What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected জিজ্ঞাসাবাদ (1 Viewer)

OSQqu24.png


'আপনি কি জানেন, লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও প্রথম কবে অস্কার পেয়েছেন?'

কথাটা বলেই শায়লা সুন্দর করে হাসে অফিসারের চোখের দিকে তাকিয়ে।

সামনে বসা অফিসারের নাম হাসান। সে এত সহজে অধৈর্য হবার পাত্র নয়। অপরাধ নিয়ে যাদের কারবার, মাথা ঠান্ডা রাখতে তাদের পারতে হয়।

'দেখুন, মিসেস শায়লা আহমেদ, আমি আপনার সঙ্গে খোশগল্প করতে আসিনি, যা জিগ্যেস করছি, তার ঠিকঠাক জবাব দিন।'

'আমার নাম শায়লা আহমেদ, মিসেস বলার দরকার নেই।'

'ওকে শায়লা ম্যাডাম, সময় নষ্ট না করে লেটস কাম টু দ্য পয়েন্ট—আপনি কি বলতে চাচ্ছেন, রিনি নামের কাউকে আপনি চেনেন না?'

'কেন চিনব না, আধডজন মেয়েকে চিনি, যাদের নাম রিনি। ইন ফ্যাক্ট, আমার নিজের ফুফাতো বোনের নামই রিনি।'

'হেঁয়ালি করার দরকার নেই, আমি যে রিনির কথা বলছি…'

'মানে যে নিজের ঘরে সুইসাইড করেছে বলে নিউজে এসেছে গতকাল?'

'সুইসাইড সে করেনি, তার মাথায় ভারী কোনো কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। সম্ভবত যে ল্যাপটপ দিয়ে আঘাত করা হয়েছে, সেটির ওয়ালপেপারে আপনার হাজবেন্ডের ছবি।'

'তাহলে তাকেই জিজ্ঞেস করছেন না কেন? আপনি কি আশা করেন, আপনার মিসট্রেসকে আপনার ওয়াইফ খুব ভালোভাবে চিনবে?' বলেই শায়লা উচ্চস্বরে হাসতে থাকে, যেন খুব রসিকতা করা হলো।

'তার মানে আপনি স্বীকার করছেন, আপনার স্বামীর সঙ্গে রিনির কোনো ধরনের সম্পর্ক ছিল?'

'আমি স্বীকার না করলেই কী? আপনি তো বললেনই, তার স্ক্রিনে আমার হাজবেন্ডের ছবি ছিল। আর আপনারা সন্দেহ করছেন, সেই রাগেই আমি রিনিকে খুন করেছি, তাই না?'

অফিসার কিছু না বলে একটা সিগারেট ধরালেন।

শায়লা সাইড টেবিল থেকে একটা ক্রিস্টালের ছাইদানি নিয়ে তার সামনে রাখে।

হাসান ধন্যবাদ দেওয়ার মতো করে একটু মাথা ঝোঁকায় শুধু, মুখে কিছু বলে না।

সিগারেটে তিনটা টান দেওয়ার পর ছাইদানিতে গুঁজে রেখে আবার সটান সোজা হয়ে বসে সে।

'আই ফাউন্ড ইট ভেরি নন–প্রফেশনাল', শায়লা সোফায় হেলান দিয়ে বসে বলে, 'আমার ধারণা ছিল, ডিউটিতে থাকার সময় ধূমপান করা যায় না।'

'আপনার ড্রয়িংরুমে ছাইদানি আছে দেখে ধরে নিয়েছিলাম, এ ঘরে ধূমপান করলে আপনার আপত্তি থাকবে না। বাই দ্য ওয়ে, মিস্টার ফরহাদ কি ধূমপান করেন, নাকি ছাইদানিটা শুধু শোপিস হিসেবে রাখা?'

'আপনারা যার মিস্ট্রেসের মৃত্যুরহস্য নিয়ে কাজ করছেন, তিনি ধূমপান করেন কি না, তা জানেন না?' সামান্য শ্লেষের সঙ্গে বলে শায়লা।

'আপনি বারবার মিসট্রেস শব্দটা ব্যবহার করছেন কেন মিসেস, আই মিন শায়লা ম্যাডাম? একজন মৃত মানুষ সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করাটা তো অসৌজন্যতা প্রকাশ করে।'

'ওমা, মিসট্রেস আপত্তিকর হবে কেন? মিস্ট্রেস মানে প্রণয়িনী। আন্ড্রু মারভেলের একটা কবিতা আছে, "টু হিজ কয় মিস্ট্রেস" মানে তার লাজুক প্রেমিকার প্রতি...আসৌজন্যতা কোথায় পেলেন? কংকিউবাইন তো বলিনি!' আবার হাসে শায়লা।

'আমি আবারও বলছি, নাটক–সিনেমা–গান-কবিতা নিয়ে কথা বলার মতো যথেষ্ট সময় আমার কাছে এ মুহূর্তে নেই, পরে কখনো যদি…'

কথা শেষ করতে না দিয়ে শায়লা বলে, 'সময় করে আসবেন আমার সঙ্গে গান-কবিতা-সিনেমা নিয়ে গল্প করতে? আপনার কেস সলভড হয়ে গেলে?' এবার হাসতে হাসতে ভেঙে পড়ে শায়লা। তাকে কিছুটা অপ্রকৃতিস্থ দেখায়।

'আমার কাছে আপনাকে অ্যারেস্ট করার মতো যথেষ্ট কারণ আছে কিন্তু ম্যাডাম, আপনি সাফ সাফ জবাব না দিলে আমি আপনাকে থানায় নিয়ে যাব। সেখানে আপনার যত কবিতা বলার, বলবেন।'

'এখনই একটা বলি?'

'"হোয়েন বায় দাই স্কর্ন, ও মার্ডারেস, আই'ম ডেড অ্যান্ড দ্যাট দাউ থিংকেস্ট দ্য ফ্রি ফ্রম অল সলিসিটেশনস ফ্রম মি…"এটা কে লিখেছে জানেন? বিসিএস দেবার সময় এগুলো মুখস্থ করতে হয়নি আপনাকে? লেডি চ্যাটার্লিজ লাভারকে লিখেছেন, শেকস্পিয়ারের সর্বাধিক মঞ্চস্থ নাটকের নাম কী ইত্যাদি?'

'আমার কাছে সার্চ ওয়ারেন্ট আছে। আমি আপনার বাড়ি তল্লাশি করতেও পারি। কিন্তু আমি আশা করছি, আপনি কো–অপারেট করবেন এবং এত সব ঝামেলায় যেতে হবে না। আমাদের দুজনেরই সময় বাঁচবে।'

'আপনার কাছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে, কিন্তু গ্রেপ্তার করছেন না, সার্চ ওয়ারেন্ট আছে, তল্লাশিও করছেন না, ভালো মানুষের মতো কয়েকটা কথা বলবেন বলে ঘরে ঢুকে বসে আছেন, কারণ কী?'

হাসান উঠে দাঁড়ায়। তার ধৈর্য শেষ হয়েছে বলে মনে হয়। সে পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে শায়লার চোখের সামনে ধরে।

'আপনি গত পরশু সারা দিন কোথায় ছিলেন, কী করছিলেন, ঠিক করে বলুন প্লিজ। আর আপনার মোবাইল ফোনটা এক্ষুনি আমাকে দিয়ে দিন।'

শায়লা সাইড টেবিল থেকে নিজের মোবাইল ফোন তুলে নিয়ে হাসানের হাতে দেয়।

'গত পরশু সারা দিন আমি একটা সিনেমা দেখছিলাম। সিনেমার নাম টোয়াইস বর্ন, পরিচালক ইতালির, নায়িকা পেনেলোপে ক্রুজ। আর সিনেমা দেখা শেষ করে ব্যানানা পাই বানিয়েছি, এখনো আছে কিছুটা, খাবেন?'

হাসান বুঝতে পারে, তার কাজ খুব বেশি বাকি নেই। রিনি তার ফেসবুকে কিছুদিন আগে যে ছবি দেখছে বলে পাবলিক পোস্ট দিয়েছে, সেই ছবির নাম টোয়াইস বর্ন। রিনিকে হত্যার হুমকি দেওয়া টেক্সট যে নম্বর থেকে পাঠানো হয়েছিল, সেগুলো শায়লার নম্বর থেকেই গেছে।

হাসান হেসে বলে, 'জি, খাব। খাওয়ার পর আপনার বাসা সার্চ করব।'

শায়লা উঠে গিয়ে ফ্রিজ থেকে এক টুকরা ব্যানানা পাই নিয়ে আসে, সোনালি রঙের একটা কাঁটাচামচ দিয়ে দেয় পাশে।

আসার সময় বেডরুমে একটু উঁকি দেয়। বিছানায় ফরহাদ শুয়ে আছে; আসলে ফরহাদের লাশ। গত রাতে ফরহাদ ডিনারে শুধু ব্যানানা পাই খেয়েছিল।

লেখক: উম্মে ফারহানা
 

Users who are viewing this thread

Back
Top