প্রবাদে আছে—ন্যাড়া একবারই বেলতলায় যায়।
আমি গেলাম দ্বিতীয়বার। বেশ কয়েক বছর আগে একটা বই প্রকাশের ঝুঁকি নেওয়ার পরও আমার শিক্ষা হয়নি। আমি আবারও বই প্রকাশের কথা ভাবতে শুরু করলাম। দুই-একজন আশকারাও দিল, 'করেন না ভাই! একটা বই করেন!'
আমি বই নিয়ে থাকি সন্দেহে। গতবার বই বের করেছিলাম। বইমেলার শেষের দিকে প্রকাশককে জিজ্ঞেস করলাম, 'ভাই, কত কপি বিক্রি হলো?'
প্রকাশক অত্যন্ত গম্ভীর গলায় বললেন, '১৬ কপি।'
: কী বলেন! আমি তো নিজেই ১৭ কপি কিনছি।
: আপনি কিনা নিয়া গিয়া যাঁদের কাছে পুশ সেল করছেন, তাঁদের মধ্যে একজন আইসা বই ফেরত দিয়া টাকা নিয়া গেছেন। বই বিক্রি হইছে টোটাল ১৬ কপি। আমার ধারণা, এইটা আরও কমবে!
: আরও কমবে মানে?
: মানে দোকানে আইসা বই ফেরত দেওয়ার 'চান্স' আরও আছে। আসলে আপনার বইয়ে তো পড়ার মতো কিছু নাই। হুদা-টাইপ বই।
লেখকের জন্য এ ধরনের কথা অত্যন্ত অপমানের। আমি অপমানিত হয়ে বললাম, 'আসলে আপনাদের মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি নাই, নাইলে এই বই হাজারখানেক তো বিক্রি হইতই...!'
: তাইলে আপনিই বিক্রি কইরা দেন!
: কী! আমি?
: হুম। মেলা ফুরাইতে বাকি আছে আরও পাঁচ দিন। এই পাঁচ দিনে ৫০টা বই বিক্রি কইরা দেন দেখি!
আমি চ্যালেঞ্জ অ্যাকসেপ্ট করলাম। পাঁচ দিনে ৫০টা বই...এ আর এমন কী! আমার ফেসবুক-ফ্রেন্ডই আছে তিন হাজার। প্রথমেই স্ট্যাটাস দিয়ে তাদের বই কিনতে উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করলাম। প্রত্যেকের ইনবক্সে বইয়ের ছবিসহ প্রকৃত দাম, ছাড় ইত্যাদি বিস্তারিত জানালাম। লিখলাম, 'এই বই পড়লে আরও জানতে পারবেন...।'
সেই রাতেই বন্ধুসংখ্যা তিন হাজার থেকে আড়াই হাজারে নেমে এল। কেউ কেউ নীরবতা পালন করল সিন করার পরও। কেউ কেউ খুবই উৎসাহ নিয়ে বইয়ের পুরো বৃত্তান্ত জানতে চাইল, 'কী বই? কয়টা গল্প? গল্পগুলো কেমন?' তারা অতি আগ্রহের সঙ্গে জানাল, বইটা অবশ্যই কিনবে। আমার অবশ্য ঘোর সন্দেহ হলো—অন্যরা দুয়েকটা বই কিনলেও, এই অতি উৎসাহীরা আমার বইটা কেনা তো দূরের কথা, ছুঁয়েও দেখবে না!