে কাগজপত্র গোছাতে থাকে। খুশবন্ত দেখল আম্মী দরজায় এসে দাড়িয়েছে, লুঙ্গি বদলে পায়জামা পরেছেন।
–কেমন আছো?
–আভি থোড়া আরাম মেহশুস হচ্ছে।
–তোমার বহুৎ নাফা হল?
–মতলব?
–বেটা পেলে ডাক্তার ভি পেলে?
দলজিৎ খিল খিল করে হেসে উঠল। হাসি থামতে বলল,তোর বাপু বলত দলজিতে বেটার জন্য আফশোস কোরোনা। মুন্নি তোমার বেটা আছে আউর লেড়কি ভি আছে। আভি সচমুচ হামার বেটা ভি মিলে গেল।
খুশবন্ত চোখ তুলে আম্মীর দিকে তাকিয়ে থাকে,চোখে মুখে কি তৃপ্তি।
দলজিত বললেন, যাই ঘরের মধ্যে একটূ হাটি। দলজিৎ চলে গেলেন।
হন্তদন্ত হয়ে রতি ঢুকলো,হাতে একরাশ কাগজ। খুশবন্তের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, দেখো নিজের চোখে দেখো।
খুশবন্ত কাগজগুলো নিয়ে চোখের সামনে মেলে ধরে। রত্নাকর বাধ্য ছাত্রের মত পাশে দাঁড়িয়ে দেখছে। খুশবন্ত পড়তে থাকে তিস্তা নামে একটি মেয়ে কলেজ যাবার পথে কিছু বকাটে ছেলে বিরক্ত করত। বাড়ীতে দারিদ্র্য বাইরে উপদ্রব সব কিছু উপেক্ষা করে লেখাপড়া চালিয়ে যায়। মনে স্বপ্ন একদিন কোনো প্রশাসনিক পদে পৌছে—। খুশবন্ত চোখ তুলে রতিকে দেখে জিজ্ঞেস করল,তিস্তা কে?
–কে আবার একটা সাধারণ ঘরের মেয়ে।
খুশবন্ত কাগজগুলো ফিরিয়ে দিয়ে বলল,রেখে এখানে এসো।
কান্তা এসে বলল,মেমসাব আপনাকে অফিসে ডাকছে।
–আচ্ছা। তুমি সাহেব আর আমাকে টিফিন দিয়ে যাও।
খুশবন্ত লুঙ্গি পরেই অফিসে ঢুকলো। সদানন্দ স্যালুট করে বলল,আমি আসি স্যার?
–হাসপাতালে খোজ নিয়ে ফোন করে জানাবেন সেণ্ট্রি কেমন আছে?মোহন জী আপনি বিশ্রাম করুন। সকালে দেখা হবে।
রতি ঘরে ঢুকে দেখল টেবিলের উপর একটা গাছে সুন্দর ফুল ফুটেছে। নাক এগিয়ে নিয়ে সুন্দর গন্ধ পেল। খুসবন্ত দরজায় এসে দাড়িয়েছে। রতি জিজ্ঞেস করে,কি ফুল সুন্দর গন্ধ?
–একটা নাম বলেছিল মনে নেই। অর্কিড–পরগাছা। ফুল সুন্দর কিন্তু অন্য গাছে ভর করে বেচে থাকে।
রত্নাকরের মুখটা করুণ হয়ে উঠল,চোখদুটো ছলছল করে। খুশবন্ত অবাক হয়,কাছে এসে জড়িয়ে ধরে চুমুতে চুমুতে অস্থির করে তোলে। কাদছো কেন?
রত্নাকর হাসল চোখ মুছে বলল,আমিও একটা পরগাছা।
খুশবন্ত বুঝতে পেরে জড়িয়ে ধরে বলল,ইউ আর মাই পার্ট–আমার অংশ। তুমি-আমি কি আলাদা?ফুল ফোটাবার জন্য আমি জনম জনম তোমাকে ধরে রাখবো জান।
কান্তা ঢুকতেই রতিকে ছেড়ে দিল। কান্তা দুটো প্লেট নামিয়ে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
কদিন আগে উমানাথ এসেছে শুভর সঙ্গে দেখা হয়নি। একজন বলল ম্যালে যান ওখানে দেখা হতে পারে। উশ্রীর বায়নায় একদিন টাইগার হিল গেছিল কিন্তু সূর্যাস্ত দেখা হয়নি। ম্যালে অনেকক্ষন অপেক্ষা করেও শুভ্র দেখা পায়নি। ওরা অন্য কোথাও চলে যায়নি তো?
উশ্রী বিরক্ত হয়ে বলল,তুমি কি দার্জিলিং-এ শুভকে দেখতে এসেছো?জিওলজিক্যাল পার্ক বোটানিক্যাল গার্ডেন কিছুই দেখা হয়নি।
ওর সঙ্গে কথায় পারেনা উমানাথ। সব ঘুরে ঘুরে দেখতে চায়। কিন্তু কাল সকালে এসপির বাংলোয় যাবো বলতে খুব উৎসাহ।
শোবার সময় খাটে উঠতে গিয়ে খুশবন্ত কোমর চেপে ল্যাংচাতে থাকে। কোমরে আবার কি হল রত্নাকর ভাবে। এতক্ষন তো ভালই ছিল জিজ্ঞেস করল,তোমার কোমরে কি হয়েছে মুন্নি?
–কিছু না।
ধ্বন্দ্বে পড়ে যায় রতি। খুশবন্ত উপুড় হয়ে শুয়ে থাকে। রত্নাকর লুঙ্গি নামিয়ে কোমরে ম্যাসাজ করতে লাগল। বালিশে মুখ গুজে খুশী মিট্মিট করে হাসে। রতি জিজ্ঞেস করে, ভাল লাগছে?
–আরেকটু নীচে করো।
রত্নাকর বুঝতে পারে ,লুঙ্গি আরো নামিয়ে পাছার বল দুটো টিপতে টিপতে থাকে। দু পায়ের ফাকে হাত ঢুকিয়ে যোনীতে হাত বোলায়। কোমর নড়ে উঠল।
খুশবন্তের মধ্যে একটা পুরুষালী ভাব লক্ষ্য করতো। কোথাও গোলমাল হলে এগিয়ে যেতো। একবার ডায়মণ্ড হারবারে পিকনিকে কয়েকটি ছেলে আমাদের দলের মেয়েদের টিটকিরি করায় খুসবন্ত যেভাবে তাদের শায়েস্তা করেছিল ভাবলে এখনো হাসি পায়। সেই খুশবন্তের মধ্যে যে এরকম একটা নারীসত্তা লুকিয়েছিল ভেবে অবাক হয় রতি। আম্মীকে ম্যাসাজ করেছে বলে কৌশল করে তাকে দিয়ে ম্যাসাজ করাচ্ছে। সত্যিই নারীর কত রূপ।
— মুখে বললেই হত,কৌশল করার দরকার ছিল না। আমার চিন্তা হয়না বুঝি?রতি বলল।
খুশবন্ত পালটি খেয়ে হাসে। বলল,আমার শরম করেনা?
রতি লক্ষ্য করল যোনীর দুপাশে কিছু পশম রেখে সুন্দর করে সেভ করেছে। নীচু হয়ে পেটে চাপ দিতে আতকে উঠে বলল খুশী,পেটে চাপ দিও না। বুকে করো।
বিস্ময়ের সীমা থাকেনা যেন পেটে এখনই বাচ্চা এসে গেছে। রতি স্তনে মোচড়াতে লাগল। নাক কুচকে চোখ বুজে উপভোগ করে। স্তনের বোটায় মোচড় দিতে কাধ উঠে গেল।
–করলে করো। ছমাসে টাচ করতে দেবোনা। আগের মত ভয় পায়না খুশবন্ত। নিতে নিতে সয়ে গেছে।
রতি দুই হাটুর কাছে হাটুতে ভরদিয়ে বসে খুশী হাটু ভাজ করে দুহাত দিয়ে ধরে থাকে। হঠাৎ উপুড় হয়ে হাটু মুড়ে শুয়ে বলল,পিছন দিক থেকে করো,এটা সেভ।
দুই উরুর ফাক দিয়ে উকি দিচ্ছে যোনী। রতি বলল,মানে?
–পেটে চাপ পড়বে না।
রতি উপলব্ধি করে এক অঙ্গে দুই রূপ–পত্নীসত্তা এবং মাতৃসত্তা। পিছন থেকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে যোনীতে লিঙ্গ স্থাপন করে চাপ দিতে ঢুকে গেল। যতদুর সম্ভব সাবধানে ঠাপ শুরু করল। কনুইয়ে ভর দিয়ে মুন্নি পাছা উচু করে আছে। রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে ফুচুক-ফুচুক শব্দ হয়। খুশীও পাছা নাড়তে নাড়তে বলল,তোমার বেশী টাইম লাগে। জোরে করো।
রতি মিনিট কুড়ি পর বীর্যপাত করল।
উশ্রী লক্ষ্য করেছে উমা বেশি কায়দা কানুন জানে না। কতরকম চোদনের কথা শুনেছে। কিন্তু ওর একই কায়দা পাছার কাছে বসে,দু কাধ ধরে। মাই টিপতে পারে কিস করতে পারে। মেয়ে হয়ে কি করে। এসব বলে?পাঁচ-সাত মিনিট পর বেরিয়ে যায়। কোনো কোনো দিন তার বেরোয় না।
অফিস এসপির বাংলো লাগোয়া,পিছনের দরজা দিয়ে বাংলো যাবার পথ। সকাল বেলা চা টিফিন খেয়ে খুশবন্ত পোশাক পরেই অফিসে আসে। খাতা পত্তর দেখে রাউণ্ডে বের হবে।
ফোন করে খবর নিল হাসপাতালে আহত কনস্টেবল কেমন আছে। রাউণ্ডে বেরিয়ে একবার দেখতে যাবে। টেবিলে চাপা দেওয়া স্লিপে চোখ বোলায়,উমানাথ ঘোষ। চেয়ার থেকে উঠে বাইরে বেরিয়ে এল। উমানাথ উঠে দাড়ালো। উশ্রী এই প্রথম খুশবন্তকে পুলিশী পোশাকে দেখল। দারুন লাগছে দেখতে। খুশবন্ত জিজ্ঞেস করে,কতক্ষন?এটা অফিস,বাংলোয় যাবে তো।
–বেশিক্ষন না।
–এসো ভিতরে এসো। এই দরজা দিয়ে চলে যাও। রতিকে ডাকবে। আমি আসছি।
উমানাথ ভিতরে গিয়ে ইতস্তত করে,একজন মহিলা এসে জিজ্ঞেস করল,কুছু বলবেন?
উমানাথ বলল,রতি আছে?
পিছন থেকে ততক্ষনে দলজিৎ এসে কিছুক্ষন দেখে জিজ্ঞেস করেন,উমা আছে না?
উমানাথ চিনতে পারে বলল,হ্যা আণ্টি আমি।
দলজিৎ গলা চড়িয়ে ডাকলেন,পুত্তর তোমার দোস্ত এসেছে।
রতি লিখছিল,আম্মীর গলা পেয়ে বেরিয়ে এসে বলল,আরে উমাদা?এসো ভিতরে এসো।
উশ্রী স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। দুজনকে ভিতরে নিয়ে বসালো। জিজ্ঞেস করল,মুন্নি মানে খুশী জানে তোমরা এসেছো?আম্মী আপনি উমাদাকে চেনেন না?
–আণ্টী তো তোকে ডাকলেন। উমানাথ বলল।
–কান্তা একটু চা বানাও। কেমন আছেন বৌদি?
–ভাল আছি। আপনি স্থির হয়ে বসুন। উশ্রী বলল।
ইতিমধ্যে খুশবন্ত এসে পড়ে। একটা চেয়ারে বসে জিজ্ঞেস করল,কবে এসেছো?
–দিন পাঁচেক হয়ে গেল।
–কদিন আছো তো?ছোটা জিলা তোমাকে সব ঘুরে দেখাবো।
–ছুটি শেষ,কাল সন্ধ্যেবেলার ট্রেনে ফিরব।
–তাহলে আজ এখানে খাবে।
উমানাথ উশ্রীর দিকে তাকায়,উশ্রী বলল,অবশ্যই এসপির আমন্ত্রন বলে কথা।
–তোমরা গল্প করো,এসপি একটা রাউণ্ড দিয়ে আসছে।
–খুশবন্ত তুমি কেমন আছো?
রতির দিকে তাকিয়ে বিষন্ন গলায় বলল,ভাল না,বিয়ে করে খুব অশান্তিতে আছি।
উশ্রী আড়চোখে রতিকে দেখে,এমনভাব করে বসে আছে যেন এসবের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই। উমানাথ উশ্রী দুজনেই ধ্বন্দ্বে পড়ে যায়।
রতিকে ডেকে অন্য ঘরে নিয়ে গেল খুশবন্ত। মাথা ধরে চুমু খেয়ে বলল,দেখো ওদের যত্নে যেন ত্রূটি না হয়,শেষে পাড়ায় গিয়ে বদনাম করবে। ফিরে এসে বলল,আসি উমানাথ,আসি ম্যাডাম।
উমানাথ শুভ সোমলতা বঙ্কা সবার কথা একে একে বলে। চ্যারিটির সভা সেখানে ড ব্যানার্জী কি বলছেন–সব কথা। সুরঞ্জনা মুখার্জির মৃত্যুর কথাও বলতে ভোলে না। রতি চুপ করে শুনে যায়। রঞ্জনা আণ্টী বেচে নেই। নিশ্চয়ই পলি মলিরা এসেছিল। বঙ্কা এখন কম্পাউণ্ডারি করছে বাড়ি ছেড়ে বস্তিতে ভাড়া থাকে শুনে ব্যথিত হয়।
–আচ্ছা উমাদা বঙ্কা তো ওষূধের নামটাম এখন শিখেছে। একটা ওষূধের দোকান করতে পারেনা?
–ওষুধের দোকান করতে কম করে লাখ খানেক টাকার ধাক্কা।
রতি নীরবে কি যেন ভাবে।
–বেড়াতে এসে এইসব কথা বলে ঠাকুর-পোর মন খারাপ করে দিলে। উশ্রী বলল।
রত্নাকর উশ্রীর দিকে তাকিয়ে হাসল। কান্তা চা সঙ্গে স্যাণ্ড উইচ নিয়ে ঢুকে বলল, সাহেব আপনাকে শুধু চা দিলাম।
রত্নাকর উঠে দাঁড়িয়ে বলল,তোমরা চা খাও,আমি এখুনি আসছি।
রতি চলে যাবার পর উশ্রী বলল,হোটেলে খেয়ে তৃপ্তি হত না। ভালই হল কি বলো?
বউয়ের কথা উমানাথের কানে ঢোকেনা। সে খুশবন্তের কথা ভাবছে। বিয়ে করে খুব অশান্তিতে আছি তাও আবার বলল রতির সামনে?
রত্নাকর এক কপি “যে কথা বলা হয়নি” নিয়ে ঢুকল। সোফায় বসে মলাট খুলে লিখল, যার সঙ্গে কথা বলতে ভাল লাগে সেই মনীষা বৌদিকে–রতি। বইটা উমাদাকে দিয়ে বলল,বৌদিকে দিও।
উমানাথের হাত থেকে বইটা নিয়ে উশ্রী কি লিখেছে দেখল,হেসে বলল,আর কাউকে দেবেন না?
–সবই যদি বিলি করে দিই তাহলে আমার চলবে কি করে?
–শোন রতি একটু এ্যাডজাস্ট করে চলতে শেখ। গম্ভীরভাবে বলল উমাদা।
-মানে?তারপর হেসে বলল,তুমি মুন্নির কথা বলছ?ঐ পাগলের কথা আমি ধরি না। ও হল তিস্তা নদীর মত খেয়ালী। তুমি তো জানো কেমন ডাকাবুকো? যতক্ষন বাইরে থাকে খুব দুশ্চিন্তা হয়,বাসায় না ফেরা অবধি শান্তি পাইনা।
–বউকে আপনি মুন্নি বলেন?উশ্রী জিজ্ঞেস করল।
–ওর ডাক নাম মুন্নি,ওর মা ওকে এইনামে ডাকে। উমাদা তুমি ঠিকানাটা লিখে দিও। আমি পঞ্চাশ হাজার টাকা পাঠাবো,বাকীটা ম্যানেজ করে বঙ্কাকে একটা দোকান করে দিও।
–সে না হয় ব্যাঙ্ক লোন-টোন করে ম্যানেজ করা যাবে। তুই পঞ্চাশ হাজার দিবি?
–কেন দেবোনা বল?দুরবস্থা কাকে বলে জীবন দিয়ে শিখেছি। মুন্নি না থাকলে আমার যে কি অবস্থা হত।
উশ্রীর সব তালগোল পাকিয়ে যায়। এদের স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কটা কিছুতেই বুঝতে পারে না।
আত্মীয় স্বজন নয় একজন বন্ধুর জন্য এককথায় এতগুলো টাকা?উপলব্ধি করে রতি আর পাচজনের থেকে স্বতন্ত্র। মেয়ে মহলে কেন তাকে নিয়ে এত কৌতুহল?উশ্রী জিজ্ঞেস করে,পারমিতার বিয়ে ঠিক হয়েছে জানো?
–তাই?কোথায় বিয়ে হচ্ছে?
–বোম্বে থাকে ছেলে।
রত্নাকর উদাস দৃষ্টি মেলে কি যেন ভাবে। উশ্রী ভাবে পারমিতার বিয়ে শুনে হয়তো রতির মন খারাপ।
–জানো বৌদি মেয়েদের আমি কেন এত শ্রদ্ধা করি?পারু বোম্বে চলে যাবে। বাবা-মাকে ছেড়ে নতুন পরিবেশ স্বামী শ্বাশুড়ি ননদ দেওর সব আলাদা আলাদা মেজাজ সবার সঙ্গে ঠিক মানিয়ে নেবে। শিক্ষার উদ্দেশ্য বইতে পড়েছি এ্যাডজাস্টমেণ্ট বাংলায় বলে সঙ্গতি সাধন। মেয়েরা এই শিক্ষা নিয়ে জন্মায়। অথচ সংসারে তারা কোনো দাম পেল না। সব চেয়ে বড়কথা সে জন্য তাদের কোন অভিযোগ বা অভিমান নেই,এটাই তাদের মহত্ব।
রতির চোখের পাতা ভিজে যায়,চোখ মুছে লাজুক হেসে বলল,উমাদা জানে আমার কথায় কথায় চোখে জল এসে যায়।
খুশবন্ত ঢুকে বলল,অনেক দেরী হয়ে গেল। কান্তা–।
দলজিৎ এসে বললেন,কান্তা স্নানে গেছে।
–রান্না কতদুর?
–হয়ে গেছে,আমিই করেছি। দলজিৎ বললেন।
ওরা স্নান করেই বেরিয়েছিল। রতি স্নানে গেল। কান্তা টেবিল গোচ্ছাছে। উমানাথ উশ্রী টেবিলে বসে দলজিতের সঙ্গে কথা বলছে। স্বামীর কথা বলতে বলতে দলজিতের চোখে জল এসে গেল। রতি বাথ্রুম থেকে বের হল। উমা জিজ্ঞেস করে,আণ্টি আপনার জামাই কেমন হল?
দলজিৎ উঠে রতিকে বুকে চেপে ধরে বলল,আমার বেটা মানি আছে মানি।
খুশবন্ত বিরক্ত হয়। আদর করে নাম দিয়েছে মানি। মানি আগে কি করেছে জানে না তো। চেয়ার টেনে বসে বলল,আম্মী ভুখ লেগেছে।
রতিকে ছেড়ে দিতে ঘরে গিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে। মুন্নির আচরণ রতির নজর এড়ায় নি। আম্মীকে নিয়ে মুন্নির মনোভাব রোগে না দাঁড়িয়ে যায়।
–মানিকে মতলব কি জানো?শিউজী আছে। দলজিৎ আপন উচ্ছ্বাসে বললেন।
কান্তা চারটে প্লেট দিয়ে গেল। রতি এসে মুন্নির পাশে বসল। তরকারি মিশ্রিত ভাত দেখে উশ্রী জিজ্ঞেস করে,এটা কি?
রতি বলল,আলু গোবি পোলাও। আম্মী বানিয়েছে খেয়ে দেখুন। রতি বলল।
খেতে খেতে আরেকবার বঙ্কার কথা বলল,উমানাথ। খুসবন্ত বিস্ময় প্রকাশ করে। বঙ্কার এই আচরণ প্রত্যাশিত নয়। রতি বলল,অবস্থা পরিবেশ মানুষকে চালিত করে। খুশবন্ত আড়চোখে দেখল রতিকে। উমানাথ বলল,দোকান করার জন্য রতি টাকা দেবে। খুশবন্ত বলল,ও টাকা কোথায় পাবে?
উমানাথ রতির দিকে তাকালো। রতি মাথা নীচু করে খেয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি পদ খুব তৃপ্তি করে খেলো ওরা। কথা হল কাল সন্ধ্যেবেলা খুশবন্ত স্টেশনে পৌছে দেবে। উমানাথ মৃদু আপত্তি করল।
পরের দিন সন্ধ্যেবেলা জিপে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌছে দিল। মালপত্তর তুলে উমানাথ প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। নিজের জায়গায় বসে উশ্রী জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে রতির সঙ্গে কথা বলছে। খুশবন্ত মাঝে মাঝে আড়চোখে দেখে। ট্রেনের হুইশল বাজতে উমানাথ ট্রেনে উঠে পড়ল। খুশবন্ত পকেট থেকে একটা খাম বের করে উমার হাতে দিল। ট্রেন ছেড়ে দিল। প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ে। এক সময় দৃষ্টি সীমার বাইরে চলে যায় ট্রেন। খুশবন্ত মৃদু হেসে বলল,বন্ধু চলে যাচ্ছে আর তুমি সারাক্ষণ মেয়েটার সঙ্গে কি এত কথা তোমার?
–কি করব ডাকলে যাবো না?
–মেয়েরা তোমাকেই কেন ডাকে?
রত্নাকর চোখ তুলে তাকায় হেসে বলে,মুন্নি তুমি সেই মেয়েলী সীমা হতে বেরোতে পারোনি।
জায়গায় বসে উমানাথ খামটা খুলল,পঞ্চাশ হাজারের চেক তার নামে। সঙ্গে একটা চিরকুট। চিরকুট খুলে চোখের সামনে মেলে ধরল। ” উমানাথ,যখন রতি ছিল না ভাল ছিলাম কোনো চিন্তা ছিলনা। বিয়ের পর চিন্তা পয়দা হল,সারাক্ষন ভয়ে ভয়ে থাকি, হারিয়ে ফেলব নাতো? কলকাত্তা গেলে দেখা হবে। খুশবন্ত সোম কাউর। “
[সমাপ্ত]