অতিমাত্রায় কম্পিউটার বা মুঠোফোন ব্যবহার, গিটার বা পিয়ানোর মতো বাদ্যযন্ত্র বাজানো, সেলাই, আর্চারি, শুটিং, ক্যারম, বিলিয়ার্ডের মতো খেলাধুলার কারণে অনেকেরই আঙুলের ব্যায়ামের প্রয়োজন হয়। ডায়াবেটিস বা স্নায়ুরোগে আঙুলের স্বাভাবিক নাড়াচাড়া করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা বা আঙুলের জড়তা, আঙুলের সন্ধির প্রদাহের কার্যকর চিকিৎসা হলো ব্যায়াম। আঙুলে আঘাত পেলে পুনরায় স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ফেরার জন্যও প্রয়োজন পড়ে ব্যায়ামের।
ব্যায়ামের নিয়মকানুন
রোগ বা দুর্ঘটনার জন্য ব্যায়ামের ক্ষেত্রে আক্রান্ত আঙুলগুলোর ব্যায়াম করলেই চলবে। ক্রমাগত আঙুলের অধিক ব্যবহারের কারণে যিনি নিয়মিত ব্যায়াম করছেন, তাঁর দুই হাতের সব আঙুলেরই ব্যায়াম করতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীরা এক
হাতে সমস্যা হলে অন্য হাতের ব্যায়ামও একসঙ্গে করতে পারেন। ব্যথা থাকলে আক্রান্ত অংশ ৩০ মিনিটের জন্য কুসুম গরম পানিতে ডুবিয়ে রাখুন, তাতে আঙুলের জড়তা ও ব্যথা কমবে। এরপর ব্যায়াম করুন। সমস্যার বিস্তার অনুযায়ী ব্যায়ামের মাত্রা কমবেশি হয়ে থাকে। সাধারণত দৈনিক
তিন-চারবার ব্যায়াম করতে হয়। শুরুতে প্রতিটি ব্যায়াম প্রতি বেলায় পাঁচবার করে করবেন। এতে অসুবিধা না হলে ধীরে ধীরে তা বাড়িয়ে ১০ বার পর্যন্ত করা যায়।
এক হাত দিয়ে অন্য হাতের আঙুল টেনে স্ট্রেচিং করা যায়। পেশির শক্তি বাড়াতে বুড়ো আঙুলের ডগার সাহায্যে অন্য আঙুলের ডগায় বিপরীতমুখী চাপ দিন (কর গোনার মতো)। স্ট্রেচিং শেষে আঙুলের প্রতিটি জয়েন্টকে যতভাবে, যত দূর পর্যন্ত নাড়ানো সম্ভব, সেভাবে ব্যায়াম করা যেতে পারে। আঙুলের পেশির শক্তি বাড়াতে বাধা বা ওজনের বিপরীতে ব্যায়াম করা যায়। আঙুল ফোলা থাকলে তা কমাতে নখের নিচ থেকে আঙুলের গোড়া পর্যন্ত মালিশ করা যেতে পারে। স্প্রিং বা রাবার ব্যান্ডের সাহায্যেও আঙুলের ব্যায়াম করা যায়। আঙুল দুর্বল হয়ে গেলে নরম বল হাতে চেপে চেপে ব্যায়াম করা যায়।
জেনে রাখা ভালো
রোগীর নিজে ব্যায়াম করতে অসুবিধা হলে পরিবারের কারও সাহায্য নিন। দুর্বল হয়ে পড়া আঙুলগুলো প্রথম থেকেই ব্যায়ামের সাহায্যে সচল না রাখলে দীর্ঘ মেয়াদে মাংসপেশি অচল হয়ে পড়তে পারে। জয়েন্টগুলো শক্ত হয়ে বেঁকে আসতে পারে। যদি ব্যথা বেশি হয়, দৈনিক এক বেলা ফিজিওথেরাপিস্টের সাহায্যে আলট্রাসাউন্ড ফিজিওথেরাপি করলে ব্যথামুক্ত থাকা যায়। ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক: অধ্যাপক সোহেলী রহমান, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল