ইসলামে ভ্রাতৃত্ব
ভূমিকা :
সুবিশাল সৃষ্টিজগতের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হ'ল মানুষ। পৃথিবীর সকল মানুষ এক আদমের সন্তান। মহান আল্লাহ বলেন,يَا أََيُّهَا النَّاسُ اتَّقُواْ رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالاً كَثِيْراً وَّنِسَاءً. 'হে মানবমন্ডলী! তোমরা তোমাদের সেই প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে একজন ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে তার স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন। এ দু'জন থেকে অসংখ্য নারী-পুরুষ ছড়িয়ে দিয়েছেন' (নিসা ৪/১)। সেই সুবাদে জাতি-ধর্ম-ভাষা-বর্ণ নির্বিশেষে পৃথিবীর সকল মানুষ আদম-হাওয়া পরিবারের সদস্য এবং পরস্পর ভাই ভাই।
প্রত্যেক মানুষ স্বভাবধর্মের উপর জন্মগ্রহণ করে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
مَا مِنْ مَوْلُوْدٍ إِلاَّ يُوْلَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ،ِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُمَجِّسَانِهِ كَمَا تُنْتَجُ الْبَهِيْمَةُ بَهِيْمَةً جَمْعَاءَ، هَلْ تُحِسُّوْنَ فِيْهَا مِنْ جَدْعَاءَ؟ ثُمَّ يَقُوْلُ : فِطْرَةَ اللهِ الَّتِيْ فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لاَ تَبْدِيْلَ لِخَلْقِ اللهِ ذَلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ.
'প্রত্যেক সন্তান ফিতরাত (স্বভাবধর্ম)-এর উপর জন্মগ্রহণ করে থাকে। অতঃপর তার বাবা-মা তাকে ইহুদী, খৃষ্টান অথবা অগ্নিপূজক বানায়। যেভাবে পশু পূর্ণাঙ্গ পশুই প্রসব করে, তাতে তোমরা কোন কানকাটা দেখ কি? (দেখ না। অতঃপর মানুষ তার কান কেটে, নাক ছিদ্র করে বিকলাংগ করে দেয়)। অতঃপর তিনি (এর প্রমাণে এই আয়াতটি) পাঠ করলেন, আল্লাহর ফিতরাত যার উপর তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটিই সরলসোজা মযবূত দ্বীন'। (মুত্তাফাক আলাইহ; মিশকাত হা/৯০।) আর মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হ'ল সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করা। শরীরের একটি অঙ্গ যেমন পৃথকভাবে কল্পনা করা যায় না, তেমনি সমাজে বসবাসকারী লোকদেরকেও পৃথকভাবে ভাবার কোন অবকাশ নেই। মানবজাতির আদি পিতা আদম (আঃ)-এর নিঃসঙ্গতা দূর করার জন্যই সঙ্গী হিসাবে বিবি হাওয়া (আঃ)-এর সৃষ্টি এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ বহন করে। সহজাত প্রবৃত্তির তাড়না এবং বহুমুখী প্রয়োজন পূরণের তাগিদে মানুষকে সামাজিক পরিবেশে বসবাস করতে হয়। মানব জীবনে সমাজের প্রয়োজনীয়তার কথা বলতে গিয়ে সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার বলেন, Man is dependent on society for protection, comfort, nurture, education, equipment, opportunity and the multitude of definite services which society provides. His birth in socicty brings with it the absolute need of society itself. 'মানুষ তার নিরাপত্তা, সুখ, পরিচর্যা, শিক্ষা, উপকরণ, সুযোগ-সুবিধা এবং সমাজের দেয়া বহুমুখী সেবাকার্যের জন্য সমাজের উপর নির্ভরশীল। সমাজে মানুষের জন্মগ্রহণই সমাজের প্রয়োজনীয়তার কথা সূচিত করে'।