What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made গল্পের নাম- কেন এমন হল? (1 Viewer)

Joined
Apr 9, 2022
Threads
100
Messages
100
Credits
7,417
#মুজিব_বর্ষ

গল্পের নাম- কেন এমন হল?

লেখক- মোঃ আব্দুল্লা-হিল-মারুফ তামিম

....

"এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম"

১৯৭৬ সাল-

মুক্তিযুদ্ধের পর এই প্রথম দেশে ফিরল দুই ভাই ফারুক এবং মারুফ। ১৯৭১ সালে বাবা-মায়ের সাথে দেশ ছেড়ে কানাডাতে পাড়ি জমায় জীবন বাঁচানোর জন্য।

আজ দেশ স্বাধীন হবার এত বছর পর ফিরেছে শুধুমাত্র তারা দুই ভাই। দেখতে এসেছে এই স্বাধীন বাংলাকে।

ফিরে এসেছে তাদের সেই স্মৃতিমাখা গ্রামে যেখানে কেটেছে তাদের শৈশব।

গ্রামের সেই চিরচেনা মেঠ পথ দিয়ে হেটে চলেছে দুজনে। আগের থেকে অনেক পরিবর্তন হয়েছে এই গ্রামে। এমন একটি দিন ছিল এখানে রাত্রে ঘুমাতে গেলেও ভয় করত এই বুঝি পাক হানাদার বাহিনীরা হানা দিল।

মাঝে মাঝে গভীর রাত্রে ঘুম ভেঙ্গে যেত মানুষের চিৎকার শুনে কারণ তখন পাক হানাদার বাহিনী হামলা চালাত।

সেই ভয়ে কত রাত বাড়ির পিছনে ঝোপের আড়ালে লুকাতে হয়েছিল তাদেরকে।

ফারুক এবং মারুফদের বাবা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সকল দিক থেকে সাহায্য করতেন।

সেই সূত্র ধরে একদিন পাক হানাদার বাহিনীরা তাদের বাড়িতে হামলা চালায় কিন্তু ভাগ্যের বিষয় বাড়ির পিছনের দরজা থেকে তারা পালিয়ে যায়।

এদিকে তাদেরকে না পেয়ে বাড়ীটিতে আগুন জ্বালিয়ে সব পুড়িয়ে ফেলা হয়।

চোখের সামনে নিজের বাড়িটি এভাবে পুড়তে দেখে সন্তানদের কথা চিন্তা করে পরিবার নিয়ে এই দেশ ছাড়েন ফারুক এবং মারুফের বাবা-মা।

এরপর কেটে যায় ৫টি বছর এর মাঝে দেশ স্বাধীন হয়েছে এবং আরও অনেক ঘটনা ঘটেছে যা দেশের বাইরে থেকে তাদের কাছে অজানা রয়েছে।

হেটে হেটে গ্রামটিকে দেখছে এখন তাদের একটাই উদ্দেশ্য নিজেদের বাড়িতে যাওয়া।

কিছুদূর হেটে যাওয়ার পর তাদের সামনে হঠাত করে একজন পাগল এসে লাফিয়ে পড়ে।

লোকটির শরীরে কাপড় বলতে ছোট একটি প্যান্ট এছাড়া আর কিছু নেই।

বয়স তেমন নয় কিন্তু শরীরে ময়লা থাকায় চেহারা বুঝা যাচ্ছে না।

হাতে রয়েছে একটি লাঠি।

পাগলটিকে এভাবে আসতে দেখে তারা দুইভাই ভয় পেয়ে যায়।

এবার পাগল তাদের দিকে তাকিয়ে দাত বের করে হেসে দিয়ে বলে " কেন এসেছিস তোরা? ওকে মারতে এসেছিস? তোরা ওকে মেরেফেলেছিস।"

এই কথা বলে পাগলটি আবার দৌড়ে চলে গেল।

পাগলটির কথা তারা কিছুই বুঝতে পারল না। তাই এসব মাথা থেকে ঝেড়ে আবার চলতে শুরু করে নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

কিন্তু নিজেদের বাড়ীতে এসে আরও অবাক হয়ে যায় কারণ তাদের বাড়ি এখন অন্য কারও দখলে। সেই ৭১ সালে যারা নিজের জমি রেখে অন্যদেশে চলে গিয়েছিল তাদের সেই সব ঘরবাড়ি এখন অন্যরা ভোগ করে।

নিজেদের জমিতে এখন অন্যের বাড়ি দেখে মারুফ তার ভাইকে জিজ্ঞাসা করে-

মারুফ: ভাইজান আমাদের ভিটা কী এখন অন্য কারও দখলে?

ফারুক: দেখে তাই মনে হচ্ছে কারণ এখানে অন্যকেউ বাড়ি করেছে।

মারুফ: আমাদের জমিতে অন্যকেউ বাড়ী করবে কেন?

ফারুক: এই ভিটা এখন আর আমাদের নাই রে ভাই।

মারুফ: কেন ভাই? চল আমরা যেয়ে ওদেরকে বলে দেই ১৯৭১ সালে এই জমি আমাদের ছিল।

ফারুক: তা নাহয় বললাম কিন্তু প্রমাণ কোথায়? আমাদের জমির দলিল সেই ১৯৭১ সালে বাড়ির সাথে সাথে পুড়ে গেছে। এখন কাউকে বললেও বিশ্বাস করবে না যে এই ভিটে মাটি আমাদের।

মারুফ: তাহলে চল একবার বলেই দেখি কী হয়।

ফারুক: নাহ কী দরকার? শুধু শুধু মানুষকে বিরক্ত করা। তাছাড়া আমরাত আর এখানে থাকি না। নিজের গ্রাম দেখা হয়ে গিয়েছে এখন চল আমরা চলে যাই।

মারুফ: চলেই ত যাব আর একটু ঘুরে দেখি না গ্রামটা আবার কবে আসব।

ফারুক: আচ্ছা তাহলে চল সামনের দিকে যাই।

কথা শেষ করে দুই ভাই সামনের দিকে এগোতে গেলে পিছন থেকে কেউ একজন তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলে "কে আপনারা?"

তারা পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে একজন যুবক দাঁড়িয়ে আঁছে।

সেই যুবকের কথার উত্তর দেওয়ার জন্য ফারুক নিজে এগিয়ে গেল-

ফারুক: জ্বী আমাদেরকে বলছেন?

যুবক: জ্বী আপনাদেরকে বলছি। সেই তখন থেকে দেখছিলাম আপনারা দুজন আমার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন ,কারা আপনারা?

ফারুক: বললে হয়ত বিশ্বাস করবেন না তারপরও বলছি এই যে জমিটা দেখছেন যেখানে আপনারা বাড়ি করে থাকছেন ঐ জমিটি একসময় আমাদের ছিল।

যুবক: আপনারা কী তাহলে সেই নওশের সাহেবের (ফারুক আর মারুফের বাবার নাম) উত্তরাধিকার?

ফারুক: জ্বী ঠিক বলেছেন কিন্তু আপনি চিনলেন কীভাবে?

যুবক: আমার আব্বা এই জমিটি গত দুইবছর আগে সরকারের কাছ থেকে কিনেছিলেন। তখন লোকমুখে জানতে পারি যে এই জমির মালিকের নাম নওশের আলি এবং এটাও জানতে পারি যে উনি পরিবারসহ যুদ্ধের সময় দেশ ছেড়ে চলে যান।

ফারুক: পাক হানাদার বাহিনীরা আমাদের বাড়ি পুড়িয়ে ফেলে তাই আমরাও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাই। হয়ত ঐদিন আমরা সময়মতো পিছনের দরজা থেকে না বের হলে আমাদেরকেও মেরে ফেলত। যাই হোক সেসব এখন অতীত,আমরা এসেছিলাম আব্বার কথামতো তার বাবার ভিটাটিকে দেখার জন্য এখন দেখা শেষ আমরা ফিরে যাব। ভালো থাকবেন।

যুবক: কী বলছেন? আমাদের বাড়ির সামনে থেকে এভাবে ফিরে যাবেন তা কী করে হয় আসুন ভিতরে আসুন আজকে আমাদের বাড়ীতে থেকে তারপর যাবেন।

ফারুক: নাহ নাহ আপনাকে শুধু শুধু কষ্ট করতে হবে না। আমরা আজই ফিরে যাব কানাডাতে।

যুবক: সে যাই হোক তবে আমার বাড়িতে একটু পানি খেয়ে যান।

ফারুক: আচ্ছা সে না হয় করা যায়।

যুবক: ধন্যবাদ চলুন,ভিতরে।

ভিতরে যাওয়ার পূর্বে তাদের পরিচয় সেরে নিল। পরিচয় সুত্রে জানা যায় যুবকটির নাম রকিব। তারা দুই ভাই ,বড় ভাইয়ের নাম আকবর। বর্তমানে দুইভাই একই সাথে থাকে। ছোটবেলা মা মারা যায় এবং এক বছর আগে তাদের বাবা মারা যান। এখন দুইভাই একা থাকে এই বাড়িতে।

বাড়ির ভিতর ঢুকেই রকিব তার বড় ভাই আকবরকে ডাকতে শুরু করে।

কিছুক্ষণ পর ঘর থেকে আকবর বেরিয়ে আসে এবং রকিবের সাথে অপরিচিত দুইজনকে দেখে জিজ্ঞাসা করে-

আকবর: উনারা কারা রকিব?

রকিব: ভাইজান জানো উনারা এই জমির মালিক ছিলেন।

আকবর: ওহ আচ্ছা, আপনাদের কথা অনেক শুনেছি আসেন আসেন ভিতরে আসেন।

মারুফ: নাহ ভাই ভিতরে যাব না একটু বাইরে খোলামেলা পরিবেশে দাঁড়িয়ে থাকি।

আকবর: আরে দাড়াবেন কেন? এই রকিব যা ভিতর থেকে চেয়ারগুলো নিয়ে আয় উনাদেরকে বসতে দে। কী সৌভাগ্য আমার বাড়িতে আপনাদের মতো এমন দুইজন মানুষ পাড়া দিয়েছেন। রকিব তুই বাজারে যা।

ফারুক: ভাই এত উত্তেজিত হবেন না। আমরা একটু বসেই চলে যাব কারণ আমাদের আগামীকাল ফিরতে হবে আবার। আসলে আমাদের আব্বার কথা অনুযায়ী এসেছিলাম একটু নিজের দেশ,গ্রামটিকে দেখতে। দেখা শেষ এখন ফিরে যেতে হবে।

আকবর: এই গ্রামের মানুষের মুখে অনেক শুনেছি আপনাদের বাবার কথা।

ফারুক: আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন এবং তাদেরকে সহয়তা করতেন। এই খবর জানার পর আমাদের বাড়িতে পাকিস্তানি মিলিটারিরা হামলা চালায়। ভাগ্যক্রমে আমরা পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যাই কিন্তু আমাদের বাড়িটি তারা পুড়িয়ে দেয়। তখন থেকে এখন পর্যন্ত আমরা কানাডাতে থাকি। দেশের খবর কিছুই জানা নেই আমাদের কাছে। শুধু জেনেছি দেশ স্বাধীন হয়েছে। এছাড়া আর কোনো খবর জানি না। তাই দেখতে এলাম কেমন হল আমাদের স্বাধীন বাংলা।



আকবর: দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। এই যেমন আমরা অন্য গ্রাম থেকে এখানে এসে ঘর বেধেছি।

ফারুক: জানেন আমার না মুক্তিযুদ্ধ করার খুব ইচ্ছা ছিল কিন্তু পরিবারের জন্য পারলাম না। যেদিন রেডিওতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনি সেদিন শরীরের রক্ত গরম হয়ে যায়। কিন্তু পরিবারের সাথে চলে যেতে হয় দেশ ছেড়ে নাহলে আমার ছোটভাই আর পরিবারকে বাঁচাতে পারতাম না।

আকবর: সেই যে ডারাজ কন্ঠে ভাষন দিলেন সেটি এখনও আমার কানে বেজে উঠে। আব্বার সাথে বাজারে বসে শুনেছিলাম সেই ভাষণ। কতটা কঠোর ছিল সেই ভাষণটি যার কারণে আজ আমরা স্বাধীন হয়েছি।

তখনই বাইরে থেকে আবার চিৎকারের শব্দ শুনতে পায় তারা। তখনই রকিব বলে উঠে সবাইকে উদ্দেশ্য করে "এই বুঝি আবার হাসু পাগলাটা ক্ষেপেছে"

তখন ফারুক, রকিবকে উদ্দেশ্য করে বলল-

ফারুক: এই হাসু পাগলা আবার কে? তাকে ত আমরা আগে দেখি নাই এই গ্রামে।

রকিব: আমরাও আগে তাকে দেখি নাই কিন্তু গত এক বছর ধরে এখান থেকে ঘুরে বেড়ায় আর বলে " ওরা ভালো না,তাকে মেরে ফেলেছে"

ফারুক: কাকে মেরে ফেলেছে?

আকবর: বঙ্গবন্ধুকে।

ফারুক: কী বলেন? বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলেছে? কবে এসব ত কিছুই জানি না আমরা।

আকবর: ভাই সেই এক বছর আগের কথা। ১৯৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট তাকে এবং তার পরিবারকে ঢাকার বাড়িতে হত্যা করা হয়। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় তার দুই কন্যা।

ফারুক: যে মানুষটি আমাদেরকে স্বাধীন করেছেন, লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষের জীবন বাঁচিয়েছেন আর আজ তাকেই জীবন দিতে হল। আমরা পারলাম না তাকে বাচিয়ে রাখতে। তার নিরাপত্তা দিতে পারলাম না।

তখন আবার রকিব চিৎকার করে বলে " ভাইজান দেখে যাও হাসু পাগলা কেমন করছে ঐ বালির মাঠে বসে।"

হাসু পাগলার দৃশ্য-

সারা শরীরে বালি মাখছে আর চিৎকার করে বলছে "ওরা তাকে বাচতে দিল না,ওরা আমার মুজিবকে মেরে ফেলেছে। ওরা মানুষ না পশু।

ওরা মানুষ না পশু আমার মুজিবকে বাচতে দিল না।

আমার মুজিবকে বাচতে দিল না।

এভাবে চিৎকার করে কান্না করতে করতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে হাসু পাগলা।

...।

হে মোদের স্বাধীন বাংলার কারীগর

তুমি অমর হয়ে রয়েছ এই বাংলায়,

তুমি আছো মোদের এই হৃদয়ে

তোমাকে ভুলবনা আমরা এই জীবনে।

সমাপ্ত...

Copyright: March 17,2020 at 02:05 PM.

Maruf Tamim (Author).
 

Users who are viewing this thread

Back
Top