মস্তিষ্কের পুষ্টি সরবরাহ ও বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনের কাজটি করে থাকে সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড বা সিএসএফ নামের একধরনের তরল পদার্থ। কোনো কারণে যদি এই তরল মস্তিষ্ক থেকে ঠিকমতো বের না হতে পারে, তবে তা মাথার ভেতর জমে গিয়ে যে রোগের সৃষ্টি হয়, তার নাম হাইড্রোসেফালাস।
হাইড্রোসেফালাস রোগীর মাথাব্যথা, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া ও প্রস্রাবের নিয়ন্ত্রণ কমে যাওয়াসহ নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। শিশুদের হাইড্রোসেফালাস হলে মাথা অস্বাভাবিক বড় এবং মাথার চামড়া পাতলা হয়ে যায়।
কেন হয়
- শিশুদের হাইড্রোসেফালাস বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জন্মগতভাবে সিএসএফ চলাচলের ছিদ্র বন্ধ থাকার কারণে হয়। এর ফলে শিশুর মাথা বড় হয়ে যায়। এ ছাড়া হাইড্রোসেফালাস হতে পারে—মস্তিষ্কের
- টিউবারকুলোসিস বা যক্ষ্মা, মস্তিষ্কের টিউমার, মাথার রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোকে।
- মাথাব্যথা, হাঁটাচলায় সমস্যা বা ভারসাম্যহীনতা, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, মাথার আকৃতি বড় হয়ে যাওয়া, মলমূত্রের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা প্রধান উপসর্গ।
চিকিৎসা
হাইড্রোসেফালাস রোগ নির্ণয়ের জন্য মাথার সিটি স্ক্যান অথবা এমআরআই পরীক্ষাই যথেষ্ট। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা আরও কিছু পরীক্ষা করতে পারেন।
চিকিৎসার জন্য প্রথমে এ রোগের কারণ খুঁজে বের করতে হবে। টিউবারকুলোসিসসহ বেশ কিছু অন্তর্নিহিত মূল রোগের চিকিৎসা করলেই হাইড্রোসেফালাস ভালো হয়ে যায়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগে শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন হয়। সিএসএফ বের করার বিভিন্ন শল্যচিকিৎসা সফলভাবে করা সম্ভব। সফল শল্যচিকিৎসার পর রোগীরা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়।
যেসব বাচ্চার হাইড্রোসেফালাসের কারণে মাথা বড় হয়ে যায়, তাদের 'ভেন্ট্রিকুল পেরিটনিয়াল সান্ট' নামের এক বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে সিএসএফ মাথা থেকে সরাসরি পেটের মধ্যে চালান করার ব্যবস্থা করা হয়।
হাইড্রোসেফালাসের সফল অস্ত্রোপচার বাংলাদেশে সম্ভব।
লেখক: ডা. নাজমুল হক | সহকারী অধ্যাপক, স্নায়ুবিদ্যা বিভাগ, মুগদা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা