What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other নিয়াজ আহমেদ অংশু: নব্বই দশকের বহুমুখী প্রতিভা (1 Viewer)



‘নিয়াজ আহমেদ অংশু’ নামটি নিশ্চয়ই আমার সমবয়সী বাংলা গানের শ্রোতাদের মনে আছে। এই নামটি কারো ভুলে যাওয়ার কথা নয়। বহু শ্রোতাপ্রিয় গান ও অ্যালবামের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন তিনি।

আজ আপনাদের নব্বই দশকের বাংলা গানের সোনালী প্রজন্মের সোনালী মানুষ প্রিয় নিয়াজ আহমেদ অংশুর গল্প বলবো। সেই সময়ে বাংলা ব্যান্ড ও আধুনিক গান ছিল জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। আমরা পেয়েছিলাম একঝাঁক মেধাবী তরুণ।

তখন বাজারে আসে বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের কিংবদন্তী আইয়ুব বাচ্চুর একক অ্যালবাম ‘কষ্ট’। ঝড় তোলা সেই অ্যালবামের নান্দনিক প্রচ্ছদ করেন নিয়াজ আহমেদ অংশু। এভাবেই প্রথম শ্রোতারা নামটির সঙ্গে পরিচিত হোন। এরপর একে একে এলআরবির স্বপ্ন, ফেরারি মন, আমাদের বিস্ময়, জেমসের ‘দুঃখিনী দুঃখ করোনা’সহ অসংখ্য ঝড় তোলা অ্যালবামের প্রচ্ছদ ডিজাইনার হিসেবে অংশুকে আমরা পাই।

অ্যালবামের প্রচ্ছদ ডিজাইন যে একটি শিল্প তা বুঝতে শিখি অংশু ভাইয়ের কাছ থেকে। ১৯৯৫ সালের বাজারে এলো আইয়ুব বাচ্চুর সুর ও সঙ্গীতে মিক্সড অ্যালবাম ‘তারা ভরা রাতে’, যা প্রকাশের পরপরই সুপারডুপার হিট। অ্যালবামের বাচ্চু ভাইয়ের শিরোনাম গানটি তো ব্যান্ড সংগীতে কালজয়ী তালিকা ঠাঁই করে নেয়। একই অ্যালবামে ছিল বাচ্চু ভাইয়ের গাওয়া ‘আঁধারে ছিলাম এই আমি’ শিরোনামের চমৎকার কথার মন ঠাণ্ডা চমৎকার গান। এমন সুন্দর গান কে লিখেছে খুঁজতে গিয়ে বিস্মিত হলাম। এ কী? এতো দেখছি সেই প্রচ্ছদ ডিজাইনার নিয়াজ আহমেদ অংশুর নাম! সেই প্রথম জানতে পারলাম আমরা অংশু ভাই গানও লিখতে পারেন। আর এটিই তার লেখা প্রথম গান।



গীতিকার হিসেবে অংশু যে কতটা অসাধারণ তা তার গানের কথাগুলো শুনলে বুঝতে পারবেন। ঝড় তোলা ‘ক্যাপসুল ৫০০’ অ্যালবামে ফিলিংসের ‘তোমার নিষিদ্ধ ইতিহাস’ ও এলআরবির ‘আবেগগুলো খরচ করো সাবধানে’ তো ভিন্নধর্মী কথার দুর্দান্ত দুটো গান হিসেবে সেই সময় শ্রোতাদের মুখে মুখে ছিল।

অংশু ভাইয়ের গানগুলোর কথা যদি খেয়াল করেন, দেখবেন তিনি প্রকৃতি ও মানুষের অনুভূতির মধ্যে অসাধারণ একটি যোগসূত্র তৈরি করেছেন। ‘বুকের ভেতর কাঁদে অনেক চেনা কেউ/ শ্যাওলা পুকুর জলে ছোট্ট একটা ঢেউ’, ‘যদি মেঘ আর বৃষ্টি একাকার হয়ে যায়/ যদি জোছনায় ভিজে ভিজে তারারা ফিরে যায়/ বুঝে নিও তুমি এখনও কেউ তোমাকেই চায়’ গানগুলো তারই প্রমান দেয়।

আবার আইয়ুব বাচ্চুর কণ্ঠে ‘সে তোমার জানার কথা নয়/ কখন আমি হাসি/ সে তোমার জানার কথা নয়/ কখন আমি কাঁদি’ কিংবা ‘মেয়ে তুমি কি দুঃখ চেনো নাকি চেনো না/ তবে চিনবে কেমন করে এই আমাকে’ গানগুলো পোড়ামনের ক্ষোভ, আকুতি অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।

প্রচ্ছদ ডিজাইন বা গান লেখা দুটোতেই অংশু সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তার গানে মাঝে কেমন যেন একটা হাহাকার লক্ষ্য করা যায়। অধিকাংশ গানই শুনতে শুনতে আনমনা করে দেয়।

বাংলা অডিও যুগের সেরা ব্যান্ড মিক্সড অ্যালবাম ‘ধুন’ নামটিও নিয়াজ আহমেদ অংশুর দেয়া। এরকম অসংখ্য সেরা সব কাজের সাথে জড়িয়ে আছেন তিনি। বাচ্চু, মাকসুদ, জেমস, হাসান, নাসিম আলী, নীলয়, এসআই টুটুল, আগুন রেশাদ, জুয়েলসহ জনপ্রিয় শিল্পীরা যেমন অংশুর লেখা গান গেয়ে নিজেদের জনপ্রিয়তাকে উঁচুতে নিয়েছেন; তেমনি ঝলক, পিয়াস, দূরে, কানিজ সুবর্ণার মতো নতুন শিল্পীরা অংশুর লেখা গান গেয়ে হয়েছেন জনপ্রিয় ও শ্রোতাপ্রিয়।

মজার ব্যাপার হচ্ছে অংশু কিন্তু সুরকার হিসেবেও দারুণ। কিন্তু একটি অ্যালবাম ছাড়া তাকে আর কোথাও আমরা সুরকার হিসেবে পাইনি। আধুনিক ফোক ধারার জনপ্রিয় মিক্সড অ্যালবাম ‘দাঁড়ারে’র সবগুলো গান লিখেছেন ও সুর করেছেন নিয়াজ আহমেদ অংশু। সেই অ্যালবামটি দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিল অথচ এরপর কেন অংশু আর গানে সুর দেয়নি তা রীতিমতো একটি রহস্য শ্রোতাদের কাছে।

অংশুর করা দুটি প্রচ্ছদ নিয়ে কথা বলা যাক। প্রথম প্রচ্ছদ আইয়ুব বাচ্চুর সাড়া জাগানো অ্যালবাম ‘কষ্ট’। এ প্রচ্ছদের কথা একটু চিন্তা করুন। সাদা রঙের প্রচ্ছদের মাঝখানে একটি সোফায় গা হেলিয়ে শুয়ে আছেন আইয়ুব বাচ্চু, যেন বিষাদগ্রস্ত একজন মানুষ। অ্যালবামের প্রচ্ছদে প্রকাশ পায় একটা কষ্ট কষ্ট ভাব। একইভাবে এলআরবির ‘স্বপ্ন’ অ্যালবামের প্রচ্ছদ দেখুন। হলুদ রঙের পৃষ্ঠায় নগ্ন একটি শিশু সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে যাকে ধরা হয়েছে মানুষের স্বপ্ন বা আকাঙ্ক্ষা রূপে। এমনই সব দারুণ দারুণ নান্দনিক প্রচ্ছদ আমাদের উপহার দিয়েছেন তিনি। প্রচ্ছদে তিনি ছিলেন আলাদা ও স্বতন্ত্র একজন। যে কারণে সেই সময়ের শ্রোতারা নিয়াজ আহমেদ অংশুর নাম দিয়েছিল ‘ক্লাসিক অংশু’।



এখন অংশুর লেখা কোন নতুন গান আমরা পাই না। আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য অনেক হতাশাজনক বিষয় এটি। গত এক যুগে বাংলা গানে অনেক গীতিকার এসেছেন কিন্তু নিয়াজ আহমেদ অংশুর মতো একজন অসাধারন গীতিকার কি আমরা পেয়েছি? আমার কথা বিশ্বাস না হলে অংশুর লেখা গানগুলো শুনে দেখুন আর ভাবুন।

একনজরে এলআরবি, আইয়ুব বাচ্চুর জন্য গান— স্বপ্ন; জন্মহীন নক্ষত্র, গল্প শেষে, আমাদের বিস্ময়; খুব সহজে, একটি সাকো, এই রোদ্দুর জানে না, ষোলো আনা, সুইসাইড নোট, জল জোছনা, অচেনা জীবন; স্বেচ্ছাচারী, মানুষ বলে মানুষ চিনে, এক বিকেলের মেয়ে, মিথ্যের বাদশা, একবার, মনে আছে নাই নাই; তোমাকে, যুদ্ধ; যে চলে যায় যাবার আগে; আইয়ুব বাচ্চু একক অ্যালবাম সময়; চৌদ্দপুরুষের ভূমিদাস, আকাশ কাঁদে বাতাস কাঁদে, শেষ, সব আলো নিভিয়ে দিয়ে, বৃষ্টি, ভাড়া খাটা গিটারের ভাড়াটে প্রেমিক, একা; এক নিম্নবিত্ত পিতার প্রার্থনা, রিমঝিম বৃষ্টি; বিরান শহর, ও পাখি, প্রেম প্রেমের মত; কাল ছিল বর্ষা কাল, এখনো কেউ তোমাকেই চাই (ব্যথা), সে তোমার জানার কথা নয় (তারকা মেলা), ধুলোমাখা পথ (বহুরূপী), তোমাকে ডেকে ডেকে (একটি গোলাপ) রুপালি চাঁদ, অলিক আকাশ, মেয়ে (মেয়ে), পথ থেকে পথে (আড্ডা), তোমাকে ভালোবেসে (ভালোবাসা) ও আবেগগুলো খরচ করো সাবধানে (ক্যাপসুল ৫০০)।

ফিডব্যাকের জন্য লিখেছেন বন্ধুর খোঁজে জোছনায়, এই মন মানে না তো মানা, কাদা-মাটি, মন-মুনিয়া (ফিডব্যাক ২), স্বাধীনতা – এক দুই তিন, তেপান্তরের মাঠে, সূর্য ছোঁয়ে বলি (কারবালা), আশিকুজ্জামান টুলুর জন্য কোন খেয়ালে, চোর, উদাসী আঙ্গুল (কোন খেয়ালে), ফিলিংসের তোমার নিষিদ্ধ ইতিহাস (ক্যাপসুল ৫০০), ফেইথের ছেড়া খুঁজছি তোমায়, অন্ধের চোখে দেখছোটা কী (নাটাই), আজম খানের পুড়ে যাচ্ছে পুড়ে যায়, ঘরবিবাগী, রোদের কাছে ফেরা, এই দেশে (পুড়ে যাচ্ছে পুড়ে যায়) এবং জুয়েলের বেশি কিছু নয়, আমার আপন আধার অযতন, সবুজ মৌনতা ও একই রাত্রি একই অভিমান।

কানিজ সুবর্ণার কানিজ; জামদানি আঁচল, উরালিয়া, কন্যা কাব্য, ছোট্ট পরী, দস্যি মেয়ে, হৃদয়ের একলা বন্দরে, মন গেছে সন্যাসে, পাতায় পাতায়, ভুলের মাশুল, রোদেলা ওড়না ও ভালোবাসা মানে অ্যালবামের বৃষ্টির ঘ্রাণ। দুরে’র মেঘবালিকা; মেঘবালিকা, আপনপর, ভালবাসার কথা উড়ে ঝড়ে ও কোনদিন তুমি পাবেনা আমাকে।

তুমিহীনা সারাবেলা অ্যালবামে এই নদী জল কোলাহল (ঝলক), এ শহর ডুবে যায় (নিলয়), মুঠোভরা স্নিগ্ধতা (নাসিম আলী খান), খেয়ালী আলাপন (নাসিম আলী খান), রাজকুমারী অ্যালবামে দুঃখতে কেন দুঃখতেটা, এই পূর্ণিমা, ডুবে রাত ডুবে চাঁদ, ভয় কিসের হৃদি, চিঠি লেখালেখি, কোথায় যাবে (সহ গীতিকার বাপ্পী খান), যে যায় চলে যায়, ময়ুরী অ্যালবামে ফিরে যায় পরিচিতা, অধরা, মনের নিয়ম, এই সময়,অনেক চেনা ঢেউ, স্বান্তনা, আশার আলোয়, দাঁড়ারে অ্যালবামের সব গানের গীতিকার ও সুরকার তিনি এবং একটি গোলাপ অ্যালবামে এক আকাশের নীচে (টুটুল)।

অ্যালবাম কভার— আইয়ুব বাচ্চু ও এলআরবি’র স্বপ্ন, ফেরারী মন, আমাদের বিস্ময়, মন চাইলে মন পাবে, কষ্ট ও অচেনা জীবন; জেমস, ফিলিংস ও নগর বাউলের নগর বাউল, দুঃখিনী দুঃখ করোনা, দুষ্টু ছেলের দল, আমি তোমাদেরই লোক; মিক্সড অ্যালবাম স্ক্রু ড্রাইভার, ক্যাপসুল ৫০০, তারাভরা রাতে, তুমিহীনা সারাবেলা, রাজকুমারী, ময়ূরী, টোন এন্ড টিউন, বারো মাস, মেয়ে, সীমানা, ১০ এ ১০, একটি গোলাপ, আষাঢ় শ্রাবণ, এখনো দু’চোখে বন্যা, শেষ দেখা, ভাঙ্গা মন, হারজিত, দেয়াল, চিঠির উত্তর দিও, দাগ থেকে যায়, দেশে ভালবাসা নাই, ছাড়পত্র, প্রজন্ম; স্বাধীনতা ব্যান্ডের কারবালা, ফিডব্যাকের ফিডব্যাক ২, দলছুটের হৃদয়পুর, অর্থহীনের বিবর্তন; একক অ্যালবামের মধ্যে আজম খানের পুড়ে যাচ্ছে পুড়ে যায়, কানিজ সুবর্ণার ভালোবাসা মানে, রং, কানিজ, বাপ্পার রাতের ট্রেন, ধুলোপড়া চিঠি, অঞ্জন দত্তর হ্যালো বাংলাদেশ এবং সুমন স্বপ্নগুলো তোমার মতো।

* লিখেছেন: কবি ও কাব্য
 
সম্পূর্ণ একমত । সত্যি তিনি বহুমুখী প্রতিভা ছিলেন।
 
গানগুলো শুনেছি, মজা পেয়েছি কিন্তু কার লেখা তা জানতাম না. ধন্যবাদ.
 


'নিয়াজ আহমেদ অংশু' নামটি নিশ্চয়ই আমার সমবয়সী বাংলা গানের শ্রোতাদের মনে আছে। এই নামটি কারো ভুলে যাওয়ার কথা নয়। বহু শ্রোতাপ্রিয় গান ও অ্যালবামের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন তিনি।

আজ আপনাদের নব্বই দশকের বাংলা গানের সোনালী প্রজন্মের সোনালী মানুষ প্রিয় নিয়াজ আহমেদ অংশুর গল্প বলবো। সেই সময়ে বাংলা ব্যান্ড ও আধুনিক গান ছিল জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। আমরা পেয়েছিলাম একঝাঁক মেধাবী তরুণ।

তখন বাজারে আসে বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের কিংবদন্তী আইয়ুব বাচ্চুর একক অ্যালবাম 'কষ্ট'। ঝড় তোলা সেই অ্যালবামের নান্দনিক প্রচ্ছদ করেন নিয়াজ আহমেদ অংশু। এভাবেই প্রথম শ্রোতারা নামটির সঙ্গে পরিচিত হোন। এরপর একে একে এলআরবির স্বপ্ন, ফেরারি মন, আমাদের বিস্ময়, জেমসের 'দুঃখিনী দুঃখ করোনা'সহ অসংখ্য ঝড় তোলা অ্যালবামের প্রচ্ছদ ডিজাইনার হিসেবে অংশুকে আমরা পাই।

অ্যালবামের প্রচ্ছদ ডিজাইন যে একটি শিল্প তা বুঝতে শিখি অংশু ভাইয়ের কাছ থেকে। ১৯৯৫ সালের বাজারে এলো আইয়ুব বাচ্চুর সুর ও সঙ্গীতে মিক্সড অ্যালবাম 'তারা ভরা রাতে', যা প্রকাশের পরপরই সুপারডুপার হিট। অ্যালবামের বাচ্চু ভাইয়ের শিরোনাম গানটি তো ব্যান্ড সংগীতে কালজয়ী তালিকা ঠাঁই করে নেয়। একই অ্যালবামে ছিল বাচ্চু ভাইয়ের গাওয়া 'আঁধারে ছিলাম এই আমি' শিরোনামের চমৎকার কথার মন ঠাণ্ডা চমৎকার গান। এমন সুন্দর গান কে লিখেছে খুঁজতে গিয়ে বিস্মিত হলাম। এ কী? এতো দেখছি সেই প্রচ্ছদ ডিজাইনার নিয়াজ আহমেদ অংশুর নাম! সেই প্রথম জানতে পারলাম আমরা অংশু ভাই গানও লিখতে পারেন। আর এটিই তার লেখা প্রথম গান।



গীতিকার হিসেবে অংশু যে কতটা অসাধারণ তা তার গানের কথাগুলো শুনলে বুঝতে পারবেন। ঝড় তোলা 'ক্যাপসুল ৫০০' অ্যালবামে ফিলিংসের 'তোমার নিষিদ্ধ ইতিহাস' ও এলআরবির 'আবেগগুলো খরচ করো সাবধানে' তো ভিন্নধর্মী কথার দুর্দান্ত দুটো গান হিসেবে সেই সময় শ্রোতাদের মুখে মুখে ছিল।

অংশু ভাইয়ের গানগুলোর কথা যদি খেয়াল করেন, দেখবেন তিনি প্রকৃতি ও মানুষের অনুভূতির মধ্যে অসাধারণ একটি যোগসূত্র তৈরি করেছেন। 'বুকের ভেতর কাঁদে অনেক চেনা কেউ/ শ্যাওলা পুকুর জলে ছোট্ট একটা ঢেউ', 'যদি মেঘ আর বৃষ্টি একাকার হয়ে যায়/ যদি জোছনায় ভিজে ভিজে তারারা ফিরে যায়/ বুঝে নিও তুমি এখনও কেউ তোমাকেই চায়' গানগুলো তারই প্রমান দেয়।

আবার আইয়ুব বাচ্চুর কণ্ঠে 'সে তোমার জানার কথা নয়/ কখন আমি হাসি/ সে তোমার জানার কথা নয়/ কখন আমি কাঁদি' কিংবা 'মেয়ে তুমি কি দুঃখ চেনো নাকি চেনো না/ তবে চিনবে কেমন করে এই আমাকে' গানগুলো পোড়ামনের ক্ষোভ, আকুতি অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।

প্রচ্ছদ ডিজাইন বা গান লেখা দুটোতেই অংশু সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তার গানে মাঝে কেমন যেন একটা হাহাকার লক্ষ্য করা যায়। অধিকাংশ গানই শুনতে শুনতে আনমনা করে দেয়।

বাংলা অডিও যুগের সেরা ব্যান্ড মিক্সড অ্যালবাম 'ধুন' নামটিও নিয়াজ আহমেদ অংশুর দেয়া। এরকম অসংখ্য সেরা সব কাজের সাথে জড়িয়ে আছেন তিনি। বাচ্চু, মাকসুদ, জেমস, হাসান, নাসিম আলী, নীলয়, এসআই টুটুল, আগুন রেশাদ, জুয়েলসহ জনপ্রিয় শিল্পীরা যেমন অংশুর লেখা গান গেয়ে নিজেদের জনপ্রিয়তাকে উঁচুতে নিয়েছেন; তেমনি ঝলক, পিয়াস, দূরে, কানিজ সুবর্ণার মতো নতুন শিল্পীরা অংশুর লেখা গান গেয়ে হয়েছেন জনপ্রিয় ও শ্রোতাপ্রিয়।

মজার ব্যাপার হচ্ছে অংশু কিন্তু সুরকার হিসেবেও দারুণ। কিন্তু একটি অ্যালবাম ছাড়া তাকে আর কোথাও আমরা সুরকার হিসেবে পাইনি। আধুনিক ফোক ধারার জনপ্রিয় মিক্সড অ্যালবাম 'দাঁড়ারে'র সবগুলো গান লিখেছেন ও সুর করেছেন নিয়াজ আহমেদ অংশু। সেই অ্যালবামটি দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিল অথচ এরপর কেন অংশু আর গানে সুর দেয়নি তা রীতিমতো একটি রহস্য শ্রোতাদের কাছে।

অংশুর করা দুটি প্রচ্ছদ নিয়ে কথা বলা যাক। প্রথম প্রচ্ছদ আইয়ুব বাচ্চুর সাড়া জাগানো অ্যালবাম 'কষ্ট'। এ প্রচ্ছদের কথা একটু চিন্তা করুন। সাদা রঙের প্রচ্ছদের মাঝখানে একটি সোফায় গা হেলিয়ে শুয়ে আছেন আইয়ুব বাচ্চু, যেন বিষাদগ্রস্ত একজন মানুষ। অ্যালবামের প্রচ্ছদে প্রকাশ পায় একটা কষ্ট কষ্ট ভাব। একইভাবে এলআরবির 'স্বপ্ন' অ্যালবামের প্রচ্ছদ দেখুন। হলুদ রঙের পৃষ্ঠায় নগ্ন একটি শিশু সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে যাকে ধরা হয়েছে মানুষের স্বপ্ন বা আকাঙ্ক্ষা রূপে। এমনই সব দারুণ দারুণ নান্দনিক প্রচ্ছদ আমাদের উপহার দিয়েছেন তিনি। প্রচ্ছদে তিনি ছিলেন আলাদা ও স্বতন্ত্র একজন। যে কারণে সেই সময়ের শ্রোতারা নিয়াজ আহমেদ অংশুর নাম দিয়েছিল 'ক্লাসিক অংশু'।



এখন অংশুর লেখা কোন নতুন গান আমরা পাই না। আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য অনেক হতাশাজনক বিষয় এটি। গত এক যুগে বাংলা গানে অনেক গীতিকার এসেছেন কিন্তু নিয়াজ আহমেদ অংশুর মতো একজন অসাধারন গীতিকার কি আমরা পেয়েছি? আমার কথা বিশ্বাস না হলে অংশুর লেখা গানগুলো শুনে দেখুন আর ভাবুন।

একনজরে এলআরবি, আইয়ুব বাচ্চুর জন্য গান— স্বপ্ন; জন্মহীন নক্ষত্র, গল্প শেষে, আমাদের বিস্ময়; খুব সহজে, একটি সাকো, এই রোদ্দুর জানে না, ষোলো আনা, সুইসাইড নোট, জল জোছনা, অচেনা জীবন; স্বেচ্ছাচারী, মানুষ বলে মানুষ চিনে, এক বিকেলের মেয়ে, মিথ্যের বাদশা, একবার, মনে আছে নাই নাই; তোমাকে, যুদ্ধ; যে চলে যায় যাবার আগে; আইয়ুব বাচ্চু একক অ্যালবাম সময়; চৌদ্দপুরুষের ভূমিদাস, আকাশ কাঁদে বাতাস কাঁদে, শেষ, সব আলো নিভিয়ে দিয়ে, বৃষ্টি, ভাড়া খাটা গিটারের ভাড়াটে প্রেমিক, একা; এক নিম্নবিত্ত পিতার প্রার্থনা, রিমঝিম বৃষ্টি; বিরান শহর, ও পাখি, প্রেম প্রেমের মত; কাল ছিল বর্ষা কাল, এখনো কেউ তোমাকেই চাই (ব্যথা), সে তোমার জানার কথা নয় (তারকা মেলা), ধুলোমাখা পথ (বহুরূপী), তোমাকে ডেকে ডেকে (একটি গোলাপ) রুপালি চাঁদ, অলিক আকাশ, মেয়ে (মেয়ে), পথ থেকে পথে (আড্ডা), তোমাকে ভালোবেসে (ভালোবাসা) ও আবেগগুলো খরচ করো সাবধানে (ক্যাপসুল ৫০০)।

ফিডব্যাকের জন্য লিখেছেন বন্ধুর খোঁজে জোছনায়, এই মন মানে না তো মানা, কাদা-মাটি, মন-মুনিয়া (ফিডব্যাক ২), স্বাধীনতা – এক দুই তিন, তেপান্তরের মাঠে, সূর্য ছোঁয়ে বলি (কারবালা), আশিকুজ্জামান টুলুর জন্য কোন খেয়ালে, চোর, উদাসী আঙ্গুল (কোন খেয়ালে), ফিলিংসের তোমার নিষিদ্ধ ইতিহাস (ক্যাপসুল ৫০০), ফেইথের ছেড়া খুঁজছি তোমায়, অন্ধের চোখে দেখছোটা কী (নাটাই), আজম খানের পুড়ে যাচ্ছে পুড়ে যায়, ঘরবিবাগী, রোদের কাছে ফেরা, এই দেশে (পুড়ে যাচ্ছে পুড়ে যায়) এবং জুয়েলের বেশি কিছু নয়, আমার আপন আধার অযতন, সবুজ মৌনতা ও একই রাত্রি একই অভিমান।

কানিজ সুবর্ণার কানিজ; জামদানি আঁচল, উরালিয়া, কন্যা কাব্য, ছোট্ট পরী, দস্যি মেয়ে, হৃদয়ের একলা বন্দরে, মন গেছে সন্যাসে, পাতায় পাতায়, ভুলের মাশুল, রোদেলা ওড়না ও ভালোবাসা মানে অ্যালবামের বৃষ্টির ঘ্রাণ। দুরে'র মেঘবালিকা; মেঘবালিকা, আপনপর, ভালবাসার কথা উড়ে ঝড়ে ও কোনদিন তুমি পাবেনা আমাকে।

তুমিহীনা সারাবেলা অ্যালবামে এই নদী জল কোলাহল (ঝলক), এ শহর ডুবে যায় (নিলয়), মুঠোভরা স্নিগ্ধতা (নাসিম আলী খান), খেয়ালী আলাপন (নাসিম আলী খান), রাজকুমারী অ্যালবামে দুঃখতে কেন দুঃখতেটা, এই পূর্ণিমা, ডুবে রাত ডুবে চাঁদ, ভয় কিসের হৃদি, চিঠি লেখালেখি, কোথায় যাবে (সহ গীতিকার বাপ্পী খান), যে যায় চলে যায়, ময়ুরী অ্যালবামে ফিরে যায় পরিচিতা, অধরা, মনের নিয়ম, এই সময়,অনেক চেনা ঢেউ, স্বান্তনা, আশার আলোয়, দাঁড়ারে অ্যালবামের সব গানের গীতিকার ও সুরকার তিনি এবং একটি গোলাপ অ্যালবামে এক আকাশের নীচে (টুটুল)।

অ্যালবাম কভার— আইয়ুব বাচ্চু ও এলআরবি'র স্বপ্ন, ফেরারী মন, আমাদের বিস্ময়, মন চাইলে মন পাবে, কষ্ট ও অচেনা জীবন; জেমস, ফিলিংস ও নগর বাউলের নগর বাউল, দুঃখিনী দুঃখ করোনা, দুষ্টু ছেলের দল, আমি তোমাদেরই লোক; মিক্সড অ্যালবাম স্ক্রু ড্রাইভার, ক্যাপসুল ৫০০, তারাভরা রাতে, তুমিহীনা সারাবেলা, রাজকুমারী, ময়ূরী, টোন এন্ড টিউন, বারো মাস, মেয়ে, সীমানা, ১০ এ ১০, একটি গোলাপ, আষাঢ় শ্রাবণ, এখনো দু'চোখে বন্যা, শেষ দেখা, ভাঙ্গা মন, হারজিত, দেয়াল, চিঠির উত্তর দিও, দাগ থেকে যায়, দেশে ভালবাসা নাই, ছাড়পত্র, প্রজন্ম; স্বাধীনতা ব্যান্ডের কারবালা, ফিডব্যাকের ফিডব্যাক ২, দলছুটের হৃদয়পুর, অর্থহীনের বিবর্তন; একক অ্যালবামের মধ্যে আজম খানের পুড়ে যাচ্ছে পুড়ে যায়, কানিজ সুবর্ণার ভালোবাসা মানে, রং, কানিজ, বাপ্পার রাতের ট্রেন, ধুলোপড়া চিঠি, অঞ্জন দত্তর হ্যালো বাংলাদেশ এবং সুমন স্বপ্নগুলো তোমার মতো।


* লিখেছেন: কবি ও কাব্য
tar bapare jane khub valo laglo.
 

Users who are viewing this thread

Back
Top