১. ভবিষ্যতে সিএ ডিগ্রির সম্ভাবনা কেমন?
এটি যেহেতু আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি পেশাগত দক্ষতার সনদ, তাই সব সময়ই এই ডিগ্রিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। যুক্তরাজ্যের বিশ্বখ্যাত দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস ইন ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের (আইসিএইডব্লিউ) পাঠ্যক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশেও এর শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত হয়। একটি ফাইবার মিলের প্রধান ফিন্যান্স কর্মকর্তা ইসহাক আলী খন্দকার এফসিএ বলেন, সারা বিশ্বেই সিএ ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ বাড়ছে। অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশে ডিগ্রির চাহিদা বেশি। করপোরেট ও বহুজাতিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ার কারণে বিশ্বব্যাপী সিএ ডিগ্রিধারী পেশাজীবীর চাহিদা বাড়ছে। বাংলাদেশেও যথেষ্ট কাজের সুযোগ আছে। বহুজাতিক অলাভজনক সংস্থা ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন ফর দ্য আরবান পুওরের (ডব্লিউএসইউপি) ফিন্যান্স ম্যানেজার ও সিএ সার্টিফিকেট পর্যায়ের পরীক্ষার্থী মাকছুদুর রহমান বলেন, সিএ ডিগ্রিধারীরা সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বশীল পদে কাজ করছেন। দেশ–বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাব বিভাগ, নিরীক্ষা বিভাগ, ট্যাক্স ও আর্থিক প্রশাসন, ইত্যাদি বিভাগে একজন সিএ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
২. ভর্তির যোগ্যতা কী?
এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা সিএ কোর্সে ভর্তির আবেদন করতে পারেন। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার যেকোনো একটিতে জিপিএ–৫–সহ ন্যূনতম ৯ পয়েন্ট থাকতে হবে। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন। এ ছাড়া যেকোনো বিষয়ে স্নাতক অথবা স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারেন। পরীক্ষায় ন্যূনতম দ্বিতীয় বিভাগ থাকতে হবে। সিজিপিএ–৪-এর মধ্যে ২.৫ থাকতে হবে। আইসিএবির স্টুডেন্ট কাউন্সেলিং ও প্লেসমেন্টের উপপরিচালক এস এম আবদুস শাকুর জানান, সরকার স্বীকৃত যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করলে সিএর জন্য আবেদন করা যায়। এখন যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে স্নাতক পড়ছেন, তাঁরাও 'প্রিআর্টিকেলশিপ' কর্মসূচির আওতায় সিএতে ভর্তি হতে পারেন।
৩. অনেক আগে পড়ালেখা শেষ করলে বা পড়ালেখায় বিরতি থাকলে কি ভর্তি হওয়া যাবে?
আইসিএবির উপপরিচালক এস এম আবদুস শাকুর জানালেন, পড়ালেখায় বিরতি থাকলেও আপনি সিএ ডিগ্রির জন্য ভর্তি হতে পারবেন। তবে ন্যূনতম যোগ্যতার শর্ত আপনাকে পূরণ করতে হবে। তিনি বলেন, 'এমন অনেক শিক্ষার্থীই আছেন, যারা হয় ১০-১৫ বছর আগে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন কিংবা শিক্ষাবিরতিতে আছেন, তাঁরা সিএ পড়ছেন। আবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি, তাঁরাও সিএ ডিগ্রির জন্য আবেদন করতে পারেন।'
৪. কয়টি ধাপ, কয় বছরে শেষ হয়?
সিএ কোর্সের মোট তিনটি লেভেল রয়েছে। এগুলো হচ্ছে সার্টিফিকেট লেভেল, প্রফেশনাল লেভেল ও অ্যাডভান্সড লেভেল। সার্টিফিকেট লেভেলে পড়তে হবে সাতটি বিষয়। সব মিলিয়ে ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে সিএ ডিগ্রি অর্জন করা সম্ভব। সার্টিফিকেট লেভেল, প্রফেশনাল লেভেল ও অ্যাডভান্সড লেভেলে নানা বিষয়ের ওপর পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অংশ নিতে হয়।
৫. ভর্তি প্রক্রিয়া কী?
সিএ ডিগ্রি অর্জনের জন্য আইসিএবির নিবন্ধিত সিএ ফার্মে ভর্তি হতে হবে। প্রিআর্টিকেলশিপ কর্মসূচিতে সরাসরি আইসিএবিতে ভর্তি হওয়া যায়। সিএ ফার্ম নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়। ৩ থেকে ৪ বছর মেয়াদি আর্টিকেলশিপ করার সময়ই হিসাবসংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ে একজন ছাত্র দক্ষ হয়ে ওঠেন। বছরে তিনটি সেশনে ঢাকা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রে সিএ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যায়।
৬. খরচ কেমন?
আইসিএবিতে সিএ ডিগ্রির জন্য নিবন্ধন বাবদ ব্যয় হয় ২৮ হাজার ৪০০ টাকা। পাঠ্যবই, কোচিং ফি ও গ্রন্থাগার ব্যবহারের জন্য এই ফি নেওয়া হয়। বিভিন্ন লেভেলে পরীক্ষার জন্য বিষয়প্রতি ফি দিতে হবে। প্রফেশনাল লেভেলে থাকে বেশ কয়েকটি বিষয়। প্রফেশনাল লেভেলের বিষয় ফি দিতে হবে। সর্বশেষ অ্যাডভান্সড লেভেলে পাঠ্য বিষয় ও কেস স্টাডির জন্য ফি জমা দিতে হবে। সব মিলিয়ে সিএ ডিগ্রি অর্জনের জন্য ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। সিএ ডিগ্রির জন্য আর্টিকেলশিপ অর্জনের সময় ফার্ম থেকে প্রতি মাসে নির্ধারিত হারে ভাতা দেওয়া হয়। এ ছাড়া মেধাবী শিক্ষার্থীদের আইসিএবি থেকে বিভিন্ন বৃত্তি পাওয়ার সুযোগ আছে।
৭. পাস করা কি খুব কঠিন?
অনেকে মনে করেন, সিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া বেশ কঠিন। সিএর শিক্ষার্থী মাকছুদুর রহমানের মতে, সিএ পড়তে ধৈর্য ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসা দুনিয়ার কাজের ধরন প্রতিনিয়তই পরিবর্তনশীল বলে সিএ শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জের জন্য তৈরি হতে হয়। ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জকে যাঁরা রোমাঞ্চকর মনে করেন, তাঁদের জন্য পড়ালেখাটা কঠিন হওয়ার কথা নয়। প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের কারণে সিএ ডিগ্রির পড়াশোনা ও পরীক্ষা পেশাদার পর্যায়ে হয়, তাই অনেক শিক্ষার্থীর জন্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া কঠিন হতে পারে। মো. ইসহাক আলী খন্দকার এফসিএ বলেন, 'অন্যান্য পরীক্ষার মতোই সিএ পরীক্ষা পাসের জন্য দরকার একাগ্রতা ও নিয়মানুবর্তিতা। ৩-৫ বছরের মধ্যে সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আইসিএবির সনদধারী চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। শুধু আর্টিকেলশিপ শেষ করে সার্টিফিকেট লেভেল পরীক্ষায় পাস করেও কাজ করা যায়। এ ছাড়া কোর্স সমাপনী ও পরীক্ষায় পাশের ওপর নির্ভর করে রেজিস্টার্ড অ্যাকাউন্টিং টেকনিশিয়ান (আরএটি) ও সার্টিফায়েড অ্যাকাউন্টিং প্রফেশনাল (সিএপি) সনদ পাওয়ার সুযোগ আছে।
৮. শুরুটা কীভাবে করব?
সাধারণত একজন শিক্ষার্থীকে আইসিএবি নিবন্ধিত কোনো প্রতিষ্ঠান বা ফার্মের সঙ্গে যুক্ত হতে হয়। যেসব ফার্মে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক হিসাব যাচাই করা হয়, শিক্ষার্থীকে সেখানে হাতে-কলমে নিরীক্ষাসংক্রান্ত কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। পরবর্তী সময়ে ফার্ম থেকে আইসিএবিতে শিক্ষার্থী হিসেবে নিবন্ধন করানো হয়। ইসহাক আলী খন্দকার এফসিএ বলেন, দেশে অনেকগুলো সিএ ফার্ম রয়েছে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেটেও রয়েছে কিছু নিবন্ধিত ফার্ম। নতুন শিক্ষার্থী নেওয়ার ক্ষেত্রে অধিকাংশ ফার্ম পরীক্ষা নেয়। পরীক্ষায় মূলত মৌলিক হিসাববিজ্ঞান ও ইংরেজির ওপর দক্ষতা যাচাই করা হয়।
৯. বিজ্ঞান বা মানবিকপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সুযোগ কেমন?
যেকোনো বিভাগের শিক্ষার্থী সিএ পড়তে পারেন। শুধু যে ফিন্যান্স বা অ্যাকাউন্টিংয়ে পড়ুয়ারা এই বিষয়ে পড়বেন, তা নয়। একটি আন্তর্জাতিক এনজিওর সিনিয়র ফিন্যান্স অফিসার ও সিএ প্রফেশনাল পর্যায়ের পরীক্ষার্থী রোজিনা খান বলেন, বিজ্ঞান কিংবা অন্য যেকোনো ক্ষেত্রে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক বা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়া শেষ করে সিএ পড়তে পারেন। সাধারণ শিক্ষাগত যোগ্যতাকেই এখানে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
১০. বিস্তারিত জানা যাবে কোথায়?
সিএ ডিগ্রি ও কাজের সুযোগ জানতে ঢাকার কারওয়ান বাজারে সিএ ভবন ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। এ ছাড়া আইসিএবির অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকেও খোঁজ নিতে পারেন।