দেশে করোনা সংক্রমণের পাশাপাশি এখন বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপও। তাই এখন জ্বর হলেই চিকিৎসকেরা প্রাথমিকভাবে করোনা বা ডেঙ্গুর কথা চিন্তা করছেন। যথাযথভাবে রোগ শনাক্ত করে লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন ও পুষ্টিকর খাবার খেলে এবং পরিপূর্ণ বিশ্রাম নিলে উভয় রোগই সেরে যায়। তবে অনেকেরই দেখা যায়, জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়েই প্যারাসিটামল, অ্যান্টিহিস্টামিন–জাতীয় ওষুধ সেবন শুরু করে দেন। এমনকি কেউ কেউ তো অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করেন। রোগ শনাক্ত না করে এ ধরনের পদক্ষেপ জটিলতা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
কোভিড–১৯ ও ডেঙ্গু—উভয়ই ভাইরাসজনিত রোগ। কাজেই এগুলো নিরাময়ে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো ভূমিকা নেই। তবে এসব রোগের কারণে যদি কোনোভাবে শরীরে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়, তবেই কেবল অ্যান্টিবায়োটিক রোগ নিরাময়ে সহায়তা করবে। এসব ক্ষেত্রে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসাপদ্ধতি নির্ধারণ করেন।
কাজেই যেকোনো জ্বরেই অ্যান্টিবায়োটিক প্রযোজ্য নয়। কেবল ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে জ্বর হলে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হয়। টাইফয়েড, নিউমোনিয়া বা শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ, প্রস্রাবে প্রদাহ, মস্তিষ্কে প্রদাহ ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণজনিত রোগ। এসব রোগে জ্বর আসতে পারে। সঠিক সময়ে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক সেবন না করলে এসব ক্ষেত্রে জীবন সংশয়ও দেখা দিতে পারে। তবে কোন রোগে কোন অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর হবে, তা পরীক্ষা–নিরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসক নির্ধারণ করবেন। মনে রাখতে হবে, অ্যান্টিবায়োটিক যেমন প্রাণ রক্ষাকারী, তেমনি এর অযথা ব্যবহার রেজিস্ট্যান্স তৈরি করে। সে ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে আর ওষুধ কাজ করতে চায় না।
করোনা ও ডেঙ্গু ভিন্ন ধরনের ভাইরাসজনিত রোগ হলেও প্রাথমিক অবস্থায় এগুলোর কিছু উপসর্গ একই। উভয় রোগের লক্ষণ সাধারণত জ্বর দিয়ে শুরু হয়। এ ছাড়া শরীরব্যথা, বমি বমি ভাব, মুখে বিস্বাদ বা রুচি কমে যাওয়া, ক্লান্তি ইত্যাদি উভয় রোগেরই সাধারণ লক্ষণ। আর এ কারণেই এ সময় জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বেশি জরুরি।
লেখক: ডা. এ হাসনাত শাহীন, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড ও হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞ, ইমপালস হাসপাতাল, তেজগাঁও, ঢাকা।