What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review লেখকের স্টাইলে সেলিমের ‘গুণিন (1 Viewer)

KwNBdMR.jpg


গিয়াস উদ্দিন সেলিম বিনোদনজগতের ওজনদার নাম। নাটকে তাঁর বড় একটি জায়গা থাকলেও চলচ্চিত্রে সেটিকে তিনি দর্শক প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজে লাগাননি।

প্রথম ছবি 'মনপুরা' ২০০৯ সালে মুক্তির পর বড় বিরতি দিয়েই ২০১৮ সালে 'স্বপ্নজাল' নির্মাণ করেন। এরপর তৃতীয় ছবি 'গুণিন' মুক্তি পেল ২০২২ এ এসে। তাঁর কাছে আরো ছবির প্রত্যাশা এতদিনে দর্শক করতেই পারে কিন্তু সেটি পূরণ হয়নি। তিনি খরুচে নির্মাতা হয়ে থেকে গেলেন।

'গুণিন' কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের গল্প নিয়ে নির্মিত ছবি। সেদিক থেকে এটি সাহিত্যভিত্তিক ছবি।

শাব্দিক অর্থে 'গুণিন' হচ্ছে ওঝা, ক্ষণকার। জ্বিন, ভূতের বিদ্যায় পারদর্শী যার প্রধান অস্ত্র হচ্ছে মানুষের বিশ্বাস অর্জন। কুসংস্কারকে মানুষের মনে স্থায়ীত্ব দিয়ে নিজের প্রভাব সৃষ্টি করে একটি অলিখিত আধিপত্য বিস্তার। গল্প বা ছবির গল্পে এই গুণিন একটি গ্রামে মানুষের বিশ্বাসী হয়ে ওঠে তারপর পরম্পরায় আসতে থাকে তার প্রভাব। ভালোবাসা, ক্ষণিক বিরহ, চালাকি, মিলন, ভয় এসব জীবনের গল্পের মাধ্যমেই ছবির এগিয়ে চলা।

গিয়াস উদ্দিন সেলিম তাঁর নিজস্ব বৈশিষ্ট্যেই ছবিটিকে সাহিত্যভিত্তিক ছাঁচে উপস্থাপন করেছেন। দর্শকের মধ্যে অনেকে ভাবতে পারে জ্বীন, ভূতের মতো সুপারন্যাচারাল গল্পে ভয়ের পরিবেশ থাকবে অনেক, ক্ষণে ক্ষণে লোকে আঁতকে উঠবে, ডিটেইলের ব্যবহার থাকবে অনেক কিন্তু না গিয়াস উদ্দিন সেলিম তা করেননি। তিনি লেখকের স্টাইলকে ফলো করেই ছবিটি বানিয়েছেন।

EXTkoBc.jpg


লেখক গল্পে পুরোটা হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দেননি, তিনি একদম পা থেকে মাথা অব্দি গুণিনের প্রভাবকে ধরে ধরে শেখাননি। তাঁর কলমে গ্রামীণ পরিবেশে প্রভাবটি আছে গুণিনের কিন্তু পরিমিতভাবে, তিনি পাঠককে বুঝে নিতে শিখিয়েছেন কী হতে পারে গুণিনের প্রভাব এবং লোকে তাকে কীভাবে ভয় পায় বা সমীহ করে। ঠিক সেটাই ছবিতে উপস্থিত সেলিমের ক্যামেরার ভাষায়। দর্শককে বুঝে নিতে হবে, দর্শককে বোঝার মতো মানসিক পরিশ্রমটি করতে হবে ছবি দেখতে গিয়ে। সাহিত্যভিত্তিক ছবির গুণ 'গুণিন'-এ বিদ্যমান।

আজাদ আবুল কালাম মূল চরিত্রে জাত অভিনয় করেছেন। তাঁর চোখের ভাষা গভীর তার সাথে গেটআপ তো একশোতে একশো। ইরেশ যাকের দ্বিতীয় গভীর চরিত্র যাকে চিনতে হবে কৌশলের চোখে। শরিফুল রাজ ইন্ডাস্ট্রির নেক্সট বিগ থিং যদি এভাবেই সচেতন থেকে কাজ করে যায় এবং তার সেই ছাপ এ ছবির অভিনয়ে আছে। মোস্তফা মনোয়ার নিজের চরিত্রে যেন নিজেই রাজা, তার চরিত্র ধারণ করার ক্ষমতা আছে। পরীমনির চরিত্রে বিশেষত্ব তেমন নেই কিন্তু গল্প অনুযায়ী প্রেমময়ী রূপটি তার মায়াবী চেহারায়, এক্সপ্রেশনে দারুণ। শিল্পী সরকার অপু, দিলারা জামান নিজেদের মতো অসাধারণ। অনেকদিন পর নায়লা আজাদ নূপুরের মতো কিংবদন্তি অভিনেত্রীর অভিনয় নতুন পাওয়া এ ছবিতে। ঝুনা চৌধুরী প্রয়োজনীয় চরিত্র ছিল।

ছবির সিনেমাটোগ্রাফি এবং ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক অভিনয় ও চরিত্রায়ণের দিকগুলোতে সবচেয়ে ভালো ভূমিকা রেখেছে। বৃষ্টি, রাত, কাদামাটি, জোছনা গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ক্যামেরায় কথা বলেছে প্রাকৃতিকভাবে।

গানের মধ্যে 'আমি ঘোমটা খুলে বদল তুলে' মায়াবী স্বাদের। ছবির সংলাপে 'ছায়া নাই কায়া নাই খালি মায়া'-ই অর্থবহ ছিল।

এটা সত্য প্রত্যাশার পারদের কথা ভাবলে ছবিটি দর্শকভেদে ভালো লাগায় পিছিয়ে থাকতে পারে যদি ডিটেইলের কথা তারা ভাবেন। আবার সাহিত্যের ভাষা ও গভীরতাকে উপলব্ধি করে ছবিটি দেখতে বসলে বিশেষত্বপূর্ণ মনে হতে পারে। পঞ্চাশ পঞ্চাশ অবস্থা বলা যায়। লেখকের স্টাইলকে ধারণ করে গিয়াস উদ্দিন সেলিম ছবিটি যেভাবে বানিয়েছেন সেটিও উপলব্ধির দাবি রাখে ।

রেটিং: ৮/১০

* লিখেছেন: রহমান মতি
 

Users who are viewing this thread

Back
Top