What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other লিরিকের জাদুকর লতিফুল ইসলাম শিবলী (1 Viewer)



লতিফুল ইসলাম শিবলী নামটি নব্বই দশকের অডিও ক্যাসেটের কভারে কতবার দেখেছিলেন বলতে পারবেন? জানি প্রশ্নটি খুব কঠিন হয়ে গেছে। কারণ সেই সময়ের কোন শ্রোতাই হিসেব করে বলতে পারবেন না। ‘লতিফুল ইসলাম শিবলী’ নামটি ওই সময়ে কত শত জনপ্রিয় অডিও ক্যাসেটে তারা দেখতে পেয়েছিল তা হিসেব করে বলা মুশকিল। তার কত গান যে না জেনে অজান্তে আজও শ্রোতারা গুনগুন করে! স্বয়ং শিবলী নিজেও হিসেব করে বলতে পারবেন না যে কতগুলো গান তার শ্রোতাপ্রিয় হয়েছিল।

লতিফুল ইসলাম শিবলী বাংলা ব্যান্ড ও আধুনিক গানের এক দুর্দান্ত গীতিকার যিনি ৯০ দশকে অডিও ইন্ডাস্ট্রিতে আসেন। যার লিখা গান গেয়ে ‘ফিলিংস’ (নগর বাউল) ব্যান্ডের নবজন্ম হয়েছিল। যার গান গেয়ে আইয়ুব বাচ্চু, জেমস, টিপু, শাফিন, আগুন, তপন চৌধুরী’র মতো শিল্পীরা আরও বেশি জনপ্রিয় হয়েছিলেন। ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত ফিলিংসের দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘জেল থেকে বলছি’ প্রকাশের পর শ্রোতারা লতিফুল ইসলাম শিবলী নামটির সাথে পরিচিত হয়। এরপর থেকে বারবার এই নাম শ্রোতাদের সামনে আসে আর দারুণ সব গানে মন কেড়ে নেন।

শিবলী গান লিখতেন জীবনের চলার পথের ঘটে যাওয়া ও নিজের চোখে দেখা ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে। যা তার গানকে করেছে অন্যরকম সুন্দর। ইন্টারমিডিয়েটে পড়াকালীন সময়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়ায় যেতে হয়েছিল জেলে; সেই স্মৃতি থেকে লিখলেন ‘জেল থেকে বলছি’, যা ছিল ফিলিংসের দ্বিতীয় অ্যালবামের শিরোনাম গান। গানটি হয়ে যায় সুপারহিট।

নব্বইয়ের শুরুতে চিরচেনা নাটোর থেকে চলে আসেন ঢাকায়। রাজধানীর একটি বাড়ির চিলেকোঠায় ভাড়া থাকতেন, জানালা খুললেই রাতের আকাশের চাঁদটা শিবলীর ঘরে ঢুকে যেতো। যে চাঁদের সাথে কথা বলে একাকি শিবলীর সময় কেটে যেতো। বিছানা থেকে শুয়েই পুরো আকাশ ও আকাশের চাঁদ স্পষ্ট দেখা যেতো। সেই জেগে থাকা চাঁদ নিয়ে শিবলী লিখলেন ‘জানালা ভরা আকাশ’, যা আজও শ্রোতারা শুনেই যাচ্ছে।

এক মধ্যরাতে চিরচেনা নাটোর স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে হেঁটে যাচ্ছিলেন। যে চেনা স্টেশনটি রাতের বেলায় শিবলীর কাছে অচেনা মনে হলো। চেনা অনেকের কাছে অচেনা মনে হলো যে স্মৃতিটি বর্ণনা করেছিলেন ‘নাটোর স্টেশন’ গানটিতে।



এমনিভাবে জীবনের নানা ঘটনাকে শিবলী গানের কথায় তুলে ধরেছিলেন। অভিভাবকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে একদল গানপাগল তরুণ ব্যান্ড সংগীতের মাধ্যমে বাংলা গানের ধারায় যে পরিবর্তন এনেছে, শিবলী তাদেরই অন্যতম। যুগযন্ত্রণার ক্ষ্যাপামো মজ্জাগত বলেই প্রথা ভাঙার যুদ্ধে শিবলী হয়ে ওঠেন আপাদমস্তক ‘রক’। আধুনিক জীবনযন্ত্রণাগ্রস্ত তারুণ্যের ভাষাকে শিবলী উপস্থাপন করেছেন অত্যন্ত সহজসরল ‘রক’-এর ভাষায়। তার সাফল্য এখানেই। তাই অল্প সময়ের মধ্যেই পরিণত হয়েছেন ব্যান্ড জগতের কিংবদন্তি গীতিকবিতে।

নিজের লেখা গানগুলোকে নিজেই সুর দিয়ে নিজের কণ্ঠে তুললেন ‘নিয়ম ভাঙ্গার নিয়ম’ অ্যালবামে। যা শিবলীর নিজের লেখা, সুর ও কণ্ঠের প্রথম ও একমাত্র অ্যালবাম। অনবদ্য সেই অ্যালবামে অনিয়ম, অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে কণ্ঠটি সোচ্চার করেছিলেন।

শিবলী শুধু নিজেকে গান লিখার মধ্যেই আবদ্ধ রাখেননি। তিনি নাট্যকার, মডেলিং, অভিনেতা হিসেবেও আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছিলেন। ৯০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে ‘সেঞ্চুরি ফেব্রিকস’ এর বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে আসেন যেখানে তিনি ছিলেন চুলের ঝুঁটিবাধা ফ্যাশন সচেতন এক মানুষ যেখানে তিনি হলেন ‘কমপ্লিট ম্যান’। বিটিভির প্যাকেজ নাটকের শুরুর দিকে তার লেখা ‘তোমার চোখে দেখি’ নাটকটি বেশ সাড়া ফেলেছিল। সেটি ছিল শিবলীর লেখা প্রথম কোন টেলিভিশন নাটক। এরপর নিজেরই লিখা ‘রাজকুমারী’ নাটকে মির্জা গালিব নামের মূল চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী শমী কায়সারের সাথে। এই তো, কয়েক বছর আগে লেখেন ‘পদ্ম পাতার জল’ সিনেমার চিত্রনাট্য। আজকাল তো শিবলীর উপন্যাস খুবই জনপ্রিয়।

লতিফুল ইসলাম শিবলী আমাদের মাঝে বারবার হাজির হয়েছেন দারুণ সব কাজ নিয়ে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তিনি বাংলা গানের শ্রোতাদের কাছে একজন প্রিয় গীতিকার হয়েই আছেন ও থাকবেন চিরকাল। বাংলা ব্যান্ড সংগীতের শ্রোতাদের কাছে তিনি একজন জীবন্ত কিংবদন্তি।

আইয়ুব বাচ্চু ও এলআরবির জন্য লিখেছিলেন কষ্ট পেতে ভালবাসি, কেউ সুখী নয়, হাসতে দেখো গাইতে দেখো, মাকে বলিস, কষ্ট কাকে বলে, রাজকুমারী, আহা জীবন, নীল বেদনা, একটা চাকরি হবে, চাঁদমামা?, কার কাছে যাবো?, বড়বাবু মাস্টার, চাই জল, মানুষ বড় একা, ও আমার প্রেম, কষ্ট পেলে নষ্ট হব কেন, তুমি নও, আমার বেদনা আমি বুঝি, প্রিয়তমা তুমি কখনো পুরোনো হবে না, যাবে যদি চলে যাও, খুব সাধারণ জীবন আমার, রংধনু হয়ে যাই, বন্দী জেগে আছে, নীল সাগরের হিমেল বাতাসে, আর্তনাদ, চলে গেলেই বুঝতে পারি এসেছিলে তুমিসহ অনেকে গান।

লিখেছেন জেমস ও ফিলিংস বা নগরবাউলের জন্য জেল থেকে বলছি, পালাবে কোথায়, কত কষ্টে আছি, একজন বিবাগী, জোসি প্রেম, নাটোর স্টেশন, প্রিয় আকাশী, ভালোবাসার যৌথ খামার, মধ্যরাতের ডাকপিয়ন, মান্নান মিয়ার তিতাস মলম, জঙ্গলে ভালোবাসা, কতটা কাঙাল হয়ে থাকি, ঘুমাও তুমি, গিটার কাঁদতে জানে, জানালা ভরা আকাশ, নীল আকাশ যত দূর দেখা যায়, পেশাদার খুনী, সাড়ে তিন হাত ভুমি, ব্যাবিলনসহ আরও কিছু গান।

অন্যান্য শিল্পীদের কণ্ঠে: তুমি আমার প্রথম সকাল (তপন ও শাকিলা জাফর), হাত বাড়ালেই বন্ধু হবো (টিপু), নিঝুম রাতের তারার মেলায় (আগুন ও সুমনা হক), মাঝে কিছু বছর গেলো (সুমনা হক), বৃষ্টি দেখে অনেক কেঁদেছি (সোলস), পলাশীর প্রান্তর (মাইলস), কীভাবে আমায় কাঁদাবে বলো (খালিদ), লাশ কাটা ঘর (নীলয় দাশ), প্রেমিক মেয়র, পায়ের আওয়াজ শুনি (সোলস), দূরে কোথাও হারাবার (ঝলক), তুমি আর কারো নও (চন্দন), মনে পড়ে গেলো (নীলয় ও ফাহমিদা), যত দূর যত পথ (আজম খান) প্রভৃতি।

* লিখেছেন: কবি ও কাব্য
 


লতিফুল ইসলাম শিবলী নামটি নব্বই দশকের অডিও ক্যাসেটের কভারে কতবার দেখেছিলেন বলতে পারবেন? জানি প্রশ্নটি খুব কঠিন হয়ে গেছে। কারণ সেই সময়ের কোন শ্রোতাই হিসেব করে বলতে পারবেন না। 'লতিফুল ইসলাম শিবলী' নামটি ওই সময়ে কত শত জনপ্রিয় অডিও ক্যাসেটে তারা দেখতে পেয়েছিল তা হিসেব করে বলা মুশকিল। তার কত গান যে না জেনে অজান্তে আজও শ্রোতারা গুনগুন করে! স্বয়ং শিবলী নিজেও হিসেব করে বলতে পারবেন না যে কতগুলো গান তার শ্রোতাপ্রিয় হয়েছিল।

লতিফুল ইসলাম শিবলী বাংলা ব্যান্ড ও আধুনিক গানের এক দুর্দান্ত গীতিকার যিনি ৯০ দশকে অডিও ইন্ডাস্ট্রিতে আসেন। যার লিখা গান গেয়ে 'ফিলিংস' (নগর বাউল) ব্যান্ডের নবজন্ম হয়েছিল। যার গান গেয়ে আইয়ুব বাচ্চু, জেমস, টিপু, শাফিন, আগুন, তপন চৌধুরী'র মতো শিল্পীরা আরও বেশি জনপ্রিয় হয়েছিলেন। ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত ফিলিংসের দ্বিতীয় অ্যালবাম 'জেল থেকে বলছি' প্রকাশের পর শ্রোতারা লতিফুল ইসলাম শিবলী নামটির সাথে পরিচিত হয়। এরপর থেকে বারবার এই নাম শ্রোতাদের সামনে আসে আর দারুণ সব গানে মন কেড়ে নেন।

শিবলী গান লিখতেন জীবনের চলার পথের ঘটে যাওয়া ও নিজের চোখে দেখা ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে। যা তার গানকে করেছে অন্যরকম সুন্দর। ইন্টারমিডিয়েটে পড়াকালীন সময়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়ায় যেতে হয়েছিল জেলে; সেই স্মৃতি থেকে লিখলেন 'জেল থেকে বলছি', যা ছিল ফিলিংসের দ্বিতীয় অ্যালবামের শিরোনাম গান। গানটি হয়ে যায় সুপারহিট।

নব্বইয়ের শুরুতে চিরচেনা নাটোর থেকে চলে আসেন ঢাকায়। রাজধানীর একটি বাড়ির চিলেকোঠায় ভাড়া থাকতেন, জানালা খুললেই রাতের আকাশের চাঁদটা শিবলীর ঘরে ঢুকে যেতো। যে চাঁদের সাথে কথা বলে একাকি শিবলীর সময় কেটে যেতো। বিছানা থেকে শুয়েই পুরো আকাশ ও আকাশের চাঁদ স্পষ্ট দেখা যেতো। সেই জেগে থাকা চাঁদ নিয়ে শিবলী লিখলেন 'জানালা ভরা আকাশ', যা আজও শ্রোতারা শুনেই যাচ্ছে।

এক মধ্যরাতে চিরচেনা নাটোর স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে হেঁটে যাচ্ছিলেন। যে চেনা স্টেশনটি রাতের বেলায় শিবলীর কাছে অচেনা মনে হলো। চেনা অনেকের কাছে অচেনা মনে হলো যে স্মৃতিটি বর্ণনা করেছিলেন 'নাটোর স্টেশন' গানটিতে।



এমনিভাবে জীবনের নানা ঘটনাকে শিবলী গানের কথায় তুলে ধরেছিলেন। অভিভাবকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে একদল গানপাগল তরুণ ব্যান্ড সংগীতের মাধ্যমে বাংলা গানের ধারায় যে পরিবর্তন এনেছে, শিবলী তাদেরই অন্যতম। যুগযন্ত্রণার ক্ষ্যাপামো মজ্জাগত বলেই প্রথা ভাঙার যুদ্ধে শিবলী হয়ে ওঠেন আপাদমস্তক 'রক'। আধুনিক জীবনযন্ত্রণাগ্রস্ত তারুণ্যের ভাষাকে শিবলী উপস্থাপন করেছেন অত্যন্ত সহজসরল 'রক'-এর ভাষায়। তার সাফল্য এখানেই। তাই অল্প সময়ের মধ্যেই পরিণত হয়েছেন ব্যান্ড জগতের কিংবদন্তি গীতিকবিতে।

নিজের লেখা গানগুলোকে নিজেই সুর দিয়ে নিজের কণ্ঠে তুললেন 'নিয়ম ভাঙ্গার নিয়ম' অ্যালবামে। যা শিবলীর নিজের লেখা, সুর ও কণ্ঠের প্রথম ও একমাত্র অ্যালবাম। অনবদ্য সেই অ্যালবামে অনিয়ম, অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে কণ্ঠটি সোচ্চার করেছিলেন।

শিবলী শুধু নিজেকে গান লিখার মধ্যেই আবদ্ধ রাখেননি। তিনি নাট্যকার, মডেলিং, অভিনেতা হিসেবেও আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছিলেন। ৯০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে 'সেঞ্চুরি ফেব্রিকস' এর বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে আসেন যেখানে তিনি ছিলেন চুলের ঝুঁটিবাধা ফ্যাশন সচেতন এক মানুষ যেখানে তিনি হলেন 'কমপ্লিট ম্যান'। বিটিভির প্যাকেজ নাটকের শুরুর দিকে তার লেখা 'তোমার চোখে দেখি' নাটকটি বেশ সাড়া ফেলেছিল। সেটি ছিল শিবলীর লেখা প্রথম কোন টেলিভিশন নাটক। এরপর নিজেরই লিখা 'রাজকুমারী' নাটকে মির্জা গালিব নামের মূল চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী শমী কায়সারের সাথে। এই তো, কয়েক বছর আগে লেখেন 'পদ্ম পাতার জল' সিনেমার চিত্রনাট্য। আজকাল তো শিবলীর উপন্যাস খুবই জনপ্রিয়।

লতিফুল ইসলাম শিবলী আমাদের মাঝে বারবার হাজির হয়েছেন দারুণ সব কাজ নিয়ে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তিনি বাংলা গানের শ্রোতাদের কাছে একজন প্রিয় গীতিকার হয়েই আছেন ও থাকবেন চিরকাল। বাংলা ব্যান্ড সংগীতের শ্রোতাদের কাছে তিনি একজন জীবন্ত কিংবদন্তি।

আইয়ুব বাচ্চু ও এলআরবির জন্য লিখেছিলেন কষ্ট পেতে ভালবাসি, কেউ সুখী নয়, হাসতে দেখো গাইতে দেখো, মাকে বলিস, কষ্ট কাকে বলে, রাজকুমারী, আহা জীবন, নীল বেদনা, একটা চাকরি হবে, চাঁদমামা?, কার কাছে যাবো?, বড়বাবু মাস্টার, চাই জল, মানুষ বড় একা, ও আমার প্রেম, কষ্ট পেলে নষ্ট হব কেন, তুমি নও, আমার বেদনা আমি বুঝি, প্রিয়তমা তুমি কখনো পুরোনো হবে না, যাবে যদি চলে যাও, খুব সাধারণ জীবন আমার, রংধনু হয়ে যাই, বন্দী জেগে আছে, নীল সাগরের হিমেল বাতাসে, আর্তনাদ, চলে গেলেই বুঝতে পারি এসেছিলে তুমিসহ অনেকে গান।

লিখেছেন জেমস ও ফিলিংস বা নগরবাউলের জন্য জেল থেকে বলছি, পালাবে কোথায়, কত কষ্টে আছি, একজন বিবাগী, জোসি প্রেম, নাটোর স্টেশন, প্রিয় আকাশী, ভালোবাসার যৌথ খামার, মধ্যরাতের ডাকপিয়ন, মান্নান মিয়ার তিতাস মলম, জঙ্গলে ভালোবাসা, কতটা কাঙাল হয়ে থাকি, ঘুমাও তুমি, গিটার কাঁদতে জানে, জানালা ভরা আকাশ, নীল আকাশ যত দূর দেখা যায়, পেশাদার খুনী, সাড়ে তিন হাত ভুমি, ব্যাবিলনসহ আরও কিছু গান।

অন্যান্য শিল্পীদের কণ্ঠে: তুমি আমার প্রথম সকাল (তপন ও শাকিলা জাফর), হাত বাড়ালেই বন্ধু হবো (টিপু), নিঝুম রাতের তারার মেলায় (আগুন ও সুমনা হক), মাঝে কিছু বছর গেলো (সুমনা হক), বৃষ্টি দেখে অনেক কেঁদেছি (সোলস), পলাশীর প্রান্তর (মাইলস), কীভাবে আমায় কাঁদাবে বলো (খালিদ), লাশ কাটা ঘর (নীলয় দাশ), প্রেমিক মেয়র, পায়ের আওয়াজ শুনি (সোলস), দূরে কোথাও হারাবার (ঝলক), তুমি আর কারো নও (চন্দন), মনে পড়ে গেলো (নীলয় ও ফাহমিদা), যত দূর যত পথ (আজম খান) প্রভৃতি।


* লিখেছেন: কবি ও কাব্য
লতিফুল ইসলাম শিবলী ব্যান্ড সংগীতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গীতিকার
 


লতিফুল ইসলাম শিবলী নামটি নব্বই দশকের অডিও ক্যাসেটের কভারে কতবার দেখেছিলেন বলতে পারবেন? জানি প্রশ্নটি খুব কঠিন হয়ে গেছে। কারণ সেই সময়ের কোন শ্রোতাই হিসেব করে বলতে পারবেন না। 'লতিফুল ইসলাম শিবলী' নামটি ওই সময়ে কত শত জনপ্রিয় অডিও ক্যাসেটে তারা দেখতে পেয়েছিল তা হিসেব করে বলা মুশকিল। তার কত গান যে না জেনে অজান্তে আজও শ্রোতারা গুনগুন করে! স্বয়ং শিবলী নিজেও হিসেব করে বলতে পারবেন না যে কতগুলো গান তার শ্রোতাপ্রিয় হয়েছিল।

লতিফুল ইসলাম শিবলী বাংলা ব্যান্ড ও আধুনিক গানের এক দুর্দান্ত গীতিকার যিনি ৯০ দশকে অডিও ইন্ডাস্ট্রিতে আসেন। যার লিখা গান গেয়ে 'ফিলিংস' (নগর বাউল) ব্যান্ডের নবজন্ম হয়েছিল। যার গান গেয়ে আইয়ুব বাচ্চু, জেমস, টিপু, শাফিন, আগুন, তপন চৌধুরী'র মতো শিল্পীরা আরও বেশি জনপ্রিয় হয়েছিলেন। ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত ফিলিংসের দ্বিতীয় অ্যালবাম 'জেল থেকে বলছি' প্রকাশের পর শ্রোতারা লতিফুল ইসলাম শিবলী নামটির সাথে পরিচিত হয়। এরপর থেকে বারবার এই নাম শ্রোতাদের সামনে আসে আর দারুণ সব গানে মন কেড়ে নেন।

শিবলী গান লিখতেন জীবনের চলার পথের ঘটে যাওয়া ও নিজের চোখে দেখা ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে। যা তার গানকে করেছে অন্যরকম সুন্দর। ইন্টারমিডিয়েটে পড়াকালীন সময়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়ায় যেতে হয়েছিল জেলে; সেই স্মৃতি থেকে লিখলেন 'জেল থেকে বলছি', যা ছিল ফিলিংসের দ্বিতীয় অ্যালবামের শিরোনাম গান। গানটি হয়ে যায় সুপারহিট।

নব্বইয়ের শুরুতে চিরচেনা নাটোর থেকে চলে আসেন ঢাকায়। রাজধানীর একটি বাড়ির চিলেকোঠায় ভাড়া থাকতেন, জানালা খুললেই রাতের আকাশের চাঁদটা শিবলীর ঘরে ঢুকে যেতো। যে চাঁদের সাথে কথা বলে একাকি শিবলীর সময় কেটে যেতো। বিছানা থেকে শুয়েই পুরো আকাশ ও আকাশের চাঁদ স্পষ্ট দেখা যেতো। সেই জেগে থাকা চাঁদ নিয়ে শিবলী লিখলেন 'জানালা ভরা আকাশ', যা আজও শ্রোতারা শুনেই যাচ্ছে।

এক মধ্যরাতে চিরচেনা নাটোর স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে হেঁটে যাচ্ছিলেন। যে চেনা স্টেশনটি রাতের বেলায় শিবলীর কাছে অচেনা মনে হলো। চেনা অনেকের কাছে অচেনা মনে হলো যে স্মৃতিটি বর্ণনা করেছিলেন 'নাটোর স্টেশন' গানটিতে।



এমনিভাবে জীবনের নানা ঘটনাকে শিবলী গানের কথায় তুলে ধরেছিলেন। অভিভাবকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে একদল গানপাগল তরুণ ব্যান্ড সংগীতের মাধ্যমে বাংলা গানের ধারায় যে পরিবর্তন এনেছে, শিবলী তাদেরই অন্যতম। যুগযন্ত্রণার ক্ষ্যাপামো মজ্জাগত বলেই প্রথা ভাঙার যুদ্ধে শিবলী হয়ে ওঠেন আপাদমস্তক 'রক'। আধুনিক জীবনযন্ত্রণাগ্রস্ত তারুণ্যের ভাষাকে শিবলী উপস্থাপন করেছেন অত্যন্ত সহজসরল 'রক'-এর ভাষায়। তার সাফল্য এখানেই। তাই অল্প সময়ের মধ্যেই পরিণত হয়েছেন ব্যান্ড জগতের কিংবদন্তি গীতিকবিতে।

নিজের লেখা গানগুলোকে নিজেই সুর দিয়ে নিজের কণ্ঠে তুললেন 'নিয়ম ভাঙ্গার নিয়ম' অ্যালবামে। যা শিবলীর নিজের লেখা, সুর ও কণ্ঠের প্রথম ও একমাত্র অ্যালবাম। অনবদ্য সেই অ্যালবামে অনিয়ম, অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে কণ্ঠটি সোচ্চার করেছিলেন।

শিবলী শুধু নিজেকে গান লিখার মধ্যেই আবদ্ধ রাখেননি। তিনি নাট্যকার, মডেলিং, অভিনেতা হিসেবেও আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছিলেন। ৯০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে 'সেঞ্চুরি ফেব্রিকস' এর বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে আসেন যেখানে তিনি ছিলেন চুলের ঝুঁটিবাধা ফ্যাশন সচেতন এক মানুষ যেখানে তিনি হলেন 'কমপ্লিট ম্যান'। বিটিভির প্যাকেজ নাটকের শুরুর দিকে তার লেখা 'তোমার চোখে দেখি' নাটকটি বেশ সাড়া ফেলেছিল। সেটি ছিল শিবলীর লেখা প্রথম কোন টেলিভিশন নাটক। এরপর নিজেরই লিখা 'রাজকুমারী' নাটকে মির্জা গালিব নামের মূল চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী শমী কায়সারের সাথে। এই তো, কয়েক বছর আগে লেখেন 'পদ্ম পাতার জল' সিনেমার চিত্রনাট্য। আজকাল তো শিবলীর উপন্যাস খুবই জনপ্রিয়।

লতিফুল ইসলাম শিবলী আমাদের মাঝে বারবার হাজির হয়েছেন দারুণ সব কাজ নিয়ে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তিনি বাংলা গানের শ্রোতাদের কাছে একজন প্রিয় গীতিকার হয়েই আছেন ও থাকবেন চিরকাল। বাংলা ব্যান্ড সংগীতের শ্রোতাদের কাছে তিনি একজন জীবন্ত কিংবদন্তি।

আইয়ুব বাচ্চু ও এলআরবির জন্য লিখেছিলেন কষ্ট পেতে ভালবাসি, কেউ সুখী নয়, হাসতে দেখো গাইতে দেখো, মাকে বলিস, কষ্ট কাকে বলে, রাজকুমারী, আহা জীবন, নীল বেদনা, একটা চাকরি হবে, চাঁদমামা?, কার কাছে যাবো?, বড়বাবু মাস্টার, চাই জল, মানুষ বড় একা, ও আমার প্রেম, কষ্ট পেলে নষ্ট হব কেন, তুমি নও, আমার বেদনা আমি বুঝি, প্রিয়তমা তুমি কখনো পুরোনো হবে না, যাবে যদি চলে যাও, খুব সাধারণ জীবন আমার, রংধনু হয়ে যাই, বন্দী জেগে আছে, নীল সাগরের হিমেল বাতাসে, আর্তনাদ, চলে গেলেই বুঝতে পারি এসেছিলে তুমিসহ অনেকে গান।

লিখেছেন জেমস ও ফিলিংস বা নগরবাউলের জন্য জেল থেকে বলছি, পালাবে কোথায়, কত কষ্টে আছি, একজন বিবাগী, জোসি প্রেম, নাটোর স্টেশন, প্রিয় আকাশী, ভালোবাসার যৌথ খামার, মধ্যরাতের ডাকপিয়ন, মান্নান মিয়ার তিতাস মলম, জঙ্গলে ভালোবাসা, কতটা কাঙাল হয়ে থাকি, ঘুমাও তুমি, গিটার কাঁদতে জানে, জানালা ভরা আকাশ, নীল আকাশ যত দূর দেখা যায়, পেশাদার খুনী, সাড়ে তিন হাত ভুমি, ব্যাবিলনসহ আরও কিছু গান।

অন্যান্য শিল্পীদের কণ্ঠে: তুমি আমার প্রথম সকাল (তপন ও শাকিলা জাফর), হাত বাড়ালেই বন্ধু হবো (টিপু), নিঝুম রাতের তারার মেলায় (আগুন ও সুমনা হক), মাঝে কিছু বছর গেলো (সুমনা হক), বৃষ্টি দেখে অনেক কেঁদেছি (সোলস), পলাশীর প্রান্তর (মাইলস), কীভাবে আমায় কাঁদাবে বলো (খালিদ), লাশ কাটা ঘর (নীলয় দাশ), প্রেমিক মেয়র, পায়ের আওয়াজ শুনি (সোলস), দূরে কোথাও হারাবার (ঝলক), তুমি আর কারো নও (চন্দন), মনে পড়ে গেলো (নীলয় ও ফাহমিদা), যত দূর যত পথ (আজম খান) প্রভৃতি।


* লিখেছেন: কবি ও কাব্য
bhai k amar khub valo lage.
 

Users who are viewing this thread

Back
Top