তখন কোন ক্লাসে পড়তাম খেয়াল নেই, সম্ভবত ক্লাস থ্রি।গণিতের স্যার আমাকে রবিবারের হোমওয়ার্ক জমা দিয়েছিলাম কিনা জিজ্ঞেস করলেন। আমি তো মাথা নিচু করে একটি দুষ্টু হাসি হেসে বললাম 'না স্যার'।
স্যার বললেন 'জিহাদ তোমার কাছ থেকে এটা কখনোই আশা করিনি! আজকের হোমওয়ার্ক কোথায়?'
আমি: 'স্যার আজকেও আনতে মনে নেই'।
স্যার: 'আজ কী বার?'
আমি: 'স্যার মঙ্গলবার'।
স্যার: 'এইদিনে কেউ অমঙ্গলের কাজ করে? মঙ্গলবারের দিন কখনোই অমঙ্গল কাজ করতে নেই, হুম?' (স্যার অনেক সহজ সরল ছিলেন)
আমি: 'জ্বী স্যার।'
পাশের বেঞ্চ থেকে সহপাঠী: 'স্যার, জিহাদ গত মঙ্গলবারে টিফিনের পরে বাসায় চলে গিয়েছিলো! আর আসে নাই!'
স্যার: 'ছি: ছি: সত্যি?'
আমি: 'অসুস্থ ছিলাম স্যার' (মিথ্যা কথা)
স্যার: 'সব অমঙ্গলের কাজ তুমি মঙ্গলবারেই করো?'
আমি: আর হবে না স্যার!
(অতঃপর আমার নামে বিচার দেওয়া প্রাণের সহপাঠীকে ভয়ভীতি দেখানোর অপরাধে আমাকে হেডস্যারের অমর বাণী শুনতে হয়েছিলো)
মঙ্গলবার! দিনের ব্যাপার বাদ দিয়ে 'মঙ্গল' শব্দটি গ্রহের পাশে বসালে পাবো 'মঙ্গলগ্রহ'। ইংরেজীতে 'Mars'। তাহলে কি মঙ্গলে বসবাস করা আমাদের ইহজীবনের সব ক্ষেত্রেই মঙ্গল বয়ে আনবে? আমি তখন শুধু দিনের নামের সাথে সাদৃশ্য গ্রহগুলোর নামই জানতাম। বাকিগুলো মনে থাকতো না। পৃথিবী, মঙ্গল, শনি, বুধ, বৃহস্পতি এবং শুক্র। সেইদিনের ঘটনার পর থেকে আমি ভাবতাম যে মঙ্গলবারে মঙ্গল কাজ করলে মারা যাওয়ার পর মঙ্গলগ্রহে থাকতে পারবো। কিন্তু শনিবারে কার কপালে শনি লাগাবো! থাকুক, শনি গ্রহের চারপাশে চড়কির মতো কী যেন ঘোরে, যাওয়া সম্ভব না। মঙ্গলই ভালো। তারপর থেকে আমার প্রিয় গ্রহ হয়ে গেলো মঙ্গলগ্রহ।
কিন্তু নিজেদের এই লীলাভূমিটাও যে একটা গ্রহ, সেটা প্রায়ই ভুলে যেতাম। একেকটি গ্রহের এমন অদ্ভুত নাম কেন? ইংরেজীতে এক নাম, আবার বাংলায় আরেক! ছোট্ট মাথায় এত গোঁজামিল প্রশ্ন আসলেও পাশের বাসার মেয়েটার থেকে আমাকে পরীক্ষায় ভাল নাম্বার পেতে হবে নাহলে আমার আম্মু সমাজে মুখ দেখাতে পারবেন না, এই ভয়ে 'ঝর্ণার বাড়িতে দাদু কী নিয়ে এসেছিল?' টাইপ প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করতে থাকি।
প্রথমেই বলে রাখি গ্রহ-উপগ্রহসমূহের নামকরণ করে এমন স্বীকৃত সংস্থা মাত্র একটিই, ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সংস্থাটির নাম International Astronomical Union বা IAU। গ্রহগুলোর নামকরণের পেছনে অবশ্যই কোনো কারণ আছে। তবে তা বেশিরভাগই প্রাচীন দেবতাদের সম্মান রক্ষার্থে। কথা না বাড়িয়ে চলুন আমাদের সৌরজগতের একেকটি গ্রহের নামকরণের ইতিহাস সংক্ষিপ্ত আকারে জেনে নেই।