তলপেটে ইনফেকশন বা বন্ধ্যত্বের কারণ খুঁজতে গিয়ে প্রায়ই অতীত ঘেঁটে জানা যায় যে ওই নারী বিয়ের পর এমআর করিয়েছিলেন। এমআরের নানা শারীরিক ঝুঁকি আছে, যার জন্য পরে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ভালো হাসপাতালে এমআর না করা হলে জরায়ু বা এর আশপাশে সংক্রমণ হতে পারে। এতে পেলভিক ইনফ্লামাটেরি ডিজিজ বা জরায়ু ও এর আশপাশে প্রদাহ হয়। পরে এর কারণে ফেলোপিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে যেতে পারে। প্রায়ই তলপেটে ব্যথা, মাসিকের সময় ব্যথা, সহবাসে অক্ষমতা দেখা দিতে পারে।
অনভিজ্ঞ, অপটু হাতে যেখানে-সেখানে এমআর করার কারণে জরায়ুতে ছিদ্র হতে পারে, জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়ামের দুই আস্তর একসঙ্গে লেগে যেতে পারে, এমনকি জরায়ুমুখ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যার জন্য পরে আর কখনোই সন্তান ধারণ সম্ভব না-ও হতে পারে।
অনেকে ওষুধ খেয়ে এমআর করতে চান। এতে অসহনীয় ব্যথা ও রক্তপাত নিয়ে কখনো কখনো হাসপাতালে জরুরি সেবা নিতে হয়। গ্রামগঞ্জে অস্বাস্থ্যকর উপায়ে বা নানা রকমের কবিরাজি ওষুধ খেয়ে এমআরের চেষ্টা করা হয়। এতে অস্বাভাবিক রক্তপাত, সংক্রমণসহ মায়ের জীবন ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
কোনো প্রেগন্যান্সি জরায়ুর বাইরেও হতে পারে, যাবে বলা হয় এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি। ওষুধ সেবন বা এমআর করার কিছুদিন পর তীব্র পেটব্যথা ও মৃতপ্রায় অবস্থায় হাসপাতালে এলে শনাক্ত হয় যে তা আসলে এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি ছিল। এটা দেরিতে নির্ণীত হলে মায়ের জীবনের ঝুঁকি পর্যন্ত হতে পারে।
জীবনঝুঁকির মতো কোনো কারণ না হলে এমআর করা উচিত নয়। যদি এমআর করতেই হয়, তবে আলট্রাসনোগ্রাফি করে প্রেগন্যান্সি জরায়ুর ভেতরেই আছে এবং একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে তা নিশ্চিত হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ব্যবস্থা নিতে হবে। চিকিৎসকের উচিত হবে অপরিকল্পিত এমআরের জন্য ভবিষ্যতে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে, তা রোগীকে যথাযথভাবে জানানো ও কাউন্সেলিং করা। নবদম্পতিরা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শুরু থেকেই জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিলে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এড়াতে পারেন।
লেখক: ডা. শাহীনা বেগম, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ, বিআরবি হাসপাতাল