What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made গল্পের নাম- রক্তিম একুশ (1 Viewer)

Joined
Apr 9, 2022
Threads
100
Messages
100
Credits
7,417
গল্পের নাম- রক্তিম একুশ

লেখক- মোঃ আব্দুল্লা-হিল-মারুফ তামিম

সবাই বল অ,আ,ই গ্রামের পাঠশালায় ছাত্রছাত্রীদের পড়াচ্ছেন রহিম মাস্টার।ছাত্রছাত্রীরাও খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ছে।কিন্তু তখনই পায়ে বড় বুট,মাথায় সেনাবাহিনী হেলমেট,কাধে বন্দুক খুবই ভয়ংকর চেহারার কয়েকজন লোক এসে রহিম মাস্টারকে সজোরে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দিল।সবাই এই দৃশ্য দেখে অবাক।তখন সেই ভয়ংকর চেহারার লোকেরা বলল (বান্দ কারো ইয়েসাব,উর্দু বল)।তার বলার মধ্যে একধরনের রাগ এবং হুমকি ছিল।তাদের সাথে ছিল গ্রামের মোড়ল রহমত মিঞা।রহমত মিঞা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন

রহমত মিঞা- শোনো সবাই এখন থেকে বংলা বলা বন্ধ।এখন থেকে সবাই উর্দুতে কথা কইবা আর যদি না কও তাইলে তোমাগোরে এইডা(বন্দুক দেখিয়ে) দেখছ।এইডা দিয়া মাইরাফেলামু।অহন যাও বাড়ি যাও সব।

এরপর সব ছাত্রছাত্রীরা কাদতে কাদতে বাড়ি চলে এলো।সবার একটাই চিন্তা আজকে কি হল কোথাকার কে এসে বলছে বাংলা কথা বলা যাবে না সব কিছু উর্দুতে বলতে হবে।ওরা আমাদের মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়।যে ভাষা আমাদের রক্তে মিশে আছে সেই ভাষা কিভাবে আমরা ভুলে যাব।

জাহাঙ্গীরনগর(বর্তমান ঢাকা)....

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম আমরা এই।আমাদের মধ্যে একজন বলল(তোমরা জানো পাকিস্তানি সরকার চায় আমাদের রাষ্ট্রভাষা উর্দু হয়ে যাক।)তার কথা শুনে আমরা সবাই অবাক হলাম।এবং বললাম না এ কিছুতেই সম্ভব নয় আমাদের বাংলা ভাষার জায়গা অন্য কোনো ভাষা আমরা চাই না৷আমাদের মধ্য থেকে একজন বলে উঠল না এ হতে দেওয়া যায় না এর প্রতিবাদ করতেই হবে।এরপর শুরু হল পরিকল্পনা কিভাবে এই উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা না করা যায়।বিশ্ববিদ্যালয় এর সকল ছাত্রছাত্রীরা মিলে একটা আন্দোলনের ডাক দিলাম।আমরা একটি দিন দেখে আন্দোলনের ডাক দিলাম।কিন্তু আমাদের এই আন্দোলনের কথা শুনে পাকিস্তান সরকার সেইদিন দেশে সকল মিছিল মিটিং বন্ধের ঘোষণা দিল।কিন্তু আমরা তাদের এসকল বাধাকে অতিক্রম করে আমাদের মিছিল নিয়ে রাজপথে নেমে যাই।কিছুদুর যাবার পর দেখতে পাই সামনে পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে।আমরা তবুও থেমে ছিলাম না আমাদের স্লোগান (রাষ্ট্রভাষ বাংলা চাই)চালিয়ে যাচ্ছিলাম।তখনই আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে পুলিশ বল-(হে ছাত্রলোক যাও ইহাছে আপনি আপনি ঘার যাও।ওর বন্দ কারো তুমহারে ইয়ে নটাংকি)

তাদের কথায় আমরা কান না দিয়ে আমাদের কাজ আমরা চালিয়ে যাচ্ছিলাম।এরপর আবার বলল-(হাম এক সে পাচ তাক গিনুংগা ইস্কে বাদ ইহাপার যো রেহেগা উস্কু মার দুংগা)

এই কথা শোনার পর অনেকেই প্রানের ভয়ে আন্দোলন ছেড়ে চলে যায়।কিন্তু আমি সহ আরো কয়েকজন মিলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকি আর এদিকে পুলিশ গুনতে শুরু করেছে।তবুও আমরা থেমে নেই আমাদের স্লোগান আর আমার পায়ের জোর ক্রমে বেড়ে চলেছে আর সামনের দিকে পদার্পণ করছি।এরই মধ্যে তাদের এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত গোনা শেষ তখনই এক পুলিশ চেচিয়ে বলল-(যা শালে চুতিয়া উপার যাকে আপনি ইয়ে ঘাটিয়া ভাষা বোল)

এরপর শুরু হল গুলি।নিমিষেই আমাদের মধ্যে কয়েকজন মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।আমার সঙ্গীরা সবাই মারা গেল শুধু বেচে রইলাম আমি।এরপর আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল-(তুঝকো হাম এক মোওকা দে রাহাহু,ইয়ে সাব বান্দ কারকে ইহা ছে চালা যা।অর ইয়ে তেরা আখেরি মোওকা হে।বাচনা চাহিয়েত ভাগ ইহাছে)

তার কথা শুনে আরও জোরে চেচিয়ে বললাম রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই।তখন একটা ধুম করে শব্দ হল।হ্যা এটা গুলির শব্দ আর গুলিটা এসে আমার বুক ভেদ করে চলে গেল।বুক দিয়ে রক্ত ঝরছে অনেক।তবুও থামলাম না বলে গেলাম রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই বাংলা চাই।এরপর আরও গুলির শব্দ এবার একসাথে তিনটি গুলি এসে আমার শরীরে ঢুকে যায়।আমি এবার আস্তে আস্তে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি।রক্তের বন্যা বইছে সবকিছু ঝাপসা লাগছে।এখন ঘুম মায়ের কথা মনে পড়ছে আর কখনো মায়ের কাছে ফিরতে পারব না।মাকে পাঠানোর জন্য যে চিঠিটা লিখেছিলাম সেটাও আর মায়ের কাছে পৌছাবে না আর পৌছাবে কিভাবে সেটা আমার রক্তে ভিজে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।আস্তে আস্তে বেরিয়ে গেল আমার দেহের প্রাণ।আমার মায়ের ভাষার জন্য আজ আমি জীবন দিয়ে দিলাম।তবুও চাই না অন্য কোনো ভাষা বলতে।



"আমিও অমর হব,আমাকে কি মাল্য দেবে দাও

এই দেখ অন্তরাত্মা মৃত্যুর গর্বে ভরপুর।

ভোরের শেফালী হয়ে পড়ে আছে ঘাসে,

আকন্দ-ধুন্ধুল নয়,রফিক-সালাম-বরকত-আমি!

আমারই আত্মার প্রতিভাসে।"​



সমাপ্ত।

Copyright: February 21, 2019.

Maruf Tamim (Author).
 

Users who are viewing this thread

Back
Top