What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

স্মৃতির অতল থেকে সদ্যপ্রয়াত হ্যারি বেলাফন্টে (1 Viewer)

BRICK

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Dec 12, 2019
Threads
355
Messages
10,073
Credits
81,757
T-Shirt
Glasses sunglasses
Calculator
Watermelon
Pistol
Pistol
সদ্যপ্রয়াত হ্যারি বেলাফন্টে-কে শুধুমাত্র গায়ক হিসেবে স্মরণ করা আর রবীন্দ্রনাথকে শুধুই কবি হিসেবে মনে রাখা, দুটো প্রায় একই ব্যাপার। মানে, দুই ক্ষেত্রেই মানুষটার বিস্তারের জায়গাটা মনে না রাখতে পারা।

হ্যাঁ, ঠিকই, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আমাদের প্রথম পরিচয় যেমন তাঁর গান ও কবিতার সুবাদে, বেলাফন্টের সঙ্গেও তেমনই পরিচয়ের শুরু তাঁর গান দিয়েই। আশ্চর্য ভরাট ও সুরেলা কন্ঠ, সহজ সুর, ভণিতাহীন উচ্চারণ - বেলাফন্টের গান নিয়ে কোনও প্রশংসাই কি যথেষ্ট!!

বিশেষত আমরা যারা প্রাক-উদারীকরণ মফস্বলি বাংলা মিডিয়াম, আমরা যারা প্রথম প্রথম হস্টেলে গিয়ে শহুরে ইংলিশ মিডিয়ামদের দিকে জুলজুল করে দেখতাম যুগপৎ সঙ্কোচ-সম্ভ্রম-ঈর্ষা-অনুকম্পার দৃষ্টিতে, তাদের প্রথম শোনা ইংরেজি গান বেলাফন্টে কিনা বলা মুশকিল, কিন্তু একেবারে শুরুতেই ভালোবেসে ফেলা গানগুলোর মধ্যে জামাইকা ফেয়ারওয়েল থাকতই। সহজ-সরল সুর, সহজবোধ্য কথা - এমনকি বাংলা মিডিয়ামের কানেও সহজবোধ্য উচ্চারণ - এ গান ভালোবাসতে পারেনি, এমন মানুষ পাওয়া মুশকিল। ব্যানানা বোট সং-ও শোনা ওই সময়েই, শুধু তখন জানতাম না সেই গানের মধ্যে ডে-ও উচ্চারণের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে কতখানি মর্মস্পর্শী ইতিহাস - রাতভর জাহাজে কলা বোঝাই করা দাসশ্রমিকের দীর্ঘশ্বাস - লজ্জার ইতিহাসকে আকর্ষণীয় সুরের মধ্যে লুকিয়ে রেখে বেলাফন্টের অন্তর্ঘাত।

অভিনেতা বেলাফন্টেও যথেষ্ট উজ্জ্বল। যদিও, আমার মতো, অনেকেই সম্ভবত তাঁর অভিনয় খুব বেশি দেখেনি। বিশেষত আমরা যারা শহর থেকে দূরে থাকার কারণে ইংরেজি ছবি বিশেষ দেখিনি। কচিৎ-কদাচিৎ দেখতে গেলেও সংলাপের বেড়া ডিঙিয়ে ছবির রসাস্বাদন করে উঠতে পারিনি, এবং সেকারণেই আরও বেশি সংখ্যায় ইংরেজি সিনেমা দেখার আগ্রহ জন্মায়নি। দেখা হয়নি বিশেষ, তবু তিনি যে অভিনেতা হিসেবেও অত্যন্ত খ্যাতিমান, এটুকু জানতাম।

কিন্তু গায়ক-অভিনেতা-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের সীমা পার হয়ে হ্যারি বেলাফন্টে ছিলেন, এককথায়, ফেনোমেনন। একটা আশ্চর্য সময়ের ফসল, যিনি সেই সময়ের যাবতীয় অনুসরণযোগ্য গুণ আত্মস্থ করে নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন, প্রকৃত অর্থেই দেশকালের সীমানা অতিক্রম করে।

মার্কিন দেশে কালো মানুষদের অধিকার রক্ষার লড়াই, সিভিল রাইটস মুভমেন্ট দিয়ে যে দীর্ঘ যাত্রার শুরু - মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের জামিন হয়ে তাঁকে জেল থেকে ছাড়িয়ে এনেছিলেন বেলাফণ্টে-ই, সেই মুক্তির পরই ঐতিহাসিক মিছিল, যার শেষে সেই কালজয়ী বক্তৃতা 'আই হ্যাভ আ ড্রিম' - পরবর্তী সময়ে সেই প্রতিবাদী কন্ঠ সোচ্চার হয়েছিল আফ্রিকার মানুষের জন্য লড়াইয়ে, মহাদেশ জুড়ে এইডসের মহামারীর মুহূর্তে সঠিক চিকিৎসা পাওয়ার অধিকারের দাবিতে। বামপন্থী ভাবধারার প্রতি বিশ্বাস ছিল অটুট। সমানাধিকার, সাম্য, সবার সমান সম্মানে বেঁচে থাকার অধিকার নিয়ে কথা বলতে তাঁর গলা কাঁপেনি। সব সময়ই সোচ্চার ছিলেন শোষণের বিরুদ্ধে, হিংসার বিরুদ্ধে, অত্যাচার-অনাচারের বিরুদ্ধে। নিজের দেশের প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ প্রসঙ্গে বলতে পেরেছিলেন, বিশ্বের সবচাইতে বড় সন্ত্রাসবাদী। আবার, কালো মানুষের অধিকারের দাবিতে আজীবন সোচ্চার থাকার পরও মার্কিন সরকারের শীর্ষ আমলা পদে আসীন দুই কৃষ্ণাঙ্গ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, আগেকার সময়ে কৃষ্ণাঙ্গ দাসেরা শ্বেতাঙ্গ প্রভুর ক্ষেতে কাজ করত, আর এঁরা দাসত্ব করছেন হোয়াইট হাউসের, উন্নতি বলতে এই!

হ্যাঁ, বেলাফন্টে যখনই প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন, সেই কন্ঠ সবার কানে পৌঁছেছে তাঁর গায়ক-অভিনেতা হিসেবে খ্যাতির কারণেই। তবু গায়ক হিসেবে তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের চাইতেও, অন্তত এই সময়ে, তাঁর অভাব বেশি অনুভূত হবে প্রতিবাদের ক্ষেত্রে। কেননা, আমরা এমন এক অদ্ভুত সময়ে বাস করছি, যখন শিল্পীরা চলেন হয় যথাসম্ভব আঁচ বাঁচিয়ে, নইলে অকপটে ক্ষমতার পদলেহন করে। যখন প্রতিবাদ যেটুকু হয় - কচিৎ-কদাচিৎ - তার মধ্যেও মিশে থাকে হিসেব-নিকেশ। সেই আশাহীন বর্তমানের মুহূর্তকে তীব্র ও অকপট প্রতিবাদে, শ্লেষে বিঁধতে পারতেন যে হাতে-গোনা কয়েকটি মানুষ, তাঁদের একজন আজ চলে গেলেন। হিসেব-নিকেশের তোয়াক্কা না করে সত্যিটা সপাটে বলতে পারতেন যাঁরা, তাঁদের অন্যতম পুরোধা বেলাফণ্টের মৃত্যু এই মেনে-নেওয়া মানিয়ে-নেওয়ার সময়ে বড় ক্ষতি।

খ্যাতির জন্য ছুটতে গিয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতা বিস্মৃত হয়েছেন বলে এই তো বছর কয়েক আগেই পপ তারকা বিয়ন্সে-কে তীব্র ভর্ৎসনা করেছিলেন বেলাফন্টে।

আমাদের এখানে যাঁরা বিভিন্ন তথাকথিত সৃষ্টিশীলতার সঙ্গে যুক্ত আছেন বলে আত্মপ্রসাদ লাভ করেন, এবং কারণে-অকারণে ক্ষমতার ধামা ধরে নেতানেত্রীদের মঞ্চের পেছনে হাসিমুখে যূথবদ্ধ ছবিও তোলেন, তাঁদের অনেকেও, হয়ত, বেলাফন্টের প্রয়াণে আজ শোকজ্ঞাপন করবেন। কেউ কেউ এমনকি দু'ছত্র কবিতাও লিখে বসতে পারেন। বা কেউ হয়ত তাঁর গান গেয়ে বসতে পারেন দু'কলি। কাজগুলো এখন সহজ।

বেলাফন্টে ছিলেন এক গগনস্পর্শী আয়না। আজ আয়নাটা ভেঙে গেল। অনেকে স্বস্তি পাবেন, নিশ্চিত।

সঙ্গের ছবি - সিভিল রাইটস মুভমেন্টের অর্থসংগ্রহের জন্য প্যারিসে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে গান গাইছেন হ্যারি বেলাফন্টে। ১৯৬৬ সালে তোলা ছবি। গার্ডিয়ান-এর সাইটে পেলাম।
ডা ۔ বিষাণ বসু
 

Users who are viewing this thread

Back
Top